ধর্মীয় সমন্বয়ে লালন ফকিরের ভূমিকা
লালন ফকির উনিশ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ধর্মীয় সমন্বয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর গান ও শিক্ষার মাধ্যমে তিনি সমাজের জাতিভেদ, ধর্মীয় ভেদ এবং লিঙ্গভেদ দূর করতে চেয়েছিলেন। তাঁর এই শিক্ষা মানবতা ও ভালোবাসার ওপর ভিত্তি করে ছিল, যেখানে সকল মানুষকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
লালন ফকিরের জন্ম ১৭৭৪ সালে, বর্তমান বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার হরিশচন্দ্রপুরে। তাঁর পিতা মধবরাও ও মাতা পদ্মাবতী দেবী ছিলেন। শৈশব থেকেই লালন ছিলেন সঙ্গীতপ্রিয় এবং সিরাজ সাই এর কাছ থেকে তিনি বাউল গান এর দীক্ষা নেন। পরে, তিনি একটি বাউল আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে শিষ্যদের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন।
লালন ফকিরের শিক্ষা
লালন ফকিরের শিক্ষা ছিল সর্বধর্ম সমন্বয়ের। তিনি মনে করতেন যে, মানুষের মধ্যে একটাই জাতি, একটাই ধর্ম, এবং একটাই লিঙ্গ আছে, তা হলো মানবতা। তাঁর বিখ্যাত গানে, “সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে, লালন বলে জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে”, তিনি মানুষকে বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, ধর্মীয় সমন্বয় এবং জাতিভেদ এর কোনো বাস্তবতা নেই।
তিনি মূর্তিপূজা, কুসংস্কার এবং ধর্মীয় বিভাজন এর বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর গানগুলো ছিল মানবতাবাদী ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা। লালন ফকিরের বিশ্বাস ছিল যে, মানবতা এবং প্রকৃত ভক্তি হলো একমাত্র ধর্ম, যা মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে না।
লালন ফকিরের প্রভাব
লালন ফকির এর গানগুলো আজও জনপ্রিয়, কারণ এগুলো মানুষকে একত্রিত করে এবং ধর্মীয় বা সামাজিক বিভাজন ছাড়াই মানুষকে সম্প্রীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাঁর শিক্ষার প্রভাব আজও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এবং বাংলাদেশ ও ভারত এর বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর ভাবধারা অনুসরণ করা হয়। লালন ফকির ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানবতার এক অন্যতম আদর্শ হয়ে আছেন।
মৃত্যু
১৮৯০ সালে, ১১৬ বছর বয়সে লালন ফকির এর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর, তাঁর কোনো ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করা হয়নি, যা তাঁর ধর্মীয় সমন্বয় এর প্রতি এক নতুন সংযোজন ছিল। তাঁর গান ও দর্শন আজও মানুষের মনকে স্পর্শ করে, এবং তাঁর এই শিক্ষা আমাদের সমাজে অম্লান হয়ে থাকবে।
Take membership to access all content at https://skillyogi.org/student-registration-cbse
Buy the book at https://skillyogi.org/wbbse-class-10-itihas-history-study-notes