fbpx

ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE Notes

Table of Contents

রাজনৈতিক কারাগার ও ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর হিসেবে ফ্রান্স

ফরাসি বিপ্লবের উৎসের অনুসন্ধানে, ঐতিহাসিক জর্জ লেফেভর  দাবি করেছেন যে ফরাসি বিপ্লবের উৎস তার পূর্বের ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া উচিত । অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে রাজতন্ত্র একটি জটিল অবস্থান এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল ।

ফরাসি  বিপ্লব পূর্ববর্তী রাজনৈতিক কাঠামো 

ফরাসি সম্রাট ত্রয়োদশ লুই এবং তার মন্ত্রী কার্ডিনাল রিশল্যুর শাসনের সময় কেন্দ্রীভূত স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বিকাশ ঘটে এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে ষোড়শ লুইয়ের রাজত্বকালে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতায় উন্নত হয় । ফরাসি রাজতন্ত্রের পতন, যা চতুর্দশ এবং পঞ্চদশ লুই-এর শাসনামলে শুরু হয়েছিল, ষোড়শ লুই সিংহাসন আরোহণের পরে তা আরও সমস্যাজনক হয়ে ওঠে । 

ষোড়শ লুই একজন দুর্বল রাজা ছিলেন, এই সম্ভাবনা রাজকীয় ইন্টেন্ডেন্টদের সীমাহীন শক্তিকে প্রসারিত করেছিল । স্থানীয় সরকারের কর্তৃত্ব তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় । বিভিন্ন দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা সেইসময় চালু ছিল । রাজার আদেশ বা শৃঙ্খলাকে প্রায়শই আইন হিসাবে গণ্য করা হত । অন্যদিকে বিচার বিভাগ ছিল দুর্নীতিগ্রস্থ । 

লেএ-দ্য-ক্যাশ, একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চালু করেন যার দ্বারা যেকোনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব ছিল । অপরাধের জন্য অভিযুক্ত যেকেউ লেএ- দ্য-গ্রেস জারি করে মুক্তি পেতে পারে । 

ফরাসি বিচার বিভাগ আর্থিক লেনদেন দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল আবার রাজতন্ত্র ছিল সংস্কারবিরোধী । বিপ্লবের আগে ফরাসী রাজতন্ত্রের এই সংকটকে ভলতেয়ার ‘রাজনৈতিক কারাগার’ হিসাবে মনোনীত করেছিলেন ।

ফরাসি বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের অর্থনৈতিক কাঠামো

শুধু রাজনৈতিক সংকটই না , অর্থনৈতিক সংকট এবং তা কাটিয়ে উঠতে সরকারের ব্যর্থতা বিপ্লবকে অনিবার্য করে তুলেছিল । রাজতন্ত্রের প্রশ্রয়, সেইসাথে অতিরিক্ত ঋণের বোঝা প্রয়োজনীয় সংঘর্ষকে আরও বাড়িয়ে তোলে ।
প্রশাসনিক ব্যয় বাজেটের পরিমাণ ছাড়িয়েছিল সাথে কর ব্যবস্থার ফলে জনগণ অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল । এই ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে, অ্যাডাম স্মিথের ‘ওয়েলথ অফ নেশনস’- এ প্রাক বিপ্লব ফরাসি অর্থনীতিকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে ।

কর ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

  1. সবচেয়ে ধনী শ্রেণী যাজক এবং অভিজাতদের কর প্রদান থেকে অব্যাহত দেওয়া হয়েছিল । যেহেতু সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীর ক্ষেত্রে পণ্যের করভার মুক্ত ছিল, তাই ভোগ্যপণ্যের উপর যে কর ধার্য ছিল তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । 
  2. পণ্যের দাম এই সময় বেড়েছিল এবং ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা কমেছিল । ফলে পরোক্ষ কর থেকে সরকারের রাজস্ব কমে যায় । ফলস্বরূপ, ঘাটতি পূরণের একমাত্র উপায় ছিল প্রাপক শ্রেণীর রাজস্বের সুবিধাগুলি দূর করা ।
  3. রাজা ষোড়শ লুই অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে এটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছিলেন । অভিজাতরা  নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বজায় রাখার জন্য এর পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন । 
  4. কিছু ঐতিহাসিক এই আন্দোলনকে অভিজাত বিদ্রোহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । মূলত, 1770 এর দশক থেকে ফ্রান্সের তীব্র অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিপ্লবের পথ তৈরি করে ।
  5. মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান, কর বৈষম্য এবং অন্যান্য বিষয়গুলি থেকে জনগণের মনে ক্ষোভের জন্ম হয়েছিল ।

বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের কর ব্যবস্থা   

  1. বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে যাজক এবং অভিজাতদের কোনো কর দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না । মূলত  তৃতীয় সম্প্রদায়ের থেকে অধিকাংশ কর নেওয়া হতো । 
  2. ফ্রান্সের কৃষকরা একটি বিশাল করের বোঝার শিকার হয়েছিল । তাদের নানারকম কর দিতে হতো যেমন চার্চকে দিতে হত টাইথ, রাজাকে দিতে হতো ডেইলি, ক্যাপিটেশন প্রভৃতি। 
  3. সবচেয়ে বেশি কষ্টকর হলো গ্যাবেল বা লবণ কর, এছাড়া সেন্স নামক এক প্রকার বাৎসরিক খাজনা দিতে হতো । এছাড়া প্রাপ্য ফসলের একাংশ সামন্ত প্রভুকে দিতে হতো যা স্যামপার্ট নামে পরিচিত ।  
  4. সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য লৎ এৎ ভেন্তি নামক কর, মদ এবং তামাকজাত  দ্রব্যের জন্য এইদস কর ইত্যাদি দিতে হতো । 
  5. ফরাসি কৃষকদের আয়ের আশি শতাংশ তাদের সমস্ত কর পরিশোধ করতে ব্যয়িত হয় । 
  6. পূর্বোক্ত টাইট বা ধর্মকর, কৃষকদের দশমাংশ কৃষি পণ্যের এক-দশমাংশ থেকে নেওয়া হত । 
  7. গম, বার্লি, ফলমূল, শাকসবজি, এমনকি প্রাণীজ পণ্য সবকিছুতেই কর দিতে হতো । অন্যদিকে যাজকদের  কর দিতে হত না, তারা শুধু কিছু অনুদান দিতেন ।

করভি 

সামন্ত প্রভুদের সামন্ত আইনের অধীনে বিভিন্ন ধরনের ভোটাধিকার ছিল । সামন্ততান্ত্রিক নীতি অনুসারে তার কাজ সম্পাদনের জন্য তিনি কৃষকদের কাছ থেকে সামাজিক সম্মানের পাশাপাশি কিছু বিশেষ সুবিধাও পেতেন ।

  1. কৃষকদের ম্যানরের প্রভুকে  বাধ্যতামূলক শ্রম বা করভি আর্থিক কর দিতে হতো । তাদের গম ভাঙ্গানো, খাদ্য প্রস্তুত প্রভৃতি কাজ করতে হত । 
  2. তা ছাড়া, রাস্তা নির্মাণ, দুর্গ নির্মাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই বাধ্যতামূলক শ্রম দিতে হয় । 
  3. প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের বাধ্যতামূলক পরিষেবা বা দায়িত্বের জন্য কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয় । 

বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজ কাঠামো

বিপ্লবের আগে, ফরাসি সমাজ তিনটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল । দুই শ্রেণী ছাড়া সেখানে যাজক, অভিজাত  এবং ফরাসি জনগণ ছিল । সামাজিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, ফরাসিরা দুটি বিভাগে বিভক্ত ছিল – 

  1. সুবিধাভোগী 
  2. সুবিধাহীন

প্রথম সম্প্রদায় 

ফ্রান্সের প্রথম সম্প্রদায়ের যাজকরা ছিল সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণী । রাষ্ট্রীয় আইনের থেকেও ঊর্ধ্বে ছিল এই সুবিধা প্রাপ্ত শ্রেণী । এমনকি তাদের কর দিতে  হত না । যাজক সম্প্রদায় ছিল সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র 1% । যাজক সম্প্রদায় দুটি দলে বিভক্ত ছিল: 

  1. উচ্চ  যাজক সম্প্রদায়
  2. নিম্ন যাজক সম্প্রদায়

চার্চের বার্ষিক আয় ছিল প্রায় 13 কোটি লিভ্র । জমি ছাড়াও, ধর্মঘর বা টাইথ যা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হতো, তা চার্চের আয়ের অন্য একটি উৎস ছিল। 

দ্বিতীয় সম্প্রদায়   

  1. উচ্চ বংশীয় ব্যক্তিরা এবং রাজা রানীর আত্মীয়স্বজন অসিধারী অভিজাত নামে পরিচিত ছিল । 
  2. যখন রাজা কাউকে সম্মানজনক পদে নিয়োগ করে তাকে একজন অভিজাত পদে উন্নীত করেন, তখন তাদের পোশাকি অভিজাত বলে । 
  3. পোশাকি অভিজাতের সংখ্যা তিন থেকে চার লক্ষের মত ছিল, এই অভিজাতরা  ছিলেন অত্যন্ত সুবিধাভোগী । 
  4. তারা ফরাসী সমাজে কর্তৃত্বের শীর্ষে প্রতিনিধিত্ব করত এমনকি নিয়মিতভাবে ব্যাংকিং, শিল্প ও প্রশাসন ব্যবস্থায় জড়িত ছিল ।

তৃতীয় সম্প্রদায়

  1. দুটি প্রভাবশালী শ্রেণী ছাড়াও, সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল ক্ষমতাহীন । এর মধ্যে ছিল বুর্জোয়া, কৃষক ও শ্রমিক । 
  2. পুঁজিপতি, ব্যাংকার, ঠিকাদার, সরকার, কর্মচারী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী, শিল্পী ইত্যাদি বুর্জোয়াদের সমন্বয়ে গঠিত ।
  3. অন্যদিকে প্রাক-বিপ্লবী ফ্রান্সের অধিবাসীদের অধিকাংশই ছিল কৃষিভিত্তিক সমাজের অন্তর্ভুক্ত । দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৭% ছিল কৃষক সম্প্রদায় । 
  4. ফরাসী শ্রমজীবী সমাজে কৃষক, দিনমজুর, মালি, কাঠুরে, রাজমিস্ত্রি প্রভৃতি বিভাজন ছিল। 
  5. অষ্টাদশ শতাব্দীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দরিদ্র কৃষকরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল । 
  6. এই শহরের দরিদ্র মানুষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশের গ্রামসমাজ থেকে এসেছে । তাদের বেতন ছিল অত্যন্ত কম । তাদের অনেকেই ভিক্ষা করতে বা সমাজসেবা করতে বাধ্য হয়েছিল 

দৈব রাজতন্ত্রের ধারণা

  1. প্রচলিত ছিল বিশ্বের বেশিরভাগ রাজতন্ত্র, কোন কোন সময় দৈব রাজতন্ত্রের ধারণাকে প্রাধান্য দিয়েছে । এই তত্ত্ব অনুসারে, রাজা তার প্রজা বা কোন বিশেষ ক্ষমতার কাছ থেকে রাজ্য শাসনের কর্তৃত্ব পাননি, এমনকি রাজা তার নিজের বিশেষ ক্ষমতার জন্য পাননি । 
  2. ঐশ্বরিক নির্দেশ অনুসারে, রাজা স্বয়ং ঈশ্বরের কাছ থেকে এই বিশেষত্ব অর্জন করেছিলেন । ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তিনি কারো কাছে দায়বদ্ধ নন । 
  3. দৈবরাজতন্ত্রের তত্ত্ব অনুসারে রাজা তার রাজ্যে আইন, বিচার এবং প্রশাসনের প্রধান । 
  4. কিছু ইংরেজ ও ফরাসি দার্শনিক রাজার সার্বভৌমত্বের বিরোধিতা করে সামাজিক চুক্তির ধারণা গড়ে তুলেছিলেন । ফরাসি বিপ্লবের আগে দার্শনিক রুশো এই তত্ত্বকে জনপ্রিয় করেছিলেন ।

ফরাসি স্বৈরাচার ও অর্থনৈতিক নীতি বিষয়ে দার্শনিকদের

সমালোচনার বিভিন্ন ধারা : 

ফরাসি জনগণ সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ ছিল । পরিবর্তনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি বা বিপ্লবের মানসিকতা এবং দার্শনিক জনসাধারণ এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ।

অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসি বিপ্লবের কেন্দ্রে ছিল যুক্তিবিদ্যা । সেই সময়ে, ফ্রান্সের একজন বুদ্ধিমান দার্শনিক এবং লেখক ধর্ম, সমাজ এবং ইতিহাস সম্পর্কে বৈপ্লবিক চিন্তার ঝড় তুলেছিলেন । ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবে ভলতেয়ার, মন্তেস্কু বা রুশো জীবিত ছিলেন না । প্রচলিত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্তৃত্বের ত্রুটিগুলির প্রতি শিক্ষিত জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মাধ্যমে বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই । 

মন্তেস্কু 

  1. মন্তেস্কুর প্রকৃত নাম ছিল ফ্রাঁসোয়া মারি আরুয়ে, তিনি অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তিনি ইংল্যান্ডের মুক্ত সামাজিক কাঠামোর অনুরূপ ফ্রান্সে সামাজিক সংস্কার চেয়েছিলেন । তার কাছে সব অযৌক্তিক ধারণা এবং প্রতিষ্ঠান ছিল অসহ্যকর ।
  2. মন্তেস্কু ক্যাথলিক চার্চকে “A PRIVILEGED  NUISANCE” হিসেবে উল্লেখ করেছেন । বিতর্কের প্রধান বিষয় ছিল সাংবিধানিক সমস্যা । তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, সমস্যাগুলি আরও বাড়বে যদি প্রশাসন, আইন এবং আদালত একই ব্যক্তি বা সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
  3. মন্তেস্কু 1748  সালে প্রকাশিত তাঁর বই ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’ -এ ক্ষমতা বিভাজনের তত্ত্ব বর্ণনা করেছেন । এই তত্ত্ব অনুসারে, আইন, বিচার এবং প্রশাসন বিভাগ পৃথক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন । 
  4. মন্তেস্কু তার অন্য আরেকটি বই ‘দি পার্সিয়ান লেটারস’  [১৭২১]-এ ফরাসি সমাজ, অভিজাততন্ত্র এবং রাজতন্ত্রের প্রধান ত্রুটি ও অপ্রতুলতাকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন । 

ভলতেয়ার

  1. ভলতেয়ার ছিলেন একজন দার্শনিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক । ‘লেতর ফিলজফিক’ এবং ‘কাঁদিদ’ হলো তাঁর দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ । 
  2. ব্যঙ্গাত্মকভাবে সমাজ ও ধর্মীয় সংগঠনের দুর্বলতা প্রকাশে তাঁর কোনো সমকক্ষ ছিল না ।
  3. তিনি তাঁর শ্লেষাত্মক লেখার মাধ্যমে গির্জা ও যাজকদের দুর্নীতি ও অনাচার সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সজাগ করেন । স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার অস্বীকার করার বিষয়েও তিনি আপত্তি জানিয়েছেন ।

রুশো 

  1. জাঁ-জেকুইস রুশো ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর সবচেয়ে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় লেখক। রুশো বিশ্বাস করতেন যে, মানুষ একটি স্বাধীন সত্তা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে । যদিও সারা বিশ্বে মানুষ দাসত্বের শিকার । সেই আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক স্বাধীনতা অর্জন করা মানুষের দায়িত্ব ।
  2. তাঁর সবচেয়ে সুপরিচিত গ্রন্থ হল ‘সামাজিক চুক্তি বা Social Contract’ । তিনি এই গ্রন্থে দাবি করেন যে, আদিম মানুষ একটি অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে ব্যক্তিবিশেষকে শাসকের পদ দিয়েছে । অর্থাৎ রাষ্ট্র হলো জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্বকারী । রাজার দেবত্ব ভুল । 
  3. জনগণের সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রয়োগের অধিকার রয়েছে । তিনি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাকে পদচ্যুত করার আইনগত অধিকার জনগণের রয়েছে । রুশোর রচনা সারাদেশে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে । 
  4. ‘SOCIAL CONTRACT’ ব্যতিত তাঁর অন্য একটি বিখ্যাত গ্রন্থ ছিল ’ORIGIN OF INEQUALITY’ বা অসাম্যের সূত্রপাত । এই গ্রন্থে , তিনি দেখিয়েছেন যে মানুষ সমান অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে কিন্তু লোভী এবং স্বার্থপর সামাজিক ব্যবস্থার কারণে সে প্রতিবাদ করার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হয় । 
  5. তাঁর সামাজিক চুক্তির ধারণা জনগণকে রাজার অন্যায় অর্জনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল । 
  6. ডেনিস ভিডেরো, ডি-অ্যালেমবার্ট প্রমুখেরাও  দার্শনিক রাষ্ট্র এবং গীর্জার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন । 
  7. তিনি 35টি খণ্ডে একটি বিশাল বিশ্বকোশ সংকলন করেন যেখানে রাজ্যের সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক এবং ঐতিহাসিক যুক্তিসম্মত সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা রয়েছে । 
  8. জিন মেসলিয়েরও ফরাসী চার্চ, রাজতন্ত্র এবং আভিজাততন্ত্রের তীব্র নিন্দা করেন এবং সমাজতন্ত্র গঠনের আহ্বান জানান ।
  9. অন্যদিকে ফিজিওক্রাট  দার্শনিকরা অর্থনৈতিক উদ্বেগের বিষয়টির উপর জোর দিয়েছেন । তাঁরা বিশ্বাস করত যে জমিই হলো রাষ্ট্রের সম্পদের উৎস । ফলে তারা কৃষি প্রবৃদ্ধি এবং মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন । 
  10. ফ্রান্সের পুরানো আর্থিক নীতির বিরোধিতা করে, তাঁরা ফরাসী বিপ্লবের মানসিকতা গঠনে অবদান রেখেছিল, যা প্রকৃত আর্থিক নীতির সাথে মিশ্রিত ছিল ।

ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার নেপথ্যে, দার্শনিকদের ভূমিকা সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে । আবার লেফেভর, মাতিয়ে , মর্স স্টিফেন্স, কোবান প্রমুখের বিভিন্ন মত রয়েছে । এদের মত  বেশিরভাগ দার্শনিকরা প্রায় প্রত্যেকেই ছিল হিংসা ও রক্তপাতের বিরোধী । তাঁদের প্রত্যেকের নিজস্ব লক্ষ্য এবং দর্শন ছিল এবং তাদের কেউই বিপ্লবের পক্ষে ছিলেন না । আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বাস্তবে বিপ্লবের প্রেক্ষাপট তৈরী করেছিল যা পরোক্ষ ভাবে আন্দোলনের জন্ম দেয় ।

সামাজিক ক্ষমতা ও সম্পদ বন্টনের অসাম্যের বিরুদ্ধে জনমত গঠন :  

  1. বিপ্লবের প্রেক্ষাপট রচনার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছিল, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্য এবং বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ । প্রকৃত অর্থে জনগণের ভাবনাই বিপ্লবের জন্ম দিয়েছে । 
  2. বুদ্ধিজীবী দার্শনিকদের লেখা পড়ার ফলে সাধারণ মানুষ পুরাতন তন্ত্রের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা হারিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি একটি সমালোচনামূলক এবং যুক্তিসঙ্গত হয়ে উঠেছিল । বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সভাসমিতিতে সাধারণ মানুষের দাবি ব্যক্ত করা হয় ।
  3. মুষ্টিমেয় অভিজাত এবং যাজকদের হাতে সমস্ত ক্ষমতা এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা তারা সাধারণত মেনে নেয়নি । বরং শক্তিশালী শ্রেণীর অর্থনৈতিক শক্তি তাদের আরও বিক্ষুব্ধ করে তোলে । এই সমস্ত বৈষম্য দূর করতে ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ বিপ্লবী হয়ে ওঠে ।

অভিজাতদের তরফের রাজার বিরোধিতা :  
১৭৭০ এবং ৮০-র দশকের মধ্যে ফরাসি রাজকোশের সমস্যাটি আরও বেড়েছিল, বারবার যুদ্ধ এবং রাজার পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার কারণে আয়ের থেকে ব্যয় ছিল বেশি । 

এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য, অর্থমন্ত্রী তুরগো, নেকার, ক্যালোন প্রত্যেকে রাজাকে প্রথম দুটি সম্প্রদায়ের কর আরোপের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন । রাজার পরামর্শ অনুযায়ী কর ব্যবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টা করলে অভিজাতরা রাজার বিরোধিতা শুরু করে ।

 

তারা দাবি করে যে তিনটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত শুধুমাত্র জেনারেলেরই কর ব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষমতা রয়েছে, রাজার নয় । তাদের দাবির জবাবে, রাজা ষোড়শ লুই ১৭৮৯ সালের মে মাসে এস্টেট জেনারেলের একটি সভা ডাকেন ।  

অভিজাততন্ত্র নিকট  রাজা ষোড়শ লুই-এর উক্ত পরাজয়কে ঐতিহাসিক  জর্জ লেফেভর ‘ অভিজাত বিপ্লব ‘ হিসেবে অভিহিত করেছেন ।

বাস্তিলের পতন

বাস্তিলের পতন ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা । নিম্নলিখিত কারণগুলি বাস্তিলের পতনে অবদান রাখে ।

এস্টেট জেনারেল নিয়ে রাজার সঙ্গে জিরন্ডিস্ট ও জ্যাকোবিনদের দ্বন্দ্ব 

  1. আর্থিক মন্ত্রীদের পরামর্শে, ষোড়শ লুই সিংহাসন আরোহনের সাথে সাথে অভিজাতদের উপর বাড়তি কর আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেন  (তুর্গো, নেকার, ক্যালোন প্রমুখ) । ফলস্বরূপ, রাজা এবং অভিজাতদের মধ্যে একটি বিভেদ তৈরি হয় । 
  2. অন্যদিকে, অভিজাত এবং যাজকরা  ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের জন্য উপযোগী সংস্কার নিয়েও ভাবনাচিন্তা করেনি বরং নিজেদের স্বার্থের দিক দিয়ে চিন্তা করেছে ।
  3. কিন্তু তৃতীয় স্টেটের সদস্যরা মধ্যবিত্ত ও বুর্জোয়া শ্রেণি, যাজক শ্রেণি  ফ্রান্সের সংস্কারের কথা ভেবেছিলেন । ফলে ফরাসি রাজনীতিতে বেশ কয়েকটি ক্লাব লক্ষ্য করা যায় । এই ক্লাবগুলির মধ্যে একদিকে লাফায়েৎ , মিরাবোঁ এবং আবে সিয়েসের  মতো উদারপন্থী এবং অন্যদিকে রোবসপিয়র এবং দাঁতোর মতো মৌলবাদীরা অন্তর্ভুক্ত ছিল। জিরন্ডিস্ট ও জ্যাকোবিন গোষ্ঠীর উৎপত্তি হয়েছিল এই রাজনৈতিক ক্লাবগুলোর থেকেই।
  4. ষোড়শ লুই 1789 সালের মে মাসে, এস্টেট জেনারেল আহ্বান করলে  তৃতীয় এস্টেট এবং রাজনৈতিক দলগুলি আশাবাদী হয়েছিল । তৃতীয় এস্টেট নির্বাচিত বুর্জোয়া প্রতিনিধিরা হলেন অর্জে, মুনিয়, বারনেভ, রোবসপিয়র প্রমুখ । দায়িত্বে ছিলেন লাফায়েৎ ও আবে সিয়েস । এই নেতারা বিশেষ করে জিরোন্ডিস্ট বা জ্যাকবিনের অন্তর্ভুক্ত । 
  5. এস্টেট জেনারেলের প্রথম অধিবেশনে অভিজাতদের প্রধান দাবি ছিল রাজার কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতার আইনি সংস্কার । কিন্তু সাম্য ছাড়া স্বাধীনতার কোনো দ্বিতীয় অর্থ ছিল না তৃতীয় এস্টেটের সদস্যদের কাছে । 
  6. তারা এস্টেট জেনারেলের তিনটি সম্প্রদায়ের অর্থাৎ অভিজাত, ধর্মযাজক এবং তৃতীয় এস্টেটের  একটি যৌথ অধিবেশন চেয়েছিল । কারণ শুধুমাত্র তখনই ফ্রান্সে জনকল্যাণমূলক সংস্কার কল্পনা করা যেতে পারে । 
  7. পরামর্শদাতাদের প্রভাবে, রাজা এই দাবি পূরণ করতে অস্বীকার করেন এবং তৃতীয় দলের নেতারা রাজতন্ত্রকে প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করেন । 
  8. 10 জুন, 1789-এ, আবে সিয়েস, যাজক এবং অভিজাতরা তৃতীয় এস্টেটে পুনরায় যোগদান করার অনুরোধ করেন ।
  9. কিন্তু এই অনুরোধ গ্রাহ্য না হওয়ার ফলে তৃতীয় স্টেটস নিজেকে ‘জাতীয় সভা’ বলে অভিহিত করে । ফলে রাজা 22 শে জুন একটি অধিবেশনের আহ্বান জানান তিনটি  সম্প্রদায়কে একত্রে মিলিত করার জন্য । 

টেনিস কোর্টের শপথ

20 জুন, 1789 খ্রিস্টাব্দে, সভাগৃহ বন্ধ থাকলে তৃতীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয় । তারপর তারা জিয়াত্যঁর নেতৃত্বে নিকটবর্তী একটি টেনিস কোর্টে সমাবেশ করে এবং ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান না লেখা পর্যন্ত তাদের ঐক্য বজায় রাখার শপথ নেয় । এটিকে টেনিস কোর্ট শপথ বলে উল্লেখ করা হয় ।

তৃতীয় সম্প্রদায়ের জয়

টেনিস কোর্টের শপথ ছিল স্পষ্টতই রাজতন্ত্র বিরোধী । ফলস্বরূপ, 23 জুন, রাজা ষোড়শ লুই অধিবেশনের  সমস্ত তৃতীয়-সম্প্রদায়ের কার্যকলাপকে বেআইনি ঘোষণা করেছিলেন । এমনকি তিনি সম্মেলন কক্ষ থেকে সবাইকে চলে যেতে বলেন । 

প্রথম দুটি সম্প্রদায় রাজার নির্দেশ অনুসরণ করলেও, তৃতীয় সম্প্রদায় তা মেনে নেয়নি । এই পর্বের পরে, সংখ্যাগরিষ্ঠ যাজক  এবং কিছু অভিজাত তৃতীয় সম্প্রদায়কে সমর্থন করেছিলেন । ফলে এস্টেট জেনারেল বিভক্ত হয়ে পড়ে । 

ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে 830 জন সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, যেখানে রাজার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন 371 জন প্রতিনিধি । ফলস্বরূপ, 27 জুন, রাজা তৃতীয় সম্প্রদায়ের অনুরোধে সম্মত হন এবং একটি জাতীয় সংসদ গঠনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় । ফলে তৃতীয় সম্প্রদায়ের জয় হয় । 9 জুলাই জাতীয় সভা নাম পরিবর্তন করে সংবিধান সভায় ।

বাস্তিল দুর্গের পতন 

  1. বুর্জোয়াদের দাবি মেনে নিয়ে জাতীয় সভা গঠনের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছিল, কিন্তু রাজা ও অভিজাতরা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত ছিল না । রাজতন্ত্রের পক্ষে সেনা মোতায়েন করা হলে বুর্জোয়াদের আন্দোলন চাপে পড়ে । 
  2. অভিজাতদের কথায় রাজা ষোড়শ লুই সংস্কারক অর্থমন্ত্রী নেকারকে বরখাস্ত করেন এবং 11 জুলাই তাকে দেশ ত্যাগ করার নির্দেশ দেন । ফলস্বরূপ, দেশের পরিস্থিতি উত্তেজক হয়ে ওঠে এবং জনগণ বিদ্রোহ সংঘটিত করে, যার পরিণতি বাস্তিলের পতন ।
  3. খাদ্য উৎপাদন হ্রাস, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং সরকারের বৈষম্যমূলক করনীতি ফ্রান্সের নিম্ন শ্রেণীর মধ্যে ব্যাপক বিদ্বেষ ও অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে । ফ্রান্সে, বিশেষ করে প্যারিসের পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ ছিল ।
  4. 14 ই জুলাই ক্ষিপ্ত জনতার বাস্তিল দুর্গ আক্রমণের আভাস মিলেছিল 12 ই জুলাই । এই দুর্গটি স্বৈরাচারী রাজকীয়তা এবং কঠোর সামন্তবাদের প্রতীক ছিল । 
  5. সেই সময়ে জানা যায় যে, প্রায় ত্রিশ হাজার রাজকীয় সৈন্য জনগণের বিরুদ্ধে বাস্তিলে একত্রিত হওয়ার পরিকল্পনা করছে । বাস্তিল প্রকৃতপক্ষে সুরক্ষিত ছিল না ।  
  6. উদ্দেশ্য অনুযায়ী বাস্তিল জয় করা হয়নি, কিন্তু কাকতালীয়ভাবে, জনতা দুর্গে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল । ফলে তারা দ্রুত দুর্গ দখল করে নেয় এবং বাস্তিলের পতন সম্পন্ন হয় ।

স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বাস্তিলের ধ্বংস 

বাস্তিলের উপর হামলা ছিল কর্তৃত্ববাদী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ । কারণ বাস্তিল ছিল বুরবোঁ শাসকদের অত্যাচার ও নিপীড়নের প্রতীক । রাজতন্ত্র এবং অভিজাততন্ত্র উভয়ই অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে ছিল । 

এরফলে গণবিক্ষোভ রাজতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় । রাজতন্ত্র বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি । রাজা এই পরিস্থিতিতে জাতীয় সভার কাছে আত্মসমর্পন করে । অর্থমন্ত্রী নেকারকে রাজা ফিরিয়ে আনায়  অভিজাতদের চক্রান্ত ব্যর্থ হয় । 

বাস্তিলের পতন কৃষক বিদ্রোহকে উৎসাহিত করেছিল এবং স্বৈরাচারের অবসানের সূচনা হয় । বাস্তিলের পতনের পর, বিপ্লব প্যারিসসহ বেশ কয়েকটি শহরে এবং তারপর গ্রামাঞ্চলে প্রসারিত হয়েছিল । শহরে পৌর বিপ্লব শুরু হয় ।

যে পৌরসভা পুরাতন তন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতা করছিল তা বিপ্লবী জনমতের চাপে পড়ে পৌরসভাগুলি নতস্বীকার করতে বাধ্য হয় । পুরনো পৌরবোর্ডগুলো বাতিল হয়ে নতুন বোর্ড গঠন হয় । ধীরে ধীরে পৌরসভাগুলি গণতান্ত্রিক ও মানবিক উদ্যোগ বাস্তবায়নে কর্মসূচি গ্রহণ করে অন্যদিকে প্যারিস প্রশাসন ও জাতীয় রক্ষাবাহিনী গঠিত হয় ।

প্যারিস কমিউন (1789-1795) 

প্যারিস কমিউন ছিল বাস্তিলের পতনের পর ফ্রান্সে গড়ে ওঠা নতুন পৌর প্রশাসন । এটি প্যারিসের 48টি বিভাগের 144 জন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয়েছিল । জাঁ সিলভ্যাঁ বেইলি ছিলেন শহরের প্রথম মেয়র । 

হিংস্র জ্যাকবিন নেতারা 1792 এবং 1795 সালের মধ্যে প্যারিস কমিউনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। এই সময় যদিও, কমিউনের প্রধান দায়িত্ব ছিল বিপ্লববিরোধী এবং পৌর প্রশাসন উভয়কেই পরাজিত করা । বেশ কয়েকবার বিপ্লবী কমিউন একইভাবে সরকারের আদেশ মানতে অস্বীকার করে । 1795 খ্রিস্টাব্দে পরিচালকের রাজত্ব শুরু হলে প্যারিস কমিউনের অবসান হয় ।

জাতীয় তথা সংবিধান সভা

তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিনিধিরা 1789 সালের জুন মাসে টেনিস কোর্টে একটি নতুন সংবিধান তৈরির শপথ নেন যা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ৯ ই জুলাই সেই কাজ শুরু হয় এবং এটিই জাতীয় সভা সংবিধান নামে পরিচিত । 

মুনিয়ের, বার্নেভ, চার্লস ল্যাথাম, লাফায়েৎ, মিরাবোঁ এবং অন্যান্যদের মতো বিখ্যাত বিপ্লবীরা সংবিধান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ।

1791 খ্রিস্টাব্দে একটি সংবিধান রচিত হয় । সরকারী সংবিধান প্রণয়নের আগে, সংবিধান সভা দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে । 

  1. 4 আগস্ট, 1789 সালের ঘোষণার মাধ্যমে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সামন্ততান্ত্রিক বিশেষাধিকার বিলুপ্ত করা হয়েছিল । আইনি সমতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বীকৃত পায়। 
  2.  অসংখ্য পদের জন্য যাজকদের নিয়োগ করা, বেগার শ্রম, ধর্মীয় কর নিষিদ্ধ করা হয় ।

26শে আগস্ট, 1789 খ্রিস্টাব্দে, নাগরিকদের অধিকার ঘোষণা হয় , ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ঘোষণা দ্বারা, যোগ্যতার ভিত্তিতে সহকারী পদের নিয়োগ প্রভৃতি জনকল্যাণমুখী কাজকর্ম গ্রহণ করা হয় । 

জাতীয় সভা তথা সংবিধান সভার গুরুত্ব 

জাতীয় সভা এবং সংবিধান সভা দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল । 

  1. এই সভার কার্যক্রম রাজনীতি, প্রশাসন, ধর্ম এবং অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে । 
  2. এই সভার প্রচেষ্টার ফলে ফরাসি জাতির পুনরুজ্জীবন ঘটে ।
  3. প্রশাসনিক কারণে, ফ্রান্স ৮৩ টি প্রদেশে বিভক্ত হয়েছিল । 
  4. গির্জার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় । 
  5. সংবিধান সভা ” সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্লার্জি” (1791) নামে একটি আইন পাস করে । 

অন্যদিকে, জাতীয় পরিষদের অধিবেশনগুলিতে বুর্জোয়া উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল । সংবিধান সভা একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় রাজতন্ত্র তৈরি করে । 

  • এই সম্মেলন দরিদ্রদের রাজনৈতিক অধিকার প্রদান করেনি । 
  • সাম্যের নীতি স্বীকৃত হওয়া সত্ত্বেও নিষ্ক্রিয় নাগরিকদের ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল । 
  • বাস্তবে এর দায়িত্ব ধনী বুর্জোয়াদের সংকীর্ণ স্বার্থে সীমাবদ্ধ ছিল ।

দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব

1789 সালে শুরু হওয়া ফরাসি বিপ্লব একটি নতুন সংবিধান, একটি নতুন আইনসভা এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠান তৈরির নেতৃত্ব দেয় । 1791-92 সালের ঘটনাগুলি ফ্রান্সে আরেকটি বিপ্লব ঘটায় । রাজা এবং তার পরিবার প্রাসাদ ত্যাগ করেন এবং 1791 সালের জুন মাসে ধরা পড়েন ।

See also  Chapter 12- Hunting Snake- Class 9 WBBSE English Notes Suggestions

রাজার ভবিষ্যত নিয়ে, জাতীয়সভার সঙ্গে জ্যাকবিন এবং কর্ডেলিয়ার ক্লাবের সাথে মতবিরোধ দেখা দেয় । পাদুয়া আর পিলনিজের ঘোষণায় জুলাই-আগস্টে  প্রাশিয়া এবং অস্ট্রিয়া ফরাসি বিপ্লবের বিরোধিতা করে । 

অবশেষে, 1792 সালে, ফ্রান্স এপ্রিলে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । যখন প্যারিসের দিকে অস্ট্রিয়া বাহিনী এগোতে থাকে ঠিক সেইসময় আইনসভা ‘পিতৃভূমি বিপন্ন’ ঘোষণা করে । 

দাঁতোর নেতৃত্বে প্যারিস, কমিউন শহরটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখল করে । 10 আগস্ট, রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, একটি নতুন সংবিধান এবং সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ভোটাধিকারের ভিত্তিতে একটি নতুন সরকার গঠন করা হয়েছিল । 22শে সেপ্টেম্বর, প্রথম ফরাসি প্রজাতন্ত্র তৈরি হয়েছিল । ফরাসি ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব নামে পরিচিত।

সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড

অস্ট্রিয়ার সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবী সরকারের যুদ্ধ শুরু হলে ফরাসি সৈন্যরা প্রথমেই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলে অস্ট্রিয়া বাহিনী ফ্রান্সের দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসতে থাকে এবং তাদের সতর্ক করা হয়, বিপ্লবীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে যদি তারা রাজা বা তার পরিবারের কোনো সদস্যদের ক্ষতি করে । 

রাজা বা তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করলে বিপ্লবীদের ভয়ানক শাস্তি দেওয়ার সতর্ক করে অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী ফ্রান্সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে ।

এই ঘোষণা প্যারিসের বিপ্লবী জনতাকে ক্ষুব্ধ ও আতঙ্কিত করেছিল । তারা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন ছিল যে, কারাগারে বন্দী বিপ্লববিরোধী যাজক, অভিজাত এবং অন্যান্যদের মুক্তি দিলে তারা বিপ্লবীদের বিরোধিতা করবে বা সাক্ষ্য দেবে । 

ভয় ও গুজবের এই পরিবেশে বিপ্লবী জনতা প্যারিস কারাগারে হামলা চালায়, 1,200 থেকে 1,400 বন্দিকে হত্যা করে ।

হত্যাকাণ্ড 2 সেপ্টেম্বর থেকে 7 সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঘটেছিল । নিহতদের মধ্যে 233 জন যাজক  ছিলেন, কিন্তু তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ অপরাধী ছিল । প্যারিস কমিউন মৃত্যুদণ্ড রোধ করার জন্য কিছুই করেনি, তবে তাদের অনুরোধে অন্যান্য ফরাসি জেলে একই ধরনের হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল ।

রাজা ষোড়শ লুইয়ের মৃত্যুদণ্ড

জ্যাকবিন এবং জিরন্ডিস্টদের মধ্যে বিভেদ জাতীয় সভার কার্যক্রমের উপর প্রভাব ফেলেছিল । 1792 সালের 21শে সেপ্টেম্বর জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে রাজতন্ত্র বাতিল করা হয় । ফলস্বরূপ, 22 সেপ্টেম্বর, 1792 সালে, ফরাসি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । 

  1. টেম্পল জেলে রাজা ষোড়শ লুই এবং তার পরিবারকে বন্দি করা হয়েছিল । 
  2. জ্যাকবিন দলের নেতা রোবসপিয়র জনতাকে প্রাধান্য দিয়ে, রাজার বিচার ছাড়াই রাজাকে মৃত্যুদন্ডের পরামর্শ দেন । কনভেনশনের একমাত্র কাজ ছিল রাজার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা । 
  3. কিন্তু কনভেনশন রাজাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিলেও প্রমান পাওয়া যায় তিনি ফরাসী জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার পরিকল্পনা করার জন্য বিদেশী শক্তির সাথে যোগ দিয়েছিলেন । 
  4. 11 ডিসেম্বর, 1792 তারিখে, রাজাকে জাতীয় সভার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল । তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । জ্যাকবিন বিরোধীরা রাজার মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেছিল । 
  5. জিরোন্ডিস্টরা তার বিচার করতে চায়নি এমনকি মৃত্যু তো নয় ই । তারা রাজার ভবিষ্যত সম্পর্কে কনভেনশনের সিদ্ধান্তের ভোট নিতে চেয়েছিলেন । এটিকে জ্যাকবিনরা “প্রতিবিপ্লবী” বলে অভিহিত করেছিলেন ।
  6. অনেক মধ্যপন্থী, যেমন দাঁতোর ধারণা ছিল যে রাজাকে হত্যা করা হলে, ইউরোপের সমস্ত শাসক ফ্রান্সের উপর প্রতিশোধ নিতে একত্রিত হবে ।
  7. অবশেষে জাতীয় সভার বেশিরভাগ সদস্য রাজার ফাঁসির পক্ষে ভোট দিয়েছিল । মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে ভোট ৩৮৭ জন, বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩৪৪ জন । ফলস্বরূপ, 21 জানুয়ারী, 1793 সালে, রাজা ষোড়শ লুইকে গিলোটিন দ্বারা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল ।

বিপ্লব রক্ষার আহ্বান 

1792 সালে রাজতন্ত্রের অবসান হওয়া সত্ত্বেও, ফ্রান্স পরিস্থিতি ঠিক করতে পারেনি কারণ বিপ্লবীরাও ঐক্যবদ্ধ ছিল । একদিকে, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সমস্যাটিকে জটিল করে তোলে; অন্যদিকে, প্রতিবিপ্লবী শক্তি বিষয়গুলোকে জটিল করে তোলে । 

অভ্যন্তরীণভাবে এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই ফ্রান্স সমস্যার সম্মুখীন হয় । এই ধরনের প্রেক্ষাপটে বিপ্লব বা বিপ্লবী লক্ষ্যগুলি সংশয়ের সম্মুখীন হয় । ফলে বিপ্লব রক্ষা করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে ।

অভ্যন্তরীণ সংকট ও বৈদেশিক আক্রমণের মুখে ফরাসি বিপ্লব   

ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে ফ্রান্স আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল । অভ্যন্তরীণভাবে, জাতীয় কনভেনশনের সদস্যরা সেই সময়ে অনেক দলে বিভক্ত ছিল । ঠিক এই সময়, জিরোন্ডিস্ট এবং জ্যাকবিন উভয় দলের মধ্যে মতপার্থক্য বৃদ্ধি পায় । ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের ফলে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হয় এবং অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হয় ।

  1. খাদ্যশস্যের দাম অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে বাড়ে । প্যারিস সহ অনেক জায়গায় রুটির জন্য দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে । 
  2. বিপ্লবী সরকারের ভুল সামরিক কৌশল সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছিল । বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবার নীতি বেশ কয়েকটি সমস্যা সৃষ্টি করে । লা ভেন্ডি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় । 
  3. এ সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিস্থিতিও উত্তপ্ত হয় । ফরাসী সম্রাটের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গি রাজপরিবারের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে ।
  4. বৈদেশিক দিক থেকেও ফ্রান্সে একই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় । পাদুয়া এবং পিলনিজের ঘোষণাটি তখন উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ছিল । 
  5. ফরাসী বিপ্লবের নীতি এবং ধারণাগুলি ইউরোপীয় রাজবংশের কাছে ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে হয়েছিল । 
  6. ষোড়শ লুই-এর স্ত্রী, মেরি আঁতোয়ানেৎ , অস্ট্রিয়ান সম্রাট লিওপোল্ডের আত্মীয় হওয়াই, অস্ট্রিয়া তীব্র বিরোধিতা করে । একইসঙ্গে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রাশিয়ার মতো বিভিন্ন শক্তিগুলি চক্রান্ত শুরু করে । 
  7. অন্যদিকে ফ্রান্স আক্রমণ করে পুরানো ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য , এই ধরনের মানসিকতা যুদ্ধের মঞ্চ তৈরি করে । লুই ষোড়শের মৃত্যু এই ধরনের বিষয়গুলিকে জটিল করে তোলে । 
  8. ফলস্বরূপ, ফ্রান্স ইউরোপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে । ফ্রান্সের বিরোধিতা করে প্রথম শান্তি জোট তৈরি হয়েছিল । ফ্রান্স বড় শক্তি যেমন ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, স্পেন ইত্যাদির সাথে লড়াইয়ে যোগ দেয় । 
  9. একের পর এক যুদ্ধে ফ্রান্সের ব্যর্থতা বিষয়টিকে জটিল করে তোলে । অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশী উভয় অসুবিধার সংকটের মুখোমুখি হয় ফরাসি বিপ্লব এবং জ্যাকবিনের একনায়কতন্ত্র এমন একটি কঠিন পরিস্থিতিতে দেখা দেয় ।

জ্যাকোবিন ক্লাব 

ফরাসি রাজনৈতিক কিছু ক্লাবের নাম ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত । জ্যাকবিন ক্লাব এবং কর্ডেলিয়ার ক্লাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । 

  1. 1789 সালের অক্টোবরে, জ্যাকবিন ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় । 
  2. ক্লাবের লিখিত নিয়মকানুন এবং ঘোষিত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য 1790 সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদিত হয়,  প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র আইনসভার প্রতিনিধিরা সদস্য হতে পারে । 
  3. পরে অন্যান্য নাগরিকদের যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় । 
  4. প্রথমদিকে  সক্রিয় করদাতারা জ্যাকবিন ক্লাবের সদস্য হতে পারতেন । 
  5.  নিষ্ক্রিয় নাগরিক কেবল কথোপকথন এবং যুক্তি শুনতে পারতো । 
  6. 1792 সালে প্রজাতন্ত্র গঠনের সময় জ্যাকবিন ক্লাবের সদস্যরা নরমপন্থী জিরন্ডিন এবং উগ্রবাদী  মাউন্টেন উভয় দলকে নিয়ে গঠিত ছিল । 
  7. 1793 সালের মাঝামাঝি সময়ে, মাউন্টেনরাই ক্লাব এবং বিপ্লবী সরকারের উপর তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং  জিরন্ডিন সদস্যদের বহিষ্কার করা হয়েছিল । জ্যাকবিনরা এই সময় থেকে বিপ্লবের অবসান পর্যন্ত ফরাসি বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিল ।

কর্ডেলিয়ার ক্লাব

  1. জ্যাকবিন ক্লাবের মাত্র কয়েক মাস পরে 1790 সালের এপ্রিল মাসে কর্ডেলিয়ার ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । 
  2. 1790 সালের মধ্যে, যত গোষ্ঠী ছিল তাদের মধ্যে কর্ডেলিয়ার ক্লাবে ছিল সবচেয়ে চরমপন্থী গোষ্ঠী ।
  3. একটি ন্যূনতম চাঁদা দিয়ে, সমস্ত ধরণের সক্রিয় এবং নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি সদস্য হতে পারত ।
  4. কর্ডেলিয়ার ক্লাবে দাঁতো এবং হিবার্ট ছিলেন উল্লেখযোগ্য সদস্য । 
  5. 1792 সালে দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লবের সূচনা করার ক্ষেত্রেও ক্লাবের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যখন 1791 সালের জুনে রাজপ্রাসাদ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাজার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল ।

জ্যাকোবিন শাসন

ফরাসি জাতীয় কনভেনশনের সময় জ্যাকবিন এবং জিরোন্ডিস্ট  দুটি সবচেয়ে প্রভাবশালী সংস্থা ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে জিরোন্ডিস্টদের জনসমর্থন কমতে শুরু করে । জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জিরোন্ডিস্টরা জরুরি অবস্থা বিবর্তনের বিরোধিতা করলেও এই বিষয়টিতে জ্যাকোবিনরা বিশেষ লক্ষ্য দেয় । 

এরূপ পরিস্থিতিতে জিরোন্ডিস্টদের পরাজয় হলে জনসমর্থন পেয়ে জ্যাকোবিন সরকার গঠিত হয় । 2 জুন, 1793 সালে, জ্যাকবিনরা ফ্রান্সের দায়িত্ব নেয় । 

নবনির্মিত জ্যাকবিন সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল- 

  1. একটি সমন্বিত এবং শক্তিশালী প্রশাসক সংস্থা 
  2. একটি নিষ্ক্রিয় সংসদ এবং একটি সুসংহত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা 

জ্যাকবিন একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং বিদেশী আক্রমণের বিরুদ্ধে জাতিকে রক্ষা করার জন্য । ক্ষমতা দখলের পর জ্যাকবিনরা দুটি বিষয়ে মনোনিবেশ করেন –

  1. সাঁকুলোৎদের যতটা সম্ভব দূরে রেখে উগ্রপন্থী, বিপ্লবীদের প্রভাবকে দুর্বল করা বা নির্মূল করা 
  2. জিরন্ডিস্টদের পক্ষে যেকোন সম্ভাব্য আন্দোলন বা প্রতিক্রিয়ার মূল  উৎপাটন এবং সেইসাথে প্রদেশগুলির বিদ্রোহকে দমন করা 

জ্যাকবিন প্রজাতন্ত্র তাদের কাজকর্ম ‘দ্য গ্রেট কমিটি’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করত । এই কমিটি ১২ জন সদস্যের ছিল, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রোবেয়ার লিদেঁ, বিলেভোরেন, কুর্তো, রোবসপিয়র প্রমুখ । এদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিল রোবসপিয়র ।

তিনটি মাধ্যমের সাহায্যে জ্যাকোবিন শাসনকাজ চালাত – 

  1. গন নিরাপত্তা কমিটি
  2. বিপ্লবী আদালত 
  3. গিলোটিন

কমিটিকে বেশ কিছু কঠিন ও নিপীড়নমূলক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল । জ্যাকবিন সরকার কেবল ভয়ের প্রতীক ছিল না; বেশ কয়েকটি সংস্কারমূলক কাজ করেছে । 

  1. তারা অধিকারের একটি নতুন ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে ও জনশিক্ষার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে । 
  2. দরিদ্রদের সুবিধার জন্য খাদ্যের দাম এবং সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় । 
  3. জ্যাকবিন প্রশাসন সন্ত্রাসের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকে । 
  4. ধীরে ধীরে রোবসপিয়রের জনসমর্থন কমে আসলে কনভেনশনের অন্দরে তার বিরোধী পক্ষ শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে এবং কনভেনশনের বেশিরভাগ সদস্যরা মনে করেছিল সন্ত্রাসের প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছে । 
  5. ১৭৯৪ এর ২৮শে জুলাই গিলোটিনে দক্ষিণপন্থী ও সাধারণ সদস্যদের পারস্পরিক সহযোগিতা থাকায় রোবসপিয়রকে হত্যা করা হয় । 

জনগণের বিপ্লব, বিপ্লবের জনগণ 

আভিজাত্যের পক্ষে রাজার প্রতিরোধের মাধ্যমে এবং পরবর্তীকালে বুর্জোয়া আন্দোলনের মাধ্যমে রোবসপিয়র বিপ্লব শুরু করেছিল । এটি দ্রুত জনগণের বিদ্রোহে পরিণত হয়েছিল । বাস্তিলের পতন, পৌর আন্দোলন এবং কৃষি বিপ্লব সর্বত্রই ছিল সাধারণ মানুষের বিশেষ ভুমিকা । 

খাদ্য উৎপাদন হ্রাস, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং সরকারের বৈষম্যমূলক নীতিগুলি ফ্রান্সের নিম্নবিত্ত এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল । বুর্জোয়া বিপ্লবের সাফল্য অর্জন সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত ও আশার সঞ্চার করেছিল ।

ফরাসি সমাজের নীচু তলার মানুষের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের সংযোগ

  1. ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং খাদ্য খরচের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিম্নবিত্তকে ক্ষুব্ধ করেছিল । বাস্তিল দখলকারী ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই নিম্নবর্গের অন্তর্ভুক্ত ছিল । 
  2. মজুরি বৈষম্য, বেকারত্ব, কারখানা-দোকানে কঠোর পরিশ্রমের কারণে তাদের মনে অসন্তোষের সৃষ্টি করে । 
  3. জুতা-চটি-ওষুধ প্রস্তুতকারক, দর্জি, গৃহ পরিচারিকা, গৃহকর্মী এবং অন্যান্যরা সমাজের নিম্নতম স্তরের মধ্যে ছিল । 
  4. রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে 1792 সালের জুলাই এবং আগস্টের দাঙ্গার প্রথম অংশে দরিদ্ররা ছিল প্যারিসবাসী । তাদের বেশিরভাগই ছিল গৃহকর্মী, বন্দর শ্রমিক, ছুতার, শ্রমিক, ভ্রমণকারী, শিল্পী, বণিক, দোকানদার ।
  5. 1793 সালে রুটি, চিনি, মোমবাতি এবং সাবানের দাম বেড়ে যায় । নিম্নবর্গের বাসিন্দারা
    ব্যবসায়ীদের উপর, মজুমদারের গোলা, যারা জিনিসপত্রের কালোবাজারি করতো তাদের উপর আক্রমণ চালায় । 

বিপ্লবের  গণভিত্তি  প্রসারে সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমের ভূমিকা

বিপ্লবের আদর্শ ও লক্ষ্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের ভূমিকা কতটা বা কেমন ছিলতা জানতে সংবাদপত্র এবং অন্যান্য মাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

  1. সংবাদপত্র : ফ্রান্সে ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে কোনো  নিয়মিত দৈনিক পত্রিকার অস্তিত্ব ছিল না । ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, ফ্রান্সে পত্রপত্রিকার সংখ্যা হয় ১৬৯ টি  । প্রত্যেকেই এই পত্রিকা পড়তে পারতেন । বাজারে, পানশালায়, রাস্তার মিটিংয়ে স্বল্প শিক্ষিত লোকেরা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে এই পত্রিকাটি পড়তেন । এমনকি কথোপকথনে অশিক্ষিতদের মধ্যেও তারা নতুন ভাবনা প্রচার করতেন ।
  2. অন্যান্য গণমাধ্যম : সংবাদপত্রের আবেদন শিক্ষিত বা অশিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও থিয়েটার, সঙ্গীত এবং ব্যঙ্গচিত্রের আকর্ষণ ছিল আরও সার্বজনীন । ফ্রান্সে রাজনৈতিক কার্যকলাপের সময় বিভিন্ন গান রচিত হয়েছিল । রাজনৈতিক নাটক ও ব্যঙ্গচিত্র  কার্টুনের প্রদর্শনী ছিল । প্রাচীন কালের ত্রুটি বিদ্রুপের মাধ্যমে গণমাধ্যমগুলি হাস্যরসের আড়ালে, সাধারণ জনগণের মধ্যে বিপ্লবী সচেতনতা বৃদ্ধি করেছিল ।

বিপ্লবে শহুরে ও গ্রাম্য দরিদ্র জনতার অংশগ্রহণ

ফরাসি বিপ্লবে শহুরে এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের অংশগ্রহণ এটিকে ব্যাপক করে তুলেছিল । বিদ্রোহ প্রথমে শহরগুলিতে শুরু হয় । ধীরে ধীরে তা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে । স্বাভাবিকভাবেই, তারা ছিল ফরাসি বিপ্লবের সবচেয়ে সোচ্চার সমর্থক ।

শহুরে জনতা

  • নেকারের পদত্যাগ এবং বাস্তিলের পতনের পরিণতি প্যারিসের সীমানা ছাড়িয়ে প্রসারিত হয়েছিল । এর প্রভাব ফ্রান্সের আশেপাশের অনেক শহরে ছড়িয়ে পড়ে । 
  • বিভিন্ন শহরের সরকারি কোশাগার লুণ্ঠিত হয় । এমনকি অস্ত্রশস্ত্র লুণ্ঠিত হয় । 
  • শহুরে জনতা বিভিন্ন এলাকায় যাজক ও অভিজাতদের বন্দী করে । দিঁজ শহরের শাসনকর্তাকে গ্রেফতার করা হয় । 
  • রেন শহরের সৈন্যরা তাদের বাসস্থান ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল । 
  • একাধিক পৌর অঞ্চলের রাজার আধিপত্য শেষ হয় এবং ইন্টেনডেন্টদের পদচ্যুত করা হয় । 
  • পৌর বিপ্লবের প্রকৃতি অবশ্য, সব প্রাদেশিক শহরে একরকম ছিল না । 
  • পৌরশাসন তখনও অনেক জায়গায় আগের মতোই চলছিল । 
  • অন্যদিকে, বোর্দো, ফ্ল্যান্ডার্স প্রভৃতি শহরগুলি প্যারিসের অনুকরণ করে পৌরশাসন শুরু করে । অনেক অঞ্চলে জিনিসের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ।

গ্রামীণ জনতা 

  • প্যারিসের বিপ্লব এবং বেশ কয়েকটি জায়গায় বিপ্লবী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠার দ্বারা গ্রামের বাসিন্দারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল । বিপ্লবে শহুরে এবং গ্রামীণ উভয় জনগোষ্ঠীর সমর্থন ছিল । 
  • খারাপ ফসলের কারণে, 1788 খ্রিস্টাব্দে গ্রামের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হয় । 
  • রুটির দাম  দ্রুত বাড়তে থাকে, আবার শহরের তুলনায় গ্রামে রুটির দাম বেশি ছিল । 
  • এস্টেট জেনারেলের অধিবেশন শুরু হলে, গ্রামের কৃষকরা আশা করেছিল যে – তারা জনগণের অনুরোধ রাখবে । সরকারী কর, সামন্তপ্রথা জনিত আপত্তিকর দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাবে । কিন্তু জাতীয় সভা তাদের এই দাবিগুলোর প্রতি উদাসীনতা দেখলে তারা হতাশ হয় ।
  • অবশেষে তারা মনে করে যে, সহিংস বিক্ষোভ দ্বারা তাদের সমস্যার সমাধান করা যাবে ।  ফলে তারাও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে । 

আক্রমণের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, অভিজাত সম্প্রদায় কিন্তু  বুর্জোয়াদেরও শিকার হতে হত। কৃষক বিদ্রোহের ফলে অবাধ চারণ অধিকার পুনঃস্থাপন, অরণ্য আক্রান্ত হয় । এই ধরনের পরিস্থিতিতে, অভিজাততন্ত্র এবং বুর্জোয়ারা প্রায়ই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে কৃষক বিদ্রোহ দমন করার জন্য স্থানীয় চুক্তিতে আসে ।

ফরাসি বিপ্লব ও নারী

ফরাসি বিপ্লবে নারী সমাজের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল । অন্যদিকে বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকের ইতিহাসবিদরা ফরাসি বিপ্লবে নারীর ভূমিকা এবং ফরাসি নারী শ্রেণীতে-এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন । 

  1. প্রাক-বিপ্লবী ফ্রান্সে নারীদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না । তারা ‘নিষ্ক্রিয়’ নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত ছিল ।
    অন্যান্য শহরে, বিশেষ করে প্যারিসের নারীবাদীরা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কার চেতনার উচ্চতর বোধ অর্জন করেছিলেন । 
  2. নারীরা পুরুষদের সমান অধিকার এবং পুরুষের আধিপত্য বিলুপ্তির পক্ষে ছিলেন । অনেক পুস্তিকা এবং মহিলা সংগঠনের ফলে এই চিন্তাধারার বিকাশ ঘটেছে । 
  3. ‘সোসাইটি অফ রিভলিউশনারি রিপাবলিক উইমেন’ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য সংগঠন ।
  4. বিপ্লব শুরু হলে, একাধিক মহিলা সক্রিয়ভাবে বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিলেন । তারা তাদের রাজনৈতিক মতামত জনসমক্ষে প্রকাশ করে । 
  5. জিরোন্ডিন এবং জ্যাকবিন উভয় দলের বৈপ্লবিক নারী সদস্য ছিল । 
  6. ডি-আর্জেন্ট একজন উল্লেখযোগ্য জিরোন্ডিস্ট নেত্রী ছিলেন । অন্যান্য নেত্রীরা হলেন মাঁদাম রোনাল্ড, পাওলিন লিওন প্রমুখ ।  
  7. মহিলারা সাহসিকতার সাথে দাঙ্গা এবং সক্রিয় আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল । এমনকি সরকারের সশস্ত্র বাহিনী তাদের দমাতে পারেনি ।

মানুষ ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা :

26শে আগস্ট, 1789 সালের ‘মানুষ ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা’ ফরাসী সংবিধান সভা একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল । অধিকার ঘোষণার অনেক তাত্ত্বিক মতবিরোধ আছে। 

  1. একজন মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করে এবং জন্মগতভাবে তার কিছু অধিকার থাকে । এগুলি হল –
    1. স্বাধীনতার অধিকার
    2. সম্পত্তির অধিকার
    3. নিরাপত্তার অধিকার 
    4. নিপীড়নের বিরোধিতা করার অধিকার 
  2. ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা উভয়কেই স্বাধীনতা বোঝানো হয়েছে । সপ্তম ধারায় বা ARTICLE-7-এ ঘোষিত হয় যে, বিনা বিচারে আইনের পথে কাউকে গ্রেপ্তার, আটক বা কারারুদ্ধ করা যাবে না । বিচারের নামে নির্যাতন বেআইনি । 

লেতর-দ্য-ক্যাশের মতো দমনমূলক এবং অত্যাচারী আইন বাতিল করা হয়েছিল ।

  1. নাগরিক অধিকার, সম্পত্তির অধিকার এবং করব্যবস্থার সমতার ধারণা ঘোষিত হয়েছিল ।
  2. জাতীয় সার্বভৌমত্ব আদর্শ প্রচার করা হয়,  বলা হয় ফ্রান্স রাজার ব্যক্তিগত সম্পত্তি না । ফরাসি দেশটি সাধারণ মানুষ এবং যেকোনো সংস্থার ক্ষমতার উৎস । 
  3. প্রতিটি নাগরিকের সরাসরি বা জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে জাতির কাজে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে । জনগণের সম্মতি ছাড়া কোনো কর আরোপ করা যাবে না । 
  4. সরকারী কর্মীরা হলেন সেই ব্যক্তি যারা তাদের কাজের জন্য জনগণের কাছে দায়ী থাকতে বাধ্য ।

মানুষ ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণার গুরুত্ব  

গণতান্ত্রিক অধিকারের ঘোষণা মানব ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী দলিল । এর আবেদনটি ছিল ব্যাপক এবং সর্বজনীন । ফরাসি বিপ্লবের মাত্র কয়েকটি বিশ্বাস বা আদর্শ এই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । বিপ্লবের সারমর্ম প্রকাশ করা হয়নি; বরং এটি পুরাতনতন্ত্রের অনেক ত্রুটির বিরুদ্ধে আক্রমণ ছিল ।

  1. এর ফলে ফ্রান্সে দৈবস্বত্ব নীতি বিলুপ্ত হয় । একনায়কতন্ত্র বিলুপ্ত হয় এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব তৈরি হয় । ফ্রান্স প্রজাতন্ত্র 1792 সালের দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লবের সময় তৈরি হয়েছিল । 1793 সালে, নতুন সংবিধানে মানব ও নাগরিক অধিকারের একটি নতুন ঘোষণা অন্তর্ভুক্ত ছিল । এই বিজ্ঞপ্তির কিছু কিছু নির্দিষ্ট অধিকারের স্বীকৃতির আরও বিস্তারিত বর্ণনা করে ।
  2. ঘোষণার 6 নং অনুচ্ছেদ অনুসারে, স্বাধীনতা হল একটি মানবাধিকার যা অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে সব কিছু  করতে পারে । 
  3. ঘোষণার 7 নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রত্যেকের বাক স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে; সে  সংবাদপত্রে বা অন্য কোনো উপায়ে এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পারেন । এই অধিকার একদিকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং অন্যদিকে সমাবেশের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার অধিকারকে স্বীকার করে । 
  4. 33 নং অনুচ্ছেদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চিত করে ।
  5. সর্বোপরি, 35  নং অনুচ্ছেদে বলা হয়, যদি কোনো সরকার জনগণের অধিকার লঙ্ঘন করে, প্রতিটি মানুষেরই এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার মৌলিক অধিকার রয়েছে । 
  6. প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় । 
  7. মহিলাদের ভোটাধিকার স্বীকার করা হয়নি । 
  8. তা সত্ত্বেও, দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব এবং প্রথম ফরাসি প্রজাতন্ত্রের সময় ফ্রান্সে বর্তমান গণতান্ত্রিক অধিকারের শিকড়গুলি যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছিল ।

মানুষ ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণার সিমাবদ্ধতা 

মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের ঘোষণায় অসংখ্য সীমাবদ্ধতা ছিল । 

  1. মানবাধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে, এটি বুর্জোয়াদের সীমিত স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে । 
  2. এখানে রাজনৈতিক ও আর্থ -সামাজিক সমতার কথা বলা হয়নি । 
  3. কিছু অপরিহার্য অধিকার হল সংগঠিত করার স্বাধীনতা এবং সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, শিক্ষার অধিকার সম্পর্কে কোন উল্লেখ ছিল না । 
  4. এমনকি মানবাধিকারের কথা বলা হলেও, তাদের দায় – দায়িত্ব সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি ।

জনচেতনায় গুজবের প্রভাব

  1. 1789 সালের জুলাই এবং আগস্ট মাসে কৃষক বিদ্রোহ আরও সহিংস হয়ে ওঠে । জর্জ লেফেভরের   মতে, বিভিন্ন গুজব ছিল আতঙ্কের উৎস । 
  2. এই ধরনের গুজব রটেছিল যে, অভিজাত শ্রেণী পারস্য লুণ্ঠনকারীদের তালিকাভুক্ত করছে যারা ফসল কাটতে এগিয়ে এসেছিল এমনকি ফসল ধ্বংস ও গ্রামগুলোকে আগুন লাগানোর জন্য । 
  3. আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, কৃষকরা অস্ত্র তুলেছিল । এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে ফ্রান্সের একটা বড় অংশে । এই ধরনের গল্পগুলি অসত্য প্রমান হওয়ার পরেও  , সশস্ত্র কৃষকরা সামন্ত প্রভুদের বাড়িতে আক্রমণ শুরু করে ।
  4. তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল সর্বগ্রাসী অত্যাচার ও সামন্ততান্ত্রিক দায়দায়িত্ব-র  যেকোন নথিপত্র ধ্বংস করা । 
  5. প্রকৃতপক্ষে, কৃষক বিদ্রোহ ছিল গ্রামের বিভক্ত ও শোষিত মানুষের দীর্ঘদিনের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ । 

সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা 

ফরাসি বিপ্লবের সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল । ফরাসি বিপ্লব সাম্য, বন্ধুত্ব এবং স্বাধীনতার নীতির জন্ম দেয় । ফ্রান্সে বিপ্লব একটি নতুন যুগের সূচনা করে ।

ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব : ফরাসি বিপ্লবের সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল । অর্থনীতি, রাজনীতি এবং ধর্ম সহ সমাজের অনেক দিকের উপর এর প্রভাব রয়েছে । মর্যাদা এবং জন্মগত অধিকারের পরিবর্তে যোগ্যতার ভিত্তিতে ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে সমান অধিকার তৈরি করা হয়েছিল । 

  1. মানবাধিকার ঘোষণায় ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সাম্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । 
  2. শাসন ​​ব্যবস্থায় জনগণের অধিকারকে সম্মান করা হতো । বিপ্লবের সময় “জাতি” শব্দটি নতুন তাৎপর্য গ্রহণ করেছিল ।
  3. নতুন অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং একটি জাতীয় সেনাবাহিনী গঠন জাতীয় ঐক্যের পথ তৈরি করে । এমনকি ফরাসী বিপ্লব শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ধারণার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল । 
  4. সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জগতে বিপ্লব একটি নতুন ধারা ও শৈলী প্রতিষ্ঠা করে । 
  5. ধর্মীয় ক্ষেত্রে, এটি লক্ষ্যের বিষয়, বিপ্লব চার্চের বিরুদ্ধে একটি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছিল ।
  6. ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আদর্শ সৃষ্টি হয়েছিল । ফরাসি বিপ্লব ধর্মীয় সহিষ্ণুতায় অবদান রেখেছিল । এই সময়ের মধ্যে, অর্থনৈতিক পরিবেশও পরিবর্তিত হয় । 
  7. বিপ্লবী আইনসভার দ্বারা কৃষিব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল । একটি মুক্ত বাণিজ্য নীতি এবং একটি উদার অর্থনীতি বাস্তবায়িত হয়েছিল ।

ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের বৃহত্তর প্রভাব 

ইউরোপের ওপর ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব :  

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাম্য, মৈত্রী এবং স্বাধীনতার বার্তা ফরাসি বিপ্লবের ফলস্বরূপ বিকশিত হয়েছিল । সাথে পুরাতন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নতুনত্বের বিস্তারের কথা জানানো হয় । 

  1. ভাষাগত আন্দোলন হাঙ্গেরিতে শুরু হয়েছিল এবং অভিজাতরা  ফ্রান্সের অনুকরণে মানবাধিকার রচনা করে ।
  2. বেলজিয়াম, হল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে সর্বত্র পরিবর্তনের পদধ্বনি শোনা যেত ।
  3. ইতালি এবং জার্মানির রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুনর্গঠিত হয় । ইতালি এবং জার্মানিতে জাগ্রত জাতীয়তাবাদ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করে ।
  4. ফরাসি বিপ্লবের দর্শন স্পেন, পর্তুগাল এবং অন্যান্য দেশে জাতীয় সচেতনতাকে প্রসারিত করেছিল । 
  5. পোল্যান্ডে অভিজাত বিদ্রোহ শুরু হয় । ফ্রান্সের অনুকরণে একটি নতুন সংবিধান তৈরি করা হয় ।

নতুন ফরাসি সংবিধান 

1789 সালের জুন মাসে, তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা শপথ নেন এবং টেনিস কোর্টে ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন । ফ্রান্সের জাতীয় সভা তৃতীয় সম্প্রদায়ের দাবিতে সংবিধানের কাজ শুরু করে । ফলে জাতীয় সভার নাম পরিবর্তীত হয়ে সংবিধান সভা হয় । 

সংবিধান সভা কঠোর লড়াইয়ের পর ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে সংবিধান তৈরির কাজ শেষ করে এবং সেই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর এটি তৈরি করা হয় । নতুন ফরাসি সংবিধান অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর জোর দিয়ে বিপ্লবী আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেছে ।

  1. নতুন সংবিধান ফ্রান্সে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, ফলে রাজার দেবত্ব নীতির অবসান ঘটে ।
  2. নতুন করে ফ্রান্সের একককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা করা হয় । এই আইন সভার সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারবে ।
  3. সমস্ত ব্যক্তি ভোট দেওয়ার ক্ষমতা ছাড়াই সক্রিয় এবং নিষ্ক্রিয় গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয় ।
  4. স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য, ফ্রান্সকে অনেক ডিপার্টমেন্টে বিভক্ত করা হয়েছিল, যেগুলি তখন জেলা, ক্যান্টন এবং কমিউনে বিভক্ত ছিল ।
  5. নির্বাচিত কমিটি স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে ।
  6. আদালতে বৈষম্যমূলক লেতর-ডি-ক্যাশ সিস্টেম বাদ দেওয়া হয় ।
  7. বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক কর নিষিদ্ধ করা হয় ।
  8. একটি মুক্ত বাণিজ্য নীতি বাস্তবায়িত করা হয় ।
  9. গির্জার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং জমা করার পরে, অ্যাসাইনেট নামে পরিচিত একটি কাগজের মুদ্রা জারি করা হয়েছিল ।

ধর্মীয় স্বাধীনতাকে স্বীকৃত দেওয়া হয় । যদিও নতুন সংবিধানে সাম্য, মৈত্রী এবং স্বাধীনতার মূল্যবোধের উপর জোর দেওয়া হলেও, সংবিধানের লেখকরা শ্রমিক শ্রেণী ও কৃষকদের উদ্বেগকে উপেক্ষা করেছেন । 

See also  Chapter 4- A Day in the Zoo- Class 9 WBBSE English Notes Suggestions

ভোটের অধিকারের জন্য ফরাসি জনগণ দুটি দলে বিভক্ত ছিল, সক্রিয় এবং নিষ্ক্রিয় । বিভিন্ন ত্রুটি থাকলেও সংবিধান সভা একদিকে পুরানো সরকারকে নির্মূল করতে এবং অন্যদিকে একাধিক নীতি প্রণয়নে কার্যকর ছিল ।

সামন্ততন্ত্রের বিলোপ

রাজতন্ত্রের অবসানের পর,  ফ্রান্সের সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে । 1793 সালের 21শে ফেব্রুয়ারিতে রাজার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর, একদিকে জিরোন্ডিস্ট এবং জ্যাকবিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, অন্যদিকে উভয় পক্ষের নেতারা কৃষক এবং সাঁকুলোৎদের আনুকূল্য অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যান ।

জিরোন্ডিনদের পরাজিত হওয়ার পরেও প্রদেশগুলিতে বেশ কয়েকটি কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল । এই পরিস্থিতিতে, 4 ঠা জুন, একটি জননিরাপত্তা কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, এবং এই সংস্থাটি কৃষকদের সন্তুষ্ট করার জন্য তিনটি ব্যবস্থা তৈরি করেছিল –

  1. যারা দেশ ত্যাগ করেছিলেন তাদের সম্পত্তি ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে ভাগ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল ।
  2. একই পদ্ধতিতে যৌথ জমিভাগ  করার কথা বলা হয়েছে ।
  3. শেষ পর্যন্ত, 17ই জুলাইয়ের বিধি সমতন্ত্রের ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয় । সামন্ততন্ত্র বিলুপ্ত হলে সামন্তপ্রভু কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি । 

প্রকৃতপক্ষে, 4 আগস্ট, 1789-এ ফরাসি ব্যবস্থার উপর আক্রমণ হয়েছিল এবং 17 জুলাই, 1793 সালে সামন্ততন্ত্রের পতনের সাথে সমাপ্ত হয় । জ্যাকবিনদের পরামর্শে, অধিকার এবং জনকল্যাণ রক্ষার লক্ষ্যে ফ্রান্সে একটি নতুন সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল । 

নাগরিক  গণতান্ত্রিক অধিকারের ঘোষণা :

1793 সালের সংবিধানও একটি নতুন “মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা” প্রতিষ্ঠা করেছিল । এই সত্ত্বেও, সংবিধান বা এই ঘোষণার কোনোটিই কখনো সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা হয়নি, কিন্তু ফরাসি বিপ্লবের ক্ষেত্রে, সংবিধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । 1789 সালের ঘোষণা এবং 1793 সালের ঘোষণার মধ্যে বেশ কিছু অমিল রয়েছে ।

  1. স্বাধীনতার দ্বিতীয় ঘোষণায় সাম্যের উপর জোর দেওয়া হয় । শুধু আইনের চোখেই সব মানুষ সমান নয়, সমতা জন্মগত অধিকার হিসেবেও স্বীকৃত হয় ।
  2. এই ঘোষণায় শ্রমের অধিকার স্বীকৃত হয় । অক্ষম ব্যক্তিদের সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার কথা ঘোষিত হয় ।
  3. এই ঘোষণাটি ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, শিক্ষার অধিকার এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, শাসকের নিপীড়ন থেকে মুক্ত হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে । 

ফলস্বরূপ, 1793 সালের অধিকার ঘোষণাকে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক এবং বিপ্লবী বলে বিবেচনা করা যেতে পারে ।

1 MARKS QUESTION -ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE Notes

  1. ফ্রান্সে সন্ত্রাসের রাজত্বে নেতৃত্ব দেন— 
  1. রোবসপিয়ার
  2. মিরাব্যু 
  3. দাঁতো 
  4. অ্যাবে সিয়েস

Ans. A

  1. ফ্রান্স ছিল ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ এ কথা বলেছিলেন— 
  1. এডমন্ড বার্ক 
  2. অ্যাডাম স্মিথ 
  3. কুইসনে 
  4. দিদেরো

Ans. B

  1. ক্যালোন ছিলেন ফ্রান্সের – 
  1. সেনাপতি 
  2. বিদেশমন্ত্রী 
  3. প্রধানমন্ত্রি 
  4. অর্থমন্ত্রী

Ans. D

  1. ডাঃ গিলোটিনের মৃত্যু হয়— 
  1. ফাসিতে 
  2. গুলিতে 
  3. গিলোটিনে 
  4. আত্মহত্যা করে

Ans. C

  1. ভালমির যুদ্ধ হয়েছিল – 
  1. 1789 খ্রিস্টাব্দে 
  2. 1790 খ্রিস্টাব্দে 
  3. 1791 খ্রিস্টাব্দে 
  4. 1792 খ্রিস্টাব্দে

Ans. D

  1. ফ্রান্সের কর কাঠামোয় ‘গ্যাবেলা’ ছিল— 
  1. ভূমিকর 
  2. উৎপাদন কর 
  3. আয়কর 
  4. লবণ কর

Ans. D

  1. সংবিধান সভার নেতৃত্বে ফ্রান্সে ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষিত হয় 1789 খ্রিস্টাব্দে – 
  1. 26 জুন 
  2. 26 আগস্ট 
  3. 14 জুলাই 
  4. 26 সেপ্টেম্বর

Ans. B

  1. প্রাক্ বিপ্লবযুগে ফ্রান্সে অর্থলোলুপ নেকড়ে – 
  1. ইনটেনডেন্ট নামক কর্মচারীদের 
  2. বিচারকদের 
  3. অভিজাতদের 
  4. বুর্জোয়াদের

Ans. A

  1. ‘ক্ষমতা বিভাজন নীতির কথা বলেন  – 
  1. অ্যাডাম স্মিথ 
  2. রুশো 
  3. ভলতেয়ার 
  4. মন্তেস্কু

Ans. D

  1. ‘আমিই রাষ্ট্র’ এ কথা বলেছিলেন – 
  1. চতুর্দশ লুই 
  2. পঞ্চদশ লুই 
  3. ষোড়শ লুই 
  4. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট

Ans. A

  1. ফ্রান্সে সন্ত্রাসের রাজত্বে নেতৃত্ব দেন— 
  1. রোবসপিয়ার 
  2. মিরাব্যু 
  3. দাঁতো 
  4. অ্যাবে সিয়েস

Ans. A

  1. বাস্তিল হল ফ্রান্সের – 
  1. রাজপ্রাসাদ 
  2. দুর্গ 
  3. গির্জা 
  4. বিশ্ববিদ্যালয়

Ans. B

  1. কান্ট ছিলেন একজন – 
  1. ফরাসি চিন্তাবিদ 
  2. ব্রিটিশ কবি 
  3. জার্মান চিন্তাবিদ 
  4. পোর্তুগিজ নাট্যকার

Ans. A

  1. দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল—
  1. মার্চ, 1790 খ্রি 
  2. ফেব্রুয়ারি 1791 খ্রি 
  3. আগস্ট, 1792 খ্রি 
  4. মে, 1793 খ্রি

Ans. C

  1. ম্যারাট ছিলেন— 
  1. জ্যাকোবিন নেতা 
  2. জিরন্ডিস্ট নেতা
  3. জাতীয় সভার সভাপতি 
  4. জাতীয় রক্ষীবাহিনীর প্রধান

Ans. A

  1. 1791 খ্রিস্টাব্দে রাজা ষোড়শ লুই দেশত্যাগ করতে গিয়ে ধরা পড়েন – 
  1. 21 ফেব্রুয়ারি
  2. 20 মার্চ 
  3. 21 জুন 
  4. 25 জুলাই

Ans. C

  1. ‘দি পার্সিয়ান লেটার্স’ গ্রন্থটি লিখেছেন –
  1. রুশো 
  2. ভলতেয়ার 
  3. মন্তেস্কু 
  4. দিদেরো

Ans. C

  1. ফ্রান্সের কর ব্যবস্থায় টাইথ ছিল— 
  1. লবণ কর 
  2. আয়কর 
  3. ধর্ম কর 
  4. ভূমি কর 

Ans. C

  1. ফ্রান্সের প্রথম লিখিত সংবিধান রচিত হয়— 
  1. 1795 খ্রিস্টাব্দে 
  2. 1789 খ্রিস্টাব্দে 
  3. 1791 খ্রিস্টাব্দে 
  4. 1793 খ্রিস্টাব্দে 

Ans. C

  1. নূতন প্রজাতন্ত্র বর্ষপঞ্জী প্রবর্তিত হয়— 
  1. সংবিধানের কার্যকালে 
  2. সন্ত্রাসের রাজত্বকালে 
  3. ডাইরেক্টরি শাসনকালে 
  4. কনসুলেট শাসনকালে

Ans. B

  1. ফ্রান্সে তৃতীয় সম্প্রদায় নামে পরিচিত ছিল— 
  1. ফ্রান্সের রাজবংশ 
  2. ফ্রান্সের অভিজাত শ্রেণি 
  3. ফ্রান্সের যাজক শ্রেণি 
  4. ফ্রান্সের সাধারণ জনগণ

Ans. D

  1. ওয়েলথ অব নেশন গ্রন্থের রচয়িতা হলেন—
  1. রুশো 
  2. ভলতেয়ার 
  3. অ্যাডাম স্মিথ 
  4. মন্তেস্ক

Ans. C

  1. ধমর্যাজকদের সংবিধান (Civil Constitution of the Clergy, 1791) দ্বারা – 
  1. গির্জার ওপর থেকে পোপের কর্তৃত্বের অবসান ঘটে 
  2. গির্জার ওপরে পোপের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয় 
  3. গির্জার ওপরে পোপের কর্তৃত্ব একটু হ্রাস পায় 
  4. কোনোটিই নয় 

Ans. A

  1. সংবিধান সভার নেতৃত্বে ফ্রান্সে সামন্তপ্রথার অবসান ঘটানো হয় 1789 খ্রিস্টাব্দে –
  1. 4 জুলাই 
  2. 4 আগস্ট
  3. 26 আগস্ট 
  4. 20 জুন

Ans. B

  1. অভিজাতদের মধ্যে মুখ্য ব্যক্তিদের সভা বা ‘গণ্যমান্যদের পরিষদ’ আহ্বান করেছিলেন অর্থমন্ত্রী – 
  1. লুই তুর্গো 
  2. নেকার 
  3. ক্যালোন 
  4. ব্রিয়া

Ans. C

  1. ফ্রান্সে ‘ইনটেনডেন্ট’গণ ছিল— 
  1. সরকারি কর্মচারী 
  2. রাজবন্দি 
  3. বেসরকারি কর্মচারী 
  4. সংগীত শিল্পী

Ans. A

  1. ফরাসি সমাজে ‘অধিকারহীন’ শ্রেণি বলা হত – 
  1. যাজক ও অভিজাতদের 
  2. সাঁ কুলোৎদের 
  3. অভিজাতদের 
  4. যাজকদের 

Ans. B

  1. ফরাসি রাজ চতুর্দশ লুই-এর শাসনকাল ছিল— 
  1. 1643-1715 খ্রিস্টাব্দ 
  2. 1643-1720 খ্রিস্টাব্দ 
  3. 1660-1720 খ্রিস্টাব্দ 
  4. 1663 -1715 খ্রিস্টাব্দ

Ans. A

  1. রাজা যোড়শ লুই দেশত্যাগের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ফ্রান্সের যে স্থানে ধরা পড়েন তা হল 
  1. ভার্সাই
  2. তুলো 
  3. নান্টেস 
  4. ভারেনে

Ans. D

  1. প্রাক্ বিপ্লবযুগে ফ্রান্সে অর্থলোলুপ নেকড়ে – 
  1. ইনটেনডেন্ট নামক কর্মচারীদের 
  2. বিচারকদের 
  3. অভিজাতদের 
  4. বুর্জোয়াদের

Ans. A

  1. ফ্রান্সে অষ্টাদশ শতকে শাসন করত— 
  1. বুরবো বংশ 
  2. অটোমান বংশ 
  3. ক্যারোলিঞ্জিয় বংশ 
  4. অর্লিয়েন্স বংশ

Ans. A

  1. অভিজাতদের মধ্যে মুখ্য ব্যক্তিদের সভা বা ‘গণ্যমান্যদের পরিষদ’ আহ্বান করেছিলেন অর্থমন্ত্রী – 
  1. লুই তুর্গো 
  2. নেকার 
  3. ক্যালোন 
  4. ব্রিয়া

Ans. C

  1. নতুন প্রজাতন্ত্র বর্ষপঞ্জি প্রবর্তিত হয়— 
  1. সংবিধানের কার্যকালে 
  2. সন্ত্রাসের রাজত্বকালে 
  3. ডাইরেক্টরি শাসনকালে 
  4. কনসুলেটের শাসনকালে

Ans. B

  1. ফ্রান্সে তৃতীয় সম্প্রদায় নামে পরিচিত ছিল— 
  1. ফ্রান্সের রাজবংশ 
  2. ফ্রান্সের অভিজাত শ্রেণি 
  3. ফ্রান্সের যাজক শ্রেণি 
  4. ফ্রান্সের সাধারণ জনগণ

Ans. D

  1. ফিজিওক্র্যাটুগণ ছিলেন একশ্রেণির – 
  1. রাজনীতিবিদ 
  2. অর্থনীতিবিদ 
  3. সাহিত্যিক 
  4. দার্শনিক

Ans. B

  1. ফ্রান্সে অষ্টাদশ শতকে শাসন করত— 
  1. বুরবো বংশ 
  2. অটোমান বংশ 
  3. ক্যারোলিঞ্জিয় বংশ 
  4. অর্লিয়েন্স বংশ

Ans. A

  1. রবার্ট পামার এর মতে ফরাসি বিপ্লব আসলে – 
  1. বিশ্ব বিপ্লব 
  2. ইউরোপীয় বিপ্লব 
  3. মহাদেশীয় বিপ্লব 
  4. কোনো বিপ্লবই নয়

Ans. B

  1. শেষবারের মতো স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন বসেছিল— 
  1. 1789 খ্রিস্টাব্দে 
  2. 1614 খ্রিস্টাব্দে 
  3. 1641 খ্রিস্টাব্দে 
  4. 1714 খ্রিস্টাব্দে

Ans. B

  1. নতুন প্রজাতন্ত্র বর্ষপঞ্জি প্রবর্তিত হয়— 
  1. সংবিধানের কার্যকালে 
  2. সন্ত্রাসের রাজত্বকালে 
  3. ডাইরেক্টরি শাসনকালে 
  4. কনসুলেটের শাসনকালে

Ans. B

  1. ফরাসি রাজ পঞ্চদশ লুই-এর শাসনকাল ছিল— 
  1. 1710-1774 খ্রিস্টাব্দ 
  2. 1715-1774 খ্রিস্টাব্দ 
  3. 1715-1780 খ্রিস্টাব্দ 
  4. 1720-1744 খ্রিস্টাব্দ

Ans. B

  1. ট্রেইলি ছিল– 
  1. সামন্ত কর 
  2. ভূমি কর 
  3. অতিরিক্ত প্রত্যক্ষ কর 
  4. লবণ কর

Ans. B

  1. নতুন ফরাসি সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল— 
  1. 1789 খ্রিস্টাব্দে 30 সেপ্টেম্বর
  2. 1790 খ্রিস্টাব্দে 29 সেপ্টেম্বর 
  3. 1791 খ্রিস্টাব্দে 29 সেপ্টেম্বর 
  4. 1791 খ্রিস্টাব্দে 30 সেপ্টেম্বর

Ans. D

  1. ফ্রান্সে অষ্টাদশ শতকে শাসন করত— 
  1. বুরবো বংশ 
  2. অটোমান বংশ 
  3. ক্যারোলিঞ্জিয় বংশ 
  4. অর্লিয়েন্স বংশ

Ans. A

  1. ডাঃ গিলোটিনের মৃত্যু হয়— 
  1. ফাসিতে 
  2. গুলিতে 
  3. গিলোটিনে 
  4. আত্মহত্যা করে

Ans. C

  1. ফরাসি বিপ্লব হয়েছিল— 
  1. 1786 খ্রিস্টাব্দে 
  2. 1789 খ্রিস্টাব্দে 
  3. 1790 খ্রিস্টাব্দে 
  4. 1799 খ্রিস্টাব্দে

Ans. B

1 MARKS QUESTION- ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE Notes

1.কে ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ (Museum of Economic Errors) বলেছেন?

উত্তর অ্যাডাম স্মিথ ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ (Museum of Economic Errors) বলেছেন।

2.‘দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস’ (The Wealth of Nations) গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর। দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস (The Wealth of Nations) গ্রন্থের রচয়িতা হলেন অ্যাডাম স্মিথ।

3.ফরাসি বিপ্লব কত খ্রিষ্টাব্দে শর হয়েছিল ?

উত্তর। ফরাসি বিপ্লব ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়েছিল।

4.ফরাসি বিপ্লবের সূচনাকালে ফ্রান্সের রাজা কে ছিলেন?

উত্তর। ফরাসি বিপ্লবের সূচনাকালে ফ্রান্সের রাজা ছিলেন ষােড়শ লুই।

5.ষোড়শ লুই কে ছিলেন ?

উত্তর। ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা ছিলেন যােড়শ লুই।

6.ষােড়শ লুই কোন বংশের রাজা ছিলেন ?

উত্তর। যােড়শ লুই বুরবো বংশের রাজা ছিলেন।

7.মেরি আঁতােয়ানেৎ কে ছিলেন?

উত্তর। মেরি আঁতােয়ানেৎ ছিলেন রাজা ষােড়শ লুই-এর পত্নী।

8.ফ্রান্সের বুরবো রাজারা কোন্ তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন?

উত্তর ফ্রান্সের বুরবো রাজারা রাজার দৈবস্বত্বে বিশ্বাসী ছিলেন।

  1. আমিই রাষ্ট্র’– এই বিখ্যাত উক্তিটি কার?

উত্তর। ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই বলেছিলেন, “আমিই রাষ্ট্র’ (I am the state)।

10.ইনটেনডেন্ট করা ?

উত্তর- ফ্রান্সে প্রাক্-বিপ্লব পর্বে রাজস্ব আদায়কারী কর্মচারীরা

ইনটেনডেন্ট নামে পরিচিত ছিল। 

11.ফ্রান্সে প্রচলিত প্রত করের নাম লেখাে।

উত্তর ফ্রান্সে প্রচলিত প্রত্যক্ষ করের নাম হল- টেইলি,ক্যাপিটেশন, ভিংটিয়েমে।

12.টেইলি কী?

উত্তর। টেইলি হল ফ্রান্সের একপ্রকার ভূমিকর। এটি ছিল প্রত্যক্ষ কর।

13.ক্যাপিটেশন কী ?

উত্তর ফ্রান্সের প্রত্যক্ষ করগুলির মধ্যে অন্যতম ক্যাপিটেশন ছিল একপ্রকার উৎপাদনকর।

  1. ভিংটিয়েমে কী?

উত্তর ভিংটিয়েমে ছিল ফ্রান্সের একপ্রকার আয়কর।

15.ফ্রান্সে লবণ কর কী নামে পরিচিত ছিল?

উত্তর ফ্রান্সে লবণ কর গ্যাবেলা নামে পরিচিত ছিল।

  1. ফ্রান্সে ধর্মর্কর কী নামে পরিচিত ছিল ? অথবা, টাইথ কী ?

উত্তর ফ্রান্সে ধর্মর্কর টাইথ নামে পরিচিত ছিল।

17.করভি কী?

উত্তর করভি ছিল ফ্রান্সে প্রচলিত একপ্রকার কর, যাতে বাধ্যতামূলকভাবে বিনা পারিশ্রমিকে বেগার খাটতে হত।

18.যাজক কাদের বলা হত?

উত্তর যাজক হলেন কোনাে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রথাগত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন ধর্মে যাজকদের ভূমিকা এবং কার্যাবলি বিভিন্ন রকম।

  1. চার্চ বা যাজকেরা জনসাধারণের কাছ থেকে কোন্ কর আদায় করতেন?

উত্তর চার্চ বা যাজকেরা জনসাধারণের কাছ থেকে টাইথ বা ধর্মকর আদায় করতেন।

20.ফরাসি যাজকেরা রাজাকে কী কর প্রদান করতেন?

উত্তর ফরাসি যাজকেরা রাজাকে স্বেচ্ছাকর নামে একপ্রকার কর প্রদান করতেন।

21.ঐতিহাসিক ডেভিড থমসন কোন বিষয়কে বৈপ্লবিক পরিস্থিতি’ (Revolutionary Situation) বলেছেন?

উত্তর ঐতিহাসিক ডেভিড থমসন ফ্রান্সের প্রাক্-বিপ্লব জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি-কে ‘বৈপ্লবিক পরিস্থিতি’ বলেছেন।

  1. বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজ কয়টি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজ তিনটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল।

  1. বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে কারা প্রথম সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে যাজকরা প্রথম সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন।

24.বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে অভিজাতরা কোন্ সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে অভিজাতরা দ্বিতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন।

  1. ‘প্যাট্রিশিয়ান’ কারা ?

উত্তর। ফরাসি বিপ্লবের আগে ফরাসি সমাজের অভিজাতরা। ‘প্যাট্রিশিয়ান’ নামে পরিচিত ছিলেন।

26.বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে বুর্জোয়ারা কোন্ সম্প্রদায়ভুক্ত। ছিলেন?

উত্তর। বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে বুর্জোয়ারা তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন।

27.প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সে কৃষক ও শ্রমিকরা কোন সম্প্রদায়ভুক্ত। ছিল?

উত্তর প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সে কৃষক ও শ্রমিকরা তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল।

28.‘প্লেবিয়ান’ কারা?

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের আগে ফরাসি সমাজের তৃতীয় শ্রেণির মানুষরা ‘প্লেবিয়ান’ নামে পরিচিত ছিল।

29.সাঁকুলােৎ কাদের বলা হয় ?

উত্তর সাঁকুলাে বলতে ফ্রান্সের খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষদের বােঝানাে হয়।

30.বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে সুবিধাহীন সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ (Non Privileged Class) কারা ছিলেন ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা ছিলেন সুবিধাহীন সম্প্রদায়।

31.বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে সুবিধাভােগী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ (Privileged Class) কারা ছিলেন ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে যাজক ও অভিজাতরা ছিলেন সুবিধাভােগী সম্প্রদায়।

32.বুর্জোয়া বিপ্লব কাকে বলা হয় ?

উত্তর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন রাজা ষােড়শ লুই-এর তিন সম্প্রদায়ের একত্রে অধিবেশন এবং মাথাপিছু ভােটের দাবি মেনে নেওয়াকে বুর্জোয়া বিপ্লব’ বলা হয়।

33.কোন দার্শনিক রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে বাস্তিল দুর্গে আটক ছিলেন?

উত্তর ভলতেয়ার রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে বাস্তিল দুর্গে আটক ছিলেন।

34.দ্য স্পিরিট অফ লজ’ (The Spirit of Laws) গ্রন্থের বচয়িতা কে?

উত্তর। ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন মন্তেস্কু।

35.দ্য পার্সিয়ান লেটারস’ (The Persian Letters) গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর ‘দ্য পার্সিয়ান লেটারস’ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন মন্তেস্ক।

36.কাদিদ (Candide) গ্রন্থের রচয়িতা কে ছিলেন?

উত্তর কাদিদ’ গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন ভলতেয়ার।

37.লেতর fapoufa’ (Letters Philosophiques) গ্রন্থের রচয়িতা কে ছিলেন?

উত্তর। লেতর ফিলজফিক’ গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন ভলতেয়ার।

38.কোন গ্রন্থকে ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল’বলা হয় ?

উত্তর সােশ্যাল কন্ট্রাক্ট (Social Contract) গ্রন্থকে ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল’ বলা হয়।

39.সামাজিক চুক্তি’ (Social Contract) গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর। সামাজিক চুক্তি’ (Social Contract) গ্রন্থের রচয়িতা হলেন রুশাে।

40.রুশাে কে ছিলেন?

উত্তর রুশাে ছিলেন একজন বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক।

41.Origin of Inequality’ (অসাম্যের সূত্রপাত) গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর Origin of Inequality’ (অসাম্যের সূত্রপাত) গ্রন্থের রচয়িতা হলেন রুশাে।

42.কাকে ফরাসি বিপ্লবের জনক বলা হয় ?

উত্তর রুশাে-কে ‘ফরাসি বিপ্লবের জনক’ বলা হয়।

43.“জনগণই হল রাষ্ট্রের সার্বভৌম শক্তির উৎস”- কে বলেছেন?

উত্তর ফরাসি দার্শনিক রুশাে উপরােক্ত উক্তিটি করেছেন।

44.একজন বিশ্বকোশ (Encyclopedia) প্রণেতার নাম লেখাে।

উত্তর একজন বিশ্বকোশ (Encyclopedia) প্রণেতার নাম হল দেনিস দিদেরাে।

45.জাতীয় সভা’ (National Assembly) কী ?

উত্তর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন স্টেট জেনারেলের অধিবেশনে তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা নিজেদের সভাকে জাতীয় সভা’ (National Assembly) বলে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ জাতীয় সভা হল তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিজস্ব সভা।

2 MARKS QUESTION- ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE Notes

1.কে ফ্রাঙ্গাকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ বলেছেন? কেন বলেছেন?

উত্তর বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ বলেছেন। ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলা হয় কারণ-

1 ফ্রান্সে প্রচলিত করব্যবস্থা ছিল বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতিগ্রস্ত।

  1. ফরাসি সমাজের অধিকারভােগী শ্রেণি যাজক ও অভিজাতরা ছিলেন অধিকাংশ জমির মালিক; কিন্তু এজন্য তারা কোনাে কর দিতেন না। অপরদিকে অধিকারহীন শ্রেণির দরিদ্র কৃষকদের সমস্ত কর দিতে হত।

2 ‘রাজনৈতিক কারাগার’ (Political Prlson) কাকে বলা হয় এবং কেন?

উত্তর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বেবাস্তিল দুর্গ রাজনৈতিক কারাগার’ হিসেবে পরিচিত ছিল। বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে লেতর দ্য ক্যাশে’ নামক গ্রেফতারি পরােয়ানার সাহায্যে রাজকীয় কর্মচারীরা যে-কোনাে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে বাস্তিল দুর্গে আটক করে রাখত বলে একে রাজনৈতিক কারাগার’ বলা হয়। রাজতন্ত্রবিরােধী মনােভাব প্রকাশকরার অপরাধে দার্শনিক ভলতেয়ার-কেও বাস্তিল দুর্গে আটক করে রাখা হয়।

3.বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে কয়টি প্রত্যক্ষ কর ছিল? এগুলি কী কী ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে তিনটি প্রত্যক্ষ কর ছিল।

4.|টেইলি’ কী?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে প্রচলিত একটি প্রত্যক্ষ কারের নাম

টেইলি। টেইলি হল ভূমিকর বা সম্পত্তিকর। এই কর ফরাসিদের সম্পত্তি অনুসারে ধার্য করা হত। কিন্তু বাস্তবে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র কৃষকদের এই কর দিতে হত।

5.ক্যাপিটেশন’ কী ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে প্রচলিত একটি প্রত্যক্ষ করের নাম ক্যাপিটেশন। ক্যাপিটেশন হল উৎপাদনকর। ফরাসিদের উৎপাদনের উপর এই কর ধার্য করা হত। বাস্তবে যাজক ও অভিজাতরা এই প্রদান থেকে অব্যাহতি পেতেন এবং ফ্রান্সের সাধারণ জনগণকেই তা দিতে হত।

6.ভিংটিয়েমে’ কী ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে প্রচলিত একটি প্রত্যক্ষ করের নাম ভিংটিয়েমে বা ভাতিয়াম— স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির উপর ধার্য আয়কর, যা মূলত কৃষকরা প্রদান করত। মােট আয়ের ৫% আয়কর

হিসেবে দিতে হত। অভিজাতরা এই করের কিছুটা প্রদান করলেও যাজকরা এই করপ্রদান থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত ছিলেন। ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে এই কর ফ্রান্সে চালু হয়।

7.‘টাইথ’ কী ?

উত্তর টাইথ হল ফ্রান্সে প্রচলিত ধর্মকর। ফ্রান্সের তৃতীয় সম্প্রদায় এই কর দিত চার্চ বা গির্জাকে। উৎপন্ন ফসলের ১০% ধর্মর্কর বা টাইথ হিসেবে দিতে হত।

8.কর্ভে’ বা করভি’ কী ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে বাধ্যতামূলক বা জবরদস্তিমূলক শ্রমদান। অভিহিত হত কর্ভে বা করভি নামে। এই পরােক্ষ করের জন্য কৃষকরা। বিনা পারিশ্রমিকে রাজাকে রাজপথ নির্মাণের জন্য এবং সামন্তপ্রভুকে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনগুলিতে শ্রমদান করতে বাধ্য হত।

9.‘ইনটেনডেন্ট (Intendent) কাদের বলে ?

উত্তর বুরবো শাসনকালে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্তম্ভরূপে পরিচিত এক বিশেষ ক্ষমতাশালী রাজস্ব সংগ্রাহক কর্মচারীরা। হল ইনটেনডেন্ট’। তবে স্থানীয় বিচারব্যবস্থা থেকে শুরু করে সাধারণ। প্রশাসন, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, সৈন্যসংগ্রহ-সহ বিভিন্ন বিষয় তাদের। নিয়ন্ত্রণে ছিল। লেফেভর লিখেছেন, নেকড়েতুল্য এই কর্মচারীদের অত্যাচারে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

10.ফ্রান্সে প্রথম সম্প্রদায়’ নামে কারা পরিচিত ছিলেন? 

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফরাসি সমাজে যাজকরা প্রথম সম্প্রদায় বা First Estate নামে পরিচিত ছিলেন। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে যাজকদের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার। ফ্রান্সের মােট জনসংখ্যার ১%-এর কম হয়েও যাজকরা সমাজে ও রাষ্ট্রে খুব প্রভাবশালী ছিলেন। তারা ছিলেন আইনের উর্ধ্বে এবং তাদের কোনাে প্রকার কর দিতে হত না। 

11.ফ্রান্সে তৃতীয় সম্প্রদায়’ নামে কারা পরিচিত ছিলেন ?

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সের সমাজে তৃতীয় সম্প্রদায় বা থার্ড এস্টেট বলতে বােঝাত যাজক ও অভিজাত ছাড়া সমাজের সমস্ত সাধারণ প্রজাদের। এই সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিলেন বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, দোকানদার, সাকুলােৎ ইত্যাদি। থার্ড

এস্টেটের জনসংখ্যা ছিল মােট জনসংখ্যার ৯৭%-এরও বেশি। রাষ্ট্রের প্রায় সমস্তকর তাদেরই দিতে হত, কিন্তু রাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা কোনাে সুযােগসুবিধা পেত না। সমাজ ও রাষ্ট্রে এরা ছিল অধিকারহীন শ্রেণি।

  1. ফরাসি সমাজে বুর্জোয়া’ কাদের বলা হত?

উত্তর ফরাসি সমাজে বুর্জোয়া বলা হত তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত মধ্যবিত্তদের। এরা ছিলেন বিদ্যা, বুদ্ধি ও ধনবলে বলীয়ান; কিন্তু বংশকৌলীন্যের অভাবে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশেষ মর্যাদা পেতেন এরা ছিলেন অধিকারহীন শ্রেণি। বুর্জোয়াদের মধ্যেও তিনটি স্তর ছিল— @ উচ্চ বুর্জোয়া, @ মধ্য বুর্জোয়া ও  নিম্ন বুর্জোয়া।

13.ফরাসি সমাজে ‘সাকুলােৎ’ কাদের বলা হত ?

উত্তর ফরাসি সমাজে সাকুলাে বলতে বােঝাত শহরবাসী খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষদের। এর মধ্যে ছিল দিনমজুর, কুলি, মালি,ভিস্তি (জলবাহক), কাঠুরে, চাকর (গৃহভৃত্য) প্রভৃতি। ফরাসি বিপ্লবে সাঁকুলােৎদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

14.আসিয়া রেজিম’ বলতে কী বােঝায়?

উত্তর অঁসিয়া রেজিম’ বা Ancién Regime কথার অর্থ হল ‘প্রাচীন আমল। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে বুরবো রাজাদের আমলকে ‘আঁসিয়া রেজিম’ বলা হয়। এই সময় রাজনৈতিক অবস্থা ছিল স্বৈরাচারী, সামাজিক অবস্থা ছিল বৈষম্যমূলক, অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। ফরাসি বিপ্লব এই পুরাতনতন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছিল।

  1. অভিজাত বিদ্রোহ’ কী ?

উত্তর অর্থনৈতিক সংকট দূর করার উদ্দেশ্যে ফরাসি রাজা যােড়শ লুই ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে দেশের সমস্ত প্রাদেশিক পার্লামেন্ট মুলতুবি করেন এবং সকল সম্প্রদায়ের থেকে কর আদায়ের উদ্যোগ নেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুবিধাভােগী অভিজাতশ্রেণি রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই ঘটনা অভিজাত বিদ্রোহ বা অভিজাত বিপ্লব’ নামে পরিচিত।

16.মন্তেস্থ কে ছিলেন? মন্তেস্থ রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখাে।

উত্তর মন্তেস্কু ছিলেন একজন বিশিষ্ট ফরাসি দার্শনিক। তিনি ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক এবং রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতার ধারণার বিরোধী। ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে তার মতবাদ ফরাসিদের প্রভাবিত করেছিল। মন্তেস্কু রচিত দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল-1 দ্য স্পিরিট অফ লজ এবং 2ি] দ্য পার্সিয়ান লেটারস।

  1. ভলতেয়ার কে ছিলেন? ভলতেয়ার রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখাে।

উত্তর ভলতেয়ার ছিলেন একজন বিখ্যাত ফরাসি সাহিত্যিক ও দার্শনিক। তার রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল- 1 কাদিদ এবং 2 | লেতর ফিলজফিক।

18.রুশে বিখ্যাত কেন? তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখাে।

উত্তর বুশো ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তার রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল-

সসাশ্যাল কন্ট্রাক্ট (সামাজিক চুক্তি) এবং 2] অরিজিন অফ ইনইকুয়ালিটি (অসাম্যের উৎস)।

19.ফরাসি বিপ্লবের জনক’ কাকে বলা হয়? কোন্ গ্রন্থকে ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল’ বলা হয় ?

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের জনক : ফরাসি দার্শনিক রুশাে-কে ফরাসি বিপ্লবের জনক বলা হয়।

ও ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল ; ফরাসি দার্শনিক রুশাে রচিত ‘সােশ্যাল কন্ট্রাক্ট’ গ্রন্থটিকে ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল’ বলা হয়।

20.ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর মন্তে, ভলতেয়ার, রুশাে প্রমুখ ফরাসি দার্শনিকগণ প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সের সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির প্রকৃত স্বরূপ জনগণের সামনে উন্মােচন করেছিলেন। এর ফলে জনগণের মধ্যে বিপ্লবমনস্কতা তৈরি হয়েছিল।

21.ফিজিওক্যাটা’ কাদের বলা হয় ? 

উত্তর। ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে এক শ্রেণির অর্থনীতিবিদের আবির্ভাব হয়, যারা অবাধ বাণিজ্য ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠার পক্ষপাত, ছিলেন। তাদের ফিজিওক্র্যাটস বলা হয়। এই মতবাদের প্রবক্তা হলে। কুয়েসনে, অ্যাডাম স্মিথ প্রমুখ। এই অর্থনীতিবিদরা ব্যাবসাবাণিজ্যে, ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ।নিয়ন্ত্রণের বিরােধিতা করেন।

22.স্টেট জেনারেল কী ? ফ্রান্সের রাজা ষােড়শ লুই কেন

স্টেট জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন?

উত্তর স্টেট জেনারেল : স্টেট জেনারেল হল ফ্রান্সের জাতীয় সভা।

স্টেট জেনারেলের অধিবেশন আহ্বানের কারণ : রাজা যােড়শ লুই স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন ডেকে জনগণের উপর বাড়তি কর ধার্য করতে চেয়েছিলেন। ফ্রান্সের তৎকালীন অর্থসংকট থেকে মুক্তিলাভের জন্য তিনি স্টেট জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন।

23.টেনিস কোর্টের পথ’ বলতে কী বােঝায় ?

উত্তর। ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুন তৃতীয় সপ্তাদান্তের প্রতিনিধিরা স্টেট জেনারেলের অধিবেশনে তাদের জন্য নির্দিষ্ট সভাকক্ষে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখেন সেটি তালাবন্ধ আছে। তখন তারা আবে সিয়েস ও মিরাববার নেতৃত্বে পাশের টেনিস খেলার মাঠে সমবেত হন। এপানে তারা শপথগ্রহণ করেন যে, যতদিন না ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনা হচ্ছে ততদিন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। একে ‘টেনিস কোর্টের শপথ’ বলা হয়।

24.লেতর-দ্য-ক্যাশে’ (Lettres de Cachatt) কী ?

উত্তর ‘লেতর-দ্য-ক্যাশে’ হল ফ্রান্সে প্রচলিত একপ্রকার রাজকীয়৷ গ্রেফতারি পরােয়ানা। এই পরােয়ানার ভিত্তিতে রাজকর্মচারীর যে-কোনাে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আটক করে রাখতে পারতেন।

25.বাস্তিল কী? কবে, কীভাবে এর পতন ঘটেছিল?

উত্তর বাস্তিল : বাস্তিল হল ফ্রান্সের একটি কুখ্যাত দুর্গ।

* বাস্তিলের পতন : ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গে পতন হয় ফরাসি জনগণের আক্রমণে।

26.বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব কী?

উত্তর বাস্তিল দুর্গ ছিল বুরবো রাজতন্ত্রের স্বৈরচারিতার প্রতীক বাস্তিল দুর্গের পতনের প্রধান গুরুত্ব ছিল-

1। ফ্রান্সে বুরবো রাজাদের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে।

2। বাস্তিল দুর্গে বন্দি নিরপরাধ ফরাসি জনসাধারণ মুক্তি পায়।

3। বাস্তিল দুর্গের পতনের মাধ্যমে ফ্রান্সে বিপ্লবের জয়যাত্রা সূচিত

27.‘প্যারিস কমিউন’ কী?

উত্তর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গের পতনের পর ফ্রান্সের বিপ্লবী জনগণ প্যারিসের পৌরশাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয়। নিজেদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করে যে অস্থায়ী পৌরপরিষদ গঠন করে, তাকেই ‘প্যারিস কমিউন’ বলা হয়।

28.মহা আতঙ্ক’ (Great Four) কী ?

উত্তর প্যারিস শহরে গণ অভুথান এবং বাস্তিল দুর্গের পতন ফ্রান্সের গ্রামগুলিতে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এই সময়ে গ্রামের কৃর্যকদের মধ্যে গুজব ছড়ায় যে, তাদের শায়েস্তা করতে অভিজাতদের সেনাবাহিনী ও গুন্ডারা আসছে। এই মিথ্যা রটনাই ফ্রান্সের ইতিহাসে ‘মহা আতঙ্ক (Great Fear) নামে পরিচিত।

29.মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘােষণা’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ফ্রান্সের সংবিধান সভা একটি ঘােষণাপত্রে মানুষের অধিকারের কথা ঘােষণা করে। এটি মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘােষণা নামে পরিচিত। এতে বলা হয়-

1 | স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার।

2। আইনের চোখে সকলেই সমান।

  1. সংবিধান সভার দুটি অর্থনৈতিক সংস্কার সম্পর্ক

উত্তর সংবিধান সভার দুটি অর্থনৈতিক সংস্কার হল— @ ফ্রান্সে গর্জার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং অ্যাসাইনেট’ নামক কাগজের নােট চালু করা হয়। @ সকল প্রকার পরােক্ষ কর তুলে দেওয়া হয় 

  1. অ্যাসাইনেট কী?

উত্তর অ্যাসাইনেট হল ব্রাসি সংবিধান সভা প্রবর্তিত একপ্রকার কাগজের নােট। সংবিধান সভা ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ফ্রান্সের গির্জার সব ভূসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এবং তা আমানত

রেখে তার পরিবর্তে যে কাগজের নােট চালু করে, তা অ্যাসাইনেট নামে পরিচিত।

  1. ব্রান্সউইক ঘােষণা কী?

উত্তর প্রাশিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডরিক উইলিয়ম ষােড়শ লুইকে সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। ফ্রান্স যখন অগ্নিগর্ভ তখন রাজার নির্দেশে অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার যৌথ সেনাধ্যক্ষ ডিউক-অফ ব্রান্সউইক এক ঘােষণাপত্রে জানান, ফরাসি রাজপরিবারের নিরাপত্তা কোনােভাবে বিঘ্নিত হলে তিনি প্যারিস ধ্বংস করে দেবেন। ফরাসি জাতির প্রতি চরম অপমানজনক এই ঘােষণাই ব্রান্সউইক ঘােষণা নামে পরিচিত।

  1. কোন্ ঘটনা সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত ?

উত্তর১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে বিপ্লবী-কমিউন কয়েক হাজার  রাজতন্ত্রের সমর্থক ব্যক্তিকে বন্দি করে এবং কারাগারে অনেক মানুষকেহত্যা করে। এই ঘটনা সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। এই ঘটনা। রাজতন্ত্রের অবসানকে সুনিশ্চিত করে।

See also  Chapter 3 - Autumn- Class 9 WBBSE English Notes Suggestions

34.জেকোবিন’ কাদের বলা হত?

অথবা, জেকোবিন দল বলতে কী বােঝো?

উত্তর জেকোবিন হল ফরাসি আইনসভার একটি রাজনৈতিকদল। ফ্রান্সের জেকোবিন দলের সদস্যদেরই ‘জেকোবিন’ বলা হত।

জেকোবিনরা ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থক ও উগ্র বামপন্থী। জেকোবিনরা কয়েক বছর ফ্রান্সের শাসন পরিচালনা করেছিলেন। জেকোবিনদের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন রােবসপিয়র।

35.জিরভিন’ কারা ছিলেন ?

উত্তর ফ্রান্সের আইনসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হল জিরন্ডিন দল। ফ্রান্সের জিরন্ড প্রদেশ থেকে এর অধিকাংশ সদস্যরা এসেছিলেন বলে এই দল জিরভিন দল নামে পরিচিত ছিল। জিরন্ড প্রদেশ। থেকে আগত দলের সদস্যরাই ‘জিরন্ডিন’ নামে পরিচিত। জিরন্ডিনরা বামপন্থায় বিশ্বাসী হলেও জেকোবিনদের মতাে উগ্র ছিলেন না।

36.জাতীয় মহাসভা বা ন্যাশনাল কনভেনশন’কী ?

অথবা, ন্যাশনাল কনভেনশন কেন আহ্বান করা হয়েছিল ?

উত্তর ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন ষােড়শ লুই বন্দি হলে ফ্রান্সে নতুন সংবিধানের প্রয়ােজন হয়। এই নতুন সংবিধান রচনার জন্য গণভােটের ভিত্তিতে যে পরিষদ গঠিত হয়, তা জাতীয় কনভেনশন নামে পরিচিত। জাতীয় কনভেনশন ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর থেকে ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাস পর্যন্ত বজায় ছিল।

37.সন্ত্রাসের রাজত্ব’ বলতে কী বােঝায়?

উত্তর রাজা যযাড়শ লুইয়ের প্রাণদণ্ডের ফলে ফ্রান্সে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরে খাদ্যাভাব ও অর্থাভাবে চরম সংকট তৈরি হয় এবং জনগণ। প্রজাতান্ত্রিক সরকারের বিরােধিতা করে। অপরদিকে ইউরােপের দেশগুলি ফ্রান্সকে আক্রমণ করতে সচেষ্ট হয়। এই অবস্থায় জেকোবিন দল ফ্রান্সের জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে যে শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে, তাকে সন্ত্রাসের শাসন’বলা হয়। সন্ত্রাসের শাসনের প্রধান পরিচালক ছিলেন রােবসপিয়র।

38.সন্দেহের আইন’ বলতে কী বােঝাে ?

উত্তর ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন চলাকালীন এক বিশেষ ধরনের আইন প্রচলিত হয়। এই আইন অনুযায়ী কোনাে ব্যক্তিকে কেবলমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেফতার এবং বিনা বিচারেশাস্তি প্রদান করা যেত। এই আইনই সন্দেহের আইন’ নামে পরিচিত।

39.রােবসপিয়র কে ছিলেন?

উত্তর রােবসপিয়র ছিলেন ফ্রান্সে জেকোবিন দলের নেতা এবং সন্ত্রাসের রাজত্বের প্রধান পরিচালক। তিনি ফ্রান্সে মহাসন্ত্রাস’ শুরু করেছিলেন। ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুলাই গিলােটিনে তাকে হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের অবসান হয়।

40.লাল সন্ত্রাস’ (Red Terror) বলতে কী বােঝাে ?

উত্তর জেকোবিন দলের পরিচালনায় এবং রােবসপিয়রের নেতৃত্বে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই পর্যন্ত ফ্রান্সে যে নৃশংস সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল, তাকেলাল সন্ত্রাস’ বলা হত। ক্লাঙ্গে সন্ত্রাসের প্রয়ােজন ফুরিয়ে গেলেও ব্রোবসপিয়র সন্ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যান।

41.তে সুপ্রাস (White Terror) বলতে কী বােঝো?

উত্তর ফ্রান্সের বেকার, ভবঘুরে মানুষ রােবসপিয়রের ভয়াবহ লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোকোবিনদের হত্যা করতে শুরু করে। এই ঘটনা ‘শ্বেত সন্ত্রাস’ নামে পরিচিত।

42.রােবসপিয়রের ক্ষমতা থেকে অপসারণকে ‘থার্মিভােরীয় প্রতিক্রিয়া বলা হয় কেন?

উত্তর ফ্রান্সের নতুন বিপ্লবী বর্ষপঞ্জী অনুসারে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ থার্মিভাের (২৭ সেপ্টেম্বর) রােবসপিয়র ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন থার্মিভাের মাসে এই ঘটনাটি ঘটে বলে একে ‘থামিডােরীয় প্রতিক্রিয়া বলা হয়।

43.গিলােটিন’ কী? কে এটি আবিষ্কার করেন? 

উত্তর গিলােটিন হল ফ্রান্সের সন্ত্রাসের শাসনে ব্যবহৃত শিরচ্ছেদ করার একটি যন্ত্র গিলােটিনের আবিষ্কারক হলেন ড. গিলােটিন।

44.ফরাসি বিপ্লবের কটি আদর্শ ও কী কী? অথবা, ফরাসি বিপ্লবের মূল আদর্শ কী?

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের তিনটি মূল আদর্শ ছিল। এগুলি হল—

মৈত্রী ও স্বাধীনতা অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্রবাদ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা।

4 MARKS QUESTION- ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE Notes

1.ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলা হয় কেন ?*

 (Museum of Economic Errors) 

উত্তর ফ্রান্সের আর্থিক অবস্থা ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। ফ্রান্সের রাজস্বব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। তা ছাড়া সরকার অমিতব্যয়িতা, বিলাসিতা, ব্যয়সংকোচে অনিচ্ছা, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি।

ফ্রান্সের পরিস্থিতিকে ভয়ংকর করে তুলেছিল। এইসব কারণে বিশ্ব অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith) তৎকালীন ফ্রান্সকে ভ্রান্ত। অর্থনীতির জাদুঘর’ (Museum of Economic Errors) বলেছেন। ত্রুটিপূর্ণ করব্যবস্থা : i.ফ্রান্সে কর আদায়ের ক্ষেত্রে কোনাে ন্যায়সংগত নীতি ছিল না। অভিজাত ও যাজকরা ছিলেন ফ্রান্সের বেশিরভাগ জমির মালিক। অথচ তারা কর দিতেন সরকারের আয়ের মাত্র ৪%। আর মােট রাজস্বের ৯৬% দিতে হত দরিদ্র কৃষকদের।

ii.সরকারের বাইসাৰি অন্যাফ্রান্সের রাজাদের বেহিসাবি অর্থব্যয়ের ফলে ফ্রান্সের অবথা শােচনীয় হয়ে পড়েছিল।

iii.যুণনীতির অযৌক্তিকতা। চতুর্দশ লুই ও পদশ লুইয়ের ‘আমল বিভিন্ন যুদ্ধে যােগদানের ফলে ফ্রান্সের প্রচুর অর্থব্যয় হয়েছিল, যা ফরাসি অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়। বাজকোশে সংকট । উপরােক্ত কারণে বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সের রাজকোশে সংকট দেখা যায়। ষােড়শ লুইয়ের সময়ে তুর্গো, নেকার প্রমুখ অর্থমন্ত্রী অভিজাতদের বিরােধিতায় আর্থিক সমস্যা সমাধানের কাজটি সঠিকভাবে করতে না পারায় রাজকোশ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে।

iv। অর্থনৈতিক সংকট ; জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদির ফলে।

প্রাক্-বিপ্লব পর্বে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে শস্যহানি ঘটলে এই সংকট আরও প্রবল হয় ফ্রান্সের এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় কালক্রমে ফরাসি বিপ্লব সংগঠনে ইন্ধন জুগিয়েছিল।

2.ফ্রান্সের করব্যবস্থা বৈষম্যমূলক ছিল কেন? 

উত্তর 

বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা : ফ্রান্সের করব্যবস্থা বৈষম্যমূলক ছিল কারণ— ফরাসি রাজাদের সুনির্দিষ্ট কোনাে রাজস্বনীতি ছিল না। বাজেটও তৈরি হত না। তাই রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। ফ্রান্সে প্রত্যক্ষ করের বােঝা দরিদ্র মানুষকেই বহন করতে হত। যাজক ও অভিজাতরা কোনাে প্রকার কর দিতেন না। ফলত করভার সকলের উপর বা সব অঞ্চলের উপর সমান ছিল না। কর আদায়ের ব্যবস্থাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। 

 কর প্রদানকারী : ফ্রান্সে আদায় করা মােট করের ৯৬% কর দিতে হত তৃতীয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষকে। অপরদিকে মাত্র ৪%কর দিত প্রথম ও দ্বিতীয় সম্প্রদায়।

কর আদায় ব্যবস্থা : ফ্রান্সে কর আদায়ের ব্যবস্থাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। সরকার এককালীন কর আদায়ের জন্য কিছু রাজকর্মচারী (ফারমিয়ের nজেনারেল) ও অভিজাতদের কর আদায়ের দায়িত্ব দিত। এই কর

আদায়কারীরা প্রজাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট করের অতিরিক্ত কর আদায় করে নিত। বাড়তি কর আদায়ের জন্য তারা প্রজাদের উপর অকথ্য অত্যাচারও করত।

বাণিজ্যশুল্ক আদায়কারী শুল্কবিভাগের কর্মচারীরা নানাভাবে সরকারের পাওনা আত্মসাৎ করত এবং বণিকদের উপর অত্যাচার চালাত।এইসব কারণে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ তৎকালীন ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’(Museum of Economic Errors) বলেও অভিহিত করেছিলেন।

3.| টীকা লেখাে বুর্জোয়া। (liotir Jaalala)

বুর্জোয়া বা বুর্জোয়াসি (Bourgao|s|8) কথার অর্থ হল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে মেগা বুর্জোয়াদের উদ্ভব সম্পর্কে বলেন যে, গ্রামের উদ্যমী ভাগ্যবান কৃষককুল শহরে গিয়ে

শ্রমিক, কারিগর ও শিল্পদ্রব্য নির্মাতা হিসেবে বিত্তশালী হয়ে বুর্জোয় নামে পরিচিত হয়।

শ্রেণিবিভাগ : বুর্জোয়া শ্রেণি তিন ভাগে বিভক্ত— ) উচ্চ বুর্জোয়া, (2) মধ্য বুর্জোয়া ও ) নিল বুর্জোয়।

  1. উচ্চ বুর্জোয়া ; ধনবান এই শ্রেণির মধ্যে ছিল পুঁজিপতি, ব্যাংকার, ঠিকাদার, পরোক্ষ কর আদায়কারী, বড়ো ব্যবসায়ী প্রমুখ।

2। মধ্য বুর্জোয়া : বুর্জোয়া শ্রেণির দ্বিতীয় স্তরে ছিল মধ্য বুর্জোয়া বা পেটি বুর্জোয়া। এদের মধ্যে ছিল মূলত বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী। মানুষ। যেমন— শিক্ষক, অধ্যাপক, ডাক্তার, লেখক, সাংবাদিক, দার্শনিক, আইনজীবী, শিল্পী প্রমুখ।

3। নিম্ন বুর্জোয়া : বুর্জোয়া শ্রেণির তৃতীয় স্তরে ছিল নিম্ন বুর্জোয়। এদের মধ্যে ছিল দোকানদার, কারিগর, শ্রমিক, ছােটো ব্যাবসাদার। বুর্জোয়া শ্রেণি বিদ্যা, বুদ্ধি ও ধনবলে অভিজাতদের চেয়ে বলীয়ান

ছিল, কিন্তু বংশকৌলীন্যের অভাবে সমাজে তাদের মর্যাদা ছিল কম। এই বুর্জোয়া শ্রেণি ফরাসি বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

  1. সাঁকুলাে (Sans-culottes) বলতে কী বােঝায়?

সাঁকুলােৎ (Sans-culottes) বলতে বােঝায় শহরের নীচুতলার দরিদ্র মানুষদের। এর আভিধানিক অর্থ হল যারা অন্তর্বাস পরে না অর্থাৎ ব্রিচেস বা কুলােৎ ছাড়া ট্রাউজার পরে যারা। এদের অধিকাংশই ছিল নিরক্ষর ও খেটে খাওয়া মানুষ। এই সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিল কারখানার শ্রমিক, মজুর, কারিগর, মুটে, মালি, চাকর, রাজমিস্ত্রি, কাঠুরে, জেলে, জলবাহক প্রমুখ।

সাকুলােৎদের জনসংখ্যা : ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিস শহরের অধিকাংশ মানুষ ছিল সাঁকুলােৎ সম্প্রদায়ভুক্ত।

সাঁকুলাে শ্রেণির বৈশিষ্ট্য :

i.এরা শহরের নােংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করত।

  1. এরা গা-গতরে কাজ করে পেট চালাত এবং কাজ না থাকলে ভিক্ষাও করত।

iii. এদের মধ্যে অনেকে অসামাজিক কাজেও যুক্ত থাকত ও নানাভাবে গণ্ডগােল করত।

iv.শহরের ধনী মানুষরা এদের ঘৃণা করত।

v.স্বার্থান্বেষী রাজনীতির লােকেরা এদের নানাভাবে ব্যবহার করত। সাকুলােৎ তবে বলা যায়, সাঁকুলােত্রই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গের পতন থেকে শুরু করে নানাভাবে ফরাসি বিপ্লবকে এগিয়ে

নিয়ে গিয়েছিল।

5.টীকা লেখাে : অভিজাত বিদ্রোহ। অথবা, অভিজাতরা কেন বিদ্রোহ করেছিল?

উত্তর ষােড়শ লুই ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা হওয়ার পর লক্ষ করেন যে, ফ্রান্সের রাজকোশ একেবারে শূন্য হয়ে পড়েছে। তিনি তুর্গো, নেকার, ক্যালােন, ব্রিয়া প্রমুখ অর্থমন্ত্রী নিয়ােগ করে এই আর্থিক সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করলে অভিজাতরা রাজার বিরােধিতা করেন।

প্রেক্ষাপট : অভিজাতদের বিরােধিতার ফলে রাজা বাধ্য হয়ে তাদের হাত থেকে আইন এবং কর সংক্রান্ত অধিকার কেড়ে নেন। এর ফলে ফ্রান্সের নানা স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়।

i.অভিজাতরা অর্থমন্ত্রী ব্রিয়ার কর আদায় সংক্রান্ত কয়েকটি প্রস্তাব মেনে নিলেও স্ট্যাম্পকর ও ভূমিকরের প্রস্তাব বাতিল করে দেন। তারা দাবি করেন যে, একমাত্র স্টেট জেনারেলের কর আরােপের অধিকার আছে।

ii.ষােড়শ লুই পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যের আচরণে উত্যক্ত হয়ে নিজের ভাই ডিউক অফ অর্লিয়েন্স-সহ তিনজন সদস্যকে নির্বাসিত করেন। এতে পার্লামেন্ট ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে এবং অভিজাতরা রাজার বিরুদ্ধে কয়েকটি আইন পাস করে ইচ্ছামতাে নাগরিকদের গ্রেফতার, বিচারকদের অপসারণ প্রভৃতি বিষয়ে রাজার ক্ষমতা কেড়ে নেয়।

iii.পার্লামেন্টের আইনে ক্ষু বন্ধ হয়ে রাজা সমস্ত প্রদেশের পার্লামেন্টগুলি মুলতুবি করেন এবং ৫৭টি নতুন বিচারালয় স্থাপন করে নিজের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলিকে আইনে পরিণত করেন।

বিদ্রোহের সূচনা : রাজা পার্লামেন্ট মুলতুবি করলে তার বিরুদ্ধে অভিজাতরা বিদ্রোহ শুরু করে দেন। রাজার বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহে শীঘ্রই যাজক ও বুর্জোয়ারাও শামিল হন। ফলে অভিজাত বিদ্রোহ গণবিদ্রোহের আকার ধারণ করে। পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক সভা এই বিদ্রোহকে সমর্থন জানায়। এই অভিজাত বিদ্রোহ থেকেই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের সূচনা হয়।

গরত্ব : বুরবোঁ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। রাজা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের কাছে

i.এই অভ্যুত্থানে সুবিধাভােগী শ্রেণি রাজার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। বুর্জোয়াদের সমর্থনে অভিজাত বিদ্রোহ রাজতন্ত্রবিরােধী আন্দোলনে পরিণত হয়।

ii.অভিজাত বিদ্রোহের চাপে রাজা স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন ডাকতে বাধ্য হন। ফলে রাজার স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের মর্যাদায় আঘাত লাগে।

iii.রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতা ও স্বৈরতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক লেফেভর (Lefebvre) অভিজাত বিদ্রোহকে অভিজাত বিপ্লব’ বলেছেন। এ কথা সত্য যে, বিদ্রোহের প্রথম পর্যায়ে অভিজাতরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের হাত থেকে বিদ্রোহের নেতৃত্ব প্রথমে বুর্জোয়াদের হাতে এবং পরে সাকুলােৎ ও কৃষক শ্রেণির হাতে চলে যায়।

6.টীকা লেখাে : টেনিস কোর্টের শপথ (Tennis court Oath)। অথবা, টেনিস কোর্ট শপথ’বলতে কী বােঝাে?

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের সূচনাপর্বের অন্যতম প্রধান ঘটনা ছিল টেনিস কোর্টের শপথ। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন ফ্রান্সের জাতীয় সভার (স্টেট জেনারেল) প্রতিনিধিরা টেনিস কোর্টের মাঠে সমবেত হয়ে যে শপথগ্রহণ করেছিলেন, তা টেনিস কোর্টের শপথ’ নামে পরিচিত।

পটভূমি : ফরাসি সম্রাট ষােড়শ লুই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কুয়েসনে (Quesnay) ছিলেন ফরাসি সম্রাট পঞ্চদশ লুই (Louis XV)-এর চিকিৎসক। তিনি ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ট্যাবলাে ইকনমিক’ (Tableau économique) গ্রন্থে তার অর্থনৈতিক চিন্তাধারা প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণমূক্ত অবাধ বাণিজ্য নীতির অপর নাম লেসে ফেয়ার (Laissez- Faire)। এই কথাটি জনপ্রিয় করে তােলেন গুর্নে (Gournay)। সভার অধিবেশন আহ্বান করেন। এই অধিবেশনে তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা শ্রেণিভিত্তিক ভােটদানের পরিবর্তে মাথাপিছু ভােটদানেরঅধিকার দাবি করেন। সম্রাট ষােড়শ   তৃতীয় শ্রেণির দাবি নাকচ করে দেন। তখন তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা মিরাব্যুৎ, লাফায়েৎ ও আবে সিয়েসের নেতৃত্বে পাশের টেনিস কোর্টের মাঠে সমবেত হয়ে শপথগ্রহণ করেন।

শপথ : তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা টেনিস কোর্টের মাঠে শপথ নিয়েছিলেন যে- ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনা করা পর্যন্ত তারা এই স্থান ত্যাগ করবে না। তাদের দাবি ছিল—

তৃতীয় শ্রেণির সদস্যদের মাথাপিছু ভােটের দাবি মেনে নিতে হবে তাদের একটি নতুন সংবিধান রচনার অধিকার দিতে হবে।

টেনিস কোর্টের শপথ

ফলাফল : টেনিস কোর্টের শপথের ফলে প্রথম দুই এস্টেট গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে এবং ফরাসি জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করে তৃতীয় এস্টেটের প্রতিনিধিরা। তৃতীয় শ্রেণির সদস্যদের মাথাপিছু ভােট ও নতুন সংবিধান রচনার দাবি সম্রাট ষােড়শ লুই শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে বাধ্য হন এবং ২৭ জুন পুনরায় জাতীয় সভার অধিবেশন আহ্বান করেন। ফলে ফরাসি বিপ্লবের পথ সুগম হয়। অনেক ঐতিহাসিক টেনিস কোর্টের শপথকে ফরাসি বিপ্লবের সূচনাপর্ব বলে অভিহিত করেছেন।

7.ফরাসি জনতা কেন বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে? অথবা, টিকা লেখো : বাস্তিল দুর্গের পতন (Fall of Bastille)

উত্তর বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি রাজতন্ত্রের অত্যাচারের অন্যতম কেন্দ্র এই দুর্গে রাজতন্ত্রের বিরােধী ব্যক্তিদের বন্দি করে রাখা হত ও অত্যাচার করা হত। তাই জনগণের কাছে বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি রাজতন্ত্রের অত্যাচারের প্রতীক। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের বিদ্রোহী জনগণ বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে ধ্বংস করেছিল।

বাস্তিল দুর্গের পতনের কারণ : খাদ্যদ্রব্যের মূল্য হ্রাস ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সােচ্চার হয়ে ওঠা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য প্যারিস নগর কর্তৃপক্ষ তাদের উপর আক্রমণ চালায়। সেইসঙ্গে সম্রাট যােড় লুই-এ -এর জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী নেকার (Necker)-কে পদচ্যুত করার সংবাদে। জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে শহরের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ বাধে। উন্মত্ত জনতা অধিক আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের জন্য স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীক’ বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে।

বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ ও ধবংস : প্যারিস শহরের উত্তেজিত জনতা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই কুখ্যাত বাস্তিল দুর্গ দখল করে ধ্বংস করে দেয়। সমস্ত বন্দিরাও মুক্তি পায়।

ফলাফল : বাস্তিল দুর্গের পতনের ফলে রাজা যােড়শ লুই-এর স্বৈরশাসনের অবসান হয়।

2। রাজা জাতীয় পরিষদকে স্বীকৃতি দেন এবং এই সময় থেকে রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতা আইনসভার হাতে চলে যায়।

[3] ফ্রান্সের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সূচনা হয় এবং অভিজাততন্ত্রের পতন আসন্ন হয়ে ওঠে। প্রায় ২০ হাজার অভিজাত দেশত্যাগী হয়।

[4] বাস্তিলের পতন কৃষক বিদ্রোহে ইন্ধন জোগায়, সামন্ততন্ত্রের পতনের পথ প্রস্তুত এবং পৌরবিপ্লবেরও সূচনা করে। ঐতিহাসিক গুডউইন (Goodwin) বলেন- “বাস্তিলের পতনের মতাে বিপ্লবের আর কোনাে ঘটনার এত বহুমুখী ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল না।

8.ফিজিওক্র্যাট (Physiocrats) মতবাদের প্রবক্তা কারা ?এই মতবাদের মূল কথা কী

উওর অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে ফিজিওক্র্যাট (Physiocrate) নামে। এক শ্রেণির অর্থনীতিবিদদের আবির্ভাব হয়। ফিজিওক্র্যাট কথাটির উদ্ভাবক ছিলেন নেমুর।

* বক্তা : ফিজিওক্র্যাট মতবাদের প্রবক্তা বা উদগাতা হলেন ফাঁসােয়া কুয়েসনে (Quesnay, ১৬৯৪-১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দ)। ইংল্যান্ডে এই মতবাদের প্রবক্তা ছিলেন অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith, ১৭২৩-১৭৯০ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি তার দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস (The Wealth of Nations) গ্রন্থে অবাধ বাণিজ্য নীতির ধারণা ব্যক্ত করেন। ফরাসি অর্থনীতিবিদরা ছিলেন তার ভাবশিষ্য।

* ফিজিওক্র্যাট মতবাদের মূল কথা :

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবােধ : এই মতবাদে বলা হয় মানুষ নিজেই তার স্বার্থরক্ষার সবচেয়ে বড়াে বিচারক। মানুষের অর্থনৈতিক কাজে সরকারের নিয়ন্ত্রণ অন্যায়।

অবাধ বাণিজ্য : এই মতবাদের মূল কথা অবাধ বাণিজ্য। এজন্য অভ্যন্তরীণ শুদ্ধনীতির বিরােধিতা এবং খােলাবাজার নীতিকে সমর্থন করা হয়।

ভূমিকর প্রদান : এই মতবাদে বলা হয়, জমি হল সমস্ত সম্পদের উৎস। তাই প্রত্যেক জমির মালিকের ভূমিকর দেওয়া উচিত। ফ্রান্সের যাজক, অভিজাত, বুর্জোয়া সকলকেই ভূমিকর দিতে হবে |

9.ফরাসি বিপ্লবের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ আলােচনা করাে।

উত্তর ভূমিকা : ফ্রান্সের অধিবাসী ফরাসিরা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে যে বিপ্লব ঘটিয়েছিল, তা ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লব (French Revolution) নামে খ্যাত। এই বিপ্লবের মাধ্যমে ফরাসি জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। ঐতিহাসিকগণ বলেন যে, ফরাসিদের ওসামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য ও ক্ষোভের কারণেই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ঘটেছিল।

ফরাসি বিপ্লবের কারণ :

সামাজিক কারণ : ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ফরাসি সমাজে বৈষম্য ও শােষণ। শ্রেণিবিভক্ত ফরাসি সমাজব্যবস্থা মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ফরাসি সমাজে এই সময় প্রধান তিনটি শ্রেণি (এস্টেট) বর্তমান ছিল; যথা— প্রথম শ্রেণি (যাজকগণ), দ্বিতীয় শ্রেণি (অভিজাতবর্গ) এবং তৃতীয় শ্রেণি (ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতি)। এই তিন শ্রেণির মধ্যে যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় ছিল বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত শ্রেণি’ ও তৃতীয় সম্প্রদায় ছিল অধিকারহীন শ্রেণি।

1 প্রথম শ্রেণি (First Estate) :ফরাসি সমাজব্যবস্থায় যাজকরা ছিল প্রথম শ্রেণিভুক্ত। বিপ্লবের পূর্বে এরা ছিলেন সুবিধাভােগী এবং ফ্রান্সের মােট জনসংখ্যার ১%-এরও কম। এদের মােট সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার। অথচ এদের দখলে ছিল ফ্রান্সের মােট জমির ১০%। এই জমির জন্য এরা রাজাকে কোনাে প্রকার করও দিতেন না। যাজকরা ভূমিকর, ধর্মকর, মৃত্যুকর ইত্যাদি আদায় করলেও সরকারকে স্বেচ্ছাকর

ছাড়া অন্য কোনাে কর দিতে রাজি ছিলেন না। অথচ রাষ্ট্রের সবরকম সুযােগসুবিধা এরা ভােগ করতেন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন।

[2] দ্বিতীয় শ্রেণি (Second Estate) : ফরাসি সমাজে অভিজাতরা ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত। এরা ছিলেন ফ্রান্সের মােট জনসংখ্যার প্রায় ১.৫% অর্থাৎ প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার। অথচ ফ্রান্সের মােট জমি,২০% ছিল এদের দখলে | এরা জমির জন্য সরকারকে কোন পত্যখ্ কর দিতেন না। আবার সরকারের সামরিক ও অসামরিক বিভাগের উচ্চপদগুলিতে এদের একচেটিয়া অধিকার ছিল।

[3] তৃতীয় শ্রেণি (Third Estate) : ফরাসি সমাজের ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, সর্বহারা সকলেই ছিলেন তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত। এদের মােট জনসংখ্যা ছিল ফ্রান্সের মােট জনসংখ্যার ৯৭৩%-এর বেশি। সমাজে এদের বংশকৌলীন্য ছিল না। ফ্রান্সের। করের বােঝার বেশির ভাগটাই এদের বহন করতে হত। ফ্রান্সে সবক্ষেত্রে এরা ছিলেন অসাম্যের শিকার। তাই তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত মানুষেরা তাদের প্রতি সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের শােষণ,

(4], নিপীড়নের প্রতিবাদে বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন।

অর্থনৈতিক কারণ : অর্থনৈতিক দুরবস্থাও ফরাসি বিপ্লবের পথকে প্রশস্ত করেছিল।  

10.ফ্রান্সের করব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই করব্যবস্থা ফরাসি সমাজের তৃতীয় সম্প্রদায়কে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল ?

উত্তর ভূমিকা : বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে বুরবো (Bourbon) রাজবংশের রাজারা রাজত্ব করতেন। রাজাদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করা বিভিন্ন ধরনের কর।

$ ফ্রান্সের করব্যবস্থা :১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে প্রচলিত করগুলিকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় প্রত্যক্ষ কর এবং পরােক্ষ কর।

 প্রত্যক্ষ কর ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে তিন ধরনের প্রত্যক্ষ কর প্রচলিত ছিল। যেমন- 0 ‘টেইলি’ (Taile) বা সম্পত্তিকর

ক্যাপিটেশন’ (Capitation) বা উৎপাদনকর এবং @ ‘ভিংটিয়েমে’ (Vingtieme) বা আয়কর। যাজক ও অভিজাতরা যথাক্রমে ফ্রান্সের ১ঠ অংশ এবং অংশ ভূসম্পত্তির মালিক হয়েও তারা রাষ্ট্রকে টেইলি দিতেন না। যাজকেরা রাষ্ট্রকে একপ্রকার স্বেচ্ছাকর প্রদান করতেন। যাজক এবং অভিজাত সম্প্রদায় রাষ্ট্রকে কোনাে প্রকার উৎপাদনকর এবং আয়কর প্রদান করতেন না। রাষ্ট্রের তিনটি প্রত্যক্ষ করই তৃতীয়

সম্প্রদায় বহন করত। কর আদায়ের জন্য ইনটেনডেন্ট’ (Intendent) নামক কর্মচারীরা সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাত।

পরােক্ষ কর : প্রত্যক্ষ করের পাশাপাশি ফ্রান্সে বহু পরােক্ষ করও প্রচলিত ছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল- ‘টাইথ’ (Tithe) বা ধর্মকর, @ ‘গ্যাবেলা’ (Gabelle) বা লবণ কর, @ ‘এই’ (Aides) বা ভােগ্যপণ্যের উপর কর, ‘তেরাজ’ বা পথকর, ® করভি’ (Corvée) বা মকর, ® ব্যানালাইট’ (Banalités) বা শস্যদানা ভানার কর প্রভৃতি। পরােক্ষ করগুলিও সরকার, গির্জা ও সামন্তপ্রভুকে তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা দিতে বাধ্য থাকত। যাজক ও অভিজাতরা রাষ্ট্রকে কোনাে প্রকার পরােক্ষ কর দিতেন না।

করব্যবস্থা ও তৃতীয় সম্প্রদায় : ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে বিভিন্ন প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ কর প্রচলিত ছিল। তবে এই সকল কর ফরাসি সমাজের সকল সম্প্রদায় বহন করত না। ফরাসি সমাজব্যবস্থা তিনটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। প্রথম সম্প্রদায়ভুক্ত যাজক এবং দ্বিতীয় সম্প্রদায়ের অভিজাতরা সকল প্রকার কর প্রদানের দায়িত্ব থেকে মুক্ত ছিলেন। এই দুই শ্রেণি ব্যতীত অবশিষ্ট যারা ছিলেন তারা তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত। দেশের মােট জনসংখ্যার প্রায় ৯৮% মানুষ ছিলেন তৃতীয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ। এরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযােগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেও রাষ্ট্রপ্রদত্ত সমস্ত প্রকার কর প্রদান করতে বাধ্য হতেন। প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ করের বােঝা বহন করে জীবনধারণ করা কষ্টকর হয়ে উঠলে তারা বিপ্লবমুখী হয়ে ওঠেন।

  1. ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের (Philosophers) ভূমিকা আলােচনা করাে।

অথবা, ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকনের প্রভাব আলােচনা করো।

ভূমি : ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবী বা দার্শনিকদের ভূমি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অষ্টাদশ শতাব্দীর ফ্রান্স ছিল নদীপ্তির যুগ। অষ্টাদশ শতিেদ্বতীয়ার্ধে ফ্রান্সে বুরবে রাজাদের স্বৈরাচারী শাসনের ফলে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে অসন্তোষ তৈরি হয় তাকে কাজে লাগিয়ে ফরাসি দার্শনিরা জনসাধারণের মনােজগতে পরিবর্তন বা বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছিনে। ভলতেয়ার, মন্তে রুশাে, দিনেরাে প্রমুখ দার্শনিরা তাদের রচনার দ্বারা রাসি জনসাধারণকে নিয়ে অধিকার সম্বন্ধে সচেতন করে তােলেন। এর ফলে যে বৈপ্লবিক ভাবতরণের সুষ্টি হয়, তা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবকে সম্ভব করে তুলেছিল।

 দার্শনিকদের ভূমিকা ;

 মস্তে (44ontesquieu). অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসি দার্শনিকদের মত্বেকং ই বিখত্র এখন

মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন মন্তে। পেশায় আইনজীবী মতে ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক এবং ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ  নীতির প্রবক্তা। তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’ (The Spint of Laws)-এ রাজার দৈবস্বত্ব নীতির সমালােচনা করে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আইন, শাসন ও বিচারবিভাগের পৃথকীকরণের কথা বলেন। মন্তেঙ্কুর আর-একটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল ‘দ্য পার্সিয়ান লেটারস’ (Tho Persian Letters)। এই গ্রন্থে তিনি বিপ্লব-পূর্ব ফরাসি সমাজব্যবস্থার তীব্র সমালােচনা করেন।

ভলতেয়ার (Voltaire) অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্স তথা ইউরােগের প্রখ্যাত দার্শনিক ভলতেয়ার একাধারে ছিলেন যুক্তিবাদী, কবি ও নাট্যকার। তার আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য ছিল চার্চ ও রাষ্ট্র। তিনি চার্চের দুর্নীতি ও ভ্রষ্টাচার সম্পর্কে উল্লেখ করে ফরাসি স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের তীব্র সমালােচনা করেন। তিনি ক্যাথলিক

গির্জাকে বিশেষ অধিকার প্রাপ্ত উৎপাত’ বলে অভিহিত করেন। ‘ভলতেয়ারের দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল- কাদিদ’ (Candide) ও লেতর ফিলজফিক’ (Leties Philosophiquos)। এই প্রস্থ দুটিতে তিনি ধর্মীয়

রীতিনীতি ও কুসংস্কারের বিরুষ্পে প্রতিবাদ করেছিলেন। বুশাে (Rousseau) অষ্টাদশ শতাব্দীর দার্শনিকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বৈপ্লবিক ছিলেন রুশাে। তাকে ফরাসি বিপ্লবের জনক’ বলা

হয়। রুশাে ছিলেন নতুন সমাজ গঠনের পথপ্রদর্শক। তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ হল— সামাজিক চুক্তি’ (Social Contract) এবং ‘অসাম্যের সূত্রপাত (Origin of Inequality)। সামাজিক চুক্তি গ্রন্থে বুশাে বলেন যে, মানুষের মুক্তি ও নিরাপত্তার জন্য সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন করবে। তার মতে, জনগণই হল রাষ্ট্রীয় শক্তির উৎস এবং তারাই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী চুক্তির মাধ্যমে রাজা শাসনক্ষমতা লাভ করেন।

‘অসাম্যের সূত্রপাত’ গ্রন্যে তিনি বলেন, মানুষ স্বাধীন হয়ে এবং সমান অধিকার নিয়ে জন্মায়। কিন্তু বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা তাকে দরিদ্র ও পরাধীন করে। এককথায় স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের

বিরােধিতা করে বুশাে সকল জনগণের সাম্য ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন। বুকে এবং এর কার

দিদেবাে ও এলেমবার্ট (Diderot & Alember) ফরাসি দার্শনিক দেনিস দিদেৱাে (Donis Didorot) ও দ্য এলেমৰার্ট (D’ Aleiben) ৩৫ খণ্ডের একটি বিশ্বকোশ সংকলন করেন (১৭৫১-১৭৮০ খ্রি)।

দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতিতে সমৃদ্ধ এই বিশ্বকোশ পাঠ করে ফরাসিদের চিন্তাধারায় ব্যাপক আলােড়নের সৃষ্টি হয়। সিদের বলেছেন, মানুষ তার চারপাশের অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করতে

পারে বলেই সে জীবজগতে শ্রেষ্ঠ। তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফরাসি জাতি নিজ ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ গ্রতে তৎপর হয়ে ওঠে।

5। ফিজিওক্র্যাটস (Physiocrats) ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে এনসাইকে। ফিজিওক্র্যাটস নামে একদল অর্থনীতিবিদের আবির্ভাব হয়। এরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে অবাধ বাণিজ্য ও শিল্প বেসরকারিকরণের পক্ষপাতী ছিলেন। এই গােষ্ঠীর অন্যতম নেতা ছিলেন কুয়েসনে (Quesnay)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top

আজকেই কেনো পরীক্ষার শর্ট নোটস

এখন সহজে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও – আজকেই ডাউনলোড করো পিডিএফ বা বই অর্ডার করো আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকে