fbpx

জীববিদ্যা ও মানবকল্যাণ Jibbidya O Manobkolyan Class 9 Life Science Jibon Bigyan WBBSE Notes

আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে

  • প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics  গুলো সহজভাবে.  এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
  • দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
  • তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er  প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
  • চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়

আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি

অনাক্রম্যতা এবং মানুষের রোগ 

মানবদেহে যখন রোগজীবাণু, তাদের প্রতিবিষ ও নানা বিজাতীয় প্রোটিন প্রবেশ করে তখন মানুষ কখনো রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে আবার কখনো মানবদেহ সেই রোগ প্রতিরোধ করতে পারে । আমাদের দেহে কিছু অঙ্গ, কোশ প্রভৃতি থাকে, যারা রোগজীবাণু থেকে শরীরকে মুক্ত করতে সাহায্য করে, যা অনাক্রম্য তন্ত্র নামে পরিচিত এবং শরীরকে রোগমুক্ত করার ক্ষমতাকে বলা হয় অনাক্রম্যতা ।

অনাক্রম্যতার ধারণা :

  • আমাদের চারপাশে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু থাকে । সেই জীবাণু বা জীবাণু নিঃসৃত ক্ষতিকর পদার্থ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখার ক্ষমতাকেই বলা হয় অনাক্রম্যতা ।
  • আমাদের শরীরের কিছু কোশ, কলা ও অঙ্গ নিয়ে গঠিত তন্ত্র এই অনাক্রম্যতায় সাহায্য করে যা অনাক্রম্য তন্ত্র হিসেবে পরিচিত ।
  • অনাক্রম্য তন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত কিছু কোশ, কলা বা অঙ্গ হলো রক্তের লিম্ফোসাইট, মনোসাইট, যকৃতের কুফার কোশ, ফুসফুসের অ্যালভিওলার ম্যাক্রোফাজ, যোগকলার হিস্টিওসাইট কোশ, মাস্ট কোশ, ত্বক, থাইমাস গ্রন্থি, প্লীহা, টনসিল ও অন্যান্য লসিকা গ্রন্থি প্রভৃতি ।

অনাক্রম্যতার প্রকারভেদ : 

  • অনির্দিষ্ট অনাক্রম্যতা : আমাদের শরীরে সহজাত বা জন্মগত কিছু অনাক্রম্যতা গড়ে ওঠে যা দেহে প্রবেশকারী যে-কোনো রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম, তাকে বলা হয় অনির্দিষ্ট বা সহজাত বা জন্মগত অনাক্রম্যতা । এই অনাক্রম্যতা শরীরে দুভাবে কাজ করে।
    • বাহ্যিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : একে প্রথম সারির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলা হয়, কারণ, আমাদের ত্বক, মিউকাস পর্দা প্রভৃতি ভৌত প্রতিবন্ধকরূপে শরীরে রোগজীবাণু প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে ও তাদের মেরে ফেলে । এরূপ কিছু উদাহরণ হলো- ঘাম, সিবাম, পাচক রস প্রভৃতি থেকে নিঃসৃত উৎসেচক ও রাসায়নিক পদার্থ যেমন HCL এবং চোখের জলে থাকা লাইসোজাইম নামক রাসায়নিক প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে দেহে রোগজীবাণু প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে ।
    • অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : এটি দ্বিতীয় সারির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা । আমাদের শরীরে অবস্থিত নিউট্রোফিল, মনোসাইট, ম্যাক্রোফাজ প্রভৃতি ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে দেহের ভিতরে থাকা জীবাণুকে মেরে ফেলে । ফ্যাগোসাইটোসিস একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যাতে ফ্যাগোসাইটস কোশগুলো অন্যান্য কোশ কিংবা কোশকণিকাকে ভক্ষণ করে ।
      মানবদেহে শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় এন্টিজেন ভক্ষণ করে দেহ নিরোগ রাখে । প্রধান ফ্যাগোসাইটিক কোশগুলো হলো ম্যাক্রোফেজ ও নিউট্রোফিল । এর পাশাপাশি রয়েছে ইউসিনোফিল, মনোসাইট, ডেনড্রাইটিক সেল ও বি লিম্ফোসাইট । বেসোফিল ও মাস্ট কোশ থেকে নির্গত হিস্টামিন ও বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত কলাকোশ থেকে নির্গত ব্রাডিকাইনিন বিভিন্ন ফ্যাগসাইটিক কোশের সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে প্রদাহ সৃষ্টি করে জীবাণু ধ্বংস করে ও উপশম করে ।
      যখন জীবাণুর আক্রমণে জ্বর হয় দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, জীবাণুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় । ভাইরাস আক্রান্ত কোশগুলি ইন্টারফেরন নামক একটি এন্টিভাইরাল প্রোটিন ক্ষরণ করে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে ।
  • নির্দিষ্ট বা অর্জিত অনাক্রম্যতা : মানবদেহে জন্মের পর থেকে কিছু নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, যা নির্দিষ্ট বা অর্জিত অনাক্রম্যতা নামে পরিচিত । এই অনাক্রম্যতা আমাদের শরীরে চারভাগে গড়ে ওঠে ।
    • প্রাকৃতিকভাবে সক্রিয় অর্জিত অনাক্রম্যতা : শরীরে জীবাণু আক্রমণের পর রোগাক্রান্ত সময় ও তার পরবর্তী সময়ে যে অনাক্রম্যতার সৃষ্টি হয়, তাকে প্রাকৃতিক ভাবে সক্রিয় অর্জিত অনাক্রম্যতা বলে । যেমন- হাম ও জল বসন্ত ।
    • প্রাকৃতিকভাবে নিষ্ক্রিয় অর্জিত অনাক্রম্যতা : প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে এন্টিবডি প্রবেশ করে যে স্বল্পস্থায়ী অনাক্রম্যতা তৈরি হয় তাকে প্রাকৃতিকভাবে নিষ্ক্রিয় অর্জিত অনাক্রম্যতা বলে । যেমন- মায়ের শরীরের এন্টিবডি শিশুর দুধ পানের মাধ্যমে শিশুর দেহে প্রবেশ করে প্রাকৃতিকভাবে অনাক্রম্যতা গড়ে তোলে ।
    • কৃত্রিমভাবে অর্জিত সক্রিয় অনাক্রম্যতা : যে অনাক্রম্যতা তৈরীর জন্য বাহ্যিক ভাবে টিকা ও টক্সয়েড নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাকে কৃত্রিমভাবে অর্জিত সক্রিয় অনাক্রম্যতা বলে । যেমন- টিটেনাস টক্সয়েড, পোলিও, হেপাটাইটিস- B ভ্যাকসিন ।
    • কৃত্রিমভাবে অর্জিত নিষ্ক্রিয় অনাক্রম্যতা : যে অনাক্রম্যতা গড়ে তোলার জন্য অন্য প্রানীর (ঘোড়া) দেহে এন্টিবডি তৈরি করে মানুষের শরীরে তা প্রবেশ করাতে হয়, তাকে কৃত্রিমভাবে অর্জিত নিষ্ক্রিয় অনাক্রম্যতা বলে । যেমন- এন্টিভেনম সিরাম (AVS) ও রেবিস ভ্যাকসিন ।

অ্যান্টিজেন : অ্যান্টিজেন হলো বিজাতীয় জীবাণু বা অধিবিষ বা টক্সিন যা শরীরে প্রবেশ করলে কোনো নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা লাভ করা যায় । এই বিজাতীয় জীবাণুর দেহে থাকা প্রোটিনধর্মী বা পলিস্যাকারাইড-ধর্মী পদার্থই প্রানীদেহের অনাক্রম্য তন্ত্রকে সক্রিয় রাখে ।

জাতিগতভাবে পৃথক প্রাণীর দেহে সম-প্রকৃতির অ্যান্টিজেন দেখা গেলে তাদের জেনোজেনিক অ্যান্টিজেন বা হেটেরোফিল অ্যান্টিজেন বলে । যেমন- ইঁদুর, বিড়াল, ভেড়া, ঘোড়া প্রভৃতি প্রাণীর RBC তে অবস্থিত ফরসম্যান অ্যান্টিজেন ।

অ্যান্টিজেনের বৈশিষ্ট্য :

  • অ্যান্টিজেন প্রধানত প্রোটিনধর্মী হয় আবার কিছু কিছু অ্যান্টিজেন পলিস্যাকারাইড এবং লাইপোপ্রোটিন জাতীয় হয় ।
  • অ্যান্টিজেনের আণবিক ভর 10,000 ডালটন বা তার থেকে বেশি হয় ।
  • একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রাণীর কলাতে প্রজাতি নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন থাকে ।
  • এদের বিশেষ গঠন থাকার দরুণ অনাক্রম্যতার উপাদান দ্বারা সহজে শনাক্ত করা যায় ।

অ্যান্টিবডি : অ্যান্টিজেনকে ধ্বংস করার জন্য আমাদের দেহে প্রোটিনধর্মী যে উপাদান সংশ্লেষিত হয় এবং তা অ্যান্টিজেনের সঙ্গে নির্দিষ্টরূপে আবদ্ধ হয়ে আমাদের রোগ প্রতিরোধ বাড়িয়ে তোলে, তাকে বলা হয় অ্যান্টিবডি বা ইমিউনোগ্লোবিউলিন । মানবদেহ প্রত্যেক দিনই একাধিক ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়ার সংস্পর্শে আসে । এই ইমিউনোগ্লোবিউলিনস তাদের প্রতিরোধ করে ।

অ্যান্টিজেনের যে অংশ অ্যান্টিবডির সাথে যুক্ত থাকে, তাকে বলা হয় এপিটোপ ।

এই এপিটোপের সাথে অ্যান্টিবডির যে অংশ যুক্ত থাকে, তাকে বলা হয় প্যারাটোপ ।

এটি আবার পাঁচ ভাগে বিভক্ত, আই.জি.এ (IgA), আই.জি.ডি (IgD), আই.জি.ই (IgE), আই.জি.জি (IgG) এবং আই.জি.এম (IgM) ।

আমাদের শরীরে কোনও অ্যান্টিজেন প্রবেশ করলেই শরীর সতর্ক হয়ে যায় । তখন সেই অ্যান্টিজেন ধ্বংস করতে প্রথমেই যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তাকে বলে আই.জি.এম । কিন্তু তার আয়ু কম । তাই সেটা কপি করে অন্য একটি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যাকে বলে আই.জি.জি । এই প্রোটিন কিন্তু অনেক দিন ধরে শরীরে সেই অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে । আমাদের শরীরের চোখ, নাক, শ্বাসনালির মতো অংশে অর্থাৎ যেখানে সিক্রেশন হয়, সেখানে আর একটি অ্যান্টিবডি থাকে, আই.জি.এ । এভাবে শরীরকে চার দিক থেকে এই ইমিউনোগ্লোবিউলিনস পাহারা দিয়ে রাখে ।

ম্যাটারনাল অ্যান্টিবডি : IgG  শ্রেণীর অ্যান্টিবডি মায়ের শরীর থেকে ভ্রূণের শরীরে প্রবেশ করে ভ্রূণকে এবং শিশুর জন্মগ্রহণের পর মাতৃদুগ্ধের সাথে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে শিশুকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে । তাই এই IgG অ্যান্টিবডিকে ম্যাটারনাল অ্যান্টিবডি বলে ।

শিশুর জন্মের পর মায়ের স্তনগ্রন্থি থেকে IgG অ্যান্টিবডি সমন্বিত হালকা হলুদ বর্ণের যে গাঢ় মাতৃদুগ্ধ নিঃসৃত হয় তাকে বলা হয় কলোস্ট্রাম ।

অ্যান্টিবডির বৈশিষ্ট্য :

  • এটি ইমিউনোগ্লোবিউলিন জাতীয় প্রোটিন এবং B-লিম্ফোসাইট দিয়ে তৈরি হয় ।
  • নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি হতে একটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন প্রয়োজন ।
  • এর আণবিক ওজন 180,000-9,50,000 ডালটন ।
See also  Chapter 05 শক্তির ক্রিয়া কার্য ক্ষমতা ও শক্তি: Shoktir Kriya Karjo Khomota O Shokti Physical Science Bhouto Bigyan - Class 9 WBBSE Notes

অ্যান্টিবডির গঠন : অ্যান্টিবডি গঠিত হয় চারটি পলিপেপটাইড দিয়ে যার মধ্যে দুটি ভারী শৃঙ্খল বা H- চেন যা ডাইসালফাইড বন্ধন দ্বারা যুক্ত এবং দুটি হালকা শৃঙ্খল বা L-চেন যা একটি করে ডাইসালফাইড বন্ধন দিয়ে H-চেনের সাথে মিলিত থাকে ।

অ্যান্টিবডির কাজ : অ্যান্টিবডি অ্যান্টিজেনকে ধ্বংস করে- দলবদ্ধকরণ বা আগ্লুটিনেশন, অধঃক্ষেপন বা প্রেসিপিটেশন, অপসোনাইসশন বা অ্যান্টিজেনকে আগ্রাসী কোশের কাছে উপাদেয় করে, প্রশমকরণ বা অ্যান্টিজেনকে অকেজো করে এবং লাইসিস বা বিদীর্ণকরণের মাধ্যমে ।

অনাক্রমন সাড়া

মানবদেহে নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের প্রভাবে যে দ্রুত সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তাকে অনাক্রমন সাড়া বা Immune Response বলে । যেমন: B-লিম্ফোসাইট, T-লিম্ফোসাইট, ম্যাক্রোফাজ ও মাস্ট কোশ অনাক্রমণ  সাড়া জাগায় । এই অনাক্রমণ সাড়া দুই প্রকার ।

প্রাথমিক অনাক্রমণ সাড়া : এই ধরণের সাড়া দেখা যায় জীবাণুর প্রথম সংক্রমণে । এতে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে বেশ কিছু সময় লাগে তবে যে গ্রাহক ও স্মৃতিকোশ গড়ে ওঠে তা ভবিষ্যতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে । এই অনাক্রমন সাড়া আবার দুপ্রকার-

  • রসনির্ভর অনাক্রম্যতা (Humoral immunity)
  • কোশনির্ভর অনাক্রম্যতা (Cell mediated immunity)

গৌণ অনাক্রমণ সাড়া : একই জাতীয় জীবাণুর সংক্রমণে যখন দ্বিতীয়বার খুব দ্রুত অনাক্রমন সাড়া দেখা যায়, তাকে বলা হয় গৌণ অনাক্রমন সাড়া । যেমন: স্মৃতিকোশ ও গ্রাহক কোশ পূর্বের অ্যান্টিজেনকে চিনে নিয়ে দ্রুত সাড়া দেয় ও এন্টিবডি তৈরি করে অ্যান্টিজেনকে ধ্বংস করে ।

টিকার ধারণা :

যে ভাইরাস প্রতিরোধ করা দরকার তার অতি ক্ষুদ্রাংশ যা মৃত বা জীবিত কিন্তু নিষ্ক্রিয়, বা আক্রমণে অক্ষম এমন অংশ ব্যবহার করে যে ঔষধ তৈরি করা হয় এবং তা মেরুদন্ডী প্রাণীর শরীর অ্যান্টিজেনরূপে প্রবেশ করিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অনাক্রম্যতা গড়ে তোলা হয় তাকেই টিকা বা ভ্যাক্সিন বলে । কোনো ভাইরাল ভ্যাক্সিন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়ে থাকে ।

টিকাপ্রদানের এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় টিকাকরণ ।

টিকাকরণ আবিষ্কারের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : প্রায় 10,000 খ্রিস্টপূর্বে এশিয়া ও আফ্রিকার কৃষকদের দেহে প্রথম গুটিবসন্ত দেখা যায় । 1160 খ্রিস্টপূর্বে রামসেস পঞ্চমের জামাতেও এই গুটিবসন্তের ক্ষতচিহ্ন দেখা যায় । বহু যুগ ধরে ভারত ও চিনে গুটিবসন্তে মানুষ অসুস্থ হয়ে মারা যেতে থাকে । মানুষ লক্ষ্য করে গুটিবসন্তে যারা বেঁচে গেছে তাদের আর হয়নি । সেই থেকে এশিয়াতে

‘ভ্যারিওলেশন’ পদ্ধতির চল শুরু হয় যেখানে বসন্তের গুটির তরল পদার্থে একটি সুতো ভিজিয়ে সেটিকে গুতিবসন্তে আক্রান্ত না হওয়া মানুষের গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হলে দেখা গেছিল তাতে কিছু মানুষ বাঁচত এবং কিছু মানুষ অসুস্থ হয়ে মারা যেত ।

এই পদ্ধতির ব্যর্থতার পর 1796 সালের 4 মে এক ব্রিটিশ তরুণ চিকিৎসক এডওয়ার্ড জেনার এক গোয়ালিনীর থেকে জানতে পারেন যে তার একবার গোবসন্ত হওয়ার পর আর গুটিবসন্ত হয়নি। সেই শুনে তিনি গোবসন্তের ফুসকুড়ি থেকে নমুনা নিয়ে সেই সুঁচ দিয়ে আট বছরের এক বাচ্চার হাতে আঁচড় কাটেন এবং পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন ।

তিনি লক্ষ্য করেন ছেলেটার হাত ফুলে ওঠে ও সে সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়ে । এর ছ’ সপ্তাহ পর তিনি আবার একই কাজ করেন ও দেখেন ছেলেটির আর কোনোদিন গোবসন্ত বা গুটিবসন্ত হয়নি । এভাবেই কোনো জীবাণু বা জীবানুসৃষ্ট পদার্থকে কৃত্রিম উপায়ে মানবদেহে প্রবেশ করিয়ে সেই জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট রোগের বিরুদ্ধে দেহে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রথাকেই বলা হয় টিকাকরণ বা vaccination ।

  • ল্যাটিন শব্দ vacca কথার অর্থ ‘গরু’ এবং এই শব্দটি থেকে পাস্তুর জেনারের আবিস্কারের সম্মানার্থে vaccination নামকরণ করা হয় ও vaccine শব্দটি প্রচলিত হয়।
  • সসর্বশেষ গুটিবসন্তে আক্রান্ত মানুষের খোঁজ পাওয়া যায় সোমালিয়ায় 1977 সালের 26 অক্টোবর ।
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO 1980 সালের 8 মে ঘোষণা করেন যে টিকার মাধ্যমে গুটি বসন্তকে পৃথিবী থেকে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে ।

এককভাবে বা যৌথভাবে ব্যবহারের ভিত্তিতে টিকার প্রকারভেদ : 

  • জীবত সংক্রমণ ক্ষমতাবিহীন বা লাইভ অ্যাটিনুয়েটেড ভ্যাকসিন : এই টিকায় উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলি জীবত কিন্তু দুর্বল যারা অ্যান্টিবডি উৎপাদনে সক্ষম কিন্তু রোগ সৃষ্টি করতে পারেনা । যেমন: ব্যাক্টেরিয়াজাত : বি সি জি, প্লেগ, টাইফয়েড ওরাল, ভাইরাসজাত ও মুখে সেব্য: পোলিও, হাম, পীতজ্বর, রুবেল্লা, ইনফ্লুয়েনজা ।
  • মৃত বা নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিন : এই টিকায় জীবাণু( ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস) মৃত অবস্থায় থাকে । যেমন: ব্যাকটেরিয়াজাত- টাইফয়েড, কলেরা, পারটুসিস, প্লেগ । ভাইরাসজাত- রাবিস, হেপাটাইটিস B ।
  • টক্সওয়েড ভ্যাকসিন : টিটেনাস, ডিপথেরিয়া (ব্যাকটেরিয়াজাত) টিকাতে ব্যবহার করা হয় রোগের বিষক্রিয়া প্রতিরোধক পদার্থ ।
  • উপাদানসমূহ : ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার উপাদানগুলোকে টিকাতে ব্যবহার করা হয় । যেমন- হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েনজি টাইপ বি ।
  • যৌথ বা কম্বিনেশন ভ্যাকসিন : এই ধরনের টিকাতে দুই বা তার বেশি অ্যান্টিজেন ব্যবহৃত হয় । যেমন- MMR (ভাইরাসজাত), DPT+ salk polio vaccine (ব্যাকটেরিয়া + ভাইরাস), DPT (Dipetheria-Pertussis-Tetanus), DT (Dipttheria-Tetanus), DP( Diptheria-Pertussis), DPT+Typhoid (ব্যাকটেরিয়াজাত) ।
  • জীবিত অণুজীব থেকে যে টিকা তৈরি হয় তাকে বলে প্রথম জনু টিকা ।
  • জীবিত অণুজীবের দেহাংশ থেকে যে টিকা তৈরি হয় তাকে বলা হয় দ্বিতীয় জনু টিকা ।
  • জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা রিকম্বিনেন্ট DNA দিয়ে যে টিকা তৈরি হয় তাকে বলে কৃত্রিম টিকা বা তৃতীয় জনু টিকা ।

মানবদেহে রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু 

মানবদেহে যে সমস্ত জীবাণু, অণুজীব রোগ সৃষ্টি করে তারা কখনো জলে, স্থলে বা বাতাসে থাকে আবার কেউ কেউ শরীরের ভিতরেও থাকে । দেহের বাইরে বসবাসকারী জীবাণুকে বলা হয় বহিঃপরজীবী এবং দেহের ভিতরে থাকা জীবাণুকে বলা হয় অন্তঃপরজীবী । এই অন্তঃপরজীবীদের মধ্যে কিছু কিছু উপকৃত যেমন অন্ত্রে বসবাসকারী E. Coli যা ভিটামিন বি সংশ্লেষ করে । কিন্তু বেশিরভাগই রোগ সৃষ্টি করে । রোগসৃষ্টিকারী পরোজীবীদের বলা হয় প্যাথোজেন ।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রোগের প্রকৃতি, উপসর্গ ও তাদের সংক্রমণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো-

  1. টিটেনাস : রোগটি Clostridium tetani নামক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সংক্রমিত হয় । এই রোগের উপসর্গগুলি হলো- চোয়াল আটকে যাওয়া, পিঠ, ঘাড়, পেট ও পায়ের পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া এবং যন্ত্রণাদায়ক খিঁচুনি হওয়া । এই রোগ ঘোড়া, গরু বা ছাগলের মলে থাকা জীবাণু থেকে মানবদেহের ক্ষতস্থানের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে সংক্রমণ ঘটে ।
  2. ডায়ারিয়া : অন্ত্রের সংক্রমণজনিত এই রোগটি হয় বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া যেমন Shigella, Compylobacter, E.Coli এবং বিভিন্ন ভাইরাস যেমন Norovirus, Rotavirus প্রভৃতির দ্বারা । এই রোগের উপসর্গ হলো- পেটব্যথা, জ্বর, বমিভাব, বারবার পাতলা পায়খানা, খাবারে অনিচ্ছা, মলের সাথে রক্ত পড়া ও বায়ুত্যাগ । এই রোগটি পোলট্রি বা ডেয়ারি জাতীয় খাবার দ্বারা সংক্রমিত হয় । খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে মুখবিবর দিয়ে সুস্থ মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয় ।
  3. ম্যালেরিয়া : এটি স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা বাহিত Plasmodium নামক আদ্যপ্রাণীর সংক্রমনজনিত কমিউনিকেবল রোগ । এই রোগের উপসর্গ হলো- প্রবল জ্বর (105°F) এবং নির্দিষ্ট সময় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা ও ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া । দীর্ঘদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগলে প্লীহা ও যকৃৎ বড় হয়ে যায় এবং প্রচুর RBC ধ্বংস হওয়ার ফলে হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া হয় । স্পোরজয়েট বহন করে এমন স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা সুস্থ মানুষকে কামড়ালে এই রোগ হয় ।            
  4. ডিপথেরিয়া : এটি শ্বাসতন্ত্রের একপ্রকার রোগ যা Corynebacterium diptheriae নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট । এই রোগের উপসর্গগুলি হলো- টনসিল ফোলা, গলা ব্যথা, খাবার গলাদ্ধকরণে অসুবিধা, কানের গোড়া ফুলে যাওয়া, মুখের ভেতর গলবিল অঞ্চল লাল হয়ে রক্তক্ষরণ হওয়া । এই রোগ নাক, মুখ থেকে নির্গত জলীয় বিন্দু ও ত্বকের ক্ষত থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয় । সংক্রমিত বস্তু যেমন খেলনা, কাপ, পেন্সিল থেকে শিশুরা আক্রান্ত হয় ।
  5. নিউমোনিয়া : শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগটি Streptococcus pneumonae ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘটে । এই রোগের উপসর্গ হলো- হাঁচি, কাশি, সর্দি, জ্বর, ফুসফুসের প্লুরাতে ব্যথা । রোগের আকার বৃদ্ধি পেলে মেনিনজাইটিস, পেরিকারডাইটিস প্রভৃতি এমনটি মৃত্যুও ঘটে । এই রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মধ্যে দিয়ে বাতাসে মিশে সুস্থ ব্যক্তির প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে রোগ সংক্রমণ ঘটায় ।           
  6. যক্ষা : ফুসফুসজনিত এই রোগটি Mycobacterium tuberculosis নামক ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট। ফুসফুস ছাড়া অন্য অঙ্গেও এই রোগ হতে পারে । এই রোগের উপসর্গ হলো- দুর্বলতা, অবসাদ, ওজন হ্রাস, জ্বর, ক্রনিক কাশি, কফের সাথে রক্ত পড়া, রক্তনালী, লসিকা নালিতে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া, খাদ্য গ্রহনে অনীহা, বুকে ব্যথা, টানা কফ ও কাশি । এই রোগের ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত রোগীর থুতু ও কফের সাথে বাতাসে মিশে সুস্থ লোকের শরীরে প্রবেশ করে । তারপর ফুসফুসে প্রবেশ করে পালমোনারি যক্ষা সৃষ্টি করে । এই সময় তারা বংশবিস্তার করে লিম্ফোসাইট ও ম্যাক্রোফাজ বেষ্টিত হয়ে টিউবারকিল তৈরি করে
  7. ডেঙ্গু : রোগটি এডিস মশা বাহিত ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট । এই রোগের উপসর্গ হলো- যন্ত্রণাময় জ্বর, গা হাত পায়ে, পেশিতে ব্যথা, অনুচক্রিকার সংখ্যা কমে যাওয়া, লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠা । এই রোগ এডিস মশকির দংশনের ফলে আক্রান্ত মানুষের থেকে সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করে
  8. হেপাটাইটিস B : এই রোগ হেপাটাইটিস ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হয় । এই ভাইরাসগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হেপাটাইটিস- A, B, C, D এবং E, যারমধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো হেপাটাইটিস B ভাইরাস । এই রোগের উপসর্গ হলো- জ্বর, বমিভাব, কম ক্ষুধা, দুর্বলতা, পেটখারাপ, জন্ডিস, রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি, পেট ব্যথা, কালচে মূত্র, যকৃতকোশের ধ্বংসসাধন, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ক্যানসার । এই রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, লালা, বীর্য, মল, অপরিশোধিত সিরিঞ্জ থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে । সংক্রমিত মায়ের অমরা থেকে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে । জলের মাধ্যমেও এই রোগ সংক্রমণ করে ।
  9. হেপাটাইটিস-A : রোগটি হেপাটাইটিস-A ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় । এই রোগের উপসর্গগুলো হলো- জ্বর, বমিভাব, খাবারে অনীহা, দুর্বলতা, জন্ডিস, লিভার সিরোসিস, পেট খারাপ, রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, ডানদিকে পাঁজরের নীচে ব্যথা, ঘুষঘুষে জ্বর ইত্যাদি । এই ভাইরাস জল ও খাদ্যের মধ্যে দিয়ে সুস্থ মানবদেহকে সংক্রমিত করে ।
  10. এইডস (AIDS) : এই রোগটি HIV বা হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হয় । এই রোগের উপসর্গগুলো হলো- ওজন হ্রাস, জ্বর, কাশি, ডায়ারিয়া, ত্বকে ঘা, ক্যানসার ইত্যাদি । এই রোগ অসুরক্ষিত যৌন মিলন, অপরিশোধিত সিরিঞ্জ, সংক্রামিত ব্যক্তির বীর্য ও রক্তের মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে । এমনকি সংক্রামিত মায়ের থেকে শিশুর শরীরেও প্রবেশ করে ।
See also  Chapter-01 গ্রহরূপে পৃথিবী Grohorupe Prithibi Geography Bhugol Subject WBBSE Class 9

ধৌতকরণের ধারণা ও উপাদান এবং রোগ নিরাময়ে ধৌতকরণের ভূমিকা :

ধৌতকরণ বলতে বোঝায় আমাদের হাত, পা, শরীর, জামাকাপড়, দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস ভালোভাবে জল ও সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা, কারণ এগুলি থেকেই জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে ।

1913 খ্রিস্টাব্দের প্রথমে WHO এবং UNICEF- এর Joint Monitoring Programme for Water Supply and Sanitation (JMP)-এর মতে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার 2.5 বিলিয়ন মানুষ (36%) উন্নত স্যানিটেশন পায় না, এবং 768 মিলিয়ন মানুষ অপরিশোধিত জল পান করে ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে মারা যায় ।

বিদ্যালয়ের স্যানিটেশন অপরিচ্ছন্ন থাকায় মেয়েরা স্কুল যেতে চায়না, ফলে তাদের শিক্ষা বাধাপ্রাপ্ত হয় । এর প্রতিকারের জন্য UNICEF ধৌতকরণ বা WASH পরিকল্পনা গ্রহণ করে যার মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের বিশুদ্ধ পানীয় জল খাওয়ানো, পরিষ্কার শৌচাগার ব্যবহার ও উন্নত স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা । এই জন্য জাতীয়, রাজ্য ও জেলাস্তরে সরকারি ও NGO দ্বারা বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে । যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

  • প্রতিটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয়জলের ব্যবস্থা করা, উন্নত ও পরিষ্কার শৌচাগারের বন্দোবস্ত করা এবং বিভিন্ন আলোচনাসভার মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের ওয়াকিবহাল করা ।
  • মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অনুযায়ী 2015 সালের মধ্যে যে সমস্ত মানুষ বিশুদ্ধ জল ও পরিষ্কার শৌচাগার থেকে বঞ্চিত তাদের সংখ্যা অর্ধেক করা ।

শিশুর বেঁচে থাকা ও উন্নতির জন্য এই WASH প্রকল্পটির বাস্তবায়নের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো-

  • পরিবেশের সুরক্ষার জন্য বিধিবদ্ধ আইন লাঘু করা । 
  • বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধিসম্মত শৌচালয় বন্দোবস্ত করা ।
  • আচরণগত পরিবর্তন ।

ধৌতকরণের উপাদান :

শরীর ও দৈনন্দিন আসবাবপত্র ধৌতকরণের জন্য যে সামগ্রী ব্যবহার করা হয় তা হলো-

  • ডিটারজেন্ট : জামাকাপড় ধোয়ার জন্য আমরা ডিটারজেন্ট বা তরল বা গুঁড়ো সাবান ব্যবহার করি ।
  • হ্যান্ড স্যানিটাইজার : এর সাহায্যে আমরা বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে হাত স্যানিটাইজ করি যাতে হাত জীবাণুমুক্ত হয় ।
  • সাবান : স্নান করার সময় নিয়মিত সাবান দিয়ে সারা শরীর ধুলে বা বাইরে থেকে এসে হাত, পা ভালো করে সাবান দিয়ে ধুলে শরীর ধুলো, বালি, জীবাণুমুক্ত হয় ।
  • জীবাণুনাশক : ডেটল, স্যাভলন প্রভৃতি জীবাণুনাশক দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ধুলে তা জীবাণুমুক্ত
    হয় ।

রোগ নিরাময়ে ধৌতকরণের ভূমিকা : 

  • ধৌতকরণের মাধ্যমে গা, হাত, পা, মুখ ভালো করে ধোয়ার ফলে ধুলো, বালি, ময়লা, জীবাণু ধুয়ে যায় ফলে শরীরে রোগের আক্রমণের আশঙ্কা কমে যায় ।
  • খাওয়ার আগে লিকুইড সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ভালো করে পরিষ্কার করে নিলে হাতের থেকে কোনো জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারবে না । তেমনি বিশুদ্ধ জল পান করার ফলে জলবাহিত জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে না ফলে শরীর সুস্থ থাকে ।
  • আমাদের সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, যেমন- হাত পায়ের নখ কেটে ফেলা, নিয়মিত সাবান দিয়ে স্নান করে, বিশুদ্ধ পানীয় জল ও খাদ্যগ্রহণ করা। এরফলে আমাদের শরীরে জীবাণুর প্রাদুর্ভাব কমবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে ।
  • পরিষ্কার শৌচাগার ব্যবহার করতে হবে । তবেই বিভিন্ন জলবাহিত রোগ যেমন কলেরা, উদরাময়, অ্যামিবায়োসিস, ইত্যাদি থেকে আমরা বাঁচতে পারবো ।

মানবকল্যানে জীবাণুদের ভূমিকা :

জীবাণু ও অণুজীবরা যেমন মানবদেহে নানাভাবে ক্ষতিসাধন করে, তেমনি কিছু কিছু জীবাণু ও অণুজীব মানবদেহ ও পরিবেশের উপকার সাধন করে ।

জৈবিক নিয়ন্ত্রণ : কিছু কিছু জীবাণু আছে যারা প্রাকৃতিক শত্রু হিসেবে পেস্টের ক্ষতিকর প্রভাবকে কমিয়ে দেয়, বা পেস্ট নিধনে অংশগ্রহণ করে, সেই পদ্ধতিকে জৈবিক নিয়ন্ত্রণ বলে । এমন কিছু প্রাকৃতিক শত্রুর উদাহরণ হলো-

  • ভাইরাস : 
    • Nucleopolyhedrosis virus or NPV  ব্যবহৃত হয় Helicoverpa armigera নামক পতঙ্গের লার্ভা ধ্বংস করতে ।
    • গ্রানুলোসিস ভাইরাস ব্যবহৃত হয় Spodoptera litura নামক পতঙ্গের লার্ভা মারতে ।
  • ব্যাকটেরিয়া :
    • আরশোলা ও মশার নিয়ন্ত্রণে Bacillus thuringiensis (ব্যাসিলাস থুরিজিয়েনসিস) ব্যাকটেরিয়ার রেণু ও ক্রিস্টাল প্রোটিন বা Bt ক্রাই প্রোটিন লেপিডপটেরা ও ডিপটেরা বর্গের লার্ভা ব্যবহৃত হয় ।
    • অ্যানোফিলিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে Bacillus sphaericus নামক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয় ।
  • প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী :
    • বিভিন্ন পতঙ্গ ও পেস্টের দমনে বিভিন্ন প্রজাতির প্রোটোজোয়া ব্যবহৃত হয় যেমন- Tetrahymena sp., Nosema sp.
    • আমেরিকাতে ইউরোপীয় কর্ন বোরার ধ্বংসের জন্য Perezia pyraustae (পেরেজিয়া পাইরাউস্টি) নামক প্রোটোজোয়া ব্যবহৃত হয় ।

জৈবসার : নাইট্রোজেন ও ফসফরাস হলো শস্য উৎপাদনকারী উদ্ভিদের জন্য খুব প্রয়োজনীয় উপাদান । এই উপাদানগুলো উদ্ভিদের জন্য সহজলভ্য করার জন্য মাটিতে কিছু ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল ও ছত্রাকের অণুজীবীয় ইনোকুলাম মাটিতে প্রয়োগ করা হয়, একে জৈবসার বলে ।

জৈবসার হিসেবে ব্যাকটেরিয়া : 

  1. নাইট্রোজেন স্থিতিকরণে সাহায্যকারী ব্যাকটেরিয়া :  এটি তিনপ্রকার-
    • অ্যাজোটোব্যাক্টর, ক্লস্ট্রিডিয়াম, ব্যাসিলাস পলিমিক্সা ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া বাতাসে মুক্ত নাইট্রোজেনকে মাটিতে আবদ্ধ করে শস্য, ফল, সবজি ফলনে সহায়তা করে ।
    • Rhizobium নামক ব্যাকটেরিয়া যেমন R. Leguminosarum, R. Trifoli শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলের গুটিতে বাস করে এবং বাতাসের নাইট্রোজেনকে নিজদেহে অবদ্ধ করে যার কিছু অংশ পোষক উদ্ভিদ পায় । এই মিথোজীবী উদ্ভিদ মারা গেলে মূলে আবদ্ধ নাইট্রেট মাটিতে মিশে মাটিকে উর্বর করে তোলে ।
    • ধান, ভুট্টা প্রভৃতি গাছের মূলে থাকে Azospirillum নামক ব্যাকটেরিয়া যা নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে । একে রাসায়নিক সারের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন ভালো হয় ।

2. ফসফেট দ্রবিভূতকরণে সক্ষম ব্যাকটেরিয়া : মাটির অদ্রবনীয় অজৈব ফসফেটকে দ্রবণীয় জৈব ফসফেটে পরিণত করে থায়োব্যাসিলাস এবং ব্যাসিলাস নামক ব্যাকটেরিয়া যা উদ্ভিদ গ্রহণ করতে পারে ।

উদ্ভিদের মূল-পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অপকারী ছত্রাককে ধ্বংস করে সিডোরোফোর গঠনকারী সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স নামক ব্যাকটেরিয়া ।

জৈবসার হিসেবে নীলাভ সবুজ শ্যাওলা : 

অ্যানাবিনা, নস্টক, অসিলেটোরিয়া স্বাধীনভাবে ও অ্যানাবিনা অ্যাজোলি (Anabaena azollae), অ্যাজোলা (Azolla sp.) নামক নীলাভ সবুজ শ্যাওলা জলজ ফার্নের সঙ্গে মিথজীবী হিসেবে অ্যানাবিনার সাহায্যে গ্যাসীয় নাইট্রোজেনকে নাইট্রেট লবন রূপে মাটিতে আবদ্ধ করে ।

জৈবসার হিসেবে ছত্রাক : কিছু ছত্রাক অণুজীব সার হিসেবে উদ্ভিদের মূলে মিথজীবীরূপে থাকে ও জল, খনিজ মৌল শোষণ করে উদ্ভিদের পুষ্টি ও বৃদ্ধি ঘটায় । উচ্চশ্রেণীর উদ্ভিদের মূল ও ছত্রাকের অনুসূত্রের এই সহাবস্থানকে মাইকোরাইজা বলে । এটি দুই প্রকার-

  1. মূলের বাইরে অবস্থিত ছত্রাকের অনুসূত্র যখন পরিবেশ থেকে জল ও পুষ্টিপদার্থ শোষণ করে মূলে প্রবেশ করায়, তাকে এক্টোমাইকোরাইজা বলে ।
  2. ছত্রাকের অনুসূত্র যখন মূলের ভেতরের কোশকলা কর্টেক্সের মধ্যবর্তী স্থানে থাকে, তখন তাকে এন্ডোমাইকোরাইজা বা Vesicular Arbuscular Mycorrhizae বা VAM বলে ।
    1. উদ্ভিদের ফসফেটের পুষ্টিবৃদ্ধিতে VAM অংশগ্রহণ করে ।
    2. মাইকোরাইজার সাথে যুক্ত হয়ে জমির উর্বরতা বাড়িয়ে তোলে ।
    3. পাইন গাছের মূলে ছত্রাক না জন্মালে গাছটি বৃদ্ধিরোধ হয়ে মারা যায় ।
    4. মাইকোরাইজা ফসল উৎপাদনকারী ও বনজ উদ্ভিদের পুষ্টি, বৃদ্ধি ও জলশোষণে সাহায্য করে ।
See also  Chapter 08- পশ্চিমবঙ্গ Poschimbongo Geography Bhugol Subject WBBSE Class 9

SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of জীববিদ্যা ও মানবকল্যাণ JIBBIDYA O MANOBKOLYAN

1 MARKS QUESTIONS of জীববিদ্যা ও মানবকল্যাণ JIBBIDYA O MANOBKOLYAN

1. মৃত বা নিষ্ক্রিয় টিকার একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : ইনফ্লুয়েঞ্জা।

2. মটর গাছের মূলে ______ নামক ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন সংবন্ধনে সাহায্য করে।
উত্তর : রাইজোবিয়াম।

3. বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস কোনদিন পালিত হয়?
উত্তর : 7 এপ্রিল।

4. শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে গুটি সৃষ্টিকারী মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়ার নাম লেখো।
উত্তর : রাইজোবিয়াম (Rhizobium)।

5. ধান, ভুট্টা গাছের মূলে কোন মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়?
উত্তর : Azospirilum

6. UNICEF-এর পুরো নাম লেখো।
উত্তর : United Nations International Children’s Emergency Fund

7. হেপাটাইটিস্-A একটি ______ বাহিত রোগ।
উত্তর : জল।

8. টিটেনাসের জীবাণুটির নাম কী?
উত্তর : ক্লসট্রিডিয়াম টিটানি৷

9. ব্যাকটেরিয়াঘটিত একটি ফুসফুসের রোগ হল ______
উত্তর : যক্ষ্মা।

10. যে পোষকের দেহের পরজীবীর জীবনচক্রের যৌনজনন ছাড়া অন্য যে-কোনো দশা অতিবাহিত হয়, তাকে ______ বলে।
উত্তর : গৌণ পোষক।

multiple choice questions – 1 marks of জীববিদ্যা ও মানবকল্যাণ JIBBIDYA O MANOBKOLYAN

1. ভাইরাস আক্রান্ত কোশ থেকে যে অ্যান্টিভাইরাল প্রোটিন ক্ষরিত হয়, তা হল—
A. ইন্টারফেরন B. HCl C. লাইসোজাইম D. কোনোটিই নয়
উত্তর : A

2. রাইজোবিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে কোনটি সঠিক তথ্য?
A. শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলের অবুদে থাকে B. N2 সংবন্ধন করতে পারে
C. মিথোজীবী প্রকৃতির D. সবকটি
উত্তর : D

3. স্পোডোপটেরা লিটুরা নামক পতঙ্গর লার্ভা বিনাশ করতে প্রয়োজন –
A. NPV B. গ্রানুলোসিস ভাইরাস C. ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস্ D. সবকটি
উত্তর : B

4. নীচের কোনটি একটি জলবাহিত রোগ?
A. টিটেনাস B. ডিপথেরিয়া C. ডায়ারিয়া D. যক্ষ্মা
উত্তর : C

5. রোটা ভাইরাস শিশুদের যে রোগটির জন্য দায়ী, সেটি হল –
A. নিউমোনিয়া B. যক্ষ্মা C. ম্যালেরিয়া D. উদরাময়
উত্তর : D

6. নীচের কোটি নাইট্রোজেন সংবন্ধন করতে পারে?
A. প্রোটোজোয়া B. সায়ানোব্যাকটেরিয়া C. ভাইরাস D. ছত্রাক
উত্তর : B

7. অনাক্রম্যতার সঙ্গে যুক্ত কোন্ রক্তকোশ?
A. অণুচক্রিকা B. RBC C. WBC D. কয়েক প্রকার WBC
উত্তর : D

8. DPT টিকাটি যে রোগ প্রতিরোধের জন্য দেওয়া হয়, সেটি হল—
A. ডিপথেরিয়া B. হুপিং কাশি C. টিটেনাস D. সবকটি
উত্তর : D

9. ইমিউনোগ্লোবিউলিন অণুগুলি হল একপ্রকার—
A. শর্করা B. প্রোটিন C. ফ্যাট D. সবকটিই
উত্তর : C

10. ভূণের দেহে যে প্রতিরক্ষা গড়ে ওঠে, তা হল –
A. সক্রিয় ইমিউনিটি B. নিষ্ক্রিয় ইমিউনিটি C. কোশীয় ইমিউনিটি D. যান্ত্রিক ইমিউনিটি
উত্তর : B

short questions – 2-3 marks of জীববিদ্যা ও মানবকল্যাণ JIBBIDYA O MANOBKOLYAN

1. ইমিউনিটি বা অনাক্রম্যতা বলতে কি বোঝো?

উত্তর : জীবদেহে প্রবিষ্ট জীবাণু যেমন, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও তাদের অধিবিষ এবং বিজাতীয় প্রোটিন দ্বারা দেহের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী বিপর্যস্ত হলে, সেগুলির বিরুদ্ধে দেহে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাকে ইমিউনিটি বা অনাক্রম্যতা বলে।

2. ভ্যাকসিন বা টিকা বলতে কি বোঝো?

উত্তর : কোন নিদির্ষ্ট রোগ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে ওই রোগের জীবানুর থেকে প্রস্তুত যে উপাদান মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে ওই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জন্মায় তাকে ভ্যাকসিন বা টিকা বলে।

3. রোগ বা ডিজিস বলতে কী বোঝো?

উত্তর : দেহের গঠনগত ও কার্যগত অস্বাভাবিকতা, যা কিছু চিহ্ন বা লক্ষণ দ্বারা প্রকাশিত হয় তাকে রোগ বা ডিজিজ বলে।

4. টিকাকরণের গুরুত্ব লেখ।

উত্তর : 

  • টিকাকরণের দ্বারা দেহে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করা হয় যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • টিকাকরণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে দেহে প্রায় সারা জীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
  • টিকাকরণের ফলে দেহে কৃত্রিম সক্রিয় অনাক্রম্যতা উৎপন্ন হয়।

5. জৈবিক নিয়ন্ত্রণে একটি প্রোটোজোয়া ও একটি ভাইরাসের নাম লেখ।

উত্তর : জৈবিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে ব্যবহৃত প্রোটোজোয়াটি হল নোসেমা, আর ব্যাকটেরিয়া হল অ্যাজোটোব্যাকটর।

6. কিভাবে AIDS-এর সংক্রযন ঘটে?

উত্তর : এই রোগ যেভাবে সংক্রামিত হয় তা হল – HIV রোগীর সঙ্গে অবাধ যৌন সংসর্গ, HIV পজিটিভ রক্ত গ্রহণ, রোগীর ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ব্লেড, রেজার ইত্যাদি ব্যবহার করা, এছাড়াও মায়ের দেহে থেকে প্লাসেন্টারের মাধ্যমে শিশুর দেহে HIV সংক্রামিত হয়।

7. নিউমোনিয়া রোগের প্রধান লক্ষণ গুলো কি কি?

উত্তর :  

  • এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি হয় এবং মাঝারি মানের জ্বর হয়।
  • নাক দিয়ে সর্দি এবং কাশির সঙ্গে কফ বের হয়।
  • রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

8. ম্যালেরিয়া রোগের উপসর্গ গুলো কি কি?

উত্তর :

  • প্রচন্ড শীত করে এবং কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।
  • 103 ডিগ্রি থেকে 104 ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর হতে পারে।
  • ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায় তখন শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে ঘামে পোষাক ভিজে পর্যন্ত যায়।

9. ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর : 

  • ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক অবস্থায় অল্প মাত্রায় জ্বর হয়।
  • ক্ষুধামান্দ্য দেখা যায়।
  • সারা শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক সময় গা-হাত-পায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়।

10. অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডির প্রধান দুটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর : 

  • অ্যান্টিজেন হল দেহে অনুপ্রবেশকারী বহিরাগত বস্তু, আর অ্যান্টিবডি হলো অ্যান্টিজেনের উপস্থিতিতে উৎপন্ন অ্যান্টিজেন প্রতিরোধী বস্তু।
  • এন্টিজেন সাধারণত লোহিত রক্তকণিকার কোষ পর্দার উপরিতলে অবস্থান করে, কিন্তু এন্টিবডি সাধারণত প্লাজমায় থাকে।

long questions – 5 marks of জীববিদ্যা ও মানবকল্যাণ JIBBIDYA O MANOBKOLYAN

1. মানব কল্যাণে জীবাণুদের পাঁচটি ভূমিকা উল্লেখ করো।

উত্তর :  জীবনু যে আমাদের কেবল ক্ষতি করে তাই নয়, অনেক জীবাণু নানাভাবে আমাদের উপকারও করে। 

  • দই, পনির, মাখন, ঘোল ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াদের কাজে লাগানো হয়।
  • বিভিন্ন ফলের রস, খেজুরের রস ইত্যাদি গেঁজিয়ে মদ উৎপাদন করা হয়। গ্যাঁজানোর জন্য বিভিন্ন রকম জীবানুর ব্যবহার করা হয়।
  • নানা রকম অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ তৈরি করতে বিভিন্ন রকমের জীবাণুদের ব্যবহার করা হয়।
  • যক্ষা, কলেরা, প্লেগ, টিটেনাস, হুপিং কফ ইত্যাদির ভ্যাকসিন তৈরি করতে মৃত বা জীবিত জীবনুদের ব্যবহার করা হয়।
  • কৃত্রিম উপায়ে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন অর্থাৎ বি কমপ্লেক্স ভিটামিন সি উৎপন্ন করার জন্য বিশেষ কয়েকটি ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার করা হয়।

2. যক্ষা রোগের লক্ষণগুলি আলোচনা করো।

উত্তর : যক্ষ একটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ। যক্ষা রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির নাক মুখ দিয়ে হাঁচি কাশি ও নিঃশ্বাসের সঙ্গে মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রশ্বাসের সঙ্গে সেই ব্যাকটেরিয়া নাক মুখ দিয়ে সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করলে সেই ব্যাক্তিও যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়।

যক্ষা রোগের লক্ষণগুলি হল – রোগীর বার বার জ্বর হয়, আর জ্বর প্রধানত সন্ধ্যার দিকে আসে। রোগীর আক্রান্ত জায়গায় ব্যথা অনুভব হয়। সারাক্ষণ কাশি হয় এবং কাশির সঙ্গে সঙ্গে কফ বের হয় আর অনেক সময় কফের সঙ্গে রক্তও বের হয়। ধীরে ধীরে রোগীর দেহের ওজন কমতে থাকে এবং দেহ শীর্ণকায় পরিণত হয়। তাছাড়া রোগীর খিদে পায় না এবং সে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।

3. অণুজীব সার বা বায়োফার্টিলাইজার বলতে কী বোঝো? অণুজীব সার ব্যবহারের সমস্যা ও সম্ভাবনা রচনা করো।

উত্তর : যে সক্রিয় গোষ্ঠীর অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল ও ছত্রাক এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে জমির উর্বরতা বাড়ায় শস্য ও ফসল উৎপাদনকারী গাছের পুষ্টি জুগিয়ে তাদের সক্রিয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তাদের বলে অণুজীব সার বা বায়োফার্টিলাইজার।

ভারতে অনুজীব সারের ব্যবহারের সমস্যা- ভারতে সর্বোচ্চ অণুজীব সার পাওয়া যায় না। তাছাড়া ভারত উষ্ণ জলবায়ুর দেশ, তাই উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অণুজীব সার এর দ্রুত বিনষ্ট হয়।

ভারতে অণুজীব সারের সম্ভাবনা- জনগণের মধ্যে শিক্ষার অভাবের জন্য সচেতনতা কম, তা সত্ত্বেও বিজ্ঞান ও গবেষনা ঘরের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অণুজীব সারের ব্যবহার ভারতবর্ষে ক্রমশ বাড়ছে। অণুজীব সার ব্যবহারের উপযোগিতা গুলি বেশি ও খরচ কম বলে ক্রমশ এর ব্যবহার এদেশে বাড়বে বলে আশা করা যায়।

error: Content is protected !!
Scroll to Top

আজকেই কেনো পরীক্ষার শর্ট নোটস

এখন সহজে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও – আজকেই ডাউনলোড করো পিডিএফ বা বই অর্ডার করো আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকে