আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে
- প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
- দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
- তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
- চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি
উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত অর্থাৎ বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব :
সূচনা :
- ভারতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর পরিচালনায় নৌবিদ্রোহ(১৯৪৬ খ্রি:), আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম (১৯৪৪-৪৫ খ্রি:), এছাড়া সশস্ত্র বিপ্লব এবং গণ বিপ্লবের ফলে ব্রিটিশ শক্তির পতনের দিন আগত হয়। ফলে ব্রিটেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করলেও যথেষ্ট শক্তিহীন হয়ে পড়েছিল ।
- পৃথক পাকিস্থানের দাবিতে মুসলিম লীগ অন্যত্র মহম্মদ আলি জিন্নার পরিচালনায় অনড় থাকে।
- নোয়া খালির দাঙ্গায় ও কলকাতায় “প্রত্যক্ষ সংগ্রামে (১৬ই অগাষ্ট, ১৯৪৬ খ্রি:) লীগের উদ্যোগে প্রচুর মানুষের প্রাণ নাশ হয়।
- ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী কেমেন্ট এটলি এই পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা পরিবৃত্তি করার সিদ্ধান্ত নেন।
- ভারত বিভাজন ও ক্ষমতা পরিবৃত্তির বিষয়ে বড়লাট লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন(৩ জুন,১৯৪৭ খ্রি:), যা পরিচিত হয় “মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব” অথবা “মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ” নামে।
- ভারতের স্বাধীনতা আইন পাস হয় (১৮ই জুলাই ১৯৪৭ খ্রি:), যে আইন অনুযায়ী ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ খ্রি: ও অবিভক্ত ভারত দুটি আলাদা রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে যায়
- ভারত
- পাকিস্তান
- পাকিস্তান গড়ে ওঠে বেলুচিস্তান, সিন্ধু, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব, পূর্ব বাংলা ও আসামের শ্রীহট্ট জেলার কিছু অংশ নিয়ে এবং ভারতের অবশিষ্ট অংশ নিয়ে তৈরি হয় স্বাধীন ভারত।
- স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ প্রধান মন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, প্রথম প্রধান মন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু , প্রথম রাষ্ট্রপতি বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ, প্রথম ভারতীয় গভর্নর জেনারেল চক্রবর্তী রাজগোপালচারী ও প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন।
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারত ভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক :
ভারতে স্বাধীনতা লাভের পূর্বে (১৯৪৭ খ্রি) ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ শাসন ছিল ভারতের ৬০% ভূখন্ডে ও ৪০% ভূখন্ড স্বায়ত্তশাসিত ছিল, যা দেশীয় রাজ্য নামে পরিচিত। ব্রিটিশরা ভারত ছাড়ার আগে এই দেশীয় রাজ্য ছিল ৬০১টির বেশি, যার মধ্যে আকারে বড় ও গুরুত্বপূর্ন ছিল চারটি রাজ্য – হায়দ্রাবাদ, জম্মু-কাশ্মীর, বরোদা ও মহীসুর ।
দুটি বিকল্প রাখা হয় ভারতীয় আইন অনুসারে(১৮ই জুলাই,১৯৪৭ খ্রি:) দেশীয় রাজ্যগুলির সামনে-
- স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখা অথবা ভারত
- পাকিস্তানের যে কোন একটি রাজ্যে যোগ দেওয়া।
দেশীয় রাজ্যগুলিকে নানা স্বার্থে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা বিশেষ প্রয়োজনীয় ছিল, যেমন-
- সার্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নতি ও ভারতের অবিভক্ত জাতীয়তাবাদ।
- ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্য গউকির স্বাধীন অস্তিত্ব গ্রাহ্য করা হবেনা তা স্বাধীনতার পূর্বেই গান্ধীজী ও জহরলাল নেহেরু দ্বারা জানিয়ে দেওয়া হয়।
- কংগ্রেস দ্বারা গঠিত “দেশীয় রাজ্য দপ্তর” ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে, যার দায়িত্ব দেওয়া হয় “লৌহ মানব” নামে পরিচিত সর্দার বল্লব ভাই প্যাটেলকে (১৮৭৫-১৯৫০খ্রি:) ।
দেশীয় রাজ্য গুলোকে নানা কারণে অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হয়ে ওঠে , যেমন – লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন এর সহযোগিতা, প্যাটেলের দৃঢ় মনোভাব এবং ভি.পি.মেননের কূট কৌশলের দ্বারা ।
- স্বাধীনতা লাভের ৩ সপ্তাহের মধ্যে প্রথম সরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার প্যাটেলের কঠোর মনোভাব, কূটকৌশল , সামরিক অভিযান চালানোর উদ্যোগ এছাড়া রাজ্যগুলিতে প্রজা বিদ্রোহের আশঙ্কায় অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য “ভারত-ভুক্তির দলিল” বা “ইন্সট্রুমেনট অব অ্যাকসেশন”-এ সাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
- ২১৬ টি দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগদানকারী আশেপাশের প্রদেশগুলির সাথে সঙ্গবদ্ধ হয়ে ২৭৫টি দেশীয় রাজ্য ৫টি আলাদা প্রদেশে পরিণত হয় এছাড়া ৭ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সঙ্গে ৬১টি দেশীয় রাজ্যকে যুক্ত করা হয়।
- কিন্তু ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করে জুনাগড় , কাশ্মীর ও হায়দ্রাবাদ। প্রজাবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়লে ৮০% শতাংশ হিন্দু-অধ্যুষিত জুনাগড়ের মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চাই ।
- তবে কাশ্মীর ও হায়দ্রাবাদ নিয়ে চরম সমস্যা তৈরি হলেও, গণভোটে জুনাগড়ের মানুষ (১৯৪৮ খ্রি:) ভারতে যোগদানের পক্ষে ভোট দিলে রাজ্যটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত (১৯৪৯ খ্রি:) হয়।
- বেশিরভাগ দেশীয় রাজ্য ভারতে যুক্ত হওয়ার পর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের নিজস্ব সংবিধান রচিত হয় যা সংবিধান দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস নামে পালন করা হয় এবং সস্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে সেদিন থেকে ভারত আত্মপ্রকাশ করে। ভারতের চারটি শ্রেণী ছিল এই সময়। যেমন-
ক: রাজা ও এই ধরনের শাসক দ্বারা শাসিত রাজ্য – হায়দ্রাবাদ, মধ্যভারত, জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান, সৌরাষ্ট্র ও ত্রিবানকুর-কোচিন, মহীসুর, পাতিয়াল ও পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন (Pepsu)।
খ: গভর্নর শাসিত রাজ্য – বোম্বাই, মাদ্রাস ও পাঞ্জাব,আসম, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা।
গ : কেন্দ্রশাসিত রাজ্য – আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
ঘ : কমিশনার শাসিত রাজ্য– ভুপাল, হিমাচল-প্রদেশ, বিলাসপুর, আজমির, মণিপুর, দিল্লি, কুর্গ, কচ্ছ, ত্রিপুরা ও বিন্ধ প্রদেশ (মোট ১০টি)।
১৯৪৭ এর পর উদবাস্তু সমস্যা :
- ভারত ও পাকিস্তানের বিপুল মানুষ তাদের ভিটে মাটি ছাড়তে বাধ্য হয় । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশ ভাগের পরে নানা দাঙ্গা , লুণ্ঠন , অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, নির্যাতন প্রভৃতি ঘটে, আর এই ঘটনা ইতিহাসে পরিচিত হয় “বৃহত্তম গান প্রচারণ নামে”।
- পরবর্তীকালে বহু মানুষ দেশ ছাড়েন ও ১ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পরে।
- বহু পরিবার ভেঙে যায় এছাড়া ট্রেনে বা গরুর গাড়িতে, পায়ে হেটে, নদী পারা পারের সময় বহু মানুষ প্রাণ হারায়।
- ৫০ হাজার অবৈধ শিশুর জন্ম হয় কারণ ১ লক্ষ নারী ধর্ষিত হন।
- নিজেদের ধর্ম ও জীবন রক্ষার তাগিদে পূর্ব পাকিস্তানের বহু মানুষ পশ্চিমবঙ্গ , অসম, ত্রিপুরা নানান রাজ্যে আশ্রয় নেয়, তেমনি বিপুল পরিমাণে সংখ্যালঘু শিখ ও হিন্দু ভারতের পূর্ব পাঞ্জাব ও নিকটবর্তী রাজ্যে আশ্রয় নেয়।
- যদিও ভারতে আগত উদ্বাস্তুর পরিমাণ পাকিস্তানে চলে যাওয়া মানুষের থেকে অনেক বেশি, যার ঢেউ প্রধানত দেখতে পাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাঞ্জাবে।
উদ্বাস্তুর সমস্যা এই দেশে কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে আসে কারণ স্বাধীন ভারতের উদবাস্তুর আর্থিক দায় বহন করা ছিল অত্যন্ত কঠিন।
উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ ও বিতর্ক :
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি কে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যায় ফেলে দেয় পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা লক্ষ লক্ষ উদবাস্তু। তাই নানা চিন্তা ভাবনা ও মত বিরোধ শুরু হয় উদবাস্তু সমস্যা কে কেন্দ্র করে। যেমন –
- ভারত অভিযোগ আনে , পাকিস্তান সেখানকার সংখ্যা লঘু শিখ ও হিন্দুদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করে, ফলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আক চুক্তি হয় যা “নেহেরু-লিয়াকত চুক্তি নামে পরিচিত” (১৯৫০খ্রি:)।
- যদিও উদ্বাস্তু সমস্যা না মেনে প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু দেশভাগের পরের ৫ বছর উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের দ্বারা সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন, তাই এই সময়কে বলা হয় “পুনর্বাসনের যুগ”।
- সম্পত্তি ও বিনিময়ের সিদ্ধান্ত পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে নেওয়া হলেও বাংলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার তেমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি, বরং বাঙালি উদ্বাস্তুদের ভারত সরকার পূর্ব পাকিস্তানে পাঠাতে বেশি উদ্যোগী ছিলেন।
- পূর্ব বঙ্গ থকে হিন্দুরা ক্রমাগত আসতে থাকলে, নেহেরু বিব্রত হয়ে পড়েন, যা গবেষক প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তীর লেখা থেকে জানা যায়।
- নেহেরুর পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাঞ্জাবের উদবাস্তুদের জন্য আলাদা মনোভাবের জন্য সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গ্রন্থে এই বিতর্ক তথ্য সমেত দেখানো আছে, যেমন- প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তীর ‘দ্যা মার্জিনাল মেন’, রণজিৎ রায়ের ‘ধংসের পথে পশ্চিম বঙ্গ’, ও উদ্বাস্তু কমিশনার শ্রীহীরণ্ময় বন্দোপাধ্যায়ের ‘উদবাস্তু’।
এর ফলে পাঞ্জাবের উদবাস্তুর সমস্যা দ্রুত সমাধান হলেও, বাঙালি উদবাস্তুর সমস্যা জটিল হয়ে পরে ও অবস্থা আরো ভয়ংকর আকার নেয়। উদবাস্তুরা নদীয়া জেলার কুপার্স পি.এল.হোম, চাঁদমারি পি.এল.হোম সহ পশ্চিমবঙ্গের নানান উদ্বাস্তু শিবিরে, শিয়ালদা , হাওড়া স্টেশনে, ফুটপাতে, খোলা আকাশের নিচে, অশস্তিকর পরিবেশে, অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হয়। উড়িষ্যা-মধ্যপ্রদেশের সীমান্ত সংলগ্ন দন্ডকারণ্যয়ের রুক্ষ-প্রতিকূল পরিবেশে ও সুদূর আন্দামানে অনেক উদবাস্তুদের পুনর্বাসনে পাঠানো হয় , আর নামমাত্র পুনর্বাসনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকে।
দেশভাগ সম্পর্কিত স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনী :
স্বাভাবিক ভাবেই উদবাস্তুদের মনে ও জীবনে গভীর ভাবে যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব ফেলে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগ, পূর্ব পুরুষের ভিটে মাটি ত্যাগ করে আসা ও নানান ঘটনা, যা ফুটে ওঠে নানা লেখকের আত্মজীবনী, সাহিত্য ও স্মৃতিকথার মধ্যে দিয়ে।
হিন্দু-মুসুলমান সম্পর্কের টানাপোড়েন, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগ, ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের দাঙ্গা সকল লেখকের ছত্রে ছত্রে ধরা পড়ে, যেমন – হীরণ্ময় বন্দোপাধ্যায়ের ‘উদবাস্তু’, জ্যোতির্ময়ী দেবীর ‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা’, চৌধুরী খালীকুজ্জামানের ‘পাথ ওয়ে টু পাকিস্তান’, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতার স্বাদ’।
বাংলার নিম্ন বর্গের মানুষ স্বপ্ন দেখেছে আবু ইসহাকের “সূর্যদিঘীল বাড়ি” উপন্যাসে, যে চালের দাম কমবে দেশ স্বাধীন হলে, তারা খেয়ে পড়ে বাঁচবে কিন্ত মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে, উদবাস্তু হতে হয় দেশভাগের পর। দেশভাগের পড়ে নিলুর মামা বাড়ি অন্য দেশে পড়ে।
শঙ্খ ঘোষের উপন্যাস ‘সুপারিবনের সারি’-তে দেখা যায়, যার মানে নিলু না বুঝলেও খারাপ কিছুর ইঙ্গিত সে পায়। ‘যাপিত জীবন ও গায়েত্রী সন্ধ্যা’ সেলিনা হোসেনের লেখায় দেশভাগের আঘাত ফুটে উঠেছে। কালীপ্রসাদ মুখপাধ্যায়ের “শিকড়ের সন্ধান”, মণিকুন্তলা সেন-এর “সেদিনের কথা”, দক্ষিণরঞ্জন বসুর “ছেড়ে আসা গ্রাম” সকল বইয়ে জন্ম ভূমির উপর এক মায়াবী টান ফুটে উঠেছে।
দেশভাগের অনিবার্য ঘাত ফুটে উঠেছে সাম্প্রতিক প্রকাশিত হাসান অজিবুল হকের “আগুন পাখি” উপন্যাসে। অতীন বন্দোপাধ্যায়ের “নীলকন্ঠ পাখির খোজে”, সুনীল গঙ্গপাধ্যায়ের “অর্ধেক জীবন”, প্রফুল্ল রায়ের “কেয়া পাতার নৌকা”, মহাশ্বেতা দেবীর “আধার মানিক” গুরুত্বপুর্ণ উপন্যাস দেশভাগের প্রেক্ষাপটে।
বাঙালি উদবাস্তুর চরম দুর্দিনের চিত্র ফুটে ওঠে ঋত্বিক ঘটকের “সুবর্ণরেখা”, “মেঘে ঢাকা তারা”, সত্যজিৎ রায়ের “অশনি সংকেত”, মৃণাল সেনের “আকালের সন্ধানে” এবং এই সকল আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা, চলচিত্রে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথাও প্রকাশ পেয়েছে। এই কটকীর্ণ কালেও সাহিত্যে প্রতিফলিত হয় মূল্যবোধ ও মানবিকতার।
- পাঞ্জাবি ভাষায় কুলবন্ত সিং বিরক, ভীশ্ব সাহানী ,
- ইংরেজি ভাষায় খুশবন্ত সিং, সালমান রুশদী, ড: ভীমরাও আম্বেদকর, আর.কে.নারায়ণ, উর্বশী বুটলিয়া,
- হিন্দি ভাষায় যশপাল, রাঙেয় রাঘ,
- উর্দু ভাষায় কৃষাণ চন্দর, সাদাত হাসান মান্ট, মুন্সী প্রেমচাঁদ প্রমুখ তাদের লেখায় দেশভাগের দুর্দশার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।
মুন্সী প্রেমচাঁদের “গোদান”, সাদাত হাসান মান্ট-র “টোবা টেক সিং”, খুশবন্ত সিং-এর “ট্রেন টু পাকিস্তান”, ভীশ্ব সাহানীর “তমস”, সালমান রুশদীর “মিড নাইট চিলড্রেন”, ড: ভীমরাও আম্বেদকরের “পাকিস্তান অর পার্টিশন অব ইন্ডিয়া”, আর.কে.নারায়ণ-এর “ওয়েটিং ফর দা মহাত্মা”, উর্বশী বুটলিয়ার “আদর সাইড অব দা সাইলেন্স-ভয়েসেস ফ্রম দা পার্টিশন অব ইন্ডিয়া” নানা বইতে দেশভাগের চিত্র আঁকা হয়েছে।
ভারতে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ ও বিতর্ক:
সংস্কৃতি ও ভাষাকে গুরুত্ব না দিয়ে স্বাধীনতা লাভের পর রাজ্যের সীমারেখা ঠিক করার ফলে আলাদা ভাষার মানুষ একই রাজ্যের বাসিন্দা হওয়ায় সাংস্কৃতিক সংকট তৈরি হয়।
যে মাতৃভাষা দ্বারা যোগাযোগ নিবিড় হয়, সেই নিবিড়তায় বাঁধা হয় রাজ্যের সীমারেখা। ফলে ভাষা অনুযায়ী পুনর্গঠন করা হবে স্বাধীনতা লাভের পর নেতৃবৃন্দের কথার উপর নির্ভর করে তাই আশা করা হয়েছিল।
- নতুন করে বিতর্ক দেখা দেয় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার পরে, ভারতের অঙ্গরাজ্য ও যোগ দেওয়া দেশীয় রাজ্যগুলি ভাষা অনুযায়ী নাকি সীমানা অনুযায়ী গঠন হবে তাই নিয়ে।
- বিচারক এস. কে দর-এর নেতৃত্বে ভারতের গণপরিষদ ১৯৪৮ খ্রি: “ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন” গঠন করা হয়, যার ফলে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনে বাধা সৃষ্টি হয়।
- দেশের জাতীয় ঐক্য ও প্রশাসনিক কাজ-কর্ম নষ্ট হবে যদি ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠন হয়, কমিশনের মতে।
- অন্যদিকে দেশের নানা প্রান্তে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের জন্য আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে, যা জোরালো হয় দক্ষিণ ভারতে।
- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে জহরলাল নেহেরু, বল্লবভাই প্যাটেল ও পট্টভি সিতরমাইয়াকে নিয়ে ক্ষোভের আঁচ কমানোর জন্য কংগ্রেস একটি কমিটি নিয়োগ করে, যা জেভিপি কমিটি নামে পরিচিত। এটিও ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনে অমত করে। যার ফলে আন্দোলন ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
পত্তি শ্রীরমালু (১৯০১-৫২ খ্রি:) মাদ্রাস প্রদেশে ভাষাভিত্তিক অঞ্চল গঠনের দাবিতে ৫৮ দিন অনশন করে মারা যান (১৯৫২ খ্রি:), ফলে ৩ দিন ধরে তেলেগু (অন্ধ্রপ্রদেশ)-তামিল দের মধ্যে দাঙ্গা, হাঙ্গামা, হরতালের ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
মাদ্রাস প্রদেশের তেলেগু ভাষাভাষী অঞ্চল একত্রিত করে আলাদা অন্ধ্রপ্রদেশ গঠন করা হয় কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা ও তামিল ভাষীদের জন্য গঠন হয় তামিলনাড়ু। এর থেকে উৎসাহিত হয়ে অন্য ভাষাগোষ্ঠীও আলাদা রাজ্যের দাবি জানায়।
ভাষার ভিত্তিতে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠিত হওয়ার পরেও নানা সময় আলাদা রাজ্য পুনর্গঠিত হয় , যেমন-
- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাই আন্দোলনের পর কেন্দ্রীয় সরকার, মুম্বাই রাজ্য ভেঙে আলাদা তৈরি হয় মহারাষ্ট্র ও গুজরাট। গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদ ও মহারাষ্ট্র রাজধানী মুম্বাই। কেরালা গঠিত হয় মালাবার, ত্রিবাঙ্কুর ও কোচিন নিয়ে।
- অসম রাজ্যকে ভেঙে ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয় ১৯৫৭ থেকে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, যেগুলি হল-নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মিজোরাম ও উত্তর পূর্ব সিমান্ত অঞ্চল(NEFA)। উত্তর পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলের নতুন নাম হয় ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে “অরুণাচল প্রদেশ”।
- গোয়া, দমন , দিউ প্রভৃতি ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগীজ উপনিবেশ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে ভারতের সঙ্গে মিলিত হয়।
- পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা পায় নাগাল্যান্ড ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে, হিমাচল প্রদেশ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে।
- PEPSU প্রদেশ ভেঙে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশ গঠন করা হয়।
ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের ফলে আন্তরাজ্য সমস্যা বেড়ে ওঠে , যেমন-নদীর গতিপথ, জলবণ্টন প্রভৃতি। যদিও ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের ফলে জাতীয় সংহতি আরো নিবিড় হয় রজনী কোঠারি ও বিপিনচন্দ্র প্রমুখের মতে।
SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দিতীয় পর্ব
1 MARKS QUESTIONS of উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দিতীয় পর্ব
স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতে কতগুলি দেশীয় রাজ্য উপস্থিত ছিল ?
উত্তরঃ স্বাধীনতার প্রাক্কালে ৬০১ টি দেশীয় রাজ্য ভারতে উপস্থিত ছিল।
ভারতের সঙ্গে গোয়া কবে যুক্ত হয় ?
উত্তরঃ ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে গোয়া ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
গোয়া কাদের উপনিবেশ ছিল ?
উত্তরঃ গোয়া পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল ।
হায়দ্রাবাদ অভিযানে ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব কে দেন ?
উত্তরঃ জেনারেল জে এন চৌধুরী হায়দ্রাবাদ অভিযানে ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ।
মেহেরচাঁদ মহাজন কে ছিলেন ?
উত্তরঃ মেহেরচাঁদ মহাজন দেশীয় রাজ্য কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
কাশ্মীরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর নাম লেখ।
উত্তরঃ শেখ আবদুল্লাহ কাশ্মীরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
স্বাধীন হায়দ্রাবাদ রাজ্য কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তরঃ ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন হায়দ্রাবাদ রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় ।
দিল্লির মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে চিন কিলিচ খাঁ কী উপাধি লাভ করে?
উত্তরঃ দিল্লির মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে চিন কিলিচ খাঁ – ‘আসফ ঝা’ উপাধি লাভ করেন।
কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে নির্ধারিত সীমারেখার অবস্থিত তার নাম কি ?
উত্তরঃ কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নির্ধারিত সীমারেখার নাম হল- লাইন অব কন্ট্রোল ( LOC ) বা নিয়ন্ত্রণ রেখা।
মুসলিম লিগ কবে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবির প্রস্তাব গ্রহণ করে?
উত্তরঃ মুসলিম লিগ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে ‘ লাহোর প্রস্তাব ‘ বা ‘ পাকিস্তান প্রস্তাব’ গ্রহণ করে ।
multiple choice questions – 1 marks of উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দিতীয় পর্ব
১. স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর – জেনারেল এর নাম লেখ?
- লর্ড মাউন্টব্যাটেন
- জওহরলাল নেহরু
- বাবু রাজেন্দ্র প্রসাদ
- চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী
উত্তর : লর্ড মাউন্টব্যাটেন
২. ভারতের সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য ছিল কোনটি?
a.কাশ্মীর
b.হায়দ্রাবাদ
c.জুনাগড়
d.বরোদা
উত্তর : হায়দ্রাবাদ
৩. দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিতে কে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন?
- জওহরলাল নেহরু
- সুভাষচন্দ্র বসু
- চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী
- সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল
উত্তর : সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল
৪. কোন সালে সিকিম ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয় ?
- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে
- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে
- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে
- ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর : ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে
৫. গণভোটের মাধ্যমে কোন দেশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ?
- কাশ্মীর
- হায়দ্রাবাদ
- জুনাগড়
- গোয়ালিয়র
উত্তর : জুনাগড়
৬. আজাদ কাশ্মীর কাদের দখলে রয়েছে ?
- ভারতের
- পাকিস্তানের
- চিনের
- জাতিপুঞ্জের
উত্তর : পাকিস্তানের
৭. কাশ্মীরের মহারাজ কে ছিলেন?
- হরি সিং
- মেহের স্টার
- ওমর আবদুল্লাহ
- শেখ আবদুল্লাহ
উত্তর : হরি সিং
৮. কোন দেশ হায়দ্রাবাদের নিজামকে চরমপত্র পাঠায় ?
- জুনাগড়
- কাশ্মীর
- ভারত
- পাকিস্তান
উত্তর : ভারত
৯. হায়দ্রাবাদ কবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের-
- ১ জানুয়ারি
- ১২ জানুয়ারি
- ২৬ জানুয়ারি
- ২৩শে জানুয়ারি
উত্তর : ২৬ জানুয়ারি
১০. জুনাগড় রাজ্য কত খ্রিস্টাব্দে ভারত ভুক্ত হয়—
- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে
- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে
- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে
- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর : ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে
Short Questions – 2-3 Marks of উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দিতীয় পর্ব
‘দেশীয় রাজ্য’কাকে বলে ?
উত্তর : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পূর্বে ভারতীয় ভূখণ্ডে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনের বাইরে ছোটোবড় মিলিয়ে প্রায় ৫৬৫ টি স্বয়ংশাসিত রাজ্য উপস্থিত ছিল। এগুলি ‘দেশীয় রাজ্য’ নামে পরিচিত ছিল।
ভারতের স্বাধীনতা আইন দ্বারা নেওয়া পদক্ষেপ গুলি উল্লেখ কর।
উত্তর : ভারতের স্বাধীনতা আইন (১৯৪৭ খ্রি.) – এর দ্বারা –
- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে
- ঐক্যবদ্ধ ভারত বিভক্ত হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠিত হয়।
- সিধু, বেলুচিস্তান, উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব, পূর্ব বাংলা ও আসামের শ্রীহট্ট জেলার কিছু অংশ নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়।
- অবশিষ্ট ভূখণ্ড নিয়ে ভারত গঠিত হয়।
ভারতের স্বাধীনতা আইনে (১৯৪৭ খ্রি.) – দেশীয় রাজ্যগুলির প্রাপ্ত অধিকার কী ছিল ?
উত্তর : ‘ ভারতের স্বাধীনতা আইন ‘ ( ১৯৪৭ খ্রি . ) – এ বলা হয় যে –
- দেশীয় রাজ্যগুলি তাদের ইচ্ছা অনুসারে নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে । অথবা ,
- ভারত ও পাকিস্তান- এর মধ্যে যে কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগদান করতে পারবে।
দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ?
উত্তর : দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ( ১৮৭৫-১৯৫০ খ্রি .) সর্বাধিক গুরুপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ বিষয়ে তার কঠোর নীতির জন্য তিনি ‘লৌহমানব’ নামে পরিচিত ছিলেন।
ব্রিটিশ ভারতের বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্যের নাম উল্লেখ কর।
উত্তর : ব্রিটিশ ভারতের সর্বাধিক বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্য ছিল a. হায়দ্রাবাদ b. মহীশূর c. বরোদা ও d. জম্মু – কাশ্মীর।
জুনাগড় কীভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ?
উত্তর : হিন্দু অধ্যুষিত জুনাগড়ের মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে সেখানকার প্রজারা তীব্র বিদ্রোহ শুরু করে। এই অবস্থায় ভীত নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান এবং ভারতীয় সেনা উদ্গ্রীবতার সাথে জুনাগড়ে প্রবেশ করে।
এমন অবস্থায় গণভোটের ( ১৯৪৮ খ্রি . ) মাধ্যমে জুনাগড় ভারতের অন্তর্ভুক্ত ( ১৯৪৯ খ্রি . ) হয় ।
জুনাগড়ের নবাবের পাকিস্তান চলে যাওয়ার কারণ কি ছিল ?
উত্তর : দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই ছিল হিন্দু। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর সেখানকার মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে সেখানে প্রজারা তা মেনে না নিয়ে বিদ্রোহ শুরু হয়। অন্যদিকে ভারতীয় সেনা অত্যন্ত উদগ্রীবতার সঙ্গে জুনাগড়ে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হয়। এই অবস্থায় নবাব আতঙ্কিত হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান।
ভারতের সঙ্গে কবে, কোন কোন ফরাসি উপনিবেশ যুক্ত হয়?
উত্তর : ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গণভোটের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে, কারিকল প্রভৃতি ভারতের সঙ্গে এক চুক্তির দ্বারা ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর কোন্ কোন্ স্থানে ফ্রান্স ও পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল?
উত্তর : ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর চন্দননগর, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে, কারিকল প্রভৃতি স্থানে ফ্রান্সের এবং গোয়ায় পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল।
‘লাইন অব কন্ট্রোল’ ( LOC ) বলতে কী বোঝো ?
উত্তর : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের আত্মপ্রকাশের পর কাশ্মীরের উপর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
অবশেষে জাতিপুঞ্জ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে (৩১ ডিসেম্বর) কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি ঘােষণা করে। জাতিপুঞ্জের এই নির্ধারিত যুদ্ধবিরতি সীমারেখা নিয়ন্ত্রণ রেখা ‘ বা ‘ Line of Control ‘ ( LOC ) নামে পরিচিত।
long questions – 5 marks of উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দিতীয় পর্ব
ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তর : স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখন্ডে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনাঞ্চল ছাড়াও বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল যার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ-
আয়তন :
- দেশীয় রাজ্যগুলির অধিকাংশই আয়তনে ক্ষুদ্র ছিল।
- কোনো কোনো রাজ্যকে শুধু জমিদার শাসিত এলাকাই বলা যেত।
- অল্প কয়েকটি দেশীয় রাজ্যই আয়তনে বেশ বড় ছিল। যার মধ্যে অন্যতম ছিল- হায়দ্রাবাদ, মহীশূর, বরোদা, জম্মু ও কাশ্মীর।
সংখ্যাধিক্য : ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রায় ৬০০ টি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল এগুলি যেগুলি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থিত ছিল ।
স্বৈরশাসন : দেশীয় রাজ্যগুলির শাসকগণ ছিলেন রাজ্যের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। আইনের উর্ধে অবস্থিত এই শাসকেরা নিজ নিজ রাজ্যে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করতেন।
প্রজাদের দুর্দশা : প্রজাদের অবস্থা এই রাজ্যেগুলিতে ছিল খুবই করুণ । তাদের ওপর ছিল অধিক করের বোঝা।
পশ্চাদগামিতা : বেশিরভাগ দেশীয় রাজ্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সামরিক, শিক্ষাগত প্রভৃতি ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে ছিল।
স্বাধীনতা লাভের পর ভারত দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে কীরূপ নীতি বা উদ্যোগ গ্রহণ করে ?
উত্তর :
- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের পূর্বে মুহূর্তে ভারতীয় ভূখণ্ডে দেশীয় শাসকদের শাসনাধীনে ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ৫৬৫ – ৬০০ টি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল ।
- এ ছাড়া পোর্তুগাল, ফ্রান্স প্রভৃতি কয়েকটি রাষ্ট্রের উপনিবেশও ভারতে ছিল । স্বাধীনতা লাভের পর ভারত এসব স্থান নিজ অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়ে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করে।
কংগ্রেসের ঘোষণা : স্বাধীনতা লাভের আগেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘােষণা করে । তারা ১৯৪৭ খ্রি : ১৫ জুন ঘােষণা করে যে , ব্রিটিশ শক্তি ভারত ছেড়ে যাওয়ার পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব কংগ্রেস স্বীকার করবে না। ভারতীয় উপনিবেশগুলি সম্পর্কেও কংগ্রেস একই নীতি গ্রহণ করে।
ভারতভুক্তি : বল্লভভাই প্যাটেলের কূটনৈতিক চাপ ও হুমকির ফলে স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী ৩ সপ্তাহের মধ্যেই অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ‘ভারতভুক্তির দলিল’- এ স্বাক্ষর করে ভারতের সঙ্গে যোগ দেয়। প্রথমদিকে জুনাগড় , হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর ভারতে অন্তর্ভুক্তিতে অস্বীকার করলেও শেষে ভারতের চাপে তারাও বাধ্য হয় যোগ দিতে। সিকিমও ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতে যোগ দান করে।
বল্লভভাই প্যাটেলের সক্রিয়তা : স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভপ্পলা পঙ্গুন্নি মেনন ( ভি পি মেনন ) দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্যাটেল দেশীয় রাজ্যের শাসকদের ভারতভুক্তির বিনিময়ে বিপুল ভাতা , খেতাব ও অন্যান্য সুবিধা দানের প্রলােভন দেখান।
অন্যান্য উপনিবেশ : পরবর্তীতে চন্দননগর, কারিকল, মাহে, পন্ডিচেরী , ইয়ানাম প্রভৃতি ফরাসি উপনিবেশ এবং গোয়া , দমন , দিউ , দাদরা ও নগর হাভেলি প্রভৃতি পাের্তুগিজ উপনিবেশও ভারতের চাপে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের ফলে ভারতে কিরূপ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল ?
উত্তর : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় । এই নবগঠিত ভারত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখীন হয় ।যেমন –
- দেশত্যাগ : দেশভাগের পর মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তানের সৃষ্টি হলে সেখানে থাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ( যেমন হিন্দু, শিখ প্রভৃতি ) জীবন, ধর্ম ও সম্পত্তি নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়। এর ফলে পাকিস্তানে থাকা লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও শিখ দেশত্যাগ ভারতে চলে আসে।
- উদ্বাস্তু সমস্যা: পূর্ব পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও শিখ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয় । এই বিপুল সংখ্যক মানুষের অন্নবস্ত্র বাসস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে ভারত সরকার এক কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়।
- সম্পদ হ্রাস : দেশভাগের ফলে ভারতের অর্থ , সম্পদ , সামরিক শক্তি প্রভৃতির একটি বড়াে অংশ পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় ভারতের অর্থ ও সম্পদ যথেষ্ট হ্রাস পায়। যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে
- শিল্পের কাঁচামালের অভাব : ভারতের কঁচামাল যেমন পাট, তুলো প্রভৃতি উৎপাদক অঞ্চলের অনেকাংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে ভারতে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব দেখা দেয় ও শিল্প উৎপাদন যথেষ্ট ব্যাহত হয় ।
- কৃষি উৎপাদন ব্যাহত : ভারতের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি এই দেশ ভাগের ফলে পাকিস্তানের ভাগে চলে যায়। ফল স্বরূপ ভারতের কৃষি উৎপাদনে যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটে এবং দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয় ।
ভারতে যোগদানের আগে দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপগুলি আলোচনা কর ।
উত্তর : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের পূর্বে ভারতীয় ভূখণ্ডে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসিত অঞ্চল ছাড়াও ছোটোবড় মিলিয়ে অন্তত ৬০০ টি দেশীয় রাজ্য উপস্থিত ছিল। রাজ্যগুলির মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৯ কোটি।
মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব : ‘মন্ত্রী মিশন’ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ( ১৬ মে ) ঘোষণা করে যে ,
[ i ] ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্যগুলির ওপর ব্রিটিশদের কোনো আধিপত্য থাকবে না।
[ ii ] স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ শাসিত ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলি একত্রে একটি ভারতীয় ইউনিয়ন গঠন করবে ।
[ iii ] বিদেশনীতি, প্রতিরক্ষা ,যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি কিছু বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে দেশীয় রাজ্যগুলিতে নিজ নিজ শাসকদের অধিকার বজায় থাকবে ।
কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি : জাতীয় কংগ্রেস ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন ঘোষণা করে যে , স্বাধীনতা লাভের পর কংগ্রেস কোনো দেশীয় রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেবে না। জুলাই মাসে কংগ্রেস নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দায়িত্বে ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দপ্তরের মাধ্যমে ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।
ভারতের স্বাধীনতা আইন : ‘ভারতীয় স্বাধীনতা আইন’ ( ৪ জুলাই , ১৯৪৭ খ্রি . ) – এ দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিজ নিজ স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অথবা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ইচ্ছানুসারে যেকোনো একটি রাষ্ট্রে যোগদানের অধিকার দেওয়া হয়।
ভারতের স্বাধীন দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব কীরূপ ছিল?
উত্তর : ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় থাকবে, না তারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দেবে সে বিষয়ে স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়। জাতীয় কংগ্রেস দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে মত প্রকাশ করে ।
কংগ্রেসের ঘোষণা : জাতীয় কংগ্রেস ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন ঘােষণা করে যে , ব্রিটিশ শক্তির ভারত ত্যাগের পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব ভারত কখনোই স্বীকার করবে না ।
হরিপুরা কংগ্রেস : ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে জাতীয় কংগ্রেস, দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে ঘোষণা করে।
গান্ধিজির নীতি : কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধি মনে করতেন যে , ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর কোনো দেশীয় রাজ্য যদি স্বাধীনতা ঘোষণা করে তাহলে তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণার সমান।
নেহরুর নীতি : কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু মতানুসারে, ভারতের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত কোনো দেশীয় রাজ্যের স্বয়ং অস্তিত্ব স্বীকার করা হবে না।
দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভারতের উদ্দেশ্য কী ছিল আলোচনা কর ? অথবা, ভারত কী কারণে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয় ?
উত্তর : স্বাধীনতার পূর্বে ভারতের ভৌগোলিক সীমানায় অন্তত ৫৬৫ টি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল | এসব রাজয়গুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ভারতের কিছু উদ্দেশ্য ছিল । যথা-
ঐতিহ্যের সংকট : ভারতের ভৌগোলিক সীমানায় অবস্থিত ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলি দীর্ঘদিন ধরে একই ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে চলেছে । তাই দেশীয় রাজ্যগুলি যদি স্বাধীন হয় তাহলে তা ইতিহাস ও ঐতিহ্য – বিরোধী হবে।
জাতীয়তাবাদ : ব্রিটিশ শাসনকালে ব্রিটিশ – ভারত এবং দেশীয় রাজ্যগুলির জনগণ ঐক্যবথভাবে ব্রিটিশদের বিরােধিতা করে। ভারতের জাতীয় নেতৃবৃন্দও অখণ্ড ভারতীয় জাতীয়তাবাদে বিশাস করতেন। তাই তারা বিচ্ছিন্ন স্বাধীন ভারতের কল্পনা করতেন না।
প্রজা আন্দোলন : গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার দাবিতে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের শক্তিশালী প্রজা আন্দোলন শুরু হয়। ফলে দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।
পশ্চাদগামিতা : দেশীয় রাজ্যগুলির অধিকাংশই পিছিয়ে পড়া ও কুসংস্কারে আছন্ন ছিল । স্বৈরাচারী শাসন ও মধ্যযুগীয় ভাবধারায় আচ্ছন্ন এইসব রাজ্যের মানুষ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে এর থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল।
দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির বিষয়ে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তর : কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু এবং মহাত্মা গান্ধি ভারতের স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই জানান যে , স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত কোনো দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ভারত সরকার স্বীকার করবে না।
স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
কূটনৈতিক চাপ : বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে প্যাটেল নানান কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেন। তিনি তাঁর সচিব ডি পি মেননকে বলেন যে , আমরা দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারলে আমাদের কষ্টের দ্বারা অর্জিত স্বাধীনতা দেশীয় রাজ্যগুলির দরজা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
কঠোর মনোভাব : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতীয় ভৌগোলিক সীমানায় অবস্থিত দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতে যােগদানে বাধ্য করতে কঠোর ও অনমনীয় মনোভাব গ্রহণ করেন ।
সামরিক হুমকি : সর্দার প্যাটেল কোনো কোনো দেশীয় রাজ্যকে সামরিক অভিযানের ভয় দেখিয়ে বাধ্য করেন ভারতে যোগ দিতে।
অভিযান : সর্দার প্যাটেল হায়দ্রাবাদ, কাশ্মীর, জুনাগড় প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় রাজ্যগুলির ওপর সামরিক অভিযান চালিয়ে রাজ্যগুলি ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন।
ভারতের সঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলির সংযুক্তিকরণের ক্ষেত্রে কী ধরণের পদ্ধতি গৃহীত হয়?
উত্তর : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সরকার দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করতে কার্যকরী উদ্যোগ নেয় । এই সংযুক্তিকরণে কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। যেমন-
যুক্তরাজ্য গঠন : ২৭৮ টি দেশীয় রাজ্যকে নিয়ে ৮ টি প্রদেশ গঠন করা হয় যার মধ্যে অন্যতম ছিল জম্মু কাশ্মীর , হায়দ্রাবাদ ও মহীশূর। অবশিষ্ট ২৭৫ টি দেশীয় রাজ্যকে অন্যান্য ৫ টি প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত করে বৃহৎ রাজ্য গঠন করা হয়। এই ৫ টি প্রদেশ হল- মধ্যভারত, রাজস্থান, সৌরাষ্ট্র, ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন ও পেপসু।
প্রদেশগুলির সঙ্গে সংযুক্তি : কিছু কিছু দেশীয় রাজ্যকে তাদের সন্নিহিত ভারতীয় প্রদেশগুলির সঙ্গে যুক্ত করা হয় । যেমন—
- মাদ্রাজের রাজ্যগুলিকে মাদ্রাজ প্রদেশের সঙ্গে ,
- পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে উড়িষ্যা ও মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে ,
- দাক্ষিণাত্য ও গুজরাটের রাজ্যগুলিকে বোম্বাই প্রদেশের সঙ্গে ,
- গাড়োয়াল , রামপুর ও বেনারসকে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে ,
- কোচবিহারকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ,
- খাসি পার্বত্য অঞ্চলকে আসামের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় । এই ভাবে ২১৬ টি দেশীয় রাজ্য পার্শ্ববর্তী প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়।
কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল : ভূপাল, হিমাচল প্রদেশ, বিলাসপুর, ত্রিপুরা, কচ্ছ, মপিপুর প্রভৃতি দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করে কেন্দ্রীয় শাসনাধীনে রাখা হয়। এরূপ ৬১ টি দেশীয় রাজ্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়।
স্বাধীন ভারত সরকার দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির বিষয়ে কীরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করে ?
উত্তর : ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে বিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনের বাইরে অন্তত ৫৬৫ টি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল।
‘ভারতের স্বাধীনতা আইন’ ( ১৯৪৭ খ্রি . ) অনুসারে এই রাজ্যগুলি স্বাধীন থাকার অথবা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে – কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগ দেওয়ার অধিকার পায়। স্বাধীন ভারতের সরকার এই রাজ্যগুলির অন্তর্ভুক্তি করণে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেমন-
ভারতের উদ্যোগ : ভারতের অখণ্ডতা, জাতীয় সংহতি, নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ যােগাযােগ প্রভৃতি প্রয়োজনে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যকে ভারত নিজের অন্তর্ভুক্ত করার বলিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করে। ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’ – এর দায়িত্বে থাকা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এই বিষয়ে কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।
সাফল্য ও সমস্যা : ভারতের সক্রিয় উদ্যোগের ফলে স্বাধীনতা লাভের মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগ দেয়। তবে জুনাগড় , কাশ্মীর ও হায়দ্রাবাদ ভারতে যোগদানে অস্বীকার করলে ভারতের অখণ্ডতা ও ঐক্য সমস্যার সম্মুখীন হয় ।
জুনাগড় : জুনাগড় মূলত হিন্দু অধ্যুষিত দেশীয় রাজ্য। এই রাজ্য পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে প্রজাবিদ্রোহ শুরু হয়। এই চাপে সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান । এই সময় ভারতীয় সেনা জুনাগড়ে প্রবেশ করে এবং সেখানকার মানুষের গণভোটের সম্মতির দ্বারা জুনাগড় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।
হায়দ্রাবাদ : হায়দ্রাবাদ নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র আমদানি করে এবং রাজ্যের অভ্যন্তরে সীমান্ত এলাকায় সংখ্যা লঘু হিন্দুদের ওপর তীব্র নির্যাতন শুরু করে। ফলে হায়দ্রাবাদে ভারতীয় সেনার অভিযান শুরু হয়। হায়দ্রাবাদ আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় এবং রাজ্যটি ভারতের দখলে আসে ।
কাশীর : মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের হিন্দু মহারাজা হরিসিং কাশ্মীরের স্বাধীনতা রক্ষায় তৎপর ছিলেন। কিন্তু পাক সেনা ও হানাদারবাহিনী কাশ্মীরে ঢুকে নৈরাজ্য সৃষ্টিকরে। এই অবস্থায় হরিসিং ‘ভারতভুক্তির দলিল’- এ স্বাক্ষর করে এবং কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
ভারত কবে স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয় ? এই সময় ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলিকে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ও কি কি ?
উত্তর : স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীতে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের নিজস্ব সংবিধান চালু হয়। এই সময় থেকেই ভারত একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।
এই সময় ভারতের রাজ্যগুলিকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয় । যথা – ‘
‘ক’শ্রেণি :
গভর্নরশাসিত রাজ্য ; এই শ্রেণিতে মোট ৯ টি রাজ্য ছিল | যথা— [ i ] পশ্চিমবঙ্গ , [ ii ] আসাম , [ iii ] বিহার , [ iv ] উড়িষ্যা , [ v ] উত্তরপ্রদেশ , [ vi ] মধ্যপ্রদেশ , [ vii ] বোম্বাই , ( viii ] মাদ্রাজ ও [ ix ] পাঞ্জাব।
‘খ’শ্রেণি :
রাজা বা ওই ধরনের শাসক দ্বারা শাসিত রাজ্য ; এই শ্রেণিতে মোট ৮ টি রাজ্য ছিল | যথা— [ i ] হায়দ্রাবাদ , [ ii ] মধ্যভারত , [ ii ] মহীশূর , [ iv ] পাতিয়ালা ও পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন ( PEPSU ) , [ v ] জম্মু ও কাশ্মীর , [ vi ] রাজস্থান , [ vii ] সৌরাষ্ট্র , [ viii ] ত্রিবাঙ্কুর – কোচিন।
‘গ’শ্রেণি :
কমিশনার দ্বারা শাসিত রাজ্য : এই শ্রেণিতে মোট ১০ টি রাজ্য ছিল | যথা— [ i ] আজমীর , [ i ] ভূপাল , [ ii ] বিলাসপুর , [ iv ] হিমাচল প্রদেশ , [ v ] কচ্ছ , [ vi ] কুর্গ , ( vii ] দিল্লি , [ vii ] মণিপুর , [ ix ] ত্রিপুরা ও [ x ] বিন্ধ্য প্রদেশ |
‘ঘ’শ্রেণি :
কেন্দ্রশাসিত রাজ ; এই শ্রেণিতে ছিল দুটি রাজ্য । যথা— [ i ] আন্দামান ও [ ii ] নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ।
দেশীয় রাজ্য জুনাগড় কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?
উত্তর : ভারত স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারতের ভূখণ্ডে উপস্থিত একাধিক দেশীয় রাজ্য ভারতের সঙ্গে যুক্ত হলেও কিছু রাজ্য ভারতভুক্তিতে অস্বীকার করে যার মধ্যে অন্যতম ছিল কাথিয়াবাড় উপদ্বীপে অবস্থিত রাজ্য জুনাগড়। এই রাজ্য যে উপায়ে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয় তা হল-
জুনাগড়ের পরিস্থিতি : জুনাগড় ছিল হিন্দু অধ্যুষিত দেশীয় রাজ্য যেখানে প্রায় ৮০% জনগণ হিন্দু। কিন্তু সেখানকার মুসলিম নবাব জুনাগড়কে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করতে সচেষ্ট হন । জুনাগড়ের দেওয়ান শাহনাওয়াজ ভুট্টোও ছিলেন মুসলিম লিগের উগ্র সমর্থক।
প্রজাবিদ্রোহ : জুনাগড়ের নবাব রাজ্যটিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছে সেখানকার প্রজাদের মধ্যে ব্যাপক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে ।
সেনা অভিযান : প্রজাবিদ্রোহের ফলে সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এইসময় ভারতের সেনাবাহিনী জুনাগড়ে প্রবেশ করে।
গণভোট : জুনাগড়ের বাসিন্দারা ভারত , না পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে আগ্রহী তা জানার জন্য ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে সেখানে গণভোটের আয়োজন করা হয়।গণভােটের দ্বারা সেখানকার মানুষ ভারতে যোগদানের পক্ষে মত দেয়।
ভারতে যোগদান : গণভোটের পর জুনাগড় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয় ।