fbpx

অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – Obhibyakti O Obhijojon – Chapter 4 Life Science Jibon Bigyan WBBSE Madhyamik Class 10

অভিব্যক্তি:

অভিব্যক্তি :  অভিব্যক্তি বা বিবর্তন হল সেই মন্থর এবং ধারাবাহিক গতিশীল প্রক্রিয়া  যাহার সাহায্যে সরলতম উদবংশীয় জীব থেকে  বিভিন্ন পরিবর্তনের দ্বারা  (মূলত জিনের পরিবর্তন  এবং  যৌন জননের  মাধ্যমে)  বিভিন্ন  ধরনের উন্নত জটিল জীবের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

অভিব্যক্তির ধারনা
জটিল জীবের উৎপত্তি ঘটেছে সরল এককোষী জীবের মন্থর গতিশীল এবং পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের দ্বারা  যা  হতে কোটি কোটি বছর সময় লেগেছে। যুগে যুগে আমাদের এই পৃথিবীর আবহাওয়া এবং গঠন পরিবর্তিত হয়েছে।

সেই পরিবর্তন অনুযায়ী সরল জীবদেহও  বিভিন্ন রূপে পরিবর্তিত হয়েছে। এই পরিবর্তন  এই যুগেও বিদ্যমান এবং ইহা ভবিষ্যৎকালে চলতে থাকবে।  ইহার কোন অন্ত নেই যুগ-যুগান্ত ধরে ইহা চলে আসছে এবং চলে যাবে।  জীবের এই পরিবর্তনকেই আমরা বিবর্তন অথবা জৈব অভিব্যক্তি  বলে থাকি।

এই অভিব্যক্তি বা জৈব বিবর্তনের  ধারণা  জীব বিদ্যার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ  জীবের সৃষ্টির ইতিহাস এই অভিব্যক্তির মধ্যেই লুকিয়ে আছে।

জীবনের উৎপত্তিঃ
বিজ্ঞানী হ্যালডেন এবং ওপারিন ধারণা দিয়েছিলেন যে আদিম পৃথিবী যখন অক্সিজেন বিহীন অবস্থায় ছিল তখন অধিক তাপমাত্রায়,  আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি এবং বিদ্যুৎ ক্ষরণের প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের অজৈব অনু যেমন NH3 , H2O, CH4ইত্যাদি পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন জটিল জৈব অণু গঠন করে থাকে।  ইহার ধারণা তারা দিলেও পরবর্তীকালে তা প্রমাণ করেন বিজ্ঞানী হ্যারল্ড উরে এবং স্ট্যানলে মিলার।

মিলার ও উরের পরীক্ষা:

Miller–Urey experiment - Simple English Wikipedia, the free encyclopedia


পরীক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্রসমূহের বর্ণনাঃ
বিজ্ঞানী মিলার এবং ঊরে 1953 সালে একটি পাঁচ লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গোল কাচপাত্রে দুটি টাংস্টেন ইলেকট্রোড যুক্ত করে ফ্লাক্সটিকে একটি ঘনীভবন যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করেন যাহাতে দুটি নল উপস্থিত আছে। একটি নল দিয়ে ঠান্ডা জল প্রবেশ করে, এবং অন্যটি দিয়ে গরম জল বেরিয়ে যায়। যন্ত্রটিতে ঘনীভবন যন্ত্রের পরে একটি ‘U’ আকৃতির নল আটকান আছে। ইহার দ্বারা মাধ্যমে পরীক্ষায় উৎপন্ন পদার্থ সমূহ জমা হতে পারে। এরপরে একটি ছোটো ফ্লাক্স আছে যাকে নলের সাহায্যে বড়ো ফ্লাকটির সঙ্গে সংযুক্ত করা আছে।

পরীক্ষা :
পরীক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্রটির বড়ো ফ্লাক্সটিতে মিথেন, অ্যামোনিয়া, এবং হাইড্রোজেনকে 2:2:1 অনুপাতে নিয়ে তাহার সাথে  ছোট ফ্লাক্স থেকে ফুটন্ত জলের জলীয় বাষ্পকে  প্রেরণ করা হয়।  ইহার পর ওই গ্যাসীয় মিশ্রণটিকে বিচ্ছুরিত তড়িৎ-এর মধ্য দিয়ে অনবরত চালনা করা হয়ে থাকে। এই বিচ্ছুরিত তড়িৎ বজ্রপাতের সময় বিদুৎক্ষরণের ন্যায় কাজ করে থাকে। এরপর ওই বড়ো ফ্লাস্কটি থেকে নির্গত গ্যাসীয়  পদার্থকে ঠান্ডা জলের মধ্য দিয়ে চালনা করলে, তা ঘণীভূত হয়ে পড়ে। ঘনীভূত করা হয় এবং ওই ঘনীভূত তরলকে আবার তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে উত্তপ্ত করে, বাষ্পীভূত করা হয় এবং ওই বাষ্প কে আবার বিচ্ছুরিত তড়িৎ এর মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। এই পদ্ধতিটি টানা এক সপ্তাহ ধরে চালানো হয়।

পর্যবেক্ষণ :
ঘনীভবন যন্ত্রের ‘U’ আকৃতির নলে  এক সপ্তাহ ধরে জমা হওয়া যৌগগুলিকে ক্রোমাটোগ্রাফিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়।শনাক্তকরণের পর  লক্ষ্য করা যায় ঘনীভূত তরলে  ফর্ম্যালডিহাইড এবং কার্বক্সিলিক অ্যাসিড, গ্লাইসিন, গ্লুটামিক অ্যাসিড, অ্যালানিন,,ইত্যাদি উপস্থিত রয়েছে।

● সিদ্ধান্ত : বিভিন্ন অজৈব পদার্থ থেকে জৈব পদার্থের  উৎপত্তি ঘটেছে। অর্থাৎ, ইহা প্রমাণিত হল যে আদিম পৃথিবতে অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে  অতিবেগুনিরশ্মি, তাপশক্তি, এবং তড়িৎশক্তির ও UV রশ্মির প্রভাবে বিভিন্ন অজৈব যৌগ থেকে জটিলযৌগ যেমন NH3 , H2O, CH4প্রভৃতি উৎপন্ন হয়ে থাকে যাহা সগরে তরল, গরম স্যুপ সৃষ্টি করে থাকে ও ওই গরম তরল স্যুপ থেকেই কোয়াসারভেট এবং জীবনের উৎপত্তি।

অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাসমূহ:

পৃথিবীর সৃষ্টির পরের মুহূর্ত থেকেই,  বহু ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে জীবের  উৎপত্তি ঘটেছে।

পর্যায়অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাসমূহ
পৃথিবীর সৃষ্টিপৃথিবী যখন সৃষ্টি হয়েছিল  ইহার উষ্ণতা প্রায়  6000 ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিল। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে পৃথিবী  ঠান্ডা হতে থাকে। আরো পরবর্তীকালে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হতে থাকে এবং বৃষ্টিপাত শুরু হয়।  ধীরে ধীরে পৃথিবীপৃষ্ঠে গড়ে ওঠে সমুদ্র।  তখন পৃথিবীপৃষ্ঠে জলীয়বাষ্প, অ্যামোনিয়া,  মিথেন ইত্যাদি গ্যাস উপস্থিত থাকলেও অক্সিজেনের চিহ্নমাত্র ছিলনা।   তখনকার পৃথিবীর পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ বিজারন ধর্মী।
জীবনের উৎপত্তি আদিম পৃথিবীর পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন ও জৈব গ্যাস গুলি মিলিত হয়ে রাসায়নিক বিবর্তনের মাধ্যমে জৈব পদার্থ সৃষ্টি করে।ইহার ফলে তৈরি হয়,  মাইক্রোস্ফিয়ার, কোয়াসারভেট, এবং নিউক্লিক অ্যাসিড। RNA  হল সর্বপ্রথম সৃষ্ট নিউক্লিক অ্যাসিড।  পরবর্তীকালে এই RNA থেকেি DNA এর  উৎপত্তি ঘটে। পর্দাবেষ্টিত নিউক্লিওপ্রোটিনযুক্ত কোয়াসারভেটই হল সেই প্রাথমিক কোশ যা প্রথম জীবনরূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল।
এককোষী প্রাণীর উৎপত্তি এই প্রাথমিক কোশ থেকেই প্রথমে আদি প্রোক্যারিওটিক কোশ এবং পরবর্তীকালে প্রোক্যারিওটিক কোশের সৃষ্টি হয়। এই প্রাথমিক কোশগুলি ছিল মূলত অবায়ুজীবী প্রকৃতির এবং এগুলি ছিল রাসায়নিক পরভোজী।  পরবর্তীকালে বিবর্তনের মাধ্যমে সালফার ব্যাকটেরিয়ার মতো অবায়ুজীবী সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়া  উৎপত্তি ঘটে থাকে।
সায়ানো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অক্সিজেন ত্যাগপৃথিবীতে সর্বপ্রথম অক্সিজেন এর উৎপত্তি হয় প্রায় 3.5 বিলিয়ন বছর আগে সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলাভ সবুজ শৈবালের সালোকসংশ্লেষের দ্বারা। যাহার ফলে পৃথিবীতে সৃষ্টি হয় জারকীয় পরিবেশ। অন্যদিকে ওজোন স্তর ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি কে শোষণ করে নেওয়ায় পৃথিবীতে গড়ে ওঠে বসবাসযোগ্য এক অনুকূল পরিবেশ।
বহুকোষী জীবের উৎপত্তি প্রোক্যারিওটিক কোষ থেকে ইউক্যারিওটিক কোষ উৎপত্তির পেছনে রয়েছে মিথোজীবীতা (এন্ডোসিমবায়োসিস)  এবং ইনভ্যাজিনেশনের  অন্যতম অবদান। কোন এককোশী জীবের বিভাজনের ফলে  সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন অপত্য কোশগুলি একে অপরের থেকে আলাদা না হওয়ার কারণবশত অথবা এককোশী জীবের কলোনি  তৈরীর দ্বারা বহুকোশী জীবের  সৃষ্টি হয়েছে।
মাছের মত মেরুদন্ডী প্রাণী গুলির উৎপত্তি পরবর্তীকালে বিভিন্ন বহুকোষী জীব থেকে উৎপত্তি হয়ে থাকে  বিভিন্ন পরভোজী প্রাণী। প্রথমে  উৎপত্তি হয় স্পঞ্জ জাতীয় প্রাণীর।  তারপর ধীরে ধীরে  উৎপত্তি হয় আর্থ্রোপোডা, নিডারিয়া, অ্যানিলিডা,মোলাক্কা জাতীয় অমেরুদণ্ডী প্রাণী সমূহের। তারামাছ জাতীয় একাইনোডার্মাটা হল অমেরুদণ্ডীদের মধ্যে সবশেষে আবির্ভূত প্রাণী। অমেরুদণ্ডীর পর ধীরে ধীরে বিবর্তনের দ্বারা মেরুদণ্ডী প্রাণীদের আবির্ভাব হয়ে থাকে। চোয়ালবিহীন সাইক্লোস্টোমাটা গোষ্ঠীকে মেরুদণ্ডীর মধ্যে সর্বপ্রথম লক্ষ্য করা যায় । এরপর  ক্রমাগত বিবর্তনের দ্বারা চোয়ালযুক্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের উদ্ভব ঘটে।  এবং ইহার মধ্যে সর্বপ্রথম মৎস্য জাতীয় প্রাণীর  আবির্ভাব লক্ষ্য করা যায়।
স্থল  অঞ্চলে উদ্ভিদের উৎপত্তি বহুকোশী উদ্ভিদের উদ্ভব সরল প্রকৃতির উদ্ভিদ থেকেই ঘটেছে। প্রথম দিকে থ্যালোফাইটা জাতীয় শ্যাওলার উৎপত্তি  ঘটে। যা থেকে  পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে বিবর্তনের দ্বারা মস জাতীয় উদ্ভিদের উৎপত্তি হয়। ইহার পরবর্তী পর্যায়ে ধীরে ধীরে  বিভিন্ন বিবর্তনের মাধ্যমে  উৎপত্তি হয় মূল, কাণ্ড এবং পাতাযুক্ত ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদের।ফার্ন হল প্রথম ডাঙার উদ্ভিদ। পরবর্তীকালে সপুষ্পক উদ্ভিদের  আবির্ভাব ঘটে, যাহা দুটি  পর্যায়ে হয়েছিল। প্রথম  পর্যায়ে সৃষ্টি হয় পাইন  গাছের মতো বিভিন্ন ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের; পরে  উৎপত্তি হয় বিভিন্ন গুপ্তবীজী উদ্ভিদের। ব্যক্তবীজীদের ফুল ও বীজ থাকলেও এদের ফল হয় না। কিন্তু গুপ্তবীজী উদ্ভিদের ফুল, ফল ও বীজ  সবকিছুই উৎপন্ন হয়। গুপ্তবীজী উদ্ভিদের আগমনে দুটি পর্যায়ে হয়ে থাকে যথা একবীজপত্রী এবং দ্বিবীজপত্রী।
চার পা বিশিষ্ট মেরুদন্ডী প্রাণীদের আবির্ভাবউভচর প্রাণীর ডানায় আবির্ভাব ঘটে সিলাকান্থ নামক মাছ থেকেই।  এরপর এরা স্থলভাগে অভিযোজিত হয়। উভচরের পরবর্তীকালে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে। এই সরীসৃপ প্রাণী হল  স্থলভাগের প্রধান প্রথম প্রাণী। এরপর উদ্ভব হয় পক্ষী শ্রেণীর  এবং সর্বশেষে  স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবির্ভাব লক্ষ্য করা যায়। পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী আবির্ভাব সরীসৃপ প্রাণী থেকে হয়েছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে মানুষের আবির্ভাব  সবথেকে শেষে।

জৈব অভিব্যক্তির মতবাদঃ
ল্যামার্ক এবং পরবর্তীকালে ডারউইন জৈব অভিব্যক্তি অর্থাৎ নতুন প্রজন্মের সৃষ্টি সম্পর্কে তাদের মতবাদ প্রকাশ করে থাকেন।
ল্যামার্কের জৈব অভিব্যক্তি সম্পর্কিত মতবাদঃ

জৈব অভিব্যক্তি বা নতুন প্রজাতি সৃষ্টিঃ

1809 সালে ফরাসি বিজ্ঞানী জ্যা ব্যাপটিস্ট ল্যামার্ক, “ফিলোসফিক জুলজিক” নামক গ্রন্থে তার জৈব বিবর্তন সম্পর্কিত মতবাদ প্রকাশ করেন।  তার এই  মতবাদ ল্যামার্কবাদ  নামে খ্যাত।  ইহা নিচে উল্লেখিত কয়েকটি প্রতিপাদ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

প্রতিপাদ্য বিষয়

প্রতিপাদ্য বিষয়সমূহউদাহরণ
পরিবেশের প্রভাবঃ
বিজ্ঞানী ল্যামার্ক জৈব পরিবর্তনে পরিবেশের প্রভাব লক্ষ্য করেন।  তিনি বলেন পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে জীবের দৈহিক এবং স্বাভাব গত পরিবর্তন নিশ্চিত।  একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির জীব বিভিন্ন স্থানে মূলত ভিন্ন পরিবেশে বাস করলে তাদের মধ্যে স্বাভাবিক দৈহিক অভিযোজন এর ফলে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
জিরাফ এর পূর্ব পুরুষের গলা ছোট ছিল।  তাই ছোট গাছের পাতা খেত।  ছোট গাছের পাতা কোন শেষ হতে থাকায় জিরাফের পূর্বপুরুষরা উঁচু গাছের পাতা খাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।  যার ফলে জিরাফের খাদ্যাভাসে বিরাট পরিবর্তন আসে।
জীবের সচেষ্টতাঃ
পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে জীব হলো একটি মুখ্য উপাদান।  তাই পরিবেশের কোন পরিবর্তন ঘটলে তাহার প্রভাব জীবের ওপর পড়ে।  যার ফলে জীব  প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে  ওই পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার।  একেই জীবের সচেষ্টতা বলা হয়।
ছোট জাতীয় গাছের পাতা প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় জিরাফ  তাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় বড় গাছের পাতা খেতে শুরু করে।  তাদের এই  প্রচেষ্টা বহু বংশধরে ঘটতে থাকে।
অঙ্গের ব্যবহার এবং অপব্যবহারঃ
ল্যামার্ক তার মতবাদ উল্লেখ করেছেন যে জীবের  প্রয়োজনে  জীবদেহের যেকোনো নতুন অঙ্গের সৃষ্টি বা কোন  পুরনো মূলত অব্যবহৃত অঙ্গের  বিনাশ ঘটে থাকে।  তার মতে জীব কোন অঙ্গের ব্যবহার যদি প্রতিনিয়ত করে থাকে সেই অঙ্গ বলিষ্ঠ এবং সুগঠিত হয়ে পড়ে।  আবার তারই দেহের যে অঙ্গ সে সহজে ব্যবহার করেনা, সেই অঙ্গ ক্রমে দুর্বল এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে বিলুপ্তির পথে চলে যায়।  ইহাকে ব্যবহার এবং অপব্যবহার এর সূত্র বলা হয়ে থাকে।  ল্যামার্কের মতবাদ অনুসারে  জীবের অঙ্গের ব্যবহার এবং অপব্যবহার  তার দৈহিক পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করে থাকে।
জিরাফের পূর্বপুরুষেরা গাছের পাতা খাওয়ার জন্য তাদের গলার ব্যবহার সর্বাধিক করেছে।  অর্থাৎ জিরাফের গলা প্রতিনিয়ত প্রসারিত হতে থেকেছে।  যার ফলে তাদের গলা ক্রমাগত লম্বা হয়েছে।  ফলতো তাদের দেহাকৃতির পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরনঃ  ল্যামার্ক  তার মতবাদে বলেছেন  কোন জীব নিজের প্রচেষ্টায় তার জীবন কালে যে সকল  বৈশিষ্ট্য অর্জন করে থাকে,  সেই সকল বৈশিষ্ট্য  তার পরবর্তী প্রজন্মের সঞ্চারিত হয়।  ইহাকেই অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন বলা হয়।অধিক ব্যবহারের ফলে জিরাফের পূর্বপুরুষের গলা লম্বা হয়ে যায়।  অর্থাৎ এই লম্বা গলাটি হল  জিরাফের  অর্জিত বৈশিষ্ট্য।  এই বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্ম সঞ্চিত হতে থাকে তাই জিরাফের পরবর্তী প্রজন্ম লম্বা গলা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে।
নতুন প্রজাতির উৎপত্তিঃ
বিজ্ঞানী ল্যামার্ক তার মতবাদে বলেছেন প্রত্যেকটি প্রজন্মে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য জীবেরা অর্জিত করে,  এবং এই সকল অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন এরফলে ওই জীবের  মধ্যে ধীর ধারাবাহিক এবং গতিশীল  পরিবর্তন ক্রমাগত চলতেই থাকে।  ইহার ফলে একটি প্রজাতি থেকে সম্পূর্ণ নতুন একটি অন্য প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে।
প্রত্যেক প্রজন্মের জিরাফের গলা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবার ফলে ছোট গলা যুক্ত জিরাফ থেকে লম্বা গলা যুক্ত  জিরাফের উৎপত্তি ঘটে।

ল্যামার্কবাদের সাপেক্ষে উদাহরণসমূহঃ

  • উটপাখির পূর্বপুরুষদের সক্রিয় ছিল এবং তারা উঠতে সক্ষম ছিল। কিন্তু যেহেতু তারা খুব দৌড়াতে পারত  তারা ক্রমেই তাদের ব্যবহার প্রায় ছেড়ে দেয়।  তাই বর্তমানে উটপাখির দেখে ডানা দুটি লুপ্তপ্রায় অঙ্গ হিসাবে উপস্থিত।
  • সাপের পূর্বপুরুষদের গিরগিটির ন্যায়  চারটি পা উপস্থিত ছিল কিন্তু যেহেতু তারা  গর্তে বসবাস করত,  তারা তাদের ওই পায়ের ব্যবহার প্রায় ছেড়ে দেয়।  যাহার ফলে সাপের পা বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত।

ল্যামার্কবাদের বিপক্ষে উদাহরণসমূহঃ

  •  ড্যাফোডিলা  মাছিকে প্রায় 60 জনু ধরে  ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে রেখে দিলেও তারা তাদের দৃষ্টিশক্তি হারায় নি।  এবং  সদ্য জন্মানো  ড্যাফোডিলা মাছিরও  দৃষ্টিশক্তির  কোন ক্ষতি হয়নি।
  • বিজ্ঞানী ভাইসম্যান  লেজকাটা ইঁদুরের প্রজনন ঘটান।  এবং এই প্রজনন থেকে উৎপন্ন ইঁদুরের তিনি আবার কেটে দেন।  এইভাবে 35 জনু ধরে  তিনি একই কাজ করতে থাকেন কিন্তু সর্বশেষ তিনি লেজকাটা ইঁদুরের জন্ম লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হন।
See also  বিংশ শতকের ভারতের নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ - Bingsho Shotoker Bharoter Nari, Chatro O Prantik Jonogosthir Aandolon : Boishistyo O Bishleshon Class 10 WBBSE Madhyamik Notes

ল্যামার্কবাদের সমালোচনাঃ

ল্যামার্কবাদের  অঙ্গের ব্যবহার এবং অপব্যবহার সম্পর্কিত যুক্তিটি সার্বিকভাবে গৃহীত হলেও অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন এর মতবাদটি  কোনভাবেই  মান্যতা পায় নি।  তার মুখ্য কারণ হলো এই মতবাদের উল্লেখিত অর্জিত বৈশিষ্ট্য জীবের দেহ কোষের পরিবর্তনের নির্দেশ করলেও এই ক্ষেত্রে বংশগতি সূত্রগুলি প্রযোজ্য হয় না।  কেবলমাত্র জনন কোষের পরিবর্তনের ঘটলেই ওই বৈশিষ্ট্য আপাত্য বংশে সঞ্চারিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে।

জৈব অভিব্যক্তি সম্পর্কিত ডারউইনের মতবাদঃ

ল্যামার্কবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রায় ৫0 বছর পর বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন জৈব বিবর্তন সম্পর্কিত তার মতবাদ প্রকাশ করেন।  তিনি মাত্র 22 বছর বয়সে HMS Beagle নামক জাহাজে প্রকৃতিবিদ হিসেবে দীর্ঘ চার বছর ধরে গ্যালাপ্যাগোস দ্বীপপুঞ্জের ভিন্ন ভিন্ন প্রাণী এবং উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ এবং তার গভীর পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।  তার অনেক বছর পর 1869 সালে “On The Origin of Species by means of Natural Selection” গ্রন্থে তিনি তার জৈব বিবর্তন অথবা জৈব অভিব্যক্তি সম্পর্কিত এক মতবাদ প্রকাশ করেন।  সেই যুগান্তকারী মতবাদই বর্তমানে ডারউইনবাদ  অথবা প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ  নামে খ্যাত।এই মতবাদ মূলত পর্যবেক্ষণের দ্বারা প্রাপ্ত  তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠলেও ইহার বিভিন্ন এর বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল-

অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধিঃ
ডারউইনের মতবাদ অনুসারে জীবের অন্যতম সহজাত বৈশিষ্ট্য হলো অত্যধিক হারে বংশ বৃদ্ধি করা।  যাহার ফলপ্রসূ  জীবের সংখ্যা পৃথিবীতে গাণিতিক এবং জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। যেমনঃ একটি স্ত্রী স্যালমন মাছ তার প্রজনন ঋতুতে প্রায় কোটি ডিম পেরে থাকে।  অপরদিকে বিশাল আকৃতির হাতি তাদের জীবন দশায় খুব কম পরিমাণে বাচ্চার জন্ম দেয়। তবে হাতিদের সকল বাচ্চা যদি  সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে পরিণত হাতিতে রূপান্তরিত হয় তাহলে হাতির সংখ্যাও পৃথিবীতে কম কিছু হতো না কিন্তু বাস্তবে ইহা ঘটে না।  তার কারণ হিসেবে ডারউইন সীমিত বাসস্থান এবং  খাদ্যের অভাব এর কথা উল্লেখ করেন।

সীমিত খাদ্য ও বাসস্থানঃ
পৃথিবীপৃষ্ঠে বসবাসযোগ্য স্থান খুবই সীমিত এবং খাদ্যও  অপরিসীম নেই।  তাই  জীবের সংখ্যা  খাদ্য এবং বাসস্থান এর ওপর  পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল।

অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামঃ
পৃথিবীপৃষ্ঠে জীবের সংখ্যা ক্রমাগত জ্যামিতিক এবং গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং খাদ্য এবং বাসস্থান সীমিত পরিমাণে থাকায় প্রত্যেক জীবকে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার জন্য কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।  এই ধরনের সংগ্রামকে চার্লস ডারউইন  তার মতবাদে  ‘অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম’ বলে উল্লেখ করেছেন।  তার মতামত অনুসারে এই সংগ্রাম আবার তিন ধরনের হয়ে থাকে।

 

(i) অন্ত:প্রজাতি সংগ্রাম :
কোন একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির ভিন্ন সদস্যদের  মধ্যে  খাদ্যাভাস এবং বাসস্থান একই প্রকৃতির হওয়ায়,  যখন তাদের সদস্য সংখ্যা বিপুল হারে বৃদ্ধি পায় তখন তাদের  এই খাদ্য এবং বাসস্থানকে নিয়ে নিজেদের মধ্যেই সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। ডারউইন এই জাতীয় সংগ্রামকে অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বা স্বপ্রজাতির সংগ্রাম বলে  অভিহিত করেছেন।  উদাহরণস্বরূপ –  মাঝে মাঝে কোনো একটি হরিণ শিকারের জন্য বাঘেদের নিজেদের মধ্যেই সংগ্রাম লক্ষ্য করা যায়।
(ii) আন্ত:প্রজাতি সংগ্রাম : বিষম প্রজাতির মধ্যে সংগ্রাম  অথবা আস্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম হলো সেই সংগ্রাম যা দুই বা ততোধিক প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।  এই সংগ্রাম গড়ে ওঠে মূলত খাদ্য এবং বাসস্থান কে কেন্দ্র করে। বলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ব্যঞ্জন একদিকে কীটপতঙ্গ খায় অন্যদিকে সাপেরা ওই ব্যাংকে খেয়ে থাকে।  আবার ময়ূর জাতীয় প্রাণী সাপ এবং ব্যাংক উপায় কি খেয়ে থাকে।  এইভাবে খাদ্য খাদ্য সম্পর্কযুক্ত এক গভীর  জীবন সংগ্রাম প্রতিনিয়ত চলতে থাকে বিভিন্ন প্রাণীদের মধ্যে।

(iii) পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম :  বেঁচে থাকার জন্য  সকল  প্রাণীদের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ভূমিকম্প,  খরা,  অগ্নুৎপাত,  বন্যা  ইত্যাদি প্রতিকূল পরিবেশে বিরুদ্ধে  প্রতিনিয়ত সংগ্রাম  চালিয়ে যেতে হয়।  ডারউইন এই জাতীয় সংগ্রামকে  পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।  উদাহরণস্বরূপ বলা যায়  মধ্য এবং উত্তর আমেরিকার কোয়েল পাখি  প্রচণ্ড তুষারপাত এবং ঠান্ডার কারণে পৃথিবী থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

প্রকরণ বা ভেদ :  ডারউইন তার মতবাদ উল্লেখ করেছেন,  এইটিন জাতীয় সংগ্রামের ফলে  জীবদেহে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি হয়ে থাকে যা প্রজননের মাধ্যমে বংশানুক্রমে সঞ্চারিত হয় এবং তা ওই জীবের বৈশিষ্ট্য  হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়ে। আকৃতি এবং আচরণগত এইসকল পার্থক্যেই তিনি  প্রকরণ,  পরিবৃত্তি অথবা ভেদ বলে উল্লেখ করেছেন। যে সকল পরিবৃত্তি  কোন জীবের জীবন সংগ্রামে সাহায্য করে থাকে,  তাকে তিনি অনুকূল পরিবৃত্তি বলে উল্লেখ করেছেন এবং যে সকল পরিবৃত্তি বা প্রকরণ জীবের জীবন দশায় তার  জীবন সংগ্রামে সাহায্য প্রদান করে না, তিনি সেগুলিকে প্রতিকূল প্রকরণ বলে উল্লেখ করেছেন।  ডারউইনের মতবাদ অনুসারে ছোট ছোট ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কোন প্রজাতি সৃষ্টি শুরু হয়ে থাকে।  কোনো আকস্মিক পরিবর্তনে তিনি ‘প্রকৃতির খেলা’,  বলে উল্লেখ করে কোন প্রকার গুরুত্ব প্রদান করেননি।

যোগ্যতমের উদবর্তনঃ
ডারউইনের মতবাদ অনুসারে  যেসকল প্রাণীদের মধ্যে অনুকূল পরিবৃত্তি লক্ষ্য করা যায় তারা বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের  অভিযোজিত করে  তাদের কঠিন জীবন সংগ্রামে  জয়ী হয়ে থাকে। ফলত তারা  এই পৃথিবীতে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়।  অন্যদিকে যেসকল জীবের মধ্যে প্রতিকুল প্রকরণ  লক্ষ্য করা যায় তারা তাদের জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয় এবং তাদের অস্তিত্ব এই পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।  এ ক্ষেত্রে  মনে রাখতে হবে  কোন একটি প্রাণী একটি বিশেষ পরিবেশে বাঁচার অযোগ্য বলে বিবেচিত হলেও অন্য কোন পরিবেশে তারা উপাচার্য হিসেবে বিবেচিত  হতে পারে। যেমন মেরু অঞ্চলের বড়ো লোমওয়ালা কুকুরা ওই অঞ্চলে বসবাসের যোগ্য হলেও পৃথিবীর অন্য যেকোনো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বা অঞ্চলে তারা বসবাসের অযোগ্য।

প্রাকৃতিক নির্বাচন : ডারউইন তার মতবাদে পৃথিবীপৃষ্ঠে বিভিন্ন প্রাণীর সংগ্রামের মাধ্যমে কেবলমাত্র যোগ্যতমের নির্বাচনকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে উল্লেখ করেছেন।  ডারউইনের মতবাদ এর বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয় এর মধ্যে এই প্রতিপাদ্য বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে প্রকৃতি সর্বদা যোগ্যতম কে নির্বাচিত করে থাকে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে যে সকল প্রাণী তাদের অস্তিত্ব রক্ষার অধিকার অর্জন করে তারা এই পৃথিবীতে অধিক সংখ্যায় বেঁচে আছে এবং বংশ বিস্তারের মাধ্যমে তাদের সন্তানরা উত্তরাধিকারসূত্রে বিভিন্ন অর্জিত অনুকূল প্রকরণগুলি  লাভ করে থাকে।

নতুন প্রজাতির সৃষ্টি (Origin of new species) :কোন বিষয়ে  জীব গোষ্ঠী  তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে যদি কোনো অনুকূল প্রকরণের  অধিকার লাভ করে, সেই প্রজাতির উত্তর পুরুষরাই  কেবল টিকে থাকে।  তাদের পূর্বপুরুষরা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।  ফলের একই প্রজাতির দুই পুরুষের মধ্যে  বিরাট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।  এই পার্থক্য যুক্ত  উত্তর পুরুষরাই  নতুন প্রজাতির রূপে গণ্য হয়।

 

ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের তথ্যগুলিকে  নিম্নলিখিত ভাবে উপস্থাপিত করা হয়ে থাকে।

তথ্য সিদ্ধান্ত
কোন জীবের অত্যাধিক সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটলেও তার খাদ্য এবং বাসস্থান খুবই সীমিত।অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জীবের জীবন সংগ্রাম
প্রত্যেক প্রজাতির সংখ্যা প্রায় নির্দিষ্ট। ১) অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম। যথা- অস্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম, আস্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম, পরিবেশের সাথে সংগ্রামযোগ্যতমের উদবর্তন ঘটে এবং অযোগ্যের বিলুপ্তি ঘটে। এবং ইহা প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারাই হয় বলে ডারউইনের মতবাদ কে প্রাকৃতিক নির্বাচন বাদ বলা হয়ে থাকে।
প্রকরণের উপস্থিতি  এবং বংশগতিঃ  যোগ্যতমের উদবর্তন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন,  সহায়ক প্রকরণের পুঞ্জীভবনধীর  এবং ক্রমবর্ধমান বিবর্তনের মাধ্যমে নতুন প্রজাতি সৃষ্টি।

ডারউইনবাদের ত্রুটি সমূহঃ

  • চার্লস ডারউইন বিভিন্ন ছোট ছোট প্রকরণ গুলির উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং লক্ষ্য করা গেছে প্রকৃতপক্ষে ঐসকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র  প্রকরণগুলি জীবের অভিব্যক্তিতে কোন মুখ্য ভূমিকা পালন করে না।
  •  প্রকরণ সৃষ্টির কারণ চার্লস ডারউইন দ্বারা  ব্যাখ্যা করা যায়নি।  তিনি ইহাকে প্রকৃতির খেলা হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
  •  যোগ্যতমের উদবর্তন কিভাবে ঘটে তাও তিনি ব্যাখ্যা করতে অক্ষম।
  •  তিনি জনন কোষ এবং দেহকোষের প্রকরণ গুলি খেয়ে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন নি।

 নয়া-ডারউইনবাদ
বিজ্ঞানী ভাইসম্যান,  গোল্ড স্মিথ এবং হুগো দ্যা ভ্রিস বংশগতি,  কোষ তত্ত্ব,  সুপ্রজননবিদ্যা,  আণবিক জীব বিদ্যা ইত্যাদি থেকে অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা ডারউইনবাদকে  সংশোধিত করে জৈব অভিব্যক্তি পদ্ধতি সম্পর্কে  যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তাহাকে আমরা  নয়া-ডারউইনবাদ অথবা আধুনিক সংশ্লেষবাদ বলে অভিহিত করে থাকি।

অভিব্যক্তি মতবাদ এর সাপেক্ষে প্রমাণসমূহ:
অভিব্যক্তি মতবাদ এর সাপেক্ষে মুখ্য প্রমাণ গুলি হল:

  • জীবাশ্ম ঘটিত প্রমাণ সমূহ এবং
  • তুলনামূলক শারীরস্থান জনিত প্রমাণসমূহ-
  • সমবৃত্তীয় এবং সমসংস্থ অঙ্গজনিত প্রমাণসমূহ
  • নিষ্ক্রিয় অঙ্গজনিত প্রমাণসমূহ
  •  তুলনামূলক ভ্রূণতত্ত্ব জনিত প্রমাণসমূহ।

জীবাশ্ম ঘটিত প্রমাণ সমূহঃ
পৃথিবীপৃষ্ঠে একসময় এমন বহু যুগ ছিল যারা আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।  সেই সকল জীবের অনেকেরই দেহের অংশবিশেষ বা দেহের কোন অংশের প্রস্তরীভূত ছাপ পাওয়া যায়। এই প্রস্তরীভূত ছাপকেই  আমরা জীবাশ্ম বলে থাকি।

জীবাশ্ম : সম্প্রতি লুপ্তপ্রায় পাললিক শিলাস্তরে  অবস্থিত জীবের সম্পূর্ণ প্রস্তরীভূত দেহ অথবা তাদের দেহের কোন অংশ বিশেষের ছাপ যা তাদের অস্তিত্বকে নির্দেশ করে থাকে তাদের আমরা ফসিল বা  জীবাশ্ম বলে থাকি। প্রভুজীববিদ্যা বা Palaeontology হল জীবাশ্ম সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
জীবাশ্মের গুরুত্বসমূহ :

  1. পৃথিবীর বিভিন্ন জটিল জীবের সৃষ্টি যে সরলতম দিক থেকেই হয়েছে তা এই জীবাশ্ম থেকেই জানা সম্ভব হয়েছে।
  2.  এই জীবাশ্মের মাধ্যমেই পৃথিবীতে বর্তমানে উপস্থিত বিভিন্ন জীবের  পূর্বপুরুষ সন্ধান সম্ভব  হয়েছে।
  3.  হৃতযোজক  অথবা মিসিং লিঙ্ক  আবিষ্কার  উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বিবর্তনের ধারা জানা গেছে।

ঘোড়ার বিবর্তন : জীবাশ্ম অভিব্যক্তির সবচেয়ে বলিষ্ঠ প্রমাণ পাওয়া যায় ঘোড়ার বিবর্তন  লক্ষ্য করলে। ওরা ধারাবাহিক বিবর্তনের পর্যায়ক্রমটি হল-  ইওহিপ্পাস → মেসোহিপ্পাস → মেরিচিপ্পাস প্লায়োহিপ্পাস → ইকুয়াস।

ইওহিপ্পাসঃ
এরাই হল ঘোড়াদের আদি পূর্বপুরুষ। ইওসিন যুগে আজ থেকে প্রায় 6 কোটি বছর আগে, উত্তর আমেরিকায় এদের উৎপত্তি।
দেহ : এদের দেহের পৃষ্ঠদেশ ছিল ধনুকের মতো বাঁকা,  এবং এদের গড় উচ্চতা ছিল মাত্র 11 ইঞি।এদের শরীরের থেকে মাথা, গলা এবং পা-গুলি ছিল আকারে ছোটো।
পদ : এদের পশ্চাদপদে তিনটি এবং অগ্রপদে চারটি করে আঙুল ছিল। তৃতীয় আঙুলটি ছিল তুলনামূলকভাবে বড়ো।
দাঁত : এদের  44 টি দাঁত ছিল, এবং দাঁতের চূড়াগুলি ছিল অপেক্ষাকৃত ছোটো  প্রকৃতি  পাহাড় এবং দাঁতের উপরিতলে গোলাকার টিউবারকিল  উপস্থিত ছিল।

মেসোহিপ্পাসঃ

ইওহিপ্পাসদের প্রায় দু-কোটি বছর পর অলিগোসিন যুগে উৎপত্তি হয় মেসোহিপ্পাসদের।
দেহ : এদের গড় উচ্চতা ছিল 24 ইঞ্চি।  দেহের গঠন এদের অনেকটা ছিল বর্তমানের ভেড়ার মত।

পদ : এদের প্রতি পায়ে তিনটি করে আঙুল উপস্থিতি ছিল।  এদেরও আঙুলগুলির মধ্যে তৃতীয়  আঙুলটি ছিল  বাকিদের তুলনায় বড়ো।
দাঁত :  এদের যাতে কোন প্রকার ছেদক না থাকায় অগ্রপেষক এবং কৃন্তক দাঁতের মাঝখানে ডায়াস্টেমা তৈরি হয়। পেষক দাঁতের বা মোলার দাঁতের চূড়া ছোটো  প্রকৃতি হয়,  এবং উভয় চোয়ালের শেষের দুটি অগ্রপেষক পেষক দাঁতের মতো ছিল।

মেরিচিপ্পাসঃ

এদের আবির্ভাব ইওহিপ্পাসের প্রায় এককোটি বছর পর মায়োসিন যুগে হয়েছিল।
দেহ : এদের দেহ অনেকটা গাধার মত আকৃতি বিশিষ্ট ছিল। এদের গড় উচ্চতা ছিল 1 মিটার অথবা 40 ইঞি।
পদ : এদের প্রতি পায়ে তিনটি করে আঙুল উপস্থিত ছিল এবং তাদের মধ্যে মাঝের আঙুলগুলি ছিল  অপেক্ষাকৃত বড়ো  প্রকৃতির। পরবর্তীতে এই আঙুলগুলি সংযুক্ত হয়ে ক্ষুর তৈরি করে  থাকে। এবং পাশের আঙুলগুলি ধীরে  ধীরে বিলুপ্তির পথে গমন করে।  দ্রুতগতিতে দৌড়ানোর জন্য  এদের পাগুলো  অপেক্ষাকৃত লম্বা প্রকৃতির হয়।
দাঁত :  এদের দাঁতের চূড়া লম্বা  প্রকৃতির  ছিল, অর্থাৎ হিপসোডন্ট প্রকৃতির  ছিল। ডায়াস্টেমা  আরো স্পষ্ট হয়,  এবং দাঁতের উপরিতল সমান হতে শুরু করে।

প্লায়োহিপ্পাসঃ 

বিবর্তনের পথ ধরে মেরিচিপ্পাসের প্লিরোসিন যুগে আবির্ভাব হয় প্লায়োহিপ্পাসের।
দেহ : এদের দেহ ছিল মেরিচিপ্পাস অপেক্ষা বলশালী, এবং উচ্চতা ছিল প্রায় 50 ইঞ্চি।
পদ : অগ্রপদ এবং পশ্চাদপদে ক্ষুর  দেখা যায়।এই ক্ষুর তাদের ভয়ে পায়ের তৃতীয় আঙুল থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। অন্য পায়ের দ্বিতীয় ও চতুর্থ আঙুল ছোটো হতে থাকে এবং স্প্লিন্ট হাড় তৈরি করে  থাকে।
দাঁত :  এদের দাঁতের চূড়াগুলি ছিল অনেকটা আধুনিক ঘোড়ার মতো, মোলার দাঁতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।  এদের দন্তবিন্যাস ঘাস চেবানোর জন্য সহায়ক প্রকৃতির ছিল।

See also  CHAPTER 10 - লাভ ও ক্ষতি সংক্রন্ত উপপাদ্য ( Theorem on profit and loss ) WBBSE Class 9 Maths Notes Suggestions

ইকুয়াসঃ
ইহা হলো আধুনিক ঘোড়া। বিজ্ঞানীরা মনে করেন ইহার আগমন প্লায়োহিপ্পাস থেকে প্লিস্টোসিন যুগের মধ্যবর্তী সময়ে।
দেহ : এরা লম্বা গলা যুক্ত এবং বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী এবং এদের গড় উচ্চতা 60 ইঞ্চি।
পদ : এদের প্রত্যেকটি পায়ে ক্ষুর থাকে। স্প্লিন্ট হাড় এদের দ্বিতীয় ও চতুর্থ আঙুল দ্বারা তৈরি হয়।
দাঁত : এদের মোলার দাঁতের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়, দাঁতের চূড়া লম্বা প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং এনামেল দেখা যায়। এদের দাঁত ঘাস চেবানোর পক্ষে খুবই উপযোগী।

তুলনামূলক শারীরস্থান জনিত  প্রমাণ সমূহঃ
বিভিন্ন জীবের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্যের  তুলনামূলক আলোচনাকে  অঙ্গ সংস্থান বলা হয়ে  থাকে।  অন্যদিকে বিভিন্ন প্রাণীর ভেতরে অবস্থিত অঙ্গ সমূহের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্যের  তুলনামূলক আলোচনাকে তুলনামূলক শারীরস্থান  বলা হয়।

  • সমসত্ব এবং সমবৃত্তীয় অঙ্গ সমূহঃ 
  1. সমসংস্থ অঙ্গ:  জীবদেহের যে সকল অঙ্গের  মধ্যে উৎপত্তিগত এবং গঠনগত সাদৃশ্য থাকলেও তাদের মধ্যে কার্যগত  বৈসাদৃশ্য  রয়েছে তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বলা হয়।

প্রাণীর সমসংস্থ অঙ্গঃ  সমসংস্থ অঙ্গের অন্যতম উদাহরণ হল বাদুড়ের ডানা, শীল মাছের প্যাডেল, পাখির ডানা,  ঘোড়ার অগ্রপদ,  তিমির  ফ্লিপার, এবং মানুষের  হাত।

  • উদ্ভিদের সমসংস্থ অঙ্গঃ বিভিন্ন উদ্ভিদের মধ্যেও সমসংস্থ অঙ্গ লক্ষ্য করা যায়। যেমন- ফণিমনসার পর্ণকাণ্ড, ঝুমকোলতার আকর্ষ, আদার গ্রন্থিকাণ্ড, ইত্যাদি।
  • বিভিন্ন প্রাণীদের সমসংস্থ অঙ্গের গঠনগত এবং উৎপত্তিগত সাদৃশ্যসমূহঃ
    সমসংস্থ অঙ্গগুলির বাহ্যিক গঠন আলাদা আলাদা প্রকারের হলেও তাদের অস্থি নির্মিত অভ্যন্তরীণ কাঠামোর মৌলিক গঠন প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে।  ইহার মুখ্য কারণ হলো,  এদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে অঙ্গ গুলি রেডিয়াস আলনা, হিউমেরাস, মেটাকারপাল, কারপাল, এবং ফ্যালানজেস, অস্থি দ্বারা  নির্মিত।
  • বিভিন্ন প্রাণীদের সমসংস্থ অঙ্গের গঠনগত এবং উৎপত্তিগত বৈসাদৃশ্যসমূহঃ

সমসংস্থ অঙ্গের বাহ্যিক গঠনে যে সকল পার্থক্য দেখা যায়,  তা মূলত বিভিন্ন পরিবেশে অভিযোজিত

হওয়ার জন্যই তৈরি হয়েছে।  পাখিদের অগ্রপদ ওড়ার জন্য রূপান্তরিত হয়েছে,  তেমনি দ্রুত জন্য ঘোড়ার

পায়ের আঙ্গুলের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে,  এবং ক্ষুর উৎপন্ন হয়েছে।  একইভাবে জলে সাঁতার কাটার জন্য

তিমির অগ্র পদগুলি ফ্লিপারে রূপান্তরিত হয়েছে।  বিভিন্ন সূক্ষ্ম কাজ করার জন্য  এবং বিভিন্ন বস্তু ধরার

জন্য মানুষের হাতের বুড়ো আঙ্গুলটি অন্যান্য আঙুলগুলি থেকে দূরে সরে অবস্থান করছে।

  • মন্তব্যঃ  সমসংস্থ অঙ্গ গুলিকে পর্যবেক্ষণ করলে উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন মিলগুলি লক্ষ্য করা যায়।  তা থেকে আমরা বলতে পারি যে এই সকল জীবের  সমস্ত অঙ্গ গুলি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। উৎপত্তিগত দিক থেকে অঙ্গগুলি একই ধরনের হলেও,  ভিন্ন পরিবেশে বসবাস করার কারণে তাদের বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটেছে । বিজ্ঞানীরা মনে করেন সমসংস্থ অঙ্গ বিশিষ্ট  প্রাণীদের উৎপত্তি একই পূর্বপুরুষ থেকে হয়েছে।  এবং এই তথ্য  অপসারী বিবর্তনকে সমর্থন করে থাকে।
  • অপসারী বিবর্তনঃ সমসংস্থ অঙ্গ বিশিষ্ট জীব গুলি একই উদবংশীয় জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করার পর,  ভিন্ন পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হওয়ার কারণে, গুলির তাদের যে চেয়ে ভিন্ন ভিন্ন বিবর্তন  লক্ষ্য করা যায়, তাকে অপসারী বিবর্তন বলা হয়ে থাকে।
  1. সমবৃত্তীয় অঙ্গঃ প্রাণীদেহের  যেসব যে সকল অঙ্গের উৎপত্তি এবং গঠন  আলাদা কিন্তু তাদের কাজ এক, তাদের আমরা সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলে থাকি।
  • প্রাণীর সমবৃত্তীয় অঙ্গসমূহ : বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম, পতঙ্গের ডানা, এবং পাখির ডানা সমবৃত্তীয় অঙ্গের অন্যতম উদাহরণ।
  • কার্যগত সাদৃশ্য বা মিলসমূহ : বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম, পতঙ্গের ডানা, এবং পাখির ডানা তাদের মূলত আকাশে উড়তে সাহায্য করে থাকে।
  • উৎপত্তি এবং গঠনগত বৈসাদৃশ্য : বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম হল অগ্রপদ এবং পশ্চাদপদে মধ্যবর্তী স্থানে উপস্থিত চামড়ার প্রসারিত উপবৃদ্ধি। পতঙ্গের ডানা হল তার বহিঃকঙ্কালের রূপান্তরিত রূপ; এবং পাখির ডানা হল তাদের অগ্রপদের এক রুপান্তর মাত্র।
  • মন্তব্য: সুতরাং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে উৎপত্তিগতভাবে আলাদা অঙ্গগুলি ভিন্ন পরিবেশে বাস করার জন্য  একই কাজ সম্পন্ন করছে। এই তথ্য অভিসারী বিবর্তন কে সমর্থন করে থাকে।
  • উদ্ভিদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ : ঝুমকোলতার আকর্ষ এবং মটর গাছের আকর্ষ।
  • কার্যগত সাদৃশ্য আথবা মিল : উভয়ই দুর্বল কাণ্ডযুক্ত উদ্ভিদ হওয়ায় উভয়ের আকর্ষগুলি কোনো না কোন অবলম্বনকে জড়িয়ে ধরে ওই উদ্ভিদকে ওপরের দিকে উঠতে সাহায্য করে থাকে।
  • উৎপত্তি ও গঠনগত পার্থক্য : মটর গাছের আকর্ষ যৌগপত্রের পত্রকের এক রূপান্তর মাত্র। এবং ঝুমকোলতার আকর্ষ হল তার শাখার রূপান্তর মাত্র।
  • মন্তব্য : উদ্ভিদের সমবৃত্তীয় অঙ্গসমূহ হল একইভাবে অভিসারী বিবর্তনকে সমর্থন করে থাকে।
  • অভিসারী বিবর্তন : বাদুড়ের প্যাটাজিয়াম, পতঙ্গ এবং পাখির ডানা প্রাণীকে উড়তে সাহায্য প্রদান করে থাকে। এদের উৎপত্তি আলাদা আলাদাভাবে ঘটলেও কিন্তু কাজ একই, তাই এরা হল সমবৃত্তীয় অঙ্গ। খেচর অভিযোজনের জন্য প্রত্যেকের ডানার উৎপত্তি ঘটেছে। অভিসারী বিবর্তন হল এইপ্রকার অভিযোজনজনিত বিবর্তন।
  1. নিষ্ক্রিয় অঙ্গ : জীবদেহের যেসকল অঙ্গবিশেষ তাদের পূর্বপুরুষের দেহে সক্রিয় অবস্থায় উপস্থিত ছিল ছিল কিন্তু খাদ্যাভাসের পরিবর্তন, এবং পরিবেশগত অভিযোজনের প্রয়োজনে ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কাজের সুবিধার নিরিখে অঙ্গগুলির ব্যবহার ক্রমশ কমতে কমতে, তাদের ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের কার্যকারিতা লোপ পেয়েছে।  তাদেরই আমরা নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলে অভিহিত করে থাকি।

মানুষ, অন্যান্য প্রাণী এবং বিভিন্ন উদ্ভিদের  নিষ্ক্রিয় অঙ্গ সমূহঃ
মানুষের নিষ্ক্রিয় অঙ্গ সমূহঃ
অ্যাপেন্ডিক্সঃ  বিভিন্ন তৃণভোজী প্রাণী যেমন ঘোড়া, গিনিপিগ ইত্যাদিদের অ্যাপেন্ডিক্স একটি সক্রিয় অংশ হিসেবে অবস্থান করলেও মানবদেহে সিরাম এবং সিরাম-সংলগ্ন অ্যাপেন্ডিক্স হল এক লুপ্তপ্রায় অঙ্গ বিশেষ।

কক্সিসঃ এপ, বাঁদর এই জাতীয় প্রাণীদের  প্রাণীদের দেহে কক্সিস হল এক সক্রিয় অঙ্গ।  কিন্তু মানব মানবদেহের মেরুদন্ডের শেষে অবস্থিত চারটি কক্সিজিয়াল কশেরুকা মিলিত হবার ফলে, যে কক্সিস অস্থি টি গঠিত হয়েছে,  সেটি হল এক নিষ্ক্রিয় অঙ্গবিশেষ।

প্লিকা সেমিলুনারিসঃ ইহা হল মানুষের চোখের কোনায় অবস্থিত লাল রঙের এক ক্ষুদ্র মাংসল অংশবিশেষ, যা একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কিন্তু  ইহা মাছ এবং ব্যাঙ জাতীয় প্রাণীদের দেহে অবস্থিত সক্রিয় নিকটিটেটিং পর্দা।

বহিঃকর্ণের পেশি : ছাগল অথবা গরুর বহিঃকর্ণ অথবা কর্ণছত্রের পেশি হল একটি সক্রিয় অংশ,  অন্যদিকে মানুষের বহিঃকর্ণের পেশী নিষ্ক্রিয় প্রকৃতির হওয়ায়, মানুষ তা নাড়াতে অক্ষম।

মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর নিষ্ক্রিয় অঙ্গসমূহঃ
এমু পাখি, উটপাখির  ডানার উড্ডয়ন পেশী হল একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ অপরদিকে এই নিষ্ক্রিয় অঙ্গ টি হল বিভিন্ন উড়ন্ত পাখির এক অন্যতম সক্রিয় অঙ্গ।

সাপের পা একটি মৃতপ্রায় অঙ্গ,  কিন্তু সাপের পূর্বপুরুষদের এবং গোসাপের দেহে বর্তমানেও চারটি পা লক্ষ্য করা যায়।

উদ্ভিদের মধ্যে বিভিন্ন নিষ্ক্রিয় অঙ্গসমূহঃ 

হলুদ,  আদা এবং  আলু জাতীয় উদ্ভিদের ভূনিম্নস্থ কান্ডের শঙ্কপত্র একটি  নিষ্ক্রিয় অঙ্গ।  অপরদিকে বিভিন্ন সপুষ্পক উদ্ভিদের পাতা  একটি সক্রিয় অংশ বিশেষ।

কালকাসুন্দার স্ট্যামিনোড বা পুংকেশর একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ  অপরদিকে  সপুষ্পক উভলিঙ্গ ফুলের ক্ষেত্রে  পুংকেশর একটি সক্রিয় অংশ।

মন্তব্যঃ  বিভিন্ন  লুপ্তপ্রায় অঙ্গ থেকে  আমরা প্রমাণ  করতে পারি যে, উদ্বংশীয় জীবে যে সকল অঙ্গগুলি সক্রিয় ছিল সেগুলি তার পরবর্তী বংশধরদের দেহে ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে লুপ্তপ্রায় বা নিষ্ক্রিয় অঙ্গে রূপান্তরিত হয়েছে। অর্থাৎ, নিষ্ক্রিয় অঙ্গবিশিষ্ট জীবেরা, সক্রিয় অঙ্গবিশিষ্ট উদ্বংশীয় জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই তথ্যও জৈব বিবর্তনকে সমর্থন করে থাকে।
মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ডের গঠন :
মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণির প্রাণীর কোনো একটি বিশেষ অঙ্গের গঠনকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে  লক্ষ্য করা যায় যে, বিভিন্ন শ্রেণিতে ওই অঙ্গটির গঠনগত জটিলতা বিভিন্ন রকমের হলেও তার মূল কাঠামোটি একই প্রকারের।
মূলত দুটি প্রকোষ্ঠ দ্বারা প্রত্যেক মেরুদণ্ডী শ্রেণির প্রাণীর হৃৎপিণ্ড গঠিত হয়ে থাকে। যথাঃ ১) অলিন্দ বা রক্তগ্রহণকারী প্রকোষ্ঠ, ২) নিলয় বা রক্ত প্রেরণকারী প্রকোষ্ঠ।
সারাদেহের রক্ত অলিন্দে সংগৃহীত হয় অপরদিকে নিলয় থেকে রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন মেরুদণ্ডী শ্রেণির প্রাণীর হৃৎপিণ্ডের গঠন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।  যেমনঃ

  1. মাছ : দুটি প্রকোষ্ঠযুক্ত মাছের হূৎপিণ্ডে একটি অলিন্দ এবং একটি নিলয় থাকে। গঠনগতভাবে মাছের হৃৎপিণ্ড খুবই সরল প্রকৃতির হয়। মাছের হৃৎপিণ্ডের মধ্য দিয়ে কেবল অধিক কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্ত সংবাহিত হয়ে থাকে, যাহা জলে বসবাসের পক্ষে  সাহায্যকারী এবংউপযুক্ত।
  2. উভচর : উভচরদের হৃৎপিণ্ডে তিনটি প্রকোষ্ঠ  উপস্থিত থাকে। যথাঃ ডান অলিন্দ, বাম অলিন্দ  এবং একটি নিলয়। মাছ অপেক্ষা উভচরদের হৃৎপিণ্ড কিছুটা উন্নতমানের।  কিন্তু এদের নিলয়ে অধিক  কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্তের সাথে বিশুদ্ধ রক্ত অর্থাৎ অক্সিজেন যুক্ত রক্তের মিশ্রণ ঘটে থাকে।
  3. সরীসৃপ : উভচরের তুলনায় সরীসৃপের হৃৎপিণ্ডটি কিছুটা উন্নতমানের হয়ে থাকে। সরীসৃপদের হৃৎপিণ্ডটি অসম্পূর্ণভাবে চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত হয়ে থাকে। ডান অলিন্দ, বাম অলিন্দ এবং নিলয়টি অসম্পূর্ণভাবে বিভক্ত অবস্থায় থাকে। নিলয়ে অসম্পূর্ণ প্রাচীর উপস্থিত থাকায় বিশুদ্ধ এবং দূষিত রক্তের মিশ্রণ আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে থাকে। সরীসৃপদের মধ্যে কেবলমাত্র কুমীরের হৃৎপিণ্ডটি চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত।

পাখি এবং স্তন্যপায়ী  প্রাণী: এদের হৃৎপিণ্ডটি সম্পূর্ণরূপে চারটি প্রকোেষ্ঠযুক্ত হয়ে থাকে। যথা—দুটি অলিন্দ  এবং দুটি নিলয়।  এদের হৃৎপিণ্ডের নিলয়ে  বিশুদ্ধ রক্ত এবং দূষিত রক্তের মধ্যে কোনরূপ মিশ্রণ ঘটে না।
এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, হৃৎপিণ্ডের মৌলিক গঠন বা কাঠামো সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীর ক্ষেত্রে একই, কেবলমাত্র ইহার গঠনগত জটিলতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিভিন্ন জীবের বিপাকক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে প্রত্যেকটি অঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের সরবরাহতার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলত হৃৎপিণ্ডের গঠনগত জটিলতা ক্রমশ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মাছ জলে বসবাস করায় এদের বিপাকক্রিয়ার হার সর্বনিম্ন, তাই এদের হৃৎপিণ্ড খুবই সরল প্রকৃতির হয়ে থাকে। উভচর ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর  বিপাকক্রিয়া তুলনামূলকভাবে মাছেদের থেকে বেশি হওয়ায়, এদের হৃৎপিণ্ডটি গঠনগতভাবে বেশি জটিল প্রকৃতির এবং হৃদপিন্ডের অলিন্দে বিশুদ্ধ এবং দূষিত রক্ত পৃথক পৃথক ভাবে অবস্থান থাকে। স্তন্যপায়ীর এবং পাখিদের বিপাকের হার সর্ব্বোচ্চ হওয়ায় এদের হৃৎপিণ্ডও গঠনগতভাবে অধিক খুবই জটিল এবং সকল অঙ্গে সর্বাধিক অক্সিজেনযুক্ত রক্ত দ্রুত সরবরাহের জন্য অলিন্দ ও নিলয়ে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত এবং কার্বন ডাই অক্সাইডযুক্ত রক্ত পৃথকভাবে আবস্থান করে থাকে।

মন্তব্য: বিপাক হারের জটিলতা অনুযায়ী, মাছ থেকে শুরু করে স্তন্যপায়ী প্রাণী পর্যন্ত  হৃদপিণ্ডের গঠন ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীর হৃৎপিণ্ডের মৌলিক গঠন কাঠামো এক জাতীয় হওয়ায় ইহা সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীদের একই উদবংশীয় জীব থেকে আবির্ভূত হওয়াকেই নির্দেশ করে থাকে। জৈব বিবর্তনের মাধ্যমেই সরল গঠনযুক্ত  হৃদপিণ্ড থেকে জটিল কাঠামো যুক্ত হৃৎপিণ্ড গড়ে উঠেছে।

তুলনামূলক ভ্রূণতত্ত্ব জনিত প্রমাণসমূহ:
যৌন জননের দ্বারা সৃষ্ট জাইগোেট, এবং তা থেকে সৃষ্ট ভ্রূণের পরিস্ফুরণ এবং পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় পরিণত হওয়ার ঘটনাবলিকেই ভ্রূণবিদ্যা বা ভ্রূণতত্ত্ব বলা হয়। ভ্রূণের পরিস্ফুরণের ধারাবাহিক এবং পর্যায়ক্রমিক ঘটনাসমূহ হল- ব্যক্তিজনি, জাতিজনি, ইত্যাদি।

বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর ভ্রূণের উৎপত্তি এবং গঠনগত কাঠামোর তুলনামূলক আলোচনা করলে লক্ষ্য করা যায় যে,  তাদের মধ্যে বহু সাদৃশ্য বর্তমান। বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর ভ্রূণের প্রথম অবস্থায় এত সাদৃশ্য উপস্থিত থাকে যে, তা থেকে এই সারাংশে উপনীত হওয়া যায় যে এরা সকলেই একই উদ্বংশীয় জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।যেমনঃ

  1. জার্মস্তর : বহুকোশী প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রথমে জাইগোট থেকে মরুলা, তা থেকে ব্রান্টুলা ও পরবর্তী কালে তা থেকে গ্যাস্টুলার উৎপত্তি হয়।
    নিডারিয়া এবং টিনেফোরা পর্বের প্রাণীদের গ্যাস্ট্রলায় এক্টোডার্ম ও এন্ডোডার্ম নামক দুটি স্তর এবং প্ল্যাটিহেলমিনথিস থেকে কর্ডাটা পর্যন্ত সকলপ্রকার প্রাণীর গ্যাস্ট্রলায় এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম নামক তিনটি স্তর উপস্থিত থাকে। এগুলি হল প্রাথমিক জার্মস্তর। পরবর্তীতে ইহা থেকেই দেহের বিভিন্ন অঙ্গের উৎপত্তি ঘটে থাকে। ভ্রূণের প্রথমিক অবস্থার পরিস্ফুটনের এইসকল সাদৃশ্য  প্রমাণ করে থাকে যে,  এরা একই উদবংশীয় জীব থেকে উৎপন্ন হয়েছে। ভ্রূণের প্রথম অবস্থায় বিভিন্ন সাধারণ লক্ষণ গুলির  প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় এবং তারপর  ইহার বৃদ্ধির সাথে সাথে  অন্যান্য লক্ষনগুলি  স্পষ্ট হতে থাকে।
    এবং সর্বশেষে ওই প্রজাতির বিশেষ লক্ষণগুলির প্রকাশ ঘটে। ইহার ফলে ভ্রূণগুলিকে আলাদা আলাদা করে শনাক্ত করা সম্ভবপর হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়ঃ ভ্রূণের  পরিস্ফুটনে  সময়কালে পাখি এবং স্তন্যপায়ী জাতীয় প্রাণীদের ভ্রূণে  মাছ,  উভচর ও  সরীসৃপেরদের  বৈশিষ্ট্য  লক্ষ্য করা যায়।
    ইহা প্রমাণ করে যে  সকল মেরুদন্ডী  প্রাণীদের মাছ জাতীয় কোন পূর্বপুরুষ,   এবং  সকল প্রকার পাখি এবং প্রাণীরা  সরীসৃপ জাতীয় কোন পূর্বপুরুষ থেকে  উৎপত্তি লাভ করেছে।
  2. গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ এবং ফুলকা থলি : নোটোকর্ডের উপস্থিতি; গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ এবং অন্তস্থ যুগ্ম ফুলকা থলি হল সকলপ্রকার কর্ডাটা প্রাণীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আদি কর্ডাটাতে এই সকল বস্তুর গঠনগুলি পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় লক্ষ্য করা যেত। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় মাছ জাতিয় প্রানির গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ, ফুলকায় রূপান্তরিত হয়েছে এবং তা  তাদের শ্বাসকার্যে মুখ্য সহায়তা প্রদান করে থাকে।উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী এবংস্তন্যপায়ী প্রাণীদের ফুসফুস শ্বাসকার্যে সাহায্য প্রদান করে থাকে। তবুও তাদের ভ্রণে গলবিলীয় ফুলকা খাঁজ এবং ফুলকা থলির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় এবং তা পরবর্তীকালে অদৃশ্য বা  অন্য কোন  শারীরিক বস্তুতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। মানুষের ভ্রূণের পরিস্ফূরণের সময়ও মাছ, উভচর, সরীসৃপ এবং পক্ষী জাতিয় প্রানির বহু বৈশিষ্ট্যসমূহ অতিঅল্প সময়ের জন্য হলেও লক্ষ্য করা যায়। সুতারাং উচ্চশ্রেণির মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রূণের পরিস্ফূরণের সময়ও নিম্নশ্রেণীর পূর্ণাঙ্গ মেরুদণ্ডী প্রাণীর বহু বৈশিষ্ট্যের পুনরাবির্ভাব ঘটে থাকে।
See also  সম্পাদ্য - Sompaddo - Class 10 WBBSE Maths Notes Suggestions Madhyamik

লেজর মায়োটোম পেশির সদৃশঃ আমরা সকলে জানি মাছের লেজে মায়োটোম পেশি উপস্থিত থাকে। ব্যাঙের লার্ভা, ব্যাঙাচির লেজ, মানুষের প্রাথমিক ভূণে, লেজের মতো যে অংশ উপস্থিত থাকে,  তাতেও খণ্ডকের ন্যায় সজ্জিত মায়োটোম পেশিখণ্ড  লক্ষ্য করা যায়। যদিও পরে  প্রাণীগুলি পরিণত হলে ওই লেজ বা লেজের মতো অংশের  বিলুপ্তি ঘটে।

বিভিন্ন মেরুদণ্ডী শ্রেণির ভ্রুণের এইসকল সাদৃশ্য লক্ষ করার পর বিজ্ঞানী ভন বেয়ার 1828 সালে কতকগুলি সূত্র প্রণয়ন করে থাকেন। সেই সূত্র গুলিকে পরবর্তীকালে 1866 সালে আর্নেস্ট হেকেল নামক এক জার্মান বিজ্ঞানী, রিক্যাপিচুলেশন থিয়োরি বা বায়োজেনেটিক সূত্র রূপে প্রবর্তন করেন। সূত্রটি হলঃ “ব্যক্তিজনি জাতিজনির পুনরাবৃত্তি ঘটায়”। অর্থাৎ  কোন প্রাণীর  ভ্রূণের পরিস্ফুটন এর সময় কালে  তার পূর্বপুরুষের ভ্রূণের পরিস্ফুটন এর ঘটনাবলীর  ধাপে ধাপে পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে।  পরবর্তীকালে দেখা গেছে বিজ্ঞানী হেকেলের মতবাদটি  পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়।  কারণ কোন কোন প্রাণীর ভ্রূণের বৃদ্ধির সময়  নিম্নশ্রেণির  পূর্ণবয়স্ক প্রাণীর সাথে কোনরূপ মিল থাকে না,  বরং তাদের  ভ্রূণের সাথে মিল লক্ষ্য করা যায়।

 সিদ্ধান্তসমূহঃ বিভিন্ন প্রাণীর পরিণত অবস্থায় যে সকল অঙ্গের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় না, সেই সকল অঙ্গকে তার ভ্রূণের মধ্যে লক্ষ্য করার অন্যতম কারণ হলো সকল প্রকার মেরুদন্ডী প্রাণী একই পূর্বপুরুষ থেকে উৎপন্ন হয়েছে এবং ওই পূর্বপুরুষের ভ্রূণের পরিণত হবার পদ্ধতি,  প্রত্যেক মেরুদন্ডী প্রাণী উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেছে।

বেঁচে থাকার কৌশল – অভিযোজন

ল্যামার্কের তত্ত্ব থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের সাথে সাথে জীবের ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রূপান্তর বা পরিবর্তন ঘটে থাকে।  অর্থাৎ পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জীব প্রতিনিয়ত তার পরিবর্তন ঘটাতে থাকে।  জীবের এই জাতীয় পরিবর্তনকেই আমরা অভিযোজন বলে অভিহিত করি।

আচরণ ও অভিযোজনঃ
খুব সহজ ভাষায় আমরা বলতে পারি অন্য একটি প্রাণী  যা যা করে থাকে তাই হলো তার আচরণ।  যেমন মৌমাছির চাক তৈরি করে  তার খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে, পিপিলিকারা  সারিবদ্ধ ভাবে চলাচল করে,  পাখিরা উঠতে পারে,  অন্যদিকে মাছেরা জলে সাঁতার কাটতে পারে,  ইত্যাদি আচরণ ওই সকল প্রাণীদের  জনন প্রক্রিয়ায়  এবং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায়  সাহায্য।  এর মধ্যে কিছু কিছু আচরণ প্রাণীরা জন্মগতভাবে লাভ করে এবং কিছু কিছু আচরণ অভ্যাসের মাধ্যমে লব্ধ করে থাকে।

আচরণঃ পরিবেশের প্রভাবে অথবা অন্য কোন জীবের অনুকরণ করে কোন একটি জীব তার স্নায়ুতন্ত্রের, নিয়ন্ত্রণে যে শিখন নির্ভর কার্য সম্পাদন করে থাকে, তাকেই ওই জীবটির আচরণ বলা হয়ে থাকে। পরিবেশগত প্রভাবকগুলি  বিভিন্ন রকমের হতে পারে যেমনঃ  চাপ, তাপ, গন্ধ, শব্দ, ইত্যাদি।

অভিযোজনঃ  কোন একটি সুনির্দিষ্ট পরিবেশের নিজের অস্তিত্ব রক্ষা এবং জনন কার্য সম্পন্ন করার জন্য ওই পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কোন জীবের অঙ্গসংস্থানগত,  শারীরবৃত্তীয়, গঠনগত আচরনে এসকল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তাকেই অভিযোজন বলা হয়।

অভিযোজনের উদাহরণসমূহঃ
অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজনঃ  কোন প্রাণী  তার নিজ দেহের যেসকল বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গের  পরিবর্তন  ঘটিয়ে,  নিজেকে  ওই পরিবেশের সাথে অভিযোজিত করে,  তাকেই অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন  বলা হয়ে থাকে।
ক্যাকটাসের পাতাঃ  ফনিমনসা, বাজবরণ, তেসিরা মনসা, ইত্যাদি ক্যাকটাস জাতীয় গাছের পাতার প্রধান অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য সমূহ হলোঃ

ক্যাকটাসের পাতার বৈশিষ্ট্য গুলিঅভিযোজনগত গুরুত্বসমূহ
ক্যাকটাস জাতীয় গাছের পাতা গুণী পুনমের আস্তরণ দ্বারা আবৃত অবস্থায় থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এদের পাতাগুলি কাঁটায় রূপান্তরিত হয়।আত্মরক্ষাঃ  ক্যাকটাস জাতীয় গাছের কাঁটা গুলি তাদের আত্মরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বাষ্প মোচন রোধঃ  এই জাতীয় উদ্ভিদ  মূলত মরুভূমি অঞ্চলে জন্মায়।  তাই বাষ্পমোচন এর মাধ্যমে জলের অপচয় রোধ করার জন্য কাঁটাগুলির  উৎপত্তি।


রুই মাছের পটকাঃ
জলে বসবাস করার জন্য রুই মাছের পটকা হল তার এক  অভিযোজিত বৈশিষ্ট্য। রুই মাছের পটকার অভিযোজনগত গুরুত্ব গুলি হলঃ

 

রুই মাছের পটকার বৈশিষ্ট্যঅভিযোজনগত গুরুত্ব
দুই প্রকোষ্ঠ যুক্ত  পটকা,  রুই মাছের উদর  গহবরে  অবস্থিত। অগ্র প্রকোষ্ঠের রেড গ্রন্থি এবং পশ্চাৎপ্রদেশের রেটিয়া

মিরাবিলিয়া নামক রক্তজালক উপস্থিত থাকে।

ভরকেন্দ্রঃ মাছের পটকার এক প্রকোষ্ঠ থেকে গ্যাস অন্যপ্রকাশ স্থানান্তরিত করে দেহের ভারসাম্য এবং ভরকেন্দ্র বজায় রাখা।  ইহা মাছের গমনে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে থাকে।
শ্বসনঃ রুই মাছের  পটকার অগ্র প্রকোষ্ঠে অক্সিজেন গ্যাস  উপস্থিত  থাকায়  ইহা  মাছের শ্বসনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে  থাকে।

পায়রার বায়ুথলিঃ
বায়োবীয় পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য পায়রার একটি অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য হলো তার বায়ুথলি।

বায়ুথলির বৈশিষ্ট্যসমূহ  অভিযোগগত  গুরুত্ব সমূহ
  1. পায়রার দেহে  নয়টি  প্রধান বায়ুথলি এবং চারটি অতিরিক্ত বায়ু থলি উপস্থিত থাকে।
  2. এগুলি পাতলা প্রাকার যুক্ত হয়ে থাকে এবং এতে কোনরূপ  রক্তবাহ উপস্থিত থাকে না
  1. এই বায়ুথলি গুলি হাপরের মতো কাজ করে থাকে।  তাই বায়ু ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে এবং ফুসফুস থেকে সম্পূর্ণভাবে নির্ভর হতে পারে। এই বায়ুথলির বায়ু পায়রাকে দ্বিশসনের সহায়তা প্রদান করে থাকে
  2.  এই বায়ুথলিগুলি অনেকটা বেলুনের মত কাজ করে থাকে। এগুলি বায়ুশূন্য থাকলে পায়রা দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমে যায়,  যা থাকে  বায়ুতে সহজে ভাসতে সাহায্য করে থাকে।
  3.  বায়ুথলি গুলি  পায়রার দেহে দুই পাশে এমনভাবে সাজানো থাকে,  যে  পায়রা দেহের ভরকেন্দ্র  সঠিকভাবে স্থাপিত হতে পারে।

শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনসমূহঃ
পরিবেশের  এর পরই সাথে তাল  মিলিয়ে  বিভিন্ন জীব যে সকল শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপে  পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে,  যাতে তার অস্তিত্ব  বংশানুক্রমিক টিকে থাকে,  তাকেই শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন বলা হয়ে থাকে।
সুন্দরী গাছের লবণ সহ্য করার জন্য শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন সমূহঃ
সুন্দরী গাছের ক্ষেত্রে আমরা নিম্নলিখিত অভিযোজনগুলোকে লক্ষ্য করতে পারি।  যেমন-

  • জলের দ্বারা শোষিত লবণ পাতার লবণগ্রন্থি এবং মূলের দ্বারা গাছের দেহ থেকে বার করে দেবার মাধ্যমে লবণের বিষক্রিয়া থেকে উদ্ভিদকে রক্ষা করা।
  • কচিপাতার থেকে পরিণত পাতাতে অধিক লবণ জমা থাকে। এবং পাতাটি ঝরে পড়ার আগে পর্যন্ত ওই পাতায় লবণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। অর্থাৎ সুন্দরী গাছের পাতা ঝরে যাওয়ার মাধ্যমেও লবণ তাদের দেহ থেকে বার করে থাকে।

সুন্দরী গাছের কোশগুলির ভ্যাকুওল কোশের প্রায় 90 শতাংশ জায়গা দখল করে অবস্থান করে। ভ্যাকুওলের কোশরসে এই উদ্ভিদরা লবণ জমা রেখে কোশের অন্যান্য অংশকে বিষক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে থাকে।

মরু অভিযোজনের নিরিখে উঠের অতিরিক্ত জল সহনের ক্ষমতা এবং তাদের RBC র আকৃতিঃ

আমরা সকলেই জানি উঠ সাধারণত মরু অঞ্চলে থাকে। তাই জল সংরক্ষণের জন্য এদের যেসব অভিযোজন লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল-

  • উটের পিঠে যে কুঁজ আছে তাতে সে জল সঞ্চয় করে রাখে না এতে সে চর্বি জমা করে। এই চর্বি জারিত হলে বিপাকীয় জল উৎপন্ন হয়ে থাকে এবং এই জল তার শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। এই জারণ ক্রিয়ায় ফলে  নির্গত শক্তি উটের নানাবিধ শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। একটি উট প্রায় 7 দিন জল না খেয়ে থাকতে পারে।
  • উটের ত্বক পুরু জাতীয় হওয়ায়  এবং তাদেরও ত্বকে ঘর্মগ্রন্থির সংখ্যা কম থাকায় এদের ঘাম নিঃসৃত না হওয়ায় দেহে জলের সংরক্ষণ ঘটে থাকে।
  •  নিশ্বাস বায়ুর মধ্য দিয়ে নির্গত জলীয় বাষ্প উট তার বহিঃনাসারন্ধ্রের মাধ্যমে পুনরায় শুষে নেয়, এতে এদের দেহের জলের অভাব পূরণ হয়ে থাকে।
  • অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো উটের দেহতাপমাত্রা নির্দিষ্ট থাকে না। উট তার দেহতাপমাত্রা 34 ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে 41.7   ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে পরিবর্তন করতে সক্ষম।পারে।
  • উটের নেফ্রনের দীর্ঘ হেনলি লুপে প্রচুর পরিমাণে জল শোষিত হওয়ায় এদের দেহে প্রচুর পরিমাণে জল সংরক্ষিত হয়ে থাকে এবং তা ঘন সিরাপের মতো অবস্থান করায়  এদের কম পরিমাণে মূত্র নির্গত হয়।
  • উটের মল অত্যন্ত শক্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং এতে জলীয় অংশ প্রায় অনুপস্থিত।
  • এদের রক্তে অ্যালবুমিন থাকার কারণে এদের রক্তে জলের পরিমাণ কখনো কমে না।

উটের RBC:

উটের RBC নিউক্লিয়াসবিহীন হয়, এবং এই RBC-র মধ্যে জল প্রবেশ করলেও RBC-র হিমোলাইসিস ঘটে না। ইহার মুখ্য কারণ হল উটের RBC প্রায় 240 শতাংশ প্রসারিত হতে পারে। উটের দেহে জলা প্রয়োজন হলে এই RBC মধ্যস্থ জল  তা পূরণ  করে থাকে থাকে।

আচরণগত অভিযোজনসমূহ:
একসাথে বসবাস করার সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হল একজন  অপর জনের কাছ থেকে আচরণ  সহজেই শিখতে পারে। অনেক প্রাণী আছে  যারা মানুষের সঙ্গে  বসবাস  করতে  মানুষের  বহু আচরণকে  তারা  নিজদের  করে নিয়েছে।যেমন-

  • শিম্পাঞ্জীদের সমস্যা এবং সমাধানঃ
    বন্য শিম্পাঞ্জীরাও বহু ক্ষেত্রেই অবিকল মানুষের মতো আচরণ করে থাকে।  মানুষের আচরণগুলি কেবলমাত্র দেখার মাধ্যমে তারা খুব অল্পসময়ের মধ্যে শিখে নিয়েছে এবং নিজেদের  বিভিন্ন সমস্যাগুলিকে তারা খুব সহজেই সমাধান  করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়ঃ

    • মানুষেরা শাবল জাতীয় কোন শক্ত বস্তুর দ্বারা মাটি খুঁড়ে থাকে। অন্যরূপে শিম্পাঞ্জিরা  উইপোকার ঢিবিতে  কাঠি ঢুকিয়ে  উইপোকা বার করে সেগুলোকে ভক্ষণ করে।
    • মানুষেরা যেমন হাতুড়ি সাহায্যে কোন কিছু  ভাঙতে পারে,  অনুরূপ শিম্পাঞ্জি পাথরের সাহায্যে  বাদামের খোলা ছাড়িয়ে বাদাম খেয়ে থাকে।
    • শিম্পাঞ্জিরা গাছের ডালে  গাছের পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করে,  তাতে  নিদ্রা গ্রহণ করে।

মৌমাছিদের  বার্তা প্রদানঃ
মৌমাছিরা হল একটি সমাজবদ্ধ জীব। স্কাউট কর্মী মৌমাছিরা খাদ্যের সন্ধান করে থাকে এবং ফোরেজার কর্মী মৌমাছিরা মূলত খাদ্যসংগ্রহের কাজটি করে। কোন খাদ্যের সন্ধান পেলে স্কাউট মৌমাছিরা মৌচাকের সামনে ভিন্ন ভিন্ন নাচের ভঙ্গির মাধ্যমে মৌচাকের অন্য কর্মী মৌমাছিদের কাছে সংকেত প্রেরণ করে থাকে।
এদের নাচের ভঙ্গি দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা- ওয়াগটেল নৃত্য এবং চক্রাকার নৃত্য। মৌমাছিরা মৌচাকের সামনে কোন্ ভঙ্গিতে, কতক্ষণ সময় ধরে নাচছে তাহার ওপর নির্ভর করে অন্যান্য কর্মী মৌমাছিরা বুঝতে সক্ষম হয় যে চাকের সাপেক্ষে খাদ্যের অবস্থান কোথায়। শ্রমিক মৌমাছির এই নৃত্যের ভাষা বিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিশ দ্বারা আবিষ্কৃত হয় এবং ইহার জন্য তিনি নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিতও হন।

error: Content is protected !!
Scroll to Top

আজকেই কেনো পরীক্ষার শর্ট নোটস

এখন সহজে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও – আজকেই ডাউনলোড করো পিডিএফ বা বই অর্ডার করো আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকে