fbpx

Chapter 4 অভিব্যক্তি ও অভিযোজন : Expression and Adaptation Life Science জীবন বিজ্ঞান WBBSE Madhyamik Class 10

আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে

প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি

Here you will learn the basics of CHAPTER 4 – জীবনের প্রবাহমানতা (Continuity of Life) in a simple language it is for Bengali medium students who are studying under West Bengal Board of Secondary Education and preparing for their exam (Class 10 WBBSE) Here you will find all necessary and important WBBSE Madhyamik Suggestions, notes, solved sample question paper in Bangla along with video lectures from expert teachers

অভিব্যক্তি:

অভিব্যক্তি বা বিবর্তন হল সেই মন্থর এবং ধারাবাহিক গতিশীল প্রক্রিয়া যার সাহায্যে সরলতম উদবংশীয় জীব থেকে বিভিন্ন পরিবর্তনের দ্বারা (মূলত জিনের পরিবর্তন  এবং  যৌন জননের  মাধ্যমে)  বিভিন্ন ধরনের উন্নত জটিল জীবের সৃষ্টি হয় ।

অভিব্যক্তির ধারণা : জটিল জীবের উৎপত্তি ঘটেছে সরল এককোশী জীবের মন্থর গতিশীল এবং পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের দ্বারা যা হতে কোটি কোটি বছর সময় লেগেছে। যুগে যুগে আমাদের এই পৃথিবীর আবহাওয়া এবং গঠন পরিবর্তিত হয়েছে । সেই পরিবর্তন অনুযায়ী সরল জীবদেহও বিভিন্ন রূপে পরিবর্তিত হয়েছে ।

এই পরিবর্তন এই যুগেও বিদ্যমান এবং ভবিষ্যৎকালে চলতে থাকবে । জীবের এই পরিবর্তনকেই বিবর্তন অথবা জৈব অভিব্যক্তি বলে । এই অভিব্যক্তি বা জৈব বিবর্তনের ধারণা জীববিদ্যার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ  জীবের সৃষ্টির ইতিহাস এই অভিব্যক্তির মধ্যেই লুকিয়ে আছে ।

জীবনের উৎপত্তি : বিজ্ঞানী হ্যালডেন এবং ওপারিনের মতে আদিম পৃথিবী যখন অক্সিজেনবিহীন অবস্থায় ছিল তখন অধিক তাপমাত্রায়, আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি এবং বিদ্যুৎ ক্ষরণের প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের অজৈব অণু যেমন NH3 , H2O, CH4 ইত্যাদি পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন জটিল জৈব অণু গঠন করে । পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী হ্যারল্ড উরে এবং স্ট্যানলে মিলার এই ঘটনা পরীক্ষাসহ প্রমাণ করেন ।

মিলার ও উরের পরীক্ষা

পরীক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্রসমূহের বর্ণনা : বিজ্ঞানী মিলার এবং উরে 1953 সালে একটি পাঁচ লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গোল কাচপাত্রে দুটি টাংস্টেন ইলেকট্রোড যুক্ত করেন এবং ফ্লাক্সটিকে একটি ঘনীভবন যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করেন যাতে দুটি নল উপস্থিত আছে । একটি নল দিয়ে ঠান্ডা জল প্রবেশ করে এবং অন্যটি দিয়ে গরম জল বেরিয়ে যায় ।

যন্ত্রটিতে ঘনীভবন যন্ত্রের পরে একটি ‘U’ আকৃতির নল আছে যার দ্বারা পরীক্ষায় উৎপন্ন পদার্থ জমা হতে পারে । এরপরে একটি ছোটো ফ্লাক্স আছে যা নলের সাহায্যে বড়ো ফ্লাস্কটির সঙ্গে সংযুক্ত করা থাকে ।

পরীক্ষা : পরীক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্রটির বড়ো ফ্লাক্সটিতে  2 : 2 : 1 অনুপাতে মিথেন, অ্যামোনিয়া এবং হাইড্রোজেনকে নিয়ে তার সাথে ছোট ফ্লাক্স থেকে ফুটন্ত জলের জলীয় বাষ্পকে প্রেরণ করা হয়। তারপর ওই গ্যাসীয় মিশ্রণটিকে বিচ্ছুরিত তড়িৎ-এর মধ্য দিয়ে অনবরত চালনা করা হয়। এই বিচ্ছুরিত তড়িৎ বজ্রপাতের সময় বিদুৎক্ষরণের ন্যায় কাজ করে থাকে ।

এরপর ওই বড়ো ফ্লাস্কটি থেকে নির্গত গ্যাসীয় পদার্থকে ঠান্ডা জলের মধ্য দিয়ে চালনা করলে, তা ঘনীভূত  হয়ে পড়ে। পরে ওই ঘনীভূত তরলকে আবার তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে উত্তপ্ত করে, বাষ্পীভূত করা হয় এবং ওই বাষ্পকে আবার বিচ্ছুরিত তড়িৎ-এর মধ্য দিয়ে চালনা করা হয় । এই পদ্ধতিটি টানা এক সপ্তাহ ধরে চালানো হয় ।

পর্যবেক্ষণ : ঘনীভবন যন্ত্রের ‘U’ আকৃতির নলে এক সপ্তাহ ধরে জমা হওয়া যৌগগুলিকে ক্রোমাটোগ্রাফিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে শনাক্তকরণের পর লক্ষ্য করা যায় ঘনীভূত তরলে  ফর্ম্যালডিহাইড এবং কার্বক্সিলিক অ্যাসিড, গ্লাইসিন, গ্লুটামিক অ্যাসিড, অ্যালানিন ইত্যাদি সৃষ্টি রয়েছে ।

সিদ্ধান্ত : বিভিন্ন অজৈব পদার্থ থেকে জৈব পদার্থের উৎপত্তি ঘটেছে অর্থাৎ, আদিম পৃথিবীতে  অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে অতিবেগুনিরশ্মি, তাপশক্তি এবং তড়িৎশক্তি ও UV রশ্মির প্রভাবে বিভিন্ন অজৈব যৌগ থেকে জটিলযৌগ যেমন মিথেন, অ্যামোনিয়া এবং হাইড্রোজেন প্রভৃতি উৎপন্ন হয় যা সাগরে তরল, গরম স্যুপ সৃষ্টি করে থেকে কোয়াসারভেট এবং জীবনের উৎপত্তি হয় । 

অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাসমূহ :

পর্যায়অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাসমূহ
পৃথিবীর সৃষ্টিসৃষ্টির মুহূর্তে পৃথিবীর পরিবেশ ছিল বিজারণধর্মী কারণ সৃষ্টিলগ্নে পৃথিবীর উষ্ণতা ছিল 6000°C .পরে ধীরে ধীরে জলীয় বাস্প ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত হয় এবং সমুদ্রের সৃষ্টি হয়। সেই মুহূর্তের পরিবেশে মিথেন, অ্যামোনিয়া ও জলীয়বাষ্পের সংমিশ্রণ থাকলেও অক্সিজেনের অস্তিত্ব ছিল না । 
জীবনের উৎপত্তি আদিম পৃথিবীর পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন জৈব গ্যাসগুলি মিলিত হয়ে রাসায়নিক বিবর্তনের মাধ্যমে জৈব পদার্থ সৃষ্টি করে । ফলে মাইক্রোস্ফিয়ার, কোয়াসারভেট এবং নিউক্লিক অ্যাসিডের সৃষ্টি হয় । RNA হল সর্বপ্রথম সৃষ্ট নিউক্লিক অ্যাসিড তারপর RNA থেকে DNA-এর  উৎপত্তি ঘটে । পর্দাবেষ্টিত নিউক্লিওপ্রোটিনযুক্ত কোয়াসারভেটই হল সেই প্রাথমিক কোশ যা প্রথম জীবনরূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল ।
এককোশী প্রাণীর উৎপত্তি প্রাথমিক কোশ থেকেই প্রথমে আদি প্রোক্যারিওটিক কোশ এবং পরবর্তীকালে প্রোক্যারিওটিক কোশের সৃষ্টি হয় । এই প্রাথমিক কোশগুলি ছিল মূলত অবায়ুজীবী প্রকৃতির এবং এগুলি ছিল রাসায়নিক পরভোজী । পরবর্তীকালে বিবর্তনের মাধ্যমে সালফার ব্যাকটেরিয়ার মতো অবায়ুজীবী সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়ার  উৎপত্তি হয় ।  
সায়ানো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অক্সিজেন ত্যাগপৃথিবীতে সর্বপ্রথম অক্সিজেন সৃষ্টি হয় প্রায় 3.5 বিলিয়ন বছর আগে সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলাভ সবুজ শৈবালের সালোকসংশ্লেষের দ্বারা । এর ফলে পৃথিবীতে জারকীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং ওজোন স্তর ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিকে শোষণ করে নেওয়ায় পৃথিবীতে বসবাসযোগ্য এক অনুকূল পরিবেশ গড়ে ওঠে ।  
বহুকোশী  জীবের উৎপত্তি প্রোক্যারিওটিক কোশ থেকে ইউক্যারিওটিক কোশ উৎপত্তির কারণ হলো মিথোজীবীতা (এন্ডোসিমবায়োসিস)  এবং ইনভ্যাজিনেশন । এককোশী জীবের বিভাজনের ফলে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন অপত্য কোশগুলি একে অপরের থেকে আলাদা না হওয়ার কারণবশত বহুকোশী জীবের  সৃষ্টি হয়েছে ।
মাছের মত মেরুদন্ডী প্রাণীর বিবর্তন  বহুকোশী জীব থেকে পরভোজী প্রাণীর সৃষ্টি হয় । এরপর আবির্ভাব ঘটে অমেরুদন্ডী প্রাণীর যেমন- স্পঞ্জ, নিডারিয়া, অ্যানিলিডা, আর্থ্রোপোডা, মোলাস্কা এবং সবশেষে তারামাছ জাতীয় একাইনোডার্মাটা প্রাণীর । এরপর চোয়ালবিহীন মেরুদন্ডী প্রাণী এবং শেষে চোয়ালযুক্ত মেরুদন্ডী প্রাণীর সৃষ্টি হয় । 
স্থল  অঞ্চলে উদ্ভিদের বিবর্তন  সরল প্রকৃতির উদ্ভিদ থেকে বহুকোশী উদ্ভিদের সৃষ্টি হয় । প্রথমে থ্যালোফাইটা জাতীয় উদ্ভিদ শ্যাওলা থেকে মস জাতীয় উদ্ভিদের সৃষ্টি হয় । ধীরে ধীরে মূল, কান্ড, পাতাযুক্ত ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়। এরপর সপুষ্পক উদ্ভিদের সৃষ্টি হয় – প্রথমে পাইন জাতীয় ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ, পরে গুপ্তবীজী উদ্ভিদের সৃষ্টি হয় । সবশেষে দ্বিবীজপত্রী এবং একবীজপত্রী এই দুটি ধারায় গুপ্তবীজী উদ্ভিদ বিভক্ত হয়ে যায় ।  

জৈব অভিব্যক্তির মতবাদ :

ল্যামার্ক এবং পরবর্তীকালে ডারউইন জৈব অভিব্যক্তি অর্থাৎ নতুন প্রজন্মের সৃষ্টি সম্পর্কে তাদের মতবাদ প্রকাশ করে থাকেন ।

ল্যামার্কের জৈব অভিব্যক্তি সম্পর্কিত মতবাদ : 

1809 সালে ফরাসি বিজ্ঞানী জ্যা ব্যাপটিস্ট ল্যামার্ক, “ফিলোসফিক জুলজিক” নামক গ্রন্থে তাঁর জৈব বিবর্তন সম্পর্কিত মতবাদ প্রকাশ করেন যা ল্যামার্কবাদ নামে খ্যাত । 

এর বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল- 

  • পরিবেশের প্রভাব : বিজ্ঞানী ল্যামার্ক জৈব পরিবর্তনে পরিবেশের প্রভাব লক্ষ্য করেন।  তিনি বলেন পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে জীবের দৈহিক এবং স্বাভাবগত পরিবর্তন নিশ্চিত । একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির জীব বিভিন্ন স্থানে মূলত ভিন্ন পরিবেশে বাস করলে তাদের মধ্যে স্বাভাবিক দৈহিক অভিযোজনের ফলে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় । 

যেমন : জিরাফের পূর্ব পুরুষের গলা ছোট ছিল, তাই ছোট গাছের পাতা খেত। ছোট গাছের পাতা শেষ হতে থাকায় জিরাফের পূর্বপুরুষরা উঁচু গাছের পাতা খাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে । যার ফলে জিরাফের খাদ্যাভাসে বিরাট পরিবর্তন আসে ।

  • জীবের সচেষ্টতা : পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে জীব হলো একটি মুখ্য উপাদান । তাই পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে জীবের ওপর তার প্রভাব পড়ে । যার ফলে জীব প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে ওই পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার । একেই জীবের সচেষ্টতা বলা হয় ।
    যেমন : ছোট জাতীয় গাছের পাতা প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় জিরাফ  তাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় বড় গাছের পাতা খেতে শুরু করে ।  
  • অঙ্গের ব্যবহার এবং অপব্যবহার :  ল্যামার্ক তাঁর মতবাদে  উল্লেখ করেছেন যে, জীবের প্রয়োজনে  জীবদেহের যেকোনো নতুন অঙ্গের সৃষ্টি বা পুরনো অব্যবহৃত অঙ্গের  বিনাশ ঘটে । তাঁর মতে জীব কোনো অঙ্গের ব্যবহার যদি প্রতিনিয়ত করে তবে সেই অঙ্গ বলিষ্ঠ এবং সুগঠিত হবে আবার যে অঙ্গ ব্যবহার হবে না, সেই অঙ্গ ক্রমে দুর্বল এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে বিলুপ্তির পথে চলে যাবে, একে ব্যবহার এবং অপব্যবহার সূত্র বলা হয় । ল্যামার্কের মতবাদ অনুসারে জীবের অঙ্গের ব্যবহার এবং অপব্যবহার  তার দৈহিক পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করে ।  

যেমন : জিরাফের পূর্বপুরুষেরা গাছের পাতা খাওয়ার জন্য তাদের গলার ব্যবহার সর্বাধিক করেছে।  অর্থাৎ জিরাফের গলা প্রতিনিয়ত প্রসারিত হতে থেকেছে ।  যার ফলে তাদের গলা ক্রমাগত লম্বা হয়েছে।  ফলতো তাদের দেহাকৃতির পরিবর্তন ঘটতে থাকে ।

  • অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ : ল্যামার্ক তাঁর মতবাদে বলেছেন, কোনো জীব নিজের প্রচেষ্টায় তার জীবনকালে যে সকল বৈশিষ্ট্য অর্জন করে থাকে, সেই সকল বৈশিষ্ট্য তার পরবর্তী প্রজন্মের জীবে সঞ্চারিত হয়, একেই অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ বলা হয় ।

যেমন : অধিক ব্যবহারের ফলে জিরাফের পূর্বপুরুষের গলা লম্বা হয়ে যায়।  অর্থাৎ এই লম্বা গলা হল জিরাফের অর্জিত বৈশিষ্ট্য । এই বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্ম সঞ্চিত হতে থাকে তাই জিরাফের পরবর্তী প্রজন্ম লম্বা গলা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে ।

  • নতুন প্রজাতির উৎপত্তি : বিজ্ঞানী ল্যামার্কের মতবাদ অনুযায়ী, প্রত্যেকটি প্রজন্মে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য জীবেরা অর্জিত করে এবং এই সকল অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের ফলে ওই জীবের  মধ্যে ধীর ধারাবাহিক এবং গতিশীল পরিবর্তন ক্রমাগত চলতেই থাকে ।  

যেমন : প্রত্যেক প্রজন্মের জিরাফের গলা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবার ফলে ছোট গলা যুক্ত জিরাফ থেকে লম্বা গলা যুক্ত জিরাফের উৎপত্তি ঘটে ।

ল্যামার্কবাদের স্বপেক্ষে উদাহরণসমূহ :

  • উটপাখির পূর্বপুরুষদের সক্রিয় ডানা ছিল ফলে তারা উড়তে পারতো । কিন্তু যেহেতু তারা দৌড়াতে পারত তাই ডানার ব্যবহার না করার ফলে বর্তমানে উটপাখির ডানা দুটি লুপ্তপ্রায় অঙ্গ হিসাবে পরিচিত ।
  • সাপের পূর্বপুরুষদের গিরগিটির ন্যায়  চারটি পা ছিল কিন্তু যেহেতু তারা গর্তে বসবাস করত,  তাই তাদের পায়ের ব্যবহার কমে যাওয়ার ফলে সাপের পা বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত ।

ল্যামার্কবাদের বিপক্ষে উদাহরণসমূহ :

  • ড্যাসোফিলা  মাছিকে প্রায় 60 জনু ধরে ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে রেখে জনন ঘটানো সত্ত্বেও সদ্য জন্মানো  ড্যাফোডিলা মাছির  দৃষ্টিশক্তির কোনো ক্ষতি হয়নি ।
  • বিজ্ঞানী ভাইসম্যান লেজকাটা ইঁদুরের প্রজনন ঘটান এবং এই প্রজনন থেকে উৎপন্ন ইঁদুরের লেজ আবার কেটে তার প্রজনন ঘটায় । এইভাবে 35 জনু ধরে তিনি একই পদ্ধতি অবলম্বন করলেও লেজকাটা অপত্য ইঁদুরের জন্ম হয়নি ।

ল্যামার্কবাদের সমালোচনা : ল্যামার্কবাদের অঙ্গের ব্যবহার এবং অব্যবহার সম্পর্কিত সূত্রটি  সার্বিকভাবে গৃহীত কিন্তু অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসারণ-এর মতবাদটি মান্যতা পায়নি কারণ এই মতবাদের উল্লেখিত অর্জিত বৈশিষ্ট্য জীবের দেহকোশের পরিবর্তনের নির্দেশ করলেও এই ক্ষেত্রে বংশগতি সূত্রগুলি প্রযোজ্য হয় না । কেবলমাত্র জনন কোশের পরিবর্তন ঘটলেই ওই বৈশিষ্ট্য অপত্য বংশে সঞ্চারিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে ।

জৈব অভিব্যক্তি সম্পর্কিত ডারউইনের মতবাদ :

ল্যামার্কবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রায় ৫0 বছর পর বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন জৈব বিবর্তন সম্পর্কিত মতবাদ প্রকাশ করেন যা  ডারউইনবাদ অথবা প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ নামে খ্যাত। 22 বছর বয়সে প্রকৃতিবিদ হিসেবে HMS Beagle নামক জাহাজে দীর্ঘ চার বছর ধরে গ্যালাপ্যাগোস দ্বীপপুঞ্জের ভিন্ন ভিন্ন প্রাণী এবং উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করে পর্যবেক্ষণ করেন । এই পর্যবেক্ষণের পর 1869 সালে “On The Origin of Species by means of Natural Selection” গ্রন্থে তিনি তাঁর জৈব বিবর্তন অথবা জৈব অভিব্যক্তি সম্পর্কিত মতবাদ প্রকাশ করেন । 

এর বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল-

  • অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি : ডারউইন বলেন, জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য হলো অত্যাধিক হরে বংশবৃদ্ধি করা। তবেই জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে । যেমন – একটি স্ত্রী স্যালমন মাছ প্রজনন ঋতুতে প্রায় তিন কোটি ডিম পাড়ে সেই তুলনায় হাতির খুবই কম বাচ্চা হয়। তবে যদি সব বাচ্চা পরিণত হয়ে বংশবিস্তার করত তবে হাতির সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ত। ডারউইনের মতে এমনটা না হওয়ার কারণ হল খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব । 
  • সীমিত খাদ্য ও বাসস্থান : খাদ্য এবং বাসস্থানের ওপর জীবসংখ্যা পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল। কারণ পৃথিবীপৃষ্ঠে বসবাসযোগ্য স্থান এবং খাদ্যও খুবই সীমিত । 
  • অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম : পৃথিবীপৃষ্ঠে জীবসংখ্যা ক্রমাগত জ্যামিতিক এবং গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং খাদ্য-বাসস্থান সীমিত থাকায় প্রত্যেক জীবকে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার জন্য কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় । এই সংগ্রামকে চার্লস ডারউইন ‘অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম’ বলে উল্লেখ করেছেন যা তিন ভাগে বিভক্ত – 
    • অন্ত:প্রজাতি সংগ্রাম : একই প্রজাতির সদস্যদের খাদ্য ও বাসস্থান একই প্রজাতির হওয়ায় যখন সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পায় তখন  খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য নিজেদের মধ্যে যে সংগ্রাম শুরু হয়, তাকে অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বলা হয় । যেমন- শিকারের জন্য বাঘেদের নিজেদের মধ্যেই সংগ্রাম লক্ষ্য করা যায় । 
    • আন্ত:প্রজাতি সংগ্রাম : বেঁচে থাকার তাগিদে দুই বা তার বেশি প্রজাতির মধ্যে খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য যে সংগ্রাম হয় তাকে আন্ত:প্রজাতি সংগ্রাম বলে । যেমন- ব্যাঙের খাদ্য কীটপতঙ্গ কিন্তু আবার সাপের খাদ্য হলো ব্যাঙ অন্যদিকে ব্যাঙ আর সাপ হলো ময়ূরের খাদ্য । 
    • পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম : বেঁচে থাকার জন্য  সকল প্রাণীদের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ভূমিকম্প, খরা, অগ্নুৎপাত, বন্যা ইত্যাদি প্রতিকূল পরিবেশে বিরুদ্ধে  প্রতিনিয়ত সংগ্রাম  চালিয়ে যেতে হয় । ডারউইন এই জাতীয় সংগ্রামকে পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম বলেছেন। যেমন- মধ্য এবং উত্তর আমেরিকার কোয়েল পাখি  প্রচণ্ড তুষারপাত এবং ঠান্ডার কারণে পৃথিবী থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে ।
  • প্রকরণ বা ভেদ : ডারউইনের মতানুযায়ী, এই তিন রকম সংগ্রামের ফলে জীবদেহে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য (আচরণগত ও আকৃতিগত) সৃষ্টি হয় যা প্রজননের মাধ্যমে অপত্যে সঞ্চারিত হয় এবং তা পরবর্তীকালে ওই জীবের বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় । এই পার্থক্যেই তিনি প্রকরণ বা ভেদ বলেছেন।  
  • যোগ্যতমের উদবর্তন : ডারউইনের মতবাদ অনুসারে, যেসকল প্রাণীদের মধ্যে অনুকূল প্রকরণ থাকে অর্থাৎ যারা জীবনসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে এবং পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের অভিযোজিত করে  অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয় অন্যদিকে যেসকল জীবের মধ্যে প্রতিকুল প্রকরণ লক্ষ্য করা যায় তারা তাদের জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয় এবং তাদের অস্তিত্ব এই পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায় । 
    যেমন – মেরু অঞ্চলের বড়ো লোমওয়ালা কুকুর ওই অঞ্চলে বসবাসের যোগ্য হলেও পৃথিবীর অন্য যেকোনো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বা অঞ্চলে তারা বসবাসের অযোগ্য ।
  • প্রাকৃতিক নির্বাচন : প্রকৃতি যেহেতু যোগ্যতম জীবকে নির্বাচন করে, ডারউইন পৃথিবীর বিভিন্ন সংগ্রামের মাধ্যমে যোগ্যতম নির্বাচনকে প্রাকৃতিক নির্বাচনে বলেছেন । প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে যে সকল প্রাণী তাদের অস্তিত্ব রক্ষার অধিকার অর্জন করে তারা এই পৃথিবীতে অধিক সংখ্যায় বেঁচে থাকে এবং বংশ বিস্তারের মাধ্যমে তাদের সন্তানরা উত্তরাধিকারসূত্রে বিভিন্ন অর্জিত অনুকূল প্রকরণগুলি  লাভ করে ।
  • নতুন প্রজাতির সৃষ্টি (Origin of new species) : কোনো প্রজাতির মধ্যে যদি কোনো বিশেষ জীবগোষ্ঠী তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে অনুকূল প্রকরণের অধিকার লাভ করে, সেই প্রজাতির উত্তর পুরুষরাই কেবল টিকে থাকে এবং বাকিরা অবলুপ্ত হয়ে যায় । ফলে একই প্রজাতির দুই পুরুষের মধ্যে বিরাট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় । এই পার্থক্যযুক্ত  উত্তর পুরুষরাই  নতুন প্রজাতি রূপে গণ্য হয় । ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের তথ্যগুলিকে  নিম্নলিখিত ভাবে উপস্থাপিত করা হয়ে থাকে ।

ডারউইনবাদের ত্রুটি সমূহ :

  • ডারউইন যেসব ক্ষুদ্র প্রকরণগুলির উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তা জীবের অভিব্যক্তিতে বিশেষ কোনো ভূমিকা পালন করে না । 
  • প্রকরণ সৃষ্টির কারণ ডারউইন ব্যাখ্যা করেননি । তিনি বলেছেন প্রকরণ সৃষ্টি হলো ‘প্রকৃতির খেলা’ । 
  • তিনি জননকোশ এবং দেহকোশের প্রকরণগুলিকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হননি ।
  • যোগ্যতমের উদবর্তন কিভাবে ঘটে তাও তিনি ব্যাখ্যা করতে পারেননি ।

নয়া-ডারউইনবাদ :

বিজ্ঞানী ভাইসম্যান, গোল্ড স্মিথ এবং হুগো দ্যা ভ্রিস বিজ্ঞানীরা ডারউইনবাদের ত্রুটিগুলিকে বংশগতি,  কোশতত্ত্ব, সুপ্রজননবিদ্যা, আণবিক জীববিদ্যা ইত্যাদির থেকে অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা সংশোধিত করে জৈব অভিব্যক্তি পদ্ধতি সম্পর্কে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তাকে নয়া-ডারউইনবাদ অথবা আধুনিক সংশ্লেষবাদ বলা হয় ।

অভিব্যক্তি মতবাদের সাপেক্ষে প্রমাণসমূহ

  1. জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ 
  2. তুলনামূলক শারীরস্থান জনিত প্রমাণসমূহ 
    1. সমবৃত্তীয় এবং সমসংস্থ অঙ্গজনিত প্রমাণসমূহ
    2. নিষ্ক্রিয় অঙ্গজনিত প্রমাণসমূহ
    3. তুলনামূলক ভ্রূণতত্ত্ব জনিত প্রমাণসমূহ
  3. তুলনামূলক ভ্রূণতত্ত্বজনিত প্রমাণ 

জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ :

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত যে সমস্ত জীব নানা কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তাদের মৃতদেহ বা ধ্বংসাবশেষ পাললিক শিলাস্তরে চাপা পড়ে তার অংশ বিশেষের ছাপ রেখেছে যা তাদের অস্তিত্বকে নির্দেশ করে। একে ফসিল বা  জীবাশ্ম বলে। জীবাশ্ম সম্পর্কিত বিজ্ঞান হলো প্রত্নজীববিদ্যা বা Palaeontology ।

জীবাশ্মের গুরুত্বসমূহ : 

  • সরলতম দিক থেকে নানান বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন জটিল জীবের সৃষ্টি হয়েছে তা এই জীবাশ্ম থেকেই জানা সম্ভব হয়েছে ।
  •  এই জীবাশ্মের মাধ্যমেই পৃথিবীতে বর্তমানে উপস্থিত বিভিন্ন জীবের পূর্বপুরুষ সম্পর্কিত সন্ধান পাওয়া সম্ভব হয়েছে । 
  •  কোন পথে উদ্ভিদ রাজ্যে এবং প্রাণী রাজ্যে বিবর্তন হয়েছে তা হৃতযোজক অথবা মিসিং লিঙ্ক  আবিষ্কারের ফলে জানা সম্ভব হয়েছে । 

ঘোড়ার বিবর্তন : ঘোড়ার বিবর্তন  লক্ষ্য করলে জীবাশ্ম অভিব্যক্তির সবচেয়ে বলিষ্ঠ প্রমাণ পাওয়া যায় ।  ঘোড়ার ধারাবাহিক বিবর্তনের পর্যায়ক্রমটি হল-  ইওহিপ্পাস → মেসোহিপ্পাস → মেরিচিপ্পাস → প্লায়োহিপ্পাস → ইকুয়াস ।

ইওহিপ্পাস : এরাই হল ঘোড়ার আদি পূর্বপুরুষ। ইওসিন যুগে আজ থেকে প্রায় 6 কোটি বছর আগে, উত্তর আমেরিকায় এদের উৎপত্তি ।

দেহ : এদের দেহের পৃষ্ঠদেশ ছিল ধনুকের মতো বাঁকা এবং এদের উচ্চতা ছিল মাত্র 11 ইঞি । এদের শরীরের থেকে মাথা, গলা এবং পা-গুলি ছিল আকারে ছোটো ।

See also  বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা - Bikolpo Chinta o Udyog : Boishistyo o Porjalochona Class 10 WBBSE Madhyamik Notes

পদ : এদের পশ্চাদপদে তিনটি এবং অগ্রপদে চারটি করে আঙুল ছিল । তৃতীয় আঙুলটি ছিল তুলনামূলকভাবে বড়ো ।

দাঁত : এদের  44 টি দাঁত ছিল এবং দাঁতের চূড়াগুলি ছিল অপেক্ষাকৃত ছোটো  প্রকৃতির এবং দাঁতের উপরিতলে গোলাকার টিউবারকিল  উপস্থিত ছিল ।

মেসোহিপ্পাস : ইওহিপ্পাসদের প্রায় দু-কোটি বছর পর অলিগোসিন যুগে মেসোহিপ্পাসদের উৎপত্তি হয় ।

দেহ : এদের গড় উচ্চতা ছিল 24 ইঞ্চি । অনেকটা বর্তমানের ভেড়ার মত এদের দেহের গঠন ছিল । 

পদ : এদের প্রতি পায়ে তিনটি করে আঙুল উপস্থিতি ছিল । ইওহিপ্পাসের মতোই তৃতীয় আঙুলটি ছিল অন্যান্য আঙুলের তুলনায় বড়ো ।

দাঁত : এদের দাঁতে কোনো প্রকার ছেদক না থাকায় অগ্রপেষক এবং কৃন্তক দাঁতের মাঝখানে ডায়াস্টেমা তৈরি হয় । পেষক বা মোলার দাঁতের চূড়া ছোটো প্রকৃতি এবং উভয় চোয়ালের শেষের দুটি অগ্রপেষক পেষক দাঁতের মতো ছিল ।

মেরিচিপ্পাস : ইওহিপ্পাসের প্রায় এককোটি বছর পর মায়োসিন যুগে এদের আবির্ভাব হয়েছিল ।

দেহ : এদের দেহ অনেকটা গাধার মত আকৃতিবিশিষ্ট, উচ্চতা 1 মিটার বা 40 ইঞি ছিল ।

পদ : এদের প্রতি পায়ে তিনটি করে আঙুল উপস্থিত ছিল এবং তাদের মধ্যে মাঝের আঙুলগুলি ছিল  অপেক্ষাকৃত বড়ো প্রকৃতির । পরবর্তীতে এই আঙুলগুলি সংযুক্ত হয়ে ক্ষুর তৈরি করেছে এবং পাশের আঙুলগুলি ধীরে ধীরে লুপ্ত হয় । দ্রুতগতিতে দৌড়ানোর জন্য এদের পাগুলো লম্বা প্রকৃতির হয় ।

দাঁত : এদের দাঁতের চূড়া লম্বা প্রকৃতির  ছিল অর্থাৎ হিপসোডন্ট প্রকৃতির । ডায়াস্টেমা আরো স্পষ্ট হয় এবং দাঁতের উপরিতল ধীরে ধীরে সমান হতে থাকে ।

প্লায়োহিপ্পাস : বিবর্তনের পথ ধরে মেরিচিপ্পাসের পরে প্লিরোসিন যুগে প্লায়োহিপ্পাসের আবির্ভাব হয় ।

দেহ : এদের দেহ ছিল মেরিচিপ্পাস অপেক্ষা বলশালী এবং উচ্চতা ছিল প্রায় 50 ইঞ্চি ।

পদ : অগ্রপদ এবং পশ্চাদপদে ক্ষুর সৃষ্টি হয় যা উভয় পায়ের তৃতীয় আঙুল থেকে উৎপত্তি হয় । অন্য পায়ের দ্বিতীয় ও চতুর্থ আঙুল ছোটো হয়ে স্প্লিন্ট হাড় তৈরি করে । 

দাঁত : এদের দাঁতের চূড়াগুলি ছিল অনেকটা আধুনিক ঘোড়ার মতো, মোলার দাঁতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।  এদের দন্তবিন্যাস ঘাস চেবানোর জন্য সহায়ক ছিল ।

ইকুয়াস : ইকুয়াস হলো আধুনিক ঘোড়া । বিজ্ঞানীদের মতানুযায়ী প্লায়োহিপ্পাস থেকে প্লিস্টোসিন যুগের মধ্যবর্তী সময়ে এর সৃষ্টি হয় ।

দেহ : এরা লম্বা গলা যুক্ত বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী এবং এদের গড় উচ্চতা 60 ইঞ্চি ।

পদ : এদের প্রত্যেকটি পায়ে ক্ষুর থাকে, স্প্লিন্ট হাড় এদের দ্বিতীয় ও চতুর্থ আঙুল দ্বারা তৈরি হয় ।

দাঁত : এদের মোলার দাঁতের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে, দাঁতের চূড়া লম্বা প্রকৃতির হয় এবং এনামেল দেখা যায় । এদের দাঁত ঘাস চেবানোর পক্ষে খুবই উপযোগী ।

তুলনামূলক শারীরস্থানজনিত প্রমাণ :

বিভিন্ন জীবের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্যের  তুলনামূলক আলোচনাকে অঙ্গসংস্থান বলা হয় অন্যদিকে বিভিন্ন জীবের ভেতরে অবস্থিত অঙ্গ সমূহের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্যের  তুলনামূলক আলোচনাকে তুলনামূলক শারীরস্থান বলা হয় ।

  1. সমসত্ব এবং সমবৃত্তীয় অঙ্গ সমূহ :
  • সমসংস্থ অঙ্গ : জীবদেহের যে সকল অঙ্গের উৎপত্তিগত এবং গঠনগত সাদৃশ্য বর্তমান কিন্তু কার্যগত বৈসাদৃশ্য রয়েছে তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বলা হয় । 
  • প্রাণীর সমসংস্থ অঙ্গ : বাদুড়ের ডানা, শীল মাছের প্যাডেল বা অগ্রপদ, পাখির ডানা,  ঘোড়ার অগ্রপদ,  তিমির ফ্লিপার এবং মানুষের  হাত প্রভৃতি ।
  • উদ্ভিদের সমসংস্থ অঙ্গ : ফণিমনসার পর্ণকাণ্ড, ঝুমকোলতার আকর্ষ, আদার গ্রন্থিকাণ্ড ইত্যাদি । 
  • বিভিন্ন প্রাণীদের সমসংস্থ অঙ্গের গঠনগত এবং উৎপত্তিগত সাদৃশ্যসমূহ : রেডিয়াস আলনা, হিউমেরাস, মেটাকারপাল, কারপাল এবং ফ্যালানজেস, অস্থি দ্বারা নির্মিত অঙ্গগুলির বাহ্যিক গঠন আলাদা হলেও এদের অস্থিনির্মিত অভ্যন্তরীণ কাঠামোর মৌলিক গঠন প্রায় এক । 
  • বিভিন্ন প্রাণীদের সমসংস্থ অঙ্গের বৈসাদৃশ্যসমূহ : পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার কারণে অঙ্গগুলির বাহ্যিক গঠনে পার্থক্য দেখা যায় । যেমন- ওড়ার জন্য পাখিদের অগ্রপদ ডানায় রূপান্তরিত হয়েছে, তেমনি দ্দৌড়ানোর জন্য ঘোড়ার পায়ের আঙ্গুলের সংখ্যা কমে গিয়ে খুরে পরিণত হয়েছে, একইভাবে জলে সাঁতার কাটার জন্য  তিমির অগ্রপদগুলি ফ্লিপারে রূপান্তরিত হয়েছে, বিভিন্ন সূক্ষ্ম কাজ করার জন্য এবং বিভিন্ন বস্তু ধরার জন্য মানুষের হাতের বুড়ো আঙ্গুলটি অন্যান্য আঙুলগুলি থেকে দূরে সরেছে অর্থাৎ একই পূর্বপুরুষ থেকে বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রাণীর উৎপত্তি হয়েছে বলেই সমসংস্থ অঙ্গের মিল পাওয়া যায় ।
  1. সমবৃত্তীয় অঙ্গ : জীবদেহের যে সকল অঙ্গের উৎপত্তিগত এবং গঠনগত বৈসাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু কার্যগত সাদৃশ্য রয়েছে তাদের তাদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলা হয় ।
  • প্রাণীর সমবৃত্তীয় অঙ্গসমূহ : বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম, পতঙ্গের ডানা এবং পাখির ডানা । 
  • কার্যগত সাদৃশ্য বা মিলসমূহ : বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম, পতঙ্গের এবং পাখির ডানা আকাশে উড়তে সাহায্য করে । 
  • উৎপত্তি এবং গঠনগত বৈসাদৃশ্য : বাদুড়ের অগ্রপদ এবং পশ্চাদপদের মধ্যবর্তী স্থানে উপস্থিত চামড়ার প্রসারিত উপবৃদ্ধি হলো প্যাটাজিয়াম, পতঙ্গের বহিঃকঙ্কালের রূপান্তরিত রূপ হলো ডানা এবং ওড়ার জন্য পাখিদের অগ্রপদ ডানায় রূপান্তরিত হয়েছে ।
  • উদ্ভিদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ : ঝুমকোলতার আকর্ষ এবং মটর গাছের আকর্ষ ।
  • কার্যগত সাদৃশ্য : উভয়ই দুর্বল কাণ্ডযুক্ত উদ্ভিদ হওয়ায় উভয়ের আকর্ষগুলি কোনো না কোনো অবলম্বনকে জড়িয়ে ধরে ওই উদ্ভিদকে ওপরের দিকে উঠতে সাহায্য করে ।
  • উৎপত্তি ও গঠনগত পার্থক্য : মটর গাছের আকর্ষ যৌগপত্রের পত্রকের রূপান্তর মাত্র এবং ঝুমকোলতার আকর্ষ হল তার শাখার রূপান্তর মাত্র । 

অভিসারী বিবর্তন : সমবৃত্তীয় অঙ্গ বিশিষ্ট জীবগুলির উৎপত্তি ভিন্ন প্রকৃতির হলেও একেই পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয় তাকে অভিসারী বিবর্তন বলা হয় । বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম, পতঙ্গ এবং পাখির ডানা প্রাণীকে উড়তে সাহায্য প্রদান করে থাকে । এদের উৎপত্তি আলাদা আলাদাভাবে ঘটলেও এদের কাজ একইধরণের অর্থাৎ খেচর অভিযোজনের জন্য প্রত্যেকের ডানার উৎপত্তি ঘটেছে । 

অপসারী বিবর্তন : সমসংস্থ অঙ্গ বিশিষ্ট জীবগুলি একই উদবংশীয় জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করার পর,  ভিন্ন পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হওয়ার কারণে বিভিন্ন জীবের মধ্যে যে ভিন্ন ভিন্ন বিবর্তন  লক্ষ্য করা যায়, তাকে অপসারী বিবর্তন বলা হয় ।

  1. নিষ্ক্রিয় বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গ : 

জীবদেহের যেসকল অঙ্গবিশেষ তাদের পূর্বপুরুষের দেহে সক্রিয় অবস্থায় থাকলেও বর্তমানে খাদ্যাভাসের পরিবর্তন, পরিবেশগত অভিযোজনের প্রয়োজনে ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কাজের সুবিধার নিরিখে অঙ্গগুলির ব্যবহার ক্রমশ কমতে কমতে তাদের কার্যকারিতা লোপ পেয়েছে। সেই সকল অঙ্গকে নিষ্ক্রিয় বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গ বলা হয় । 

  • মানুষের নিষ্ক্রিয় অঙ্গ সমূহ :
  • অ্যাপেন্ডিক্স :  বিভিন্ন তৃণভোজী প্রাণী যেমন ঘোড়া, গিনিপিগ ইত্যাদিদের অ্যাপেন্ডিক্স একটি সক্রিয় অংশ হিসেবে অবস্থান করলেও মানবদেহে সিরাম এবং সিরাম-সংলগ্ন অ্যাপেন্ডিক্স হল লুপ্তপ্রায় অঙ্গ বিশেষ ।
  • কক্সিস : এপ, বাঁদর এই জাতীয় প্রাণীদের দেহে কক্সিস সক্রিয় অঙ্গ  কিন্তু মানব মানবদেহের মেরুদন্ডের শেষে অবস্থিত চারটি কক্সিজিয়াল কশেরুকা মিলিত হবার ফলে, যে কক্সিস অস্থিটি গঠিত হয়েছে, সেটি হল নিষ্ক্রিয় অঙ্গ ।
  • প্লিকা সেমিলুনারিস : মানুষের চোখের কোনায় অবস্থিত লাল রঙের এক ক্ষুদ্র মাংসল অংশবিশেষ, যা একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কিন্তু মাছ এবং ব্যাঙ জাতীয় প্রাণীদের দেহে সক্রিয় নিকটিটেটিং পর্দা হিসেবে অবস্থিত ।
  • বহিঃকর্ণের পেশি : ছাগল অথবা গরুর বহিঃকর্ণ অথবা কর্ণছত্রের পেশি সক্রিয় কিন্তু মানুষের বহিঃকর্ণের পেশী নিষ্ক্রিয় প্রকৃতির হওয়ায়, মানুষ তা নাড়াতে পারে না ।
  • মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর নিষ্ক্রিয় অঙ্গসমূহ : এমু পাখি, উটপাখির ডানার উড্ডয়ন পেশী হল একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ অপরদিকে এই নিষ্ক্রিয় অঙ্গটি বিভিন্ন উড়ন্ত পাখির সক্রিয় অঙ্গ ।

সাপের পা নিষ্ক্রিয় অঙ্গ,  কিন্তু সাপের পূর্বপুরুষদের এবং গোসাপের দেহে বর্তমানেও চারটি পা লক্ষ্য করা যায় । 

  • উদ্ভিদের নিষ্ক্রিয় অঙ্গসমূহ : হলুদ, আদা এবং আলু জাতীয় উদ্ভিদের ভূনিম্নস্থ কান্ডের শঙ্কপত্র হলো নিষ্ক্রিয় অঙ্গ অপরদিকে বিভিন্ন সপুষ্পক উদ্ভিদের পাতা সক্রিয় অঙ্গ ।
  1. মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ডের গঠন :
    মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণির প্রাণীর কোনো একটি বিশেষ অঙ্গের গঠনকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে  লক্ষ্য করা যায় যে, বিভিন্ন শ্রেণিতে ওই অঙ্গটির গঠনগত জটিলতা বিভিন্ন রকমের হলেও তার মূল কাঠামোটি একই প্রকারের ।
  2. মূলত দুটি প্রকোষ্ঠ দ্বারা প্রত্যেক মেরুদণ্ডী শ্রেণির প্রাণীর হৃৎপিণ্ড গঠিত হয়ে থাকে, যথা- অলিন্দ বা রক্তগ্রহণকারী প্রকোষ্ঠ এবং নিলয় বা রক্ত প্রেরণকারী প্রকোষ্ঠ । সারাদেহের রক্ত অলিন্দে সংগৃহীত হয় অপরদিকে নিলয় থেকে রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ।
  • মাছ : দুটি প্রকোষ্ঠযুক্ত মাছের হূৎপিণ্ডে একটি অলিন্দ এবং একটি নিলয় থাকে । গঠনগতভাবে মাছের হৃৎপিণ্ড খুবই সরল প্রকৃতির হয় । মাছের হৃৎপিণ্ডের মধ্য দিয়ে কেবল অধিক কার্বন ডাই অক্সাইডযুক্ত রক্ত সংবাহিত হয়ে থাকে  যা জলে বসবাসের পক্ষে সাহায্যকারী এবং উপযুক্ত । 
  • উভচর : উভচরদের হৃৎপিণ্ডে তিনটি প্রকোষ্ঠ উপস্থিত থাকে, ডান অলিন্দ, বাম অলিন্দ এবং একটি নিলয় । মাছ অপেক্ষা উভচরদের হৃৎপিণ্ড কিছুটা উন্নতমানের। কিন্তু এদের নিলয়ে অধিক  কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্তের সাথে বিশুদ্ধ রক্ত অর্থাৎ অক্সিজেন যুক্ত রক্তের মিশ্রণ ঘটে । 
  • সরীসৃপ : উভচরের তুলনায় সরীসৃপের হৃৎপিণ্ডটি কিছুটা উন্নতমানের হয় । সরীসৃপদের হৃৎপিণ্ডটি অসম্পূর্ণভাবে চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত হয়। ডান অলিন্দ, বাম অলিন্দ এবং নিলয়টি অসম্পূর্ণভাবে বিভক্ত অবস্থায় থাকে ।
    নিলয়ে অসম্পূর্ণ প্রাচীর উপস্থিত থাকায় বিশুদ্ধ এবং দূষিত রক্তের মিশ্রণ আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে থাকে। সরীসৃপদের মধ্যে কেবলমাত্র কুমীরের হৃৎপিণ্ডটি চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত ।
  • পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী : এদের হৃৎপিণ্ডটি সম্পূর্ণরূপে চারটি প্রকোেষ্ঠযুক্ত হয়, যথা—দুটি অলিন্দ এবং দুটি নিলয়। নিলয়ে বিশুদ্ধ রক্ত এবং দূষিত রক্তের মধ্যে কোনরূপ মিশ্রণ ঘটে না । 

বিভিন্ন জীবের বিপাকক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে প্রত্যেকটি অঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের সরবরাহতার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলত হৃৎপিণ্ডের গঠনগত জটিলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে । যেমন – মাছ জলে বসবাস করে অর্থাৎ বিপাকক্রিয়ার হার সর্বনিম্ন, তাই এদের হৃৎপিণ্ড খুবই সরল প্রকৃতির ।

উভচর ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর বিপাকক্রিয়া তুলনামূলকভাবে মাছেদের থেকে বেশি হওয়ায়, এদের হৃৎপিণ্ডটি গঠনগতভাবে বেশি জটিল প্রকৃতির এবং হৃদপিন্ডের অলিন্দে বিশুদ্ধ এবং দূষিত রক্ত পৃথক পৃথক থাকে । স্তন্যপায়ী এবং পাখিদের বিপাকের হার সর্ব্বোচ্চ হওয়ায় এদের হৃৎপিণ্ডও গঠনগতভাবে জটিল এবং সকল অঙ্গে সর্বাধিক অক্সিজেনযুক্ত রক্ত দ্রুত সরবরাহের জন্য অলিন্দ ও নিলয়ে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত এবং কার্বন ডাই অক্সাইডযুক্ত রক্ত পৃথকভাবে থাকে । 

তুলনামূলক ভ্রূণতত্ত্বজনিত প্রমাণ :

যৌন জননের দ্বারা সৃষ্ট জাইগোেট এবং তা থেকে সৃষ্ট ভ্রূণের পরিস্ফুরণ এবং পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় পরিণত হওয়ার ঘটনাবলিকে ভ্রূণবিদ্যা বা ভ্রূণতত্ত্ব বলা হয় । ভ্রূণের পরিস্ফুরণের ধারাবাহিক এবং পর্যায়ক্রমিক ঘটনাসমূহ হল- ব্যক্তিজনি, জাতিজনি, ইত্যাদি ।  

বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর ভ্রূণের উৎপত্তি এবং গঠনগত কাঠামোর তুলনামূলক আলোচনা করলে লক্ষ্য করা যায় যে,  তাদের মধ্যে বহু সাদৃশ্য বর্তমান । বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর ভ্রূণের প্রথম অবস্থায় এত সাদৃশ্য উপস্থিত থাকে যে, তা থেকে এই সারাংশে উপনীত হওয়া যায় যে এরা সকলেই একই উদ্বংশীয় জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে । যেমন –

  • জার্মস্তর : বহুকোশী প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রথমে জাইগোট থেকে মরুলা, তা থেকে ব্রাস্টুলা ও পরবর্তী কালে তা থেকে গ্যাস্টুলার উৎপত্তি হয় । নিডারিয়া এবং টিনেফোরা পর্বের প্রাণীদের গ্যাস্টুলায় এক্টোডার্ম ও এন্ডোডার্ম নামক দুটি স্তর এবং প্ল্যাটিহেলমিনথিস থেকে কর্ডাটা পর্যন্ত সকলপ্রকার প্রাণীর গ্যাস্টুলায় এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম নামক তিনটি স্তর থাকে। এগুলি হল প্রাথমিক জার্মস্তর । 

জার্মস্তর থেকেই পরবর্তীতে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের উৎপত্তি ঘটে। প্রথমিক অবস্থায় ভ্রূণের পরিস্ফুটনের এইসকল সাদৃশ্য দ্বারা বোঝা যায় যে এরা একই উদবংশীয় জীব থেকে উৎপন্ন হয়েছে । ভ্রূণের প্রথম অবস্থায় বিভিন্ন সাধারণ লক্ষণগুলি লক্ষ্য করা যায় এবং বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্যান্য লক্ষণগুলি স্পষ্ট হতে থাকে এবং সর্বশেষে ওই প্রজাতির বিশেষ লক্ষণগুলির প্রকাশ ঘটে। ফলে ভ্রূণগুলিকে আলাদা আলাদা করে শনাক্ত করা সম্ভবপর হয় । 

উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, ভ্রূণের পরিস্ফুরণের সময় পাখি এবং স্তন্যপায়ী জাতীয় প্রাণীদের ভ্রূণে  মাছ, উভচর ও সরীসৃপেরদের বৈশিষ্ট্য  লক্ষ্য করা যায়।  যার দ্বারা প্রমাণিত হয়, সকল মেরুদন্ডী  প্রাণীরা মাছ জাতীয় পূর্বপুরুষ এবং সকল প্রকার পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর সরীসৃপ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে । 

  • গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ এবং ফুলকা থলি : নোটোকর্ডের উপস্থিতি; গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ এবং অন্তস্থ যুগ্ম ফুলকা থলি হল সকলপ্রকার কর্ডাটা প্রাণীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আদি কর্ডাটাতে এই সকল গঠনগুলি পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় লক্ষ্য করা যায় । মাছের পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ ফুলকায় রূপান্তরিত হয়ে শ্বাসকার্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করে ।
    আবার উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শ্বাসকার্যে  ফুসফুস সাহায্য করে তবুও তাদের ভ্রণে গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ এবং ফুলকা থলির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যা পরবর্তীকালে অদৃশ্য বা  রূপান্তরিত হয় ।
    মানুষের ভ্রূণের পরিস্ফূরণের সময়ও মাছ, উভচর, সরীসৃপ এবং পাখির বহু বৈশিষ্ট্যসমূহ অতিঅল্প সময়ের জন্য হলেও লক্ষ্য করা যায়। সুতারাং উচ্চশ্রেণির মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রূণের পরিস্ফূরণের সময় নিম্নশ্রেণীর পূর্ণাঙ্গ মেরুদণ্ডী প্রাণীর বহু বৈশিষ্ট্যের পুনরাবির্ভাব ঘটে । 
  • লেজের মায়োটোম পেশির সদৃশ : মাছের লেজে মায়োটোম পেশি উপস্থিত থাকে আবার ব্যাঙের লার্ভা হলো ব্যাঙাচির লেজ । মানুষের প্রাথমিক ভ্রূণে, লেজের মতো অংশ উপস্থিত থাকে যা খণ্ডকের ন্যায় সজ্জিত মায়োটোম পেশিখণ্ড । পরবর্তীকালে প্রাণীগুলি পরিণত হলে ওই লেজ বা লেজের মতো অংশের বিলুপ্তি ঘটে । 

বিভিন্ন মেরুদণ্ডী শ্রেণির ভ্রুণের এইসকল সাদৃশ্য লক্ষ্য  করার পর বিজ্ঞানী ভন বেয়ার 1828 সালে কতকগুলি সূত্র প্রণয়ন যা 1866 সালে আর্নেস্ট হেকেল নামক এক জার্মান বিজ্ঞানী, রিক্যাপিচুলেশন থিয়োরি বা বায়োজেনেটিক সূত্র রূপে প্রবর্তন করেন। সূত্রটি হল : “ব্যক্তিজনি জাতিজনির পুনরাবৃত্তি ঘটায়” ।

অর্থাৎ কোনো প্রাণীর ভ্রূণের পরিস্ফুরণের সময়কালে তার পূর্বপুরুষের ভ্রূণের পরিস্ফুরণের ঘটনাবলীর ধাপে ধাপে পুনরাবৃত্তি ঘটে । অবশ্য বিজ্ঞানী হেকেলের মতবাদটি পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয় ।  কারণ কোনো প্রাণীর ভ্রূণের বৃদ্ধির সময় নিম্নশ্রেণির পূর্ণবয়স্ক প্রাণীর সাথে কোনরূপ মিল থাকে না,  বরং তাদের ভ্রূণের সাথে মিল লক্ষ্য করা যায় ।

বেঁচে থাকার কৌশল – অভিযোজন :

ল্যামার্কের তত্ত্ব থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের সাথে সাথে জীবের ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রূপান্তর বা পরিবর্তন ঘটে থাকে অর্থাৎ পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জীব প্রতিনিয়ত তার পরিবর্তন ঘটাতে থাকে । জীবের এই জাতীয় পরিবর্তনকেই আমরা অভিযোজন বলে অভিহিত করি ।

আচরণ : পরিবেশের প্রভাবে অথবা অন্য কোনো জীবের অনুকরণ করে যখন কোনো একটি জীব তার স্নায়ুতন্ত্রের, নিয়ন্ত্রণে যে শিখন নির্ভর কার্য সম্পাদন করে থাকে, তাকেই ওই জীবটির আচরণ বলা হয় । পরিবেশগত প্রভাবকগুলি  বিভিন্ন রকমের হতে পারে যেমনঃ  চাপ, তাপ, গন্ধ, শব্দ, ইত্যাদি ।

অভিযোজন :  কোন একটি সুনির্দিষ্ট পরিবেশে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা এবং জনন কার্য সম্পন্ন করার জন্য ওই পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কোনো জীবের অঙ্গসংস্থানগত,  শারীরবৃত্তীয়, গঠনগত আচরণে যেসকল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তাকেই অভিযোজন বলা হয় ।

অভিযোজনের উদাহরণসমূহ :

  • অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন : কোনো প্রাণী তার নিজ দেহের যেসকল বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গের  পরিবর্তন ঘটিয়ে, নিজেকে ওই পরিবেশের সাথে অভিযোজিত করে, তাকেই অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন  বলা হয় ।
  • ক্যাকটাসের পাতা : ফণীমনসা, বাজবরণ, তেসিরা মনসা ইত্যাদি ক্যাকটাস জাতীয় গাছ । 
    • ক্যাকটাসের পাতার বৈশিষ্ট্য : ক্যাকটাস জাতীয় গাছের পাতা মোমের আস্তরণ দ্বারা আবৃত অবস্থায় থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এদের পাতাগুলি কাঁটায় রূপান্তরিত হয় ।
  • অভিযোজনগত গুরুত্বসমূহ : 
  • আত্মরক্ষা : ক্যাকটাস জাতীয় গাছের কাঁটাগুলি তাদের আত্মরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • বাষ্প মোচন রোধ : এই জাতীয় উদ্ভিদ মূলত মরুভূমি অঞ্চলে জন্মায়।  তাই বাষ্পমোচনের  মাধ্যমে জলের অপচয় রোধ করার জন্য কাঁটায় রূপান্তরিত হয় ।

রুই মাছের পটকা : জলে বসবাস করার জন্য রুই মাছের পটকা হল তার একটি অভিযোজিত বৈশিষ্ট্য । 

  • রুই মাছের পটকার বৈশিষ্ট্য : রুই মাছের উদর গহ্বরে দুই প্রকোষ্ঠ যুক্ত পটকা অবস্থিত । অগ্র প্রকোষ্ঠের রেড গ্রন্থি এবং পশ্চাৎপ্রকোষ্ঠের রেটিয়া মিরাবিলিয়া নামক রক্তজালক উপস্থিত থাকে ।
  • রুই মাছের পটকার অভিযোজনগত গুরুত্ব : 
    • ভরকেন্দ্র : মাছের পটকার এক প্রকোষ্ঠ থেকে গ্যাস অন্যপ্রকোষ্ঠে স্থানান্তরিত করে দেহের ভরকেন্দ্র  বজায় রাখে, যা মাছের গমনে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে ।
    • শ্বসন : রুই মাছের পটকার অগ্রপ্রকোষ্ঠে অক্সিজেন গ্যাস  উপস্থিত থাকায় তা মাছের শ্বসনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।

পায়রার বায়ুথলি : বায়বীয় পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য পায়রার একটি অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য হলো তার বায়ুথলি ।

  • বায়ুথলির বৈশিষ্ট্যসমূহ : 
    • পায়রার দেহে নয়টি প্রধান বায়ুথলি এবং চারটি অতিরিক্ত বায়ুথলি উপস্থিত থাকে ।
    • এগুলি পাতলা প্রাকার যুক্ত হয়ে থাকে এবং এতে কোনরূপ  রক্তবাহ উপস্থিত থাকে না । 
  • অভিযোগগত  গুরুত্ব সমূহ : 
  • এই বায়ুথলিগুলি হাপরের মতো কাজ করে, তাই বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে এবং ফুসফুস থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরোতে পারে । এই বায়ুথলির বায়ু পায়রাকে দ্বিশ্বসনে সহায়তা প্রদান করে ।
  • এই বায়ুথলিগুলি অনেকটা বেলুনের মত কাজ করে। বায়ুথলি বায়ুপূর্ণ হলে পায়রার দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমে যায়,  ফলে বায়ুতে পায়রা সহজে ভাসতে পারে ।
  • ওড়ার সময় যাতে পায়রার দেহের ভারকেন্দ্র ঠিকভাবে স্থাপিত থাকে তাই বায়ুথলিগুলি পায়রার দেহের দুই পাশে সেই ভাবেই সাজানো থাকে । 
  • শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনসমূহ : পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন জীব যে সকল শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপের পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে,  যাতে তার অস্তিত্ব বংশানুক্রমিক টিকে থাকে,  তাকেই শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন বলা হয় ।
  • সুন্দরী গাছের লবণ সহ্য করার জন্য শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন সমূহ :
  • জলের দ্বারা শোষিত লবণ পাতার লবণগ্রন্থি এবং মূলের দ্বারা গাছের দেহ থেকে বার করে দিয়ে লবণের বিষক্রিয়া থেকে উদ্ভিদকে রক্ষা করে ।
  • কচিপাতার থেকে পরিণত পাতাতে অধিক লবণ জমা থাকে এবং পাতাটি ঝরে পড়ার আগে পর্যন্ত ওই পাতায় লবণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। অর্থাৎ সুন্দরী গাছের পাতা ঝরে যাওয়ার মাধ্যমেও দেহ থেকে লবণ বার করে ।
  • সুন্দরী গাছের কোশগুলির ভ্যাকুওল কোশের প্রায় 90 শতাংশ জায়গা দখল করে অবস্থান করে । ভ্যাকুওলের কোশরসে এই উদ্ভিদরা লবণ জমা রেখে কোশের অন্যান্য অংশকে বিষক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে ।
  • মরু অভিযোজনের নিরিখে উঠের অতিরিক্ত জল সহনের ক্ষমতা এবং তাদের RBC-র আকৃতি :
  • উটের পিঠে যে কুঁজ আছে তাতে চর্বি জমা থাকে । এই চর্বি জারিত হলে বিপাকীয় জল উৎপন্ন হয় যা তার শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে । এই জারণ ক্রিয়ায় ফলে নির্গত শক্তি উটের নানাবিধ শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া সম্পন্ন করে । একটি উট প্রায় 7 দিন জল না খেয়ে থাকতে পারে । 
  • উটের ত্বক পুরু জাতীয় হওয়ায় এবং ঘর্মগ্রন্থির সংখ্যা কম থাকায় এদের ঘাম নিঃসৃত হয় না যার ফলে দেহে জলের সংরক্ষণ ঘটে । 
  • নিশ্বাস বায়ুর মধ্য দিয়ে নির্গত জলীয় বাষ্প উট তার বহিঃনাসারন্ধ্রের মাধ্যমে পুনরায় শুষে নেয়, এতে এদের দেহের জলের অভাব পূরণ হয় ।
  • অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো উটের দেহতাপমাত্রা নির্দিষ্ট থাকে না । উট তার দেহতাপমাত্রা 34° সেলসিয়াস থেকে 41.7° সেলসিয়াসের মধ্যে পরিবর্তন করতে সক্ষম ।
  • উটের নেফ্রনের দীর্ঘ হেনলি লুপে প্রচুর পরিমাণে জল শোষিত হওয়ায় এদের দেহে প্রচুর পরিমাণে জল সংরক্ষিত হয় এবং তা ঘন সিরাপের মতো এবং কম পরিমাণে মূত্র নির্গত হয় ।
  • উটের মল অত্যন্ত শক্ত প্রকৃতির হয় এবং এতে জলীয় অংশ প্রায় অনুপস্থিত । 
  • এদের রক্তে অ্যালবুমিন থাকার কারণে এদের রক্তে জলের পরিমাণ কখনো কমে না ।
See also  Do as Directed Class 10 WBBSE English Notes Suggestions Madhyamik

উটের RBC : উটের RBC নিউক্লিয়াসবিহীন হয় এবং এই RBC-র মধ্যে জল প্রবেশ করলেও RBC-র হিমোলাইসিস ঘটে না । কারণ উটের RBC প্রায় 240 শতাংশ প্রসারিত হতে পারে। উটের দেহে জল প্রয়োজন হলে এই RBC মধ্যস্থ জল তা পূরণ করে ।

  • আচরণগত অভিযোজন : একসাথে বসবাস করার ফলে একজন অপর জনের কাছ থেকে সহজেই আচরণ শিখতে পারে । অনেক প্রাণী আছে যারা মানুষের সঙ্গে  বসবাস করতে মানুষের  বহু আচরণকে তারা নিজদের করে নিয়েছে । যেমন-
  • শিম্পাঞ্জীদের সমস্যা এবং সমাধান : বন্য শিম্পাঞ্জীরাও বহু ক্ষেত্রেই অবিকল মানুষের মতো আচরণ করে । মানুষের আচরণগুলি কেবলমাত্র দেখার মাধ্যমে তারা খুব অল্পসময়ের মধ্যে শিখে নিয়েছে এবং নিজেদের বিভিন্ন সমস্যাগুলিকে তারা খুব সহজেই সমাধান করতে পারে । উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় –
  • মানুষেরা শাবল জাতীয় কোন শক্ত বস্তুর দ্বারা মাটি খুঁড়ে থাকে । অন্যরূপে শিম্পাঞ্জিরা উইপোকার ঢিবিতে কাঠি ঢুকিয়ে  উইপোকা বার করে সেগুলোকে ভক্ষণ করে ।
  • মানুষেরা যেমন হাতুড়ির সাহায্যে কোনো কিছু ভাঙতে পারে তেমনই শিম্পাঞ্জি পাথরের সাহায্যে  বাদামের খোলা ছাড়িয়ে বাদাম খেয়ে থাকে ।
  • শিম্পাঞ্জিরা গাছের ডালে পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করে, তাতে নিদ্রা গ্রহণ করে ।
  • মৌমাছিদের  বার্তা প্রদান : মৌমাছিরা হল একটি সমাজবদ্ধ জীব। স্কাউট কর্মী মৌমাছিরা খাদ্যের সন্ধান করে এবং ফোরেজার কর্মী মৌমাছিরা মূলত খাদ্যসংগ্রহ করে। খাদ্যের সন্ধান পেলে স্কাউট মৌমাছিরা মৌচাকের সামনে ভিন্ন ভিন্ন নাচের ভঙ্গির মাধ্যমে মৌচাকের অন্য কর্মী মৌমাছিদের কাছে সংকেত প্রেরণ করে ।

এদের নাচের ভঙ্গি দুই প্রকারের হয়ে থাকে, যথা- ওয়াগটেল নৃত্য এবং চক্রাকার নৃত্য । মৌমাছিরা মৌচাকের সামনে কোন্ ভঙ্গিতে, কতক্ষণ সময় ধরে নাচছে তার ওপর নির্ভর করে অন্যান্য কর্মী মৌমাছিরা বুঝতে সক্ষম হয় যে চাকের সাপেক্ষে খাদ্যের অবস্থান কোথায় ।

শ্রমিক মৌমাছির এই নৃত্যের ভাষা বিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিশ দ্বারা আবিষ্কৃত হয় যার জন্য তিনি নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিতও হন ।

SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of জীবনের প্রবাহমানতা (Continuity of Life)

1 MARKS QUESTIONS of জীবনের প্রবাহমানতা (Continuity of Life)

  • পৃথিবীর আনুমানিক বয়স কত বছর?
    উত্তর- পৃথিবীর আনুমানিক বয়স হল প্রায় 450 কোটি বছর।
  • পৃথিবীর আবির্ভাব  কোন মহাযুগে হয়?
    উত্তর- সিনজোয়িক মহাযোগী পৃথিবীর আবির্ভাব ঘটেছিল।
  • পৃথিবী যখন সৃষ্টি হয় তখন পৃথিবীতে কোন গ্যাসটি উপস্থিত ছিল না?

উত্তর- পৃথিবীর যখন উৎপত্তি হয় তখন পৃথিবীতে অক্সিজেনের উপস্থিতি ছিল না।

  • মাইক্রোস্ফিয়ার কিসের একক?

উত্তর- মাইক্রোস্ফিয়ার হল অর্ধভেদ্য পর্দাবৃত প্রোটিনের  একক।

  • মিলার এবং উরের পরীক্ষায় ‘U’ আকৃতি বিশিষ্ট নলে  যে দুটি জৈব অ্যাসিড সংশ্লেষিত হয়েছিল তাদের নাম উল্লেখ করো।

উত্তর- মিলার এবং উরের পরীক্ষায় ‘U’ আকৃতি বিশিষ্ট নলে গ্লাইসিন এবং  অ্যালানিন নামক দুটি  জৈব অ্যাসিড সংশ্লেষিত হয়েছিল।

  • পৃথিবীর সর্ব প্রাচীন মাছের নাম কি?

উত্তর- সিলাকান্থা হল পৃথিবীর সর্ব প্রাচীন মাছ।

  • প্রাকৃতিক  বিপর্যয়বাদের  তত্ত্ব কার দ্বারা প্রবর্তিত  হয়েছিল?

উত্তর- প্রাকৃতিক  বিপর্যয়বাদের  তত্ত্বের প্রবর্তক হলেন বিজ্ঞানী কুভিয়ার।

  • ‘দ্য অরিজিন অফ লাইফ’ নামক বইটির লেখক কে?

উত্তর- ‘দ্য অরিজিন অফ লাইফ’  নামক বইটির লেখক হলেন বিজ্ঞানী ওপারিন।

  • বিবর্তনবাদের জনক কাকে বলা হয়?

উত্তর- চার্লস ডারউইন কে বিবর্তনবাদের জনক বলা হয়ে থাকে।

  • ডারউইনের লেখা বইটির নাম কি?

উত্তর- চার্লস ডারউইনের দ্বারা লিখিত বই টি হল ‘ অন দা অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মিনস অফ ন্যাচারাল সিলেকশন।’

  • চার্লস ডারউইনের মতবাদ অনুসারে জিরাফের গলা লম্বা হবার মুখ্য কারণটি কি?

উত্তর- চার্লস ডারউইনের মতবাদ অনুসারে জিরাফের গলা লম্বা হবার মুখ্য কারণটি হল প্রাকৃতিক নির্বাচন।

  • ল্যামার্কের মতবাদ অনুসারে প্রকরণ সৃষ্টির পেছনে মুখ্য কারণটি কি?

উঃ- ল্যামার্কের মতবাদ অনুসারে অঙ্গের ব্যবহার এবং অপব্যবহার হল প্রকরণ সৃষ্টির পেছনে মুখ্য কারণ।

  • ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন’ এই ধারণার প্রবক্তা কে?

উত্তর- বিজ্ঞানী ল্যামার্ক হলেন অর্জিত  বৈশিষ্ট্যের  বংশানুসরন  তত্ত্বের প্রবক্তা।

  • জার্মপ্লাজমের তত্ত্ব  বিজ্ঞানী ওয়াইসম্যান কত সালে প্রকাশ করেন?

উত্তর- 1892 সালে বিজ্ঞানী ওয়াইসম্যান জার্মপ্লাজমের তত্ত্বটি  প্রকাশ করেন।

  • জিরাফের গলা লম্বা হওয়ার পিছনে  বিজ্ঞানী ল্যামার্ক কি যুক্তি দিয়েছিলেন?

উত্তর- ল্যামার্কের মতে স্বজ্ঞান  প্রচেষ্টা এবং অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন হলো জিরাফের লম্বা গলার মুখ্য কারণ।

  • নয়া ল্যামার্কবাদ এর  প্রবক্তা কারা?

উত্তর- বিজ্ঞানী প্যাকার্ড,  স্পেন্সার এবং ওয়াডিংটন  হলেন  ল্যামার্কবাদের প্রবক্তা।

  • ‘পক্ষী শরীর শিল্পের রূপান্তর’- এই উক্তিটির প্রবক্তা কে?

উত্তর- বিজ্ঞানী টি এইচ হ্যাক্সলে হলেন উপরোক্ত উক্তিটির প্রবক্তা।

  • যে বৈশিষ্ট্যগুলি মাধ্যমে  একটি জীব অন্য কোন জীব থেকে

আলাদাভাবে বিবেচিত হয়,  সেই সকল বৈশিষ্ট্য গুলিকে কি বলা হয়?
উত্তর- ভেদ বা প্রকরণ হল সেই সকল বৈশিষ্ট্যগুলি যার মাধ্যমে  একটি জীব অন্য কোন জীব থেকে আলাদাভাবে বিবেচিত হয়।

  • তিমির ফ্লিপার,  বাদুরের ডানা,  মানুষের হাত এবং ঘোড়ার অগ্রপদ এগুলি কি ধরনের অঙ্গ?

উত্তর- তিমির ফ্লিপার,  বাদুরের ডানা,  মানুষের হাত এবং ঘোড়ার অগ্রপদ এগুলি হল একপ্রকার সমসংস্থ অঙ্গের উদাহরণ

  • পাখির ডানা এবং পতঙ্গের ডানা হলো কি ধরনের অঙ্গ?

উত্তর- পাখির ডানা এবং পতঙ্গের ডানা হলো এক ধরনের  সমবৃত্তীয় অঙ্গ।

Multiple Choice Questions – 1 Marks of জীবনের প্রবাহমানতা (Continuity of Life)

পৃথিবীর আনুমানিক বয়স হলো:

  • 150 কোটি
  • 400 কোটি
  • 350 কোটি
  • 450 কোটি

উঃ- 150 কোটি

জৈব অভিব্যক্তির সবচেয়ে বলিষ্ঠটি প্রমাণ হলঃ

    1. নিষ্ক্রিয় অঙ্গ
    2. জীবাশ্ম
    3. সমসংস্থ অঙ্গ
    4. সমবৃত্তীয় অঙ্গ

উঃ- জীবাশ্ম

কোন বিজ্ঞানী প্রথম‘জৈব অভিব্যক্তি’ শব্দটি ব্যবহার করেন?

    1. চার্লস ডারউইন
    2. হুগো দ্য ভিস
    3. হার্বার্ট স্পেনসার
    4. ল্যামার্ক

উঃ- হার্বার্ট স্পেনসার

কোন বিজ্ঞানীর দ্বারা প্রথম ‘বায়োলজি’ শব্দটি প্রণয়ন হয়?

    1.  ওপারিন
    2. ল্যামার্ক
    3. হেকেল
    4. ডারউইন

উঃ- ল্যামার্ক

কোন বিজ্ঞানীর প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের জনক?

    1.  ল্যামার্ক
    2. গ্রেগর জোহান মেন্ডেল
    3. চার্লস ডারউইন
    4. হুগো দ্য ভ্রিস

উঃ- চার্লস ডারউইন

‘অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম’ মতবাদটির প্রবক্তা হলেন-

    1. ওয়াইসম্যান
    2. ডারউইন
    3. ল্যামার্ক
    4. মেন্ডেল

উঃ- ডারউইন

‘ব্যবহার ও অব্যবহার তত্ত্ব’ ও ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ’ এই দুই মতবাদের প্রবক্তা হলেন কোন বিজ্ঞানী?

    1. ল্যামার্ক
    2. চার্লস ডারউইন
    3. হুগো দ্য ভ্রিস
    4. অগাস্ট ওয়াইসম্যান

উঃ- ল্যামার্ক

‘মিউটেশন’ তত্ত্ব প্রবর্তিত করেছিলেন কোন বিজ্ঞানী?

    1. চার্লস ডারউইন
    2. হ্যালডেন
    3. হুগো দ্য ভ্রিস
    4. ল্যামার্ক

উঃ- হুগো দ্য ভ্রিস

‘On the Origin of Species by Means of Natural Selection’ বইটির কার লেখা?

    1. গোল্ডস্মিথ
    2. ল্যামার্ক
    3. হার্বার্ট স্পেনসার
    4. চার্লস ডারউইন

উঃ- চার্লস ডারউইন

‘Philosophic Zoologique’ বইটি কার লেখা?

    1. ডারউইন
    2. হেকেল
    3. ফক্স
    4. ল্যামার্ক

উঃ- ল্যামার্ক

‘কেমোজেনি’ মতবাদটি কার দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছে?

    1.  ল্যামার্ক
    2. ডারউইন
    3. ওপারিন
    4. আলেকজান্ডার

উঃ- ওপারিন

‘জার্মপ্লাজম’ মতবাদটির প্রবক্ত হলেনঃ 

    1. ডারউইন
    2.  হুগো দ্য ভ্রিস
    3. ওয়াইসম্যান
    4. স্পেনসার

উঃ- ওয়াইসম্যান

কোয়াসারভেট তত্ত্বের মুখ্য প্রবক্তা কে?

    1. হেকেল
    2. মিলার
    3. ওপারিন
    4. হ্যালডেন

উঃ- ওপারিন

নিম্নলিখিত জৈব উপাদানগুলির  মধ্যে  কোন জৈব উপাদানটি উরে ও মিলারের পরীক্ষায় যে সংশ্লেষিত হয়?

    1. নিউক্লিক অ্যাসিড
    2. প্রোটিন
    3. অ্যামিনো অ্যাসিড
    4. শর্করা

উঃ- অ্যামিনো অ্যাসিড

নিম্নলিখিত গ্যাসগুলির মধ্যে কোন গ্যাসটি বিজ্ঞানী মিলার ও উরে তাদের পরীক্ষায় ব্যবহার করেছিলেন? 

    1. কার্বন ডাই অক্সাইড
    2.  অক্সিজেন
    3. হাইড্রোজেন সালফাইড
    4. মিথেন

উঃ- মিথেন

মিলার ও উরের পরীক্ষায় মিথেন, অ্যামোনিয়া এবং হাইড্রোজেনের অনুপাত হল:

    1. 2:2:1
    2. 1:2:1
    3. 2:1:2
    4. 1:2:2

উঃ- 2:2:1

প্রথম প্রাণের আবির্ভাব পৃথিবীর কোথায় ঘটেছিল?

    1. সমুদ্রের জলে
    2. পাহাড়ে
    3. মাটিতে
    4. নদীর জলে

উঃ- সমুদ্রের জলে

নিম্নলিখিত বিভিন্ন উদাহরণ এর মধ্যে কোনটি অপসারী অভিব্যক্তির উদাহরণ? 

    1. বাদুরের ডানা ও প্রজাপতির ডানা
    2. মটর ও কুমড়ো গাছের আকর্ষ
    3. মানুষের হাত এবং ঘোড়ার অগ্রপদ
    4. সবকটিই

উঃ- মানুষের হাত এবং ঘোড়ার অগ্রপদ

‘অক্টোজেনি রিপিট্স ফাইলোজেনি’ এই মতবাদটি  কোন বিজ্ঞানীর দ্বারা প্রবর্তিত? 

    1. ওয়াইসম্যান
    2. ডারউইন
    3. হেকেল
    4. ল্যামার্ক

উঃ- হেকেল

বিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনটি?

    1. প্রতিযোগিতা
    2. বৃদ্ধি
    3. প্রকরণ
    4. জনন

উঃ- প্রকরণ

Short Questions – 2-3 Marks of জীবনের প্রবাহমানতা (Continuity of Life)

  • কোয়াসারভেট বলতে আমরা কি বুঝি?

উত্তর- বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ওপারিনের মতামত অনুসারে পৃথিবীর আদিম অবস্থায় উত্তপ্ত সামুদ্রিক পরিবেশে কার্বোহাইড্রেট, লিপিড এবং প্রোটিন জাতীয় বৃহৎ জৈব অণু গুলি আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের দ্বারা প্রভাবিত হয় লঘু তরল থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক হয় যে গোলাকার এবং বৃহৎ কলয়েড কনা সৃষ্টি করে থাকে তাকেই আমরা কোয়াসারভেট বলে থাকি।

এর বাইরে সেফালিন এবং লেসিথিন দ্বারা গঠিত কোষপর্দা জাতীয় একটি দ্বিস্তরী ও আবরণ থাকে।

এই কোয়াসারভেটকেই আদি কোষ বা কোষের অগ্রদূত বলা হয়ে থাকে।

  • হট ডাইলিউট স্যুপ কি?

উত্তর- আদিম পৃথিবীতে সমুদ্রের জলে ফ্যাট অ্যামিনো অ্যাসিড কার্বোহাইড্রেট এবং অন্যান্য জটিল জৈব যৌগ লাভ করেছিল।

বিজ্ঞানী হ্যালডেন সমুদ্র জলের সঙ্গে মিশ্রিত ওই সকল জৈব যৌগ সম্পন্ন তরল কে তপ্ত লঘু স্যুপ বলে আখ্যায়িত করেন।

তার মতামত অনুসারে এই হট ডাইলিউট স্যুপেই প্রথম প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিল।

  • মিলার এবং উরের পরীক্ষায় ব্যবহৃত বিক্রিয়ক গুলি এবং এই পরীক্ষায় উৎপন্ন একটি জৈব যৌগের নাম উল্লেখ করো।  

উত্তর- হ্যারল্ড উরে এবং স্ট্যানলি মিলার তাদের পরীক্ষাগারে পৃথিবীর প্রাথমিক বায়ুমণ্ডলীয় পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তারা তাদের পরীক্ষায় মিথেন অ্যামোনিয়া, এবং হাইড্রোজেনকে বিক্রিয়ক হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।

এই সকল রাসায়নিক পদার্থের অনুপাত ছিল পর্যায়ক্রমে

2 : 2 :1।

তারা এই সকল রাসায়নিক পদার্থকে জলীয়বাষ্পের মধ্যে রেখে এদের উপর বিদ্যুৎ বিচ্ছুরণ করেন। তারা লক্ষ্য করেন বন্ধ কাচের  ফ্লাক্সে অ্যাসপারর্টিক অ্যাসিড, গ্লাইসিন এবং অ্যালানিন জাতীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সংশ্লেষিত হয়েছে এবং বিভিন্ন রকমের অ্যালডিহাইড ও কার্বক্সিলিক অ্যাসিড সংশ্লেষিত হয়েছে।

  • জৈব অভিব্যক্তি বলতে কী বোঝায়?

উত্তর- জৈব অভিব্যক্তি হলো সেই মন্থর এবং গতিশীল প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমিকভাবে কোন সত্তার বিকাশ ঘটে থাকে এবং ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে উদবংশীয় নিম্নশ্রেণির জীব থেকে জটিল উন্নত জীবের আবির্ভাব ঘটে থাকে তাকেই আমরা জৈব বিবর্তন বা জৈব অভিব্যক্তি বলে অভিহিত করি।

  • অভিব্যক্তির কয়েকটি গুরুত্ব লেখ।

উত্তর- অভিব্যক্তি কয়েকটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব হলো:

  1. অভিব্যক্তির দ্বারা জীবজগতের বৈচিত্র্য ঠিক থাকে।
  2. এই অভিব্যক্তি দ্বারাই নিম্ন শ্রেণীর সরল জীবন থেকে উন্নত জটিল জীবের উৎপত্তি ঘটে থাকে।
  • অপসারী বিবর্তন বলতে কি বোঝো? উদাহরণ দাও।

উত্তর- একই জীব গোষ্ঠীর ভেতর ভিন্ন জীব ভিন্ন পরিবেশের বসবাসের জন্য মূলত জীবন সংগ্রামে কারণে, ভিন্ন ভাবে অভিযোজিত হয়ে থাকে।

একেই আমরা অপসারী বিবর্তন বলে থাকি।

উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় ঘোড়ার অগ্রপদ, মানুষের হাত, তিমির ফ্লিপার ইত্যাদির অন্তর্গঠন একজাতীয় হলেও এদের মধ্যে কার্যগত দিক থেকে কোনরূপ মিল নেই।

  • অভিসারী বিবর্তন বলতে কি বোঝো? উদাহরণ দাও।

উত্তর- ভিন্ন জীব গোষ্ঠীর অন্তর্গত বিভিন্ন জীব সমূহ জীবন সংগ্রামের কারণে এবং একই পরিবেশে বসবাস করার জন্য যেভাবে অভিযোজিত হয় তাকে অভিসারী বিবর্তন বলা হয়ে থাকে।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় প্রজাপতির ডানা এবং পাখির ডানা দুটি ভিন্ন জীব গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হলেও এদের আকৃতি এবং কাজ প্রায় একই রকমের হয়ে থাকে।

  • চার্লস ডারউইনের মতামত এর ঘটনা এবং সিদ্ধান্তসমূহকে ছকের মাধ্যমে লেখ।
ঘটনাসমূহসিদ্ধান্ত সমূহ
প্রাকৃতিক নির্বাচননতুন প্রজাতি সৃষ্টি
অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধিঅস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম
যোগ্যতমের উদবর্তনঅস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম
সীমিত খাদ্য এবং বাসস্থানঅস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম
প্রকরণপ্রাকৃতিক নির্বাচন এবং যোগ্যতমের উদবর্তন
অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামপ্রাকৃতিক নির্বাচন এবং যোগ্যতমের উদবর্তন
  • ডারউইনবাদের ত্রুটি গুলি উল্লেখ করো।

উত্তর- ডারউইন বাদের উল্লেখযোগ্য ত্রুটি

গুলি হল নিম্নরূপ :

  1. ডারউইন মিউটেশনকে প্রকৃতির খেলা বলে উপেক্ষা করেছেন।
  2. ডারউইনবাদ নিষ্ক্রিয় অঙ্গের উপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ।
  3. ডারউইনবাদ নতুন প্রজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করলেও প্রকরণের উৎপত্তি ধারণা দিতে অক্ষম।
  4. দেহ কোষের প্রকরণ এবং জনন কোষের প্রকরণ এর মধ্যে পার্থক্য ডারউইনবাদ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।
  5. ডারউইন বাদের দ্বারা যোগ্যতমের উদবর্তনকে ব্যাখ্যা করা যায় না।
  • প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ বলতে কী বোঝো?

উত্তর- প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ অথবা ন্যাচারাল সিলেকশন হল সেই বিশেষ প্রক্রিয়ার যার দ্বারা অনুকূল প্রকরণ যুক্ত জীবেরা অন্যান্য জীব এদের তুলনায় বেশি সুযোগ সুবিধা অর্জন করে থাকে এবং জীবন সংগ্রামে সহজে জয় লাভ করতে পারে।

ইহা আবার তিন প্রকারের হয়ে থাকে যথা স্থিতিকারী, অভিমুখী নির্বাচন এবং বিচ্ছিন্নকারী।

  1. বংশগত প্রকরণসমূহ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে কিভাবে নির্বাচিত হয়?

উত্তর- পৃথিবীতে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণীরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের থেকে বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রকরণ বা ভেদ কেবলমাত্র  সেইসকল প্রাণীর মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় যারা বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের সাথে নিরন্তর লড়াই করে জয়লাভ করে।

কেবলমাত্র অনুকূল প্রকরণ জীবের জীবন সংগ্রামে সহায়তা প্রদান করে থাকে; প্রতিকুল প্রকরণ জীবের জীবন সংগ্রামে পথে বাঁধা হয়ে দাড়ায়।

  1. ডারউইনবাদ অনুযায়ী জিরাফের গলা লম্বা হওয়ার ঘটনাটি  ব্যাখ্যা     

    করো।

উত্তর- ডারউইনের মতবাদ অনুসারে,

  • জিরাফের পূর্ব পুরুষরা ছিল কেউ দীর্ঘ গলা যুক্ত, কেউ মাঝারি গলা  যুক্ত এবং কেউ আবার খর্ব গলা যুক্ত।
  • এদের মধ্যে কেবলমাত্র লম্বা গলা যুক্ত জিরাফরাই সহজে তাদের খাদ্য গ্রহণ করতে পারতো এবং এদের মধ্যে বিভিন্ন জননগত সুবিধা থাকায় এরা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি অপত্য সৃষ্টি করতে থাকে।
  • অন্যদিকে যে সকল জিরাফের গলা খর্ব প্রকৃতির ছিল,  তারা তাদের খাদ্য যোগাড় করতে না পেরে আস্তে আস্তে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
  • যার ফলে পৃথিবীতে দীর্ঘ গলা যুক্ত জিরাফ সংখ্যায় প্রচুর বেড়ে যায়, এবং ছোট গলা যুক্ত জিরাফের সংখ্যা খুব দ্রুত কমতে থাকে।

ডারউইনবাদ অনুসারে লম্বা গলা যুক্ত জিরাফরাই  তাদের প্রতিকূল পরিবেশের সাথে  যুদ্ধ করে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার সর্বোত্তম চেষ্টা করেছে তাই তাদের প্রকৃতি যোগ্যতম হিসাবে বিবেচনা করে জীবন সংগ্রামে জয়ী করেছে।

  1. নতুন প্রজাতির উৎপত্তি লাভের ক্ষেত্রে প্রকরণের ভূমিকা গুলি উল্লেখ করো।

উত্তর- ডারউইন এর মতামত অনুযায়ী এই পৃথিবীতে একই রকম কোন দুটি জীব লক্ষ্য করা যায় না।

বিভিন্ন জীবের মধ্যে কিছু মৌলিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা গেলেও  তাদের মধ্যে আকার অথবা গঠনগত কিছুটা পিছু বৈসাদৃশ্য অবশ্যই থাকবে।

ডারউইন এইসকল পার্থক্য গুলিকে প্রকরণ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

  • অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামের  ফলপ্রসূ জীবদেহে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন ধরনের  প্রকরণ লক্ষ্য করা যায়।
  • এই সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকরণ  একত্রিত হয়ে নতুন প্রজাতির উৎপত্তি দেয়।

জীবের জীবন সংগ্রামের অনুকূলে যে সকল প্রকরন হয়ে থাকে,  তাদেরআমরা অনুকূল প্রকরণ বলে থাকি এবং বিভিন্ন  প্রাণীকে পরিবেশেরসঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে থাকে। অন্যদিকে প্রতিকূল প্রকরণ  জীবের অস্তিত্ব বজায় রাখার পথে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।

  1. ল্যামার্কের মতবাদ অনুযায়ী ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন’-  উক্তিটির ব্যাখ্যা করো।
    উত্তর- বিজ্ঞানী ল্যামার্কের মতবাদ অনুসারে পরিবেশের প্রভাবে,  ব্যবহার

অপব্যবহার জনিত কারণে এবং শব্দ প্রচেষ্টার দ্বারা প্রত্যেক প্রাণীই তার জীবনকালে কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য অর্জন করে থাকে।

এই সকল অর্জিত বৈশিষ্ট্য সমূহ কেবলমাত্র ওই নির্দিষ্ট প্রাণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনা।

তা  বংশানুক্রমে আপাত্তের মধ্যে  সঞ্চারিত হয়।

এই পদ্ধতিতে একটি নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়ে থাকে।

  1. ল্যামার্কের মতবাদ অনুযায়ী সজ্ঞান প্রচেষ্টাটি  ব্যাখ্যা করো।
    উত্তর- বিভিন্ন পরিবর্তিত পরিবেশে প্রাণীরা কিছু নতুন চাহিদা অনুভব করে থাকে ও সজ্ঞান প্রচেষ্টার দ্বারা ওই সকল অঙ্গ লাভ করে থাকে।

বিজ্ঞানী ল্যামার্ক এর মতামত অনুযায়ী পরিবর্তিত পরিবেশের  চাহিদার উপর নির্ভর করে কোন প্রাণীর অঙ্গ লাভের যে ঐকান্তিক বাসনা থাকে সেটিই হল  তার সজ্ঞান  প্রচেষ্টা।

ল্যামার্কের মতবাদের  এই অংশটি বহু বিজ্ঞানীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি।

  1. যোগ্যতমের উদবর্তন বলতে কী বোঝায়?
    উত্তর- ডারউইন তার মতবাদে উল্লেখ করেন,
  • অনুকূল প্রকরণ যুক্ত প্রাণীরাই কেবলমাত্র তাদের জীবন সংগ্রামে জয়ী  হয়। প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার অধিকার কেবল মাত্র তাদের কাছেই আছে
  • অন্যরা যারা ঐ প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না তারা আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে চলে যায়।
  • এইভাবে খুব ধীর গতিতে অনুকূল প্রকরণ যুক্ত প্রাণী না অভিযোজিত হতে থাকে এবং তাদের অভিযোজিত বৈশিষ্ট্য সমূহ তাদের  আপত্তের মধ্যে সঞ্চারিত হতে থাকে।
  • এইভাবে একটি  প্রজাতি থেকে নতুন যোগ্যতম প্রজাতির উদ্ভব ঘটে  এবং জীবন সংগ্রামে পরাজিতরা ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
  1. ল্যামার্কের ব্যবহার এবং অপব্যবহার এর সূত্রটি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
    উত্তর- কোন প্রাণী তার দেহের কোন অঙ্গের যদি ধারাবাহিকভাবে  ক্রমাগত  ব্যবহার করতে থাকে,  তাহলে তার  সেই বিশেষ অঙ্গটি সুদৃঢ় ও সবল এবং সুগঠিত হয়ে ওঠে।

অপরদিকে যদি কোন প্রাণী তার কোন অঙ্গের ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার বন্ধ করে দেয় তাহলে তার সেই অঙ্গটি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলে এবং সর্বশেষে নিষ্ক্রিয় অঙ্গে বা  লুপ্তপ্রায় অঙ্গ পরিণত হয়।

  1. ল্যামার্কের তত্ত্ব অনুযায়ী জিরাফের গলা লম্বা হওয়া কারণটি ব্যাখ্যা করো।
    উত্তর- বিজ্ঞানী ল্যামার্কের তত্ত্ব অনুযায়ী বর্তমানে আমরা যে জিরাফ লক্ষ্য করতে পারি,  তাদের পূর্বপুরুষদের  গলার আকৃতি ছিল ছোট প্রকৃতি।

কিন্তু পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের মূল গাছের পাতা খাওয়া  প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে।

মূলত খাদ্যের প্রয়োজন তাদের মধ্যে উঁচু গাছের পাতা খাওয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় এবং এই প্রচেষ্টা বংশানুক্রমে সঞ্চারিত হতে থাকে।

এর ফলে খুব ধীরগতিতে জিরাফের গলা লম্বা হতে শুরু করে।

মূলত  সজ্ঞান  প্রচেষ্টার মাধ্যমে অর্জিত এই বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে সংবাহিত হতে থাকে।

বর্তমান জিরাফের গলা মূলত এই কারণের জন্যই লম্বা হয়েছে।

19. ডারউইনের মতামত অনুসারে জীবন সংগ্রাম কত প্রকার এবং তা কি কি?

উত্তর- চার্লস ডারউইন এর মতামত অনুসারে প্রাণীদের জীবনসংগ্রাম তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম,  অন্তঃপ্রজাতি  সংগ্রাম এবং প্রাকৃতিক সংগ্রাম।

20. আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বলতে কী বোঝো?

উত্তর- প্রয়োজনীয় খাদ্য, অনুকূল বাসস্থান  এবং  বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য দুই বা ততোধিক প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে যে সংগ্রাম ঘটে থাকে তাকে আমরা আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বলে থাকি।  উদাহরণস্বরূপ বলা যায় খাদ্যের জন্য সিংহ এবং বাঘের মধ্যে লড়াই।

Long Questions – 5 Marks of জীবনের প্রবাহমানতা (Continuity of Life)

  • অভিব্যক্তি কাকে বলে? রাসায়নিক এবং জৈব অভিব্যক্তি সংজ্ঞা লেখ।

উত্তর- অভিব্যক্তি- যে অবিরাম, মন্থর এবং গতিশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরল পূর্বপুরুষ থেকে নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন এবং জটিল জীবের উদ্ভব ঘটে থাকে তাকেই আমরা অভিব্যক্তি বলে থাকি।

রাসায়নিক অভিব্যক্তি- যে প্রক্রিয়ায় কিছু অজৈব রাসায়নিক পদার্থ পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে জৈব যৌগ  উৎপন্ন করে থাকে এবং সেই জৈব যৌগের পরিবর্তনে জীবদেহে যে পরিবর্তন ঘটে থাকে তাকেই আমরা রাসায়নিক অভিব্যক্তি বলে থাকি।

জৈব অভিব্যক্তি- সরল উদবংশীয় জীব থেকে যে মন্থর ও গতিশীল প্রক্রিয়ায় মূলত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন এবং উন্নত জীবের উদ্ভব ঘটে থাকে তাকেই জৈব অভিব্যক্তি বলা হয়।

  • প্রবাহ চিত্রের মাধ্যমে জীবনের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তা উল্লেখ কর।
See also  বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ Bohirjato Prokriya O Tader Dara Srishto Bhumiroop- Geography Bhugol Subject WBBSE Madhyamik Class 10

উত্তর- জীবনের উৎপত্তি প্রভাব চিত্রটি হল নিম্নরূপঃ
পৃথিবী সৃষ্টির পরবর্তী দশায় হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন এবং অক্সিজেন হল প্রধান প্রধান অজৈব অনু যেগুলো জীব সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।

→ পৃথিবী সৃষ্টির পরবর্তীকালে পৃথিবীতে উপস্থিত বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ গুলি হল অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন, সায়ানাইড, মিথেন এবং জল।

→ ওই সকল গ্যাসসমূহের মধ্যে বিক্রিয়ার ফলে সরল হাইড্রোকার্বনের উৎপত্তি ঘটে।

→  ইহার সাথে অ্যামোনিয়ার বিক্রিয়া  ফলে  উৎপত্তি হয় অ্যামিনো অ্যাসিডের।

→ প্রোটিনের পাশাপাশি অন্যান্য পলিমারের সৃষ্টি।

→ এইসকল গলফার থেকে উৎপত্তি হয় প্রাথমিক প্রশ্ন সংগঠনের। যথা – প্রোটিনয়েড এবং প্রোটোবায়োন্ট।

→ এই কোষীয় সংগঠন থেকেই উৎপত্তি ঘটে RNA  এবং প্রোটিন জগতের।

→ রাইবোনিউক্লিয়ো প্রোটিন জগৎ-এর সৃষ্টি হয় RNA এবং প্রোটিনজগৎ-এর মিলনে।

→ রাইবো নিউক্লিওপ্রোটিন জগত থেকে উৎপত্তি হয় নিউক্লিওপ্রোটিন এবং DNA এর, যার থেকে পরবর্তীতে প্রোটোভাইরাসের উৎপত্তি ঘটে।

→ভাইরাস তৈরি হয় প্রোটো ভাইরাস থেকে।

→ এই ভাইরাস থেকে উৎপত্তি ঘটে প্রোক্যারিওটিক কোষের

→ মেসোক্যারিয়োটিক কোষ উৎপত্তি লাভ করে প্রোক্যারিওটিক কোষ থেকে

→ ইউক্যারিওটিক কোষ উৎপন্ন হয় মেসোক্যারিয়োটিক কোষ থেকে।

  • জীবন সৃষ্টিতে জলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর-  জলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলি যে গুলির গুরুত্ব জীবন সৃষ্টিতে অপরিসীম সেগুলি হল-

  1. রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপযুক্ত মাধ্যম হিসাবে জল ব্যবহৃত হয় কারণ এটিএকটি সুস্থির যৌগ।
  2. সজীব কোষের মধ্যে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের প্রধান উৎস হলোজল।
  3. একটি উত্তম দ্রাবক হলো জল।
  4. জলের উপস্থিতিতে শুষ্ক রাসায়নিক পদার্থ যারা সহজে বিক্রিয়া করে নাতারা ও বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
  5. জীব দেহের ভিতরের তাপমাত্রা বজায় রাখা এবং জীব দেহকে তাপীয় শক থেকে রক্ষার জন্য জল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  6. সাধারণত জল তরল অবস্থায় থাকে 40থেকে  900 সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায়। তাই বেশির ভাগই জীবনের অস্তিত্ব এই তাপমাত্রার মধ্যে বিরাজমান।
  7. বরফ থেকে যখন জল হয় তার আয়তন বাড়ে ও হালকা হয় সেই জন্য মেরু অঞ্চলে বরফের নিচে জল তরল অবস্থায় থাকে তাই সেই  অঞ্চলের জলজ প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে।
    উপরুক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় জীবনের উৎপত্তি ঘটে ছিল জলেই এবং জীবন সৃষ্টির পর তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য জল একটি অপরিহার্য উপাদান হিসাবে আজও বিদ্যমান।
  • একটি পরীক্ষামূলক প্রমাণের দ্বারা জীবনের জৈব রাসায়নিক উৎপত্তি সাপেক্ষে ব্যাখ্যা করো।

উত্তর- শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিজ্ঞানী হ্যারল্ড উরে এবং স্ট্যানলি মিলার তাদের গবেষণাগারে পৃথিবী প্রাথমিক বায়ুমণ্ডলীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেন এবং একটি পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা প্রমাণ করেন যে জৈব পদার্থ কৃত্রিম পরিবেশ সংশ্লেষিত হচ্ছে।
পরীক্ষা: প্রাচীন বায়ুমন্ডলের প্রধান উপাদান রূপে মিথেন, অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেনকে 2:2:1 অনুপাতে নিয়ে একটি 5 লিটারের বদ্ধ কাচের ফ্লাক্স এর মধ্যে রাখেন।

একটি টাংস্টেন নির্মিত ইলেকট্রোড দ্বারা সেই গ্যাস মিশ্রণকে অনবরত তড়িৎ বিচ্ছুরিত করা হয় তারপর সেই মিশ্রনটিকে কনডেনসারের ঠান্ডা জল দ্বারা ঘনীভূত করা হয় এবং তার মধ্যে উত্তপ্ত জলীয়বাষ্প মিশ্রিত করা হয়।
পর্যবেক্ষণ: সেই বন্ধ কাচের ফ্লাক্স এর মধ্যে বিভিন্ন রকমের যৌগ লক্ষ্য করা যায়। যেমন- অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যালানিন, গ্লাইসিন, অ্যাসপার্টিক অ্যাসিড প্রভৃতি এবং বিভিন্ন রকমের অ্যালডিহাইড ও কার্বক্সিলিক অ্যাসিড সংশ্লেষিত হয়।

সিদ্ধান্ত: অ্যালডিহাইড, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং জৈব অণু যেগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে তা প্রাচীন পৃথিবীর অক্সিজেনবিহীন বিজারক পরিবেশে শক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট অ্যামোনিয়া, মিথেন, হাইড্রোজেন ও জলীয় বাষ্পের মিশ্রণের মত। প্রাচীন পৃথিবীতে এই সকল জৈব যৌগ গুলি সমুদ্রের জলে মিলিত হয়ে তপ্ত লঘু তরল সৃষ্টি করে থাকে।  ইহাই হলো জীবন সৃষ্টির  অনুকূল পরিবেশ।

  • প্রোটিনয়েড কাকে বলে? প্রোটিনয়েডের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

উত্তর- 160-210 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় অ্যামিনো অ্যাসিড এর মিশ্রণকে কয়েক ঘন্টা ধরে উত্তপ্ত করলে যে জটিল জৈব যৌগ উৎপন্ন হয় তা প্রোটিনয়েড নামে পরিচিত।

প্রোটিনয়েড এর বৈশিষ্ট্য গুলি হল:

  • জল, তাপীয় প্রোটিনয়েডে যুক্ত করলে মাইক্রোস্ফিয়ারের উৎপত্তি ঘটে।
  • ওদের দেখতে অনেকটা কক্কাস ব্যাকটেরিয়া ন্যায়।
  • এরা সুস্থিত প্রকৃতির হয়ে থাকে।
  • প্রোটিনয়েডে  দ্বিস্তরীয় পর্দা থাকে।
  • এর মধ্যে যে দু’ধরনের মাইক্রোস্ফিয়ার পাওয়া যায় তা হল গ্রাম +ve এবং গ্রাম -ve।
  • তথ্যের আদান-প্রদান মূলত একগুচ্ছ মাইক্রোস্ফিয়ার এর মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে।
  • হাইপোটনিক দ্রবণে রাখলে যেমন এরা ফুলে ওঠে ঠিক তেমনি হাইপারটনিক দ্রবণে রাখলে তার বিপরীত অবস্থা দেখা যায়।
  • এগুলি উৎসেচক এর মত কাজ করে।
  • এরা বিভাজিত হয় বাডিং পদ্ধতিতে।

বিজ্ঞানী ওপারিন এই ধরনের কলয়েড ধর্মী সঙ্ঘবদ্ধ অবস্থাকে কোয়াসারভেট  বলে আখ্যায়িত করেন।

  • অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাগুলি প্রবাহ চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপিত করো।
    উত্তর- পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে আজ থেকে প্রায় 450 কোটি বছর আগে।

→ বিভিন্ন রকম রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে প্রায় 360 কোটি বছর আগে জীবনের উৎপত্তি হয়েছে

→ প্রোটোজোয়া জাতীয় বিভিন্ন রকম এককোষী জীবের সৃষ্টি হয়

→ কিছু সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি ঘটে  যারা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন বর্জন করে

→ বহু বহুকোষী জীবের উৎপত্তি ঘটে।

→  অমেরুদন্ডী এবং মেরুদন্ডী প্রাণীর উদ্ভব ঘটে।

→ কিছু স্থলজ উদ্ভিদ ও ব্রায়োফাইটার উৎপত্তি।

→ গুপ্তবীজী এবং ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের প্রাচুর্যতা  বৃদ্ধি।

→ সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণীদের উৎপত্তি।

→ নতুন জীবের ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে  উৎপত্তি।

→ পক্ষী শ্রেণি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর উৎপত্তি।

→ অবশেষে আদিম মানুষের পৃথিবীতে আবির্ভাব ক্রমবিবর্তনের ফলে।

  • বিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তন সম্পর্কিত মতবাদটি বর্ণনা করো।

উত্তর- চার্লস ডারউইন বিবর্তনের সাপেক্ষে যে মতবাদ গুলো দিয়েছেন সেগুলি তার গ্রন্থ “অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মিনস অফ ন্যাচারাল সিলেকশন”এ লেখা আছে।মতবাদ গুলি হল:

  • অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি- অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি হলো জীবের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য এবং তিনি লক্ষ্য করেন এই বংশবৃদ্ধি জ্যামিতিক হারে ঘটে।
  • উদাহরণ- এক বছরে একটি ঝিনুক প্রায় 6 মিলিয়ন ডিম পেড়ে থাকে।
  • সীমিত খাদ্য এবং বাসস্থান- পৃথিবীর আয়তন এবং আকার নির্দিষ্ট থাকার জন্য বংশবৃদ্ধি অধিক হারে হলেও, বাসস্থান সীমিত এবং নির্দিষ্ট হওয়ায়, বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাব ঘটতে থাকে।
  • জীবন সংগ্রাম- খাদ্য, বাসস্থান নির্দিষ্ট এবং সীমিত থাকায় ও অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি হওয়ায় প্রত্যেকটি জীবকে প্রতিনিয়ত তাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জীবন সংগ্রাম করতে হয় এই সংগ্রাম তিন ধরনের হয়। যথা-
    • পরিবেশগত সংগ্রাম- পরিবর্তনশীল পরিবেশে বিভিন্ন প্রতিকূলতার সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সংগ্রাম।
    •  অন্তঃ প্রজাতি সংগ্রাম- একই রকম খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য একই প্রজাতির জীব গোষ্ঠীর মধ্যে সংগ্রাম।
  • আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম- বিভিন্ন প্রজাতির জীব গোষ্ঠীর মধ্যে বাসস্থান ও খাদ্যের জন্য সংগ্রাম।
  • প্রকরণ বা ভেদ- চার্লস ডারউইন এর মতামত অনুযায়ী একই বা ভিন্ন রকম প্রজাতির জীব একই দেখতে অথবা একই বৈশিষ্ট্যের হতে পারে না তাদের মধ্যে কিছু না কিছু পার্থক্য থাকবে এই পার্থক্য গুলিকেই প্রকরণ বলে।
  • যোগ্যতমের উদবর্তন-ডারউইনের মতে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত বিভিন্ন জীগুলির মধ্যে যাদের দেহে ছোট ছোট সহায়ক অভিযোজন মূলক বৈশিষ্ট্য এসে যায় তারাই একমাত্র জীবন সংগ্রামে জয়ী হয় এবং বেঁচে থাকার অধিকারী হয় অন্যরা কাল ক্রমে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় জীবন সংগ্রামের এই উত্তোলনকে যোগ্যতমের উদবর্তন বলা হয়ে থাকে।

নতুন প্রজাতির সৃষ্টি- একটি বিশেষ জীব গোষ্ঠীর মধ্যে অনুকূল প্রকরণগুলি পুঞ্জিভূত হওয়ায় উদবংশীয় জীব ও উত্তর পুরুষের মধ্যে বৈসাদৃশ্য অনেক বেশি হয় এবং কালক্রমে একটি নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। বিবর্তনের ফলস্বরূপ জীবজগতে নতুন প্রজাতির জন্ম হয়।

  • ল্যামার্কের জৈব অভিব্যক্তি সম্পর্কিত তত্ত্বটি আলোচনা করো।

উত্তর- জৈব অভিব্যক্তি সম্পর্কে  ল্যামার্ক যা মতবাদ দিয়েছিলেন  তা হল নিম্নরূপঃ

  1. পরিবেশের অভাব- ল্যামার্ক এর মতে নিজেকে পরিবর্তনশীল পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জীব দেহ ও তার বিভিন্ন অঙ্গের পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে নতুন অঙ্গের সৃষ্টি হয় এবং কিছু অঙ্গ বিলুপ্ত অঙ্গে রূপান্তর হয়।
  2. ব্যবহার ও অব্যবহার এর সূত্র- পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার উদ্দেশ্যে জীবদেহের কিছু অঙ্গের বেশি মাত্রায় ব্যবহার হয় আবার কিছু কিছু অঙ্গ কম মাত্রায় ব্যবহার হয়। এই ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে নির্দিষ্ট অঙ্গগুলি সুগঠিত হয় অপরপক্ষে যে গুলো ক্রমাগত ব্যবহার হচ্ছে না সেগুলো দুর্বল ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

3.ব্যবহারের উদাহরণ- জিরাফের পূর্বপুরুষ ছোট গলা যুক্ত ছিল। কিন্তু অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন এর ফলে জিরাফের গলা ছোট থেকে লম্বা গলায় পরিণত হয়েছে যা মূলত খুব উঁচু গাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহের মাধ্যমে অর্জিত।
অব্যবহারের উদাহরণ-মানুষের পূর্বপুরুষের যে লেজ ছিল তা ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে|

4.একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কক্সিস-এ রূপান্তরিত হয়েছে।

5.অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন-ল্যামার্ক এর মতে কোন প্রজাতির জীব  প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের নিজেদের মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটায় সেই সকল পরিবর্তন বা অর্জিত বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের দেহে বংশানুসরন হয়।

  • ল্যামার্ক ও ডারউইনের মতবাদ জিরাফের লম্বা গলা হওয়া সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় মুল যে পার্থক্য ছিল তা উল্লেখ কর।

উত্তর- চার্লস ডারউইন এবং ল্যামার্কের দুজনেই  জিরাফের গলা লম্বা হওয়া নিয়ে তাদের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেছিলেন।   জিরাফের গলা সম্পর্কিত

তাদের মতামতের মধ্যে মূল পার্থক্য গুলি হল নিম্নরূপঃ
ল্যামার্কের মতবাদ অনুসারেঃ ল্যামার্কের মতবাদ অনুসারে জিরাফ প্রথমে ছোট গলা যুক্ত এবং তৃণভোজী প্রাণী ছিল কিন্তু অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন এর ফলে জিরাফের গলা লম্বা হয়েছে যা উচু গাছ থেকে পাতা খাওয়ার জন্য উপযুক্ত। দেহের অভ্যন্তরীণ কারণেই জিরাফের গলার ক্রমশ প্রসারণ ঘটেছে এবং এই প্রসারণের ফলে অর্জিত বৈশিষ্ট্য উদবংশীয় জিরাফ থেকে ক্রমশ বর্তমানকালে জিরাফ এর মধ্যে সম্প্রসা্রিত হয়েছে তার ফলে জিরাফের গলা বর্তমানকালে লম্বা হয়েছে।

ডারউইনের মতবাদ অনুসারেঃ ডারউইনের মতসারে প্রাচীনকালে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের গলা যুক্ত জিরাফ ছিল,উঁচু গাছের ডালের পাতার নাগাল পাওয়ার জন্য জিরাফের প্রাকৃতিক নির্বাচনের অভিযোজনমূলক বৈশিষ্ট্য এক জনু থেকে অপর জনু তে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং তার ফলে লম্বা গলা যুক্ত জিরাফের  অস্তিত্ব আজও লক্ষ্য করা যায় অন্যদিকে ছোট গলা যুক্ত জিরাফ বিলুপ্ত হয়ে  গেছে।

  • একটি উদাহরণের সাহায্যে সমসংস্থ অঙ্গ কিভাবে জৈব অভিব্যক্তি সাপেক্ষে  প্রমাণ হিসেবে কাজ করে তা বোঝাও।

উত্তর- সমসংস্থ অঙ্গ সমূহ কিভাবে জৈব অভিব্যক্তি সাপেক্ষে প্রমাণ হিসাবে কাজ করে থাকে তার কয়েকটি উদাহরণ হল নিম্নরূপ।
প্রাণীর সমসংস্থ অঙ্গ
উৎপত্তিগত ভাবে কিছু প্রাণীর অঙ্গ একই রকমের হয় যেমন মানুষের হাত,তিমির প্যাডেল ও বাদুড়ের ডানা ইত্যাদি।

পরিবর্তনশীল পরিবেশে থাকার জন্যই বাদুরের অগ্রপদ ডানায় রূপান্তরিত হয়েছে এবং মানুষের অগ্রপদ হাতে এবং তিমির অগ্রপদ ফ্লিপারে রূপান্তরিত হয়েছে।

গঠনের দিক থেকে এই অঙ্গ গুলি কারপাল, রেডিয়াস আলনা, হিউমেরাস, মেটাকার্পাল প্রভৃতি অস্থি দ্বারা গঠিত। এই সমস্ত প্রাণীদের অঙ্গ গুলি উৎপত্তিগত ভাবে এবং গঠনগতভাবে এক হলেও কার্যগতভাবে এরা আলাদা।

উদ্ভিদের সমসংস্থ অঙ্গ
খামালুর বুলবিল, ফণীমনসার পর্নো কান্ড, বেলের শাখা কন্টক এবং আদার গ্রন্থি কান্ড এই সবকটিই হল পরিবর্তিত কান্ড।

এরা কার্যগত ভাবে আলাদা হলেও গঠনগতভাবে এক যেমন ফণীমনসার পর্নো কান্ড সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সাহায্য করে, আদার গ্রন্থি কান্ড খাদ্য সঞ্চয়ের কাজে লাগে এবং খামালুর বুলবিল অঙ্গজ জননের সাহায্য করে এবং বেলের শাখা কন্টক আত্মরক্ষার কাজে লাগে।

  • অভিব্যক্তির প্রমাণ সাপেক্ষে সমবৃত্তীয় অঙ্গ কিভাবে কাজ করে।

উত্তর- উৎপত্তি এবং গঠনগতভাবে আলাদা হলেও কার্যগত দিক থেকে যেসব জীব দেহের অঙ্গ একই রকম তাদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলা হয়।
প্রাণীদের ক্ষেত্রে সমবৃত্তীয় অঙ্গ
পাখি ও পতঙ্গের ডানা হলো একপ্রকার সমবৃত্তীয় অঙ্গ কারণ এরা উৎপত্তি ও গঠনগতভাবে আলাদা হলেও এদের উভয়ের ডানা ওড়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।

সুতরাং এরা কার্যগত ভাবে এক।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সমবৃত্তীয় অঙ্গ
ঝুমকোলতা ও মটর গাছের আকর্ষ হলো একপ্রকার  সমবৃত্তীয় অঙ্গ।

এরা উৎপত্তি ও গঠনগতভাবে আলাদা হলেও এই দুটি উদ্ভিদের নির্দিষ্ট অঙ্গগুলি আরোহণের কাজে সাহায্য করে তাই এরা কার্যগত ভাবে একই।

  • জৈব অভিব্যক্তি স্বপক্ষে প্রমাণগুলি কি কি? পাখির ডানা ও বাদুড়ের ডানার মধ্যে গঠনগত বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করো।

উত্তর- জৈব অভিব্যক্তি স্বপক্ষে প্রমাণগুলি হলোঃ
1.ভ্রূণ জনিত প্রমাণসমূহ
2.জৈব রাসায়নিক প্রমাণ সমূহ
3. অঙ্গসংস্থান জনিত প্রমাণসমূহ
4. ভৌগলিক বিস্তার প্রমাণসমূহ
5. জীবাশ্ম ঘটিত প্রমাণ সমূহ

পাখির ডানা ও বাদুড়ের ডানা মধ্যে বৈসাদৃশ্য গুলি হল :
1.পাখির ডানা অগ্রপদের রূপান্তরিত রূপ অন্যদিকে বাদুড়ের ডানা হল অগ্রপদ এবং পশ্চাৎপদের মধ্যবর্তী চামড়ায় প্রসারিত এক উপবৃত্তি যা প্যাটাজিয়াম নামেও পরিচিত।

2.বাদুড়ের ডানায় মেটাকার্পাল ও কারপাল অস্থি থাকে কিন্তু পাখির ডানায় এই দুটি অস্থি থাকে না।
3.বাদুড়ের ডানায় লোম থাকে কিন্তু পাখির ডানার পালক উপস্থিতথাকে।
ভিডিও

  • বিভিন্ন প্রজাতির মেরুদন্ডী প্রাণীদের হৃদপিন্ডের যে তুলনামূলক জৈব বিবর্তন এর প্রমাণ পাওয়া যায় তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর- ব্যাঙ, পক্ষী, সরীসৃপ, মাছ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর হৃদপিন্ডের খুব সামান্য বৈসাদৃশ্য থাকলেও তাদের হৃদপিন্ডের গঠন প্রায় একই রকমের হয়।

1.মাছের হৃদপিন্ডের গঠন- এদের হৃদপিণ্ড খুবই সরল প্রকৃতির যা জলে বাস করার জন্য অনুকূল। মাছের হৃদপিন্ডের দুটি প্রকোষ্ঠ থাকে যার মধ্যে একটি নিলয় অপরটি অলিন্দ।
2. সরীসৃপ শ্রেণীর প্রাণীর হৃদপিন্ডের গঠন- সরীসৃপ শ্রেণীর প্রাণীর হৃদপিন্ড মাছের এবং উভচরদের তুলনায় বেশি উন্নত ধরনের হয় এদের চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে বটে কিন্তু এগুলো অসম্পূর্ণ। দুটি অলিন্দ এবং অসম্পূর্ণভাবে বিভক্ত দুটি নিলয় থাকে এরা দূষিত ও বিশুদ্ধ রক্তের মিশ্রণ রোধ করার চেষ্টা করে।
3. উভচর প্রাণীর হৃদপিন্ডের গঠন- এদের থাকে তিনটি প্রকোষ্ঠ যুক্ত হৃৎপিণ্ড।

যাদের মধ্যে একটি নিলয় এবং দুটি অলিন্দ থাকে তবুও। মাছের মতো ব্যাঙের হৃদপিন্ডে বিশুদ্ধ এবং দূষিত রক্তের মিশ্রণে ঘটে।
4. পক্ষী ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হৃদপিন্ডের গঠন- পক্ষী এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হৃদপিণ্ড সবচেয়ে উন্নত ও জটিল মানের হয়। এই শ্রেণীর প্রাণীদের হৃদপিন্ডই একমাত্র সম্পূর্ণভাবে দূষিত রক্ত ও বিশুদ্ধ রক্তের মিশ্রণ রোধ করতে পারে। এছাড়াও এদের হৃদপিন্ড চার প্রকোষ্ঠ যুক্ত হয় যাদের মধ্যে দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয় থাকে।

  • ঘোড়ার বিবর্তন জনিত প্রমাণে জীবাশ্মের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো

উত্তর- লক্ষ্য করলে দেখা যায় ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে ঘোড়ার সরলতম গঠন থেকে জটিল ও আধুনিকতম গঠনে রূপান্তর হয়েছে।

ঘোড়ার পূর্বপুরুষের প্রজাতিটি হল ইওহিপ্পাস যেটির উচ্চতা 11 ইঞ্চি এরা ইয়াসিন যুগের ঘোড়া ছিল তারপরে ঘোড়া ক্রমবিবর্তন এর মাধ্যমে মেসোহিপ্পাস→মেরিচিপ্পাস→প্লিওহিপ্পাস→ ইকুয়াস এর আবির্ভাব হয়েছে।ইকুয়াস হলো আধুনিক যুগের জটিল ঘোড়া।
ইওহিপ্পাসঃ এদের আবির্ভাব ঘটেছিল প্রায় 55 মিলিয়ন বছর আগে আমেরিকার উত্তর-পশ্চিম ভাগে। এদের দেখতে অনেকটা বর্তমান শেয়ালের মত।  এদের পিঠ  ধনুকের মতো বাঁকা প্রকৃতির।  মাতা ছিল তুলনামূলক ছোট।  গলা এবং  দেহের অন্যান্য অংশ বিশেষও  ছিল ছোট প্রকৃতির। এদের পশ্চাদপদে তিনটি এবং অগ্রপদে চারটি করে আঙুল উপস্থিত ছিল।
মেসোহিপ্পাসঃ এদের আবির্ভাব ঘটে ইওহিপ্পাস এর প্রায় 40 মিলিয়ন বছর পর।  এদের দেখতে ছিল অনেকটা বর্তমানের ছাগলের মত।  দৌড়ানোর জন্য এদের প্রত্যেক  পায়ের মাঝের আঙুলটি বড় হতে শুরু করে।

মেরিচিপ্পাসঃ মেসোহিপ্পাসের প্রায় 34 মিলিয়ন বছর পর এদের আবির্ভাব ঘটেছিল। এদের আকৃতি ছিল অনেকটা বর্তমানের গাধার মত।  প্রত্যেক পায়ে ক্ষুর  যুক্ত তিনটি করে আঙুল উপস্থিত ছিল। ঘাস চিবিয়ে খাওয়ার জন্য এদের দাঁতের গঠনগত পরিবর্তন হতে শুরু করে।

প্লায়োহিপ্পাসঃ মেরিচিপ্পাসের প্রায় 10 মিলিয়ন বছর পর এদের আবির্ভাব ঘটে।  এদের দেহ ছিল বলিষ্ঠ শক্ত সমর্থ এবং প্রত্যেক পায়ের মাঝের আঙ্গুল দিয়েছিলো অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং ক্ষুরযুক্ত এবং এদের দাঁতের এনামেল বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
ইকুয়াসঃ আধুনিক ঘোড়া ইকুয়াস এর আবির্ভাব ঘটে  প্লিস্টোসিন উপপর্যায়ে। এদের বলা হলো লম্বা দেহ হলো বলিষ্ঠ পায়ের আঙ্গুল হলো ক্ষুরযুক্ত।  এদের দাঁতের সংখ্যা অনেক বেশি এবং এনামেল যুক্ত,  শক্ত প্রকৃতি।

  • বিবর্তনে লুপ্তপ্রায় অঙ্গ কিভাবে সাহায্য প্রদান করে তা আলোচনা করো।

উত্তর- জীবদেহের যেসব অঙ্গ একসময় সক্রিয় ছিল কিন্তু ক্রমশ বিবর্তনের ফলে তারা তাদের কার্যক্ষমতা হারিয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের কার্যহীন অঙ্গে রূপান্তরিত হয়েছে তাদেরকে লুপ্তপ্রায় বা নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলা হয়।

অঙ্গনিষ্ক্রিয় অঙ্গসক্রিয় অঙ্গ
অ্যাপেন্ডিক্স বা সিকামমানুষের অ্যাপেন্ডিক্স হলো নিষ্ক্রিয় অঙ্গগিনিপিগ ও খরগোশের সক্রিয় অঙ্গ হল সিকাম।
কক্সিস বা লেজমানুষের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কক্সিসবানরের সক্রিয় অঙ্গ হল লেজ
শল্কপত্রউদ্ভিদের ক্ষেত্রে ভূমি নিন্মস্থ  কালকাসুন্দার স্ট্যামিনোড, কাণ্ডের শল্কপত্র এবং নারকেলের পিস্টিলোড হলো নিষ্ক্রিয় অঙ্গযেকোনো সপুষ্পক উদ্ভিদের শল্কপত্র একটি খুবই সক্রিয় অংশ।

বিবর্তনের সময় কোন জীবের গঠনের যে অঙ্গগুলো কোনো কার্যকারিতা থাকে না সেগুলো ক্রমশ ছোট হয়ে লুপ্ত হয়ে যায় এবং তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়।

  1. জীবাশ্ম কাকে বলে এবং জীবাশ্মের প্রয়োজনীয়তাগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর- জীবাশ্ম- দীর্ঘকাল ধরে প্রাকৃতিক উপায়ে ভূগর্ভের বিভিন্ন শিলাস্তরের মধ্যে থাকা জীবদেহের আংশিক বা সম্পূর্ণ প্রস্তরীভূত অবস্থাকে অথবা তার ছাপ কে জীবাশ্ম বলা হয়।

জীবাশ্ম দুটি ধাপে তৈরি হয়ঃ

1.জীবদেহর ভূগর্ভে প্রোথিত হওয়া

2.জীবদেহের মধ্যে খনিজ পদার্থ প্রবেশের মাধ্যমে তাকে  প্রস্তরীভূত করা।
বিভিন্ন রকমের জীবাশ্ম হয় যেমনঃ  কাস্ট, দেহ জীবাশ্ম, প্রেট্রিফিকেশন, কপ্রোলাইট, সাংকেতিক, গ্যাস্ট্রোলিথ, সম্পূর্ণ দেহ, ছদ্ম জীবাশ্ম মোল্ড,আণুবীক্ষণিক জীবাশ্ম, প্রভৃতি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ম্যামথ বা আর্কিয়োটেরিক্স-এর জীবাশ্ম, মানুষের খুলি বা হার প্রভৃতি।

  1. সমবৃত্তীয় এবং সমসংস্থ অঙ্গের মধ্যে বৈসাদৃশ্য গুলি লেখ।
সমবৃত্তীয় অঙ্গসমসংস্থ অঙ্গ
এই অঙ্গগুলো গঠনগত এবং উৎপত্তিগত ভাবে আলাদা হয়।এই অঙ্গগুলো গঠনগত এবং উৎপত্তিগত ভাবে একই প্রকৃতির।
এই অঙ্গগুলির কার্যকারিতা একই রকমের হয়ে থাকে।এই অঙ্গ গুলির কার্যকারিতা ভিন্ন রকমের।
ইহার দ্বারা অভিসারী বিবর্তনকে নির্দেশ করা হয়ে থাকে।সমসংস্থ অঙ্গগুলি অপসারী বিবর্তনকে নির্দেশ করে।
উদাহরণ: পতঙ্গ ও পাখির ডানাউদাহরণঃ তিমির ফ্লিপার, বাদুড়ের ডানা এবং মানুষের অগ্রপদ।
  1. জীবন্ত জীবাশ্ম ও জীবাশ্ম এর মধ্যে পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।
জীবন্ত জীবাশ্মজীবাশ্ম
ইহা হল একপ্রকার জীবন্ত জীব।জীবাশ্ম হল জীবদেহের প্রস্তরীভূত অবস্থা।
এরা মূলত নিজ নিজ বাসস্থানে থাকে ।এদের পাওয়া যায় পাললিক শিলা স্তরের মধ্যে।
উৎপত্তি বহু বছর আগে হলেও এরা অপরিবর্তিতভাবে বর্তমানে বেঁচে আছে।একসময় তাদের অস্তিত্ব থাকলেও বর্তমানে এরা লুপ্তপ্রায়।
জীবের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তা জানা যায় জীবন্ত জীবাশ্ম থেকে। এটি মূলত সংযোগ রক্ষাকারী জীব হিসেবে কাজ করে  থাকে।বহু জীবের বিবর্তনের ইতিহাস জীবাশ্ম থেকে জানা যায়। জীবাশ্ম মূলত মিসিং লিঙ্ক হিসাবে কাজ করে থাকে।
উদাহরণ:প্লাটিপাস ,লিমুলাস প্রভৃতি।উদাহরণ: আর্কিওপ্টেরিক্স, ইওহিপ্পাস প্রভৃতি।
  1. উভচর ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হৃদপিন্ডের বৈসাদৃশ্যগুলি লেখ
উভচর প্রাণীদের হৃদপিন্ডস্তন্যপায়ী প্রাণীদের হৃদপিন্ড
উভচর প্রাণীর হৃদপিন্ড তিনটি প্রকোষ্ঠ যুক্ত হয়। যাদের মধ্যে উপরের দুটি প্রকোষ্ঠ হল অলিন্দ এবং নিচের প্রকোষ্ঠ টি হল নিলয়এদের হৃদপিণ্ড সবথেকে উন্নত এবং জটিল প্রকৃতির হয়। এদের হৃদপিন্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে যার মধ্যে উপরের প্রকোষ্ঠ দুটি অলিন্দের এবং নিচের দুটি প্রকোষ্ঠ হল নিলয়ের।
এদের হৃদপিন্ডে সাইনাস ভেনোসাস এবং কোনাস আর্টারিওসাস নামক প্রকোষ্ঠগুলির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হৃদপিন্ডে ওই সকল প্রকোষ্ঠ গুলি উপস্থিত থাকে না।
দূষিত ও বিশুদ্ধ রক্ত মিশ্রিত অবস্থায় থাকে।এদের হৃদপিণ্ড কখনোই দূষিত ও বিশুদ্ধ রক্তকে পরস্পরের সাথে মিশ্রিত হতে দেয় না।

 

error: Content is protected !!
Scroll to Top

আজকেই কেনো পরীক্ষার শর্ট নোটস

এখন সহজে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও – আজকেই ডাউনলোড করো পিডিএফ বা বই অর্ডার করো আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকে