উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব: (১৯৪৭-১৯৬৮ খ্রি:) Chapter 8 History WBBSE Madhyamik Class 10

ফর্মে নিজের ফোন নম্বর ভরুন, এবং সহজে সাহায্য পান

সূচনা:

  1. ভারতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর পরিচালনায় নৌবিদ্রোহ(১৯৪৬ খ্রি:),আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম (১৯৪৪-৪৫ খ্রি:), এছাড়া সশস্ত্র  বিপ্লব এবং গণ বিপ্লবের ফলে ব্রিটিশ শক্তির পতনের দিন আগত হয়। ফলে ব্রিটেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করলেও যথেষ্ট শক্তিহীন হয়ে পড়েছিল ।
  2. পৃথক পাকিস্থানের দাবিতে মুসলিম লীগ অন্যত্র মহম্মদ আলি জিম্মার পরিচালনায় অনড় থাকে।
  3. নোয়া খালির দাঙ্গায়ে ও কলকাতায় “প্রত্যক্ষ সংগ্রামে (১৬ই অগাষ্ট, ১৯৪৬ খ্রি:) লীগের উদ্যোগে প্রচুর মানুষের প্রাণ নাশ হয়।
  4. ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী কেমেন্ট এটলি এই পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা পরিবৃত্তি করার সিদ্ধান্ত নেন। 
  5. ভারত বিভাজন ও ক্ষমতা পরিবৃত্তির বিষয়ে বড়লাট লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন(৩ জুন,১৯৪৭ খ্রি:),যা পরিচিত হয় “মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব” অথবা “মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ” নামে। 
  6. ভারতের স্বাধীনতা আইন পাস হর (১৮ই জুলাই ১৯৪৭ খ্রি:),যেই আইন অনুযায়ী ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ১৫ ই আগস্ট ১৯৪৭ খ্রি ও অবিভক্ত ভারত দুটি আলাদা রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে যায় 
    1. ভারত 
    2. পাকিস্তান
  7. পাকিস্তান গড়ে ওঠে বেলুচিস্তান, সিন্ধু, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব,পূর্ব বাংলা ও আসামের শ্রীহট্ট জেলার কিছু অংশ নিয়ে, এবং ভারতের অবশিষ্ট অংশ নিয়ে তৈরি হয় স্বাধীন ভারত। 
  8. স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ প্রধান মন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভ বই প্যাটেল, প্রথম প্রধান মন্টি জহরলাল নেহেরু , প্রথম রাষ্ট্রপতি বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ, প্রথম ভারতীয় গভর্নর জেনেরেল চক্রবর্তী রাজগোপালচারী প্রথম গভর্নর জেনেরেল ছিলেন লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন। 

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক 

ভারতে স্বাধীনতা লাভের পূর্বে(১৯৪৭ খ্রি)ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ শাসন ছিল ভারতের ৬০% ভূখন্ডে ও ৪০% ভূখন্ড স্বায়ত্তশাসিত ছিল, যা দেশীয় রাজ্য নামে পরিচিত।

 ব্রিটিশরা ভারত ছাড়ার আগে এই দেশীয় রাজ্য ছিল ৬০১টির বেশি, যার মধ্যে আকারে বড় ও গুরুত্বপূর্ন ছিল চারটি রাজ্য হায়দ্রাবাদ, জম্মু-কাশ্মীর,বরোদা ও মহীসুর

দুটি বিকল্প রাখা হয় ভারতীয় আইন অনুসারে(১৮ই জুলাই,১৯৪৭ খ্রি:) দেশীয় রাজ্যগুলির সামনে- 

  1. স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখা অথবা ভারত 
  2. পাকিস্তানের যে কোন একটি রাজ্যে যোগ দেওয়া।   

দেশীয় রাজ্যগুলি কে নানা স্বার্থে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা বিশেষ প্রয়োজনীয় ছিল, যেমন- 

  1. সার্বিক নিরাপত্তা,অর্থনৈতিক উন্নতি ও ভারতের অবিভক্ত জাতীয়তাবাদ। 
  2. ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্য গউকির স্বাধীন অস্তিত্ব গ্রাহ্য করা হবেনা তা স্বাধীনতার পূর্বেই গান্ধীজী ও জহরলাল নেহেরু দ্বারা জানিয়ে দেওয়া হয়। 
  3. কংগ্রেস দ্বারা গঠিত “দেশীয় রাজ্য দপ্তর” ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে, যার দায়িত্ব দেওয়া হয় “লৌহ মানব” নামে পরিচিত সর্দার বল্লব ভাই প্যাটেল (১৮৭৫-১৯৫০খ্রি:)কে। 

দেশীয় রাজ্য গুলোকে নানা কারণে অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হয়ে ওঠে , যেমন – 

  1. লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন এর সহযোগিতা, 
  2. প্যাটেলের দৃঢ় মনোভাব 
  3. ভি.পি.মেননের কূট কৌশল। 
  • স্বাধীনতা লাভের ৩ সপ্তাহের মধ্যে প্রথম সরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার প্যাটেলের কঠোর মনোভাব,কূটকৌশল , সামরিক অভিযান চালানোর উদ্যোগ এছাড়া রাজ্যগুলিতে প্রজা বিদ্রোহের আশঙ্কায় অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য “ভারত-ভুক্তির দলিল” বা “ইন্সট্রুমেনট অব অ্যাকসেশন” এ সাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। 
  • ২১৬ টি দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগদানকারী আশেপাশের প্রদেশগুলির সাথে সঙ্গবদ্ধ হয়ে ২৭৫টি দেশীয় রাজ্য ৫টি আলাদা প্রদেশে পরিণত হয় এছাড়া ৭ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সঙ্গে ৬১টি দেশীয় রাজ্যকে যুক্ত করা হয় । 
  • কিন্তু ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করে জুনাগড় , কাশ্মীর ও হাদ্রাবাদ। প্রজাবিদ্রোহ ছড়িয়ে পরে ৮০% শতাংশ হিন্দু-অধ্যুষিত জুনাগড়ের  মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চাই ।
  • তবে কাশ্মীর ও হাদ্রাবাদ নিয়ে চরম সমস্যা তৈরি হলেও,গণভোটে জুনাগড়ের মানুষ (১৯৪৮ খ্রি:)ভারতে যোগদানের পক্ষে ভোট দিলে রাজ্যটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত(১৯৪৯ খ্রি:)হয়। 
  • বেশিরভাগ দেশীয় রাজ্য ভারতে যুক্ত হওয়ার পর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের নিজস্ব সংবিধান রচিত হয় যা সংবিধান দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস নামে পালন করা হয় এবং সস্বাধীন সার্বভৌম  গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে সেদিন থেকে ভারত আত্মপ্রকাশ করে। ভারতের চারটি শ্রেণী ছিল এই সময়। যেমন-   

ক: রাজা ও এই ধরনের শাসক দ্বারা শাসিত রাজ্য –   হায়দ্রাবাদ,মধ্যভারত,জম্মু ও কাশ্মীর,রাজস্থান,                              সৌরাষ্ট্র ও ত্রিবানকুর-কোচিন,মহীসুর,পাতিয়াল ও পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন(Pepsu)।

খ: গভর্নর শাসিত রাজ্য –  বোম্বাই,মাদ্রাস ও পাঞ্জাব,আসম,বিহার,উত্তরপ্রদেশ,মধ্যপ্রদেশ,পশ্চিমবঙ্গ,    উড়িষ্যা। 

গ : কেন্দ্রশাসিত রাজ্য –   আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

ঘ : কমিশনার শাসিত রাজ্য–   ভুপাল, হিমাচল-প্রদেশ,বিলাসপুর,আজমির,মণিপুর,দিল্লি,কুর্গ,কচ্ছ, ত্রিপুরা ও বিন্ধ প্রদেশ (মোট ১০টি)

১৯৪৭ এর পর উদবাস্তু  সমস্যা 

  • ভারত ও পাকিস্তানের বিপুল মানুষ তাদের ভিটে মাটি ছাড়তে বাধ্য হয় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশ ভাগের পরে নানা দাঙ্গা , লুণ্ঠন , অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ,নির্যাতন প্রভৃতি ঘটে, আর এই ঘটনা ইতিহাসে পরিচিত হয় “বৃহতম গান প্রচারণ নামে”। 
  • পরবর্তীকালে বহু মানুষ দেশ ছাড়েন  ও ১ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পরে। 
  • বহু পরিবার ভেঙে যায় এছাড়া ট্রেনে বা গরুর গাড়িতে, পায়ে হেটে, নদী পারা পারের সময় বহু মানুষ প্রাণ হারায়ে । 
  • ৫০ হাজার অবৈধ শিশুর জন্ম হয় কারণ ১ লক্ষ নারী ধর্ষিত হন। 
  • নিজেদের ধর্ম ও জীবন রক্ষার তাগিদে পূর্ব পাকিস্তানের বহু মানুষ পশ্চিম বঙ্গ , অসম, ত্রিপুরা নানান রাজ্যে আশ্রয় নেয়, তেমনি বিপুল পরিমাণে  সংখালঘু শিখ ও হিন্দু ভারতের পূর্ব পাঞ্জাব ও নিকটবর্তী রাজ্যে আশ্রয় নেয়। 
  • যদিও ভারতে আগত উদ্বাস্তুর পরিমাণ পাকিস্তানে চলে যাওয়া মানুষের থেকে অনেক বেশি, যার ঢেউ প্রধানত দেখতে পাওয়া  যায় পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাঞ্জাবে। 
  • উদ্বাস্তুর সমস্যা এই দেশে কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে আসে কারণ স্বাধীন ভারতের উদবাস্তুর আর্থিক দেবার বহন করা ছিল অত্যন্ত কঠিন।

উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ ও বিতর্ক :

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার গুলি কে সামাজিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যায়ে ফেলে দেয় পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা লক্ষ লক্ষ উদবাস্তু। তাই নানা চিন্তা ভাবনা ও মত বিরোধ  শুরু হয় উদবাস্তু সমস্যা কে কেন্দ্র করে।  যেমন 

  • ভারত অভিযোগ আনে , পাকিস্তান সেখানকার সংখ্য়া লঘু শিখ ও হিন্দুদের দেশ ছাড়া করতে বাধ্য করে, ফলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আক চুক্তি হয় যা “নেহেরু-লিয়াকত চুক্তি নামে পরিচিত”(১৯৫০খ্রি:)।

যদিও উদ্বাস্তু সমস্যা না মেনে  প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু দেশভাগের পরের ৫ বছর উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের দ্বারা সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন,তাই এই সময় ক বলা হয় “পুনর্বাসনের যুগ”। 

  • সম্পত্তি ও বিনিময়ের সিদ্ধান্ত পাঞ্জাবীর ক্ষেত্রে নেওয়া হলেও বাংলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার তেমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি,বরং বাঙালি উদ্বাস্তু দের ভারত সরকার পূর্ব পাকিস্তানে পাঠাতে বেশি উদ্যোগী ছিলেন। 
  • পূর্ব বঙ্গ থকে হিন্দুরা ক্রমাগত আসতে থাকলে,নেহেরু বিব্রত হয়ে পড়েন, যা গবেষক প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী লেখা থেকে  জানা যায়।
  • নেহেরুর পশ্চিমবঙ্গ,ও পূর্ব পাঞ্জাবের উদবাস্তুদের জননীয় আলাদা মনোভাবের জন্য সমস্যা সৃষ্টি হয়।বিভিন্ন গ্রন্থে এই বিতর্ক তথ্য সমেত দেখানো আছে, যেমন-  
  • প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী ‘দ্যা মার্জিনাল মেন’, রণজিৎ রায়ের ‘ধংসের পথে পশ্চিম বঙ্গ’, ও উদ্বাস্তু কমিশনার 
  • শ্রীহীরণ্ময় বন্দোপাধ্যায়ের ‘উদবাস্তু’। 

এর ফলে পাঞ্জাবের উদবাস্তুর সমস্যা দ্রুত সমাধান হলেও, বাঙালি উদবাস্তুর সমস্যা জটিল হয়ে পরে ও অবস্থা আরো ভয়ংকর আকার নেয়।

উদবাস্তুরা নদীয়া জেলার কুপার্স পি.এল.হোম, চাঁদমারি পি.এল.হোম সহ পশ্চিমবঙ্গের নানান উদ্বাস্তু শিবিরে, শিয়ালদা ,হাওড়া স্টেশনে, ফুটপাতে, খোলা আকাশের নিচে, অশস্তিকর পরিবেশে, অনাহারে দিন কাটতে বাধ্য হয়। 

উড়িষ্যা-মধ্যপ্রদেশের সীমান্ত সংলগ্ন দন্ডকারণ্যয়ের রুক্ষ,প্রতিকূল পরিবেশে ও সুদূর আন্দামানে অনেক উদবাস্তুদের পুনর্বাসনে পাঠান হয় , আর নামমাত্র

পুনর্বাসনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকে। 

দেশভাগ সম্পর্কিত স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনী:

স্বাভাবিক ভাবেই উদবাস্তুদের মনে ও জীবনে গভীর ভাবে যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব ফেলে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগ, পূর্ব পুরুষের ভিটে মাটি ত্যাগ করে আসা ও নানান ঘটনা, যা ফুটে ওঠে নানা লেখকের আত্মজীবনী, সাহিত্য ও স্মৃতিকথার মধ্যে দিয়ে।

  • হিন্দু-মুসুলমান সম্পর্কের টানাপোড়েন, 
  • সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা
  • ,১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগ,
  • ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের দাঙ্গা সকল লেখার ছত্রে ছত্রে ধরা পড়ে, যেমন –
  • হীরণ্ময় বন্দোপাধ্যায়ের ‘উদবাস্তু’,
  •  জ্যোতির্ময়ী দেবীর ‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা’, চৌধুরী খালীকুজ্জামানের ‘পাথ ওয়ে টু পাকিস্তান’,মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতার স্বাদ’। 

বাংলার নিম্ন বর্গের মানুষ স্বপ্ন দেখেছে আবু ইসহাকের “সূর্যদিঘীল বাড়ি” উপন্যাসে যে,চালের দাম কমবে দেশ স্বাধীন হলে, তারা  খেয়ে পড়ে বাচবে কিন্ত মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে, উদবাস্তু হতে হয় দেশভাগের পর। দেশভাগের পড়ে নিলুর মামা বাড়ি অন্য দেশে পড়ে.

শঙ্খ ঘোষের উপন্যাস ‘সুপারিবনের সারি’-তে দেখা যায়, যার মানে নিলু না বুঝলেও খারাপ কিছুর ইঙ্গিত সে পায়। ‘যাপিত জীবন ও গায়েত্রী সন্ধ্যা’ সেলিনা হোসেন এর লেখায়ে দেশভাগের আঘাত ফুটে উঠেছে।কালীপ্রসাদ মুখপাধ্যায়ের “শিকড়ের সন্ধান”, মণিকুন্তলা সেন-এর “সেদিনের কথা”,দক্ষিণরঞ্জন বসুর “ছেড়ে আসা গ্রাম” সকল বইয়ে জন্ম ভূমির উপর আক মায়াবী টান ফুটে উঠেছে।

দেশভাগের অনিবার্য ঘাত ফুটে উঠেছে সাম্প্রতিক প্রকাশিত হাসান অজিবুল হকের “আগুন পাখি” উপন্যাসে। অতীন বন্দোপাধ্যায়ের “নীলকন্ঠ পাখির খোজে”,সুনীল গঙ্গপাধ্যায়ের “অর্ধেক জীবন”, প্রফুল্ল রায়ের “কেয়া পাতার নৌকা”,মহাশ্বেতা দেবীর “আধার মানিক” গুরুত্তযপূর্ণ উপন্যাস দেশভাগের প্রেক্ষাপটে।

বাঙালি উদবাস্তুর চরম দুর্দিনের চিত্র ফুটে ওঠে ঋত্বিক ঘটকের “সুবর্ণরেখা”,“মেঘে ঢাকা তারা”,সত্যজিৎ রায়ের “অশনি সংকেত”,মৃণাল সেন-এর “আকালের সন্ধানে”, এবং এই সকল আত্মজীবনী,স্মৃতিকথা, চলচিত্রে মানুষের পাশে দাড়ানোর কথাও প্রকাশ পেয়েছে।এই সংকটকীর্ণ কালেও সাহিত্যে প্রতিফলিত হয় মূল্যবোধ ও মানবিকতার। 

  • পাঞ্জাবি ভাষায়ে কুলবন্ত সিং বিরক,ভীশ্ব সাহানী ,
  • এনগরেজি ভাষায় খুশবন্ত সিং,সালমান রুশদী,ড: ভীমরাও আম্বেদকর, আর.কে.নারায়ণ,উর্বশী বুটলিয়া, 
  • হিন্দি ভাষায় যশপাল,রাঙেয় রাঘ,উরডুবশে কৃষাণ চন্দর,সাদাত হাসান মান্ট,মুন্সী প্রেমচাঁদ প্রমুখ তাদের লেখা  দেশভাগের দুর্দশার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। 
  • মুন্সী প্রেমচাঁদের “গোদান”,সাদাত হাসান মান্ট-র “টোবা টেক সিং”,
  • খুশবন্ত সিং-এর “ট্রেন টু পাকিস্তান”, 
  • ভীশ্ব সাহানীর “তমস”, 
  • সালমান রুশদীর “মিড নাইট চিলড্রেন”, 
  • ড: ভীমরাও আম্বেদকর-এর “পাকিস্তান অর পার্টিশন অব ইন্ডিয়া”, , 
  • আর.কে.নারায়ণ-এর “ওয়েটিং ফর দা মহাত্মা”, 
  • উর্বশী বুটলিয়ার “আদর সাইড অব দা সাইলেন্স-ভয়েসেস ফ্রম দা পার্টিশন অব ইন্ডিয়া” নানা বইতে দেশভাগের চিত্র আকা হয়েছে।

ভারতে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ ও বিতর্ক

সংস্কৃতি ও ভাষা কে গুরুত্ব না দিয়ে স্বাধীনতা লাভের পর রাজ্যের সীমরেখা ঠিক করার ফলে আলাদা ভাষার মানুষ একই রাজ্যের বাসিন্দা হওয়াএ সাংস্কৃতিক সংকট তৈরি হয়। 

যে মাতৃ ভাষা দ্বারা যোগাযোগ নিবিড় হয়, সেই নিবিড়তায়ে বাধা হয় রাজ্যের সীমারেখা। ফলে ভাষা অনুযায়ী পুনর্গঠন করা হবে স্বাধীনতা লাভের পর নেতৃবৃন্দের কথা উপর নির্ভর করে তাই আশা করা হয়েছিল।

  • নতুন করে বিতর্ক দেখা দেয় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার পরে, ভারতের অঙ্গরাজ্য ও যোগ দেওয়া দেশীয় রাজ্যগুলি ভাষা অনুযায়ী নাকি সীমানা অনুযায়ী গঠন হবে তাই নিয়ে। 
  • বিচারক এস. কে দর-এর নেতৃত্বে ভারতের গণপরিষদ ১৯৪৮ খ্রি: “ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন” গঠন করা হয়,যার ফলে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনে বাধা সৃষ্টি হয়। 
  • দেশের জাতীয় ঐক্য ও প্রশাসনিক কাজ-কর্ম নষ্ট হবে যদি ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠন হয়,কমিশনের মতে।
  • অন্যদিকে দেশের নানা প্রান্তে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের জন্য আন্দোলন দানা বাধতে থাকে, যা  জোরালো হয় দক্ষিণ ভারতে। 
  • ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে জহরলাল নেহেরু, বল্লববাই প্যাটেল ও পট্টভি সিতরমাইয়া কে নিয়ে ক্ষোভের  আঁচ কমানোর জন্য কংগ্রেস একটি কমিটি নিয়োগ করে,যা জেভিপি কমিটি নামে পরিচিত। এটিও ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনে অমত করে।যার ফলে আন্দোলন ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের র শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

পত্তি শ্রীরমালু (১৯০১-৫২ খ্রি:) মাদ্রাস প্রদেশে ভাষাভিত্তিক অঞ্চল গঠনের দাবিতে ৫৮ দিন অনশন করে মারা যান(১৯৫২ খ্রি:), ফলে ৩ দিন ধরে তেলেগু (অন্ধ্রপ্রদেশ)-তামিল দের মধ্যে দাঙ্গা, হাঙ্গামা, হরতাল এর ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এর বাইরে চলে যায়। 

মাদ্রাস প্রদেশের তেলেগু ভাষাভাষী অঞ্চল একত্রিত করে আলাদা অন্ধ্রপ্রদেশ গঠন করা হয় কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা, ও তামিল ভাষীদের  জননীয় গঠন হয় তামিলনাড়ু।এর থেকে উৎসাহিত হয়ে অন্য ভাষাগোষ্ঠীও আলাদা রাজ্যের দাবি জানায়।

ভাষার ভিত্তিতে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠিত হওয়ার পরেও নানা সময় আলাদা রাজ্য পুনর্গঠিত হয় , যেমন-

  1. ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাই আন্দোলনের পর কেন্দ্রীয় সরকার,মিম্বাই রাজ্য ভেঙে আলাদা তৈরি হয় মহারাষ্ট্র ও গুজরাট। গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদ ও মহারাষ্ট্র রাজধানী মুম্বাই।কেরালা গঠিত হয় মালাবার, ত্রিবাঙ্কুর ও কোচিন নিয়ে। 
  2. অসম রাজ্যকে ভেঙে ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয় ১৯৫৭ থেকে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, যেগুলি হল-নাগাল্যান্ড,মেঘালয়,মিজোরাম, ও উত্তর পূর্ব সিমান্ত অঞ্চল(NEFA)।উত্তর পূর্ব সিমান্ত অঞ্চলের নতুন নাম হয় ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে “অরুণাচল প্রদেশ”। 
  3. গোয়া, দমন , দিউ প্রভৃতি ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগীজ উপনিবেশ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে ভারতের সঙ্গে মিলিত হয়। 
  4. পূর্ণাঙ রাজ্যের মর্যাদা পায়ে নাগাল্যান্ড ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে, হিমাচল প্রদেশ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে। 
  5. PEPSU প্রদেশ ভেঙে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশ গঠন করা হয়।

ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের ফলে আন্তরাজ্য সমস্যা বেড়ে ওঠে , যেমন-নদীর গতিপথ,জলবণ্টন প্রভৃতি।যদিও ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের ফলে জাতীয় সংহতি আর নিবিড় হয় রজনী কোঠারি ও বিপিনচন্দ্র প্রমুখের মতে। 

error: Content is protected !!
Scroll to Top
×

এই ওয়েবসাইটের সব কনটেন্ট এক্সেস করুন শুধু একটা মেম্বারশীপের সাথে।  আজকেই ক্লিক করুন নিচে রেজিস্টার করার জন্যে।  অসুবিধে হলে হোয়াটস্যাপ করুন আমাদের  +919804282819