পরিবেশ , তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ Chapter 5 Life Science Jibon Bigyan WBBSE Madhyamik Class 10

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল 78.09 শতাংশ নাইট্রোজেন (N2), 20.60 শতাংশ অক্সিজেন , 0.04 শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2), 1.40 শতাংশ জলীয় বাষ্প ও 0.80 শতাংশ অন্যান্য গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে কোনোভাবেই এই পরিমানের কোনো পরিবর্তন হয়না। অর্থাৎ এটা বোঝা যায় যে জীবের সৃষ্টির সময় প্রবেশ করা মৌলগুলি তার মৃত্যুর পর প্রকৃতিতে ফিরে গেলেও তা নিঃশেষ হয়ে যায় না. এই অধ্যায়ে আমরা দেখবো প্রকৃতিতে এই মৌলগুলির আবর্তনচক্র ঠিক কিভাবে কাজ করে।

জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্র: যে চক্রাকার পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে জীবদেহে ও জীবদেহ থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশে রাসায়নিক মৌলগুলির আবর্তন ঘটে তাকে জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্র বলা হয়। এই চক্র মূলত দু-প্রকারের:

১. গ্যাসীয় চক্র: যে চক্রে বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদানসমূহের (যেমন অক্সিজেন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি) জীব ও পরিবেশের মধ্যে অবর্তন ঘটে সেটি হল গ্যাসীয় চক্র।

২. পলল চক্র: পৃথিবীপৃষ্ঠের সঞ্চিত মৌলসমূহ (যেমন ফসফরাস ও সালফার) খুব ধীর গতিতে জীব ও পরিবেশের মধ্যে আবর্তিত হলে তাকে বলা হয় পলল চক্র।

 নাইট্রোজেন চক্র

নাইট্রোজেন চক্রের সংজ্ঞা : যে চক্রাকার পথে বায়ুর মুক্ত নাইট্রোজেন জীবদেহে ও মাটিতে আবদ্ধ হয় এবং মাটির নাইট্রোজেন বা নাইট্রেট বিশ্লিষ্ট হয়ে পুনরায় নাইট্রোজেন গ্যাস হিসেবে বায়ুতে ফিরে সমতা বজায় রাখে তাকে বলা হয় নাইট্রোজেন চক্র।

নাইট্রোজেন চক্রের পর্যায়সমূহ: মোট দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয় নাইট্রোজেন চক্র:

  • পরিবেশ থেকে জীবদেহে নাইট্রোজেনের প্রবেশঃ

১। নাইট্রোজেন আবদ্ধকরন বা স্থিতিকরণ অর্থাৎ নাইট্রোজেন ফিক্সেশন: যে পদ্ধতিতে বায়ুর নাইট্রোজেন নাইট্রেট লবনে পরিবর্তিত হয়ে মাটিতে নাইট্রোজেনের যৌগের পরিমান বাড়ায় তাকে বলা হয় নাইট্রোজেন আবদ্ধকরন বা স্থিতিকরণ। এটির আবার বেশ কয়েকটি ধাপ আছে:

i) প্রাকৃতিক: N2 মূলত সাধারণ তাপমাত্রা ও চাপে কারোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে না। আকাশে বিদ্যুৎক্ষরণ হলে অতিউচ্চ তাপমাত্রায় N2 অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রিক অক্সাইড( NO ) তৈরী করে যেটি আবার অক্সিজেন কর্তৃক জারিত হয়ে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) উৎপন্ন করে. আবার বৃষ্টির জলের সঙ্গে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড বিক্রিয়া করে নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) ও নাইট্রাস অ্যাসিড (HNO2) তৈরী করে. এই নাইট্রিক অ্যাসিড আবার মাটির পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম লবণের সাথে ক্রিয়া করে দ্রবণীয় পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম নাইট্রেট তৈরী করে যা উদ্ভিদ মূল দ্বারা গ্রহণ করতে পারে।

  1. ii) জীবজ: বিভিন্ন প্রোক্যারিয়োটিক জীব (যেমন ব্যাকটেরিয়া ও নীলাভ সবুজ শৈবাল) তাদের দেহে উপস্থিত উৎসেচকের (নাইট্রোজেনেজ) সাহায্যে বায়ুর নাইট্রোজেনকে গ্রহণ করে নাইট্রেট (NOˉ3) ও আমোনিয়াম (NH+4) লবণে পরিবর্তিত করে ও মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমান বাড়ায়।

* সায়ানোব্যাক্টেরিয়া বা নীলাভ সবুজ: এই ধরণের ব্যাকটেরিয়া যেমন নষ্টক, অসিলেটোরিয়া ইত্যাদি হেটেরোসিস্ট নামক কোষে বায়ুর নাইট্রোজেনকে আবদ্ধ করে ও নাইট্রেট লবণে পরিবর্তিত করে।

* স্বাধীনজীবী ও বায়ুজীবী ব্যাকটেরিয়া : অ্যাজোটোব্যাক্টর , ডার্নিয়া , ক্লসট্রিডিয়াম প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া বায়ু থেকে সরাসরি নাইট্রাজেন গ্রহণ করে নিজেদের দেহে নাইট্রোজেন যৌগ বা নাইট্রেট উৎপন্ন করে মাটিতে যুক্ত করে ।

* মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া : শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলের অর্বুদে থাকা ব্যাকটেরিয়া রাইজোবিয়াম ও ব্রাডিরাইজোবিয়াম অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে ( লেগহিমোগ্লোবিন O2 বিহীন পরিবেশ সৃষ্টি করে ) নাইট্রোজেনেজ উৎসেচকের সহায়তায় বায়ুর গ্যাসীয় No- কে অ্যামোনিয়ায় পরিণত করে, যার কিছুটা উদ্ভিদ গ্রহণ করে এবং অ্যামিনো অ্যাসিড তথা প্রোটিন উৎপন্ন করে ও বাকিটা মাটির সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে নাইট্রোজেন যৌগের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ।

N2 + 8eˉ + 8H+ + 16 ATP      2NH3 + H2 + 16 ADP + 16 Pi

N2      N2H2       N2H4        2NH3

নাইট্রোজেন  ডাইঅ্যামাইড  হাইড্রাজিন     অ্যামোনিয়া

iii) শিল্পজাত : বিভিন্ন N2 যুক্ত সার যেমন- ইউরিয়া , অ্যামোনিয়াম সালফেট , অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম নাইট্রেট কৃষি জমিতে দিলে মাটিতে নাইট্রোজেন যৌগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

২। নাইট্রোজেন আত্তীকরণ : উদ্ভিদ মাটির নাইট্রেট গ্রহণ করে উদ্ভিজ্জ প্রােটিন তৈরি করে এবং প্রাণীরা উদ্ভিজ খাদ্য গ্রহণের  মাধ্যমে প্রাণীজ প্রােটিন তৈরি করে । এভাবে জীবের N2 যৌগের সঞ্চয় ঘটে । যাকে নাইট্রোজেন আত্তীকরণ বলে।


  • জীবদেহ থেকে নাহট্রোজেনের পরিবেশে প্রত্যাবর্তন : 

১। অ্যামোনিফিকেশন : যে পদ্ধতিতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত দেহে থাকা প্রোটিন মাটিতে বসবাসকারী কয়েক প্রকার ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে প্রথমে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও পরে অ্যামোনিয়াম ( NH4 ) যৌগে পরিণত হয় তাকে অ্যামোনিফিকেশন বলে এবং উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলিকে বলে অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া । যেমন — ব্যাসিলাস রযামোসাস ( Bacillus ramosus ) ও ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস ( Bacillus mycoides ) ।

অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া

অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া

উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ                                     অ্যামাইনো অ্যাসিড                অ্যামোনিয়াম ( NH4+ ) যৌগ

২। নাইট্রিফিকেশন :  অ্যামোনিয়াম যৌগের নাইট্রেটে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে  নাইট্রিফিশেন বলে ও ব্যাকটেরিয়াগুলিকে বলে নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া । যেমন — নাইট্রোসোমোনাস , নাইট্রোব্যাক্টর , নাইট্রোসিস্টিস ইত্যাদি।

নাইট্রোব্যাকটর

NH4+ + 2O2               NO2ˉ + 2H2O + শক্তি  ;  2NO2ˉ + O2                           2NO3ˉ + শক্তি

৩। ডিনাইট্রিফিকেশন বা নাইট্রোজেন মোচন :  মাটিতে থাকা কয়েক প্রকার ব্যাকটেরিয়া মাটির নাইট্রেট লবণকে যে প্রক্রিয়ায় দ্বারা বিজারিত করে গ্যাসীয় নাইট্রোজেনে পরিণত করে , তাকে ডিনাইট্রিফিকেশন বলে ও ব্যাকটেরিয়াগুলিকে ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া বলে । যেমন— সিউডোমোনাস ও থায়োব্যাসিলাস ।

2HNO3           2HNO3                      N2H202                               N2

নাইট্রেট          নাইট্রাইট           হাইপোনাইট্রাইট

N20

নাইট্রোজেন চক্রের গুরুত্ব : 

  1. নাইট্রোজেন চক্র  পরিবেশে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে থাকে ,
  2. জীবের প্রোটিন , নিউক্লিক অ্যাসিড , উপক্ষার , ক্লোরোফিল , সাইটোপ্লাজম , উৎসেচক , ফাইটোহরমোন ও কিছু ভিটামিন তৈরিতে যে নাইট্রোজেনের প্রয়োজন হয় তা নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমেই জীবদেহে আসে।

মানুষের ক্রিয়াকলাপ ও নাইট্রোজেন চক্র :

  1. অধিক মাত্রায় অ্যামোনিয়াম সালফেট [( NH4 ) 2SO4] সারের ব্যবহার মাটিকে যেমন আম্লিক করে তোলে , তেমনই সোডিয়াম ও পটাশিয়াম নাইট্রেট ( KNO3 ) ব্যবহারে মাটির ক্ষারকীয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে ।
  2. পানীয় জলে থাকা নাইট্রেট পাকস্থলীতে নাইট্রাইট – এ পরিণত হয় ও জৈব অ্যামাইনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে মারাত্মক ক্ষতিকারক , কারসিনোজেন নাইট্রোসামিন উৎপন্ন করে ।
  3. কৃষিজমিতে ব্যবহার করা নাইট্রেট জাতীয় সার মাটির নীচে ভৌমজলে প্রবেশ করে এবং এই নাইট্রেটযুক্ত জল পান করলে নাইট্রেট হিমােগ্লোবিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে মেথহিমোগ্লোবিন নামক যৌগ উৎপন্ন করে যার ফলে হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন পরিবহণ ক্ষমতা কমে যায় , একে বু – বেবি সিনড্রোম বা মেথহিমোগ্লোবিনিমিয়া বলে ।
  4. নাইট্রোজেনের অন্যান্য অক্সাইডগুলি (NO2, NO ) অন্নবৃষ্টি ঘটায় যা বায়ুকে দূষিত করে।
  5. নাইট্রাস অক্সাইড ( N2O ) একটি গ্রিনহাউস গ্যাস , যা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী
  6. আবহমণ্ডলে ও জলে বেশি পরিমাণে NO3ˉ এবং NH4+ ( অ্যামোনিয়াম ) জমা হলে তা থেকে মারাত্মক দূষণকারক পদার্থ নাইট্রোসামিন ও NO উৎপন্ন হয় ।
  7. সুপারসনিক বিমান থেকে নির্গত NO ( নাইট্রিক অক্সাইড ) ওজোনকে অনবরত বিনষ্ট করে ।

NO + O3 ( ওজোন )        O2 + NO2

পরিবেশ দূষণ

পরিবেশ দূষণ : আমাদের চারপাশের পরিবেশকে আমরা নানাভাবে ব্যবহার করি। যার ফলে পরিবেশে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। বায়ুমণ্ডল , জলমণ্ডল এবং অষ্মমণ্ডলের ভৌত , রাসায়নিক এবং জৈবিক বৈশিষ্ট্যের এমন অনভিপ্রেত পরিবর্তন যা জীবজগৎ ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে , তাকে পরিবেশদূষণ বলে । দুষণ সৃষ্টিকারী পদার্থকে দূষক পদার্থ বলে। এর মধ্যে যে সব দূষক কখনও বিশ্লিষ্ট হয় না তাকে অভঙ্গুর দূষক (যেমন- প্লাস্টিক)  ও যে সব দূষক বিশ্লিষ্ট হয় তাকে ভঙ্গুর দূষক (যেমন- গোবর, ডিটারজেন্ট) বলে।

পরিবেশদূষণের ধারণা: পরিবেশের ভৌত,রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের যে অবাঞ্চিত পরিবর্তন জীবের জীবনধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাকেই দূষণ বলে। ক্ষতিকারক পদার্থ পরিবেশে যুক্ত হয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটায়।যন্ত্রচালিত আধুনিক সভ্যতা , শিল্প বিপ্লব , বিলাসবহুল জীবনযাত্রা , অতিরিক্ত ভোগ্যপণ্য উৎপাদন , মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধ, প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার , শিল্পায়ন , নগরায়ণ এবং অতিরিক্ত সংশ্লেষিত  দ্রব্যের ব্যবহার ইত্যাদি নানান কারণে পৃথিবীর বায়ু , জল , মাটি আজ দূষিত ও বসবাসের  ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে । পৃথিবীব্যাপী দূষণ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশে , মানবশরীরে ও মানব অর্থনীতিতে।

Nitrogen Cycle Explained - Definition, Stages and Importance

পরিবেশদূষণের প্রকারভেদ : পরিবেশদূষণ নানান রকমের হতে পারে। যেমন — বায়ুদূষণ , জলদূষণ , মাটিদূষণ , শব্দদূষণ ইত্যাদি।

১. বায়ুদূষণ ( Air pollution ) : প্রাকৃতিক কারণে বা মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের দ্বারা বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটে যা বায়ুমন্ডলের ভারসাম্য নষ্ট করে ও  ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায় , তাকে বায়ুদূষণ বলে ।

২. জলদূষণ ( Water pollution ) : প্রাকৃতিক কারণে বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জলে ক্ষতিকারক জীবাণু বা অবাঞ্ছিত বস্তুর উপস্থিতির ফলে জলের যে ভৌত , রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে , তাকে জলদূষণ বলে ।

৩. মাটিদূষণ ( Soil pollution ) : অবাঞ্ছিত জৈব পদার্থ বা রাসায়নিক পদার্থের সংযোজনের ফলে মাটির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে ও গুণগত মান নষ্ট হয় , যাকে  মাটিদূষণ বলা হয়।

৪. শব্দদূষণ ( Sound pollution ) : উচ্চ শব্দের কারণে আমাদের কানের স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সহনশীলতা অতিক্রমকারী শব্দ  শ্রোতার কাছে পীড়াদায়ক যার ফলে প্রাণীদের শারীরিক ও মানসিক সাম্যাবস্থাকে বিঘ্নিত হয়। একে শব্দদূষণ বলে ।

বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মাটিদূষণ ও শব্দদূষণের কারণ ও ফলাফলঃ

দূষণকারণফলাফল
বায়ুদূষণ ১। গ্রিনহাউস গ্যাস :  শিল্পকারখানা ও মোটর গাড়ির ধোঁয়া থেকে নির্গত নানান গ্রিন হাউস গ্যাস , যেমন- পরিবেশের CO2, NO2 , NH3 , N20 , NO , CFC  বায়ুকে দূষিত করে।১। অ্যাসিড বৃষ্টির পরিণতি : i ) H2S , NO2 ও CO2 গ্যাসগুলি  H2SO4 , HNO3 , ও H2CO3 তৈরি করে অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্লবৃষ্টি ঘটায়, যা জলে মিশে জলকে আম্লিক করে তোলে ও জলজ প্রাণীর অসুবিধা সৃষ্টি করে।

ii ) উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষে ব্যাঘাত ঘটায় ।

iii ) পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি ঘটায় এবং সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পায় ।

iv ) এর দ্বারা  মার্বেল স্ট্যাচু ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়।

v ) প্রবালদ্বীপের প্রজাতির অবলুপ্তি , জলজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতিসাধন ইত্যাদি ঘটনা ঘটে ।

vi ) আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতের ধরনের তারতম্য ঘটে , যেমন — কোথাও খরা , কোথাও অতিবৃষ্টি , কোথাও অনাবৃষ্টি দেখা যায় ।

২। কণাগত পদার্থ ( SPM ) : মোটর গাড়ির ধোঁয়ায় থাকা বেঞ্জোপাইরিন, তাপবিদ্যুৎও সিমেন্ট কারখানার উড়ন্ত ছাই (ফ্লাই অ্যাস), অ্যাসবেসটস কণা , পাট , কার্পাস , সিলিকা , অভ্র , কয়লা  আখের ছিবড়া প্রভৃতি জৈব কণা ।২। ফুসফুসের রোগ : বিভিন্ন ছোটো কণা ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করে ফুসফুসের নানারকম রোগের সৃষ্টি করে । যেমন—

i ) অ্যাসবেসটস কণা ফুসফুসের ক্যানসার ( অ্যাসবেসটোসিস ) সৃষ্টি করে ।

ii ) তুলোতন্তু বিসিনোসিস , নিউমোকোনিওসিস ও অ্যালার্জি ইত্যাদি সৃষ্টি করে ।

iii ) কয়লার গুড়ো অ্যানথ্রাকোসিস , ব্ল্যাকলাং ডিজিজ ঘটায়।

জলদূষণ ১। কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য : রাসায়নিক সার ( ইউরিয়া , অ্যামোনিয়াম সালফেট , সুপার ফসফেট , পটাশ ইত্যাদি ) , কীটনাশক ( ম্যালাথিয়ন , হেপ্টাক্লোর ) , আগাছানাশক ( 2, 4 – D ) ইত্যাদি ।

২। জীবাণু : গৃহস্থালি ও পৌর পয়ঃপ্রণালীর জলে মিশে থাকা নানা দূষিত সংক্রামক রোগের জীবাণু ।

১। ইউট্রোফিকেশন : ফসফেট জাতীয় রাসায়নিক সার ও ডিটারজেন্ট জলে মেশার ফলে জলজ উদ্ভিদের অতিবৃদ্ধি ঘটে , একে ইউট্রোফিকেশন বলে । এর ফলে—

i ) শ্যাওলার অতিবৃদ্ধি ও পচনের , ফলে জলদূষণ ঘটে । এর ফলে জলে 02 – এর পরিমাণ হ্রাস পায় , একে , অ্যালগাল বুম বলে ।

ii ) ইউট্রোফিকেশনের ফলে জলের BOD বৃদ্ধি পায় ও বিভিন্ন জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে ।

 

জীবাণুঘটিত রোগ :  দূষিত জলে ভাইরাস , ব্যাকটেরিয়া , প্রোটোজোয়া , কৃমি প্রভৃতি উপস্থিত থাকে যা মানবদেহে নানা রোগের সৃষ্টিকরে । যেমন-

i ) হেপাটাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে ও হেপাটাইটিস রোগের সৃষ্টি হয় ।

ii ) এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা , জিয়ার্ডিয়া প্রভৃতি আদ্যপ্রাণীর সংক্রমণে যথাক্রমে আমাশয় , জিয়ার্ডিয়েসিস রোগের সৃষ্টি হয় ।

iii ) ভিব্রিও কলেরি , সালমোনেল্লা টাইফি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে যথাক্রমে কলেরা ও টাইফয়েড রোগের সৃষ্টি হয়

iv ) গোলকৃমির সংক্রমণে অ্যাসকেরিয়েসিস রোগ হয় ।

মাটিদূষণ১। জীবাণু : পৌর আবর্জনা , মানুষ ও প্রাণীর মলমূত্রে মিশে থাকা নানা জীবাণু ।

২। রাসায়ক পদার্থ : সার , কীটনাশক | ( DDT , BHC ম্যালাথিয়ন , অলড্রিন , ডাইঅলড্রিন ) ও আগাছানাশক ।

১। মানুষের ওপর প্রভাব : সরাসরি মাটির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে মাটিদূষক দেহে প্রবেশ করলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয় , যেমন—

i ) পোলিওমায়োলাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণে শিশুদের পোলিও রোগ হয় ।

ii ) রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে শিশুদের উদরাময় ঘটে ।

iii ) ব্যাকটেরিয়া ও কৃমির সংক্রমণে শিশুরা নানান রোগে আক্রান্ত হয় ।

 

২। জৈব বিবর্ধন : অর্গানোক্লোরিন ( DDT ) ও অর্গানোফসফেট জাতীয় , কীটনাশক কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যা জলে মিশে জীবদেহে ফ্যাট জাতীয় পদার্থে সঞ্চিত করতে থাকে। এগুলি অভঙ্গুর দূষক এবং খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে প্রতি পুষ্টিস্তরে প্রবেশ করে । পুষ্টিস্তর দিয়ে সঞ্চারিত হবার সময় প্রতিটি পুষ্টিস্তরে এই দূষকগুলির ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় ও সর্বোচ্চ পুষ্টিস্তরে ঘনত্ব সর্বাধিক হয় । এই ঘটনা জৈব বিবর্ধন নামে পরিচিত । DDT- র জৈব বিবর্ধনের ফলে সর্বোচ্চ খাদক পাখিদের ডিমের খোলক পাতলা হয়ে যায় ও ডিমে তা দেবার সময় তা ভেঙে যায় ।

শব্দদূষণ ১। যানবাহন : ট্রাম , বাস , লরি 1 প্রভৃতির ইলেকট্রিক হর্ন , চাকার ঘর্ষণ , মোটর ইঞ্জিন , জেট ইঞ্জিন

২।  শিল্প : প্রেসের মেশিন , টেক্সটাইল লুম ( 80dB ), (100dB), পাঞ্ছিং মেশিন ( 80dB ) , গাড়ি সারাই , সাইরেন ( 100dB ) প্রভৃতি ।

মানুষের ওপর প্রভাব :

i ) শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পায় ,

ii ) দীর্ঘস্থায়ী জোরালো আওয়াজ হৃৎপিণ্ডের ওপর প্রভাব ফেলে । এতে হৃৎস্পন্দনের হার ও রক্তচাপ বেড়ে যায় ।

ii ) 100dB শব্দের মধ্যে থাকলে বধিরতা দেখা যায় । কারণ , কানের অর্গান অফ কর্টির কোশগুলি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে । 160dB মাত্রার শব্দে কর্ণপটহ ( কানের পর্দা ) ছিড়ে যায় এবং এর ফলে মানুষ স্থায়ীভাবে বধির হয়ে যেতে পারে।

iv ) হৃৎপিণ্ড ও রক্ত সংবহনতন্ত্রের অস্বাভাবিক সক্রিয়তা ঘটে ।

 

২। অন্যান্য প্রাণীর ওপর প্রভাব : i ) কুকুর , বিড়াল এবং অন্যান্য বন্য প্রাণীরা জোরাল শব্দ সহ্য করতে পারে না , এর জন্য তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে বা শিকার ধরতে সমস্যার সম্মুখীন হয় ।

( ii ) জোরালো শব্দ বিভিন্ন প্রাণীর ( যেমন — পাখি ) প্রজননে লিপ্ত হতে বাধা দেয় ।


Acid Rain - Formation, Effects and Control Measure - Forestrypedia

পরিবেশ এবং মানব জনসমষ্টি  

জনসমষ্টি : একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো একটি অঞ্চলে বসবাসকারী কোনো প্রজাতির সমগ্র জীবসংখ্যাকে জনসমষ্টি বা Population বলে।

জনসমষ্টি বৃদ্ধির হার : পৃথিবীর লোকসংখ্যা প্রায় 730 কোটি। কিন্তু আজ থেকে 185 বছর আগে এই সংখ্যা ছিল একশো কোটি। আধুনিক মানুষের সৃষ্টি থেকে 1830 সাল পর্যন্ত এই একশো কোটি সংখ্যায় পৌছতে সময় লেগেছে প্রায় 20 লক্ষ বছর। কিন্তু পরবর্তী একশো বছরে পৃথিবীর লোদাঁড়ায় প্রায় দুশো কোটি। এরপর তিনশো কোটি জনসংখ্যা হতে সময় 10 লাগে আরও 30 বছর ( 1960 ) । এবং আরও 10 বছর পর ( 1975 ) এই জনসংখ্যা হয় চারশো কোটি । বর্তমানে প্রায় প্রতি 15 বছরে একশো কোটি করে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। এভাবে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে 2045 সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় 1100 কোটি । ভারতে জনসংখ্যার বাৎসরিক বৃদ্ধি হার 1.9 কিন্তু চিনে তা কমে দাঁড়িয়েছে 0.7 শতাংশ।

জনসমষ্টি বৃদ্ধির কারণ : 

  1. i) প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি , অ্যান্টিবাইয়োটিক আবিষ্কার, উন্নত বীজ , সার , কীটনাশক , শস্য সংরক্ষণ , চিকিৎসার সুযােগ , উন্নত স্বাস্থ্যবিধান প্রভৃতির ফলে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে , যার এর ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।
  2. ii) খরা, বন্যা , দুর্ভিক্ষ , মহামারি প্রভৃতির নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানুষের মৃত্যর হার করে যায় ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

iii) কম বয়সে বিবাহের ফলে একধিক সন্তানের জন্ম ও শিশু মৃত্যুর হার কমায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো একটি অঞ্চলে কত সংখ্যক লোক বসবাস করতে পারে তার একটা সীমা বর্তমান, যাকে ধারণক্ষমতা (Carrying Capacity) বলা হয়। এই ধারণক্ষমতা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে সামাজিক জীবনে ও পরিবেশে বিপর্যয় আসবেই ।

  1. ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সমস্যা ( Problems of ever increasing Population ) : 
  2. i) প্রাকৃতিক সম্পদের অতিব্যবহার ও হ্রাস : প্রকৃতিতে উপস্থিত সম্পদের ভাণ্ডার সীমিত। কার মধ্যে কিছু কিছু সম্পদ নবীকরণযোগ্য যেমন- জল , অরণ্য  এবং কিছুকিছু অনবীকরণযোগ্য যথা- জীবাশ্ম জ্বালানি, ধাতু। বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধি , ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন , সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত অবৈজ্ঞানিক ব্যবহার প্রকৃতির সম্পদের ভান্ডার ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই কয়লা ও খনিজতেলের ভাণ্ডার শেষ হয়ে যাবে। যথা সময়ে অচিরাচরিত শক্তির ব্যবস্থা না করতে পারলে সভ্যতার সংকট অনিবার্য ।

ii ) কৃষিজমির হ্রাস : বিশাল জনসংখ্যার বসতি স্থাপন করার জন্য কৃষিজমির পরিমাণ ডিম দিন কমে আসছে । এর ফলে একদিকে যেমন কৃষিজ দ্রব্যের উৎপাদন কমছে তেমনি উর্বর কৃষিজমিতে বসতি ও শিল্প স্থাপনের ফলে উর্বর কৃষিজমি বিনষ্ট হচ্ছে ।

iii) অরণ্য ধ্বংস ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয় : জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রথম চাপ এসে পড়ে অরণ্য বা বনভূমির ওপর। অসংখ্য মানুষের বাসস্থান তৈরি করতে , শিল্পস্থাপন করতে ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করতে বনভূমি ধ্বংস করতে হয়। এর ফলে অরণ্যের বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হয় যার ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি চিরতরে বিলুপ্ত হতে থাকে। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় দেড় একর বর্ষা অরণ্য ( Rain forest ) কাটা হচ্ছে । এভাবেই ধ্বংস হতে থাকলে আগামী 100 বছরের মধ্যে পৃথিবীর সকল বর্ষা অরণ্য নিঃশেষিত হয়ে যাবে । এই বর্ষা অরণ্যেই গরিলা , শিম্পাঞ্জি , ওরাংওটাং , তাপির , বাঘ ও সুমাত্রার গন্ডারের মতো লুপ্তপ্রায় প্রাণীরা বেঁচে থাকে।

  1. iv) বায়ু ও জলদূষণ : বিপুল জনসংখ্যার ব্যবহার্য বর্জ্য পদার্থগুলি বায়ু ও জলে মিশে দূষণ ঘটায় । ভোগ্যপণ্যের ( ফ্রিজ , এসি ) মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে বায়ুমণ্ডলে CFC ( ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ) গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা ওজোনস্তরের পুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছে । এ ছাড়া মােটরগাড়ির ধোঁয়া থেকে নির্গত বেঞ্জোপাইরিন ফুসফুসে ক্যানসার রােগ সৃষ্টি করে।

v ) বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়ন : জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে একদিকে যেমন অরণ্য ধ্বংস করে কলকারখানা , বাসস্থান ও রাস্তাঘাট নির্মিত হয়েছে তেমনই দিন দিন পরিবেশের বায়ুতে গ্রিনহাউস গ্যাসের ( CO2 H50 , CHs , Ny0 ) পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যার অবশ্যম্ভাবী ফল হল বিশ্ব উন্নয়ন , আবহমণ্ডলের পরিবর্তন , কোথাও অতিবৃষ্টি , কোথাও অনাবৃষ্টি ।

vi ) মিষ্টি জলের অভাব : পৃথিবীর তিনভাগ জল থাকলেও  মিষ্টি জলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে । সমগ্র পৃথিবীতে মিষ্টিজলের পরিমাণ প্রায় 3 % । এই পরিমাণ জলের বেশিরভাগটাই ( 68.7 % ) হিমবাহ ও বরফের আস্তরণরূপে অবস্থান করছে। ভৌমজলের পরিমাণ 30 % এবং ভূপৃষ্ঠীয় ও অন্যান্য জলের পরিমাণ প্রায় 1.2 % । অগণিত জনসংখ্যার জলের চাহিদা মেটাতে গভীর নলকূপ বসা হচ্ছে যার ফলে ভৌমজল থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে এবং পানীয় জলে আর্সেনিক ও ফ্লুরিন মিশে জলদূষণ ঘটাচ্ছে ।

vii) খাদ্যসংকট :  কৃষিজমিতে বসতিস্থাপন ও শিল্পস্থাপনের ফলে দিন দিন কৃষিজমির পরিমাণ কমে আসছে ।ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে সংগতি রেখে পরিমাণ মতন ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না এবং উন্নত সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় ও ব্যাপক মনােকালচারের প্রসারের ফলে আগামী দিনে খাদ্যসংকট দেখা দেবে বলা যায় ।

viii) জলাভূমি ধ্বংস :  বৃক্ক যেমন দেহের দূষিত পদার্থ অপসারিত করে দেহকে সুস্থ রাখে , জলাভূমি তেমনি প্রকৃতির দুষিত পদার্থগুলিকে অপসারিত করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখে। তাই জলাভূমিকে প্রকৃতির বৃক্ক বলা হয়। কিন্তু এই জলাভূমি বুজিয়ে সেখানে বসতিস্থাপনের কাজ দিন দিন বেড়েই চলেছে , যার মারাত্মক ফল হল – জলকষ্ট , জলদূষণ ও কিছু জলজ প্রজাতির চির অবলুপ্তি ।

  1. পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্য ( Environment and Human health ) :

আমরা জানি “ তামাক ক্যানসারের কারণ” তবে তামাক ছাড়া আরও অনেক পদার্থ দ্বারা ক্যানসার হতে পারে। যেমন- মােটরগাড়ির ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত পদার্থ আমাদের শরীরে ঢুকে ক্যানসার সৃষ্টিকরে । ফুসফুসের ক্যানসার ছাড়াও অন্যান্য ক্যানসারগুলি হল — যকৃৎ ক্যানসার , ব্লাড ক্যানসার , ‘ ত্বকের ক্যানসার ও ব্লাডার ক্যানসার । প্লাস্টিক পরিবেশ ও মানব শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে । তেজস্ক্রিয় বিকিরণ আমাদের শরীরে যে মারাত্মক ক্ষতি করে তার কোনো চিকিৎসাই নেই । আমরাই এই সুন্দর পৃথিবীকে দূষিত করছি ও নানা দূরারোগ্য ব্যাধি ডেকে আনছি । পরিবেশদূষণ থেকে আমাদের যেসব রােগগুলি হয় তা হল-

১। হাঁপানি ( Asthma ) : অ্যাজমা বা হাঁপানিতে  শ্বাসগ্রহণে কষ্ট হয় যা বেশ যন্ত্রণাদায়ক রোগ ।

কারণ : হাঁপানির প্রধান কারণ হল অ্যালার্জি । বিভিন্ন বিজাতীয় বস্তুর প্রতি শ্বাসতন্ত্রের ক্লোমশাখার অধিক সংবেদনশীলতার কারণে হাঁপানি হয় । পরিবেশদূষণ এই রোগের জন্য প্রধান দায়ী । ধূলো , কুল , রেজিন , সূক্ষ্ম কণাগত পদার্থ , আইসোসায়ানেট গ্যাস, মোটরগাড়ির ধোঁয়া, তামাকের ধোঁয়া , বিছানা , বালিশে জমা ধূলো , ফুলের পরাগরেণু , পাখি ও পোষা প্রাণীর লোম ইত্যাদির মাধ্যমে হাঁপানি হতে পারে ।

লক্ষণ: ( i ) ক্লোমশাখার মসৃণ পেশিগুলি সংকুচিত হয় । ( ii ) ক্লোমশাখার শ্লেষ্মাঝিণি থেকে মিউকাস ক্ষরণ বৃদ্ধি পায় , ফলে ক্লোমশাখার ভিতরের ব্যাস হ্রাস পায়, বায়ুচলাচল কমে যায় ও শ্বাসকষ্ট হয় ।

২। ব্রংকাইটিস ( Bronchitis ) : ধূমপান ও বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসের ক্লোমশাখার ভেতর গাত্রে অবস্থিত সেরোমিউকাস গ্রন্থি ও গবলেট কোশ ( শ্লেষ্মা ক্ষরণকারী কোশ ) আক্রান্ত হলে এই রোগ হয়।

কারণ : বার্নিশের কাজ , রংঝালাই , ইলেকট্রনিক কারখানার রাসায়নিক গ্যাস , ব্যাটারি কারখানার গ্যাস , নানারকম , ধাতু পরিশোধনের সময় উৎপন্ন গ্যাস অ্যালার্জি ও ব্রংকাইটিস ( ফুসফুসের প্রদাহ ) সৃষ্টি করতে পারে । ধূমপায়ী এবং দমকলকর্মীরা প্রায়শই এই রােগের শিকার হন ।

লক্ষণ : ( i ) ফুসফুসের বায়ু পরিবহণ পথে যন্ত্রণার সৃষ্টি হয় । ( ii ) রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কাশি হয় এবং কাশির সঙ্গে সবুজাভ – হলদে রঙের কফ নির্গত হয়।

৩। ক্যানসার ( Cancer ) : বিভেদীকরণ ছাড়াই অনিয়ন্ত্রিত কোশবৃদ্ধি , কোশ বিভাজন ও টিউমার সৃষ্টিকে ক্যানসার বলে এবং এই ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থগুলিকে কারিসনোজেন বলে । কারসিনোজেন দুই প্রকার। যথা— ( i ) ভৌত করিসনোজেন : X- রশ্মি , গামা রশ্মি , β- রশ্মি , uv- রশ্মি ও কসমিক রশ্মি ।

( ii ) রাসায়নিক কারিসনোজেন : নিকোটিন , আগাছানাশক , কীটনাশক , অ্যাসবেসটস , ক্রোমিয়াম , অ্যারােমেটিক অ্যামাইন । প্রকৃতিজাত কয়েকটি কারসিনোজেন হল আফলাটক্সিন , স্যাফ্রল , আইসোস্যাফ্রল ও পারঅ্যাসকরবিক অ্যাসিড ।

কারণ : ক্যানসার সৃষ্টির কারণগুলিকে দুটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায় , যথা

  1. মনুষ্যসৃষ্টকারণ : ( i ) নিকোটিন : যারা পানের সঙ্গে তামাক চিবিয়ে খান ও তামাকের গুড়াে দিয়ে দাঁত মাজেন তাদের মুখ ও ঠোটের ক্যানসার হতে পারে ।

( ii ) অ্যাসবেসটস্ : বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানে তৈরি সিলিকাযুক্ত একপ্রকার তন্তু হল অ্যাসবেসটস । অ্যাসবেসটসের সূক্ষ্মতন্তু কণা প্রশ্বাস , বায়ুর মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে যে বিরল ব্রংকোজেনিক ক্যানসার ও মেসোথিলিওমা সৃষ্টি করে তাকে অ্যাসবেসটোসিস বলে । মূলত  নির্মাণকর্মী , ঝালাইকর্মী ও স্টিল কর্মীরা এই অবস্থার শিকার হন ।

( iii ) প্লাস্টিক : প্লাস্টিক কারখানা ও ফিউমিগ্যান্ট তৈরির কারখানা থেকে নির্গত ভিনাইল ক্লোরাইড ও ইথিলিন ডাইক্লোরাইড নামক কারসিনোজেনের প্রভাবে ওই কারখানায় কর্মরত ব্যক্তিদের  যকৃৎ ক্যানসার হতে পারে । রং , ফিল্ম ও রেসিন তৈরির কারখানা থেকে নির্গত নাইট্রোফিনাইল , ক্লোরােঅ্যানিলিন প্রভৃতি কারসিনোজেনের প্রভাবে উক্ত কারখানার কর্মীদের ব্লাডার ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

( iv ) কীটনাশক : অর্গানোফসফেট জাতীয় কীটনাশক ( অলড্রিন , ডাইঅলড্রিন , মিরেক্স ) ও আগাছানাশক ( 2 , 4 – D ) ক্রোমোজোমকে ভেঙে মিউটেশন ঘটায় এবং ক্যানসার ও টিউমার সৃষ্টি করে ।

( v ) ক্রোমিয়াম : ইলেকট্রোপ্লেটিং , রং , ট্যানারি ও ছত্রাকনাশক প্রভৃতি তৈরির শিল্প কারখানা থেকে নির্গত ক্রোমিয়াম মানুষের ত্বক ও বৃক্কের ক্যানসার ঘটায় ।

( v ) তেজস্ক্রিয় বিকিরণ : খনি থেকে তেজস্ক্রিয় মৌল ( ইউরেনিয়াম , থােরিয়াম ) উত্তোলনের সময় , পারমাণবিক চুল্লি , হাসপাতাল ও গবেষণাগার থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় মৌলের বিকিরণ ( α, β , ¥ রশ্মি ) মানবশরীরে প্রবেশ করে ক্রোমোজোম ও জিনের মিউটেশন ঘটিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্যানসার সৃষ্টি করে যার ফলে অঙ্গ বিকৃতি , অস্থিমজ্জার ত্রুটি , ব্লাড ক্যানসার , থাইরয়েড ক্যানসার , বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম ও বন্ধ্যাত্ব ঘটে । তেজস্ক্রিয় মৌল রেডিয়াম দেহের ক্যালশিয়ামকে সরিয়ে সেই জায়গা দখল করে নেয় । আণবিক বিকিরণের মাত্রা ও ভেদন ক্ষমতার ওপর অসুস্থতার লক্ষণ নির্ভর করে । উপরিউক্ত কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিগণ এইসব অবস্থার শিকার হন । এইসব অসুখের কোনাে চিকিৎসা নেই ।

  1. প্রাকৃতিক কারণ : প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে— ( i ) UV- রশ্মি : UV- রশ্মি , কসমিক রশ্মি ত্বকের ক্যানসার ঘটায় ।
  2. ii) পরাগরেণু : পার্থেনিয়াম ও অনেক উদ্ভিদের পরাগরেণু শাসতন্ত্রে প্রবেশ করে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে

( iii ) আফলাটক্সিন : অ্যাসপারজিলাস ছত্রাক খাদ্যদ্রব্যে ( শস্য ) জন্মালে আফলাটক্সিন নামক একপ্রকার টক্সিন ক্ষরণ করে, যা খাবারের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করলে যকৃতের ক্যানসার হতে পারে।

ক্যানসার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যথা- ফুসফুসের ক্যানসার , মুখের ক্যানসার , গলার ক্যানসার , কোলন ক্যানসার ইত্যাদি । ফুসফুসের এবং মুখের ক্যানসারের কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হল-

১। ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ: ফুসফুসের ক্যানসারের প্রধান কারণ হল অত্যধিক ধূমপান ও বায়ুদূষণ । শতকরা 95 ভাগ ফুসফুস ক্যানসার ধূমপানের কারণে হয় । তামাকের মধ্যে থাকা টার, বেনজোপাইরিন , পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন ( PAH ) , N- নাইট্রোসোডাইমিথিলিন প্রভৃতি কারসিনোজেন ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টি করে

লক্ষণ : ফুসফুস ক্যানসারের  লক্ষণগুলি হল— শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, রক্তাক্ত শ্লেষ্মা নির্গমন , বুক ব্যথা , বারবার নিউমোনিয়ার আক্রমণ , শ্বাসনালী প্রদাহ ও স্বরভঙ্গ ।

২। মুখের ক্যানসারের কারণ– খৈনি, গুটকা, পানমশলা প্রভৃতি নিয়মিত চেবানোর ফলে মুখে ক্যানসারের সৃষ্টি হতে পারে ।

লক্ষণ : ( i ) দাঁতের গঠন বিকৃত হয় এবং গলায় ক্যানসারের সৃষ্টি হলে খাবার গিলতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়।

( ii ) জিভ , ঠোট ইত্যাদিতে প্রথমে ছোপছোপ সাদা দাগের সৃষ্টি হয় এবং পরে তা ঘা – তে পরিণত হয় ।


জীববৈচিত্র্য : কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থিত বিভিন্ন প্রকার জীবের ( উদ্ভিদ , প্রাণী ও আণুবীক্ষণিক জীব ) প্রজাতিগত , আন্তঃপ্রজাতিগত ও বস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যকে ওই সময়ে ওই স্থানের জীববৈচিত্র্য বলে ।W B Rosen প্রথম  বাডাইভারসিটি কথাটির প্রচলন করেন।

জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদ : জীববৈচিত্র্যকে সাধারণত  তিন প্রকারের। । যথা-

  1. i) জিনগত বৈচিত্র্য : কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রজতির বাস্তুতন্ত্রে মধ্যে জিনের যেসব বৈচিত্র দেখা যায় , তাকে জিনগত বৈচিত্র্য বলে । জিনগত  বৈচিত্র্য একই প্রজাতির মধ্যে  উপপ্রজাতি , জাতি , স্ট্রেন ও বিভিন্নতা সৃষ্টি করে।
  2. ii) প্রজাতিগত বৈচিত্র্য : একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মোট প্রজাতির সংখ্যাকে ওই স্থানের প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বলে ।
  3. ii) বস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য : কোনো একটি স্থানের প্রজাতিগুলি , যে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বাস্তুতন্ত্রে বাস করে বা বাসস্থান নির্বাচন করে , তাকে সামগ্রিকভাবে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে ।যেমন — বর্ষাঅরণ্য ও প্রবাল দ্বীপের জীববৈচিত্র্য পরস্পর থেকে আলাদা । বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য আবার তিন প্রকারের হয় , যথা—

১। α বৈচিত্র্য : বৃহৎ বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত ছোটো ছোটো অঞ্চলগুলিতে যে জীববৈচিত্র দেখা যায় , তাকে α- বৈচিত্র্য বলে ।

২। β বৈচিত্র্য : সংলগ্ন বাসস্থানগুলিতে যে জীববৈচিত্র্য দেখা যায় , তাকে β- বৈচিত্র্য বলে ।

৩। Y বৈচিত্র্য : সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের জীববৈচিত্র্যকে  -বৈচিত্র্য বলে ।

জীববৈচিত্রের গুরুত্ব  :  জীববৈচিত্র্য খাদ্য উৎপাদনে , ওষুধ ও ড্রাগ প্রস্তুতিতে  বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং এদের অর্থনৈতিক গুরুত্বও বর্তমান।

  1. খাদ্য উৎপাদন : প্রায়  ৪০,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও অসংখ্য প্রাণী মানুষের খাদ্যবস্তু । যেমন—

( i ) শস্য উৎপাদনকারী উদ্ভিদ : ধান , গম , ভুট্টা , যব , জোয়ার , বাজরা ইত্যাদি ।

( ii ) ফল : লেবু ,আপেল, কাঁঠাল, আম , কলা , আঙুর ইত্যাদি

iii ) মশলা উৎপাদনকারী উদ্ভিদ : ধনে , মৌরি , এলাচ , গােলমরিচ , জিরে , লবঙ্গ ইত্যাদি । ।

( iv ) ডিম উৎপাদনকারী : হাঁস , মুরগি ইত্যাদি ।

( v ) মাংস উৎপাদনকারী প্রাণী : গােরু , মাছ শুকর , ভেড়া , মুরগি ইত্যাদি ।

( vi ) দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রাণী : রু , মহিষ ইত্যাদি ।

B . ড্রাগ ও ওষুধ প্রস্তুতিতে : পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় 75 % মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য উদ্ভিদ ও উদ্ভিদজাত নির্যাস ব্যবহার করেন । বর্তমানে প্রায় 10,000 টির বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে নানান রোগের আয়ুবের্দিক ওষুধ প্রস্তুত করা হচ্ছে । যেমন- ( i ) সিঙ্কোনা গাছ : প্রাপ্ত কুইনাইন মূলত ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় লাগে ।

( ii ) নয়নতারা গাছ : এর থেকে পাওয়া উপক্ষার ভিনক্রিসটিন ও ভিনব্লাসটিন উপক্ষার ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ।

( iii ) ইসবগুল ( Plantogo ovata ) উদ্ভিদ : কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় ।

( iv ) Taxus sp . :  ট্যাক্সল ক্যানসার জাতীয় রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয় । ( v ) আর্মাডিলো প্রাণী : কুষ্ঠ রোগের গবেষণায় ব্যবহৃত হয় ।

  1. বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা : কোনো একটি স্থানের বাস্তুতন্ত্রে বসবাসকারী জীববৈচিত্র্যসমূহ পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীলতার মাধ্যমে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে । যেমন-

( i ) খাদ্য – খাদক সম্পর্ক : খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্যজালের মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রেভারসাম্য বজায় থাকে ।

( ii ) পুষ্টিচক্র : জৈব ভূ – রাসায়নিক চক্রের মাধ্যমে প্রকৃতিতে C , H , 0 , N , S ও P- এর ভারসাম্য বজায় থাকে ।

D . জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ : দীর্ঘদিনের আবহাওয়ার গড় অবস্থাই হল জলবায়ু । পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্যতা থাকলে জলবায়ু ও পরিবেশের স্থিতাবস্থা বজায় থাকে । যেমন ( i ) O2 , ও CO2- এর সাম্যবস্থা : উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ ও জীবের শ্বসনক্রিয়ার মাধ্যমে এই সম্যাবস্থা বজায় থাকে।

( ii ) বনভূমি : বৃষ্টিপাত ঘটাতে ও ভূমিক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে ।

( iii ) জলচক্র : এর মাধ্যমে বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রিত হয় ।

  1. অর্থনৈতিক গুরুত্ব : জীববৈচিত্র্যের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম যা মানুষের নানা প্রয়োজনে লাগে। জীববৈচিত্র্যের এই অর্থনৈতিক গুরুত্বগুলি নীচে আলোচনা করা হল-

( i ) গৃহসামগ্রী ও আসবাব তৈরি : নানান গৃহসামগ্রী তৈরির জন্য শাল , বাঁশ , গামার , হোগলা , গোলপাতা প্রভৃতি উদ্ভিদ এবং আসবাবপত্র তৈরির জন্য সেগুন , জারুল , শিশু , মেহগিনি প্রভৃতি উদ্ভিদ কাজে লাগে।

( ii ) কাগজ প্রস্তুতি : কাগজ তৈরি করতে  বাঁশ , সাবাই ঘাস , দেবদারু গাছ কাগজ ব্যবহৃত হয় ।

 ( iii ) রজন : পাইন গাছের রজননালী থেকে পাওয়া রজন বার্নিশ শিল্পে , রং তৈরি করতে ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরিতে প্রয়ােজন হয় ।

( iv ) আঠা : জিওল , শিরিষ , বাবলা প্রভৃতি গাছের আঠা কাষ্ঠ শিল্পে ও বই বাঁধাই – এর কাজেব্যবহৃত হয় । Acacia senegal থেকে বাণিজ্যিক গঁদ পাওয়া যায় ।

( v ) শিল্প : তুঁতজাত ( বোমবিক্স মোরি ) ও অতুঁতজাত ( অ্যানথেরিয়া ও ফাইলোসোমিয়া ) রেশম মথ থেকে প্রাপ্ত সিল্ক , তসর , মুগা রেশমবস্ত্র ও পোশাক তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় । এ ছাড়াও প্যারাসুট নির্মাণে , বিদ্যুৎ অপরিবাহী আবরণ তৈরিতে কাজে লাগে ।

( vi ) মোম : মৌমাছির চাক থেকে প্রাপ্ত মোম ক্রিম , পালিশ , মলম , লিপস্টিক , লুব্রিক্যান্ট তরল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় ।

( vii ) মুক্তো : সামুদ্রিক ঝিনুক ( Pinctada vulgaris ) থেকে সৃষ্ট মুক্তো রত্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়

( vi ) উল : ভেড়া ( মেরিনো ) , খরগোশ ( অ্যাঙ্গোরা ) থেকে প্রাপ্ত উল , তিব্বতী অ্যান্টিলোপ ( Chirus sp . ) থেকে উৎপন্ন ‘ সাহতোশ ‘ থেকে নানারকম শীতবস্ত্র তৈরি হয়।

  1. শিল্প ও সাহিত্যে প্রভাব : বহু প্রাচীনকাল থেকে আমারা সাহিত্যে, কবিতা , গল্প ও কাব্যে বন ও  নানান বন্যপ্রাণীর বর্ণনা  পাই। নৈসর্গিক দৃশ্য , প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের মনকে নির্মল আনন্দ দেয় । এই কারণেই প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা স্থানগুলি ভ্রমণ করেন । এ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে । যেমন- সিঙ্গাপুরের জুরং পার্ক।

জীববৈচিত্রের হটস্পট 

পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে খুব বেশি সংখ্যায় বিচিত্র প্রজাতির জীব পাওয়া যায় এবং এমন সব প্রজাতির জীব পাওয়া যায় যেগুলি পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না, এবং এই অঞ্চলগুলি নতুন প্রজাতি উৎপত্তির কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করে , সেই ধরণের অঞ্চলগুলিকে জীববৈচিত্র্য হটস্পট বা বায়োডাইভারসিটি হটস্পট বলে । হটস্পটগুলি সমগ্র পৃথিবীর স্থলভাগের মাত্র 2 % এবং যেখানে প্রায় 50 % সুলভ প্রজাতি বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ । মায়ারের মতে কোনো স্থানে ( স্থল ) প্রায় 0.5 % বা 1500 টি আঞ্চলিকভাবে সীমাবদ্ধ প্রজাতি থাকলে এবং স্থানটির প্রায় প্রাথমিক উদ্ভিদকুলের 70 % নষ্ট হয়ে গেলেও স্থানটিকে হটস্পট অ্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে । পৃথিবীর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হটস্পট হল – মাদাগাস্কার , পশ্চিম আমাজন , দক্ষিণ ও পূর্ব বোর্নিও , পশ্চিম আফ্রিকা ও উত্তর পূর্ব অস্ট্রেলিয়া ।

জীববৈচিত্র্য হটস্পট নির্ধারণের শর্ত : 

  1. আঞ্চলিকভাবে সীমাবদ্ধ ও বিচিত্র প্রজাতির সংখ্যা বেশি হবে ।
  2. অঞ্চলগুলি নতুন প্রজাতির উৎপত্তির কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করে ।
  3. এই অঞ্চলগুলি নানাকারণে বিপদগ্রস্ত ।
  4. ন্যূনতম 1500 প্রজাতির সংবহনকলাযুক্ত আঞ্চলিকভাবে সীমাবদ্ধ উদ্ভিদপ্রজাতি থাকবে । বিজ্ঞানী Myers প্রথম হটস্পট শব্দটির প্রচলন ঘটান। বর্তমানে পৃথিবীতে এরকম প্রায় 34 টি হটস্পট উপস্থিত । ভারতে এরকম চারটি হটস্পট আছে। যেমন-
  1. ইন্দো – বার্মা : 

( i ) বিস্তৃতি : এই অঞ্চলটি প্রায় 20 লক্ষ বর্গ কিমি স্থান জুড়ে অবস্থিত। স্থানটির অন্তর্গত অংশগুলি হল— মেকং নদীর নিম্নভূমি , বাংলাদেশের পূর্বভূমি , উত্তর – পূর্ব ভারত , নেপাল , ভুটান , দক্ষিণ ব্রম্মপুত্র অঞ্চল , সমগ্র মায়ানমার , দক্ষিণ পশ্চিম চিন , কম্বোডিয়া , ভিয়েতনাম , থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কিছু অংশ ।

( ii ) উল্লেখযোগ্য জীববৈচিত্র্য : প্রাণীবৈচিত্র্যের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য – Antlered muntjac , Annamite muntjac , Grey Shanked douc , the annamite Stripped rabbit , leaf deer and Saola .

( ii ) বিশেষ বৈশিষ্ট্য : ক. আঞ্চলিকভাবে সীমাবদ্ধ ও কয়েক প্রজাতির কচ্ছপ এখানে পাওয়া যায় । খ. প্রায় 1300 প্রজাতির পাখি যেমন- Night Heron , Crowned Crocias , orange necked পশ্চিমঘাট partridge এই অঞ্চলে দেখা যায় । গ. এই অঞ্চলের বেশ কিছু প্রজাতি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

  1. পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও শ্রীলঙ্কা : 

( i ) বিস্তৃতি : অঞ্চলটির আয়তন প্রায় 17,000 বর্গ কিমি।  যার অন্তর্গত হল কেরল, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু (চেন্নাই) ও কর্ণাটক । এই অঞ্চলটির উল্লেখযোগ্য স্থানগুলি হল — অগস্ত্যমালাই পর্বত , সাইলেন্ট ভ্যালি ( কেরল ) ও আমামবালাম রিজার্ভ বেসিন ।

( ii ) উল্লেখযোগ্য জীববৈচিত্র্য : ক. আঞ্চলিকভাবে সীমাবদ্ধ উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা প্রায় 40 % ।  খ. প্রাণীবৈচিত্র্যের মধ্যে সরীসৃপ ( 50 % ) ও উভচর ( 62 % ) – এর বৈচিত্র্য ও আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা খুব বেশি । গ. ভারতে প্রাপ্ত মোট 15,000 সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে প্রায় 4780 টি প্রজাতি এখানে পাওয়া যায় ।

( iii) বিশেষ পশ্চিমঘাট অঞ্চলের প্রজাতি বৈশিষ্ট্য : ক. সম্প্রতি ( 2012 ) এই অঞ্চলটি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে । খ. বর্তমানে এই অঞ্চলটিতে বনভূমির পরিমাণ প্রায় 6.8 % । গ. এই অঞ্চল থেকে অনেক প্রজাতি বিলুপ্তি গেছে এবং অনেক নতুন নতুন প্রজাতি সৃষ্টিও হয়েছে। ঘ. অঞ্চলটির বেশিরভাগ বনভূমি মানুষের কার্যকলাপের দ্বারা নষ্ট হয়ে গেছে ।

  1. পূর্ব হিমালয় : 

( i ) বিস্তৃতি : অঞ্চলটি প্রায় 7298 বর্গ কিমি স্থান জুড়ে বিস্তৃত। আসাম , অরুণাচল প্রদেশ সিকিম ও নেওড়াভ্যালি এই হটস্পটের অন্তর্গত ।

( ii ) উল্লেখযোগ্য জীববৈচিত্র্য : ক. অঞ্চলটিতে 45 টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী , 50 টি প্রজাতির পাখি , 17 টি প্রজাতির সরীসৃপ , 12 প্রকারের উভচর এবং বিভিন্ন অমেরুদণ্ডী প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে । খ. উল্লেখযোগ্য কিছু  প্রাণী হল একশৃঙ্গ গন্ডার , এশিয়ার বন্য জলজ মহিষ ( Bubalus bubalis ) , ও স্যালামান্ডার ( Tylototriton sp.) Laughing thrush , Fairy Bluebird , Lizard Hawk । গ. উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্ভিদ হল রডােডেনড্রন , Saprio himalayana ( পরজীবী সপুষ্পক ) , Hypericum 4 Ternstroemia japonica .

( iii) বিশেষ বৈশিষ্ট্য: ক. অঞ্চলটির স্বতন্ত্র ভূমিরূপের কারণে প্রজাতি বৈচিত্র্য ও আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা খুবই বেশি । খ. সমগ্র পৃথিবীর প্রায় 30% আঞ্চলিকভাবে সীমাবদ্ধ উদ্ভিদ প্রজাতি এই অঞ্চলে দেখা যায় । গ. প্রাচীন গুপ্তবীজী উদ্ভিদের আধিক্য থাকায় অঞ্চলটিকে বিবর্তনের কেন্দ্রস্থল বলে মনে করা হয়।

  1. সুন্দাল্যান্ড : 

( i ) বিস্তৃতি : এই হটস্পট – টির অন্তর্গত অঞ্চলগুলি হল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ।

( ii ) উল্লেখযোগ্য জীববৈচিত্র্য : এই অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ , প্রবাল দ্বীপের জীববৈচিত্র্য এবং ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি প্রজাতি বৈচিত্র্যসমৃদ্ধ ।

( iii ) বিশেষ বৈশিষ্ট্য :  ক. প্রায় 2200 প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ ও 120 টির বেশি ফার্ন এখানে উপস্থিত। খ .  অনেক সরীসৃপ , উভচর ও পক্ষী উপপ্রজাতির এই অঞ্চলে উৎপত্তি ঘটেছে ।

জীববৈচিত্রের হ্রাস 

জীববৈচিত্র্য হ্রাসের একাধিক কারণ বর্তমান। নিম্নে আলোচিত হল ।

  1. জমি ব্যবহারের রীতির ফলে বাসস্থান ধ্বংস : 
  2. i) নগরায়ন : বিপুল জনসংখ্যার বাসস্থান তৈরির  জন্য বনভূমি ও তৃণভূমি ধ্বংস করতে হয়। এর ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে ।

ii ) শিল্পায়ন : বৃহৎ শিল্পের জন্য দরকার প্রচুর জমি যার জন্য প্রচুর বনভূমি ধ্বংস করতে হয় এতে বন্যজীবন বিধ্বস্ত হয় ।

iii ) সড়ক নির্মাণ : প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় বড়ো বড়ো রাস্তা তৈরি করার করতে  বন্যজীবন ধ্বংস করতে হয়েছে।

  1. শিকার ও চোরাশিকার : চোরাশিকারের কারণে আজ অনেক বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন । পৃথিবীর এমন কিছু দেশ ( চিন ) আছে যারা। বন্যপ্রাণীর চামড়া ও হাড় প্রভৃতি থেকে ওষুধ তৈরি করে । চোরাশিকারীরা বন্যপ্রাণী হত্যা করে তাদের চামড়া , দাঁত , শিং বিদেশের বাজারে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা লাভের উদ্যেশ্যে যার ফলে বণ্যপ্রাণীর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে । যেমন—

( i ) চামড়া : বাঘ , চিতাবাঘ , কুমির ও গােসাপ – এর চামড়া মূল্যবান তাই এই প্রাণীগুলিকে হত্যা করার ফলে এদের সংখ্যা কমে আসছে

( ii ) দাঁত : হাতির দাঁতের ব্যবসায়িক মূল্য অধিক তাই হাতি হত্যা করায় হাতির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

( iii ) খড়্গ বা শিং : চোরাশিকারীরা গণ্ডার শিকার করে তা বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা লাভ করছে যার ফলে গন্ডার আজ লুপ্তপ্রায় প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।

  1. বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন : জলবায়ুর পরিবর্তিত হলে প্রাণী ও উদ্ভিদের বসবাসের স্থানের ও পরিবর্তন হতে পারে এবং এই নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় ও অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে । যেমন ( i ) গ্লোবাল ওয়ার্মিং – এর ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ খুব তাড়াতাড়ি গলে যাচ্ছে । এর ফলে মেরু ভাল্লুক , মেরু শিয়াল ও এস্পেরার পেঙ্গুইনদের অবস্থা আজ বিপন্ন।

( ii ) পরিবেশে CO2 এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ( বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে ) অস্ট্রেলিয়ার ইউক্যালিপটাস গাছের পাতার পুষ্টিগুণ কমে যাচ্ছে । এর ফলে কোয়ালা ভালুকের অস্তিত্ব আজ সংকটাপন্ন ।

( iii ) সাগর ও মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাল দ্বীপের প্রজাতিরা আজ বিপদগ্রস্ত।

  1. পরিবেশদূষণ : মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার এবং এর ফলে সৃষ্ট দূষণ পরিবেশের প্রাণীর বিলুপ্তির কারণ হতে পারে । যেমন-

( i ) কীটনাশক : কৃষিজমিতে ব্যবহার করা কীটনাশক শস্যভুক পাখিদের দেহে প্রবেশ করে যা তাদের মৃত্যুর কারণ ঘটায় ।

( ii ) কৃষিক্ষেত ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক পদার্থ : গঙ্গার জলে ক্ষতিকারক সব পদার্থ  মেশার ফলে গঙ্গার শুশুক এর অবস্থা আজ শোচনীয়।

( iii ) বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ : কলকারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নদী ও খালের জলে মিশে মাছের ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটায় ।

  1. অতিব্যবহার : কোনো বিশেষ প্রাণী বা উদ্ভিদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অত্যাধিক হলে সেই জীবের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার  তাদের সংখ্যা কমাতে পারে বা বিলুপ্তিও ঘটাতে পারে । যেমন-

( i ) কস্তুরী মৃগ : হিমালয়ে থাকা কস্তুরী মৃগ থেকে মৃগনাভি সংগ্রহ করা হয় যা থেকে  নানারকম সুগন্ধি দ্রব্য তৈরি হয় । মানুষের সুগন্ধি দ্রব্যের চাহিদা পূরণ আজ প্রাণীটির অস্তিত্বের সংকটের কারণ । ( ii ) লালচন্দন : এই উদ্ভিদটির অতিরিক্ত ব্যবহার উদ্ভিদটির অস্তিত্ব বিপন্নের কারণ ।

  1. প্রাকৃতিক দুর্যোগ : নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন -ভূমিকম্প , তুষারপাত , বন্যা , হিমবাহের গলন , মেঘভাঙা বৃষ্টি ইত্যাদির  কারণে অনেক প্রজাতি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে । যেমন-

( i ) সুনামি : সামুদ্রিক ভূ – আলোড়ন হল সুনামি । সম্প্রতি জাপান ও শ্রীলঙ্কায় সুনামির ফলে অনেক প্রজাতির মৃত্যু ঘটেছে এবং অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রীফটির বেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।

( ii ) মেঘভাঙা বৃষ্টি : সম্প্রতি লাদাখ ও উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে ওই অঞ্চলের অনেক প্রজাতির সংখ্যা কমে গেছে ।

  1. বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ : বিদেশ থেকে নতুন নতুন প্রজাতি আমদানি করার ফলে তারা দেশীয় দুর্বল প্রজাতিগুলি  বাসস্থান দখল করে যার ফলে স্থানীয় জীবের সংখ্যা কমে যায় । যেমন—

( i ) কুকুর , শুয়োর ও ছাগল : গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে এই প্রাণীগুলি আমদানি করার ফলে সেখানকার কচ্ছপের সংখ্যা কমে গেছে।

( ii ) মাছ : আফ্রিকা থেকে তেলাপিয়া ও বড়ো জাতের মাগুর ( Clarias garipinus ) আমদানি করার ফলে আমাদের দেশের মৌরলা , খলসে , তেচোখা মাছের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে।

( iii ) কচুরিপানা : ব্রাজিল থেকে গাছটি আমাদের দেশে নিয়ে আসে। বর্তমানে আমাদের দেশের খাল বিলে গাছটির প্রাচুর্য লক্ষণীয়।

 ( iv ) পার্থেনিয়াম:  মেক্সিকো থেকে গম আমদানি করার সময় গাছটি আমাদের দেশে চলে আসে এবং গাছটির সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বেড়ে যায় । গাছটির পরাগরেণু অ্যালার্জি সৃষ্টি ।

সুন্দরবন নামটির সঙ্গে কম বেশি আমরা সবাই পরিচিত। এই সুন্দরবন নামের  কারণ এর — সুন্দরী গাছ ।তবে বর্তমানে সুন্দরবনে সুন্দরী গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে । কিছুদিন আগে সুন্দরবনে যে ভয়ংকর ‘ আয়লা ‘ ঝড় হয়েছিল, টিভিতে মাঝে মাঝে দেখা যায় , সুন্দরবনের বাঘ লােকালয়ে ঢুকে পড়ছে এবং মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে । এগুলিই সুন্দরবনের পরিবেশগত সমস্যা ।  এই সমস্যাগুলির কারণ নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১। নগরায়নের জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদ ধ্বংস : জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বহু বসতি স্থাপনের ফলে সুন্দরবনে লবণাম্বু উদ্ভিদের অরণ্য গত 100 বছরে অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । লবণাম্বু উদ্ভিদ ধ্বংসের কারণগুলি হল-

i ) গৃহনির্মাণ:  সাধারণ মানুষেরা তাদের গৃহনির্মাণের উপকরণগুলি লবণাম্বু উদ্ভিদ থেকে সংগ্রহ করে । ফলে অরণ্য  ধ্বংস হয় ।

ii ) জ্বালানি : জ্বালানির জন্য কাঠের প্রয়োজনে এলাকার লােকেরা বনভূমি ধ্বংস করছে ।

iii ) ফার্নিচার তৈরি : সুন্দরী গাছের কাঠ থেকে ভালো ফার্নিচার তৈরি হয় তাই সুন্দরী গাছ বেশি কাটা হচ্ছে এবং এদের সংখ্যা কমতে থাকছে।

২। কৃষি : সুন্দরবনের বেশিরভাগ মানুষই কৃষির ওপর নির্ভরশীল । আধুনিক প্রথায় নদীবাঁধের ওপর ও নীচু জমিতে কৃষিকাজের ফলে বর্তমানে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে । যেমন-

  1. i) চাষের জমিতে নোনাজল প্রবেশ : অনেক সময় বাঁধ ভেঙে নদী ও মোহনার নোনাজল চাষের জমিতে প্রবেশ করে চাষের ব্যাঘাত ঘটায় । এর ফলে ওই জমি দু – তিন বছর চাষের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
  2. ii) কীটনাশক ও সার ব্যবহার : কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা , লবণের মাত্রা ও জমির সছিদ্রতা বিঘ্নিত হচ্ছে ।

iii) চাষের জমিতে বালির প্রবেশ : চাষের জমিতে বালি প্রবেশ করায় সেখানে জমিতে সবরকম ফসল চাষ করা যায়না ।

৩। মিষ্টি জলের সংকট : সুন্দরবনে মিষ্টিজলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে । ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরি হবার পর গঙ্গার গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় সুন্দরবনে খাঁড়ি ও মোহনা অঞ্চলে মিষ্টি জলের সংকট দেখা দিয়েছে । কম বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণেও এই অঞ্চলে মিষ্টিজলের সংকট দেখা যায় । এর ফলে—

i ) জলে ও মাটিতে লবণের পরিমাণ বাড়ছে ।

ii ) সুন্দরী ও আরও অন্যান্য গাছের সংখ্যা কমছে কারণ সুন্দরী গাছ মিষ্টিজল যুক্ত স্থানে ভালাে জন্মায় ।

iii ) বাঘেদের পানীয় জলের অভাব এবং খাঁড়ির কুমির ও রিভার টেরাপিন – এর মতো প্রাণীদের সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

iv ) মিষ্টিজলে বসবাসকারী মাছ ও প্রাণীদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে ।

৪। বাসস্থান ধ্বংস : প্রচুর  বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে বন্যপ্রানীরা বাসস্থান তাদের বাসস্থান হারাচ্ছে। এর ফলে-

  1. i) ভূমিক্ষয় : লবনাম্বু উদ্ভিদের মূলগুলি মাটি আঁকড়ে থাকায় ভূমিক্ষয় রােধ হয় । কিন্তু বনভূমি কমতে থাকায় এই অঞ্চলে ভূমিক্ষয়ের পরিমান বেড়ে গেছে ।

ii ) বন্যপ্রাণীদের লোকালয়ে প্রবেশ : বাসস্থান ধ্বংসের ফলে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে এবং মানুষের সঙ্গে সংঘাতে অনেক প্রাণীরা মারাও যাচ্ছে ।

iii ) ঝড় : ঘন জঙ্গল ঝড় প্রতিরােধে সাহায্য করে কিন্তু বন ধ্বংসের ফলে এই অঞ্চলে ঝড়ের প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে ।

৫। খাদ্য- খাদকের সংখ্যার ভারসাম্যে ব্যাঘাত : বনভূমি ধ্বংসের ফলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে । খাদ্যের খোঁজে খাদকেরা নিজস্ব বাসস্থান ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে , যার ফলে মাংসাশী বাঘ সরাসরি মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে মারা যাচ্ছে ।

৬। দূষণ : বায়ুদূষণের ফলে পরিবেশের তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জলের উচ্চতা বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে জলে লবণের পরিমাণও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে , যার ফলে- গাছের সংখ্যা কমছে,  দূষণের কারণে সুন্দরী গাছের আগাগুলি শুকিয়ে একপ্রকার মারা যাচ্ছে ।

৭। সমুদ্রের জলের উচ্চতা বৃদ্ধি : বনভূমি ধ্বংস ও গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধির জন্য দিন দিন পরিমাণ সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । যার ফলে-

  1. i) অনেক  ছোটো  ছোটো দ্বীপ একদিন ডুবে যাবে।

ii ) দ্বীপগুলিতে বন্যার পরিমাণ বেড়ে যাবে।

iii ) দ্বীপগুলির উদ্ভিদ ও প্রাণীরা একদিন প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাবে ।

জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে তার গুরুত্ব সম্পর্কে পূর্বে আলােচনা করা হয়েছে । এই জীববৈচিত্র্যকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পরিবেশ ঠিক রাখতে জীববৈচিত্র্যকে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় বা কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় তা বর্তমান আলোচনার বিষয় ।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ : জীববৈচিত্র্যের রক্ষণাবেক্ষণ , তার সুষ্ঠু বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার ও পুনরুদ্ধারকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বলা হয় ।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতি : জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় । যথা— ইন সিটু সংরক্ষণ ও এক্স সিটু সংরক্ষণ ।

১। ইন – সিটু সংরক্ষণ ( in – situ ) বা স্বস্থানে সংরক্ষণ : বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলিকে যখন তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে রেখে সংরক্ষণ করা হয় তাকে ইন – সিটু সংরক্ষণ বলে। সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি হল — জাতীয় উদ্যান , অভয়ারণ্য , বায়ােস্ফিয়ার রিজার্ভ ও সংরক্ষিত বনান্ঞ্চল নির্মাণ । নিম্নে পদ্ধতিগুলি আলোচিত হলো-

  1. জাতীয় উদ্যান ( National Park ) : বিশেষ বাসস্থান কেন্দ্রিক সংরক্ষিত অরণ্য যেখানে সেই বাসস্থানের উপযোগী প্রাণীদের সংরক্ষণ করা হয় এবং যা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন তাকে জাতীয় উদ্যান বলা হয় ।

বৈশিষ্ট্য : ( i ) কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও উদ্যানটি যে রাজ্যের অন্তর্গত সেই রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় আইন প্রয়োগ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে ।

( ii ) জাতীয় উদ্যানের আয়তন অভয়ারণ্যের থেকে বড়ো ।

( iii ) পর্যটক প্রবেশ করতে পারলেও সেখানে  প্রাণীহত্যা , গাছ কাটা , চড়ুইভাতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ।

( iv ) এক্ষেত্রে গবেষণার কোনো সুযোগ নেই ।

( v ) জিনপুল সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই ।

উদাহরণ : 

( i ) সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান : পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত এই উদ্যান সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ – এর কিছুটা অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত । এখানে বাঘ , কুমির ইত্যাদি সংরক্ষিত ।

( ii ) করবেট জাতীয় উদ্যান : উত্তরাখণ্ডে অবস্থিত এই উদ্যানের আয়তন 525 বর্গ কিমি । এখানে সংরক্ষিত প্রাণীগুলি হল— বাঘ , হাতি , হরিণ , নীলগাই , বন্য শুকর , পাইথন ইত্যাদি


  1. অভয়ারণ্য ( Sanctuary ) : এটি রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন  বিশেষ প্রজাতিকেন্দ্রিক ( একশৃঙ্গ গন্ডার , গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড ) অরণ্য যেখানে বন্যপ্রাণীর নির্ভয়ে বসবাস ও প্রজনন করতে পারে।

বৈশিষ্ট্য : ( i ) রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ।

( ii ) বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত দ্বারা অরণ্যের সীমানার পরিবর্তন করা সম্ভব ।

( iii ) এটি প্রজাতিভিত্তিক ।

( iv )  পর্যটনের জন্য অনুমতির প্রয়োজন পড়ে ।

উদাহরণ :

( i ) জলদাপাড়া অভয়ারণ্য : পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত এই অরণ্যের  আয়তন 216.5 বর্গকিমি । একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষণের জন্য এটি বিখ্যাত । এ ছাড়াও হাতি , পাইথন , হরিণ ও গাউর এখানকার উল্লেখযোগ্য প্রাণী ।

( ii )  পেরিয়ার অভয়ারণ্য : কেরল রাজ্যে অবস্থিত । এর আয়তন 777 বর্গকিমি । হাতি সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানে বাঘ , প্যান্থার , গাউর , লেপার্ড , কালাে নীলগিরি লেগুর , হর্নবিল উল্লেখযোগ্য প্রাণী।

C . সংরক্ষিত বন ( Reserve Forest ) : নির্দিষ্ট কোনো অরণ্যে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমে গেলে বনবিভাগের নির্দেশে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্য প্রানী সংরক্ষণ করা হয় ও জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এরূপ অরণ্যকে সংরক্ষিত  অরণ্য বলে।

বৈশিষ্ট্য : ( i )  এরূপ অরণ্য আয়তনে ছোটো হয়।

( ii ) বনজ উদ্ভিদ , প্রাণী , বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষিত হয় ।

( iii ) বন্যপ্রাণীরা এখানে জন্ম থেকে স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত নির্ভয়ে বাস করতে পারে ।

( iv ) পর্যটকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ।

উদাহরণ : ( i ) চাপরামারি সংরক্ষিত অরণ্য : এটি পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত । এখানে একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষণ করা হয় ।

( ii ) গোরুমারা সংরক্ষিত অরণ্য : পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত এই অরণ্যে একশৃঙ্গ গন্ডার , হাতি , বাঘ , হরিণ ও বন্য শুয়োর সংরক্ষিত হয়।

( iii ) বন্দিপুর সংরক্ষিত অরণ্য : কর্ণাটক রাজ্যে অবস্থিত ।

  1. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ( Biosphere Reserve ) : 1975 সালে UNESCO- এর Man and Biosphere programme- এর কার্যক্রম অনুযায়ী ‘ বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ’ – এর ধারণা নির্মিত হয় । একটি বিশেষ বাস্তুতন্ত্র  সমন্বিত বৃহৎ অঞ্চলকে একত্রে সংরক্ষিত করা হলে , তাকে  বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বলে । এটির মূল চারটি উদ্দেশ্য হল- ( i ) সংরক্ষণ , ( ii ) শিক্ষা  , ( iii ) গবেষণা ও ( iv ) স্থানীয় সহযোগিতা ।

বৈশিষ্ট্য : একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভে তিনটি অংশ বর্তমান , যেমন— কোর অঞ্চল , বাফার অঞ্চল ও পরিবৃত্তি অঞ্চল বা ট্রানজিশন অঞ্চল । ( i ) কোর অঞ্চলের জীবসমূহ ও বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে আইন দ্বারা সংরক্ষিত হয় । এই স্থানে কোনো  বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় না ।

( ii ) কোর অঞ্চলকে ঘিরে অবস্থান করে বাফার অঞ্চল যেখানে গবেষণা , শিক্ষামূলক কাজকর্ম ও সম্পদ সংগ্রহের জন্য সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারে ।( iii ) একদম বাইরের অঞ্চল হল ট্রানজিশন অঞ্চল , যেখানে সংরক্ষণ পরিচালনার সাথে সাথে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় বসবাস , চাষবাস , পর্যটন ও বিনোদন সম্পন্ন হয় উদাহরণ : ( i ) সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ( 1988 ) : পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত ; 4264 বর্গমাইল যুক্ত স্থান । এখানে বাঘ ও কুমির সংরক্ষণ কেন্দ্র ও পাখিরালয় ( সজনেখালি ) অবস্থিত।

( ii ) নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ( 1986 ) : এটি ভারতের প্রথম বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ । 5520 বর্গকিমি স্থানযুক্ত এটি কর্ণাটক , কেরল ও তামিলনাড়ু রাজ্যে অবস্থিত ।

২। এক্স – সিটু – সংরক্ষণ : যখন কোনো প্রাণীকে তার স্বাভাবিক বাসস্থানে কোনো ভাবেই বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব  হয় না , তখন তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে অন্য স্থানে ( যেমন- বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানায় ) রাখা হয় ও তাদের বাঁচার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে কৃত্রিমভাবে সংখ্যা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা হয় । এরকম সংরক্ষণ পদ্ধতিকে এক্স – সিটু সংরক্ষণ বলে ।

এক্ষেত্রে বিবর্তন বজায় থাকে না এবং সমগ্র জীবদেহ বা জীবদেহাংশ ( বীজ , পরাগরেণু , ডিম্বক , শুক্রাণু , ডিম্বাণু , জিন ও কোশকলা ) সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় । যেমন— কলসপত্রী উদ্ভিদকে শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে এবং একশৃঙ্গ গন্ডারকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় রাখা হলে তা এক্স – সিটু সংরক্ষণ – এর উদাহরণ। এটি কয়েক প্রকারের হয়। যেমন—

A . বোটানিক্যাল গার্ডেন ( Botanical Garden ) : বিপন্ন , বিপদগ্রস্ত ও বন্যপরিবেশে বিলুপ্ত উদ্ভিদগুলিকে বােটানিক্যাল গার্ডেনে সংরক্ষণ করে রাখা হয় ও কৃত্রিমভাবে প্রজননের মাধ্যমে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটানো হয় ।

বৈশিষ্ট্য : ( i ) বহু বিদেশি উদ্ভিদ সংরক্ষিত করা সম্ভব ।

(ii ) হার্বেরিয়াম শুষ্ক উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা যায় ।

( iii ) বোটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যে আরবোরেটাম ( বৃক্ষ ) , অর্কিডেরিয়াম ( অর্কিড ) ও বামবুসিটাম ( বাঁশ ) থাকে ।

  1. চিড়িয়াখানা ( Zoological Garden ) : বন্যপরিবেশে বিলুপ্ত , অতি সংকটাপন্নও বিপদগ্রস্ত প্রাণীদের চিড়িয়াখানায় রেখে তাদের  সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রজননের মাধ্যমে সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। তাদের মধ্যে সংরক্ষিত জেব্রা ।

বৈশিষ্ট্য : ( i ) বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত প্রাণী সংরক্ষণ করা যায় । ( ii ) বন্দি অবস্থায় প্রজনন ঘটিয়ে সংকর প্রাণী ( টাইগন , হেব্রা , লাইজার ) সৃষ্টি করা যায়। ( ii ) বিদেশের প্রাণী রাখা যায় ।

  1. ক্রায়োসংরক্ষণ ( Cryopreservation ) : যে এক্স সিটু সংরক্ষণ পদ্ধতিতে প্রাণীর শুক্রাণু , ডিম্বাণু এবং উদ্ভিদের পরাগরেণু , বীজ ইত্যাদি তরল নাইট্রোজেনের অতি নিম্ন তাপমাত্রায় ( 196 ° C ) সংরক্ষণ করা হয় , তাকে ক্রায়োসংরক্ষণ বলে ।

( i ) বীজ ব্যাংক : উদ্ভিদের বীজ সংরক্ষণ করে রাখা হয় ।

( ii ) জার্মপ্লাজম ব্যাংক : প্রাণীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু অতিনিম্ন তাপমাত্রায় ( 196 ° C ) সংরক্ষণ করা হয় ।

( iii ) জিন ব্যাংক : লুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর DNA বা জিন সংরক্ষণ করে আসন্ন বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গবেষণা চলছে । শস্য উদ্ভিদের সমগ্র জিন ও তাদের বন্য বৈচিত্র্যের জিন সংরক্ষণ করে ভবিষ্যতে যাতে উন্নত গুণযুক্ত উদ্ভিদ সৃষ্টি করা এবং তাদের অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য গবেষণা চলছে।পরাগযোগ ঘটানো যায় ।

( iv ) পরাগ ব্যাংক : হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে উদ্ভিদের পরাগরেণু নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় ও জীবিত উদ্ভিদের সঙ্গে

এক্স – সিটু সংরক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধা :

সুবিধা- ( i ) সর্বদা মানুষের তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন । ( ii ) বন্দিদশায় প্রজনন ঘটিয়ে সৃষ্ট প্রাণীগুলিকে পরে বনে ছেড়ে দেওয়া  যায় ।

অসুবিধা— ( i ) সর্বদা অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হয় না।

( ii ) এই পদ্ধতি বিবর্তনে সহায়ক নয় ।

( iii ) কয়েকটি সীমিত প্রজাতির সংরক্ষণ করা যায় ।


ইন – সিটু ও এক্স – সিটু সংরক্ষণের পার্থক্যঃ

                ইন – সিটু সংরক্ষণ                 এক্স – সিটু সংরক্ষণ
১। এক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্যকে তার স্বাভাবিক বাসস্থানে রেখে সংরক্ষণ করা সম্ভব।

২। নির্দিষ্ট একটি প্রজাতির সাথে অন্যান্য প্রজাতিগুলিও সংরক্ষিত হয় ।

৩। জাতীয় উদ্যান , অভয়ারণ্য , সংরক্ষিত বন ও বায়ো স্ফিয়ার রিজার্ভ ইত্যাদির মাধ্যমে ইন – সিটু সংরক্ষণ করা হয়।

৪। এক্ষেত্রে বিবর্তন বজায় থাকে ।

১। জীববৈচিত্র্যকে বা তার দেহাংশকে স্বাভাবিক বাসস্থানের বাইরে এনে সংরক্ষণ করা হয় ।

২। এরকম ঘটনা ঘটে না ।

 

৩। উদ্ভিদ উদ্যান , চিড়িয়াখানা , বীজব্যাংক , স্পার্ম , ওভাম  ব্যাংক ইত্যাদির মাধ্যমে এক্স – সিটু সংরক্ষণ করা হয় ।

৪। বিবর্তন বজায় থাকে না ।

এতক্ষন জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও বনভূমির অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানা হলো। বায়ুতে উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ গ্রিনহাউস গ্যাস, আর এই গ্রিনহাউস গ্যাস গ্রহণ করে তাপমাত্রার সমতা বজায় রাখতে পারে কেবল সবুজ উদ্ভিদই। অর্থাৎ বনভূমিকে সংরক্ষণ করা ছাড়া এই পৃথিবীকে বাঁচানোর কোনো উপায় নেই। আর সেটা কেবল দেশীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরে নয়, বনভূমি-প্রশস্থ সকল স্থানীয় বাসিন্দাদের যদি এই সংরক্ষণ প্রকল্পে যুক্ত করা যায় তাহলেই আসবে প্রকৃত সাফল্য। নিম্নলিখিত অংশে আমরা দেখবো কিভাবে এই প্রকল্পগুলি কাজ করে:

  1. (JFM) জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট: 

ভারত সরকার প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা জাতীয় বননীতির এক বিশেষ অংশ। ক্ষয়প্রাপ্ত জমিকে পুনরুজ্জীবিত করা ও পতিত জমিতে বৃক্ষরোপনের উদ্দেশ্যে গঠিত। স্থানীয় মানুষ ও সরকারি বনকর্মীদের উদ্যোগে সুষ্ঠু ভাবে সনসৃজন ও সংরক্ষণ দ্বারা স্থানীয় মানুষদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটানো ও বনান্ঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখার পদ্ধতিকে  JFM বলে।

গঠনের ইতিহাস: ১৯৭১ সালে মেদিনীপুর জেলার আরাবাড়ি অঞ্চলের নষ্ট হয়ে যাওয়া শাল জঙ্গলটি পুনরুদ্ধারের কাজে নেমে পড়েছিলেন ফরেস্ট অফিসার এ.ক.ব্যানার্জি ও স্থানীয় মানুষরা. অরণ্যের সুরক্ষা ও স্থানীয়দের অর্থনীতি উজ্জীবন এই ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য. এই প্রকল্পের সাহায্যে গ্রামবাসীরা শাল, রজন প্রভৃতি সম্পদ দ্বারা স্বনির্ভর হতে শুরু করে. প্রকল্প শুরু হওয়ার মাত্র ১০ বছরের মধ্যে এই জঙ্গলটি এক বৃহৎ জঙ্গলে পরিণত হয় যার বর্তমান মূল্য ১২.৫ কোটি টাকা।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জয়েন্ট ফরেস্ট মানাজেমেন্টের গুরুত্ব: রাজ্য বনদপ্তরকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সক্রিয় সহযোগিতা করা, বনে চোরাশিকারের ঘটনা প্রতিরোধ করা, দাবানল, বনভূমি বিনাশের চেষ্টা, বেআইনি পশুশিকার, বেআইনি খননকার্য রোধ এবং একইসাথে বনজ উদ্ভিদচাষের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা করা যায়। যেমন:

জ্বালানি: শুকনো কাঠ, পাতা জ্বালানীর কাজে ব্যবহৃত করা হয়।

প্রাণীজ সম্পদ: মধু, মোম ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারে।

জীবিকা অর্জন: শালপাতা, রজন, বিড়ি পাতা সংগ্রহ করা জীবিকা অর্জন করা যায়।

ওষুধ: নানান রকম গাছের পাতা, বীজ, মূল ইত্যাদি ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে।

পিপলস বায়োডাইভার্সিটি রেজিস্টার(PBR): এটি একটি প্রামাণ্য নথি যা মূলত স্থানীয় মানুষের সাহায্যে তৈরি। যেখানে জীবসম্পদের প্রাপ্তিসাধ্যতা, তাদের সম্পর্কে জ্ঞান ও তাদের ব্যবহার ইত্যাদির মতো নানান ঐতিহ্যবাহী, বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের সম্মেলন রয়েছে তাকে PBR বলে।

ব্যবস্থাপনা: কোনো একটি স্থানের জীববৈচিত্র বা জীবসম্পদ সম্পর্কে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাই সবচেয়ে বেশি জ্ঞানের অধিকারী। তাই তাদের সাহায্যই এই প্রামাণ্য নথির মূল চালিকাশক্তি। কেবল উদ্ভিদ বা প্রাণীর সংখ্যা নয়, তাদের বাসস্থান, তাদের অর্থনৈতিক মূল্য, স্থানীয় মানুষদের সেই সম্পদ ব্যবহার ইত্যাদি সবকিছুই এর অন্তর্গত।

জীবসম্পদ ও বৈচিত্র সংরক্ষণে এই রেজিস্টারের ভূমিকা: এর দ্বারা অঞ্চলটির জীববৈচিত্র সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়এই বৈচিত্রের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও অতীতে এর পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায় , ভেষজ ও অর্থকরী এবং স্থানীয় মানুষের বেশি ব্যবহার্য জীববৈচিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় এই রেজিস্টারে।


পৃথিবীতে বসবাসকারী মোট নয়টি প্রজাতির মধ্যে একটি ভাগ হল বিপন্ন প্রজাতি।

সংজ্ঞা: নানা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম কারণে যে সকল প্রজাতির সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে ও অনুমান করা হচ্ছে যে তারা একদিন এভাবেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে সেই সকল প্রজাতিকে বলা হয় বিপন্ন প্রজাতি. যেমন বাঘ, একশৃঙ্গ গন্ডার, এশিয়ার সিংহ ইত্যাদি।

বাঘ: ভারতবর্ষের জাতীয় পশু বাঘ যার বিজ্ঞানসম্মত নাম  Panthera tigris। ভারতে বাঘ বলতে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নাম প্রথমেই মনে পরে যায়. কিন্তু চোরাশিকারী ইত্যাদির কারণে বাঘ আজ পরিণত একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিতে। তবে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বাঘ সংরক্ষণের জন্যে বেশ কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে যা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:

ব্যাঘ্র প্রকল্প ( 1973 খ্রিস্টাব্দের 1 এপ্রিল ) : ন্যাশনাল টাইগার কনসারভেশন অথরিটিই প্রথম ভারতে ব্যাঘ্র প্রকল্পের সূচনা করে

পশ্চিমবঙ্গ: দার্জিলিঙের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প ও সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্প

মধ্যপ্রদেশ: কানহা জাতীয় উদ্যান ও বান্ধবগড় অভয়ারণ্য

একশৃঙ্গ গন্ডার: গন্ডারের শিঙে আছে ওষধি বা উত্তেজক উপাদান: এই ভ্রান্ত ধারণার বশে চোরাশিকারীরা নির্বিচারে একশৃঙ্গ গন্ডার হত্যা করে চলেছে. যার ফলে গন্ডার লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের মধ্যে আজ অন্যতম. ভারত,সুমাত্রা ও নেপালে একশৃঙ্গ গন্ডার (Rhinoceros unicornis) ও আফ্রিকায় দুই-শিংবিশিষ্ট গন্ডার (Rhinoceros bicornis)  লক্ষ্য করা যায়.

গন্ডার সংরক্ষণ প্রকল্প:

  1. i) পশ্চিমবঙ্গ: গরুমারা ও জলদাপাড়া
  2. ii) আসাম: ওরাং, কাজিরাঙা অভয়ারণ্য ইত্যাদি

এশিয়ার সিংহ: গুজরাটের গির অরণ্যে পাওয়া যায় এশিয়ার একমাত্র সিংহ যার বৈজ্ঞানিক নাম Panthera leo . লুপ্তপ্রায় সিংহ সংরক্ষণের জন্যে গির অরণ্যকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।

কুমির: চামড়ার জন্যে ও জালে আটকে পড়ার কারণে অতীতে হত্যা করা হয়েছে যার ফলে এর সংখ্যা কমে আসছে।  জলের ভারসাম্য বজায়কারী অসংখ্য কুমিরের আজ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে কয়েকটি জায়গায় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মোহনার ও নদীর সুস্বাদু জলের কুমিরের বিজ্ঞানসম্মত নাম যথাক্রমে – Crocodilus porosus ও Crocodilus paulstres।

কুমির প্রকল্পঃ পশ্চিমবঙ্গ: সুন্দরবনের ভগবতপুর ‘ কুমির পকল্প’

ওড়িশা: ভিতরকণিকা স্যাংচুয়ারিতে কুমির সংরক্ষণ ক্রা হয়।

রেড পান্ডা: বর্তমানে বাসস্থানের অভাব ও শিকারের দাপটে ক্রমশ পৃথিবী থেকে হারাতে চলেছে এই প্রজাতি যার বৈজ্ঞানিক নাম Ailurus fulgens।

প্রকল্প: পশ্চিমবঙ্গে দার্জিলিঙে সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান ও অরুণাচল প্রদেশে নামধাপা জাতীয় উদ্যান – এ রেডপাণ্ডা সংরক্ষিত হয়।

error: Content is protected !!
Scroll to Top
×

এই ওয়েবসাইটের সব কনটেন্ট এক্সেস করুন শুধু একটা মেম্বারশীপের সাথে।  আজকেই ক্লিক করুন নিচে রেজিস্টার করার জন্যে।  অসুবিধে হলে হোয়াটস্যাপ করুন আমাদের  +919804282819