fbpx

সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা​ – Songhoboddhotar Gorar Kotha Class 10 WBBSE Madhyamik Notes

আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে

  • প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics  গুলো সহজভাবে.  এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
  • দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
  • তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er  প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
  • চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়

আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি

ভূমিকা :

ভারতে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক স্তরে বিভিন্ন বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ বা মহা বিদ্রোহ অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিল, যার ফলস্বরূপ বিভিন্ন জাতীয়বাদী সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে।

১৮৫৭- র  মহাবিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহ :-

 

পলাশির যুদ্ধে (১৭৫৭খ্রি.) জয়ী হয়ে ব্রিটিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি সমগ্র ভারতীয় মহাদেশে অর্থনৈতিক শোষণ এবং স্বৈরাচারী শাসন শুরু করে। এর ফলে ভারতীয় শিল্প – বাণিজ্য এবং কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পরে ।

ব্রিটিশরা ভারতীয়দের নিজেদের সেনাবাহিনীতে নিলেও তাঁদের নানা ভাবে অপমান ও তাদের সাথে ভেদাভেদ এমনকি ঘৃণা ও করতেন। ফলে এই দুর্ব্যবহার ধীরে ধীরে ক্ষোভে পরিণত হয়, যা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহ আকারে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে পরে।

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে এই সময় এনফিল্ড রাইফেলের টোটার ব্যবহার শুরু হলো, যাকে এই বিদ্রোহের প্রধান কারণ হিসাবে ধরা হয়। এই রাইফল ব্যবহারের সময় এই টোটার খোলসটি দাঁত দিয়ে কেটে ভরতে হতো, গুজব রটে যে এই খোলসটি গরু এবং শূকরের চর্বি দিয়ে তৈরি। এই খবর আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়লো, হিন্দু – মুসলিম সিপাহিরা এই রাইফেল ব্যাবহার করতে চাইলো না।

বড়োলাট লর্ড ক্যানিং – এর আমলে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ২৬ ফেব্রুয়ারি, মুর্শিদাবাদের বহরমপুর সেনানিবাসের ১১নং নেটিভ ইনফ্যান্ট্রির সিপাহিরা প্রথম বিক্ষোভ শুরু করে।

বারাকপুরের সেনানিবাসের সিপাহি মঙ্গল পান্ডে ২৯ মার্চ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং প্রথম শহীদ হয়।

এই ঘটনার পর ধীরে ধীরে মিরাট,  দিল্লি, ফিরোজপুর,  মুজাফরনগর, পাঞ্জাব ও উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, লখনৌ-এ বিদ্রোহ শুরু হয়।

১৮৫৭-র সিপাহী বিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি :-

 

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।

  • ১৮৫৭  খ্রিস্টাব্দে সৈনিক বা সিপাহীরা প্রথম এই বিদ্রোহ শুরু করেছিল বলে অনেকেই সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন।
  • হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দাদাভাই নওরোজি, অক্ষয় কুমার দত্ত প্রমুখ এই বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন।
  • ইংরেজ ঐতিহাসিক জনকে,  বল,   প্রমুখ এই বিদ্রোহের গণতন্ত্রের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ কানপুরে নানা সাহেব ও তাতিয়া টোপি,  ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ  প্রমুখরা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাই এই বিদ্রোহকে অনেকে গণবিদ্রোহ অভিহিত করেছেন।
  • ঐতিহাসিক ডাফ , রবার্টসন,  সমাজতন্ত্র কাল মার্কস প্রমুখ এই বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলেছেন।
  • কারণ এই বিদ্রোহের অসামরিক লোকজন ও জমিদার শ্রেণী সক্রিয় হয়ে ওঠে।
  • আবার অনেকেই এই বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন।
  • রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে ‘ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে তথাকথিত প্রথম জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম,  প্রথম নয় , জাতীয় নয় এবং স্বাধীনতাসংগ্রাম ও  নয় ‘ ।
  • ড. সুরেন্দ্রনাথ সেনের মতে এই সময় ভারতে জাতীয়তাবোধ প্রসার হয়নি, তাই এই বিদ্রোহকে গুরুত্ব দিতে চাননি।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহ প্রথম বহিঃপ্রকাশ ছিলো ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। বিদ্রোহের ফলে ভারতের শাসন ভার কোম্পানির হাত থাকে চলে যায়।

১৮৫৭-র সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মনোভাব : 

 

ব্রিটিশ কোম্পানি নিজেদের সুবিধার্থে ভারতবর্ষের শিক্ষার প্রচলন করেন যার ফলস্বরূপ বাংলায় শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণি তৈরি হয়।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে যখন ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে সমর্থন করলেও, শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ গুরুত্ব দেয়নি।  তাদের মনে হয়েছিল এদেশে জাতীয় রাষ্ট্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে ভারতীয়রা পারবে না।

বরং তাদের মনে হতো যে ব্রিটিশরাই পারে ভারতবর্ষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ও তাদের দ্বারাই  উন্নতি হবে ভারতীয়দের। এই বিদ্রোহ দমনে শিক্ষিত সমাজ স্বস্তিবোধ  করেছিল।

এইভাবে জনসমর্থনের অভাবে এই বিদ্রোহ খুব বড় আকার ধারণ করতে পারেনি আর তাই এই বিদ্রোহ ব্রিটিশদের পক্ষে দমন করা সহজ  হয় ।

মহারানীর ঘোষণাপত্র (১৮৫৮খ্রি.)

মহারানীর ঘোষণাপত্র (১৮৫৮খ্রি.) :- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু এর প্রভাব ছিলো অনেকটা। কঠোর দমন নীতি এবং বিদ্রোহী নেতাদের উপর নির্মম অত্যাচারে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে বিদ্রোহ থেমে যায়।

এই অবস্থা দেখে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতে ইস্টাইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে ইতি দিয়ে ‘ভারত শাসন আইন ‘ (১৮৫৮খ্রি.) আনা হয়। এই আইনে মহারানী ভিক্টোরিয়া নিজের হাতে ভারতের শাসন ভার তুলে নেন, রানির প্রতিনিধি হয়ে গভর্নর জেনারেল ভারত শাসন করবেন। ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হলেন লর্ড ক্যানিং।

মহারানি ভিক্টোরিয়া ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় নুতন নিয়ম চালু করেন। মহারানীর এই নীতি ও আদর্শ মহারানীর ঘোষণাপত্র নামে পরিচিত ।

  • ভারতীয়দের সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না ।
  • স্বত্ববিলোপ নীতি প্রত্যাহার করা হয় ।
  • দেশীয় রাজারা দত্তক নিতে পারবেন ।
  • জানানো হয় ভারতের ব্রিটিশ সরকার সাম্রাজ্য বিস্তারে আগ্রহী নয় ।
  • জাতি-ধর্ম-বর্ণ দেখে না, যোগ্যতা হিসাবে সকল ভারতীয়কে চাকরিতে নিয়োগ করবে সরকার ।
  • দেশীয় রাজ্যের সঙ্গে যা চুক্তি হয়েছে তা সরকার মেনে চলবে । এই নিয়ম গুলো শুধু মাত্র নিয়মই ছিলো যা কোনো দিন কার্যকর হয়নি । তাই ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তেই থাকে ।

সভাসমিতির যুগ  এবং তার বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ :-

অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকারের শাসনে অতিষ্ট হয়ে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের মনোভাব জাগরণ হয় । ভারতীয়রা বুঝতে পারে  ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর হয়ে লড়াই করার জন্য রাজনৈতিক দল ও আন্দোলন করা দরকার । এর পর বিভিন্ন সভা-সমিতি  গড়ে উঠলো ।

এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো :-

ভারতে বিভিন্ন সভা-সমিতি গঠিত হয়, তাদের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিলো, সেই গুলি হল –

  • এই সভা সমিতির মূল উদেশ্য ছিলো ভারতীয়দের স্বার্থ রক্ষা করা, ব্রিটিশ সরকারের কাছে দাবিদাওয়া পেশ করা।
  • সমাজের উচ্চ- বিত্ত ও শিক্ষিতরাই এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন।
  • এই রাজনৈতিক দলগুলি সাধারণ ও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
  • এদের রাজনৈতিক কার্যকলাপের গতি ছিল অত্যন্ত মন্থর।

উনিশ শতকে বাংলায় প্রথম রাজনৈতিক দলের সূচনা হয়, তারপর সমগ্র ভারতবর্ষে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তৈরি হয়। ভারত সভা ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়, তার পর এই রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপ বৃদ্ধিপায়।

বিভিন্ন সভা সমিতি :-

১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা ‘ নামে প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন স্থাপিত হয়। এর পর জমিদার সভা, হিন্দুমেলা, ভারতসভা ইত্যাদি রাজনৈতিক সংগঠনের পর জাতীয় কংগ্রেস ১৮৮৫ খ্রি. স্থাপিত হয়।

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা :-

 

  • রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর তার অনুগামীদের উদ্যোগে ১৮৩৬ খ্রি. কলকাতায় ‘বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা’ নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • গৌরীশঙ্কর ভট্টাচাৰ্য এর সভাপতি ছিলেন।
  • পন্ডিত দুর্গাপ্রসাদ তর্কপঞ্চানন এর সম্পাদক ছিলেন।
  • এছাড়াও, কালীনাথ রায়চৌধুরী, দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রমুখ এই দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
  •  এই সভা দেশের মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার না করতে পাড়ার জন্য বিলোপ হয়ে যায়।

জমিদার সভা :

  • দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রচেষ্টায় ‘ জমিদার সভা ‘ নামে রাজনৈতিক দল গড়ে তোলেন ১৮৩৮খ্রি.।
  •  রাজা রাধাকান্ত দেব ছিলেন এর সভাপতি।
  • প্রসন্ন কুমার ঠাকুর, রামকমল সেন, ভবানীচরণ মিত্রর মতো ধনী ব্যাবসায়ী ও জমিদার এই দলের সাথে যুক্ত ছিলেন।
  • বেসরকারি ব্যবসা-বাণিজ্য করে এমন ব্রিটিশরাও এই সভাতে যোগদান করতে পারতেন।

জমিদার সভার প্রধান কাজ ছিল :-

  • বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জমিদারের স্বার্থ রক্ষা করা।
  • ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রকে জমিদারদের স্বপক্ষে আনা।
  • ভারতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা।
  • এই সভার আবেদনে সরকার ১০ বিঘা পর্যন্ত খাজনা ছাড় দেন। এই সভা ছিল ভারতের স্বাধীনতার অগ্রদূত।

হিন্দুমেলা (১৮৬৭-১৮৯০খ্রি.):

  • নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুমেলা নামে এক রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
  • জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন হিন্দুমেলা-র প্রথম সম্পাদক
  • নবগোপাল মিত্র ছিলেন সহ-সম্পাদক।
  • রাজা কমলকৃষ্ণ বাহাদুর, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রমানাথ ঠাকুর, পিয়ারী চরণ সরকার, রাজনারায়ণ বসু, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কৃষ্টদাস পালের  মতো অনেক জ্ঞানী গুণী লোকের নাম শোনা যায়।
  • হিন্দুমেলা-র উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষিত যুবকদের হিন্দু ধর্মের গৌরব, ঐতিহ্য, দেশীয় ভাষা চৰ্চা করা, জাতীয় প্রতীকগুলিকে সন্মান দেওয়া ইত্যাদি।

তবে হিন্দুমেলা ও ধীরে ধীরে বিলোপ হয়, কারণ 

  • রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া সাধারণ মানুষের কাছে দেশাত্মবোধ গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল।
  • নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বাঙালিরা সমর্থন করেনি।

ভারতসভা  (১৮৭৬-১৮৯০ খ্রি.) :-

  • ১৮৭৬ খ্রি. ‘ভারতসভা’ বা ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন‘ গঠন হয় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী এছাড়া অনেকের প্রচেষ্টায়।
  • কলকাতার আলবার্ট হলে প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ভারতসভার।
  • সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘এ নেশন ইন মেকিং’ গ্রন্থ থেকে ভারত সভা সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।

ভারতসভা মূলত ভারতীয়দের সার্বিক কল্যাণ ও স্বার্থরক্ষার জন্য তৈরি করা হয়। ভারতসভা শিক্ষিত সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

যেমন-

  • জনমত তৈরি করা
  • ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করা
  •  হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখা
  • প্রতিষ্ঠানে সর্বস্তরের ভারতীয়দের গন- আন্দোলনে সামিল করা

এই উদ্দেশ্য সফল করতে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় লখনৌ, মিরাট, লাহোর, সিন্ধু প্রভৃতি অঞ্চল ভারতসভার শাখা গড়ে ওঠে।

ভারত সভা ভারতীয়দের স্বার্থে অনেক কাজ করেন। সরকার ভারতছাড়ো আন্দোলনের চাপে ভারতীয়দের স্বার্থে নতুন আইন প্রণয়ন করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

  • সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার সর্বোচ্চ বয়স বৃদ্ধি
  • ইলবার্ট বিল সমর্থন
  •  অস্ত্র আইন
  • দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন
  • প্রজাস্বত্ব আইন
  • মদ্যপান শাসন-পরিষদ গঠন
  • স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন, ইত্যাদি

১৮৮৩ খ্রি. “সর্বভারতীয়  জাতীয় সম্মেলন” কোলকাতাতে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯০৫ খ্রি. স্বদেশী আন্দোলনের সময় জাতীয় ভান্ডার তৈরি করে এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

লেখা এবং আঁকার মাধ্যমে জাতীয়তাবোধের বিকাশ , তার বৈশিষ্ট্য ও মূল্যায়ন :-

 

ব্রিটিশ কোম্পানি তাদের স্বার্থে ভারত তথা বাংলাদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল। যার ফলে ভারতের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে, এরাই পরবর্তীকালে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদের চেতনার প্রসার  ঘটায়।

লেখায় ও আঁকায় জাতীয়তাবোধের প্রভাব বিস্তার করতে সাহায্য করেছে অনেকে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন – মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আনন্দমঠ উপন্যাস :-

 

বাংলা ভাষার সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক অবিস্মরনীয় নাম। তিনি বহু দেশাত্মবোধক উপন্যাস রচনা করেছেন, তারমধ্যে ‘আনন্দমঠ’ হল উল্লেখযোগ্য। The Abbey of Bliss নামে এই উপন্যাসটি ইংরাজি অনুবাদ করা হয়।

  • আনন্দমঠ উপন্যাসটি বাংলার ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এবং সন্ন্যাসী বিদ্রোহের বর্ণনা দেয়।
  • সাথে পরাধীন ভারতের অবস্থা বর্ণনা করে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সবাই একসাথে হয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানান।
  • দেশাত্মবোধ জাগরণের জন্য এই বই অনেক ভাষাতে অনুবাদ করা হয়।
  • ইংরেজ সরকার আনন্দমঠ বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও ১৯৪৭খ্রি. স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সরকার এই নিষেধ তুলে নেন এবং বন্দেমাতরম্ গানটিকে ভারতের জাতীয় সংগীত হিসাবে ঘোষণা করেন।
  • সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৫ খ্রি. “বন্দেমাতরম ” গানটি লেখেন।
  • ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয় কংগ্রেস  অধিবেশনে এই গানটি পরিবেশন করেন।
  • ভিকাজি কামা  ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে  ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা তৈরি করেন ও তাতে বন্দেমাতরম্ কথাটি লেখেন।
  • ঋষি অরবিন্দ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ‘বন্দেমাতরম্’ গানটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।

বর্তমান ভারত :-

 

ভারতের জাতীয়তাবোধের বিকাশে স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ‘উদ্বোধন’ পত্রিকায় তার লেখা, ‘ভাববার কথা’, ‘বর্তমান ভারত’, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’,  প্রকাশিত হতে থাকে, এরমধ্যে বর্তমান ভারত উল্লেখযোগ্য।

  • ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান ভারত গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।
  • বর্তমান ভারত গ্রন্থে স্বামীজি ভারতের সুন্দর ইতিহাস থেকে অত্যাচারিত ব্রিটিশ শাসনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
  • জাতিভেদ প্রথা কিভাবে তৈরি হয়েছিল আর আমরা কিভাবে এটাকে বংশানুক্রমে তৈরী করেছি তার নিন্দা করেন।
  • স্বামীজি দরিদ্র ও অবহেলিত ভারতবাসীদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
  • আমরা ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে কিভাবে নিজেদের উত্থান  করতে পারি তার পথ বলেছেন।
  • তিনি দেশবাসীকে স্বদেশী প্রেমের আদর্শে চলতে বলেছেন। স্বামীজীর রচনা বিপ্লবীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলো, তার দেখানো পথে অনেকেই অনুসরণ করতো।

ঐতিহাসিক আর. জি. প্রধান- এর মতে স্বামী বিবেকানন্দ হলেন ” ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক “।

গোরা উপন্যাস :-

 

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে জাতীয়তাবাদ ও স্বদেশপ্রেমের ধারণা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান অনস্বীকার্য। তার লেখা বাংলা লেখা বহু দেশাত্মবোধক উপন্যাসের  মধ্যে গোরা হল অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।

  • এই উপন্যাসে একদিকে জীবনের বাস্তবতা সাথে দেশের জন্য যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করেন।
  • উপন্যাসের মাধ্যমে মানুষকে সমস্ত রকমের ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস ও সামাজিক গোঁড়ামির থেকে  মুক্ত হওয়ার কথা বলেছেন।
  • উপন্যাসের মাধ্যমে, হিন্দু-মুসলিম বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে  বিভেদ নেই এবং সমস্ত ধরনের অত্যাচার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন। সাথে তিনি এও বলেছেন যে, ধর্মীয় পরিচয় কোন মানুষের একমাত্র পরিচয় নয়।
  • এই রচনা দেশবাসীকে এক সঙ্গে স্বদেশপ্রেমে আহ্বান করছেন যাতে কোনো বহিরাগত শক্তি ভাঙতে না পারে।

ভারতমাতা  চিত্র :-

 

শিল্পকলার জাতীয়তাবোধ উত্তলনে ভূমিকা ছিলো। ঠাকুর পরিবারের সদস্য খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী ও সাহিত্যিক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাঁর আঁকা চিত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘নির্বাসিত যক্ষ’,  ‘ভারতমাতা’ , ‘শাহজাহানের মৃত্যু’  ইত্যাদি।

এরমধ্যে ভারতমাতা চিত্র টি উল্লেখযোগ্য ছবি যা ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের প্রসার ঘটায়।

  • ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশী আন্দোলনের সময় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ভারতমাতা চিত্রটি অঙ্কন করেন।
  • এই চিত্রটি তখনকার সময় নবজাগ্রত ভারতীয়দের মনে জাতীয়তাবাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছিল এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলন ছিল ভারত মাতা।
  •  চিত্রকার এটি হিন্দু দেবী লক্ষীর অনুকরণে চতুর্ভুজা ভারতমাতা চিত্র অঙ্কন করেন।
  • ভারতমাতার হাতে কোন অস্ত্র নেই রয়েছে বেদ, ধানের শীষ, জপের মালা ও শীতবস্ত্র যা ভারতীয়  সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত।
  • ভগিনী নিবেদিতা ভারতমাতা চিত্রটির প্রশংসা করেন।

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র ও ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা :-

জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সদস্য গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার খ্যাতনামা চিত্র ও কার্টুন শিল্পী।

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ অরিয়েন্টাল আর্ট’ স্থাপন করেন। তিনি তাঁর চিত্র কলার মাধ্যমে সেই সময়কার সরকারের কাজের সমালোচনা করতেন।

‘অদ্ভুত লোক’ ‘(১৯১৫ খ্রি.), ‘বিরূপ বস্ত্র’ (১৯১৭ খ্রি.), ‘নয়া হুল্লোড়’ (১৯২১ খ্রি.) ইত্যাদি হলো তার উল্লেখযোগ্য কাজ।

  • তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল অভিজাত শ্রেণী ও ধনী শ্রেণীর  ক্রিয়া- কলাপ ।
  • গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ব্যঙ্গ চিত্রের মাধ্যমে তৎকালীন  শিক্ষিত বাঙালি সমাজের এক  চরিত্র বর্ণনা করতেন যেখানে তারা নিজেদের বাঙালিয়ানাকে বিসর্জন দিয়ে  ইউরোপীয়দের সান্নিধ্য পেয়ে একশ্রেণীর বঙ্গীয় সমাজ  তৈরি করেছে। এই ধরনের বিষয়বস্তু তার কার্টুনের মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরেছেন।
  • ‘খল ব্রাহ্মণ’ চিত্রে  তিনি এক ব্রাহ্মণের খল রূপ সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন। যেখানে তিনি ধর্ম ছাড়া মাছ, মাংস, মদ ও মহিলাতে আসক্ত।
  • একটি চিত্রে এক বাঙালি নারী বাংলা শাড়ি এবং ইউরোপের জুতো পড়ে ইউরোপের পুরুষের সাথে নিত্য করছেন ।
  • ১৯১১ খ্রি. মোহন বাগান ক্লাবের আইএফএ শিল্ড জয়লাভকে তিনি তার ব্যঙ্গ চিত্রের মাধ্যমে পাঠক শ্রেণীর কাছে প্রকাশ করেছেন।
  • এইভাবে ঔপনিবেশিক শাসনের সমালোচনার সাথে স্বদেশ প্রেমের ভাব তার কার্টুনের মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরেছেন।

SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা​ – Songhoboddhotar Gorar Kotha

1 MARKS QUESTIONS of সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা​ – Songhoboddhotar Gorar Kotha

১. ‘ ভারতমাতা ‘ চিত্রটির চিত্রকর কে?

উত্তর: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

২. ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নাম লেখ।

উত্তর: বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা।

৩. কে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলেছেন?

উত্তর: বিনায়ক দামোদর সাভারকর।

৪. কোন সালে সিপাহী বিদ্রোহ হয়?

উত্তর: ১৮৫৭ সালে

৫. একজন কৌতুক চিত্র শিল্পীর নাম লেখ।

উত্তর: গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

৬. কাকে ১৮৫৭ সালে ‘ হিন্দুস্থানের সম্রাট ‘ হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়?

উত্তর: মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে।

৭. কে ‘ অমৃতবাজার পত্রিকা ‘ র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উত্তর: শিশিরকুমার ঘোষ

৮. কবে ভারতে কোম্পানি শাসনের পত্তন হয়?

১৮৫৮ সালের ২ রা আগস্ট।

৯. কে ঊনবিংশ শতাব্দীকে ‘সভাসমতির যুগ ‘ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন?

উত্তর: ঐতিহাসিক অনিল শীল।

১০. ইলবার্ট বিলের রচয়িতা কে?

উত্তর: লর্ড রিপনের আইন সচিব ইলবার্ট।

Multiple Choice Questions – 1 Marks of সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা​ – Songhoboddhotar Gorar Kotha

১. দেশীয় ভাষায় প্রকাশ করা সংবাদপত্র আইন কবে চালু করা হয়-

[a] ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে,

[b] ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে,

[c] ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে,

[d] ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে,

উত্তর : [c] ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে

২. ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নাম লেখ –

[a] বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা,

[b] জমিদার সভা,

[c] ভারতসভা,

[d] জাতীয় কংগ্রেস,

উত্তর : [a] বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা

৩. বাংলার ‘ মুকুটহীন রাজা ‘ নামে পরিচিত –

[a] নবগোপাল মিত্র,

[b] সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়,

[c] আনন্দমোহন বসু,

[d] অরবিন্দ ঘোষ,

উত্তর : [b] সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

৪. পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী –

[a] ডঃ বিধানচন্দ্র রায়,

[b] প্রফুল্ল ঘোষ,

[c] প্রফুল্ল সেন,

[d] জ্যোতি বসু,

উত্তর : [b] প্রফুল্ল ঘোষ

৫. কার্টুনের দ্বারা জাতীয়তাবাদের বিকাশ করেছিলেন –

[a] রবীন্দ্রনাথ,

[b] অবনীন্দ্রনাথ,

[c] গগনেন্দ্রনাথ,

[d] হিমু,

উত্তর : [c] গগনেন্দ্রনাথ

৬. সিপাহী বিদ্রোহের প্রথম শহীদ ছিলেন –

[a] নানা সাহেব

[b] বিরজিস কাদির

[c] মঙ্গল পান্ডে

[d] বেগম হজরত মহল

উত্তর : [c] মঙ্গল পান্ডে

৭. ‘ বন্দেমাতরম ‘ সংগীতটির রচয়িতা হলেন –

[a] সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়,

[b] কেশবচন্দ্র সেন,

[c] বঙ্কিচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

[d] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উত্তর : [c] বঙ্কিচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

৮.  সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃত সূচনা স্থানটি হল

[a] দিল্লী

[b] মিরাট

[c] অযোধ্যা

[d] ব্যারাকপুর

উত্তর : [b] মিরাট

৯. মহারানীর ঘোষণাপত্র অনুযায়ী ভারতের প্রথম রাজপ্রতিনিধি হলেন –

[a] লর্ড  ডালহৌসি

[b] লর্ড ক্যানিং

[c] লর্ড বেন্টিঙ্ক

[d] লর্ড মাউন্টব্যাটেন

উত্তর :[b] লর্ড ক্যানিং

১০. ‘ ভারতমাতা ‘ চিত্রটির নামকরণ কে করেছিলেন –

[a] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

[b]অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

[c]ভগিনী নিবেদিতা

[d]গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

উত্তর :[c]ভগিনী নিবেদিতা

Short Questions – 2-3 Marks of সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা​ – Songhoboddhotar Gorar Kotha

১. ‘ বর্তমান ভারত ‘ কিভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল?

উত্তর:  ‘ বর্তমান ভারত ‘ গ্রন্থে স্বামী বিবেকানন্দ দেশকে মাতৃরূপে কল্পনা করে, দেশের মুক্তির জন্য আত্মত্যাগের আদর্শ তুলে ধরে সবাইকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাণী ও উত্তিষ্ঠিত, জাগ্রত মন্ত্র দ্বারা সকলকে জাতীয়তাবোধের ভাবধারায় ব্রতী করে তোলেন।

২. ঔপনিবেশিক সমাজ সম্পর্কে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতবাদ আলোচনা কর।

উত্তর: সমসাময়িক বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলোকে গগনেন্দ্রনাথ তার কৌতুকপূর্ণ চিত্রগুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলে সমাজ চেতনা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। শিক্ষার কারখানা নামক চিত্রে তিনি ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে কটাক্ষ করেছিলেন।

৩. এনফিল্ড রাইফেল সম্পর্কে আলোচনা কর

অথবা,

সিপাহী বিদ্রোহের কারণ আলোচনা কর।

অথবা,

এনফিল্ড রাইফেলের গুণাবলি কি?

উত্তর: সিপাহীদের দ্বারা বহুল ব্যবহৃত একটি রাইফেল হল এনফিল্ড রাইফেল যার টোটা দাঁতে কেটে রাইফেলে ভরতে হয়। ক্রমে ধর্ম ভীরু সিপাহীদের মধ্যে গুজব রটে যে এই টোটাটি গরু ও শুকরের চর্বি দ্বারা তৈরি করা হয় ফলতঃ ধর্ম নাশের আশঙ্কায় তারা বিদ্রোহ করে।

৪. ভারতসভা কি উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  শ্রেণীভেদ ভুলে সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা, বিশেষত হিন্দু ও মুসলিম শ্রেণীর মধ্যে সর্ব ভারতীয় স্তরে বন্ধুত্ব স্থাপন করার মাধ্যমে দেশে একটি শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলাই ছিল ভারতসভা প্রতিষ্ঠা করার প্রধান উদ্দেশ্য।

৫. হিন্দুমেলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তর: দেশীয় শিল্প, সাহিত্য এবং সব শ্রেণীর হিন্দুকে  ঐক্যবদ্ধ করে তুলে প্রত্যেককে আত্মনির্ভরশীল ও চেতনাশীল করে তোলাই ছিল  হিন্দুমেলা উদ্দেশ্য।

৬. ভারতের জাতীয়তাবোধের বিকাশে ‘ গোরা ‘ উপন্যাসের ভূমিকা আলোচনা কর।

উত্তর: দেশপ্রেম, ধার্মিক ও সাম্প্রদায়িক, জাতীয় চেতনার অখণ্ডতা বোধ ইত্যাদি বার্তাগুলি  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের ‘ গোরা ‘ উপন্যাসের মাধ্যমে দেশবাসীকে দেন যা দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবোধকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।

৭.   জাতীয়তাবাদের উপর ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাসের প্রভাব আলোচনা কর।

উত্তর: দেশীয় সংস্কৃতির ও ঐতিহ্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে রচিত বঙ্কিচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসটি ছিল স্বদেশিকতার ও বিপ্লববাদের প্রেরণা, শক্তি ও বীজমন্ত্র যা সমগ্র দেশের জাতীয়তাবোধকে জাগিয়ে তুলতে সহায়ক হয়েছিল।

৮.বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল?

উত্তর: নিষ্কর জমিকে বাজেয়াপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা, জমিদারের স্বার্থ রক্ষা, পতিত জমিতে কর মুক্ত করা ইত্যাদি ছিল বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।

৯. ইলবার্ট বিল সম্পর্কে লেখ।

উত্তর: কোনো ব্রিটিশদের বিচারের অধিকার ভারতীয় বিচারকদের ছিল না। লর্ড রিপনের শাসনাধীন সময়কালে আইন সচিব ইলবার্ট একটি বিল পাস করেন যার মাধ্যমে ভারতীয় বিচারকদের এই অধিকার দেওয়া হয়, এই বিলটি ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত।

১০. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ ভারতমাতা ‘ চিত্রটি বর্ণনা কর।

উত্তর: ১৯০৫ সালে অঙ্কিত অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতমাতা ‘ চিত্রটিতে ভারতমাতার চার হাতে দেখা  যায় বেদ, ধানের শীষ, জপের মালা ও শীতবস্ত্র  যেগুলি হল ভারতীয় সভ্যতার প্রতীক।

১১. কারা সিপাহী বিদ্রোহকে সামন্তশ্রেনীর বিদ্রোহ আখ্যা দিয়েছেন এবং কেন?

উত্তর: ১৮৫৭ সালের এই বিদ্রোহে সিপাহী ছাড়াও বিভিন্ন জমিদার, প্রাদেশিক শাসক, সামন্ত শ্রেণীর মানুষরাও নেতৃত্ব দেন যার কারণে ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার, রজনিপাম দত্ত প্রমুখরা এই বিদ্রোহকে সামন্তশ্রেনীর বিদ্রোহ আখ্যা দিয়েছেন।

১২. ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে আখ্যা কারা কেন দিয়েছেন?

উত্তর: ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের প্রভাবে ভারতীয় জনসাধারণ জাতীয়তাবোধ উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নিযুক্ত হয় যার কারণে বিনায়াক দামোদর সভাকার এই যুদ্ধকে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে আখ্যা দেন।

১৩. কি কারণে উনিশ শতককে সভাসমিতীর যুগ বলে  ঐতিহাসিক অনিল শীল উল্লেখ করেন।

অথবা, সভা সমিতির যুগ সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: ঊনবিংশ শতকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো জাতীয়তাবাদের আত্মপ্রকাশ, এই সময় দেশে নানান সভাসমিতি গড়ে ওঠে যার কারণে এই সময়কালকে অনিল শীল সভাসমিতির যুগ বা ‘ Age of Associations ‘ বলে উল্লেখ করেছেন।

Long Questions – 5 Marks of সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা​ – Songhoboddhotar Gorar Kotha

১.’ ভারতমাতা ‘ চিত্রে কিভাবে জাতীয়তাবাদের প্রকাশ ঘটেছে?

অথবা,

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতমাতা চিত্রটি সম্পর্কে লেখ।

অথবা,

ভারতমাতা চিত্রের মাধ্যমে অবনীন্দ্রনাথ কিভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার বিকাশ ঘটিয়েছেন?

উত্তর: ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধ মানসিক  ভাবধারা তৈরিতে যে সকল চিত্রশিল্পী নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের মধ্যে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অন্যতম।

১৯০৫ সালে তাঁর আঁকা বিখ্যাত চিত্র ভারতমাতার মাধ্যমে তিনি ভারতে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার প্রসার ঘটান। এই চিত্রে ভারতের প্রতীক হিসাবে তিনি ভারতমাতাকে দেখিয়েছিলেন। ভারতীয় জননীর সম্পর্কে আসল ধারণা এই চিত্রের ন্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন তিনি।

জাতীয় চেতনা প্রসার: তৎকালীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ভারতমাতার চিত্র রাখা হত। এর মাধ্যমে ভারতে জাতীয় চেতনা বৃদ্ধি করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

স্বদেশীকতার প্রসার: ভারতমাতার চিত্রে ভারতমাতার হাতে থাকা বেদ, ধানের শীষ, জপের মালা ও শ্বেত বস্ত্রকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসাবে ব্যাবহার করেছেন। তিনি এই চিত্রের স্বাদেশবোধের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী ভাবনার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন।

ছবিটির তাৎপর্য: ভারতমাতা চিত্রে গৈরিক বসনধারী ভারতমাতার চারটি হাতে রয়েছে অন্ন, বস্ত্র, জ্ঞান ও অধ্মাত্বিক মুক্তির অবলম্বন। এই চিতের মাধ্যমে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষকে মা রূপে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এই চিত্র নিয়ে বিতর্ক লক্ষ্যনীয়। ভগিনী নিবেদিতা ভারতমাতার এই চিত্রের প্রশংসা করে বলেছেন ‘ এই চিত্রটির মাধ্যমে বিমূর্ত জাতীয়তাবাদকে মূর্ত করে তোলা হয়েছে। ‘

২. বঙ্গভাষা প্রবেশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলার কারণ কি?

 অথবা, 

বঙ্গভাষা প্রবেশিকা সভা সম্পর্কে যা জান লেখ।

অথবা,

বঙ্গভাষা প্রবেশিকা সভা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।

উত্তর: সূচনা: ১৯ শতকের শুরুর দিকে ব্রিটিশ সরকার বাংলার জমিদারদের নীষ্কর জমির পুনঃগ্রহণের প্রস্তাব তোলে, এর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে বঙ্গভাষা প্রবেশিকা সভা। এই সময়ে যে রাজনৈতিক সংগঠন গুলি গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো ছিল ‘ বঙ্গভাষা প্রবেশিকা সভা ‘।

টাকির জমিদার কালিনাথ চৌধুরী, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্যারিমোহণ বসু, রামলোচন ঘোষ প্রমুখের নেতৃত্বে ১৮৩৬ সালে বঙ্গভাষা প্রবেশিকা সভার সূচনা হয়। যার প্রথম সম্পাদক ছিলেন দূর্গাপ্রসাদ তর্কপঞ্চানন ও প্রথম সভাপতি ছিলেন গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশ।

পণ্ডিত যোগেশ চন্দ্র বাগলের মতে ” এই সভা প্রতিষ্ঠার সঠিক সন – তারিখ আমরা জানতে পারি নাই।” তবে এর প্রথম অধিবেশন ১৮৩৬ সালের ৬ ই অথবা ৮ ই ডিসেম্বর বসে।

বঙ্গভাষা প্রবেশিকা সভা মূলত কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল যার মধ্যে অন্যতম ছিল – কোম্পানি নিষ্কর ভূমির উপর কর নেওয়া শুরু করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, ভারতবাসীর মঙ্গল এবং অমঙ্গলকারী বিষয় গুলির আলোচনা ও পর্যালোচনা করা, বঙ্গভাষার উন্নতি সাধন করা, রাষ্ট্রিয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা ইত্যাদি।

এই সভার সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের আলোচনার বিষয় ও বির্তরকের দিকে খেয়াল করলে স্বদেশ ভাবনা ও রাজনৈতিক চেতনার প্রচয় পাওয়া যায়। এই রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও চিন্তাভাবনার জন্য এটিকে তৎকালীন ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠনও বলা হয়।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই সভার পতন ঘটলেও এটি তৎকালীন ভারতের বিশেষ করে বাংলায় বাঙালি তথা ভারতবাসীর প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন। জনগণের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে শাসন ব্যাবস্থার ত্রুটি সংশোধনে এই সংস্থা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল।

৩.কেন হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

 অথবা,

১৯ শতকে ভারতবর্ষে জাতীয়তাবোধ বিকাশে হিন্ডামেলার গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা, 

হিন্দুমেলা সম্পর্কে যা জান লেখ।

উত্তর: ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ভারতীয় শাসন ব্যাবস্থা আসে। এই সময়ে ভারতের যে সকল সভা সমিতি ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল ১৮৬৭ সালে গড়ে ওঠা হিন্দুমেলা। এর প্রথম অধিবেশন ১৮৬৭ সালের চৈত্র সংক্রান্তিতে বসেছিল বলে একে চৈত্র মেলাও বলা হয়।

প্রতিষ্ঠা: ১৮৬৭ সালে রাজনারায়ণ বসু, গগণেন্দ্রণাথ ঠাকুর, নবগোপাল মিত্র, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের উদ্যোগে এক বার্ষিক অনুষ্ঠানের সূচনা হয় যার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন নবগোপাল মিত্র। শুরুর দিকে হিন্দুমেলার সম্পাদক ছিলেন গগণেন্দ্রণাথ ঠাকুর ও সহ সম্পাদক ছিলেন নবগোপাল মিত্র।

প্রধান উদ্দেশ্য: প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই হিন্দুমেলার উদ্দেশ্য ছিল ভারতবাসীকে স্বদেশী আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত করা। সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে স্বদেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা, জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটিয়ে হিন্দুদের জাগরণ করা, দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধের জাগরণ ঘটানো। এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে গগণেন্দ্রণাথ ঠাকুর বলেছেন – ” আমাদের এই মিলন সাধারণ ধর্ম কর্মের জন্য নহে, কোনো আমোদ প্রমোদ এর জন্য নহে, ইহা স্বদেশের জন্য, ইহা ভারতভূমির জন্য। “

কার্যাবলী : এই সংগঠনের প্রধান কার্যাবলী ছিল হিন্দুদের মধ্যে বিদ্বেষ ভাব দূর করে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিবরণী তৈরি করা। এই সংগঠন সদস্যদের যোগব্যয়াম, লাঠিখেলা, কুস্তি ইত্যাদি শিক্ষাদানের ওপর গুরুত্ব দিত। সেই জন্য ১৮৬৮ সালে নবগোপাল মিত্র ‘ ন্যাশনাল জিমনেশিয়াম ‘ নামক শরীর শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

উপরে আলোচ্য বিষয় ছাড়াও এর মাধ্যমে তৎকালীন ভারতের আর্থ সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয়ে বিশ্লেষণ করে বক্তৃতার ব্যবস্থা করা হয়। ভারতবর্ষে বাঙালিদের জাতীয় চেতনা জাগরণে হিন্দুমেলার অবদান অনস্বীকার্য।

৪. গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর অঙ্কিত ব্যঙ্গচিত্রের বর্ণনা কর।

অথবা,

ভারতের জাতীয়তাবাদের প্রসারে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্রের অবদান আলোচনা কর।

অথবা,

কিভাবে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অঙ্কিত ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছেন?

উত্তর: সূচনা : বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ঔনিবেশিক শাসনকালে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অঙ্কিত ব্যঙ্গচিত্রগুলি তৎকালীন সমাজে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। তৎকালীন সমাজের সমাজের সমালোচনা ও বিদ্রুপ তাঁর আঁকা ব্যঙ্গচিত্রগুলিতে লক্ষ্য করা যায়। বঙ্গীয় ঘরানার এক বিশিষ্ট চিত্রকর ও ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী হিসাবে এক্ষেত্রে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান অনস্বীকার্য।

ব্যঙ্গচিত্রে সমকালীন সামাজিক প্রতিচ্ছবি : ঔপনিবেশিক সমাজের শিক্ষাব্যবস্থার অসারতা, মন্দিরে পান্ডাদের দৌরাত্ম্য, ব্রাহ্মণশ্রেণীর অত্যাচার, বাল্য বিধবাদের দুরবস্থা, বাঙালি মধ্যবিত্তদের ইংরেজপ্রীতি ইত্যাদি গগনেন্দ্রনাথ তাঁর কার্টুন চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তিনি তৎকালীন সমাজের বর্ণবৈষম্যের ভয়াবহতা ‘জাতাসুর’ নামক ব্যঙ্গচিত্রে দেখিয়েছেন।

বিভিন্ন ব্যঙ্গচিত্র : ‘ অদ্ভুত লোক ‘, ‘ বিরূপ বজ্র ‘, এবং ‘ নয়া হুল্লোড় ‘ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা বিভিন্ন ব্যঙ্গচিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এগুলি ছাড়াও তৎকালীন সমাজে বিদ্যা কারখানা, জাতাসুর, বাগযন্ত্র ইত্যাদিও সারা জাগিয়েছিল।

পাশ্চাত্য ভাবধারার সমালোচনা: গগনেন্দ্রনাথ তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে বিংশ শতকে বাংলার ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত পাশ্চাত্য সংস্কৃতির  অনুরাগী বাঙালি সমাজের কঠোর সমালোচনা করেন।

শুধুমাত্র বাংলার নয় পুরো ভারতবর্ষেই গগণেন্দ্রণাথ একজন চিত্রশিল্পী হিসাবে ব্যঙ্গচিত্রের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আদতে তিনি নারীর প্রতি কুদৃষ্টি সম্পন্ন ও নিম্ন রুচির মানুষের কঠোর সমালোচনা করেছেন তার ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে।

৫. ভারতের জাতীয়তাবাদের উপর বর্তমান ভারত গ্রন্থটির প্রভাব আলোচনা কর।

অথবা, 

জাতীয়তাবাদের উন্মেষে বর্তমান ভারত গ্রন্থের ভূমিকা লেখ।

অথবা, 

স্বামী বিবেকানন্দ রচিত বর্তমান ভারত গ্রন্থটির অবদান লেখ।

উত্তর: সূচনা: শুধু ভারতবর্ষেই নয় বিশ্বদরবারের  এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হল স্বামী বিবেকানন্দ। তিনিই ছিলেন ভারতের জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, তাঁর লেখা বর্তমান ভারত গ্রন্থটি ভারতবাসীর মধ্যে স্বদেশপ্রেম জাগরিত করে নবভারত গঠনে এক বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।

জাতীয়তাবাদ উন্মেষে বর্তমান ভারত:

স্বদেশপ্রেমে জাগরণ: সমস্ত দেশবাসীকে দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলতে বর্তমান ভারত গ্রন্থের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই গ্রন্থের স্বামীজি স্বদেশ মন্ত্রে লিখেছেন – ” বল ভাই……ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ, আমার কল্যাণ…।” এই বাণীর মাধ্যমেই স্বামীজি দেশবাসীর মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলেন।

আত্মনির্ভরশীল হাওয়া: বর্তমান ভারত গ্রন্থে স্বামীজি ভারতবাসীকে আত্মনির্ভর শীলতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে সকল কাপুরুষতা দুর করে আত্মশক্তি ও আত্নবল লাভের কথা বলেছেন, তিনি বিদেশি সংস্কৃতি বর্জন এবং প্রাচ্যের সাংস্কৃতিক রীতিনীতি অনুসরণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন এই গ্রন্থে।

সৌভাতৃত্বের সঞ্চার: বর্তমান ভারত গ্রন্থে স্বামীজি সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব পরিবেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে লিখেছেন – ” বল ভারতবাসী, প্রতিটি ভারতবাসী আমার ভাই। বল মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র কাঙাল ভারতবাসী, ব্রাহ্মন ভারতবাসী মার ভাই।” অর্থাৎ সকল ভারতবাসীর মধ্যে ভাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন।

৬. কিভাবে জাতীয়তাবাদী মনোভাব বিস্তারে আনন্দমঠ উপন্যাসটি সাহায্য  করেছিল।

অথবা, 

ভারতীয় জাতীয়তাবোধ বিস্তারে আনন্দমঠ উপন্যাসের ভূমিকা সম্পর্কে যা জান লেখ।

উত্তর: সূচনা: ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনে যে সকল সাহিত্যিক ভারতে জাতীয়তাবাদী পটভূমি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে অন্যতম। স্বদেশপ্রেমের গীতি নামে পরিচিত বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসটি তৎকালীন ভারতে জাতীয়তাবাদী মনোভাব বিকাশে অবিস্মরণীয় ভূমিকা নিয়েছিল।

পটভূমি: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১১৭৬ বঙ্গাব্দের ৭৬রের মনন্ত্বর নামক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে আনন্দমঠ উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন।

আনন্দমঠের  উদ্দেশ্য: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশ প্রেম জাগিয়ে তুলে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটাতে ছেয়েছিলেন এবং দেশবাসীকে তিনি ব্রিটিশ শাসনের বেড়াজাল থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন আনন্দমঠ উপন্যাসটি রচনার মধ্যে দিয়ে।

ব্রিটিশ শাসনের দূর্দশার চিত্র: এই উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র পরাধীন ভারত মাতার দূর্দশার চিত্র তৎকালীন ভারতবাসীর সামনে তুলে ধরেন এবং স্বৈরাচারী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

দেশমাতার আদর্শ: এই উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন – ” দেশমাতা হলেন মা, দেশপ্রেম হল ধর্ম, দেশ সেবা হল পূজা।”

বন্দেমাতরম সঙ্গীত: এই উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল বন্দেমাতরম সঙ্গীত যা তৎকালীন পরাধীন ভারতের বিপ্লবীদের মন্ত্র ছিল। ১৯০৭ সালে মাদাম ভিখাজি রুস্তম কামা রূপায়িত ভারতবর্ষের জাতীয় পতাকায় এই ধ্বনি স্থান পেয়েছে।

স্ববিরোধিতা: এই উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র জানিয়েছেন যে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বসস্ত্র বিপ্লব, ডাকাতি, দস্যুবৃত্তি হল অমঙ্গলের নামান্তর।

সন্তানদল: বঙ্কিমচন্দ্র আনন্দমঠ উপন্যাসে সন্তানদলকে দেশমাতার সেবায় নিয়োজিত প্রাণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

যখন ব্রিটিশ সরকারের সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক অর্থনীতি ভারতীয়দের কাছে নগ্ন ভাবে প্রতিয়মান হয় তখন ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদী পরিবেশ সৃষ্টিতে এবং ভারতবাসীকে জাতীয়তাবাদী মন্ত্রে দীক্ষিত করতে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসটির অবদান অনস্বীকার্য।

৭. দেশপ্রেম বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্র ও বিবেকানন্দের ভূমিকা সম্পর্কে লেখ।

অথবা, 

আনন্দমঠ উপন্যাস ও বর্তমান ভারত গ্রন্থ কিভাবে জাতীয়তাবাদী মনোভাব বিস্তারে সহায়ক হয়েছিল তা লেখ।

উত্তর: সূচনা: ১৯ শতকে ভারতবাসীর নেতৃত্বে ভারতীয় মুক্তি সংগ্রামের মানসিক ক্ষেত্র প্রস্তুতিতে যে সকল ব্যাক্তিদের অবদান অনস্বীকার্য তাদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বামী বিবেকানন্দ হলেন অন্যতম।

বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর আনন্দমঠ উপন্যাসে ও বিবেকানন্দ তাঁর বর্তমান ভারত গ্রন্থের মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী মনোভাব বিস্তার করে সমগ্র ভারতবাসীকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করেতুলেছিলেন তাদের লেখনীর দ্বারা।

বঙ্কিমচন্দ্র ও আনন্দমঠ উপন্যাস:

পটভূমি: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১১৭৬ বঙ্গাব্দের ৭৬রের মনন্ত্বর নামক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে আনন্দমঠ উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন।

আনন্দমঠের  উদ্দেশ্য: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশ প্রেম জাগিয়ে তুলে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটাতে ছেয়েছিলেন এবং দেশবাসীকে তিনি ব্রিটিশ শাসনের বেড়াজাল থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন আনন্দমঠ উপন্যাসটি রচনার মধ্যে দিয়ে

ব্রিটিশ শাসনের দূর্দশার চিত্র: এই উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র পরাধীন ভারত মাতার দূর্দশার চিত্র তৎকালীন ভারতবাসীর সামনে তুলে ধরেন এবং স্বৈরাচারী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

দেশমাতার আদর্শ: এই উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন – ” দেশমাতা হলেন মা, দেশপ্রেম হল ধর্ম, দেশ সেবা হল পূজা।”

বন্দেমাতরম সঙ্গীত: এই উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল বন্দেমাতরম সঙ্গীত যা তৎকালীন পরাধীন ভারতের বিপ্লবীদের মন্ত্র ছিল। ১৯০৭ সালে মাদাম ভিখাজি রুস্তম কামা রূপায়িত ভারতবর্ষের জাতীয় পতাকায় এই ধ্বনি স্থান পেয়েছে।

বিবেকানন্দ ও বর্তমান ভারত গ্রন্থ:

স্বদেশপ্রেমে জাগরণ: সমস্ত দেশবাসীকে দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলতে বর্তমান ভারত গ্রন্থের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই গ্রন্থের স্বামীজি স্বদেশ মন্ত্রে লিখেছেন – ” বল ভাই……ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ, আমার কল্যাণ…।” এই বাণীর মাধ্যমেই স্বামীজি দেশবাসীর মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলেন।

আত্মনির্ভরশীল হাওয়া: বর্তমান ভারত গ্রন্থে স্বামীজি ভারতবাসীকে আত্মনির্ভরশীলতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে সকল কাপুরুষতা দুর করে আত্মশক্তি ও আত্নবল লাভের কথা বলেছেন, তিনি বিদেশি সংস্কৃতি বর্জন এবং প্রাচ্যের সাংস্কৃতিক রীতিনীতি অনুসরণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন এই গ্রন্থে।

সৌভাতৃত্বের সঞ্চার: বর্তমান ভারত গ্রন্থে স্বামীজি সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব পরিবেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে লিখেছেন – ” বল ভারতবাসী, প্রতিটি ভারতবাসী আমার ভাই। বল মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র কাঙাল ভারতবাসী, ব্রাহ্মন ভারতবাসী মার ভাই।” অর্থাৎ সকল ভারতবাসীর মধ্যে ভাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন।

৮. ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ সম্পর্কে লেখ। 

অথবা,

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে ঘিরে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যে মতপার্থক্য রয়েছে তার সম্পর্কে লেখ।

উত্তর: সূচনা: বাংলার ব্যারাকপুরের সেনা প্রশিক্ষণ শিবিরে সিপাহীদের নেতৃত্বে ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহ শুরু হয়। এই বিদ্রোহ খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে ফলে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এই বিদ্রোহে যোগদান করে।

এর ফলে সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা মতপার্থক্য দেখা দেয়। এই আন্দোলনে প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষ যোগদান করায় ব্রিটিশ শাসনের ভীত কেঁপে উঠেছিল।

সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃতি: কিছু ঐইতিহাসিক ও গবেষকদের মতে এই বিদ্রোহ কেবল মাত্র সিপাহীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁদের মতামত ছিল –

সামন্ত বিদ্রোহ:  ড: রমেশচন্দ্র মজুমদার, রজনীপাম দত্ত, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ ঐতিহাসিক মনেকরেন  ১৮৫৭ সালের এই বিদ্রোহ ছিল সামন্ততান্ত্রিক  প্রতিক্রিয়া কারণ বিভিন্ন ক্ষমতাচ্যুত শাসকেরা যেমন রবি লক্ষীবাই ,নানা সাহেব, তাঁতিয়া টোপি প্রমুখ এই বিদ্রোহে সামিল হন।

ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ: বিনায়োক দামোদর সভাকর ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসাবে আখ্যাহিত করেছেন যদিও বেশিরভাগ ঐতিহাসিক এর সাথে অমত কারণ না ছিল বিদ্রোহের কোনো স্থির লক্ষ্য, না এই বিদ্রোহের ফলে ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল তাছাড়াও অনেক ভারতীয় রাজা, শিখ ও গোর্খা সৈনদের সাহায্য করেছিলেন।

গণবিদ্রহ: ডান কে, সি.এ. বেইলি প্রমুখের মতে ১৮৫৭ সালের এই বিদ্রোহ ছিল গণবিদ্রোহ কারণ সিপাহীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও এই বিদ্রোহে যোগদান এই বিদ্রোহকে গণবিদ্রোহে পরিণত করেছিল। এছাড়াও কানপুর, অযোধ্যা, ঝাঁসি ইত্যাদি অঞ্চলেও এই বিদ্রোহের প্রভাব পড়ে।

সিপাহী বিদ্রোহ: ভারত সচিব আর্ল স্ট্যানলি তাঁর প্রতিবেদনে এই বিদ্রোহকে ‘ Sepoy Mutiny’ বলে উল্লেখ করেছেন, এক্ষেত্রে তাঁর মত হল সিপাহীরা বিদ্রোহের সূচনা করলেও দেশের সকল শ্রেণীর মানুষ বিশেষত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী যোগদান করেনি তাছাড়াও এই বিদ্রোহের মুলে কোন রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ছিল না।

জাতীয় বিদ্রোহ: ডিসরেলি, আউটরাম, নর্টন, ডাফ প্রমুখেরা এই বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করেছেন, তাঁদের মতে সিপাহী নেতৃত্ব ছাড়াও বিহার, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি স্থানে স্থানীয় রাজা এবং জমিদারেরা এই বিদ্রোহে যোগদান করেন এবং দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ভারতের সম্রাট হিসাবে ঘোষণা করে বিদেশি শাসন থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল।

মহাবিদ্রোহ : এই বিদ্রোহের ব্যাপকতা লক্ষ্য করে ভারতের বেশ কিছু জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক এই বিদ্রোহকে মহাবিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছিলেন। এরিক স্ট্রেকস বলেছেন ভারতে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে স্বসস্ত্র আন্দোলনের শেষ অধ্যায় ছিল ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ।

মূল্যায়ন: যদিও ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের মূল কারণ ছিল সিপাহীদের অসন্তোষ তবুও এই বিদ্রোহের মূলে ছিল বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের গভীর অসন্তোষ ও হতাশা। অধ্যাপক রণজিৎ গুহ, গৌতম ভদ্র প্রমুখ বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি থাকা সত্বেও এই আন্দোলনের গণ চরিত্রের  উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

৯. ভারতীয় জাতীয়তাবোধের বিকাশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোরা উপন্যাসের অবদান কি ছিল?

অথবা, 

গোরা উপন্যাসে ভারতের জাতীয়তাবোধ বিকাশে কি ভূমিকা নিয়েছিল?

উত্তর: সূচনা: ১৯ শতকে জাতীয়তাবাদ বিস্তারে ভারতের যেসব উপন্যাস মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোরা উপন্যাস ছিল অন্যতম। তৎকালীন ভারতীয় সমাজের অসাম্প্রদায়িক বাতাবরণে ভারতমাতার এক চিরন্তন বাণী এই উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উল্লেখ করেছেন।

প্রকৃত ভারতের রূপ: এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গোরা তৎকালীন গ্রাম্য সমাজের সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখের খোঁজ নিতে গিয়ে সত্যিকারের ভারতীয় সমাজের রূপ চিনতে পেরেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের মতে যাছিল উদার প্রেমভিত্তিক বিশ্বমানবতার আদর্শ।

গোরার আঘাত: তৎকালীন সহুরে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের চেয়ে পল্লিসমাজের সামাজিক বন্ধন যে অনেক তীব্র তা গোরা উপলব্ধি করেছিলেন। তৎকালীন কুসংস্কার যে গ্রাম্য সমাজের বিভাজন তৈরি করে তা তিনি স্পষ্ট করেছেন এবং এইরূপ সমাজের উপর তীব্র আঘাতও হেনেছেন।

জাতীয়তাবাদ বিকাশে: জাতপাতের গণ্ডি যে জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেমকে আবদ্ধ করে রাখতে পারেনা বরং তা অসাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণের মধ্যে দিয়ে জাতীয়তাবাদকেই উদ্বুদ্ধ করতে সহায়ক হয়ে ওঠে, গোরা উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়।

উদারতার প্রতিফলন: ব্রাম্হ সমাজ ও হিন্দু সমাজের মধ্যে বিরোধিতাকে তুলে ধরতে গিয়ে গোরা উপন্যাসটির কিছু অংশে হিন্দুসমাজের উদারতা ও তার দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে।

ধর্মীয় পরিচয়ের গুরুত্ব হিনতা: ধর্মীয় পরিচয়ই যে সবথেকে বড়ো পরিচয় নয় সেকথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোরা উপন্যাসের মাধ্যমে স্পষ্ট করে তুলে ধরে বাঙালি সমাজকে বোঝাতে চেয়েছিলেন।

আক্রমণের বিরোধিতা: গোরা উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গোরা সুপ্রাচীন ভারতের সভ্যতার উৎকর্ষে মুগ্ধ হয়ে সংকল্প করে যে স্বদেশের প্রতি দেশবাসীর শ্রদ্ধা সে ফিরিয়ে আনবেই তবেই অন্য কাজ। হিন্দু সভ্যতা বিরোধী মিশনারীর বিরুদ্ধে সে সম্মুখ বির্তকে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।

বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসের হিংসাত্মক জাতীয়তাবাদ সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের পছন্দ হয়নি, কিছু ঐতিহাসিকের মতে তারই প্রতিবাদে যেন গোরা উপন্যাসের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ আন্তর্জাতিকতাবাদের মাধ্যমে ভারতবর্ষের মিল দেখিয়েছেন।

১০. ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে কি ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলাযায়? উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর: সূচনা: ১৮৫৭ সালে সিপাহীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া বিদ্রোহ খুব কম সময়ের মধ্যে সারা ভারতবর্ষে বিস্তার লাভ করে। এই বিদ্রোহের তীব্রতা ও প্রসার লক্ষ্য করেই বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন নামকরণ করেছেন।

যেমন – বিপ্লবী বীনায়ক দামোদর সভাকর  ‘ দ্যা ইন্ডিয়ান ওয়ার অফ ইনডিপেন্ডেন্স’ গ্রন্থে এই বিদ্রোহকে ” ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ” বলে উল্লেখ করেন।

পক্ষে মতামত: যে সমস্ত ব্যাক্তিবর্গ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে মনে করেন তাঁদের মতে –

প্রথমত, বেশ কিছু পণ্ডিতের মতানুসারে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের সূচনা সিপাহীরা করলেও তা শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা যুদ্ধে উন্নীত হয়েছিল, এটিই ছিল ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সমস্ত ভারতবাসীর প্রতিবাদ।

দ্বিতীয়ত, সভারকর বলেছেন – সিপাহীদের নেতৃত্বে ভারতিয়রা স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে অগ্রসর হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এরকম বড়ো ব্রিটিশ বিরোধী গণ-আন্দোলন ভারতে এর আগে আর হয়নি।

তৃতীয়ত, ড: সুশোভন সরকার বলেন, ১৮৫৭ সলায়ের বিদ্রোহকে মুক্তিযুদ্ধ না বলা অযৌক্তিক তাঁর মতে, যদি ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে জাতীয় সংগ্রাম বলে স্বীকার করা না হয় তাহলে ইতালির মুক্তি যুদ্ধ বলে সেখানকার কর্বনারী আন্দোলনকেও স্বীকার করা যাবে না।

চতুর্থত: ‘1857 in Our History’ নামক প্রবন্ধটিতে পি.সি যোশী ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে সমর্থন জানিয়েছেন।

পঞ্চমত, লন্ডনে আয়োজিত সিপাহী বিদ্রোহের এক স্বরণসভায় ভারতীয় বিপ্লবীরা একে স্বাধীনতার যুদ্ধ বলেছেন কারণ সিপাহী বিদ্রোহ সিপাহীদের দ্বারা শুরু হলেও তা কেবলমাত্র সিপাহীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই বিদ্রোহে ব্রিটিশ বিরোধী স্লোগান তুলেছিলেন।

ষষ্ঠত, ১৮৫৭ সালে সিপাহিবিদ্রহকে কার্ল মার্ক্সও জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন।

মন্তব্য: ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে মেনে না নিলেও বলা যায় যে এর পরবর্তীকালের আন্দোলন গুলি এই বিদ্রোহ থেকেই অনুপ্রাণিত হয় এই কারণে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

error: Content is protected !!
Scroll to Top

আজকেই কেনো পরীক্ষার শর্ট নোটস

এখন সহজে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও – আজকেই ডাউনলোড করো পিডিএফ বা বই অর্ডার করো আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকে