আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে
প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি
Here you will learn the basics of CHAPTER 3 – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ (The Environment Is Its Resource and Their Preservation Life Science) in a simple language it is for Bengali medium students who are studying under West Bengal Board of Secondary Education and preparing for their exam (Class 10 WBBSE) Here you will find all necessary and important WBBSE Madhyamik Suggestions, notes, solved sample question paper in Bangla along with video lectures from expert teachers
তৃতীয় অধ্যায় : বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ
বংশগতি
দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় মানুষ একই প্রজাতিভুক্ত পৃথক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দুটি জীবের মধ্যে কৃত্রিমভাবে প্রজনন ঘটিয়ে নতুন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অপত্য জীব তৈরিতে সক্ষম হয় । অস্ট্রিয়াবাসী ধর্মযাজক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলি বংশ পরম্পরায় কিভাবে সঞ্চারিত হয় তা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আবিষ্কার করেন । এইজন্য মেন্ডেলকে বংশগতি বিদ্যার জনক বলা হয় ।
বংশগতি ও প্রকরণ :
বংশগতি : যে পদ্ধতির মাধ্যমে জনিতৃ জীবের বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অপত্যে অর্থাৎ সন্তান-সন্ততিতে সঞ্চারিত হয়, সেই পদ্ধতিকে বংশগতি বলা হয় ।
প্রকরণ : পরিবেশের প্রভাবজনিত কারণে একই প্রজাতিভুক্ত জীবেদের সঞ্চরণযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে (আকার, আয়তন, গঠন, আচরণ প্রভৃতি) যে পার্থক্য দেখা যায় তাকে প্রকরণ বলে ।
প্রকরণের কারণ
- মিউটেশন : প্রকরণ সৃষ্টিতে মিউটেশন মুখ্য ভূমিকা পালন করে । DNA বা ক্রোমোজোমের গঠন বা সংখ্যার পরিবর্তনে জীবের জিনবস্তুর মধ্যে গঠনের হঠাৎ পরিবর্তন ঘটলে জীবদেহের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলিতেও স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে । কখনো কখনো এই সকল পরিবর্তন বংশানুক্রমে সঞ্চারিত হয়ে থাকে। এই পরিবর্তনকেই মিউটেশন বলে ।
- জিনের পুনঃসংযুক্তি : কোশ বিভাজনের সময় ক্রসিং ওভারের ফলে ক্রোমোজোমের মধ্যে অংশ জিনের পুনর্যোজন ঘটলে তা জীবের মধ্যে পৃথক বৈশিষ্ট্য বিকাশে সাহায্য করে যা প্রকরণের সৃষ্টি করে ।
প্রকরণের প্রকার :
- ধারাবাহিক প্রকরণ : পরিবেশের সহযোগিতায় ও বহুজিনের মিলিত প্রয়াসে এই প্রকরণের সৃষ্টি হয় তাই এই প্রকরণের ধারাবাহিকতা দেখা যায় । যেমন – উচ্চতা, গায়ের বর্ণ ইত্যাদি ।
- বিচ্ছিন্ন প্রকরণ- এই প্রকরণ সাধারণত জিনের মিউটেশনের কারণে সৃষ্টি হয় । যেমন – মানুষের ছটি আঙ্গুল (হেক্সাডাক্টাইলি) ।
প্রকরণের উদাহরণ :
- কানের লতি : কানের লতির বিভিন্নতা নিয়ন্ত্রিত হয় স্বাভাবিক জিন ও পরিবর্তিত জিন দ্বারা । পিতা বা মাতার কানের লতি যদি মুক্ত অবস্থায় থাকে তাহলে সন্তানদেরও কানের লতি মুক্ত হয় ।
- স্বাভাবিক ও রোলার জিভ : কোনো ব্যক্তির জিভ স্বাভাবিক প্রকৃতির হয় আবার অনেকেই জিভকে U আকৃতির মতো করে রোল করতে পারেন । বাবা-মার জিভ যদি রোলার হয় তাহলে সন্তানদেরও তা দেখা যায় । এই বৈশিষ্ট্যটিও নিয়ন্ত্রিত হয় স্বাভাবিক ও পরিবর্তিত জিন দ্বারা ।
বংশগতি সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ :
- বংশগতির একক–জিন : জিন হলো জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান যেমন – ‘T’ হল মিষ্টি মটর গাছের কাণ্ডের দৈর্ঘ্য নিয়ন্ত্রণকারী ফ্যাক্টর বা জিন ।
- অ্যলিল বা অ্যলিলোমর্ফ : সমসংস্থ ক্রোমোজোমের একই লোকাসে অবস্থিত পৃথক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী একজোড়া জিনের একটিকে অপরটির অ্যলিল বলে । যেমন – লম্বা বা বেঁটে বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী অ্যলিলগুলি হলো ‘T’ ও ‘t’ ।
- বৈশিষ্ট্য : জীবদেহের চারিত্রিক, অঙ্গসংস্থানিক বা শারীরবৃত্তীয় যে সকল লক্ষণ ( দৈর্ঘ্য, আকার, বর্ণ) দ্বারা এক জীবকে অপর জীবের থেকে পৃথক করা যায়, তাকে বৈশিষ্ট্য বলে ।
- প্রলক্ষণ বা ট্রেইট : জীবদেহের একই বৈশিষ্ট্য বিভিন্নরূপে প্রকাশিত হতে পারে । এই একটি বৈশিষ্ট্যের বিভিন্নরূপের প্রতিটি আলাদাভাবে এক একটি ট্রেইট । যেমন – মানুষ বা গাছের উচ্চতার বৈশিষ্ট্যের ট্রেইটগুলো হল লম্বা বা বেঁটে ।
- লোকাস : ক্রোমোজোমের যে স্থানে কোনো একটি জিন অবস্থান করে, সেই স্থানটিকে সেই নির্দিষ্ট জিনের লোকাস বলা হয় । যেমন – মানুষের পুরুষত্ব নির্ধারক SRY জিনটি ‘Y’ ক্রোমোজোমে অবস্থিত ।
- ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ : জিন নিয়ন্ত্রিত জীবের যে কোনো বৈশিষ্ট্যের বাহ্যিক প্রকাশকেই তার ফিনোটাইপ বলে । যে অন্তর্নিহিত জিন বা জিন সমহারের জন্য জীবের কোনো বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় তাকে জিনোটাইপ বলে অর্থাৎ জিনোটাইপ হলো জিবের ফিনোটাইপ নিয়ন্ত্রণকারী জিন বিন্যাস । যেমন – মটর গাছের লম্বা ও বেঁটে বৈশিষ্ট্য হল ফিনোটাইপ এবং তা নির্ধারক জিনোটাইপ হল যথাক্রমে ‘TT’ বা ‘Tt’ ।
- সমসংকর ও বিষম সংকর জীব : একইপ্রকার অ্যলিল বহনকারী দুটি পৃথক জননকোশের মিলনে উৎপন্ন যেসব ডিপ্লয়েড জীব কোনো চরিত্র সাপেক্ষে একই রকম দুটি জিন বহন করে তাদের সমসংকর বা হোমোজাইগাস জীব (TT বা tt) বলে । ভিন্ন ধর্মী অ্যলিল বহনকারী দুটি পৃথক জননকোশের মিলনে তৈরি ডিপ্লয়েড জাইগোট থেকে উৎপন্ন জীব কোনো চরিত্র সাপেক্ষে একই জিন লোকাসে দুটি ভিন্ন বিপরীতধর্মী অ্যলিল বহন করে তাদের বিষম সংকর বা হেটারোজাইগাস জীব (Tt) বলে ।
- প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য : হোমোজাইগাস বা হেটারোজাইগাস জীবে, যখন কোনো জিনের সাপেক্ষে জিন নিয়ন্ত্রিত বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে তা হল প্রকট বৈশিষ্ট্য । প্রকট অ্যলিল হল প্রকট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী অ্যলিল । এটিকে ইংরেজির Capital Letter দ্বারা চিহ্নিত করা হয় (T) ।
আবার যখন কোনো জিনের প্রভাবে হোমোজাইগাস জীবে যে বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে কিন্তু হেটারোজাইগাস জীবে সেই বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে না তাকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে। এই জিন নিয়ন্ত্রণকারী অ্যলিল হল প্রচ্ছন্ন অ্যলিল এবং এটিকে ইংরেজির Small Letter দ্বারা চিহ্নিত করা হয় (t) । - বিশুদ্ধ ও সংকর জীব : কোনো একটি বিশেষ জিনের সাপেক্ষে হোমোজাইগাস জীব হল বিশুদ্ধ জীব এবং হেটারোজাইগাস জীব হল সংকর জীব ।
- জনিতৃ জনু ও অপত্য জনু : যে সমস্ত বিশুদ্ধ চারিত্রিক জনিতৃ জীব অপত্য জীবের সৃষ্টি করে সেই জীবলে জনিতৃ জনু বলে । দুটি হোমোজাইগাস, দুটি হেটারোজাইগাস বা একটি হোমোজাইগাস ও হেটারোজাইগাস জনিতৃ জীবের যৌন জননে যে অপত্য জীবদের উৎপন্ন হয় তাদের প্রথম অপত্য জনু (F1) বলে ।
প্রথম অপত্য জনুতে উৎপন্ন জীবদের স্বপরাগযোগ বা নিষেকের ফলে যে অপত্য জীবদের উৎপন্ন হয় তাকে দ্বিতীয় অপত্য জনু (F2) বলে । - সংকরায়ণ : কোনো চরিত্র সাপেক্ষে বিপরীত বৈশিষ্ট্য যুক্ত দুটি জীবের মিলনের প্রক্রিয়াকে সংকরায়ণ বলে। যেমন – লম্বা ও বেঁটে মটরগাছের মধ্যে পরাগযোগ হল সংকরায়ণ ।
- একসংকর জনন : যখন এক জোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের সাপেক্ষে দুটি জীবের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হয় তখন তাকে একসংকর জনন বলে । যেমন – মটর গাছের উচ্চতা নির্ধারণের জন্য লম্বা ও বেঁটে বৈশিষ্ট্যের মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ ।
- দ্বিসংকর জনন : যখন দুই জোড়া বিপরীত ধর্মী বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হয় তাকে দ্বিসংকর জনন বলে । যেমন – মটরের বীজের আকার ও আকৃতি নির্ধারণের জন্য লম্বা ও গোল বীজযুক্ত মটর গাছের সাথে বেঁটে ও কুঞ্চিত বীজযুক্ত মটর গাছের সংকরায়ণ ।
মটর গাছের ওপর মেন্ডেলের কাজ
- জনিতৃ বাছাই : মটর গাছের প্রায় 34 টি প্রজাতির মধ্যে মেন্ডেল বারবার পরাগযোগ ঘটিয়ে 7 টি বিশুদ্ধ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মটর গাছকে তাঁর পরীক্ষার জনিতৃ হিসাবে নির্বাচিত করেন ।
- সংকরায়ণ : মেন্ডেল তার বাছাই করা জনিতৃ গাছের মধ্যে সংকরায়ণের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করেন । যথা –
- ইমাসকুলেসন : কোনো উদ্ভিদের ফুল থেকে পুংকেশরগুলি কেটে বাদ দেওয়া বা কোনো বিশেষ পদ্ধতিতে উভলিঙ্গ ফুলের পুংস্তবককে নিষ্ক্রিয় করার পদ্ধতিকে ইমাসকুলেসন বলে । তিনি ইতর পরাগযোগের জন্য নির্বাচিত জনিতৃ মটরগাছের মধ্যে যে কোনো একটি জনিতৃ গাছের ফুলের পুংকেশরগুলি কুঁড়ি অবস্থাতেই কেটে বাদ দেন । এভাবে তিনি কৃত্রিম ভাবে উভলিঙ্গ ফুলগুলিকে স্ত্রী ফুলে পরিণত করেন ।
- ব্যাগিং : ইমাসকুলেশনের পর তিনি স্ত্রী ফুলগুলিকে কৃত্রিম ভাবে কাগজের থলি দিয়ে আবদ্ধ করে রাখেন যাতে নির্বাচিত জনিতৃ গাছের ফুল ছাড়া অন্য কোনো মটর গাছের ফুলের দ্বারা ইতর পরাগযোগ না ঘটে । এই পক্রিয়াই ব্যাগিং নামে পরিচিত ।
- ইতর পরাগযোগ : তিনি কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট স্ত্রী ফুলের গর্ভথলিটি সরিয়ে নির্বাচিত জনিতৃ ফুলের পরাগ তুলির সাহায্যে ওই স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তরিত করে ইতর পরাগযোগ ঘটান ।
- ট্যাগিং : ইতর পরাগযোগের পর তিনি ট্যাগিং এর সাহায্যে সংকরায়ণ (এক বা দ্বি সংকরায়ণ) সম্পর্কিত তথ্য নথিভুক্ত করেন ।
- বীজ সংগ্রহ : মটরশুঁটি পেকে যাওয়ার পর পরিপক্ক ও পরিণত বীজগুলিকে তিনি সংগ্রহ করেন ।
- বীজ রোপণ ও চারাগাছ : পৃথক পৃথক সংকরায়ণের ফলে প্রাপ্ত বীজগুলিকে তিনি পৃথকভাবে রোপণ করেন। বীজগুলি থেকে উৎপন্ন গাছগুলোর (F1) ফিনোটাইপ বৈশিষ্ট্য গুলো তিনি পর্যবেক্ষণ ও লিপিবদ্ধ করেন ।
- সংকর উদ্ভিদের স্বপরাগযোগ : ইতর পরাগযোগের মাধ্যমে উৎপন্ন বীজগুলি থেকে সৃষ্ট F1 জনুর উদ্ভিদগুলোর ফুলে স্বপরাগযোগ ঘটান এবং তাদের মধ্যে যাতে পরাগযোগ না ঘটে তাই ব্যাগিং-এর মাধ্যমে ফুলগুলিকে কাগজের থলি দ্বারা আবদ্ধ করেন । স্বপরাগযোগের মাধ্যমে প্রাপ্ত বীজ থেকে তিনি F2 জনুর চারাগাছ বানিয়ে তাদের ফিনোটাইপিক বৈশিষ্ট্যগুলি পর্যবেক্ষণ করেন ।
- বিশ্লেষণ : তিনি F1 ও F2 জনুর উদ্ভিদগুলোর মধ্যে পর্যবেক্ষণ করা সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলোকে গাণিতিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করেন এবং এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে বৈশিষ্ট্য সঞ্চরণের সম্ভাব্যতা ও পরীক্ষার ফলাফলকে বিশ্লেষণ করেন ।
মেন্ডেলের সাফল্যের কারণ :
মেন্ডেলের পরীক্ষার আগে অনেক বিজ্ঞানীই (তাদের মধ্যে গস উল্লেখযোগ্য) সংকরায়ণের পরীক্ষায় মটর গাছ ব্যবহার করলেও, মেন্ডেলই সর্বপ্রথম বংশগতির পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করেন ।
মেন্ডেলের সাফল্যের কারণগুলি হল –
- মেন্ডেলের নির্বাচিত গাছগুলোর বৈশিষ্ট্য যথেষ্ট পার্থক্যযুক্ত ছিল, সেই পার্থক্য ছিল সহজ চিহ্নিত।
- মটরগাছগুলো ছিল বিশুদ্ধ ও স্বপ্রজন সক্ষম ।
- তিনি একই সঙ্গে বিভিন্ন লক্ষণযুক্ত মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ না ঘটিয়ে একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটান ।
- তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যর মটরগাছের মধ্যে সংকরায়ন ঘটান। এমনকি মটর গাছগুলোর মধ্যে তিনি রেসিপ্রোকাল ক্রসও ঘটিয়েছিলেন ।
- মটর গাছের সাত জোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যের অলিল প্রতিটি আলাদা ক্রোমোজোমে থাকায় বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনগুলোর মধ্যে কোনো লিংকেজ ছিল না ।
- সংকরায়ণ পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপন্ন বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করেই তিনি মতামত দিয়েছিলেন ।
পরীক্ষার জন্য মটর গাছ মনোনয়নের কারণ :
- মটর গাছ বর্ষজীবী, দ্রুত বংশ বিস্তারে সক্ষম, তাই অল্প সময়ের মধ্যে বংশানুক্রমে কয়েক প্রজন্ম ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্ভব ।
- মটর গাছ সহজে কম স্থানে বাগানে প্রতিপালন করা যায় ।
- মটর গাছে অনেক রকমের বিপরীত বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটতে দেখা যায় ফলে বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের মটরগাছে পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ থাকে ।
- মটর ফুল উভলিঙ্গ হওয়ায় স্বপরাগযোগ ঘটানো সম্ভব । স্ব-পরাগী হওয়ায় বাইরে থেকে আসা অন্য কোনো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম ।
- মটর ফুল আকারে বড় হওয়ায় সহজে ইতর পরাগযোগ ঘটানো যায় ।
- মটর গাছ বংশ পরম্পরায় নির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বিশুদ্ধ খাঁটি অপত্য গাছ উৎপাদনে সক্ষম।
- সংকর গাছগুলো উর্বর প্রকৃতির (জননক্ষম) হওয়ায় নিয়মিতভাবে বংশবৃদ্ধি করতে পারে ।
নির্বাচিত মটর গাছের বিপরিতধর্মী বৈশিষ্ট্য :
মেন্ডেল নির্বাচিত মটর গাছের সাত জোড়া বিপরীত ধর্মী বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
লক্ষণ | প্রকট | প্রচ্ছন্ন | ||
বৈশিষ্ট্য | ফিনোটাইপ | জিনোটাইপ | ফিনোটাইপ | জিনোটাইপ |
বীজের আকার | গোল | RR | কুঞ্চিত | rr |
বীজপত্রের রং | হলুদ | YY | সবুজ | yy |
ফলের আকার | স্ফীত/মসৃণ | SS | খাঁজযুক্ত | ss |
ফলের রং | সবুজ | GG | হলুদ | gg |
ফুলের অবস্থান | কাক্ষিক | AA | শীর্ষস্থ | aa |
ফুলের রং | বেগুনি | CC | সাদা | cc |
কাণ্ডের দৈর্ঘ্য | লম্বা | TT | বেঁটে | tt |
মেন্ডেলের পরীক্ষা এবং সূত্র :
উদ্ভিদের (মটর গাছের) একসংকর জননের পরীক্ষা :
পরীক্ষা : মেন্ডেল এক সংকরায়ন পরীক্ষার জন্য বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হলুদ বীজপত্রযুক্ত (YY) মটর গাছের সঙ্গে বিশুদ্ধ সবুজ বীজপত্রযুক্ত (yy) মটর গাছের ইতর পরাগযোগ ঘটান। পরীক্ষাটি শুরু করার আগে ইমাসকুলেশন পদ্ধতিতে স্ত্রীফুল হিসেবে নির্বাচিত ফুলটি থেকে অপরিণত অবস্থায় সমস্ত পুংকেশর বিচ্ছিন্ন করে নেন, যাতে স্বপরাগযোগ ঘটার সম্ভাবনা না থাকে । এরপর পুরুষফুলের পরিণত পুংরেনু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে উপর স্থাপন করে ইতর পরাগযোগ ঘটান ।
বিশুদ্ধ হলুদ ও বিশুদ্ধ সবুজ বীজপত্রযুক্ত মটর গাছের মধ্যে ইতর পরাগযোগ ঘটানোর ফলে উৎপন্ন বীজ থেকে প্রথম অপত্য বংশের (F1 জনু) মটর গাছ উৎপন্ন করেন । প্রথম অপত্য জনুতে উৎপন্ন মটর গাছ গুলোর মধ্যে স্বপরাগযোগ ঘটিয়ে তিনি দ্বিতীয় অপত্য জনু (F2 ) তৈরি করেন ।
পর্যবেক্ষণ : পরীক্ষাকালে মেন্ডেল দেখেছিলেন ইতর পরাগযোগের ফলে উৎপন্ন প্রথম অপত্য জনুতে (F1) যেসব গাছ উৎপন্ন হয়েছে তার সব কটি ছিল হলুদ বীজপত্র যুক্ত (Yy) । দ্বিতীয় অপত্য জনুতে উৎপন্ন বীজগুলি থেকে সৃষ্ট মটর গাছ গুলির মধ্যে 75% অর্থাৎ তিন ভাগ ছিল হলুদ বীজপত্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং বাকি 25% অর্থাৎ এক ভাগ ছিল সবুজ বীজপত্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত ।
গ্যামেট | Y | y |
Y | YY (বিশুদ্ধ হলুদ) | Yy (সংকর হলুদ) |
y | Yy (সংকর হলুদ) | yy (বিশুদ্ধ সবুজ) |
ফিনোটাইপ | জিনোটাইপ | জিনোটাইপ অনুপাত | ফিনোটাইপ অনুপাত |
হলুদ | YY | 1 | 3 |
Yy | 2 | ||
সবুজ | yy | 1 | 1 |
ফিনোটাইপ অনুপাত = 3 হলুদ (YY, Yy, Yy) : 1 সবুজ (yy)
জিনোটাইপ অনুপাত = 1 বিশুদ্ধ হলুদ (YY) : 2 সংকর হলুদ (Yy) : 1 বিশুদ্ধ সবুজ (yy)
ব্যাখ্যা : নির্বাচিত জনিতৃ মটরগাছগুলোর বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনগুলো ইতর পরাগযোগের (যৌন জনন) মাধ্যমে F1 জনুর প্রতিটি অপত্যে সঞ্চারিত হয় এবং প্রতিটি অপত্য হলুদ ও সবুজ বীজপত্র নিয়ন্ত্রণকারী জিন পায় । সুতরাং F1 জনুর প্রতিটি অপত্যে সবুজ ও হলুদ বীজপত্র— উভয় বৈশিষ্ট্যই বর্তমান অর্থাৎ সংকর বৈশিষ্ট্যযুক্ত (হেটারোজাইগাস) ।
F1 জনুর সংকর মটর গাছগুলিতে যেহেতু জনিতৃ গাছের বীজপত্রের কেবলমাত্র হলুদ বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশিত হয়েছে সুতরাং হলুদ বীজপত্র বৈশিষ্ট্যটি হল প্রকট বৈশিষ্ট্য এবং এই প্রকট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন বা ফ্যাক্টর (Y) হলো প্রকট জিন ।
যেহেতু মটরগাছের সবুজ বীজপত্র বৈশিষ্ট্যটি F1 জনুতে প্রকাশিত হয়নি সেহেতু ধারণা করা যেতে পারে যে
সবুজ বৈশিষ্ট্যটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গিয়েছিল অথবা প্রচ্ছন্নভাবে ছিল। F1 জনুতে সবুজ বীজপত্র বৈশিষ্ট্যটি নিয়ন্ত্রণকারী জিনটি (y) হল প্রচ্ছন্ন জিন ।
অতএব F1 জনুতে প্রকট ও প্রচ্ছন্ন জিন একত্রে থাকার ফলে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় না । আবার F 2 জনুতে যেহেতু জনিতৃ মটর গাছ গুলোর দুটি বৈশিষ্ট্যই প্রকাশিত হয়েছে সুতরাং বলা যায় F 1 জনুতে বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনগুলি পরস্পর মিশে যায়নি, পরাগরেণু (গ্যামেট) উৎপাদনের সময় তারা পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে গেছে ।
জনিতৃ ও অপত্য মটর গাছগুলোর মধ্যে প্রকাশিত বৈশিষ্ট্যগুলো হল ফিনোটাইপ এবং ফিনোটাইপ নিয়ন্ত্রণকারী জিনের সংযুক্তি হলো জিনোটাইপ । F2 জনুর ফিনোটাইপ অনুপাত 3 : 1 (তিন ভাগ হলুদ ও এক ভাগ সবুজ) এবং জিনোটাইপ অনুপাত 1 : 2 : 1 ( এক ভাগ বিশুদ্ধ হলুদ YY, দুই ভাগ সংকর হলুদ Yy ও এক ভাগ বিশুদ্ধ সবুজ yy) ।
সিদ্ধান্ত : জীবদেহে প্রতিটি বংশগত বৈশিষ্ট্যের জন্য পৃথক পৃথক জিন দায়ী, যেগুলিকে মেন্ডেল ফ্যাক্টর হিসেবে নামকরণ করেন । যেমন – হলুদ (Y) এবং সবুজ (y) । এই ফ্যাক্টর গুলি সংকর জীবে কখনোই পরস্পর মিশে যায় না বরং পৃথক অস্তিত্ব নিয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে । ফলে পরবর্তী জনু সৃষ্টির সময় ফ্যাক্টর গুলি গ্যামেট তৈরির মাধ্যমে পুনরায় পৃথক হয়ে গিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করে ।
প্রাণীর (গিনিপিগের) একসংকর জনন পরীক্ষা :
পরীক্ষা : জনিতৃ জনু (P জনু) হিসাবে নির্বাচিত বিশুদ্ধ কালো রং-এর (BB) পুরুষ গিনিপিগের সাথে বিশুদ্ধ সাদা রঙের (bb) স্ত্রী গিনিপিগের মধ্যে (বিপরীত সংমিশ্রন নেওয়া যেতে পারে) নিষেক ঘটানো হল । নিষেকের ফলে F1 জনুতে প্রাপ্ত পুরুষ ও স্ত্রী গিনিপিগের মধ্যে আবার নিষেক ঘটানো হল ।
F1 নিষেকে উৎপন্ন পুরুষ ও স্ত্রী গিনিপিগ গুলি হল F2 জনু ।
পর্যবেক্ষণ : জনিতৃ গিনিপিগ গুলোর মধ্যে সংকরায়ণের ফলে উৎপন্ন F 1 জনুর প্রতিটি পুরুষ ও স্ত্রী কালো রঙের (Bb) হয় । আবার F1 জনুর পুরুষ ও স্ত্রী গিনিপিগের মধ্যে দ্বিতীয় বার নিষেকের ফলে উৎপন্ন F2 জনুর গিনিপিগ গুলোর মধ্যে প্রায় তিনভাগ হল কালো লোমযুক্ত এবং এক ভাগ হলো সাদা লোমযুক্ত ।
P 1 : বিশুদ্ধ কালো (পুং) × বিশুদ্ধ সাদা (স্ত্রী)
BB bb
G1 : (B) (b)
F 1 : Bb
(সংকর কালো)
P 2 : Bb (পুং) × Bb (স্ত্রী)
G 2 : (B) (b) (B) (b)
F 2 চেকার বোর্ড :
গ্যমেট | B | b |
B | BB (বিশুদ্ধ কালো) | Bb (সংকর কালো) |
b | Bb (সংকর কালো) | bb (বিশুদ্ধ সাদা) |
ফিনোটাইপ | জিনোটাইপ | জিনোটাইপ অনুপাত | ফিনোটাইপ অনুপাত |
কালো | BB | 1 | 3 |
Bb | 2 | ||
সাদা | bb | 1 | 1 |
ফিনোটাইপ অনুপাত = 3 কালো (BB, Bb, Bb) : 1 সাদা (bb)
জিনোটইপ অনুপাত = 1 বিশুদ্ধ কালো (BB) : 2 সংকর কালো (Bb) : 1 বিশুদ্ধ সাদা (bb)
ব্যাখ্যা : বিশুদ্ধ কালো (BB) গিনিপিগের সাথে বিশুদ্ধ সাদা (bb) গিনিপিগের নিষেকের ফলে প্রথম অপত্য জনুতে (F1) সবকটি কালো (সংকর কালো Bb) গিনিপিগ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ F1 জনুর গিনিপিগ সংকর বৈশিষ্ট্যযুক্ত । এক্ষেত্রে কালো বর্ণের লোম হল প্রকট বৈশিষ্ট্য কারণ F1 জনুতে জনিতৃ জীবের কালো বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে এবং প্রকট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন (B) হলো প্রকট জিন ।
F1 জনুতে যেহেতু জনিতৃ জীবের সাদা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়নি তাই সাদা বর্ণের লোম প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য এবং এই বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন হল প্রচ্ছন্ন জিন ।
প্রথম অপত্য জনুর একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী গিনিপিগের (উভয় সংকর কালো) সংকরায়ণ ঘটানো হলে দ্বিতীয় অপত্য জনুতে (F2) তিন ভাগ কালো ও এক ভাগ সাদা (3:1) গিনিপিগ জন্মায় ।
তিন ভাগ কালো গিনিপিগের মধ্যে এক ভাগ ছিল বিশুদ্ধ কালো (BB) দুই ভাগ ছিল সংকর কালো (Bb) ও সাদা গিনিপিগ গুলো ছিল সব বিশুদ্ধ সাদা (bb)। সুতরাং ফিনোটাইপ অনুপাত হল 3:1 এবং জিনোটাইপ অনুপাত হল 1 : 2 : 1 ।
সিদ্ধান্ত : জনিতৃ জীবের থেকে বিপরীত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ফ্যাক্টর গুলো গ্যামেটের মাধ্যমে অপত্য জীবে সঞ্চারিত হওয়ার সময় একত্রিত হলেও কখনো মিশে যায় না, বরং গ্যামেট গঠনকালে জিনগুলো পরস্পরের থেকে পৃথক হয়ে যায় ।
উদ্ভিদের (মটর গাছের) দ্বিসংকর জনন পরীক্ষা :
পরীক্ষা : মেন্ডেল তার দ্বিসংকর জনন পরীক্ষার জন্য একটি বিশুদ্ধ হলুদ রঙের গোলাকার বীজযুক্ত মটর গাছ (YYRR) এবং একটি বিশুদ্ধ সবুজ রঙের কুঞ্চিত বীজযুক্ত মটর গাছ (yyrr) নির্বাচন করেন । জনিতৃ উদ্ভিদের ফুলগুলোকে স্ত্রী ফুলে রূপান্তরিত করেন এবং অপর জনিতৃ উদ্ভিদের পরাগরেণু কৃত্রিমভাবে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত করে ইতর পরাগযোগ ঘটান ।
ইতর পরাগযোগের মাধ্যমে উৎপন্ন বীজগুলো সংগ্রহ করে তা থেকে অপত্য মটর গাছ (F1 জনু) সৃষ্টি করেন। তারপর প্রথম অপত্য জনুতে (F1) উৎপন্ন মটর গাছগুলোর ফুলে স্বপরাগযোগ ঘটান । স্বপরাগযোগের মাধ্যমে উৎপন্ন বীজগুলো সংগ্রহ করে তা থেকে পুনরায় দ্বিতীয় অপত্য জনুর (F2) নতুন মটর গাছ সৃষ্টি করেন ।
P1 : বিশুদ্ধ হলুদ গোলাকার বীজ × বিশুদ্ধ সবুজ কুঞ্চিত বীজ
(YYRR) (yyrr)
গ্যামেট : YR yr
F 1 জনু : সংকর হলুদ ও গোল বীজ
(YyRr)
P 2 : YyRr × YyRr
স্বপরাগযোগ
গ্যামেট : (YR) (Yr) (yR) (yr)
জিন ও সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্য : প্রকট জিন প্রচ্ছন্ন জিন
Y – হলুদ y – সবুজ
R – গোলাকার r – কুঞ্চিত
F 2 জনুর চেকার বোর্ড :
গ্যামেট | YR | Yr | yR | yr |
YR | YYRR (হলুদ গোল) | YYRr (হলুদ গোল) | YyRR (হলুদ গোল) | YyRr (হলুদ গোল) |
Yr | YYRr (হলুদ গোল) | YYrr (হলুদ কুঞ্চিত) | YyRr (হলুদ গোল) | Yyrr (হলুদ কুঞ্চিত) |
yR | YyRR (হলুদ গোল) | YyRr (হলুদ গোল) | yyRR (সবুজ গোল) | yyRr (সবুজ গোল) |
yr | YyRr (হলুদ গোল) | Yyrr (হলুদ কুঞ্চিত) | yyRr (সবুজ গোল) | yyrr (সবুজ কুঞ্চিত) |
F2 জনুর ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ অনুপাত :
ফিনোটাইপ | জিনোটাইপ | জিনোটাইপ অনুপাত | ফিনোটাইপ অনুপাত |
হলুদ গোল | YYRR | 1 | 9 |
YYRr | 2 | ||
YyRR | 2 | ||
YyRr | 4 | ||
হলুদ কুঞ্চিত | YYrr | 1 | 3 |
Yyrr | 2 | ||
সবুজ গোল | yyRR | 1 | 3 |
yyRr | 2 | ||
সবুজ কুঞ্চিত | yyrr | 1 | 1 |
ফিনোটাইপ অনুপাত = 9:3:3:1
জিনোটাইপ অনুপাত = 1:2:2:4:1:2:1:2:1
পর্যবেক্ষণ : সংকরায়ণের ফলে জনিতৃ জনু (P জনু) থেকে উৎপন্ন প্রথম অপত্য জনুতে মটর গাছগুলো হলুদ রঙের গোলাকার বীজ যুক্ত (YyRr) হয় । আবার স্বপরাগযোগের ফলে উৎপন্ন দ্বিতীয় অপত্য জনুতে নির্দিষ্ট অনুপাতে চার প্রকার বৈশিষ্ট্য সমন্বিত (YR, Yr, yR, yr) মটর গাছ দেখা যায় । এদের মধ্যে প্রায় 9 ভাগ হলুদ গোলাকার, 3 ভাগ হলুদ কুঞ্চিত, 3 ভাগ সবুজ গোলাকার এবং 1 ভাগ সবুজ কুঞ্চিত । ব্যাখ্যা : F 1 জনুর প্রতিটি মটর গাছ সংকর প্রকৃতির কারণ এই অপত্য জনিতৃ মটর গাছের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন সঞ্চারিত হয়েছে ।
প্রথম অপত্য জনুর সংকর গাছগুলিতে যেহেতু জনিতৃ জীবের কেবলমাত্র হলুদ ও গোলাকার বিশেষত্ব দুটি প্রকাশিত হয়েছে সুতরাং এই বৈশিষ্ট্য হলো প্রকট বৈশিষ্ট্য এবং এই বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন হল প্রকট জিন ।
প্রথম অপত্য জনুতে সংকর গাছের সবুজ ও চিত্রশিল্পী প্রকাশিত হয়নি সে ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য হল প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য এবং এই বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন হল প্রচ্ছন্ন জিন ।
দ্বিতীয় অপত্য জনুর মটরগাছগুলিতে জনিতৃ জীবের হলুদ গোলাকার ও সবুজ কুঞ্চিত বীজ বৈশিষ্ট্যের সাথে সাথে নতুন বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় হিসাবে হলুদ কুঞ্চিত এবং সবুজ গোলাকার বৈশিষ্ট্যও প্রকাশিত হয়েছে ।
সুতরাং F1 জনুর গাছগুলোতে জনিতৃ জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনগুলি পরস্পর মিশ্রিত না হয়ে পৃথক ভাবে অবস্থান করে তেমনি যেকোনো একটি জিন অপর যেকোনো জিনের সঙ্গে স্বাধীনভাবে সকল সমন্বয়ে বিন্যস্ত থাকে । F2 জনুর মটর গাছগুলিতে 9 : 3 : 3 : 1 অনুপাতে ফিনোটাইপিক বৈশিষ্ট্যগুলো সঞ্চারিত হয়েছে। এই ফিনোটাইপ নিয়ন্ত্রণকারী জিনগুলির 1 : 2 : 2 : 4 : 1 : 2 : 1 : 2 : 1 অনুপাতে সংযুক্তি ঘটেছে ।
সিদ্ধান্ত : জনিতৃ জীবদেহ থেকে বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ফ্যাক্টরগুলো অপত্য জীবে সঞ্চারিত হওয়ার সময় মিশে না গিয়ে পরস্পরের থেকে পৃথক হয়েছে, তেমনিই ফ্যাক্টরগুলো যে কেবল অপত্য জনুতে সঞ্চারিত হয়েছে তা নয় বৈশিষ্ট্যগুলি স্বাধীনভাবে সব সমন্বয়ে সঞ্চারিত হয়েছে ।
প্রাণীর (গিনিপিগের) দ্বিসংকর জননের পরীক্ষা :
পরীক্ষা : জনিতৃ জনু হিসেবে বিশুদ্ধ কালো অমসৃণ (BBRR) লোম বিশিষ্ট পুরুষ গিনিপিগ এবং বিশুদ্ধ সাদা মসৃণ (bbrr) লোম বিশিষ্ট স্ত্রী গিনিপিগ নেওয়া হলো (বিপরীতভাবে ও নেওয়া যেতে পারে) । জনিতৃ গিনিপিগদ্বয়ের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হল । F1 জনুতে উৎপন্ন পুরুষ ও স্ত্রী গিনিপিগের মধ্যে আবার নিষেক ঘটিয়ে F2 জনুর গিনিপিগ পাওয়া গেল ।
P1 : বিশুদ্ধ কালো ও অমসৃণ (প্রকট) × বিশুদ্ধ সাদা ও মসৃণ (প্রচ্ছন্ন)
BBRR bbrr
G 1 : (BR) (br)
F 1 : কালো, অমসৃণ (সংকর)
BbRr
P 2 : BbRr (পুং) × BbRr (স্ত্রী)
G 2 : (BR) (Br) (bR) (br)
F 2 চেকার বোর্ড :
গ্যামেট | BR | Br | bR | br |
BR | BBRR (কালো অমসৃণ) | BBRr (কালো অমসৃণ) | BbRR (কালো অমসৃণ) | BbRr (কালো অমসৃণ) |
Br | BBRr (কালো অমসৃণ) | BBrr (কালো মসৃণ) | BbRr (কালো অমসৃণ) | Bbrr (কালো মসৃণ) |
bR | BbRR (কালো অমসৃণ) | BbRr (কালো অমসৃণ) | bbRR (সাদা অমসৃণ) | bbRr (সাদা অমসৃণ) |
br | BbRr (কালো অমসৃণ) | Bbrr (কালো মসৃণ) | bbRr (সাদা অমসৃণ) | bbrr (সাদা মসৃণ) |
F 2 জনুর অনুপাত :
ফিনোটাইপ | জিনোটাইপ | জিনোটাইপ অনুপাত | ফিনোটাইপ অনুপাত |
কালো অমসৃণ | BBRR | 1 | 9 |
BBRr | 2 | ||
BbRR | 2 | ||
BbRr | 4 | ||
কালো মসৃণ | BBrr | 1 | 3 |
Bbrr | 2 | ||
সাদা অমসৃণ | bbRR | 1 | 3 |
bbRr | 2 | ||
সাদা মসৃণ | bbrr | 1 | 1 |
পর্যবেক্ষণ : জনিতৃ গিনিপিগ গুলোর মধ্যে যৌন জননের মাধ্যমে উৎপন্ন প্রথম অপত্য জনুতে প্রাপ্ত সকল গিনিপিগই কালো অমসৃণ লোমযুক্ত (BbRr) । প্রথম অপত্য জনুতে প্রাপ্ত স্ত্রী ও পুরুষ গিনিপিগের মধ্যে নিষেকের ফলে দ্বিতীয় অপত্য জনুতে উৎপন্ন গিনিপিগ গুলির মধ্যে 9 ভাগ কালো অমসৃণ লোমযুক্ত, 3 ভাগ কালো মসৃণ লোমযুক্ত, 3 ভাগ সাদা অমসৃণ লোমযুক্ত এবং 1 ভাগ সাদা মসৃণ লোমযুক্ত ।
ব্যাখ্যা : নিষেকের মাধ্যমে জনিতৃ গিনিপিগের বৈশিষ্ট্য হিসাবে কালো, অমসৃণ, সাদা ও মসৃণ লোম নিয়ন্ত্রণকারী জিন F1 জনুর প্রতিটি গিনিপিগের মধ্যে সঞ্চারিত হয় ফলে F1 জনুর প্রতিটি গিনিপিগ সংকর বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয় ।
F1 জনুর প্রতিটি গিনিপিগে কেবলমাত্র কালো ও অমসৃণ বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় তাই এই বৈশিষ্ট্য দুটো হল প্রকট বৈশিষ্ট্য এবং বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন হলো প্রকট জিন । সুতরাং বলা যায় কালো (B) ও অমসৃণ (R) বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন দুটি সাদা (b) ও মসৃণ (r) বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনের ওপর প্রকট ।
F1 জনুর প্রতিটি গিনিপিগে যেহেতু জনিতৃ বৈশিষ্ট্যের সাদা ও মসৃণ লোম বৈশিষ্ট্য দুটি প্রকাশিত হয় না সেক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য হলো প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য এবং প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী প্রচ্ছন্ন জিন ।
F 2 জনুর গিনিপিগ গুলিতে জনিতৃ জীবের কালো ও অমসৃণ লোম এবং সাদা ও মসৃণ লোম যেমন প্রকাশিত হয়েছে, তেমনই নতুন বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় হিসাবে কালো ও মসৃণ এবং সাদা ও অমসৃণ লোমের বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে। F 2 জনুতে প্রকাশিত ফিনোটাইপ অনুপাত 9:3:3:1 এবং জিনোটাইপ অনুপাত
1 : 2 : 2 : 4 : 1 : 2 : 1 : 2 : 1 ।
সিদ্ধান্ত : জনিতৃ জীবদেহ থেকে বিপরীত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ফ্যাক্টরগুলো স্বাধীনভাবে ও সম্ভব্য সকল সমন্বয়ে অপর যেকোনো ফ্যাক্টর এর সাথে বিন্যস্ত হয় ।
মেন্ডেলের সূত্র সমূহ :
মেন্ডেল তাঁর একসংকর ও দ্বিসংকর জনন পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ চেয়েছেন কিভাবে জনিতৃ জীবের গুণাবলী অপত্য জীবের মধ্যে সঞ্চারিত হয় যা বংশগতিবিদ্যার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় । এই পরীক্ষা গুলি থেকে তিনি কতকগুলি সিদ্ধান্তে উপনীত হন যা পরবর্তীকালে সূত্র আকারে প্রকাশিত হয় ।
মেন্ডেল বর্ণিত এই সূত্র গুলি বংশগতির সূত্র বা মেন্ডেলের সূত্র নামে পরিচিত। সূত্রগুলি হল –
- একসংকর জনন পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত সূত্রটি হল বংশগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র বা পৃথকীভবনের সূত্র ।
- দ্বিসংকর জনন পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত সূত্রটি হল বংশগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র বা স্বাধীন বিন্যাসের সূত্র ।
পৃথকীভবন সূত্র (মেন্ডেলের প্রথম সূত্র) : মেন্ডেলের প্রথম সূত্রটি পৃথকীভবন-এর সূত্র নামে পরিচিত । এই সূত্র অনুযায়ী কোন জীবের একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ফ্যাক্টর বা জিন একটি জনু (পিতৃ) থেকে অপর একটি জণুতে (অপত্য) সঞ্চারিত হবার সময় একত্রিত হলেও এরা (অ্যালিল গুলি) কখনো মিশ্রিত হয় না বরং গ্যামেট গঠনকালে বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন পরস্পর পৃথক হয় ।
স্বাধীন বিন্যাসের সূত্র (মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্র) : মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রটি স্বাধীন বন্টন সূত্র নামে পরিচিত । সূত্র অনুযায়ী কোন জীবের দুই বা ততোধিক যুগ্ম বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ফ্যাক্টর বা জিন জনিতৃ হতে অপত্যে সঞ্চারিত হওয়ার সময় একত্রিত হলেও শুধুমাত্র গ্যামেট গঠনকালে এরা যে পরস্পর থেকে পৃথক হয় তাই নয়, উপরন্তু প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন যেকোনো বিপরীত বৈশিষ্ট্যের জিনের সঙ্গে সম্ভাব্য সমস্ত ধরনের সমন্বয় গ্যামেটে সঞ্চারিত হয় ।
মেন্ডেলের বংশগতি বিদ্যা সংক্রান্ত সূত্রের ব্যতিক্রম :
একসংকর জনন পরীক্ষা থেকে মেন্ডেল একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে বিপরীতধর্মী বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হলে প্রথম অপত্য জনুতে কেবলমাত্র প্রকট বৈশিষ্ট্যটিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে । কিন্তু প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যএর বহিঃপ্রকাশ ঘটে না, প্রচ্ছন্ন লক্ষণ কেবলমাত্র বিশুদ্ধ হোমোজাইগাস অবস্থাতেই প্রকাশিত হয় ।
কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকট ও প্রচ্ছন্ন সম্পর্কের পরিবর্তন দেখা যায় যা অসম্পূর্ণ প্রকটতাকে নির্দেশ করে । এটি মেন্ডেলের সূত্রের একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা । বিজ্ঞানী কার্ল কোরেন্স সন্ধ্যামালতী উদ্ভিদে (Mirabilis jalapa) প্রথম এই ঘটনাটি আবিষ্কার করেন ।
অসম্পূর্ণ প্রকটতা : বেশিরভাগ উদ্ভিদে এবং প্রাণীতে বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রকট বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ প্রকট জিনের বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও অনেকক্ষেত্রে প্রকটতা প্রকাশ পায় না অর্থাৎ প্রকটতার অসম্পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ ঘটে ।
বিশুদ্ধ ও বিপরীত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হলে যদি মিশ্রিত বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীব সৃষ্টি হয় যেখানে জনিতৃ জীবের কোন বৈশিষ্ট্যই প্রকাশিত হয় না । সেই ঘটনাকে অসম্পূর্ণ প্রকটতা বলে ।
উদাহরণ : স্ন্যাপড্রাগন, সন্ধ্যামালতী প্রভৃতি উদ্ভিদে এবং অন্ডলুসিয়ান মুরগিতে অসম্পূর্ণ প্রকটতা দেখা যায় ।
অসম্পূর্ণ প্রকটতার পরীক্ষা : একটি বিশুদ্ধ লাল (RR) এবং একটি বিশুদ্ধ সাদা (rr) ফুল যুক্ত সন্ধ্যামালতী গাছ নেওয়া হলো। দুটি গাছের মধ্যে ইতর পরাগযোগ ঘটানো হলো। প্রথম জনুতে (F1) উৎপন্ন অপত্য উদ্ভিদ গুলিতে আবার স্বপরাগযোগ ঘটানো হল। ফলে দ্বিতীয় জনুর (F 2) উদ্ভিদ গুলি পাওয়া
গেল । F1 ও F2 জনুতে প্রাপ্ত উদ্ভিদ গুলির ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ অনুপাত নির্ধারণ করা হলো ।
পর্যবেক্ষণ : F1 জনুতে উৎপন্ন সমস্ত গাছে গোলাপি ফুল প্রস্ফুটিত হয়। F2 জনুর গাছে লাল (RR), গোলাপি (Rr) ও সাদা ফুল (rr) 1 : 2 : 1 ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ অনুপাতে আবির্ভূত হয় ।
P1 : লাল × সাদা
(RR) ইতর পরাগযোগ (rr)
F 1 : Rr
(গোলাপি)
P2 : Rr × Rr
স্ব পরাগযোগ
F2 : RR Rr rr
লাল গোলাপি সাদা
অনুপাত : 1 : 2 : 1
ব্যাখ্যা : F1 জনুতে উৎপন্ন সমস্ত সংকর গাছে 100% গোলাপি ফুল ফুটলে বোঝা যায় লাল অথবা সাদা বৈশিষ্ট্য কোনটাই প্রকট নয় এবং লাল বৈশিষ্ট্যটি সাদা বৈশিষ্ট্যের উপর অসম্পূর্ণ প্রকট হওয়ায় মধ্যবর্তী রং গোলাপি রঙের ফুল সৃষ্টি হয়েছে । অসম্পূর্ণ প্রকটতার কারণেই F2 জনুতে ফিনোটাইপ-এর অনুপাত
3 : 1 এর পরিবর্তে 1 : 2 : 1 (লাল 25% : গোলাপি 50% : সাদা 25%) হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকট ও প্রচ্ছন্নতার সূত্র প্রযোজ্য না হলেও পৃথকভবনের সূত্রটি প্রযোজ্য ।
সিদ্ধান্ত : কোনো জিনের একটি অ্যালিল (R) অপর অ্যালিলের (r) ওপর সম্পূর্ণরূপে প্রকট না হলে F1 জনুতে এবং F2 জনুর 50% উদ্ভিদে অন্তর্বর্তী বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য জীবের সৃষ্টি হবে ।
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ
মানুষের দেহকোশে (2n) 46 টি ক্রোমোজোম থাকে যার 44 টি অটোজোম ও 2 টি অ্যালোজোম (সেক্স ক্রোমোজোম) । মহিলাদের ক্ষেত্রে সেক্স ক্রোমোজোম হল 2 টি ‘X’ ক্রোমোজোম (XX) এবং পুরুষের ক্ষেত্রে
1 টি ‘X’ ক্রোমোজোম অপরটি ‘Y’ ক্রোমোজোম (XY) ।
পুরুষের ‘Y’ ক্রোমোজোম আকারে ‘X’ এর থেকে ছোট ও আলাদা প্রকৃতির । দুটি পদ্ধতিতে মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয় যথাক্রমে – প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ ও গৌণ লিঙ্গ নির্ধারণ ।
- প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ : পুরুষের শুক্রাণু ও মহিলাদের ডিম্বাণুর ক্রোমোজোম সংখ্যা ও বৈশিষ্ট্য দ্বারা লিঙ্গ নির্ধারণকে প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ বলা হয় । পুরুষের শুক্রাণুতে দুই প্রকার ক্রোমোজোম দেখা যায় 50% শুক্রাণু ‘X’ ক্রোমোজোম এবং 50% শুক্রাণু ‘Y’ ক্রোমোজোম বিশিষ্ট হয় তাই পুরুষদের হেটারোগ্যামেটিক বলে ।
অপরদিকে মহিলাদের সকল ডিম্বানুতে কেবলমাত্র ‘X’ ক্রোমোজোম থাকে অর্থাৎ মহিলারা একই প্রকার ক্রোমোজোম বিশিষ্ট ডিম্বাণু উৎপন্ন করে তাই এদের হোমোগ্যামেটিক বলে ।
নিষেকের সময় ‘X’ ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণুর মিলনে যে জাইগোট তৈরি হয় তা থেকে কন্যা সন্তান জন্মাবে ।
অন্যদিকে ‘Y’ ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের ফলে উৎপন্ন জাইগোট থেকে পুত্র সন্তান জন্ম হবে। সুতরাং ‘Y’ ক্রোমোজোমের ওপর নির্ভর করে সন্তান পুত্র না কন্যা হবে । পুরুষরা যেহেতু ‘Y’ ক্রোমোজোম উৎপন্ন করে তাই মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে পুরুষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণের এই প্রকার পদ্ধতিকে ‘XX-XY’ পদ্ধতি বলে ।
পিতা × মাতা
জিনোটাইপ : 44A + XY × 44A + XX
গ্যামেট : 22A + (X) 22A + (Y) 22A + (X)
(শুক্রাণু) (ডিম্বাণু)
গ্যামেট | 22A + X | 22A + Y |
22A + X | 44A + XX (কন্যা) | 44A + XY (পুত্র) |
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুত্র বা কন্যা হওয়ার চান্স 50% ।
- গৌণ লিঙ্গ নির্ধারণ : প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ ছাড়াও নানা প্রকার পুং ও স্ত্রী হরমোনের প্রভাবে পুরুষ ও স্ত্রীর গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশিত হয় যা দেখে পুরুষ বা মহিলা নির্ধারণ করা যায় ।
কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ :
মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যার পরিবর্তন অথবা ক্রোমোজোম মধ্যস্থ জিনের মিউটেশনের ফলে যেসকল অস্বাভাবিক শারীরিক ত্রুটি সৃষ্টি হয় তাদের জিনগত রোগ বলে ।
জিনগত রোগের প্রধান কারণ
- জিনের মিউটেশন : জিনের মধ্যে একটি বা দুটি নিউক্লিওটাইডের সংযুক্তি (Insertion) বা বিযুক্তির (Deletion) ফলে মিউটেশন ঘটতে পারে এবং এই প্রকার মিউটেশন পয়েন্ট মিউটেশন ও ফ্রেম -শিফট মিউটেশন হয়ে থাকে ।
- ক্রোমোজোম সংখ্যার অস্বাভাবিক পরিবর্তন : অটোজোম এবং x ক্রোমোজোমে এই প্রকার মিউটেশন ঘটতে পারে ।
অটোজোম বাহিত প্রচ্ছন্ন রোগ :
থ্যালাসেমিয়া : লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন নামক প্রোটিন অংশের সংশ্লেষ কম হওয়ায় ত্রুটিপূর্ণ গঠনের ফলে সৃষ্ট এবং বংশগতভাবে বাহিত রোগকে থ্যালাসেমিয়া বলে ।
স্বাভাবিক মানুষের হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন অংশটি চারটি পলিপেপটাইড শৃঙ্খল দ্বারা গঠিত হয়, যথাক্রমে – দুটি ɑ শৃঙ্খল (প্রতিটি 141 টি অ্যামাইনো অ্যাসিড দ্বারা গঠিত) ও দুটি β শৃঙ্খল (প্রতিটি 146 টি অ্যামাইনো অ্যাসিড দ্বারা গঠিত) । থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন যুক্ত RBC র আয়ু 50-60 দিন, এই হিমোগ্লোবিনে O 2 পরিবহন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে অ্যানিমিয়া রোগ হয় সেক্ষেত্রে রোগীকে বারবার রক্ত দিতে হয় ।
প্রকারভেদ – থ্যালাসেমিয়া দুই প্রকার যথা —
ɑ-থ্যালাসেমিয়া : এতে ɑ-পলিপেপটাইড শৃঙ্খলের গঠন ত্রুটিপূর্ণ হয় । এটি চার প্রকারের হয়–
- হাইড্রপস ফিটালিস বা ɑ-থ্যালাসেমিয়া মেজর,
- হিমোগ্লোবিন H-রোগ
- ɑ-থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট
- ɑ-থ্যালাসেমিয়া সাইলেন্ট
β-থ্যালাসেমিয়া : এতে β-পলিপেপটাইড শৃঙ্খলের গঠন ত্রুটি পূর্ণ হয় । এটি আবার তিন প্রকার–
- কুলি-র অ্যানিমিয়া বা β-থ্যালাসেমিয়া মেজর
- থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমিডিয়া
- β-থ্যালাসেমিয়া মাইনর
লক্ষণ :
- অতিরিক্ত আয়রন বা লোহা জমা : লোহিতকণিকা বিনষ্ট হবার ফলে ও বারবার রক্ত সঞ্চারনের কারণে থ্যালাসেমিয়া রোগীর দেহের বিভিন্ন স্থানে লোহা হিমোসিডারিন রূপে জমা হতে থাকে । অত্যাধিক লোহা জমার ফলে হৃদপিণ্ড, যকৃৎ ও অন্তক্ষরা তন্ত্রের কাজের ব্যাঘাত ঘটে ।
- হাড়ের অস্বাভাবিক গঠন : অস্থিমজ্জা চওড়া হবার কারণে প্রধানত করোটি ও মুখমন্ডলের হাড় প্রস্থ বৃদ্ধি পায় এবং হাড়ের ভঙ্গুরতা দেখা দেয় ।
- প্লীহার অতিবৃদ্ধি : RBC এর ধ্বংসস্থল হল প্লীহা। থ্যালাসেমিয়া রোগীর ক্ষেত্রে অতি কম সময়ে অত্যাধিক RBC বিনষ্ট হবার ফলে এবং সেই বিনষ্ট অংশ কম সময়ে অপসারিত না হওয়ার জন্য প্লীহার অতি বৃদ্ধি ঘটে । এই অবস্থাকে স্পিনোমেগালি বলে। এর ফলে রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির অনাক্রম্যতা কমে যায় ।
- হৃদপিন্ডের রোগ : হৃদপিন্ডের স্পন্দন ও ছন্দবদ্ধতা কমে যাওয়ার ফলে হৃদপিন্ডের নানারকম অসুখ দেখা দেয় ।
- অ্যানিমিয়া : লোহিত রক্তকণিকা তাড়াতাড়ি বিনষ্ট হবার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গিয়ে অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা হবার ফলে রোগীর বৃদ্ধিও ব্যাহত হয় ।
কারণ :
ɑ-থ্যালাসেমিয়া : মানুষের 16 নম্বর অটোজোমের দীর্ঘ বাহুর (q বাহু) ɑ শৃংখল উৎপাদনকারী চারটি জিনের মধ্যে দুইয়ের বেশি জিনের বিলুপ্তির কারনে হাইড্রপস ফিটালিস এবং একটি বা দুটি জিনের বিযুক্তির ফলে ɑ-থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট বা ɑ-থ্যালাসেমিয়া সাইলেন্ট রোগ হয় ।
β-থ্যালাসেমিয়া : 11 নম্বর ক্রোমোজোম জোড়ার ক্ষুদ্র বাহুতে (p বাহু) উপস্থিত গ্লোবিন জিনের (HBB) মিউটেশনের ফলে β-থ্যালাসেমিয়া হয়। ক্রোমোজোম জোড়ার দুটিতেই মিউট্যান্ট β-গ্লোবিন জিন থাকলে β-থ্যালাসেমিয়া মেজর, একটিতে স্বাভাবিক ও অন্যটিতে প্রচ্ছন্ন মিউট্যান্ট জিন থাকলে যথাক্রমে থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমিডিয়া ও β-থ্যালাসেমিয়া মাইনর হয় ।
বংশগতি :
থ্যালাসিমিয়া অটোজোম বাহিত প্রচ্ছন্ন রোগ । স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের জন্য দায়ী জিনটি (R) হল প্রকট এবং ত্রুটি পূর্ণ হিমোগ্লোবিন এর জন্য দায়ী জিনটি (r) হল প্রচ্ছন্ন । হোমোজাইগাস প্রচ্ছন্ন অবস্থায় মেজর থ্যালাসিমিয়া ও হেটারোজাইগাস অবস্থায় মাইনর থ্যালাসেমিয়া (বাহক) হয় ।
স্বাভাবিক পুরুষ ও বাহক মহিলা
স্বাভাবিক পুরুষ × বাহক মহিলা
(RR) (Rr)
গ্যামেট | R | R |
R | RR (স্বাভাবিক কন্যা) | RR (স্বাভাবিক পুত্র) |
r | Rr (বাহক কন্যা) | Rr (বাহক পুত্র) |
50% পুত্র ও কন্যা স্বাভাবিক এবং বাকি 50% পুত্র ও কন্যা বাহক হবে ।
বাহক মহিলা ও বাহক পুরুষ
বাহক পুরুষ × বাহক মহিলা
(Rr) (Rr)
গ্যামেট | R | r |
R | RR (স্বাভাবিক পুত্র) | Rr (বাহক কন্যা) |
r | Rr (বাহক পুত্র) | rr (থ্যালাসেমিক কন্যা) |
50% পুত্র ও কন্যা বাহক, 25% পুত্র স্বাভাবিক ও 25% কন্যা থ্যালাসেমিক ।
বাহক পুরুষ ও থ্যালাসেমিক মহিলা
বাহক পুরুষ × থ্যালাসেমিক মহিলা
(Rr) (rr)
গ্যামেট | R | r |
r | Rr (বাহক পুত্র বা কন্যা) | rr (থ্যালাসেমিক পুত্র বা কন্যা) |
50% পুত্র ও কন্যা বাহক এবং বাকি 50% পুত্র-কন্যা থ্যালাসেমিক হবে ।
স্বাভাবিক পুরুষ ও থ্যালাসেমিক মহিলা
স্বাভাবিক পুরুষ × থ্যালাসেমিক মহিলা
(RR) (rr)
Rr
(বাহক পুত্র ও কন্যা)
সকল (100%) পুত্র ও কন্যা ই বাহক হবে ।
থ্যালাসেমিক পুরুষ ও থ্যালাসেমিক মহিলা
থ্যালাসেমিক পুরুষ × থ্যালাসেমিক মহিলা
(rr) (rr)
rr
(থ্যালাসেমিক পুত্র ও কন্যা)
সকল পুত্র ও কন্যা থ্যালাসেমিক হবে ।
যৌন ক্রোমোজোম বাহিত প্রচ্ছন্ন রোগ :
যৌন ক্রোমোজোমে লিঙ্গ নির্ধারক জিন ছাড়াও আরো কিছু জিন থাকে যেগুলো সাধারণ দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। এই জিনগুলি যৌন ক্রোমোজোম এর মাধ্যমে পিতামাতা থেকে সন্তানে সঞ্চারিত হয় । এইরকম জিনগুলিকে সেক্স লিংকড জিন বা X-লিংকড জিন বলে ।
X-ক্রোমোজোম এ অবস্থিত জিনের মিউটেশনের ফলে নানা রকম অস্বাভাবিকতা বা জিনগত রোগ দেখা দেয়। এরূপ দুটি প্রচ্ছন্ন জিনগত রোগ হলো – বর্ণান্ধতা ও হিমোফিলিয়া ।
- বর্ণান্ধতা : X-ক্রোমোজোম বাহিত যে প্রচ্ছন্ন জিন ঘটিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা রং বা বর্ণ চিনতে পারে না তাকে বর্ণান্ধতা বলে । রোগটি মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি হয় । বিজ্ঞানী জন ডাল্টন বর্ণান্ধ ছিলেন বলে বর্ণান্ধতার অপর নাম ডালটনিজম ।
কারণ : মানুষের চোখের রেটিনার কোণ কোশ বর্ণ চিনতে সাহায্য করে । কোণ কোশগুলিতে ফটোপসিন নামক এক প্রকার প্রোটিন যুক্ত বর্ণ সংবেদী রঞ্জক থাকে। ফটোপসিন যুক্ত তিন প্রকারের কোশ পাওয়া
যায় ।
- লাল সংবেদী কোশে এরিথ্রোলোব নামক রঞ্জক থাকে ।
- সবুজ সংবেদী কোশে ক্লোরোলোব নামক রঞ্জক থাকে ।
- নীল সংবেদী কোশে সায়ানোলোব নামক রঞ্জক থাকে ।
টমাস মর্গ্যান ও উইলসন বলেন যে বর্ণান্ধতার জন্য দায়ী ‘X’ ক্রোমোজোম এ অবস্থিত প্রচ্ছন্ন জিন । X ক্রোমোজোমের দীর্ঘ বাহুর শেষ প্রান্তের কাছাকাছি স্থানে দুটো জিন লোকাস পাওয়া যায়–
- একটি লোকাসের জিন স্বাভাবিক অবস্থায় লাল সংবেদী রঞ্জক সৃষ্টি করে । এই স্বাভাবিক জিনটির পরিবর্তে কোন পরিবর্তিত অ্যালিল এই লোকাসে থাকলে লাল সংবেদী রঞ্জক তৈরি হতে পারে না ফলে ব্যক্তি লাল বর্ণান্ধ হয় ।
- অপর একটি লোকাসে জিন স্বাভাবিক অবস্থায় সবুজ রঞ্জক সৃষ্টির জন্য দায়ী। এর বদলে কোনো পরিবর্তিত অ্যালিল এই লোকাসে থাকলে সবুজ রঞ্জক তৈরি হতে পারে না ও ব্যক্তি সবুজ বর্ণান্ধ হয় ।
প্রকারভেদ : মানুষের বিভিন্ন প্রকার বর্ণান্ধতা লক্ষ্য করা যায় । তার মধ্যে তিন প্রকার বর্ণান্ধতা উল্লেখযোগ্য
- লাল বর্ণান্ধতাকে বলা হয় প্রোটনেপিয়া ও আক্রান্ত ব্যক্তিকে বলা হয় প্রোটনোপ ।
- সবুজ বর্ণান্ধতাকে বলা হয় ডিউটেরানোপিয়া ও আক্রান্ত ব্যক্তি ডিউটেরনোপ ।
- নীল বর্ণান্ধতাকে বলা হয় ট্রাইটনেপিয়া ও আক্রান্ত ব্যাক্তিকে বলে ট্রাইটনোপ ।
বংশগতি : স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য প্রকট জিন c+ এবং বর্ণান্ধতার জন্য প্রচ্ছন্ন জিন c । পুরুষের ‘X’ ক্রোমোজোমে c+ জিনের পরিবর্তে c জিন থাকলে সে বর্ণান্ধ হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে দুটি ‘X’ ক্রোমোজোমেই c জিন থাকলে, তবেই মহিলাটি বর্ণান্ধ হবে । কিন্তু একটি ক্রোমোজোমে c+ জিন ও অন্যটিতে c জিন থাকলে মহিলাটি বাহক হবে । এই রোগে পুরুষরা কখনোই বাহক হতে পারে না ।
- হিমোফিলিয়া : যে বংশগত রোগে দেহের কোন ক্ষতস্থানে সহজে রক্ততঞ্চন ঘটেনা বা দেরিতে ঘটে, তাকে হিমোফিলিয়া বলে ।
প্রকার –
- হিমোফিলিয়া-A বা রয়াল হিমোফিলিয়া : ‘X’ লিংকড জিনের মিউটেশনের জন্য রক্তের প্লাজমায় ফ্যাক্টর VIII (অ্যান্টি হিমোফিলিক ফ্যাক্টর) থাকে না বা ত্রুটি দেখা যায় । ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়া এই রোগের প্রচ্ছন্ন জিন বহন করতেন ও পরবর্তী প্রজন্মে তা সঞ্চারিত হয় ।
বিবাহসূত্রে রোগটি পরবর্তীকালে ইউরোপের অন্যান্য রাজপরিবারের ছড়িয়ে পড়ে। তাই একে রয়েল হিমোফিলিয়াও বলা হয়ে থাকে। 80% হিমোফিলিয়ায় প্রকারের হয় ।
- হিমোফিলিয়া-B বা ক্রিসমাস রোগ : এই প্রকার হিমোফিলিয়া ফ্যাক্টর IX (প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাস্টিন কম্পনেন্ট বা PTC) এর অভাবে বা ত্রুটির ফলে হয় । এই প্রকার রোগ স্টিফেন ক্রিসমাস নামক রোগীর দেহে প্রথম ধরা পড়ে বলেই এই রোগকে ক্রিসমাস রোগ বলা হয়ে থাকে । 20% হিমোফিলিয়া এই প্রকার ।
বংশগতি – হিমোফিলিয়া ‘X’ ক্রোমোজোমের মাধ্যমে বাহিত হয় । হিমোফিলিয়ার জন্য দায়ী জিনটি
প্রচ্ছন্ন । পুরুষদের ক্ষেত্রে ‘X’ ক্রোমোজোমে হিমোফিলিয়ার মিউট্যান্ট থাকলে তবেই সে হিমোফিলিক হবে । যেহেতু হিমোফিলিয়া প্রচ্ছন্ন জিন, তাই এই রোগ মহিলাদের সাধারণত হয় না ।
মহিলাদের উভয় ‘X’ ক্রোমোজমে হিমোফিলিয়ার মিউট্যান্ট বহন করলে তবেই মহিলার হিমোফিলিয়া হতে পারে । কিন্তু একটিতে মিউটান্ট ও অপরটিতে স্বাভাবিক জিন থাকলে মহিলাটি বাহক হবে ।
হিমোফিলিয়া বাহক (মহিলা) × স্বাভাবিক পুরুষ
X H X h X H Y
গ্যামেট | X H | Y |
X H | X H X H (স্বাভাবিক কন্যা) | X H Y (স্বাভাবিক পুত্র) |
X h | X H X h (বাহক কন্যা) | X h Y (হিমোফিলিক পুত্র) |
স্ত্রীলোক দের ক্ষেত্রে হিমোফিলিয়া তখনই প্রকাশ পায় যদি কোনো হিমোফিলিয়া বাহক মহিলা কোনো হিমোফিলিক পুরুষকে বিবাহ করেন। কিন্তু প্রকৃতিতে এটি সম্ভব নয় কারণ হিমোফিলিক বিশিষ্ট পুত্র সন্তানরা অধিকাংশই বছর বয়সের মধ্যে মারা যান ।
সেক্স লিংকড জিনগুলির বংশানুক্রমিক সঞ্চরণের সাধারণ নিয়ম
- মহিলারা এই রোগের বাহক, পুরুষদের ক্ষেত্রে এই রোগ প্রকাশ পায় কারণ, মহিলাদের উভয় ‘X’ ক্রোমোজোমেই মিউট্যান্ট জিন থাকলে (হোমোজাইগাস) তবেই রোগের প্রকাশ হয়, কিন্তু একটি ‘X’ ক্রোমোজোমে মিউট্যান্ট জিন থাকলে তারা বাহক হন । পুরুষদের যেহেতু একটি মাত্র ‘X’ ক্রোমোজোম থাকে তাই সেই ক্রোমোজোমে মিউট্যান্ট জিন উপস্থিত থাকলেই পুরুষরা আক্রান্ত হয় ।
- মা রোগগ্রস্ত হলে তার সকল পুত্রসন্তান রোগাক্রান্ত হবে ।
- কিন্তু পিতা স্বাভাবিক হলে সকল কন্যা সন্তান স্বাভাবিক হবে, এবং কিছু বাহক হবে ।
- মাতা বাহক হলে প্রত্যেক পুত্রের মধ্যে রোগটি হবার সম্ভাবনা 50% ।
- বাহক মা ও রোগাক্রান্ত বাবার পুত্র ও কন্যা সন্তানদের অর্ধেক রোগাক্রান্ত এবং বাকি অর্ধেক স্বাভাবিক হবে ।
- এই ‘X’ ক্রোমোজোম বাহিত প্রচ্ছন্ন জিন ঘটিত রোগ গুলির জন্য দায়ী জিন পিতার কাছ থেকে কন্যার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের নাতিতে অথবা মাতার কাছ থেকে পুত্রের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের নাতনিতে সঞ্চারিত হয় । যা ক্রিসক্রস উত্তরাধিকার নামে পরিচিত ।
- জিনটি (প্রচ্ছন্ন) বাবার ‘X’ ক্রোমোজোমে থাকলে সেটি পরের প্রজন্ম কন্যার ‘X’ ক্রোমোজোমে সঞ্চারিত হয় । কন্যা থেকে জিনটি তার পুত্রে (নাতি) সঞ্চারিত হয় । জিনটি মায়ের ‘X’ ক্রোমোজোমের থাকলে তা পরের প্রজন্মের পুত্রে ‘X’ ক্রোমোজোম ও পুত্র থেকে তার কন্যার (নাতনি) সঞ্চারিত হয় ।
জেনেটিক কাউন্সেলিং :
কোনো পরিবারের বা ব্যক্তির বংশগত রোগের জিনগত ইতিহাসের বিশ্লেষণ এবং জেনেটিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জিনগত রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নির্ণয় এবং জিনগত রোগ বিহীন সুস্থ-স্বাভাবিক সন্তান লাভের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শদানকে জেনেটিক কাউন্সেলিং বলা হয় ।
পদ্ধতি ও ব্যাখ্যা : যদি কোন পরিবারে থ্যালাসেমিয়া রোগ থাকে তবে সেই পরিবারের সদস্যদের বিয়ের আগে জেনেটিক কাউন্সেলিং করাতে হবে কারণ সেই পিতা-মাতার মাধ্যমে তাদের সন্তানও থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে। হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিসের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত করা যায় ।
তাই কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে –
- পরিবারের বংশগত রোগের ইতিহাস বিশ্লেষণ ।
- রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে পরিবারের লোকেরা রোগের বাহক কিনা তা নির্ধারণ ।
- বিবাহের পূর্বে সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঙ্গীর জিনগত অবস্থান নির্ধারণ ।
- পাত্র পাত্রীর জিনগত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সন্তানের রোগের সম্ভাবনা নির্ধারণ ।
- রোগের সমস্যা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে পরামর্শ দান ও প্রয়োজনে গর্ভপাতের পরামর্শ দিয়ে পরবর্তী সন্তান গ্রহণে সহায়তা করে ।
জেনেটিক কাউন্সেলিং এর গুরুত্ব :
- জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে বংশগত রোগ নির্ণয় করা যায় । যেমন – যেসব পরিবারে থ্যালাসেমিয়া রোগ (মেজর বা মাইনর) আছে সেইসব পরিবারের সদস্যদের বিয়ের আগে জিনগত পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ বাহক পিতা-মাতার সন্তান থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত হতে পারে। হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিসের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত করা যায় ।
- বংশগত রোগের কারণ বিশ্লেষণ করা হয় ।
- পরবর্তী প্রজন্মে রোগের সম্ভাবনা কিরূপ হতে পারে তা নির্ধারণ করা যায় ।
- জিনগত রোগমুক্ত শিশু সম্পন্ন সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা যায় ।
Solved Questions & Answers of পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ
বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর প্রতিটি প্রশ্নের মান- 1
- মেন্ডেলের প্রথম সূত্র হলো-
- স্বাধীন সঞ্চারের সূত্র
- পৃথকীভবনের সূত্র
- প্রকটতার সূত্র
উত্তর : পৃথকীভবনের সূত্র
- RRYY জিনোটাইপ যুক্ত কোনো গাছের থেকে কত ধরণের গ্যামেট উৎপন্ন হয়-
- একপ্রকার
- তিনপ্রকার
- দুই প্রকার
উত্তর : একপ্রকার
- গোলাপি ফুল ফোটা কিসের উদাহরণ –
- অসম্পূর্ণ প্রকটতা
- সম্পূর্ণ প্রকটতা
- অসম্পূর্ণ প্রচ্ছন্নতা
উত্তর : অসম্পূর্ণ প্রকটতা
- মেন্ডেল তার পরীক্ষার জন্য মটরগাছের কটি বৈশিষ্ট্য বেছেছিলেন –
- ২ জোড়া
- ৭ জোড়া
- ১ জোড়া
উত্তর : ৭ জোড়া
- কুঞ্চিত হলুদ ফিনোটাইপএর জন্য কোন দুইটি জিনোটাইপ দায়ী-
- RRYY ও rryy
- RRYy ও RrYy
- RRyy ও RRyy
উত্তর : RRYY ও rryy
- পিতা ও মাতা উভয় যদি থ্যালাসেমিয়া বাহক জয় তাহলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সম্ভাবনা কত-
- ১০০%
- ৭৫%
- ২৫%
উত্তর : ২৫%
- একই জিনের বিভিন্ন রূপকে কি বলে-
- জিনোটাইপ
- ফিনোটাইপ
- অ্যলিল
উত্তর : অ্যলিল
- মানুষের জনন কোষে কয়টি ক্রোমোসোম থাকে-
- ২২ জোড়া
- ২৩ জোড়া
- ২৪ জোড়া
উত্তর : ২৩ জোড়া
- জীবের সাড়া প্রদানের ক্ষমতাকে বলে ?
- উত্তেজিতা
- সংবেদনশীলতা
- সারকুলেশন
উত্তর : সংবেদনশীলতা
- উত্তেজনায় জীবের সাড়া দেওয়ার ধর্মকে বলে?
- উদ্দীপনা
- সংবেদনশীলতা
- উত্তেজিতা
উত্তর : উত্তেজিতা
- জীবের একই স্থানে আবদ্ধ থেকে অঙ্গ সঞ্চালনকে বলে?
- চলন
B..গমন
C.স্থান পরিবর্তন
উত্তর : চলন
- নীচের কোন্ প্রাণীটি গমনে অক্ষম?
- চিংড়ি
- সাগরকুসুম
C.কেন্নো
উত্তর : সাগরকুসুম
- রোটেশন দেখা যায়
- কাণ্ডের রোমে
- মূল রোমে
- পাতাশ্যাওলা পাতার কোশে
উত্তর : পাতাশ্যাওলা পাতার কোশে
- সারকুলেশন বা আবর্তগতি দেখা যায়
- পাতাশ্যাওলার পাতার কোশে
- কুমড়োর কান্ড রোমে
- মূল রোমে
- প্রোটোপ্লাজমে
উত্তর : কুমড়োর কান্ড রোমে
- নিচের কোন উদ্ভিদে গমন দেখা যায়
- ইউগ্লিনা
- প্যারামিসিয়াম
- ক্ল্যামাইডোমোনাস
উত্তর : ক্ল্যামাইডোমোনাস উদ্ভিদে
- লজ্জাবতীলতা স্পর্শ করলে পত্রকগুলি নুয়ে যায় এটি কি ধরনের চলন ?
- ন্যাস্টিক
- সিসমোন্যাস্টিক
- ট্রপিক
উত্তর : সিসমোন্যাস্টিক
- উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদের যখন সমগ্র দেহের স্থান পরিবর্তন ঘটে তখন তাকে কি বলে?
- ন্যাস্টিক
- ট্রপিক
- ট্যাকটিক
উত্তর : ট্যাকটিক চলন
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর প্রতিটি প্রশ্নের মান- 1
- লিঙ্গ সংযােজিত একটি জিনের উদাহরণ দাও।
উত্তর : হিমােফিলিয়া।
- এমন একটি উদ্ভিদের উদাহরণ দাও যার অসম্পূর্ণ প্রকটতা দেখা যায় ।
উত্তর : Retetattu (Mirabilus jalapa)
- জিনােটাইপ Tt ও tt এর ফিনােটাইপ কী হবে ?
উত্তর : T = সংকর লম্বা, tt = বিশুদ্ধ বেঁটে।
- স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের দেহে ক্রোমােজোমের সংখ্যা কত ?
উত্তর : 23 জোড়া বা 46টি।
- Y ক্রোমােজোমে অবস্থিত জিনাকে কী বলে?
উত্তর : হােলাকি জিন বলে।
- X ক্রোমােজোম সংযােজিত মানুষের একটি প্রচ্ছন্ন জিনগটিত রােগের উদাহরণ দাও।
উত্তর : হিমােফিলিয়া (Haemophilia)।
- অটোজোম জিনঘটিত একটি প্রচ্ছন্ন রােগের নাম লেখাে।
উত্তর : থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia)।
- বিজ্ঞানসম্মত নাম লেখাে মটর গাছের।
উত্তর : মটরগাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম Pixt/22 satv007|
জিনােটাইপ অনুপাত কত মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষার?
উত্তর : জিনােটাইপ অনুপাত হলাে =1: 2:1
- Tt দ্বারা মেন্ডেলের পরীক্ষায় কী বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তর : মেন্ডেলের পরীক্ষায় Tt দ্বারা সংকর লম্বা মটর গাছকে বােঝানাে হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর প্রতিটি প্রশ্নের মান- 2
- অ্যালিল কি ?
উত্তর : কোনাে একটি বিন্দুতে উপস্থিত সমসংস্থ ক্রোমােজোমের বিপরীতধর্মী জিনজোড়াকে ‘অ্যালিল বা অ্যালিললাম বলে।
- জিনােটাইপ ও ফিনােটাইপ কাকে বলে ?
উত্তর : জিন সংযুক্তির দ্বারা নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যকে তার জিনােটাইপ বলে। এবং কোনাে জীবের বৈশিষ্ট্যাবলির বাহ্যিক প্রকাশকে ওই জীবের ফিনােটাইপ বলে |
- বংশগতি কাকে বলে ?
উত্তর : পিতা-মাতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি যে প্রক্রিয়ায় বংশপরম্পরায় অপত্যে সঞ্চারিত হয় তাকে বংশগতি বলে।
- প্রকরণ বলতে কি বোঝো ? এর কারণ কী?
উত্তর : জিনের পরিবর্তনে বা পরিবেশের প্রভাবে যৌন জননের সময় একই প্রজাতির জবের মধ্যে যে পার্থক্য দেখা যায় তাকে প্রকরণ বলে। জিনগত পরিবর্তন প্রকরণের কারণ যৌন জনন প্রকরণের জন্য দায়ী।
- মেন্ডেল বংশগতির একককে কী বলেন? বর্তমানে এই একককে কী বলা হয় ?
উত্তর : বংশগতির একককে মেন্ডেল ‘ফ্যাক্টর’ বলে উল্লেখ করেন। বর্তমানে এই একককে জিন বলা হয়।
- মানুষের দু’টি প্রকরণের উদাহরণ দাও।
উত্তর :
- মানুষের মুক্ত ও সংযুক্ত কানের লতি।
- মানুষের রােলার ও স্বাভাবিক জিৎ।
- বিশুদ্ধ বা খাটি জীব কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর : বংশানুক্রমে কোনাে জীব একইরকম বৈশিষ্ট্য বজায় রাখলে তাকে বিশুদ্ধ বা খাঁটি জীব বলে। মেন্ডেলের একসংকর পরীক্ষায় জনিতৃ জনুর লম্বা (‘TT) ও বেটে (t) মটর গাছ হলাে বিশুদ্ধ উল্লিদের উদাহরণ।
- সংকর জীব এবং সংকরায়ণ কাকে বলে ?
উত্তর : বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যযুক্ত দু’টি বিশুদ্ধ জীবের পরনিষেকের ফলে উৎপন্ন জীবটিকে সংকর জীব বলে এবং সংকর জীব সৃষ্টির পদ্ধতিকে সংকরায়ণ বলে।
যেমন : আঁটি লম্বা (TT) এবং খাটি বেঁটে (tt) দুটি জীবের পরনিষেকের ফলে উৎপন্ন জীবটি হবে সংকর জীব (Tt)।
- প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য কাকে বলে ?
উত্তর : বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যযুক্ত দু’টি জীবের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটালে F জনুতে বা প্রথম অপত্য বংশে যে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পায়, তাকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে। অন্যদিকে যে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পায় না, সুপ্ত অবস্থায় থাকে তাকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে।
- কাকে হােমােজাইগাস বা সমসংকর জীব এবং হেটেরােজাইগাস বা বিষম সংকর জীব বলে ?
উত্তর : একই প্রকার জিন জীবের ক্রোমােজোমের নির্দিষ্ট লােকাসে থাকলে তাকে হােমােজাইগাস জীব এবং নির্দিষ্ট লােকাসে ভিন্নধর্মী জিন থাকলে তাকে হেটেরােজাইগাস জীব বলে।
- কত প্রকার গ্যামেট RYy সংকর জীবে উৎপন্ন হয় ?
উত্তর : চার প্রকারের গ্যামেট উৎপন্ন হয়, যথা—RY, Ry, Y ও ry
- বংশগত দু’টি রােগের উদাহরণ দাও।
উত্তর : বংশগত রােগ : হিমােফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া
- থ্যালাসেমিয়ার কারণ উল্লেখ করাে।
উত্তর : থ্যালাসেমিয়া দুই প্রকারের হয়।
বিটা থ্যালাসেমিয়া : হিমােগ্লোবিনের বিটা পলিপেপটাইট ঠিকমতাে সংশ্লেয় হওয়ায় এই ধরনের থ্যালাসেমিয়া দেখা যায়। এই জিনটি 11 নম্বর ক্রোমােজোমে অবস্খান কমে।
আলফা থ্যালাসেমিয়া : 16 নম্বর কোমােজোমের আলফা গ্লোবিন জিন পলি পেপটাইড় তৈরিতে অক্ষম হলে এই ধরনের থ্যালাসেমিয়া দেখা যায়।
- জিনােটাইপ কী ? উদাহরণ দাও।
উত্তর : জিন সংযুক্তির দ্বারা নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যকে জীবের জিনােটাইপ বলে। খাটি লম্বা মটরগাছের জিনােটাইপ হলাে “TT’ এবং খাটি বেঁটে মটরগাছের জিনােটাইপ হলাে ‘tt’।
- কাণ্ডের দৈর্ঘ্য ও বীজের আকার-এই বৈশিষ্ট্য নিয়ে মটর গাছের ওপর সম্পাদিত দ্বিসংকর ‘জননের পরীক্ষায় F, জনুতে নয়টি দীর্ঘ ও গোলাকার বীজযুক্ত মটর গাছ উৎপন্ন হয়। এদের কী কী জিনােটাইপ থাকতে পারে?
উত্তর :
কাণ্ডের দৈর্ঘ্য = দীর্ঘ = T এবং বেটে =t
বীজের আকার–গােলাকার = R এবং কুতি =r হলে |
দ্বিসংকর জননের পরীক্ষায় F, জনুতে নয়টি দীর্ঘ ও গােলাকার বীজযুক্ত মটর গাহ উৎপন্ন হলে এদের জিনােটাইপ হবে—
TTRR = 1টি, TTRr = 2টি, TtRR = 2টি, TtRr = 4টি।
16.মেন্ডেলের বংশগতির প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র দুটির নাম লেখাে।
উত্তর :
- পৃথকীভবনের সূত্র
- স্বাধীন সঞ্চালনের সূত্র
- সংকর জীব কাকে বলে ?
উত্তর : বিশুদ্ধ বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যযুক্ত দুটি জীবের পরনিষেকের ফলে উৎপন্ন জীবটিকে সংকর জীব (Hybrid) বলে।
যেমন : খাঁটি বেঁটে (tt) এবং খাঁটি লম্বা (TT) দু’টি জীবের পরনিষেকের ফলে উৎপন্ন জীবটি হলাে সংকর জীব (Tt)।
- কাকে প্রথম অপত্য জনু বা Fজনু এবং দ্বিতীয় অপত্য জনু বা F, জনু বলে ?
উত্তর : জনিত জনু বা Pজনু থেকে উৎপন্না জীবকে এই সংকরায়ণ পরীক্ষায় প্রথম ‘অপত্য জনু বা F, জনু এবং প্রথম অপত্য জনুর দু’টি জীবেন্ন সংকরায়ণে উৎপন্না অপত্যকে দ্বিতীয় অপত্য জুনু বা F, জনু বলে।
- জিনগত রােগ কাকে বলে ?
উত্তর : যে অস্বাভাবিকতা রাসায়নিক পদার্থের (মিউটাজেন) ও পরিবেশের বিভিন্ন ভৌত প্রভাবে মানবদেহের ক্রোমােজোমের গঠনগত বা সংখ্যা পরিবর্তনে বা ক্রোমােজোমে অবস্থিত জিনের পরিবর্তনের ফলে শরীরে সৃষ্টি হয়, তাকে জিনগত রােগ বা জেনেটিক ডিডিজ বলে।
- উদাহরণ দাও- মানুষের দু’টি জিনগত রোগের ।
উত্তর : অটোজোমবাহিত : থ্যালাসেমিয়া, সেক্স ক্রোমােজোম বা অ্যালােজোমবাহিত : হিমােফিলিয়া।
- থ্যালাসেমিয়া কাকে বলে ?
উত্তর : মানবদেহে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন অটোজোম জিনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বংশগত রােগ হলাে থ্যালাসেমিয়া ।
মানবদেহে হিমােগ্লোবিন উৎপাদনের ত্রুটি হওয়ায় এই রােগ হয় ।
- থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ উল্লেখ করাে।
উত্তর : এই রােগে হিমােগ্লোবিন কম উৎপন্ন হওয়ায় RBC বা লােহিত রক্ত কণিকা ছোটো হয় এবং হিমােগ্লোবিন উৎপাদনে ত্রুটি হওয়ায় রক্তাল্পতা দেখা যায়, যকৃৎ ও প্লীহার বৃদ্ধি ঘটে।
- থ্যালাসেমিয়া কত প্রকারের ও কী কী?
উত্তর : থ্যালাসেমিয়া দুই প্রকার। যথা – থ্যালাসেমিয়া, থ্যালাসেমিয়া
- থ্যালাসেমিয়ার কারণ কী?
উত্তর : মানুষের 16 নং ক্রোমােজোমের অবস্থিত হিমােগ্লোবিনের শৃঙ্খল গঠনকারী জিনের ত্রুটির জন্য থ্যালাসেমিয়া হয়।
- থ্যালাসেমিয়ার কারণ কী ?
উত্তর : মানুষের 11 নং ক্রোমােজোমে অবস্থিত হিমােগ্লোবিনের শৃখল গঠনকারী জিনের ত্রুটির জন্য থ্যালাসেমিয়া হয়।
- থ্যালাসেমিয়া মেজর এবং থ্যালাসেমিয়া মাইনর কাকে বলে ?
উত্তর : দুটি আলফা এবং দুটি বিটা শৃঙ্খলের সবকটির ত্রুটির জন্য হিমােগ্লোবিন গঠনকারী যে রােগ হয়, তাকে মেজর থ্যালাসেমিয়া এবং একটি আলফা ও একটি বিটা শৃঙ্খলের তুটির জন্য যে রােগ হয়, তাকে মাইনর থ্যালাসেমিয়া বলে।
- হিমােফিলিয়া রােগের কারণ উল্লেখ করাে।
উত্তর : X-ক্রোমােজোম অবস্থিত প্রচ্ছন্ন জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রোগ হলো হিমােফিলিয়া । এই রোগে আঘাতপ্রাপ্তস্থান থেকে রক্ত ক্ষরিত হয় অর্থাৎ রক্ত তঞ্চন ব্যাহত হয়।
কারণ :
- হিমােফিলিয়া B রক্তনকারী উপাদান IX অর্থাৎ ক্রিসমাস ফ্যাক্টরের অভাবে হয়।
- হিমােফিলিয়া A রতনকারী উপাদান VIII অর্থাৎ অ্যান্টিহিমােফিলিক ফ্যাক্টর এর অভাবে হয়।
- বর্ণান্ধতা কাকে বলে ? এই রােগের লক্ষণ কী ?
উত্তর : X ক্রোমােজোমের একটি জিনের পরিবর্তনের জন্য মানুষের চোখের রেটিনায় কোন কোশে আয়ােডপসিন প্রােটিনের ত্রুটি দেখা দেয়।
ফলে মানুষ লাল, সবুজ বা কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে নীল বর্ণ চিনতে পারে না। একে বর্ণান্ধতা বলে।
লক্ষণ : লাল, সবুজ বা নীল বর্ণ দেখতে না পাওয়া।
- জেনেটিক কাউন্সেলিং কী ? এর গুরুত্ব কী ?
উত্তর : জেনেটিক কাউন্সেলিং হলো যেসব পরিবারে জিনগত বা বংশগত রােগ আছে তাদের বিবাহের আগে জিনগত পরামর্শ দেওয়া ।
গুরুত্ব : থ্যালাসেমিয়া মেজর বা মাইনর যেসব পরিবারে আছে তাদের পরিবারের ব্যক্তিদের জেনেটিক কাউন্সেলিং দরকার। যদি দুই পরিবারে থ্যালাসেমিয়া মাইনর থাকে তবে তাদের সন্তানদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রােগ প্রকাশ পাবে এবং রক্তাল্পতায় মারা যাবে। তাই বিয়ের আগে জিনগত পরামর্শ বা জেনেটিক কাউন্সেলিং দরকার।
- থ্যালাসেমিয়া কাকে বলে ? এর লক্ষণ কী ?
উত্তর : একধরনের প্রচ্ছন্ন অটোজোম জিনের দ্বারা নিয়ন্ত্রীত একটি বংশগত রােগ হলো থ্যালাসেমিয়া।
লক্ষণ : এইরােগে হিমােগ্লোবিন কম উৎপন্ন হওয়ায় RBC ছােট হয়, হিমােগ্লোবিন উৎপাদনে ত্রুটি হওয়ায় রক্তল্পতা দেখা যায় ; যকৃৎ ও প্লীহার বৃদ্ধি পায়।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর প্রতিটি প্রশ্নের মান- 4/5
- কাকে বংশগতি এবং জেনেটিক্স বলে ? সংক্ষেপে মেন্ডেলের সাফল্য লাভের কারণ গুলি লেখাে।
উত্তর : পিতা-মাতার চারিত্রিক যে প্রক্রিয়ায় বৈশিষ্ট্যগুলি বংশপরম্পরায় অপত্যে দেহে সঞ্চারিত হয় তাকে বংশগতি বলে। বংশগতি সংক্রান্ত বিজ্ঞানকে জেনেটিক্স বলে।
মেন্ডেলের সাফল্য লাভের কারণ :
- মেন্ডেলের নির্বাচিত মটর গাছ স্বপরাগী ছিল এবং কৃত্রিমভাবে ইতর পরাগযােগ সম্ভব ছিল।
- মেন্ডেলের নির্বাচিত সব বৈশিষ্ট্য সহজে শনাক্তকরণ করা যায়।
- মেন্ডেল দক্ষ প্রজননবিদ ছিলেন। তাই যত্ন সহকারে সংকরায়ণ পরীক্ষাগুলি করেছিলেন।
- মেন্ডেল কর্তৃক নির্বাচিত মটর গাছ বিশুদ্ধ ও স্বপ্রজননক্ষম ছিল।
মটর গাছের সাত জোড়া বিপরীত ধর্মী বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করলেও মেন্ডেল একসঙ্গে এক বা দুই জোড়া বৈশিষ্ট্য নিয়ে পরীক্ষা করেন ফলে তথ্যের বিশ্লেষণ এবং পরীক্ষা সম্পন্ন করতে সুবিধা হয়েছিল।
মেন্ডেল তার পরীক্ষা তৃতীয় জনু পর্যন্ত করেছিলেন। ফলে অনুপাতের মাধ্যমে সূত্র নির্ধারণ করতে সুবিধা হয়েছিল।
- প্রকরণ কাকে বলে ? সংক্ষেপে প্রকরণের কারণ আলােচনা করাে এবং উদাহরণ দাও।
উত্তর : যে পার্থক্য যৌন জননের সময় জিন পরিবর্তন বা পরিবেশের প্রভাবে একই প্রজাতির জীবের মধ্যে দেখা যায়, তাকে প্রকরণ বলে।
প্রকরণের কারণ : সকল প্রকার বৈশিষ্ট্য মানবদেহে ক্রোমোজোম অবস্থিত জিন নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবেশের প্রভাবে ক্রোমােজোমে অবস্থিত জিনের সজ্জার পরিবর্তনে বা ক্রোমােজোমের গঠনগত বা সংখ্যার পরিবর্তনে জীবদেহে বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে। ফলে প্রকরণের সৃষ্টি হয়। একে পরিব্যক্তি বা মিউটেশন বলে।
জননের সময় গ্যামেট উৎপাদনে মিয়ােসিস কোশ বিভাজন সম্পন্ন হয়।
কসিং ওভারের সময় জিনের সজ্জার পরিবর্তন ঘটে। ফলে নতুন অপত্যে মিয়ােসিসের ক্রসিং ওভারের সময় প্রকরণের সৃষ্টি হয়।
মানুষের ক্ষেত্রে প্রকরণের উদাহরণ : রােলার ও স্বাভাবিক জিভ : বেশিরভাগ মানুষ সহজেই জিভ বের করে নলের মতাে রােল করতে পারে।
এটি অটোজোম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রকট বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য হােমােজাইগাস ও হেটারােজাইগাস উভয় অবস্থায় প্রকাশিত হয়। হােমােজাইগাস প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকলে এই জিনটি স্বাভাবিক জিভ সৃষ্টি করে।
মুক্ত ও সংযুক্ত কানের লতি : বেশিরভাগ মানুষের কানের লতি মুক্ত অবস্থায় থাকে। কোনাে ক্ষেত্রে থেকে কানের লতি যুক্ত অবস্থায় থাকে। এটি জিনগত পরিবর্তনের ফলে ঘটে।
এই বৈশিষ্ট্যটি প্রচ্ছন্ন জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তাই প্রচ্ছন্ন জিনের দু’টি হােমােজাইগাস অবস্থায় থাকলেই এই বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়।
- মেন্ডেলবাদ বা মেন্ডেলিজম কাকে বলে? মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র দু’টি বিবৃত করাে।
উত্তর : মেন্ডেল আবিষ্কৃত বংশগতির মৌলিক নিয়মাবলি এবং সূত্রগুলিকে একত্রে মেন্ডেলিজম বা মেন্ডেলবাদ বলে।
মেণ্ডেলের বংশগতির সূত্রগুলি হলাে : স্বাধীন সারনের সূত্র যা দ্বিসংকর জনন পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করে রচিত এবং পৃথকভবনের সূত্র যা একসংকর জনন পরীক্ষার উপর নির্ভর করে রচিত ।
স্বাধীন সারণের সূত্র (Law of Independent Assortment) : কোনাে জীবের দুই বা ততােধিক যুগ্ম বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য জনিতৃ জনু থেকে অপত্য জনুতে সঞ্চারিত হওয়ার সময় একত্রিত হলে শুধুমাত্র গ্যামেট গঠনকালে যে এরা পরস্পর থেকে পৃথক হয় তা-ই নয়, উপরন্তু প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট্য স্বাধীনভাবে যেকোন বিপরীত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্ভাব্য সকল প্রকার সমন্বয়ে সঞ্চারিত হয়।
পৃথকভবনের সূত্র (Law of Segregation) : কোনাে জীবের একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য এক জনু থেকে অপর জনুতে সারিত হওয়ার সময় একত্রিত হলেও বৈশিষ্ট্যগুলি মিশ্রিত হয় না, পরবর্তীকালে গ্যামেট গঠন করার সময় পৃথক হয়ে যায়।
- কাকে অসম্পূর্ণ প্রকটতা বলে ? ব্যাখ্যা করাে উদাহরণ দিয়ে ।
উত্তর : বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত দুটি জীবের সংকরায়ণে প্রকট জিনটি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ না পাওয়ার প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যবর্তী একটি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। এই ঘটনাকে অসম্পূর্ণ প্রকটতা বলে।
ব্যাখ্যা : অসম্পূর্ণ প্রকটতা হলাে মেন্ডেলের সূত্রের একটি ব্যতিক্রম।
মেন্ডেলের প্রকটতার সূত্র (Law of Dominance) অনুযায়ী যে বৈশিষ্ট্যটি জনিতৃ জনুতে প্রকট হবে সেটি প্রথম অপত্য জনুতেও প্রকট হবে কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয় না।
এক্ষেত্রে প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যবতী বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। তাই একে মিশ্র প্রকটতা বা আংশিক প্রকটতাও বলা হয়।
উদাহরণ : সন্ধ্যামালতী উদ্ভিদে (Mirabilis jalapa) এই ধরনের অসম্পূর্ণ প্রকটতা দেখা যায়।
এর অপর নাম হলাে ফোর-ও-ক্লক উদ্ভিদ (four-o’clock plant) সন্ধ্যামালতীর লাল (Red) ও সাদা (White) ফলযুক্ত গাছের মিলনে উৎপন্ন প্রথম জনুতে সমস্ত গাছ গােলাপি ফুলযুক্ত হয়।
এক্ষেত্রে লাল বা সাদা কোনােটি সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়। না, দ্বিতীয় অপত্য জনুতে ফিনােটাইপ ও জিনােটাইপ উভয়েরই অনুপাত একই হয় অর্থাৎ 1 : 2 : 1।
বিজ্ঞানী গ্যালটন প্রথম সন্ধ্যামালতী উদ্ভিদে অসম্পূর্ণ প্রকটতা পর্যবেক্ষণ করেন।
- লিঙ্গ নির্ধারণ কাকে বলে ? পুরুষ ও স্ত্রী মানবদেহের যৌন ক্রোমোজোম কী?
উত্তর : যে ভুণদশায়, প্রাণী পুরুষ হবে না স্ত্রী হবে তা যে পদ্ধতির দ্বারা নির্ণয় করা যায় তাকে লিঙ্গ নির্ধারণ বলে।।
- মানবদেহে স্বাভাবিক অবস্থায় ডিপ্লয়েড কোশে ক্রোমােজোম সংখ্যা 23 জেনে বা 46টি।
- এর মধ্যে 22 জোড়া অর্থাৎ 44টি অটোজোম বা দেহ ক্রোমােজোম এস, একজোড়া (2টি) যৌন ক্রোমােজোম।
- পুরুষ মানুষের যৌন ক্রোমােজোমগুলি হলাে = X ও Y স্ত্রী মানুষের যৌন ক্রোমােজোমগুলি হলাে = X ও X [দুটি একই রকমের]
যৌন জননের সময় পুরুষদেহে জনন মাতৃকোশ থেকে দুই প্রকার পুংগ্যামেট বা শুক্রাণু উৎপন্ন হয় যার একটি X ক্রোমােজোমযুক্ত অর্থাৎ [22A+ X] এবং অপরটি Y ক্রোমােজোম যুক্ত অর্থাৎ [22A+Y]।
অন্যদিকে মহিলাদের জনন মাতৃকোশ বিভাজিত হয়ে একই প্রকারের স্ত্রীগ্যামেট বা ডিম্বাণু সৃষ্টি হয় যার ক্রোমােজোম সংখ্যা 22A+X হয়।
শুক্রাণু ও ডিম্বাণু মিলিত হলে পুত্র সন্তান না কন্যা সন্তান হবে তা নির্ধারণ করে পুংগ্যামেট বা শুক্রাণু।
যদি X ক্রোমােজোমযুক্ত পুংগ্যামেট ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে তবে কন্যা সন্তান হবে এবং যদি Y ক্রোমােজোমযুক্ত পুংগ্যামেট ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে তবে পুত্র সন্তান হবে।
এখানে পুত্র না কন্যা সন্তান হবে তা সম্পূর্ণ নির্ধারণ করে পুংগ্যামেট তাই এই প্রক্রিয়াকে হেটেরােগ্যামেটিক মেল পদ্ধতি বলে।
- বর্ণান্ধতার কারণ সংক্ষেপে আলােচনা করাে। পিতা বর্ণান্ধ এবং মাতা বর্ণান্ধতার বাহক হলে সন্তানেরা কেমন হবে?
উত্তর : বল্পতার কারণ : মানুষের চোখের রেটিনায় অবস্থিত কোন কোশ বিভিন্ন বর্ণ সনাক্তকরণে সাহায্য করে। কোশ (Cone Cell) তিন প্রকারের হয়। যথা—লাল সংবেদী, সবজ সংবেদী ও নীল সংবেদী যথাক্রমে লাল, সবুজ ও নীল রং শনাক্ত করতে বা চিনতে সাহায্য করে। মানুষের X ক্রোমােজোমের একটি প্রচ্ছন্ন জিনের পরিবর্তনের জন্য চোখের রেটিনায় কোণ কোশে আয়ােডােপসিন প্রােটিনের ত্রুটি দেখা দেয় ফলে লাল, সবুজ এবং কোন কোশ ক্ষেত্রে নীলবর্ণ চিনতে বা শনাক্ত করতে পারে না। নীলবর্ণ সংবেদী রঞ্জক পদার্থের সংশ্লেষ অটোজোম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
বর্ণান্ধ পিতার জিনােটাইপ =XY
বর্ণান্ধতার বাহক মাতার জিনােটাইপ =XX
মেয়েদের মধ্যে 50% বর্ণান্ধ এবং 50% স্বাভাবিক বর্ণান্ধতার বাহক হবে। আবার ছেলের মধ্যে 50% স্বাভাবিক এবং 50% বর্ণান্ধ হবে।
- জেনেটিক কাউন্সেলিং বা জিনগত পরামর্শদান বলতে কী বােঝায় ? জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর গুরুত্ব বা সুবিধা আলােচনা করাে।
উত্তর : যেসব পরিবারে জিনগত বা বংশগত রােগ আছে তাদের বিবাহের আগে জিনগত পরামর্শ দিয়ে কোনাে বংশগত রােগের জন্য দায়ী জিনের অবস্থান এবং পরবর্তী প্রজন্যে ওই রােগের সম্ভাবনা নির্ণয় করার পদ্ধতিকে জেনেটিক কাউন্সেসিং বা জিনগত পরামর্শ দান বলে।
গুরুত্ব : যেসব পরিবারে থ্যালাসেমিয়া মেজর বা মাইনর আছে তাদের।
পরিবারের ব্যক্তিদের জেনেটিক কাউন্সেলিং দরকার 1 যদি দুই পরিবারে থ্যালাসেমিয়া মাইনর থাকে তবে তাদের সন্তানদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রােগ প্রকাশ পাবে এবং রক্তল্পতায় মারা যাবে।
তাই বিয়ের আগে জিনগত পরামর্শ বা জেনেটিক কাউন্সেলিং দরকার।
জিনগত পরামর্শদানের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে রােগের সম্ভাবনা কতটা তা রােগীকে জানানাে যেতে পারে ও জিনগত পরামর্শদানের জন্য প্রথমে রােগীর DNA টেস্ট ও ক্যারিওটাইপ বিশ্লেষণ করা হয় ফলে জিনগত রােগ নির্ণয়ে সুবিধা হয়।
- মটরগাছের উপর মেন্ডেলের কাজ সংক্ষেপে লেখাে। মেন্ডেল একসংকর জনন পরীক্ষা থেকে কী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন।
উত্তর : মটর গাছের উপর মেণ্ডেলের কাজ : মেন্ডেল তার সংকরায়ন পরীক্ষার জন্য মটর গাছ নিয়েছিলেন।
তিনি একাধিক বার স্বপরাগ যােগ ঘটিয়ে সাতটি বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করেন।
মটর গাছের ফুল উভলিঙ্গ হওয়ায় স্বপরাগ যােগী অর্থাৎ স্বনিষেক ঘটে মেণ্ডেল ইতরপরাগ যােগের জন্য উভলিঙ্গ ফুল থেকে পুংস্তবককে অপসারণ করে।
একে ইমাসকুলেশন বলে। এরপর পুংস্তবক অপসারণ করা ফুলটি প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখেন। একে ব্যাগিং বলে।
এইভাবে তিনি স্বপরাগযােগ প্রতিরােধ করেন। পরে পুংস্তবক অপসারণ করা ফুলে ব্রাসের সাহায্যে অন্য কোন পুংস্তবকের পরাগধানী থেকে পরাগবেণু সেই ফুলে স্থানান্তর করেন। পরে এই ফুল থেকে বীজ সৃষ্টি হলে বীজগুলি মাটিতে বপন করে মটরগাছ উৎপন্ন করেন এবং গাছগুলির ফিজোটাপই পর্যবেক্ষণ করে তা লিপিবদ্ধ করেন।
মেণ্ডেলের সিদ্ধান্ত : দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জীবের মধ্যে সংকরায়ন ঘটলে Fজনুতে প্রকট বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাবে। একে প্রকটতার সূত্র বলে। @ কোনাে জীবের একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য এক জনু থেকে অপরজনুতে সঞ্চারিত হওয়ার সময় একত্রিত হলেও বৈশিষ্ট্যগুলি মিশ্রিত হয় না পরবর্তীকালে গ্যামেট গঠনের সময় পৃথক হয়ে যায়। একে পৃথকভবনের সুত্র বলে।।
- অনেকসময় দেখা যায় যে বাবা ও মা উভয়েই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের এক ছেলে বর্ণান্ধ হয়েছে। এটি কীভাবে সম্ভব হয় তা একটি চেকার বাের্ডের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : বর্ণান্ধতা (Colour Blind) হলাে একপ্রকার সেক্স লিংকড জনিত উত্তরাধিকার। এটি X-ক্রোমােজোম দ্বারা বাহিত হয় এবং X-ক্রোমােজোমে অবস্থিত একটি জিনের মিউটেশনের জন্য বর্ণান্ধতা দেখা যায়। এই রােগের জিন X-ক্রোমােজোমে অবস্থিত এবং প্রচ্ছন্ন প্রকৃতির। এটি পুরুষ দেহে হেমিজাইগাস অবস্থায় প্রকাশ পায় কিন্তু স্ত্রীদেহে হােমােজাইগ্যাস অবস্থায় প্রকাশ পায়। স্ত্রীদেহে একটি X-ক্রোমােজোমে এই জিন থাকলে সেই মহিলা বাহক হয়।।
যদি বাবা মা উভয়ই স্বাভাবিক কিন্তু তাদের একটি ছেলে বর্ণান্ধ হয়েছে দেখা যায় তবে নিশ্চিত যে মা স্বাভাবিক হলেও বর্ণান্ধতার বাহক ছিল। এটি চেকার বােরে সাহায্যে দেখানাে হলাে।
X | Y | |
X | XXস্বাভাবিক কন্যা | XY স্বাভাবিক পুত্র |
Xc | XXcবাহক কন্যা | XcY বনধার্ত পুত্র |
তাই স্বাভাবিক বাবা ও মা হলেও মা বাহক হওয়ায় তাদের এক ছেলে বর্ণান্ধ হয়েছে।