ভারতের ইতিহাসে নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর অবদান
হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এর নেতৃত্বে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী গঠিত হয়। নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী ছিল একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যার লক্ষ্য ছিল পাশ্চাত্য যুক্তিবাদ ও সততার মাধ্যমে সমাজ সংস্কার করা। তারা মূলত হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামি এবং কুপ্রথার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেছিল।
ডিরোজিওর আন্দোলন পাশ্চাত্য দর্শন এবং যুক্তিবাদ নিয়ে ছিল, এবং এর মাধ্যমে ভারতীয় সমাজে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম হয়। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় কুসংস্কার এবং অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা। তারা বহুবিবাহ, নারী শিক্ষা, এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়ে পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন।
১৮২৮ সালে ডিরোজিও ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি বিতর্ক সভা প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে সমাজের বিভিন্ন সমস্যায় আলোচনা এবং সমাধান প্রস্তাব করা হতো। তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, এবং মানবাধিকার সম্পর্কে গুরুত্ব দেয়ার জন্য এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।
কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায়, রাধানাথ শিকদার, রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী, এবং দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন ডিরোজিওর প্রধান অনুগামী। তারা তার ধারণাকে সমাজে ছড়িয়ে দেন এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালান।
পরে, ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সমালোচনা করেন এবং তাদেরকে ‘নকল গোষ্ঠী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে তাদের প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ, সমাজে একটি নতুন পরিবর্তন শুরু হয়, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা এবং আধুনিকতার ধারাকে প্রভাবিত করে।
ডিরোজিওর মৃত্যুর পর, তার অনুগামীরা বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন, যেমন ‘জ্ঞানান্বেষণ’, ‘এনকোয়েরার’, ‘বেঙ্গল স্পেক্টেটর’, এবং ‘হিন্দু পাইওনিয়ার’। এই পত্রিকাগুলি সামাজিক কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, এবং জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে এবং নারী শিক্ষা, অসভর্ণ বিবাহ, এবং ধর্মীয় মুক্তি এর প্রচার করে।
নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর প্রধান অবদান:
- পাশ্চাত্য যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞান নিয়ে সমাজের মধ্যে সচেতনতা তৈরি।
- বহুবিবাহ, নারী শিক্ষা, এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কিত পত্রিকায় লিখন।
- অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা, যা বিতর্ক সভার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারে সহায়ক হয়।
- জ্ঞানান্বেষণ এবং হিন্দু পাইওনিয়ার পত্রিকার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের প্রচার।
- ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী আন্দোলন এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম।
নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী ছিল ভারতের সমাজ সংস্কারের পথপ্রদর্শক এবং এর মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব সমাজে গভীরভাবে স্থাপিত হয়। তাদের এই আন্দোলনের ফলে ভারতীয় সমাজে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে, যা সমাজে মুক্তি এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত হয়।
Join our membership at https://skillyogi.org/student-registration-cbse to access all study materials and resources. Also, buy your WBBSE Class 10 Itihas History Study Notes at https://skillyogi.org/wbbse-class-10-itihas-history-study-notes to enhance your exam preparation!
Related posts:
- ইংরেজি শিক্ষার প্রসার – দ্বিতীয় অধ্যায় – সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা WBBSE Class 10 Itihas
- নারী শিক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্রের ভূমিকা – দ্বিতীয় অধ্যায় – সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা WBBSE Class 10 Itihas
- পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাজা রামমোহণ রায় ও রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা – দ্বিতীয় অধ্যায় – সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা WBBSE Class 10 Itihas
- কেশবচন্দ্র সেন – দ্বিতীয় অধ্যায় – সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা WBBSE Class 10 Itihas