সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা - Sonkskar Boishistho O Porchacholona History WBBSE Madhyamik Class 10
What will you learn here:
- WBBSE Syllabus Based Topic Wise Explanation
- Syllabus Overview of the Subject
- Chapter wise Summary
- Madhyamik Solutions
- One Shot Revision
- One Shot Revision
এখন সহজে পাস্ করুন পরীক্ষা skillyogi'র নোটস, সাজেশন, সল্ভড পেপার এবং ভিডিও লেকচারের মাধ্যমে।
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধজয়ের পর থেকে ১৮৫৭ এর মহাবিদ্রোহের আগে পর্যন্ত অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনের প্রথম শতকে কোম্পানির জারি করা নতুন রাজস্ব নীতি ও ভূমি রাজস্ব ব্যাবস্থা, রাজস্ব আদায়ের জন্য মহাজন ও ইজারাদারদের শোষণ-অত্যাচার, ভারতীয় সমাজের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ বিচারব্যবস্থা কৃষক, শ্রমিক ও কারিগর শ্রেণিকে ব্রিটিশ বিরোধী করে তুলেছিল।
উপরন্তু ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা জমিদারদের বংশানুক্রমে জমির মালিকানা দিয়ে দিলে, নতুন জমিদারদের উৎপীড়নে কৃষকদের দুর্দশা চরমে ওঠে। বহু কৃষক জমি ও ভিটে মাটি হারিয়ে ভূমিহীন শ্রমিকে পরিণত হয়।
এই সময় ব্রিটিশ সরকার আইন করে আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। এইসকল কারণে আদিবাসী ও কৃষক শ্রেণি ক্ষুব্ধ হয়ে সরকার ও জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
উপজাতি ও কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে এই শব্দ সমষ্টির অর্থ জানতে হবে। ‘বিদ্রোহ’ হলো কোন প্রচলিত ব্যবস্থা বদল করার জন্য বিরোধীদের সমষ্টিগত আন্দোলন।
বিদ্রোহ হতে পারে একত্রিত বা ব্যাক্তিগত, অহিংস বা সশস্ত্র, দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদি। বিদ্রোহ সফল হলে ব্যবস্থা পরিবর্তনের আশা থাকে, বিফল হলেও আন্দোলনের প্রভাবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটতে পারে। ব্রিটিশ আমলে সংঘটিত নীল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, পাবনা বিদ্রোহ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
‘অভ্যুত্থান’ হলো দেশের কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার বিপক্ষে একাংশের সশস্ত্র আন্দোলন। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন পাওয়া যায়। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ভারতীয় সৈন্যদের ডাকা সিপাহী বিদ্রোহ (মহাবিদ্রোহ) বা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ভারতীয় নৌসেনাদের উদ্যোগে নৌবিদ্রোহ উল্লেখ্য।
সর্বশেষে ‘বিপ্লব’ বলতে বোঝায় প্রচলিত ব্যাবস্থার দ্রুত ও সম্পূর্ণ পরিবর্তন। যেমন আঠারো শতকে ইউরোপের শিল্পবিপ্লবের ফলে সেখানকার শিল্প ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে বা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবে ফ্রান্সের প্রাচীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়।
উপজাতি অর্থাৎ আদিবাসী, যারা ভারতের প্রাচীন বাসিন্দা। তাদের বাস অরণ্য বা পাহাড়ি এলাকায়। পাহাড়ের অনুর্বর পাথুরে জমিতে চাষ-আবাদ ও জঙ্গলের সম্পদ সংগ্রহ করেই তাদের জীবন চলত।
কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের প্রতিষ্ঠা হলে তাদের জীবনে নেমে আসে চরম সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ। এই শোষণের একটা কারণ ছিল অরণ্য আইন অপরটি ছিল ঔপনিবেশিক ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা।
অরণ্য আইন : ভারতের বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের বাস ছিল জঙ্গল বা পাহাড়ি এলাকায়। ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে তারা বনের কাঠ, ফল, মধু প্রভৃতি বনজ সম্পদ আহরণ করে ও শিকার করে জীবিকা চালাত। কখনো বনভূমি পরিষ্কার করে অনুর্বর জমিতে ঝুম চাষ করত।
কিন্তু ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পর নতুন শহর, বন্দর, জাহাজ, রেলপথ তৈরির জন্য বনজ সম্পদের ওপর তাদের দৃষ্টি পড়ে। নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে উপজাতি সম্প্রদায়ের অরণ্যের সম্পদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। তাদের ব্যাবহৃত জমিতে খাজনা বসে।
১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সরকার ‘অরণ্য সনদ’ এর মাধ্যমে অরণ্যের ওপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে। বনের কাঠ ও অন্যান্য সম্পদের সংগ্রহের ওপর বিধিনিষেধ চাপায়।
১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে সরকার ‘বনবিভাগ’ গঠন করে এবং ডায়াট্রিক ব্রান্ডিস নামক জার্মান ব্যাক্তিকে সেখানকার ইন্সপেক্টর জেনারেল হিসাবে নিয়োগ করে। পরের বছর ‘ভারতীয় অরণ্য আইন’ পাস করে অরণ্যকে সরকারিভাবে সংরক্ষিত করা হয়। ভারতীয়রা অরণ্যের ওপর সব অধিকার হারায়।
১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ‘ফরেস্ট সার্ভিস’ গঠন করে ও ১৮৭৮ এ দ্বিতীয় বারের জন্য ‘ভারতীয় অরণ্য আইন’ এর মাধ্যমে নিজেদের অধিকার বাড়িয়ে তোলে। ফলে অরণ্যের আদিবাসী সম্প্রদায় শত সহস্র বছর ধরে চলে আসা অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আদিবাসীরা তাদের জীবিকা ছেড়ে চুরি-ডাকাতি করে, তাদের বাসস্থান ত্যাগ করে অন্যত্র যাত্রা করে। ব্রিটিশ শাসনের প্রথম শতকে কোল বিদ্রোহ, ভীল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, মুন্ডা বিদ্রোহ প্রভৃতি ৩০-৪০ টি ছোট বড় উপজাতি বিদ্রোহ ঘটে।
বিদ্রোহে অতিষ্ট সরকার ১৮৭১, ১৯১১ ও ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনবার পৃথক ‘ক্রিমিনাল ট্রাইবস এক্ট‘ পাস করে বিদ্রোহীদের দমন করে।
- বিদ্রোহের কারণ – ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস দেবী সিংহকে উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর, রংপুর ও ইদ্রাকপুর পরগনার ইজারাদার হিসাবে নিযুক্ত করেন। দেবী সিংহ সেখানকার জমিদার ও জনগণের রাজস্বের হার বৃদ্ধি করেন।
রাজস্ব আদায়ের জন্য জমিদার ও কৃষকদের ওপর অত্যাচার চরমে পৌঁছায়। দেবী সিংহ ও তার সহকারী হরেরাম এর শোষণ থেকে জমিদাররাও রেহাই পায় না। বহু জমিদার সরকারি খাজনা দিতে না পেরে জমিদারি হারায়।
- বিদ্রোহের বর্ণনা – ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি রংপুরের তেপাগ্রামে কৃষকরা মিলিত হয়ে ‘স্বাধীন স্থানীয় সরকার’ গঠন করে বিদ্রোহ শুরু করে। তারা নুরুলউদ্দিনকে নেতা ও দয়ারাম শীলকে সহকারী নেতা নির্বাচিত করে। রংপুর ছাড়াও কাজিরহাট, কাকিনা, ডিমলা সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।
বিদ্রোহীরা কোনো প্রকার রাজস্ব দেওয়া বন্ধ করার কথা ঘোষণা করে এবং দেবী সিংহের প্রাসাদ ধ্বংস করে। ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে রংপুরের কালেক্টর গডল্যান্ড, সেনাপতি ম্যাকডোনাল্ডের সহায়তায় এই বিদ্রোহ দমন করেন।
বিদ্রোহের কারণ – চুয়াড় জনগোষ্ঠী ছিল বাংলার অবিভক্ত মেদিনীপুরের উত্তর-পশ্চিমে ও বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত জঙ্গলমহলের উপজাতি সম্প্রদায়।
চাষবাস ও পশুশিকারের সাথে জড়িত থাকলেও যুদ্ধ ছিল তাদের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই এরা সাধারণত মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও ধলভূমের স্থানীয় জমিদারদের অধীনে রক্ষী বা পাইকের কাজ করত। বিনিময়ে তারা যে নিস্কর জমির অধিকার পেত তা পাইকান জমি নামে পরিচিত।
বাংলায় কোম্পানি শাসন প্রতিষ্ঠার পর কোম্পানি কতৃপক্ষ এই অঞ্চলের জমিদারদের ওপর চড়া হারে ভূমি রাজস্ব ধার্য করে। এর বিরুদ্ধে জমিদাররা বিদ্রোহ করলে তাদের পাইক চুয়াড়রাও সক্রিয়ভাবে সমগ্র জঙ্গলমহল জুড়ে যে বিদ্রোহ করে তা ‘চুয়াড় বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।
- বিদ্রোহের বর্ণনা ও ফলাফল – এই বিদ্রোহ প্রায় ৩০ বছর ধরে কয়েকটি পর্যায়ে চলেছিল। প্রথম পর্যায়ে ঘাটসিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন ও রাজস্ব প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
- প্রথমে ব্রিটিশ বাহিনী এই বিদ্রোহ থামতে ব্যর্থ হলেও পরবর্তীতে বাহিনী এই বিদ্রোহ দমন করে। শেষপর্যন্ত কোম্পানি সমঝোতা করে জমিদারি ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু বিদ্রোহী চুয়ারদের বসত জমি থেকে উচ্ছেদ ও পাইকের পেশা থেকে বিতাড়িত করা হয়।
এরপর ধাদকার শ্যামরঞ্জন বিদ্রোহ ঘোষণা করেও শেষে ব্যর্থ হন। চুয়ারদের দুর্দশা আরো বাড়ে এবং তাদের মনে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন ধীরে ধীরে জ্বলতে থাকে।
- দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আবার বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। বাঁকুড়ার রায়পুরের জমিদার দুর্জন সিংহ এর নেতৃত্বে বিদ্রোহ সবচেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিদ্রোহীরা সরকারি দপ্তরে আক্রমণ ও লুটতরাজ চালায়।
মেদিনীপুরে এই বিদ্রোহের অন্যতম নেত্রী ছিলেন রানী শিরোমনি। বিদ্রোহে তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘মেদিনীপুরের লক্ষীবাই’ নামে পরিচিত। অচল সিং নামে অপর বিদ্রোহী নেতা গেরিলা কায়দায় বিদ্রোহ করে কোম্পানির বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে তোলে।
ইংরেজ পুলিশবাহিনী বিদ্রোহীদের দমন করতে নির্মম অত্যাচার চালায়। শেষপর্যন্ত রানী শিরোমনি নিহত হলে বিদ্রোহ সমাপ্তি ঘটে।
- বিদ্রোহের বিশেষত্ব – বিদ্রোহ শেষ অবধি ব্যর্থ হলেও বিদ্রোহের কয়েকটি বিশেষত্ব লক্ষ করা যায়। যেমন –
(i) বিদ্রোহীরা ছিল চুয়ার গোষ্ঠীর মানুষ। তারা ছিল সশস্ত্র উপজাতি সম্প্রদায়। যুদ্ধ করা ও অস্ত্রচালনা ছিল তাদের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য।
(ii) কোম্পানি বাহাদুর মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, মানভূমের স্থানীয় জমিদারদের ওপর করের পরিমান বাড়িয়ে দেয়, করদানে অসমর্থ হলে জমি কেড়ে নেওয়া হয়। ফলে জমিদাররা বিদ্রোহ করে। যেহেতু চুয়াররা জমিদারদের অধীনে পাইকের কাজ করত তাই মালিকের দুঃসময়ে তারাও জমিদারদের পক্ষে বিদ্রোহ শুরু করে।
(iii) চুয়ার বিদ্রোহ দুই পর্বে সংঘটিত হয়েছিল – প্রথমে ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে ও দ্বিতীয় বা শেষ পর্বে ১৭৯৮ থেকে ৯৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে।
- ফলাফল ও আলোচনা – এই বিদ্রোহের কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল হল –
(i) জমিদার, কৃষক ও রক্ষীরা একত্রে বিদ্রোহ করেছিল। ফলে সরকারি চাপ থাকলেও জমিদার ও কৃষকদের সম্পর্ক মজবুত হয়।
(ii) সমাজের পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের চুয়াড়রা একটা অন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, কারণ সমাজের শিক্ষিত সমাজ আন্দোলন শুরু করতে সময় নেয় আরো কয়েক দশক।
(iii) সরকার শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করে। বিষ্ণুপুরকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া, বীরভূম ও ধলভূমের বনাঞ্চল নিয়ে ‘জঙ্গলমহল’ নামে একটি জেলা তৈরি হয়।
ভিল বিদ্রোহ (১৮১৯ খ্রি) :
- বিদ্রোহের কারণ – ভিল উপজাতি ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্য একটি শাখা। এরা রাজস্থান, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের খান্দেশ ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে বাস করত। সেখানকার পাথুরে জমি ছিল এদের কৃষিকাজের স্থান।
১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি খান্দেশ দখল করলে সেখানকার ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়। রাজস্বের পরিমান বৃদ্ধি পায়। রাজস্ব আদায় করতে ভিলদের ওপর অনেক অত্যাচার শুরু হয়।
ভিলরা তাই বহিরাগত ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ ভিল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
- বিদ্রোহের বর্ণনা ও ফলাফল – ১৮১৯ সালে ভিলদের এই বিদ্রোহ ব্যাপক আকার নেয়। মহারাষ্ট্রের নেতা ত্রিম্বকজির প্রেরণায় ভিলরা সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যায়। বিদ্রোহীদের অন্যতম নেতা ছিলেন সেওয়ারাম।
১৮১৯ এ ব্রিটিশ কতৃপক্ষ নমনীয় মনোভাব নিলে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে। রাজস্থান ও গুজরাটের পার্বত্য অঞ্চলে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন কানওয়ার। ১৮৫৭ এর মহাবিদ্রোহের পর ভিল বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করলে নিষ্ঠুরভাবে এই বিদ্রোহ দমন করা হয়।
কোল বিদ্রোহ (১৮৩১-৩২ খ্রি) :
- বিদ্রোহের কারণ – ব্রিটিশ শাসনের আগে থেকেই কোল উপজাতি বিহারের সিংভূম, মালভূম, ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ ‘কোলহান’ অঞ্চলে স্বাধীনভাবে বসবাস করত। কোলরা হো, মুন্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। অন্যান্য আদিম জাতিগুলোর মতো কোলরাও ছিল কৃষিজীবী ও অরণ্য সম্পদের ওপর নির্ভরশীল।
১৮২০ তে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছোটনাগপুরের শাসনভার গ্রহণ করলে কোলরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ১৮২০-২১ খ্রিস্টাব্দে কোলরা পোড়াহাটের জমিদার ও তার ইংরেজ সেনাপতি রোগসেসের বিরুদ্ধের‘চাইবাসার যুদ্ধে’ পরাস্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করে।
পরবর্তীতে নতুন রাজস্ব নীতি অনুসারে সরকার চড়া হারে রাজস্ব আদায়ের সাথে সাথে বিচার ও আইন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে কোল পরিবারের ওপর অত্যাচার শুরু করে, কোল সমাজের ঐতিহ্যে আঘাত হানা হয়। কোম্পানি ও তাদের সহযোগী জমিদার, মহাজন, ব্যাবসায়ীদের নানান শোষণ ও বঞ্চনা থেকেই ১৮৩১ সালে কোল বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়।
এই বিদ্রোহের মূলে কয়েকটি কারণ ছিল উল্লেখযোগ্য –
(i) কোম্পানির নতুন রাজস্ব ব্যবস্থার ফলে অঞ্চলের বহিরাগত ‘দিকু’ দের হাতে রাজস্ব আদায়ের ভার চলে যাওয়া, রাজস্ব বৃদ্ধি এবং তা আদায়ের জন্য অমানুষিক অত্যাচার, জমি হস্তগত, নারী নির্যাতন।
(ii) দেশীয় মদে উচ্চ কর,
(iii) রাস্তা তৈরিতে বেগার শ্রমে বাধ্য করা,
(iv) অনিচ্ছাকৃতভাবে আফিম চাষ করানো,
(v) কোম্পানির শাসন ব্যবস্থা প্রণয়ন করে কোলদের সামাজিক স্বাতন্ত্র কেড়ে নেওয়া।
- বিদ্রোহের বর্ণনা – বিদ্রোহ শুরু হলে রাঁচি, হাজারীবাগ, সিংভূম, পালামৌ প্রভৃতি অঞ্চলে ব্যাপক আকার ধারণ করে। সিংরাই, বুদ্ধু ভগত, জোয়া ভগত, সুই মুন্ডা প্রমুখের নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ পরিচালিত হয়েছিল। তারা নানা পদ্ধতিতে আশেপাশের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের খবর ছড়িয়ে দেয়।
কোল বিদ্রোহের পাশাপাশি মানভূমের ভূমিহীন জনসাধারণ বিদ্রোহী হয়ে বহিরাগত ইংরেজ কর্মচারী, জমিদার, জোতদার, মহাজন, ব্যাবসায়ী দের আক্রমণ করে, সরকারি কাছারি ও পুলিশ ঘাঁটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাদের হাতে অনেক সাধারণ মানুষ নিহত হয়।
১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন উইলকিনসনের নেতৃত্বাধীন বিশাল পুলিসবাহিনী নিষ্ঠুরভাবে হাজার হাজার কোল আদিবাসী নরনারীকে হত্যা করে বিদ্রোহ দমন করে।
- বিদ্রোহের বিশেষত্ব –
(i) এই বিদ্রোহে ওঁরাও, মুন্ডা, হো প্রভৃতি উপজাতিরাও অংশ নিয়েছিল। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটানো। কারণ তারা মনে করত ইংরেজদের অত্যাচার থেকে মুক্তি স্বাধীনতার সমান।
(ii) ছোটনাগপুরের অরণ্যের অধিকার রক্ষার্থে কোল সহ সেখানে বসবাসকারী অন্যান্য উপজাতি একত্রিত হয়েছিল।
(iii) বিদ্রোহের বার্তা পাঠাতে কোলরা নানা উপায় অবলম্বন করেছিল যেমন কখনো নাকাড়া বাজিয়ে আবার কখনো আমগাছের শাখা বা যুদ্ধের তীর বিলি করে বার্তা দিত।
(iv) এই বিদ্রোহ শহরের শিক্ষিত মানুষের কাছে অজানাই ছিল।
- ফলাফল ও আলোচনা – বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে চাইলেও এই বিদ্রোহের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল যে কারণে বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থই থেকে যায়। ব্যার্থতার কারণগুলো ছিল –
(i) সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব,
(ii) বিদ্রোহের আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা,
(iii) বিদ্রোহীদের কর্মসূচির অভাব।
ব্যর্থ হলেও এই বিদ্রোহের কিছু ফলাফল দেখা যায় –
(i) কোল অধ্যুষিত অঞ্চলে নিজেদের শাসন নীতি পরিবর্তন করে এবং উপজাতি সমস্যা সমাধানের জন্য ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নামে একটি পৃথক অঞ্চল সংরক্ষণ করে।
(ii) এই অঞ্চলে কোম্পানির নিয়ম কার্যকর হবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পরিবর্তে কোলদের নিজস্ব নিয়মনীতি চালু হয়।
(iii) উপজাতির গ্রাম প্রধানদের জমিদার অধিকৃত জমি ফেরত দেওয়া হয়।
সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫-৫৬ খ্রি) :
সাঁওতালরা ছিল কঠোর পরিশ্রমী, শান্তিপ্রিয় ও সরল প্রকৃতির এক কৃষিজীবি আদিবাসী সম্প্রদায়। তারা বিহার সীমান্তে ছোটনাগপুর, কটক, পালামৌ, মানভূম, ধলভূম, রাঁচি, হাজারিবাগ, বীরভূম, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের জঙ্গলময় পার্বত্য অঞ্চলে বাস করত।
লর্ড কর্ণওয়ালিসের আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হলে জমিদার ও কোম্পানির কর্মীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিদ্রোহ করে। কিন্তু প্রথম পর্বের বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়। পরে তারা তাদের পুরোনো বাসস্থান ছেড়ে পার্শ্ববর্তী রাজমহল পার্বত্য অঞ্চল ও মুর্শিদাবাদের একাংশে চলে যায়।
সেখানকার বনভূমি পরিষ্কার করে পাথুরে জমিতে বসবাস ও কৃষিকাজ শুরু করে। তারাই এই অঞ্চলের নাম দেয় দামিন-ই-কোহি অর্থাৎ পাহাড়ের প্রান্তদেশ। সেখানেও কিছুদিনের মধ্যেই তারা একই অত্যাচারের শিকার হতে থাকে। এই ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের ফলেই ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দে তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে যা সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
- বিদ্রোহের কারণ – নানা কারণে জমিদার ও কোম্পানির শাসকদের ওপর সাঁওতালদের অসন্তোষ বাড়তে থাকে যা পরবর্তীতে বিদ্রোহের রূপ নেয়, যেমন –
(i) নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা অনুসারে সাঁওতালদের জমির উপর খাজনা ধার্য করা হয়, দিনে দিনে খাজনার পরিমান ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
(ii) নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যাবস্থায় নগদ অর্থে রাজস্ব দিতে হত। এই রাজস্ব মেটানোর জন্য সাঁওতালরা দেশীয় মহাজনদের কাছ থেকে অত্যন্ত উচ্চহারে সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হত। ঋণের ওপর সুদের হার ছিল ৫০% থেকে ৫০০%। একবার ঋণ নিলে তা আর কোনোদিন পরিশোধ করা সম্ভব হতো না।
(iii) ঋণ শোধ করতে না পারলে মহাজনের জমিতে বেগার খাটতে হতো বা বিনা পারিশ্রমিকে লাঙ্গল দিতে হত।
(iv) বিদেশি মহাজন ও অসাধু ব্যবসায়ীরা সাঁওতালদের সরলতা ও অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে ঠকাত। তারা শস্য কিনতে হিসেবের বেশি ওজনের কেনারাম বাটখারা ব্যাবহার করে বেশি শস্য কিনত কিন্তু বিক্রির সময় কম ওজনের বেচারাম বাটখারা ব্যাবহার করে কম দ্রব্য বিক্রি করত।
(v) বিহারের রেলপথ নির্মাণের সময় নিযুক্ত সাঁওতাল মজুরদের কম মজুরি দেওয়া হত, রেলের কর্মচারীরা সাঁওতালদের হাস-মুরগি-ছাগল প্রভৃতি জোর করে কেড়ে নিত ও সাঁওতাল রমনীদের ওপর অশালীন অত্যাচার করত।
(vi) খ্রিস্টান মিশনারিরা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করতেন।
(vii) নীলকর সাহেবরা জোর করে সাঁওতালদের নীলচাষ করতে বাধ্য করত।
(viii) কোম্পানির বিচারব্যবস্থা সাঁওতাল ঐতিহ্য ও রীতি নীতিকে আঘাত করেছিল।
- বিদ্রোহের বর্ণনা – সাঁওতালরা ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে থেকেই কোম্পানি ও তার জমিদার-মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। ৩০ শে জুন প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল ভগনাদিহির মাঠে মিলিত হয়ে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য ঘোষণা করে হুল বা সশস্ত্র বিদ্রোহের ডাক দেয়।
- তারা পবিত্র শালগাছের ডালকে প্রতীক করে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানায়। বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয় সিধু ও কানহু ভাতৃদয়। তাছাড়া চাঁদ, কালো প্রামানিক, বীর সিং প্রমুখও বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
- বিদ্রোহ পাকুড়, মহেশপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, সিংভূম, মুঙ্গের, হাজারিবাগ অঞ্চলেও বিস্তার লাভ করে। বিদ্রোহীরা মহাজন কেনারাম ভগত সহ দিঘি থানার অত্যাচারী দারোগা মহেশ দত্ত কে হত্যা করে।
- চাঁদ ও ভৈরবের নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা পাকুড় রাজবাড়ি লুঠ করে। রাজমহল থেকে কোলগঞ্জ এবং বীরভূম থেকে ভাগলপুর পর্যন্ত সাঁওতালদের আক্রমণে বহু নীলকর সাহেব, ইংরেজ কর্মচারী ও পুলিশকর্মী নিহত হয়।
- প্রথমদিকে মেজর বারোজ এর নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ সেনা পরাজিত হয়। কিন্তু অল্পদিনেই ব্রিটিশ বাহিনী আবার পূর্ণ শক্তি নিয়ে আক্রমণ করে। সাঁওতালরা যুদ্ধে পরাজিত হয়।
- সিধুকে গুলি করে হত্যা করা হয় ও কানহুর ফাঁসি হয়, বাকিদের দীর্ঘ কারাদণ্ড হয়। প্রায় ২৩ হাজার সাঁওতালকে হত্যা করা হয়। ১৮৫৬ এর ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহ অবদমিত হয়।
- বিদ্রোহের বিশেষত্ব – এই বিদ্রোহের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায় –
(i) সকল দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ কামার, কুমোর থেকে ডোম এই বিদ্রোহে সাঁওতালদের পাশে এসে দাঁড়ায়।
(ii) সাঁওতালদের সব বয়সের নারী পুরুষ এই বিদ্রোহে যোগ দেয়।
(iii) বিদ্রোহীরা প্রধানত সরকারি অফিস, রেল, ডাকঘর, কোম্পানির বাংলো, জমিদার বাড়ি আক্রমণ করে।
(v) বিদ্রোহীরা সাধারণ শিকারের অস্ত্র নিয়েই ব্রিটিশদের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।
(vi) ছোটনাগপুর অঞ্চলে ব্রিটিশ কোম্পানির শাসন উচ্ছেদ করতেই এই বিদ্রোহ, কারণ তারা মনে করে ব্রিটিশ শাসন বন্ধ হলে তবেই বহিরাগত জমিদার, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের থেকে রেহাই মিলবে।
- ফলাফল ও আলোচনা – বিদ্রোহের অবসান হলেও এর ফলাফল ছিল গুরুত্বপূর্ণ –
(i) সাঁওতালদের পৃথক উপজাতি ঘোষণা করে সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে পৃথক সাঁওতাল পরগনা গঠিত হয়। (ii) ব্রিটিশ আইনের পরিবর্তে সাঁওতালদের প্রচলিত নিজস্ব আইন চালু করা হয়।
(iii) বিদ্রোহ কেবল সাঁওতালদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা , নিম্নবর্গের দরিদ্র হিন্দুদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
(iv) সাঁওতাল এলাকায় বহিরাগত মহাজনদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয় ও সুদের হার নির্দিষ্ট করা হয়।
(v) খ্রিস্টান মিশনারিদের খ্রিস্টধর্ম প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়।
সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল প্রধানত একটি কৃষক বিদ্রোহ রূপে, পরে তা গণবিদ্রোহের চেহারা নেয়। ব্রিটিশ বিরোধিতা ও অর্থনৈতিক শোষনের লড়াই থেকে স্বাধীনতালাভের লড়াই হিসাবে পরিচিত হয়।
নরহরি কবিরাজের মতে, “সাঁওতাল বিদ্রোহ আপসহীন গণসংগ্রামের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত”। সুপ্রকাশ রায় বলেছেন, “এই বিদ্রোহ ছিল ভারতের যুগান্তকারী মহাবিদ্রোহের অগ্রদূত”।
ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, “যদি ১৮৫৭ র মহাবিদ্রোহকে স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে মনে করা হয়, তবে সাঁওতালদের সুকঠিন সংগ্রামকেও স্বাধীনতা সংগ্রামের মর্যাদা দেওয়া উচিত”।
মুন্ডা বিদ্রোহ (১৮৯৯-১৯০০ খ্রিঃ) :
ভারতের প্রাচীন আদিবাসী মুন্ডা উপজাতি ছোটনাগপুরের পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করত। মুন্ডা নেতা বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ১৮৯৯ সালে মুন্ডা উপজাতির মানুষরা বিদ্রোহ শুরু করে যা ‘উলঘুলান’ (ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা বা প্রবল বিক্ষোভ) নামে পরিচিত। মুণ্ডাদের নামে এই বিদ্রোহ মুন্ডা বিদ্রোহ হিসাবে পরিচিত।
- বিদ্রোহের কারণ – ইংরেজ ও কোম্পানি আশ্রিত জমিদারদের ওপর নানা কারণে মুন্ডাদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে।
(i) ব্রিটিশ ভূমি ব্যবস্থা প্রচলিত হলে মুণ্ডাদের জমিতে ‘খুৎকাঠি’প্রথা মানে যৌথ মালিকানা বাতিল হয়ে ব্যাক্তিগত মালিকানা চালু হয়।
(ii) সরকারি জমিদাররা বিভিন্ন কর চাপায় ও জমিতে বেগার খাটানো হয়।
(iii) মুণ্ডাদের সামাজিক আইন বিচার বাতিল করে নতুন আইন আসে।
(iv) জমিদার ও মহাজনরা বলপূর্বক মুণ্ডাদের ব্যাক্তিগত জমি সম্পত্তির দখল নেয়।
(v) মিশনারিরা কৌশলে মুণ্ডাদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করত। (vi) প্রলোভন দেখিয়ে নামমাত্র মজুরিতে শ্রমিকের কাজ করিয়ে নেওয়া হয়।
- বিদ্রোহের বর্ণনা – মুণ্ডাদের ক্ষোভ সীমা ছাড়ালে রাঁচি জেলার উলিহাত গ্রামের সুগান মুন্ডার পুত্র বিরসা মুন্ডা বিদ্রোহ গড়ে তোলে। তিনি নতুন ধর্মের প্রচার করে মুণ্ডাদের একত্রিত করার কাজ করেন।
স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে খাজনা দেওয়া বন্ধ করার নির্দেশ দেন। সরকার তাকে কারারুদ্ধ করে। বছর দুই পর ছাড়া পেয়ে তিনি আবার বিদ্রোহ সংঘটিত করতে উদ্যত হন। খুঁটি, রাঁচি, বুন্দু, তোরপা, বাসিয়া প্রভৃতি জায়গায় গোপন ঘাঁটি গড়ে ওঠে।
মুণ্ডাদের নিয়ে তিনি সেনাদল গড়ে তোলেন। সেনাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেন বিরসা মুন্ডার অনুগত গয়া মুন্ডা। ১৮৯৯ এর ২৪ ডিসেম্বর বিদ্রোহ শুরু হয়। সরকারি বিভিন্ন অফিস-প্রতিষ্ঠান, জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ কর্মচারীদের ওপর আক্রমণ চলে।
কিন্তু আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত ব্রিটিশ সেনার কাছে মুন্ডাবাহিনীর পরাজয় ঘটে। বিদ্রোহের আগুন শান্ত হয়। বহু বিদ্রোহীর ফাঁসি ও আজীবন কারাদন্ড হয়। বিরসা মুন্ডা রাঁচি জেলে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
- বিদ্রোহের বিশেষত্ব –
(i) বহিরাগত ইংরেজ ও তাদের সহযোগীদের। বিতাড়িত করে স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠা ছিল মুণ্ডাদের প্রধান লক্ষ্য। (ii) মুন্ডারা তাদের জমিতে জমিদারদের ব্যাক্তিগত মালিকানা অস্বীকার করে নিজেদের জমির মালিক হিসাবে দাবি করে।
(iii) শোষণ ও অত্যাচার থেকে শান্তিপূর্ণভাবে মুক্তির জন্য তারা মহারানী ভিক্টরিয়াকে আবেদন জানায়, কিন্তু সরকার তা অগ্রাহ্য করলে তারা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।
(iv) সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করাই ছিল তাদের লক্ষ্য।
- ফলাফল ও আলোচনা – এই বিদ্রোহের ফলাফলগুলি ছিল খুব সুস্পষ্ট –
(i) বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে তারা অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছিল।
(ii) ছোটনাগপুরের প্রজাস্বত্ব আইন (টেনান্সি এক্ট, ১৯০৮ খ্রি) দ্বারা মুণ্ডাদের জমির যৌথ মালিকানা ভোগ করার অধিকার দেওয়া হয়।
(iii) বিনা বেতনে মুণ্ডাদের দিয়ে বেগার শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়।
(iv) মুন্ডারা কিছু আইনি সুযোগ সুবিধা লাভের অধিকার পায়।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ, ওয়াহাবি-ফরাজি আন্দোলন – সংক্ষিপ্ত আলোচনা
ব্রিটিশ শাসনের প্রারম্ভিক পর্ব থেকেই কৃষক বিদ্রোহ লক্ষ্য করা যায়। ব্রিটিশ শাসনের অন্যায় ও অত্যাচারের প্রতিকারের সহজ পথ না থাকায় কৃষক শ্রেণির মধ্যে চাপা অসন্তোষ ধূমায়িত হয়ে ওঠে পরে যা বিদ্রোহের রূপ নেয়।
বিদ্রোহ গুলি ক্ষোভ বা অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ হলেও বিদ্রোহ চলাকালীন এতে ধর্মের প্রবেশ ঘটে। কখনো কখনও ধর্মের ভূমিকা প্রবল হয়ে ওঠে। এরকম বিদ্রোহের মধ্যে সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ, ওয়াহবি-ফরাজি আন্দোলন ও পাগলপন্থী বিদ্রোহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ (১৭৬৩-১৮০০ খ্রি) :
ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই উত্তর ভারতের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী-ফকির বাংলা ও বিহারের বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে আসত। তীর্থদর্শনের শেষে তারা ফিরে যেত আবার অনেকেই সেইসব অঞ্চলে বসবাস শুরু করত।
কৃষিকাজকে তারা পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। এই সন্ন্যাসী ও ফকির সম্প্রদায়ের দরিদ্র কৃষকরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও তাদের সহযোগী জমিদারদের শোষণ-অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন তা ‘সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের কাহিনী অবলম্বনে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা করেন বিখ্যাত উপন্যাস ‘আনন্দমঠ’ ও ‘দেবী চৌধুরানী’।
- বিদ্রোহের কারণ – এই বিদ্রোহের পিছনে নানাবিধ কারণ ছিল, যেমন –
(i) সন্ন্যাসী ও ফকিররা অনেকেই কৃষিজীবি ছিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ধার্য করা অত্যাধিক ভূমি রাজস্বের ফলে তাদের অনুদান হ্রাস, ইচ্ছেমতো কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ প্রভৃতি কারণে বাংলা-বিহারের কৃষকরা ভয়ঙ্কর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
(ii) সন্ন্যাসী ও ফকিররা মাঝে মধ্যে দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে গেলে, সরকার থেকে তাদের ওপর তীর্থ কর বসানো হত – এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়।
(iii) বাংলায় প্রবেশ ও দরগা যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
(iv) বাংলা-বিহারের ফকির ও সন্ন্যাসীদের মধ্যে অনেকেই রেশম ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিল, কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের এই ব্যাবসায় নানা বাধা প্রদান করে।
(v) ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে ১৫০ জন ফকিরকে হত্যা করা হয়। এইসকল কারণে সন্ন্যাসী ও ফকিররা সশস্ত্র আন্দোলনের পথে অগ্রসর হয়।
- বিদ্রোহের বর্ণনা – ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় সর্বপ্রথম সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ শুরু হয়। ক্রমশ তা দাবানলের মতো মালদহ, রংপুর, দিনাজপুর, কোচবিহার, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
- অত্যাচারিত ও নির্যাতিত দরিদ্র কৃষক, মোগল সেনাবাহিনীর বেকার সৈন্য এবং সন্ন্যাসী ও ফকিরদের বিভিন্ন সম্প্রদায় এই বিদ্রোহে অংশ নেয়।
- বিদ্রোহীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০ হাজার।
- সন্ন্যাসী বিদ্রোহে কৃষকদের নেতৃত্বে ছিলেন ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী এবং ফকিরদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মজনু শাহ, চিরাগ আলী, মুসা শাহ।
- বিদ্রোহীরা ঢাকায় ইংরেজ কুঠি আক্রমণ করে। রাজশাহীতে রামপুর কুঠি আক্রমণ করা হয়।
- ১৭৭২ খ্রি সন্ন্যাসী ফকির যোদ্ধাদের আক্রমণে ব্রিটিশ সেনাপতি টমাস এর বাহিনী বিধ্বস্ত হয় ও টমাস নিহত হন।
- ১৭৭৩ খ্রি পুনরায় ইংরেজবাহিনী পরাজিত হয় ও সেনাপতি এডওয়ার্ডের মৃত্যু হয়। এরপর বিভিন্ন কারণে ফকির ও সন্ন্যাসীদের মধ্যে দ্বন্ধ দেখা দিলে বিদ্রোহে ভাঁটা পড়ে।
- ১৭৮৬ তে বগুড়ায় মজুড়ার যুদ্ধে মজনু শাহের মৃত্যু হয় ও মুসা শাহ ইংরাজবাহিনীর কাছে পরাজিত হন।
- ১৭৮৭ সালে ভবানী পাঠক পরাজিত ও নিহত হন এবং দেবী চৌধুরানী পরাজিত হন। এর পরেও ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে বিদ্রোহ চলতে থাকে।
- বিদ্রোহের বিশেষত্ব – বাংলায় সংঘটিত সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের নানান বৈশিষ্ট্য ছিল।
(i) সন্ন্যাসী ও ফকিররা ধর্মচর্চার জন্য তীর্থে ভ্রমণ করলেও কৃষি ছিল তাদের প্রধান পেশা।
(ii) এই বিদ্রোহে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তরের মানুষ যোগদান করেছিলেন।
(iii) বিদ্রোহীরা প্রথমে ইংরেজ বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হলেও উপযুক্ত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব তাদের ইংরেজদের থেকে পিছিয়ে রাখে।
(iv) বিদ্রোহীদের মূল আক্রমণের লক্ষ্যে ছিল ইংরেজ কুঠি থেকে গোলাঘর, অর্থাৎ এককথায় ইংরেজ বিরোধিতাই ছিল তাদের অভিসন্ধি।
- ফলাফল ও আলোচনা –
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ নিয়ে নানা মুনির নানা মত –
(i) কারোর মতে এই বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন। আবার কারোর মতে এটি সাধারণ কৃষক বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছুই নয়।
(ii) ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এর সমকালীন এই বিদ্রোহ আসলে হিন্দুস্তানের যাযাবর ও পেশাদার ডাকাতদের উপদ্রব ছাড়া আর কিছুই নয়।
(iii) নেতৃত্বের দুর্বলতা ও আদর্শহীনতার জন্যই বিদ্রোহ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।
বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন :
ওয়াহাবি শব্দের অর্থ নবজাগরণ। ইসলাম ধর্মকে কলুষমুক্ত করতে আঠারো শতকে আরবে আব্দুল ওয়াহাব নামে এক ফকির সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন, তার নামানুসারে এই আন্দোলন ওয়াহাবি আন্দোলন।
এরপর ঊনবিংশ শতাব্দীতে উত্তরপ্রদেশ এর রায়বেরিলির বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদ ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনকে সংঘটিত করেন। তাই সৈয়দ আহমেদকেই ভারতের ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
- আন্দোলনের কারণ – এই আন্দোলন ধর্মীয় আন্দোলন রূপে শুরু হলেও সৈয়দ আহমেদের নেতৃত্বে তা রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়। তার মতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতে বিধর্মী শাসনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাই বিদেশি শাসনের অবসান না হলে দেশবাসীর নিস্তার নেই।
আন্দোলন বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশের মিরাট, পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রভৃতি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। বাংলায় ২৪ পরগনা জেলায় তিতুমীরের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয় সেখানকার হিন্দু জমিদার ওয়াহাবিদের ওপর জরিমানা ধার্য করলে।
- আন্দোলনের বর্ণনা – বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের সূত্রপাত হয় তিতুমীরের হাত ধরে। তার প্রকৃত নাম ছিল
মীর নিসার আলী। তিনি মক্কায় গিয়ে সৈয়দ আহমেদ এর সঙ্গে পরিচিত হন ও ওয়াহাবি আদর্শে অনুপ্রাণিত হন।
খ্রিস্টাব্দে তার অনুগামীদের নিয়ে পুড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের বাড়ি আক্রমণ করেন। নির্যাতিত দরিদ্র মুসলিমরা তার দলে যোগ দেয়।
২৪পরগনা, নদিয়া, যশোর, মালদহ, রাজশাহী, ঢাকা প্রভৃতি জেলায় আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে তারা দার-উল-হারব বলে ঘোষণা করে দার-উল-ইসলামে পরিণত করার ডাক দেন।
তিতুমীর বারাসাত থেকে বসিরহাট পর্যন্ত অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা করে নিজেকে বাদশাহ ঘোষণা করেন। গোলাম মাসুম হন সেনাপতি ও মঈনুদ্দিন হন তার প্রধানমন্ত্রী।
নারকেলবেড়িয়া গ্রামে তিনি একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। নীলকরদের বাহিনী তিতুর বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। এই ঘটনা বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
শেষ পর্যন্ত ১৮৩১ এ লর্ড বেন্টিঙ্ক কলকাতা থেকে একটি বাহিনী পাঠান। কামানের গোলায় বাঁশের কেল্লা ধ্বংস হয়ে, সংঘর্ষে তিতুমীর ও তার অনেক অনুগামী নিহত হন। বাকি বিদ্রোহীদের ফাঁসি বা কারাদণ্ড হয়।
- আন্দোলনের বিশেষত্ব –
(i) বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামের শুদ্ধিকরণ।
(ii) ধর্মীয় উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও তা জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে চলে যায়।
(iii) আন্দোলন শীঘ্রই অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের মদত্কারী ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। (iv) আন্দোলন ইসলাম কেন্দ্রিক হলেও বহু দরিদ্র নিম্ন বর্ণের হিন্দুরাও এই আন্দোলনে সামিল হয়।
- ফলাফল ও আলোচনা – ওয়াহাবি আন্দোলন আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ মনে হলেও, তিতুমীরের এই বিদ্রোহকে
ঐতিহাসিকরা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারে না।
(i) বিদ্রোহ ধর্মভিত্তিক হলেও উভয় ধর্মাবলম্বী মানুষই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।
(ii) তিতুমীর পরিচালিত এই আন্দোলনকে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা বলে চিহ্নিত করেছেন।
(iii) মুসলিম অত্যাচারী জমিদাররাও আন্দোলনকারীদের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি।
(iv) হিন্দু কৃষকদের একটা বড় অংশ তিতুমীরের বিদ্রোহকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিছু ঐতিহাসিকদের মতে এই আন্দোলন ছিল ধর্মীয় আবরণে মোড়া এক গ্রামীন প্রতিবাদী আন্দোলন। ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের গতিপথ প্রবাহিত হয়েছিল।
বাংলায় ফরাজি আন্দোলন :
ফরাজি শব্দটি আরবি শব্দ ফরাজ থেকে এসেছে যার অর্থ ইসলাম নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য। ফরিদপুর জেলার মৌলবী হাজী শরীয়ত উল্লাহ ইসলাম ধর্মীয় সংস্কারের উদ্দেশ্য নিয়ে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ফরাজি নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামধর্ম সংস্কারের উদ্দেশ্য নিয়ে শরীয়ত উল্লাহের নেতৃত্বে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তা ফরাজি আন্দোলন নামে পরিচিত।
- আন্দোলনের কারণ – ইসলামী ধর্ম সংস্কারের আন্দোলন থেকেই এই আন্দোলনের প্রাথমিক প্রেরণা এসেছিল। ধর্মীয় সংস্কারের উদ্দেশ্যে এই আন্দোলনের সূচনা হলেও শীঘ্রই তা একটি কৃষক বিদ্রোহের চরিত্র নেয়।
- আন্দোলনের বর্ণনা – শরীয়ত উল্লাহ ভারতকে বিধর্মীদের দেশ বলে ঘোষণা করেন। তিনি জানান এদেশ আর ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বাসযোগ্য নেই। তাছাড়া ব্রিটিশ অর্থনৈতিক শোষণের ফলে গ্রামীণ সমাজের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠলে তার প্রতিকারের কোনো পথ ছিলোনা।
- কৃষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ পায় এবং কৃষক সম্প্রদায় সশস্ত্র বিদ্রোহের পথে ধাবিত হয়। ফরিদপুর, ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রভৃতি জেলা আন্দোলন বিস্তৃত হয়।
- ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে শরীয়ত উল্লাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র ‘দুদু মিঞা’ নামে পরিচিত মোহাম্মদ মোহসীন এর নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার অত্যাচারী জমিদার, নীলকর ও তাদের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফরাজি আন্দোলন পরিচালিত হয়।
- তিনি একটি শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী ও গুপ্তচর বাহিনী গড়ে তোলেন। ফরাজিদের আন্দোলনে শঙ্কিত হয়ে পূর্ববাংলার জমিদাররা দমনমূলক ব্যাবস্থা নিলে কোম্পানির কর্তারাও পুলিশবাহিনী নিয়ে জমিদারদের পক্ষ নেয়।
- দুদু মিঞার মৃত্যুর পর আন্দোলন চালিয়ে যান তার পুত্র নোয়া মিঞা। নোয়া মিঞার মৃত্যুর পর আন্দোলন ধীরে ধীরে ব্যর্থ হয়ে পড়ে।
- আন্দোলনের বিশেষত্ব –
(i) আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ইসলামের কুসংস্কার দূর করে ইসলামের শুদ্ধিকরণ।
(ii) ধর্মীয় আন্দোলন হলেও কিছুসময় পর এটি রাজনৈতিক কৃষক আন্দোলনে পরিণত হয়।
(iii) দরিদ্র মুসলিম কৃষকের মধ্যে আন্দোলন এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যায়।
(iv) সাধারণ মানুষকে জমিদার, নীলকরদের আধিপত্য না মানার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ফলাফল ও আলোচনা – এই আন্দোলনের ফলে ফরাজিরা একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। নরহরি কবিরাজের মতে, “ফরাজি আন্দোলনে ধর্মীয় আবেগ যুক্ত থাকলেও তা মূলত কৃষক আন্দোলন ছিল”।
পাগলপন্থী বিদ্রোহ (প্রথম পর্যায়, ১৮২৫-২৭ খ্রি) :
- বিদ্রোহের কারণ – উনিশ শতকের প্রথমে ময়মনসিংহের শেরপুর অঞ্চলে ফকির করিম শাহ সেখানকার মানুষদের তাঁর মতাদর্শে দীক্ষিত করেন ও মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ বিলোপের কথা বলেন। এই নতুন মতাদর্শ অনুরাগীরা ‘পাগলপন্থী‘ নামে পরিচিত।
বিদ্রোহের মূল কারণ ছিল –
(i) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন।
(ii) গ্রামীন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া।
(iii) রাজস্বের পরিমান ও কর বৃদ্ধি।
(iv) ব্রহ্মদেশের যুদ্ধের জন্য কর আদায়।
- বিদ্রোহের বর্ণনা ও ফলাফল – ১৮২৫ সালে করিম শাহের পুত্র টিপু শাহ বা টিপু পাগলের নেতৃত্বে পাগলপন্থী জনগণ অর্থনৈতিক শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয়। করিম শাহের নেতৃত্বে এটি ধর্মীয় আন্দোলন ছিল কিন্তু টিপু এটিকে রাজনৈতিক বিদ্রোহে পরিণত করেন।
পাগলপন্থীরা খাজনা দেওয়া বন্ধ করে ও জমিদারদের ঘরবাড়ি আক্রমণ করে। ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে টিপু শাহ ব্রিটিশ সরকারের হাতে গ্রেফতার হয় ও তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফলে প্রথম পর্যায়ের বিদ্রোহের অবসান হয়।
নীল বিদ্রোহ :
অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব এক অসামান্য ঘটনা। এর ফলে শিল্পের আমূল পরিবর্তন ঘটে এবং বস্ত্রশিল্পে জন্য নীলের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিই একমাত্র নীলচাষের অধিকার ভোগ করত, তারা নীলকর কর্মচারীদের দিয়ে চাষীদের ওপর অত্যাচার করে শস্যের বদলে নীল চাষ করতে বাধ্য করত।
১৮৩৩ এর সনদ আইন দ্বারা নীলচাষে কোম্পানি একছত্র অধিকার পেলে অনেক ইংরেজরা ব্যাক্তিগত মুনাফার আশায় নীলচাষ শুরু করে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে চাষীদের ওপর অত্যাচার। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলার চাষীরা এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু করে তা নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
- বিদ্রোহের কারণ –
(i) নীলকর সাহেবরা সরাসরি জমি কিনে বা ভাড়া নিয়ে তাতে চাষ করাত। এটা এলাকা চাষ নামে পরিচিত ছিল। আবার কখনো চাষীকে অগ্রিম টাকা বা দাদন দিয়ে চাষীর নিজস্ব জমিতেই নীল চাষ করাত। এটা বে-এলাকা চাষ নামে পরিচিত।
নীলকররা লাভের আশায় বে-এলাকা চাষেই বেশি আগ্রহী ছিল। তারা পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নীলকুঠি গড়ে তোলে। চাষীদের দাদনের বিনিময়ে নিজের জমিতে নীলচাষ করতে বাধ্য করা হত।
(ii) দাদনের চুক্তিপত্র অনুযায়ী নিরক্ষর চাষীদের ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হত।
(iii) জমিতে উৎপন্ন নীল বিক্রি করে লাভ পেত না, উপরন্তু শস্যের অভাবে পরিবারে খাদ্যাভাব দেখা দিত।
(iv) নীল চাষে অস্বীকার করলে জুটত সীমাহীন অত্যাচার, মহিলাদের সাথে অশালীন আচরণ-লাঞ্ছনা।
(v) সরকারে অভিযোগ জানালেও সরকার নীলকরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এইসকল কারণে চাষীরা ধর্মঘট শুরু করে যা কিছুদিনেই বিদ্রোহের আকার নেয়।
- বিদ্রোহের বর্ণনা –
- ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে নদিয়ার চৌগাছা গ্রামের বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস প্রথম নীল বিদ্রোহের সূচনা করেন। তারা নীল চাষে অস্বীকার করেন।
- বিদ্রোহ ক্রমশঃ যশোর, খুলনা, পাবনা, ফরিদপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, রাজশাহী প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। চাষীরা সশস্ত্র কর্মসূচি গ্রহণ করে নীলকুঠি আক্রমণ করে আগুন লাগিয়ে দেয়।
- বিদ্রোহের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও জনগণ তাতে সমর্থন জানায়।
- হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শিশির কুমার ঘোষ, মনমোহন ঘোষ প্রমুখ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে আন্দোলনকে সমর্থন জানায়।
- হিন্দু পেট্রিয়ট, সমাচার দর্পণ, সমাচার চন্দ্রিকা নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কথা তুলে ধরে। কৃষকদের দুরাবস্থার কথা নিয়ে দীনবন্ধু মিত্র রচনা করেন ‘নীলদর্পন’।
- মধুসূদন দত্ত এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। ফলে কলকাতার শিক্ষিত সমাজ এই আন্দোলনের ব্যাপারে জানতে পারে।
- বিদ্রোহের বিশেষত্ব – নীল বিদ্রোহে কৃষকরাই ছিল এর মাথা। তাই এটিকে মূলত কৃষক বিদ্রোহ হিসাবেই ধরা হয়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের যোগদান এর জন্য ঐতিহাসিক সুপ্রকাশ রায় এটিকে গণবিদ্রোহ বলে অভিহিত করেন।
আবার এই বিদ্রোহ একটি রাজনৈতিক আন্দোলনও বটে। তাই হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকায় একে জাতীয় বিদ্রোহ বলা হয়েছিল।
- ফলাফল ও আলোচনা –
(i) নীল বিদ্রোহ দমন করা হলেও ইংরেজ সরকার ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে নীল কমিশন (Indigo Commission) গঠন করে। এই কমিশন নীলচাষীদের অত্যাচারের কথা স্বীকার করে নেয়।
(ii) ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে নীল আইন (Indigo Act) পাস হয়, এই আইনে বলা হয় চাষীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নীল চাষ করানো যাবে না।
এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়ে দিগম্বর বিশ্বাস ও বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ‘বাংলার ওয়াট টাইটেলার’ (ইংল্যান্ডের কৃষক বিদ্রোহের নেতা) উপাধি পান। রামরতন মল্লিক ‘বাংলার নানাসাহেব’ বলে পরিচিতি লাভ করেন।
শিশির কুমার ঘোষ গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের অবস্থা সংবাদ সংগ্রহের জন্য ‘ফিল্ড জার্নালিস্ট’ নামে পরিচিত হন। বড়লাট স্বীকার করেন নীল বিদ্রোহ ১৮৫৭ এর মহাবিদ্রোহের থেকে উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁরিয়েছিলো।
পাবনার কৃষক বিদ্রোহ (১৮৭০ খ্রি) :
- বিদ্রোহের কারণ –
- নীল বিদ্রোহের পর পূর্ববঙ্গে পাবনা জেলার কৃষকদের ওপর জমিদারদের অত্যাচার অন্য মাত্রা ধারণ করে।
- কৃষকদের জমি মালিকানা ও পাট্টা দেওয়ার কথা থাকলেও তা ফাঁকি দিয়ে জমিদাররা খাজনা বৃদ্ধি করতে থাকে। কৃষকদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয় ও তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
- বিদ্রোহের বর্ণনা ও ফলাফল –
- ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে কৃষকরা বিদ্রোহ শুরু করে।
- ১৮৭৩ এ পাবনা রায়ত লীগ প্রতিষ্ঠা হয়।
- কৃষকরা খাজনা বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়।
- বিদ্রোহের নেতা ছিলেন ঈশান চন্দ্র রায়, শম্ভু পাল, খুদি মোল্লা প্রমুখ।
- পাবনার ইউসুফসাহী পরগনায় প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয়। এরপর সমগ্র পাবনা থেকে ঢাকা, ত্রিপুরা, বখরগঞ্জ, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলাতেও বিস্তার লাভ করে।
- হিন্দু হিতৈষনী, গ্রামবার্তা পত্রিকায় রমেশ চন্দ্র দত্ত, সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, কৃষ্ণকুমার মিত্র প্রমুখ বিদ্রোহীদের সমর্থন করেন।
- তবে বিদ্রোহ মূলত জমিদারদের বিরুদ্ধেই সংঘটিত হয়েছিল। মধ্যবিত্ত বাঙালিরা তাই এই আন্দোলন থেকে দূরে থাকেন।
- পুলিশের দমন ও দুর্ভিক্ষের প্রকোপে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।
ব্রিটিশ শাসনকালে বিভিন্ন বিদ্রোহ
বিদ্রোহের নাম | বিদ্রোহের স্থান | সময়কাল |
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ | রংপুর, মেদিনীপুর, বীরভূম, নাটোর, জলপাইগুড়ি | ১৭৬৩-১৮০০ |
রংপুর বিদ্রোহ | রংপুর | ১৭৮৩ |
চুয়ার বিদ্রোহ | মেদিনীপুর, বাঁকুড়া | ১৭৯৮-৯৯ |
ভিল বিদ্রোহ | খান্দেশ | ১৮১৯ |
পাগলপন্থী বিদ্রোহ | ময়মনসিংহ | ১৮২৫-২৭ |
বারাসাত বিদ্রোহ (ওয়াহাবি আন্দোলন) | ২৪ পরগনা, নদীয়া, যশোর, মালদহ, রাজশাহী, ঢাকা | ১৮৩১ |
কোল বিদ্রোহ | সিংভূম, মানভূম, হাজারিবাগ, ছোটনাগপুর, পালামৌ | ১৮৩১-৩২ |
ফরাজি আন্দোলন | ফরিদপুর, ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোর | ১৮৩৭-৫৭ |
সাঁওতাল বিদ্রোহ | পালামৌ, সিংভূম, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর | ১৮৫৫-৫৬ |
নীল বিদ্রোহ | নদীয়া, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দিনাজপুর | ১৮৫৯ |
পাবনা বিদ্রোহ | পাবনা | ১৮৭০ |
মুন্ডা বিদ্রোহ | ছোটনাগপুরের অঞ্চল | ১৮৯৯-১৯০০ |
1.ভারতে ফুটবল খেলার প্রবর্তক ছিল-
A. ওলন্দাজরা
B. ইংরেজরা
C. পর্তুগীজরা
D. মিশরীয়রা
Answer: ইংরেজরা
2.ভারতীও নিম্ন বর্গীও ইতিহাস চর্চার স্রষ্টা ছিলেন-
A. ডঃ সুরেন্দ্রানাথ সেন
B. ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার
C. ডঃ রণজিৎ গুহ
D. ডঃ নিধিরাম সেন
Answer: ডঃ রণজিৎ গুহ
3.‘ ইতিহাস একটি বিজ্ঞান- কম ও নয়, বেশি ও নয় ‘ – বলেছিলেন-
A. বিউরি
B. এইচ. কার
C. মার্ক ব্লখ
D. জুবিলাইন
Answer: বিউরি
4. কেকের দেশ নামে ডাকা হয়-
A. ফ্রান্সকে
B. স্কটল্যান্ডকে
C. আয়ারল্যান্ডকে
D. ভারতকে
Answer: স্কটল্যান্ডকে
রেজুলেশন অনুযায়ী বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়-
A. ১২
B.১৮
C.১৫
D.১১
Answer: ১৫
6. মোহনবাগান আই.এফ.এ শিল্ড জয়ী হয় –
A. ১৯১৩খ্রিস্টাব্দে
B. ১৯২০খ্রিস্টাব্দে
C. ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে
D.১৯২১ খ্রিস্টাব্দে
Answer: ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে
7. ‘ Twenty Two Yards to Freedom’ এর লেখক ছিলেন-
A. কপিল দেব
B. টনি ম্যাথন
C. বোরিয়া মজুমদার
D. আশীষ নন্দী
Answerঃ বোরিয়া মজুমদার
8. পৃথিবীর সবথেকে পুরনো খেলা হল-
A. ক্রিকেট
B. কুস্তি
C. হকি
D.মানাকালা
Answer: মানাকালা
9. সত্যাজিত রায় অস্কার জিতেছিলেন-
A. ফেলুদা
B. পথের পাঁচালি
C. চিড়িয়াখানা
D. গুপি বাঘা ফিরে এল
Answer: পথের পাঁচালি
10.বাইশ গজের খেলা হিসেবে পরিচিত
A. ফুটবল
B. সকার
C. ক্রিকেট
D. টেনিস
Answer: ক্রিকেট
11. বিপিন চন্দ্র পালের লেখাতি হল-
A. জীবন স্মৃতি
B. সত্তর বৎসর
C. আনন্দমেলা
D. তদারকি
Answer: সত্তর বৎসর
12. হিস্তরিগ্রাফি কথাটি বলতে বোঝায়-
A. ইতিহাসের লেখচিত্র
B. ইতিহাস রচনাতত্ত্ব
C. ইতিহাসের উপাদান
D. ঐতিহাসিক যুদ্ধ
Answer: ইতিহাস রচনাতত্ত্ব
13. নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চা শুরু হয়েছিল-
A.১৯৯০ দশকে
B.১৯৪০ দশকে
C.১৯৬০ দশকে
D.১৯৫০ দশকে
Answer: .১৯৬০ দশকে
35.‘ হিস্ট্রি ফ্রম বিলো ‘ — রচনা করেন-
A. ই পি থমসন
B. মার্শাল ফচ
C. মার্ক ফেরো
D. জন ওয়াল
Answer: . ই পি থমসন
Related posts:
- ইতিহাসের ধারণা (Itihaser Dharona) History WBBSE Madhyamik Class 10
- সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – Sonkskar Boishistho O Porchacholona History WBBSE Madhyamik Class 10
- History Madhyamik Notes MCQ Questions Chapter 1 Itihaser Dharona
- প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – Protirodh o Bidroho: Boishistyo o Bishleshon Class 10 WBBSE Madhyamik Notes