fbpx

Chapter 2 Continuity of Life (জীবনের প্রবাহমানতা) Life Science জীবন বিজ্ঞান WBBSE Madhyamik Class 10

আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে

প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি

Here you will learn the basics of CHAPTER 2 – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ (Heredity And Some Common Genetic Diseases) in a simple language it is for Bengali medium students who are studying under West Bengal Board of Secondary Education and preparing for their exam (Class 10 WBBSE) Here you will find all necessary and important WBBSE Madhyamik Suggestions, notes, solved sample question paper in Bangla along with video lectures from expert teachers

কোশ বিভাজন ও কোশ চক্র :

জীব দেহ কোশ দ্বারা গঠিত এবং জীব দেহের সমস্ত কাজ ইহার দ্বারাই পরিচালিত হয়। অন্যদিকে কোশের একটি অন্যতম উপাদান হলো জিন যা মূলত হল ডিএনএর একটি অংশ বিশেষ। ইউক্যারিওটিক কোশের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই নিউক্লিয়াসের মধ্যে ক্রোমোজোম থাকে এবং তাহার মধ্যে DNA উপস্থিত থাকে।

ক্রোমোজোম, জিন এবং DNA এর মধ্যবর্তী সম্পর্ক বিশেষ :

 

নিউক্লিয়াসের ক্রোমাটিন জালিকা নামক এক সূক্ষ্ম জালকাকার গঠন উপস্থিত থাকে। এই ক্রোমাটিন জালিকা সৃষ্টিকারী প্রতিটি ক্রোমাটিন তন্তু বাস্তবে এক প্রকার নিউক্লিও প্রোটিন তৈরি। মূলত ইহা থেকেই ক্রোমোজোম গঠিত হয়ে থাকে।

ক্রোমোজোম :

যে দন্ডাকার অংশবিশেষ ইউক্যারিওটিক কোশের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ ক্রোমাটিন জালিকার ক্রোমাটিন তন্তু থেকে উৎপন্ন হয় এবং যা মূলত নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত, যা কোন জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য সমূহকে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে, বহন করে থাকে এবং ওই প্রজাতির প্রজাতির বিবর্তন, প্রকরণ এবং পরিব্যক্তিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে তাদের আমরা ক্রোমোজোম বলে থাকি।

ক্রোমোজোমের উৎপত্তি :

ডিঅক্সিরাইবোজ নিউক্লিক অ্যাসিড হলো এক ধরনের ম্যাক্রো মলিকিউল যা মূলত কোশের নিউক্লিয়াস এর মধ্যে আংশিক উন্মুক্ত অবস্থায় অবস্থান করে। ডিএনএ দৃঢ়ভাবে কোন প্রোটিনকে পেঁচিয়ে কুণ্ডলীর আকারে অবস্থান করে।নিউক্লিক অ্যাসিড এবং প্রোটিন দ্বারা গঠিত এই নিউক্লিয় প্রোটিনের গঠনটি হল ক্রোমাটিন তন্তু অন্যদিকে কুণ্ডলীকৃত ক্রোমাটিন তন্তুর এই গঠনটিকে আমরা ক্রোমোজোম বলে থাকি। ক্রোমোজোম এবং ক্রোমাটিন তন্তু বাস্তবে ডিএনএ অনুর কুণ্ডলীকরনের দুটি আলাদা আলাদা অবস্থা।

ক্রোমোজোম নামটি প্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী ওয়ালডেয়ার।

জিন :

 

ডিএনএ মধ্যস্থ যেসকল কার্যকারী অংশবিশেষ কোন নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষে প্রয়োজনীয় সংকেত বহন করে থাকে এবং যা বংশগত বৈশিষ্ট্যের বাহক এবং ধারক হিসেবে কাজ করে থাকে তাকে আমরা জিন বলে থাকি।বিভিন্ন জিন বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্রের প্রকাশে সাহায্য করে থাকে।অপরদিকে ইউক্যারিওটিক কোশের ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের ঠিক উপরের অংশে ইহা রৈখিক ভাবে সাজানো থাকে। জিন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন বিজ্ঞানী জোহানসেন।

ক্রোমোজোম, জিন এবং ডি এন এর আন্তঃসম্পর্ক :

 

প্রোটিন এবং ডিএনএর সমন্বয়ের দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে ক্রোমোজোম এবং এই ক্রোমোজোম এর অন্তর্গত ডিএনএর কার্যকারী অংশবিশেষ গুলি হল জিন। সুতরাং বলা যায় ক্রোমোজোমই হলো ডিএনএ এবং জিনের বাহক এবং ধারক।

ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ সমূহ :

সকল প্রকার স্তন্যপায়ী প্রাণী ঘাসফড়িং পাখি ইত্যাদি প্রাণী কোশে মূলত দুই ধরনের ক্রোমোজোম লক্ষ্য করা যায়। যথা- অটোজোম ও সেক্স ক্রোমোজোম।

অটোজোম :  কোন জীবের যৌন যৌন বৈশিষ্ট্য ছাড়া দেহের বাকি দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন যে সকল ক্রোমোজোম বহন করে থাকে তাদের আমরা অটোজোম বলে থাকি।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মানুষের গায়ের রং উচ্চতা চুলের রং মুখমন্ডল ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলি মূলত অটোজোম এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।মানুষের দেহকোশে মোট অটোজোম এর সংখ্যা হল 22 জোড়া অর্থাৎ 44টি।

সেক্স ক্রোমোজোম : এই জাতীয় কোন ক্রোমোজোম কোন জীবের যৌন বৈশিষ্ট্য গুলির নিয়ন্ত্রণকারী জিনকে বাহির করে কোন জীবের লিঙ্গ নির্ধারণের সাহায্য প্রদান করে থাকে।এই সেক্স ক্রোমোজোম কে আমরা হেটারো ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম বলে থাকি। মানুষের ক্ষেত্রে সেক্স ক্রোমোজোম গুলি হল যথাক্রমে X ক্রোমোজোম এবং Y ক্রোমোজোম।

সকল মহিলা এবং পুরুষদের এক জোড়া করে সেক্স ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে।পুরুষের ক্ষেত্রে একটি করে X এবং Y (XY) ক্রোমোজোম লক্ষ্য করা যায়। অপরদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে দুটি করে (XX) ক্রোমোজোম লক্ষ্য করা যায়। বিজ্ঞানী স্টিভেন্স এবং উইলসন সেক্স ক্রোমোজোম আবিষ্কার করেছিলেন এবং বিজ্ঞানী কোরেন্স সর্বপ্রথম X ক্রোমোজোম পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।

ক্রোমোজোমের সংখ্যা :

 

ক্রোমোজোমের সংখ্যা সকল প্রজাতির জীবের জন্য স্থির নয়। ইহা বিভিন্ন প্রজাতির জীবের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে 2 অথবা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা এক হতেই পারে। জীবদেহে দুই ধরনের কোশ লক্ষ্য করা যায়। যথা- হ্যাপ্লয়েড এবং ডিপ্লয়েড কোশ। এই কারণে ক্রোমোজোমের সংখ্যা দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা- হ্যাপ্লয়েড কোশের সংখ্যা এবং ডিপ্লয়েড কোশ এর সংখ্যা।

হ্যাপ্লয়েড কোশ

হ্যাপ্লয়েড কোশ : একটি ক্রোমোজোম সেট যাতে এক বা একাধিক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে তাকে আমরা হ্যাপ্লয়েড সেট বলে থাকি। হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম যুক্ত কোশকে আমরা হ্যাপ্লয়েড কোশ বলে অভিহিত করে থাকে। ইহার একটি উদাহরণ হল জনন কোশ। মানবদেহে জনন কোশে 23 টি ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে।

যার মধ্যে 22 টি হল অটোজোম এবং অবশিষ্ট একটি হল সেক্স ক্রোমোজোম।

পুরুষের জনন কোশে অর্থাৎ শুক্রাণুতে প্রধানত যে কোন ধরনের সেক্স ক্রোমোজোম থেকে থাকে কিন্তু মহিলাদের ডিম্বানুতে একটি করে এক্স ক্রোমোজোমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

ডিপ্লয়েড কোশ

ডিপ্লয়েড কোশ : দুটি হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোমকে একত্রে আমরা ডিপ্লয়েড সেট ক্রোমোজোম বলে থাকি। ডিপ্লয়েড সেটে ক্রোমোজোম জোড়ায় জোড়ায় উপস্থিত করে। এই ডিপ্লয়েড সেট ক্রোমোজোমযুক্ত কোশকে আমরা ডিপ্লয়েড কোশ বলে থাকি। ইহার একটি মুখ্য উদাহরণ হলো দেহ কোশ। মানবদেহের ক্রোমোজোম সংখ্যা হল মোট 46 টি।

যার মধ্যে 22 জোড়া হলো অটোজোম এবং অবশিষ্ট দুটি সেক্স ক্রোমোজোম।

আমরা জানি পুরুষের ক্ষেত্রে দু’রকমের সেক্স ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে। এই কারণে পুরুষের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোমের সংখ্যা হল 44A + XY (যেখানে A হলো অটোজোম)। মহিলাদের ক্ষেত্রে দুটি এক্স ক্রোমোজোম উপস্থিত। এই কারণে মহিলাদের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা হল 44 A + XX।

ক্রোমোজোমের গঠনপ্রকৃতি :

ক্রোমোজোমের আকৃতি কোশ বিভাজনের বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তিত হয় । কোশ বিভাজনের সময় কেবলমাত্র মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের গঠন সম্পূর্ণ সুস্পষ্ট হয় । এই কারণে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে কেবলমাত্র মেটাফেজ দশাতেই ক্রোমোজোম গুলিকে সবচেয়ে সুস্পষ্টভাবে পরীক্ষা করা যায় । একটি আদর্শ ক্রোমোজোমে নিম্নলিখিত অংশগুলি লক্ষ্য করা যায়-

  1. ক্রোমাটিড : ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বরাবর যে সমপ্রকৃতির সম দৈর্ঘ্যের দুটি সূত্রাকার অংশবিশেষ লক্ষ্য করা যায় তাদের ক্রোমাটিড বলে । একটি ক্রোমোজোমে উপস্থিত দুটি ক্রোমাটিডকে একত্রে সিস্টার ক্রোমাটিড বলা হয় ।

কোশ বিভাজনের ইন্টারফেজ দশায় ক্রোমোজোমের মধ্যে দুটি সুক্ষ্ম তন্তুর মতো অংশ লক্ষ্য করা যায় । এগুলিকে বলা হয় ক্রোমোনিমাটা । ক্রোমোজোমের মধ্যে ক্রোমোনিমা তন্তুদ্বয় যদি পাশাপাশি অবস্থিত থেকে কুণ্ডলীকৃত হয়, তাদের সহজেই আলাদা করা যায় । এই ধরনের কুন্ডলীকে বলা হয় প্যারানেমিক কুণ্ডলী । আবার প্লেকটোনেমিক কুণ্ডলীতে দুটি তন্তু এমনভাবে পেঁচানো অবস্থায় থাকে যে তাদের সহজে আলাদা করা যায় না । ক্রোমোনিমা তন্তুদ্বয়ই মূলত ঘনীভূত এবং কুণ্ডলীকৃত হয়ে ক্রোমাটিড গঠন করে ।

  1. সেন্ট্রোমিয়ার : দুটি সিস্টার ক্রোমাটিড ক্রোমোজোমের যে অরঞ্জিত খাঁজযুক্ত অংশে সংযুক্ত থাকে, তাকেই সেন্ট্রোমিয়ার, মুখ্য খাঁজ বা প্রাথমিক খাঁজ বলে । ক্রোমোজোম বাহু হল সেই ক্রোমোজোমীয় অংশ যা সেন্ট্রোমিয়ারের উভয় পাশে বিস্তৃত অবস্থায় থাকে । আর কাইনেটোকোর হল সেই প্রোটিন নির্মিত, চাকতির মতো ত্রিস্তরীয় গঠন যা সেন্ট্রোমিয়ারকে ঘিরে অবস্থান করে ।

সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ : 

  • মেটাসেন্ট্রিক : সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মাঝখানে অবস্থান করে ।
  • সাব-মেটাসেন্ট্রিক : সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মাঝখানের কিছুটা ওপরে বা নীচে অবস্থান করে ।
  • অ্যাক্রোসেন্ট্রিক : সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের কোনো একটি প্রান্তের কাছাকাছি অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায় ।
  • টেলোসেন্ট্রিক : সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের কোনো একটি প্রান্তে অবস্থান করে ।

সেন্ট্রোমিয়ারের মুখ্য কাজ সমূহ :

  • সেন্ট্রোমিয়ারের কাইনেটোকোর বেমতন্তুর সাথে সংযুক্ত হয়ে ক্রোমোজোমের অ্যানাফেজ চলনে সাহায্য প্রদান করে ।
  • সেন্ট্রোমিয়ার দুটি সিস্টার ক্রোমাটিডকে পরস্পরের সাথে যুক্ত রাখে ।
  1. গৌণ খাঁজ : ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ার ছাড়া অপর কোনো খাঁজ বা সংকোচন লক্ষ্য করা গেলে তাকে গৌণ খাঁজ বলে ।
  2. স্যাটেলাইট: যে ক্ষুদ্র এবং স্ফীত অংশকে ক্রোমোজোমের গৌণ খাঁজের পরবর্তী বা দুটি গৌণ খাঁজের মধ্যবর্তী অংশে লক্ষ্য করা যায় তাদের স্যাটেলাইট বলে । স্যাটেলাইটযুক্ত ক্রোমোজোমকে SAT ক্রোমোজোম নামে অভিহিত করা হয় । স্যাটেলাইটটি কোনো ক্রোমোজোমের প্রান্তে অবস্থান করলে, সেটিকে প্রান্তীয় স্যাটেলাইট বলা হয় এবং দুটি গৌণ খাঁজের মধ্যবর্তী অঞ্চলে উপস্থিত থাকলে, সেটিকে অন্তর্বর্তী স্যাটেলাইট বলা হয় ।
  3. টেলোমিয়ার: টেলোমিয়ার হল কোনো ক্রোমোজোমের বিশেষ মেরুযুক্ত উভয় প্রান্তীয় অঞ্চল ।

টেলোমিয়ারের মুখ্যকাজ সমূহ :

  • দুটি ক্রোমোজোমকে প্রান্ত বরাবর পরস্পরের সাথে জুড়ে যেতে বাধা সৃষ্টি করে ।
  • দেহকোশের বার্ধক্য এবং মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করে এবং DNA প্রতিলিপিকরণ সমাপ্ত হতে সাহায্য প্রদান করে ।

ক্রোমোজোমের রাসায়নিক উপাদান সমূহ

 

কোনো ক্রোমোজোমকে রাসায়নিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করলে যে সকল উপাদান লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল-

DNA: ক্রোমোজোমে অবস্থিত নিউক্লিক অ্যাসিডের প্রায় 90–99% হল DNA । মূলত ডান দিক বরাবরকুণ্ডলীকৃত এক জোড়া পলিনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলের দ্বারা গঠিত হয় । আবার প্রত্যেকটি শৃঙ্খল বহু ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিওটাইড দ্বারা গঠিত হয় । দুটি শৃঙ্খলের বেসগুলি হল পরস্পরের অ্যান্টিপ্যারালাল এবং পরিপূরক । শৃঙ্খল জোড়া ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিওটাইডের মধ্যে অবস্থিত নাইট্রোজেন বেসের মধ্যে গঠিত হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে (A = T ও G = C) পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় অবস্থান করে ।

RNA : ক্রোমোজোমে অবস্থিত নিউক্লিক অ্যাসিডের প্রায় 1-10% হল RNA । এই শৃঙ্খলবিশিষ্ট নিউক্লিক অ্যাসিডটি পলিরাইবোনিউক্লিওটাইডের দ্বারা গঠিত হয়েছে ।

নিউক্লিওটাইড : নিউক্লিওটাইড ফসফরিক অ্যাসিড, পেন্টোজ শর্করা, নাইট্রোজেন বেস দ্বারা গঠিত হয় । DNA এবং RNAতে পিউরিন বেস হিসেবে অ্যাডিনিন ও গুয়ানিন উপস্থিত থাকে । ইউরাসিল এবং সাইটোসিন হল RNA-এর পিরিমিডিন বেস । DNA-এর পিরিমিডিন বেস হল সাইটোসিন এবং পাইন ।

প্রোটিন : ক্রোমোজোমে সাধারণত দুই রকমের প্রোটিন লক্ষ্য করা যায় । যথা- ক্ষারীয় প্রকৃতির হিস্টোন প্রোটিন এবং আম্লিক প্রকৃতির নন-হিস্টোন প্রোটিন । ক্রোমোজোমে পাঁচ প্রকার হিস্টোন প্রোটিন, যথা H1, H2A, H2B, H3, H4 থাকে এবং নন-হিস্টোন প্রোটিন হিসেবে স্প্যাফোল্ড প্রোটিন ও HMG প্রোটিন থাকে ।

ধাতব আয়ন : ক্রোমোজোমকে গঠনগতভাবে সঠিক রাখতে এতে কিছু পরিমাণ ধাতব ও আয়নের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । তারমধ্যে মূলত Ca2+, Mg2+ এবং Fe3+-এর উপস্থিতি বিশেষভাবে

লক্ষণীয় ।

কোশ বিভাজন :

 

যে পদ্ধতির মাধ্যমে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে অপত্য কোশের সৃষ্টি করে, তাকে কোশ বিভাজন বলা হয় । নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস বলা হয় এবং সাইটোপ্লাজমের জিনকে সাইটোকাইনেসিস বলা হয় ।

কোশ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন কোশীয় অঙ্গাণু সমূহ এবং অন্যান্য গঠনগত অংশসমূহ :

নিউক্লিয়াস : মূলত ক্রোমোজোমকে ধারণ করে থাকে। কোশ বিভাজনের আগে নিউক্লিয়াসের মধ্যে DNA প্রতিলিপিকরণ পদ্ধতিতে সংশ্লেষিত হয়, ফলত প্রতিটি ক্রোমোজোমে DNA-এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায় এবং কোশের বিভাজন ঘটে ।

সেন্ট্রোজোম ও মাইক্রোটিউবিউল : প্রাণীকোশে সেন্ট্রোজোমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় এবং সেন্ট্রোজোমকে ঘিরে অ্যাস্ট্রাল রশ্মি উপস্থিত থাকে যা মূলত মাইক্রোটিউবিউল দ্বারা গঠিত হয় । কিন্তু উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে সেন্ট্রোজোম অনুপস্থিত থাকে এবং সাইটোপ্লাজমে অণুনালিকা ছড়ানো অবস্থায় অবস্থান করে ।

কোশ বিভাজনের ক্যারিওকাইনেসিসের সময়কালে প্রাণীকোশের অ্যাস্ট্রাল রশ্মি থেকে তৈরি হওয়া মাইক্রোটিউবিউল এবং উদ্ভিদ কোশের সাইটোপ্লাজমীয় মাইক্রোটিউবিউল নির্দিষ্ট রীতিতে সজ্জিত হয়ে বেম বা স্পিন্ডিল গঠন করে ।

মূলত এই কারণের জন্যই প্রাণীকোশের স্পিন্ডিলকে সেন্ট্রিওলার অথবা অ্যাস্ট্রাল স্পিন্ডিল এবং সাইটোপ্লাজমিক বা অ্যানাস্ট্রাল স্পিন্ডিল হল উদ্ভিদকোশের স্পিন্ডিল । নিরবিচ্ছিন্ন তন্তু হল স্পিন্ডিল গঠনকারী সেই সকল মাইক্রোটিউবিউল যারা একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে ।

আর বিচ্ছিন্ন তন্তু হল সেই সকল তন্তু যারা কোনো এক প্রান্ত থেকে উৎপত্তি লাভ করে কিছু দিন পর্যন্ত বিস্তৃত হয় ।

আবার ক্রোমোজোমীয় তন্তু হল সেই সকল তন্তু যারা ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলে আবদ্ধ অবস্থায় থাকে । স্পিন্ডিলের দুটি প্রান্তকে মেরু বলা হয় এবং এর মধ্যবর্তী স্ফীত অঞ্চলকে নিরক্ষীয় অঞ্চল বলা হয় ।

রাইবোজোম : কোশ বিভাজনের আগে বিভিন্ন হিস্টোন এবং নন-হিস্টেম প্রোটিন, প্রোটোপ্লাজমীয় প্রোটিন এবং বিভিন্ন উৎসেচকধর্মী প্রোটিন সংশ্লেষ করে । যার ফলে কোশের আয়তন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় । এই ক্রোমোজোম থেকেই ক্রোমাটিডের উৎপত্তি ঘটে । যার ফলে কোশ বিভাজিত হয় ।

মাইটোকনড্রিয়া : কোশ বিভাজনের সময় ও তার আগে দেহ কোশের বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয় তার যোগান দেওয়াই হল মাইট্রোকন্ডিয়ার মুখ্য কাজ ।

কোশ বিভাজনের তাৎপর্য সমূহ :

 

  1. বৃদ্ধি ঘটানো : কোশ বিভাজনের ফলে একটি কোশ থেকে অপত্য কোশের উৎপত্তি হয় । যার ফলে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় । কার্যত এর ফলেই জীবদেহের সামগ্রিক বৃদ্ধিসাধন ঘটে ।
  2. ক্ষতস্থান পূরণ : জীবদেহের কোনো স্থানে কোনো কারনে ক্ষত সৃষ্টি হলে, সেই ক্ষত স্থানের মৃত কোশগুলি কোশ বিভাজনের মাধ্যমে নতুন সজীব অপত্য কোশের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হলে ওই ক্ষতস্থানের ক্ষত নিরাময় হয় ।
  3. জনন : উদ্ভিদের কোনো বিশেষ অঙ্গ থেকে নতুন অপত্য উদ্ভিদের সৃষ্টিতে, রেনু উৎপাদন এবং অঙ্কুরোদগমের দ্বারা নতুন জীবের সৃষ্টিতে কোশ বিভাজন বিপুলভাবে সাহায্য করে ।

পরিস্ফুটন : বিভিন্ন উদ্ভিদের বীজমধ্যস্থ ভ্রূণ থেকে চারাগাছের উৎপত্তির সময় পাতা, মূল, কাণ্ড, সৃষ্টি বা প্রাণীর জাইগোট থেকে ব্লাস্টুলা, মরুলা, গ্যাস্টুলা ইত্যাদি পর্যায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গযুক্ত শিশু প্রাণীর সৃষ্টি বা পরিস্ফুটনে কোশ বিভাজন সাহায্য প্রদান করে ।

কোশ বিভাজনের প্রকারভেদ সমূহ

 

বিভিন্ন ধরনের প্রাণী দেহে মূলত তিন ধরনের কোশ বিভাজন পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায় । যথা- অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস এবং মিয়োসিস ।

  1. অ্যামাইটোসিস : যে জাতীয় কোশ বিভাজনে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়াস স্পিন্ডিল গঠন না করে এবং কোশপর্দার অবলুপ্তি না ঘটিয়েই সরাসরি দুটি অপত্য কোশের উৎপত্তি ঘটায়, তাকে অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজন বলে ।
    • কোশ বিভাজনের স্থান : ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল এবং প্রোটোজোয়া প্রভৃতি জীবদেহে এই জাতীয় কোশ বিভাজন লক্ষ্য করা যায় ।
  • ব্যাখ্যা এবং বৈশিষ্ট্যসমূহ :
  • এই জাতীয় কোশ বিভাজনে নিউক্লীয় পর্দার অবলুপ্তি ছাড়াই নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে ।
  • বেম বা স্পিন্ডিল এইপ্রকার কোশ বিভাজনে গঠিত হয় না ।
  • খাঁজ সৃষ্টির দ্বারা নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম সরাসরি বিভাজিত হয়ে অপত্য কোশের সৃষ্টি করে । মূলত এই কারণের জন্য কোশ বিভাজন পদ্ধতিকে প্রত্যক্ষ কোশ বিভাজন বলা হয় ।
  • গুরুত্বসমূহ :
    • এই পদ্ধতির কোশ বিভাজনের ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমীয় অংশের আদানপ্রদান ঘটে  না, তাই এই ক্ষেত্রে উৎপন্ন অপত্য কোশ বা জীবে নতুন বৈশিষ্ট্যের আগমন সম্ভব না ।
    • এই জাতীয় কোশ বিভাজনের পদ্ধতি অত্যন্ত সরল প্রকৃতির এবং অপেক্ষাকৃত কম সময় সাপেক্ষ ।
    • এই জাতীয় কোশ বিভাজনের মাধ্যমে মূলত নিম্নশ্রেণির জীব বংশবিস্তার করে ।
  1. মাইটোসিস : এই প্রকার পরোক্ষ কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়াস একবার মাত্র বিভাজিত হয়ে মাতৃকোশের সমসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট সমআকৃতির এবং সমগুণসম্পন্ন দুটি অপত্য কোশের সৃষ্টি করে ।
  • কোশ বিভাজনের স্থান : দেহ মাতৃকোশে বা উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ভাজক কলার কোশে, জনন গ্রন্থিতে মাতৃকোশ থেকে জননকোশ উৎপাদনের সংখ্যাবৃদ্ধি দশায় মাইটোসিস কোশ বিভাজন ঘটে ।
  • বৈশিষ্ট্যসমূহ :
    • একপ্রকার পরোক্ষ কোশ বিভাজন পদ্ধতি ।
    • এই পদ্ধতিতে মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম একবার মাত্র বিভাজিত হয় ।
    • এই কোশ বিভাজন প্রক্রিয়ায় দুটি অপত্য কোশের সৃষ্টি হয় ।
    •  উৎপন্ন অপত্য কোশগুলির ক্রোমোজোমের প্রকৃতি এবং সংখ্যা মাতৃকোশের অনুরূপ হয় ।
    • DNA-এর পরিমাণ মাতৃকোশ এবং অপত্য কোশে সমান থাকে এবং অপত্য কোশগুলি মাতৃকোশের অনুরূপ বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং আকৃতিযুক্ত হয় ।
  • মিয়োসিস : মিয়োসিস হল সেই পরোক্ষ কোশ বিভাজন পদ্ধতি যাতে জনন মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম দুবার বিভাজিত হলেও, ক্রোমোজোম মাত্র একবার বিভাজিত হয়, যার ফলে মাতৃকোশের অর্ধেক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট চারটি অপত্য কোশের সৃষ্টি হয় ।
    • কোশ বিভাজনের স্থান : উদ্ভিদের রেণুমাতৃকোশ এবং প্রাণীদের জনন মাতৃকোশ ও নিম্নশ্রেণির জীবের জাইগোট হল মিয়োসিস বিভাজনের স্থান ।
  • বৈশিষ্ট্যসমূহ :
  • একপ্রকার পরোক্ষ কোশ বিভাজন পদ্ধতি ।
  • এই কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম দুবার করে বিভাজিত হয় ।
  • এই জাতীয় কোশ বিভাজনে মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ ক্রোমোজোম একবার মাত্র বিভাজিত হয় ।
  • এই জাতীয় কোশ বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্ট অপত্য কোশের সংখ্যা হল চারটি ।
  • উৎপন্ন অপত্য কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয় ।
  •  এই জাতীয় কোশ বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্ট অপত্য কোশের ক্রোমোজোমগুলির প্রকৃতি সাধারণভাবে মাতৃকোশের ক্রোমোজোমের থেকে আলাদা হয় ।
  • সৃষ্ট অপত্য কোশের DNA-এর পরিমাণ মাতৃকোশের DNA-এর পরিমাণের অর্ধেক হয় ।

কোশচক্র :

 

কোনো একটি কোশ বিভাজনের পর কোশের বৃদ্ধি এবং পরবর্তী বিভাজনের শেষ পর্যন্ত সংঘটিত ধারাবাহিক ঘটনাসমূহের পর্যায়ক্রমিক আবর্তনকে কোশচক্র বলে । কোশচক্রের বিভাজন দশা বাস্তবে হল কোশের জনন দশা কারণ বিভাজন পর্যায়তেই অপত্য কোশের সৃষ্টি হয় ।

কোশচক্রের পর্যায় : 1953 সালে বিজ্ঞানী পেল্ক এবং হাওয়ার্ড কোশচক্রকে মুলত চারটি ক্রমিক পর্যায়ে বিভক্ত করেছিলেন । যথা : গ্যাপ 1 দশা বা G₁, সংশ্লেষ দশা বা S দশা, গ্যাপ 2 দশা বা G2 দশা এবং M বা বিভাজন দশা বা মাইটোটিক দশা । ইন্টারফেজ হল G₁, S এবং G2 দশার একত্রিত নাম ।

সুতরাং, আমরা বলতে পারি, একটি কোশ বিভাজনের শেষ এবং অপর কোশ বিভাজনের শুরুর মধ্যবর্তী, যে দীর্ঘস্থায়ী দশায় কোনো কোশের বৃদ্ধি সম্পন্ন হয় এবং ওই নির্দিষ্ট কোশটিকে কোশ বিভাজনের উপযোগী হিসাবে গড়ে তোলে তা হল ইন্টারফেজ দশা । কোশচক্রের স্থিতিকাল কোনো নির্দিষ্ট প্রজাতির, খাদ্য, অক্সিজেন, উষ্ণতা প্রভৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয় ।

কোশচক্রের বিভিন্ন দশার বৈশিষ্ট্যসমূহ :

  1. G₁ দশা : 
    1. এই দশায় বিভিন্ন কোশ অঙ্গাণু, যেমন : লাইসোজোম, মাইটোকনড্রিয়া, রাইবোজোম, ক্লোরোপ্লাস্ট, গলগি বস্তু ভ্যাকুওল প্রভৃতি গঠিত হয় ।
    2. এই দশাতেই বিভিন্ন প্রকার RNA যেমন : mRNA, rRNA ও tRNA প্রচুর পরিমাণে সংশ্লেষিত হয় ।
    3. কোশচক্রের এই দশাতে DNA সংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক এবং প্রোটিন সংশ্লেষিত হয় ।
  • S-দশা :
  • এই দশায় প্রতিলিপিকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে DNA-এর সংশ্লেষ ঘটে । ফলত নিউক্লিয়াসে DNA-এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায় ।
  • এই দশায় অল্প পরিমাণ RNA এবং হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষিত হয় ।
  • প্রত্যেক ক্রোমোজোমে দুটি করে ক্রোমাটিড উপস্থিত থাকে ।
  • সেন্ট্রোমিয়ারের উভয় পাশে কইিনেটোকোর লক্ষ্য করা যায় ।
  • G2দশা :
  • এই দশাতে ক্লোরোপ্লাস্ট, মাইটোকনড্রিয়া, সেস্ট্রোজোম, প্রভৃতি কোশ অঙ্গাণু বিভাজিত হয় ।
  • mRNA ও tRNA এবং প্রোটিন সংশ্লেষিত হয় ।
  • নিউক্লিয়াসের এবং কোশের আকার বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ।
  • এই দশায় ক্ষতিগ্রস্ত DNA অণুর মেরামত ঘটে ।
  • M দশা : 
  • কোশের বিভাজন দশা ।
  • ২টি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা—ক্যারিওকাইনেসিস পর্যায় এবং সাইটোকাইনেসিস পর্যায় ।
  • ক্যারিওকাইনেসিস পর্যায়টি প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ দশার দ্বারা সম্পন্ন হয় এবং এতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয় ।
  • সাইটোপ্লাজমের বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য কোশের সৃষ্টি ঘটে ।

কোশচক্রের গুরুত্বসমূহ :

  1. কোশচক্রের বিভিন্ন পর্যায়গুলি বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক পদার্থের মাধ্যমে সক্রিয় হয় আথবা বাধাপ্রাপ্ত হয় । অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন মূলত কোশচক্রের চেক পয়েন্টগুলিতে নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে ঘটে । এটি থেকে পরবর্তীকালে টিউমারের সৃষ্টি হয় ।
    এই টিউমার হল একপ্রকার অবিভেদিত কোশপুঞ্জ দ্বারা নির্মিত স্ফীত দেহাংশবিশেষ । কোনো কোনো টিউমার আবার ম্যালিগন্যান্ট প্রকৃতির হয় যা খুবই ক্ষতিকর এবং এটি ক্যানসার সৃষ্টির অন্যতম কারণ ।
  2. কোশচক্রের মাধ্যমেই নতুন কোশ সৃষ্টির দ্বারা জীবদেহের বৃদ্ধিসাধন ও ক্ষয় পূরণ ঘটে ।

মাইটোসিস :

 

উদ্ভিদকোশ ও প্রাণীকোশ, ইন্টারফেজ দশার পর বিভাজন দশায় প্রবেশ করে অপত্য কোশের সৃষ্টি

করে । মাইটোসিস কোশ বিভাজন মূলত দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা : ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস । নিউক্লিয়াসের বিভাজন পদ্ধতিকে ক্যারিওকাইনেসিস বলে যা প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ দশার দ্বারা সম্পন্ন হয় । আর সাইটোপ্লাজমের বিভাজন পদ্ধতিকে সাইটোকাইনেসিস বলে ।

  • ক্যারিওকাইনেসিস :
  • প্রোফেজ :
  • এই দশায় কোশের নিউক্লিয়াস থেকে জল বেরিয়ে যায়, তাই ক্রোমাটিন জালিকার ক্রোমাটিন তত্ত্বগুলিকে সুস্পষ্ট ভাবে লক্ষ্য কারা যায় ।
  • এই ক্রোমাটিন তন্তুগুলি কুন্ডলীকৃত আকারে ঘনীভূত হয় এবং সূত্রাকার ক্রোমোজোমের সৃষ্টি করে ।
  • দুটি করে প্যাচানো সিস্টার ক্রোমাটিড প্রতিটি ক্রোমোজোমে লক্ষ্য করা যায় ।
  • এই দশার শেষের দিকে ক্রোমোজোম গুলি দণ্ডাকার এবং স্থুল প্রকৃতির হয় ।
  • নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লীয় পর্দা এই দশার প্রথমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে ভেঙে যায় ও এই দশার শেষে তারা অবলুপ্ত হয়ে যায় ।
  • এই দশায় স্পিন্ডিল বা বেম গঠন শুরু হয় ।

প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে : প্রথমে সেন্ট্রোজোমের সেন্ট্রিওল দুটি হতে দুটি অপত্য সেন্ট্রিওলের সৃষ্টি হয় । সদ্য উৎপত্তি ঘটা দুটি অপত্য সেন্ট্রিওল সেন্ট্রোজোম গঠন করে এবং তারা ক্রমশ কোশের বিপরীত মেরুর দিকে গমন করতে শুরু করে দেয় । এই দুটি সেন্ট্রোজোমের অ্যাস্ট্রাল রশ্মি হতে দ্বিমেরু যুক্ত বেম গঠিত  হয় । এই কারনেই প্রাণীকোশের বেম হল অ্যাস্ট্রাল বেম । অ্যাস্ট্রাল রশ্মি, সেন্ট্রিওল ও বেম একত্রে মাইটোটিক অ্যাপারেটাস গঠন করে ।

উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে : সেন্ট্রোজোম উদ্ভিদকোশে থাকে না । উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে সাইটোপ্লাজমীয় মাইক্রোটিউবিউলগুলি নির্দিষ্ট রীতিতে সজ্জিত হবার মাধ্যমে বেম বা স্পিন্ডিল গঠন করে । যেহেতু উদ্ভিদের এই বেমগুলি অ্যাস্ট্রাল থেকে উৎপত্তি লাভ করেনি তাই উদ্ভিদকোশের বেমকে অ্যানাস্ট্রাল বেম বলা হয় ।

  • মেটাফেজ :
  • স্পিন্ডিল বা বেম গঠন সম্পূর্ণ হয় এই দশায় ।
  • ক্রোমোজোম মধ্যস্থ সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলটি ক্রোমোজোমাল তন্তুর সঙ্গে আবদ্ধ হয় এবং ক্রোমোজোমগুলি বেমের বিষুব অঞ্চলের দিকে সঞ্চালিত হতে থাকে এবং একটি তলে সুসজ্জিত হবার মাধ্যমে মেটাফেজ প্লেটের সৃষ্টি করে ।
  • মেটাফেজ প্লেটের ভিতরের দিকে ছোটো ক্রোমোজোমগুলি এবং পরিধি বরাবর বড়ো ক্রোমোজোমগুলি সজ্জিত অবস্থায় থাকে ।
  • ক্রোমোজোমগুলি ঘনীভূত এবং কুণ্ডলীকৃত হওয়ার ফলে সর্বাপেক্ষা স্থূল এবং দন্ডাকার হয় । ফলত ক্রোমোজোম গুলিকে সর্বাপেক্ষা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায় ।
  • প্রতিটি ক্রোমোজোমের সিস্টার ক্রোমাটিড দুটি সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায় ।
  • অ্যানাফেজ :
  • এই দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বরাবর বিভাজিত হয় ।
  • প্রতিটি সিস্টার ক্রোমাটিড নিজস্ব সেন্ট্রোমিয়ার অর্জন করে এবং অপত্য ক্রোমোজোম হিসেবে আচরণ করে ।
  • ক্রোমোজোমাল তন্তুর দৈর্ঘ্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে ।
  • সিস্টার ক্রোমাটিডগুলির মধ্যে বিকর্ষণ এবং ক্রোমোজোমাল তন্তুর দৈর্ঘ্য হ্রাসের কারণে সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং প্রত্যেকটি ক্রোমোজোমের একটি করে সিস্টার ক্রোমাটিড বেমের বিপরীত মেরুর দিকে চালিত হয় । অপত্য ক্রোমোজোমগুলির এইরূপ চলনকে অ্যানাফেজীয় চলন বলা হয় ।
  • এই জাতীয় চলনের সময়কালে বেমের বিপরীত মেরুর দিকে ধাবিত সমসংখ্যক অপত্য ক্রোমোজোমের মাঝে মূলত বেমের নিরক্ষীয় অঞ্চলে ইন্টারজোনাল তন্তুর আবির্ভাব হয় ।
  • এই জাতীয় চলনের সময়কালে ক্রোমোজোমগুলি বিভিন্ন ইংরেজি অক্ষরের মত আকৃতি ধারণ করে । যেমন—মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম  ‘V’, সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম ‘L’, অ্যাক্রোসেন্ট্রিক আবির্ভাব লক্ষ্য করা যায় ।
  • টেলোফেজ :
  • অপত্য কোশের ক্রোমোজোমগুলি যখন বেমের দুই মেরুতে পৌঁছায় তারপর এই দশার কাজ শুরু হয় ।
  • প্রাণীদের ক্ষেত্রে বেম তন্তুর সম্পূর্ণ বিনাস ঘটে । কিন্তু উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কোশের নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর কিছু সংখ্যক ইন্টারজোনাল তন্তুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ।
  • অপত্য ক্রোমোজোমগুলিকে ঘিরে নিউক্লিয় পর্দার আবির্ভাব ঘটে এবং নিউক্লিওলাসের পুনর্গঠিত সংগঠিত হয়, ফলে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের উৎপত্তি হয় ।
  •  নিউক্লিয়াসের মধ্যে জল সংযোজিত হওয়ার ফলে ক্রোমোজোমগুলির কুণ্ডলকৃত গঠন খুলে যায় এবং ক্রোমোজোম গুলি পুনরায় অস্পষ্ট এবং সূত্রাকার হয় ।
  • প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে কোশের মাঝখান বরাবর খাঁজটি ক্রমশ গভীর হতে শুরু করে ।
  • টেলোফেজ হল ক্যারিওকাইনেসিসের শেষ পর্যায় ।
  • সাইটোকাইনেসিস :

উদ্ভিদের সাইটোকাইনেসিস :

  • ফ্রাগমোপ্লাস্টের সৃষ্টি : ক্যারিওকাইনেসিসের টেলোফেজ দশায় বেমের নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর ইন্টারজোনাল তন্তুগুলির মাঝে মাঝে গলগি বস্তু থেকে সৃষ্টি হওয়া ম্যাগনেশিয়াম পেকটেট এবং ক্যালশিয়াম পেকটেট যুক্ত ছোট ছোটো ভেসিকল বা ফ্রাগমোজোম জমা হয় । এই ফ্রাগমোজোম এবং ইন্টারজোনালকে একত্রে ফ্রাগমোপ্লাস্ট গঠন করে ।
  • সেলপ্লেটের সৃষ্টি : ফ্রাগমোপ্লাস্টের প্রান্ত বরাবর নতুন ফ্রাগমোজোম সঞ্চিত হবার ফলে ফ্রাগমোপ্লাস্ট ক্রমশ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় । এই সময় ফ্রাগমোজোমের মধ্যবর্তী ম্যাগনেশিয়াম পেকটেট এবং ক্যালশিয়াম মিলিতভাবে যে পাতলা পর্দা গঠন করে, তাকেই সেলপ্লেট বলে ।
  • প্লাজমোডেসমাটার সৃষ্টি : সেলপ্লেটের ভিতর কিছু দূর অন্তর অন্তর ER-এর সিস্টারনি প্রবেশর কারনে ছোট ছোট ছিদ্রের সৃষ্টি হয়ে থাকে, যা পরবর্তীতে প্লাজমোডেসমাটা গঠন করে ।
  • মধ্যপর্দার সৃষ্টি : সেলপ্লেটের ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে তা মাতৃকোশের কোশপ্রাচীরকে স্পর্শ করে এবং তা ভৌত ও রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে মধ্যপর্দার গঠন করে । ঠিক এই সময়কালে ফ্রাগমোজোমগুলির পর্দা অপত্য কোশের কোশপর্দার গঠন করে ।
  • প্রাথমিক প্রাচীর গঠন ও অপত্য কোশের সৃষ্টি : মধ্যপর্দা ও কোশপর্দার মধ্যবর্তী সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ প্রভৃতি সঞ্চিত হবার পর প্রাথমিক কোশপ্রাচীর গঠিত হলে, মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোশের সৃষ্টি করে ।

প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস :

প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতির ধাপগুলি হল নিম্নরূপ-

    • কনট্রাক্টাইল রিং গঠন ও কোশপর্দায় খাঁজের উৎপত্তি : বিজ্ঞানী ডগলাস মার্সল্যান্ড-এর মতামত অনুসারে, প্রাণী কোশের অ্যানাফেজ দশার সমাপ্তির দিকে, বেমের নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর কোশপর্দার ঠিক নীচে কর্টেক্স বা সাইটোপ্লাজম অংশে অসংখ্য অ্যাকটিন তন্তু সমান্তরালভাবে সজ্জিত অবস্থায় থাকে এবং অ্যাকটিন তন্তুর মাঝে মাঝে ছোট ছোট মায়োসিন তন্তু সংযুক্ত হলে কনট্রাক্টাইল রিং-এর উৎপত্তি ঘটে । যখন, এই রিংটি সংকুচিত হতে আরম্ভ করে তখন কোশ পর্দাটি কার্যত ভাঁজ হয়ে ভেতরের দিকে ঢুকে আসে এবং ক্লিভেজ ফারোর উৎপত্তি ঘটায় ।
  • ক্লিভেজ ফারোদ্বয়ের পরস্পরের দিকে অগ্রসর হওয়া : টেলোফেজ দশায় কনট্রাক্টাইল রিং ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে ক্রমশ ক্ষুদ্র হতে শুরু করলে ক্লিভেজ ফারো গভীর থেকে গভীরতর হয় এবং তা কোশের ভিতরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে ।

ক্লিভেজ : এই ভাবে কোনো এক সময়ে কোশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে দুটি ক্লিভেজ ফারো পরস্পরের সাথে মিলিত হলে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজমটি বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোশের সৃষ্টি করে ।

উদ্ভিদ কোশ এবং প্রাণী কোশের ক্ষেত্রে মাইটোসিসের তুলনামূলক আলোচনা :

 

পর্যায় সমূহবিষয়বস্তু উদ্ভিদ কোশ প্রাণী কোশ 
ক্যারিওকাইনোসিস বেম তন্তু গঠনএতে অ্যানাস্ট্রাল বেম লক্ষ্য করা যায় ।এতে অ্যাস্ট্রাল বেম লক্ষ্য করা যায় ।
বেমের পরিণতিইহার কিছু অংশ সেল প্লেট গঠন করতে কাজে লাগে ।এদের ক্ষেত্রে সাইটোকাইনেসিসের সময় বেমের অবলুপ্তি ঘটে থাকে
প্রকারঅ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিসঅ্যাস্ট্রাল মাইটোসিস
মেটাফেজ প্লেটক্রোমোজোম গুলি নির্দিষ্ট রীতি অনুসারে মেটাফেজ প্লেট গঠন করে থাকে না ।মেটাফেজ প্লেটের কেন্দে আকারে ছোট ক্রোমোজোম এবং পরিধিতে বড় ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে
সাইটোকাইনেসিসসূচনাকালটেলোফেজ দশার শেষের দিকে শুরু হয় ।
পদ্ধতিকোশপাত গঠনের দ্বারা ঘটে থাকে ।
পদ্ধতির ক্রমকোশপাত কোশের মাঝখান বরাবর গঠিত হবার পর মাতৃকোশের কোশপ্রাচীরের দিকে প্রসারিত হয় ।
কনট্রাক্টাইল রিংসৃষ্টি হয় নাসৃষ্টি হয়
অংশগ্রহণ

কারী কোশীয় গঠন

অণুনালিকা এবং ফ্রাগমোপ্লাস্টমায়োসিন এবং অ্যাকটিন

মাইটোসিস কোশ বিভাজনের গুরুত্ব :

  • জীবের বৃদ্ধি এবং পরিস্ফুটনে : মাইটোসিস পদ্ধতির মাধ্যমে বহুকোশী জীবদেহে দেহকোশের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে । এর মাধ্যমে জীবের সামগ্রিক বৃদ্ধি সাধিত হয় । অন্যদিকে এককোশী জাইগোটরা মাইটোসিস পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভাজিত অসংখ্য অপত্য কোশের সৃষ্টি করে । যা বিভেদীকরণের দ্বারা ভ্রূণের গঠনে এবং পরিস্ফুটনে সাহায্য করে ।
  • প্রজনন : বিভিন্ন গাছের অঙ্গজ বংশবিস্তারে মাইটোসিস কোশ বিভাজন প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য প্রদান করে । যেমন—আলু, আদা, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি ।
  • পুনরুৎপাদন : উদ্ভিদ এবং কিছু সংখ্যক প্রাণীর কোনো অঙ্গের বিনষ্ট ঘটলে, মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে সেই অঙ্গের পুনরায় উৎপত্তি ঘটে থাকে । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় তারা মাছের বাহু, টিকটিকির লেজ ।

কোশ প্রতিস্থাপন এবং ক্ষয়পুরণ সাধন : এই পদ্ধতিতে জীব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মৃত কোশগুলি নতুন, সজীব কোশের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় । যার ফলে দেহের ক্ষয়পুরণ হয় । এ ছাড়াও কিছু সংখ্যক নিম্ন শ্রেণির জীবে অযৌন জনন মাইটোসিস বিভাজন পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পাদিত হয় ।

মিয়োসিস : 

 

এক ধরনের পরোক্ষ কোশ বিভাজন । এই কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে মাইটোসিসের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কঠিন প্রকৃতির ।

মিয়োসিস সম্পর্কীত কয়েকটি পরিভাষাসমূহ :

  • সমসংস্থ ক্রোমোজোম : হোমোলোগাস ক্রোমোজোম বা সমসংস্থ ক্রোমোজোম হল সেই সকল ক্রোমোজোম যাদের আকার ও আকৃতিগত দিক থেকে সাদৃশ্য আছে এবং যারা একই রকম জিনগত বিন্যাসযুক্ত । এরূপ ক্রোমোজোমদ্বয়কে একে অপরের সমসংস্থ ক্রোমোজোম বলা হয় । ডিপ্লয়েড সেট ক্রোমোজোমে, এই জাতীয় ক্রোমোজোম লক্ষ্য করা যায় ।
  • নন-সিস্টার ক্রোমাটিড : দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমের ক্ষেত্রে যে-কোনো একটির ক্রোমাটিড হল অপর ক্রোমোজোমটির দুটি ক্রোমাটিডের সাপেক্ষে নন-সিস্টার ক্রোমাটিড ।
  • সাইন্যাপটোনেমাল কমপ্লেক্স : একটি কেন্দ্রীয় এলিমেন্ট এবং দুটি পার্শ্বীয় এলিমেন্টের দ্বারা গঠিত এক নিউক্লিও প্রোটিন বস্তু যা দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমকে জোড় বাঁধতে সাহায্য প্রদান করে।
  • সাইন্যাপসিস : সাইন্যাপটোনেমাল কমপ্লেক্সের মাধ্যমে দুটি সমসংস্থ কোমোজোমের জোড় বাঁধার পদ্ধতিকে সাইন্যাপসিস বলে এবং জোটবদ্ধ সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়াকে বাইভ্যালান্ট বলা হয় ।
  • ক্রসিং ওভার : বাইভ্যালান্ট সৃষ্টিকারী দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমের মধ্যে যে-কোনো দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে যে খণ্ড বিনিময় ঘটে, তাকে ক্রসিং ওভার বলে ।

মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মুখ্য দুটি পর্যায় :

এই জাতীয় কোশ বিভাজন মূলত দুটি পর্যায়ে হয়, যথা- মিয়োসিস I এবং মিয়োসিস II.

মিয়োসিস I :

কোশ বিভাজনের এই পর্যায়ে প্রত্যেক বাইভ্যালেন্ট গঠনকারী সমসংস্থ ক্রোমোজোমদ্বয়, পরস্পরের থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে মেরুর দিকে গমন করে । কিন্তু মাইটোসিস কোশ বিভাজনে অ্যানাফেজীয় চলনে প্রতিটি ক্রোমোজোমের সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি বেমের বিপরীত মেরুর দিকে গমন করে, মূলত এই কারণের জন্যই অপত্য কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোশের সমান হয়।

কিন্তু এক্ষেত্রে ডিসজংশনের ফলে সাইটোকাইনেসিস বা ইন্টারকাইনেসিসের পর উৎপন্ন দুটি অপত্য কোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয় ।

মিয়োসিস II :

কোশ বিভাজনের এই পর্যায়ে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজীয় চলনের ন্যায় দুটি অপত্য কোশের প্রত্যেক ক্রোমোজোমের সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয় পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে বেমের বিপরীত মেরুর দিকে গমন করে । ফলে ক্যারিওকাইনেসিস—II-এর পর সৃষ্টি হওয়া চারটি অপত্য কোশের প্রত্যেকটির ক্রোমোজোম সংখ্যা এবং DNA-এর পরিমাণ মাতৃকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা এবং DNA-এর পরিমাণের অর্ধেক হয় ।

মিয়োসিসের তাৎপর্যসমূহ :

  • জননকোশ উৎপাদন : ডিপ্লয়েড জনন মাতৃকোশ (2n) মিয়োসিস পদ্ধতির মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে হ্যাপ্লয়েড জননকোশের (n) সৃষ্টি করে ।
  • প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্দিষ্ট রাখা :   কোনো প্রকার যৌন জননের সময় নিষেকের মাধ্যমে দুটি হ্যাপ্লয়েড জনন কোশের মিলনের ফলে ডিপ্লয়েড জাইগোট গঠিত হয় । অপত্য জীবের সৃষ্টি এই জাইগোট থেকেই । মূলত এই কারণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট প্রজাতির সমস্ত জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা সর্বদা স্থির বা একই থাকে ।
  • প্রকরণের সৃষ্টি : সমসংস্থ ক্রোমোজোম গুলির মধ্যে জিনের পুনঃসংযুক্তির এবং ক্রসিং ওভারের ফলে নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য কোশের সৃষ্টি

ঘটে । ওইপ্রকার কোশের মিলনে যেসব জীবের উৎপত্তি ঘটে, তাদের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্যের সংযোজন ঘটে যা ভেদ বা প্রকরণ সৃষ্টিতে প্রভূত সাহায্য প্রদান করে ।

জনুক্রম বজায় রাখা : ডিপ্লয়েড এবং হ্যাপ্লয়েড দশার পর্যায়ক্রমিক পুনরাবৃত্তিকে জনুক্রম বলে । মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে ডিপ্লয়েড কোশ থেকে হ্যাপ্লয়েড দশার উৎপত্তি হয় । আবার জনন কোশের ক্ষেত্রে ডিপ্লয়েড দশার পুনরাবির্ভাব ঘটে থাকে ।

মাইটোসিস এবং মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা :

 

বিষয়সমূহমিয়োসিসমাইটোসিস
ঘটনাস্থলজনন মাতৃকোশদেহের বিভিন্ন মৃত কোশ
কোশ বিভাজনএটি একটি হ্রাস বিভাজন পদ্ধতিএটি একটি সম বিভাজন পদ্ধতি
কোশের সংখ্যাউৎপন্ন আপত্য কোশের সংখ্যা চারটিউৎপন্ন আপত্য কোশের সংখ্যা দুটি
বিভাজনের সংখ্যা নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম দুইবার এবং ক্রোমোজোম একবারনিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম উভয়ই একবার করে
কাজসমূহ কোন নির্দিষ্ট প্রজাতির ক্ষেত্রে ক্রোমোজোম সংখ্যা স্থির রাখা।দেহের কোনো ক্ষতস্থান নিরাময় এবং দেশের সামগ্রিক বৃদ্ধি

জনন : 

 

জীব যে প্রক্রিয়ায় নিজের দেহ দ্বারা একই রকম বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীব উৎপত্তি করে এবং সেই অপত্য জীবের মধ্যে তার অস্তিত্ব বজায় রাখে তাকে জনন বলা হয় ।

জননের গুরুত্ব

  • অস্তিত্ব এবং বংশবৃদ্ধি রক্ষা করা : জননের দ্বারা অপত্য জীব থেকে জনিতৃ জীব সৃষ্টি করে প্রজাতির অস্তিত্ব এবং বংশবৃদ্ধি রক্ষা করা ।
  • বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা করা : জননের মাধ্যমে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষিত হয় কারণ মৃত্যুর ফলে জীবের যে সংখ্যা কমে সেটা জনন এর মাধ্যমে বাড়ে ।
  • প্রকরণ সৃষ্টি করা : নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য জীবের সৃষ্টি হয় যৌন জননের মাধ্যমে যা অভিব্যক্তিতে এবং প্রকরণ সৃষ্টিতে সাহায্য করে ।
  • বংশপরম্পরায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখা : জনিতৃ জীবের বৈশিষ্ট্য অপত্য জীব বহন করে ফলে বংশের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে ।

জননের পদ্ধতি :

  1. অযৌন জনন : যে জনন পদ্ধতিতে একটা জনিতৃ জীবদেহ, দেহকোশ বিভাজন এবং রেনু উৎপাদনের মাধ্যমে অপত্য জীব সৃষ্টি করে তাকে অযৌন জনন বলা হয় ।

উদাহরণ- গোলাপ অথবা জবা গাছের শাখা হলো উদ্ভিদের দেহের অংশ, সেই দেহাংশ থেকে মূল সৃষ্টি হলে এবং মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে শাখাটি থেকে নতুন পাতা এবং শাখার সৃষ্টি হলে, একটি নতুন চারা গাছ জন্মগ্রহণ করে ।

অযৌন জননের গুরুত্ব :

  • জনিতৃ জীবের প্রয়োজন একটি মাত্র হওয়ায় জননের নিশ্চয়তা বেশি ।
  • অসংখ্য অপত্য জীব সৃষ্টি হয় কম সময়ের মধ্যে।
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনিতৃ জীবের মতো অপত্য জীব হয় ।
  • অপত্য সৃষ্টির সময় কেবলমাত্র মিয়োস্পোর থেকে উৎপন্ন জীবরাই প্রকরণ সৃষ্টি করতে পারে ।
  1. যৌন জনন : জননের যে প্রক্রিয়ায় স্ত্রী গ্যামেট এবং পুং গ্যামেটের মিলনের ফলে অপত্য জীবের সৃষ্টি হয় তাকে যৌন জনন বলা হয় ।

উদাহরণ- কাঁঠাল অথবা আমের ক্ষেত্রে ফুলের ডিম্বাশয় অবস্থিত ডিম্বকের মধ্যে স্ত্রী গ্যামেট, ফুলের পরাগরেণুতে অবস্থিত পুং গ্যামেটের সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট উৎপন্ন করে । নিষেক হওয়ার পর ডিম্বকটি বীজে এবং বীজ অঙ্কুরিত হয়ে নতুন আম অথবা কাঁঠালের চারা গাছ তৈরি করে ।

যৌন জননের গুরুত্ব

  • এই ক্ষেত্রে দুটি জনিতৃ জীবের প্রয়োজন হয় ।
  • জটিল প্রক্রিয়া এবং অধিক সময় সাপেক্ষে কম অপত্য জীবের সৃষ্টি হয় ।
  • অপত্য জীবের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য সঞ্চারিত হবার ফলে জনিতৃ জীবের বৈশিষ্ট্য এবং অপত্য জীবের বৈশিষ্ট্য পৃথক হয় ।
  • প্রকরণ সৃষ্টি এই জননের মাধ্যমে হয় বলে এই যৌন জনন জীবের অভিব্যক্তিতে সাহায্য করে ।

অযৌন জনন

 

অযৌন জনন পদ্ধতি :

  1. বিভাজন : দুটি অপত্য জীবের সৃষ্টি যখন একটি জনিতৃ জীবের বিভাজনের মাধ্যমে হয় তাকে দ্বি-বিভাজন বলা হয় । বহুবার বিভাজিত জনিতৃ জীবের প্রতিটি নিউক্লিয়াস এবং জনিতৃ সাইটোপ্লাজমের কিছু অংশ নিয়ে বহু সংখ্যক অপত্য সৃষ্টিকে বহু বিভাজন বলে ।
    1. অ্যামিবার দ্বিবিভাজন : অ্যামিবার ক্ষণপদ গুলি প্রথমে বিলুপ্ত হয়ে গোলাকার এবং পরে ডাম্বেলের মত আকার ধারণ করে । সর্বশেষে জনিতৃ নিউক্লিয়াস সংকুচিত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয় । একই সঙ্গে অ্যামিবার দেহের মধ্যস্থল সংকুচিত হয় এবং তারা পরস্পরের থেকে পৃথক হয়ে দুটি অপত্য অ্যামিবার সৃষ্টি করে ।
    2. প্লাসমোডিয়ামের বহু বিভাজন : RBC-র মধ্যে প্লাজমোডিয়ামের ক্রিপ্টোমেরোজয়েট দশা প্রবেশ করার পর প্রথমে, অ্যামিবয়েড চলনে সক্ষম ট্রফোজয়েট দশা ও পরবর্তীকালে গোলাকার সাইজন্ট-এ পরিণত হয় । 6-8 বার এই সাইজেন্টের নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে অনেকগুলো অপত্য নিউক্লিয়াস গঠন করে ।
  1. কোরকোদগম : নতুন অপত্য জীবের সৃষ্টি যখন জনিতৃ জীব দেহের থেকে হয় তখন তাকে কোরকোদগম বলে ।
    1. ইস্ট-এর কোরকোদগম : ইস্ট-এর এককোশী দেহ অনুকূল পরিবেশে স্ফীত হয়ে একটি উপবৃত্তি তৈরি করে । কোশ অঙ্গাণু সহ কিছুটা সাইটোপ্লাজম ও মাতৃ কোশের নিউক্লিয়াসের একটি খণ্ড উপবৃদ্ধির মধ্যে প্রবেশ করে । এরপর কোরকটি বর্ধিত হয় মাতৃকোশের মত সমান আকৃতি গঠন করে ।
    2. হাইড্রার কোরকোদগম : একটি উপবৃত্তি হাইড্রার দেহে কোনো একটি স্থানে দেখা যায়, যেটিকে কোরক বা মুকুল বলা হয় । কোরকটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে অনুরূপ আকৃতিবিশিষ্ট জনিতৃ দেহের আকার ধারণ করে ।
  1. খন্ডীভবন : প্রত্যেক খন্ড থেকে অপত্য সৃষ্টির ঘটনাকে খন্ডীভবন বলা হয় ।
    1. স্পাইরোগাইরার খন্ডীভবন : সূত্রাকার স্পাইরোগাইরার দেহটি জলজ প্রাণী অথবা ঢেউয়ের ধাক্কায় হ্যাক অথবা একাধিক কোন যুক্ত খন্ডে খণ্ডিত হয় ।
  1. পুনরুৎপাদন : জীবদেহের কোনো খন্ডিত অংশ থেকে যদি পরিস্ফুটনের অথবা কোশ বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে পুনরুৎপাদন বলে ।
    1. প্লানেরিয়ার পুনরুৎপাদন : প্লানেরিয়ার দেহ ক্ষুদ্র খন্ডে খন্ডিত হওয়ার পর সেই খন্ড কোশগুলি মাইটোসিস কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে বিভাজিত হয়ে পুনরুৎপাদন পদ্ধতিতে একটি সম্পূর্ণ নতুন প্লানেরিয়ার সৃষ্টি করে ।

অঙ্গজ বংশবিস্তার

 

কোশ বিভাজন এবং বৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে যখন নতুন অপত্য উদ্ভিদের সৃষ্টি হয় সেই পদ্ধতিকে অঙ্গজ বংশবিস্তার বলা হয় । এই বংশবিস্তার কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক উভয়ভাবে হতে পারে ।

  1. প্রাকৃতিক অঙ্গজ বিস্তার :  জনিতৃ উদ্ভিদ দেহ থেকে প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভিদ অঙ্গ পৃথক হওয়ার পর সেই বিচ্ছিন্ন অঙ্গ বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং কোশ বিভাজনের মাধ্যমে যখন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে, সেই পদ্ধতিকে প্রাকৃতিক অঙ্গজ বিস্তার বলা হয় ।
    1. কান্ডের দ্বারা : কচুরিপানার ছোট আকৃতির কান্ড জলতলের সঙ্গে মূলত অনুভূমিক ভাবে বাড়ে এবং পর্বমধ্যগুলি সাধারণত খুব স্থূল এবং ছোট প্রকৃতির হয় । কচুরিপানার কান্ড অফসেট হওয়ার পিছনে এটি মুখ্য কারণ । এই জাতীয় উদ্ভিদের ক্ষুদ্র পর্বমধ্যগুলির ভাঙ্গনের ফলে কাণ্ডের কিছুটা অংশ মূল গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং এর থেকে নতুন অপত্য কচুরিপানার উৎপত্তি ঘটে ।
    2. মূলের দ্বারা : শাকালু, রাঙালু এবং মিষ্টি আলু প্রভৃতি উদ্ভিদের অস্থানিক মূল রসালো এবং স্ফীত হয় খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য, এগুলি হল কন্দাল মূল । নতুন চারা গাছের জন্ম হয় এই কন্দাল মূলের অস্থানিক মুকুল থেকে ।
    3. পাতার দ্বারা : পত্রজ মুকুল পাথরকুচি গাছের পাতার কিনারাতে সুপ্ত অবস্থায় থাকে । বায়ুমণ্ডল থেকে মুকুলগুলি জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে বৃদ্ধি পায় এবং একটি করে নতুন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে ।
  2. কৃত্রিম অঙ্গজ বিস্তার : উদ্ভিদের কোনো অঙ্গকে মানুষ যখন নিজের প্রয়োজনে বিচ্ছিন্ন করে এবং বিশেষ পদ্ধতিতে ওই বিচ্ছিন্ন উদ্ভিদের দেহ অংশ থেকে নতুন অপত্য উদ্ভিদের জন্মগ্রহণ হয় তাকে কৃত্রিম অঙ্গজ বিস্তার বলে ।
    1. গ্রাফটিং বা জোড় কলম : দুটি একই জাতি ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের একটি শাখা বা মুকুলকে যখন অপর একটি মূল সহ উদ্ভিদের কান্ডের সঙ্গে যোগ করে যৌগিক প্রকৃতির অপত্য উদ্ভিদ তৈরি করা হয় সেই পদ্ধতিকে গ্রাফটিং বলে । গ্রাফটিং-এর জন্য যে উন্নত প্রকৃতির শাখা বা মুকুলকে নির্বাচন করা হয় তাকে সিওন বলা হয় এবং মূলসহ যে উদ্ভিদটির সাথে এই সিওনকে জোড়া হয় তাকে স্টক বলা হয় ।
    2. কাটিং বা শাখা কলম : উদ্ভিদের দেহ থেকে তার কান্ড, মূল অথবা পাতা কেটে মাটিতে প্রতিস্থাপন করা হলে সেই কাটা অংশ থেকে যখন মূল সৃষ্টি হয়ে একটি অপত্য উদ্ভিদ জন্মগ্রহণ করে, সেই পদ্ধতিকে বলে কাটিং ।
      1. স্টেম কাটিং : IBA অথবা NAA নামক কৃত্রিম অক্সিনের মধ্যে গোলাপ জবা প্রভৃতির কাণ্ডের একটি শাখা কেটে কয়েক দিন ডুবিয়ে রাখার পর নরম মাটিতে পুঁতে দিলে তা থেকে নতুন চারা গাছ সৃষ্টি হয় ।
      2. রুট কাটিং : তেতুল, পাতি লেবু এবং কমলালেবুর ইত্যাদির শাখামূল কেটে সেই শাখামূল যদি নরম মাটিতে বসিয়ে দেওয়া হয় তা থেকে মুকুল এবং মূল সৃষ্টি হয় । মুকুল মাটির উপর ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে নতুন চারা গাছের জন্ম হয় ।
    3. মাইক্রোপ্রোপাগেশন : কার্বনের উৎস, বিভিন্ন মাইক্রো এবং ম্যাক্রো এলিমেন্ট, হরমোন, কিছু জৈব উপাদান ও ভিটামিন প্রভৃতির মিশ্রণে প্রস্তুত বিশেষ কর্ষণের মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে উদ্ভিদের কলা, কোশ ইত্যাদি বিভাজন, বৃদ্ধি বা উদ্ভিদ তৈরীর পদ্ধতিকে কলাকর্ষণ বলে । Micro কথাটির অর্থ হল ক্ষুদ্র । এই পদ্ধতিতে উদ্ভিদের কলার ছোট টুকরো অথবা ক্ষুদ্র কোশ থেকে কৃত্রিম ভাবে দ্রুত বংশ বিস্তার ঘটানোর প্রক্রিয়াকে মাইক্রোপ্রোপাগেশন বলে ।

মাইক্রোপ্রোপাগেশনের গুরুত্ব :

  • পছন্দমত এবং বিভিন্ন রকমের অসংখ্য অপত্য উদ্ভিদ স্বল্প সময়ে তৈরি করা যায় ।
  • এই পদ্ধতিতে বীজের কোনো রকম দরকার হয় না অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টিতে ।
  • বছরের যেকোনো সময় চারা গাছ সৃষ্টি করা যায় ।
  • এই ধরনের সৃষ্ট উদ্ভিদের মধ্যে কোনরকম ভাইরাস থাকে না ।
  • অপত্য উদ্ভিদগুলির মধ্যে জনিতৃ জীবের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে ।

জনুক্রম 

 

রেণুধর দশা হল জীবনচক্রে রেনু উৎপাদনকারী ডিপ্লয়েড দশা এবং লিঙ্গধর দশা হল হ্যাপ্লয়েড রেণু থেকে গ্যামেট উৎপাদন পর্যায় ।

হ্যাপ্লয়েড লিঙ্গধর দশা এবং ডিপ্লয়েড রেনুধর দশা এই দুই দশার কোনো জীবের জীবন চক্রের পর্যায়ক্রমিক আবর্তনকে জনুক্রম বলা হয় ।

ফার্নের জনুক্রম : স্বাবলম্বী এবং ডিপ্লয়েড রেনুধর প্রকৃতির হয় ফার্নের মূল উদ্ভিদদেহ । রেণু মাতৃকোশ, রেনুধর উদ্ভিদের রেণুস্থলী তে উৎপন্ন হয়। মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে রেণু মাতৃকোশে রেণু উৎপাদন করে । বিদীর্ণ রেণুস্থলী থেকে রেণু নির্গত হয় এবং তা অনুকূল পরিবেশে অঙ্কুরিত হয়ে প্রোথ্যালাস নামক এক ধরনের লিঙ্গধর উদ্ভিদ গঠন করে ।

স্ত্রীধানি এবং পুংধানী প্রোথ্যালামাস মধ্যে গঠিত হয় । স্ত্রীধানির মধ্যে ডিম্বাণু উৎপন্ন হয় এবং পুংধানীর মধ্যে শুক্রাণু উৎপন্ন হয় । এই ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনের ফলে ডিপ্লয়েড জাইগোট উৎপন্ন হয় যা পরবর্তীকালে ভেঙে গিয়ে এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় রেণুধর উদ্ভিদ গঠন করে ।

সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জনন 

 

যেকোনো সপুষ্পক উদ্ভিদ সাধারণত যৌন জনন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে । জবা ফুল হলো একটি আদর্শ ফুল । একটি আদর্শ ফুলের ব্যবচ্ছেদ করার পর যে পাঁচটি অংশ দেখা যায় সেগুলি হল-

  1. বৃতি : একটি আদর্শ ফুলের সব থেকে বাইরে যে সবুজ বর্ণের স্তবকটি থাকে তাকে বৃতি বলা হয় । বৃত্যাংশ হলো বৃতির এক একটি অংশ । বৃত্যাংশ গুলি একে অপরের থেকে আলাদা থাকে মুক্ত বৃতির ক্ষেত্রে এবং একে অপরের সাথে যুক্ত অবস্থায় থাকে যুক্ত বৃতির ক্ষেত্রে ।
  2. দলমন্ডল : দলমন্ডল হলো বিভিন্ন রঙের গন্ধযুক্ত অথবা গন্ধহীন দ্বিতীয় স্তবক যা বৃতির ভেতরের দিকে থাকে । পাপড়ি হলো দল মন্ডলের একটি অংশৎ। পাপড়িগুলি পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে যুক্ত দলের ক্ষেত্রে এবং মুক্ত দলের ক্ষেত্রে মুক্ত থাকে ।
  3. পুং-স্তবক : ফুলের তৃতীয় স্তবকটিকে পুংস্তবক বলা হয় যেটি দলমন্ডলের ভিতরে থাকে । পুংকেশর হল পুংস্তবকের একটি পুংপ্রজননিক অংশ । এর দুটি অংশ থাকে যার মধ্যে একটি হলো পরাগধানী যেটি পুংদন্ডের উপর থলির মতো একটি অংশ এবং অপরটি হল সূত্রাকার পুংদন্ড । দুটো কড়াকড়ির মধ্যে যে সংযোজক কলা থাকে তাকে যোজক বলা হয় ।
  4. স্ত্রী-স্তবক : ফুলের সব থেকে ভেতরের স্তবকটি হল স্ত্রীস্তবক যেটি গর্ভপত্র দ্বারা গঠিত । এই গর্ভপত্র তিনটি অংশ দ্বারা গঠিত-
    1. সবচেয়ে নীচের দিকে স্ফীত অংশ যা ডিম্বাশয় বা গর্ভাশয় নামে পরিচিত ।
    2. গর্ভদন্ড হল ডিম্বাশয়ের উপরের অবস্থিত একটি দন্ডাকার অংশ ।
    3. এই গর্ভদণ্ডের মাথায় অবস্থিত সামান্য স্ফীত গোলাকার আকৃতির অংশটি হলো গর্ভমুণ্ড ।
  5. পুষ্পাক্ষ : যে ক্ষুদ্র দন্ডাকার অংশের উপর ফুলের স্তবকগুলো সাজানো থাকে তাকে পুষ্পাক্ষ বলে ।

ফুলের বিভিন্ন অংশের কাজ :  

  • বৃতির রং সবুজ বর্ণের হওয়ায় এটি যেমন সালোকসংশ্লেষে সাহায্য করে তেমনি বৃতি ফুলের অন্যান্য অংশগুলিকে বহির্জগত থেকে রক্ষা করে ।
  • এটি যেমন কীটপতঙ্গকে গন্ধের দ্বারা আকৃষ্ট করে তেমনি এটি ফুলের স্ত্রী স্তবক এবং পুংস্তবককে রক্ষা করে ।
  • পরাগরেণু তৈরি হয় পুংকেশরের পরাগধানীতে এবং সেই পরাগরেণু থেকে শুক্রাণু উৎপন্ন হয় ।

পরাগরেণুর গ্রাহক রূপে কাজ করে গর্ভপত্রের গর্ভমুণ্ড অংশ । ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন হয় ডিম্বক যা থেকে ডিম্বাণু উৎপন্ন হয় ।

পরাগযোগের প্রকারভেদ

 

  1. স্বপরাগযোগ : পরাগরেণুর যখন একই গাছের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে বা সেই ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হয় তখন এই ধরনের পরাগযোগকে স্বপরাগযোগ বলে এটি দুই ভাবে ঘটতে পারে-
    1. অটোগ্যামি : পরাগ সংযোগ যখন উভয় লিঙ্গ ফুলের পরাগধানীর পরাগরেণু থেকে ওই ফুলের গর্ভমুণ্ডে হয় তখন তাকে অটোগামি বলা হয় । যেমন – দোপাটি
    2. গেইটোনোগ্যামি : পরাগ সংযোগ যখন একই উদ্ভিদের দুইটি একলিঙ্গ ফুল অথবা উভয়লিঙ্গ ফুলের স্ত্রী এবং পুরুষের মধ্যে ঘটে তখন তাকে গেইটোনোগ্যামি বলে । যেমন – কুমড়ো, লাউ ।
  2. ইতর পরাগযোগ : একই প্রজাতির অন্য গাছের ফুলের গর্ভমুণ্ডে যখন কোনো ফুলের পরাগরেণু নানারকম বাহকের দ্বারা বাহিত হয়ে পরাগযোগ ঘটে তাকে ইতর পরাগযোগ বলে । উদাহরণ – চাপা, রক্তদ্রোণ, সরিষা ।

পরাগযোগের বাহক :

পরাগ বাহকগাছের নামফুলের প্রকারফুলের বৈশিষ্ট্য
বায়ুভুট্টা এবং ধানবায়ুপরাগী1. সাদা রঙের অথবা বর্ণহীন অনুজ্জ্বল এবং ক্ষুদ্রাকার।

2. পরাগরেণু প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।

3. হালকা ও ক্ষুদ্র প্রকৃতির হয় রেনু গুলি।

4. শাখান্বিত হয় গর্ভমুণ্ডটি এবং লম্বা হয় গর্ভদন্ডটি।

জলপাতা ঝাঁঝিজলপরাগী1. অনুজ্জ্বল,হালকা এবং ক্ষুদ্র।

2. মোমের আস্তরন থাকে ফুলের স্তবক গুলিতে তার কারনে এরা জলে ভাসে সহজেই।

3. মকরন্দ ও গন্ধহীন হয় ফুলগুলি।

4. আঠালো এবং রোমশ প্রকৃতির হয় গর্ভমুণ্ড।

পতঙ্গআমপতঙ্গপরাগী1. ফুলগুলি উজ্জ্বল বর্ণযুক্ত এবং বড় হয়।

2. মিষ্টি গন্ধ যুক্ত হয়।

3. আঠালো এবং অমসৃণ প্রকৃতির হয় পরাগরেণু।

4.গর্ভমুণ্ড আঠালো এবং অমসৃণ হয়।

পাখিশিমুলপক্ষীপরাগী1.এই ক্ষেত্রে ফুলগুলি যেমন উজ্জ্বল বর্ণের হয় ঠিক তেমনি আকারে বেশ বড় হয়।

2. মকরন্দ যুক্ত হয় ফুলগুলি।

3. পাখিদের সুস্বাদু খাদ্যরূপে পরাগরেণু ব্যবহৃত হয়।

অযৌন জননযৌন জনন
একটি মাত্র জনিতৃ জীবের প্রয়োজন হয়যৌন জননের ক্ষেত্রে দুটি জনিতৃ জীবের প্রয়োজন হয়
অযৌন জনন হল মাইটোসিস নির্ভর জনন পদ্ধতিযৌন জনন হল মিয়োসিস নির্ভর জনন পদ্ধতি
এই ক্ষেত্রে গ্যামেট উৎপাদনের প্রয়োজন নেইএক্ষেত্রে গ্যামেট উৎপাদনের প্রয়োজন আছে
প্রকরণ সৃষ্টিতে সাহায্য করে নাএই জননে প্রকরণ সৃষ্টি হয়
জনিতৃ জীব এবং অপত্য জীব একই রকমের হয়জনিতৃ জীব এবং অপত্য জীব পৃথক হয়
এই জননে অভিযোজন ক্ষমতা অপত্য জীবের কম হয়এই ধরনের জননের অভিযোজন ক্ষমতা অপত্য জীবের বেশি

নিষেক এবং নতুন উদ্ভিদ গঠন

 

ফুলের পুং-প্রজননিক অংশ হলো পুংকেশর এবং পরাগধানীর পরাগরেণু থেকে শুক্রাণু উৎপন্ন হয় । ফুলের স্ত্রী-প্রজননিক অংশ হলো গর্ভকেশর এবং ডিম্বাণু উৎপন্ন হয় ডিম্বাশয়ের ডিম্বকের মধ্যে ।

  1. পরাগযোগ : পুংকেশর থেকে পরাগরেণু ফুলের গর্ভমুণ্ডে পৌঁছায় ইতর অথবা স্বপরাগযোগের মাধ্যমে ।
  2. পরাগরেণুর অঙ্কুরোদগম এবং পুং-গ্যামেট সৃষ্টি : পরাগনালি তৈরি হয় পরাগরেণু অঙ্কুরিত হয়ে, সেই সময় এই পরাগরেণুর নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিস কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে ভেঙে গিয়ে একটি নালিকা নিউক্লিয়াস এবং দুটি শুক্রাণু উৎপন্ন করে ।
  3. ভ্রূণস্থলী : চারটি স্ত্রীরেণু গঠন হয় ডিম্বকের ডিম্বকরন্ধ্র মাতৃকোশে, যার মধ্যে তিনটি বিনষ্ট হয়ে যায় এবং একটি সক্রিয় থাকে । মাইটোসিস বিভাজন প্রক্রিয়ায় হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াস তিনবার বিভাজিত হয়ে আটটি নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে, এদের মধ্যে ডিম্বকরন্ধ্রের দিকে তিনটি নিউক্লিয়াস থেকে দুটি সহকারি কোশ এবং একটি ডিম্বাণু উৎপন্ন হয় এবং অপর দুটি নিউক্লিয়াস এক হয়ে নির্ণীত নিউক্লিয়াস গঠন করে ।
  4. দ্বিনিষেক : পরাগনালি গর্ভদন্ডের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুটি শুক্রাণুকে ভ্রূণস্থলী পর্যন্ত বাহিত করে আনে । তারপর ডিম্বাণুর সাথে শুক্রাণু মিলিত হয়ে ডিপ্লয়েড জাইগোট গঠন করে এবং অপরটি ট্রিপ্লয়েড শস্য নিউক্লিয়াস গঠন করে নির্ণীত নিউক্লিয়াসের সাথে যুক্ত হয়ে । গুপ্তবীজী উদ্ভিদের নিষেক হলো একটি দ্বিনিষেক প্রক্রিয়া ।
  5. ভ্রূণ গঠন : অনেকগুলো কোশ জাইগোট মাইটোসিস পদ্ধতিতে বারবার বিভাজন হওয়ার ফলে তৈরি হয়, যেগুলো পরবর্তীকালে ভ্রূণ গঠন করে । একই সময় নিউক্লিয়াসটি ভেঙে গিয়ে শস্য গঠন করে ।
  6. ফল এবং বীজ গঠন : জাইগোট থেকে ভ্রূণ নিষেকের জন্যই সৃষ্টি হয় এর ফলে ডিম্বকটি বীজে এবং ডিম্বাশয় বৃদ্ধি হয়ে ফল তৈরি করে ।
  7. নতুন চারা গাছের সৃষ্টি : ভ্রূণ থেকে নিজের মধ্যে যা ভবিষ্যতে অনুকূল পরিবেশে ক্রমশ বড় হয়ে একটি নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করে ।

বৃদ্ধি ও বিকাশ :

 

বৃদ্ধি : কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত সাপেক্ষে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কোশীয় উপাদানের সংশ্লেষ দ্বারা কলা, কোশ, দেহের আয়তন, আকার এবং শুষ্ক ওজনের স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয় ভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়াকে বৃদ্ধি বলে ।

বিকাশ : কোশের বিভেদীকরণ ও সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে, জটিল প্রক্রিয়া জাইগোট থেকে জীবের সৃষ্টি, বৃদ্ধি এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তার জীবন চক্রের সংঘটিত সমস্ত রকমের পরিবর্তনকে একত্রে বিকাশ বলা হয় ।

বৃদ্ধি ও বিকাশের সম্পর্ক : কোশীয় পদার্থ সংশ্লেষিত হওয়ার ফলে কোশের বৃদ্ধি ঘটে আর এই কোশ বিভাজিত হয়ে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায় । এইভাবে প্রতিটি জীবদেহে বৃদ্ধির সময় দেহের আয়তন এবং আকার অপরিবর্তনীয় ভাবে বেড়ে যায় । ভ্রূণ যখন এককোশী জীব থেকে গঠিত হয় তখন কোশ বিভাজনের ফলে কোশগুলি নানা ধরনের কোশে রূপান্তরিত হয়ে জীব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলি গঠন করে এবং তার বিকাশ ঘটায় । সুতরাং বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবের বিকাশ ঘটে।

বৃদ্ধির পর্যায় : তিনটি সুস্পষ্ট দশায় বহুকোশী জীবের বৃদ্ধিকে বিভক্ত করা হয় –

  • কোশ বিভাজন : মাইটোসিস পদ্ধতিতে জীব দেহের কোশগুলি বিভাজিত হয়ে তার সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে এবং নতুন কোশযুক্ত হয়ে আকার ও আয়তন বাড়ে ।
  • কোশের আকার বৃদ্ধি : প্রোটোপ্লাজমীয় বস্তুর সংশ্লেষ-এর দ্বারা অপরিবর্তনীয় ভাবে কোশের আকার বেড়ে যায় এবং তার সাথে জীব দেহের আকারও বাড়ে ।

 কোশীয় বিভাজন : কোশের বিশেষ প্রাপ্তি ঘটে এই পর্যায়ে, অঙ্গসংস্থানিক এবং জৈবিক পরিবর্তনের দ্বারা ।

মানব বিকাশের বিভিন্ন দশা : 

 

বৃদ্ধি ও বিকাশ, মানুষের মায়ের গর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় শুরু হলেও পরবর্তীকালে সেই বিকাশকে পাঁচটি দশাতে ভাগে ভাগ করা হয় ।

বিকাশের পর্যায়বিশেষ বৈশিষ্ট্য
সদ্যোজাত

0-1 বছর

1.তীব্র আলোকে অনুসরণ করা ।

2. মানুষের মুখমণ্ডলের দিকে আকর্ষিত হওয়া ।

3. রুটিং রিফ্লেক্স ব্যবহার করে পুষ্টি সংগ্রহ করা ।

4.নানা রকমের সংবেদনের সৃষ্টি ।

5. বৃদ্ধি দ্রুত গতিতে হয় ।

শৈশব

2-12 বছর

1. টডলার দশায় কোনো বস্তুকে নামের দ্বারা চিনতে পারা, খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে আনন্দ পাওয়া এবং পরিবেশকে বুঝতে শেখা ।

2. এই অবস্থায় দক্ষতা গড়ে ওঠে, কথা বলা ও মনোভাব প্রকাশের মধ্যে দিয়ে

3. নানা রকমের শব্দ ইনফ্যান্ট দশায় উচ্চারণ করতে শেখা ।

4. এই বয়সের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাইমোসিন নামক এক প্রকার হরমোন এবং এই সময় জনন গ্রন্থি গুলির পরিণত হয় না ।

বয়ঃসন্ধি 

13-21 বছর

1. সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হার হয় এই সময় ।

2. সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলির ।

3. পরিণত হয় যৌন অঙ্গ গুলি এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে ।

4. মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রোজেস্টেরোন এবং ইস্ট্রোজেন ও পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশ পায় ।

পরিণত দশা

22-55 বছর

1. পরিপূর্ণভাবে জনন গ্রন্থিগুলো সক্রিয় হয় ।

2. প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই সন্তান উৎপাদন করে তাকে প্রতিপালন করে সংসার ধর্ম পালন করে ।

3. শ্লথ গতিতে বৃদ্ধি হলেও তা বন্ধ হয়ে যায় 24-25 বছরের মধ্যে ।

বার্ধক্য

55 বছর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত 

1. মেনোপজ ঘটে মহিলাদের ক্ষেত্রে ।

2. পুরুষদের ক্ষেত্রে 55 বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে 45 বছরের পর শুক্রাণু ডিম্বাণু উৎপাদন কমে যায় ।

3. ঘ্রাণশক্তি শ্রবণশক্তি দৃষ্টিশক্তি এগুলো হ্রাস পায় ।

4. স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের আয়তন কমে যায় ।

5. ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং কুঁচকে যায় ।

SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ

Multiple Choice Questions – 1 Marks of বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ

1.জিন মূলত কোনটির অংশ? 

  1. DNA
  2. RNA
  3. DNA ও RNA উভয়
  4. এর কোনােটিই নয়

ANS : DNA

মানবদেহে অটোজোমের সংখ্যা হল

  1. 40 টি
  2. 44 টি
  3. 42 টি
  4. 45 টি

ANS : মানবদেহে অটোজোমের সংখ্যা হল 44টি।

  1. ক্রোমােজোম যখন একক সংখ্যক সেটে থাকে, তাকে বলে
  1. হ্যাপ্লয়েড
  2. ট্রিপ্লয়েড
  3. ডিপ্লয়েড
  4. এর কোনােটিই নয়

ANS : ক্রোমােজোম যখন একক সংখ্যক সেটে থাকে তাকে বলে হ্যাপ্লয়েড।

  1. ক্রোমােজোমে অধিক ঘনত্বযুক্ত পুতির মতাে অংশ গুলিকে বলে
  1. ক্লোমােনিমা
  2. ক্রোমাটিড
  3. ক্রোমােমিয়ার
  4. সেন্ট্রোমিয়ার

ANS-ক্রোমােমিয়ার

  1. স্যাটেলাইট থাকে ক্রোমােজোমের
  1. মুখ্য খাঁজে
  2. গৌণ খাঁজে
  3. সেন্ট্রোমিয়ারে
  4. ক্রোমাটিডে

ANS- গৌণ খাঁজে

  1. কোন কোশ বিভাজনকে সদৃশ বিভাজন বলে ? 
  1. মাইটোসিস
  2. মিয়ােসিস
  3. অ্যামাইটোসিস
  4. সাইটোকাইনেসিস

ANS- মাইটোসিস 

7.ক্রোমােজোমে আম্লিক প্রােটিনে কোন অ্যামাইনাে অ্যাসিড থাকে ?

  1. ভ্যালিন
  2. লাইসিন
  3. ট্রিপটোফ্যান
  4. লিউসিন

ANS- ট্রিপটোফ্যান

৪. মাইটোসিস কোষ বিভাজনের কোন দশায় বেম গঠিত হয়? 

  1. প্রফেজ
  2. অ্যানাফেজ
  3. মেটাফেজ
  4. টেলােফেজ

ANS- মেটাফেজ

9.সেন্ট্রোমিয়ারবিহীন ক্রোমােজোমকে বলে

  1. মেটাসেন্ট্রিক
  2. অ্যাসেন্ট্রিক
  3. টেলােসেন্ট্রিক
  4. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক

ANS- B অ্যাসেন্ট্রিক

  1. কোন প্রকার জননে মাইটোসিস এবং মিয়ােসিস দুই প্রকার কোশ বিভাজনই দেখা যায় ?
  1. অযৌন জনন
  2. অঙ্গজ জনন
  3. যৌন জনন
  4. এর কোনােটিই নয়

ANS- C

Short Questions – 2-3 Marks of বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ

হেটারোক্রোমাটিন ও ইউক্রোমাটিন কাকে বলে ?

উত্তর.  কোষ বিভাজনের ইন্টারফেজ দশায় ক্রোমাটিন জালিকা গ্রহণযোগ্যতার রঞ্জিত করলে যে অংশ গাঢ় রঙ ধারণ করে তাকে হেটারোক্রোমাটিন এবং যে অংশে হালকা রঙ ধারণ করে তাকে ইউক্রোমাটিন  বলে |

ক্রোমোজোম ও ক্রোমাটিড এর পার্থক্য লেখ |

উত্তর.

ক্রোমোজোমক্রোমাটিড
নিউক্লিয় জালিকা থেকে ক্রোমোজোম উৎপন্ন হয় |প্রতিটি ক্রোমোজোম এ দুটি করে ক্রোমাটিড উপস্থিত থাকে |
এটি সংখ্যায় দুইয়ের অধিক হতে পারেপ্রত্যেকটি ক্রোমোজোম এ দুটি ক্রোমাটিড থাকে |

হেটারোক্রোমাটিন ও ইউক্রোমাটিন এর পার্থক্য লেখ |

উত্তর.

হেটারোক্রোমাটিনইউক্রোমাটিন
ইন্টারফেজ  দশায় গারো ও কোষ বিভাজন দশায় হালকা রং ধারণ করেএক্ষেত্রে ইন্টারফেজ দশা হালকা ও কোষ বিভাজন  দশায়  গারো  রং ধারণ করে
এই অংশের সক্রিয় জিন থাকে নাএই অংশে সক্রিয় জিন থাকে

অযৌন ও যৌন জনন এর মধ্যে পার্থক্য লেখ |

উত্তর.

অযৌন জননযৌন জনন
নিম্নশ্রেণির জীব দেহের অযৌন জনন ঘটেউচ্চ শ্রেণীর জীব দেহের যৌন জনন ঘটে
রেনু হলো অযৌন জননের এককগ্যামেট হল যৌন জননের একক
অপত্য জীব জনিতৃ জীবের অনুরূপ হয়অপত্য জীবের নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব  ঘটে

মাইটোসিস কোষ বিভাজনকে সমবিভাজন বলে কেন?

উত্তর.  এই পদ্ধতিতে কোষের নিউক্লিয়াসটি একবার বিভাজনের মাধ্যমে মাতৃকোষের  সমগুন সম্পন্ন ও সমসংখ্যক ক্রোমোজোম সম্পন্ন দুটি অপত্য কোষ উৎপন্ন করে | একে মাইটোসিস কোষ বিভাজন বলা হয় |

ক্রোমোজোম  এর দুটি কাজ লেখ |

উত্তর.

  1. ক্রোমোজোম হয়েছে সমস্ত শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে |
  2. ক্রোমোজোমের  জিন অর্থাৎ বংশগত পদার্থ অবস্থান করে |

অযৌন জননের একটি করে সুবিধা ও অসুবিধা লেখ |

উত্তর.

সুবিধা:

  1. অপত্য জীব  জনিতৃ  জীবের অনুরূপ হয় |
  2. কম সময়ে বেশি জীব সৃষ্টি হয় |

অসুবিধা:

  1. নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না |
  2. পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে অভিযোজনের সক্ষম হয় না |

বুলবিল কি? এটি কোন উদ্ভিদে দেখা যায়?

উত্তর.

কিছু কিছু উদ্ভিদ কাকে বলে খাদ্য সংগ্রহ করে রাখে ফলে তার গোলাকার আকার ধারণ করে একে  বুলবিল বলে | যেমন খাম আলু, চুপড়ি আলু প্রভৃতি উদ্ভিদ |

পার্থেনোজেনেসিস বা অপুংজনি কি? উদাহরণ দাও |

উত্তর.

নিষেক ছাড়াই অনিষিক্ত ডিম্বানু থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি কে অপুংজনি বা পার্থেনোজেনেসিস বলে | উদাহরণ – মৌমাছি, স্পাইরোগাইরা ইত্যাদি |

পার্থেনোজেনেসিস বা অপুংজনি দুটি গুরুত্ব লেখ | 

উত্তর.

  1. পুংগ্যামেটের প্রয়োজন হয় না |
  2. নিষেক ছাড়াই সরাসরি জীব সৃষ্টি হয় |

iii. কৃত্রিম উপায়ে এই পদ্ধতির সাহায্যে সহজে অসংখ্য জীব প্রস্তুত করা যায় |

বহু বিভাজন কাকে বলে? উদাহরণ দাও? 

উত্তর.

যে পদ্ধতিতে প্রতিকূল পরিবেশে মাতৃ কোষের নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয় অসংখ্য অপত্য জীব সৃষ্টি করে তাকে বহু বিভাজন বলে | উদাহরণ:  প্লাজমোডিয়াম এ বহু বিভাজন হয় |

ইতর পরাগযোগ এর দুটি অসুবিধা লেখ | 

উত্তর.

ইতর পরাগযোগের অসুবিধা :

  1. এক্ষেত্রে বাহকের প্রয়োজন হয় | তাই  বাহক না হলে ইতর পরাগযোগ সম্ভব নয় |

মুখ্য বৃদ্ধি কলা কাকে বলে ?

উত্তর.

জীবের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে সময় ধরে জীবের বৃদ্ধি হতে থাকে তাকে মুখ্য বৃদ্ধি কাল বলা হয় |

অনুবিস্তারণ বা মাইক্রোপ্রোপাগেশন কাকে বলে ?

উত্তর.

যে পদ্ধতিতে উদ্ভিদের কোষ বা কলা বা অঙ্গ প্রকৃতির ক্ষুদ্রতম অংশ পালন  বা কর্ষণ করে একইরকম উদ্ভিদের অল্প সময় বংশ বিস্তার ঘটানো হয় | তাকে মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা অনুবিস্তারণ  বলা হয় |

Long Questions – 5 Marksof বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ

অ্যামাইটোসিস ও মাইটোসিস এর মধ্যে পার্থক্য লেখ |

উত্তর .

বিষয়  অ্যামাইটোসিসমাইটোসিস
বেমতন্তুএক্ষেত্রে গঠিত হয় নাএক্ষেত্রে গঠিত হয়
বিভাজনের দশাএক্ষেত্রে বিভাজনের কোন দশায় দেখা যায় না |এক্ষেত্রে বিভাজনের দশা থাকে | যে গুলি হল-  প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ,  টেলোফেজ |
প্রকৃতিএটি প্রত্যক্ষ বিভাজনএটি পরোক্ষ বিভাজন
বিভাজনের সময়প্রথমে সাইটোপ্লাজম এবং পরে নিউক্লিয়াস বিভাজন ঘটে |এক্ষেত্রে প্রথমে নিউক্লিয়াস ও পরে সাইটোপ্লাজম বিভাজন ঘটে |
নিউক্লিয় পর্দাএক্ষেত্রে অবলুপ্তি হয় নাএক্ষেত্রে অবলুপ্তি হয়

DNA ও RNA এর তিনটি পার্থক্য লেখ | 

উত্তর .

DNARNA
এটি সাধারণত দ্বিতন্ত্রী হয় |এটি সাধারণত একতন্ত্রী হয় |
DNA বংশগতির বাহক ও ধারক হিসেবে কাজ করে |RNA  এর কাজ হল প্রোটিন সংশ্লেষণ করা |
DNA তে ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা থাকে |RNA  তে রাইবোজ শর্করা থাকে |
এতে থাইমিন, অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন নাইট্রোজেন বেস বর্তমান |এতে  ইউরাসিল, অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন নাইট্রোজেন বেস বর্তমান |

মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোষ বিভাজনের পার্থক্য গুলি উল্লেখ করো | 

উত্তর .

মাইটোসিসমিয়োসিস
এক্ষেত্রে কোষটি একবার বিভাজিত হয় |এক্ষেত্রে কোষটি পরপর দুবার বিভাজিত হয় |
এই প্রক্রিয়ার দেহকোষে সম্পন্ন হয় |এই প্রক্রিয়ায় জননকোষে সম্পন্ন হয় |
এই কোষবিভাজন কে সমবিভাজন বলা হয় |একে রাস বিভাজন বলা হয় |
এটি জীবের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে |এটি  গ্যামেট বা জনন কোষ উৎপাদনে সাহায্য করে |
এই প্রকার কোষ বিভাজনের দুটি অপত্য কোষ উৎপন্ন হয় |এক্ষেত্রে চারটি অপত্য কোষ উৎপন্ন হয় |

মিয়োসিস কোশ  বিভাজন বলতে কী বোঝায় ?  এটি কোথায় সম্পন্ন হয় ? তাৎপর্য লেখ |

উত্তর.

যে বিভাজন প্রক্রিয়ায় জনন মাতৃকোশ  এর সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস পরপর দুইবার অর্থাৎ প্রথমে হ্রাস বিভাজন ও পরে সমবিভাজন হয়ে অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজোম সহ চারটি অপত্য কোশ  সৃষ্টি করে |  তাকে মিয়োসিস কোশ  বিভাজন বলে |

স্থান: মিয়োসিস কোশ  বিভাজন সম্পন্ন হয় জনন মাতৃকোশ  | যেমন উন্নত উদ্ভিদের পরাগধানী ও ডিম্বাশয়,  মস, ফান ইত্যাদি উদ্ভিদের রেনু মাতৃকোশে , প্রাণীদের শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় |

মিয়োসিস এর তাৎপর্য :

  1. ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক রাখা – মিয়োসিস কোশ  বিভাজন ও হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক অর্থাৎ n সংখ্যক ক্রোমোজোমযুক্ত গ্যামেট সৃষ্টি করে | হ্যাপ্লয়েড  গ্যামেট মিলিত হয়ে ডিপ্লয়েড (2n) কোশ  সৃষ্টি করে | ক্রোমোজোম সংখ্যা রাস না হলে তা গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পেত | তাই মিয়োসিস ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক রাখতে সাহায্য করে | 
  2. জিনগত ভেদ সৃষ্টি – ক্রসিং ওভার এর ফলে জিনের পুনর্বিন্যাস সম্পন্ন হওয়ায় প্রজাতির মধ্যে জিনগত ভেদ দেখা যায় |
  3. জনুক্রম নিয়ন্ত্রণ – মিয়োসিস কোশ  বিভাজন হওয়ার মাধ্যমে জীবদেহে হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড দশার আবর্তন ঘটে | তাই এটি জনুক্রম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে |
  4. জীবের পুনর্বিন্যাস : মিয়োসিস কোশ  বিভাজন এর কারনে ক্রসিং ওভার সম্পন্ন হওয়ায় ক্রোমোজোমের দেহাংশের বিনিময় ঘটে | একে জীবের পুনর্বিন্যাস বলে| 

জনুক্রম বলতে কী বোঝায়? ফার্নের জনুক্রম প্রক্রিয়া সংক্ষেপে আলোচনা করো?

উত্তর.

জনুক্রম : জীবের জীবনচক্রে হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড দশার বা অযৌন ও যৌন জনন দশার বা স্পােরােফাইট ও গ্যামেটোফাইট দশার চক্রাবর্ত আবর্তনকে জনুক্রম বলে।

উদাহরণ : মস, ফার্ন ইত্যাদি উদ্ভিদে, প্যারামেসিয়াম, মনােসিস্ট ইত্যাদি প্রাণীতে জনুক্রম দেখা যায়।

গ্যামেটে হ্যাপ্লয়েড (n) সংখ্যক ক্রোমােজোম থাকে। নিষেকের পর ডিপ্লয়েড জাইগােট (2n) থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয়। অপত্য জীব পরিণত হলে পুনরায় হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট গঠন করে। এইভাবে জীবের জীবনচক্রে হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড দশা পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়। এটাই জনুক্রম নামে পরিচিত।

ফার্নের জনুক্রম পদ্ধতি : ফার্নের জীবনচক্রে সুস্পষ্টভাবে জনুক্রম পদ্ধতি দেখা যায়। ফার্নের মুখ্য উদ্ভিদদেহটি হলাে রেণুধর উদ্ভিদ। এটি ডিপ্লয়েড প্রকৃতির। রেণুধর উদ্ভিদে রেণু উৎপন্ন হয়। রেণু মিয়ােসিস পদ্ধতিতে বিভাজিত হয়ে হ্যাপ্লয়েড রেণু গঠন করে যা পরে অঙ্কুরিত হয়ে হ্যাপ্লয়েড লিঙ্গধর উদ্ভিদ গঠন করে। লিঙ্গধর উদ্ভিদে পুংধানী পুংগ্যামেট এবং স্ত্রীধানী স্ত্রীগ্যামেট সৃষ্টি করে। পুংগ্যামেট ও স্ত্রীগ্যামেটের নিষেকের ফলে ডিপ্লয়েড জাইগােট (2n) সৃষ্টি হয়। জাইগােট থেকে রেণুধর উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়।

কোশ চক্র বলতে কী বোঝায় ? কোশ  চক্রের বিভিন্ন দশা গুলি সংক্ষেপে লেখ |

উত্তর.

কোশচক্র : একটি কোশের, একবার বিভাজন শুরু থেকে পরবর্তী বিভাজন শুরু পর্যন্ত যে ঘটনাগুলি ঘটে তার পর্যায়ক্রমিক আবর্তনকে কোশচক্র বলে।

কোশচক্রের পর্যায় : কোশচক্রের প্রধান দুটি পর্যায় যথা ইন্টারফেজ ও মাইটোটিক ফেজ।

ইন্টারফেজ (Interphase) : দুটি বিভাজনের অন্তবর্তী যে দশায় কোশটি বিভাজিত হয় না, তাকে ইন্টারফেজ দশা বলে। এই দশাকে প্রস্তুতিপর্ব বলা হয়। ইন্টারফেজ তিনটি দশা দেখা যায়।

  • G1 দশা বা গ্রোথ-(i) দশা :
    1. বৈশিষ্ট্য  ইহা মাইটোটিক দশা এবং সংশ্লেষ (s-দশা) দশার মধ্যবর্তী পর্যায়।
    2. এই দশায় প্রােটিন ও RNA সংশ্লেষ ঘটে।
    3. এই দশায় কোশটি আকৃতিতে বৃদ্ধি পায় এবং নিউক্লিয়াসের আকৃতি বাড়ে।
  • s দশা বা সংশ্লেষ দশা :
    1. ইহা G1 ও G2 এর মধ্যবর্তী পর্যায়।
    2. এই দশায় DNA ও প্রােটিন সংশ্লেষ ঘটে।
    3. এই দশায় হিস্টোন প্রােটিন সংশ্লেষ ঘটে এবং DNA -র সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্রোমােটিড তন্তু গঠন করে।
  • G2 দশা বা গ্রোথ-(ii) দশা :
    1.  ইহা S-দশা ও পরবর্তী মাইটোটিক দশার মধ্যবর্তী দশা।
    2. এই দশায় RNA প্রােটিন সংশ্লেষ ঘটে।
    3. এই দশায় ATP উৎসেচক সংশ্লেষিত হয় ফলে কোশের মধ্যে বিপাকীয় সক্রিয়তা দেখা যায়।

M ফেজ বা মাইটোটিক ফেজ : ইন্টারফেজ দশার শেষে M ফেজ বা মাইটোটিক ফেজ শুরু হয়। এই দশায় প্রথমে নিউক্লিয়াস বিভাজন ঘটে তারপর সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়ে অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়। M ফেজ এর দুটি দশা|

ক্যারিওকাইনােসিস : নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস বলে। নিউক্লিয়াসের বিভাজন চারটি পয়ায়ে সম্পন্ন হয় যথা – প্রােফেজ, মেটাফেজ অ্যানাফেজ ও টেলােফেজ।

সাইটোকাইনােসিস : সাইটোপ্লাজমের বিভাজনক সাইটোকাইনােসিস বলে। সাইটোকাইনেসিস উদ্ভিদকোশে কোশপাত বা সেলপ্লেট গঠনের মাধ্যমে এবং প্রাণীকোশে। ক্লিভেজ পদ্ধতিতে অর্থাৎ খাজ গঠনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

একটি আদর্শ ক্রোমোজোমের চিত্র অঙ্কন করো |  এবং উল্লেখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো – 

উত্তর

  1. ক্রোমাটিড
  2. সেন্ট্রোমিয়ার
  3. নিউক্লিয়ার অর্গানাইজার
  4. টেলোমিয়ার
error: Content is protected !!
Scroll to Top

আজকেই কেনো পরীক্ষার শর্ট নোটস

এখন সহজে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও – আজকেই ডাউনলোড করো পিডিএফ বা বই অর্ডার করো আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকে