fbpx

জীবন ও তার বৈচিত্র্য Jibon O Tar Boichitra Class 9 Life Science Jibon Bigyan WBBSE Notes

জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য (Basic Properties of Life) :

আমরা আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরণের বস্তু উপলব্ধি করি, যার প্রতিটিই একটি পদার্থ দিয়ে তৈরি । ভর, আয়তন এবং দৃশ্যমান বস্তু যা আমাদের চারপাশে দেখা যায় এমন কিছু পদার্থকে দুটি বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে –

  1. জড়বস্তু (non-living substance)
  2. জীবজগৎ (living world)।

জীবন 

বিজ্ঞানীদের মতে ,

  1. জীবনকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে অসংখ্য জৈবনিক প্রক্রিয়া যেমন বিপাক, বৃদ্ধি এবং জেনেটিক উপাদানের জনন সম্পন্ন করার ক্ষমতা হিসাবে । 
  2. আবার অনেকে বলেন, জীবন হল এক ধরনের সুসংগঠিত জিনগত একক যা বিপাক, প্রজনন এবং বিবর্তন সম্পন্ন করে ।

জীবনের বৈশিষ্ট্য

  1. জনন : জনন বলতে সেই জৈবনিক প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যার মাধ্যমে প্রতিটি প্রাণী প্রজাতির অস্তিত্বকে বজায় রাখার  জন্য তাদের নিজস্ব আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্যেযুক্ত অপত্য জীব সৃষ্টির মাধ্যমে প্রজনন সম্পন্ন করে । উদাহরণ : আমের বীজ থেকে নতুন আম গাছ উৎপন্ন হয়, যখন মুরগির ডিম থেকে মুরগির ছানা জন্মায় ।
  1. বিপাক : বিপাক বলতে জীবন্ত কোশের প্রোটোপ্লাজমে ঘটে যাওয়া গঠনগত  এবং ভাঙণমূলক জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একত্রে বোঝায় (বেশিরভাগ এনজাইম নিয়ন্ত্রিত) । একটি জীবের মধ্যে বিপাকের দুটি রূপ রয়েছে –
  • উপচিতি বিপাক : সরল যৌগ যে বিপাক ক্রিয়ার দ্বারা বিক্রিয়া হয়ে জটিল জৈব যৌগ সৃষ্টি করে এবং যার ফলে জীবের শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি পায় তাকে উপচিতি বিপাক বলা হয় । যেমন – সালোকসংশ্লেষ
  • অপচিতি বিপাক : অপচিতি বিপাক হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জটিল জৈব যৌগ ভেঙে সরল যৌগ উৎপন্ন করে এবং একটি জীবের শুষ্ক ওজন হ্রাস করে । উদাহরণস্বরূপ, শ্বসন প্রক্রিয়ায়, কোশ মধ্যস্থ বস্তুর জারণ । বলা যেতে পারে, উপচিতি বিপাকের মাধ্যমে, জীব ও শক্তির আবদ্ধকরুন ঘটে এবং শক্তি সঞ্চয় করে, এবং অপচিতি বিপাকের মাধ্যমে শক্তির নির্গমন ঘটে , যা বহু জৈবিক প্রক্রিয়া চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
  1. উত্তেজিতা :উত্তেজনা হল জীবের পরিবেশগত উদ্দীপনায় (আলো, তাপ) সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা । উদাহরণস্বরূপ, কেন্নোর শরীর স্পর্শ করলে তা গুটিয়ে যায় ।
  2. পুষ্টি এবং বৃদ্ধি:জীবগুলি খাদ্য তৈরি করে বা খাদ্য গ্রহণ করে এবং কোশের মধ্যে শোষণ করে, যার ফলে পুষ্টি এবং বৃদ্ধি ঘটে ।
  3. ছন্দবদ্ধতা : ছন্দবদ্ধতা হলো, জীবের শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস, পেশী সংকোচন, হৃদস্পন্দন ইত্যাদি নির্দিষ্ট পর্যায়ক্রম এবং ছন্দে ঘটে । উদাহরণস্বরূপ, মানুষের হৃদয় প্রতি মিনিটে 70-72 বার স্পন্দিত হয় ।
  4. চলন ও গমন :চলন হল সেই অবস্থা যখন একটি জীব একই স্থানে থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া করে । গমন হলো, সেই অবস্থা যখন একটি জীব এক স্থান থেকে অন্য স্থান পরিবর্তন করে । যেমন – ক্ল্যামাইডোমোনাস এবং ভলভক্স যা প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয়ের চলনের বৈশিষ্ট্য , কিন্তু গমন কেবলমাত্র প্রাণীর ক্ষেত্রে সম্ভব যেমন স্পঞ্জ ।
  5. পরিব্যক্তি :পরিব্যক্তি হলো জিনের বড়, দ্রুত এবং স্থায়ী পরিবর্তন । পরিব্যক্তির ফলে প্রায়ই নতুন প্রজাতির উদ্ভবও হয় আবার বিলুপ্তি ঘটে ।
  6. অভিযোজন: অভিযোজন হলো পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জীবের রূপগত, শারীরবৃত্তীয় এবং আচরণগত পরিবর্তন । উদাহরণস্বরূপ, মাছের দেহে পাখনা তৈরি হয়, যা তাদের জলে সাঁতার কাটতে সাহায্য করে । এই ভাবেই অভিযোজনের মাধ্যমে জীবের অভিব্যক্তি হয় ।

পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি (Origin of life on earth) :

অজৈব পদার্থকে জীব বা জৈব পদার্থের উৎস বলে মনে করা হয় । জীবনের উৎপত্তির পরে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য উল্লেখযোগ্য এবং সুস্পষ্ট পরিবর্তন ঘটেছে । সেই পরিপ্রেক্ষিতে, জীবনের সাথে সম্পর্কিত দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে :

  1. প্রাণের সৃষ্টি
  2. জীবের বিবর্তন

প্রাণ সৃষ্টি :
ওপারিন তাঁর  ‘The Origin of Life on Earth’ (1924) এবং হ্যালডেন তাঁর ‘Rationalist Annual’ (1929) বইতে প্রাণের সৃষ্টি সম্পর্কে নানান মত প্রকাশ করেছেন যা ওপারিন ও হ্যালডেন মতবাদ বা
জৈব – রাসায়নিক  উৎপত্তি মতবাদ নামে পরিচিত হয় ।

তাদের মতে,

  1. প্রাণ অজৈব পদার্থ থেকে গঠিত এবং প্রায় 370-400 কোটি বছর আগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কোন মুক্ত O2 ছিল না ।
  2. হাইড্রোজেন (H2), জলীয় বাষ্প (H2O), মিথেন (CH4), অ্যামোনিয়া (NH3), কার্বন মনোক্সাইড (C0), এবং হাইড্রোজেন সায়ানাইড (HCN) সহ রাসায়নিকগুলি বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে ছিল, যেখান থেকে অসংখ্য জৈব যৌগ তৈরি হয়েছিল ।
  3. বিজ্ঞানী ওপারিনের মতে, উচ্চ তাপমাত্রা এবং সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে CH4, CO, HCN, NH3, H2O-এর মতো বিভিন্ন সরল যৌগ যখন বিক্রিয়া করে জটিল জৈব যৌগের অণু গঠন করে, সেই  প্রক্রিয়াকে রাসায়নিক বিবর্তন বলে ।

স্ট্যানলে  মিলার এবং হ্যারল্ড উরে, দুই বিজ্ঞানী ওপারিনের তত্ত্বের জন্য পরীক্ষামূলক সমর্থন প্রদান করেছিলেন ।

প্রথম ধাপ
রাসায়নিক বিবর্তনের মাধ্যমে সমুদ্রের জলে শর্করা, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য জটিল জৈব পদার্থ তৈরি হয় ।

জৈব যৌগ এবং সমুদ্রের গরম জলের মিশ্রণকে বিজ্ঞানী হ্যালডেন “গরম তরল স্যুপ” হিসাবে উল্লেখ করেছে ন। এই  স্যুপই  হলো প্রাণের উৎস ।

দ্বিতীয় ধাপ
একটি অক্সিজেন-মুক্ত পরিবেশে, গরম তরল স্যুপের সাধারণ জৈব উপাদানগুলি একে অপরের সাথে বিক্রিয়া করে বিশাল জটিল জৈব যৌগ তৈরি করে । উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে- প্রোটিন, পলিস্যাকারাইড এবং পলিনিউক্লিওটাইড তৈরী হয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, শর্করা এবং নিউক্লিওটাইডস- এর  পলিমারাইজেশনেই ফলে ।

তৃতীয় ধাপ
ওপারিনের মত অনুসারে, কোয়াসারভেট হল একটি গরম তরল স্যুপের বিশাল জৈব অণু যা আন্তঃরাণবিক মিথস্ক্রিয়া দ্বারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং বড়ো বড়ো কোলয়েড বিন্দু তৈরি হয় ।

বিজ্ঞানী ফক্সের মতানুযায়ী, পলিপেপটাইড শৃঙ্খল তৈরি করতে অ্যামিনো অ্যাসিডের সংমিশ্রণকে গরম করার পর ঠান্ডা করা হয়, একে প্রোটিনয়েড বলে ।

মাইক্রোস্ফিয়ার হল প্রোটিনয়েডের অংশ যা জলে দ্রবীভূত হয় এবং ঠান্ডা হয়, একটি লিপিড ঝিল্লি সহ ছোট গোলক তৈরি করে ।

চতুর্থ ধাপ
প্রায় ৩৭০ কোটি বছর আগে, পলিনিউক্লিওটাইডগুলি নিউক্লিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়েছিল । প্রথম রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড অর্থাৎ RNA তৈরি হয় । এই RNA নগ্ন জিন হিসাবে পরিচিত ।

তারপর নগ্ন জিনগুলি কোয়াসারভেট বা মাইক্রোস্ফিয়ারে প্রবেশ করে । প্রাথমিক কোশ বা প্রোটোসেলগুলি কোয়াসারভেট দিয়ে গঠিত, যাতে পরভোজী ভাইরাসের মতো নিউক্লিওপ্রোটিন থাকে ।

RNA হলো এই ধরনের প্রোটোসেলের জেনেটিক পদার্থ । পরবর্তীতে, DNA প্রাথমিক জেনেটিক পদার্থ হিসাবে প্রকাশ হয়।

পঞ্চম ধাপ

জীবনের বিভিন্ন পর্যায় : যখন সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা 50 ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নেমে যায়, তখন প্রোটোসেলের বিভিন্ন কোলোয়ডিয় উপাদান সাইটোপ্লাজম তৈরি করতে একত্রিত হয় ।

প্রোটোসেল থেকে সাইটোপ্লাজম ও নগ্ন DNA যুক্ত, শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এবং ব্যবহারে সক্ষম থাকে এবং প্রোটিন গঠনকারী তন্ত্ররূপে কোশের সৃষ্টি হয় ।

অক্সিজেন-মুক্ত পরিবেশে আবির্ভূত হওয়া প্রথম কোশগুলি অবায়ুজীবী প্রকৃতির ছিল, যা পার্শ্ববর্তী পরিবেশ থেকে বিভিন্ন জৈব পদার্থ শোষণ করে পুষ্টি প্রদান করে । অর্থাৎ, নিউক্লিয়াসবিহীন কেমোহেটারোট্রফ প্রকৃতির আদি কোশ হলো প্রোক্যারিওটিক ।

ষষ্ঠ ধাপ

জীবের বিবর্তন : সায়ানোব্যাক্টেরিয়ার মতো প্রোক্যারিওট জীবের সালোকসংশ্লেষের ফলে পৃথিবীতে O2সৃষ্টি হয়, যা জারকীয় পরিবেশ এবং ওজোন স্তর তৈরি করে । সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীতে প্রোক্যারিওটিক কোশের বিবর্তনের ফলে ইউক্যারিওটিক কোশের এবং বিভিন্ন প্রাণীর উদ্ভব ঘটে ।

জীববৈচিত্র্যের উৎস

পৃথিবীতে কোনো দুটি প্রাণী, এমনকি একই প্রজাতির প্রাণীও ভিন্ন রকমের হয় । বৈচিত্র্যপূর্ণ এই ধরনের জীবেরা হলো প্রকরণ ।

একই পিতামাতার সন্তান এবং অভিন্ন যমজ সন্তানের মধ্যেও পার্থক্য থাকে, পাশাপাশি একই পরিবেশে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও প্রাণীদের মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষণীয় ।

জীববৈচিত্র্য: একটি নির্দিষ্ট এলাকায় মোট জিন, প্রজাতি এবং বাস্তুতন্ত্রের সমাহারকে সেই এলাকার জীববৈচিত্র্য বলে ।

ভেদ বা প্রকরণ

বিভিন্ন শর্তের সাপেক্ষে যখন কোন প্রজাতির অন্তর্গত প্রত্যেক জীবের মধ্যে আচরণগত, গঠনগত, আকার ও আয়তনগত, এমনকি বংশগতভাবে যেসব পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় তাকে ভেদ বা প্রকরণ বলে । প্রকরণের প্রকারভেদ

  1. ধারাবাহিক প্রকরণ – ধারাবাহিক প্রকরণ হলো, ধারাবাহিক ভাবে অসংখ্য জিন এবং পরিবেশের মিলিত প্রয়াস । উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে,  মানুষের দেহের উচ্চতা কিংবা গায়ের রং ।
  2. বিচ্ছিন্ন প্রকরণ – বিচ্ছিন্ন প্রকরণ একটি একক সাধারণ জিনের  মিউটেশনের কারণে ঘটে । এই বৈশিষ্ট্যগুলি সাধারণের তুলনায় তারতম্যযুক্ত । যেমন – হেক্সাডাক্টাইলি (ছটি আঙ্গুল) ।

জীববৈচিত্যের উৎস
1. জনন : একটি জীবের যৌন প্রজননের সময়, বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে গ্যামেটের সংমিশ্রণে অপত্য জীবের সৃষ্টি হয় এবং তার মধ্যে জনিতৃ জীবের থেকে কিছু পৃথক নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটে । এভাবেই বংশপরম্পরায় যৌন জননের মাধ্যমে জনু থেকে পরবর্তী জনুতে স্থানান্তর যোগ্য প্রকরণের সৃষ্টি ঘটে ।

  1. মিউটেশন : মিউটেশন হল একটি জীবের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন যা জিন এবং ক্রোমোজোমের আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে ঘটে । মিউটেশনের ফলে ভেদ বা প্রকরণ হয়ে থাকে ।
  2. বিচ্ছিন্নতা : একই প্রজাতির জীবগুলি প্রায়শই ভৌগলিক বাধার (যেমন, খাড়া পর্বত, জল-মহাসাগরের বিশাল জলরাশি) বা জেনেটিক বিচ্ছিন্নতার কারণে নতুন প্রকরণ হিসেবে আবির্ভূত হয় ।
  3. প্রাকৃতিক নির্বাচন : প্রতিটি জীব কিছুটা পরিবর্তিত হয় তার পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য । পরিবর্তিত পরিবেশে জীব যখন নিজেকে মানিয়ে নেয় এবং বেঁচে থাকে তাকে অভিযোজন বলে ।

এক্ষেত্রে বিশেষ কিছু অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য যুক্ত জীবকে প্রকৃতি পরিবেশে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয় আর একেই প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে । যেমন- ভাল্লুকের ত্বকের নিচে অবস্থিত পুরু চর্বি স্তর ।

জীববৈচিত্রের ব্যাপকতা 

বিশ্বজুড়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে  1.9 মিলিয়ন প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে । আর্থ্রোপোডা যুগে পৃথিবীতে সর্বাধিক প্রজাতি দেখা গেছে এবং ক্রান্তীয় বর্ষা অরণ্য অঞ্চলের সর্বাধিক জীব বৈচিত্র দেখা যায় । পৃথিবীতে কত জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়েছে?

জীববিদ্যা আসলে কি? : 

“বায়োলজি” শব্দটি দুটি গ্রীক শব্দ থেকে এসেছে : “bios” (জীবন) এবং “logos” (জ্ঞান) । ফরাসি বিজ্ঞানী জ্যাঁ ব্যাপ্তিস্তে ল্যামার্ক 1801 সালে “বায়োলজি” শব্দটি প্রচলন করেন ।

জীববিদ্যা হল, বিজ্ঞানের একটি শাখা যা সকলপ্রকার জীবের অঙ্গসংস্থান, অভ্যন্তরীণ গঠন, শারীরস্থান, শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী, পরিবেশের সাথে সম্পর্ক, পরস্পর নির্ভরতা, স্বাভাবিক বিকাশ, স্থায়িত্ব এবং এমনকি বিবর্তনের মৌলিক বিষয়গুলি অর্থাৎ জীবনের সমস্ত দিক নিয়ে আলোচিত হয় ।

জীববিদ্যা পাঠের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Aims and objectives of Biology) :

  1. শিক্ষার্থীদের কৌতূহল এবং তাদের পরিবেশের বিভিন্ন প্রজাতি যেমন উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অণুজীবের প্রতি আগ্রহ জাগানো ।
  2. একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের বৈজ্ঞানিক কৌশলগুলি যেমন জনস্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ, জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য জীববিজ্ঞানের জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
  3. শিক্ষার্থীদের সুস্থ থাকতে এবং স্বাস্থ্য সচেতন হতে গেলে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ, তন্ত্র এবং শারীরবিদ্যা সম্পর্কিত জ্ঞান থাকতে হবে ।
  4. প্রাকৃতিক সম্পদ, মানব সম্পদ সংরক্ষণ, কৃষি উন্নয়ন, পরিবার পরিকল্পনা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য বিষয়ক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করার জন্য জীববিদ্যার জ্ঞান অপরিহার্য ।
  5. আধুনিক ক্ষেত্র যেমন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, মলিকুলার বায়োলজি, বায়োটেকনোলজি, বায়োইনফরমেটিক্স ইত্যাদিতে গবেষণা এবং কর্মজীবনের সুযোগ বাড়ানোর জন্য জীববিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য ।

জীববিদ্যার বিভিন্ন শাখা (Branches of Biology) :

উদ্ভিদবিদ্যা এবং প্রাণিবিদ্যা জীববিজ্ঞানের দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা ।

  1. উদ্ভিদবিদ্যা হল জীববিজ্ঞানের একটি শাখা যা উদ্ভিদ নিয়ে আলোচনা করে ।
  2. প্রাণীবিদ্যা হল সেই শাখা যা প্রাণীদের নিয়ে আলোচনা করে ।জীববিদ্যা, বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির মতো, দুটি অংশে বিভক্ত : বিশুদ্ধ জীববিদ্যা এবং ফলিত জীববিদ্যা ।
  • জীব সংক্রান্ত তথ্য বিদ্যা যে শাখায় পরিবেশিত হয় তাকে বিশুদ্ধ জীববিদ্যা বলে ।
  • মানব কল্যাণের লক্ষ্যে যে শাখায় বিশুদ্ধ জীব বিদ্যার সার্থক প্রয়োগ ঘটে তাকে ফলিত জীববিদ্যা বলে ।
  1. জৈব রসায়ন : বিজ্ঞানের এই ক্ষেত্রটি জৈব অণুর বিকাশ, সংশ্লেষণ এবং পরিচালনা সম্পর্কে আলোচনা করে ।
  2. আণবিক জীববিদ্যা : এই শাখাটি জীবকোশের বেশ কয়েকটি অণুর গঠন এবং কাজ নিয়ে আলোচনা করে ।
  3. অনাক্রম্যবিদ্যা (Immunology) : বিজ্ঞানের এই শাখায় প্রাণীর অনাক্রম্যতা বা রোগ নিয়ে আলোচিত হয় ।
  4. বংশগতিবিদ্যা (Genetics) : এই শাখা একটি জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের স্থানান্তর সম্পর্কিত বিষয় আলোচনা করে ।
  5. কলাবিদ্যা (Histology) : জীবদেহের বিভিন্ন কলার গঠন এবং কার্য বিষয়ে আলোচনা হয় ।
  6. শারীরস্থান (Anatomy) : ব্যবচ্ছেদের পর, একটি জীবের গঠন নিয়ে আলোচিত হয় ।
  7. শারীরবিদ্যা (Physiology) : এই বিভাগে জীবের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করা হয় ।
  8. বাস্তুবিদ্যা (Ecology) : এই বিভাগটি পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত জীবের অবস্থান, সেইসাথে জীবের উপর পরিবেশের প্রভাবকে আলোচিত করে ।
  9. আচরণবিদ্যা (Ethology) : এই বৈজ্ঞানিক শাখায়, বিশেষ করে প্রাণীদের আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় ।
  10. অভিব্যক্তি: জীবজগতের উৎপত্তি এবং বিবর্তন এই শাখায় আলোচনা করা হয় ।
  11. জৈবপ্রযুক্তি : আণবিক স্তরে জীব সম্পর্কিত পরীক্ষালব্ধ জ্ঞানের ব্যবহার, বিভিন্ন শিল্পে ওষুধসহ জীবাণু ব্যবহার করে ভ্যাকসিন, হরমোন ইত্যাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে জ্ঞানের প্রয়োজন হয় তাই হল জৈব প্রযুক্তি বিদ্যা ।
  12. অঙ্কোলজি (Oncology) :  ক্যান্সার রোগ সংক্রান্ত বিষয়ক বিদ্যা হল অঙ্কোলজি ।
  13. অরনিথোলজি (Ornithology) : পরীক্ষা সম্পর্কিত বিজ্ঞান হল অর্নিথোলজি ।
  14. এন্টোমোলজি (Entomology) : কীটপতঙ্গের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞান হল এন্টোমোলজি ।
  15. সেরিকালচার (Sericulture) : প্রাণিবিদ্যার একটি ফলিত ক্ষেত্র যাতে রেশম মথের চাষ, রেশম চাষ এবং রেশমসুতা নিষ্কাশন করা হয় সেই সম্পর্কে আলোচিত হয় ।
  16. অ্যাগ্রোনমি: উদ্ভিদবিদ্যার একটি ফলিত শাখা যা ফসলের সার এবং কীটনাশক নিয়ে আলোচনা করে ।

জীববিদ্যার সঙ্গে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক :

আধুনিক সময়ে বিজ্ঞান অকল্পনীয় উপায়ে এগিয়েছে । বৈজ্ঞানিক বৃদ্ধির অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞান একটি একক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয় । জীববিজ্ঞান গবেষণার নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে নতুন নতুন শাখার সৃষ্টি করেছে । এটি জীববিদ্যারর ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করেছে । সেই শাখা গুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলো –

  1. জীব-পদার্থবিদ্যা (Biophysics) : জীব-পদার্থবিদ্যা হল বিজ্ঞানের একটি শাখা যা জীববিদ্যা  এবং পদার্থবিদ্যার সাথে একত্রে জড়িত । জীবদেহের সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ভৌত নিয়মাবলির প্রয়োগ বিষয়ক আলোচিত হয় ।
  2. জীবরসায়ন (Biochemistry) :  জীবরসায়ন হল একটি শাখা যা জীববিদ্যা এবং রসায়নের সাথে একত্রে জড়িত । এই বিভাগে কোশের বিভিন্ন জৈব পদার্থের সৃষ্টি ও কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয় ।
  3. জীব পরিসংখ্যানবিদ্যা (Biometry) : জৈব-পরিসংখ্যানবিদ্যা হল জীববিদ্যার একটি শাখা যা পরিসংখ্যানবিদ্যা সম্পর্কিত । এই বিভাগে জনসংখ্যার আকার, বৃদ্ধি এবং হার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।
  4. বায়োনিকস (Bionics) :  বায়োনিক্স হল জীববিদ্যা এবং ইলেকট্রনিক্সের সহযোগে গঠিত একটি
    শাখা ।
  5. সাইবারনেটিক্স (Cybernetics) :  এই বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রটি বায়োলজি এবং টেকনোলজি একত্রিত
    ঘটে । শাখাটি শারীরবৃত্তীয় সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে । সাইবারনেটিক্স শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কিত জ্ঞানের সন্ধানে সহায়তা করার জন্য জীবদেহের তন্ত্র সমূহের সাথে তুলনীয় কৃত্রিম সিস্টেমগুলি ব্যবহার করে ।
  6. কম্পিউটার নির্ভর কৃত্রিম বাস্তবসম্মত যন্ত্রপ্রয়োগ কুশলতা (Computer simulation) : জীবন্ত উদ্ভিদ এবং প্রাণীর প্রয়োজন ছাড়াই বহুমাত্রিক নকশা বা ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে কম্পিউটারে জীবের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপগুলিকে যোগাযোগ করার একটি কৌশল ।
  7. জৈব চিকিৎসাবিষয়ক যন্ত্রবিদ্যা (Biomedical Engineering) : বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং হল বিভিন্ন মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির নকশা  তৈরি এবং তার  দক্ষতা । যেমন কৃত্রিম অঙ্গ অর্থাৎ কৃত্রিম পা বা জয়পুর ফুট, ইমপ্ল্যান্ট, কৃত্রিম হার্ট ভালভ তৈরিতে সাহায্য করে ।
  8. জীবভূগোল (Biogeography) : বায়োজিওগ্রাফি হল একটি ক্ষেত্র যা ভূগোল এবং জীববিদ্যার সাথে সম্পর্কিত । এই ক্ষেত্রের সাহায্যে বিশ্বের বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে জীবের বিস্তার সম্পর্কে জানা সম্ভব ।
  9. মহাকাশ জীববিদ্যা (Exobiology) :  এটি একটি ক্ষেত্র যা মহাকাশবিদ্যা এবং জীববিদ্যার  সহযোগিতায় গঠিত । পৃথিবীর বাইরে কোনো জীবন্ত প্রাণী আছে কিনা তা অনুসন্ধান করে
  10. সমুদ্র বিজ্ঞান (Oceanography): সমুদ্রবিদ্যা হল জীববিজ্ঞানের একটি শাখা যা সামুদ্রিক ঘটনা বর্ণনা করতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং গণিতের জ্ঞান ব্যবহার করে ।

আধুনিক জীববিদ্যার প্রয়োগ (Applications of Modern Biology) : 

জীববিজ্ঞানের আধুনিক শাখাগুলি বাস্তব-সমস্যা সমাধানে মানুষকে কীভাবে সহায়তা করছে তা দেখে নেওয়া যাক –

  1. খাদ্য উৎপাদন :  জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পায় । জীববিদ্যার তথ্য ব্যবহার করে, স্পাইরুনিলা নামক শ্যাওলা, উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ যেমন জয়া/রত্ন/ আইআর-৮, গমের বীজ (সোনেরা-৬৪), উন্নত মানের গবাদি পশু, উন্নত জাতের মুরগি, ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ যেমন বিটি তুলা এবং প্রাণীদের যেমন রোসি নামক গরু চাষ করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে । একইভাবে, ফসল নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য অসংখ্য কীটনাশক এবং উন্নত সংরক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে ।
  2. ওষুধ উৎপাদন : জৈবিকবিদ্যা ব্যবহার করে, বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, এনজাইম, হরমোন, ইন্টারফেরন, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি এবং আরও অনেক কিছু তৈরি করে অসংখ্য রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়েছে ।
  3. রোগ নিরূপণ : জীব বিদ্যার তথ্য ব্যবহার করে, আমরা মানুষের অসংখ্য রোগের যেমন হিমোফিলিয়া, বর্ণান্ধতা, ক্যান্সার, এইডস এবং অ্যালবিনিজম প্রভৃতির কারণ নির্ধারণ করতে পারি । তাদের ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি; তবুও, জিন থেরাপির মাধ্যমে কীভাবে এটি নিরাময় করা যায় তা নিয়ে গবেষণা চলছে ।
  4. ক্লোনিং : যখন একটি জীবের হুবহু আরেকটি প্রতিরূপ তৈরি করা হয় সেই পদ্ধতিকে ক্লোনিং বলে । প্রথম বিজ্ঞানী উইলমুট, ভেড়ার ক্লোনিং  করতে সক্ষম হন ।
  5. ট্রান্সজেনিক জীব সৃষ্টি: এক জীব থেকে অন্য জীবে জিন স্থানান্তর করে জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্রান্সজেনিক জীব তৈরি করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে – গোল্ডেন রাইস, ট্রান্সজেনিক মাইস, রোসি নামক গরু, ভেড়া, flavar Slavar টম্যাটো ।
  6. কলা অনুশীলন : কলা অনুশীলন, যা মাইক্রোপ্রোপ্যাগেশন নামেও পরিচিত, যা কোশবিদ্যা, উদ্ভিদ শারীরবৃত্তবিদ্যা এবং জৈব রসায়নের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছিল । এই প্রযুক্তি খুব অল্প সময়ের মধ্যে অসীম সংখ্যক গাছপালা তৈরি করতে পারে, যা কোনো প্রাকৃতিক উপায়ে কল্পনা করা যায় না । বিজ্ঞানীরা নতুন হাইব্রিড উদ্ভিদ তৈরি করেছেন যা সোমাটিক হাইব্রিডাইজেশন বা প্রোটোপ্লাস্ট নামে পরিচিত, যার দ্বারা সংকর উদ্ভিদ তৈরী করা সম্ভব । যেমন বিজ্ঞানীরা আলু ও টম্যাটো সম্পূর্ণ দুটি আলাদা উদ্ভিদ কোশের প্রোটোপ্লাজমের মিলন ঘটিয়ে একটি নতুন সংকট উদ্ভিদ সৃষ্টি করেছেন ।
  7. ফরেনসিক বিজ্ঞান: ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং, আঙুলের ছাপ, রক্তের ধরন এবং অন্যান্য বিষয়গুলি অধ্যায়ন করে মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল নাকি অস্বাভাবিক (আত্মহত্যা) তা নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয় যার দ্বারা দোষী প্রমাণ, পিতৃত্বের প্রমাণ, খুনি বা ধর্ষক নির্ধারণ করা সম্ভব হয় ।
  8. মহাকাশ গবেষণা : জীববিদ্যা মহাকাশ গবেষণায় অভূতপূর্ণ অবদান রেখেছে । এককোশী শৈবাল ক্লোরেল্লা মহাকাশচারীর সহচর হিসেবে কাজ করে, অক্সিজেন সরবরাহ করে ।
  9. তৈল অনুসন্ধান : প্রত্নতত্ত্ব এবং প্রত্নরেণুবিদ্যা ব্যবহার করে, আমরা মাটির নীচে খনিজ তেলের অবস্থান আবিষ্কার করতে পারি ।
  10. জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে নতুন ব্যাকটেরিয়া স্ট্রেন তৈরি করা যায় । আনন্দমোহন চক্রবর্তী, একজন বিজ্ঞানী, যিনি Pseudomonas putida (SUPERBUG) নামে একটি ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেন তৈরি করেছেন যা সমুদ্র থেকে তেল পরিষ্কার করে ।

জীবনের নানা বৈচিত্র্যের শ্রেণীবিন্যাস -ট্যাক্সোনমি

যে পদ্ধতির দ্বারা একটি জীব থেকে অন্য আর একটি নির্দিষ্ট জীবকে তাদের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পৃথক করা যায় সেই পদ্ধতিকে শ্রেণীবিন্যাস বলা হয় ।

ট্যাক্সোনমি

বৈজ্ঞানিকভাবে জীবের বৈশিষ্ট্যগুলি নির্ধারণ, তাদের শনাক্তকরণ, তাদের গোষ্ঠীবদ্ধ বা শ্রেণীবদ্ধ করা এবং তাদের নামকরণের মাধ্যমে সাজিয়ে রাখার নির্দিষ্ট রীতিকে ট্যাক্সোনমি বা বিন্যাসবিধি বলা হয় ।

ট্যাক্সোনমির প্রয়োজনীয়তা 

  1. আমরা অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জীব সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি ।
  2. বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের প্রকৃতি নির্ধারণ করা যায় ।
  3. কোনো একটি স্থানের সমগ্র উদ্ভিদ সম্প্রদায় বা ফ্লোরা, সেইসাথে সমগ্র প্রাণী সম্প্রদায় বা ফনা সম্পর্কিত তথ্য জানা যায় ।
  4. অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কে অবগত থাকি ।
  5. আমরা প্রাণীর উদ্ভব এবং বিবর্তন সম্পর্কে জানতে পারি ।

আধুনিক ট্যাক্সোনমির বিকাশ
ভারতসহ বিভিন্ন জাতির বিখ্যাত ব্যক্তিদের দ্বারা অসংখ্য ধরণের শ্রেণীবিন্যাস প্রবর্তন সত্ত্বেও, ক্রান্তীয় অঞ্চলে বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রচুর পরিমাণে জীববৈচিত্র্য আবিষ্কারের পর থেকে ইউরোপে আধুনিক ট্যাক্সোনমি তৈরি করা হয়েছে ।

  1. বিন্যাসের অনুশীলন সম্ভবত প্রাচীন ভারতে শুরু হয়েছিল যা ঋগ্বেদে উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস (2000 B.C.) প্রথম লক্ষ্য করা যায় । ভেষজ উদ্ভিদকে সুশ্রুত ৩৭টি ভাগে ভাগ করেন ।
  2. প্রাণীবিদ্যার জনক, গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল, প্রথম সমগ্র প্রাণীজগৎকে দুটি ভাগে শ্রেণীবদ্ধ করেন, যথা –
    1. লাল রক্তের প্রাণী অর্থাৎ ইনাইমা
    2. লাল রক্ত বিহীন প্রাণী অর্থাৎ অ্যানাইমা
  3. থিওফ্রেস্টাসকে “উদ্ভিদ বিদ্যার জনক” বলা হয়, তিনি তাঁর ‘দ্য হিস্টোরিয়া প্ল্যান্টেরাম’ বইতে, 480 টি স্বতন্ত্র গাছপালাকে বৃক্ষ, গুল্ম বা বিরুৎ এই বিন্যাসে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন ।
  4. 100 খ্রিস্টাব্দে, রোমের অন্যতম চিকিৎসক ডিসকরডিস, তার ‘দ্য মেটেরিয়া মেডিকা’ বইতে 600টি উদ্ভিদ প্রজাতির গুণাগুণ নির্ধারণ করে তালিকাভুক্ত করেন ।
  5. আন্দ্রে সিসালপিনো 1540 খ্রিস্টাব্দে 1500 টিরও বেশি গাছপালার উল্লেখ করেছেন এবং তাঁকে প্রথম উদ্ভিদ ট্যাক্সোনোমিস্ট হিসাবে সম্মান দেওয়া হয় ।
  6. ‘পিনাক্স’-এ গ্যাসপার্ড বাউহিন 6000 প্রজাতির উল্লেখ করেছেন এবং তিনিই প্রথম গণ ও প্রজাতির পার্থক্য তুলে ধরেন ।
  7. জন রে 1627-1705 খ্রিস্টাব্দে প্রায় 18000 উদ্ভিদ প্রজাতি শনাক্ত করেছিলেন । বীজপত্রের সংখ্যার ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগে তিনিই প্রথম বীজপত্রের শ্রেণিবিন্যাস করেন ।
  8. ক্যারোলাস লিনিয়াস, বিখ্যাত সুইডিশ বিজ্ঞানী 1753 খ্রিস্টাব্দে, কৃত্রিমভাবে উদ্ভিদের শ্রেণীবিভাগ, দ্বিপদ নামকরণ এবং শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতির মাধ্যমে জীবের আধুনিক শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতিতে  ট্যাক্সোনমির সূচনা করেন । এই কারণেই লিনিয়াসকে “টেক্সোনমি বিদ্যার জনক” বলা হয় ।

ট্যাক্সোনমির উপাদান : শনাক্তকরণ, নামকরণ, শ্রেণীবিন্যাস এবং প্রমাণ্য দলিল সংরক্ষণ হলো আধুনিক শ্রেণীবিন্যাস বা ট্যাক্সোনমির প্রধান উপাদান ।

  1. শনান্তকরণ : শনাক্তকরণ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি জীব অন্য সমস্ত প্রাণীর থেকে তার নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্য দ্বারা স্বীকৃত হয় এবং বৈশিষ্ট্যটি একটি সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে পরিচিতি পায় । যেমন – হাতির শুঁড়
  2. নামকরণ :  নামকরণ হল কোনো জীব এবং প্রাণীরগোষ্ঠীকে দেওয়া বিভিন্ন নাম । উদাহরণস্বরূপ, ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা হল আম গাছের নাম, যেখানে অ্যাম্ফিবিয়া এবং ম্যামেলিয়া জীবগোষ্ঠীর নাম ।
  3. শ্রেণিবিন্যাস : শ্রেণীবিন্যাস বলতে জীবজগতকে তাদের আন্তঃসম্পর্কের ভিত্তিতে শ্রেণীবদ্ধ করার অনুশীলনকে বোঝায় ।
  4. প্রামাণ্য দলিল সংরক্ষণ :  একটি জীবের শনাক্তকরুন, নামকরণ এবং শ্রেণীবদ্ধ করার পরে, এর সমস্ত তথ্য এবং প্রমাণ সংরক্ষণাগারভুক্ত করা হয় । সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে প্রামাণ্য দলিল সংরক্ষণ বলে ।

ট্যাক্সোনমি এবং ট্যাক্সোনমিক হায়ারার্কি
এ.পি.দ্য ক্যানডোল প্রথম ট্যাক্সোনমি কথাটি তাঁর “Theory of Elementary Botany” -তে ব্যবহার
করেন । দার্শনিক এবং শ্রেণীবিন্যাসবিদরা প্রাণীজগত সম্পর্কে জ্ঞানের সুবিধার্থে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে সমগ্র প্রাণীজগতকে ছোটো ছোটো শ্রেণীতে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন । ক্যারোলাস লিনিয়াস এবং তাঁর  পূর্বসূরিরা যখন প্রাণীদের শ্রেণীবদ্ধ করেছিলেন, তখন তারা তাদের বিশেষ নাম দিয়েছিলেন ।

লিনিয়াস প্রবর্তিত ট্যাক্সোনমির মূল বৈশিষ্ট্য

  1. ট্যাক্সোনমিক ক্যাটেগরি (Taxonomic Category) : ট্যাক্সোনমি বা শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রে জীবের গোষ্ঠীভুক্তকরণ বা পর্যায়গুলিকে ট্যাক্সোনমিক ক্যাটেগরি বলা হয় । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় প্রজাতি হলো একটি শ্রেণীবিন্যাস বিভাগ ।
  2. ট্যাক্সন (Taxon) : যখন একটি জীব বা জীবের গোষ্ঠী একটি ট্যাক্সোনমিক ক্যাটেগরি দ্বারা প্রকাশ করে, তখন এই ধরনের জীব বা জীবগোষ্ঠীকে ট্যাক্সন হিসাবে উল্লেখ করা হয় । আম গাছ হল একটি ট্যাক্সনের উদাহরণ যা প্রজাতি হিসাবে ট্যাক্সোনমিক ক্যাটেগরির অন্তর্গত ।
  1. ট্যাক্সোনমিক হায়ারার্কি (Taxonomic Hierarchy) : ট্যাক্সোনমিক হায়ারার্কি হলো ট্যাক্সোনমিক ক্যাটেগরিকে যখন জীবের শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে ক্রমানুসারে ছোটো থেকে বড় বা বড় থেকে ছোটো পর্যন্ত শ্রেণিবিন্যাস করা হয় ।

লিনিয়াসই প্রথম জৈবিক শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে ট্যাক্সোনমিক হায়ারার্কি কথাটি প্রয়োগ করেন । এই কারণে এটি লিনিয়ান হায়ারার্কি নামেও পরিচিত । ট্যাক্সোনমিক হায়ারার্কির উদাহরণ হলো –

  1. রাজ্য (Kingdom) : সবচেয়ে বিস্তৃত ট্যাক্সোনমিক ক্যাটেগরি বা সমস্ত পর্বের সংমিশ্রণ ।
  2. বিভাগ বা পর্ব : একটি বিভাগ বা পর্ব হল এক বা একাধিক সম্পর্কিত শ্রেণী ।
  3. শ্রেণি (Class) : একটি শ্রেণি বেশ কয়েকটি বর্গের সমন্বয়ে গঠিত ।
  4. বর্গ (Order) : বর্গ কতগুলো সম্পর্কযুক্ত গোত্রের সমন্বয়ে গঠিত হয় ।
  5. গোত্র (Family) : গোত্র উৎপত্তিগতভাবে ও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত এক বা একাধিক গণের সমন্বয়ে গঠিত ।
  6. গণ (Genus) : এক বা একাধিক আন্তঃসম্পর্কিত প্রজাতির সমন্বয়ে গঠিত হয় গণ ।
  7. প্রজাতি (Species) : প্রজাতি হলো সর্বনিম্ন ট্যাক্সোনমিক  ক্যাটেগরিযখন একটি প্রাকৃতিক জীবগোষ্ঠী অনুরূপ জীবগোষ্ঠী থেকে জননগতভাবে পৃথক হয় ।

ট্যাক্সোনমিক হায়ারার্কির উদাহরণ :

জীবরাজ্যবিভাগ বা পর্বশ্রেণিবর্গগোত্রগণপ্রজাতি
আম গাছপ্ল্যান্টিম্যাগনোলিও-ফাইটাম্যাগনো-

অপসিডা

স্যপিন-ডেলিসঅ্যানা-

কার্ডিয়েসি

ম্যাঞ্জি-

ফেরা

ইন্ডিকা
মানুষঅ্যানি-

ম্যালিয়া

কর্ডাটাম্যামা-

লিয়া

প্রাইমেটহোমিনিডিহোমোসেপিয়েন্স

দ্বিপদ নামকরণ (Binomial Nomenclature) :

দ্বিপদ নামকরণ বলতে বোঝায় যে, একই উদ্ভিদ বা প্রাণীর বিভিন্ন দেশে এবং এমনকি একই দেশে বিভিন্ন নাম রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, উড়িষ্যায় ধানকে ধানা, বিহারে চাওয়াল, মাদ্রাজে নেল্লু, মহীশূরে ভাট্টা এবং ইংরেজিতে বলা প্যাডি বলা হয় ।

বিভিন্ন প্রজাতির যদি ভিন্ন নাম না থাকে তাহলে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে না জীব সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে এবং জীবকে শনাক্ত করার জন্য প্রতিটি প্রজাতির একটি বৈজ্ঞানিক নামের প্রয়োজন ।

লিনিয়াস, বৈজ্ঞানিক নামকরণের পদ্ধতি এবং নিয়মকানুন সম্বন্ধে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রচলন শুরু করেন । উদাহরণস্বরূপ, ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা আমের বৈজ্ঞানিক নাম । এই ক্ষেত্রে ম্যাঙ্গিফেরা হল আমের গণ এবং ইন্ডিকা হল আমের প্রজাতিক পদ বা স্পেসিফিক এপিথেট ।

দ্বিপদ নামকরণ : দ্বিপদ নামকরণ হল আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে গণ এবং তারপর প্রজাতি পদ যোগ করে জীবের নামকরণ করার একটি পদ্ধতি ।

দ্বিপদ নামকরণের নিয়মাবলি : ICBN বা ইন্টারন্যাশনাল কোড অফ বোটানিক্যাল নোমেনক্লেচার এবং ICZN বা ইন্টারন্যাশনাল কোড অফ জুলজিক্যাল নোমেনক্লেচার এই দুই আন্তর্জাতিক সংস্থা  প্রাণী ও উদ্ভিদের নামকরণের নিয়মাবলী তৈরি করে ।

দ্বিপদ নামকরণের নিয়মগুলি হলো –

    1. উদ্ভিদের নামকরণ প্রাণীর নামকরণ থেকে ভিন্ন হবে, উদাহরণস্বরূপ, Magnifera Indica নামটি অন্য কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে না ।
  • প্রতিটি প্রজাতির জন্য, শুধুমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক দ্বিপদ নামকরণ ব্যবহার করা হবে । বৈজ্ঞানিক নাম সর্বদা ল্যাটিন ভাষায় লেখা হবে ।
    1. প্রথম অক্ষর বড় হবে এবং গণের নাম দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র একটি এপিথেট বা পদ ব্যবহার করা হবে । যেমন – Magnifera
  • একটি প্রজাতির নামকরণ নির্ধারণ করার সময়, পদের প্রথম অক্ষরটি ছোট হরফে লিখতে হবে । এটি সাধারণত গণের একটি ব্যাকরণগত বিশেষণ । Mangifera indica-র ক্ষেত্রে, ‘i’ ছোট হরফে লিখতে হবে ।
  • বৈজ্ঞানিক নাম ছাপার সময়, ‘italics’ তির্যক শব্দের ব্যবহার হয়, অথবা হাতে লেখার সময় গণ ও প্রজাতির নাম আলাদাভাবে নিম্নরেখ করা উচিত ।
  1. দ্বিপদ নামের শেষে, বিজ্ঞানীর সম্পূর্ণ নাম বা সংক্ষিপ্ত নাম বা আদ্যক্ষর প্রদান করতে হবে । উদাহরণস্বরূপ, Mangifera indica Linn এটি লিনিয়াসের দেওয়া নাম ।
  2. লিনিয়াসের ‘স্পিসিস প্ল্যান্টেরাম’-এর প্রকাশকাল হল 1753; এর আগে কোনো উদ্ভিদের নাম গ্রহণযোগ্য নয় । একইভাবে, ‘সিস্টেমা ন্যাচুরি’ (1758, দশম সংস্করণ) প্রকাশের আগে কোন প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম গ্রহণ করা হবে না ।

দ্বিপদ নামকরণের তাৎপর্য কী?

  1. এর দ্বারা দেশের বিজ্ঞানীরা যে কোন জীবকে তার নির্দিষ্ট নামে চিনে নিতে পারবেন ।
  2. এমনকি যদি সেই জীবের নামকরণ পরিবর্তন হয় তা তাঁরা জানতে পারবেন ।
  3. আর এই জানার পর সেই জীবের বৈজ্ঞানিক নাম, বৈশিষ্ট্য, একই গণভুক্ত জীবের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক নির্দেশ করতে পারবেন ।

জীবের পাঁচ রাজ্য শ্রেণিবিন্যাস (Five Kingdom Classification) :
চার প্রকার অনুজীব আমরা লক্ষ্য করে থাকি –

  1. মোনেরা জগতের ব্যাকটেরিয়া
  2. প্রোটিস্টা জগতের আদ্যপ্রাণী
  3. ফাংগি জগতের অন্তর্গত বিভিন্ন ছত্রাক
  4.  প্ল্যান্টি জগতের অন্তর্গত বিভিন্ন শৈবাল

লিনিয়াস প্রাণীজগৎকে দুটি রাজ্যে বিভক্ত করেছেন, একটি উদ্ভিদের জন্য এবং একটি প্রাণীদের জন্য ।
যেহেতু এই শ্রেণীবিভাগে আণুবীক্ষণিক প্রজাতির কোনো স্বতন্ত্র অবস্থান ছিল না, হেকেল প্রোটিস্টা নামে একটি রাজ্য তৈরি করেছিলেন এবং এর মধ্যে ক্ষুদ্র জীবকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন ।

এককোশী প্রোক্যারিওটিকদের মোনেরা নামক রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় । কারণ আণুবীক্ষণিক জীব প্রোক্যারিওটিক এবং ইউক্যারিওটিক উভয় প্রকার হয় ।

বিজ্ঞানী R.H. Whitaker, উদ্ভিদ থেকে ছত্রাককে পৃথক করার জন্য পাঁচটি রাজ্যের প্রবর্তন করেন-

  1. মোনেরা
  2. প্রোটিস্টা
  3. ছত্রাক
  4. উদ্ভিদ
  5. অ্যানিমেলিয়া

পাঁচরাজ্য শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি : 

  1. কোশের গঠন
  2. জীবদেহের কোশীয় সংগঠন
  3. পুষ্টিপদ্ধতি
  4. বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকা
  5. জাতিজনিগত সম্পর্ক

রাজ্য বা জগৎগুলির বৈশিষ্ট্য
মনেরার বৈশিষ্ট্য : 

  1. প্রোক্যারিওটিক কোশযুক্ত জীব যা সরল এবং এককোশী ।
  2. পেপটাইডোগ্লাইকান কোশপ্রাচীর দ্বারা নির্মিত, হিস্টোন প্রোটিনবিহীন ডিএনএ এবং পর্দা বেষ্টিত কোশ অঙ্গাণু থাকেনা ।
  3. পুষ্টি স্বভোজী ও পরভোজী প্রকৃতির হয় এবং এরা বাস্তু তন্ত্রের বিয়োজকের ভূমিকা পালন করে ।

উদাহরণ : ব্যাকটেরিয়া বা এশ্চেরেশিয়া কোলি, মাইকোপ্লাজমা এবং সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নস্টক ।

প্রোটিস্টার বৈশিষ্ট্য :

  1. এককোশী ইউক্যারিওটিক যা সুগঠিত, নিউক্লিয়াস যুক্ত এবং ঝিল্লি-আবদ্ধ কোশ অঙ্গাণু যুক্ত
    হয় ।
  2. পুষ্টি স্বভোজী এবং পরভোজী উভয়ই প্রকৃতির।
  3. ক্ষণপদ, সিলিয়া এবং ফ্ল্যাজেলা চলাচলে অবদান রাখে।

উদাহরণ – ডায়াটম, প্রোটোজোয়া বা অ্যামিবা, স্লাইম মোল্ড এবং ডাইনোফ্ল্যাজেলেট ।

ছত্রাকের বৈশিষ্ট্য : 

  1. ক্লোরোফিল-মুক্ত পরভোজী বা পরজীবী বা মৃতজীবী জীব যেগুলি পুষ্টি সমৃদ্ধ হয় এবং এককোশী  বা বহুকোশী হয়ে থাকে ।
  2. কাইটিন নির্মিত কোশপ্রাচীর হয় এবং গ্লাইকোজেন হল প্রাথমিক সঞ্চিত খাদ্যবস্তু ।

উদাহরণ :  ইস্ট, পেনিসিলিয়াম, মিউকর এবং অ্যাগারিকাস ।

প্ল্যান্টির বৈশিষ্ট্য : 

  1. জীব যেটি বহুকোশী, ক্লোরোফিলযুক্ত  এবং প্রাথমিকভাবে পুষ্টিসম্পন্নকারী স্বভোজী জীব। 
  2. কোশপ্রাচীর সেলুলোজ নির্মিত, সঞ্চিত খাদ্য শ্বেতসার ।
  3. কলাতন্ত্রযুক্ত, গমনে অক্ষম হয় ।

উদাহরণ : সবুজ শ্যাওলা, ব্রায়োফাইট, টেরিডোফাইট, ব্যক্তবীজী এবং গুপ্তবীজী ।

অ্যানিমেলিয়ার বৈশিষ্ট্য : 

  1. একটি বহুকোশী, পুষ্টিসমৃদ্ধ, পরভোজী প্রাণী যা গমনে সক্ষম । 
  2. কোশ প্রাচীরের অভাব, গ্লাইকোজেন হলো প্রাথমিক সঞ্চিত খাদ্য ।
  3. কলাতন্ত্রযুক্ত অঙ্গ এবং তন্ত্র দ্বারা দেহ গঠিত ।

উদাহরণ : পরিফেরা, নিডেরিয়া, মোলাস্কা, সরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী ।

উদ্ভিদরাজ্যের শ্রেণিবিন্যাস (Classification of Kingdom Plantae) : 

  1. বর্ষাকালে পাঁচিলের গায়ে বা ফুলের টবের গায়ে সবুজ রঙের দাগ দেখা যায় এর কারণ হলো বিভিন্ন ধরনের ব্রায়োফাইট প্রথমটি হলো পোগোনেটাম ।
  2. শুশনি শাক বা ঢেঁকি শাক হলো বিভিন্ন ধরনের টেরিডোফাইট এবং ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ ।
  3. পর্বত এলাকায় পাইন গাছ দেখা যায় বা ঘন সবুজ পাতাযুক্ত সাইকাস গাছও দেখা যায়, এগুলি মূলত ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ বা জিম্নস্পার্ম নামে পরিচিত ।
  4. ছোলা বা মটর গাছ হলো দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ ।
  5. ধান গম ভুট্টা নারকেল এই প্রভৃতি গাছগুলো একবীজপত্রী উদ্ভিদের অন্তর্গত ।
  6. আবার যখন একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের ক্ষেত্রে  ফলের ভিতর বীজ থাকে সেজন্য এটিকে গুপ্তবীজী উদ্ভিদ বা অ্যানজিওস্পার্ম বলা হয় ।

উদ্ভিদরাজ্যের প্রধান গোষ্ঠীসমূহ (Major Groups of Kingdom Plantae ) : উদ্ভিদবিদরা উদ্ভিদকে চারটি প্রধান গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছেন,

  1. শৈবাল বা অ্যালগি – ক্ল্যামাইডোমোনাস , স্পাইরোগাইরা
  2. ব্রায়োফাইটা বা মস্ – রিকসিয়া, পোগোনেটাম
  3. টেরিডোফাইটা বা ফার্ন – ড্ৰায়প্ -টেরিস, লাইকোপোডিয়াম
  4. জিমনোস্পার্ম বা ব্যক্তবীজী – পাইনাস, সাইকাস
  5. অ্যানজিওস্পার্ম বা গুপ্তবীজী – আম, লিচু

অ্যানজিওস্পার্ম জাতিগত শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী ম্যাগনোলিওফাইটার অন্তর্গত ।  ম্যাগনোলিওফাইটা দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত –

  • ম্যাগনোলিওপ্সিডা : দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদগোষ্ঠী এই শ্রেণীতে পড়ে ।
  • লিলিওপ্ সিডা : একবীজপত্রী উদ্ভিদগোষ্ঠী এই শ্রেণীতে পড়ে

যে সমস্ত উদ্ভিদগোষ্ঠীর ফুল হয়না তাদের অপুষ্পক বা উপরাজ্য ক্রিপ্টোগ্যামস বলা হয় ।  যেমন – শৈবাল, ব্রায়োফাইটা ও টেরিডোফাইটা ।

যে সমস্ত উদ্ভিদ গোষ্ঠীর ফুল হয় তাদের সপুষ্পক উপরাজ্য বা ফেনেরোগ্যামস বলা হয় ।  যেমন – জিম্নস্পার্ম ও অ্যানজিওস্পার্ম ।

প্রাণীরাজ্যের শ্রেণিবিন্যাস (Classification of Kingdom Animal) :
প্রাণীকুলের অসংখ্য বৈচিত্র্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রাণী দেখা যায় । মিলযুক্ত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তি অনুযায়ী প্রাণী রাজ্যের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়ে থাকে । বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা প্রাণীজগতকে বিভিন্ন উপায়ে শ্রেণীবিন্যাস করেছেন ।

জার্ম স্তর : একটি উন্নত বহুকোশী প্রাণীর প্রাথমিক ভ্রূণ পর্যায়ে (গ্যাস্ট্রুলা) দুই থেকে তিনটি কলার স্তর দৃশ্যমান হয়, যেখান থেকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীর বিভিন্ন দেহাংশ তৈরি হয় যাকে জার্ম স্তর বলা হয় । জীবাণু স্তরগুলিকে তিন প্রকারে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় : এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম ।

সিলোম : সিলোম প্রাণীদেহের কেন্দ্রে মেসোডার্ম থেকে বিকশিত হয় এবং পেরিটোনিয়াম নামক আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে ।

ছদ্ম-সিলোম : প্রাণীর দেহ এবং পরিপাকতন্ত্রের মধ্যবর্তী অঞ্চল যা পেরিটোনিয়াম দ্বারা আবৃত নয় তাকে ছদ্ম সিলোম হিসাবে উল্লেখ করা হয় ।

  1. পরিফেরা 
  • অস্টিয়া হলো সারাদেহে থাকা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ছিদ্র । দেহের উপরিভাগে যে বিশাল ছিদ্রের মধ্য দিয়ে জল বেরিয়ে যায়, তা অসকিউলাম নামে পরিচিত ।
  • একটি নালিকাতন্ত্র আছে যা জল সঞ্চালন করে । ফ্ল্যাজেলা-সদৃশ কোয়ানোসাইট কোশগুলি নালীর গায়ে যুক্ত থাকে ।
  • জলজ এবং নড়াচড়া করতে অক্ষম । যেমন – সাইকন ও বাথ স্পঞ্জ ।
  1. নিডেরিয়া 
  • দেহের ভেতরে গ্যাস্ট্রোভ্যাসকুলার গহ্বর রয়েছে ।
  • নিমাটোসিস্ট হল একটি চাবুকের মতো অঙ্গ যা নিডোব্লাস্ট কোশের ভিতরে পাওয়া যায়, যা আত্মরক্ষা এবং খাদ্য গ্রহণে সহায়তা করে ।
  • জীবন চক্রের মধ্যে পলিপ (সংলগ্ন, নলাকার, অযৌন পর্যায়) এবং মেডুসা (মুক্ত সঞ্চালনকারী ছত্রাকের যৌন পর্যায়) দশার পর্যায়ক্রমিক চক্র ঘটে । এটি মেটাজেনেসিস হিসাবে উল্লেখ করা হয় । হাইড্রা এবং জেলিফিশ হলো এর উদাহরণ ।
  1. টিনোফোরা 
  • অরীয় প্রতিসাম্যযুক্ত সামুদ্রিক প্রাণী ।
  • সিলিয়া আটটি চিরুনি সদৃশ উপাদান দিয়ে গঠিত । এগুলি চিরুনি প্লেট বা কম্বপ্লেট হিসাবে পরিচিত যা গমনে সহায়তা করে । 
  • কোলোব্লাস্ট বা ল্যাসোকোশ থাকে । যেমন – বেরো, হর্মিফোরা ।
  1. প্ল্যাটিহেলমিনথিস 
  • এই প্রাণীটি ট্রিপলোব্লাস্টিক, সিলোমবিহীন এবং উভয়লিঙ্গ ।  
  • দেহ চ্যাপ্টা, হুক এবং সাকারযুক্ত হয় ।
  • ফ্লেমকোশ হল রেচনকারী অঙ্গ । যেমন – ফিতাকৃমি, প্ল্যানেরিয়া ।
  1. অ্যাস্কেলমিনথিস বা নিমাটোডা 
  • দেহ নলাকার, দ্বিপাক্ষিক প্রতিসম, তিন স্তর বিশিষ্ট সিউডোসিলোমযুক্ত প্রাণী ।
  • সম্পূর্ণ বা অসম্পূর্ণ পৌষ্টিকনালী থাকে,  শরীরের দুই প্রান্ত ক্রমশ সংকীর্ণ ।
  • একলিঙ্গ প্রাণী অর্থাৎ স্ত্রী এবং পুরুষ ভেদ রয়েছে, যেমন- গোলকৃমি এবং গোদকৃমি ।
  1. অ্যানিলিডা 
  • একটি রিং-আকৃতির খন্ডকযুক্ত প্রাণী । প্রতিটি খন্ডের বাইরের অংশে খাঁজ রয়েছে তবে ভিতরে  পর্দা দ্বারা আলাদা করা হয়েছে । এটিকে মেটামেরিক খণ্ডীভবন বলা হয় ।
  • একটি প্রকৃত সিলোম রয়েছে; সংবহনতন্ত্র স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ প্রকৃতির হয় । 
  • নেফ্রিডিয়া হল রেচন অঙ্গ, সিটা এবং প্যারাপোডিয়া হল গমন অঙ্গ । যেমন – কেঁচো এবং জোঁক ।
  1. আর্থ্রোপোডা 
  • এদের দেহ খন্ড যুক্ত,  প্রতিটি খণ্ডকে একজোড়া করে পার্শ্বীয় সন্ধিল উপাঙ্গ আছে ।
  • দেহ একটি কাইটিন বহিঃকঙ্কাল দ্বারা সুরক্ষিত ।
  • রক্তপূর্ণ দেহগহ্বর আছে, রক্তসংবহনতন্ত্র আছে যা মুক্ত এবং বেশিরভাগ প্রাণীর পুঞ্জাক্ষি রয়েছে । যেমন – আরশোলা এবং মৌমাছি।
  1. মোলাস্কা 
  • নমনীয়, অখন্ডিত এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি একটি পাতলা ঝিল্লি দ্বারা সুরক্ষিত থাকে যা ম্যান্টেল বা প্যালিয়াম নামে পরিচিত ।
  • প্রাণীর নরম দেহ চুনের তৈরি শক্ত খোলক দ্বারা সুরক্ষিত থাকে ।
  • এদের গমন অঙ্গ অঙ্কীয় মাংসলপদ এবং শ্বাসযন্ত্রের টেনিডিয়া আছে। যেমন – আপেল শামুক এবং অক্টোপাস ।
  1. একাইনোডার্মাটা
  • সব প্রাণীই সামুদ্রিক; চামড়া চুন দিয়ে তৈরি অসিকল বা কাঁটা দিয়ে আবৃত ।
  • শরীরের জল সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত ।
  • টিউবফিট খাদ্যগ্রহণ, গতিশীলতা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তা করে । যেমন – স্টারফিশ এবং সামুদ্রিক শশা ।
  1. হেমিকর্ডাটা বা স্টোমোকর্ডাটা : 
  • হেমিকর্ডাটা বা স্টোমোকর্ডাটা দেহটি তিনটি ভাগে বিভক্ত । এগুলি হল প্রোবোসিস, কলার এবং মেটাসোম ।
  • প্রকৃত নোটোকর্ড নেই, নটোকর্ডের অনুরূপ অঙ্গ হল স্টোমোকর্ড যা কলারে অবস্থিত খাদ্যনালীর অংশ থেকে প্রবোসিসের মধ্যে প্রসারিত ।
  • প্রচুর গলবিলীয় ফুলকাছিদ্র রয়েছে । যেমন- ব্যালানোগ্লোসাস ও স্যাকোগ্লোসাস ।
  1. কর্ডাটা :  
  • নোটোকর্ড : এটি খাদ্যনালী পৃষ্ঠের কেন্দ্রে একটি স্থিতিস্থাপক দণ্ডের মতো দেখায় ।
  • পৃষ্ঠীয় নলাকার ফাঁপা নার্ভের সূত্র : এটি একটি ফাঁপা, নলাকার গঠন যা নোটোকর্ডের উপরে অবস্থিত স্নায়ু টার্মিনাল দ্বারা অবস্থিত । এটি মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড গঠনের জন্য দায়ী ।
  • গলবিলীয় ফুলকাছিদ্র : গলবিলের প্রাচীরের অনেকগুলি ছিদ্র থাকে।
  1. উপপর্ব – ইউরোকর্ডাটা বা টিউনিকেটা
  1. প্রাণীদেহে টিউনিক বা টেস্ট নামে একটি আচ্ছাদন থাকে, এই কারণেই তাদের টিউনিকাটা বলা হয়।
  2. লার্ভা পর্যায়ে, নোটোকর্ড লেজ অংশে সীমাবদ্ধ থাকে, যেখানে পূর্ণ-পর্যায়ের নোটোকর্ড থাকে না ।
  3. এদের লার্ভা মানের দিক থেকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের চেয়ে উন্নত । এই ধরনের রূপান্তর, প্রতিপ রূপান্তর হিসাবে পরিচিত । যেমন – অ্যাসিডিয়া এবং ডোলিওলাম ।
  1. উপপর্ব – সেফালোকর্ডাটা বা আক্রেনিয়া 
  2. নোটোকর্ড, পৃষ্ঠদেশীয় ফাঁপা নার্ভরজ্জু এবং ফুলকাছিদ্র সারা জীবন উপস্থিত থাকে ।
  3. নোটোকর্ড শরীরের সামনে থেকে পিছনের দিকে চলে যায় ।
  4.  “V” আকৃতির মায়োটোম পেশী দেহের দুপাশে থাকে, সোলেনোসাইট সহ রেচন অঙ্গ – নেফ্রিডিয়া থাকে । যেমন – ব্র্যাংকিওস্টোমা এবং অ্যাসিমেট্রন।
  5. উপপর্ব – ভার্টিব্রাটা বা ক্রেনিয়েটা 
  1. এর ভ্রূণ পর্যায়ে একটি নোটোকর্ড থাকে কিন্তু পূর্ণ পর্যায়ে মেরুদন্ডী হয়ে যায় । 
  2. পৃষ্ঠ নার্ভের অগ্রভাগ ফাঁপা এবং স্ফীত  হয়ে মস্তিষ্ক ও পশ্চাদভাগ সুষুম্নাকাণ্ড তৈরি করে ।
  3. অন্তঃকঙ্কাল অস্থি এবং তরুণাস্থি দিয়ে তৈরি; হৃদপিন্ড এক, দুই, তিন বা চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট; এবং দশ থেকে বারো জোড়া করোটি স্নায়ু । যেমন – অ্যাম্ফিবিয়া, সরীসৃপ, অ্যাভিস

অধিশ্রেণি – আ্যাগনাথা  

  1. চোয়াল থাকে না । 
  2. গোলাকার মুখ এবং শোষণক্ষম ।

শ্রেণি – সাইক্লোস্টোমাটা  

  1. একটি চোষক বৃত্তাকার মুখছিদ্র আছে ।
  2. চোয়াল এবং আঁশের অভাব রয়েছে ।
  3. উদাহরণের মধ্যে রয়েছে ল্যাম্প্রে এবং হ্যাগফিস ।

অধিশ্রেণি – ন্যাথোস্টোমাটা 

  1. চোয়াল মুখছিদ্রকে ঘিরে রাখে ।
  2. জয়েন্ট উপাঙ্গ উপস্থিতি ।

শ্রেণি – কনড্রিকথিস 

  1. অন্তঃকঙ্কাল তরুণাস্থি দ্বারা নির্মিত, ত্বকে রয়েছে আণুবীক্ষণিক প্ল্যাকয়েড আঁশ । 
  2. ফুলকা ছিদ্র 5-7 জোড়া, কানকো অনুপস্থিত ।
  3. মুখছিদ্রটি মাথার অঙ্কীয় দিকে অবস্থিত । কোন পটকা নেই এবং লেজের পাখনাগুলি অসমভাবে ব্যবধানযুক্ত (হেটারোসারকাল) ।
  4. যেমন – হাঙ্গর এবং করাত মাছ ।

শ্রেণি – অস্টিকথিস 

  1. অন্তঃকঙ্কাল অস্থিনির্মিত, ত্বকে বীক্ষণিক ডার্মাল সাইক্লায়েড (রুই, কাতলা) এবং টিনয়েড (ভেটকি) আঁশ এবং গ্যানয়েড আঁশ রয়েছে ।
  2. ফুলকা কানকো  দ্বারা ঢাকা থাকে ।
  3. মুখছিদ্র মাথার সামনে থাকে, পটকা উপস্থিত এবং লেজের পাখনা সমান ।
  4. উদাহরণ : রুই এবং ইলিশ ।

শ্রেণি- অ্যাম্ফিবিয়া 

  1. চামড়া আর্দ্র, গ্রন্থিযুক্ত ত্বক, কোন আঁশ থাকে না ।
  2. গ্রীবা এবং বহিঃকর্ণ অনুপস্থিত । শরীর দুটি ভাগে বিভক্ত : মাথা এবং শরীর । 
  3. হৃৎপিণ্ড তিনটি প্রকোষ্ঠ নিয়ে গঠিত : ডান অলিন্দ, বাম অলিন্দ এবং একটি নিলয় । RBC  নিউক্লিয়াসযুক্ত এবং ডিম্বাকার আকৃতির ।
  4. যেমন – কুনো ব্যাং এবং সোনা ব্যাং ।

শ্রেণি – রেপ্টিলিয়া

  1. শুকনো বহিঃত্বকীয় আঁশ ত্বককে আবৃত করে থাকে । কিছু পরিস্থিতিতে যেমন কুমিরের ক্ষেত্রে চামড়ায় শক্ত বর্ম দেখা যায় । 
  2. অবসারণি ছিদ্র বা ক্লোয়াকা অনুভূমিকভাবে অবস্থান করে ।  
  3. হৃৎপিণ্ডেরয়েছে ডান অলিন্দ, বাম অলিন্দ এবং অসম্পূর্ণভাবে বিভক্ত নিলয় ।
  4. যেমন – গিরগিটি এবং কেউটে সাপ ।

শ্রেণি – অ্যাভিস  

  1. পালক দিয়ে ঢাকা মাকু-আকৃতির শরীর । 
  2. সামনের পদ ডানাতে পরিবর্তিত হয়েছে; দাঁত থাকে না; চোয়াল একটি চঞ্চুতে রূপান্তরিত হয়েছে ।
  3. অস্থি হালকা স্পঞ্জের মতো, এটি নিউমেটিক অস্থি হিসাবে পরিচিত ।
  4. যেমন – ময়ূর এবং উটপাখি ।

শ্রেণি – ম্যামেলিয়া 

  1. ত্বক লোমযুক্ত এবং এতে ঘর্ম গ্রন্থি এবং সেবেসিয়াস গ্রন্থি রয়েছে । 
  2. বাইরের কান বা পিনা (তিমি ছাড়া) এবং স্তনগ্রন্থি রয়েছে ।  
  3. বক্ষ গহ্বর এবং পেটের গহ্বরকে সংযুক্ত করে রয়েছে ডায়াফ্রাম ।
  4. যেমন – মানুষ এবং বাঘ ।

তুলনামূলক আলোচনা  : 

ব্যক্তজীবী বা জিমনোস্পার্মগুপ্তবীজী বা অ্যানজিওস্পার্মস 
যেহেতু ফল উৎপন্ন হয় না সে ক্ষেত্রে এর বীজ উন্মুক্ত থাকে।এর ক্ষেত্রে ফল উৎপন্ন হয় তাই বীজ  ফলের মধ্যে লুকানো থাকে।
বীজে বীজপত্র দুই বা তার অধিক থাকে।বীজপত্র একটি বা দুটি থাকে।
জাইলেম ভেসেল থাকেনা।ভেসেল থাকে।
ফ্লোয়েমে সীভনল থাকেনা এর পরিবর্তে সিভকোশ  কোশ থাকে।ফ্লোয়েমে সীভনল থাকে।
একবীজপত্রী বা মনোকটিলেডেনস্ দ্বিবীজপত্রী বা ডাইকটিলেডেনস্ 
বিরুৎ প্রকৃতির এবং শাখাবিহীন হয়।বিরুৎ, গুল্ম জাতীয় এবং শাখাপ্রশাখা যুক্ত।
প্রধানমূল থাকেনা তার পরিবর্তে গুচ্ছমূল থাকে।প্রধানমুল থাকে।
এর পাতায় সমান্তরাল শিরাবিন্যাস থাকে।এর পাতায় জালিকাকার শিরাবিন্যাস থাকে।
বীজে একটিমাত্র বীজপত্র থাকে।বীজে দুটি বীজ থাকে।
ফুলের স্তবকের অংশ তিন বা তিনের গুণিতক হিসেবে থাকে।ফুলের স্তবকের অংশ চার বা এদের গুণিতক হিসেবে থাকে।
মস্ ফার্ন 
উদ্ভিদ জগতের ক্ষেত্র্রে এরা উভচর।স্থলজ উদ্ভিদ।
মূল, কান্ড ও পাতার বিভাগ নেই।উদ্ভিদদেহে মূল, কান্ড ও পাতার বিভাগ রয়েছে।
মূল উদ্ভিদদেহ লিঙ্গধর।মূল উদ্ভিদদেহ রেণুধর।
মস্ একই প্রকার রেণু উৎপন্ন করে।একই প্রকার বা বিভিন্ন প্রকার রেণু উৎপন্ন করে।

SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of জীবন ও তার বৈচিত্র্য JIBON O TAR BOICHITRA

1 MARKS QUESTIONS of জীবন ও তার বৈচিত্র্য JIBON O TAR BOICHITRA

1. জলের সাহায্যে নিষেক ঘটে এমন উদ্ভিদগোষ্ঠীর নাম কী?
উত্তর : ব্রায়োফাইট বা মস্ জাতীয় উদ্ভিদ।

2. একটি বদ্ধসংবহনতন্ত্রযুক্ত অমেরুদণ্ডী প্রাণীর নাম লেখো।
উত্তর : কেঁচো (অ্যানিলিডা)।

3. চোয়ালবিহীন প্রাণীর উদাহরণ কী?
উত্তর : অ্যাগনাথা বা সাইক্লোস্টোমাটা উপপর্বভুক্ত প্রাণী ল্যামপ্রে ও হ্যাগ-ফিস।

4. জীনের আকস্মিক পরিবর্তন যদি বংশগতি প্রাপ্ত হয় তখন তাকে ______বলে।
উত্তর : পরিব্যক্তি

5. ক্ষণপদ, সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলা হল ______ অঙ্গ।
উত্তর : গমন

6. প্যারাপোডিয়া কোন্ প্রাণীর গমন অঙ্গ?
উত্তর : অ্যানিলিডা পর্বের প্রাণী নেরিস

7. কাদের ক্ষেত্রে নোটোকর্ড মেরুদণ্ড দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়?
উত্তর : ভার্টিব্রাটা বা ক্রেনিয়েটা।

8. একটি স্বাধীনজীবী চ্যাপটা কৃমির উদাহরণ দাও।
উত্তর : প্ল্যানেরিয়া (Planaria sp.)।

9. 195 কোন্ প্রকার মাছে পটকা থাকে না?
উত্তর : হাঙর (কনড্রিকথিস শ্রেণির অন্তর্গত)

10. পাঁচ রাজ্য শ্রেণিবিন্যাসের প্রবক্তা হলেন ______ ।
উত্তর : হুইটেকার

multiple choice questions – 1 marks of জীবন ও তার বৈচিত্র্য JIBON O TAR BOICHITRA

1. চক্ষু, ডানা ও পালক হালকা অস্থি কোন্ শ্রেণির মেরুদণ্ডী প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য –
A. রেপটিলিয়া B. অ্যাভিস C. ম্যামেলিয়া D. পিসিস
উত্তর : B

2. নীচের কোনটি একটি চোয়ালবিহীন প্রাণীর উদাহরণ? –
A. ল্যামপ্রে B. হ্যাগফিশ C. A ও B উভয়ই D. কোনোটিই নয়
উত্তর : C

3. 55 ফ্লেমকোশের কাজ হল—
A. রেচনে সাহায্য করা B. পরিপাকে সাহায্য করা C. সংবহনে সাহায্য করা D. শ্বসনে সাহায্য করা
উত্তর : A

4. কোন্ পর্বের প্রাণীদের রক্তপূর্ণ দেহগহ্বর বা হিমোসিল দেখা যায়?
A. আথ্রোপোডা বা সন্ধিপদী B. অ্যানিলিডা বা অঙ্গুরীমাল C. নিডেরিয়া D. টিনোফোরা
উত্তর : A

5. হিমোসিল (রক্তপূর্ণ দেহগহ্বর) দেখা যায়—
A. আথ্রোপোডা পর্বে B. পরিফেরা পর্বে C. প্লাটিহেলমিনথিস পর্বে D. নিডেরিয়া পর্বে
উত্তর : A

6. প্রোবোসিস, কলার ও দেহকাণ্ড থাকে—
A. হেমিকর্ডাটাতে B. কর্ডাটাতে C. ইউরোকর্ডাটাতে D. কোনোটিই নয়
উত্তর : A

7. ব্যালানোগ্নসাস (Balanoglossus sp.) নামক প্রাণীটি কোন্ পর্বের অন্তর্গত? –
A. হেমিকর্ডাটা B. স্টোমোকর্ডাটা C. কর্ডাটা D. A ও B
উত্তর : A

8. জীববৈচিত্র্য বা biodiversity কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন—
A. লিনিয়াস B. হ্যালডেন C. ওয়ালটার রোজেন D. ওপারিন
উত্তর : C

9. পৃথিবী সৃষ্টির সময় বায়ুমণ্ডলের কোন্ গ্যাসটি ছিল না? –
A. অক্সিজেন B. হাইড্রোজেন সায়ানাইড C. অ্যামোনিয়া D. মিথেন
উত্তর : A

10. পরিবেশের বিভিন্ন উদ্দীপনায় জীবের সাড়া দেওয়ার ক্ষমতাকে বলে—
A. ছন্দবদ্ধতা B. পুষ্টি C. উত্তেজিতা D. বিপাক
উত্তর : C

short questions – 2-3 marks of জীবন ও তার বৈচিত্র্য JIBON O TAR BOICHITRA

1. জীবন চক্র বলতে কী বোঝো?

উত্তর : জীবের জন্মের পর জীবদেহ বৃদ্ধিতে পরিণত হয় এবং প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। এরপর বার্ধক্য আসে এবং অবশেষে জীবের মৃত্যু হয়। জীবের জন্ম, বৃদ্ধি, বংশবিস্তার, বার্ধক্য ও মৃত্যু – ইত্যাদি পর্যায়ক্রমিক ঘটনাগুলিকে জীবের জীবন চক্র বলে।

2. কোয়াসারভেট বলতে কী বোঝো?

উত্তর : আদিম পৃথিবীতে সমুদ্রের জলে অ্যামাইনো অ্যাসিড, শর্করা, লিপিড, প্রোটিন ইত্যাদি পর্যাপ্ত ছিল। প্রোটিনগুলি গরম তরল স্যুপ থেকে আলাদা হয়ে একসঙ্গে জড়ো হয়ে কলয়েড জাতীয় পদার্থ গঠন করে যাকে কোয়াসারভেট বলে।

3. মাইক্রোস্ফিয়ার কি?

উত্তর : প্রোটিনয়েড অনুগুলির সংযুক্তির ফলে মাইক্রোস্ফিয়ার গঠিত হয়। এটি লিপিড, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট দ্বারা গঠিত। এটি কোষ পর্দার মতো দ্বিস্তরী আবরণ থাকে। বিজ্ঞানী ফক্স এর নাম দেন মাইক্রোস্ফিয়ার।

4. জীব-বৈচিত্র্য বলতে কী বোঝো?

উত্তর : বিভিন্ন প্রকার বাস্তুতন্ত্রে অথবা পরিবেশে কিংবা বাসস্থানে জীবের যে বিভিন্নতা দেখা যায় তাকে এককথায় জীব-বৈচিত্র্য বলে।

5. মহাকাশযানে এককোষী শৈবাল ক্লোরেল্লা রাখার কারণ কি?

উত্তর : জীব বিজ্ঞানের জ্ঞান থেকে মহাকাশচারীরা মহাকাশযানে এককোষী শৈবাল রাখেন। এই শৈবাল সালোকসংশ্লেষ চালানোর সময় মহাকাশযান থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। ফলে মহাকাশযানে অক্সিজেন সরবরাহ বজায় থাকে।

6. ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী উদ্ভিদের তিনটি পার্থক্য লেখ।

উত্তর : 

  • ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ দীর্ঘ, কাষ্ঠল, বহুবর্ষজীবী, চিরহরিৎ বৃক্ষ জাতীয় হয় আর গুপ্তবীজী উদ্ভিদ বিরুৎ, গুল্ম ও বৃক্ষ জাতীয় হয়।
  • ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের কোন ফল গঠিত হয় না, কিন্তু গুপ্তবীজী উদ্ভিদের ফল গঠিত হয়।
  • ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের বীজ একাধিক বীজপত্র দিয়ে গঠিত, তবে গুল্মবীজী উদ্ভিদের বীজ একটি বা দুটি বীজপত্র দিয়ে গঠিত হয়।

7. একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের প্রধান তিনটি পার্থক্য লেখ।

উত্তর : 

  • একবীজপত্রী উদ্ভিদ প্রধানত বিরুৎ জাতীয় ও একবর্ষজীবী হয়, কিন্তু দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ সাধারণত বৃক্ষজাতীয় এবং বহুবর্ষজীবী হয়।
  • একবীজপত্রী উদ্ভিদের কান্ডগুলি শাখা-প্রশাখা হীন হয়, আর দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কান্ড শাখা প্রশাখা যুক্ত হয়।
  • একবীজপত্রী উদ্ভিদের উদাহরণ হল ধান, গম, ভুট্টা আর দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের উদাহরণ হল আম, জাম।

8. নিডারিয়া প্রাণী গোষ্ঠীর দুটি বৈশিষ্ট্য ও একটি উদাহরণ দাও।

উত্তর : 

বৈশিষ্ট্য : 

  • দেহত্বকে নিডোব্লাস্ট কোষ থাকে।
  • মুখছিদ্র কষির্কা বেষ্টিত থাকে।

উদাহরণ : হাইড্রা

9. সন্ধিপদ প্রাণী গোষ্ঠীর দুটি বৈশিষ্ট্য ও একটি উদাহরণ দাও।

উত্তর : 

বৈশিষ্ট্য :

  • দেহ কাইটিন নির্মিত বহিঃকঙ্কাল দ্বারা আবৃত।
  • সন্ধিল উপাঙ্গ অবস্থিত।

উদাহরণ : আরশোলা 

10. আম্ফিবিয়া বা উভচর প্রাণী গোষ্ঠীর দুটি বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ দাও।

উত্তর : 

বৈশিষ্ট্য :

  • চর্ম সিক্ত ও নগ্ন প্রকৃতির হয়।
  • অগ্রপদে চারটি এবং পশ্চাৎপদে পাঁচটি নখরবিহীন আঙুল থেকে।

উদাহরণ : ব্যাঙ

11. কর্ডাটা পর্বে দুটি বৈশিষ্ট্য ও একটি উদাহরণ দাও।

উত্তর : 

বৈশিষ্ট্য : 

  • ভ্রুণ অবস্থায় বা সারা জীবন ধরে নোটোকর্ড থাকে।
  • জীবনের যে কোন দশায় গলবিলের দুপাশে ফুলকা ছিদ্র থাকে।

উদাহরণ : রুই মাছ

12. একাইনোডার্মাটা বা কন্টকত্বকী প্রাণী গোষ্ঠীর দুটি বৈশিষ্ট্য ও একটি উদাহরণ দাও।

উত্তর : 

বৈশিষ্ট্য : 

  • দেহ কন্টকময় ত্বক দিয়ে আবৃত।
  • দেহে জল সংবহনতন্ত্র উপস্থিত থাকে।

উদাহরণ : তারা মাছ

long questions – 5 marks of জীবন ও তার বৈচিত্র্য JIBON O TAR BOICHITRA

  1. ট্যাক্সোনমির সংজ্ঞা লেখ। ট্যাক্সোনমির উপাদান গুলি কি কি? ট্যাক্সোনমির গুরুত্ব লেখ।

উত্তর : 

ট্যাক্সোনমির সংজ্ঞা : বিজ্ঞানের যে শাখায় জীবের নামকরণ ও শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি আলোচনা করা হয় তাকে ট্যাক্সোনমি বা বিন্যাস বিধি বলে।

ট্যাক্সোনমির উপাদান : ট্যাক্সোনমির মুখ্য উপাদান গুলি সাধারণত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা- সনাক্ত করুন, নামকরন এবং শ্রেণীবিন্যাস।

ট্যাক্সোনমির গুরুত্ব : 

  • বৈচিত্র্যময় জীবজগতে বিভিন্ন গোষ্ঠীভুক্ত জীবদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা যায়। 
  • ট্যাক্সোনমির জ্ঞান থেকে জীবের পূর্বপুরুষ যে অনুন্নত ছিল সেই তথ্য এবং এই বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে জানা যায়।

2. দ্বিপদ নামকরণ বলতে কি বোঝো? দ্বিপদ নামকরণ কে প্রথম প্রচলন করেন? দ্বিপদ নামকরণের তিনটি নিয়ম লেখো।

উত্তর : 

দ্বিপদ নামকরণ : গন এবং প্রজাতি নামক দুটি পদের সমন্বয়ে জীবদের যে বিজ্ঞানভিত্তিক নামকরণ করা হয় তাকে দ্বিপদ নামকরণ বলে।

দ্বিপদ নামকরণের প্রবক্তা : দ্বিপদ নামকরণের প্রবক্তা হলেন বিখ্যাত সুইডিশ প্রকৃতিবিদ ক্যারোলাস লিনিয়াস, তিনি উদ্ভিদের জন্য 1753 সালে লেখা স্পিসিজ পান্টেরাম এবং প্রাণীদের জন্য সেস্টোমত্ত ন্যাচুরি 1758 সালে বইটি লিখেছিলে।

দ্বিপদ নামকরণের নিয়মাবলী : 

  • কোন গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একাধিক গণ বা একাধিক গণের অন্তর্ভুক্ত একাধিক প্রজাতির নাম ভিন্ন থাকে।
  • এই দ্বিপদ নামকরণের কেবলমাত্র ল্যাটিন ভাষায় করতে হবে।
  • কোন একটি প্রজাতির নামে দ্বিপদ যুক্ত হবে এবং উপজাতিটির নামপদ যুক্ত হবে।

3. জীবের পাঁচ রাজ্য শ্রেণীবিন্যাস কোন বিজ্ঞানী করেছিলেন? প্রতিটি রাজ্যের বৈশিষ্ট্যসহ নাম লেখ।

উত্তর :  হুইটেকার 1769 খ্রিস্টাব্দে জীবের পাঁচ রাজ্য শ্রেণীবিন্যাস করেছিলেন।

প্রতিটি রাজ্যের বৈশিষ্ট্যসহ নাম : 

  • মনেরা : 
    1. এরা এককোশী ও প্রোক্যারিওটিক, কোশ আনুবীক্ষণিক, কোশপ্রাচীরে পেপটাইডোগ্লাইক্যান থাকে।
    2. এদের পুষ্টি প্রক্রিয়া স্বভোজী বা পরভোজী। পরভোজী পুষ্টি মৃতজীবী, পরজীবী ও মিথোজীবী প্রকারের হয়।

উদাহরণ : ব্যাকটেরিয়া, মাইকোপ্লাজমা, নীলাভ সবুজ শৈবাল।

  • প্রোটষ্টা : 
    1. এরা এককোশী এবং উপনিবেশ গঠনকারী ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির।
    2. বেশিরভাগই জলজ ও প্ল্যাংকটন গঠনকারী।

উদাহরণ : ইউগ্লিনা, অ্যামিবা প‍্যারামিজিয়াম।

  • ফানজি : 
    1. এরা এককোশী, বহুকোশী, অনুসূত্রাকার হয়।
    2. এদের সঞ্চিত খাদ্য হল গ্লাইকোজেন।

উদাহরণ : ইস্ট, মিউকর পেনিসিলিয়াম

  • প্লান্টি : 
    1. বহুকোশী, ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির।
    2. কোশপ্রাচীর সেলুলোজ নির্মিত।

উদাহরণ : স্পাইরোগাইরা পোগোনেটাম ড্রায়োপটেরিস।

  • অ্যানিমালিয়া :
    1. বহুকোশী এবং ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির।
    2. কোশে কোশপ্রাচীর থাকে না এবং বড়ো ভ্যাকুওল থাকে না।

উদাহরণ : পরিফেরা, অঙ্গুরীমাল, সন্ধিপদ।

error: Content is protected !!
Scroll to Top

আজকেই কেনো পরীক্ষার শর্ট নোটস

এখন সহজে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও – আজকেই ডাউনলোড করো পিডিএফ বা বই অর্ডার করো আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকে