আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে
প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি
Here you will learn the basics of CHAPTER 1 – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় (Control and Coordination in the Living World) in a simple language it is for Bengali medium students who are studying under West Bengal Board of Secondary Education and preparing for their exam (Class 10 WBBSE) Here you will find all necessary and important WBBSE Madhyamik Suggestions, notes, solved sample question paper in Bangla along with video lectures from expert teachers
পরিবেশের পরিবর্তন সনাক্তকরণ এবং উদ্ভিদের সাড়া প্রদানের পদ্ধতি :
উদ্দীপক- পরিবেশের যে সকল পরিবর্তন বিভিন্ন জীবের দ্বারা সহজেই শনাক্ত হয়ে থাকে ও জীব এই পরিবর্তনের সাপেক্ষে সাড়া প্রদান করে তাকেই আমরা উদ্দীপক বলে থাকি।
বহিঃস্থ উদ্দীপকসমূহ- যে সকল উদ্দীপক জীবদেহের বাইরের পরিবেশে উৎপন্ন হয়ে থাকে তাদের আমরা বহিঃস্থ উদ্দীপক বলে থাকি।
যেমন: আলোক, অভিকর্ষ বল, উষ্ণতা, প্রভৃতি।
অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকসমূহ- জীবদেহের অভ্যন্তরে অবস্থিত উদ্দীপকসমূহকে অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক বলা হয়ে থাকে। যেমন- ক্যালসিয়াম আয়ন, হরমোন, প্রভৃতি।
সংবেদনশীলতা- কোনো পরিবর্তন শনাক্ত করে, সেই অনুযায়ী জীবের সাড়া প্রদানের ক্ষমতাকে আমরা সংবেদনশীলতা বলে অভিহিত করে থাকি। উদাহরণস্বরূপ- কুমড়ো গাছে উপস্থিত বিভিন্ন আকর্ষগুলি গাছের ডাল অথবা কঞ্চির সংস্পর্শে এলে তাদেরকে স্প্রিং এর ন্যায় জড়িয়ে ধরে থাকে।
উদ্ভিদের সাড়া প্রদানের পদ্ধতিসমূহ:
উদ্দীপনার উপলব্ধিকরণ –
উদ্ভিদের কোন সুনির্দিষ্ট কোশ বা কলা বা রঞ্জক পদার্থ নির্দিষ্ট উদ্দীপনা গ্রাহক হিসাবে কাজ করে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা অসম্ভব। কিন্তু বিজ্ঞানীরা মনে করেন উদ্ভিদের যে অংশে উদ্দীপনা প্রয়োগ করা হয়ে থাকে সেই অংশেই উদ্দীপনার গ্রাহক হিসাবে কাজ করে থাকে।
উদ্দীপনার পরিবহন- উদ্ভিদ দেহে কোন উদ্দীপনা গৃহীত হলে, ধারাবাহিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তা সিগনালে পরিবর্তিত হয়ে থাকে এবং প্লাজমোডেসমাটার দ্বারা সাড়াপ্রদানকারী কোশে প্রবাহিত হয়।
সাড়া প্রদান- নির্দিষ্ট সিগনালটি সারা প্রদানকারী অঙ্গের কোশ বা কলাতে পৌঁছানো মাত্রই ঐ কোশ বা কলার রসস্ফীতি ঘটে; যার মাধ্যমে উদ্ভিদরা সাড়া প্রদান করে থাকে।
উদাহরণ : বনচাঁড়াল গাছের পাতা ত্রিফলা প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই জাতীয় পাতার পার্শ্বীয় দুটি পত্রক ক্ষুদ্রাকার হয় এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে বৃন্ত কোশের রসস্ফীতির হ্রাস বা বৃদ্ধির ফলে পত্রক দুটি উপবৃত্তাকার পথে পর্যায়ক্রমে উপরে এবং নিচে ওঠানামা করতে থাকে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় শীর্ষ পত্রকে কোশের পরিবর্তন ঘটে না। ওই পত্রক দুটি একটি সম্পূর্ণ আবর্তন পূর্ণ করতে প্রায় দুই মিনিট সময় নিয়ে থাকে।
উদ্ভিদের চলন:
চলন :
কোন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির ভাবে অবস্থান করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অথবা উদ্দীপকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জীবের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের ঘটনাকে আমরা চলন বলি ।
1.যান্ত্রিক চলন- ভৌত পদ্ধতিতে যে চলন সংঘটিত হয়ে থাকে তাকেই যান্ত্রিক চলন বলা হয়।
- জৈবিক চলন- জৈবিক চলন হল কোন কোশের প্রোটোপ্লাজমের সক্রিয়তার মাধ্যমে সংঘটিত চলন।
উদ্ভিদ চলন এর প্রকারভেদ:
- ট্যাকটিক চলন- বহিঃস্থ কোন উদ্দীপকের প্রভাবে ঘটে থাকা উদ্ভিদের সামগ্রিক চলনকে আমরা আবিষ্ট বা সামগ্রিক চলন বা ট্যাকটিক চলন বলে অভিহিত করে থাকি।
পজিটিভ ফটো ট্যাকটিক চলন- কোন আলোর উদ্দীপকের উৎসের দিকে যে ট্যাকটিক চলন সংঘটিত হয়ে থাকে তাকে পজিটিভ ফটো ট্যাকটিক চলন বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ- ভলভক্স, ক্ল্যামাইডোমোনাস প্রভৃতি শৈবাল এবং ক্লাদফোরা, ইউলোথ্রিক্স, ইত্যাদি শৈবালের চলন।
নেগেটিভ ফটো ট্যাকটিক চলন- আলোক উদ্দীপকের উৎসর বিপরীত দিকে যে ট্যাকটিক চলন সংঘটিত হয় তাকে নেগেটিভ ফটো ট্যাকটিক চলন বলা হয়। যেমন : তীব্র আলোক উৎসের বিপরীত দিকে ভলভক্স, ক্ল্যামাইডোমোনাস জাতীয় শৈবালের চলন।
b.ট্রপিক চলন বা দিকনির্ণীত চলন- বিভিন্ন বহিঃস্থ উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে কোন উদ্ভিদ অঙ্গের আবিষ্ট বক্র চলনকে আমরা ট্রপিক চলন বলে অভিহিত করি। এই ধরনের চলন মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
- ফটোট্রপিক চলন :
আলো উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে উদ্ভিদ অঙ্গের আবিষ্ট বক্র চলনকে ফটোট্রপিক চলন বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
অনুকূল আলোকবর্তী চলন- এই ধরনের চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ আলোক উৎসের দিকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
প্রতিকূল অভিকর্ষবর্তী চলন- এই প্রকার চলনের দ্বারা উদ্ভিদের বৃদ্ধি অভিকর্ষ বলের প্রতিকূলে হয়ে থাকে।
তির্যক অভিকর্ষবর্তী চলন- এই প্রকার চলনে উদ্ভিদদের বিভিন্ন অঙ্গ অভিকর্ষ বলের সাথে প্রায় তীর্যকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
ডায়াজিওট্রপিক চলন – এই প্রকার চলনে উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ অভিকর্ষ বলের সঙ্গে সমকোণে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
- জিওট্রপিক চলন :
পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাবে উদ্ভিদ অঙ্গের আবিষ্ট বক্র চলনকেই জিওট্রপিক চলন বলা হয়ে থাকে।
এই প্রকার চলনকে গ্রাভি ট্রপিজমও বলা হয়ে থাকে।
অনুকূল অভিকর্ষবর্তী চলন – এই প্রকার চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ অভিকর্ষ বলের অনুকূলে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
প্রতিকূল অভিকর্ষবর্তী চলন- এই প্রকার উদ্ভিদ চলনে উদ্ভিদ অঙ্গের বৃদ্ধি অভিকর্ষ বলের প্রতিকূলে হয়।
তীর্যক অভিকর্ষবর্তী চলন- এই প্রকার চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ অভিকর্ষ বলের সঙ্গে তীর্যকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
ডায়াজিওট্রপিক চলন- এই প্রকার চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ সমূহের বৃদ্ধি অভিকর্ষ বলের সঙ্গে সমকোণে হয়ে থাকে।
- হাইড্রোট্রপিক চলন :
হাইড্রোট্রপিক চলন হল জলের গতিপথ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন উদ্ভিদ অঙ্গের চলন।
অনুকূল হাইড্রোট্রপিক চলন– এই ধরনের চলনের দ্বারা উদ্ভিদ অঙ্গের বৃদ্ধি জলের উৎসের অনুকূলে ঘটে থাকে।
প্রতিকূল হাইড্রোট্রপিক চলন- এই ধরনের চলনের মাধ্যমে উদ্ভিদ অঙ্গের বৃদ্ধির জলের উৎসের প্রতিকূল ঘটে থাকে।
ন্যাস্টিক চলন :
বাহ্যিক উদ্দীপকের তীব্রতার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে উদ্ভিদ অঙ্গের যে চলন ঘটে থাকে তাকেই ন্যাস্টিক চলন বলা হয়। এই প্রকার চলন চার ধরনের হয়ে থাকে।
1.ফটোন্যাস্টিক চলন- আলোর উদ্দীপকের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতি জনিত আবিষ্ট চলনকেই আমরা ফটো ন্যাস্টিক চলন বলে থাকি। যেমন : পদ্মফুল দিনের বেলায় ফোটে এবং সন্ধ্যাবেলায় কম আলোর কারণে বুজে যায়।
2.থার্মোন্যাস্টিক চলন- উষ্ণতার তীব্রতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতি জনিত আবিষ্ট চলনকে আমরা থার্মোন্যাস্টিক চলন বলে থাকি। যেমন : টিউলিপ ফুল বেশি উষ্ণতায় ফোটে আর কম উষ্ণতায় বুঝে যায়।
- কেমোন্যাস্টিক চলন- রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত, উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতি জনিত আবিষ্ট বক্র চলনকে আমরা কেমোন্যাস্টিক চলন বলে অভিহিত করি। যেমন : সূর্যশিশির একটি পতঙ্গভুক উদ্ভিদ। ইহার পাতার সঙ্গে কোন পতঙ্গের সংস্পর্শ ঘটলে ইহা পতঙ্গের দিকে বেঁকে যায় ও পতঙ্গটিকে আবদ্ধ করে থাকে।
- সিসমোন্যাস্টিক চলন- উদ্দীপক অথবা আঘাত জনিত উদ্দীপনার তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের আবিষ্ট চলনকে সিসমোন্যাস্টিক চলন বলা হয়। যেমন : লজ্জাবতীর পাতার অগ্রভাগ স্পর্শ করলে পাতাগুলি জোড়া লেগে বন্ধ হয়ে যায়।
ট্যাকটিক, ট্রপিক ও ন্যাস্টিক চলন এর তুলনা
বিষয় | ট্যাকটিক | ট্রপিক | ন্যাস্টিক |
উদ্দীপক | বহিঃস্থ উদ্দীপকের তীব্রতা অথবা গতিপথের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে | ইহা বহিঃস্থ উদ্দীপকের গতিপথের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে | ইহা বহিঃস্থ উদ্দীপকের তীব্রতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় |
ঘটনাস্থল | সমগ্র উদ্ভিদ দেহে এই চলন ঘটে থাকে | এই প্রকার চলন মূলত উদ্ভিদের অপরিণত অঙ্গে ঘটে থাকে | ইহা উদ্ভিদের পরিণত অংশে লক্ষ্য করা যায় |
সংবেদনশীলতা | এই প্রকার চলনের দ্বারা উদ্ভিদ দেহের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন বা গমন ঘটে থাকে | এই প্রকার চলন সংবেদনশীল অঙ্গের বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘটে | ইহা উদ্ভিদের সংবেদনশীল অঙ্গের কোশ গুলিতে মূলত রসস্ফীতির তারতম্যের জন্য ঘটে |
প্রতিক্রিয়া | ইহা অনুকুল অথবা প্রতিকূলধর্মী হতে পারে | ইহাও অনুকুল অথবা প্রতিকূলধর্মী হতে পারে | ইহা সর্বদা অনুকূলধর্মী হয়ে থাকে। |
উদ্ভিদের সাড়া প্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়
হরমোন :
যে সকল জৈব রাসায়নিক পদার্থসমূহ, জীব দেহের বিশেষ ধরনের নির্দিষ্ট কতগুলি কোশ বা কোশ সমষ্টি থেকে উৎপত্তি লাভ করে অতি অল্প মাত্রায় লক্ষ কোশে বাহিত হয়ে কোশগুলির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং ওই নির্দিষ্ট কাজের পর তা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়, তাকে হরমোন বলে। হরমোন শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ থেকে, যার অর্থ হল ‘আমি জাগ্রত করি’।
উদ্ভিদের বিভিন্ন কাজের নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা এবং হরমোনের ভূমিকা :
সংবেদনশীলতা এবং সাড়া প্রদান: সকল প্রকার উদ্ভিদ মূলত ধীর বৃদ্ধিজ চলন বা রসস্ফীতি জনিত চলনের দ্বারা সাড়া প্রদান করে থাকে।
বীজের অঙ্কুরোদ্গম : অনুকূল পরিবেশে কিছু উদ্ভিদ হরমোন মূলত জিব্বেরেলিন বীজ মধ্যস্থ সুপ্ত ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে তাই বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটে।
উদ্ভিদের অগ্র ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধি : কিছু সংখ্যক উদ্ভিদ হরমোন পার্শ্বস্থ ভাজক কলার এবং অগ্রস্থ ভাজক কলার সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে। ফলত, উদ্ভিদের অগ্র ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধি ঘটে থাকে। যেমন : অক্সিন
মুকুলোদ্গম : কিছু সংখ্যক উদ্ভিদ হরমোনের প্রভাবে উদ্ভিদ অগ্রমুকুল সৃষ্টি করে এবং পাতার কক্ষে কাক্ষিক মুকুল তৈরি করে, যা থেকে পরবর্তীকালে শাখার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
ফুলফোটা : কিছু সংখ্যক উদ্ভিদ হরমোনের প্রভাবে পুষ্পমুকুল গঠিত হয়ে থাকে। এই পুষ্পমুকুল থেকেই পরে ফুল তৈরি হয়। যেমন—জিব্বেরেলিন
ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ- উদ্ভিদের বিভিন্ন ট্রপিক চলন যেমন, ফটোট্রপিজম, জিও ট্রপিজম প্রভৃতি উদ্ভিদ হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
উদ্ভিদ হরমোনের প্রকারভেদ সমূহ
উদ্ভিদ হরমোনের প্রকারভেদ সমূহ: এই উদ্ভিদ হরমোনকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে থাকি-
প্রাকৃতিক হরমোন- যেসকল উদ্ভিদ হরমোন উদ্ভিদ দেহে স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লেষিত হয়ে থাকে এবং তাদের রাসায়নিক প্রকৃতি এবং কাজ জানা গেছে, তাদেরকে প্রাকৃতিক হরমোন বলা হয়। যেমন : অক্সিন, জিব্বেরেলিন।
কৃত্রিম হরমোন- প্রাকৃতিক হরমোনের গঠনের ন্যায় যেসকল হরমোন গুলিকে কৃত্রিমভাবে রসায়নগারে তৈরি করা হয়েছে, তাদেরকেই কৃত্রিম হরমোন বলা হয়। যেমন- ইন্ডোল বিউটাইরিক অ্যাসিড, ইন্ডোল প্রপিয়োনিক অ্যাসিড, প্রভৃতি।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ হরমোন :
অক্সিন :
উৎস- কান্ড এবং মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলা, পরাগরেণু, অপরিণত পাতা, ভ্রূণমুকুলাবরণী ইত্যাদি হল অক্সিনের মুখ্য উৎসসমূহ।
রাসায়নিক গঠন- অক্সিন হলো C,H,O,N মৌল দ্বারা গঠিত ইনডোল বর্গ যুক্ত জৈব অ্যাসিডধর্মী এক অন্যতম উদ্ভিদ হরমোন।
পরিবহন- অক্সিন সহজে জলে দ্রবণীয় এবং ইহার মেরুবর্তী পরিবহন ঘটে থাকে। সক্রিয় পরিবহন পদ্ধতিতে অক্সিনের মেরুবর্তী পরিবহন ঘটে থাকে ও পাতায় তৈরি হওয়া অক্সিন ফ্লোয়েমের দ্বারা উদ্ভিদের অন্যান্য অঙ্গে পরিবাহিত হয়ে থাকে।
অক্সিনের ভূমিকা :
- অগ্রমুকুলের মাধ্যমে কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার ঘটনাকে অগ্রস্থ প্রকটতা বলা হয়। এই অক্সিন অগ্রস্থ প্রকটতাকে ত্বরান্বিত করতে পারে তাই উদ্ভিদ লম্বা হয় এবং তার শাখা প্রশাখা সৃষ্টি ব্যহত হয়ে থাকে।
- অক্সিন কোশের পর্দার মধ্যে অবস্থিত প্রোটন পাম্পকে সক্রিয় করে এবং H+ কে কোশ পর্দা এবং কোশ প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে প্রেরণ করে। ইহার ফলে এক্সপেন্সিভ উৎসেচক সক্রিয় হয়ে পড়ে এবং কোশ প্রাচীরকে নমনীয় করে তোলে; এর ফলে নতুন কোশ প্রাচীরে উপাদান সঞ্চিত হলে কোশের আকার বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পড়ে, এই ঘটনাটিকেই অ্যাসিড হাইপোথিসিস বলা হয় ।
- কোশ বিভাজনে অক্সিন সাহায্য করে থাকে।
4. এই হরমোন সাধারণভাবে জিওট্রপিক ও ফটোট্রপিক চলনকে প্রভাবিত করে থাকে।
জিব্বেরেলিন :
উৎস- প্রধানত অঙ্কুরিত বীজের বীজপত্র, পরিণত বিজ, পাতার বর্ধিষ্ণু অঞ্চল হল জিব্বেরেলিনের প্রধান উৎসসমূহ।
রাসায়নিক গঠন- এই হরমোন হল ডাই টারপিনয়েড ধর্মী এবং নাইট্রোজেন বিহীন, জিব্বেন কার্বন কাঠামো যুক্ত জৈব অম্ল বিশেষ। এটি সাধারণত C,H,O নিয়ে গঠিত।
পরিবহন- এই হরমোন জলে সহজে দ্রবণীয় এবং জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাধ্যমে এর পরিবহন উভয় দিকেই ঘটে থাকে।
জিব্বেরেলিনের ভূমিকা-
- অনুকূল পরিবেশে জলের উপস্থিতিতে বীজ মধ্যস্থ সুপ্ত ভ্রূণ থেকে GA নির্গত হয়ে বিভিন্ন আর্দ্র বিশ্লেষণ উৎসেচক সক্রিয় করে। সেই সক্রিয় আর্দ্র বিশ্লেষক উৎসেচক, বীজের শস্য বিশ্লিষ্ট করে দ্রবণীয় শর্করা অ্যামাইনো অ্যাসিড, নিউক্লিওসাইড ইত্যাদিতে পরিবর্তিত করে থাকে। যা পরবর্তীকালে ভ্রূণের মাধ্যমে শোষিত হয়ে ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে এবং বীজ অঙ্কুরিত হয়।
- শীতকালে নিম্ন তাপমাত্রায় যেসকল মুকুল সুপ্ত অবস্থায় থাকে তাদের উপর GA প্রয়োগ করলে তাদের সুপ্ত অবস্থার বিনষ্ট ঘটে এবং তাদের বৃদ্ধি শুরু হয়।
- বাইরে থেকে GA প্রয়োগ করলে বিভিন্ন ফলের আকার বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
পরিণতি- জিব্বেরেলিন-গ্লাইকোসাইড রূপে GA নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে।
সাইটোকাইনিন :
উৎস- নারকেলের তরল শস্যে, অঙ্কুরিত বীজে এবং বিভিন্ন ফুল ও ফল।
রাসায়নিক গঠন- সাইটোকাইনিন হল ক্ষারীয় প্রকৃতির হরমোন এটি C,H,N,O এর এক যৌগবিশেষ।
পরিবহন- এ টি জলে দ্রবণীয় এবং জাইলেমের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে থাকে।
সাইটোকাইনিনের ভূমিকা-
- যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিনের উপস্থিতিতে সাইটোকাইনিন সাইটোকাইনেসিসে সাহায্য করে কোশ বিভাজনকে ত্বরান্বিত করে থাকে।
- এই হরমোন প্রয়োগ করলে অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে থাকে এবং কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হয়ে থাকে।
- কোন উদ্ভিদদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন পাতায় সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে ওই পাতাটির ক্লোরোফিল, প্রোটিন ইত্যাদি দেড়িতে বিনষ্ট হয়ে থাকে অর্থাৎ ওই পাতাটির বার্ধক্য বিলম্বিত হয় ।
পরিণতি- উপযুক্ত মাত্রায় সাইটোকাইনিন কোশীয় বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের পর সাইটোকাইনিন অক্সিডেজ উত্তেজক দ্বারা সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পরে।
কৃত্রিম হরমোনের ভূমিকা: জবা, গোলাপ, ডালিয়া, ইত্যাদি গাছের কোন শাখার কাটা প্রান্তটি কৃত্রিম অক্সিন দ্রবণে ডুবিয়ে মাটিতে পুঁতলে, ওই কাটা প্রান্ত থেকে মূল উৎপন্ন হয়। এরফলে শাখাটি নতুন চারা গাছ হিসাবে বেড়ে উঠতে থাকে। কৃত্রিম জিব্বেরেলিন এবং কৃত্রিম অক্সিনের প্রয়োগে আপেল, আঙ্গুর, টমেটো, নাসপাতি, ইত্যাদি উদ্ভিদের অপরিণত ফলের মোচন রোধ করা গেছে। এককভাবে মিশ্রণ হিসেবে এই কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করলে আগাছা দমন করা যায়।
পার্থেনোকার্পি- বিভিন্ন কৃত্রিম জিব্বেরেলিন এবং অক্সিনের প্রয়োগ করে বীজহীন ফল তৈরি করা সম্ভবপর হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ : বীজহীন আপেল, আঙ্গুর, তরমুজ, কলা, পেয়ারা, প্রভৃতি। এই কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করে বীজহীন ফল উৎপাদনের পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি বলা হয় ।
প্রাণী দেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা এবং হরমোনের ভূমিকা:
- হঠাৎ ভীতিজনক পরিবেশ বা গা ছমছমে পরিবেশের সর্তকতা স্বরূপ আমাদের গায়ের লোম হঠাৎই খাঁড়া হয়ে যায়। এছাড়াও প্রচন্ড শীতে গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে থাকে যা দেহের তাপ সংরক্ষণের সাহায্য করে । এইসকল কাজগুলো করতে মূলত সাহায্য করে ক্যাটেকোলামাইন জাতীয় অ্যাড্রিনালিন হরমোন।
- রক্তে গ্লুকোজের সঠিক মাত্রা বজায় রাখা- মানুষের রক্তে শর্করার সঠিক মান হলো 120-130 mg/100ml এবং Fs শর্করার মান হলো 70mg/100ml । রক্তে গ্লুকোজের এই সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে প্রোটিন ধর্মী দুই হরমোন; যথা- গ্লুকাগন এবং ইনসুলিন।
BMR নিয়ন্ত্রণ- হৃদস্পন্দন, রেচন, শ্বসন প্রভৃতি বজায় রাখার জন্য, যে পরিমাণ ক্যালোরির প্রয়োজন হয়ে থাকে তাকে আমরা বি.এম.আর রূপে প্রকাশ করে থাকি। এই কাজটি নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে আয়োডিনযুক্ত অ্যামাইনো ধর্মী হরমোন অ্যাড্রিনালিন এবং থাইরক্সিনের দ্বারা।
প্রাণী হরমোনের বৈশিষ্ট্য:
- উৎস- সাধারণত অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে প্রাণী হরমোন গুলি সংশ্লেষিত এবং ক্ষরিত হয়ে থাকে। অন্তক্ষরা গ্রন্থি হল সেই সকল গ্রন্থি যাদের কোন নালী থাকে না এবং সেই সকল গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত বস্তু ব্যাপন পদ্ধতিতে সরাসরি রক্তে অথবা লসিকাতে প্রবেশ করে বাহিত হয়ে থাকে। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির উদাহরণ হল শুক্রাশয় এবং ডিম্বাশয়।
- রাসায়নিক প্রকৃতি- প্রাণী হরমোন গুলি বিভিন্ন রাসায়নিক গঠন যুক্ত হয় । যেমন-
- প্রোটিন ধর্মী- গ্লুকাগন, ইনসুলিন।
- পেপটাইড ধর্মী- অক্সিটোসিন, সিক্রেটিন
- গ্লাইকোপ্রোটিন ধর্মী- LH, FSH, TSH
- আয়োডিন ধর্মী- থাইরক্সিন
- স্টেরয়েড ধর্মী- ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন
- লিপিড ধর্মী- প্রোষ্টাগ্লেনডিন
- পরিবহনের পদ্ধতি- ব্যাপন পদ্ধতির সাহায্যে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে প্রাণী হরমোন নিষিক্ত হওয়ার পর, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিকে বেষ্টন করে থাকা রক্তজালক মধ্যস্থ রক্তে মিশ্রিত হয়ে পরে। তারপর জলে দ্রবণীয় হরমোন, সরাসরি সংবহনতন্ত্রের মাধ্যমে এবং স্টেরয়েড ও থাইরয়েড হরমোনগুলি প্লাজমা গ্লাইকোপ্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সংবহন তন্ত্রের মাধ্যমে সমগ্র শরীরে প্রবাহিত হয়ে থাকে।
- কাজ ও পরিণতি- হরমোন রাসায়নিক অণু হিসাবে টার্গেট কোশকলা অথবা অঙ্গের উপর কাজ করে বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের মধ্যে রাসায়নিক সমন্বয় সাধন করে থাকে।
- বাহক রূপে হরমোন- হরমোন টার্গেট কোশের কোশ পর্দায় অবস্থিত বাহক প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হরমোন গ্রাহক যৌগ গঠন করে থাকে। এই যৌগ অ্যাড্রিনাল উৎসেচককে সক্রিয় করার মাধ্যমে সাইক্লিক এডিনোসিন মনোফসফেট গঠন করে থাকে। এই ক্ষেত্রে হরমোন প্রথম দূত হিসাবে কাজ করে । বিভিন্ন স্টেরয়েড হরমোনগুলি টার্গেট কোশের মধ্যে নির্দিষ্ট সক্রিয় বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ।
- নিয়ন্ত্রক রূপে হরমোন- দেহের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হরমোন সাহায্য করে এবং কোন একটি হরমোনের কাজ যখন অপর কোন হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে তাকে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলা হয়। ইহা দু’ভাবে সম্পন্ন হতে পারে।
প্রথমত ধনাত্মক ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ- রক্তে থাইরক্সিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কমে গেলে থাইরক্সিন হাইপোথ্যালামাসকে সক্রিয় করে TRH ক্ষরণ বাড়িয়ে থাকে। যার ফলে পিটুইটারি থেকে TSH ক্ষরণ বৃদ্ধি পায় ।
ঋণাত্মক ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ- রক্তে থাইরক্সিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে থাইরক্সিন TRH এবং TSH ক্ষরণে বাধা প্রদান করে থাকে। যার দ্বারা থাইরক্সিন হরমোন নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
উদ্ভিদ হরমোন ও প্রাণী হরমোনের পার্থক্য
বিষয় | উদ্ভিদ হরমোন | প্রাণী হরমোন |
উৎস | বিভিন্ন উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গের ভাজক কলা এবং তরুণ কোশ সমূহ | অন্তক্ষরা গ্রন্থি অথবা অন্য কোন অঙ্গের অন্তঃক্ষরা কোশ |
পরিবহন | জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে থাকে | রক্ত ও লসিকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় |
রাসায়নিক প্রকৃতি | সাধারণত জৈব অম্ল বা ক্ষার ধর্মী হয় | প্রোটিন ধর্মী, স্টেরয়েড ধর্মী প্রকৃতির হয় |
ক্রিয়া পদ্ধতি | DNA,RNAপ্রভৃতি সংশ্লেষের মাধ্যমে কাজ করে | নির্দিষ্ট জিনকে সক্রিয় করে কোশের বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে |
মানবদেহের অন্তক্ষরা গ্রন্থি এবং তা থেকে ক্ষরিত হরমোনসমূহ :
হাইপোথ্যালামাস:
অবস্থান- ইহা অগ্র মস্তিষ্কের ডায়েনসেফালন অংশে অবস্থিত তৃতীয় মস্তিষ্ক নিলয়ের নিচে অবস্থান করে।
নিঃসৃত হরমোন ও তাদের কাজ-
১। হাইপোথ্যালামাসের সুপ্রা-অপটিক এবং প্যারা ভেন্ট্রিকুলার নিউক্লিয়াসের নিউরো সেক্রেটরি থেকে যথাক্রমে ভেসোপ্রেসিন এবং অক্সিটোসিন উৎপন্ন হয় যা হাইপোফিজিয়াল পোর্টাল তন্ত্রের দ্বারা পশ্চাৎ পিটুইটারিতে জমা হয় এবং সেখান থেকে দেহের অন্যান্য অংশে পরিবাহিত হয়ে থাকে। ‘অক্সিটোসিন’ দুগ্ধ ক্ষরণে সাহায্য প্রদান করে থাকে।
২। হাইপোথ্যালামাসের ভেন্ট্রাল মেডিয়াল, ডরসাল মেডিয়াল, এবং ইনফান্ডিবুলার নিউক্লিয়াই-এর নিউরো সেক্রেটরি কোশ থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন রিলিজিং ও ইনহিবিটিং হরমোন অগ্র পিটুইটারি থেকে ক্ষরিত বিভিন্ন ট্রপিক হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে ।
পিটুইটারি গ্রন্থি:
অবস্থান- এই গ্রন্থি হাইপোথ্যালামাসের নীচে ইনফান্ডিবুলাম নামক বৃন্ত দ্বারা সংযুক্ত অবস্থায় করোটির স্ফেনয়েড অস্থির সেলা টারসিকা প্রকোশ ্ঠে সুরক্ষিত অবস্থায় অবস্থান করে।
এই পিটুইটারি গ্রন্থির দুটি খন্ড বিদ্যমান। যথা- অগ্র খণ্ড ও পশ্চাৎ খন্ড।
নিঃসৃত হরমোন ও তাদের কাজ-
1. অ্যাড্রিনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন : এই হরমোন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য প্রদান করে, যার অপর নাম হল ACTH ।
- গ্রোথ হরমোন অথবা সোমাটোট্রফিক হরমোন : এই হরমোনের মুখ্য কাজ হল অস্থি এবং পেশীর বৃদ্ধি, শর্করা, ফ্যাট পরিপাক এবং নাইট্রোজেন উপচিতি মূলক বিপাক প্রভাবিত করা। এই হরমোন হৃদপেশীতে গ্লাইকোজেনের সঞ্চয়ে সাহায্য প্রদান করে থাকে।
- থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন : এই হরমোনের মুখ্য কাজ হল থাইরয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধি এবং থাইরয়েড কলার আয়োডিন গ্রহণকে নিয়ন্ত্রন করা, যার অপর নাম হল TSH ।
- গোনাডোট্রপিক হরমোন বা GTH : এই হরমোন তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন – এই হরমোন ডিম্বাশয়ে ডিম্বথলির বৃদ্ধি এবং ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণে সাহায্য প্রদান করে থাকে এবং শুক্রাশয়ে টেস্টোস্টেরন সংশ্লেষ ও তার ক্ষরণ এবং শুক্রাণু উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করাও এই হরমোনের অন্যতম মুখ্য কাজ।
ইন্টার্সিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন : টেস্টোস্টেরন ক্ষরন এবং শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য প্রদান করে।
লিউটিনাইজিং হরমোন : এই হরমোনের মুখ্য কাজ হলো ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণের সাহায্য প্রদান করা এবং কর্পাস লুটিয়াম গঠন করে প্রোজেস্টেরন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা।
- লিউটিও ট্রপিক হরমোন বা প্রোল্যাকটিন : এটি স্তন গ্রন্থির বৃদ্ধি এবং ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কর্পাস লুটিয়ামের কার্যকালকে দীর্ঘস্থায়ী করে।
নিউরোহাইপোফাইসিস থেকে নিঃসৃত হরমোনের ভেসোপ্রেসিনের কাজ হল উপধমনী এবং রক্তজালকের উপর ক্রিয়া করে তার সংকোচন ঘটানো এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি করা, যার কারণে এই হরমোনকে ভেসোপ্রেসিন বলা হয়।
থাইরয়েড গ্রন্থি:
অবস্থান- সাধারণত মানুষের গ্রীবা অঞ্চলের সামনের দিকে স্বরযন্ত্রের সামান্য নিচে শ্বাসনালীর দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ ট্রাকিয়াল রিং এর দুইপাশে থাইরয়েড গ্রন্থির দুটি পার্শ্ব খন্ড অবস্থিত থাকে।
নিঃসৃত হরমোন ও তার কাজ-
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরক্সিন হরমোন, কোশে অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে BMR বৃদ্ধি করে থাকে। সেজন্য এই হরমোনকে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে অভিহিত করা হয়।
এই থাইরক্সিন হরমোন হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়াও দেহের বৃদ্ধি এবং পরিস্ফুটনে সাহায্য প্রদান করে বলে একে এনাবলিক হরমোন বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও এই হরমোন অস্থি ও মস্তিষ্কের বৃদ্ধি এবং পরিস্ফুরণ নিয়ন্ত্রণ করে ।
অগ্নাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ:
অবস্থান-অগ্ন্যাশয়ের পাচক রস ক্ষরণকারী অ্যাসিনাসগুলির অন্তর্বর্তী স্থানে অন্তঃক্ষরা কোশ গুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জের ন্যায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো অবস্থায় অবস্থান করে থাকে। বিজ্ঞানী ল্যাঙ্গারহ্যান্স এই অগ্নাশয় গ্রন্থির প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন। তারই নাম অনুসারে এই অন্তঃক্ষরা অঞ্চলগুলি নাম রাখা হয়েছে ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর দ্বীপপুঞ্জ।
নিঃসৃত হরমোন ও তার কাজ- অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা কোশের আলফা কোশ থেকে গ্লুকাগন নিঃসৃত হয়ে থাকে। এই হরমোন যকৃতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেনকে গ্লাইকোজেনোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত করে থাকে।
এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং বিটা কোশ থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়ে থাকে; যা যকৃত ও পেশি কোশের গ্লাইকোজেনেসিস পদ্ধতিতে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষণে সাহায্য করে থাকে এবং নিওগ্লুকোজেনেসিস এ বাধা প্রদান করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে থাকে।
এছাড়াও এই ইনসুলিন হরমোন প্রোটিন এবং ফ্যাট বিপাকেও সাহায্য প্রদান করে এবং ফ্যাটের জারণের দ্বারা কিটোন বডি উৎপাদনে বাধা প্রদান করে।
অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি:
অবস্থান- মানব দেহের প্রতিটি বৃক্কের শীর্ষদেশে টুপির মতন একটি করে অ্যাড্রিনালিন গ্রন্থি অবস্থিত থাকে; যাকে আমরা সুপ্রারেনাল গ্রন্থিও বলে থাকি।
নিঃসৃত হরমোন ও তার কাজ- এড্রিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চল থেকে মিনারেলোকর্টিকয়েড, গ্লুকোকর্টিকয়েড হরমোন ক্ষরিত হয় এবং মেডালা অঞ্চল থেকে নর-অ্যাড্রিনালিন এবং অ্যাড্রিনালিন, হরমোন ক্ষরিত হয়ে থাকে।
- হৃদস্পন্দনের হার ও রক্তবাহের অভ্যন্তরীণ ব্যস কমিয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
- ব্রংকিওল প্রসারিত করে শ্বাস ক্রিয়ার হার এবং গভীরতা বৃদ্ধি করে ।
- খাদ্যনালীর বিচলন হ্রাস এবং লালা গ্রন্থির ক্ষরণ কমায় ।
শুক্রাশয়
অবস্থান- পুরুষের শুক্রাশয় দুটি জন্মের পূর্ব পর্যন্ত শ্রোণি গহ্বরে অবস্থান করে এবং জন্মের পর এই শুক্রাশয় দুটি স্ক্রোটাম নামক থলির ভিতর থাকে।
নিঃসৃত হরমোন এবং নিঃসৃত হরমোনের কাজ- এই শুক্রাশয় টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণ করে থাকে। এই হরমোন বয়ঃসন্ধিকালে পুরুষের যৌনাঙ্গ যথা- শুক্রাশয়, শুক্রথলি, শিশ্ন, এপিডিডাইমিস, প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
এছাড়াও কন্ঠস্বর,ভারী, পেশীবহুল দেহ, দাড়ি, গোঁফ, গজাতে সাহায্য করে থাকে এবং এই হরমোন দেহের সামগ্রিক বিএমআর বৃদ্ধিতে সাহায্য প্রদান করে।
ডিম্বাশয় :
অবস্থান- মহিলাদের ডিম্বাশয় দুটি, শ্রোণি গহ্বরে জরায়ুর দুই পাশে অবস্থান করে থাকে।
নিঃসৃত হরমোন এবং নিঃসৃত হরমোনের কাজ : ডিম্বাশয়ের ডিম্বথলি থেকে ইস্ট্রোজেন এবং কর্পাস লুটিয়াম থেকে প্রোজেস্টেরন নামক হরমোন দুটি নিঃসৃত হয়ে থাকে। ইস্ট্রোজেন হরমোন বয়সন্ধিকালে মেয়েদের ডিম্বাশয়, জরায়ু , ডিম্বনালী, যোনিপথ ইত্যাদি যৌনাঙ্গের বৃদ্ধিতে সাহায্য প্রদান করে থাকে এবং স্তন গ্রন্থির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
এছাড়াও মহিলাদের মাসিক চক্র এবং ডিম্বাণু উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে এই হরমোন সাহায্য প্রদান করে থাকে। প্রোজেস্টেরন হরমোন গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে এবং নিষিক্ত ডিম্বানুকে জরায়ুর প্রাচীরে রোপিত হতে সাহায্য করে থাকে এবং এই হরমোনই প্রসবের সময় যোনি পথকে প্রসারিত করে থাকে।
হরমোনের ক্ষরণ জনিত অস্বাভাবিকতা:
- বামনত্ব- সাধারনত শৈশবকালে STH বা GH হরমোন স্বাভাবিকের তুলনায় কম ক্ষরিত হলে এই রোগটি দেখা যায়। এই রোগটি হওয়ার ফলে –
- শিশুর অস্থি এবং পেশির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়
- প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় এই রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির দৈর্ঘ্য তিন ফুটের কাছাকাছি হয়ে থাকে
- দেহের আন্তরযন্ত্রের বৃদ্ধি ঘটলেও মুখ্য জননাঙ্গের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে থাকে
- গৌণ যৌন লক্ষণ এর বহিঃপ্রকাশ দেরিতে ঘটে থাকে
- ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস- ADH যদি স্বাভাবিকের তুলনায় কম ক্ষরণ হয় তাহলে সাধারণত এই রোগটি লক্ষ্য করা যায় । কোন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হলে সে দৈনিক 10-15 লিটার মূত্র নির্গত করে থাকে এবং তার প্রতিনিয়ত প্রবল তৃষ্ণা অনুভূত হয়।
- গলগন্ড- থাইরক্সিন হরমোনের কম ক্ষরণের ফলে সাধারণত গলগন্ড এবং অধিক ক্ষরণের ফলে গ্রেভ বর্ণিত রোগ বা বহি চক্ষু গলগন্ড হয়ে থাকে।এই গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে গ্রীবা অঞ্চল ফুলে ওঠে। তাই বর্ধিত থাইরয়েড গ্রন্থির চাপের কারণে শ্বাসকার্যে অসুবিধা হয়। খাবার গিলতে অসুবিধা বোধ করে ।গ্রেপ বর্ণিত রোগের লক্ষণ যেমন- থাইরয়েড বড় হয়ে ফুলে ওঠা, অক্ষিগোলক ঠেলে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসা, রক্তে শর্করা আয়োডিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায় এবং দেহের বিএমআর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
- ডায়াবেটিস মেলিটাস- শিশু এবং বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর বিটা কোশগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে টাইপ I ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।ইহা ইনসুলিন নির্ভরশীল ও প্রাপ্ত বয়স্কদের কলা কোশের কোশ পর্দা অবস্থিত ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা লোপ পেলে টাইপ II ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
- IDDM এর লক্ষণ- রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায় (>130mg/100ml) মূত্রের মাধ্যমে গ্লুকোজের নির্গমন হয়। ইহাকে গ্লুকোসুরিয়া বলা হয়। রক্তের মধ্যে কিটোন বডি পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরে এমনকি অন্ধত্বও দেখা যেতে পারে।
প্রাণীদের সাড়া প্রদান ও ভৌত সমন্বয়
স্নায়ুতন্ত্র
স্নায়বিক নিয়ন্ত্রণ- কোন উদ্দীপনার সাপেক্ষে সাড়া প্রদানের ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে প্রাণী দেহের বিভিন্ন অঙ্গের নিয়ন্ত্রণ হল স্নায়বিক নিয়ন্ত্রণ এবং সাড়া প্রদানের সময় বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে স্নায়ু কলার মাধ্যমে যে ভৌত সংযোগ গড়ে ওঠে তাকে স্নায়বিক সমন্বয় বলা হয়ে থাকে।
স্নায়বিক পথ- কোন উদ্দীপনার সাপেক্ষে স্নায়ুতন্ত্রের অন্তর্গত যে পথের দ্বারা প্রাণিদেহে স্নায়বিক নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয় গড়ে ওঠে তাকেই স্নায়বিক পথ বলা হয়ে থাকে। উদাহরণ- কলিংবেল বাজলে যে শব্দ হয় সেটি হল একটি উদ্দীপক ও বাড়ির ভিতর থেকে গিয়ে দরজা খুলে দেওয়া, তা হল উদ্দীপনায় সাড়া প্রদান।
স্নায়ুকেন্দ্র- মস্তিষ্ক অথবা সুষুম্নাকাণ্ড স্নায়ুকেন্দ্র হিসাবে কাজ করে গৃহীত উদ্দীপনার বিশ্লেষণ করে সাড়া প্রদানের প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রেরণ করে থাকে |
গ্রাহক- যেসব সংবেদনশীল কোশ বা স্নায়ু প্রান্ত উদ্দীপনা গ্রহণ করে থাকে তাদের গ্রাহক বলা হয়।
কারক- স্নায়ু স্পন্দন দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে যেসব দেহাঙ্গ উত্তেজনায় সাড়া প্রদান করে তাদের কারক বলা হয়। হাত এবং পায়ের পেশী হল মানবদেহের অন্যতম কারক।
বাহক- যার দ্বারা গ্রাহক থেকে উদ্দীপনা স্নায়ুকেন্দ্র পৌঁছে থাকে এবং স্নায়ুকেন্দ্র থেকে নির্দেশনা কারকে পৌঁছায় তাদেরকে বাহক বলা হয়। নিউরন স্নায়ুর বাহক হিসাবে কাজ করে থাকে।
স্নায়ুতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রের উপাদান:
স্নায়ুতন্ত্র- প্রধানত স্নায়ু কলা দ্বারা গঠিত যে তন্ত্রের মাধ্যমে প্রাণীদেহে উদ্দীপনা গ্রহণ এবং উদ্দীপনায় সাড়া প্রদানের মাধ্যমে পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য ঘটে এবং প্রানী দেহের বিভিন্ন অঙ্গ এবং তন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় গড়ে ওঠে ও তাদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শারীরবৃত্তীয় সাম্যতা বজায় থাকে তাকে স্নায়ুতন্ত্র বলা হয়।
স্নায়ুতন্ত্রের কাজ হল উদ্দীপনা গ্রহণ ও উদ্দীপনার সাপেক্ষে সাড়া প্রদানের দ্বারা পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখা এবং প্রাণী দেহের বিভিন্ন অঙ্গ এবং তন্ত্রের কাজের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ও ভৌত সমন্বয় সাধন করা।
স্নায়ুতন্ত্র তিনটি উপাদান দিয়ে গঠিত, যথা- স্নায়ুকোশ , নিউরোগ্লিয়া এবং স্নায়ু।
A. স্নায়ুকোশ – স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একক হিসাবে স্নায়ু উদ্দীপনা পরিবহনকারী কোশ দেহ এবং প্রবর্তক যুক্ত বিশেষ এক ধরনের প্রাণী কোশকে নিউরোন বলা হয়।
আদর্শ নিউরনের অংশগুলি হল-
কোশদেহ –
- নিউরনে উপস্থিত নিউক্লিয়াস যুক্ত সবচেয়ে প্রসারিত অংশটিই হলো কোশদেহ, যাকে সোমা বলেও অভিহিত করা হয় ।
- এই অংশটি বাইরে দিক থেকে কোশ পর্দার দ্বারা ঘেরা থাকে এবং এর ভেতরে উপস্থিত থাকে দানাদার এবং তন্তুময় সাইটোপ্লাজম অথবা নিউরোপ্লাজম।
- নিউরোপ্লাজম হলো এক প্রকার আদর্শ নিউক্লিয়াস যেখানে বিভিন্ন কোশ অঙ্গাণু উপস্থিত থাকে, কোশদেহে সাইটোপ্লাজম নিস্ক্রিয় অবস্থায় বিচরণ করে।
- অ্যাক্সন হিলক হল কোশদেহের সেই অংশ যেখান থেকে অ্যাক্সন সৃষ্টি হয় এবং একটি নিসল দানা বিহীন শাঙ্কবাকার এক অংশবিশেষ |
কোশদেহের কাজ– নিউরনের প্রবর্তক গুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন এবং সমস্ত বিপাক ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করাই হল এর মুখ্য কাজ।
অ্যাক্সন-
- অ্যাক্সন হল কোশ দেহের অ্যাক্সন হিলক থেকে উৎপন্ন লম্বা শাখাবিহীন অথবা অল্প শাখাযুক্ত নিসল দানাবিহীন চেষ্টিয় প্রবর্ধক।
- এর শাখাগুলি মুল অ্যাক্সনের সাপেক্ষে মূলত সমকোণে উৎপন্ন হয় বলে এদের কোল্যাটারলস ও বলা হয় ।
- এর শেষ প্রান্ত অসংখ্য ছোট ছোট প্রান্তীয় শাখার দ্বারা বিভক্ত হয়ে থাকে বলে এদের একত্রে আমরা প্রান্তবুরুশ বলি।
- প্রান্তীয় শাখার শেষ প্রান্ত স্ফীত হয়ে সাইন্যাপটিক নভ গঠন করে।
- অ্যাক্সন সিলিন্ডার হল অ্যাক্সনের কেন্দ্রীয় পর্দাবৃত অংশটি যা নিউরোপ্লাজম দ্বারা সম্পূর্ণ পূর্ণ অবস্থায় থাকে।
- অ্যাক্সপ্লাজম যে আবরণের দ্বারা বেষ্টিত থাকে তা হল আক্সলোমা যা প্রকৃতপক্ষে কোশ দেহের কোশ পর্দার এক বিবর্ধিত অংশবিশেষ।
- অ্যাক্সলোমা বাইরের দিক থেকে স্বোয়ান কোশের আবরণের দ্বারা আবৃত অবস্থায় থাকে। এই আবরণটিকে নিউরিলেমা বলা হয়।
- মায়োলিন আবরণী বা মেডুলারি হল স্বোয়ান কোশের আবরণের এককেন্দ্রিক ভাবে অনেকবার পাক খাওয়ার ফলে লিপিড নির্মিত একটি আবরণ বিশেষ।
- নিউরনের আবরণ যুক্ত প্রবর্তক হিসেবে ব্যবহৃত অ্যাক্সনকেই সাধারণভাবে স্নায়ুতন্ত্র বলে ।
- দুটি স্বোয়ান কোশের মধ্যবর্তীস্থানে যে মেডুলারি আবরণ ব্যতীত খাঁজযুক্ত অঞ্চল অবস্থিত থাকে তাকে রানভিয়ারের পর্ব বলা হয়।
অ্যাক্সনের কাজ– স্নায়ু স্পন্দন সৃষ্টি এবং তার বিস্তারে সাহায্য প্রদান করা।
ডেনড্রন-
কোশ দেহ থেকে উৎপন্ন স্বল্পদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এবং বহু শাখা প্রশাখা যুক্ত প্রবর্ধককে ডেনড্রন বলে এবং ডেনড্রাইট হল এর শাখা প্রশাখা সমূহ।
ডেনড্রনের কাজ- একটি গ্রাহক নিউরনের অ্যাক্সন থেকে উদ্দীপনাকে কোশ দেহ প্রেরণ করে থাকে।
নিউরোনের প্রকারভেদ সমূহ : নিউরোনে অন্যতম প্রকারভেদগুলি হল- সংজ্ঞাবহ নিউরোন, আজ্ঞাবহ নিউরোন, সংযোগী নিউরোন ইত্যাদি।
B. নিউরোগ্লিয়া- নিউরোন ব্যতীত বহু প্রবর্ধক যুক্ত স্নায়ুস্পন্দন বহনে অক্ষম যে উপাদান স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত উপাদান হিসাবে উপস্থিত থাকে এবং নিউরনের রক্ষক এবং ধারক কোশ হিসাবে কাজ করে থাকে তাদের নিউরোগ্লিয়া বলা হয়।
নিউরোগ্লিয়ার বৈশিষ্ট্য- এরা হলো এক প্রকার পরিবর্তিত যোগ কলার কোশ । এরা বহু প্রবর্ধক যুক্ত হাওয়ায় বিভাজনের সক্ষম ও স্নায়ু স্পন্দন পরিবহনে অক্ষম।
নিউরোগ্লিয়ার কাজ-
1) কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রে মায়েলিন আবরণ তৈরি করা
২) অ্যাস্ট্রোসাইট স্নায়ুকলার ক্ষতস্থান নিরাময়ে সাহায্য প্রদান করা
৩) নিউরন কে পুষ্টি সরবরাহ করা
৪) নিউরনকে রক্ষা করা
C. স্নায়ু- যোগ কলার আবরণে আবৃত রক্তবাহ যুক্ত স্নায়ুতন্ত্র গুচ্ছকে স্নায়ু বলা হয়। একটি আদর্শ স্নায়ুতে অসংখ্য রক্তবাহ, স্নায়ুতন্ত্র, লসিকা অথবা ফ্যাট ও তিনটি যোগ কলার আবরণ উপস্থিত থাকে।
প্রতিটি স্নায়ুতন্ত্র এন্ডোনিউরিয়াম নামক আবরণের মাধ্যমে আবৃত থাকে। কতগুলি স্নায়ুতন্ত্র আবার পেরিনিয়াম নামক যোগ কলার আবরণে আবৃত থাকে।
স্নায়ুর কাজ- গ্রাহক অংশ থেকে স্নায়বিক উদ্দীপনাকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রেরণ করা এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে স্নায়বিক নির্দেশনা কারক অংশে প্রেরণ করা ও তাদের কার্য নিয়ন্ত্রণ করা ।
স্নায়ুকোশ, স্নায়ু ও স্নায়ুতন্ত্রের সম্পর্ক
নিউরোগ্লিয়া, নিউরনকে রক্ষা করতে এবং পুষ্টি সরবরাহ করতে মায়োলিন আবরণী তৈরি করতে প্রভৃতি কাজে ধারক কোশ হিসাবে কাজ করে থাকে।
আবার নিউরনের স্নায়ুতন্তু গুচ্ছাকারে যোগ কলার আবরণে বেষ্টিত হয়ে তৈরি করে থাকে বিভিন্ন ধরনের স্নায়ু। অসংখ্য স্নায়ুকোশ, ট্রাক্ট, নিউরোগ্লিয়া কোশের সমন্বয়ে গড়ে উঠে মস্তিষ্ক এবং সুষুম্না কাণ্ড এবং এই মস্তিষ্ক, সুষুম্নাকাণ্ড এবং বিভিন্ন ধরনের স্নায়ুর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে স্নায়ুতন্ত্র।
স্নায়ুর প্রকারভেদ
স্নায়ুর প্রকারভেদ- কার্যগতভাবে স্নায়ুকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করি
অ্যাফারেন্ট নার্ভ- যেসকল স্নায়ু গ্রাহক থেকে স্নায়ু উদ্দীপনা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বহন করে আনে তাদের অন্তর্বাহী বা অ্যাফারেন্ট নার্ভ বলা হয়।
ইফারেন্ট নার্ভ- যেসব স্নায়ু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে নির্দেশনাকে কারক অংশে প্রেরণ করে এবং তাদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে তাদের বহির্বাহী স্নায়ুর বা ইফারেন্ট নার্ভ বলা হয়।
মিক্সড নার্ভ- যেসব স্নায়ু সংজ্ঞাবহ এবং চেস্টিয় স্নায়ুতন্ত্রের সমন্বয়ে তৈরি হয় তাদের মিশ্র স্নায়ু বলা হয়। যেমন- ভেগাস নার্ভ।
স্নায়ু গ্রন্থি
স্নায়ু গ্রন্থি- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বাইরের অংশে কতগুলি নিউরনের কোশ দেহ অংশ একত্রিত হয়ে ও সাধারণত আবরণ বেষ্টিত হয়ে যে স্ফীত অংশ গঠন করে থাকে তাকেই স্নায়ুগ্রন্থি বলে, এটি দুই প্রকারের হয়
- সেরিব্রোস্পাইনাল স্নায়ুগ্রন্থি– সুষুম্না স্নায়ুর পৃষ্ঠীয় মূলের এবং করোটিক স্নায়ুর সংবেদন মূলে উপস্থিত থাকে
- অটোনমিক স্নায়ুগ্রন্থি– কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং কারকের মধ্যে উপস্থিত থাকে
স্নায়ুগ্রন্থির কাজ-
- স্নায়ুগ্রন্থির মুখ্য কাজ হল স্নায়ু উৎপন্ন করা
- নিউরোসিক্রেশনস্ ক্ষরণ করার মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রকে সিক্ত রাখা
সাইন্যাপস বা স্নায়ুসন্নিধি
সাইন্যাপস বা স্নায়ুসন্নিধি- একটি নিউরোনের অ্যাক্সনের প্রান্তীয় স্ফীতি এবং অপর নিউরনের ডেনড্রন, অ্যাক্সন বা কোশ দেহের মধ্যবর্তী যে আণুবীক্ষণিক স্থানের মধ্য দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে স্নায়ু স্পন্দন পূর্ববর্তী থেকে পরবর্তী নিউরনে ছড়িয়ে পড়ে তাকে সাইন্যাপস বা স্নায়ু সন্নিধি বলা হয়।
অবস্থান- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের স্নায়ু গ্রন্থিতে স্নায়ু সন্নিধি গঠিত হয়ে থাকে।
সাইন্যাপসের প্রকারভেদ- এটি তিন প্রকারের হয়, প্রথমটি
১. এক্সও-ডেনড্রাইটিক সাইন্যাপস– একটি নিউরনের অ্যাক্সন এবং অন্য এক নিউরোনের ডেনড্রনের মধ্যে গঠিত হয়।
২. এক্সও-সোমাটিক সাইন্যাপস- একটি নিউরনের অ্যাক্সন এবং অপর নিউরনের কোশ দেহ দ্বারা গঠিত হয়
৩. আক্স-আক্সনিক সাইন্যাপস- একটি নিউরনের অ্যাক্সন এবং অপর নিউরনের অ্যাক্সনের মধ্যে গঠিত হয়
স্নায়ু সন্নিধির গঠন- স্নায়ু সন্নিধি গঠনে অংশগ্রহণকারী পূর্ববর্তী নিউরনের প্রান্তীয় স্ফীতির আবরণটিকে বলা হয় প্রিসাইন্যাপটিক পর্দা ও পরবর্তী নিউরনের কোশদেহ অ্যাকশনের আবরণটিকে বলা হয় পোস্ট সাইন্যাপটিক পর্দা। এই দুটি পর্দার মধ্যে যে আণুবীক্ষণিক ফাঁক বিদ্যমান থাকে তাকে সাইন্যাপটিক ক্লেফট বলা হয়, যা বহিঃস্থ তরল দ্বারা পূর্ণ থাকে।
প্রান্তীয় স্থিতির সাইটোপ্লাজমে অনেকগুলো পর্দাবৃত থলি উপস্থিত থাকে, এরা হলো প্রি-সাইন্যাপটিক ভেসিকল। যে রাসায়নিক প্রেরক পদার্থ স্নায়ু স্পন্দন প্রেরণে সাহায্য করে বা বাধার সৃষ্টি করে তারা হলো নিউরোট্রান্সমিটার।
স্নায়ু সন্নিধির কাজ- কোন স্নায়ু স্পন্দন প্রি-সাইন্যাপটিক পর্দায় পৌঁছলে সেটি সাইন্যাপটিক নবের মধ্যে প্রবেশ করে । তারপর এটি এক্সোসাইটোসিস পদ্ধতির মাধ্যমে নিউরোট্রান্সমিটারকে সাইন্যাপটিক ক্লেফট অঞ্চলে ক্ষরণ করে থাকে। তারপর নিউরোট্রান্সমিটার পোস্ট সাইন্যাপটিক পর্দায় অবস্থিত গ্রাহকের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তাকে উদ্দীপিত করে থাকে।
স্নায়ুতন্ত্রের প্রকারভেদ :
মস্তিষ্ক ও সুষুম্না কান্ড
- সেরিব্রাল কর্টেক্স- গুরুমস্তিষ্ক একটি গভীর মধ্য খাঁজের মাধ্যমে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার নামক দুটি প্রতিসম অর্ধগোলাকার অংশে বিভক্ত থাকে এবং করপাস ক্যালোসাম নামক বিন্যস্ত একগুচ্ছ স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে।এটি পাঁচটি খণ্ডে খণ্ডিত থাকে, যথা- ফ্রন্টাল, প্যারাইটাল, টেম্পোরাল, অক্সিপিটাল, ইন্সুলা
অবস্থান- গুরু মস্তিষ্ক বা সেরিব্রামের বাইরের দিকে যে পুরু স্তর থাকে, তাকেই সেরিব্রাল কর্টেক্স বলে। সংবেদী, চেষ্টীয় ও সমন্বায়ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত
কাজ- প্রাথমিক সংজ্ঞাবহ অঞ্চল, চাপ, স্পর্শ, ব্যথা ইত্যাদি অনুভূতি গ্রহণে এবং শ্রবণ, দর্শন, ঘ্রাণ গ্রহণে সাহায্য প্রদান করা।
- থ্যালামাস- গুরু মস্তিষ্কের নীচে মস্তিষ্কের তৃতীয় নিলয়ের উভয় পাশে ধূসর বস্তু যুক্ত ডিম্বাকার অংশবিশেষ।
কাজ- থ্যালামাস রিলে স্টেশন হিসাবে বিভিন্ন গ্রাহক থেকে আগত চাপ, তাপ প্রসব বেদনা, দর্শন প্রভৃতি উদ্দীপনাকে সেলিব্রাল কর্টেক্সে প্রেরন করে থাকে।
- হাইপোথ্যালামাস- থ্যালামাসের নীচের দিকে মস্তিষ্কের তৃতীয় নিলয়ের মধ্যে অবস্থান করে থাকে।
কাজ- ইহার মুখ্য কাজ হল মানবদেহের তাপমাত্রা, নিদ্রা ও জাগরণ ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।
- মধ্য মস্তিষ্ক- পশ্চাৎ মস্তিষ্ক এবং অগ্র মস্তিষ্কের ডায়েনসেফালন অংশের মধ্যবর্তী স্থানে মধ্য মস্তিষ্ক অবস্থিত।
কাজ- দর্শন ও শ্রবণ ক্রিয়ার কেন্দ্র হিসাবে কাজ করা ও অগ্র এবং পশ্চাৎ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের মধ্যে কার্যগত সমন্বয়ে সাহায্য করা।
- পনস- মধ্য মস্তিষ্কের নীচে ও মস্তিষ্কের চতুর্থ নিলয়ের অঙ্কীয় দেশে সুষুম্নাশীর্ষকের ঠিক উপরাংশে অবস্থিত ।
কাজ- পনসের নিউমোটক্সিক কেন্দ্র ও আপনিউসটিক কেন্দ্র শ্বাসকার্য নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে থাকে। - লঘুমস্তিষ্ক- মস্তিষ্কের চতুর্থ নিলয়ের পৃষ্ঠদেশে লঘু মস্তিষ্ক লক্ষ্য করা যায়।
কাজ- দেহের ভারসাম্য বজায় রাখা ও ঐচ্ছিক পেশির কার্যকারিতার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
- সুষুম্নাশীর্ষক- ইহার অবস্থান হলো পশ্চাৎ মস্তিষ্কের শেষ অংশ যেখান থেকে সুষুম্নাকাণ্ড উৎপন্ন হয়েছে।
কাজ- সুষুম্নাশীর্ষকে অবস্থিত প্রশ্বাস কেন্দ্র ও নিশ্বাস কেন্দ্র শ্বাসকার্য নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে এছাড়াও হাঁচি-কাশি, লালা ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
- সুষুম্নাকাণ্ড- এর কেন্দ্রে অবস্থিত গহ্বরটি হল কেন্দ্রীয় নালী। কেন্দ্রীয় নালী বেষ্টন করে ধূসর বস্তু H অক্ষরের ন্যায় বিন্যস্ত থাকে। এই কেন্দ্রীয় নালীর উভয় পাশে ধূসর বস্তুতে তিনটি প্রধান অঞ্চল থাকে যরা সম্মুখ শৃঙ্গ, পার্শ্বশৃঙ্গ এবং পশ্চাৎ শৃঙ্গ নামে পরিচিত।অবস্থান– করোটির তলদেশে ফোরামেন ম্যাগনাম নামক ছিদ্রের মধ্য দিয়ে নির্গত হয়ে মেরুদন্ড গহ্বরপর্যন্ত অবস্থিত।
কাজ- সুষুম্নাকাণ্ডের ধূসর বস্তু প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় কাজ করে এবং প্রান্তীয় উদ্দীপনা অ্যাসেন্ডিং ট্রাকের মাধ্যমে প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
- মেনিনজেস- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বাইরে এটি তিনটি স্তর দ্বারা গঠিত, যথা : ডুরা মেটার, অ্যারাকনয়েড ম্যাটার ও পায়া ম্যাটার।ডুরা ম্যাটার, অ্যারাকনয়েড ম্যাটারের মধ্যবর্তী স্থানকে সাব ডুরাল স্পেস বলা হয়।
কাজ- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করাই হল এর প্রধান কাজ।
- সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড- মস্তিষ্কের নিলয় এবং সুষুম্না কান্ডের নিউরো সিল ও মেনিনজেসের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।
কাজ- মস্তিষ্ক ও সুষুম্না কান্ডের কলা কোশের পুষ্টিতে সাহায্য করা এবং বাইরের আঘাত থেকে মস্তিষ্ক সুষুম্নাকাণ্ডকে রক্ষা করা ।
প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও প্রতিবর্ত পথ
প্রতিবর্ত ক্রিয়া- বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনার প্রভাবে মস্তিষ্কের সরাসরি নির্দেশ ছাড়াই সুষুম্নাকাণ্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দ্রুত, স্বয়ংক্রিয় এবং অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়াকেই প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য-
- এটি প্রধানত সুষুম্নাকাণ্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়
- এটি দ্রুত এবং স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ঘটে
- এটি এক প্রকার অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়া মাত্র
প্রতিবর্ত ক্রিয়ার প্রকারভেদ
১. জন্মগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া- পূর্ব অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল নয় এমন যেসব প্রতিবর্ত ক্রিয়া জন্মের সময় থেকেই থাকে এবং যা সহজে পরিবর্তনশীল নয় এবং অস্থায়ী প্রকৃতির হয়ে থাকে, তাকে জন্মগত বা সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলা হয়।
যেমন : তীব্র আলো পড়লে চোখের তারারন্ধ্র সংকুচিত হয় ও চোখের পাতা দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।
২. অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়া- জন্মের পর বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা দ্বারা সৃষ্ট অস্থায়ী অথবা পরিবর্তনযোগ্য প্রতিবর্ত ক্রিয়াকে আমরা অভ্যাসগত অথবা অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলি।
উদাহরণ : শিশুদের হাঁটতে শেখা, কথা বলতে শেখা ইত্যাদি।
প্রতিবর্ত পথ- যে নির্দিষ্ট পথে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্নায়ু স্পন্দন প্রবাহিত হয়ে থাকে তাকে প্রতিবর্ত পথ বলা হয়।
উদাহরণ : মানুষের হাত কোন উত্তপ্ত জিনিসের সংস্পর্শে এলে যন্ত্রণাদায়ক উদ্দীপনা গৃহীত হয়। এরপর ওই উদ্দীপনা অন্তর্বাহী স্নায়ুর মাধ্যমে সুষুম্নাকাণ্ডের ধূসর বস্তুতে পৌঁছায়। তারপর সেই ধূসর বস্তুতে সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় এবং সেই চেষ্টীয় নির্দেশনা বহির্বাহী স্নায়ুর মাধ্যমে হাতের পেশিতে পৌঁছায় এবং হাত উত্তপ্ত বস্তু থেকে তৎক্ষণাৎ সরে আসে।
প্রতিবর্ত পথের উপাদানসমূহের কাজ
- গ্রাহক- পরিবেশ থেকে আগত উদ্দীপনা গ্রহণ করা
- অন্তর্বাহী স্নায়ু- এর মাধ্যমে গ্রাহক থেকে স্নায়ু স্পন্দন স্নায়ুকেন্দ্রে প্রেরিত হয়
- স্নায়ু কেন্দ্র- সুষুম্নাকাণ্ডের ধূসর বস্তু স্নায়ুকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে
- বহির্বাহী স্নায়ুর মাধ্যমে স্নায়ু কেন্দ্র থেকে চেষ্টীয় নির্দেশনা কারক অংশে পৌঁছে থাকে
- কারক- চেষ্টীয় নির্দেশনার উপস্থিতিতে কারক উদ্দীপ্ত নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করে সাড়া প্রদান করে
প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন প্রতিবর্তের গুরুত্ব
হঠাৎ তীব্র আলো চোখে পড়লে এবং কোন বহিরাগত বস্তু চোখের কর্নিয়ার সংস্পর্শে আসার ঠিক আগে চোখের পাতা দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। এই ঘটনাটি একটি অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়া। এটি মাত্র 0.1 সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে । কাশি এবং হাঁচি হল প্রতিবর্ত ক্রিয়ার অন্যতম দুই উদাহরণ।
চোখ-মানুষের অন্যতম জ্ঞানেন্দ্রিয়
প্রাণীদের যে বিশেষ অঙ্গ সংবেদী স্নায়ুতন্তুর সাথে সংযুক্ত থেকে প্রাণীদের পরিবেশ থেকে আগত বিভিন্ন জ্ঞান লাভ করতে সাহায্য করে , তাকেই জ্ঞানেন্দ্ৰিয় বলে । চোখ হল আমাদের মুখ্য দর্শনেন্দ্রিয় যার সাহায্যে আমরা দেখতে পাই।
মানুষের চোখের গঠন এবং চোখের বিভিন্ন অংশের কাজসমূহ :
চোখের অংশবিশেষ | গঠন | অবস্থান | কাজ |
স্কেরা | ইহা সাদা, পুরু, অস্বচ্ছ তন্তুময় এক বহিরাবক । | অক্ষিগোলকের পশ্চাৎ ভাগে 5/6 অংশ জুরে অবস্থান করে থাকে। | বহিরাগত আঘাত থেকে চোখকে রক্ষা করা এবং অক্ষিগোলকের আকৃতি প্রদান করা। |
কর্নিয়া | ইহা স্কেরার তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি পুরু, সাদা, স্বচ্ছ, শ্বেত তন্তুময় এক বহিরাবক। | স্কেরার সঙ্গে সংযুক্ত অক্ষিগোলকের সম্মুখ ভাগের 1/6 অংশ জুরে অবস্থান করে থাকে। | অক্ষিগোলকে আলোক প্রবেশে সাহায্য প্রদান এবং প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করা |
কোরয়েড | ইহা মেলানিন রঞ্জকযুক্ত, কালো বা বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে ও ইহা রক্তবাহ যুক্ত একটি মধ্য আবরক স্তর বিশেষ। | স্কেরার ঠিক ভেতরের দিকে বিশেষত নিচের দিকে অবস্থিত। | চোখের বিভিন্ন আবরক স্তরে পুষ্টি প্রদান করা এবং আলোর প্রতিফলন রোধে সাহায্য করা। |
সিলিয়ারি বডি এবং সাসপেন্সারি লিগামেন্ট | সিলিয়ারি বডি মূলত সিলিয়ারি পেশি ও সিলিয়ারি প্রবর্ধক নিয়ে গঠিত হয়। সিলিয়ারি পেশি থেকে নির্গত সূক্ষ্ম তন্তু বিশেষ হলো সিলিয়ারি লিগামেন্ট। | কোরয়েড এবং আইরিশ-এর মধ্যবর্তী স্থানে ইহার অবস্থান। | সিলিয়ারি বডি উপযোজনে সাহায্য করে থাকে। অপরদিকে সাসপেন্সারি লিগামেন্ট লেন্সকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। |
আইরিশ | ইহা হল একটি কালো, অস্বচ্ছ, রক্তজালক সমৃদ্ধ মাঝখানে ছিদ্রযুক্ত পাতলা পর্দা বিশেষ। | ইহা কর্নিয়ার পেছনে এবং লেন্সের সামনে অবস্থান করে থাকে। | তারারন্ধের ব্যাস ছোট এবং বড় করার মাধ্যমে অক্ষিগোলোকে আলোর প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা |
পিউপিল | ইহা একটি গোলাকার ছিদ্র। | ইহা আইরিসের কেন্দ্রে অবস্থান করে। | মূলত ইহার মধ্য দিয়েই আলো অক্ষিগোলকে প্রবেশ করে থাকে। |
রেটিনা | রড কোশ এবং কোন কোশ দ্বারা গঠিত চোখের ভিতরের একটি আবরক স্তরবিশেষ। রড কোশ দণ্ডাকার ও রোডপসিন রঞ্জক যুক্ত হয়ে থাকে। কোন কোশ শোণকূ আকৃতির এবং সায়ানপসিন ও আয়োডপসিন রঞ্জকযুক্ত। রেটিনাতে রড কোশ প্রায় 11 থেকে 12.5 কোটি এবং কোন কোশ প্রায় 63 থেকে 68 লক্ষ হয়ে থাকে। | ইহা কোরয়েডের নীচে অবস্থিত। |
|
লেন্স | ইহা একটি দ্বিতল উত্তল স্থিতিস্থাপক অংশবিশেষ। | ইহার অবস্থান আইরিশের পেছনে, | ইহা প্রতিসারক মাধ্যম এবং উপযোজনে সাহায্য প্রদান করে থাকে। |
অ্যাকুয়াস হিউমর | ইহা হলো শর্করা প্রোটিন এবং বিভিন্ন লঘু দ্রবণ এর মিশ্রণবিশেষ, | লেন্স এবং কর্নিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত সামনের প্রকোষ্ঠ | অক্ষিগোলকের অভ্যন্তরীণ চাপ বজায় রাখা এবং চোখে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা। |
ভিট্রিয়াস হিউমর | শর্করা প্রোটিন এবং বিভিন্ন ধরনের লবণের সান্দ্র, ইহা দেখতে অনেকটা জেলির মত। | লেন্স এবং কর্নিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত পশ্চাৎ প্রকোষ্ঠ। | ইহা প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে এবং অক্ষিগোলকের অভ্যন্তরীণ চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইহা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। |
কনজাংটিভা | পাতলা স্বচ্ছ পর্দা বিশেষ। | অক্ষিপল্লব এবং কর্নিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত | ইহার মুখ্য কাজ হল কর্নিয়াকে রক্ষা করা |
গ্রন্থি | বাদামী আকৃতির কতগুলি নালি। | ইহার অবস্থান ঊর্ধ্ব নেত্রপল্লবের ভেতরের দিকে মাঝখান বরাবর। | চোখকে সিক্ত রাখতে এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া কে ধ্বংস করতে ইহা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। |
মানুষের দ্বিনেত্র দৃষ্টি:
দ্বিনেত্র দৃষ্টির মাধ্যমে প্রাণী তার দুটি চোখ ব্যবহার করে কোন একটি জিনিসের প্রতিবিম্ব দেখতে পারে। যেমন- শিকারি পাখি, মানুষ, বানর ইত্যাদি।
দ্বিনেত্র দৃষ্টির পদ্ধতি :
যে কোন বস্তু থেকে নির্গত আলোকরশ্মি প্রথমে কনজাংটিভা, তারপর কর্নিয়া এবং অ্যাকুয়াস হিউমারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তারারন্ধ্রের মধ্য দিয়ে গিয়ে লেন্সের উপর পতিত হয়। এরপর লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রতিসৃত রশ্মি গুলি ভিট্রিয়াস হিউমরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় রেটিনার উপর গিয়ে পড়ে। ফলত, রেটিনার কোশ গুলি উদ্দীপিত হয়ে পড়ে। এই উদ্দীপনা অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের দর্শন অঞ্চলে পৌঁছলে, আমরা ওই বস্তুকে স্পষ্ট দেখতে পাই।
উপযোজন
উপযোজন : লেন্সের অবস্থা স্থির রেখে তার বক্রতার পরিবর্তনের মাধ্যমে লেন্সের ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তন ঘটিয়ে ওই একই লেন্সের সাহায্যে কাছের অথবা দূরের বস্তুকে কার্যত স্পষ্টভাবে দেখার জন্য চোখের বিশেষ অভিযোজনকেই উপযোজন বা Accomodation বলে।
উপযোজনের পদ্ধতি সমূহ
কাছের বস্তুর দেখার ক্ষেত্রে– কাছের বস্তুর দেখার জন্য চোখের সিলিয়ারি পেশী সংকোচন হয়ে থাকে ফলে চোখের লেন্সের বক্রতার বৃদ্ধি পায় এবং লেন্সটি মোটা হয়ে পড়ে। ফলে লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্য হ্রাস পায়।
ফলত, কাছের বস্তুর প্রতিবিম্ব সঠিকভাবে রেটিনার উপর গঠিত হতে পারে এবং আমরা ওই বস্তুকে দেখতে পাই।
দূরের বস্তু দেখার ক্ষেত্রে – দূরের বস্তু দেখার ক্ষেত্রে চোখের সিলিয়ারি পেশী শিথিল হয়ে পড়ে ফলে লেন্সের বক্রতা কম হয় এবং লেন্সটি সরু হয়ে পড়ে।
ফলে লেন্সের ফোকাস দৈর্ঘ্যের বৃদ্ধি ঘটে এবং বস্তুর প্রতিবিম্ব সঠিকভাবে রেটিনার উপর গঠিত হয় এবং আমরা ওই দূরবর্তী বস্তুকে দেখতে পাই।
দৃষ্টির অস্বাভাবিকতা এবং সংশোধন পদ্ধতি
দৃষ্টির অস্বাভাবিকতা এবং সংশোধন পদ্ধতি : চোখের উপযোজন ক্ষমতা হ্রাস পেলে বিভিন্ন ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়।
- মায়োপিয়া : অক্ষিগোলকের আকার স্বাভাবিকের তুলনায় বড়ো হলে বস্তুর প্রতিবিম্ব চোখের রেটিনাতে গঠিত না হয়ে, তার আগে অর্থাৎ ভিট্রিয়াস হিউমার অংশে গঠিত হয়ে থাকে, ফলত দূরের দৃষ্টি ব্যাহত হয়। চোখের উপযোজন সংক্রান্ত এই অস্বাভাবিকতাকে মায়োপিয়া বলা হয়।
সংশোধনের পদ্ধতি : অবতল লেন্সের চশমা ব্যবহার করলে মায়োপিয়া দূর করা সম্ভব। - হাইপেরোপিয়া : অক্ষিগোলকের আকার স্বাভাবিকের তুলনায় ছোটো হলে বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনার পশ্চাতে গঠিত হয়ে থাকে, ফলত নিকটবর্তি দৃষ্টি ব্যাহত হয়, চোখের উপযোজন সংক্রান্ত এই অস্বাভাবিকতাকেই বলা হয় হাইপারোপিয়া।
সংশোধনের পদ্ধতি: উত্তল লেন্সের চশমা ব্যবহারের দ্বারা এই অস্বাভাবিকতাকে দূর করা সম্ভব। - ক্যাটারাক্ট : বয়স বাড়ার সাথে সাথে লেন্স বা কর্নিয়া ক্রমশ অস্বচ্ছ হয়ে পড়ে। তাই দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকে এবং এর চূড়ান্ত পর্যায়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে যায় । এই ধরনের অস্বাভাবিকতাকে আমরা ক্যাটারাক্ট বা চোখে ছানি পড়া বলি।সংশোধনের পদ্ধতি : লেন্স বা কর্নিয়া অপারেশনের মাধ্যমে (ফেকো সার্জারি) প্রতিস্থাপন করে দিলে এই অস্বাভাবিকতাকে সহজেই দূর করা সম্ভব।
- প্রেসবারোগিয়া : চল্লিশ বছরের কাছাকাছি সময়ে মানুষের চোখের লেন্সের সংকোচন-প্রসারণশীলতা হ্রাস পেয়ে থাকে। চোখের উপযোজন সংক্রান্ত এই অস্বাভাবিকতাকে আমরা প্রেসবায়োপিয়া বা চালশে বলে থাকি। এক্ষেত্রে দূরবর্তী বস্তু দৃষ্টিগোচর হলেও কাছের বস্তু (মুলত কোনো কিছু পড়তে) দেখতে অসুবিধা হয়।
সংশোধন পদ্ধতি : বাইফোকাল বা প্রোগ্রেসিভ লেন্সের চশমা ব্যবহারের দ্বারা এই অস্বাভাবিকতাকে দূর করা সম্ভব।
প্রাণীদের সাড়া প্রদানের একটি প্রকার হিসাবে গমন :
চলন হলো, কোন উদ্দীপনার উপস্থিতিতে, কোন প্রাণীর নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির থেকে, তার প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন ঘটানোর পদ্ধতি।
উদ্ভিদরা মূলত চলনের দ্বারাই বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে থাকে। উদ্ভিদের ন্যায় প্রাণীরাও বিভিন্ন ভাবে তার সংবেদনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকে। প্রাণীরা সাধারণত অস্থি, পেশি এবং অস্থিসন্ধি ব্যবহারের দ্বারা খুব দ্রুত একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলাচল করার মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া প্রদান করে ।
গমন : কোন উদ্দীপনার উপস্থিতিতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালনের দ্বারা প্রাণীর বা জীবের একস্থান থেকে অন্যস্থানে সামগ্রিক স্থান পরিবর্তনের ঘটনাকে গমন বলে ।
গমনের চালিকাশক্তিসমূহ
- আত্মরক্ষা : বিভিন্ন রকমের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য অর্থাৎ আত্মরক্ষার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রাণীরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে ।
- খাদ্যান্বেষণ : প্রাণীরা সাধারণত খাদ্যের বিষয়ে স্ব-নির্ভর হয় না, তাই খাদ্য সংগ্রহ এবং যোগাড় করতে প্রাণীরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে ।
- প্রজনন : বংশবিস্তারের জন্য প্রাণীদের গমন আবশ্যিক।
- আশ্রয়ের সন্ধান : বিভিন্ন প্রাণীরা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার জন্য গমন করে থাকে।
- অনুকূল পরিবেশের সন্ধানে : জীবন যাপনের জন্য অনুকূল পরিবেশের সন্ধানে প্রাণীরা বিভিন্ন স্থানে গমন করে ।
মাছের সন্তরণ :
গমনাঙ্গ : মাছের মুখ্য গমনাঙ্গ হল সাতটি পাখনা, যথা : বক্ষ পাখনা (একজোড়া), পৃষ্ঠপাখনা (1 টি), পুচ্ছপাখনা বা লেজ (1টি), পায়ু পাখনা (1টি), ও শ্রোণি পাখনা (একজোড়া)। মাছের গমনে সাহায্যকারী পেশি হল মায়োটম পেশি।
মাছের সন্তরণে পাখনার ভূমিকাসমুহ :
- একজোড়া বক্ষপাখনা মাছকে সামনে এবং পশ্চাৎ গমনে, এবং জলের মধ্যে ওপরে ও নীচে ওঠা-নামা করতে সাহায্য করে।
- পৃষ্ঠপাখনা মাছের দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং জলের মধ্যে ঢেউ তৈরি করে মাছকে সামনের দিকে গমনে সাহায্য করে।
- পুচ্ছপাখনা জলের মধ্যে দিক পরিবর্তনে ও সামনে গমনে সাহায্য করে থাকে।
- পায়ু পাখনা জল কেটে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে থাকে।
- একজোড়া শ্রোণি পাখনা জলের মধ্যে মাছকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় ভেসে থাকতে এবং ওপরে-নীচে ওঠা-নামা করতে সাহায্য করে থাকে।
মাছের সন্তরণে মায়োটম পেশির ভূমিকাসমুহ :
প্রত্যেক মাছের মাথায় পিছন থেকে শুরু করে লেজ পর্যন্ত মেরুদণ্ডের দু-পাশ বরাবর অবস্থিত ‘V’ আকৃতির খণ্ডিত পেশিসমুহকে মায়োটম পেশি বলে । মাছের দেহের কোনো একপাশের মায়োটম পেশি সংকুচিত হলে, ওই মাছের দেহ সেই পাশে বেঁকে যায়। এই সময় জল মাছের দেহের ওপর যে প্রতিরোধী বল প্রয়োগ করে থাকে, তা মাছের দেহকে বিপরীত দিকে ও সামনের দিকে ঠেলে দেয়।
মাছের লেজের ঝাপটা তার দেহের বিপরীত দিকে হয় ও জল ওই মাছের দেহের পশ্চাৎভাগের দিকে প্রতিরোধী বল প্রয়োগ করে থাকে। এই মাছের দেহের ওপর প্রযুক্ত বিপরীতমুখী বল দুটি সমান হওয়ায় মাছের পার্শ্বীয় বিচলন রোধ হয়ে থাকে এবং ওই মাছটি সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে যায়। মায়োটম পেশির এইরূপ সংকোচন-প্রসারণের দ্বারা মাছের দেহ ঢেউ-এর ন্যায় বামদিকে ও ডানদিকে আন্দোলিত হতে থাকে। ফলত মাছ জলের মধ্যে সাঁতার কেটে বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত হয়।
পাখির উড্ডয়ন :
গমনাঙ্গ : পাখির প্রধান গমন অঙ্গ হল একজোড়া ডানা। এই ডানা দুটি হল পাখির অগ্রপদগুলির রুপান্তরিত রুপ। পাখির প্রতিটি থানায় সারিবদ্ধ ভাবে বড় বড় পালক সাজানো থাকে যাকে রেমিজেস বলা হয়, এর সংখ্যা 23 টি।
পাখির লেজে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের পালক অবস্থান করে এবং এগুলোকে রেকট্রিসেস বলে অভিহিত করা হয়, এর সংখ্যা প্রায় 12 টি।
পাখির উড্ডয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে উড্ডয়ন পেশীগুলি। পায়রার ক্ষেত্রে প্রধান উড্ডয়ন পেশীসমূহ হল পেক্টোরালিস মেজর, পেক্টোরালিস মাইনর এবং কোরাকো ব্রাকিয়ালিস। এইসকল পেশী সমূহ স্টার নাম নাটক অস্থির সাথে সংযুক্ত থাকে।
উড্ডয়ন পদ্ধতি :
- পেক্টোরালিস মেজর নামক অবনমন পেশির সংকোচনের ফলে পাখির ডানা দুটি নীচের দিকে নেমে আসে। এই সময় ডানার পালকগুলি পেশির সংকোচনে পরস্পর অধিক্রমণের ফলস্বরুপ পালকগুলির মধ্য দিয়ে বায়ু ওপরের দিকে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং বায়ু ডানার নিম্নতলে ঊর্ধ্বঘাতের সৃষ্টি করে থাকে। বায়ুর ঊর্ধ্বঘাত পায়রার দেহকে ওপরের দিকে ঠেলে দেয়।
- কোরাকো ব্রাকিয়ালিস পেশির সংকোচনে পায়রার ডানার অগ্র-পশ্চাৎ সঞ্চালন ঘটে থাকে, ফলত সামনের দিকে এগোতে পারে।
- পেক্টোরালিস মাইনর নামক উত্তোলন পেশির সংকোচনের মাধ্যমে পায়রার ডানা দুটি ওপরের দিকে উঠে গিয়ে থাকে এবং এই সময় পালক পেশি প্রসারিত হলে পালকগুলি পরস্পর পৃথক হয়ে যায়৷
যার ফলস্বরূপ বায়ু, পায়রার ডানার পালকগুলির ভিতর দিয়ে নীচের দিকে নেমে আসে। এইভাবে বিভিন্ন পেশির সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে ডানা সঞ্চালনের দ্বারা সকল প্রকার পাখির উড্ডয়ন বা ফ্ল্যাপিং সম্পন্ন হয়ে থাকে।
মানুষের গমন পদ্ধতি
মানুষের গমন পদ্ধতি : মানুষের মুখ্য গমন অঙ্গ হল তার দুটি পা। দুটি পায়ের মাধ্যমে মানুষের গমন করার পদ্ধতিকে দ্বিপদ গমন বলা হয়। এই দ্বিপদ গমন বিভিন্ন পেশির সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে ঘটে থাকে।
দ্বিপদ গমন পদ্ধতি :
- সোজাভাবে দাঁড়ানোর সময় দেহমধ্যরেখা, মানুষের দুটি পায়ের মধ্য দিয়ে যায়, এর ফলে সমগ্র দেহের ভার মানুষটির দুটি পায়ের ওপর পড়ে থাকে।
- গমনের শুরুতে মানুষটির দেহের ওপরের অংশ কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে যায়, ফলত তার দেহর মধ্যরেখা সামনের দিকে সরে গিয়ে থাকে।
- ফলত মানুষটির পায়ের গ্যাস্ট্রোক্নেমিয়াস পেশির (ধরা যাক বাঁ পায়ের) সংকুচিত হয়ে পরে এবং তার গোড়ালি মাটি থেকে উঠে আসে। এই সময় সম্পূর্ণ পায়ের ভার পায়ের আঙ্গুলের ওপর গিয়ে পড়ে।
- তারপর এক্সটেনসর ডিজিটোরিয়াম পেশির সংকোচনে হাঁটু ভাঁজ হলে পা (বাঁ পা) মাটি থেকে ওপরে উঠে আসে ও মানুষটির দেহের সমগ্র ভার তার অন্য পায়ের (ডান পা) ওপর পড়ে।
- বাইসেপস ফিমোরিস পেশির সংকোচনে মাটি থেকে উঠে আসা মানুষটির পা-টি (বাঁ পা) সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে পরে এবং পেশিগুলির প্রসারণে অভিকর্ষ বলের কারণে পা নীচে নেমে এসে মাটি স্পর্শ করে থাকে। এই সময় প্রথমে গোড়ালি মাটি স্পর্শ করে এবং তারপরে সমগ্র পাটি মাটি স্পর্শ করে থাকে।
- একই পদ্ধতি অবলম্বন করে অপর পায়ের (ডান পা) সঞ্চালন ঘটে। গমনের সময় বাঁ পায়ের সঙ্গে ডান হাত এবং ডান পায়ের সঙ্গে বাঁ হাত অগ্রসর হয়ে থাকে।
- বাঁ এবং ডান পায়ের একান্তরভাবে সঞ্চালনের মাধ্যমেই দ্বিপদ গমন সম্পন্ন হয়ে থাকে।
- গমনের সময়কালে মানব লঘুমস্তিষ্কের ভেস্টিবিউলো সেরিবেলাম বা ফ্লকিউলোনডিউলার লোব নামক অংশবিশেষ এবং অন্তঃকর্ণের সিলিয়াযুক্ত সংবেদনশীল কোশযুক্ত ভেস্টিবিউল ও তিনটি অর্ধবৃত্তাকার নালী মানবদেহের ভারসাম্য বজায় রাখে।
মানুষের গমনে সচল অস্থিসন্ধি এবং কঙ্কাল পেশির ভূমিকাসমূহ :
- মানুষের গমনে সচল অস্থিসন্ধির ভূমিকাসমূহ : কোন মানুষের গমনের সময় হাতের এবং পায়ের বিভিন্ন সচল অস্থি সন্ধি সমূহ সাহায্য করে থাকে। তাহাদের মধ্যে প্রধান এবং উল্লেখযোগ্য অস্থিসন্ধিসমূহ হল-
- হিঞ্জ সন্ধি অথবা কবজা সন্ধি : যেসকল অস্থিসন্ধিতে একটি অস্থির গোলাকার প্রাস্ত অপর অস্থির অর্ধগোলাকার অবতল অংশের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং অস্থিসমূহকে জানালা অথবা দরজার মতো একটি নির্দিষ্ট অক্ষ বরাবর সঞ্চালিত হতে সাহায্য করে থাকে, তাকে আমরা কবজা সন্ধি বা হিঞ্জ সন্ধি বলে থাকি। যেমন- কনুই সন্ধি, হাঁটু সন্ধি।
- বল এবং সকেট সন্ধি : যেসব অস্থিসন্ধিতে একটি অস্থির গোলাকার মস্তক প্রান্ত অপর অস্থির অবতল খাঁজের মধ্যে এমনভাবে ঢোকানো থাকে যাতে সংশ্লিষ্ট অঙ্গটিকে সকলদিকে ঘোরানো সম্ভবপর হয়, তাকে বল ও সকেট সন্ধি বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। যেমন- কোমরের সন্ধি, কাধের অস্থিসন্ধি।
গমনের সময় কঙ্কাল পেশির ভূমিকা : মানুষ যখন গমন করে তখন বিভিন্ন কঙ্কাল পেশি তার গমনে সাহায্য করে থাকে। মূলত কাজের উপর ভিত্তি করে এই সকল পেশাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।
- ফ্লেক্সর পেশি : এই জাতীয় পেশি দুটি হাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এই পেশির সংকোচনের ফলে অস্থি দুটি অস্থিসন্ধি অঞ্চলে ভাঁজ হয়ে পরস্পরের কাছাকাছি চলে আসে, একে ফ্লেক্সর পেশি বলে । যেমন- হ্যামস্ট্রিং এবং গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস।
- এক্সটেনসর পেশি : যেসকল পেশীর সংকোচনের ফলে নিকটবতী অঙ্গ প্রসারিত হয়ে দূরে সরে যায়, সেই সকল পেশিকে এক্সটেনসর পেশি বলে । যেমন- গ্লুটিয়াস ম্যাক্সিমাস।
- অ্যাডাক্টর পেশি : এই জাতীয় পেশির সংকোচনের ফলে দূরবর্তী কোনো অঙ্গ মানবদেহের দীর্ঘতম অস্থি স্থানে চলে আসে। এই পেশির ক্রিয়াকে অ্যাডাকশন বলা হয়ে থাকে। যেমন-ল্যাটিসমাস ডরসি।
- রোটেটর পেশি : যেসকল পেশির সংকোচনের ফলে দেহের কোন অঙ্গ, দেহাক্ষের চারিপাশে বেঁকে যেতে পারে তাদের আমরা রোটেটর পেশি বলে থাকি। যেমন- পাইরিফর্ম ফিমার।
- অ্যাবডাক্টর পেশি : এই জাতীয় পেশির সংকোচনের মানে দেহের কোন অঙ্গ দূরে চলে যাওয়া। এই পেশির ক্রিয়াকে আমরা অ্যাবডাকশন বলে থাকি। এই পেশীর উদাহরণ হল হাতের ডেলটয়েড পেশি।
SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়
1 MARKS QUESTIONS of জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়
- প্রাণীদেহে ভৌত সমন্বয়কের নাম লেখো ?
ANS-স্নায়ুতন্ত্র হলাে প্রাণীদের ভৌত সমন্বয়ক।
- স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একককে কী নাম পরিচিত ?
ANS-স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একককে নিউরােন বা স্নায়ুকোশ বলে।
- নিউরােনের দীর্ঘ প্রবর্ধককে কী নাম পরিচিত ?
ANS-নিউবানের দীর্ঘ প্রবর্ধককে ‘অ্যাক্সন বলে।
- নিউরােনের শাখাপ্রশাখাযুক্ত ও ক্ষুদ্র প্রবর্ধককে কী বলে?
ANS-নিউরােনের ক্ষুদ্র ও শাখাপ্রশাখাযুক্ত প্রবর্ধককে ডেনড্রন বলে।
- দু’টি নিউরােনের সংযােগস্থলকে কী নাম পরিচিত ?
ANS-দু’টি নিউরােনের সংযােগস্থলকে সাইন্যাপস বলে।
- অ্যাক্সন নিউরােনের যে অংশ থেকে উৎপন্ন হয় তাকে কী বলে ?
ANS-অ্যাক্সন হিলক বলে।
- স্নায়ুকোশ কোন কোশ অঙ্গাণু না থাকায় বিভাজিত হতে পারে না?
ANS-সেন্ট্রোজোম না থাকায় স্নায়ুকোশ বিভাজিত হতে পারে না।
- মানবদেহে কোথায় বল ও সকেট সন্ধি দেখা যায় ?
ANS-বল ও সাকেট সন্ধি মানবদেহে কাধ ও কোমরে দেখা যায়।
- কোথায় কঙ্কাল পেশি থাকে ?
ANS-কঙ্কাল পেশি কঙ্কালতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
- ফ্লেক্সন পেশির একটি উদাহরণ দাও।
ANS-বাইসেপস পেশি হলাে ফ্লেক্সন পেশির উদাহরণ।
- অস্তিান হরমােনের রাসায়নিক নাম কী ?
ANS-ইল্ডােল অ্যাসেটিক অ্যাসিড (Indol Acetic Acid)।
- কোন হরমােন ডাবের জলে (নারকেলে) থাকে ?
ANS-সাইটোকাইনিন বা কাইনিন।
- প্রাণীর মতাে উদ্ভিদ সংবেদনশীল কথাটি কে বলেন?
ANS-জগদীশচন্দ্র বসু।
- কোন রােগে চোখের কাছে দৃষ্টি ব্যাহত হয় ?
ANS-হাইপার মেট্রিাপিয়া।
- চোখের সঙ্গে যুক্ত স্নায়টির নাম লেখাে।
ANS-অপটিক স্নায়ু।
- লােহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে কোন হরমােন সাহায্য করে।
ANS-খাইরক্সিন।
- মৌল বিপাকীয় হার (BMR) কোন হরমােন নিয়ন্ত্রণ করে ?
ANS-থাইরক্সিন।
- কোন লেন্স মায়ােপিয়ার ত্রুটি দূরীকরণে ব্যবহৃত হয় ?
ANS-অবতল লেন্স।
- সন্তান প্রসবে সাহায্যকারী হরমােনের নাম লেখাে।
ANS-অক্সিটোসিন।
- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে কোন প্রকার স্নায়ু উদ্দীপনা গ্রহণ করে পাঠায় ?
ANS-সংজ্ঞাবহ স্নায়ু (Sensory Nerves)।
Multiple Choice Questions – 1 Marks of জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়
উদ্ভিদের কোন অঙ্গ এর চলন জলের অনুকূলে হয় –
- কান্ড
- পাতা
- মূল
উত্তর : মূল
লজ্জাবতীর পাতায় কি ধরণের চলন দেখা যায়-
- কেমোন্যাসটিক চলন
- সিস্মন্যাসটিক চলন
- ফটোট্রপিজম চলন
- ফটোট্যাক্টিক চলন
উত্তর : সিস্মন্যাসটিক চলন
বনচাড়াঁল গাছের পাতার ফলকের সঞ্চালনের কারণ-
- বায়ু প্রবাহ
- রসস্ফীতিজনিত চাপ
- স্পর্শজনিত চাপ
উত্তর : রসস্ফীতিজনিত চাপ
কিছু ফুল সূর্যোদয়ের পর ফোটে কিন্তু সূর্যাস্তের পর মুড়িয়া যায় ইহা কি ধরণের চলন-
- কেমোন্যাসটি
- সিস্মন্যাসটি
- ফটোন্যাস্টি
উত্তর : ফটোন্যাস্টি
জগদীশ চন্দ্র বোস দ্বারা ব্যবহৃত উদ্ভিদের চলন পরিমাপক যন্ত্র কোনটি –
- ক্রেস্কোগ্রাফ
- সিসমোগ্রাফ
- কালিওগ্রাফ
উত্তর : ক্রেস্কোগ্রাফ
- উদ্দীপকের তীব্রতা দ্বারা কোন চলন হয়-
- ট্রপিক
- ন্যাস্টিক
- ট্যাকটিক
- প্রকরণ
উত্তর : ন্যাস্টিক
- সামগ্রিক চলন দেখা যায় –
- ভলভ্যাক্স
- লজ্জাবতী
- সূর্যশিশির
উত্তর : ভলভ্যাক্স
- হরমোন একটি –
- রাসায়নিক সমন্বয়ক
- ভৌত সমন্বয়ক
- দুটি সঠিক
উত্তর : রাসায়নিক সমন্বয়ক
- উদ্ভিদের পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে কোন হরমোন-
- জিব্বেরেলিন
- অক্সিন
- ইথিলিন
উত্তর : অক্সিন
- ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে কোন হরমোন-
- অক্সিন
- জিব্বেরেলিন
- থাইরক্সিন
উত্তর : অক্সিন
- একটি কৃত্রিম হরমোন এর উদাহরণ হলো-
- জিব্বেরেলিন
- জিয়াটিন
- IAA
- ন্যাপথলিন acetic অ্যাসিড
উত্তর : ন্যাপথলিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড
- কোশের সাইটোপ্লাজম বিভাজনে সাহায্য করে কোন হরমোন-
- Cytokinin
- অক্সিন
- abscisic অ্যাসিড
উত্তর : Cytokinin
- অগ্রমুকুল বৃদ্ধি করে কোন হরমোন –
- ABA
- ইথিলিন
- IAA
উত্তর : IAA
- বার্ধক্য রোধ করে কোন হরমোন –
- জিব্বেরেলিন
- অক্সিন
- ইথিলিন
- cytokinin
উত্তর : জিব্বেরেলিন
- তারারন্ধ্র কে বিস্ফোরিত করতে কোন হরমোন সাহায্য করে-
- এড্রিনালিন
- থাইরক্সিন
- প্রোজেস্টেরন
উত্তর : এড্রিনালিন
- ACTH ক্ষরিত হয়-
- পিটুইটারি গ্রন্থি
- অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি
- ডিম্বাশয় গ্রন্থি
উত্তর : পিটুইটারি গ্রন্থি
- ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস রোধ করে কোন হরমোন-
- অক্সিটোসিন
- ADH
- STH
- ইন্সুলিন
উত্তর : ADH
- ডিম্বাশয় ক্ষরিত হরমোন হলো-
- ইন্সুলিন
- থাইরক্সিন
- টেস্টোস্টেরোন
- ইস্ট্রোজেন
উত্তর : ইস্ট্রোজেন
- থাইরক্সিন নিঃসৃত করে কোন গ্রন্থি –
- এড্রিনালিন
- থাইরয়েড
- অগ্ন্যাশয়
- শুক্রাশয়
উত্তর : থাইরয়েড
- কোন হরমোন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি দ্বারা ক্ষরিত হয় না-
- থাইরক্সিন
- পেপসিন
- ACTH
উত্তর : পেপসিন
Short Questions – 2-3 Marks of জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়
- স্বতঃস্ফুর্ত চলন কী ?
ANS- উদ্দীপকের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে চলন সম্পন্ন হয়ে থাকে, তাকে স্বতঃস্ফুর্ত চলন বলে।
উদাহরণ : কোশের রসস্ফীতির পরিবর্তনের জন্য বাড়ালের ত্রিফলকের বৃন্তের পত্ৰক দু’টির ওঠা-নামা করা হলাে প্রকরণ চলন যা স্বতঃস্ফুর্ত চলনের উদাহরণ।
- কাকে ট্যাকটিক চলন বলে ? উদাহরণ দাও।
ANS- বহিস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তনকে ট্যাকটিক চলন বলে।
উদাহরণ : আলােক উদ্দীপকের প্রভাবে ক্ল্যামাইডােমােনাসের স্থান পরিবর্তন।
- কে ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কার করেন ? এর কাজ কী?
ANS- ক্লেসকোগ্রাফ যন্ত্র বিজ্ঞানী আগদীশচন্দ্র বসু আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রের মাধ্যমে। উদ্ভিদের সাড়া প্রদান পরিমাপ করা হয়।
- কোন কোন উদ্ভিদের উপর উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা প্রমাণের জন্য বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু পরীক্ষানিরীক্ষা করেন?
ANS- জগদীশচন্দ্র বসু প্রধানত দুটি উদ্ভিদের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা করেন লজ্জাবতী লতার গাছ (মাইমােলা পত্রিকা) বনাড়াল গাছ (ডেমােডিয়াম গাইর্যানস)
- কেন হরমােনকে রাসায়নিক সমম্বয়সাধক বলে ?
ANS-হরমােন উৎপত্তিস্থল থেকে রক্ত, লসিকা বা কলারসের মাধ্যমে বাহিত হয়ে অন্য অশাের কলাকোশের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে।। তাই হরমােনকে রাসায়নিক সমন্বয়সাধক বালে।
- কেন হরমােনকে রাসায়নিক দূত (Chemical messenger) বলে?
ANS-হরমােন উৎপত্তিস্থল থেকে বাহিত হয়ে অন্য অঙ্গের কলাকোশে রাসায়নিক বার্তা প্রেরণ করে সেই কোশের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই হরমােনকে রাসায়নিক দূত বা রাসায়নিক বার্তাবহ বলে।
- দুটি কৃত্রিম উদ্ভিদ হরমােনের পুরাে নাম লেখো |
ANS-কৃত্রিম হরমােন = IBA = Indole Buteric Acid
NAA= Napthelin Acetic Acid
- মুখ্য উদ্ভিদ হরমােনগুলির উৎসস্থল উল্লেখ করাে।
ANS-উৎসস্থল :
i) সাইটোকাইনিন : সস্য ও ফলে এই হরমােন উৎপন্ন হয়।
ii) জিব্বরেলিন : পরিপক্ক বীজে, অস্ফুরিত চারাগাছে, বীজের বীজপত্রে উৎপন্ন হয়।
iii) অক্সিন হরমােন : উদ্ভিদের ভাজক কলার কোশে বিশেষ করে কাণ্ডের বা মূলের অগ্রভাগে ভুণ ও কচিপাতার কোশে অক্সিন হরমােন উৎপন্ন হয়।
- কাকে বহিঃক্ষরা গ্রন্থি (সনাল গ্রন্থি) বলে ? উদাহরণ দাও।
ANS-যেসব প্রন্থির ক্ষরণ নালির মাধ্যমে বাইরে আসে তাদের বহিঃক্ষরা গ্রন্থি বা সনাল গ্রন্থি বলে। উদাহরণ – লালাগ্রন্থি, ঘর্মগ্রন্থি ইত্যাদি।
- কাকে অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি বলে ? উদাহরণ দাও।
ANS-যেসব গ্রন্থির নালি থাকে না, ক্ষরিত পদার্থ সরাসরি রক্ত ও লসিকায় মেশে তাদের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা অনাল গ্রন্থি বলে। উদাহরণ পিটুইটারি গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি ইত্যাদি।
- কাকে মিশ্র গ্রন্থি বলে ? উদাহরণ দাও।
ANS-মিশ্র গ্রন্থি হলো যেসকল গ্রন্থি অন্তক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় প্রকার কাজ করে । উদাহরণ অগ্নাশয়, শুক্রাশয় ইত্যাদি
- কেন পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভু গ্রন্থি (Master gland) বলে ?
ANS-পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত হরমােনগুলি দেহের অন্য গ্রন্থিগুলির বৃদ্ধি ও কার্যকারিতা | নিয়ন্ত্রণ করে, তাই পিটুইটারিকে প্রভু গ্রন্থি বলে।
যেমন— TSH থাইরয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধি ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে, ACTH | অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির বৃদ্ধি ও কার্য নিয়ন্ত্রণ করে।
- অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির অবস্থান এবং নিঃসৃত হরমােনের নাম লেখাে।
ANS-অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি প্রতিটি বৃক্কের উপরে অবস্থিত। তাই একে সুপ্ৰারেনাল গ্রন্থি বলে। হরমােন :
- i) অ্যাড্রিনালিন বা এপিনেফ্রিন।
- ii) নর -অ্যাড্রিনালিন বা নর-এপিনেফ্রিন।
- পিটুইটারি গ্রন্থির পশ্চাৎভাগ থেকে নিঃসৃত ৩টি হরমােনের নাম ও কাজ লেখাে।
ANS-0xytocin: গর্ভ অবথায় জরায়ুর পেশির সংকোচন ঘটিয়ে সন্তান প্রসবে সাহায্য করে।
Vasopressin : 1 ADH (Anti Diretic Hormone): gar niets ভেদ্যতা বাড়িয়ে পুনঃশোষণে সাহায্য করে। এর কম ক্ষরণে ডায়াবেটিস ইনসেপিডাস রােগ হয়।
- দুটি নিউরাে হরমােনের উদাহরণ দাও।
ANS-দুটি নিউরাে হরমােন হলাে অক্সিটোসিন (Oxytosin) ও ভেসােপ্রেসিন (ADH)
- ডায়াবেটিস মেলাইটাস ও ডায়াবেটিস ইনসিপিম্ভসের কারণ কী?
ANS-ডায়াবেটিস মেলাইটাস : এই রােগে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এটি ইনসুলিন হরমােনের অভাবে হয়।
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস : এই রােগে মুত্র উৎপাদন বেশি হওয়ায় ঘন মূত্র ত্যাগ হয়। এটি ADH বা অ্যান্টি ডাইইউরেটিকস হরমােনের অভাবে হয়।
- কোন কোন রোগ থাইরয়েড গ্রন্থির স্বল্পক্ষরণে হয় ?
ANS-থাইরয়েড গ্রন্থির স্বল্পক্ষণে – শিশুদের ক্রেটিনিজম (Cretinism) এবং বড়ােদের মিক্সিডিমা রােগ হয়।
- স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র বলতে কী বােঝায় ? এর কাজ কী?
ANS-কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে নির্গত যে স্নায়ুতন্ত্র দেহের অন্তরযন্ত্রের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে তাকে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র বলে।
কাজ : দেহের অন্তরযন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করা।
- নিউরােন ও স্নায়ুর সম্পর্ক আলােচনা করাে।
ANS-নিউরােন হলাে স্নায়ুর গঠনগত ও কার্যগত একক। নিউরােনের অ্যাকুন স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে। স্নায়ুত মিলিত হয়ে স্নায়ুতন্ত্রগুচ্ছ, এবং ‘মায়ুতন্ত্রগুচ্ছ মিলিত হয়ে | স্নায়ু বা নর্ডি গঠন করে ও স্নায়ু বিভিন্ন প্রকার নিউরােন দ্বারা গঠিত।
যেমন— অন্তর্বাহী স্নায়ু সেনসরি নিউরােন দিয়ে এবং বহির্বাহী স্নায়ু মােটর | নিউরােন দিয়ে গঠিত। স্নায়ুর উদ্দীপনা নিউরােনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়।
- মানবচক্ষুর প্রতিসারক মাধ্যমগুলির নাম লেখাে।
ANS-মানবচক্ষুর প্রতিসারক মাধ্যমগুলি হলাে= কর্নিয়া, ও ‘অ্যাকুয়াস হিউমর, লেন্স, ভিট্রিয়াস হিউমর, রেটিনা।
Long Questions – 5 Marks of জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়
- হরমােন কাকে বলে ? উদ্ভিদ হরমােনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।
ANS-হরমােন : যে জৈব রাসায়নিক পদার্থ অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিকোশ থেকে বা বিশেষ কলাকোশ থেকে ক্ষরিত হয়ে দূরবর্তী স্থানের কলাকোশের কার্যকরিতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্রিয়ার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তাকে হরমােন বলে।
উদ্ভিদ হরমােনের প্রধান বৈশিষ্ট্য :
উৎস : প্রধানত উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলাতে উদ্ভিদ হরমােন উৎপন্ন হয়। এছাড়া ভূণমুকুল, ভূণমূল, সস্য, ফল, পরিণত বীজ, বীজপত্র, বর্ধনশীল পাতা কোশেও উদ্ভিদ হরমােন থাকে।
পরিবহণ : উদ্ভিদ হরমােন ব্যাপন প্রক্রিয়ায় সংবহন কলার (জাইলেম ও ফ্লোয়েম) মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়।
কাজ : উদ্ভিদ হরমােন উদ্ভিদের বৃদ্ধি, বীজের অঙ্কুরােদ্গম, ফুল ফোটানাে, মুকুলের বৃদ্ধি, কোশের বিভাজন, ফুলের বৃদ্ধি, ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতে সাহায্য করে।
সদতি : উদ্ভিদ হরমােন ক্রিয়ার পর বিভিন্ন প্রকার উৎসেচকের দ্বারা বিনষ্ট অক্সিন হরমােন ইন্ডােল অ্যাসিটিক অ্যাসিড অক্সিডেজের প্রভাবে বিনষ্ট রেলিন এবং সাইটোকাইনিন অক্সিডেজের (Oxidase) প্রভাবে বিনষ্ট হয়। যেমন- অক্সিন হরমে
- জিব্বেরেলিন হরমােনের উৎস এবং কাজ লেখাে।
ANS- উৎস : উদ্ভিদের পরিপক্ক বীজে, বীজপত্রে, অঙ্কুরিত চারাগাছে, পাতার বর্ধিষ্ণু অঞলে জিব্বেরেলিন সংশ্লেষিত হয়।
জিব্বেরেলিন হরমােনের কাজ :
বীজের ও মুকুলের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গকরণ : বীজ ও মুকুল দীর্ঘ সময় ধরে সুপ্ত অবস্থায় বা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। জিব্বেরেলিন বীজ মধ্যস্থ উৎসেচকের সক্রিয়তা বাড়িয়ে বীজের অঙ্কুরােদগমে এবং মুকুলের সুপ্তাবস্থা ভাঙতে সাহায্য করে।
পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বদ্ধি : জিব্বেরেলিনের প্রভাবে উদ্ভিদের পর্বমধ্যের বৃদ্ধি ঘটে, ফলে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়।
ফলের বৃদ্ধি : আপেল, আঙ্গুর, ন্যাসপাতি প্রভৃতি ফলের গঠনে এবং আকার বৃদ্ধিতে জিব্বেরেলিন হরমােন বিশেষভাবে সাহায্য করে।
ফুলের প্রস্ফুটন : জিব্বেরেলিন সমস্ত উদ্ভিদের ফুল ফোটাতে সাহায্য করে।
জিব্বেরেলিন হরমােন কিউকারবিটেসি গােত্রভুক্ত উদ্ভিদের ফল গঠনে এবং লিঙ্গ প্রকাশে সাহায্য করে।
- জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক নাম এবং রাসায়নিক উপাদান উল্লেখ করাে। এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।
ANS- রাসায়নিক নাম : জিব্বেরেলিক অ্যাসিড।
রাসায়নিক উপাদান : কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H) ও অক্সিজেন (O)
জিব্বেরেলিনের বৈশিষ্ট্য :
- i) এটি নাইট্রোজেনবিহীন উদ্ভিদ হরমােন।
- ii) এটি কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নিয়ে গঠিত। iii) জিব্বেরেলিন টারপিনয়েড গােষ্ঠীর আম্লিক প্রকৃতির হরমােন।
- iv) এটি জাইলেম ও ফ্লোয়েম উভয় কলার মাধ্যমে উভয়মুখীভাবে পরিবাহিত হয়।
- v) পরিপক্ক বীজে ও বীজপত্রে বেশি জিব্বেরেলিন সংশ্লেষিত হয়।
- সাইটোকাইনিনের উৎস এবং বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।
ANS- সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের সস্যে ও ফলে সংশ্লেষিত হয়। এছাড়া নারকেল ও ভুট্টার সস্যে, টমেটোর রসে অধিক পরিমাণে সাইটোকাইনিন পাওয়া যায়।
সাইটোকাইনিনের বৈশিষ্ট্য :
সাইটোকাইনিন পিউরিন জাতীয় নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারীয় জৈব পদার্থ।
i) সাইটোকাইনিন কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O) এবং নাইট্রোজেন নিয়ে গঠিত।
ii) এটি উদ্ভিদদেহে সবদিকে পরিবাহিত হয়।
iii) এর রাসায়নিক সংকেত CoHONO।
iv) এটা উদ্ভিদদেহে কোশ বিভাজনে সাহায্য করে।
- কৃষিক্ষেত্রে অক্সিন হরমােনের প্রয়ােগ আলােচনা করাে।
ANS- অক্সিন হরমােনের প্রয়ােগ :
i) অক্সিন হরমােন প্রয়ােগ করে বীজবিহীন ফল যেমন— আঙ্গুর, পেঁপে, পেয়ারা, কলা ইত্যাদি উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতিকে পার্থেননাকার্পি বলে।
ii) IBA, NAA প্রভৃতি কৃত্রিম অক্সিন প্রয়ােগ করে অল্প সময়ে জবা, গােলাপ, আম, পেয়ারা, লেবু প্রভৃতি গাছের শাখাকলম তৈরি করা হয়।
iii) আপেল, ন্যসপাতি, চা প্রভৃতি উদ্ভিদে ডাল ছাঁটার পর ক্ষত নিরাময়ে কৃত্রিম অক্সিন প্রয়ােগ করা হয়।
iv) আগাছা দমন করার জন্য কৃত্রিম অক্সিন 2,4-D বা 2,4, 5-T ব্যবহার করা হয়।
v) কৃত্রিম অক্সিন যেমন 2,4-D, NAA ইত্যাদি প্রয়ােগ করে অপরিণত পাতা, ফুল ও ফলের মােচন রােধ করা হয়।
vi) কৃত্রিম অক্সিন যেমন- NAA প্রয়ােগ করে দ্রত ফুল ফোটানাে হয়।
- বিভিন্ন প্রকার ন্যাস্টিক চলন সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর –উদ্দীপকের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ন্যাস্টিক চলন বিভিন্ন প্রকারের হয়। যথা—
i) ফোটোন্যাস্টিক চলন বা ফোটোন্যাস্টি : আলােক উদ্দীপকের তীব্রতার বৃদ্ধি বাহ্রাসের ফলে উদ্ভিদ অঙ্গে যে ন্যাস্টিক চলন হয় তাকে ফোটোন্যাস্টিক বা ফোটোন্যাস্টি চলন বলে।
উদাহরণ : সূর্যমুখী, পদ্ম প্রভৃতি ফুল বেশি আলােতে ফোটে এবং কম আলােতে মুদে যায়। অন্যদিকে সামালতী কম আলােতে ফোটে এবং বেশি আলােতে মুদে যায়।
ii) থার্মোন্যাস্টিক চলন বা থার্মোন্যাস্টি : উয়তা উদ্দীপকের তীব্রতার বৃদ্ধি বা হ্রাসের ফলে উদ্ভিদ অঙ্গের যে ন্যাস্টিক চলন হয় তাকে থার্মোন্যাস্টিক চলন বা থার্মোন্যাস্টি বলে।
উদাহরণ : অধিক উন্নতায় টিউলিপ ফুল ফোটে এবং কম উয়তায় মুদে যায়।
iii) সিসমেন্যাস্টিক চলন বা সিসমেন্যাস্টি : স্পর্শ, আঘাত, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি পর্কেরতীব্রতার প্রভাবে উদ্ভিদের অঙ্গের যে ন্যাস্টিক চলনহয়তাকেসিসমেন্যাস্টিক চলন বা সিসমেন্যাস্টি বলে।
উদাহরণ : লজ্জাবতীর পাতা স্পর্শ করা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে নুয়ে পড়ে।
iv) কেমােন্যাস্টিক চলন বা কেমেন্যাস্টি : রাসায়নিক উদ্দীপকের (যেমন— প্রােটিন) তীব্রতার উপর নির্ভর করে উদ্ভিদ অঙ্গের যে ন্যাস্টিক চলন হয় তাকে কেমােন্যাস্টি বলে।
উদাহরণ : ভেনাস ফ্লাইট্রাপ (পতঙ্গভুখ উদ্ভিদ)-এর পাতার উপর পতঙ্গ বসলে প্রােটিন উদ্দীপকের প্রভাবে পাতার পত্রফলক বন্ধ হয়।
- থাইরক্সিন কোথা থেকে ক্ষরিত হয় ? এর তিনটি কাজ লেখাে। এর কম বা বেশি ক্ষরণে কোন কোন রােগ হয় ?
ANS- থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন ক্ষরিত হয়। থাইরক্সিন হরমােনের কাজ :
i) শর্করা, প্রােটিন ও ফ্যাটের বিপাকক্রিয়ার হার বৃদ্ধি করা।
ii) লােহিত রক্ত কণিকার (RBC) ক্রম পরিণতিতে সাহায্য করা।
iii) এটি যকৃতে নিউগ্লুকোজেনেসিস পদ্ধতিতে প্রােটিন থেকে গ্লুকোজ সংশ্লেষ করে।।
থাইরক্সিন হরমােনের কম ক্ষরণে শিশুদের ক্রেটিনিজম ও বয়স্কদের মিক্সিডিমা রােগ হয়। এর বেশি ক্ষরণে গয়টার বা গলগণ্ড বা গ্রেভস বর্ণিত রােগ হয়।
- অ্যাড্রিনালিন কোথা থেকে ক্ষরিত হয় ? এর প্রধান কাজগুলি লেখাে। একে জরুরিকালীন হরমােন বলে কেন ?
ANS- অ্যাড্রিনালিন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির মেডেলা অঞ্চল থেকে ক্ষরিত হয়।
অ্যাড্রিনালিনের কাজ :
i) অ্যাড্রিনালিন হৃৎপিণ্ডের গতি বাড়ায়, ফলে হৃদ-উৎপাদ বাড়ে এবং রক্তচাপ বাড়ে।
ii) অ্যাড্রিনালিন মােল বিপাকীয় হার (BMR) বৃদ্ধি করে।
iii) এর প্রভাবে পেশির সংকোচনশীলতা বাড়ে।
iv) অ্যাড্রিনালিন শ্বাসতন্ত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং ব্রংকিওলসকে প্রসারিত করে। |
অ্যাড্রিনালিন হরমােন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির মেডেল হতে ক্ষরিত হয় এবং আপদকালীন বা জরুরিকালীন অবস্থায় (যথা রাগ, ভয়, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি) দেহকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে, তাই এই হরমােনকে আপদকালীন হরমােন বলে।
- ইনসুলিন কোথা থেকে ক্ষরিত হয় ? এর দুটি কাজ লেখাে। এর অভাবে কোন রােগ হয় ? এই রােগের লক্ষণ কী ?
ANS- ইনসুলিন অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর বিটা কোশ থেকে ক্ষরিত হয়।।
ইনসুলিনের কাজ :
i) ইনসুলিন কার্বহাইড্রেট বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে গ্লুকোজ-এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
ii) ইনসুলিন অশর্করা থেকে গ্লুকোজ উৎপাদনে বাধা দান করে
iii) ইনসুলিন যকৃতে কিটোনবডি উৎপাদনে বাধাদান করে। তাই একে অ্যান্টিকিটোজেনিক হরমােন বলে।
ইনসুলিনের অভাবে মধুমেহ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস রােগ হয়।
রােগের লক্ষণ –
i) মূত্রের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায়,
ii) মূত্রে শর্করা থাকে,
iii) প্রবল তৃয়া হয়।
- শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় নিঃসৃত হরমােনের কাজ লেখাে। অথবা, টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন ও প্রােজেস্টেরন হরমােনের উৎস ও কাজ লেখাে।
ANS- টেস্টোস্টেরন |Testosterone) :
উৎস : শুক্রাশয়ের লেডিগের অন্তরকোশ থেকে ক্ষরিত হয়।
কাজ :
i) পুরুষদেহের যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি ঘটায়।
ii) পুরুষের গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য (যেমন- পেশিবহুল দেহ, গলার স্বর মােটা, গোঁফদাড়ি গজানাে) -এর প্রকাশ ঘটায়।
iii) শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করে।
ইস্ট্রোজেন [Estrogen] :
উৎস : ডিম্বাশয়ের পরিণত ডিম্বথলি থেকে ক্ষরিত হয়।
কাজ :
i) এর প্রভাবে জরায়ু, ডিম্বনালি বৃদ্ধি হয়, নারীদের ত্বক কোমল ও মসৃণ হয়, স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি হয়।
ii) এই হরমােনের প্রভাবে স্ত্রীদেহেমাসিক যৌনচক্র বা ঋতুচক্রনিয়ন্ত্রিত হয়।
Cetcocuga [Progesterone) :
উৎস : ডিম্বাশয়ের পরিণত ডিম্বথলি থেকে ক্ষরিত হয়।
কাজ :
i) স্ত্রীদেহের জরায়ুর এন্ডােমেটিয়াম বৃদ্ধি করে।
ii) নিষিক্ত ডিম্বাণুর রােপণে সাহায্য করে।
iii) প্লাসেন্টা গঠনে সাহায্য করে।