বিশ শতকে ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন History WBBSE Madhyamik Class 10

Here you will learn the basics of বিশ শতকে ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন History WBBSE Madhyamik Class 10 Chapter 5 History Itihas WBBSE Madhyamik in a simple language it is for Bengali medium students who are studying under West Bengal Board of Secondary Education and preparing for their Madhyamik exam (Class 10 WBBSE) Here you will find all necessary and important WBBSE Madhyamik Suggestions class 10, notes, solved sample question paper in Bangla along with video lectures from expert teachers

এখন সহজে পাস্ করুন পরীক্ষা skillyogi'র নোটস, সাজেশন, সল্ভড পেপার এবং ভিডিও লেকচারের মাধ্যমে।

ফর্মে নিজের ফোন নম্বর ভরুন, এবং সহজে সাহায্য পান

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলন

উনিশ শতকের শেষের দিকে ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদী আলন্দোনে নারী সমাজ বিশেষ ভুমিকা গ্রহন করেছিলো । বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন , অহিংস অসহযোগ আন্দোলন , ভারত ছাড়ো আন্দোলন , আইন অমান্য আন্দলনের সময় নারীরা বিপুল উদ্যোগে ঝাপিয়ে পড়েছিল ।

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে  নারীদের ভূমিকা –  

সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনকালে লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে বাংলা তথা ভারতে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত হয় । নারীরাও ঘরের কোণ ছেড়ে বেরিয়ে এসে এই আন্দোলনে দলে দলে অংশ গ্রহণ করেন ।  

  1. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের দিন প্রভাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে হিন্দু মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বন্ধন হিসেবে যে রাখী বন্ধন উৎসব অনুষ্ঠিত হয় তাতে প্রবল উৎসাহে মেয়েরা অংশ গ্রহণ করেন এবং কলকাতা সহ গ্রামে-গঞ্জের মন্দিরে, স্নানের ঘাটে সর্বত্র এই উৎসব ছড়িয়ে দেয় ।
  2.  রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর আহ্বানে যে ‘অরন্ধন উপবাস দিবস‘ পালিত হয় তাতেও মেয়েরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় । 
  3. বঙ্গভঙ্গের দিন বিকালে দুই বাংলার ঐক্যের প্রতীক রূপে কলকাতার আপার সার্কুলার রোডে যে মিলন মন্দিরের ভিত্তি স্থাপিত হয় তাতেও মেয়েরা শামিল হয় ।
  4. স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম ধারা বয়কট আন্দোলনে নারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেয় । 
  5. বিদেশী শাড়ি, চুড়ি সহ রান্নাঘরে বিলাতি লবণ, মসলা ও বিদেশী ওষুধের ব্যবহার বন্ধ করে, বিদেশি শিক্ষালয় ত্যাগ করে, বিদেশী পণ্যাগারের সামনে পিকেটিং -এ অংশ নিয়ে নারীরা প্রতিবাদ আন্দোলনে শামিল হয় । 
  6. কলকাতায় আয়োজিত এক মহিলা সভায় নাটোরের মহারানি বিদেশি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান । 
  7. নদীয়ার মঙ্গলগঞ্জের জমিদার লক্ষণচন্দ্র আসের বিধবাপত্নী, জলপাইগুড়িতে অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, ময়মনসিংহে পুষ্পলতা গুপ্তা, কাশীতে সুশীলা বসু, কলকাতায় হেমাঙ্গিনী দাস প্রমূখ নারী বিদেশি পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানান ।
  8. বিদেশী দ্রব্য বর্জনের পাশাপাশি নারীরা স্বদেশী দ্রব্য তৈরি ও ব্যবহারের আহ্বান জানায় । স্বদেশী দ্রব্যের ব্যবহার বাড়াতে  স্থাপন করেন –
  • স্বর্ণকুমারী দেবী ‘সখী সমিতি’ 
  • সরলাদেবী চৌধুরানী ‘লক্ষীরভাণ্ডার’ 
  1. নারীদের দ্বারা সম্পাদিত বিভিন্ন পত্রিকা  বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়  যেমন— 
  • সরলাদেবী চৌধুরানী সম্পাদিত ‘ভারতী’ 
  • সরযুবালা সম্পাদিত ‘ভারত মহিলা’। 
  1. স্বদেশি আন্দোলন চলাকালীন মুসলিম নারী খায়রুন্নেসা ‘নবনূর’ পত্রিকায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ‘স্বদেশানুরাগ’ নামে একটি কবিতা লিখে বাংলার নারীসমাজকে স্বাদেশিকতাবোধে উদ্বুদ্ধ করেন । 

চারণ কবি মুকুন্দ দাস বাংলার নারী সমাজের উদ্দেশ্যে গান বাঁধেন “পরো না রেশমি চুড়ি বঙ্গনারী কভু হাতে আর পরো না ।”

  1. অবলা বসুর উদ্যোগে মেরী কার্পেন্টার হলে প্রায় এক হাজার মহিলা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশী শপথ নেয় । 
  2. মহিলারা স্বদেশি পণ্যের ব্যাপক ব্যবহার করার পাশাপাশি স্বদেশি তহবিলে টাকা পয়সা এমনকি সোনার গয়না পর্যন্ত দান করেন । 
  3. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন— 
  • সরলাদেবী চৌধুরানী, 
  • কুমুদিনী বসু, 
  • সুবালা আচার্য, 
  • হেমাঙ্গিনী দাস, 
  • নির্মালা সরকার, 
  • লীলাবতী মিত্র প্রমুখরা । 

কলকাতার বাইরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন— 

  • মুর্শিদাবাদের গিরিজা সুন্দরী, 
  • বরিশালের সরোজিনী দেবী, 
  • বীরভূমের দু’কড়িবালা দেবী, 
  • খুলনার লাবণ্যপ্রভা দত্ত, ঢাকার ব্রহ্মময়ী সেন ।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে  নারীদের ভূমিকা 

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড প্রভৃতির প্রতিবাদে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলে নারীসমাজও এই আন্দোলনে যোগদান করে । 

 

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে প্রাথমিকভাবে জাতীয় কংগ্রেসের তরফ থেকে নারীদের ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দিয়ে বলা হয় নারীসমাজ কেবলমাত্র বিদেশি দ্রব্য বয়্কট ও স্বদেশি দ্রব্য গ্রহণে অংশ গ্রহণ করবেন । 

 

নারীসমাজ জাতীয় কংগ্রেসের এই ঘোষণায় সন্তুষ্ট না হয়ে জাতীয় আন্দোলনে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণের দাবি জানিয়ে দেশের নানা প্রান্তে সভা, শোভাযাত্রা ও পিকেটিং -এ যোগদান করে । এমনকি নারীরা স্বেচ্ছায় কারাবরণও করেন ।

 

  1.  অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন চলাকালীন বিলাতি পণ্য বয়কট, বিলাতি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং, মিছিল ও মিটিং -এ অংশ নিয়ে হিন্দু মহিলাদের সঙ্গে মুসলমান মহিলারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ।
  2. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স অব ওয়েলস ভারত সফরে এলে বোম্বাই -এ হাজার হাজার মহিলারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন । 
  3. চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তীদেবী দাশ, ভাইঝি সুনীতি দেবী দাশ, বোন্ উর্মিলা দেবী দাশ প্রমুখ চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে কলকাতার রাস্তায় প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখিয়ে কারাবরণ করেন ।
  4.  ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে নেলী সেনগুপ্তের নেতৃত্বে স্টিমার ধর্মঘট হয় । 
  5. জাতীয় কংগ্রেস প্রস্তাবিত ‘তিলক স্মৃতি তহবিল’ -এ গ্রামের মহিলারা নিজেদের অর্থ এবং গহনা দান করে আন্দোলনকে সফল করার উদ্যোগ নেন । 
  6. তারা চরকায় সুতা কেটে এবং কাপড় বুনে দেশাত্মবোধের নিদর্শন তুলে ধরেন ।
  7.  উর্মিলা দেবী দাশের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নারী কর্মমন্দির’ ।
  8.  রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন অহিংস অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে স্বাদেশিকতার আদর্শ প্রচার করেন ।

আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা  

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশবিরোধী আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয় গান্ধিজির নেতৃত্বে । আন্দোলনে বিপুল সংখ্যক নারী সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলেন। 

  1. আন্দোলনে  আন্দলনের সক্রিও সদস্যারা ছিলেন 
  • গান্ধিজির স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধি, 
  • কমলা নেহরু, 
  • স্বরূপরানি নেহরু, 
  • সরোজিনী নাইডু, 
  • বাসন্তী দেবী, 
  • ঊর্মিলা দেবী, 
  • সরলাবালা দেবী, 
  • নেলী সেনগুপ্তা,
  • লীলা রায় প্রমুখ । 
  1. বোম্বাই, দিল্লি, কলকাতা, এলাহাবাদ, লখনউ, লাহোর প্রভৃতি শহরে বহু নারী আন্দোলন গঠিত হয় এমনকি কলকাতায় ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। 
  2. ভারতের বুলবুল’ নামে পরিচিত সরোজিনী নাইডু ‘রাষ্ট্রীয় স্ত্রী-সংঘ’ গঠন করেন। 
  3. বাংলার শিক্ষিত নারীদের পাশাপাশি  কৃষক পরিবারের নারীরাও আন্দোলনে অংশ নেন। 
  4. ১৯৩০ সালের ৬ই এপ্রিল ভারতীয জাতীয় কংগ্রেস গান্ধীজীর নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ডান্ডির সমুদ্র উপকূলে লবণ আইন ভঙ্গ করে গান্ধীজী স্বহস্তে লবণ তৈরি করে ভারতব্যাপী আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন। 
  5. অসহযোগ আন্দোলনের চেয়ে আইন অমান্য আন্দোলনের সময় (১৯৩০৩৪খ্রি.) নারীর যোগদান ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। 
  6. গান্ধিজি লবণকে আইন অমান্যের বিষয়ে পরিণত করে নারীদের কাছে এই আন্দোলন আকর্ষণীয় করে তুলতে চেয়েছিলেন। 

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা 

 ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে  গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো’ বা আগস্ট আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে দেশের অগণিত নারী প্রবল উৎসাহে অংশগ্রহণের ফলে  আন্দোলন খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে।  

  1. ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলেন
  • নন্দিতা কৃপালনী, 
  • রানি চন্দ্র, 
  • এলা দত্ত, 
  • সুনীতা সেন, 
  • লাবণ্যপ্রভা দত্ত,
  • মায়া ঘোষ প্রমুখ
  1. আসামে ১৩ বছরের কিশোরী কনকলতা বড়ুয়া, পাঞ্জাবের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী ফুকোননী, ঊষা মেহতা প্রমুখ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। 
  2. 1942 খ্রিস্টাব্দের 9 আগস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে ভারতের হাজার হাজার নারী এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে থাকে। 
  3. 9 আগস্ট ভোর রাতেই কংগ্রেস কার্যনির্বাহক কমিটির সকল সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। 
  4. একমাত্র নারীদের মধ্যে সরোজিনী নাইডু কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। 
  5. ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের যোগদান আইন অমান্য আন্দোলনের মতো পরিকল্পিত ও কর্মসূচি ভিত্তিক না হলেও নারিরা বিভিন্নভাবে এই আন্দলোনে যোগদানকরেছিল।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা 

বিশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে । সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজ পরোক্ষভাবে অংশ নিতে শুরু করে । 

  1. সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বিধবা ভগিনী সরোজিনী দেবী বরিশালে বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী আদর্শ প্রচার করেন । 
  2. যুগান্তর দলের যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের দিদি বিনোদিনী দেবী ও অনুশীলন সমিতির জীবনতারা হালদারের মা রাধারানি দেবী সশস্ত্র বিপ্লবের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানান । 
  3. বাঙালি বীরাঙ্গনারা কখনও বিপ্লবীদের গোপনে গৃহে আশ্রয় দিয়ে, কখনও গোপনে বিপ্লবীদের অস্ত্র লুকিয়ে রেখে, কখনও বিপ্লবীদের অস্ত্র গোপনে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে, কখনও বা পুলিশকে বিভ্রান্ত করে বিপ্লবীদের পালাতে সাহায্য করে পরোক্ষভাবে বৈপ্লবিক কাজে অংশ গ্রহণ করেন । 
  4. সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সমাজের উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত, শিক্ষিত, অশিক্ষিত পরিবারগুলির নারীরা 
  5. একযোগে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন । প্রথমদিকে নারীরা প্রত্যক্ষভাবে বিপ্লবী কাজে যোগ না দিয়ে তারা বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়ে, অস্ত্র সরবরাহ করে, গোপন স্থানে সংবাদ পৌঁছে দিয়ে, পুলিশকে বিভ্রান্ত করে বিপ্লবীদের পালাতে সাহায্য করে পরোক্ষভাবে বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন । 
  6. বিপ্লবীরা যখন দেশমাতার মুক্তির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছেন তখন বহু নারী নিজেদের টাকা-পয়সা, সোনার গহনা প্রভৃতি দিয়ে পরোক্ষভাবে বৈপ্লবিক আন্দোলনে সহায়তা করেন । পরবর্তীকালে নারীরা সরাসরি বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় ।

 

  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার- পরাধীন ভারতের এক উল্লেখ যোগ্য নারী বিপ্লবির নাম প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। 

১৯১১ সালে চট্টগ্রামের ধলঘাটে তিনি জন্ম গ্রহন করেন । 

  • তিনি আই. এ. পরার সময় ‘ দীপালি’ সঙ্ঘের সাথে যুক্ত হন । এছারাও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনেও তিনি গুরুত্বাপুর্ন ভুমিকা পালন করেন । 
  • ১৯৩০ এর চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সময় প্রীতিলতার বয়স কুড়ি।
  •  সূর্য সেন, গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, অম্বিকা চক্রবর্তী, আনন্দ প্রসাদ গুপ্ত, ত্রিপুরা সেন, কল্পনা দত্ত, হিমাংশু সেন, বিনোদ বিহারী চৌধুরী, সুবোধ রায় এবং মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে প্রীতিলতা এবং দলের অন্যান্যরা ঠিক করলেন ব্রিটিশদের অস্ত্রাগার লুট করবেন তাঁরা, টেলিফোন আর টেলিগ্রাফ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবেন। 
  • অস্ত্রাগার লুট করতে যদিও সফল হননি তাঁরা, তবে টেলিফোন আর টেলিগ্রাফের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা গেছিল।

 কল্পনা দত্ত – 

  • ১৯২০ ‘র দশকের আরেকজন নারী বিপ্লবি ছিলেন কল্পনা দত্ত ।
  • কলকাতার বেথুন কলেজে পরার সময় তিনি ‘ ছাত্রীসঙ্ঘের ‘ সাথে যুক্ত হন ।
  • এরপর ১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্য সেনের ‘ ইন্ডিয়ান রিপাবলিক আর্মি ‘ র চট্টগ্রাম শাখায় যোগ দেন ।
  • সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে কল্পনা দত্ত যোশী একটি চিরস্মরণীয় নাম। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অসীম সাহস ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চির জাগরুক হয়ে থাকবেন। 
  • বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি ছিলেন সমব্যথী আর তাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কল্পনা দত্ত মুক্তিুদ্ধে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। 
  • তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে এসেছিলেন দু’বার ১৯৭৩ ও ১৯৭৫ সালে। শেষবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বিশেষ আমন্ত্রণে এসেছিলেন। 
  •  তাঁর লেখা “চট্টগ্রাম অভ্যুথ্যান ‘ গ্রন্থটি ঐতিহাসিক দলিল রুপে গন্য হয় ।

আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনী  

  1. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের পাঁচটি ব্রিগেডের অন্যতম ‘ঝাঁসির রানি ব্রিগেড’ বা ঝাঁসি বাহিনী । | এটিই ছিল এশিয়ার প্রথম নারী বাহিনীর।
  2.  সিঙ্গাপুরে কর্মরত চিকিৎসক ড. লক্ষ্মী স্বামীনাথন  নেতাজির ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের কর্ম ত্যাগ করে  ঝাসি বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি পরিচিত হন ক্যাপটেন লক্ষ্মী নামে | 
  3. বাহিনীর প্রধান ক্যাপটেন লক্ষ্মী ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে ব্রিটিশ সেনার হাতে গ্রেপ্তার হন। । 
  4. মুক্তি সংগ্রামে সার্বিক যোগদান, মেয়েদের বাদ দিয়ে তা সম্ভব নয়। তিন দিন পরে গঠিত হল নারী বাহিনী। 
  5. নেতাজি দেখতে আসবেন খবর পেয়ে জনা কুড়ি মেয়েকে তিন দিন ধরে গার্ড অব অনার দেওয়ার তালিম দিলেন লক্ষ্মী। 
  6. শাড়ির আঁচল কোমরে জড়ানো, হাতে মস্ত ভারী রাইফেল, গার্ড অব অনার দিলেন।

বিশ শতকের ডারতে বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলন

উনিশ শতকের শেষার্ধে ভারতে আধুনিক শিক্ষার যথেষ্ট প্রসার ঘটলে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয় এবং দেশমাতার মুক্তির জন্য উদ্বিগ্ন  হয়ে ওঠে। 

 

এই সময় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন, অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ছাত্র আন্দোলন অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে।

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে  ছাত্রদের ভূমিকা  

বাংলার মানুষদের ব্রিটিশ বিরোধিতাকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা ঘোষণা করে বলা হয়, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর থেকে  আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হবে । 

 

এর প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী যে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে ওঠে তাতে বাংলা তথা ভারতের ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে ।

  1. হাজার হাজার ছাত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারি স্কুলকলেজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগদান করে । এসময়ে কোনো ছাত্র সংগঠন গড়ে না ওঠায় জাতীয় নেতাদের আহ্বানেই ছাত্ররা আন্দোলনে যোগদান করে । 
  2. বিভিন্ন ছাত্র ও যুবনেতা ছাত্রদের সংগঠিত করে আন্দোলনে শামিল করেন ।
  3.  জাতীয় শিক্ষানীতির প্রস্তাবক সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কর্তৃক ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘ডন সোসাইটি’, 
  4. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৪র্থ নভেম্বর শচীন্দ্রপ্রাসাদ বসুর প্রতিষ্ঠিত ‘অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি’ প্রভৃতি ছাত্রদের আন্দোলনে শামিল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় । 
  5. কলকাতার রিপন কলেজে (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) এক ছাত্র সমাবেশে ১৭ই জুলাই ছাত্রসমাজ বয়কটের শপথ নেয় । 
  6. কলকাতার বিভিন্ন কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে ৩১শে জুলাই ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’ গড়ে তোলে 
  7. কলকাতার ইডেন হোস্টেলের ছাত্ররা হোস্টেল প্রাঙ্গণে ব্রিটিশ পণ্যসামগ্রী ও কার্জনের কুশপুত্তলিকা দাহ করে । ৭ই আগস্ট কলকাতার টাউন হলে আয়োজিত বিশাল এক ছাত্রসভায় ছাত্রনেতা হরিনাথ দত্ত বক্তৃতা দেন । 
  8. ছাত্ররা বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বয়কট করার ডাক দিয়ে ব্রিটিশদের শিক্ষাব্যবস্থা বর্জনের শপথ নেয় । 
  9. বাংলার বিভিন্ন জেলার ছাত্রসমাজ তাদের এই আহবানে সাড়া দিয়ে পরীক্ষা দিতে অসম্মত হয় । 
  10. কলকাতার অ্যালবার্ট হলে (বর্তমানে যার নাম ইন্ডিয়ান কফি হাউস) এক সভায় ছাত্রদের সাহায্যের জন্য তহবিল গঠিত হয় । বলা হয় ইউরোপীয়দের পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে দিয়ে যে সমস্ত ছাত্র স্বদেশি শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে যোগ দেবে তাদেরকে এই তহবিল থেকে সাহায্য করা হবে ।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে শুরু হলে সরকারের মুখ্যসচিব কার্লাইল ছাত্রদের সভা সমিতিতে যোগদান, ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি দেওয়া প্রভৃতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির উদ্দেশ্য সার্কুলার  জারি করে। 

এসব দমনমূলক সার্কুলারের বিরুদ্ধে কলকাতার রিপন কলেজের (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) ছাত্র এবং সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ছাত্রদের একজোট  করে কলকাতায় ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’  গড়ে তোলেন।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা 

১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা সেপ্টেম্বর নাগপুরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের একটি বিশেষ অধিবেশনে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন । ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন প্রথম একটি বৃহত্তম গণআন্দোলন ছিল ।

 সম্পূর্ণ অহিংস পদ্ধতিতে সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করে ভারতের ব্রিটিশ শাসনকে ব্যর্থ করে দেওয়াই ছিল গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ।

 দীর্ঘ ৩৫ বছর পর কংগ্রেস তার চিরাচরিত আবেদন-নিবেদন নীতি তথা ‘রাজনৈতিক ভিক্ষাবৃত্তি’ পরিত্যাগ করে প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের দিকে অবতীর্ণ হয়েছিল । 

গান্ধিজি কয়েকটি বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তাঁর অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব সকলের সামনে ব্যক্ত করেন । এই উদ্দেশ্যগুলি হল—

  •  খিলাফৎ সমস্যার যথাযত সমাধানের দাবি জানানো
  •  ব্রিটিশ সরকারের দমনমূলক আইনগুলি, বিশেষভাবে কুখ্যাত রাওলাট আইনের বিরোধিতা করা ।
  •  জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানানো ও পাঞ্জাবে নিষ্ঠুর পুলিশি তাণ্ডবের জন্য দায়ী জেনারেল ডায়ার সমেত সমস্ত অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি বিধান করা । ইত্যাদি ।

১৯২০ খ্রিস্টাব্দের নাগপুর অধিবেশনে কংগ্রেস এই কর্মসূচি গ্রহণ করে গান্ধিজিকে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনার সর্বময় দায়িত্ব অর্পণ করেন । জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছিলেন । 

অসংখ্য ছাত্র স্কুল, কলেজ বর্জন করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল । দেশবাসীর উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা হিসাবে কাশী বিদ্যাপীঠ, বারাণসী বিদ্যাপীঠ, গুজরাট বিদ্যাপীঠ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় । 

ডক্টর জাকির হোসেন, আচার্য নরেন্দ্র দেব, লালা লাজপত রায় প্রমুখ শিক্ষাবিদগণ এই সব নব প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন । মতিলাল নেহরু, ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস প্রমুখ আইনজীবীগণ আইন ব্যবসা ত্যাগ করে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন । 

 আইন অমান্য আন্দোলন ছাত্রদের ভূমিকা 

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দিলে সেই আন্দোলনে ভারতের ছাত্রসমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে । 

সারা বাংলার ছাত্রসভার অধিবেশনে ছাত্রসমাজকে সর্বতোভাবে এই আন্দোলনে অংশ নিতে এবং এর জন্য সব ধরনের আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয় । 

  1. ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ই মার্চ গান্ধিজির ডাণ্ডি অভিযান শুরুর দিনেই কলকাতার হাজরা পার্কে ৫০ জন ছাত্র সমবেত হয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর ছাত্ররা ‘বন্দে মাতরম’, ‘গান্ধিজিকি জয়’ ধ্বনি দেয় । 
  2. কলকাতার অ্যালবার্ট হলে (বর্তমানে ইন্ডিয়ান কফি হাউস) যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক সম্মেলনে সারা বাংলা থেকে ৭০০ -এর বেশি প্রতিনিধি যোগ দেয় । 
  3. কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ, বেথুন কলেজ, স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্ররা পিকেটিং করতে গেলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে । 
  4. হাওড়া ময়দানে এক বিশাল ছাত্র সমাবেশে পুলিশ আক্রমণ চালিয়ে ছাত্রদের গ্রেফতার করে । 
  5. কলকাতা ছাড়াও পূর্ব বাংলার চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুরে ছাত্রসমাজ আইন অমান্য আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশ গ্রহণ করে । 
  6. মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় আইন অমান্য আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ সবথেকে বেশি ছিল । এই মহাকুমা দুটিতে সমস্ত উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রায় টানা ছয় মাস স্কুলকলেজ বর্জন করে । 
  7. ছাত্রদের পাশাপাশি বাংলার ছাত্রীরাও আইন অমান্য আন্দোলনে গৌরবজনক ভূমিকা পালন করে । 
  8. এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন, “স্বাধীনতা আন্দোলনের জোয়ার মেয়েদের নতুন মর্যাদা দান করে । তারা আর অন্তঃপুরে অবগুন্ঠিত নয় । বীরাঙ্গনার বেশে সমান মর্যাদায় পুরুষের পাশে এসে দাঁড়ায় ।”

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা 

  1. ব্রিটিশ সরকার ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ৯ আগস্ট ভোরে গান্ধীজিকে গ্রেফতার করে ও পুনেতে আটক করে রাখা হয়। এর পর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ, জে বি কৃপালনী সমেত বহু প্রথম সারির নেতা কারারুদ্ধ হন। 
  2. ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসকে বেআইনি সংগঠন রূপে ঘোষণা করে। সর্বত্র কংগ্রেস কর্মীদের গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করা হয়। 
  3. প্রথম প্রথম এই আন্দোলন ছাত্র-শিক্ষক, যুবসম্প্রদায় ও বুদ্ধিজীবী মধ্যবিত্ত মানুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। 
  4. ক্রমে তা দেশের শ্রমিক, কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে গণআন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে। স
  5. রকারি দমন নীতির প্রতিবাদে দেশের আপামর জনসাধারণ ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন।বিশিষ্ট নেতাদের মধ্যে সাতারার শ্রীনাথ লালা, নানা পাতিল, বালিয়ার চৈতু পাণ্ডে, সরযূ পাণ্ডে, তমলুকের মাতঙ্গিনী হাজরা, সুশীল ধাড়া, পঞ্জাবের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী ফকোননি, অসমের স্কুলছাত্রী কনকলতা বড়ুয়া অন্যতম। 
  6. এ ছাড়া অরুণা আসিফ আলি, সুচেতা কৃপালিনী, জয়প্রকাশ নারায়ণ, আচার্য নরেন্দ্র দেব, রামমনোহর লোহিয়া, যোগেশ চ্যাটার্জি, উষা মেহতা, অচ্যুত পট্টবর্ধন, অজয় মুখার্জি প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা 

 স্বদেশি আন্দোলন এবং এর পরবর্তীকালে ছাত্রদের অংশগ্রহণের ফলে বাংলা, মহারাষ্ট্র এবং পাঞ্জাবে বিপ্লবী আন্দোলন অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলায় স্বদেশি আন্দোলনের সময় কলকাতার ছাত্র সতীশচন্দ্র বসু অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন । 

  • ১৯০৬ খ্রি বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাসের নেতৃত্বে ঢাকায় অনুশীলন সমিত গড়ে ওঠে ।
  • ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে হেমচন্দ্র কানুনগো  মানিকতলায় একটি বোমা তৈরির কারখানা স্থাপন করেলে অত্যাচারী শ্বেতাঙ্গ বিচারপতি কিংসফোর্ডকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল বোমা নিক্ষেপ করেন। 

কিন্তু ভুলবশত সেই বোমার আঘাতে মিস কেনেডি ও তাঁর কন্যা নিহত হন। প্রফুল্ল চাকী গুলিতে আত্মহত্যা করেন এবং ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ক্ষুদিরাম ধরা পরলে তাঁর ফাসি হয় ।

সূর্য সেন – ভারতের জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে সূর্য সেন এক যুগান্তকারী নাম । ১৮৯৪ সালে এই বিপ্লবীর জন্ম হয় । মাস্টারদার নেতৃত্বে সংগঠিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহকে আখ্যা দেয় স্রেফ একটা অস্ত্রাগার ‘লুন্ঠন’ বলে চট্টগ্রাম উমাতারা বিদ্যালয়ের শিক্ষক সূর্য সেন ‘ মাস্টারদা’  নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন । 

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন কিন্তু আন্দোলন ব্যারথ হওয়ার ফলে তিনি পুনরায় বৈপ্লবিক কর্মকান্ডে যোগ দেন।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, অনন্ত সিং, কল্পনা দত্ত (যোশী), অম্বিকা চক্রবর্তী, সুবোধ রায় থেকে শুরু করে গনেশ ঘোষের নেতা মাস্টারদা সূর্য সেন । 

এরপর ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে তিনি কিছু বিপ্লবীদের সাথে মিলে চট্টগ্রাম আস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন । নানান সংগ্রামের পর ১৯৩৪ সালে সূর্য সেন ফাঁসিকাঠে প্রান দিয়ে মৃত্যু বরন করেন ।

বীণা দাস-  ছাত্র আন্দোলনে বীণা দাস চিরস্মরণীয় । পিতা বেণীমাধব দাসের কাছেই তিনি দেশদেশপ্রেমের ভাবনায় উদবুদ্ধ হন ।

কলকাতায় পড়াশোনার সময় তিনি সাইমন কমিশন বয়কট এবং পিকেটিং আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন । এরপর কংগ্রেসে যোগদানের পর তিনি কারা রুদ্ধ ও হন । তাঁর আত্মাজীবনী ‘ শৃঙ্খল ঝঙ্কার ‘ ইতিহাসের গুরুত্বপুর্ন সম্পত্তি।

রশিদ আলি দিবস

  • রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে মুসলিম ছাত্র লিগ কলকাতায় ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় এবং ১২ ফেব্রুয়ারি (১৯৪৬ খ্রি.) দিনটি ‘রশিদ আলি দিবস’ হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করে।
  • অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলিও এই ছাত্র ধর্মঘট সমর্থন করে। মুসলিম ছাত্র লিগের ধর্মঘটি ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী  শিল্পাঞ্চলগুলিতেও ধর্মঘট চলে। 
  • আন্দোলনের ফলে কলকাতার অসামরিক প্রশাসন একপ্রকার ভেঙে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ডাকতে হয়। কয়েক দিনের সংঘর্ষে কলকাতায় অন্তত ২০০ জনের মৃত্যু হয় ।

বিশ শতকের ভারতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে ১৮৭২ সালের  প্রথম আদমশুমারিতে  জন্ম ও মর্যাদা অনুসারে ভারতীয়দের বিভিন্ন জাতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই অন্তরভুক্তি করনের মাধ্যমে ভারতে নিম্নবর্ণের অস্পৃশ্য, দলিত হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ১৩ শতাংশ।  

এই শ্রেণির অন্তরভুক্ত মাহার, নাদার, চামার, হরিজন, নমঃশূদ্র, ইঝাভা প্রভৃতি সম্প্রদায়কেই শোষণ করতো উচবর্ণীয়রা ।এই  দলিতশ্রেণির গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে আন্দোলন মুখী হন অস্পৃশ্য মাহার সম্প্রদায়ের সন্তান বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর ।

দলিত আন্দোলন 

  • অসহযোগ আন্দোলনের  সময় কংগ্রেসে গান্ধিজির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর তিনি দলিতদের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন । তিনি অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে হরিজন আন্দোলনের দ্বারা দলিতদের সামাজিক অবহেলা দূর করার চেষ্টা করেন। 
  • কিন্তু দলিত সম্প্রদায় এতেই থেমে থাকে নি, তারা উচ্চশিক্ষা, সরকারি চাকরি, সামাজিক মর্যাদা, রাজনৈতিক অধিকার প্রভৃতি আদায়ের লক্ষ্যে কেরালায় নারায়ণ গুরুর নেতৃত্বে ১৯২৪ সালে ‘ভাইকম সত্যাগ্রহ’ শুরু হয় । 
  • বাংলায় প্রমথরঞ্জন ঠাকুর, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল প্রমুখ নমঃশূদ্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন
Content Remaining Below

গান্ধি আম্বেদকর বিতর্ক

১৯৩১ সালে ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগে ভারতে সাংবিধানিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে  লন্ডনে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক  অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে গান্ধিজি এবং দলিতশ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে ড. আম্বেদকর যোগদান  দেন। 

খানে দলিতদের অধিকার ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব লাভের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আম্বেদকরের সঙ্গে গান্ধিজির গভীর মতবিরোধ সৃষ্টি হয় । গান্ধিজি গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের নীতির প্রতিবাদ করায় হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি  হয় । 

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতের জাতীয় আন্দোলন দুর্বল করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড ১৯৩২ সালে  ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি  ঘোষণা করেন। এতে দলিত-সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিকে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হলে আম্বেদকর তা সমর্থন করেন।

নমঃশূদ্র আন্দোলন

  1. ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলায় হিন্দু জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ অংশ ছিল নিম্নবর্ণের হিন্দু। তারা সাধারণভাবে ‘দলিত’ বা ‘তফশিলি সম্প্রদায়’ নামে পরিচিত। 
  2. এদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত।অবিভক্ত বাংলার  ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোহর, ফরিদপুর, বাখরগঞ্জ প্রভৃতি জেলায় নমঃশূদ্রদের আধিক্য ছিল। তাদের মূল জীবিকা ছিল চাষবাস, মাছ ধরা, তাঁত বোনা, অন্যের বাড়ি ও জমিতে দিনমজুরের কাজ করা প্রভৃতি । 
  3. উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের ঘৃণার চোখে দেখত  এবং তীব্র শোষণ চালাত । এই  কারনেই ১৮৭২ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলা দেশে নমঃশূদ্র আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
  4. এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুকুন্দবিহারী মল্লিক, বিরাটচন্দ্র মণ্ডল, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, প্রমথ রঞ্জন ঠাকুর প্রমুখ ব্যাক্তি বর্গ ।  
  5. এরপর নমঃশূদ্ররা বিভিন্ন আন্দোলনে ক্রমশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের স্পম্প্য উচ্চবর্ণের নেতৃত্বে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হয় এবং তারাও বঙ্গভঙ্গ সমর্থন  করে নেয় । 
  6. পরবর্তীকালে ১৯০২ সালে  ‘উন্নয়নী সভা’ , ১৯১২ সালে ‘বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন’, ১৯২৬ সালে ‘নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি’  প্রভৃতি সংগঠন স্থাপিত হয়। 
  7. ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের ফলে নমঃশূদ্র-অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের মধ্যে চলে গেলে সেখানকার নমঃশূদ্রদের একটি বড়ো অংশ উদ্বাস্তু হয়ে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, আন্দামান প্রভৃতি স্থানে আশ্রয় নেয়। এরপর নমঃশুদ্র আন্দোলন নিস্তেজ হয়ে পরে ।
error: Content is protected !!
Scroll to Top
×

এই ওয়েবসাইটের সব কনটেন্ট এক্সেস করুন শুধু একটা মেম্বারশীপের সাথে।  আজকেই ক্লিক করুন নিচে রেজিস্টার করার জন্যে।  অসুবিধে হলে হোয়াটস্যাপ করুন আমাদের  +919804282819