ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE Notes

ক্লাস ৯ ইতিহাস – ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE Notes – নোটস, প্রশ্নপত্র

ক্লাস ৯ ইতিহাস বিষয়ের ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE Notes। যে সকল পরীক্ষার্থী ভালো নম্বর পেতে চান তারা এই নোট, প্রশ্নব্যাংক এবং revision নোটগুলি ব্যবহার করতে পারেন। 

এখানে এই অধ্যায়ের উপর সকল তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী এবং অনুশীলনী প্রদান করা হয়েছে। আপনি প্রশ্নগুলি অনুশীলন করতে পারেন এবং প্রতিটি প্রশ্নের পরে দেওয়া সমাধানগুলি দিয়ে আপনার উত্তরগুলি যাচাই করতে পারবেন। 

এবং আপনি এই নোটগুলি পিডিএফ ফরম্যাটে ডাউনলোড করতে পারবেন এবং মুদ্রিত বই সহজেই অর্ডার করতে পারবেন।

সমস্ত নোট, প্রশ্নব্যাংক অ্যাক্সেস করার জন্য আপনাকে মেম্বারশিপ নিতে হবে, নাহলে আপনি এই পৃষ্ঠার কিছু অংশ দেখতে পারবেন।


Chapter Definitions and Short Notes

ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE – Short Notes and Definitions

রাজনৈতিক কারাগার ও ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর হিসেবে ফ্রান্স

ফরাসি বিপ্লবের উৎসের অনুসন্ধানে, ঐতিহাসিক জর্জ লেফেভর  দাবি করেছেন যে ফরাসি বিপ্লবের উৎস তার পূর্বের ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া উচিত । অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে রাজতন্ত্র একটি জটিল অবস্থান এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল ।

ফরাসি  বিপ্লব পূর্ববর্তী রাজনৈতিক কাঠামো 

ফরাসি সম্রাট ত্রয়োদশ লুই এবং তার মন্ত্রী কার্ডিনাল রিশল্যুর শাসনের সময় কেন্দ্রীভূত স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বিকাশ ঘটে এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে ষোড়শ লুইয়ের রাজত্বকালে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতায় উন্নত হয় । ফরাসি রাজতন্ত্রের পতন, যা চতুর্দশ এবং পঞ্চদশ লুই-এর শাসনামলে শুরু হয়েছিল, ষোড়শ লুই সিংহাসন আরোহণের পরে তা আরও সমস্যাজনক হয়ে ওঠে । 

ষোড়শ লুই একজন দুর্বল রাজা ছিলেন, এই সম্ভাবনা রাজকীয় ইন্টেন্ডেন্টদের সীমাহীন শক্তিকে প্রসারিত করেছিল । স্থানীয় সরকারের কর্তৃত্ব তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় । বিভিন্ন দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা সেইসময় চালু ছিল । রাজার আদেশ বা শৃঙ্খলাকে প্রায়শই আইন হিসাবে গণ্য করা হত । অন্যদিকে বিচার বিভাগ ছিল দুর্নীতিগ্রস্থ । 

লেএ-দ্য-ক্যাশ, একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চালু করেন যার দ্বারা যেকোনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব ছিল । অপরাধের জন্য অভিযুক্ত যেকেউ লেএ- দ্য-গ্রেস জারি করে মুক্তি পেতে পারে । 

ফরাসি বিচার বিভাগ আর্থিক লেনদেন দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল আবার রাজতন্ত্র ছিল সংস্কারবিরোধী । বিপ্লবের আগে ফরাসী রাজতন্ত্রের এই সংকটকে ভলতেয়ার ‘রাজনৈতিক কারাগার’ হিসাবে মনোনীত করেছিলেন ।

ফরাসি বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের অর্থনৈতিক কাঠামো

শুধু রাজনৈতিক সংকটই না , অর্থনৈতিক সংকট এবং তা কাটিয়ে উঠতে সরকারের ব্যর্থতা বিপ্লবকে অনিবার্য করে তুলেছিল । রাজতন্ত্রের প্রশ্রয়, সেইসাথে অতিরিক্ত ঋণের বোঝা প্রয়োজনীয় সংঘর্ষকে আরও বাড়িয়ে তোলে ।
প্রশাসনিক ব্যয় বাজেটের পরিমাণ ছাড়িয়েছিল সাথে কর ব্যবস্থার ফলে জনগণ অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল । এই ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে, অ্যাডাম স্মিথের ‘ওয়েলথ অফ নেশনস’- এ প্রাক বিপ্লব ফরাসি অর্থনীতিকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে ।

কর ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

  1. সবচেয়ে ধনী শ্রেণী যাজক এবং অভিজাতদের কর প্রদান থেকে অব্যাহত দেওয়া হয়েছিল । যেহেতু সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীর ক্ষেত্রে পণ্যের করভার মুক্ত ছিল, তাই ভোগ্যপণ্যের উপর যে কর ধার্য ছিল তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । 
  2. পণ্যের দাম এই সময় বেড়েছিল এবং ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা কমেছিল । ফলে পরোক্ষ কর থেকে সরকারের রাজস্ব কমে যায় । ফলস্বরূপ, ঘাটতি পূরণের একমাত্র উপায় ছিল প্রাপক শ্রেণীর রাজস্বের সুবিধাগুলি দূর করা ।
  3. রাজা ষোড়শ লুই অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে এটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছিলেন । অভিজাতরা  নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বজায় রাখার জন্য এর পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন । 
  4. কিছু ঐতিহাসিক এই আন্দোলনকে অভিজাত বিদ্রোহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । মূলত, 1770 এর দশক থেকে ফ্রান্সের তীব্র অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিপ্লবের পথ তৈরি করে ।
  5. মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান, কর বৈষম্য এবং অন্যান্য বিষয়গুলি থেকে জনগণের মনে ক্ষোভের জন্ম হয়েছিল ।

বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের কর ব্যবস্থা   

  1. বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে যাজক এবং অভিজাতদের কোনো কর দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না । মূলত  তৃতীয় সম্প্রদায়ের থেকে অধিকাংশ কর নেওয়া হতো । 
  2. ফ্রান্সের কৃষকরা একটি বিশাল করের বোঝার শিকার হয়েছিল । তাদের নানারকম কর দিতে হতো যেমন চার্চকে দিতে হত টাইথ, রাজাকে দিতে হতো ডেইলি, ক্যাপিটেশন প্রভৃতি। 
  3. সবচেয়ে বেশি কষ্টকর হলো গ্যাবেল বা লবণ কর, এছাড়া সেন্স নামক এক প্রকার বাৎসরিক খাজনা দিতে হতো । এছাড়া প্রাপ্য ফসলের একাংশ সামন্ত প্রভুকে দিতে হতো যা স্যামপার্ট নামে পরিচিত ।  
  4. সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য লৎ এৎ ভেন্তি নামক কর, মদ এবং তামাকজাত  দ্রব্যের জন্য এইদস কর ইত্যাদি দিতে হতো । 
  5. ফরাসি কৃষকদের আয়ের আশি শতাংশ তাদের সমস্ত কর পরিশোধ করতে ব্যয়িত হয় । 
  6. পূর্বোক্ত টাইট বা ধর্মকর, কৃষকদের দশমাংশ কৃষি পণ্যের এক-দশমাংশ থেকে নেওয়া হত । 
  7. গম, বার্লি, ফলমূল, শাকসবজি, এমনকি প্রাণীজ পণ্য সবকিছুতেই কর দিতে হতো । অন্যদিকে যাজকদের  কর দিতে হত না, তারা শুধু কিছু অনুদান দিতেন ।

করভি 

সামন্ত প্রভুদের সামন্ত আইনের অধীনে বিভিন্ন ধরনের ভোটাধিকার ছিল । সামন্ততান্ত্রিক নীতি অনুসারে তার কাজ সম্পাদনের জন্য তিনি কৃষকদের কাছ থেকে সামাজিক সম্মানের পাশাপাশি কিছু বিশেষ সুবিধাও পেতেন ।

  1. কৃষকদের ম্যানরের প্রভুকে  বাধ্যতামূলক শ্রম বা করভি আর্থিক কর দিতে হতো । তাদের গম ভাঙ্গানো, খাদ্য প্রস্তুত প্রভৃতি কাজ করতে হত । 
  2. তা ছাড়া, রাস্তা নির্মাণ, দুর্গ নির্মাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই বাধ্যতামূলক শ্রম দিতে হয় । 
  3. প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের বাধ্যতামূলক পরিষেবা বা দায়িত্বের জন্য কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয় । 

বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজ কাঠামো

বিপ্লবের আগে, ফরাসি সমাজ তিনটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল । দুই শ্রেণী ছাড়া সেখানে যাজক, অভিজাত  এবং ফরাসি জনগণ ছিল । সামাজিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, ফরাসিরা দুটি বিভাগে বিভক্ত ছিল – 

  1. সুবিধাভোগী 
  2. সুবিধাহীন

প্রথম সম্প্রদায় 

ফ্রান্সের প্রথম সম্প্রদায়ের যাজকরা ছিল সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণী । রাষ্ট্রীয় আইনের থেকেও ঊর্ধ্বে ছিল এই সুবিধা প্রাপ্ত শ্রেণী । এমনকি তাদের কর দিতে  হত না । যাজক সম্প্রদায় ছিল সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র 1% । যাজক সম্প্রদায় দুটি দলে বিভক্ত ছিল: 

  1. উচ্চ  যাজক সম্প্রদায়
  2. নিম্ন যাজক সম্প্রদায়

চার্চের বার্ষিক আয় ছিল প্রায় 13 কোটি লিভ্র । জমি ছাড়াও, ধর্মঘর বা টাইথ যা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হতো, তা চার্চের আয়ের অন্য একটি উৎস ছিল। 

দ্বিতীয় সম্প্রদায়   

  1. উচ্চ বংশীয় ব্যক্তিরা এবং রাজা রানীর আত্মীয়স্বজন অসিধারী অভিজাত নামে পরিচিত ছিল । 
  2. যখন রাজা কাউকে সম্মানজনক পদে নিয়োগ করে তাকে একজন অভিজাত পদে উন্নীত করেন, তখন তাদের পোশাকি অভিজাত বলে । 
  3. পোশাকি অভিজাতের সংখ্যা তিন থেকে চার লক্ষের মত ছিল, এই অভিজাতরা  ছিলেন অত্যন্ত সুবিধাভোগী । 
  4. তারা ফরাসী সমাজে কর্তৃত্বের শীর্ষে প্রতিনিধিত্ব করত এমনকি নিয়মিতভাবে ব্যাংকিং, শিল্প ও প্রশাসন ব্যবস্থায় জড়িত ছিল ।

তৃতীয় সম্প্রদায়

  1. দুটি প্রভাবশালী শ্রেণী ছাড়াও, সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল ক্ষমতাহীন । এর মধ্যে ছিল বুর্জোয়া, কৃষক ও শ্রমিক । 
  2. পুঁজিপতি, ব্যাংকার, ঠিকাদার, সরকার, কর্মচারী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী, শিল্পী ইত্যাদি বুর্জোয়াদের সমন্বয়ে গঠিত ।
  3. অন্যদিকে প্রাক-বিপ্লবী ফ্রান্সের অধিবাসীদের অধিকাংশই ছিল কৃষিভিত্তিক সমাজের অন্তর্ভুক্ত । দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৭% ছিল কৃষক সম্প্রদায় । 
  4. ফরাসী শ্রমজীবী সমাজে কৃষক, দিনমজুর, মালি, কাঠুরে, রাজমিস্ত্রি প্রভৃতি বিভাজন ছিল। 
  5. অষ্টাদশ শতাব্দীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দরিদ্র কৃষকরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল । 
  6. এই শহরের দরিদ্র মানুষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশের গ্রামসমাজ থেকে এসেছে । তাদের বেতন ছিল অত্যন্ত কম । তাদের অনেকেই ভিক্ষা করতে বা সমাজসেবা করতে বাধ্য হয়েছিল 

দৈব রাজতন্ত্রের ধারণা

প্রচলিত ছিল বিশ্বের বেশিরভাগ রাজতন্ত্র, কোন কোন সময় দৈব রাজতন্ত্রের ধারণাকে প্রাধান্য দিয়েছে । এই তত্ত্ব অনুসারে, রাজা তার প্রজা বা কোন বিশেষ ক্ষমতার কাছ থেকে রাজ্য শাসনের কর্তৃত্ব পাননি, এমনকি রাজা তার নিজের বিশেষ ক্ষমতার জন্য পাননি । 

  1. ঐশ্বরিক নির্দেশ অনুসারে, রাজা স্বয়ং ঈশ্বরের কাছ থেকে এই বিশেষত্ব অর্জন করেছিলেন । ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তিনি কারো কাছে দায়বদ্ধ নন । 
  2. দৈবরাজতন্ত্রের তত্ত্ব অনুসারে রাজা তার রাজ্যে আইন, বিচার এবং প্রশাসনের প্রধান । 
  3. কিছু ইংরেজ ও ফরাসি দার্শনিক রাজার সার্বভৌমত্বের বিরোধিতা করে সামাজিক চুক্তির ধারণা গড়ে তুলেছিলেন । ফরাসি বিপ্লবের আগে দার্শনিক রুশো এই তত্ত্বকে জনপ্রিয় করেছিলেন ।

ফরাসি স্বৈরাচার ও অর্থনৈতিক নীতি বিষয়ে দার্শনিকদের

সমালোচনার বিভিন্ন ধারা : 

ফরাসি জনগণ সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ ছিল । পরিবর্তনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি বা বিপ্লবের মানসিকতা এবং দার্শনিক জনসাধারণ এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ।

অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসি বিপ্লবের কেন্দ্রে ছিল যুক্তিবিদ্যা । সেই সময়ে, ফ্রান্সের একজন বুদ্ধিমান দার্শনিক এবং লেখক ধর্ম, সমাজ এবং ইতিহাস সম্পর্কে বৈপ্লবিক চিন্তার ঝড় তুলেছিলেন । ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবে ভলতেয়ার, মন্তেস্কু বা রুশো জীবিত ছিলেন না । প্রচলিত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্তৃত্বের ত্রুটিগুলির প্রতি শিক্ষিত জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মাধ্যমে বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই । 

মন্তেস্কু 

  1. মন্তেস্কুর প্রকৃত নাম ছিল ফ্রাঁসোয়া মারি আরুয়ে, তিনি অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তিনি ইংল্যান্ডের মুক্ত সামাজিক কাঠামোর অনুরূপ ফ্রান্সে সামাজিক সংস্কার চেয়েছিলেন । তার কাছে সব অযৌক্তিক ধারণা এবং প্রতিষ্ঠান ছিল অসহ্যকর ।
  2. মন্তেস্কু ক্যাথলিক চার্চকে “A PRIVILEGED  NUISANCE” হিসেবে উল্লেখ করেছেন । বিতর্কের প্রধান বিষয় ছিল সাংবিধানিক সমস্যা । তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, সমস্যাগুলি আরও বাড়বে যদি প্রশাসন, আইন এবং আদালত একই ব্যক্তি বা সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
  3. মন্তেস্কু 1748  সালে প্রকাশিত তাঁর বই ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’ -এ ক্ষমতা বিভাজনের তত্ত্ব বর্ণনা করেছেন । এই তত্ত্ব অনুসারে, আইন, বিচার এবং প্রশাসন বিভাগ পৃথক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন । 
  4. মন্তেস্কু তার অন্য আরেকটি বই ‘দি পার্সিয়ান লেটারস’  [১৭২১]-এ ফরাসি সমাজ, অভিজাততন্ত্র এবং রাজতন্ত্রের প্রধান ত্রুটি ও অপ্রতুলতাকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন । 

ভলতেয়ার

  1. ভলতেয়ার ছিলেন একজন দার্শনিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক । ‘লেতর ফিলজফিক’ এবং ‘কাঁদিদ’ হলো তাঁর দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ । 
  2. ব্যঙ্গাত্মকভাবে সমাজ ও ধর্মীয় সংগঠনের দুর্বলতা প্রকাশে তাঁর কোনো সমকক্ষ ছিল না ।
  3. তিনি তাঁর শ্লেষাত্মক লেখার মাধ্যমে গির্জা ও যাজকদের দুর্নীতি ও অনাচার সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সজাগ করেন । স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার অস্বীকার করার বিষয়েও তিনি আপত্তি জানিয়েছেন ।

রুশো 

  1. জাঁ-জেকুইস রুশো ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর সবচেয়ে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় লেখক। রুশো বিশ্বাস করতেন যে, মানুষ একটি স্বাধীন সত্তা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে । যদিও সারা বিশ্বে মানুষ দাসত্বের শিকার । সেই আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক স্বাধীনতা অর্জন করা মানুষের দায়িত্ব ।
  2. তাঁর সবচেয়ে সুপরিচিত গ্রন্থ হল ‘সামাজিক চুক্তি বা Social Contract’ । তিনি এই গ্রন্থে দাবি করেন যে, আদিম মানুষ একটি অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে ব্যক্তিবিশেষকে শাসকের পদ দিয়েছে । অর্থাৎ রাষ্ট্র হলো জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্বকারী । রাজার দেবত্ব ভুল । 
  3. জনগণের সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রয়োগের অধিকার রয়েছে । তিনি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাকে পদচ্যুত করার আইনগত অধিকার জনগণের রয়েছে । রুশোর রচনা সারাদেশে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে । 
  4. ‘SOCIAL CONTRACT’ ব্যতিত তাঁর অন্য একটি বিখ্যাত গ্রন্থ ছিল ’ORIGIN OF INEQUALITY’ বা অসাম্যের সূত্রপাত । এই গ্রন্থে , তিনি দেখিয়েছেন যে মানুষ সমান অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে কিন্তু লোভী এবং স্বার্থপর সামাজিক ব্যবস্থার কারণে সে প্রতিবাদ করার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হয় । 
  5. তাঁর সামাজিক চুক্তির ধারণা জনগণকে রাজার অন্যায় অর্জনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল । 
  6. ডেনিস ভিডেরো, ডি-অ্যালেমবার্ট প্রমুখেরাও  দার্শনিক রাষ্ট্র এবং গীর্জার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন । 
  7. তিনি 35টি খণ্ডে একটি বিশাল বিশ্বকোশ সংকলন করেন যেখানে রাজ্যের সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক এবং ঐতিহাসিক যুক্তিসম্মত সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা রয়েছে । 
  8. জিন মেসলিয়েরও ফরাসী চার্চ, রাজতন্ত্র এবং আভিজাততন্ত্রের তীব্র নিন্দা করেন এবং সমাজতন্ত্র গঠনের আহ্বান জানান ।
  9. অন্যদিকে ফিজিওক্রাট  দার্শনিকরা অর্থনৈতিক উদ্বেগের বিষয়টির উপর জোর দিয়েছেন । তাঁরা বিশ্বাস করত যে জমিই হলো রাষ্ট্রের সম্পদের উৎস । ফলে তারা কৃষি প্রবৃদ্ধি এবং মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন । 
  10. ফ্রান্সের পুরানো আর্থিক নীতির বিরোধিতা করে, তাঁরা ফরাসী বিপ্লবের মানসিকতা গঠনে অবদান রেখেছিল, যা প্রকৃত আর্থিক নীতির সাথে মিশ্রিত ছিল ।

ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার নেপথ্যে, দার্শনিকদের ভূমিকা সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে । আবার লেফেভর, মাতিয়ে , মর্স স্টিফেন্স, কোবান প্রমুখের বিভিন্ন মত রয়েছে । এদের মত  বেশিরভাগ দার্শনিকরা প্রায় প্রত্যেকেই ছিল হিংসা ও রক্তপাতের বিরোধী । তাঁদের প্রত্যেকের নিজস্ব লক্ষ্য এবং দর্শন ছিল এবং তাদের কেউই বিপ্লবের পক্ষে ছিলেন না । আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বাস্তবে বিপ্লবের প্রেক্ষাপট তৈরী করেছিল যা পরোক্ষ ভাবে আন্দোলনের জন্ম দেয় ।

Please log in to view this content.


1 Marks Questions – ১ মার্কসের প্রশ্নোত্তর

ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE Notes – ১ মার্কসের প্রশ্নোত্তর

ফ্রান্সে সন্ত্রাসের রাজত্বে নেতৃত্ব দেন— 

  1. রোবসপিয়ার
  2. মিরাব্যু 
  3. দাঁতো 
  4. অ্যাবে সিয়েস

Ans. A

ফ্রান্স ছিল ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ এ কথা বলেছিলেন— 

  1. এডমন্ড বার্ক 
  2. অ্যাডাম স্মিথ 
  3. কুইসনে 
  4. দিদেরো

Ans. B

ক্যালোন ছিলেন ফ্রান্সের – 

  1. সেনাপতি 
  2. বিদেশমন্ত্রী 
  3. প্রধানমন্ত্রি 
  4. অর্থমন্ত্রী

Ans. D

ডাঃ গিলোটিনের মৃত্যু হয়— 

  1. ফাসিতে 
  2. গুলিতে 
  3. গিলোটিনে 
  4. আত্মহত্যা করে

Ans. C

ভালমির যুদ্ধ হয়েছিল – 

  1. 1789 খ্রিস্টাব্দে 
  2. 1790 খ্রিস্টাব্দে 
  3. 1791 খ্রিস্টাব্দে 
  4. 1792 খ্রিস্টাব্দে

Ans. D

ফ্রান্সের কর কাঠামোয় ‘গ্যাবেলা’ ছিল— 

  1. ভূমিকর 
  2. উৎপাদন কর 
  3. আয়কর 
  4. লবণ কর

Ans. D

সংবিধান সভার নেতৃত্বে ফ্রান্সে ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষিত হয় 1789 খ্রিস্টাব্দে – 

  1. 26 জুন 
  2. 26 আগস্ট 
  3. 14 জুলাই 
  4. 26 সেপ্টেম্বর

Ans. B

প্রাক্ বিপ্লবযুগে ফ্রান্সে অর্থলোলুপ নেকড়ে – 

  1. ইনটেনডেন্ট নামক কর্মচারীদের 
  2. বিচারকদের 
  3. অভিজাতদের 
  4. বুর্জোয়াদের

Ans. A

‘ক্ষমতা বিভাজন নীতির কথা বলেন  – 

  1. অ্যাডাম স্মিথ 
  2. রুশো 
  3. ভলতেয়ার 
  4. মন্তেস্কু

Ans. D

‘আমিই রাষ্ট্র’ এ কথা বলেছিলেন – 

  1. চতুর্দশ লুই 
  2. পঞ্চদশ লুই 
  3. ষোড়শ লুই 
  4. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট

Ans. A

ফ্রান্সে সন্ত্রাসের রাজত্বে নেতৃত্ব দেন— 

  1. রোবসপিয়ার 
  2. মিরাব্যু 
  3. দাঁতো 
  4. অ্যাবে সিয়েস

Ans. A

বাস্তিল হল ফ্রান্সের – 

  1. রাজপ্রাসাদ 
  2. দুর্গ 
  3. গির্জা 
  4. বিশ্ববিদ্যালয়

Ans. B

কান্ট ছিলেন একজন – 

  1. ফরাসি চিন্তাবিদ 
  2. ব্রিটিশ কবি 
  3. জার্মান চিন্তাবিদ 
  4. পোর্তুগিজ নাট্যকার

Ans. A

দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল—

  1. মার্চ, 1790 খ্রি 
  2. ফেব্রুয়ারি 1791 খ্রি 
  3. আগস্ট, 1792 খ্রি 
  4. মে, 1793 খ্রি

Ans. C

ম্যারাট ছিলেন— 

  1. জ্যাকোবিন নেতা 
  2. জিরন্ডিস্ট নেতা
  3. জাতীয় সভার সভাপতি 
  4. জাতীয় রক্ষীবাহিনীর প্রধান

Ans. A

1791 খ্রিস্টাব্দে রাজা ষোড়শ লুই দেশত্যাগ করতে গিয়ে ধরা পড়েন – 

  1. 21 ফেব্রুয়ারি
  2. 20 মার্চ 
  3. 21 জুন 
  4. 25 জুলাই

Ans. C

‘দি পার্সিয়ান লেটার্স’ গ্রন্থটি লিখেছেন –

  1. রুশো 
  2. ভলতেয়ার 
  3. মন্তেস্কু 
  4. দিদেরো

Ans. C

ফ্রান্সের কর ব্যবস্থায় টাইথ ছিল— 

  1. লবণ কর 
  2. আয়কর 
  3. ধর্ম কর 
  4. ভূমি কর 

Ans. C

ফ্রান্সের প্রথম লিখিত সংবিধান রচিত হয়— 

  1. 1795 খ্রিস্টাব্দে 
  2. 1789 খ্রিস্টাব্দে 
  3. 1791 খ্রিস্টাব্দে 
  4. 1793 খ্রিস্টাব্দে 

Ans. C

নূতন প্রজাতন্ত্র বর্ষপঞ্জী প্রবর্তিত হয়— 

  1. সংবিধানের কার্যকালে 
  2. সন্ত্রাসের রাজত্বকালে 
  3. ডাইরেক্টরি শাসনকালে 
  4. কনসুলেট শাসনকালে

Ans. B

ফ্রান্সে তৃতীয় সম্প্রদায় নামে পরিচিত ছিল— 

  1. ফ্রান্সের রাজবংশ 
  2. ফ্রান্সের অভিজাত শ্রেণি 
  3. ফ্রান্সের যাজক শ্রেণি 
  4. ফ্রান্সের সাধারণ জনগণ

Ans. D

ওয়েলথ অব নেশন গ্রন্থের রচয়িতা হলেন—

  1. রুশো 
  2. ভলতেয়ার 
  3. অ্যাডাম স্মিথ 
  4. মন্তেস্ক

Ans. C

ধমর্যাজকদের সংবিধান (Civil Constitution of the Clergy, 1791) দ্বারা – 

  1. গির্জার ওপর থেকে পোপের কর্তৃত্বের অবসান ঘটে 
  2. গির্জার ওপরে পোপের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয় 
  3. গির্জার ওপরে পোপের কর্তৃত্ব একটু হ্রাস পায় 
  4. কোনোটিই নয় 

Ans. A

সংবিধান সভার নেতৃত্বে ফ্রান্সে সামন্তপ্রথার অবসান ঘটানো হয় 1789 খ্রিস্টাব্দে –

  1. 4 জুলাই 
  2. 4 আগস্ট
  3. 26 আগস্ট 
  4. 20 জুন

Ans. B

অভিজাতদের মধ্যে মুখ্য ব্যক্তিদের সভা বা ‘গণ্যমান্যদের পরিষদ’ আহ্বান করেছিলেন অর্থমন্ত্রী – 

  1. লুই তুর্গো 
  2. নেকার 
  3. ক্যালোন 
  4. ব্রিয়া

Ans. C

ফ্রান্সে ‘ইনটেনডেন্ট’গণ ছিল— 

  1. সরকারি কর্মচারী 
  2. রাজবন্দি 
  3. বেসরকারি কর্মচারী 
  4. সংগীত শিল্পী

Ans. A

  1. ফরাসি সমাজে ‘অধিকারহীন’ শ্রেণি বলা হত – 
  1. যাজক ও অভিজাতদের 
  2. সাঁ কুলোৎদের 
  3. অভিজাতদের 
  4. যাজকদের 

Ans. B

  1. ফরাসি রাজ চতুর্দশ লুই-এর শাসনকাল ছিল— 
  1. 1643-1715 খ্রিস্টাব্দ 
  2. 1643-1720 খ্রিস্টাব্দ 
  3. 1660-1720 খ্রিস্টাব্দ 
  4. 1663 -1715 খ্রিস্টাব্দ

Ans. A

  1. রাজা যোড়শ লুই দেশত্যাগের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ফ্রান্সের যে স্থানে ধরা পড়েন তা হল 
  1. ভার্সাই
  2. তুলো 
  3. নান্টেস 
  4. ভারেনে

Ans. D

  1. প্রাক্ বিপ্লবযুগে ফ্রান্সে অর্থলোলুপ নেকড়ে – 
  1. ইনটেনডেন্ট নামক কর্মচারীদের 
  2. বিচারকদের 
  3. অভিজাতদের 
  4. বুর্জোয়াদের

Ans. A

  1. ফ্রান্সে অষ্টাদশ শতকে শাসন করত— 
  1. বুরবো বংশ 
  2. অটোমান বংশ 
  3. ক্যারোলিঞ্জিয় বংশ 
  4. অর্লিয়েন্স বংশ

Ans. A

  1. অভিজাতদের মধ্যে মুখ্য ব্যক্তিদের সভা বা ‘গণ্যমান্যদের পরিষদ’ আহ্বান করেছিলেন অর্থমন্ত্রী – 
  1. লুই তুর্গো 
  2. নেকার 
  3. ক্যালোন 
  4. ব্রিয়া

Ans. C

  1. নতুন প্রজাতন্ত্র বর্ষপঞ্জি প্রবর্তিত হয়— 
  1. সংবিধানের কার্যকালে 
  2. সন্ত্রাসের রাজত্বকালে 
  3. ডাইরেক্টরি শাসনকালে 
  4. কনসুলেটের শাসনকালে

Ans. B

  1. ফ্রান্সে তৃতীয় সম্প্রদায় নামে পরিচিত ছিল— 
  1. ফ্রান্সের রাজবংশ 
  2. ফ্রান্সের অভিজাত শ্রেণি 
  3. ফ্রান্সের যাজক শ্রেণি 
  4. ফ্রান্সের সাধারণ জনগণ

Ans. D

  1. ফিজিওক্র্যাটুগণ ছিলেন একশ্রেণির – 
  1. রাজনীতিবিদ 
  2. অর্থনীতিবিদ 
  3. সাহিত্যিক 
  4. দার্শনিক

Ans. B

ফ্রান্সে অষ্টাদশ শতকে শাসন করত— 

  1. বুরবো বংশ 
  2. অটোমান বংশ 
  3. ক্যারোলিঞ্জিয় বংশ 
  4. অর্লিয়েন্স বংশ

Ans. A

  1. রবার্ট পামার এর মতে ফরাসি বিপ্লব আসলে – 
  1. বিশ্ব বিপ্লব 
  2. ইউরোপীয় বিপ্লব 
  3. মহাদেশীয় বিপ্লব 
  4. কোনো বিপ্লবই নয়

Ans. B

  1. শেষবারের মতো স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন বসেছিল— 
  1. 1789 খ্রিস্টাব্দে 
  2. 1614 খ্রিস্টাব্দে 
  3. 1641 খ্রিস্টাব্দে 
  4. 1714 খ্রিস্টাব্দে

Ans. B

  1. নতুন প্রজাতন্ত্র বর্ষপঞ্জি প্রবর্তিত হয়— 
  1. সংবিধানের কার্যকালে 
  2. সন্ত্রাসের রাজত্বকালে 
  3. ডাইরেক্টরি শাসনকালে 
  4. কনসুলেটের শাসনকালে

Ans. B

  1. ফরাসি রাজ পঞ্চদশ লুই-এর শাসনকাল ছিল— 
  1. 1710-1774 খ্রিস্টাব্দ 
  2. 1715-1774 খ্রিস্টাব্দ 
  3. 1715-1780 খ্রিস্টাব্দ 
  4. 1720-1744 খ্রিস্টাব্দ

Ans. B

  1. ট্রেইলি ছিল– 
  1. সামন্ত কর 
  2. ভূমি কর 
  3. অতিরিক্ত প্রত্যক্ষ কর 
  4. লবণ কর

Ans. B

  1. নতুন ফরাসি সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল— 
  1. 1789 খ্রিস্টাব্দে 30 সেপ্টেম্বর
  2. 1790 খ্রিস্টাব্দে 29 সেপ্টেম্বর 
  3. 1791 খ্রিস্টাব্দে 29 সেপ্টেম্বর 
  4. 1791 খ্রিস্টাব্দে 30 সেপ্টেম্বর

Ans. D

  1. ফ্রান্সে অষ্টাদশ শতকে শাসন করত— 
  1. বুরবো বংশ 
  2. অটোমান বংশ 
  3. ক্যারোলিঞ্জিয় বংশ 
  4. অর্লিয়েন্স বংশ

Ans. A

  1. ডাঃ গিলোটিনের মৃত্যু হয়— 
  1. ফাসিতে 
  2. গুলিতে 
  3. গিলোটিনে 
  4. আত্মহত্যা করে

Ans. C

  1. ফরাসি বিপ্লব হয়েছিল— 
  1. 1786 খ্রিস্টাব্দে 
  2. 1789 খ্রিস্টাব্দে 
  3. 1790 খ্রিস্টাব্দে 
  4. 1799 খ্রিস্টাব্দে

Ans. B

Please log in to view this content.

1 MARKS QUESTION- ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE Notes

1.কে ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ (Museum of Economic Errors) বলেছেন?

উত্তর অ্যাডাম স্মিথ ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ (Museum of Economic Errors) বলেছেন।

2.‘দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস’ (The Wealth of Nations) গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর। দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস (The Wealth of Nations) গ্রন্থের রচয়িতা হলেন অ্যাডাম স্মিথ।

3.ফরাসি বিপ্লব কত খ্রিষ্টাব্দে শর হয়েছিল ?

উত্তর। ফরাসি বিপ্লব ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়েছিল।

4.ফরাসি বিপ্লবের সূচনাকালে ফ্রান্সের রাজা কে ছিলেন?

উত্তর। ফরাসি বিপ্লবের সূচনাকালে ফ্রান্সের রাজা ছিলেন ষােড়শ লুই।

5.ষোড়শ লুই কে ছিলেন ?

উত্তর। ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের রাজা ছিলেন যােড়শ লুই।

6.ষােড়শ লুই কোন বংশের রাজা ছিলেন ?

উত্তর। যােড়শ লুই বুরবো বংশের রাজা ছিলেন।

7.মেরি আঁতােয়ানেৎ কে ছিলেন?

উত্তর। মেরি আঁতােয়ানেৎ ছিলেন রাজা ষােড়শ লুই-এর পত্নী।

8.ফ্রান্সের বুরবো রাজারা কোন্ তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন?

উত্তর ফ্রান্সের বুরবো রাজারা রাজার দৈবস্বত্বে বিশ্বাসী ছিলেন।

  1. আমিই রাষ্ট্র’– এই বিখ্যাত উক্তিটি কার?

উত্তর। ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই বলেছিলেন, “আমিই রাষ্ট্র’ (I am the state)।

10.ইনটেনডেন্ট করা ?

উত্তর- ফ্রান্সে প্রাক্-বিপ্লব পর্বে রাজস্ব আদায়কারী কর্মচারীরা

ইনটেনডেন্ট নামে পরিচিত ছিল। 

11.ফ্রান্সে প্রচলিত প্রত করের নাম লেখাে।

উত্তর ফ্রান্সে প্রচলিত প্রত্যক্ষ করের নাম হল- টেইলি,ক্যাপিটেশন, ভিংটিয়েমে।

12.টেইলি কী?

উত্তর। টেইলি হল ফ্রান্সের একপ্রকার ভূমিকর। এটি ছিল প্রত্যক্ষ কর।

13.ক্যাপিটেশন কী ?

উত্তর ফ্রান্সের প্রত্যক্ষ করগুলির মধ্যে অন্যতম ক্যাপিটেশন ছিল একপ্রকার উৎপাদনকর।

  1. ভিংটিয়েমে কী?

উত্তর ভিংটিয়েমে ছিল ফ্রান্সের একপ্রকার আয়কর।

15.ফ্রান্সে লবণ কর কী নামে পরিচিত ছিল?

উত্তর ফ্রান্সে লবণ কর গ্যাবেলা নামে পরিচিত ছিল।

  1. ফ্রান্সে ধর্মর্কর কী নামে পরিচিত ছিল ? অথবা, টাইথ কী ?

উত্তর ফ্রান্সে ধর্মর্কর টাইথ নামে পরিচিত ছিল।

17.করভি কী?

উত্তর করভি ছিল ফ্রান্সে প্রচলিত একপ্রকার কর, যাতে বাধ্যতামূলকভাবে বিনা পারিশ্রমিকে বেগার খাটতে হত।

18.যাজক কাদের বলা হত?

উত্তর যাজক হলেন কোনাে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রথাগত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন ধর্মে যাজকদের ভূমিকা এবং কার্যাবলি বিভিন্ন রকম।

  1. চার্চ বা যাজকেরা জনসাধারণের কাছ থেকে কোন্ কর আদায় করতেন?

উত্তর চার্চ বা যাজকেরা জনসাধারণের কাছ থেকে টাইথ বা ধর্মকর আদায় করতেন।

20.ফরাসি যাজকেরা রাজাকে কী কর প্রদান করতেন?

উত্তর ফরাসি যাজকেরা রাজাকে স্বেচ্ছাকর নামে একপ্রকার কর প্রদান করতেন।

21.ঐতিহাসিক ডেভিড থমসন কোন বিষয়কে বৈপ্লবিক পরিস্থিতি’ (Revolutionary Situation) বলেছেন?

উত্তর ঐতিহাসিক ডেভিড থমসন ফ্রান্সের প্রাক্-বিপ্লব জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি-কে ‘বৈপ্লবিক পরিস্থিতি’ বলেছেন।

  1. বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজ কয়টি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজ তিনটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল।

  1. বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে কারা প্রথম সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে যাজকরা প্রথম সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন।

24.বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে অভিজাতরা কোন্ সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে অভিজাতরা দ্বিতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন।

  1. ‘প্যাট্রিশিয়ান’ কারা ?

উত্তর। ফরাসি বিপ্লবের আগে ফরাসি সমাজের অভিজাতরা। ‘প্যাট্রিশিয়ান’ নামে পরিচিত ছিলেন।

26.বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে বুর্জোয়ারা কোন্ সম্প্রদায়ভুক্ত। ছিলেন?

উত্তর। বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে বুর্জোয়ারা তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন।

27.প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সে কৃষক ও শ্রমিকরা কোন সম্প্রদায়ভুক্ত। ছিল?

উত্তর প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সে কৃষক ও শ্রমিকরা তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল।

28.‘প্লেবিয়ান’ কারা?

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের আগে ফরাসি সমাজের তৃতীয় শ্রেণির মানুষরা ‘প্লেবিয়ান’ নামে পরিচিত ছিল।

29.সাঁকুলােৎ কাদের বলা হয় ?

উত্তর সাঁকুলাে বলতে ফ্রান্সের খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষদের বােঝানাে হয়।

30.বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে সুবিধাহীন সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ (Non Privileged Class) কারা ছিলেন ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা ছিলেন সুবিধাহীন সম্প্রদায়।

31.বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে সুবিধাভােগী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ (Privileged Class) কারা ছিলেন ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজে যাজক ও অভিজাতরা ছিলেন সুবিধাভােগী সম্প্রদায়।

32.বুর্জোয়া বিপ্লব কাকে বলা হয় ?

উত্তর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন রাজা ষােড়শ লুই-এর তিন সম্প্রদায়ের একত্রে অধিবেশন এবং মাথাপিছু ভােটের দাবি মেনে নেওয়াকে বুর্জোয়া বিপ্লব’ বলা হয়।

33.কোন দার্শনিক রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে বাস্তিল দুর্গে আটক ছিলেন?

উত্তর ভলতেয়ার রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে বাস্তিল দুর্গে আটক ছিলেন।

34.দ্য স্পিরিট অফ লজ’ (The Spirit of Laws) গ্রন্থের বচয়িতা কে?

উত্তর। ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন মন্তেস্কু।

35.দ্য পার্সিয়ান লেটারস’ (The Persian Letters) গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর ‘দ্য পার্সিয়ান লেটারস’ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন মন্তেস্ক।

36.কাদিদ (Candide) গ্রন্থের রচয়িতা কে ছিলেন?

উত্তর কাদিদ’ গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন ভলতেয়ার।

37.লেতর fapoufa’ (Letters Philosophiques) গ্রন্থের রচয়িতা কে ছিলেন?

উত্তর। লেতর ফিলজফিক’ গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন ভলতেয়ার।

38.কোন গ্রন্থকে ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল’বলা হয় ?

উত্তর সােশ্যাল কন্ট্রাক্ট (Social Contract) গ্রন্থকে ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল’ বলা হয়।

39.সামাজিক চুক্তি’ (Social Contract) গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর। সামাজিক চুক্তি’ (Social Contract) গ্রন্থের রচয়িতা হলেন রুশাে।

40.রুশাে কে ছিলেন?

উত্তর রুশাে ছিলেন একজন বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক।

41.Origin of Inequality’ (অসাম্যের সূত্রপাত) গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তর Origin of Inequality’ (অসাম্যের সূত্রপাত) গ্রন্থের রচয়িতা হলেন রুশাে।

42.কাকে ফরাসি বিপ্লবের জনক বলা হয় ?

উত্তর রুশাে-কে ‘ফরাসি বিপ্লবের জনক’ বলা হয়।

43.“জনগণই হল রাষ্ট্রের সার্বভৌম শক্তির উৎস”- কে বলেছেন?

উত্তর ফরাসি দার্শনিক রুশাে উপরােক্ত উক্তিটি করেছেন।

44.একজন বিশ্বকোশ (Encyclopedia) প্রণেতার নাম লেখাে।

উত্তর একজন বিশ্বকোশ (Encyclopedia) প্রণেতার নাম হল দেনিস দিদেরাে।

45.জাতীয় সভা’ (National Assembly) কী ?

উত্তর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন স্টেট জেনারেলের অধিবেশনে তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা নিজেদের সভাকে জাতীয় সভা’ (National Assembly) বলে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ জাতীয় সভা হল তৃতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিজস্ব সভা।


Short Answer Type প্রশ্নোত্তর – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি- Marks 2 – অনধিক ৩ টি বাক্যে উত্তর দাও

ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE– Short Answer Type Questions –  সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1.কে ফ্রাঙ্গাকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ বলেছেন? কেন বলেছেন?

উত্তর বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ বলেছেন। ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলা হয় কারণ-

1 ফ্রান্সে প্রচলিত করব্যবস্থা ছিল বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতিগ্রস্ত।

  1. ফরাসি সমাজের অধিকারভােগী শ্রেণি যাজক ও অভিজাতরা ছিলেন অধিকাংশ জমির মালিক; কিন্তু এজন্য তারা কোনাে কর দিতেন না। অপরদিকে অধিকারহীন শ্রেণির দরিদ্র কৃষকদের সমস্ত কর দিতে হত।

2 ‘রাজনৈতিক কারাগার’ (Political Prlson) কাকে বলা হয় এবং কেন?

উত্তর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বেবাস্তিল দুর্গ রাজনৈতিক কারাগার’ হিসেবে পরিচিত ছিল। বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে লেতর দ্য ক্যাশে’ নামক গ্রেফতারি পরােয়ানার সাহায্যে রাজকীয় কর্মচারীরা যে-কোনাে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে বাস্তিল দুর্গে আটক করে রাখত বলে একে রাজনৈতিক কারাগার’ বলা হয়। রাজতন্ত্রবিরােধী মনােভাব প্রকাশকরার অপরাধে দার্শনিক ভলতেয়ার-কেও বাস্তিল দুর্গে আটক করে রাখা হয়।

3.বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে কয়টি প্রত্যক্ষ কর ছিল? এগুলি কী কী ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে তিনটি প্রত্যক্ষ কর ছিল।

4.|টেইলি’ কী?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে প্রচলিত একটি প্রত্যক্ষ কারের নাম

টেইলি। টেইলি হল ভূমিকর বা সম্পত্তিকর। এই কর ফরাসিদের সম্পত্তি অনুসারে ধার্য করা হত। কিন্তু বাস্তবে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র কৃষকদের এই কর দিতে হত।

5.ক্যাপিটেশন’ কী ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে প্রচলিত একটি প্রত্যক্ষ করের নাম ক্যাপিটেশন। ক্যাপিটেশন হল উৎপাদনকর। ফরাসিদের উৎপাদনের উপর এই কর ধার্য করা হত। বাস্তবে যাজক ও অভিজাতরা এই প্রদান থেকে অব্যাহতি পেতেন এবং ফ্রান্সের সাধারণ জনগণকেই তা দিতে হত।

6.ভিংটিয়েমে’ কী ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে প্রচলিত একটি প্রত্যক্ষ করের নাম ভিংটিয়েমে বা ভাতিয়াম— স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির উপর ধার্য আয়কর, যা মূলত কৃষকরা প্রদান করত। মােট আয়ের ৫% আয়কর

হিসেবে দিতে হত। অভিজাতরা এই করের কিছুটা প্রদান করলেও যাজকরা এই করপ্রদান থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত ছিলেন। ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে এই কর ফ্রান্সে চালু হয়।

7.‘টাইথ’ কী ?

উত্তর টাইথ হল ফ্রান্সে প্রচলিত ধর্মকর। ফ্রান্সের তৃতীয় সম্প্রদায় এই কর দিত চার্চ বা গির্জাকে। উৎপন্ন ফসলের ১০% ধর্মর্কর বা টাইথ হিসেবে দিতে হত।

8.কর্ভে’ বা করভি’ কী ?

উত্তর বিপ্লব পূর্ব ফ্রান্সে বাধ্যতামূলক বা জবরদস্তিমূলক শ্রমদান। অভিহিত হত কর্ভে বা করভি নামে। এই পরােক্ষ করের জন্য কৃষকরা। বিনা পারিশ্রমিকে রাজাকে রাজপথ নির্মাণের জন্য এবং সামন্তপ্রভুকে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনগুলিতে শ্রমদান করতে বাধ্য হত।

9.‘ইনটেনডেন্ট (Intendent) কাদের বলে ?

উত্তর বুরবো শাসনকালে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্তম্ভরূপে পরিচিত এক বিশেষ ক্ষমতাশালী রাজস্ব সংগ্রাহক কর্মচারীরা। হল ইনটেনডেন্ট’। তবে স্থানীয় বিচারব্যবস্থা থেকে শুরু করে সাধারণ। প্রশাসন, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, সৈন্যসংগ্রহ-সহ বিভিন্ন বিষয় তাদের। নিয়ন্ত্রণে ছিল। লেফেভর লিখেছেন, নেকড়েতুল্য এই কর্মচারীদের অত্যাচারে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

10.ফ্রান্সে প্রথম সম্প্রদায়’ নামে কারা পরিচিত ছিলেন? 

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফরাসি সমাজে যাজকরা প্রথম সম্প্রদায় বা First Estate নামে পরিচিত ছিলেন। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে যাজকদের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার। ফ্রান্সের মােট জনসংখ্যার ১%-এর কম হয়েও যাজকরা সমাজে ও রাষ্ট্রে খুব প্রভাবশালী ছিলেন। তারা ছিলেন আইনের উর্ধ্বে এবং তাদের কোনাে প্রকার কর দিতে হত না। 

11.ফ্রান্সে তৃতীয় সম্প্রদায়’ নামে কারা পরিচিত ছিলেন ?

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সের সমাজে তৃতীয় সম্প্রদায় বা থার্ড এস্টেট বলতে বােঝাত যাজক ও অভিজাত ছাড়া সমাজের সমস্ত সাধারণ প্রজাদের। এই সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিলেন বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, দোকানদার, সাকুলােৎ ইত্যাদি। থার্ড

এস্টেটের জনসংখ্যা ছিল মােট জনসংখ্যার ৯৭%-এরও বেশি। রাষ্ট্রের প্রায় সমস্তকর তাদেরই দিতে হত, কিন্তু রাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা কোনাে সুযােগসুবিধা পেত না। সমাজ ও রাষ্ট্রে এরা ছিল অধিকারহীন শ্রেণি।

  1. ফরাসি সমাজে বুর্জোয়া’ কাদের বলা হত?

উত্তর ফরাসি সমাজে বুর্জোয়া বলা হত তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত মধ্যবিত্তদের। এরা ছিলেন বিদ্যা, বুদ্ধি ও ধনবলে বলীয়ান; কিন্তু বংশকৌলীন্যের অভাবে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশেষ মর্যাদা পেতেন এরা ছিলেন অধিকারহীন শ্রেণি। বুর্জোয়াদের মধ্যেও তিনটি স্তর ছিল— @ উচ্চ বুর্জোয়া, @ মধ্য বুর্জোয়া ও  নিম্ন বুর্জোয়া।

13.ফরাসি সমাজে ‘সাকুলােৎ’ কাদের বলা হত ?

উত্তর ফরাসি সমাজে সাকুলাে বলতে বােঝাত শহরবাসী খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষদের। এর মধ্যে ছিল দিনমজুর, কুলি, মালি,ভিস্তি (জলবাহক), কাঠুরে, চাকর (গৃহভৃত্য) প্রভৃতি। ফরাসি বিপ্লবে সাঁকুলােৎদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

14.আসিয়া রেজিম’ বলতে কী বােঝায়?

উত্তর অঁসিয়া রেজিম’ বা Ancién Regime কথার অর্থ হল ‘প্রাচীন আমল। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে বুরবো রাজাদের আমলকে ‘আঁসিয়া রেজিম’ বলা হয়। এই সময় রাজনৈতিক অবস্থা ছিল স্বৈরাচারী, সামাজিক অবস্থা ছিল বৈষম্যমূলক, অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। ফরাসি বিপ্লব এই পুরাতনতন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছিল।

  1. অভিজাত বিদ্রোহ’ কী ?

উত্তর অর্থনৈতিক সংকট দূর করার উদ্দেশ্যে ফরাসি রাজা যােড়শ লুই ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে দেশের সমস্ত প্রাদেশিক পার্লামেন্ট মুলতুবি করেন এবং সকল সম্প্রদায়ের থেকে কর আদায়ের উদ্যোগ নেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুবিধাভােগী অভিজাতশ্রেণি রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই ঘটনা অভিজাত বিদ্রোহ বা অভিজাত বিপ্লব’ নামে পরিচিত।

16.মন্তেস্থ কে ছিলেন? মন্তেস্থ রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখাে।

উত্তর মন্তেস্কু ছিলেন একজন বিশিষ্ট ফরাসি দার্শনিক। তিনি ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক এবং রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতার ধারণার বিরোধী। ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে তার মতবাদ ফরাসিদের প্রভাবিত করেছিল। মন্তেস্কু রচিত দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল-1 দ্য স্পিরিট অফ লজ এবং 2ি] দ্য পার্সিয়ান লেটারস।

  1. ভলতেয়ার কে ছিলেন? ভলতেয়ার রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখাে।

উত্তর ভলতেয়ার ছিলেন একজন বিখ্যাত ফরাসি সাহিত্যিক ও দার্শনিক। তার রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল- 1 কাদিদ এবং 2 | লেতর ফিলজফিক।

18.রুশে বিখ্যাত কেন? তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখাে।

উত্তর বুশো ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তার রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল-

সসাশ্যাল কন্ট্রাক্ট (সামাজিক চুক্তি) এবং 2] অরিজিন অফ ইনইকুয়ালিটি (অসাম্যের উৎস)।

19.ফরাসি বিপ্লবের জনক’ কাকে বলা হয়? কোন্ গ্রন্থকে ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল’ বলা হয় ?

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের জনক : ফরাসি দার্শনিক রুশাে-কে ফরাসি বিপ্লবের জনক বলা হয়।

ও ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল ; ফরাসি দার্শনিক রুশাে রচিত ‘সােশ্যাল কন্ট্রাক্ট’ গ্রন্থটিকে ফরাসি বিপ্লবের বাইবেল’ বলা হয়।

20.ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর মন্তে, ভলতেয়ার, রুশাে প্রমুখ ফরাসি দার্শনিকগণ প্রাক্-বিপ্লব ফ্রান্সের সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির প্রকৃত স্বরূপ জনগণের সামনে উন্মােচন করেছিলেন। এর ফলে জনগণের মধ্যে বিপ্লবমনস্কতা তৈরি হয়েছিল।

21.ফিজিওক্যাটা’ কাদের বলা হয় ? 

উত্তর। ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে এক শ্রেণির অর্থনীতিবিদের আবির্ভাব হয়, যারা অবাধ বাণিজ্য ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠার পক্ষপাত, ছিলেন। তাদের ফিজিওক্র্যাটস বলা হয়। এই মতবাদের প্রবক্তা হলে। কুয়েসনে, অ্যাডাম স্মিথ প্রমুখ। এই অর্থনীতিবিদরা ব্যাবসাবাণিজ্যে, ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ।নিয়ন্ত্রণের বিরােধিতা করেন।

22.স্টেট জেনারেল কী ? ফ্রান্সের রাজা ষােড়শ লুই কেন

স্টেট জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন?

উত্তর স্টেট জেনারেল : স্টেট জেনারেল হল ফ্রান্সের জাতীয় সভা।

স্টেট জেনারেলের অধিবেশন আহ্বানের কারণ : রাজা যােড়শ লুই স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন ডেকে জনগণের উপর বাড়তি কর ধার্য করতে চেয়েছিলেন। ফ্রান্সের তৎকালীন অর্থসংকট থেকে মুক্তিলাভের জন্য তিনি স্টেট জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন।

23.টেনিস কোর্টের পথ’ বলতে কী বােঝায় ?

উত্তর। ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুন তৃতীয় সপ্তাদান্তের প্রতিনিধিরা স্টেট জেনারেলের অধিবেশনে তাদের জন্য নির্দিষ্ট সভাকক্ষে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখেন সেটি তালাবন্ধ আছে। তখন তারা আবে সিয়েস ও মিরাববার নেতৃত্বে পাশের টেনিস খেলার মাঠে সমবেত হন। এপানে তারা শপথগ্রহণ করেন যে, যতদিন না ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনা হচ্ছে ততদিন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। একে ‘টেনিস কোর্টের শপথ’ বলা হয়।

24.লেতর-দ্য-ক্যাশে’ (Lettres de Cachatt) কী ?

উত্তর ‘লেতর-দ্য-ক্যাশে’ হল ফ্রান্সে প্রচলিত একপ্রকার রাজকীয়৷ গ্রেফতারি পরােয়ানা। এই পরােয়ানার ভিত্তিতে রাজকর্মচারীর যে-কোনাে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আটক করে রাখতে পারতেন।

25.বাস্তিল কী? কবে, কীভাবে এর পতন ঘটেছিল?

উত্তর বাস্তিল : বাস্তিল হল ফ্রান্সের একটি কুখ্যাত দুর্গ।

* বাস্তিলের পতন : ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গে পতন হয় ফরাসি জনগণের আক্রমণে।

26.বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব কী?

উত্তর বাস্তিল দুর্গ ছিল বুরবো রাজতন্ত্রের স্বৈরচারিতার প্রতীক বাস্তিল দুর্গের পতনের প্রধান গুরুত্ব ছিল-

1। ফ্রান্সে বুরবো রাজাদের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে।

2। বাস্তিল দুর্গে বন্দি নিরপরাধ ফরাসি জনসাধারণ মুক্তি পায়।

3। বাস্তিল দুর্গের পতনের মাধ্যমে ফ্রান্সে বিপ্লবের জয়যাত্রা সূচিত

27.‘প্যারিস কমিউন’ কী?

উত্তর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গের পতনের পর ফ্রান্সের বিপ্লবী জনগণ প্যারিসের পৌরশাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয়। নিজেদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করে যে অস্থায়ী পৌরপরিষদ গঠন করে, তাকেই ‘প্যারিস কমিউন’ বলা হয়।

28.মহা আতঙ্ক’ (Great Four) কী ?

উত্তর প্যারিস শহরে গণ অভুথান এবং বাস্তিল দুর্গের পতন ফ্রান্সের গ্রামগুলিতে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এই সময়ে গ্রামের কৃর্যকদের মধ্যে গুজব ছড়ায় যে, তাদের শায়েস্তা করতে অভিজাতদের সেনাবাহিনী ও গুন্ডারা আসছে। এই মিথ্যা রটনাই ফ্রান্সের ইতিহাসে ‘মহা আতঙ্ক (Great Fear) নামে পরিচিত।

29.মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘােষণা’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ফ্রান্সের সংবিধান সভা একটি ঘােষণাপত্রে মানুষের অধিকারের কথা ঘােষণা করে। এটি মানুষ ও নাগরিকের অধিকারের ঘােষণা নামে পরিচিত। এতে বলা হয়-

1 | স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার।

2। আইনের চোখে সকলেই সমান।

  1. সংবিধান সভার দুটি অর্থনৈতিক সংস্কার সম্পর্ক

উত্তর সংবিধান সভার দুটি অর্থনৈতিক সংস্কার হল— @ ফ্রান্সে গর্জার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং অ্যাসাইনেট’ নামক কাগজের নােট চালু করা হয়। @ সকল প্রকার পরােক্ষ কর তুলে দেওয়া হয় 

  1. অ্যাসাইনেট কী?

উত্তর অ্যাসাইনেট হল ব্রাসি সংবিধান সভা প্রবর্তিত একপ্রকার কাগজের নােট। সংবিধান সভা ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ফ্রান্সের গির্জার সব ভূসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এবং তা আমানত

রেখে তার পরিবর্তে যে কাগজের নােট চালু করে, তা অ্যাসাইনেট নামে পরিচিত।

  1. ব্রান্সউইক ঘােষণা কী?

উত্তর প্রাশিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডরিক উইলিয়ম ষােড়শ লুইকে সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। ফ্রান্স যখন অগ্নিগর্ভ তখন রাজার নির্দেশে অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার যৌথ সেনাধ্যক্ষ ডিউক-অফ ব্রান্সউইক এক ঘােষণাপত্রে জানান, ফরাসি রাজপরিবারের নিরাপত্তা কোনােভাবে বিঘ্নিত হলে তিনি প্যারিস ধ্বংস করে দেবেন। ফরাসি জাতির প্রতি চরম অপমানজনক এই ঘােষণাই ব্রান্সউইক ঘােষণা নামে পরিচিত।

  1. কোন্ ঘটনা সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত ?

উত্তর১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে বিপ্লবী-কমিউন কয়েক হাজার  রাজতন্ত্রের সমর্থক ব্যক্তিকে বন্দি করে এবং কারাগারে অনেক মানুষকেহত্যা করে। এই ঘটনা সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। এই ঘটনা। রাজতন্ত্রের অবসানকে সুনিশ্চিত করে।

34.জেকোবিন’ কাদের বলা হত?

অথবা, জেকোবিন দল বলতে কী বােঝো?

উত্তর জেকোবিন হল ফরাসি আইনসভার একটি রাজনৈতিকদল। ফ্রান্সের জেকোবিন দলের সদস্যদেরই ‘জেকোবিন’ বলা হত।

জেকোবিনরা ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থক ও উগ্র বামপন্থী। জেকোবিনরা কয়েক বছর ফ্রান্সের শাসন পরিচালনা করেছিলেন। জেকোবিনদের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন রােবসপিয়র।

35.জিরভিন’ কারা ছিলেন ?

উত্তর ফ্রান্সের আইনসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হল জিরন্ডিন দল। ফ্রান্সের জিরন্ড প্রদেশ থেকে এর অধিকাংশ সদস্যরা এসেছিলেন বলে এই দল জিরভিন দল নামে পরিচিত ছিল। জিরন্ড প্রদেশ। থেকে আগত দলের সদস্যরাই ‘জিরন্ডিন’ নামে পরিচিত। জিরন্ডিনরা বামপন্থায় বিশ্বাসী হলেও জেকোবিনদের মতাে উগ্র ছিলেন না।

36.জাতীয় মহাসভা বা ন্যাশনাল কনভেনশন’কী ?

অথবা, ন্যাশনাল কনভেনশন কেন আহ্বান করা হয়েছিল ?

উত্তর ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন ষােড়শ লুই বন্দি হলে ফ্রান্সে নতুন সংবিধানের প্রয়ােজন হয়। এই নতুন সংবিধান রচনার জন্য গণভােটের ভিত্তিতে যে পরিষদ গঠিত হয়, তা জাতীয় কনভেনশন নামে পরিচিত। জাতীয় কনভেনশন ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর থেকে ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাস পর্যন্ত বজায় ছিল।

37.সন্ত্রাসের রাজত্ব’ বলতে কী বােঝায়?

উত্তর রাজা যযাড়শ লুইয়ের প্রাণদণ্ডের ফলে ফ্রান্সে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরে খাদ্যাভাব ও অর্থাভাবে চরম সংকট তৈরি হয় এবং জনগণ। প্রজাতান্ত্রিক সরকারের বিরােধিতা করে। অপরদিকে ইউরােপের দেশগুলি ফ্রান্সকে আক্রমণ করতে সচেষ্ট হয়। এই অবস্থায় জেকোবিন দল ফ্রান্সের জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে যে শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে, তাকে সন্ত্রাসের শাসন’বলা হয়। সন্ত্রাসের শাসনের প্রধান পরিচালক ছিলেন রােবসপিয়র।

38.সন্দেহের আইন’ বলতে কী বােঝাে ?

উত্তর ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন চলাকালীন এক বিশেষ ধরনের আইন প্রচলিত হয়। এই আইন অনুযায়ী কোনাে ব্যক্তিকে কেবলমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেফতার এবং বিনা বিচারেশাস্তি প্রদান করা যেত। এই আইনই সন্দেহের আইন’ নামে পরিচিত।

39.রােবসপিয়র কে ছিলেন?

উত্তর রােবসপিয়র ছিলেন ফ্রান্সে জেকোবিন দলের নেতা এবং সন্ত্রাসের রাজত্বের প্রধান পরিচালক। তিনি ফ্রান্সে মহাসন্ত্রাস’ শুরু করেছিলেন। ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুলাই গিলােটিনে তাকে হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের অবসান হয়।

40.লাল সন্ত্রাস’ (Red Terror) বলতে কী বােঝাে ?

উত্তর জেকোবিন দলের পরিচালনায় এবং রােবসপিয়রের নেতৃত্বে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই পর্যন্ত ফ্রান্সে যে নৃশংস সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল, তাকেলাল সন্ত্রাস’ বলা হত। ক্লাঙ্গে সন্ত্রাসের প্রয়ােজন ফুরিয়ে গেলেও ব্রোবসপিয়র সন্ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যান।

41.তে সুপ্রাস (White Terror) বলতে কী বােঝো?

উত্তর ফ্রান্সের বেকার, ভবঘুরে মানুষ রােবসপিয়রের ভয়াবহ লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোকোবিনদের হত্যা করতে শুরু করে। এই ঘটনা ‘শ্বেত সন্ত্রাস’ নামে পরিচিত।

42.রােবসপিয়রের ক্ষমতা থেকে অপসারণকে ‘থার্মিভােরীয় প্রতিক্রিয়া বলা হয় কেন?

উত্তর ফ্রান্সের নতুন বিপ্লবী বর্ষপঞ্জী অনুসারে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ থার্মিভাের (২৭ সেপ্টেম্বর) রােবসপিয়র ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন থার্মিভাের মাসে এই ঘটনাটি ঘটে বলে একে ‘থামিডােরীয় প্রতিক্রিয়া বলা হয়।

43.গিলােটিন’ কী? কে এটি আবিষ্কার করেন? 

উত্তর গিলােটিন হল ফ্রান্সের সন্ত্রাসের শাসনে ব্যবহৃত শিরচ্ছেদ করার একটি যন্ত্র গিলােটিনের আবিষ্কারক হলেন ড. গিলােটিন।

44.ফরাসি বিপ্লবের কটি আদর্শ ও কী কী? অথবা, ফরাসি বিপ্লবের মূল আদর্শ কী?

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের তিনটি মূল আদর্শ ছিল। এগুলি হল—

মৈত্রী ও স্বাধীনতা অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্রবাদ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা।


Long Answer Type প্রশ্নোত্তর – বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি – 4 Marks

ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE- Long Answer Type Questions

1.ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলা হয় কেন ?*

 (Museum of Economic Errors) 

উত্তর ফ্রান্সের আর্থিক অবস্থা ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। ফ্রান্সের রাজস্বব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। তা ছাড়া সরকার অমিতব্যয়িতা, বিলাসিতা, ব্যয়সংকোচে অনিচ্ছা, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি।

ফ্রান্সের পরিস্থিতিকে ভয়ংকর করে তুলেছিল। এইসব কারণে বিশ্ব অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith) তৎকালীন ফ্রান্সকে ভ্রান্ত। অর্থনীতির জাদুঘর’ (Museum of Economic Errors) বলেছেন। ত্রুটিপূর্ণ করব্যবস্থা : i.ফ্রান্সে কর আদায়ের ক্ষেত্রে কোনাে ন্যায়সংগত নীতি ছিল না। অভিজাত ও যাজকরা ছিলেন ফ্রান্সের বেশিরভাগ জমির মালিক। অথচ তারা কর দিতেন সরকারের আয়ের মাত্র ৪%। আর মােট রাজস্বের ৯৬% দিতে হত দরিদ্র কৃষকদের।

ii.সরকারের বাইসাৰি অন্যাফ্রান্সের রাজাদের বেহিসাবি অর্থব্যয়ের ফলে ফ্রান্সের অবথা শােচনীয় হয়ে পড়েছিল।

iii.যুণনীতির অযৌক্তিকতা। চতুর্দশ লুই ও পদশ লুইয়ের ‘আমল বিভিন্ন যুদ্ধে যােগদানের ফলে ফ্রান্সের প্রচুর অর্থব্যয় হয়েছিল, যা ফরাসি অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়। বাজকোশে সংকট । উপরােক্ত কারণে বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সের রাজকোশে সংকট দেখা যায়। ষােড়শ লুইয়ের সময়ে তুর্গো, নেকার প্রমুখ অর্থমন্ত্রী অভিজাতদের বিরােধিতায় আর্থিক সমস্যা সমাধানের কাজটি সঠিকভাবে করতে না পারায় রাজকোশ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে।

iv। অর্থনৈতিক সংকট ; জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদির ফলে।

প্রাক্-বিপ্লব পর্বে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে শস্যহানি ঘটলে এই সংকট আরও প্রবল হয় ফ্রান্সের এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় কালক্রমে ফরাসি বিপ্লব সংগঠনে ইন্ধন জুগিয়েছিল।

2.ফ্রান্সের করব্যবস্থা বৈষম্যমূলক ছিল কেন? 

উত্তর 

বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা : ফ্রান্সের করব্যবস্থা বৈষম্যমূলক ছিল কারণ— ফরাসি রাজাদের সুনির্দিষ্ট কোনাে রাজস্বনীতি ছিল না। বাজেটও তৈরি হত না। তাই রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। ফ্রান্সে প্রত্যক্ষ করের বােঝা দরিদ্র মানুষকেই বহন করতে হত। যাজক ও অভিজাতরা কোনাে প্রকার কর দিতেন না। ফলত করভার সকলের উপর বা সব অঞ্চলের উপর সমান ছিল না। কর আদায়ের ব্যবস্থাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। 

 কর প্রদানকারী : ফ্রান্সে আদায় করা মােট করের ৯৬% কর দিতে হত তৃতীয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষকে। অপরদিকে মাত্র ৪%কর দিত প্রথম ও দ্বিতীয় সম্প্রদায়।

কর আদায় ব্যবস্থা : ফ্রান্সে কর আদায়ের ব্যবস্থাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। সরকার এককালীন কর আদায়ের জন্য কিছু রাজকর্মচারী (ফারমিয়ের nজেনারেল) ও অভিজাতদের কর আদায়ের দায়িত্ব দিত। এই কর

আদায়কারীরা প্রজাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট করের অতিরিক্ত কর আদায় করে নিত। বাড়তি কর আদায়ের জন্য তারা প্রজাদের উপর অকথ্য অত্যাচারও করত।

বাণিজ্যশুল্ক আদায়কারী শুল্কবিভাগের কর্মচারীরা নানাভাবে সরকারের পাওনা আত্মসাৎ করত এবং বণিকদের উপর অত্যাচার চালাত।এইসব কারণে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ তৎকালীন ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’(Museum of Economic Errors) বলেও অভিহিত করেছিলেন।

3.| টীকা লেখাে বুর্জোয়া। (liotir Jaalala)

বুর্জোয়া বা বুর্জোয়াসি (Bourgao|s|8) কথার অর্থ হল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে মেগা বুর্জোয়াদের উদ্ভব সম্পর্কে বলেন যে, গ্রামের উদ্যমী ভাগ্যবান কৃষককুল শহরে গিয়ে

শ্রমিক, কারিগর ও শিল্পদ্রব্য নির্মাতা হিসেবে বিত্তশালী হয়ে বুর্জোয় নামে পরিচিত হয়।

শ্রেণিবিভাগ : বুর্জোয়া শ্রেণি তিন ভাগে বিভক্ত— ) উচ্চ বুর্জোয়া, (2) মধ্য বুর্জোয়া ও ) নিল বুর্জোয়।

  1. উচ্চ বুর্জোয়া ; ধনবান এই শ্রেণির মধ্যে ছিল পুঁজিপতি, ব্যাংকার, ঠিকাদার, পরোক্ষ কর আদায়কারী, বড়ো ব্যবসায়ী প্রমুখ।

2। মধ্য বুর্জোয়া : বুর্জোয়া শ্রেণির দ্বিতীয় স্তরে ছিল মধ্য বুর্জোয়া বা পেটি বুর্জোয়া। এদের মধ্যে ছিল মূলত বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী। মানুষ। যেমন— শিক্ষক, অধ্যাপক, ডাক্তার, লেখক, সাংবাদিক, দার্শনিক, আইনজীবী, শিল্পী প্রমুখ।

3। নিম্ন বুর্জোয়া : বুর্জোয়া শ্রেণির তৃতীয় স্তরে ছিল নিম্ন বুর্জোয়। এদের মধ্যে ছিল দোকানদার, কারিগর, শ্রমিক, ছােটো ব্যাবসাদার। বুর্জোয়া শ্রেণি বিদ্যা, বুদ্ধি ও ধনবলে অভিজাতদের চেয়ে বলীয়ান

ছিল, কিন্তু বংশকৌলীন্যের অভাবে সমাজে তাদের মর্যাদা ছিল কম। এই বুর্জোয়া শ্রেণি ফরাসি বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

  1. সাঁকুলাে (Sans-culottes) বলতে কী বােঝায়?

সাঁকুলােৎ (Sans-culottes) বলতে বােঝায় শহরের নীচুতলার দরিদ্র মানুষদের। এর আভিধানিক অর্থ হল যারা অন্তর্বাস পরে না অর্থাৎ ব্রিচেস বা কুলােৎ ছাড়া ট্রাউজার পরে যারা। এদের অধিকাংশই ছিল নিরক্ষর ও খেটে খাওয়া মানুষ। এই সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিল কারখানার শ্রমিক, মজুর, কারিগর, মুটে, মালি, চাকর, রাজমিস্ত্রি, কাঠুরে, জেলে, জলবাহক প্রমুখ।

সাকুলােৎদের জনসংখ্যা : ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিস শহরের অধিকাংশ মানুষ ছিল সাঁকুলােৎ সম্প্রদায়ভুক্ত।

সাঁকুলাে শ্রেণির বৈশিষ্ট্য :

i.এরা শহরের নােংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করত।

  1. এরা গা-গতরে কাজ করে পেট চালাত এবং কাজ না থাকলে ভিক্ষাও করত।

iii. এদের মধ্যে অনেকে অসামাজিক কাজেও যুক্ত থাকত ও নানাভাবে গণ্ডগােল করত।

iv.শহরের ধনী মানুষরা এদের ঘৃণা করত।

v.স্বার্থান্বেষী রাজনীতির লােকেরা এদের নানাভাবে ব্যবহার করত। সাকুলােৎ তবে বলা যায়, সাঁকুলােত্রই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গের পতন থেকে শুরু করে নানাভাবে ফরাসি বিপ্লবকে এগিয়ে

নিয়ে গিয়েছিল।

5.টীকা লেখাে : অভিজাত বিদ্রোহ। অথবা, অভিজাতরা কেন বিদ্রোহ করেছিল?

উত্তর ষােড়শ লুই ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা হওয়ার পর লক্ষ করেন যে, ফ্রান্সের রাজকোশ একেবারে শূন্য হয়ে পড়েছে। তিনি তুর্গো, নেকার, ক্যালােন, ব্রিয়া প্রমুখ অর্থমন্ত্রী নিয়ােগ করে এই আর্থিক সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করলে অভিজাতরা রাজার বিরােধিতা করেন।

প্রেক্ষাপট : অভিজাতদের বিরােধিতার ফলে রাজা বাধ্য হয়ে তাদের হাত থেকে আইন এবং কর সংক্রান্ত অধিকার কেড়ে নেন। এর ফলে ফ্রান্সের নানা স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়।

i.অভিজাতরা অর্থমন্ত্রী ব্রিয়ার কর আদায় সংক্রান্ত কয়েকটি প্রস্তাব মেনে নিলেও স্ট্যাম্পকর ও ভূমিকরের প্রস্তাব বাতিল করে দেন। তারা দাবি করেন যে, একমাত্র স্টেট জেনারেলের কর আরােপের অধিকার আছে।

ii.ষােড়শ লুই পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যের আচরণে উত্যক্ত হয়ে নিজের ভাই ডিউক অফ অর্লিয়েন্স-সহ তিনজন সদস্যকে নির্বাসিত করেন। এতে পার্লামেন্ট ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে এবং অভিজাতরা রাজার বিরুদ্ধে কয়েকটি আইন পাস করে ইচ্ছামতাে নাগরিকদের গ্রেফতার, বিচারকদের অপসারণ প্রভৃতি বিষয়ে রাজার ক্ষমতা কেড়ে নেয়।

iii.পার্লামেন্টের আইনে ক্ষু বন্ধ হয়ে রাজা সমস্ত প্রদেশের পার্লামেন্টগুলি মুলতুবি করেন এবং ৫৭টি নতুন বিচারালয় স্থাপন করে নিজের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলিকে আইনে পরিণত করেন।

বিদ্রোহের সূচনা : রাজা পার্লামেন্ট মুলতুবি করলে তার বিরুদ্ধে অভিজাতরা বিদ্রোহ শুরু করে দেন। রাজার বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহে শীঘ্রই যাজক ও বুর্জোয়ারাও শামিল হন। ফলে অভিজাত বিদ্রোহ গণবিদ্রোহের আকার ধারণ করে। পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক সভা এই বিদ্রোহকে সমর্থন জানায়। এই অভিজাত বিদ্রোহ থেকেই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের সূচনা হয়।

গরত্ব : বুরবোঁ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিজাতদের বিদ্রোহ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। রাজা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের কাছে

i.এই অভ্যুত্থানে সুবিধাভােগী শ্রেণি রাজার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। বুর্জোয়াদের সমর্থনে অভিজাত বিদ্রোহ রাজতন্ত্রবিরােধী আন্দোলনে পরিণত হয়।

ii.অভিজাত বিদ্রোহের চাপে রাজা স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন ডাকতে বাধ্য হন। ফলে রাজার স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের মর্যাদায় আঘাত লাগে।

iii.রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতা ও স্বৈরতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক লেফেভর (Lefebvre) অভিজাত বিদ্রোহকে অভিজাত বিপ্লব’ বলেছেন। এ কথা সত্য যে, বিদ্রোহের প্রথম পর্যায়ে অভিজাতরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের হাত থেকে বিদ্রোহের নেতৃত্ব প্রথমে বুর্জোয়াদের হাতে এবং পরে সাকুলােৎ ও কৃষক শ্রেণির হাতে চলে যায়।

6.টীকা লেখাে : টেনিস কোর্টের শপথ (Tennis court Oath)। অথবা, টেনিস কোর্ট শপথ’বলতে কী বােঝাে?

উত্তর ফরাসি বিপ্লবের সূচনাপর্বের অন্যতম প্রধান ঘটনা ছিল টেনিস কোর্টের শপথ। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন ফ্রান্সের জাতীয় সভার (স্টেট জেনারেল) প্রতিনিধিরা টেনিস কোর্টের মাঠে সমবেত হয়ে যে শপথগ্রহণ করেছিলেন, তা টেনিস কোর্টের শপথ’ নামে পরিচিত।

পটভূমি : ফরাসি সম্রাট ষােড়শ লুই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কুয়েসনে (Quesnay) ছিলেন ফরাসি সম্রাট পঞ্চদশ লুই (Louis XV)-এর চিকিৎসক। তিনি ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ট্যাবলাে ইকনমিক’ (Tableau économique) গ্রন্থে তার অর্থনৈতিক চিন্তাধারা প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণমূক্ত অবাধ বাণিজ্য নীতির অপর নাম লেসে ফেয়ার (Laissez- Faire)। এই কথাটি জনপ্রিয় করে তােলেন গুর্নে (Gournay)। সভার অধিবেশন আহ্বান করেন। এই অধিবেশনে তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা শ্রেণিভিত্তিক ভােটদানের পরিবর্তে মাথাপিছু ভােটদানেরঅধিকার দাবি করেন। সম্রাট ষােড়শ   তৃতীয় শ্রেণির দাবি নাকচ করে দেন। তখন তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা মিরাব্যুৎ, লাফায়েৎ ও আবে সিয়েসের নেতৃত্বে পাশের টেনিস কোর্টের মাঠে সমবেত হয়ে শপথগ্রহণ করেন।

শপথ : তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা টেনিস কোর্টের মাঠে শপথ নিয়েছিলেন যে- ফ্রান্সের জন্য একটি নতুন সংবিধান রচনা করা পর্যন্ত তারা এই স্থান ত্যাগ করবে না। তাদের দাবি ছিল—

তৃতীয় শ্রেণির সদস্যদের মাথাপিছু ভােটের দাবি মেনে নিতে হবে তাদের একটি নতুন সংবিধান রচনার অধিকার দিতে হবে।

টেনিস কোর্টের শপথ

ফলাফল : টেনিস কোর্টের শপথের ফলে প্রথম দুই এস্টেট গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে এবং ফরাসি জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করে তৃতীয় এস্টেটের প্রতিনিধিরা। তৃতীয় শ্রেণির সদস্যদের মাথাপিছু ভােট ও নতুন সংবিধান রচনার দাবি সম্রাট ষােড়শ লুই শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে বাধ্য হন এবং ২৭ জুন পুনরায় জাতীয় সভার অধিবেশন আহ্বান করেন। ফলে ফরাসি বিপ্লবের পথ সুগম হয়। অনেক ঐতিহাসিক টেনিস কোর্টের শপথকে ফরাসি বিপ্লবের সূচনাপর্ব বলে অভিহিত করেছেন।

7.ফরাসি জনতা কেন বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে? অথবা, টিকা লেখো : বাস্তিল দুর্গের পতন (Fall of Bastille)

উত্তর বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি রাজতন্ত্রের অত্যাচারের অন্যতম কেন্দ্র এই দুর্গে রাজতন্ত্রের বিরােধী ব্যক্তিদের বন্দি করে রাখা হত ও অত্যাচার করা হত। তাই জনগণের কাছে বাস্তিল দুর্গ ছিল ফরাসি রাজতন্ত্রের অত্যাচারের প্রতীক। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের বিদ্রোহী জনগণ বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে ধ্বংস করেছিল।

বাস্তিল দুর্গের পতনের কারণ : খাদ্যদ্রব্যের মূল্য হ্রাস ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সােচ্চার হয়ে ওঠা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য প্যারিস নগর কর্তৃপক্ষ তাদের উপর আক্রমণ চালায়। সেইসঙ্গে সম্রাট যােড় লুই-এ -এর জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী নেকার (Necker)-কে পদচ্যুত করার সংবাদে। জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে শহরের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ বাধে। উন্মত্ত জনতা অধিক আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের জন্য স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীক’ বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে।

বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ ও ধবংস : প্যারিস শহরের উত্তেজিত জনতা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই কুখ্যাত বাস্তিল দুর্গ দখল করে ধ্বংস করে দেয়। সমস্ত বন্দিরাও মুক্তি পায়।

ফলাফল : বাস্তিল দুর্গের পতনের ফলে রাজা যােড়শ লুই-এর স্বৈরশাসনের অবসান হয়।

2। রাজা জাতীয় পরিষদকে স্বীকৃতি দেন এবং এই সময় থেকে রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতা আইনসভার হাতে চলে যায়।

[3] ফ্রান্সের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সূচনা হয় এবং অভিজাততন্ত্রের পতন আসন্ন হয়ে ওঠে। প্রায় ২০ হাজার অভিজাত দেশত্যাগী হয়।

[4] বাস্তিলের পতন কৃষক বিদ্রোহে ইন্ধন জোগায়, সামন্ততন্ত্রের পতনের পথ প্রস্তুত এবং পৌরবিপ্লবেরও সূচনা করে। ঐতিহাসিক গুডউইন (Goodwin) বলেন- “বাস্তিলের পতনের মতাে বিপ্লবের আর কোনাে ঘটনার এত বহুমুখী ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল ছিল না।

8.ফিজিওক্র্যাট (Physiocrats) মতবাদের প্রবক্তা কারা ?এই মতবাদের মূল কথা কী

উওর অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে ফিজিওক্র্যাট (Physiocrate) নামে। এক শ্রেণির অর্থনীতিবিদদের আবির্ভাব হয়। ফিজিওক্র্যাট কথাটির উদ্ভাবক ছিলেন নেমুর।

* বক্তা : ফিজিওক্র্যাট মতবাদের প্রবক্তা বা উদগাতা হলেন ফাঁসােয়া কুয়েসনে (Quesnay, ১৬৯৪-১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দ)। ইংল্যান্ডে এই মতবাদের প্রবক্তা ছিলেন অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith, ১৭২৩-১৭৯০ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি তার দ্য ওয়েলথ অফ নেশনস (The Wealth of Nations) গ্রন্থে অবাধ বাণিজ্য নীতির ধারণা ব্যক্ত করেন। ফরাসি অর্থনীতিবিদরা ছিলেন তার ভাবশিষ্য।

* ফিজিওক্র্যাট মতবাদের মূল কথা :

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবােধ : এই মতবাদে বলা হয় মানুষ নিজেই তার স্বার্থরক্ষার সবচেয়ে বড়াে বিচারক। মানুষের অর্থনৈতিক কাজে সরকারের নিয়ন্ত্রণ অন্যায়।

অবাধ বাণিজ্য : এই মতবাদের মূল কথা অবাধ বাণিজ্য। এজন্য অভ্যন্তরীণ শুদ্ধনীতির বিরােধিতা এবং খােলাবাজার নীতিকে সমর্থন করা হয়।

ভূমিকর প্রদান : এই মতবাদে বলা হয়, জমি হল সমস্ত সম্পদের উৎস। তাই প্রত্যেক জমির মালিকের ভূমিকর দেওয়া উচিত। ফ্রান্সের যাজক, অভিজাত, বুর্জোয়া সকলকেই ভূমিকর দিতে হবে |

9.ফরাসি বিপ্লবের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ আলােচনা করাে।

উত্তর ভূমিকা : ফ্রান্সের অধিবাসী ফরাসিরা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে যে বিপ্লব ঘটিয়েছিল, তা ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লব (French Revolution) নামে খ্যাত। এই বিপ্লবের মাধ্যমে ফরাসি জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। ঐতিহাসিকগণ বলেন যে, ফরাসিদের ওসামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য ও ক্ষোভের কারণেই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ঘটেছিল।

ফরাসি বিপ্লবের কারণ :

সামাজিক কারণ : ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ফরাসি সমাজে বৈষম্য ও শােষণ। শ্রেণিবিভক্ত ফরাসি সমাজব্যবস্থা মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ফরাসি সমাজে এই সময় প্রধান তিনটি শ্রেণি (এস্টেট) বর্তমান ছিল; যথা— প্রথম শ্রেণি (যাজকগণ), দ্বিতীয় শ্রেণি (অভিজাতবর্গ) এবং তৃতীয় শ্রেণি (ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতি)। এই তিন শ্রেণির মধ্যে যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় ছিল বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত শ্রেণি’ ও তৃতীয় সম্প্রদায় ছিল অধিকারহীন শ্রেণি।

1 প্রথম শ্রেণি (First Estate) :ফরাসি সমাজব্যবস্থায় যাজকরা ছিল প্রথম শ্রেণিভুক্ত। বিপ্লবের পূর্বে এরা ছিলেন সুবিধাভােগী এবং ফ্রান্সের মােট জনসংখ্যার ১%-এরও কম। এদের মােট সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার। অথচ এদের দখলে ছিল ফ্রান্সের মােট জমির ১০%। এই জমির জন্য এরা রাজাকে কোনাে প্রকার করও দিতেন না। যাজকরা ভূমিকর, ধর্মকর, মৃত্যুকর ইত্যাদি আদায় করলেও সরকারকে স্বেচ্ছাকর

ছাড়া অন্য কোনাে কর দিতে রাজি ছিলেন না। অথচ রাষ্ট্রের সবরকম সুযােগসুবিধা এরা ভােগ করতেন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন।

[2] দ্বিতীয় শ্রেণি (Second Estate) : ফরাসি সমাজে অভিজাতরা ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত। এরা ছিলেন ফ্রান্সের মােট জনসংখ্যার প্রায় ১.৫% অর্থাৎ প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার। অথচ ফ্রান্সের মােট জমি,২০% ছিল এদের দখলে | এরা জমির জন্য সরকারকে কোন পত্যখ্ কর দিতেন না। আবার সরকারের সামরিক ও অসামরিক বিভাগের উচ্চপদগুলিতে এদের একচেটিয়া অধিকার ছিল।

[3] তৃতীয় শ্রেণি (Third Estate) : ফরাসি সমাজের ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, সর্বহারা সকলেই ছিলেন তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত। এদের মােট জনসংখ্যা ছিল ফ্রান্সের মােট জনসংখ্যার ৯৭৩%-এর বেশি। সমাজে এদের বংশকৌলীন্য ছিল না। ফ্রান্সের। করের বােঝার বেশির ভাগটাই এদের বহন করতে হত। ফ্রান্সে সবক্ষেত্রে এরা ছিলেন অসাম্যের শিকার। তাই তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত মানুষেরা তাদের প্রতি সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের শােষণ,

(4], নিপীড়নের প্রতিবাদে বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন।

অর্থনৈতিক কারণ : অর্থনৈতিক দুরবস্থাও ফরাসি বিপ্লবের পথকে প্রশস্ত করেছিল।  

10.ফ্রান্সের করব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই করব্যবস্থা ফরাসি সমাজের তৃতীয় সম্প্রদায়কে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল ?

উত্তর ভূমিকা : বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে বুরবো (Bourbon) রাজবংশের রাজারা রাজত্ব করতেন। রাজাদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করা বিভিন্ন ধরনের কর।

$ ফ্রান্সের করব্যবস্থা :১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে প্রচলিত করগুলিকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় প্রত্যক্ষ কর এবং পরােক্ষ কর।

 প্রত্যক্ষ কর ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে তিন ধরনের প্রত্যক্ষ কর প্রচলিত ছিল। যেমন- 0 ‘টেইলি’ (Taile) বা সম্পত্তিকর

ক্যাপিটেশন’ (Capitation) বা উৎপাদনকর এবং @ ‘ভিংটিয়েমে’ (Vingtieme) বা আয়কর। যাজক ও অভিজাতরা যথাক্রমে ফ্রান্সের ১ঠ অংশ এবং অংশ ভূসম্পত্তির মালিক হয়েও তারা রাষ্ট্রকে টেইলি দিতেন না। যাজকেরা রাষ্ট্রকে একপ্রকার স্বেচ্ছাকর প্রদান করতেন। যাজক এবং অভিজাত সম্প্রদায় রাষ্ট্রকে কোনাে প্রকার উৎপাদনকর এবং আয়কর প্রদান করতেন না। রাষ্ট্রের তিনটি প্রত্যক্ষ করই তৃতীয়

সম্প্রদায় বহন করত। কর আদায়ের জন্য ইনটেনডেন্ট’ (Intendent) নামক কর্মচারীরা সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাত।

পরােক্ষ কর : প্রত্যক্ষ করের পাশাপাশি ফ্রান্সে বহু পরােক্ষ করও প্রচলিত ছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল- ‘টাইথ’ (Tithe) বা ধর্মকর, @ ‘গ্যাবেলা’ (Gabelle) বা লবণ কর, @ ‘এই’ (Aides) বা ভােগ্যপণ্যের উপর কর, ‘তেরাজ’ বা পথকর, ® করভি’ (Corvée) বা মকর, ® ব্যানালাইট’ (Banalités) বা শস্যদানা ভানার কর প্রভৃতি। পরােক্ষ করগুলিও সরকার, গির্জা ও সামন্তপ্রভুকে তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা দিতে বাধ্য থাকত। যাজক ও অভিজাতরা রাষ্ট্রকে কোনাে প্রকার পরােক্ষ কর দিতেন না।

করব্যবস্থা ও তৃতীয় সম্প্রদায় : ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে বিভিন্ন প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ কর প্রচলিত ছিল। তবে এই সকল কর ফরাসি সমাজের সকল সম্প্রদায় বহন করত না। ফরাসি সমাজব্যবস্থা তিনটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। প্রথম সম্প্রদায়ভুক্ত যাজক এবং দ্বিতীয় সম্প্রদায়ের অভিজাতরা সকল প্রকার কর প্রদানের দায়িত্ব থেকে মুক্ত ছিলেন। এই দুই শ্রেণি ব্যতীত অবশিষ্ট যারা ছিলেন তারা তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত। দেশের মােট জনসংখ্যার প্রায় ৯৮% মানুষ ছিলেন তৃতীয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ। এরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযােগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেও রাষ্ট্রপ্রদত্ত সমস্ত প্রকার কর প্রদান করতে বাধ্য হতেন। প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ করের বােঝা বহন করে জীবনধারণ করা কষ্টকর হয়ে উঠলে তারা বিপ্লবমুখী হয়ে ওঠেন।


ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি – 8 Marks – অনধিক ১৫ টি বাক্যে উত্তর দাও

ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – Forashi Biplober Koyekti Dik Class 9 WBBSE- Essay Types Answer – ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

ফরাসি বিপ্লবের পূর্বাভাস সৃষ্টিতে দার্শনিকদের ভূমিকা কী ছিল আলোচনা করুন।

উত্তর: ফরাসি বিপ্লবের পূর্বাভাস সৃষ্টিতে দার্শনিকদের ভূমিকা

ফরাসি বিপ্লবের পূর্বাভাস সৃষ্টিতে দার্শনিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই দার্শনিকরা তাদের লেখনী এবং চিন্তাধারার মাধ্যমে ফ্রান্সের জনগণের মধ্যে বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।

মন্তেস্কু: মন্তব্যেস্কু তার বিখ্যাত বই ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’-এ শাসনব্যবস্থার তিনটি শাখার কথা উল্লেখ করেন: আইনপ্রণয়ন, বিচার এবং শাসন। তিনি বিশ্বাস করতেন, এই তিনটি শাখা পৃথকভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার না হয়। তার এই ধারণা ফরাসি বিপ্লবীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে ফ্রান্সের শাসনব্যবস্থার কাঠামো গঠনে ভূমিকা রাখে।

ভলতেয়ার: ভলতেয়ার ছিলেন একজন দার্শনিক, সাহিত্যিক এবং সমাজ সংস্কারক। তিনি তার লেখনীতে ফ্রান্সের রাজতন্ত্র এবং যাজকতন্ত্রের সমালোচনা করেন। তিনি স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারের পক্ষে ছিলেন এবং সমাজের সমস্ত শ্রেণীর মানুষকে সমানভাবে বিচার করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে লিখেছেন। তার এই চিন্তাধারা ফ্রান্সের জনগণের মধ্যে বিপ্লবের বীজ বপন করে।

রুশো: রুশো তার বিখ্যাত বই ‘দ্য সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট’-এ বলেন, জনগণই প্রকৃত শাসকের ক্ষমতার উৎস। তিনি মনে করতেন, সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি সমান অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং তাদের অধিকার রক্ষা করার জন্য সরকার গঠন করা উচিত। তার এই সমাজচিন্তা জনগণের মধ্যে বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং রাজতন্ত্রের পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মন্টেস্কু এবং রুশোর চিন্তাধারা: এদের চিন্তাধারা ফরাসি বিপ্লবের মূলমন্ত্র স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে। তারা সমাজের অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করেন। এভাবে তাদের চিন্তাধারা ফরাসি বিপ্লবের পটভূমি রচনা করে।

ফলাফল: দার্শনিকদের এই চিন্তাধারা ফরাসি বিপ্লবের পূর্বাভাস সৃষ্টিতে বিশাল ভূমিকা পালন করে। তাদের লেখনী ও চিন্তাধারা ফরাসি জনগণের মধ্যে স্বাধীনতা, সাম্য এবং গণতন্ত্রের জন্য প্রচণ্ড আগ্রহ সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ নেয়।

মনে রাখার জন্য:

  1. মন্তেস্কু:
    • শাসনব্যবস্থার তিনটি শাখা: আইনপ্রণয়ন, বিচার, শাসন
    • ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ
  2. ভলতেয়ার:
    • রাজতন্ত্র ও যাজকতন্ত্রের সমালোচনা
    • স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার
  3. রুশো:
    • সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট
    • জনগণ শাসনের ক্ষমতার উৎস
    • সমান অধিকার
  4. ফলাফল:
    • স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্বের ধারণা
    • রাজতন্ত্রের পতন

ফরাসি বিপ্লবের সূচনালগ্নে জিরোন্ডিস্ট ও জ্যাকোবিনদের ভূমিকা বিশদভাবে বর্ণনা করুন।

উত্তর: ফরাসি বিপ্লবের সূচনালগ্নে জিরোন্ডিস্ট ও জ্যাকোবিনদের ভূমিকা

ফরাসি বিপ্লবের সূচনালগ্নে জিরোন্ডিস্ট ও জ্যাকোবিনরা দুইটি প্রধান রাজনৈতিক দল ছিল, যারা বিপ্লবের প্রাথমিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জিরোন্ডিস্টদের ভূমিকা: জিরোন্ডিস্টরা মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করত। তারা সংবিধানিক রাজতন্ত্রের পক্ষে ছিল এবং এক সীমিত সরকারের দাবিতে সোচ্চার ছিল। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ফ্রান্সকে একটি স্থিতিশীল ও নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা। জিরোন্ডিস্টরা যুদ্ধের মাধ্যমে বিপ্লবের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন এবং তারা বিশ্বাস করতেন যে, ইউরোপের অন্য রাষ্ট্রগুলোর সাথে যুদ্ধ করে বিপ্লবের আদর্শ স্থাপন করা সম্ভব।

জ্যাকোবিনদের ভূমিকা: অন্যদিকে, জ্যাকোবিনরা ছিল অনেক বেশি র‍্যাডিকাল এবং নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধিত্ব করত। তারা সরাসরি গণতন্ত্র এবং সাম্যবাদের প্রবক্তা ছিলেন। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজতন্ত্রের সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং একটি সম্পূর্ণ নতুন সমাজ ব্যবস্থা গঠন করা। তারা মনে করতেন, রাজতন্ত্র এবং তার সমর্থকদের কঠোরভাবে দমন করা উচিত।

মতভেদ এবং সংঘর্ষ: এই দুই দলের মধ্যে মূল মতভেদ ছিল রাজনৈতিক আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে। জিরোন্ডিস্টরা একটি সীমিত এবং সংবিধানিক সরকার চাইতেন, যেখানে জ্যাকোবিনরা একটি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক এবং র‍্যাডিকাল সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এই মতভেদের ফলে ১৭৯৩ সালে জ্যাকোবিনরা জিরোন্ডিস্টদের পরাজিত করে এবং ক্ষমতা দখল করে।

ফলাফল: জ্যাকোবিনদের ক্ষমতা দখলের পর ফরাসি বিপ্লব একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করে, যা ‘টেরর’ নামে পরিচিত। এই সময়ে জ্যাকোবিনরা বিপ্লব বিরোধীদের নির্মমভাবে দমন করে এবং একটি র‍্যাডিকাল শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। জিরোন্ডিস্টদের অনেক নেতাকে গ্রেফতার এবং হত্যা করা হয়। তবে জ্যাকোবিন শাসনও স্থায়ী হয়নি এবং পরবর্তীতে তারাও পতিত হয়।

মনে রাখার জন্য:

  • জিরোন্ডিস্টদের ভূমিকা:
    • মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিনিধি
    • সংবিধানিক রাজতন্ত্র
    • যুদ্ধের মাধ্যমে বিপ্লব ছড়ানো
  • জ্যাকোবিনদের ভূমিকা:
    • নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি
    • সরাসরি গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ
    • রাজতন্ত্র ধ্বংস
  • ফলাফল:
    • জ্যাকোবিনদের ক্ষমতা দখল
    • জিরোন্ডিস্টদের পরাজয় ও নিধন

টেরর শাসন প্রতিষ্ঠা

ফরাসি বিপ্লবের কৃষক ও শ্রমিক অংশীদারদের অবস্থান নির্ণয় করুন এবং তাদের অবদানের গুরুত্ব আলোচনা করুন।

ফরাসি বিপ্লবের সময় কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির অংশীদাররা একটি সাহসী এবং প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছিলেন, যার মাধ্যমে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। এই শ্রেণির মানুষেরা ফরাসি বিপ্লবের প্রাণশক্তি ছিলেন, যাদের দৈনন্দিন সংগ্রাম এবং অসন্তোষ বিপ্লবের জ্বালানি জোগান।

কৃষকরা প্রাচীন ফিউডাল ব্যবস্থার অধীনে বিপুল পরিমাণ কর এবং অন্যান্য সামাজিক অবিচারের শিকার ছিলেন। তারা তাদের উপর আরোপিত ভূমি কর, টাইথ এবং বিভিন্ন ফিউডাল দায়িত্ব থেকে মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। এই কৃষক বিদ্রোহ এবং তাদের অসন্তোষ ফরাসি বিপ্লবের প্রারম্ভিক অগ্রগতিতে মূল্যবান ভূমিকা রাখে।

অন্যদিকে, শ্রমিক শ্রেণি, বিশেষ করে প্যারিস এবং অন্যান্য শহরাঞ্চলের কারখানা ও কর্মশালার শ্রমিকরা, বিপ্লবী গতিবিধির একটি অপরিহার্য অংশ ছিলেন। তারা বিভিন্ন ধর্মঘট, মিছিল এবং বিক্ষোভের মাধ্যমে রাজতন্ত্র এবং ফিউডাল প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এই বিক্ষোভগুলি বিপ্লবের উত্থানে গতি এবং সামাজিক পরিবর্তনের দাবি উপস্থাপন করেছে।

এই দুই শ্রেণির অবদান ফরাসি বিপ্লবকে কেবল একটি রাজনৈতিক ঘটনা থেকে একটি সামাজিক বিপ্লবে পরিণত করেছে, যা সামাজিক সমতা এবং ন্যায়বিচারের দাবি করে। এই প্রক্রিয়ায় তারা ফরাসি সমাজকে পুনর্গঠনের জন্য নতুন ধারণা এবং মূল্যবোধ সরবরাহ করেছেন।

মনে রাখার জন্য:

  • কৃষক: ফিউডাল কর বিরোধিতা, বিদ্রোহ।
  • শ্রমিক: ধর্মঘট, মিছিল, রাজতন্ত্র চ্যালেঞ্জ।
  • অবদান: সামাজিক বিপ্লবে রূপান্তর, সমাজে সমতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।


Please log in to view this content.

error: Content is protected !!
Table Of Content
Scroll to Top
×

এই ওয়েবসাইটের সব কনটেন্ট এক্সেস করুন শুধু একটা মেম্বারশীপের সাথে।  আজকেই ক্লিক করুন নিচে রেজিস্টার করার জন্যে।  অসুবিধে হলে হোয়াটস্যাপ করুন আমাদের  +919804282819