আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে
- প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
- দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
- তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
- চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি
বায়ুমন্ডলের উপাদান সমূহ
https://youtu.be/ME9unw0zxNU
বায়ুমন্ডল প্রধানত তিনপ্রকার উপাদান নিয়ে গঠিত ।
- গ্যাসীয় উপাদান : বায়ুমন্ডলের গ্যাসীয় উপাদান 99% নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন নিয়ে গঠিত । এছাড়া কার্বন ডাইঅক্সাইড, হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, মিথেন প্রভৃতি।
- জলীয় বাষ্প : উচ্চতা, অক্ষাংশ, উষ্ণতা, স্থলভাগ, জলভাগ বন্টনের তারতম্যে জলীয় বাষ্পের তারতম্য ঘটে । জলীয় বাষ্প হল জলের গ্যাসীয় অবস্থা । জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির জন্যই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঝড়, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি সৃষ্টি হয় ।
- ধূলিকণা : মরু অঞ্চলের সূক্ষ্ম বালুকণা, কলকারখানার পোড়া কয়লার ছাই, বিভিন্ন প্রকার খনিজ লবণ প্রভৃতি ধূলিকণা ভাসমান অবস্থায় বায়ুমণ্ডলে রয়েছে ।
উপাদানের ভিত্তিতে বায়ুমন্ডলের স্তরবিন্যাস
উপাদানগত ভিত্তিতে বায়ুমন্ডলকে দুভাগে ভাগ করা যায় –
- সমমন্ডল : সমুদ্রতল থেকে 100 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অংশে বায়ুমন্ডল গঠনকারী উপাদানগুলি প্রায় একই রকম থাকে বলে এই স্তরকে সমমন্ডল বলা হয় । পৃথিবীর জলবায়ু নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই স্তরের প্রকৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই স্তরের উপাদানগুলি হলো- বিভিন্ন প্রকার গ্যাস, জলীয় বাষ্প এবং জৈব ও অজৈব কণা । পৃথিবীর জলবায়ু নির্ধারণ করে ।
- বিষমমন্ডল : সমমন্ডলের পরে প্রায় 100-10000 কিমি পর্যন্ত অংশে বায়ুমন্ডল গঠনকারী উপাদানগুলি বিভিন্ন রকমভাবে থাকে তাই এই স্তরকে বিষমমন্ডল বলে । বিষমমন্ডল চারটি স্তরে বিভক্ত – নাইট্রোজেন স্তর, হাইড্রোজেন স্তর, অক্সিজেন স্তর, হিলিয়াম স্তর ।
উষ্ণতার ভিত্তিতে বায়ুস্তর বিন্যাস
উষ্ণতার ভিত্তিতে বায়ুস্তর ছয়টি স্তরে ভাগে বিভক্ত –
- ট্রপোস্ফিয়ার : এটি বায়ুমন্ডলের নীচে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন স্তর । নিরক্ষীয় অঞ্চলে 18 কিমি, ক্রান্তীয় অঞ্চলে 12.5 কিমি এবং মেরু অঞ্চলে 18 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । এই স্তরে প্রতি হাজার মিটার উচ্চতায় উষ্ণতা হ্রাস পায় । এই স্তরে 75% গ্যাসীয় উপাদান রয়েছে । এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি হয় তাই এই স্তরকে ক্ষুদ্ধমন্ডল বলে । ট্রপোপজ হলো এই স্তরের উর্ধ্বসীমা অর্থাৎ ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সংযোগকারী স্তর ।
- স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার : ট্রপোস্ফিয়ারের পরবর্তী স্তর হলো স্ট্রাটোস্ফিয়ার । ট্রপোপজের উপর থেকে প্রায় 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তরটি বিস্তৃত । উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় । এই স্তরে আবহাওয়া শান্ত থাকে তাই এই স্তরকে শান্তমন্ডল বলা হয় । এই স্তরের 35 কিমি উচ্চতায় ওজোন গ্যাসের উপস্থিতি থাকায় এই অংশকে ওজনোস্ফিয়ার বলে । এই গ্যাস অতিবেগুনি রশ্মি শোষন করে । স্ট্র্যাটোপজ হলো এই স্তরের উর্ধ্বসীমা অর্থাৎ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের সংযোগকারী স্তর ।
- মেসোস্ফিয়ার : স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমা স্ট্র্যাটোপজের উপরের স্তরটি হলো মেসোস্ফিয়ার । প্রায় 80 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উষ্ণতা হ্রাস পায় এবং বায়ুচাপ অত্যন্ত কম থাকে । এই স্তরে উল্কাপিন্ড পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মেসোপজ হলো এই স্তরের উর্ধ্বসীমা অর্থাৎ মেসোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ারের সংযোগকারী স্তর ।
- আয়নোস্ফিয়ার : মেসোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমা মেসোপজের উপরের স্তরটি হলো আয়নোস্ফিয়ার যা প্রায় 80-500 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত । উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উষ্ণতার বৃদ্ধি ঘটে । এই স্তরে x-রশ্মি শোষিত হয়। বেতারতরঙ্গ এখানে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উষ্ণতারও বৃদ্ধি ঘটে।
- এক্সোস্ফিয়ার : আয়নোস্ফিয়ারের উপরের অংশ এক্সোস্ফিয়ার । প্রায় 500-700 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত । হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাসের উপস্থিত।
- ম্যানেটোস্ফিয়ার : এক্সোস্ফিয়ারের উপরের অংশ ম্যাগনেটোস্ফিয়ার । প্রায় 750-10000 কিমি পর্যন্ত স্তরটি বিস্তৃত । বায়বীয় উপাদানগুলি আয়নিত অবস্থায় থাকে । প্রোটন ও ইলেক্ট্রনের সমন্বয়ের ফলে এই স্তরে চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে।
ওজোনস্তরের গুরুত্ব
- স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উপরে যে ওজন গ্যাসের আস্তরণ সৃষ্টি হয়েছে সেটাই হল ওজোনস্তর।
- সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে জীবজগৎকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং বায়ুমন্ডলের ভারসাম্য বজায় রাখে ।
- ওজোনোস্ফিয়ারে প্রাকৃতিকভাবে ক্রমান্বয়ে ওজোন গ্যাস সৃষ্টি ও ধ্বংস হয় । ওজোনস্তর বেশি ধ্বংস হলে ওজোনস্তর ক্রমশ পাতলা হতে শুরু করে, এভাবে ওজোনস্তরের বিনাশ হয় । এর ফলে সমগ্র মানুষ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ।
বায়ুমন্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন : তাপের সমতা
বায়ুমন্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন : বায়ুণ্ডলের প্রধান উৎস হল সূর্য।
তাপের সমতা : দিনের বেলায় ভূপৃষ্ঠে সূর্যকিরণের ফলে পৃথিবী উত্তপ্ত হয় । তেমনি রাত্রিতে তাপ বিকিরণের ফলে পৃথিবী শীতল হয়। এর ফলে পৃথিবীর বার্ষিক উত্তাপের সমতা এক থাকে । একেই তাপের সমতা বলে ।
বায়ুমন্ডলের উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি
- বিকিরণ পদ্ধতি : ক্ষুদ্রতরঙ্গ যুক্ত সূর্যরশ্মি সরাসরি পৃথিবীর পৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করার পরে, বড় তরঙ্গগুলি ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরকে উত্তপ্ত করে। একে বিকিরণ বলা হয়।
- পরিবহন পদ্ধতি : সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠের নিচের বাতাসকে উষ্ণ করে, যা পরে তার ওপরের শীতল বাতাসকে উষ্ণ করে। এভাবেই তাপ বাতাসের এক স্তর থেকে অন্য স্তরে পরিবাহিত হয় যতক্ষণ না উভয় স্তরের তাপমাত্রা সমান হয় । এই পদ্ধতিকে পরিবহন বলা হয় ।
- পরিচলন পদ্ধতি : উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের জন্য বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয়, এবং প্রসারিত ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়, তখন ওই বায়ুশূন্য স্থান পূরণের জন্য শীতল ও ভারী বায়ু ছুটে আসে এবং পুনরায় উত্তপ্ত করে, একে পরিচলন বলে । এছাড়াও অ্যাডভেকশন, প্রত্যক্ষ সৌরতাপ শোষণ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, ভূর্গস্থ তাপ, লীনতাপ ও মনুষ্যকতৃক সৃষ্ট তাপ থেকেও বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হয় ।
- অ্যাডভেকশন : উষ্ণবায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত হওয়ার সময় তার গতিপথ সংলগ্ন স্থানগুলির শীতল বায়ুকে উত্তপ্ত করে। একেই অ্যাডভেকশন বলে ।
- লীনতাপ : লীনতাপের ফলেও ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়।
তাপের পরিমাপ
তাপের পরিমাপ : বায়ুর উষ্ণতা পরিমাপের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাকে থার্মোমিটার বলে । থার্মোমিটারে দু-ধরনের স্কেল থাকে, সেলসিয়াস স্কেল ও ফারেনহাইট স্কেল। কোনো স্থানের কোনো দিনের উষ্ণতাকে নির্ণয় করার জন্য সেই দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার যোগফলকে দুই দিয়ে ভাগ করে এবং প্রতি ঘন্টার তাপমাত্রার যোগফলকে 24 দিয়ে ভাগ করে দিনের গড় উষ্ণতা পাওয়া যায় ।
গরিষ্ঠ-লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার বা সিক্সের থার্মোমিটার
গরিষ্ঠ-লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার বা সিক্সের থার্মোমিটার : দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উষ্ণতা নির্ণয় করা হয় । এর উভয় দিকের প্রান্তভাগে সরু নলের মত দুটি সূচক থাকে, এর উভয় প্রান্তে থাকে অ্যালকোহল এবং সূচক দুটির মাঝে থাকে পারদ।
বায়ুমন্ডলের তাপের তারত্যমের কারণ
i) অক্ষাংশ : পৃথিবী কক্ষতলের সঙ্গে সর্বদা সাড়ে 66° হেলে থাকার কারণে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং তাপীয় ফল বেশি থাকে । অপর দিকে নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে সূর্যরশ্মি তীর্যকভাবে পড়ে তখন তাপীয় ফল কম থাকে ।
ii) ভূমির উচ্চতা : সমুদ্রতল থেকে কোনো স্থান যত উপরে অবস্থান করে তা ভূমির উচ্চতার সাথে সাথে ভূমির উষ্ণতা হ্রাস পায়, আবার কোনো কোনো স্থানে বৃদ্ধি পায় ।
iii) স্থলভাগ ও জলভাগের বন্টন : জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ বা শীতল হলে গ্রীষ্মকাল অধিক উষ্ণ ও শীতকাল অধিক শীতল হয় ।
iv) বায়ুপ্রবাহ : সমুদ্রস্রোতের মত উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত অঞ্চল উষ্ণ এবং শীতল বায়ু প্রবাহিত অঞ্চল শীতল হয় ।
V) সমুদ্রস্রোত : সমুদ্রের যে অঞ্চলে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়, সেই অঞ্চলের বায়ুমন্ডল শীতল হয় এবং যে অঞ্চলে উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলের বায়ুমন্ডল উষ্ণ হয় ।
vi) ভূমির ঢাল : দক্ষিণমুখী ভূমির ঢালে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা অধিক হয় ।
vii) মেঘাচ্ছন্নতা ও অধঃক্ষেপণ : দিনের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে তাপীয় ফল হ্রাস পায়, রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ।
viii) স্বাভাবিক উদ্ভিদ : উদ্ভিদ আবৃত অঞ্চলে উষ্ণতা কম হয়, কিন্তু উদ্ভিদ কম থাকলে উষ্ণতা অতিরিক্ত হয় ।
ix) মৃত্তিকা : বালি বা নুড়ি অধ্যুষিত অঞ্চল দ্রুত উষ্ণ বা শীতল হয় ।
x) নগরায়ন ও শিল্পায়ন : বৃক্ষচ্ছেদন, যানবাহন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, ঘর নির্মাণ এসবের জন্য উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ।
তাপমন্ডল
ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা সমান নয়, কোথাও কম ও কোথাও বেশি । উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে পৃথিবীর তাপমন্ডলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়-
উষ্ণমন্ডল : পৃথিবীর মাঝ বরাবর উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল উষ্ণমন্ডল । এই অঞ্চলের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 27℃ ।
নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল : উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি থেকে সুমেরুবৃত্ত উত্তর হল নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল ।
দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখা থেকে কুমেরু বৃত্ত পর্যন্ত দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল ।
হিমমন্ডল : উত্তরে সুমেরুবৃত্ত থেকে সুমেরু বিন্দু উত্তর হিমমন্ডল । দক্ষিণে কুমেরু বৃত্ত থেকে কুমেরুবিন্দু পর্যন্ত দক্ষিণ হিমমন্ডল ।
সমোষ্ণ রেখা
সমোষ্ণ রেখা : ভূপৃষ্ঠে একই উচ্চতা বিশিষ্ট স্থানগুলিকে মানচিত্রে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তাকে সমোষ্ণ রেখা বলে । এই রেখা গুলি একেঁবেঁকে যায় । অক্ষরেখার সমান হয় ।
বিশ্ব উষ্ণায়ণ
জনবিস্ফোরণ, নগরায়ন, শিল্পায়ন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বিচারে অরণ্য নিধন প্রভৃতির কারণে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে । অন্যান্য গ্যাসের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ণ আখ্যা দিয়েছে ।
গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ
কার্বন ডাই অক্সাইড : বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ 0.03% । জীবাশ্ম জ্বালানির অধিক দহন ও নির্বিচারে অরণ্য নিধনের কারণেই এর মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে । বিশ্ব উষ্ণায়ণে এর ভূমিকা প্রায় 49% ।
ক্লোরোফ্লোরো কার্বন : এর পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য বিশ্ব উষ্ণায়ণে এর ক্ষমতা প্রায় 14% । হিমায়ন যন্ত্র রেফ্রিজারেটর ও প্লাস্টিক ফোম ফাঁপিয়ে তুলতে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
মিথেন : বিশ্ব উষ্ণায়ণে এর ভূমিকা প্রায় 18% । গোবর, মানুষ ও প্রাণীর মলমূত্র বিয়োজনের ফলে এই গ্যাস সৃষ্টি হচ্ছে ।
নাইট্রাস অক্সাইড : বিশ্ব উষ্ণায়ণে এর ভূমিকা 6% । কৃষি জমিতে নাইট্রোজেন ঘটিত সার প্রয়োগ ও দাবানলের কারণে এই গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে ।
বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাব
i) বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফের গলন শুরু হয় এবং পার্বত্য হিমবাহ বরফের আয়তন ক্রমশ কমছে ।
ii) বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
iii) বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে ।
iv) পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে কৃষি বলয়ের স্থান পরিবর্তিত হচ্ছে ।
বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ
অন্যান্য পদার্থের মত বায়ুর ওজন আছে তাই বায়ু তার চারিদিকে যে বল প্রয়োগ করে তাকে বায়ুর চাপ বলে । বায়ুর চাপ পরিমাপের জন্য বিজ্ঞানী টরিসেলি আবিষ্কৃত ব্যারোমিটার ব্যবহার হয় । বায়ুর চাপ নির্ভুলভাবে পরিমাপ করার জন্য ফর্টিন্স ব্যারোমিটার আবিষ্কার হয়েছে ।
ছোট আয়তনের বায়ুচাপ পরিমাপক যন্ত্র হিসেবে অ্যানিরয়েড ব্যারোমিটার তৈরি হয়েছে । বিমানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যাতে চাপের দ্রুত পরিবর্তন ধরা পড়ে তার জন্য তৈরি হয়েছে অলটিমিটার ও ব্যারোগ্রাম ।
বায়ুচাপের তারতম্যের নিয়ন্ত্রক সমূহ
বায়ুচাপের তারতম্যের নিয়ন্ত্রক সমূহ : বায়ুচাপের তারতম্যের প্রধান কারণ হল বায়ুর ঘনত্ব । বায়ুর ঘনত্ব বেশি বা কম হলে চাপের তারতম্য হয় । বায়ুচাপের নিয়ন্ত্রক গুলি হল উচ্চতা, উষ্ণতা , জলীয়বাষ্প , পৃথিবীর আবর্তন স্থলভাগ জলভাগ এর বন্টন ।
সমচাপ রেখা : ভূপৃষ্ঠের একটি বায়ুর চাপ বিশিষ্ট স্থান গুলিকে মানচিত্রের যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয় তাকে সমচাপ রেখা বলে । সমচাপ রেখা গুলি আঁকাবাঁকা ভাবে বিস্তৃত থাকে । সমচাপ রেখা গুলির মধ্যবর্তী দূরত্ব বেশি হলে শান্ত আবহাওয়া । চক্রাকারে কাছাকাছি ঝড়-বৃষ্টি সম্ভাবনা থাকে ।
পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয় সমূহ
ক) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় : নিরক্ষরেখার দুপাশে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের এই নিম্নচাপ বলয় অবস্থান করে । নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন বেগ সবচেয়ে বেশি হওয়ায় উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু এখান থেকে উত্তর ও দক্ষিণে ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে ছিটকে যায় এর ফলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় ।
খ) কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় : উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে কর্কটীয় ও মকরীয় ও উচ্চ চাপ বলয় সৃষ্টি হয় । উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু শীতল হয়ে ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে, এর ফলে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয় । সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে শীতল ও ভারী বায়ু কোরিওলিস বলের প্রভাবে ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে এর ফলে উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টি হয় ।
গ) সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত নিম্নচাপ বলয় : উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে এর অবস্থান । মেরু অঞ্চলের তুলনায় এই দুই অঞ্চলের উষ্ণতা বেশি হয় ফলে এই অঞ্চলের বায়ু হালকা ও প্রসারিত হয়ে উপরে উঠে নিম্নচাপের সৃষ্টি করে ।
ঘ) সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় : অক্ষ রেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে এদের অবস্থান । পৃথিবীর আবর্তনের কারণে মেরু বৃত্ত থেকে কিছু অংশ মেরু অঞ্চলে নেমে আসে এবং বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ বৃদ্ধি করে ।
বায়ুপ্রবাহ
ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সমান্তরালভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করে একে বায়ু প্রবাহ বলে। বায়ু চাপের তারতম্য, উষ্ণতার তারতম্য, পৃথিবীর আবর্তন গতি, ভূপৃষ্ঠের ঘর্ষণের প্রভাব প্রভৃতি কারণে বায়ুর প্রভাব সৃষ্টি হয় ।
বায়ুপ্রবাহ চার প্রকার
১) নিয়ত বায়ুপ্রবাহ : সারা বছর ধরে নিয়মিতভাবে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে সারা বছর ধরে একই দিকে একই গতি বেগে প্রবাহিত বায়ু হল নিয়ত বায়ু । নিয়ত বায়ু তিন প্রকার- আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু, মেরু বায়ু । কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত বায়ু আয়ন বায়ু ।
অনুরূপভাবে সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত বায়ু হলো পশ্চিমা বায়ু । 40 ডিগ্রি অক্ষাংশের বায়ুপ্রবাহকে গর্জনশীল চল্লিশা বলে আবার 50 ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে ভয়ঙ্কর পঞ্চশিয়া বলে । দুই মেরু দেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে শুষ্ক ও শীতল বায়ু সারা বছর ধরে নিয়মিতভাবে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয় সেটা মেরু বায়ু ।
২) সাময়িক বায়ু প্রবাহ : নির্দিষ্ট ঋতুতে চাপের তারতম্যের কারণে প্রবাহিত বায়ু হল সাময়িক বায়ু । সাময়িক বায়ু পাঁচ প্রকার ।
- স্থলবায়ু : রাতের বেলা স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে স্থলবায়ু বলে ।
- সমুদ্র বায়ু : দিনের বেলা স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে সমুদ্র বায়ু বলে ।
- মৌসুমি বায়ু : দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া , উত্তর অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আফ্রিকা, মেক্সিকো প্রভৃতি অঞ্চলের সাময়িক বায়ু হল মৌসুমি বায়ু ।
- পার্বত্য বায়ু : শীতকালে বায়ু দ্রুত তাপ বিকিরণের ফলে শীতল ও ভারী হয়ে পর্বতের ঢাল বেয়ে নীচে নেমে আসে একে বলে পার্বত্য বায়ু ।
- উপত্যকা বায়ু : পার্বত্য অঞ্চলে দিনের বেলায় সূর্য রশ্মি দ্বারা বায়ু উত্তপ্ত হয়ে হালকা এবং প্রসারিত হয় এর ফলে বায়ু পর্বতের ঢাল বরাবর উর্ধ্বগামী হয়, একেই উপত্যকা বায়ু বলে ।
আকস্মিক বায়ু
ঘূর্ণবাত : স্বল্প পরিসরে হঠাৎ কোনো স্থানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে বায়ু কুন্ডলাকারে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপের দিকে ছুটে আসে একে ঘূর্ণবাত বলে । কেন্দ্রে নিম্নচাপ অবস্থান করে । কেন্দ্রের বাতাস উষ্ণ হওয়ায় তা ঊর্ধ্বগামী হয় । ঘূর্ণবাত স্বল্পস্থায়ী হলেও অত্যন্ত শক্তিশালী । ঘূর্ণবাত দুই প্রকার, যথা –
ক) ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত : ক্রান্তীয় অঞ্চলের স্বল্প পরিসরে সৃষ্ট কেন্দ্রগামী ও উর্ধ্বমূখী ঘূর্ণায়মান প্রবল বায়ুপ্রবাহকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে । ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে শান্ত অঞ্চল থাকে একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে।
খ) নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত : নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণবাত হল নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত । এই অঞ্চলে ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে আসা উষ্ণ আর্দ্র বায়ু এবং মেরু অঞ্চল থেকে আশা শুষ্ক ও শীতল বায়ুর সংঘর্ষ হয়, এর ফলে শীতল বায়ু কোন বায়ুকে বেষ্টন করে চক্রাকারে প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ঊর্ধ্বগামী হয় এবং ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় ।
প্রতীপ ঘূর্ণবাত
কোনো স্থানে অধিক শীতলতার জন্য প্রবল উচ্চচাপের সৃষ্টি হয় । উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে শীতল বায়ু কুন্ডলী হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, এটি ঘূর্ণবাতের বিপরীত অবস্থা হওয়ার জন্য এর নাম প্রতীপ ঘূর্ণবাত । এর কেন্দ্রে থাকে উচ্চচাপ ।
পৃথিবীতে সংগঠিত কয়েকটি ঘূর্ণবাত : হ্যারিকেন, ইফুন, টর্নেডো, সাইক্লোন ।
৪. স্থানীয় বায়ু : ভূপৃষ্ঠের কিছু কিছু এলাকায় বিভিন্ন স্থানীয় কারণে (যেমন ভূপ্রকৃতি, স্থল ও জলভাগের বন্টন, অক্ষাংশ প্রভৃতির তারতম্যে) বছরের নির্দিষ্ট সময় চাপ ও তাপের তারতম্য ঘটলে যে বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয়, তাকে স্থানীয় বায়ু বলে । যেমন –
- উষ্ণ স্থানীয় বায়ু হলো ফন, চিনুক, সিরোক্কো, লু
- শীতল স্থানীয় বায়ু হলো মিস্ট্রাল ও বোরা
জলচক্রের ধারণা
ভূপৃষ্ঠের জলভাগ দিনের বেলায় সূর্যের তাপে উষ্ণ হয়, বাষ্পীভূত হয়ে হালকা হয় এবং উপরে উঠে যায় সেই বায়ু আবার শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঘনীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধূলিকণাকে কেন্দ্র করে তুষারকনা বা ছোট ছোট জল কণায় পরিণত হয় এবং মেঘের আকার ধারণ করে ।
যখন বাতাসের চেয়েও ভারী হয়ে যায় এবং আর ভেসে থাকতে পারে না তখন মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে বৃষ্টি রূপে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে । আবার সেই জল সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে যায় এবং পুনরায় বৃষ্টি রূপে পৃথিবীতে নেমে আসে, এই চক্রাকার আবর্তনকেই জলচক্র বলে ।
বাষ্পীভবন কি?
তরল পদার্থ যে প্রক্রিয়ায় বাষ্পে পরিণত হয় তাকে বাষ্পীভবন বলে । বাষ্পীভবন তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে – বায়ুর আর্দ্রতা, তাপমাত্রা এবং বায়ু প্রবাহ ।
বায়ুর আর্দ্রতা – অধঃক্ষেপণ
কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ও সময়ে নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, তাকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে । বায়ুর আর্দ্রতাকে তিনভাগে ভাগ করা হয় – নিরপেক্ষ আর্দ্রতা, বিশেষ আর্দ্রতা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা । বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয় হাইগ্রোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে ।
কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প বর্তমান থাকে, তাকে ওই বায়ুর নিরপেক্ষ আর্দ্রতা বলা হয় । যখন কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ওজনের বায়ুতে যত ওজনের জলীয়বাষ্প থাকে তাকে নির্দিষ্ট আর্দ্রতা বলে । কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প প্রয়োজন হয়, তার অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে ।
অধঃক্ষেপণ
জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু উপরে উঠে ঘনীভূত হয় এবং ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়, যখন সেই জলকণা মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে, তখন একে বলে অধঃক্ষেপণ । অধঃক্ষেপণের বিভিন্ন রূপগুলি হল- বৃ্ষ্টিপাত, তুষারপাত, ইলশেগুঁড়ি, স্লিট, বরফশলাকা, শিলাবৃষ্টি ।
বৃষ্টিপাত তিন প্রকার
- পরিচলন বৃষ্টিপাত : দিনের বেলায় সূর্যের কিরণে জল বাষ্পে পরিণত হয়ে সোজা উপরে উঠে যায় এবং শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ওই জলীয়বাষ্প প্রথমে মেঘ ও পরে বৃষ্টিতে পরিণত হয়ে সোজাসুজি নিচে নেমে আসে । এরূপ বৃষ্টিপাতকে পরিচলন বৃষ্টি বলে । নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে গ্রীষ্মের শুরুতে ও ভারতে শরৎকালে ঘটে ।
- শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত : জলীয় বায়ু স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় কোনো উঁচু পাহাড় বা পর্বতশ্রেণী দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে তা উপরেরে দিকে উঠে যায় এবং ঘনীভূত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যে বৃষ্টিপাত ঘটায় তাকে শৈলোযৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে । চেরাপুঞ্জির মৌসিনরামে এই বৃষ্টিপাত দেখা যায় কিন্তু শিলং অনুবাদ ঢালে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে ।
- ঘূর্ণবাত জনিত বৃষ্টিপাত : যখন কোন স্থানে ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মধ্যে বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে তখন ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় এবং এই ঘূর্ণবাতের মাধ্যমে যে বৃষ্টিপাত হয় তাকে ঘূর্ণবাত জনিত বৃষ্টিপাত বলে ।
পৃথিবীর মুখ্য জলবায়ু অঞ্চল
যেসব অঞ্চলে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ ছাড়াও জলবায়ুর অনান্য উপাদান ও আবহাওয়া এবং উদ্ভিদের মধ্যে সাদৃশ্য দেখা যায় তাকে জলবায়ু অঞ্চল বলে ।
পৃথিবীর কয়েকটি মুখ্য জলবায়ু অঞ্চলের বিবরণ
নাম | অবস্থান | উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত | জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য |
আর্দ্র নিরক্ষীয় | অক্ষাংশগত: 5°-10° নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে। আঞ্চলিক: কঙ্গো, জাইরে, ইন্দোনেশিয়া আমাজন। | বার্ষিক উষ্ণতা : গড়ে 25°- 28℃। বৃষ্টিপাত: 150-250সে। | এখানে ঋতুবৈচিত্র দেখা যায় না।জলবায়ু উষ্ণ-আর্দ্র প্রকৃতির জলবায়ু দেখা যায়। এখানে সারাবছর পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়। |
ক্রান্তীয় মৌসুমী | অক্ষাংশগত: 10°- 2312° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ আঞ্চলিক: উত্তর অষ্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া। | শীতকালীন উষ্ণতা : 15°-20° সে। গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা: 27°-32°সে। বৃষ্টিপাত: 100-150 সেমি । | ঋতু পরিবর্তন হয়। বায়ুর দিক পরিবর্তন হয়। শুষ্ক শীতকাল ও উষ্ণ -আর্দ্র গ্রীষ্মকাল। |
উষ্ণ মরু | অক্ষাংশগত: 15°-30° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ। আঞ্চলিক: আফ্রিকার সাহারা, কালাহারি, ভারতের থর। | গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা: 30°-35°সে। উষ্ণতার প্রসর: 16°-27°সে। বৃষ্টিপাত: 16সেমির কম। | বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অল্প। শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার প্রসর বেশি। |
ভূমধ্য সাগরীয় | অক্ষাংশগত: 30°- 45° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ। আঞ্চলিক: অষ্ট্রেলীয়া, ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলি। | বার্ষিক গড় উষ্ণতা : 16°-20° সে। উষ্ণতার প্রসর: 6°-16°সে বৃষ্টিপাত: 25-75 সেমি। | শীতকাল বৃষ্টিবহুল। উষ্ণ – শুষ্ক গ্রীষ্মকাল। |
স্তেপ | অক্ষাংশগত: 35°-60° উত্তর অক্ষাংশ এবং 35°-50° দক্ষিণ অক্ষাংশ। আঞ্চলিক: ইউরেশিয়া, মারে ডার্লিং অববাহিকা, আন্দিজ পর্বতের পূর্ব ঢাল। রকি পর্বতের পূর্বাংশ। | শীতকালীন উষ্ণতা : হিমাঙ্কের নীচে থাকে। গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা: 17°-30° সে। বৃষ্টিপাত: 25-50সেমি। | পরিবর্তনশীল আবহাওয়া। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত। |
চীনা দেশীয় | অক্ষাংশগত: 25°-40° উত্তর ও দক্ষিণ। আঞ্চলিক: পূর্ব এশিয়ার চিন, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল ও দক্ষিণ আফ্রিক। | শীতকালীন উষ্ণতা: 4°-12°সে। গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা : 25° -30° সে। বৃষ্টিপাত: 100-150 সেমি। | মৃদু শীতকাল এবং আর্দ্র গ্রীষ্মকাল । |
পশ্চিম উপকূলীয় সামুদ্রিক | অক্ষাংশগত : 40°-60° উত্তর ও দক্ষিণ। আঞ্চলিক: উত্তর পশ্চিম ইউরোপ, নিউজিল্যান্ড, কানাডা। আলাস্কা, চিলির পশ্চিম উপকূল। | শীতকালীন উষ্ণতা : 3° -7° সে। গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা : 15°-30° সে। বৃষ্টিপাত: 80-90 সেমি। | শীতল শীতকাল ও মৃদু গ্রীষ্মকাল ।শীতকালীন ঘূর্ণবাত দেখা যায়। |
মহা দেশীয় | অক্ষাংশগত : 35°-65° উত্তর অক্ষাংশ। আঞ্চলিক:- ইরাক,পূর্ব ও মধ্য আমেরিকা, ইরান, মধ্য এশিয়া। | শীতকালীন উষ্ণতা: 1°-20° সে। গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা: 20°-22°সে। বৃষ্টিপাত: 50-100 সেমি। | শীতল শীতকাল উষ্ণ গ্রীষ্মকাল। এখানে শীতকাল স্বল্পস্থায়ী। |
আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ | অক্ষাংশগত: 35°-50° উত্তর অক্ষাংশ। আঞ্চলিক: ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিম আমেরিকা। | শীতকালীন উষ্ণতা : 6°-8° সে। গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা: 20°-24° সে। বৃষ্টিপাত: 50-100 সেমি । | মৃদু শীতল শীতকাল ও মৃদু উষ্ণ গ্রীষ্মকাল। |
তুন্দ্রা | অক্ষাংশগত: 60°- 80° উত্তর এবং 60°-75° দক্ষিণ অক্ষাংশ। আঞ্চলিক: কানাডার উত্তরাংশ, গ্রিনল্যান্ড, সুমেরু মহাসাগর। | বার্ষিক গড় উষ্ণতা : 12° সে এর নীচে। উষ্ণতার প্রসর: 28-30° সে। বার্ষিক বৃষ্টিপাত: 5-25 সেমি। | শীতকাল দীর্ঘস্থায়ী, গ্রীষ্মকাল স্বল্পস্থায়ী। তাপমাত্রা 7-8 মাস হিমাঙ্কের নিচে থাকে। |
উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রের সাহায্যে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্তকরণ
আর্দ্র নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল (wet equatorial climate)
স্থান : সিঙ্গাপুর (সিঙ্গাপুর, এশিয়া)। অক্ষাংশ : 1°36′ উত্তর। দ্রাঘিমা : 103°45′ পূর্ব ।
মাসের নাম: | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রি | মে | জুন | জুলা | আগ | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে |
উষ্ণতা (সেলসিয়াস) | 26.7 | 27.3 | 27.7 | 28.5 | 28.2 | 28.1 | 27.7 | 27.6 | 27.5 | 27.5 | 27.1 | 26.6 |
বৃষ্টিপাত (সেন্টিমিটার) | 24.2 | 16.3 | 18.4 | 17.8 | 17.1 | 16.2 | 15.8 | 17.6 | 16.9 | 19.3 | 25.5 | 24.1 |
গোলার্ধের শনাক্তকরণ : উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের তথ্য ও লেখচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এখানে প্রতিমাসের গড় উষ্ণতা প্রায় সমান । বার্ষিক উষ্ণতা 1.9° সে । সারাবছর বৃষ্টিপাত হয় । এই অঞ্চলটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত । নিরক্ষরেখা বরাবর কোনো স্থানের গোলার্ধ নির্ণয় করা কঠিন, তাই গোলার্ধ নির্ণয় করা যাবে না ।
জলবায়ুর শনাক্তকরণ : এখানে বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর খুব কম । সারাবছর গড় উষ্ণতা এক থাকে । বছরে বৃষ্টিপাত বেশি হয় । 16.3 সেমির কমে এখানে বৃষ্টি হয় না । সারাবছর উষ্ণ – আর্দ্র ঋতু বিরাজ করে তাই বলা যায় এই স্থানটি নিরক্ষীয় জলবায়ুর অন্তর্গত ।
ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু (Tropical monsoon climate)
স্থান : কলকাতা (ভারত), অক্ষাংশ : 22°34′ উত্তর । দ্রাঘিমা : 88°24′ পূর্ব ।
মাসের নাম | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রি | মে | জুন | জুলা | আগ | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে |
উষ্ণতা (সেলসিয়াস) | 19.5 | 22.2 | 27.3 | 30.2 | 30.5 | 30.1 | 28.8 | 28.7 | 28.9 | 27.6 | 23.4 | 20.7 |
বৃষ্টিপাত (সেন্টিমিটার) | 1.2 | 2.8 | 3.4 | 5.2 | 13.7 | 29.2 | 33.8 | 33.2 | 25.4 | 12.7 | 2.7 | 0.5 |
গোলার্ধ সংস্করণ : উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের তথ্য ও লেখচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায় শীতকাল অর্থাৎ জানুয়ারি , ফ্রেব্রুয়ারী ও নভেম্বর , ডিসেম্বর এখানে উষ্ণতা কম থাকে । গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ এপ্রিল -সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানে উষ্ণতা বেশি থাকে । 21 শে জুন সূর্যরশ্মি লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং 22 শে ডিসেম্বর সূর্যরশ্মি তীর্যকভাবে পড়ে । 5-6 মাস অর্থাৎ জুন মাসের আগে ও পরে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং ডিসেম্বরের আগে ও পরে 4 মাস শীতকাল বিরাজ করে । তাহলে বোঝায় যাচ্ছে জায়গাটি উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত ।
জলবায়ুর শনাক্তকরণ : এখানে শীতকালে উষ্ণতা কম থাকে এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কম থাকে । আর গ্রীষ্মকালে এর ঠিক উল্টো টা হয় উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত বেশি । মে মাসের পর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে কিরণ দেয়, কিন্তু বৃষ্টিপাত হয় বলে এখানে উষ্ণতা কম থাকে । তাহলে বোঝায় যাচ্ছে এই স্থানটি ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত ।
ক্রান্তীয় মরু জলবায়ু(Tropical Hot Desert climate)
স্থান : ফিনিক্স (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) । অক্ষাংশ (33°27′ উত্তর) । দ্রাঘিমা : 112°07 পশ্চিম
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রি | মে | জুন | জুলা | আগ | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে |
উষ্ণতা (সেলসিয়াস) | 13.6 | 15.5 | 18.5 | 22.5 | 27.8 | 32.7 | 34.6 | 34.7 | 30.5 | 26.2 | 17.8 | 14.4 |
বৃষ্টিপাত (সেন্টিমিটার) | 2.3 | 2.3 | 2.5 | 0.7 | 0.2 | 0 | 0.5 | 2.6 | 2.5 | 1.2 | 1.9 | 1.8 |
গোলার্ধ শনাক্তকরণ : জানুয়ারী-মার্চ ও নভেম্বর -ডিসেম্বর উষ্ণতা কম অর্থাৎ শীতকাল । এপ্রিল – অক্টোবর উষ্ণতা বেশি অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল । জুন মাসে সূর্য উত্তর গোলার্ধে লম্বভাবে কিরণ দেয় তাই এখানে গ্রীষ্মকাল । আর ডিসেম্বরে তীর্যক ভাবে কিরণ দেয় বলে এখানে ডিসেম্বর শীতকাল । অতএব স্থানটি উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত ।
জলবায়ু শনাক্তকরণ : এখানে উষ্ণতা চরমভাবাপন্ন । মোট বৃষ্টিপাত 18.4 সেমি । এখানে জলবায়ু সারাবছর শুষ্ক থাকে, জুন মাস এখানে বৃষ্টিহীন । এই স্থানটি উত্তর গোলার্ধের ক্রান্তীয় উষ্ণ মরু জলবায়ুর অন্তর্গত ।
ভুমধ্যসাগরীয় জলবায়ু (Mediterranean climate)
স্থান : কেপটাউন (দক্ষিণ আফ্রিকা) , অক্ষাংশ : (33°53′ দক্ষিণ), দ্রাঘিমা : (18°25′ পূর্ব)
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রি | মে | জুন | জুলা | আগ | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে |
উষ্ণতা (সেলসিয়াস) | 20.5 | 20.4 | 19.2 | 16.9 | 14.4 | 12.5 | 11.9 | 12.4 | 13.7 | 15.6115.65 | 17.9 | 19.5 |
বৃষ্টিপাত(সেমি) | 1.5 | 1.7 | 2.0 | 4.1 | 6.9 | 9.3 | 8.2 | 7.1 | 4.0 | 3.0 | 1.4 | 1.7 |
গোলার্ধ শনাক্তকরণ : জানুয়ারি – মার্চ এবং নভেম্বর – ডিসেম্বর মাস উষ্ণতা বেশি অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল । এপ্রিল-অক্টোবর উষ্ণতা কম তাই শীতকাল থাকে । সূর্যের পতণ কোণ সর্বাধিক থাকে দক্ষিণ গোলার্ধে জানুয়ারি-মার্চ এবং নভেম্বর- ডিসেম্বর মাসে আর কম থাকে এপ্রিল – অক্টোবর অর্থাৎ স্থানটি দক্ষিণ গোলার্ধে ।
জলবায়ু শনাক্তকরণ : প্রায় 5 মাস শুষ্ক গ্রীষ্মকাল এবং 7 মাস আর্দ্র শীতকাল । বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম । এখানকার আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির । এই স্থানটি দক্ষিণ গোলার্ধের ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অন্তর্গত ।
তুন্দ্রা জলবায়ু (tundra climate)
স্থান : (কিরুনা) সুইডেন। অক্ষাংশ : 67°51′ উত্তর । দ্রাঘিমা : 0°20′ পূর্ব ।
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রি | মে | জুন | জুলা | আগ | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে |
উষ্ণতা (সেলসিয়াস) | –13.9 | –12.4 | 8.7 | 3.2 | 3.4 | 9.0 | 12.0 | 9.8 | 4.6 | –4.4 | –8.1 | –11.9 |
বৃষ্টিপাত(সেমি) | 3.0 | 2.5 | 2.5 | 2.7 | 3.4 | 4.8 | 8.6 | 7.4 | 4.9 | 4.7 | 4.1 | 3.4 |
গোলার্ধ শনাক্তকরণ : এখানে জানুয়ারি – এপ্রিল এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর শীতকাল, উষ্ণতা হিমাঙ্কের নীচে থাকে । মে-সেপ্টেম্বর গ্রীষ্মকাল । উত্তর গোলার্ধে মে -সেপ্টেম্বর সূর্যরশ্মি তীর্যক ভাবে পড়ে আর জানুয়ারি – এপ্রিল ও অক্টোবর – ডিসেম্বর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে । অর্থাৎ এই স্থানটি উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত ।
জলবায়ু শনাক্তকরণ : এখানে প্রায় 5 মাস শীতকাল এবং 7 মাস গ্রীষ্মকাল । সারাবছর বৃষ্টিপাত ঘটলেও পরিমাণ কম আর বেশি বৃষ্টিপাত গ্রীষ্মকালে হয় । অতএব এই স্থানটি তুন্দ্রা জলবায়ুর অন্তর্গত ।
SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of Bayumondol bhugol madhyamik
1 MARKS QUESTIONS of Bayumondol bhugol madhyamik
1)সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমন্ডলের উচ্চতা কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত।
উত্তর : -10,000 কিলোমিটার পর্যন্ত।
2)বায়ুমন্ডলে কোন গ্যাস বেশি পরিমাণে থাকে?
উত্তর : -নাইট্রোজেন।
3)নিস্ক্রিয় গ্যাসের নাম লেখ?
উত্তর : -নিয়ন , আর্গন।
4)বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কত?
উত্তর : -0.003%
5)জলীয় বাষ্প কাকে বলে?
উত্তর : – জলের গ্যাসীয় অবস্থাকে।
6)বায়ুমন্ডলে যে সূক্ষ সূক্ষ ধূলিকণার উপাদান গুলি থাকে তার নাম কী?
উত্তর : -এরোসেল।
7)গ্রিনহাউস প্রভাবের সঙ্গে জলীয় বাষ্পের সম্পর্ক কী?
উত্তর : -জলীয় বাষ্প তাপ ধরে রাখে এবং বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
8)সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ারের এর বিস্তৃতি কত?
উত্তর : -ভূ পৃষ্ঠ থেকে 90 কিমি পর্যন্ত।
9)হেটরোস্ফিয়ার স্তরের বিস্তৃতি কত?
উত্তর : -90-10,000 কিমি।
10)হেটরোস্ফিয়ারকে কটি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উত্তর : – চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, পারমাণবিক অক্সিজেন, আণবিক নাইট্রোজেন স্তর।
11)আণবিক নাইট্রোজেন স্তরের বিস্তৃতি কত?
উত্তর : -90-200 কিমি।
12)ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা মেরু অঞ্চলে কত কিমি?
উত্তর : -18 কিমি।
13)বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা ট্রপোপজে কত ডিগ্রি?
উত্তর : -60℃।
14)নিরক্ষীয় অঞ্চলে ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা কত কিলোমিটার?
উত্তর : -18 কিমি।
15)বায়ুমন্ডলের নীচের স্তরটি কী নামে পরিচিত?
উত্তর : -ট্রপোস্ফিয়ার।
16)ট্রপোস্ফিয়ারের অপর নাম কী?
উত্তর : -ক্ষুদ্ধমন্ডল।
17)প্রতি 1 কিলোমিটার উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উষ্ণতা হ্রাসের হার কত?
উত্তর : -6.4℃।
18)স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অপর নাম শান্তমন্ডল কেন?
উত্তর : -এখানে শান্ত আবহাওয়া বিরাজ করে তাই এর নাম শান্তমন্ডল।
19)ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমশ উষ্ণতা হ্রাস পাওয়াকে কী বলে?
উত্তর : -ল্যাপস রেট।
20)স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উর্ধ্ব স্তরের নাম কী?
উত্তর : -স্ট্র্যাটোপজ।
1)বায়ুমন্ডলের বিস্তার 10,000 কিমি।
উ:-শু
2)বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন আছে 78%।
উ:-অ (20.90%)
3)মেসোস্ফিয়ারে ভ্যান অ্যালেন বলয় দেখা যায়।
উ:-অ(ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে)
4)ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা বাড়লে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
উ:-অ( উষ্ণতা কমে)
5)ট্রপোস্ফিয়ারকে সমমন্ডল বলা হয়।
উ:- শু
6)বায়ুতে ভাসমান ছোটো ছোটো ধূলিকণা অ্যারোসেল নামে পরিচিত।
উ:- শু
7)মেসোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মাঝের অংশ ট্রপোপজ।
উ:-অ(স্ট্র্যাটোপজ)
8)মেসোস্ফিয়ারের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা হ্রাস পায়।
উ:- শু
9)টার্বোপেজ হল হেটরোস্ফিয়ার ও হেমোস্ফিয়ারের সীমারেখা।
উ:- অ(টর্বোপস)
10)প্রাকৃতিক সৌরপর্দা হল মেসোস্ফিয়ার।
উ:- অ(ওজনোস্ফিয়ার)
1)বায়ুমন্ডলে কার্বনডাইঅক্সাইড ___________ পরিমাণে থাকে।
উ:-0.03%
2)ক্রান্তীয় অঞ্চলে জলীয় বাষ্প __________ পরিমাণে থাকে।
উ:-4%
3)ধূলিকণার প্রাকৃতিক উৎস হল_________।
উ:-অগ্ন্যুৎপাত
4)_________ থেকে প্রায় 90 কিমি পর্যন্ত বায়ুমন্ডলীয় উপাদানগুলির পরিমাণ একই থাকে।
উ:- ভূপৃষ্ঠ
5)___________হল হেটরোস্ফিয়ারের সর্বশেষ স্তর।
উ:- হাইড্রোজেন স্তর
6)বায়ুমন্ডলে সর্বাধিক আছে _________ গ্যাস।
উ:-নাইট্রোজেন
7)__________ হল ক্ষুদ্ধমন্ডল।
উ:-ট্রপোস্ফিয়ার
8)__________ ও ___________ এর মধ্যবর্তী স্তর হল স্ট্র্যাটোপজ।
উ:-স্ট্যাটোস্ফিয়ার ,মেসোস্ফিয়ার
9)___________উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে উত্তাপ কমে যাওয়াকে বলে উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক হার।
উ:-ট্রপোস্ফিয়ারে
10)1 কিমি উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে ট্রপোস্ফিয়ারে উষ্ণতা ________℃ হারে হ্রাস পায়।
উ:-6.4
Multiple Choice Questions – 1 Marks of Bayumondol Bhugol Madhyamik
1) বায়ুমন্ডল সর্বোচ্চ বিস্তার কত?
ক) 200 কিমি।
খ) 800 কিমি ।
গ) 10000 কিমি ।
ঘ) 500 কিমি।
উত্তর: গ) 10000 কিমি ।
2) বায়ুমন্ডলে হোমোস্ফিয়ার কোথায় অবস্থান করে?
ক) 90 কিমি উর্ধ্বে।
খ) 800 কিমি উর্ধ্বে।
গ) 10000 কিমি উর্ধ্বে।
ঘ) 20 কিমি উর্ধ্বে।
উত্তর: ক) 90 কিমি উর্ধ্বে।
3) বায়ুমন্ডলের উপরের স্তর কোনটি?
ক) স্ট্যাটোস্ফিয়ার।
খ) মেসোস্ফিয়ার।
গ) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
ঘ) ট্রপোপজ।
উত্তর: গ) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
4) শান্তমন্ডল কোন স্তরকে বলা হয়?
ক) স্ট্যাটোস্ফিয়ার।
খ) মেসোস্ফিয়ার।
গ) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
ঘ) ট্রপোপজ।
উত্তর: ক) স্ট্যাটোস্ফিয়ার।
5) ট্রপোস্ফিয়ার দেখতে কেমন?
ক) উপবৃত্তকার।
খ) গোলাকার।
গ) চৌকো।
ঘ) আয়তকার।
উত্তর: ক) উপবৃত্তকার।
6) বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কত?
ক) 20.95%
খ) 30.5%
গ) 50.6%
ঘ) 67.4%
উত্তর: ক) 20.95%।
7) বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ কত?
ক) 0.009%
খ) 0.002%
গ) 0.003%
ঘ) 0.004%
উত্তর: গ) 0.003%
8) বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কত?
ক) 78.04%
খ) 30.5%
গ) 50.6%
ঘ) 67.4%
উত্তর: ক) 78.04%
9) বায়ুমন্ডলে কোন গ্যাসীয় উপাদান বেশি মাত্রায় থাকে?
ক) অক্সিজেন
খ) নাইট্রোজেন।
গ) হাইড্রোজেন।
ঘ) কার্বন।
উত্তর: খ) নাইট্রোজেন।
10) ক্ষুদ্ধ মন্ডল বলা হয় কোন স্তরকে?
ক) মেসোপজ।
খ) ট্রপোপজ।
গ) মেসোস্ফিয়ার।
ঘ) ট্রপোস্ফিয়ার
উত্তর: ঘ) ট্রপোস্ফিয়ার
11) স্ট্যাটোস্ফিয়ার ও ট্রপোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী সীমারেখা কোনটি?
ক) মেসোপজ।
খ) ট্রপোপজ।
গ) মেসোস্ফিয়ার।
ঘ) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
উত্তর: খ) ট্রপোপজ।
12) নীচের কোনটি নিস্ক্রিয় গ্যাস?
ক) নিয়ন।
খ) ক্রেপটন।
গ) আর্গন।
ঘ) রেডন।
উত্তর: গ) আর্গন।
13) নিরক্ষরেখার ওপরে ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা কত কিমি?
ক) 18কিমি।
খ) 12কিমি।
গ) 34 কিমি।
ঘ) 23 কিমি।
উত্তর: ক) 18কিমি।
14) মুক্ত মেঘ দেখা যায় কোন স্তরে?
ক) স্ট্যাটোস্ফিয়ার।
খ) মেসোস্ফিয়ার।
গ) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
ঘ) ট্রপোপজ।
উত্তর: ক) স্ট্যাটোস্ফিয়ার।
15) প্রতি হাজার মিটার উষ্ণতায় ট্রপোস্ফিয়ারে কত হারে উষ্ণতা কমে?
ক) 2.4℃
খ) 6.4℃
গ) 4.5℃
ঘ) 6.7℃
উত্তর: খ) 6.4℃।
16) ভূপৃষ্ঠ থেকে 3,500 থেকে 10,000 কিমি উচ্চতায় বায়ুমন্ডলে কোন স্তর দেখা যায়?
ক) অক্সিজেন স্তর।
খ) নাইট্রোজেন স্তর।
গ) হাইড্রোজেন স্তর।
ঘ) হিলিয়াম স্তর।
উত্তর: গ) হাইড্রোজেন স্তর।
17) সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মেরু অঞ্চলের ট্রপোস্ফিয়ার এর বিস্তার কত কিমি?
ক) 10 কিমি।
খ) 20 কিমি।
গ) 9 কিমি।
ঘ) 40 কিমি।
উত্তর: গ) 9 কিমি।
18) ওজোন স্তরের প্রাধান্য কোন স্তরে দেখা যায়?
ক) স্ট্যাটোস্ফিয়ার।
খ) মেসোস্ফিয়ার।
গ) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
ঘ) ট্রপোপজ।
উত্তর: ক) স্ট্যাটোস্ফিয়ার।
19) অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে কোন গ্যাস?
ক) ওজোন গ্যাস।
খ) নাইট্রোজেন।
গ) অক্সিজেন।
ঘ) হাইড্রোজেন।
উত্তর: ক) ওজোন গ্যাস।
20) স্ট্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ার মাঝের স্তর কোনটি?
ক) স্ট্যাটোপজ
খ) মেসোস্ফিয়ার।
গ) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
ঘ) ট্রপোপজ।
উত্তর: ক) স্ট্যাটোপজ
Short Questions – 2-3 Marks of Bayumondol Bhugol Madhyamik
1 ) বায়ুমন্ডল বলতে কী বোঝ?
উ:- ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে যে অদৃশ্য আবরণ পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে তাকে বলা হয় বায়ুমন্ডল।
এই বায়ুমন্ডল বিভিন্ন রকম গ্যাসীয় উপাদান,ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্পের মিলনে তৈরি হয়।পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষন শক্তির মাধ্যমে বায়ুমন্ডল পৃথিবীতে আবদ্ধ থাকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে 10,000 কিমি পর্যন্ত বায়ুমন্ডলের অস্তিত্ব রয়েছে।
2) বায়ুমন্ডলের দুটি প্রধান উপাদানের নাম ও পরিমাণ লেখ।
উ:-বায়ুমন্ডলের দুটি প্রধান উপাদান হল অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন।
অক্সিজেনের পরিমাণ:-20.95%
নাইট্রোজেনের পরিমাণ:-78.09%
3) বায়ুমন্ডলের কোন উপাদানগুলি পরিবর্তনশীল?
উ:-বায়ুমন্ডলে কিছু ভাসমান কঠিন পদার্থ থাকে।যেমন-মেঘ, কুয়াশা,জলীয় বাষ্প, লবণকণা,ধূলিকণা
আগ্নেয়গিরির ভষ্ম এসবের দ্বারা সৃষ্টি হয় ।এইসব উপাদানগুলি পরিবর্তনশীল নয়।
5) বায়ুমডলের নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির শতকরা পরিমাণ লেখ।
উ:- নিস্ক্রিয় গ্যাসগুলির মোট পরিমাণ হল-0.003%।
জেনন- (Xe-0.00009%),হিলিয়াম(He-0.00053% – ),হাইড্রোজেন – (H-0.00005%),নিয়ন -(Ne-0.00182%) ,আর্গন – (Ar-0.934%),ক্রিপটন(Kr-0.00012%)।
6) বায়ুমন্ডলের উপাদানগুলির নাম ও একটি করে গুরুত্ব লেখ?
উ:- বায়ুমন্ডলের তিনটি উপাদান হল- বিভিন্ন রকম গ্যাস,জলীয় বাষ্প ,ধূলিকণা ও বিভিন্ন রকম কণিকা।
- বিভিন্ন রকম গ্যাস:-উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্বসন কার্যে অক্সিজেন প্রয়োজন , উদ্ভিদের সালোকসংস্লেষে কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রয়োজন।
- জলীয় বাষ্প :-ঘনীভবন প্রক্রিয়ার দ্বারা তুষার ,মেঘ, বৃষ্টি ,ঝড় প্রভৃতি সৃষ্টি করে।
- বিভিন্ন রকম কণিকা:-বায়ুতে যেসব ভাসমান কণাগুলি থাকে সেগুলির মাধ্যমে জলীয় বাষ্পকে বরফকণা ও জজলকণাতে পরিবর্তিত হতে সাহায্য করে।
7) এরোসেল বলতে কী বোঝ?
উ:- বায়ুর মধ্যে ভাসমান অবস্থায় যে ছোটো ছোটো ধূলিকণা গুলো থাকে তাকে এরোসেল বলা হয়।বায়ুমন্ডলে এই ধূলিকণার পরিমাণ বেশি।বিভিন্ন কলকারখানার ধাতব কণা,মরু অঞ্চল বা সমুদ্রতীরের ধুলোবালী, আগ্নেয়গিরির ভষ্মীভূত ছাই,উল্কার ধ্বংসাবশেষ এসব থেকে এরোসেল সৃষ্টি হয়।
8) রাসায়নিক গঠনের ভিত্তিতে বায়ুমন্ডলের প্রধান স্তর গুলির নাম লেখ।
উ:- রাসায়নিক গঠনের ভিত্তিতে বায়ুমন্ডলের প্রধান স্তর দুটি।একটি হল সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার, আর অপরটি হল বিষমমন্ডল বা হেটরোস্ফিয়ার।ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 90 কিমি উঁচুতে যে স্তরটি থাকে সেটা হল সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার।এই স্তরে গ্যাসের অনুপাত সমান থাকে। আর 90 কিমির উর্ধে প্রায় 10,000 পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে বলা হয় বিষমমন্ডল বা হেটরোস্ফিয়ার।এই স্তরে গ্যাসের অনুপাত সমান থাকে না।
9) হোমোস্ফিয়ার বলতে কী বোঝ?
উ:-ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 90 কিমি উঁচুতে বায়ুমন্ডল গঠনকারী বিভিন্ন গ্যাসের উপাদান গুলি মিশ্রিত অবস্থায় থাকে যে স্তরে সেটাই হল হোমোস্ফিয়ার । এই স্তরে নাইট্রোজেন ,অক্সিজেন ,কার্বন ডাই অক্সাইড আর্গন প্রভৃতি গ্যাসগুলি একসাথে মিশে একটা সমসত্ত্ব মিশ্রণ গঠন করে।
10) হেটরোস্ফিয়ার বলতে কী বোঝ?
উ:-হোমোস্ফিয়ারের উপরে প্রায় 10,000 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে গ্যাসের অনুপাত গুলি নির্দিষ্ট
থাকে না এই স্তর ই হল হেটরোস্ফিয়ার।এই স্তরকে চারটি উপস্তরে ভাগ করা হয়-আণবিক নাইট্রোজেন স্তর,হাইড্রোজেন স্তর,পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর ,হিলিয়াম স্তর।
11) ট্রপোস্ফিয়ার বলতে কী বোঝ?
উ:-গ্রিক শব্দ ‘Tropos’ অর্থাৎ ‘Trubulence ‘ বা ‘Mixing’ এর বাংলা অর্থ মিশে যাওয়া। এবং ‘Sphere’
এর অর্থ হল অঞ্চল বা মন্ডল এর থেকেই এই স্তরের নাম হয়েছে ট্রপোস্ফিয়ার।ভূপৃষ্ঠ থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে 18 কিমি উর্ধ্বে এবং মেরু অঞ্চলে 8-9 কিমি উর্ধ্বে বিস্তৃত। এই স্তরটি দেখতে উপবৃত্তাকার।
12) ট্রপোস্ফিয়ারের চারটি বৈশিষ্ট্য লেখ:-
উ:-1)এই স্তরের তাপমাত্রা 57℃-60℃ পর্যন্ত।
2)এই স্তরের আর আর এক নাম হল ক্ষুব্ধমন্ডল।কারণ এই স্তরে সমস্ত রকমের প্রাকৃতিক দূর্যোগ গুলি ঘটে।
3)এই স্তরে জলীয় বাষ্প,ধূলিকণা এবং 75% গ্যাসীয় উপাদান থাকে।
4)এই স্তরে প্রতি 1 কিমি উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে 6.4℃ হারে উষ্ণতা হ্রাস পায়।
13) ট্রপোপজ বলতে কী বোঝ?
উ:- ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এর মাঝে 2-3 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে তাপীয় মিশ্রণ হয়না এবং বায়ু চলাচল করতে পারে না এই অঞ্চল হল ট্রপোপজ। বায়ু চলাচল করতে পারে না বলে এই অঞ্চলকে স্তব্ধ স্তর বলা হয়। এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে জেটবায়ু প্রবাহিত হয়।বায়ুর গড় তাপমাত্রা থাকে 60℃।
14) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বলতে কী বোঝ?
উ:-ট্রপোপজের উপরে প্রায় 50কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত স্তর হল স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। এই স্তরকে শান্তমন্ডল বলা হয়। কারণ এই স্তরে আবহাওয়া শান্ত থাকে ।এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতাও বৃদ্ধি পায়।
15) স্ট্র্যাটোপজ কী?
উ:-স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উর্ধ্বের শান্ত স্তরটি হল স্ট্র্যাটোপজ। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের মাঝে এই স্তর থাকে ।এর কাজ হল বায়ু চলাচল রোধ করা ।এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উষ্ণতা হ্রাস পায় । কিন্তু 50 কিমি উচ্চতার পর থেকে উষ্ণতা আবার কমতে থাকে।
16 )ওজোন গহ্বর কী?
উ:-সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মির হাত থেকে সমগ্র জীবজগৎকে রক্ষা করে এই ওজোন স্তর।ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব বায়ুমন্ডলে সমান থাকে না।ওজোন স্তরে যখন।ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব 200 DU এর নীচে নেমে যায় তখন ওখান থেকে অতিবেগুনী রশ্মি প্রবেশ করে একে বলা হয় ওজোন গহ্বর।
আন্টার্কটিকা মহাদেশের উপর ওজোন স্তরের এই পাতলা হয়ে যাওয়া অবস্থাকে ডাঃ জে.সি. ফারমেন
1985 খ্রিস্টাব্দে ওজোন গহ্বর বলে অভিহিত করেছেন।
17) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে কেন জেটবিমান চলাচল করে?
উ:-জেটবিমান চলাচল করে কারণ, এই স্তরের আবহাওয়া শান্ত থাকে।এই স্তরে শুধুমাত্র ধূলিকণা থাকে জলীয় বাষ্প থাকে না।ঝড়,মেঘ-বৃষ্টি,বজ্রপাত এই স্তরে দেখা যায় না।বায়ু নিশ্চল ও শান্ত থাকায় ঘর্ষণজনিত বাধা কম হয় তাই এই স্তরে জেট বিমান চলাচল করে।
18) ওজোনোস্ফিয়ারের গুরুত্ব লেখ।
উ:-স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উপরে 15 থেকে 30 কিমি উচ্চতায় অবস্থিত ওজোন গ্যাসের স্তর।এই স্তর টি পৃথিবীকে আগলে রেখেছে।এই স্তরটিই হল ওজোনোস্ফিয়ার।
এর গুরত্ব গুলি হল :
- এই স্তর বায়ুমন্ডলের নিম্নস্তরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- এই স্তর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে গোটা জীবজগৎকে রক্ষা করে।
19) মেসোস্ফিয়ার বলতে কী বোঝ?
উ:-গ্রিক শব্দ ‘Meso’ অর্থাৎ ‘ মধ্যভাগ’ আর ‘Sphere’ অর্থ অঞ্চল বা মন্ডল। এর থেকেই এই মেসোস্ফিয়ার নামটি এসেছে।স্ট্রাটোপজের উপরে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 80 কিমি উর্ধ্বে বায়ুমন্ডলের মাঝের স্তর হল মেসোস্ফিয়ার।এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উষ্ণতা কমতে থাকে।এই স্তরের সীমায় উষ্ণতা 100℃।
20) মেসোস্ফিয়ারে উল্কাপিন্ড পুড়ে ছাই হয়ে যায় কেন?
উ:-উল্কাপিন্ড গুলি মহাকাশ থেকে প্রবল উত্তপ্ত হয়ে এই স্তরে নেমে আসে।এই স্তরের ঘনত্ব ও উত্তাপের হঠাৎ পরিবর্তনে উল্কাপিন্ড গুলি সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারে না।উল্কাপিন্ডগুলি যখন ম্যাগনেটোস্ফিয়ার ,এক্সোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে উল্কাপিন্ডগুলি প্রবেশ করে তখন ঘনত্ব কম থাকে এরপর যখন মেসোস্ফিয়ারের মধ্যে প্রবেশ করে তখন ঘনত্ব বেশি থাকায় উল্কাপিন্ড পুড়ে ছাই হয়ে যায়।এছাড়াও মেসোস্ফিয়ারের উর্ধ্বে 100℃ তাপমাত্রা থাকার কারণে উল্কা পিন্ড পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
১. বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব কি ?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব :
- জীবজগৎ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।
- আবহাওয়া পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন ঘনীভবন, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ বায়ুমণ্ডলের জন্যই ঘটে ।
- পৃথিবীতে প্রানের স্পন্দন সৃষ্টির অন্যতম উপাদান হল বায়ুমণ্ডল ।
২. বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর- বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব অপরিসীম।
- বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণ: বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প আছে বলেই মেঘ সৃষ্টি হয় এবং ওই মেঘ থেকেই বৃষ্টিপাত হয়। বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে গেলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে যায়। যেমন- ভারতে শীতকালে মৌসুমি বায়ু মহাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে। ফলে বৃষ্টিপাত কম হয়।
- জীবের অস্তিত্ব রক্ষা: জলের আর এক নাম জীবন। তাই, জলীয় বাষ্প না থাকলে পৃথিবীতে জীবনের উদ্ভব হত না।
- জলবায়ু নির্ধারণ: শিশির, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি, বৃষ্টি, তুষার প্রভৃতি জলীয় বাষ্পের বিভিন্ন অবস্থা কোনো স্থানের জলবায়ু নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। যেমন—বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের জলবায়ু আর্দ্র, আবার অল্প বৃষ্টিপাত বা জলীয় বাষ্পের স্বল্পতা শুষ্ক মরু জলবায়ুর সৃষ্টি করে।
৩. বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেন গ্যাসের গুরুত্ব সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর – বায়ুমন্ডলের প্রধান গ্যাসীয় উপাদান নাইট্রোজেন (৭৮.০৮%)। তাই এর গুরুত্ব যথেষ্ট।
- প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহ গঠনে সাহায্য – প্রাণীজগৎ সরাসরি এই গ্যাস ব্যবহার না করলেও কতকগুলি শুটি জাতীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে। এই জাতীয় উদ্ভিদগুলিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে প্রাণী নিজের দেহের নাইট্রোজেনের চাহিদা মেটায়।
- মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি: শুঁটি জাতীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন মাধ্যমে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। মানুষ শস্যাবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে এই উর্বরাশক্তি কাজে লাগায়।
- সার উৎপাদন: বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সার উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়।
৪. বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন গ্যাসের গুরুত্ব নির্ণয় করো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ (২০.৯৪%) খুব বেশি না হলেও জীবজগতের কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
- প্রাণের প্রধান উপকরণ: অক্সিজেন ছাড়া শ্বাসকার্য সম্ভব নয় বলে জীবনধারণের জন্য সকল প্রাণীই অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল। তাই অক্সিজেন ছাড়া জীবজগতের অস্তিত্ব অসম্ভব।
- বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য রক্ষা – বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে বা বেড়ে গেলে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে।
- আবহবিকারে সাহায্য করা – অক্সিজেন বিভিন্ন শিলা-গঠনকারী খনিজের সঙ্গে সহজে মিলিত হয়ে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলার আবহবিকারে বা বিচূর্ণীভবনে সাহায্য করে। এইরূপ রাসায়নিক আবহবিকারের অক্সিডেশান) ফলেই লোহায় মরিচা ধরে।
- আগুন জ্বালাতে সাহায্য করা: অক্সিজেনের উপস্থিতি ছাড়া কখনোই আগুন জ্বালানো সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, অক্সিজেন ছাড়া সমগ্র বিশ্ব প্রায় অচল।
৫. বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর- বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ খুবই সামান্য (০.০৩৩%) হলেও এর গুরুত্ব সীমাহীন।
- খাদ্য তৈরি- কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়া উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে না। আর প্রাণীজগৎ খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। তাই, এই গ্যাস না থাকলে পৃথিবীর উদ্ভিদ জগৎ এবং প্রাণীজগৎ উভয়ই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ- বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ও এই গ্যাসের বিশেষ ভূমিকা আছে। কারণ, কার্বন ডাই অক্সাইড তাপ শোষণ করে।
- আবহবিকার– ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের শিলার আবহবিকারেও কার্বন ডাইঅক্সাইড (কার্বোনেশানের মাধ্যমে)-এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। অঙ্গার ময় খনিজ এবং চুন জাতীয় খনিজ গঠনেও কার্বন ডাই অক্সাইড সাহায্য করে।
- পরিবেশ দূষণ – বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাসের পরিমাণ সামান্য বেড়ে গেলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং পরিবেশ দূষিত হয়ে জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলে।
৬. বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব নির্ণয় করো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান ধূলিকণা। এর গুরুত্বও উল্লেখযোগ্য।
- মেঘ সৃষ্টি: বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করেই জলীয় বাষ্প জল বিন্দুতে পরিণত হয় বা মেঘ ও কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
- সৌরতাপ বণ্টন: বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা সমূহ সূর্য রশ্মি দ্বারা সরাসরি উত্তপ্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে এবং পৃথিবীতে সৌরতাপ বন্টনে প্রভাব বিস্তার করে।
- আকাশের বর্ণ নির্ধারণ: ধূলিকণার জন্যই আকাশে এত বর্ণবৈচিত্র্যের মেলা, এত সৌন্দর্য। বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার সময় সূর্যরশ্মির প্রতিসরণ ও বিচ্ছুরণ ঘটে। এভাবেই সৃষ্টি হয় নানা বর্ণের তরঙ্গ। এগুলির মধ্যে নীলাভ আলোর প্রাধান্য বেশি। তাই আকাশ এত নীল। বায়ুমণ্ডলে যদি ধূলিকণা না থাকত, সূর্যালোক বিচ্ছুরিত হত না, দিনের বেলাও আকাশ গভীর অন্ধকারে ডুবে থাকত।
৭. হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল কাকে বলে ?
উত্তর – ইংরেজি শব্দ হোমোস্ফিয়ার-এর বাংলা প্রতিশব্দ নেমে সমমণ্ডল। ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে প্রায় ৯০ কিমি পর্যন্ত বাষ্প, বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন, বিশেষ করে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, এই স্তরেই সৃষ্টি হয়। প্রবল বায়ুর উদ্দামতা, কার্বন ডাইঅক্সাইড, আর্গন, হিলিয়াম প্রভৃতি বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত। প্রায় একই ধরনের থাকে। এসব কারণে হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল বলা হয়।
৮. অ্যালবেডো কাকে বলে ?
উত্তর –সূর্যরশ্মির তাপীয় বিকিরণের ফলে বায়ুমণ্ডলের অবস্থিত মেঘপুঞ্জ, ধুলিকনা, ভূপৃষ্ঠ থেকে বিচ্ছুরিত তাপের ৩৪% প্রতিফলিত হয়ে তরঙ্গরুপে আবার মহাশূন্যে ফিরে যায় । এর ফলে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হতে পারে না । একেই অ্যালবেডো বলে ।
৯. কার্যকরী সৌর বিকিরণ কাকে বলে ?
উত্তর – সূর্য থেকে আসা মোট শক্তির ২০০ কোটি ভাগের ১ ভাগকে ১০০% ধরা হলে তার ৩৪% পৃথিবীপৃষ্ঠ কে উত্তপ্ত করতে পারে না । ফলে বাকি ৬৬% নানান পদ্ধতিতে (পরিবহন, পরিচলন, বিকিরণ) পৃথিবীপৃষ্ঠ কে উত্তপ্ত করে, একেই কার্যকরী সৌর বিকিরণ বলে ।
১০. ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধ মন্ডল বলতে কি বোঝো ?
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তরের যে অংশটিতে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমতে থাকে তাকে ট্রপোস্ফিয়ার বলা হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর বিস্তৃতি নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় ১৬-১৮ কিমি এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় ৮-৯ কিমি। সাধারণভাবে দেখা যায়, এখানে প্রতি ১,০০০ মিটার উচ্চতায় ৬.৪৬ °সে হারে উত্তাপ কমে এবং এইভাবে কমতে কমতে ট্রপোস্ফিয়ারের শেষ সীমায় বায়ুর তাপমাত্রা প্রায় – ৫৭ °সে থেকে – ৬০ °সে পর্যন্ত নেমে যায়। বায়ুমণ্ডলের এই অংশে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয় পর্যন্ত বাষ্প, ধূলিকণা ইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। মেঘ বা বায়ু প্রবাহ জন, এই স্তরেই সৃষ্টি হয়। প্রবল বায়ুর উদ্দামতা, ঝড়-বৃষ্টি, পাত বিদ্যুৎ-বজ্রপাত প্রভৃতির সৃষ্টি এই স্তরে হয়ে থাকে। তাই টিকে ট্রপোস্ফিয়ার কে ক্ষুব্ধমণ্ডলও বলা হয়। এসব কারণে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ার আমাদের কাছে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় যেখানে তাপমাত্রা কমেও না বা বাড়েও না, অর্থাৎ প্রায় ধ্রুবক থাকে, তাকে বলা হয় ট্রপোপজ ।
long questions – 5 marks of Bayumondol bhugol madhyamik
১. বায়ুমণ্ডল কী কী উপাদানে গঠিত আলোচনা করো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডল নানা ধরনের উপাদানে গঠিত। এইসব উপাদানের মধ্যে আছে 1.গ্যাসীয় উপাদান 2. জলীয় বাষ্প 3. ধূলিকণা।
- গ্যাসীয় উপাদান: বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাসীয় উপাদান আছে সেগুলির মধ্যে নাইট্রোজেন (শতকরা ৭৮:০৮ ভাগ) এবং অক্সিজেন (শতকরা ২০.৯৪ ভাগ) প্রধান। এই দুটি গ্যাস ছাড়া বায়ুমণ্ডলে খুব অল্প মাত্রায় আর্গন (শতকরা ০.৯৩ ভাগ), কার্বন ডাই অক্সাইড (শতকরা ০.০৩৩ ভাগ), হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, ক্রিপটন, মিথেন, নিয়ন, ওজোন, জেনন প্রভৃতি গ্যাস আছে। এদের মধ্যে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও আর্গন বায়ুমণ্ডলের শতকরা প্রায় ৯৯ ভাগ স্থান দখল করে আছে।
- জলীয় বাষ্প: জলের গ্যাসীয় অবস্থাকে বলা হয় জলীয় বাষ্প। এই উপাদানটি সাগর, মহাসাগর, নদনদী, হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়, গাছপালা প্রভৃতি থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে মেশে। সাধারণত বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ যদিও খুব সামান্য থাকে তথাপি ঋতুভেদে বা অঞ্চলভেদে এই পরিমাণের কিছুটা তারতম্য হয়।
- ধূলিকণা: বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে যথেষ্ট পরিমাণে ধূলিকণা থাকে এবং অন্যান্য গ্যাসীয় অণুর মতো ধূলিকণাও বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শুষ্ক মরু অঞ্চল বা সমুদ্রতীরের ধুলোবালি, কলকারখানার পোড়া কয়লার ছাই প্রভৃতি সুক্ষ্ম ধূলিকশারূপে বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
২. বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব বর্ণনা করো।
উত্তর – বায়ুমণ্ডলের উপাদানসমূহের প্রভাব বায়ুমণ্ডলের প্রায় প্রতিটি উপাদানই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন_____
- নাইট্রোজেন (৭৮.০৮%)ঃ শুঁটি জাতীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী কতগুলো ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটির উর্বরা শক্তি বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সার উৎপাদনের কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন পরোক্ষভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর শরীরের নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে।
- অক্সিজেন (২০.৯৪%): অক্সিজেন ছাড়া জীবজগতের অস্তিত্ব অসম্ভব। কারণ, অক্সিজেন ছাড়া শ্বাসকার্য সম্ভব নয় বলে। জীবনধারণের জন্য সকল প্রাণীই অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল। অক্সিজেন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলার আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন ঘটায়। কেবল অক্সিজেনের উপস্থিতিতে আগুন জ্বালানো সম্ভব।
- কার্বন ডাই অক্সাইড (০.০৩৩%): কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়া উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে না। আর প্রাণীজগৎ খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এই গ্যাসটির বিশেষ ভূমিকা আছে। কার্বন ডাই অক্সাইড শিলার রাসায়নিক আবহবিকার ঘটায়। @ অঙ্গারময় খনিজ এবং চুনজাতীয় খনিজ গঠনে কার্বন ডাই অক্সাইড এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ওজোন: ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে ২৪-৪০ কিমি-র মধ্যে যে ওজোন গ্যাসের স্তর পৃথিবীকে বেষ্টন করে রয়েছে, তার জন্যেই সূর্য থেকে ছুটে আসা ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে না।
- জলীয় বাষ্প: বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প আছে বলেই মেঘ সৃষ্টি হয় এবং ওই মেঘ থেকেই বৃষ্টি হয়। জলের প্রধান উৎস বৃষ্টিপাত। জলের অপর নাম জীবন। জলীয় বাষ্প না থাকলে পৃথিবীতে জীবনের কোনো অস্তিত্ব থাকত না।
- ধূলিকণা: বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণা কে আশ্রয় করে জলীয় বাষ্প জল বিন্দুতে পরিণত হয় বা মেঘ ও কুয়াশা সৃষ্টি হয়। বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাসমূহ সূর্যরশ্মিতে সরাসরি উত্তপ্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে এবং পৃথিবীতে সৌরতাপ বণ্টনে প্রভাব বিস্তার করে।
৩. বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অথবা,
তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করো।
উত্তর – তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডল কে ছয়টি স্তরে ভাগ করা যায়—
- ট্রপোস্ফিয়ার
- স্ট্রাটোস্ফিয়ার,
- মেসোস্ফিয়ার
- থার্মোস্ফিয়ার
- এক্সোস্ফিয়ার
- ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
- ট্রপোস্ফিয়ার – বায়ুমণ্ডলের প্রথম বা একেবারে নীচের স্তরটির নাম ট্রপোস্ফিয়ার । ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্তর। এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের তিন-চতুর্থাংশ পাওয়া যায়। বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ও লবণের কণা যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। মেঘের সৃষ্টি ও বায়ুপ্রবাহ এই স্তরেই প্রধানত দেখা যায়। ঘূর্ণবাত, টর্নেডো, ঝড়-বৃষ্টি, বিদ্যুৎ-বজ্রপাত, উষ্ণ ও শীতল বায়ু প্রাচীর বা সীমান্ত, নিম্নচাপ ও উচ্চচাপ ইত্যাদি ট্রপোস্ফিয়ারেই কেবল ঘটে। ট্রপোস্ফিয়ারের উৎস সীমাকে বলে ট্রপোপজ। এখানে উষ্মতা কমেও না বা বাড়ে না, অর্থাৎ প্রায় ধ্রুবক থাকে।
- স্ট্রাটোস্ফিয়ার : ট্রপোস্ফিয়ারের ঠিক ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরটির নাম স্ট্রাটোস্ফিয়ার । স্ট্রাটোস্ফিয়ারে বায়ুপ্রবাহ না থাকায় ঘর্ষণজনিত জাড্যও খুব কম এবং এই স্তরের নিম্নাংশ দিয়ে জেট বিমান চলাচল করে। এর ফলে বিমান চালনার দামি জ্বালানির সাশ্রয় হয়। স্ট্রাটোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং ৫০ কিমি উচ্চতায় উষ্ণতা বেড়ে হয়–৪°সে। প্রধানত ওজোনের অণুগুলির দ্বারা অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হওয়ার কারণে এই স্তরে উষ্ণতা বাড়ে। স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমার নাম স্ট্র্যাটোপজ।
- মেসোস্ফিয়ার – বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তর বা স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ঠিক ঊর্ধ্বের স্তরটির নাম মেসোস্ফিয়ার ইংরেজি ‘মেসোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘মেসোস’, যার অর্থ ‘মধ্যম’ এবং ‘স্ফিয়ার’, যার অর্থ ‘অঞ্চল’ বা ‘মণ্ডল’ থেকে উদ্ভূত। এই স্তর ৫০-৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। মেসোস্ফিয়ারের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা ক্রমশ কমতে থাকে এবং ৮০ কিমি উচ্চতায় উন্নতা কমে হয় প্রায় ৯০°সে। মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে আগত উর্ধ্ব ঐ মেসোস্ফিয়ারে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মেসোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে বলা হয় মেসোপজ।
- থার্মোস্ফিয়ার : বায়ুমণ্ডলের চতুর্থ স্তর বা মেসোস্ফিয়ারের ঠিক ঊর্ধ্বের স্তরটিকে থার্মোস্ফিয়ার বলে। ঊর্ধ্ব থার্মোস্ফিয়ারে চৌম্বক বিক্ষেপজনিত কারণে সৃষ্ট অসংখ্য মুক্ত ইলেকট্রন কণা প্রতিফলিত তরঙ্গ সুমেরুতে সুমেরুপ্রভা ও কুমেরুতে কুমেরুপ্রভা নামের মেরুজ্যোতির সৃষ্টি করে। এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্মতা অতিদ্রুত বাড়তে থাকে এবং ঊর্ধ্বসীমায় তাপমাত্রা হয় ১,৫০০ °সে। বায়ুমণ্ডলের অন্যান্য স্তরের তুলনায় থার্মোস্ফিয়ারের বিস্তৃতি যথেষ্ট বেশি হলেও বায়ুমণ্ডলীয় মোট ভরের মাত্র ১/২০০ ভাগ এখানে পাওয়া যায়।
- এক্সোস্ফিয়ার: বায়ুমণ্ডলের পঞ্চম স্তরটির নাম এক্সোস্ফিয়ার। এই স্তর ৬০০-১,৫০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। বায়ুমণ্ডলের এই স্তর ক্রমশ মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায়। এক্সোস্ফিয়ার থেকে বায়বীয় কণাগুলি ক্রমাগত মহাশূন্যে নির্গত হয়। এক্সোস্ফিয়ার অত্যন্ত কম ঘনত্বের হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা গঠিত। এই স্তরের উন্নতা ১,৫০০ °সে থেকে ১,৬০০ °সে।
- ম্যাগনেটোস্ফিয়ার – এক্সোস্ফিয়ারের পরবর্তী অংশ ম্যাগনেটোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। এই অংশ বায়ুশূন্য। এরপর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সৌরমণ্ডলে বিলীন হয়ে যায়।
৪. রাসায়ানিক গঠন অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের স্তরভেদ দেখাও ।
উত্তর – রাসায়ানিক গঠন অনুযায়ী বায়ুমণ্ডল দুই স্তর বিশিষ্ট ।
সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ার – পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৯০ কিমি পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে রাসায়ানিক গঠন ও নানা গ্যাসের অনুপাত একই থাকে । একেই সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ার বলে । ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ার এই মণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত ।
হোমোস্ফিয়ার প্রধানত তিন ধরনের উপাদানে তৈরি —
- বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থের মিশ্রিত রুপ
- জলীয় বাস্প
- জীবাণু, লবনকনা, ধুলিকনা জাতীয় জৈব ও অজৈব কনিকা ।
হোমোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য —
- বায়ুমণ্ডলের ৯৯% গ্যাসীয় উপাদান ও প্রচুর পরিমান জলীয় বাস্প, ধুলিকনা দ্বারা এই স্তর গঠিত।
- এই স্তরে নাইট্রোজেনের পরিমান সবচেয়ে বেশি ।
- থার্মোস্ফিয়ারের নীচের অংশ ।
বিষমমণ্ডল বা হেটরোস্ফিয়ার – সমমণ্ডলের উপরে বায়ুমণ্ডলের যে স্থানে রাসায়ানিক গঠন ও নানা গ্যাসের অনুপাত এক নয়, প্রতিটি স্তরে আলাদা গ্যাসের প্রাধান্য আছে তাকে বিষমমণ্ডল বা হেটরোস্ফিয়ার বলে ।
হেটেরোস্ফিয়ারের চারটি স্তর বিশিষ্ট —-
৯০-২০০ কিমি পর্যন্ত আণবিক নাইট্রোজেন স্তর
২০০-১১০০ কিমি পর্যন্ত পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর
১১০০-৩৫০০ কিমি পর্যন্ত হিলিয়াম স্তর
৩৫০০-১০,০০০ কিমি পর্যন্ত হাইড্রোজেন স্তর
হেটেরোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য —
- এই স্তরে ভারী থেকে হালকা গ্যাস আণবিক ওজোন অনুযায়ী অবস্থান করে ।
- ভৌত ও রাসায়ানিক ধর্ম স্বতন্ত্র ।
৫. ওজোন স্তর কীভাবে সৃষ্টি হয় —ব্যাখ্যা দাও ।
উত্তর – ৮০-১০০ কিমি উচ্চতায় ওজোন স্তর সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রস্মি শোষিত হয় । সূর্য থেকে আশা রস্মির ৪ ইউনিট সরাসরি ওজোন স্তর শোষণ করে । এছারাও ০.২৯ কিমির ও কম তরঙ্গ রস্মিও ওজোন স্তর শোষণ করে । ওজোন হালকা নীল রঙের উত্তেজক ও তিব্র আঁশটে গ্যাস। অক্সিজেনের তিনটি পরমানু নিয়ে এটি গঠিত । বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাস সৃষ্টি হয় দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে —
প্রথম, দ্বিপারমানবিক অক্সিজেন ফোটন কনার (UV –C & UV-B) দ্বারা দুটি অক্সিজেন পরমানুতে বিয়োজিত হয়ে যায় , একে আলোক রাসায়ানিক বিক্রিয়া বলে ।
O2 UV ফোটন O+O
O + O2 O3
দ্বিতীয় , আলোক বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন প্রতিটি অক্সিজেন পরমানুর সাথে অবিয়জিত দ্বিপারমানবিক অক্সিজেন অনুর সংঘর্ষণের ফলে ওজোন উৎপন্ন হয় । এই প্রক্রিয়াটি তাপ উৎপাদক হওয়ায় স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়বীয় তাপমাত্রা বেশি হয় ।
৬. ওজোন স্তর ক্ষয়ের ফলে জীবজগতের ওপর কি প্রভাব পরে ?
উত্তর- সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর UV রস্মিকে ঢালের মত রক্ষা করে পৃথিবীর ওজোন স্তর । তবে এই ওজোন স্তর ধীরে ধীরে ক্ষয় প্রাপ্ত হচ্ছে । ওজোণ স্তর ক্ষয়ের প্রভাব গুলি হল —-
- UV রস্মির অধিক প্রভাবে মানুষের স্বাস্থে এর অদ্ভুত প্রভাব দেখা যায় ।
- মানুষের শরীরে ক্যান্সার এর প্রভাব বৃদ্ধি ।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস।
- প্রজনন ক্ষমতার হানি ঘটা ।
- ত্বকের বর্ন তামাটে রঙ ধারন করে।
- উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষ প্রক্রিয়া নষ্ট হয়।
- প্রাণীর শারীরিক বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার প্রক্রিয়া আনেকাংশে কমে যায় ।
- জলজ বাস্তুতন্ত্র প্রক্রিয়া বিনষ্ট হয় ।
- সর্বোপরি বিশ্ব উস্নায়ন, বায়ুচাপীয় পরিবর্তন , হিমবাহের গলন, নীচু অঞ্চলে প্রবল বন্যায় জল ঢুকে পরা সকল কিছুই এর ওপর নির্ভরশীল ।
- অ্যাসিড বৃষ্টি সৃষ্টি হচ্ছে ।
৭. ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার কারন সমূহ উল্লেখ কর ?
উত্তর – ওজোন স্তর বলতে সাধারণত আমরা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উপরিভাগের একটা বিশেষ অংশকে বুঝি । এটাকে ইংরেজিতে ওজোন লেয়ার বলা হয় । ওজোন স্তর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের এমন একটা অংশ যেখানে সাধারণত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তুলনায় খুব ঘন এবং তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রার ওজোন গ্যাস থাকে । এটা মূলত পৃথিবীর স্ট্রাটোস্ফিয়ার এর নিচে অবস্থিত ।
ওজোন স্তর নষ্টের কারণগুলি মূলত দুই প্রকার । যথা- ১. প্রাকৃতিক কারণ ,২. মনুষ্যসৃষ্ট কারণ ।
প্রাকৃতিক কারণঃ ওজোন স্তর বিনাশের জন্য দায়ী বজ্রপাত ,অগ্নুদগম,. আলোক-রাসায়নিক বিক্রিয়া ,অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব প্রভৃতি । এই সমস্ত কারণগুলি মূলত নিম্নলিখিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ওজোন গ্যাসের অনুকে ভেঙ্গে দিয়ে ওজোন স্তর বিনাশ ঘটায় । তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার যে প্রাকৃতিক কারণে ওজোন স্তর যেমন ধংস হয়, তেমনই প্রাকৃতিক কারণে এটি গড়েও ওঠে । তাই ওজোন স্তর বিনাশের পিছনে প্রাকৃতিক কারণগুলি তেমন মারাত্মক প্রভাব ফেলে না ।
মনুষ্যসৃষ্ট কারণ
- ক্লোরোফ্লোরো কার্বন(CFC): ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (CFC) বা ফ্রেয়ন একটি বিশেষ যৌগ, যা ওজোন স্তর বিনাশনের জন্য বিশেষভাবে দায়ী । ১৯৯৫ সালের পর থেকে বিশেষজ্ঞরা এটি থেকে নির্গত ক্লোরিনকে ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী করেন । একটি ক্লোরিন পরমাণু প্রায় এক লক্ষ ওজোন অনুকে ভেঙে দেওয়ার পরও অপরিবর্তিত থাকে ।O3 + Cl > O2 + O + Cl রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, ফোম শিল্প, রং শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, সুগন্ধি শিল্প, কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রের সার্কিট পরিষ্কার প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে CFC নির্গত হয় । এছাড়াও কলকারখানা-যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, ট্যানারি কারখানার বর্জ্য পদার্থ যা পরবর্তীতে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ক্লোরিন গ্যাস তৈরিতে ভূমিকা রাখে ।
- নাইট্রাস অক্সাইড(N2O): নাইট্রাস অক্সাইড হলো অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস যা ওজোন বিনাশনে ভূমিকা নেয় ।কৃষি ক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার, যানবাহন, নাইলন শিল্প প্রভৃতি উৎস রুপে কাজ করে ।
- নাইট্রোজেন অক্সাইড(NO): ওজোন স্তর বিনাশের পিছনে দায়ী অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো নাইট্রোজেন অক্সাইড ।এর উৎস হল জেট বিমান ।
- সালফারের কণাঃ ওজোন ধংসের পিছনে দায়ী উপাদানগুলির মধ্যে সালফারের কণাও ভুমিকা রাখে । কলকারখানা, যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া প্রভৃতি থেকে নির্গত হয় ।
৮. ওজোন মণ্ডল বিনাশ হওয়ার প্রভাব গুলি উল্লেখ কর ।
উত্তর- বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত ওজোন স্তর সমগ্র জীবজগৎ কে সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। সেই ওজোন স্তর আজ মনুষ্য সৃষ্ট গ্যাস ক্লোরোফ্লোরোকার্বনের কারণে ক্রমশ বিনাশ প্রাপ্ত হচ্ছে, যার প্রভাব সরাসরি পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের উপর গিয়ে পড়ছে। ওজোন স্তরের বিনাশের ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি অতি সহজেই পৃথিবীর বুকে প্রবেশ করছে। এই অতিবেগুনি রশ্মি গুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক UV – B, যা মানুষের স্বাস্থ্য, উদ্ভিদ, প্রানী, অনুজীব, বস্তু ও বায়ুর গুনমানের উপর ঋনাত্মক প্রভাব ফেলে।
মানুষ ও অন্যান্য প্রানীদের উপর প্রভাব – ওজোন স্তরের বিনাশ ও তার ফলে অতিবেগুনি রশ্মির পৃথিবীর মধ্যে প্রবেশ এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রানীদের উপর এই অতিবেগুনির সম্ভাব্য প্রভাব হল চোখের রোগ, ত্বকের ক্যানসার ও সংক্রামিত রোগ গুলির সংক্রমণের প্রভাব বৃদ্ধি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পরিমান হ্রাস। অতিবেগুনি রশ্মি – B চোখের কর্নিয়া ও লেন্সের ক্ষতি করে এবং অল্প বয়সে চোখে ছানি পরে যায়। ত্বকের ক্যানসার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি সাদা চামড়ার মানুষদের কারণ এদের শরীরে মেলানিনের পরিমান সবচেয়ে কম থাকে।
সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব – ফাইটোপ্ল্যাংটন সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে। এছাড়া বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব নিয়ন্ত্রনেও ফাইটোপ্ল্যাংটন গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। মানুষের প্রয়োজনীয় প্রানীজ প্রোটিনের ৩০% জোগান পাওয়া যায় সমুদ্র থেকে, পরোক্ষ ভাবে যার মূলে রয়েছে সেই ফাইটোপ্ল্যাংটন। এই ফাইটোপ্ল্যাংটন সমূদ্রের সর্বত্র সমান ভাবে পাওয়া যায় না, প্রধানত উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পরিমানে পাওয়া যায় এছাড়া মহীসোপান অঞ্চলেও পাওয়া যায়। গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে যে আন্টার্কটিকার পার্শ্ববর্তী সমুদ্র অঞ্চলে ফাইটোপ্ল্যাংটনের উৎপাদন অনেক হ্রাস পেয়েছে, যার একমাত্র কারণ আন্টার্কটিকায় ওজোন গহ্বরের সৃষ্টি, যার মাধ্যমে অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি, উভচর ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রানীর প্রারম্ভিক পর্যায়ে ক্ষতি সাধন করে থাকে।
৯. ওজোনস্তর সংরক্ষনের জন্য নেওয়া উদ্যোগগুলি আলোচনা কর ।
উত্তর – উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ওজোন ক্ষয়কারী পদার্থ সমূহের বায়ুমণ্ডলে নির্গমন বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেমন—রেফ্রিজারেটর, এয়ার কম্ডিশনার প্রভৃতি যন্ত্রে ক্লোরােফ্লুরােকার্বনের পরিবর্তে হাইড্রোজেন-সহ অন্যান্য পরিবেশের অনুকূল গ্যাসের ব্যবহার।
- CFC ওজোন স্তর ক্ষয়কারী রাসায়নিক যৌগের বিকল্প উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে, যেগুলি বাতাসে নির্গত হলেও কোনােভাবে ওজোন স্তরের ক্ষতি সাধন করবে না।
- ওজোন ক্ষয়কারী পদার্থ সমূহের ব্যবহার ও উৎপাদন ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে শেষে একেবারেই বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
- ওজোন স্তরের ক্ষয় নিয়ন্ত্রণে 1987 খ্রিষ্টাব্দে কানাডার মন্ট্রিলে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা মন্ট্রিল প্রটোকল নামে পরিচিত। 1990 খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনে এবং 1992 খ্রিষ্টাব্দে কোপেনহেগেনে স্বাক্ষরিত চুক্তির গুলির প্রয়াগে সুনিশ্চিত করা হয়
- ক্লোরোফ্লোরোকার্বনের পরিবর্ত দ্রব্য হিসেবে হাইড্রোক্লোরোফ্লোরোকার্বন (HCFC) এবং হাইড্রোফ্লোরোকার্বন (HFC) যৌগেরও ব্যবহার 2040 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
১. বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় কি কি পদ্ধতিতে তা লেখ ।
উত্তর – বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার কারণগুলি নিম্নরুপ —–
(১) বিকিরণ: ক্ষুদ্র তরঙ্গ যুক্ত সূর্য রশ্মি ভূপৃষ্ঠে প্রত্যক্ষভাবে উত্তপ্ত করার পর ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর বৃহত্তর দ্বারা পরোক্ষভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এই পদ্ধতিতে বিকিরণ বলে
(২) পরিবহন: সূর্যতাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠ ওপরে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন নিচের স্তর উত্তপ্ত হয় | তারপর বায়ুর স্বাভাবিক ধর্ম অনুযায়ী এই তাপ উপরোক্ত অপেক্ষাকৃত শীতল বিস্তারের পরিবাহিত হয় | এইভাবে বায়ুস্তর থেকে বায়ু সরে তাপ পরিবাহী তো হতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত উভয় বায়ুস্তরের তাপ সমান হয় এই পদ্ধতিকে পরিবহন পদ্ধতিতে বলে |
(৩) পরিচলন: উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ তাপের ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর সর্বাধিক উত্তপ্ত হয় এবং উষ্ণ বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় | তখন এই বায়ু শূন্যস্থান পূরণের জন্য আশেপাশে উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চলের শীতল ওভারি বায়ু ছুটে আসে এবং পুনরায় উত্তপ্ত হয় | এইভাবে উপরে শীতল বায়ু নিচে আছে এবং নিচে উষ্ণ বায়ু উপরে উঠে বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে এই পদ্ধতিকে পরিচালন পদ্ধতি বলে |
(৪) অ্যাডভেকশন : কোন স্থানের উষ্ণ বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে গতিপথের অঞ্চল সমূহ উত্তপ্ত করে এবং অন্য স্থানের শীতল বায়ু কে উত্তপ্ত করে একশন বল
(৫) ভূগর্ভস্থ তাপ,
(৬) লীন তাপ,
(৭) মনুষ্য কর্তৃক সৃষ্ট তাপ বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হতে সাহায্য করে
২. বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণগুলি ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর – কোনো স্থানের উষ্ণতা বলতে সেই স্থানের বায়ুমন্ডলের উষ্ণতাকে বোঝায়। বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার প্রধান উৎস সূর্য। সূর্যরশ্মি সরাসরি বায়ুমণ্ডলকে তেমন উত্তপ্ত করতে পারে না। সূর্যতাপে ভূপৃষ্ঠ প্রথমে উত্তপ্ত হয় এবং ওই উষ্ণ ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরনের ফলেই বায়ুমন্ডল পরোক্ষ ভাবে উত্তপ্ত হয়। বায়ু প্রধানত বিকিরন, পরিবহন, পরিচলন ও তাপশোষণ পদ্ধতিতে উষ্ণ হয়। গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ থার্মোমিটারের সাহায্যে বায়ুর উষ্ণতা মাপা হয়। কিন্তু ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা সমান নয় ও কোথাও কম আবার কোথাও বেশি, বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের কারণ গুলি হল –
(ক) সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলঃ সূর্য থেকে যে শক্তি পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় তাকে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বলে। এই শক্তির শতকরা ৩৪ ভাগ বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করে মহাশূন্যে প্রতিফলিত বা বিচ্ছুরিত হয়ে যায়। একে পৃথিবীর অ্যালবেডো বলে। সূর্য থেকে আগত অবশিষ্ট ৬৬% ভাগ শক্তি ক্ষুদ্রতরঙ্গ রূপে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠকে প্রথমে উত্তপ্ত করে, পরে উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের দীর্ঘতরঙ্গ রূপে তাপ বিকিরনের ফলে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি তা শোষন করে ধীরে ধীরে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে তোলে। সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলের তারতম্যে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্য ঘটে।
(খ) অক্ষাংশঃ পৃথিবীর অভিগত গোলক আকৃতি, পৃথিবীর বার্ষিক গতি, কক্ষতলের সাথে পৃথিবীর মেরুরেখার সাড়ে ৬৬ ডিগ্রি কোণে হেলানো অবস্থান প্রভৃতি কারণে নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে ও দক্ষিনে দুই মেরুর দিকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ তির্যক ভাবে পড়ে এবং কর্কটক্রান্তিরেখার থেকে মকরক্রান্তিরেখার মধ্যে কোনো না কোনো স্থানে মধ্যাহ্ন সূর্য রশ্মি লম্বভাবে পড়ে। লম্ব ভাবে পতিত সূর্যরস্মিতে উত্তাপের পরিমান বেশি হয় এবং তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমান কম হয়। সাধারন ভাবে নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে বা দক্ষিনে প্রতি ডিগ্রি অক্ষাংশের তফাতে ০.২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে তাপ কমে যায়।
(গ) দিনের পরিমানঃ পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাস-বৃদ্ধি হয় ও ঋতু পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে উষ্ণতার তারতম্য ঘটতে দেখা যায়। দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেলে কোনো স্থানের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, আবার রাত্রির দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেলে ওই স্থানের শীতলতা বৃদ্ধি পায়। এই কারণে গ্রীষ্মকালে দিন বড়ো হয় বলে উত্তাপের পরিমান বেশি হয় এবং শীতকালে দিন ছোটো হয় বলে উত্তাপের পরিমান হ্রাস পায়।
(ঘ) ভূমির উচ্চতাঃ ট্রপোস্ফিয়ারে সমুদ্রতল থেকে যতই ওপরে ওঠা যায় বায়ুর উষ্ণতা ততই হ্রাস পেতে থাকে। এই কারণে কলকাতার তুলনায় দার্জিলিং এবং দিল্লির তুলনায় সিমলার উষ্ণতা অনেক কম হয়।
(ঙ) পর্বতের অবস্থানঃ বায়ুর গতিপথে পর্বত বা উঁচুভূমি আড়াআড়ি ভাবে অবস্থান করলে বায়ুপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। উষ্ণ বায়ু ও শীতল বায়ু এই ভাবে বাঁধা প্রাপ্ত হলে পর্বতের উভয় দিকে উষ্ণতার পার্থক্য দেখা যায়।
(চ) ভূমির ঢালঃ উত্তর গোলার্ধে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত পর্বতগুলির উত্তর ঢাল অপেক্ষা দক্ষিণ ঢালে সূর্যরশ্মি বেশি লম্ব ভাবে পড়ে। ফলে দক্ষিণ ঢালের উষ্ণতা বেশি হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা দেখা যায়।
(ছ) সমুদ্র থেকে দূরত্বঃ যে স্থান সমুদ্র থেকে যত দূরে অবস্থিত সেখানে সমুদ্রের প্রভাব পড়ে না বলে শীত ও গরম উভয়ই খুব বেশি হয়, অর্থাৎ জলবায়ুর চরমভাব দেখা যায়। কিন্তু সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে উষ্ণতার পরিমান কখনোই খুব বেশি বা খুব কম হয় না।
(জ) সমুদ্রস্রোতঃ সমুদ্রস্রোত বায়ুর উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রন করে। উষ্ণ স্রোতের দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং শীতল স্রোতের দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলে উষ্ণতা হ্রাস পায়।
(ঝ) বায়ুপ্রবাহঃ উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং শীতল বায়ু প্রবাহিত অঞ্চলে উষ্ণতা হ্রাস পায়।
(ঞ) মেঘের আবরনঃ আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে দিনের বেলায় ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বেড়ে যায় ও রাতের বেলাআয় তাপ বিকিরনের ফলে উষ্ণতা হ্রাস পায়। এই জন্য মরু অঞ্চলে দিন ও রাত্রির উষ্ণতার মধ্যে এতো পার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলে সৌররশ্মি ভূপৃষ্ঠে তেমন পৌছাতে পারে না বলে দিনের বেলা উত্তাপ কমে এবং রাতের বেলা এই মেঘ ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে বাঁধা দেয় বলে উত্তাপ বাড়ে। এই জন্য মেঘমুক্ত রাত্রি অপেক্ষা মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি বেশি উষ্ণ হয়।
(ট) বনভূমির অবস্থানঃ ভূপৃষ্ঠে ঘন বনভূমি অবস্থান করলে তা মাটির অভ্যন্তরে জলীয় বাষ্প ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে মাটি আর্দ্র থাকে। ঘন বনভূমির জন্য সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠকে বেশি উত্তপ্ত করতে পারে না এবং ভূপৃষ্ঠও খুব তাড়াতাড়ি তাপ বিকিরন করে শীতল হতে পারে না। আবার বনভূমি বৃষ্টিপাত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলে বায়ুর উষ্ণতা স্বাভাবিকভাবে কিছুটা হ্রাস পায়।
৩.” তাপমাত্রার উল্লম্ব ও অনুভূমিক বণ্টন “ কি ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর – নিরক্ষরেখা থেকে যত উত্তর ও দক্ষিন দিকে যাওয়া হয় তাপমাত্রার পরিমান হ্রাস পায় । একে তাপমাত্রার অনুভুমিক বণ্টন বলে । আবার পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে যত ওপরে ওঠা যায় তাপমাত্রা তত কমে একে তাপমাত্রার উল্লম্ব বণ্টন বলে।
উল্লম্ব বণ্টন – পরিচলন শক্তির স্থানান্তরের ওপর উল্লম্ব উষ্ণতার ঢাল নির্ভর করে ।তাপের পরিবহন, বিকিরণ ও ঘনীভবনের ফলে লীণতাপ সংগ্রহের মাধ্যমে এই শক্তি স্থান পরিবর্তন করতে পারে । ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে বায়ুর চাপ কম থাকে ফলে উষ্ণতাও কমতে থাকে , উল্লম্ব প্রবাহ এই ছাপের ওপর নির্ভরশীল ।
অনুভূমিক বণ্টন – নিম্ন থেকে উচ্চ অক্ষাংশে উষ্ণতার হ্রাস ঘটে , একে অনুভূমিক বণ্টন বলে । অক্ষাংশ, স্থলভাগ ও জলভাগের অবস্থান, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে অনুভূমিক বণ্টন ঘটে ।
৪. বৈপরীত্য উষ্ণতা কাকে বলে ? উষ্ণতার বৈপরীত্য কি কি কারনে ঘটে তা উল্লেখ কর ।
উত্তর – সাধারণ নিয়ম অনুসারে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা কমতে থাকে । কিন্তু কখনও কখনও উত্ততা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ূমন্ডলের উষ্ণতা হ্রাস না পেয়ে বরং বেড়ে যায়, একে বায়ুমণ্ডলের বৈপরীত্য উত্তাপ বা বৈপরীত্য উষ্ণতা বলে । এই ব্যতিক্রম সাধারণত পার্বত্য উপত্যকার শান্ত আবহাওয়ায় দেখতে পাওয়া যায় ।
যেমন, কোনও শৈলাবাসে গেলে বৈপরীত্য উত্তাপ ব্যাপারটা ভালোভাবে পরিলক্ষিত হয় । ভোরবেলায় এখানে বৈপরীত্য উত্তাপের জন্য উপত্যকাগুলি মেঘে ঢাকা থাকে । বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ূর উষ্ণতা বাড়লে উপত্যকাগুলি মেঘমুক্ত হয় ।
বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ:-
১) ঠান্ডা বায়ু গরম বায়ুর চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী । তাই শীতকালে ‘U’ আকৃতির পার্বত্য উপত্যকার উপরের অংশের বাতাস রাত্রিবেলায় তাপ বিকিরণের ফলে খুব ঠান্ডা ও ভারী হয়ে পড়ে এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ওই বাতাস (যা ‘ক্যাটাবেটিক’ বায়ু নামে পরিচিত) পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আস্তে আস্তে নীচে নেমে এসে উপত্যকার নীচের অংশ বেশি ঠান্ডা হয় এবং নীচের উষ্ণ বায়ু ওপরে ওঠে । এর ফলে উপত্যকার নীচের অংশের তুলনায় ওপরের অংশে বায়ুর তাপমাত্রা বেশি হয় ।
২) ভূপৃষ্ঠ বায়ুমন্ডলের তুলনায় দ্রুতহারে তাপ বিকিরণ করে বলে ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুও বেশি শীতল হয় । অন্যদিকে, বায়ুর পরিবহণ ক্ষমতা কম হওয়ায় উপরের স্তরের বায়ু সহজে শীতল হয় না । এই কারণে বৈপরীত্য উষ্ণতার সৃষ্টি হয় ।