fbpx

শিল্পবিপ্লব , উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ Shilpobiplob, Uponibeshbaad O Samrajyobaad Class 9 WBBSE Notes

আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে

  • প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics  গুলো সহজভাবে.  এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
  • দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
  • তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er  প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
  • চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়

আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি

Table of Contents

শিল্পবিপ্লব কী?

  • দৈহিক শ্রমের পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্য নিয়ে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি ও তার গুণগত মানের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক উন্নতি হয়, তাকে শিল্পবিপ্লব বলে ।
  • এর ফলে পরিবারকেন্দ্রিক, কুটিরশিল্প ভিত্তিক উৎপাদনব্যবস্থায় টান পড়ে ।
  • গ্রাম থেকে মানুষ শহরে আসতে শুরু করে ফলে উৎপাদনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে শহরের কারখানাগুলো ।
  • বেতনভোগী শ্রমিকরা যন্ত্রের সাহায্যে উৎপাদন চালায় ।
  • পূর্বে পণ্যের উৎপাদকই পণ্যের মালিক ছিল ।
  • এখন পণ্যের মালিকানা আসে কারখানার মালিকের হাতে যারা যন্ত্র, কারখানা ও বেতনভোগী শ্রমিক নিয়ে শিল্পোৎপাদনকে তরান্বিত করে ।

শিল্পবিপ্লব: সময়কাল ও স্থান

  • আনুমানিক অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ শিল্পবিপ্লবের সূচনা হয় পশ্চিম ইউরোপে ।
  • ঐতিহাসিক নেফের মতে ১৫৪০-এর দশকে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের সূচনা হয় ।
  • ব্রিটিশ ঐতিহাসিক টয়েনবির মতে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব শুরু হয় ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ।
  • সূচনাকাল সম্পর্কে নানান মতপার্থক্য রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মধ্যে ।
  • এরপর এই বিপ্লব ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে ।

ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের সময়কাল

  • শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন কয়েক দশক ধরে চলছিলো ।
  • অষ্টাদশ শতকের শেষ থেকে ঊনবিংশ শতকের মধ্যেই ইংল্যান্ডের উৎপাদন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে ।

ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটার কারণ

ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব হওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক কারণ বিদ্যমান ছিল । শিল্পবিপ্লব তথা শিল্পের প্রসারের জন্য যেসব উপকরণ বা পরিবেশের প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডে সেগুলির অভাব ছিল না । মহাদেশের মধ্যে ইংল্যান্ডেই প্রথম শিল্পবিপ্লব হওয়ার কারণগুলি হল নিম্নরূপ ।

  1. ইংল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান এবং সেখানকার নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার নিরিখে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধা, বায়ুশক্তি ব্যবহারের সুযোগসহ কয়লা, লোহা, তামা, টিন প্রভৃতি খনিজ দ্রব্যের প্রাচুর্য সেখানে শিল্প বিকাশের সহায়ক হয়েছিল । এছাড়াও এই আবহাওয়ায় বস্ত্রবয়ন শিল্পও বিকাশলাভ করে।
  2. ইংল্যান্ডের চারদিক সমুদ্র পরিবেষ্টিত হওয়ায় জলপথে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয় ছিল খুব কম ।
  3. শিল্প বিপ্লবের জন্য তিনটি প্রয়ােজনীয় উপাদান হল— কাঁচামাল, প্রতিদ্বন্দ্বীহীন বিস্তৃত বাজার ও মূলধন । ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে এর কোনটিরও অভাব হয়নি । উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইংল্যান্ডের উপনিবেশ স্থাপিত হয় । এইসব অঞ্চল থেকে ইংল্যান্ড অবাধে প্রচুর পরিমাণে কাঁচামাল সংগ্রহ করত এবং তার উৎপাদিত পণ্যাদিও সেখানে বিক্রি করত । এইসব স্থানে কার্যত একচেটিয়া বাণিজ্যের ফলে ইংরেজ বণিকরা প্রচুর মুনাফা অর্জন করে । তারা ভারত ও চীন থেকে নানা বিলাসদ্রব্য আমদানি করে ইউরােপের বাজারে বিক্রি করত এবং প্রচুর মুনাফা লুঠত । পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলার ধনভাণ্ডার ইংরেজ কোম্পানীর হাতে আসে । এইসব কারণে ইংরেজ বণিকদের কখনই মুলধনের কথা চিন্তা করতে হয়নি ।
  4. ষােড়শ শতক থেকে ইংল্যান্ডে কৃষিজমিকে পশুচারণ-ভূমিতে পরিণত করা শুরু হয় । এর ফলে সৃষ্টি হয় অসংখ্য ভূমিহীন বেকার কৃষক । তারা শহরের কলকারখানাগুলিতে নামমাত্র মজুরিতে শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত হতে থাকে । এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলেও শ্রমিকের যােগান সহজলভ্য হয় । এই সুলভ শ্রমিক শিল্প বিপ্লবের সহায়ক হয় ।
  5. ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে গৃহযুদ্ধের ফলে মধ্যবিত্তদের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পায় । তারা ইংল্যান্ডের অর্থনীতিতে নেতৃত্ব কায়েম করে এবং শিল্প বিপ্লবেও তাদের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তারা পার্লামেন্টে সরকারকে শিল্পের উন্নয়নের জন্য সাহায্য করতে বাধ্য করে । ব্রিটিশ সরকারও দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের নানাভাবে সাহায্য করে । আমদানিকৃত বিদেশী পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক বসিয়ে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষিত করে ।
  6. এই অনুকূল পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বেশ কিছু যন্ত্রপাতির সময়ােপযােগী আবিষ্কার, যা শিল্প বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছিল । ইংল্যান্ডে বস্ত্রশিল্পেই প্রথম যন্ত্রভিত্তিক উৎপাদন শুরু হয় । ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে জন কে ‘উড়ন্ত মাকু’ বা ‘ফ্লাইং’ শাট’ নামে কাপড় বােনার এক উন্নত মানের যন্ত্র আবিষ্কার করেন । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে হারগ্রিভস্ আবিষ্কার করেন সুতাে কাটার উন্নত যন্ত্র ‘স্পিনিং’ জেনি । আর্করাইট আবিষ্কার করেন জলশক্তিচালিত কাপড় বােনার যন্ত্র ‘ওয়াটার ফ্রেম’ (১৭৬৯ খ্রিঃ) । কার্টরাইট আবিষ্কার করেন ‘মিউল’ (১৭৮৫ খ্রিঃ) নামে কাপড় বােনার এক উন্নত ধরনের যন্ত্র । এতদিন এই যন্ত্রগুলি জলশক্তি ও বায়ুশক্তির সাহায্যে চালানাে হত । ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে জেমস্ ওয়াট বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করলে শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে । বাষ্পীয় ইঞ্জিনের সাহায্যে যন্ত্রগুলিকে ইচ্ছেমতাে চালানাে যায় এবং বড় বড় কারখানা চালু করা সম্ভব হয় । ম্যাথু বােল্টন নামে এক ব্যক্তি জেমস্ ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতে থাকেন । এর নাম ‘বােল্টন ইঞ্জিন’। এর ফলে যন্ত্রগুলিকে ইচ্ছেমতাে চালিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় । ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে জন স্মিটন কাঠকয়লার পরিবর্তে কয়লার সাহায্যে লােহা গলাবার চুল্লী বা ‘ব্লাস্ট ফার্নেস’ আবিষ্কার করেন । খনিগর্ভে নিরাপদে কাজ করার জন্য হামফ্রি ডেভি আবিষ্কার করেন ‘সেফটি ল্যাম্প’ (১৮১৫ খ্রিঃ) । পরিবহনের ক্ষেত্রেও যুগান্তর আসে । ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে টেলফোর্ড ও মাকডােম পাথরকুচি ও পিচ দিয়ে মজবুত রাজপথ তৈরির কৌশল আবিষ্কার করেন । ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে জর্জ স্টিভেনসন্ বাষ্পচালিত রেলইঞ্জিন তৈরি করেন । ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ফুলটন তৈরি করেন বাষ্পীয় পােত বা স্টিমার । এইসব আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ড প্রথম শিল্প বিপ্লবের পথে অগ্রসর হয়।
  7. হবসমের মতো কিছু আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে শিল্পবিপ্লবের প্রধান কারণ ছিল ইংল্যান্ডের উপনিবেশ বিস্তার। সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকে আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উপনিবেশ গড়ে তোলার ফলে ইংল্যান্ডের লাভজনক বাণিজ্যের পথ পরিসর হয় যা শিল্পবিপ্লবের পথ ত্বরান্বিত করে।

মহাদেশে শিল্পবিপ্লব

  • ফ্রান্সে শিল্পবিপ্লব শুরু হয় ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই রাজতন্ত্রের আমলে । লুই ফিলিপের সময়ে রেলপথ স্থাপিত হলে পরিবহন ব্যবস্থায় উন্নতি হওয়ায় দেশের শিল্পায়ন ঘটে ।
  • জার্মানিতে ১৮৭০-৭১ খ্রিস্টাব্দে শিল্পায়ন ঘটে । কয়েক দশক আগে জার্মান রাজ্য প্রাশিয়া ও ব্যাভেরিয়ায় রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে শিল্পায়নের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল ।
  • রাশিয়ায় ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিদেশি ঋণের সাহায্যে শিল্পায়ন শুরু হয় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হলেও আবার শিল্পায়ন শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক থেকে ।

ইংল্যান্ড ও মহাদেশে শিল্পবিপ্লবের তুলনামূলক পরিচয়

ইংল্যান্ডের সাথে অন্যান্য দেশের শিল্পবিপ্লবের মধ্যে কিছু পার্থক্য ছিল । সেগুলি হলো:

  1. ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের কোনো আদর্শ ছিল না, বরং এটি ছিল পথপ্রদর্শক ও স্বতঃস্ফূর্ত। অন্যদিকে ফ্রান্স, রাশিয়া বা জার্মানিতে শিল্পবিপ্লব ছিল পরিকল্পিত।
  2. ইংল্যান্ডের শিল্পায়নে সরকারি ভূমিকা ছিল খুব কম । কিছু মহাদেশের অন্যান্য দেশে সরকার পুঁজি বিনিয়োগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বিশেষ ভূমিকা নেয় ।
  3. ইংল্যান্ডের অনেক উপনিবেশ থাকায় কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য কোনো অসুবিধা হয়নি । অন্যদিকে অন্যান্য দেশগুলো উপনিবেশ বিস্তারে অংশ নেওয়ায় তাদের বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ।
  4. ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের এক নিরবিচ্ছিন্ন ধারা ছিল, অন্যান্য দেশে শিল্পবিপ্লব নানা কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয় ।
See also  নব নব সৃষ্টি- (Nobo Nobo Shrishti) Bangla Literature Subject WBBSE Class 9

সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে শিল্পবিপ্লবের প্রভাব: ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞতা

ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের দুটি প্রভাব বর্তমান- অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রভাব ।

  • শিল্পসমাজের উদ্ভব ও তার মধ্যেকার বিভাজন :
    • শিল্পবিপ্লবের আগে কৃষিকাজ ও কুটিরশিল্পই ছিল জীবনধারণের প্রধান মাধ্যম কিন্তু বাণিজ্য ও শিল্পজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি হলে শহুরে কারখানা ভিত্তিক উৎপাদন গড়ে ওঠে । এই নতুন প্রক্রিয়ায় শ্রমিক ও পুঁজিপতি মালিক- উভয়ই ছিল শিল্পসমাজের অঙ্গ । শিল্পবিপ্লবের আগে পণ্যের উৎপাদকই মালিক হিসেবে পরিগণিত হতো কিন্তু পরবর্তীকালে পণ্যের মালিকানা চলে যায় পুঁজিপতি সম্প্রদায়ের হাতে ।
    • কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিকদের মালিক শ্রেণী ‘ফ্যাক্টরি’ প্রথার অন্তর্গত করে নেয় যা গড়ে উঠেছিল মালিকের মুনাফার দিকে লক্ষ্য রেখে । এই প্রথা অনুযায়ী শ্রমিকদের কাজ করতে হতো মালিকের কথা মতো । মালিকের অনুমতি ছাড়া তারা শিল্পাঞ্চলের বাইরেও বেরোতে পারতোনা ।
    • এই শিল্পব্যবস্থায় মালিকশ্রেণী কালো বর্ণের মানুষদের জন্য ফ্যাক্টরিতে একটি আলাদা এলাকা করে দিয়েছিল। এই বিশেষ নির্দিষ্ট বসতি ঘেটো নামে পরিচিত ।
  • নতুন শহরের বিকাশ : শিল্পবিপ্লবের ফলে কলকারখানাকে কেন্দ্র করে হ্যাম্পশায়ার, ইয়র্কশ্যায়ার, ল্যাঙ্কাশায়ার, মিডল্যান্ডস, মার্সেসাইড প্রভৃতি নতুন শহর গড়ে ওঠে । কলকারখানার বিকাশ, শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রসার, যাতায়াত ব্যবস্থা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার জন্য শহরগুলোতে জনবসতি বাড়তে থাকে ।
  • গ্রাম থেকে শহরে অভিপ্রয়াণ : শিল্পবিপ্লবের পরবর্তীকালে শ্রমিকরা শহরে আসতে শুরু করলে ইংল্যান্ডে শহর সংখ্যা ও জনবসতি বাড়তে থাকে । 1750 খ্রিস্টাব্দে যেখানে ইংল্যান্ডে দুটি শহর ছিল- লন্ডন এবং এডিনবরা, 1851 খ্রিস্টাব্দে তা 29 টির ওপর দাঁড়ায় যার মধ্যে 9 টিতে জনসংখ্যা ছিল এক লক্ষের অধিক । শিল্পবিপ্লবের ফলে সকলে গ্রাম থেকে শহরে আসায় গ্রামে লোকসংখ্যা হ্রাস পায় ও কৃষি অর্থনীতিতে সমস্যা দেখা দেয়, অপরদিকে শহরগুলি ঘিঞ্জি ও জনবহুল হয়ে পড়ে ।
  • রাজনৈতিকভাবে বুর্জোয়া-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকাশ : মধ্যযুগে উৎপাদন ব্যবস্থার মূল উৎস ছিল কৃষি যা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতার উৎস ছিল । প্রাক-আধুনিক যুগের শেষ দিকে বুর্জোয়া পুঁজিপতিদের হাতে সব অর্থ ও সম্পদ জমা হয় । বুর্জোয়া এমন রাষ্ট্র চাইছিল যা তাদের সহায়ক হবে, কিন্তু রাষ্ট্র বংশগৌরবকে মর্যাদা বেশি দেওয়ায় তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আগ্রহী হয়ে ওঠে ।
  • অর্থনৈতিক সম্পদ বণ্টনে বিভাজন ও বৈষম্য : শিল্পবিপ্লবের ফলে পূর্বতন সামন্ততান্ত্রিক প্রথার অবসান ঘটে এবং উৎপাদন ব্যবস্থায় যন্ত্রের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় । যন্ত্রগুলো সচল রাখার জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয় এবং এই শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে পুঁজিপতিরা অধিক মুনাফা লাভ করে ধনী থেকে ধনীতর হয়ে উঠতে থাকে ।  তারা সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির জগতে নিজেদের আধিপত্য লাভ করে । পুঁজিপতি শ্রেণী ও শ্রমিকদের মধ্যে সামাজিক সম্পদ ও ক্ষমতা বণ্টনে বিশাল পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় । অন্যদিকে শ্রমিক শ্রেণী সামাজিক, শিক্ষা, অর্থনৈতিক দিক থেকে চূড়ান্ত বৈষম্যের শিকার হয় ।
  • নতুন শ্রেণীর উদ্ভব : শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজে নতুন দুই শ্রেণীর জন্ম হয়- মালিক ও শ্রমিক শ্রেণী । মালিক শ্রেণী ছিল সর্বেসবা । পুঁজিপতি এই শ্রেণী শিল্প উৎপাদনে মূলধন বিনিয়োগ করত । শ্রমিক শ্রেণীকে শোষণ করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করাই ছিল এদের প্রধান লক্ষ্য । অন্যদিকে কলকারখানার উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল শ্রমিক শ্রেণী । শ্রমের বিনিময়ে তারা যথোপযুক্ত মজুরি পেত না ফলে এদের জীবনযাত্রা শোচনীয় হয়ে পড়ে । মালিকশ্রেণীর শোষণ, নিপীড়ন, সামাজিক ভেদাভেদ সহ্য করেও তারা ছিল সর্বহারা । তাদের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল ।

শিল্প সমাজের সমালোচনার দিক

  • সমাজতান্ত্রিক আলোচনা : ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে গড়ে ওঠা কলকারখানাগুলো মূলত ব্যক্তি মালিকানার অধীনে ছিল । আর তাই তারা বেশি মুনাফা লাভের জন্য শ্রমিকদের কম টাকায় বেশি পরিশ্রম করাতো । শিল্পবিপ্লবের ফলে মালিক ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়, কিছু মানুষ সেই বৈষম্য মূলক শাসনব্যবস্থার বিরোধিতা করেন । তাদের সমাজতন্ত্রী বলা হয় । তাঁদের মতে, উৎপাদন ব্যবস্থা যদি যৌথ মালিকানায় থাকে তাহলে সামাজিক বৈষম্য দূর হতে পারে ।
  • ফ্রেডরিক এঙ্গেলস এবং কার্ল মার্কস- এর সমালোচনা : ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন ফ্রেডরিক এঙ্গেলস ও কার্ল মার্কস । তাঁদের যুগ্ম রচনা ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ গ্রন্থে পুঁজিপতি ও শোষিত শ্রেণীর দ্বন্দ্বকে দেখানো হয়েছে । 1867 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘দাস ক্যাপিটাল’ গ্রন্থে মার্কস দেখিয়েছেন কিভাবে ধনতন্ত্র সমাজকে শোষণ করে । তিনি ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ।
    কার্ল মার্কসের মতে আধুনিক শিল্পরাষ্ট্র শ্রেণী শোষণের যন্ত্র । শ্রমের গুরুত্ব থাকলেও পুঁজিপতিদের কাছে শ্রমিকরা গুরুত্বহীন ও অত্যন্ত অসহায় । মালিকরা শ্রমিকদের শোষণ করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করে চলেছে । মার্কস এবং এঙ্গেলস এই শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলার কথা বলেন । তাঁদের মতে এই সংগ্রাম যখন পূর্ণতা অর্জন করবে, তখনই সমাজে পুঁজিবাদী শ্রেণীর অবসান ঘটে শ্রেণীহীন সমাজ গড়ে উঠবে ।
  • সাঁ সিমোঁ ও শার্ল ফ্যুরিয়র : ফরাসী দার্শনিক ও সমাজতন্ত্রের আদি প্রবক্তা সাঁ সিমোঁ শিল্পসমাজের সমর্থনে এবং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মতামত ব্যক্ত করেছেন । তাঁর মতে শিল্পসমাজের কেন্দ্রবিন্দু হল শিল্পশ্রমিকরা । তাঁর উদ্দেশ্য ছিল শিল্পকর্মীদের জন্য মুক্ত ও স্বাধীন জীবন উপভোগের সুযোগ সৃষ্টি করা । ফরাসী বিপ্লবের ধ্যান-ধারণা সাঁ সিমোঁকে অনুপ্রাণিত করেছে । সমকালীন বৃহদায়তন শিল্প কারখানাগুলির অবস্থা তাঁকে শ্রমজীবীদের প্রতি অনুভূতিশীল করে তুলেছে ।
    শ্রমজীবী জনতার কল্যাণ সাধনকেই তিনি মতাদর্শগত অন্যতম উদ্দেশ্য হিসাবে গ্রহণ করেছেন । তিনি নতুন একটি সমাজব্যবস্থার রূপরেখা রচনা করেছেন । এই সমাজব্যবস্থার মুখ্য উদ্দেশ্য হবে শিল্পের প্রগতি সাধন, এই সমাজ হল শিল্পসমাজ, এই শিল্পসমাজকে নেতৃত্ব দেবে উৎপাদকশ্রেণী । উৎপাদকশ্রেণী বলতে তিনি শ্রমজীবী শ্রেণী বা মেহনতী মানুষকে বুঝিয়েছেন । তিনি মালিক ও শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থের সমতা রক্ষার জন্য রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে বলেছিলেন ।

শিল্পবিপ্লবের ফলে উপনিবেশের জন্ম 

অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের দেশগুলি অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠায় ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণ ঘটে । জে. এ. হবসনের মতে শিল্পবিপ্লবের কারণে অসম বন্টন ঘটে, ফলে অতিরিক্ত পুঁজি সঞ্চিত হয় । সেই পুঁজি উপনিবেশে খাটিয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য পুঁজিপতিরা তাদের সরকারকে  উপনিবেশ দখলে মুখিয়ে তোলে ।

বিশ্বের অর্থনৈতিক বিভাজন ও ভূখণ্ড বন্টন:  শিল্পবিপ্লবের ফলে ট্রাস্ট, সিন্ডিকেট নামে যে পুঁজিবাদী জোটগুলি গড়ে ওঠে, তারা নিজেদের মধ্যে প্রথমে স্বদেশের বাজার ভাগ করে নেয় এবং তারপরে বিশ্বের বাজার ভাগ করে দেশগুলিতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে । শুধুমাত্র বাজার বন্টনই নয়, তারা ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে । তারা সস্তায় কাঁচামাল আমদানি করে ও বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে তোলে ফলে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি নতুন ভূখণ্ড দখলে মত্ত হয়ে ওঠে যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে ।

ইউরোপের বাইরে উপনিবেশ গঠনকারী দেশসমূহ

শিল্পবিপ্লবের অনেক আগে থেকেই ইউরোপের দেশগুলি, যেমন- পর্তুগাল, স্পেন ইউরোপের বাইরে যেমন- আফ্রিকা, আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ গড়ে তুলতে শুরু করে । এরপর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড প্রভৃতি দেশগুলিও মহাদেশের বাইরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার শুরু করলে ১৮৭০ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ইউরোপীয় দেশগুলি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেতে ওঠে উপনিবেশ বিস্তারকে কেন্দ্র করে ।

পুরোনো ঔপনিবেশিক দেশ ফ্রান্স বা ইংল্যান্ডের সাথে জার্মানির মতো নতুন ঔপনিবেশিক দেশের সংঘাত প্রবল হয়ে ওঠে । এমনকি বেলজিয়াম, রাশিয়া ও ইতালির মতন কম শিল্পোন্নত দেশগুলোও সাম্রাজ্য বিস্তারের নেশায় মেতে ওঠে । এই সংঘাতই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয় । তবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও উপনিবেশগুলি পরাধীন ছিল এবং ১৯৪৫-এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আফ্রিকা ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ইউরোপীয় দেশগুলির অধীন থেকে স্বাধীনতা পায় ।

প্যারি কমিউন

বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সর্বহারা শ্রেণীর রাষ্ট্রশক্তির নাম প্যারি কমিউন যার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র বাহাত্তর দিন । এটি ছিল ফরাসি বিপ্লবের শ্রেষ্ঠ অবদান ।  ১৮৭১ সালের ২৮ মার্চ এক ঐতিহাসিক পটভূমিতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বীর শ্রমিকশ্রেণী বুর্জোয়া শাসনব্যবস্থাকে চূর্ণ করে রাজনৈতিক খমিটা দখল করে গঠন করে ঐতিহাসিক প্যারি কমিউন । 1870 সালে ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয়া যুদ্ধে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ফ্রান্স থিয়ার্সের নেতৃত্বে বুর্জোয়া সরকার ক্ষমতায় আসে ।

See also  Chapter 11- A Shipwrecked Sailor- Class 9 WBBSE English Notes Suggestions

তারা জার্মানির সঙ্গে চুক্তি করে প্যারিসের শ্রমিকশ্রেণীকে নিরস্ত্র করার সিদ্ধান্ত নিলে প্যারিসের শ্রমিকশ্রেণী ও জনগণ রুখে দাঁড়ায় । ফলে বুর্জোয়া শ্রেণীর সাথে সর্বহারা শ্রেণীর গৃহযুদ্ধ শুরু হয় । প্যারিসের বির শ্রমিকশ্রেণীর পুরানো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে গঠন করে ঐতিহাসিক প্যারি কমিউন । থিয়ার্সের নেতৃত্বে ফরাসি বুর্জোয়া শ্রেণী বিসমার্কের নেতৃত্বে প্রাশিয়ার বুর্জোয়া শ্রেণীর সঙ্গে সমন্বিত হয়ে বর্বরতম আক্রমণ চালিয়ে প্যারি কমিউনকে ধ্বংস করে ।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন

ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ তাদের উপনিবেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় বিভিন্ন কারণে । তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শিল্পজাত পণ্য উপনিবেশের বাজারে রপ্তানি, কাঁচামাল ও উদবৃত্ত সম্পদ আহরণ ।  রেলপথ বিস্তার, টেলিগ্রাফের প্রচলন ও সুয়েজ খাল খনন করে তারা উপনিবেশগুলির মধ্যে যোগাযোগ সাধন করে ।

  • রেলপথ বিস্তার : ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম ঘোড়ায় টানা রেল চলাচল শুরু হয় । এরপর ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঞ্জিনে টানা রেলগাড়ি চলাচল শুরু হয় । এরপর ১৮২৭, ১৮৩৫ ও ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়ায় রেলগাড়ি চলাচল শুরু হয় । বিভিন্ন উপনিবেশে এই রেলপথ বিস্তারের প্রয়োজনীয়তা ছিল বিভিন্ন । উপনিবেশবাসীর প্রয়োজনীয়তা বা কল্যাণের জন্য নয়, ঔপনিবেশিক সরকারের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থসিদ্ধিই ছিল রেলপথ সম্প্রসারণের প্রধান উদ্দেশ্য । যেমন ভারতে ব্রিটিশদের রেলপথ বিস্তারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারত থেকে তুলো, কাঁচা পাট, কয়লা, লোহা প্রভৃতি সহজে ও তাড়াতাড়ি ইংল্যান্ডে পাঠানো এবং ইংল্যান্ডের পণ্য ভারতের বাজারে দ্রুত ছড়ানো । এছাড়াও ঐতিহাসিকদের মতে ব্রিটিশদের সামরিক উদ্দেশ্যও ছিল ভারতে রেলপথ বিস্তারের অন্যতম কারণ।
  • সুয়েজ খাল : ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের সংযোগস্থল সুয়েজ খাল উন্মুক্ত হয় ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে প্রায় দশবছর নির্মাণকাজ চলার পর । যারফলে জলপথে ইউরোপ থেকে এশিয়ায় আসা সহজ হয় ফলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সময় লাগে কম । সুয়েজ খাল খননের পর এশিয়ার বণিকদের সাথে ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত হয় । যদিও সুয়েজ খাল খননের পিছনে ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি শক্তির ঔপনিবেশিক স্বার্থও জড়িত ছিল ।
  • টেলিগ্রাফের প্রচলন : টেলিগ্রাফের মাধ্যমে খুব দ্রুত সংবাদ একস্থান থেকে দূরবর্তী স্থানে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব যা ছিল এক যুগান্তকারী সৃষ্টি। ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে স্যামুয়েল মোর্স প্রথম টেলিগ্রাফ আবিস্কার করেন । 1839 খ্রিস্টাব্দের আগে বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফের আবিষ্কার হয়নি। 1870 খ্রিস্টাব্দে টমাস এডিসন টেলিগ্রাফের উন্নত রূপ আবিষ্কার করায় দ্রুত সংবাদ পৌঁছনের বিষয়টিতে বিবর্তন ঘটে। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফের ব্যবহার শুরু হয় কিন্তু তরিৎশক্তির কিছু সমস্যাজনিত কারণে পরবর্তীকালে তড়িৎচুম্বকীয় টেলিগ্রাফের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন ঘটে । ঔপনিবেশিক শাসকগণ উপনিবেশের এক প্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তের খবর খুব দ্রুত সরবরাহ করতে শুরু করে যা তাদের সাম্রাজ্যবাদকে আরো শক্তিশালী করে তোলে ।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্ন হিসেবে ভারতের রপ্তানিকারী থেকে আমদানিকারীর ভূমিকা

উনবিংশ শতাব্দীতে একদিকে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব, কোম্পানির অসম শুল্ক নীতি ও অত্যাচার এবং অন্যদিকে দেশীয় অভিজাত শ্রেণির অবক্ষয়ের ফলে বাংলার তাঁত-বস্ত্রশিল্পসহ অন্য শিল্পের কারিগররা ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল, একেই- অবশিল্পায়ন বলা হয় । অবশিল্পায়নের ফলে ভারত থেকে যে সমস্ত শিল্পজাত দ্রব্য-পণ্য রপ্তানি করা হতো সেসব ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ভারত ক্রমশ রপ্তানিকারক দেশ থেকে আমদানিকারক দেশে পরিণত হয় ।

ভারতের কাঁচামাল সস্তায় ক্রয় করে ইংরেজ বণিকরা ইংল্যান্ডে রপ্তানি করতে থাকে । ভারতের কাঁচা তুলা, কাঁচা রেশম, নীল, চা প্রভৃতি কাঁচামাল নিয়মিত বিলাতের কারখানাগুলিতে চলে যেতে থাকে । এর‌ ফলে ইংল্যান্ডের শিল্পায়নে বিবর্তন ঘটে। ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার, ল্যাঙ্কাশায়ার অন্যান্য স্থানের শিল্পজাত পণ্য ভারতে আমদানি শুরু হয়। কেবল সুতিবস্ত্র নয়, রেশম ও পশমজাত দ্রব্য, লােহা, মৃৎশিল্প, কাঁচ, অস্ত্র, ঢাল-তলােয়ার, খােদাই ও কারুকার্যের সঙ্গে জড়িত শিল্প প্রভৃতির যথেচ্ছ আমদানির ফলে দেশীয় শিল্পগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে শিল্পোন্নত ইউরোপীয় দেশগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার অনগ্রসর দেশগুলিতে যথেচ্ছভাবে সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন চালিয়ে যেতে থাকে । এই দেশগুলিতে উপনিবেশ স্থাপনের সুযোগ ছিল কম কিন্তু শিল্পোন্নত দেশগুলির সাম্রাজ্য বিস্তারের নেশা ছিল প্রবল। ফলে সম্রাজ্যবিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় দেশগুলি একে অপরের সাথে সংঘাত-লিপ্ত হয় ।

ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অর্থনৈতিক দিক ও উদবৃত্ত সম্পদ বিক্রির বাজার : শিল্পবিপ্লবের ফলে পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের কয়েকটি দেশে পণ্য উৎপাদনের পরিমান অনেকাংশে বৃদ্ধি পায় । সেই পণ্য বিক্রির জন্য উপযুক্ত বাজার ও চাহিদার প্রয়োজন । কিন্তু কোনো শিল্পোন্নত ইউরোপীয় দেশ অন্যদেশের পণ্য নিজের বাজারে বিক্রি করতে দিতে চায়নি ।

ফলে উদবৃত্ত পণ্যগুলো বিক্রির জন্য তারা এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলির বাজারকে বেছে নেয় । ফলে সেই বাজার দখলের জন্য ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানির মতো শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলি ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিমজ্জিত হয় । ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স উপনিবেশগুলি অধিকাংশ বাজারেই নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে ফেলে, ফলে জার্মানির সঙ্গে এদের সংঘাত ক্রমশই বৃদ্ধি পায় ।

ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদের সম্বন্ধ

জাতীয়তাবাদ বলতে আমরা বুঝি নিজের জাতিকে ও জাতির মানুষকে ভালোবাসা ও তাদের সাথে একাত্মতা অনুভব করা । কিন্তু মানুষ যখন নিজের জাতির উন্নতির কথা চিন্তা করে অন্য জাতির ক্ষতিসাধন করে এবং একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয় তখন তাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বলা

হয় । এই উগ্র জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে ।

ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী দেশ তার উপনিবেশবাসীদের ওপর নিপীড়ন করে তাদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বকে কাজে লাগিয়ে । জার্মানি উগ্র জাতীয়তাবাদকে কাজে লাগিয়ে প্রচার করে টিউটনিক জাতির শ্রেষ্ঠত্বের কথা, ইংল্যান্ড প্রচার করে অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতির শ্রেষ্ঠত্বের তত্ত্ব ।

চিন ও আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ

  • আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ : ১৮৮১ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আফ্রিকায় উপনিবেশ গঠনের জন্য ইউরোপীয় শক্তিগুলি তৎপর হয়ে ওঠে । ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার দশ শতাংশ অঞ্চল ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের অধীনে চলে আসে । 1914 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আফ্রিকার 90 শতাংশ তাদের দখলে চলে যায় । আফ্রিকা দখলের জন্য ঔপনিবেশিকদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চরমে পৌঁছায় । ১৮৮৪-৮৫ খ্রিস্টাব্দের বার্লিন কনফারেন্স-এ এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিয়মকানুন ধার্য করা হয় । এই সভায়-
    • দাস প্রথার নিন্দা করা হয় ।
    • সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে কঙ্গো নদীর অববাহিকা বেলজিয়ামের অংশ দ্বিতীয় লিওপোল্ড-এর অধীনস্থ হবে ।
    • অন্য কোনো রাষ্ট্র না জানিয়ে আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করতে পারবে না ও অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের আগে সেই জায়গা তাকে দখল করতে হবে ।

এই নিয়মকানুন মেনে বা না মেনে আফ্রিকার সুদান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা এবং কেপ কলোনি ব্রিটেনের দখলে  যায় । দক্ষিণ আফ্রিকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বুয়োরের সঙ্গে লড়াই শুরু হয় ব্রিটেনের । ফরাসিরা সেনেগাল, মালি, নাইজের, আলজিরিয়া প্রভৃতি দখল করে । জার্মানি আফ্রিকার পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ দখল করে । ইতালি সোমালিল্যান্ড বা ইরিট্রিয়ার কিছু অঞ্চল দখল করে । ওলন্দাজরা উপনিবেশ স্থাপন করে নাটাল, ট্রান্সভাল ও অরেঞ্জ নদীর উপত্যকায় । পরবর্তীকালে ব্রিটেন এই অঞ্চলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে নাম দেয় ” ইউনিয়ন অফ সাউথ আফ্রিকা” । আফ্রিকার সুদান, মরক্কো ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ঘিরে ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্স একে অপরের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ।

  • চিনে ঔপনিবেশিক আগ্রাসন : আফ্রিকার মতো চিনও ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের কবলে পড়ে । ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে চীন-জাপান যুদ্ধের পর জাপান ফরমোজা দ্বীপ, লিয়াংটাং উপদ্বীপ ও মাঞ্চুরিয়ার দক্ষিণ অংশ দখল করে নেয় । ১৮৯৫ থেকে ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন ও রাশিয়া চীনকে আক্রমণ করে ও বিভিন্ন অঞ্চলে বিদেশি শক্তি উপনিবেশ গড়ে তোলে ।
    জার্মানি দখল করে চীনের কিয়াওচাও অঞ্চল। রাশিয়া দখল করে পোর্ট আর্থার। ব্রিটিশরা দখল করে ‘ওয়েস্ট হাই ওয়েই’ অঞ্চল। ফরাসিরা দক্ষিণ চীন দখলে উদ্যোগী হলেও চীন সম্পূর্ণ পরাধীনতা  স্বীকার করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সহযোগিতায় ঔপনিবেশিক দেশগুলি চীনের ক্ষেত্রে “মুক্ত দ্বার” নীতি অবলম্বন করে যেখানে বলা হয়, সরাসরি সাম্রাজ্য বিস্মর না করে ঔপনিবেশিক দেশগুলি চিনে বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারবে ।

সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সংঘাত

1870 থেকে 1914 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল ইউরোপে “সাম্রাজ্যবাদের যুগ” নামে পরিচিত যা অনেকের কাছে নয়া-সাম্রাজ্যবাদ হিসেবেও খ্যাত। প্রধান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ছিল সবার আগে। অগ্রনী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে জার্মানি ও ইতালি কিছুকাল পরে আত্মপ্রকাশ করে এবং ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে। একে একে রাশিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করে যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকা রচনা করে।

See also  প্রফেসর শঙ্কুর ডেইরি- (Profeser Sonkur Dairy) Bangla Literature Subject WBBSE Class 9

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ : ১৯১৪-১৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয় যার অন্যতম কারণগুলি হলো-

  • উগ্র ও অতৃপ্ত জাতীয়তাবাদ : বিংশ শতকের শুরুতে ইউরােপের বিভিন্ন দেশে উগ্র ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে । এই সময় ইউরােপে বিভিন্ন উগ্র জাতীয়তাবাদী মতবাদের উন্মেষ ঘটে এবং ইউরােপের প্রতিটি জাতি নিজ জাতিকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্য জাতিগুলিকে নিকৃষ্ট বলে মনে করতে থাকে । রাশিয়া, ফ্রান্স, জাপান প্রভৃতি দেশেও উগ্র জাতীয়তাবাদের ব্যাপক প্রসার ঘটে ।
    বলকান, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, গ্রিস, সার্বিয়া প্রভৃতি রাজ্য প্রচলিত ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল । অস্ট্রিয়ার সাথে যুক্ত বসনিয়া ও হারজিগভিনা সার্বিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার দাবি জানায়। তেমনি ফ্রান্স প্রাশিয়ার অধীনস্ত আলসাস ও লোরেনকে স্বাধীন করার দাবি তোলে। ট্রিয়েস্ট ও ট্রেনটিনাে পাওয়ার জন্য ইতালীয়রা, শ্লেসউইগ পাওয়ার জন্য ডেনরা, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আয়ারল্যান্ডবাসী আন্দোলন শুরু করে ।
  • ঔপনিবেশিক ও বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা : ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে আগে শিল্পায়ন ঘটায় তারা এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ বিস্তারে এগিয়েছিল । জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি ইউরােপীয় দেশে পরে শিল্পায়ন ঘটায় তারা সেই শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার আয়ত্ব করার জন্য উপনিবেশ দখল করতে গেলে অন্যদের সঙ্গে তাদের সংঘাত বেধে যায় । নতুন উপনিবেশ দখলের জন্য জার্মান কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম বিশাল জার্মান নৌবহর গঠনের কাজে হাত দেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে ইংল্যান্ডও পালটা নৌশক্তি বৃদ্ধি শুরু করে ।
  • সমরসজ্জা : শিল্পবিপ্লবের ফলে অস্ত্র ও সামরিক পণ্য উৎপাদনেও যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে। মিনিটে ২০-৩০ টি গুলি ছোড়ার মতো বন্দুক আবিষ্কার হয় । ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি সাবমেরিন তৈরি করে । এই সময় তৈরি হয় গ্রেভ নট নামক যুদ্ধজাহাজ । ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে দেশগুলির মইধ্যে শুরু হয় নৌবাহিনী নির্মাণের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা । শুধুমাত্র জার্মানি বা মিত্ররা নয়, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সের মতো দেশ সামরিক পণ্যের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে ।
  • কাইজার উইলিয়ামের দায়িত্ব : কাইজার উইলিয়ামের সাম্রাজ্যবাদী কার্যক্রম যেমন- শান্তিবাদী নীতি ত্যাগ করে সাম্রাজ্যবিস্তারের নীতি গ্রহণ, নৌশক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ, রাশিয়ার সাথে রি-ইনসিওরেন্স চুক্তি খারিজ করা প্রভৃতির কারণে অন্যান্য দেশের সাথে জার্মানির শত্রুতা বাড়তে থাকে যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে ।
  • পরস্পরবিরোধী শক্তিজোট : রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ক জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর তিনি জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হন । জার্মানির ঐক্য স্থাপনের পর বিসমার্ক জার্মানিকে পরিতৃপ্ত দেশ বলে বর্ণনা করেছিলেন এবং এরপর তিনি ফ্রান্সকে এক ঘরে রাখার নীতি গ্রহণ করেছিলেন । এক্ষেত্রে তিনি অস্ট্রিয়া, ইতালি এবং জার্মানিকে নিয়ে ত্রিশক্তি মৈত্রী গঠন করেছিলেন। বিসমার্কের এই কার্যকলাপের পর অপরদিকে ব্রিটেনের নেতৃত্বে ১৯০৭ সালের মধ্যেই ব্রিটেন- ফ্রান্স ও রাশিয়াকে নিয়ে ত্রিপল আঁতাত গঠন করে । এরফলে ইউরোপ দুটি শক্তিশালী শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল । একদিকে জার্মানি,অস্ট্রিয়া এবং ইতালি এবং অন্যদিকে ছিল ফ্রান্স ব্রিটেন এবং রাশিয়া । এবং এই দুটি দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিনের পর দিন বেড়েই চলে. এবং এই ত্রিশক্তি মৈত্রী ও ত্রিশক্তি আঁতাত এর প্রতিদ্বন্দ্বিতাই শেষ পর্যন্ত মহাযুদ্ধে পরিণত হয়েছিল ।
  • বলকান সমস্যা : বলকান অঞ্চলের উত্তেজনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইন্ধন জুগিয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন । বলকান অঞ্চলের জাতিসমূহ একদিকে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য থেকে রেহাই পেতে চাইছিল, অন্যদিকে অটোমান শাসন থেকেও মুক্তি চাইছিল। এই সুযোগে রাশিয়া এই অঞ্চলের স্লাভিক জনগোষ্ঠীকে প্যান-স্লাভ জাতীয়তাবাদ এবং অর্থোডক্স খ্রিস্টীয় মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত করতে থাকে । রাশিয়া তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অটোমান ও অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যকে বলকান অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করে সেই স্থান দখল করতে চেয়েছিল। দার্দানেলিস প্রণালীতে রুশ যুদ্ধজাহাজ চলাচলকে কেন্দ্র করে অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার সম্পর্কে ভাঁটা পড়ে ।
    বলকান অঞ্চলের স্লাভিক জনগোষ্ঠীর জাতীয়তাবাদী আন্দোলন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাতের জন্য সরাসরি দায়ী । প্যান-স্লাভিজম হলো এমন একটি ধারণা যারা বিশ্বাস করে যে, পূর্ব ইউরোপের স্লাভিক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব স্বাধীন দেশ হওয়া উচিত । উনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে প্যান-স্লাভিজম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। স্লাভিক জাতীয়তাবাদ সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল সার্বিয়ায়। সার্বরা অন্যান্য অঞ্চলেও প্যান-স্লাভ জাতীয়তাবাদ ছড়িয়ে দিতে অবদান রাখে ।
  • সেরাজেভো হত্যাকান্ড (প্রত্যক্ষ কারণ) : প্যান-স্লাভিজম জাতীয়তাবাদ অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য এবং এই অঞ্চলে এর নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবের বিরোধিতা করে । অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য কর্তৃক বসনিয়া এন্ড হার্জেগোভিনা সংযুক্তিকরণের ফলে উত্তেজিত হয়ে অনেক তরুণ সার্ব ‘ব্ল্যাক হ্যান্ড’-এর মতো উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীতে যোগ দেয় । এই গোষ্ঠীগুলো বলকান অঞ্চল থেকে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির বিদায় এবং সমস্ত স্লাভিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি একীভূত ‘গ্রেটার সার্বিয়া’ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করছিল।
    এই প্যান-স্লাভিক জাতীয়তাবাদই ১৯১৪ সালের 28 জুন বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভোতে আর্চডিউক জন্য অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে দায়ী করে একটি চরমপত্র পাঠায়  এবং আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে শর্তপূরণ করতে বলা হয়, যা সার্বিয়া কিছু মানলেও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হতে পারে এমন কিছু শর্ত প্রত্যাখ্যান করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয় । এই হত্যাকান্ড প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ হিসেবে পরিচিত ।

SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of শিল্পবিপ্লব , উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ SHILPOBIPLOB, UPONIBESHBAAD O SAMRAJYOBAAD

1 MARKS QUESTIONS of শিল্পবিপ্লব , উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ

1. জর্জ স্টিফেনসন কবে রেল ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন? (এক কথায় উত্তর : দাও)
Ans. জর্জ স্টিফেনসন 1814 খ্রিস্টাব্দে রেল ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন।

2. ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের প্রধান ক্ষেত্র ছিল (এক কথায় উত্তর : দাও)
Ans. ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের প্রধান ক্ষেত্র ছিল বস্ত্র শিল্প।

3. ‘ডাস ক্যাপিটাল’ কার রচনা? (এক কথায় উত্তর : দাও)
Ans. ‘ডাস ক্যাপিটাল’ কার্ল মার্কস-এর রচনা।

4. ত্রিশক্তি চুক্তি কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল? (এক কথায় উত্তর : দাও)
Ans. 1882 খ্রিস্টাব্দে জার্মানি, ইটালি, অস্ট্রিয়ার মধ্যে ত্রিশক্তি চুক্তি হয়েছিল।

5. বাষ্পশক্তির সাহায্যে জেমস ওয়াট কবে যন্ত্র চালানোর ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন? (এক কথায় উত্তর : দাও)
Ans. 1769 খ্রিস্টাব্দে জেমস ওয়াট বাস্পশক্তির সাহায্যে যন্ত্র চালানোর ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন।

6. ‘ক্রিটিক অফ পোলিটিক্যাল ইকোনমি’ গ্রন্থটি কার লেখা? (এক কথায় উত্তর : দাও)
Ans. ‘ক্রিটিক অফ পোলিটিক্যাল ইকোনমি’ গ্রন্থটি কার্ল মার্কস-এর লেখা।

7. কে জার্মানিতে ‘মার্ক’ নামে মুদ্রাব্যবস্থা প্রচলন করেন? (এক কথায় উত্তর : দাও)
Ans. অটো ফন বিসমার্ক ‘মার্ক’ নামে মুদ্রাব্যবস্থা প্রচলন করেন।

8. উপনিবেশবাদ (Colonialism) কথাটি কোন্ শব্দ থেকে এসেছে? (এক কথায় উত্তর : দাও)
Ans. উপনিবেশবাদ (Colonialism) কথাটি লাতিন Colonia শব্দ থেকে এসেছে।

9. ফ্রান্সে প্রথম রেলপথ কবে চালু হয়? (এক কথায় উত্তর : দাও)
Ans. ফ্রান্সে 1837 খ্রিস্টাব্দে প্রথম রেলপথ চালু হয়।

Multiple Choice Questions – 1 Marks of শিল্পবিপ্লব , উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ

1. যে সন্ধির মাধ্যমে সিংহল ইংল্যান্ডের অধীনস্থ হয়েছিল—
A. বেসিনের সন্ধি B. অমৃতসর সন্ধি C. তিয়েনসিন সন্ধি D. অ্যামিয়েন্স সন্ধি
Ans. D

2. নাটাল ব্রিটিশ উপনিবেশভুক্ত হয়েছিল—
A. 1840 খ্রিস্টাব্দে B. 1841 খ্রিস্টাব্দে C. 1842 খ্রিস্টাব্দে D. 1843 খ্রিস্টাব্দে
Ans. C

3. নৈরাজ্যবাদের জনক নামে কে পরিচিত? –
A. সাঁ সিমোঁ B. চার্লস ফুরিয়ার C. অগাস্ত ব্লাঙ্কি D. জোসেফ পুধোঁ
Ans. D

4. জার্মানির জোলভেরাইন গড়ে উঠেছিল—
A. 1830 খ্রিস্টাব্দে B. 1834 খ্রিস্টাব্দে C. 1836 খ্রিস্টাব্দে D. 1840 খ্রিস্টাব্দে
Ans. B

5. উনিশ শতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ’ নামে যে দেশটি পরিচিত ছিল—
A. এশিয়া B. আফ্রিকা C. ইউরোপ D. আমেরিকা
Ans. B

6. ফ্রান্সে রেলপথ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথম যে সম্রাট বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেন –
A. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট B. লুই ফিলিপ C. তৃতীয় নেপোলিয়ন D. অ্যাডলফ থিয়ার্স
Ans. C

7. দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধ হয়েছিল—
A. 1907 খ্রিস্টাব্দে B. 1912 খ্রিস্টাব্দে C. 1913 খ্রিস্টাব্দে D. 1914 খ্রিস্টাব্দে
Ans. B

8. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল—
A. ফ্রান্স-জার্মানি সংঘাত B. ইংল্যান্ড-জার্মানি সংঘাত C. অস্ট্রিয়া-ফ্রান্স সংঘাত
D. সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড
Ans. D

9. ‘কঙ্গো-ফ্রি-স্টেট’ গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান উদ্যোগী দেশটি হল—
A. পোর্তুগাল B. হল্যান্ড C. স্পেন D. ইংল্যান্ড
Ans. C

10. ‘ওয়েল্ট পলিটিক’ নীতি গ্রহণ করেছিল—
A. অটো ফন বিসমার্ক B. কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম C. ক্লিমেশো D. ফ্রেডারিক হিবার্ট
Ans. B

error: Content is protected !!
Scroll to Top

আজকেই কেনো পরীক্ষার শর্ট নোটস

এখন সহজে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও – আজকেই ডাউনলোড করো পিডিএফ বা বই অর্ডার করো আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকে