আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে
- প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
- দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
- তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
- চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি
অবস্থান এবং প্রশাসনিক বিভাগ
ভারতের ভৌগলিক অবস্থান
ভারতবর্ষের ভৌগোলিক অবস্থানকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় । যথা-
- অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের নিরিখে : অক্ষাংশ অনুযায়ী ভারত উত্তর গোলার্ধের অন্তর্গত এবং এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণাংশে অবস্থান করে । ভারতের মূল ভূখণ্ডটি দক্ষিণে 8°4’ উত্তর অক্ষাংশ অর্থাৎ কন্যাকুমারিকা থেকে উত্তরে 37° 6’ উত্তর অক্ষাংশ অর্থাৎ লাদাখের উত্তর সীমা পর্যন্ত বিস্তারিত ।
দ্রাঘিমার নিরিখে ভারতবর্ষ পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত । পশ্চিমে 58°7’ পূর্ব দ্রাঘিমা অর্থাৎ গুজরাটের পশ্চিম সীমানা থেকে শুরু করে পূর্বে 97°25’ পূর্ব দ্রাঘিমা অর্থাৎ অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সীমা পর্যন্ত ভারতবর্ষ অবস্থিত ।
- সমুদ্রের সাপেক্ষে অবস্থান : ভারতবর্ষ তিন দিক থেকে সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় একে উপদ্বীপ বলা হয়। পূর্বে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগর অবস্থিত । এই দেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম উপদ্বীপ ।
ভারতবর্ষের বিস্তার এবং আয়তন : উত্তর থেকে দক্ষিনে ভারতের মোট বিস্তার প্রায় 3214 কিলোমিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় 2933 কিলোমিটার । এই দেশে মোট আয়তন প্রায় 32 লক্ষ 87 হাজার 263 বর্গ কিলোমিটার । আয়তনের নিরিখে ভারত পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম দেশ ।
ভারতবর্ষের সীমানা : ভারতের উত্তরে অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালা, চীন, নেপাল, ভুটান ইত্যাদি দেশ । উত্তর-পশ্চিমে পাকিস্তান এবং আফগানিস্থান, পশ্চিম পাকিস্তান ও আরব সাগর, পূর্বে বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্বে শ্রীলংকা এবং বঙ্গোপসাগরের অবস্থিত । ইন্দিরা পয়েন্ট ভারতের দক্ষিণতম স্থলবিন্দু ।
স্বাধীনতার পরে ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস
ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে 1947 সালের, 15 ই আগস্ট। 1950 সালের 26 শে জানুয়ারি ভারত একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করে এবং কমনওয়েলথ অফ নেশনসের অন্তর্ভুক্ত হয় ।
স্বাধীনতা লাভ করার পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষের অন্তর্গত রাজ্যগুলি হল-
- 9টি রাজ্যপাল শাসিত প্রদেশ
- 550 টি দেশীয় রাজ্য
- 5চিফ কমিশনার দ্বারা শাসিত প্রদেশ
1950 খ্রিস্টাব্দে 26 জানুয়ারির পূর্ব ভারতে মোট 28 টি অঙ্গরাজ্য এবং একটি রাষ্ট্রক্ষেত্র অর্থাৎ টেরিটোরি ছিল ।
রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে 1953 সালের ডিসেম্বরে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয় । 1956 সালের 1 নভেম্বর কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মূলত ভাষাকে ভিত্তি করে বিভিন্ন রাজ্যের পুনর্গঠন হয় ।
14টি রাজ্যপাল শাসিত রাজ্য ও 9টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সৃষ্টি হয় ।
এরপর বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির নানারূপে, নানাভাবে পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে 2019 সালের জুলাই পর্যন্ত এই দেশে 29 টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ছিল । তবে বর্তমানে ভারতে 28 টি অঙ্গরাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত 9টি অঞ্চল সৃষ্টি রয়েছে।
ভারতের 28 টি অঙ্গরাজ্য
রাজ্য | রাজধানী | রাজ্য | রাজধানী |
অন্ধপ্রদেশ | (হায়দ্রাবাদ) বর্তমানে অমরাবতী | হিমাচল প্রদেশ | সিমলা |
অরুণাচল প্রদেশ | ইটানগর | কেরল | তিরুবনন্তপুরম |
অসম | দিসপুর | মধ্যপ্রদেশ | ভোপাল |
গোয়া | পানাজি | মনিপুর | ইম্ফল |
বিহার | পাটনা | মহারাষ্ট্র | মুম্বাই |
হরিয়ানা | চন্ডিগড় | মিজোরাম | আইজল |
গুজরাট | গান্ধীনগর | মেঘালয় | শিলং |
কর্ণাটক | বেঙ্গালুরু | নাগাল্যান্ড | পূর্ণিমা |
সিকিম | গ্যাংটক | পাঞ্জাব | চন্ডিগড় |
রাজস্থান | জয়পুর | উড়িষ্যা | ভুবনেশ্বর |
ত্রিপুরা | আগরতলা | উত্তরাখণ্ড | দেরাদুন |
তামিলনাড়ু | চেন্নাই | তেলেঙ্গানা | হায়দ্রাবাদ |
পশ্চিমবঙ্গ | কলকাতা | ঝাড়খন্ড | রাচি |
উত্তর প্রদেশ | লখনউ | ছত্রিশগড় | রায়পুর |
ভারতের ৯টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল
রাজ্য | রাজধানী | রাজ্য | রাজধানী |
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ | পোর্ট ব্লেয়ার | পন্ডিচেরি | পন্ডিচেরি |
দাদরা ও নগর হাভেলি | সিলভাসা | লাক্ষাদ্বীপ | কালরাত্তি |
চন্ডিগড় | চন্ডিগড় | জম্মু ও কাশ্মীর | শ্রীনগর |
দমন ও দিউ | দমন | লাদাখ | লেহ (leh) |
দিল্লি ( জাতীয় রাজধানী) | নতুন দিল্লি |
ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ
ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগসমূহ
- উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
- উত্তরের সমভূমি অঞ্চল
- উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল
- উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল
- দ্বীপপুঞ্জ
উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলটিকে প্রধানত দুটি অংশে ভাগ করা যায় । যথা :
- হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল
- উত্তর-পূর্বের শৈলশ্রেণী
- হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল: হিমালয় হলো পৃথিবীর নবীনতম ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণীর মধ্যে একটি । হিমালয় পর্বত ভারতের উত্তর-পশ্চিমে পামির গ্রন্থি থেকে বেরিয়ে পশ্চিমের নাঙ্গা পর্বত শৃঙ্গ থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের নামচাবারওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত । উত্তর-দক্ষিণে হিমালয় পর্বত প্রায় 250 থেকে 400 কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ।
হিমালয়ের প্রাকৃতিক গঠনের উপর ভিত্তি করে দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রস্থ বরাবর হিমালয়কে চারটি সমান্তরাল শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথা-
- শিবালিক বা বহিঃহিমালয় : হিমালয়ের এই ভাগটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত । গড় উচ্চতা 600 থেকে 1500 মিটার । দক্ষিণভাগ যথেষ্ট খাড়া কিন্তু উত্তর ঢাল ক্রমশ ঢালু হয়ে বিভিন্ন উপত্যকার রূপ নিয়েছে । এই জাতীয় উপত্যকাকে আমরা দুন বলে থাকি। যেমন- দেরাদুন, কোটা ।
- হিমাচল বা মধ্য হিমালয় : মধ্য হিমালয়, শিবালিক এবং হিমাদ্রি হিমালয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত । গড় বিস্তার 60 থেকে 80 কিলোমিটার পর্যন্ত । এই পর্বতমালার অন্যতম পর্বতশৃঙ্গ গুলি হল মুসৌরি, পিরপাঞ্জাল, ধওলাধর ।
- হিমাদ্রি হিমালয় : হিমাদ্রি হিমালয় হিমাচল হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিম থেকে পূর্বে অবস্থিত । পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট এবং পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমালয়ের এই অংশে অবস্থিত ।
- ট্রান্স বা টেথিস হিমালয় : হিমালয়ের এই অংশটি হিমাদ্রি পর্বতশ্রেণীর উত্তরে সিন্ধু সাংপো উপত্যকা এবং উত্তরে তিব্বতমালভূমিতে গিয়ে মিলিত হয়েছে । এই অংশের গড় উচ্চতা 3000 থেকে 5000 মিটার পর্যন্ত হয়।
হিমালয় পর্বতের আঞ্চলিক বিভাগ
আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের নিরিখে দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয় পর্বতের তিনটি ভাগ । যথা- পশ্চিম হিমালয়, মধ্য হিমালয় এবং পূর্ব হিমালয় ।
- পশ্চিম হিমালয় : লাদাখের দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং নাঙ্গা পর্বত থেকে শুরু করে পূর্বে নেপালের কালী নদী পর্যন্ত পশ্চিম হিমালয় বিস্তৃত । সমগ্র জম্মু কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড নিয়ে এই অংশটি গঠিত হয়েছে । পশ্চিম হিমালয়ের আবার তিনটি ভাগ, যথা-
- কাশ্মীর হিমালয় : খারদুংলা, বানিহাল, রোটাং হলো এখানকার উল্লেখযোগ্য গিরিপথ এবং ডাল, উলার ও নিসার হলো উল্লেখযোগ্য হ্রদ।
- হিমাচল হিমালয় : উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণী হলো- নাগটিব্বা, পিরপাঞ্জাল, মুসৌরি।
- কুমায়ুন হিমালয় : উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ হল – কামেট, ত্রিশূল, নন্দাদেবী।
- মধ্য হিমালয় : পশ্চিমে কালী নদী থেকে শুরু করে, পূর্বে সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণী পর্যন্ত এবং সমগ্র নেপাল দেশের মধ্য দিয়ে হিমালয় বিস্তৃত । এখানে শিবালিক পর্বতশ্রেণী চুরিয়া মুরিয়া নামে এবং হিমাচল পর্বতশ্রেণী মহাভারত লেখ পর্বতশ্রেণী নামে পরিচিত ।
- পূর্ব হিমালয় : পশ্চিমে সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণী থেকে শুরু করে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। সমগ্র পূর্ব হিমালয়কে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-
- দার্জিলিং-সিকিম হিমালয় : সান্দাকফু হলো দার্জিলিং অংশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং সিকিম অংশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ।
- ভুটান হিমালয় : এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হলো চমলহরি।
- অরুণাচল হিমালয় : ই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হলো নামচাবারওয়া।
- উত্তর-পূর্বের শৈলশ্রেণি : উত্তর-পূর্বের শৈলশ্রেণি মূলত পূর্ব হিমালয়ের অংশ বিশেষ । এই অংশটির উত্তরে চীন অবস্থিত, পূর্বে মায়ানমার, উত্তর-পশ্চিমে ভুটান এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে বাংলাদেশ । উত্তরপূর্ব শৈলশ্রেণীর আবার দুটি ভাগ, যথা –
- পূর্বাচল : উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অংশে ভারত এবং মায়ানমার সীমান্ত বরাবর উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত সমান্তরাল শৈলশ্রেণীকে পূর্বাচল বলে । এই পর্বতশ্রেণীর মধ্যে অন্যতম হলো মিশমি পাহাড়, নাগা পাহাড়, ত্রিপুরা পাহাড় ইত্যাদি ।
- মেঘালয় মালভূমি : মেঘালয় প্রদেশ গারো, খাসি, জয়ন্তিকা এবং মিকিরের পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছে মেঘালয় মালভূমি । নকরেক হলো গারো পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
উত্তরের সমভূমি অঞ্চল
উত্তরের হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণের উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চলের মধ্যবর্তী অংশে গঙ্গা, সিন্ধু এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট সমভূমি অঞ্চল । এই সুবিশাল সমভূমি অঞ্চল 2500 কিলোমিটার দীর্ঘ ও উত্তর-দক্ষিণে প্রায় 240-320 কিলোমিটার প্রশস্ত । মোট সমভূমির আয়তন প্রায় 6 লক্ষ 52 হাজার বর্গ কিলোমিটার ।
ভূ-প্রাকৃতিক এবং আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের চারটি ভাগ। যথা –
- পশ্চিমের সমভূমি অঞ্চল : ভারতের পশ্চিমে রাজস্থান রাজ্যে, আরাবল্লী পর্বতের পশ্চিমে এবং পাঞ্জাবের দক্ষিণে থর মরুভূমির অংশে ভারতের পশ্চিমের সমভূমি অঞ্চল অবস্থিত । এই সমভূমি অঞ্চলটি 640 কিলোমিটার দীর্ঘ এবং 1.75 লক্ষ্য বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত ।
ভূ-প্রাকৃতিক তারতম্যের ওপর নির্ভর করে এই অঞ্চলের পাঁচটি ভাগ, যথা-
- মরুস্থলি : মরুস্থলি হলো মরু অঞ্চলের পশ্চিমপ্রান্তে বালিপূর্ণ শুষ্ক মরু অঞ্চল। এই অঞ্চলে সারিবদ্ধভাবে কিছু স্থায়ী বালিয়াড়ির মধ্যে লবণাক্ত হ্রদ ধান্দ নামে পরিচিত । মূলত এটা উদ্ভিদবিহীন অঞ্চল ।
- বাগার অঞ্চল : আরাবল্লী পর্বতের পাদদেশে মরুভূমির পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত এই অঞ্চলটি স্বল্প বালুকাময় । এই অংশে কিছু প্লায়া হ্রদ দেখা যায় ।
- রোহী : বাগার অঞ্চলের পশ্চিমে উর্বর পলিগঠিত সমভূমিকে রোহী বলে ।
- ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল : রোহী অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত ।
- হামাদা : ক্ষুদ্র মরু অঞ্চলের পশ্চিম দিকে বালিময় নরম শিলাস্তর দ্বারা গঠিত পাথুরে অঞ্চলকে হামাদা বলে ।
- সিন্ধু সমভূমি বা পাঞ্জাব সমভূমি : রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লী এবং উত্তরপ্রদেশ জুড়ে অবস্থিত সমভূমি অঞ্চলকে পাঞ্জাব সমভূমি বা সিন্ধু সমভূমি বলে । এই সমভূমির উচ্চতা প্রায় 200-300 মিটার । শতদ্রু, বিপাশা, বিতস্তা, এবং ইরাবতী নদীর পলি সঞ্চয়ের ফলে এই অঞ্চলটি গড়ে উঠেছে । পাঞ্জাব সমভূমি মধ্যস্থানে অবস্থিত পলিগঠিত উচ্চভূমিকে দোয়াব বলা হয় ।
- গাঙ্গেয় সমভূম : পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে শুরু করে পূর্বের ভারত, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর, বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ পঁচাত্তর হাজার বর্গ কিলোমিটার স্থান জুড়ে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে এই সমভূমি অঞ্চলটি বিস্তৃত । এই অঞ্চল তিন ভাগে বিভক্ত । যথা-
- উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি : এই অঞ্চলের প্রাচীন পলিমাটির ভাঙ্গর এবং নবীন পলিমাটি দ্বারা খাদার অঞ্চল গড়ে উঠেছে ।
- মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমি : এই সমভূমির অন্তর্গত জলাভূমি চাউল এবং তাল নামে পরিচিত।
- নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি : এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা 30 মিটার, এই অঞ্চলকে আবার চার ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
- তরাই ও ডুয়ার্স
- বরেন্দ্রভূমি
- রাঢ় সমভূমি
- বদ্বীপ অঞ্চল
- ব্রহ্মপুত্র সমভূমি : গাঙ্গেয় সমভূমির পূর্ব দিকে, অসম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং এই নদের বিভিন্ন উপনদী দ্বারা পলি সঞ্চয়ের ফলে এই ব্রহ্মপুত্র সমভূমির উৎপত্তি । প্রায় 700 কিলোমিটার দীর্ঘ এবং 80 কিলোমিটার প্রসস্থ এই সমভূমি । এই সমভূমির গড় উচ্চতা প্রায় 50 থেকে 100 মিটার । অসমে বম্মপুত্র নদী সৃষ্ট বালুচর মাজুলী হল ভারত তথা পৃথিবীর বৃহত্তম নদী গঠিত দ্বীপ ।
উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল
উত্তরের সমভূমির দক্ষিণে ত্রিভুজ আকৃতির উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল বিস্তৃত । এই অঞ্চল উত্তর-পশ্চিমে আরাবল্লী পর্বত থেকে শুরু করে পূর্বে রাজমহল পাহাড় এবং দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত প্রায় 13.5 লক্ষ্য বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত ।
এই অঞ্চলটি অতি প্রাচীন ভূখণ্ড গনডোয়ানাল্যান্ড’-এর অংশবিশেষ । ভূ আন্দোলনে ফাটলের ফলে, বিভিন্ন খাত বা গ্রস্থ উপত্যকার সৃষ্টি হয়ে থাকে । এদের মধ্যে শোন, তাপ্তি, নর্মদা ইত্যাদি নদী উপত্যকার খাতগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ।
শ্রেণীবিন্যাস : ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে উপদ্বীপীয় মালভূমির দুটি ভাগ । যথা –
- মধ্য এবং পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি
- দাক্ষিণাত্যের মালভূমি ।
- মধ্য এবং পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি : উত্তর-পশ্চিমে আরাবল্লী পর্বত থেকে শুরু করে দক্ষিনে নর্মদা উপত্যকা এবং পূর্বে রেওয়া মালভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত মধ্য ভারতের উচ্চভূমি। এই অঞ্চলের প্রধান প্রাকৃতিক অংশগুলি হল- আরাবল্লী পর্বত, পূর্ব রাজস্থান উচ্চভূমি, মধ্য ভারত মালভূমি, বুন্দেলখন্ড মালভূমি, মালব মালভূমি, রেওয়া মালভূমি, বিন্ধ পর্বত এবং নর্মদা উপত্যকা । পূর্ব ভারতের উচ্চভূমিটি শোন নদীর অববাহিকার দক্ষিণ-পূর্বে এবং মহাকাল পর্বতের পূর্বে অবস্থিত ।
এই অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক অংশ সমূহ হলো- ছোটনাগপুরের মালভূমি, বাঘেলখন্ড মালভূমি, মহানদী অববাহিকা, দণ্ডকারণ্য এবং গড়জাত পাহাড় ।
- দাক্ষিণাত্যের মালভূমি : উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব সাতপুরা, মহাকাল ও মহাদেব পর্বত, পশ্চিমে পশ্চিমঘাট এবং পূর্বে পূর্বঘাট পর্বতের মধ্যে দাক্ষিণাত্যের মালভূমি সুবিশাল অংশ নিয়ে অবস্থান করে । তিন দিক সমুদ্রবেষ্টিত এই উপদ্বীপীয় মালভূমির মোট আয়তন প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ বর্গ কিলোমিটার ।
উত্তর-পূর্বের শৈলশ্রেণীর অংশ মেঘালয় মালভূমিও দাক্ষিণাত্য মালভূমির অংশবিশেষ ।
গারো-খাসি -জয়ন্তিকা পর্বতশ্রেণী নিয়ে গঠিত ।
ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে দাক্ষিণাত্যের মালভূমি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত –
- পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বা সহ্যাদ্রি : পশ্চিমঘাট পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম আনাইমুদি এবং এই পর্বতের অন্যতম অন্যান্য শৃঙ্গ গুলি হল মহাবালেশ্বর, কূলসুবাই, নীলগিরি, দোদাবেতা ।
- পূর্বঘাট পর্বতমালা মলয়াদ্রি : পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বে ভারতের পূর্ব উপকূল বরাবর অবস্থিত পূর্বঘাট পর্বতমালা ।এই পর্বতশ্রেণীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল আর্মাকোন্ডা । এছাড়াও পচামালাই এবং পলকোন্ডা হল এই পর্বতের অন্যতম পর্বতশৃঙ্গ ।
- সাতপুরা পর্বত : ভারতের দক্ষিণের নর্মদা ও তাপ্তি নদীদ্বয়ের গ্রস্ত উপত্যকার মধ্যে অবস্থিত সাতপুরা পর্বত । এই পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল ধূপগড় ।
- মহারাষ্ট্র মালভূমি : দাক্ষিণাত্যের মালভূমির উত্তর পশ্চিম অংশে লাভা দ্বারা গঠিত মহারাষ্ট্র মালভূমি । ধাপে ধাপে পশ্চিম থেকে পূর্বে নেমে গেছে । এই অঞ্চলকে আমরা ডেকানট্রাপ বলে থাকি ।
- কর্ণাটক মালভূমি : মহারাষ্ট্র মালভূমির দক্ষিনে অবস্থিত কর্ণাটক মালভূমি নিস এবং গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত । এই মালভূমির পশ্চিম অংশ মালনাদ এবং পূর্বাংশ ময়দান নামে বিখ্যাত ।
- তেলেঙ্গানা মালভূমি : এই মালভূমি অঞ্চল তেলেঙ্গানা রাজ্যে অবস্থিত এবং প্রধান পাহাড় হল সাতমালা ।
পশ্চিমঘাট পর্বত এবং পূর্বঘাট পর্বতের মধ্যে পার্থক্য
পশ্চিমঘাট পর্বত | পূর্বঘাট পর্বত |
আরব সাগরের উপকূল বরাবর অবস্থিত | বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর অবস্থিত |
উচ্চতার নিরিখে পশ্চিমঘাট পর্বতের উচ্চতা পূর্বঘাট পর্বতের তুলনায় বেশি | পশ্চিমঘাট পর্বতের তুলনায় উচ্চতা কম |
সিঁড়ির মত ধাপে ধাপে গঠিত | এই অঞ্চলটিতে কোন ধাপ সৃষ্টি হয়নি |
অবিচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠেছে | বিভিন্ন নদী উপত্যকা দ্বারা বিচ্ছিন্ন |
এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি এবং গভীর বনভূমি অবস্থিত | এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম তাই বনভূমি তুলনামূলক কম অবস্থিত |
উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল
উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল বলতে দাক্ষিণাত্যের মালভূমির পূর্বে এবং পশ্চিমে আরবসাগরের উপকূল বরাবর বিস্তৃত সংকীর্ণ সমভূমিকে বোঝায় । এই অঞ্চলের মোট দৈর্ঘ্য তিন হাজার একশো কিলোমিটার ।
উপকূলীয় সমভূমিকে উৎপত্তি এবং ভূ-প্রাকৃতিক তারতম্যের নিরিখে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-
- পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি : উড়িষ্যা রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারীকা পর্যন্ত প্রায় 1500 কিলোমিটার দীর্ঘ স্থান জুড়ে পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলটি অবস্থিত । এই সমভূমি অঞ্চলটি আবার দুই ভাগে বিভক্ত । যথা-
- উত্তর সরকার উপকূল : উড়িষ্যার সুবর্ণরেখা নদীর মোহনা থেকে শুরু করে দক্ষিণে কৃষ্ণানদীর বদ্বীপের পূর্বভাগ পর্যন্ত প্রায় 400 কিলোমিটার দীর্ঘ এবং 80 কিলোমিটার প্রসস্থ সমভূমি অঞ্চলকে উত্তর সরকার উপকূল বলা হয় । উত্তর সরকার উপকূলের উত্তরভাগ উড়িষ্যা উপকূল এবং এর দক্ষিণাংশ অন্ধ্র উপকূল নামে পরিচিত ।
- করমন্ডল উপকূল : কৃষ্ণানদীর বদ্বীপ থেকে শুরু করে কন্যাকুমারীকা পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূল ভাগকে করমন্ডল উপকূল বলা হয় । এই উপকূলে অবস্থিত বালিয়ারির গড় উচ্চতা প্রায় 35 থেকে 65 মিটার হয়ে থাকে এদের থেরিস বলা হয় ।
- পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি : এই সমভূমি উত্তরে নর্মদা নদীর তীরে অবস্থিত ভারুচ বন্দর থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারীকা পর্যন্ত প্রায় 1600 কিলোমিটার দীর্ঘ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত । এই সমভূমির আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই অঞ্চলটি 6 টি ভাগে বিভক্ত। যথা-
- কচ্ছ উপদ্বীপ : গুজরাটের উপকূলের উত্তরে কচ্ছ উপদ্বীপ অবস্থিত । কচ্ছ কথার অর্থ হল জলাময় দেশ।
- কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ : গুজরাট উপকূলের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত এবং এটি লাভাগঠিত মালভূমি ।
- গুজরাট সমভূমি : সবরমতী, মাহী, তাপ্তি, নর্মদা প্রভৃতি নদীর পলি সঞ্চয়ের ফলে, কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের দক্ষিণে গুজরাট সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে ।
- কোঙ্কন উপকূল : এই উপকূল উত্তরে সুরাট থেকে দক্ষিণে গোয়া পর্যন্ত প্রায় 45-75 কিলোমিটার প্রসস্থ ।
- কর্ণাটক উপকূল : কর্ণাটক রাজ্যের এই উপকূল 225 কিলোমিটার দীর্ঘস্থান দখল করে অবস্থিত ।
- মালাবার উপকূল : ম্যাঙ্গালোর থেকে শুরু করে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীকা পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলকে মালাবার উপকূল বলে ।
পূর্ব উপকূল ও পশ্চিম উপকূলের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা
পূর্ব উপকূল | পশ্চিম উপকূল |
ভারতের পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর অবস্থিত | ভারতের পশ্চিমদিকে আরবসাগরের উপকূল বরাবর অবস্থিত |
পূর্ব উপকূলের ভূমিভাগ প্রশস্ত এবং সমতল | পশ্চিম উপকূলের ভূমিভাগ বন্ধুর প্রকৃতির ও উঁচু-নিচু |
পূর্ব উপকূল 100 কিলোমিটারের থেকেও বেশি প্রশস্ত | এই উপকূলের বিস্তার 50-80 কিলোমিটার |
এই উপকূল ভাগের কৃষিকাজ এবং পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত | এই অঞ্চলে কৃষি কাজ এবং পরিবহন ব্যবস্থা অনুন্নত |
নদীর মোহনাগুলিতে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে | নদীর মোহনায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি |
উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কম এবং ভঙ্গুর প্রকৃতির | উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক বেশি এবং তুলনামূলকভাবে কম ভগ্ন |
এই উপকূলের প্রায় সর্বত্র বালিয়াড়ি দেখা যায় | এই উপকূলে মালাবার ছাড়া কোথাও বালিয়াড়ি দেখা যায় না |
খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় এই অঞ্চলটি শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চল | এই অঞ্চলের খনিজ তেল পাওয়া যায় তবে অন্যান্য শিল্প তেমন ভাবে গড়ে ওঠেনি |
দ্বীপপুঞ্জ
অবস্থানগত দিক থেকে ভারতের দ্বীপপুঞ্জকে দুটি ভাগে বিভক্ত ।
- বঙ্গোপসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ : ভারতের বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জ আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত । আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ছোট-বড় মোট 265টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত যার আয়তন 8293 বর্গ কিলোমিটার ।
- আরবসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ : প্রায় 25টি ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে আরবসাগরে এই দ্বীপপুঞ্জ গড়ে উঠেছে । এই দ্বীপপুঞ্জকে একত্রে লাক্ষাদ্বীপ বলা হয় ।
ভূ প্রাকৃতিক বিভাগসমূহের গুরুত্ব
- উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের গুরুত্ব : ভারতবাসীর জীবনে উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের গুরুত্ব অপরিসীম । যেমন-
- জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ : ভারতের উত্তরদিকে হিমালয় অবস্থিত হওয়ায় ভারতে বৃষ্টিপাত হয় এবং প্রবল শীতল বায়ুর হাত থেকে ভারতকে রক্ষা করেছে ।
- বহিঃশত্রূর আক্রমণ প্রতিরোধ : ভারতের উত্তরদিকে সুউচ্চ পর্বতমালা প্রাচীরের মতো অবস্থিত হওয়ায় ভারত বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছে ।
- নদ-নদী সৃষ্টি : হিমালয় পর্বতের শিখরে হিমবাহ থাকায় সেখান থেকে বহু নদ-নদীর সৃষ্টি হয়েছে ।
- পর্যটন শিল্প : হিমালয়ের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রত্যেক বছর নানান জায়গা থেকে বহু পর্যটক এখানে আসে ।
- উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব : ভারতবর্ষের জনজীবনে উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের গুরুত্বও অপরিসীম । যেমন-
- কৃষির উন্নতি : এই সমভূমি অঞ্চল অত্যন্ত উর্বর হওয়ায় এবং বৃষ্টিপাতের তারতম্যের কারণে বিভিন্ন ধরণের কৃষিজ ফসল উৎপন্ন হয় ।
- লোকবসতি সৃষ্টিতে : সমভূমি অঞ্চলে খাদ্যের জোগান, স্বাস্থ্যকর জলবায়ু থাকায় এখানে জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে ।
- শিল্পের উন্নতি : কাঁচামাল হিসেবে কৃষিজ ফসলের ব্যবহার, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ঘন লোকবসতি প্রভৃতি কারণে কৃষিভিত্তিক শিল্পের উন্নতি ঘটেছে ।
- উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা : সমতল হওয়ায় সড়কপথ, রেলপথ, নদীপথের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে ।
- উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব : এই অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ বনজ সম্পদ পাওয়া যায় । এই অঞ্চল খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ হওয়ায়, এই অঞ্চলে শিল্পন্নতি খুব সহজেই ঘটেছে । যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং লোকবসতি বিস্তারে এই অঞ্চলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে ।
- উপকূলীয় সমভূমি গুরুত্ব : উপকূলীয় সমভূমির গুরুত্বও ভারতবাসীর জীবনে অপরিসীম । এই অঞ্চলে বহু বন্দর গড়ে ওঠায়, ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সুদৃঢ় হয়েছে । এই অঞ্চলের মাধ্যমে ভারতের মৎস্য শিল্প এক নতুন দিশা পেয়েছে । এই অঞ্চলের কৃষি এবং শিল্পের প্রচুর উন্নতি ঘটেছে।
দ্বীপপুঞ্জের দূরত্ব : কৃষির উন্নতি, মৎস্য সংগ্রহ, লোকবসতি বিস্তার এবং পর্যটন শিল্পেএই দ্বীপপুঞ্জের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ভারতের জল সম্পদ
নদ-নদীসমূহের উৎসস্থল, মোহনার অবস্থান এবং প্রবাহিত অঞ্চলের ওপর ভিত্তি করে ভারতের নদনদীকে মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা হয় ।
- হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন নদনদীসমূহ বা উত্তর ভারতের নদনদী
- উপদ্বীপ অঞ্চলের দক্ষিণ ভারতের নদনদী
ভারতের কতগুলি উল্লেখযোগ্য নদনদী
গঙ্গা
উৎপত্তিস্থল : কুমায়ুন হিমালয় চৌখাম্বা শৃঙ্গের নিকটবর্তী গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি । ভারতবর্ষের প্রধান এবং দীর্ঘতম নদী হল গঙ্গা । মোট দৈর্ঘ্য 2510 কিলোমিটার যার মধ্যে 2071 কিলোমিটার ভারতবর্ষের অন্তর্গত ।
গঙ্গার প্রবাহ বা গতিপথ : উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর সমগ্র গতিপথকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
- উচ্চগতি বা পার্বত্যপ্রবাহ : গঙ্গা নদীর গতিপথে গঙ্গোত্রী থেকে হরিদ্দার পর্যন্ত প্রবাহকে উচ্চগতি বলা হয় । গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণে দেবপ্রয়াগের কাছে অলকানন্দা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে । ভাগীরথী এবং অলকানন্দার মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে শিবালিক পর্বত অতিক্রম করে হরিদ্দারের কাছে এসে সমভূমিতে পতিত হয়েছে ।
- মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ : হরিদ্বার থেকে রাজমহল পর্যন্ত গঙ্গা নদীর প্রবাহকে মধ্য বলা হয় । হরিদ্দারের পর গঙ্গা নদী প্রথমে দক্ষিণ-পূর্বে এবং পরে পূর্বদিকে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । এরপর ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড়ের কাছে এসে দক্ষিণমুখী হয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে।
- নিম্নগতি বা বদ্বীপ প্রবাহ : রাজমহল পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত গঙ্গা নদীর গতিপথকে নিম্নগতি বলা হয় । পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করার পর মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের কাছে ভগবানগোলায় গঙ্গা নদী ভাগীরথী এবং পদ্মা নামে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে ।
এই নদীর প্রধান শাখাটি প্রথমে পদ্মা নামে এবং পরে মেঘনা নামে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরের মিশেছে এবং অপ্রধান শাখাটি ভাগীরথী-হুগলি নামে দক্ষিণমুখী হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরদ্বীপের কাছে এসে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে ।
মোহনার কাছে এসে গঙ্গা নদী পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন সৃষ্টি করেছে ।
গঙ্গা নদীর উপনদী সমূহ : এই নদীর ডানতীরের প্রধান উপনদী হল যমুনা এবং শোন । ঘর্ঘরা, মহানন্দা, গোমতী, কোশি ইত্যাদি হল গঙ্গা নদীর বামতীরের উপনদী ।
শাখা নদী : পদ্মা এবং ভাগিরথি হল গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা নদী । এছাড়াও ভৈরবী, বিদ্যাধরী, মাথাভাঙ্গা, চূর্ণী, রায়মঙ্গল, জলঙ্গি ইত্যাদি হল গঙ্গা নদীর অন্যতম শাখা নদী ।
ব্রহ্মপুত্র
উৎস এবং উৎপত্তিস্থল : তিব্বতের মানসসরোবরের নিকটবর্তী কৈলাস পর্বতের অন্তর্গত চেমায়ুন দুং হিমবাহ থেকে এই নদের উৎপত্তি । দৈর্ঘ্য প্রায় 2900 কিলোমিটার এবং যার মধ্যে 855 কিলোমিটার প্রবাহপথ ভারতবর্ষের অন্তর্গত ।
ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ বা গতিপথ :
- উৎসস্থল থেকে প্রথমে সাংপো নাম নিয়ে তিব্বত মালভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রায় 1695 কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে।
- এরপর নামচাবারোয়ার কাছে এসে সংকীর্ণ এবং গভীর গিরিখাতের মধ্য দিয়ে দক্ষিণবাঁকে প্রবাহিত হয়ে ডিহং নামে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে ।
- এই অংশে ডিবং এবং লোহিত উপনদী দুটি, ডিহং-এর সাথে মিলিত হয়েছে ।
- তিনটি নদীর মিলিত স্রোত ধারা অসমের সাদিয়ার কাছে ব্রহ্মপুত্র নাম নিয়ে অসম উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমে প্রায় 750 কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে।
- এরপর দক্ষিণমুখী হয়ে যমুনা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে । এই ব্রহ্মপুত্র নদের বক্ষেই গঠিত হয়েছে মাজুলী দ্বীপ যেটি পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপ ।
ব্রহ্মপুত্রের উপনদী সমূহ : তিস্তা, মানস, সুবর্ণশিরি ইত্যাদি হল ডানতীরের এবং কিপিন, বুড়িডিহং ইত্যাদি হল বামতীরের উপনদী ।
সিন্ধু নদ
সিন্ধু নদের উৎস এবং উৎপত্তিস্থল : তিব্বতের মানস সরোবরের 100 কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত সিঙ্গিখাবাব হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়েছে সিন্ধু নদ । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য 2880 কিলোমিটার যার মধ্যে 709 কিলোমিটার প্রবাহপথ ভারতবর্ষের অন্তর্গত ।
সিন্ধু নদের প্রবাহ বা গতিপথ :
- সিন্ধুনদ উৎসস্থল থেকে বেরিয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে ভারতবর্ষের লাদাখ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে ।
- ওই রাজ্যের লাদাখ এবং জাস্কর পর্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় বুঞ্জি শহরের কাছে গভীর গিরিখাতের সৃষ্টি করেছে।
- এরপর নাঙ্গা পর্বতের কাছে দক্ষিণের দিকে প্রায় 90 কিলোমিটার পথ যাওয়ার পর পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে ।
- পাকিস্তানের ওপর দিয়ার প্রায় 2200কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে অবশেষে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে আরবসাগরে মিশছে এবং এই মোহনায় বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে ।
সিন্ধু নদের উপনদী : এই নদীর বামতীরের পাঁচটি উপনদী হলো শতদ্রু, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা, বিতস্তা এবং বিপাশা । গিলগিট, সিগার, শিয়ক ইত্যাদি হল এই নদীর ডান তীরের উপনদী ।
দক্ষিণ ভারতের নদনদী
পশ্চিম বাহিনী নদী
- তাপী/তাপ্তী (দৈর্ঘ্য 730) কিমি) : মধ্যপ্রদেশের বেতুল জেলার মহাদেব পাহাড়ের মূলতাই উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে সাতপুরা ও অজন্তা পাহাড়ের মধ্যবর্তী গ্রস্ত উপত্যকা অতিক্রম করে খাম্বাত উপসাগরে পতিত হয়েছে এই নদী । উপনদী : ডানদিকে পাটকি, পুনা, মোর, বেটুল, ইত্যাদি । বামতীরে গিরনা, কেরি, শিপ্রা ইত্যাদি।
- নর্মদা (দৈর্ঘ্য 1310 কিমি) : মধ্যপ্রদেশের মহাকাল পর্বতেরঅমরকণ্টক শৃঙ্গ থেকে উৎপত্তি লাভ করে বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে । উপনদী : ডানদিকে কোলার, হিরণ, বর্ণা, ইত্যাদি । বামতীর : শের, বুরনের, বানজার, শাক্কর ইত্যাদি ।
পূর্ব বাহিনী নদী
- মহানদী (দৈর্ঘ্য 857 কিলোমিটার) : ছত্তিশগড়ের রায়পুর জেলার দক্ষিাংশের সিওয়া উচ্চভূমি (442 মি) থেকে উৎপত্তি লাভ করে প্রথমে ছক্তিশগড় ও পরে ওড়িশার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে । উপনদী : মান্দ, ব্রাঘণী, ইব, বৈতরণী, ইত্যাদি ।
- কৃষ্ণা (দৈর্ঘ্য 1400 কিলোমিটার) : পশ্চিমঘাট পর্বতের মহাবালেশ্বরের উত্তরের উচ্চভূমি থেকে উৎপত্তি লাভ করে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে । উপনদী : তুঙ্গভদ্রা, ভীনা, মুসি, ঘাটপ্রভা, প্রভৃতি।
- গোদাবরী (দৈর্ঘ্য 1465 কিলোমিটার) : মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার পশ্চিমঘাট পর্বতের ত্রিম্বক উচ্চভূমি । (1600 মি) থেকে উৎপত্তি লাভ করে, মহারাষ্ট্র ও অস্ত্রপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। উপনদী : মন্ত্রিরা, ইন্দ্রাবতী, প্রাণহীতা, ইত্যাদি ।
- কাবেরী (দৈর্ঘ্য 850 কিলোমিটার) : কর্ণাটক রাজ্যের কুর্গ জেলায় পশ্চিমঘাট পর্বতের বঙ্গভূমি পাহাড়ের তালা কাবেরী উচ্চভূমি (1341 মি) থেকে উৎপত্তি লাভ করে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। উপনদী : অমরাবতী, লক্ষ্ণণতীর্থ, হেমবর্ত, সুবর্ণমতী, ইত্যাদি ।
উত্তর এবং দক্ষিণ ভারতের নদনদীর মধ্যে মূল পার্থক্য
উত্তর ভারতের নদনদী সমূহ | দক্ষিণ ভারতের নদনদী সমূহ |
অধিকাংশ নদী হিমালয় পর্বতমালা থেকে সৃষ্টি লাভ করেছে। | অধিকাংশ নদীই উপদ্বীপীয় মালভূমি থেকে সৃষ্টি লাভ করেছে। |
এই নদীগুলি মূলত নবীন। | এই নদীগুলির বয়স অপেক্ষাকৃত প্রাচীন |
এই নদীগুলো সাধারণত দৈর্ঘ্যে বড় হয়। | এই নদীগুলি দৈর্ঘ্যে তুলনামূলকভাবে ছোট |
বরফগলা জল এবং বৃষ্টির জল হল এই জাতীয় নদীগুলির জলের উৎস। | এই জাতীয় নদীগুলি মূলত বৃষ্টির জলে পুষ্ট। |
এই নদীর অববাহিকার আয়তন অপেক্ষাকৃত বেশি হয়ে থাকে। | এই নদী অববাহিকার আয়তন অপেক্ষাকৃত কম। |
নদনদীর গুরুত্বসমূহ
- নদীকে কেন্দ্র করেই ভারতের প্রাচীন সভ্যতাগুলি (মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা, নীলনদে তীরে মিশরীয় সভ্যতা ইত্যাদি) গড়ে উঠেছিল কারণ নদীগঠিত উর্বর পলিমাটি কৃষিকাজের পক্ষে অনুকূল ।
- নদীগুলি থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে মৎস্য আহরণ করা হয় ।
- জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নদীকেন্দ্রিক শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রে নদনদী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে ।
হ্রদ : হ্রদ হল ভারতবর্ষের জলসম্পদের একটি অন্যতম উৎস । জলের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে ভারতের হ্রদগুলিকে মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :
- লবণাক্ত জলের হ্রদ : ভেম্বানাদ (কেরল), প্যাংগং (লাদাখ), চিল্কা (ওড়িশা), কালিভেলি (তামিলনাড়ু), সম্বর (রাজস্থান), ইত্যাদি ।
- স্বাদু জলের হ্রদ : লোকটাক (মণিপুর), ডাল (শ্রীনগর), ভোজ (ভোপাল), কোলেরু (অন্ধ্রপ্রদেশ), রূপকুণ্ড (উত্তরাখণ্ড), সাততাল প্রভৃতি ।
হ্রদের গুরুত্ব
- সেচের মাধ্যমে ভারতের স্বাদুজলের হ্রদগুলি থেকে জল সংগ্রহ করে কৃষিকাজ করা হয়ে থাকে ।
- পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে হ্রদ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আরামদায়ক জলবায়ুকে কেন্দ্র করে । যেমন- চিল্কা হ্রদ, উলার হ্রদ, ইত্যাদি ।
- মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে এই হ্রদগুলি বিশেষত ওড়িশার চিল্কা হ্রদ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে ।
জলাশয় : কোনো কোনো স্থানের ভূমি কঠিন ও শিলাময় হওয়ায় সেখানে কূপ খনন অসম্ভব, সেক্ষেত্রে সেই সব স্থানে বাঁধের দ্বারা কৃত্রিম জলাধার সৃষ্টি করে বৃষ্টিপাতের জল বা নদীর জল ধরে রাখা হয়, একেই জলাশয় বলে ।
সাধারনত দুইধরনের জলাশয় সৃষ্ট করা হয়ে থাকে, যথা—ক্ষুদ্র জলাশয় এবং বৃহৎ জলাশয় ।
জলাশয়ের বণ্টন : অন্ধপ্রদেশের নাগার্জুন সাগর জলাধার, কর্নাটকের তুঙ্গভদ্রা জলাধার, ওড়িশার হীরাকুদ জলাধার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
ভারতের অন্যান্য রাজ্যের জলাধারগুলির মধ্যে রয়েছে রাজস্থানের রাণাপ্রতাপ সাগর জলাধার, পাঞ্জাবের ভাকরা জলাধার, নাঙ্গাল জলাধার, তিলাইয়া জলাধার, জওহরসাগর জলাধার, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার সীমানায় মাইথন জলাধার, পাঞেৎ জলাধার প্রভৃতি হল উল্লেখযোগ্য ।
জলাশয়ের গুরুত্ব
- ভারতের মোট কৃষিজমির প্রায় 17% কৃষিজমিতে জলাশয়ের সাহায্যে জলসেচ করা হয়ে থাকে ।
- দক্ষিণ ভারতের অবনমিত অঞ্চলে বা নদী উপত্যকায় বাঁধ দিয়ে বর্ষার অতিরিক্ত জল আটক করে জলাশয় নির্মাণ করার যথেষ্ট সুবিধা বিদ্যমান ।
খাল : বর্তমানে ভারতের অধিকাংশ কৃষিজমিতে খাল দ্বারা জলসেচ করা হচ্ছে । মোট সেচসেবিত কৃষিজমির 40% কৃষিজমিতে খালের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়ে থাকে । ভারতবর্ষের খালগুলিকে প্রধানত দুইটি ভাগে ভাগ করা হয় । যথা- প্লাবন খাল এবং নিত্যবহ খাল ।
খালের গুরুত্বসমূহ
- খালের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি পরিমাণের কৃষিজমিতে সেচ করা সম্ভব ।
- বন্যা নিয়ন্ত্রণে এইসকল খাল বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে ।
- মাটির আর্দ্রতার স্থায়িত্ব রক্ষায় এই পদ্ধতি সবচেয়ে সুবিধাজনক ।
ভারতের কিছু রাজ্যের খালসমূহ
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা : বিকানীর খাল, সিরহিন্দ খাল, পশ্চিম যমুনা খাল, বারিদোয়াব খাল ।
রাজস্থান : ওট্ট খাল, বিকানীর খাল, রাজস্থান গঙ্গানগর খাল ।
পশ্চিমবঙ্গ : ওড়িশা উপকূল খাল, মেদিনীপুর খাল, প্রভৃতি ।
বিহার : আরা খাল, চৌসা খাল, বক্সার খাল, পাটনা খাল ।
উত্তরপ্রদেশ : পূর্ব যমুনা খাল, নিম্ন গঙ্গা খাল, উচ্চ গঙ্গা খাল প্রভৃতি ।
ওড়িশা : উপকূল খাল, মহানদী খাল ।
দক্ষিণ ভারত : গোদাবরী বদ্বীপ খাল, কৃষ্ণা বদ্বীপ খাল, কাবেরী বদ্বীপ খাল, তুঙ্গভদ্রার কুড্ডাপ্পা-কুর্নুল খাল ।
জলসেচের বিভিন্ন পদ্ধতিসমূহ
নলকূপ এবং কূপ : ভূগর্ভস্থ জলকে সেচের কাজে ব্যবহার করার নিরিখে কূপ ও নলকূপের পদ্ধতিই সবচেয়ে সহজ এবং শ্রেয় । পারসিক চাকা, কপিকল, গরু টানা যন্ত্র, অথবা হাতে টেনে ও কূপ থেকে জল তুলে সেচের কাজে ব্যবহার করা হয় । ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ প্রতিটি রাজ্যে সবচেয়ে বেশি এই পদ্ধতির মাধ্যমেই জলসেচ করা হয় ।
খাল : খালের মাধ্যমে প্রায় 40% জলসেচ করা হয় । নদীতে জলের পরিমাণ বেশি থাকলে জলসেচে বেশি পরিমাণ জল ব্যবহার করা ।
জলসেচ মূলত দুই ধরনের খালের মাধ্যমে করা হয় । যথা –
- নিত্যবহ খাল : বরফগলা জলে পুষ্ট থাকে । এই জাতীয় খালের মাধ্যমে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশে জলসেচ করা হয় ।
- বর্ষার জলে পুষ্ট নদীর জল ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। নদী থেকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় দীর্ঘকাল খাল কেটে দূরবর্তী কৃষিজমিতে নিয়ে গিয়ে চাষ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধপ্রদেশ, উড়িষ্যা এবং তামিলনাড়ুতে এই ধরনের পদ্ধতির মাধ্যমে জলসেচ করা হয় ।
জলসেচের গুণাবলী
জলসেচের সুবিধা :
- স্বল্প ব্যয়ে বৃষ্টিহীন অঞ্চলে এই ধরনের সেচের মাধ্যমে জলকে ব্যবহার করে কৃষিকাজ সম্ভব ।
- শীতকালে রবিশস্য উৎপাদনের জন্য জলসেচের মাধ্যমে কৃষিকাজ করা হয়ে থাকে।
- জলসেচের মাধ্যমে মাটির আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব ।
জলসেচের অসুবিধা :
- কাদামাটি এবং পলিমাটিযুক্ত অঞ্চলে প্রয়োজনাতিরিক্ত জলসেচ করা হলে জল মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে না, যা ফসল উৎপাদনের পক্ষে ক্ষতিকারক ।
- অতিরিক্ত জলসেচ করলে কৃষিজমি লবণাক্ত হয়ে পড়ে এবং জমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায় ।
- অতিরিক্ত জলসেচের ফলে মাটির গ্রন্থগুলি জলপূর্ণ থাকে ফলে ঠিকমতো অক্সিজেনের সরবরাহ হয় না ।
বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা
যে পরিকল্পনার বা পদ্ধতির সাহায্যে নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাকে বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে রূপান্তরিত করা হয় (বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলসেচ, জলপথ পরিবহণ, বনসৃজন, মাটি সংরক্ষণ, মৎস্য উৎপাদন, চিত্ত বিনোদন, পানীয় জল সরবরাহ প্রভৃতি) এবং নদী অববাহিকা অঞ্চলের সর্বত্র উন্নতি করা হয়, সেই পরিকল্পনাকে বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা বলা হয় । উদাহরণ—দামোদর নদী উপত্যকা পরিকল্পনা, ভাকরা-নাঙ্গাল পরিকল্পনা ইত্যাদি ।
ভারতের উল্লেখযোগ্য বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনাসমূহ
দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা : দামোদর, বরাকর এবং কোনার নদী
ভাকরানাগাল পরিকল্পনা : শতদ্রু নদী
মহানদী পরিকল্পনা (হীরাকুদ প্রকল্প) : মহানদী
নাগার্জুন সাগর পরিকল্পনা : কৃষ্ণা নদী
তুঙ্গভদ্রা পরিকল্পনা : তুঙ্গভদ্রা
রামপদ সাগর পরিকল্পনা : গোদাবরী
ময়ূরাক্ষী পরিকল্পনা : ময়ূরাক্ষী নদী
গঙ্গা বাঁধ বা ফারাক্কা বাঁধ পরিকল্পনা : গঙ্গা নদী
বিপাশা পরিকল্পনা : বিপাশা নদী
কোশী পরিকল্পনা : কোশী নদী
দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC) : দামোদর নদ পশ্চিমবঙ্গের ‘দুঃখের নদ’ নামে পরিচিত । 1943 সালের প্রবল বন্যার পর এই নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘টেনেসি ভ্যালি অথরিটি’ (T.V.A.)-র অনুকরণে এই কমিটি একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে । সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী,পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ভারত সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় 1948 সালের জুন মাসে স্বাধীন ভারতে দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা বা D.V.C. গঠন হয় ।
জল সংরক্ষণ
জলসম্পদ সংরক্ষণ বলতে বোঝায় জলের পরিমিত ব্যবহার, অপচয় নিবারণ এবং অবৈজ্ঞানিক ও যথেচ্ছ ব্যবহার কমানো ।
জল সংরক্ষণের গুরুত্ব :
- পৃথিবীতে প্রাকৃতিক বস্তুতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে বিপন্ন না হয় সেক্ষেত্রে প্রজাতিদের রক্ষার উদ্দেশ্যে সমুদ্র, নদী, হ্রদ ইত্যাদির জল সংরক্ষণ করা খুবই প্রয়োজনীয় ।
- জল সংরক্ষণ করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং জলের চাহিদা মেটাতে নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব ।
- জল সংরক্ষণের ফলে ভৌমজলস্তরের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ।
- কৃষিক্ষেত্রে জলসেচ এবং শিল্পক্ষেত্রে জলের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে গেলে জল সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজন ।
জল সংরক্ষণ পদ্ধতি : সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য জলসম্পদকে সুরক্ষিত করতে গেলে সুসংহত জল ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন।
জলসম্পদকে সংরক্ষণের জন্য যে সমস্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে সেগুলি হল—
- জলবিভাজিকা উন্নয়ন : উদবৃত্ত জলকে জলাভাবযুক্ত স্থানে স্থানান্তরিত করতে জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনার সাহায্যে, অববাহিকায় নদী বাঁধের সাহায্যে জলাধারের জলকে ধরে রেখে, সেই জলকে কংক্রিট দ্বারা নির্মিত নালা পথে, ভূ- অভ্যন্তর পাইপের মাধ্যমে পাঠানো হয়, এর ফলে জলের কার্যকারিতা ও উপযোগিতা উভয়ই বৃদ্ধি পায়, ফলত জলের সংরক্ষণ হয় ।
- বৃষ্টির জল সংরক্ষণ : পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃষ্টির জলকে সঠিকভাবে ধরে রেখে যদি ব্যবহার করা যায় তবে জলসম্পদকে রক্ষা করা সম্ভব ।
- ভূগর্ভে যদি বৃষ্টির জলকে সরাসরি প্রবেশ করানো যায় তবে ভূগর্ভস্থ জলসম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব ।
- বৃষ্টির জল বাড়ির ছাদে পড়লে, সেই জল পাইপের মাধ্যমে নামিয়ে কোনো জলাধারে সংরক্ষিত ও পরিশোধন করে গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে ।
- বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চলে ছোট বা বড় পুকুর তৈরি করে পাইপলাইনের মাধ্যমে বৃষ্টির জলকে সেই পুকুরে সংগ্রহ করে এবং স্থানীয় অঞ্চলে সেচের কাজে লাগানো সম্ভব ।
- বৃষ্টির জমা জলকে কাজে লাগিয়ে ডৌমজলের ভাণ্ডারকে পরিপুরণ করা সম্ভব তাই ভূগর্ভস্থ জলাধারের মেঝে কংক্রিটের বানালে তা সম্ভবপর হবে না।
ভারতের জলবায়ু
ভারতীয় জলবায়ুর বৈচিত্র্য
- এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণাংশে অবস্থিত ভারত একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ । অক্ষাংশগত দিক থেকে ভারত ক্রান্তীয় অঞ্চলে এবং উত্তর-দিকের অংশ উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত ।
- ঋতুগত বায়ুচাপের বৈপরীত্যজনিত কারণে ভারতে মূলত মৌসুমি জলবায়ুর প্রাধান্য দেখা যায় ।
- ভারতের আঞ্চলিক জলবায়ু বৈচিত্র্যপূর্ণ হওয়ার কারণ দুরুত্বগত বিস্তার, তিনদিকে সমুদ্রের অবস্থান, উত্তরে বিশাল হিমালয় পর্বতশ্রেণীর অবস্থান, সমুদ্র থেকে দূরত্ব ইত্যাদি।
- এই দেশের একদিকে রয়েছে বৃষ্টিবহুল মৌসিনরাম-চেরাপুঞ্জ, অন্যদিকে অবস্থান করছে থর উষ্ণমরু অঞ্চল ।
- উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু এবং অন্যদিকে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে ।
- এই দেশে গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয় অন্যদিকে শীতকালে শুষ্ক শীতল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।
ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক
- হিমালয় পর্বতের ভূমিকা : ভারতের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত হওয়ায়- আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, উত্তরে মধ্য এশিয়ার শীতল বাতাস ভারতে প্রবেশ করতে পারে না এবং ওই অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা বেশি থাকে ।
- অবস্থান ও অক্ষাংশগত বিস্তৃতি : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে 8°4’ থেকে শুরু করে 37°6’ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যবর্তীস্থানে ভারতবর্ষ অবস্থিত । এই দেশের প্রায় মাঝখান বরাবর কর্কটক্রান্তি রেখা প্রসারিত হওয়ায় দক্ষিণে উষ্ণ ও ক্রান্তীয় জলবায়ু বিরাজ করে । আবার উত্তর দিকে উপক্রান্তীয় বা উষ্ণ নাতিশীতোয় জলবায়ু বিরাজ করে ।
- ভূপ্রকৃতি : জলবায়ু ভারতের ভূপ্রকৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । যেমন—অধিক উচ্চতার কারণে দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও উটি বা অন্যান্য উঁচু অঞ্চলের তাপমাত্রা কম। পশ্চিম উপকূলে পশ্চিমঘাট পর্বতের অবস্থানের জন্য পশ্চিমদিকে বৃষ্টিবহুল এবং পূর্বদিকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে ।
- মৌসুমি বায়ু : মৌসুমি বায়ু হলো ভারতবর্ষের জলবায়ুর অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক । গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে শীতল শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয় । মৌসুমি বৃষ্টির অনিশ্চয়তার জন্যই এই দেশে খরা ও বন্যা দেখা যায় ।
- ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত এবং পশ্চিমীঝঞ্ঝা :
- মে-জুন মাসে বঙ্গোপসাগর এবং আরবসাগরে সূর্যের লম্বকিরণ পড়ায় এবং অক্টোবর নভেম্বর মাসে মৌসুমী বায়ুর কারণে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।
- শীতকালে বায়ুরচাপ বলয় দক্ষিণে 5°-10° সরে যাওয়ার কারণে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশ পশ্চিমাবায়ুর অন্তর্গত হয়। এরফলে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত আর্দ্র পশ্চিমাবায়ু দুর্বল ঘূর্ণবাত বা Depression-এর সৃষ্টি করে এবং মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি ও পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত ঘটিয়ে থাকে। একেই পশ্চিমীঝঞ্ঝা বলে ।
- সমুদ্র সান্নিধ্য : ভারতের দক্ষিণাংশ তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় জলবায়ু সমভাবাপন্ন প্রকৃতির হয় এবং সমুদ্র থেকে দূর দেশের জলবায়ু প্রধানত চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির হয়।
- লা-নিনার প্রভাবসমূহ : একটি উত্তরমুখী অতিশীতল সমুদ্রস্রোত। এই লা-নিনার প্রভাবে ভারত মহাসাগর থেকে উষ্ণ আর্দ্র বায়ুর ব্যাপক ঊর্ধ্বগমন ঘটে যা ভারতবর্ষে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
- জেট বায়ু : ভারতীয় স্থলভাগের উচ্চ অঞ্চলে জেট বায়ু প্রবাহিত হয় ভারতীয় জলবায়ুকে গভীরভাবে প্রভাবিত ।
- শীতকালে উপক্রান্তীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিমী জেট বায়ু তীব্র গতিতে প্রবাহিত হওয়ার কারণে ভারতবর্ষতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার আগমন ঘটে থাকে।
- এই দেশে মে-জুন মাসে সূর্যের উত্তরায়ণের সময় জেট বায়ুর প্রবাহের গতির দিক পরিবর্তিত হয়ে পূর্বমুখী হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে থাকে।
এল-নিনোর প্রভাবসমূহ : উষ্ণ সমুদ্রস্রোত দক্ষিণমুখী অস্থির হল এল নিনো। যার সামনে দক্ষিণ এশিয়ায় জেট বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলত, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়ে থাকে। তাই মৌসুমিয় বায়ুর ভারতে আসতে দেরি হয় এবং কম বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষরার সৃষ্টি করে।
মৌসুমি বায়ু এবং ভারতবর্ষের ঋতুবৈচিত্র্য
মৌসুমী বায়ু : 1833 সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এডমান্ড হ্যালি সর্বপ্রথম ‘মৌসুমি’ শব্দটি ব্যবহার করেন। এটি আরবি শব্দ মৌসিম (Mousim) বা মালয়ালম শব্দ মনসিন (Monsin) থেকে সৃষ্ট, যার অর্থ হল ঋতু। তাই বায়ুর চাপ এবং উষ্ণতার পার্থক্য গ্রীষ্ম এবং শীত ঋতু ভেদে দিক পরিবর্তনকারী ও বিপরীত দিক থেকে নিয়মিত ও ধারাবাহিকভাবে প্রবাহিত সাময়িক বায়ুপ্রবাহকে মৌসুমি বায়ু বলে ।
স্থলবায়ু এবং সমুদ্রবায়ুর বৃহত্তর ও ঋতুগত সংস্করণ হলো মৌসুমী বায়ু । ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর সুবিশাল প্রভাব রয়েছে — মূলত এই কারণের জন্যই ভারতবর্ষকে মৌসুমী বায়ুর দেশ বলা হয়ে থাকে।
ভারতের ঋতুবৈচিত্র্য : কোনো দেশের সারা বছরের বিভিন্ন অংশের আবহাওয়ার সামঞ্জস্যজনিত ভাগকে ঋতু বলে । ঋতু পরিবর্তন হলো ভারতীয় জলবায়ুর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
আবহাওয়াবিদগণ মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর ভিত্তি করে ভারতবর্ষের জলবায়ুকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা –
গ্রীষ্মকাল [মার্চ থেকে মে] :
উষ্ণতা: 21 মার্চ সূর্যের উত্তরায়ণের সাথে সাথেই ভারতবর্ষের তাপমাত্রা পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। গ্রীষ্মকালে পশ্চিম ভারতের তাপমাত্রা প্রায় 48° C এবং উপকূলীয় অঞ্চলে এই তাপমাত্রা 27°-30° সেলসিয়াস থাকে। অধিক উচ্চতার কারণে পার্বত্য উষ্ণতা থাকে 15-16 সেমী।
বায়ুপ্রবাহ এবং বায়ুচাপ : অধিক উষ্ণতার কারণবশত ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ছোট ছোট স্থানীয় চাপ বলয় তৈরি হয়। এই কারণে স্থানীয়ভাবে ঝড়-বৃষ্টির উৎপত্তি ঘটে। গ্রীষ্মকালের বিকেলে মাঝে মাঝে অসম, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিভিন্ন রাজ্যে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি এমনকি শিলা বৃষ্টিও হয়ে থাকে। একেই কালবৈশাখী বলে ।
গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের সমান্তরালে যে উষ্ণ এবং শুষ্কবায়ুর পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকে তাকে লূ বলে । গ্রীষ্মকালে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতবর্ষে যে প্রবল ধূলিঝড়ের সৃষ্টি হয় তাকে আঁধি বলা হয়।
বৃষ্টিপাত : ভারতবর্ষে গ্রীষ্মকালে কালবৈশাখীর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ এবং অসংলগ্ন অঞ্চলে গড়ে প্রায় 15 থেকে 40 সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়ে থাকে। কেরল এবং কর্ণাটক উপকূলে অম্ল বৃষ্টির প্রভাব, 15-25 সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টি তামিলনাড়ুতে কফি বৃষ্টি নামেও পরিচিত।
মৌসুমী বায়ুর আগমন কাল বা বর্ষা কাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) : গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশজুড়ে এক গভীর নিম্নচাপ বলয়ের উৎপত্তি হয়। যার ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু ওই নিম্নচাপের আকর্ষণে ধেয়ে আসে এবং নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে ডানদিকে বেঁকে ভারতে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু রুপে প্রবাহিত হতে থাকে।
মৌসুমী বায়ুর আগমনের সাথে সাথে ভারতবর্ষে বর্ষাকালের সূচনা হয়। এই বায়ু প্রতিবছর কেরলে প্রায় 5 ই জুন এসে পৌঁছায় এবং 15 ই জুলাই-এর আগে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে।
উষ্ণতা : বর্ষাকালে সমগ্র ভারতবর্ষের গড় তাপমাত্রা 20°-30° সেলসিয়াসের ভেতর বিচরণ করে।
বায়ুচাপ এবং বায়ু প্রবাহ : গ্রীষ্মকালের পর প্রচন্ড উত্তাপের ফলে সৃষ্টি হয় গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের । গঙ্গা নদীর অববাহিকা বরাবর এই গভীর দীর্ঘ নিম্নচাপ বলয় তৈরি হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু মূলত দুইটি শাখা আছে, আরবসাগরীয় শাখা এবং বঙ্গোপসাগরীয় শাখা।
মৌসুমীবায়ুর আরবসাগরীয় শাখা
- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আরবসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয় ফলে সেখানে প্রবল বৃষ্টি ঘটায় কিন্তু পর্বতের পূর্বঢালে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সৃষ্টি করে ।
- দ্বিতীয় শাখাটি মহারাষ্ট্রে প্রবেশ করে উচ্চভূমির অভাবে মৌসুমী বায়ু বাধা পায় না বলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকে।
- তৃতীয় শাখাটি আরাবল্লী পর্বতের সমান্তরালে রাজস্থানে প্রবাহিত হয়ে খুব কম বৃষ্টিপাত ঘটায় ।
মৌসুমী বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা
- এর প্রথম শাখাটি বাংলাদেশ অতিক্রম করে মেঘালয়ের গারো, খাসি, জয়ন্তিকা পাহাড়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হলে ওই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি এই বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বছরে গড়ে প্রায় 1100 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত ঘটে । চেরাপুঞ্জি থেকে 16 কিলোমিটার দূরে মৌসিনরামে এই বায়ু দ্বারা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 1250-1400 সেন্টিমিটার। এই অঞ্চল পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল স্থান । শিলং বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় ওই অঞ্চলে বছরে বৃষ্টির পরিমাণ মাত্র 200 সেন্টিমিটার।
- এই বায়ুর অপর একটি শাখা মায়ানমারের আরাকানয়োমা পর্বতশ্রেণীতে প্রচুর বৃষ্টি ঘটিয়ে থাকে।
- সীমা অতিক্রম করে এই বায়ু উত্তরে যেতে না পাড়ায় এর প্রধান অংশ দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে পূর্বদিকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় এবং অপর শাখাটি পশ্চিমদিকে উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাত ঘটায় । পশ্চিমদিকে এই বায়ু এগোলে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমতে থাকে। শেষে যখন রাজস্থানে পৌঁছায় তখন এই বায়ুর বৃষ্টিপাত ঘটাবার সামর্থ্য একদম কমে যায় । তাই আজ রাজস্থানে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন বা শরৎকাল (অক্টোবর থেকে নভেম্বর) : বার্ষিক আপাত গতি অনুসারে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সূর্য বিষুবরেখা অতিক্রম করে মকরক্রান্তি রেখার দিকে প্রত্যাবর্তন করে থাকে। তাই এই ঋতুকে মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন কাল বলা হয়। অগ্রসর হওয়ার সময় পাঞ্জাব এবং রাজস্থানে এই বায়ুর উচ্চচাপ অঞ্চলের সৃষ্টি করে ।
উষ্ণতা : এই ঋতুতে আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় বিভিন্ন অংশে দিনের উষ্ণতা বাড়তে থাকে এবং রাতের উষ্ণতা আরামদায়ক হয়। পূর্ব ভারতের গড় উষ্ণতা এই সময়ে থাকে প্রায় 30° সেলসিয়াস এবং রাজস্থানে উষ্ণতা থাকে প্রায় 36° সেলসিয়াস।
বায়ুরচাপ এবং বায়ুপ্রবাহ : এই সময় পাঞ্জাবে উচ্চচাপযুক্ত বায়ুর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সংঘর্ষের ফলে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। এই ঘূর্ণাবর্তকে আশ্বিনের ঝড় বলে । এর প্রভাবে তামিলনাড়ু তথা পূর্ব উপকূলে যথেষ্ট পরিমাণে বৃষ্টি হয়।
বৃষ্টিপাত : মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তনের ফলে আকাশ মেঘমুক্ত থাকে তাই এই সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত ঘটে না। তবে, বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হবার সময় কিছু পরিমাণ জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে । এই বায়ু করমন্ডল এবং অন্ধ্র উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে থাকে । তাই তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী অঞ্চলে বছরে দুবার বর্ষাকাল হয়ে থাকে। এই শরৎকালে ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টি হয়ে থাকে।
শীতকাল ( ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) : ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে মকরক্রান্তির নিকটবর্তী অঞ্চলে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে, লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় ভারতবর্ষে উষ্ণতার পরিমাণ যথেষ্ট কমে যায়। সুতরাং এই সময় সমগ্র উত্তর গোলার্ধে শীত ঋতু বিরাজ করে। এই সময় অর্থাৎ শীতকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো আকাশ মেঘমুক্ত থাকে এবং উত্তর থেকে প্রবাহিত শীতল বাতাস ও উষ্ণতা কম থাকে।
উষ্ণতা : এই সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করায় ভারতে সূর্যকিরণ তীর্যকভাবে পতিত হয়। তাই সমগ্র ভারতবর্ষের উষ্ণতা কম থাকে। তামিলনাড়ুতে শীতকালের তাপমাত্রা প্রায় 25°-26° সেলসিয়াস এবং উত্তর ভারতে শীতকালের তাপমাত্রা থাকে 13°-18° সেলসিয়াস। শীতকালে উত্তর ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়।
বায়ুচাপ এবং বায়ুপ্রবাহ : অল্প উষ্ণতার জন্য ভারতে সর্বদাই উচ্চচাপ বিরাজ করে । গঙ্গা উপত্যকাতে বায়ুপ্রবাহ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এবং উত্তর-পূর্ব ভারত এবং বঙ্গোপসাগরে বায়ুপ্রবাহ উত্তর-পূর্ব দিকে হয়।
বৃষ্টিপাত : শীতকালে পশ্চিমীঝঞ্ঝার জন্য উত্তর ভারতে বৃষ্টিপাত হয়। এই পশ্চিমীঝঞ্ঝার জন্যই হিমালয় অঞ্চলে তুষারপাত হয় । শীতকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শুরু করে এবং এই সময় দিল্লির গড় বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় 53 মিলিমিটার হয়।
মৌসুমী বায়ু ও বৃষ্টিপাতের প্রভাব
- স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর প্রভাব : মৌসুমী বায়ুর প্রভাব স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর স্পষ্টভাবে লক্ষ্যযোগ্য। এই বায়ুর জন্যই পশ্চিমঘাট পর্বত, হিমালয় প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চলে চিরহরিৎ, পর্ণমোচী এবং সরলবর্গীয় বনভূমির উৎপত্তি হয়েছে।
- কৃষির ওপর প্রভাব : ভারতবর্ষে কৃষিকাজ মূলত বৃষ্টিপাত এবং উষ্ণতার উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল। পরিমিত বৃষ্টিপাত ভারতবর্ষে যে সকল প্রান্তে হয়ে থাকে সেই সকল প্রান্তে ধানের চাষ খুব ভালো হয় তেমনি শুষ্ক অঞ্চলে মিলেট জাতীয় দ্রব্যের চাষ ভালো হয়।
- মৃত্তিকার উপর প্রভাব সমূহ : ভারতবর্ষের মৃত্তিকার গুণাবলী বহুলাংশে বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায় আবার স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে জলসেচ করার ফলে, মাটির লবণাক্ততার বৃদ্ধি হয় । আবার শুষ্ক অঞ্চল বৃষ্টির অভাবে মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে।
খরা : খরা হল ভারতে দুর্বল মৌসুমী বায়ুর ফল। মৌসুমী বায়ুর আগমন দেরিতে হলে বা নিষ্ক্রমণ মৌসুমী বায়ুর আবির্ভাবে বৃষ্টিপাত কার্যত হয় না। ফলত ওই সকল অঞ্চলে খরা দেখা দেয়। ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব সীমানা বরাবর খরা বহুলাংশে লক্ষ্য করা যায়।
বন্যা : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দ্বারা সৃষ্ট অত্যাধিক বৃষ্টি বা ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতই হল ভারতে বন্যার কারণ। উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্য যেমন, উত্তরপ্রদেশ হরিয়ানা, বিহার, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, অসম ইত্যাদি। অপরদিকে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, উড়িষ্যা, অন্ধপ্রদেশের মহারাষ্ট্র প্রভৃতি হলো অত্যধিক বন্যাপ্রবণ রাজ্য সমূহ।
ভারতের মৃত্তিকা
ভারতবর্ষ প্রধানত মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলে গণ্য হলেও এই দেশে বিভিন্ন ধরনের আঞ্চলিক জলবায়ু, স্বাভাবিক উদ্ভিদ, ভূমির ঢাল এবং শিলার পার্থক্যের কারণবশত বিভিন্ন ধরনের মৃত্তিকার অবস্থান রয়েছে। NATMO 1957 সালে, ভারতবর্ষের মৃত্তিকাকে মূলত ছয়টি ভাগে এবং এগারোটি উপভাগে বিভক্ত করেছে।
পলি মৃত্তিকা
এই জাতীয় মৃত্তিকা মূলত নদীর অববাহিকা অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়।
উপাদান : নুড়ি, কাদা, পলি ইত্যাদি হল এই জাতীয় মৃত্তিকার প্রধান উপাদান। এই জাতীয় মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ খুবই কম থাকে।
বৈশিষ্ট্য :
- পলল মাটি সাধারণত দোআঁশ প্রকৃতির হয়।
- এই মাটির রং হালকা বাদামি বা হালকা ধূসর হয়ে থাকে আবার কখনো কখনো হলুদ রঙেরও হয়।
- কম বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ উষ্ণতাযুক্ত অঞ্চলে এই জাতীয় মৃত্তিকা বেশি দেখা যায়।
- এই ধরনের মাটি উর্বর এবং এতে জল ধারণ ক্ষমতা কম।
- পলি মৃত্তিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ফসফরাস, পটাশিয়াম, চুন এবং ক্ষারকীয় পদার্থ উপস্থিত থাকে।
- পাট, গম, শাকসবজি, যব এবং ভুট্টা ইত্যাদি চাষের জন্য এই মৃত্তিকা খুব উপযোগী। এছাড়া এই জাতীয় মাটিতে, ডাল, ধান ইত্যাদিও চাষ করা হয়ে থাকে।
আঞ্চলিক বন্টন : পলি মৃত্তিকা ভারতবর্ষের সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী ইত্যাদি নদীর অববাহিকায় এবং বদ্বীপ ও উপকূলবর্তী অঞ্চলে সাধারণভাবে লক্ষ্য করা যায়।
কৃষ্ণ মৃত্তিকা
এই জাতীয় মৃত্তিকার রং সাধারণভাবে কালো হয় এবং তুলা উৎপাদন করার জন্য খুবই উপযোগী তাই এই মৃত্তিকাকে কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা কালো তুলা মাটি বলা হয়।
উপাদান : এই জাতীয় মৃত্তিকা লাভা এবং ব্যাসল্ট শিলা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে বলেই এর রং কালো হয়ে থাকে। এই জাতীয় মাটিতে কাদার পরিমাণ 30%-80% থাকে। এই মাটি প্রচন্ডভাবে জৈব পদার্থ দ্বারা সমৃদ্ধ।
বৈশিষ্ট্য :
- এই মাটির রং কালো হওয়ার মূল কারণ হলো টিটানিফেরাম ম্যাগনেটাইটের আধিক্য।
- এই জাতীয় মৃত্তিকা ভারী ।
- ক্যালসিয়াম, পটাশিয়া্ম, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি খনিজ পদার্থ দ্বারা এই মাটি সমৃদ্ধ।
- এই জাতীয় মাটির জল ধারণ ক্ষমতা অসাধারণ তাই গরমে তুলা, জোয়ার, সূর্যমুখী ফুল, বিভিন্ন শাক সবজি, তিসি জোয়ার ইত্যাদি চাষের জন্য মাটি খুবই উপযোগী।
আঞ্চলিক বন্টন : পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ এবং অন্ধপ্রদেশের বহু অংশে এই জাতীয় মৃত্তিকা লক্ষ্য করা যায়।
লোহিত মৃত্তিকা
এই জাতীয় মৃত্তিকায় লোহার পরিমাণ বেশি থাকায়, মৃত্তিকার রং লাল হয় ।
উপাদান : গ্রানাইট, নিস জাতীয় প্রাচীন শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে লোহিত মাটির সৃষ্টি করে। এই জাতীয় মাটিতে কাদা কম এবং বালির ভাগ বেশি থাকে।
বৈশিষ্ট্য
- এই জাতীয় মাটির রং লাল হলেও কোথাও কোথাও হরিদ্রাভ দেখা যায়।
- এই জাতীয় মৃত্তিকা অন্যান্য বেশিরভাগ মাটি থেকে সামান্য পরিমাণে ভারী হয়।
- অ্যালুমিনিয়াম এবং লোহার আধিক্য এই মাটিতে দেখা যায় এছাড়াও ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
- এই জাতীয় মাটি কম উর্বর।
- জলসেচের দ্বারা এই জাতীয় মাটিতে চিনাবাদাম, তুলা, তিসি, ধান, কলাই এবং আখের চাষ করা হয়। এছাড়াও পাহাড়ের ঢালে এই জাতীয় মাটিতে দারচিনি, কফি, চা ইত্যাদি চাষ করা হয়।
আঞ্চলিক বন্টন : দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক তামিলনাড়ু, পশ্চিম ভারতের রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটের কিছু অংশ, পূর্ব ভারতের ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কিছু কিছু অংশে এই জাতীয় মৃত্তিকার অবস্থান।
ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
এই জাতীয় মৃত্তিকার রং ইটের মতো লাল, তাই এই মৃত্তিকা ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা নামে পরিচিত।
উপাদান : নিস, গ্রানাইট, সিস্ট ইত্যাদি লৌহ দ্বারা গঠিত শিলা থেকে ল্যাটেরাইট জাতীয় মৃত্তিকা তৈরি হয়েছে ।
বৈশিষ্ট্য :
- এই জাতীয় মাটিতে চুন, টিটানিয়ম অক্সাইড ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পদার্থ পাওয়া যায়।
- এই জাতীয় মাটি মূলত হালকা প্রকৃতির হয়।
- রাসায়নিক সার এবং জলসেচ দ্বারা আখ, জোয়ার, ধান, সয়াবিন, ভুট্টা ইত্যাদি এবং যে সকল স্থানে বৃষ্টি বেশি হয়, সেই সকল স্থানে কোকো, কাজুবাদাম, কফি ইত্যাদি চাষ করা হয়।
আঞ্চলিক বন্টন : ভারতবর্ষের অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও তামিলনাড়ু উড়িষ্যা, অন্ধপ্রদেশের পার্বত্য অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পর্বতের পার্বত্য অঞ্চলে এবং ছোটনাগপুর মালভূমিরর পূর্ব অংশে এই জাতীয় মৃত্তিকা লক্ষ্য করা যায়।
মরু মৃত্তিকা
এই জাতীয় মাটি অপেক্ষাকৃত হালকা এবং গ্রথনযুক্ত হয় ।
উপাদানসমূহ : এই জাতীয় মাটিকে বেলে মাটি বলে। এই মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুবই কম থাকে এবং এ জাতীয় মাটি অনুর্বর।
বৈশিষ্ট্যসমূহ
- মাটির রং হালকা ধূসর বাদামি বা হলুদ ।
- এই মাটি অপেক্ষাকৃত হালকা হওয়ায় জল ধারণ ক্ষমতা খুবই কম।
- এই জাতীয় মৃত্তিকায় ম্যাগনেসিয়াম ফসফেট সোডিয়াম ক্যালসিয়াম যথেষ্ট পরিমাণে উপস্থিত থাকে।
- অধিক জলসেচের দ্বারা এই জাতীয় মাটিতে ডাল, বার্লি, মিলেট, ইত্যাদি চাষ করা হয়ে থাকে।
আঞ্চলিক বন্টন : দক্ষিণ হরিয়ানা, পশ্চিম রাজস্থান, সৌরাষ্ট্র এবং কচ্ছ অঞ্চলে, দক্ষিণ-পশ্চিম পাঞ্জাব ইত্যাদি জায়গায় এই জাতীয় মৃত্তিকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
পার্বত্য মৃত্তিকা
উপাদান : এই জাতীয় মৃত্তিকা সাধারণত কাদা পাথর, দোআঁশ বা পাথুরে প্রকৃতির হয়ে থাকে। তরাই অঞ্চলে বিভিন্ন নদীর দ্বারা বাহিত পদার্থ সঞ্চিত হয়ে বালুকাময় দোআঁশ মাটি সৃষ্টি করে থাকে; এই জাতীয় মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে ।
বৈশিষ্ট্য :
- মৃত্তিকার রং সাধারণভাবে বাদামী ।
- সিলিকা, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এবং লোহার উপস্থিতি এই জাতীয় মৃত্তিকায় দেখা যায় ।
- এই জাতীয় পার্টিতে গম, ভুট্টা, আলু চাষ করা হয়ে থাকে ।
আঞ্চলিক বন্টন : হিমালয়, ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ নীলগিরি পর্বত ইত্যাদি ।
পার্বত্য অঞ্চলে এবং বিভিন্ন পর্বতের ঢালে এই জাতীয় মাটি সহজেই লক্ষণীয় ।
মৃত্তিকা ক্ষয়
বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণবশত মৃত্তিকার উপরিস্তরের ধীরে ধীরে অপসারণের ঘটনাকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে । মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় ।
মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ
মৃত্তিকা ক্ষয়ের মূল কারণগুলিকে দুইটি ভাগে ভাগ । যথা-
- প্রাকৃতিক কারণ : বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক শক্তির যেমন বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ দ্বারা মাটির আস্তরন ক্ষয় হলে, তাকে ভূতাত্ত্বিক ক্ষয় বলা হয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের দ্বারা এই ক্ষয় হয়।
- প্রবাহমান জল প্রবাহ : প্রবাহমান জলরাশি দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। যথা- চাদর ক্ষয়, নালি ক্ষয়, প্রণালী ক্ষয়, প্রণালী ক্ষয় ইত্যাদি ।
- বায়ুপ্রবাহ : প্রধানত শুষ্ক অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের ফলে মৃত্তিকা অন্যত্র বাহিত হয় এবং মৃত্তিকা ক্ষয় হয় ।
- ভূপ্রকৃতি : ভূমির ঢাল এবং প্রকৃতি ভূমিক্ষয়ের অন্যতম কারণ ।
- বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি : প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় বৃষ্টির কনাগুলি মাটিতে সজোরে আঘাত করলে মৃত্তিকা ক্ষয় ঘটে ।
- মানুষ দ্বারা সৃষ্ট কারণ : মানুষ দ্বারা সৃষ্ট মৃত্তিকা ক্ষয়ের অন্যতম কারণ সমূহ হলো- জনসংখ্যার চাপ, অবৈজ্ঞানিক খনন প্রক্রিয়া, অনিয়ন্ত্রিত পশুপালন, ভূমিধ্বস, বৃক্ষচ্ছেদন ইত্যাদি।
মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফলসমূহ
মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে মানুষ এবং প্রকৃতি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়। যেমন-
- উর্বর মৃত্তিকার উপরিস্তরের অপসারণ
- ভৌমজলের উষ্ণতা হ্রাস এবং মাটির আর্দ্রতার পরিমাণ হ্রাস
- মরু অঞ্চলের বিস্তার
- বন্যা এবং খরার ক্ষমতা বৃদ্ধি, ভূমিধস বৃদ্ধি ইত্যাদি।
ভারতবর্ষে মৃত্তিকা ক্ষয় অঞ্চলসমূহ
জায়গার নাম | মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ |
পাঞ্জাব, হরিয়ানা | অরণ্য ধ্বংস এবং প্রবাহমান জলধারা |
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল | হিমবাহের দ্বারা |
অন্ধপ্রদেশ রাজস্থান মধ্যপ্রদেশের কম বৃষ্টিপাত যুক্ত স্থান | পশুচারণ এবং কম বৃষ্টিপাত |
ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল এবং সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল সমূহ | সমুদ্র তরঙ্গের দ্বারা |
অরুণাচল, অসমের কিছু অংশ এবং মণিপুর | স্থানান্তর চাষবাস |
উত্তর প্রদেশ বিহার রাজস্থান | প্রবাহমান জলধারা দ্বারা |
মহানদী গোদাবরী এবং কাবেরী নদীর অববাহিকা | প্রবাহমান জলধারা দ্বারা |
মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ এবং রাজস্থান | প্রবাহমান জলধারার কারণে |
ভূমিক্ষয় রোধ এবং সংরক্ষণ : কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে সহজেই মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করা সম্ভব । যেমন- বৃক্ষরোপণ, ফালি চাষ, ঝুম চাষ রোধ, সমন্বিত রেখা বরাবর চাষ, গালিচাষ, ইত্যাদি ।
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ
প্রাকৃতিক জলবায়ুতে মাটির উপর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা উদ্ভিদকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলে । ভারতের জলবায়ু এবং মৃত্তিকার তারতম্যের ওপর ভিত্তি করে, বিভিন্ন ধরনের স্বাভাবিক উদ্ভিদ লক্ষ্য করা যায়।
স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণীবিভাগ : ভূ-প্রাকৃতিক তারতম্যের নিরিখে, বিজ্ঞানী পুরী, লেগ্রিস এবং চ্যাম্পিয়ন ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে প্রধানত পাঁচটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন এছাড়াও ষোলটি অপ্রধান ভাগও বর্তমান । প্রধান পাঁচটি ভাগ হলো-
- ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনভূমি
- ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য
- ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ
- পার্বত্য উদ্ভিদ
- ম্যানগ্রোভ বনভূমি
ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনভূমি
ভারতবর্ষে যে সকল অঞ্চলে বছরে গড়ে 200 সেন্টিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টি হয় এবং যে সকল অঞ্চলের উষ্ণতা 25°-27° সেলসিয়াসের মধ্যে বিচরণ করে, সেই সকল অঞ্চলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনভূমির সৃষ্টি হয় ।
আঞ্চলিক বন্টন : আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল, লাক্ষাদ্বীপ, উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল, হিমালয়ের পাদদেশের তরাই অঞ্চলে এইজাতীয় বনভূমি লক্ষ্য করা যায় ।
বৈশিষ্ট্য :
- এই বনভূমিতে খুব দীর্ঘ প্রকৃতির উদ্ভিদ লক্ষ্য করা যায়।
- অতিবৃষ্টি, আর্দ্রতা এবং অধিক উচ্চতার কারণে এই বনভূমির গাছগুলি সর্বদা চিরহরিৎ থাকে ।
- এই বনভূমির উদ্ভিদগুলির কাঠ খুব ভারী এবং শক্ত হয় ।
প্রধান উদ্ভিদ : জারুল, মেহগনি, চম্পা, রবার, গর্জন, বাঁশ প্রভৃতি।
ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য
ভারতবর্ষে সবচেয়ে বেশি ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য লক্ষ্য করা যায় । এই অরণ্যে গড় বৃষ্টিপাত বার্ষিক 60-150 সেন্টিমিটার । এই অঞ্চলের উষ্ণতা 26°-30°-র মধ্যে থাকে।
আঞ্চলিক বন্টন : উচ্চ, মধ্য এবং নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি, পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল, শতদ্রু সমভূমি এবং ব্রহ্মপুত্র সমভূমিতে এই জাতীয় অরণ্য লক্ষ্য করা যায় ।
বৈশিষ্ট্য :
- এই জাতীয় বনভূমিতে খুব দীর্ঘ প্রকৃতির উদ্ভিদ লক্ষ্য করা যায় না ।
- এই বনভূমিতে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে ।
- গাছগুলির কাঠ অত্যন্ত শক্ত এবং ভারী ।
- বসন্তকালে এই অরন্যের গাছগুলি পাতা ঝরিয়ে দেয় ।
প্রধান উদ্ভিদ : অর্জুন, শাল, শিমুল, পলাশ, কাঁঠাল, বট, সেগুন ইত্যাদি ।
ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ
ভারতবর্ষের যে সকল স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বছরে গড়ে 25-50 সেন্টিমিটার হয় এবং উষ্ণতা 35°-40° সেলসিয়াসের ভেতর বিচরণ করে এবং যে সকল স্থানে স্বল্প আর্দ্রতা বিচরণ করে, সেই সকল স্থানে ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ লক্ষ্য করা যায় ।
আঞ্চলিক বন্টন : পশ্চিম পাঞ্জাব এবং পশ্চিম হরিয়ানার কিছু অংশ, পশ্চিম রাজস্থানের মরু অঞ্চল, কচ্ছ এবং কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের কিছু অংশে এই জাতীয় উদ্ভিদ লক্ষ্য করা যায় ।
বৈশিষ্ট্য :
- অধিক উষ্ণতা এবং অল্প বৃষ্টিপাতের জন্য গাছগুলি কাঁটাযুক্ত এবং ঝোপ জাতীয় ।
- এই জাতীয় উদ্ভিদের শেখড় মাটির গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করে জলের উদ্দেশ্যে ।
- উদ্ভিদগুলি বহু দূরে দূরে বিক্ষিপ্তভাবে বিচরণ করে ।
- এই জাতীয় উদ্ভিদের কান্ড মোমাবৃত থাকে ।
প্রধান উদ্ভিদ : খেজুর, ফনিমনসা, জুলিফ্লোরা ইত্যাদি ।
পার্বত্য উদ্ভিদ
আঞ্চলিক বন্টন : বৃষ্টি, উষ্ণতা, উচ্চতার তারতম্যের ফলে পার্বত্য উদ্ভিদের মধ্যে বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা যায় । ভারতের পার্বত্য বনভূমিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা-
দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের পার্বত্য বনভূমি : দক্ষিণ ভারতে নীলগিরি, পশ্চিমঘাট ইত্যাদি পর্বত এবং মধ্য ভারতের মহাকাল, মহাদেব এবং সাতপুরা পাহাড়ের পার্বত্য অঞ্চলে পার্বত্য বনভূমি লক্ষ্য করা যায় । এই সকল অঞ্চলে ১০০০-১৫০০ মিটার উচ্চতায় চিরহরিৎ অরণ্য এবং ১৫০০ মিটারের অধিক উচ্চতায় আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য লক্ষ্য করা যায় ।
বৈশিষ্ট্য :
- পার্বত্য অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত অল্প তাপমাত্রা এবং অধিক আর্দ্রতাযুক্ত স্থানে চিরহরিৎ বনভূমি লক্ষ্য করা যায় ।
- মরুভূমি তলদেশে এবং পরজীবী উদ্ভিদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ।
উদ্ভিদ : দেওদার, রডোডেনড্রন, ম্যাগ্নোলিয়া ইত্যাদি ।
হিমালয়ের পার্বত্য বনভূমি : হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে, উচ্চতার তারতম্যের সাথে বৃষ্টিপাত এবং উষ্ণতারও তারতম্য ঘটে । তাই স্বাভাবিক উদ্ভিদের মধ্যেও এই তারতম্য লক্ষ্য করা যায় ।
বৈশিষ্ট্য :
- সরলবর্গীয় বনভূমির গাছগুলির উচ্চতা সাধারণত 30 মিটার হয়ে থাকে ।
- এই প্রজাতির উদ্ভিদগুলি বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জন্মগ্রহণ করে ।
- এই বনভূমির উদ্ভিদগুলির কান্ড নরম এবং হালকা হয় ।
ম্যানগ্রোভ বনভূমি
আঞ্চলিক বণ্টন : গঙ্গা, কৃষ্ণা, কাবেরী, গোদাবরী নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে এবং আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায় ।
বৈশিষ্ট্য :
- এই জাতীয় উদ্ভিদগুলি সারাবছর চিরহরিৎ প্রকৃতির হয় ।
- কাদা এবং বালিযুক্ত আলগা মাটিতে ভিন্নভাবে আটকে থাকার জন্য, এই জাতীয় উদ্ভিদ স্তম্ভমূল এবং ঠেসমূলের ব্যবহার করে ।
- এই জাতীয় উদ্ভিদ দ্বারা সৃষ্ট বনভূমি খুব ঘন প্রকৃতির হয় ।
- শ্বাসমূল দেখা যায় ।
প্রধান উদ্ভিদ : সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, গোলপাতা, কেওড়া প্রভৃতি।
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের ব্যবহার
ভারতবর্ষের বিভিন্ন বৈচিত্রের জন্য বিভিন্ন রকমের স্বাভাবিক উদ্ভিদ লক্ষ্য করা যায় এবং এই সকল উদ্ভিদ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় । যেমন –
- শিল্পজ কাঠ হিসেবে : প্যাকিং বাক্স, দেশলাই, আসবাবপত্র, গৃহের বিভিন্ন কাজে, নৌকা, জাহাজ, প্রভৃতি তৈরির কাজে কাঠই হল কাঁচামাল ।
- জ্বালানি কাঠ হিসাবে : জ্বালানি কাঠ হিসাবে বিভিন্ন গাছ যেমন সুন্দরী, বাবলা ইত্যাদির কাঠ এবং শুকনো ডালপালা ব্যবহৃত হয় ।
- উপজাত দ্রব্যসমূহ : ভারতের বনভূমি থেকে বিভিন্ন ধরনের উপজাত দ্রব্য সংগ্রহ করা হয় । যেমন- মোম, রেশম কীট, আঠা ইত্যাদি যা নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হয় ।
- এছাড়াও ওষুধ তৈরিতে, পশুদের খাদ্য যোগানে এবং প্রোটিন খাদ্য ভান্ডার হিসেবে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদসমূহ ব্যবহৃত হয় ।
অরণ্য সংরক্ষণ
সম্পদ সংরক্ষণ বলতে, তার অপব্যবহার বন্ধ করে সুপরিকল্পিতভাবে সঠিক ব্যবহারকে বোঝায় । তাই অমূল্য সম্পদের সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী । অরণ্যকে সঠিকভাবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যবহার করাই হল অরণ্য সংরক্ষণ ।
অরণ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি : বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে অরণ্য সংরক্ষণ করা হয়, যেমন-
- অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃক্ষচ্ছেদন রোধ
- অপরিণত বৃক্ষচ্ছেদন পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করতে হবে।
- কাঠের জ্বালানির পরিবর্তে অন্য কোন বিকল্পকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
- রাসায়নিক এবং জৈবিক উপায়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ করতে হবে।
- দাবানল থেকে অরণ্যকে রক্ষা করা
- অরণ্যে পশুচারণ নিয়ন্ত্রিত
- বনসৃজন এবং পুনবনসৃজনের ব্যবহার ।
সামাজিক বনসৃজন
সামাজিক বনসৃজন নামটির প্রথম ব্যবহার হয় ১৯৪৬ সালে অনুষ্ঠিত সিলভিকালচার সম্মেলনে। সামাজিক বনসৃজনের মাধ্যমে প্রধানত ভারতীয় গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে দরিদ্র এবং অনুন্নত আদিবাসীদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নতি সাধনের উদ্দেশ্যে পতিত, পরিত্যক্ত জমিতে নতুন করে গাছ লাগিয়ে অরণ্য তৈরি করা। বর্তমানে এই জাতীয় বনসৃজনের দ্বারা সড়কপথ, রেললাইন, নদী ইত্যাদির দুপাশে এবং শিল্পাঞ্চলের ফাঁকা স্থানে বহু গাছ লাগিয়ে কৃত্রিম অরণ্য সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে ।
এই জাতীয় বনসৃজনের মূল উদ্দেশ্য হলো, কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের আর্থিক উন্নতি ঘটানো, বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য, কাঠ, এবং পশুখাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা, বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করা এবং পরিবেশের সামঞ্জস্য এবং ভারসাম্য বজায় রাখা ।
কৃষি বনসৃজন
এই জাতীয় বনসৃজনে কৃষকরা, তাদের কৃষিজমির পাশে, অব্যবহৃত স্থানে বৃক্ষ এবং অন্যান্য শস্যের চাষ করে । এই জাতীয় বনসৃজনে ব্যবহৃত মূল উদ্ভিদসমূহ হল- বাসক, তুলসী, নয়ন তারা, আকাশমনি, কালমেঘ প্রভৃতি । কৃষি বনসৃজনের মূল উদ্দেশ্য হলো, কৃষি জমিতে জৈব সারের পরিমাণ বৃদ্ধি করা, ভূমিক্ষয় রোধ করা এবং প্রাকৃতিক সামঞ্জস্য অর্থাৎ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা ।
SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ-BHARAT ER PRAKTITIK PARIBESH
1 MARKS QUESTIONS
কোনটি পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ?
উত্তর : ভারত।
ভারত অবস্থান অনুসারে কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : উত্তর গােলার্ধে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণাংশে অবস্থিত।
ভারতের মােট ক্ষেত্রফল কত?
উত্তর : 32 লক্ষ 87 হাজার 263 বর্গ কিমি।
কোনটি ভারতের পশ্চিমতম স্থান?
উত্তর : গুজরাটের গুহার মেটার।
কোনটি ভারতের পূর্বৰ্তম স্থান?
উত্তর : অরুণাচল প্রদেশের কিবিথু।
ভারতের পশ্চিম সীমা থেকে পূর্ব সীমা পর্যন্ত সময়ের পার্থক্য কত?
উত্তর : 1 ঘন্টা 56 মিনিট।
কোনটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণতম স্থান?
উত্তর : তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী।
কোন রাজ্য ভারতের সর্বাধিক রাজ্যকে স্পর্শ করে রয়েছে?
উত্তর : উত্তরপ্রদেশ (আটটি রাজ্যকে স্পর্শ করেছে)
বর্তমানে ভারতে রাজ্যের সংখ্যা কত?
উত্তর : 29টি অঙ্গরাজ্য এবং 7টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।
কোন কোন রাজ্য সর্বাধিক আন্তর্জাতিক সীমা স্পর্শ করেছে ?
উত্তর : তিনটি রাজ্য (পশ্চিমবঙ্গ, অরুণাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীর)।
কোন অঞ্চলকে জাতীয় রাজধানী অঞ্চল হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর : নতুন দিল্লিকে।
কাকে Seven Sisters of India বলা হয়?
উত্তর : মণিপুর, ত্রিপুরা, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মেঘালয় ও মিজোরাম এই 7টি রাজ্যকে বলা হয় Seven Sisters of India |
দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তরে হিমালয় পর্যন্ত প্রসারিত একমাত্র রাজ্যের নাম কী?
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গ।
কোনটি আয়তনে ভারতের বৃহত্তম রাজ্য?
উত্তর : রাজস্থান
কোন কোন রাজ্যের ওপর দিয়ে কর্কটক্রান্তিরেখা বিস্তৃত?
উত্তর : গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্য।
কোন কোন রাজ্য বাংলাদেশ সীমান্তাকে স্পর্শ করেছে (পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ) ?
উত্তর : অসম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্য।
ভারতের কোন কোন রাজ্য নেপাল ও ভুটানকে স্পর্শ করেছে?
উত্তর : বিহার, সিকিম, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, অরুণাচল প্রদেশ প্রভৃতি রাজ্য।
কার ওপর ভিত্তি করে 1953 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়?
উত্তর : ভাষার ভিত্তিতে।
ভারতে 2000 সালে কয়টি রাজ্য গঠিত হয়?
উত্তর : তিনটি। (নভেম্বর—মধ্যপ্রদেশ ছেড়ে ছত্তিশগড়, 7 নভেম্বর-উত্তরপ্রদেশ ভুণ্ডে উত্তরাখণ্ড, 15 নভেম্বর বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠিত হয়।)
2 জনু 2014 ভারতের কোন রাজ্য ভেঙে নবীনতম রাজ্য গঠিত হয় ?
উত্তর : অপ্রদেশ ভেঙে তেলেঙ্গানা রাজ্য। (রাজধানী-হায়দরাবাদ)
কোনটি আয়তনে ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্য?
উত্তর : গােয়।
কোনটি আয়তনে ভারতের বৃহত্তম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল?
উত্তর : শ্রাদামান ও নিকোবর দ্বীপপ।
কোনটি আয়তনে ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল?
উত্তর : লাক্ষাদ্বীপ।
কোন পর্বতশ্রেণি পামির মালভূমি ও সিন্ধুনদের মধ্যবর্তী অংশে অবথিত? |
উত্তর : কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি।
কতদুর হিমালয় পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত?
উত্তর : পশ্চিমে জম্মু-কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বত থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের নামচাবারওয়া (7756 কিমি) পর্যন্ত বিস্তৃত।
শিবালিক পৰ্বত অরুণাচল প্রদেশে ‘ডাফল’, মিরি, আরব , মিশমি, জম্মুতে জম্মু পাহাড়’, কিন্তু উত্তরাখণ্ডে কী নামে পরিচিত?
উত্তর : ডের ধ্যাং পর্বতশ্রেণি।
ভারতের সর্বনিম্ন স্থলভাগের স্থানের নাম কী?
উত্তর : কেরালার কুট্টানাড়ু।
শিবালিকের উত্তরে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রায় 2000-5000 মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট যে পর্বতশ্রেণিটি রয়েছে তাকে কী বলে?
উত্তর : হিমাচল।
হিমাচল হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিম থেকে পূর্বে যে পর্বতশ্রেণিটি বিস্তৃত রয়েছে, তাকে কী বলে?
উত্তর : হিমাদ্রি হিমালয়।
স্থানীয় ভাষায় কাশ্মীরে 100-200 মিটার উচ্চ হ্রদের চারপাশে যে ধাপযুক্ত উর্বর পলিস্তরের সৃষ্টি হয়েছে তাকে কী বলে?
উত্তর : ক্যারেওয়া।
ভারতের দক্ষিণতম ও উত্তরতম বিন্দুর নাম কী?
উত্তর : আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ইন্দিরা পয়েন্ট (দক্ষিণতম) বিন্দু এবং জম্মু ও কাশ্মীরের ইন্দিরা কল (উত্তরতম)।
ভারতকে ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য অনুসারে প্রধানত কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ?
উত্তর : পাঁচটি ভাগে (উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল, উপকুলীয় সমভূমি অঞ্চল ও দ্বীপপুঞ্জ, উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল, উত্তরের সমভূমি অঞ্চল)।
মাউন্ট এভারেস্টকে তিব্বতীয় ও নেপালি ভাষায় কী বলা হয়?
উত্তর : চোষােলুংমা (তিব্বতীয়রা) ও সাগরমাথা (নেপালিরা)।
মরু সমভূমিকে ভূপ্রাকৃতিক তারতম্য অনুসারে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর : পাঁচ ভাগে (বাগর, রােহি, ক্ষুদ্র মরু, হামাদা, মরুস্থলী
ভারতের থর মরুভূমিতে চলমান বালিয়াড়িকে কী বলা হয়?
উত্তর : প্রিয়ান (অর্থ চলমান)।
ভারতের উত্তরের বৃহৎ সমভূমি অঞ্চলের দক্ষিণে অবস্থিত মালভূমিকে কী বলা হয় ?
উত্তর : দাক্ষিণাত্যের মালভূমি।
Multiple Choice Questions – 1 Marks of ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ-BHARAT ER PRAKTITIK PARIBESH
1.কোনটা ভারতের প্রমাণ দ্রাঘিমারেখা?
- ৮২°২২’ পূর্ব
- ৮২°২৯ পূর্ব
- ৮২°৩০’ পূর্ব
- ৮২°৩২’ পূর্ব
Ans- 3 . ৮২°৩০’ পূর্ব
2.অক্ষাংশগত হিসেবে ভারত কোন গোলার্ধে অবস্থিত ?
- উত্তর
- দক্ষিণ
- পূর্ব
- পশ্চিম
Ans- .3. পূর্ব
3.গুজরাটের কচ্ছের রণ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত ভারতের প্রস্থ কতটা?
- ২৯৩৩ কিমি
- ২৯৬২ কিমি
- ৩৪১৪ কিমি
- ২১২৬ কিমি
Ans- 1. ২৯৩৩ কিমি
4. ভারতবর্ষে মােট কটি অঙ্গ রাজ্য ছিল ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ সালের আগে ?
- ২৫
- ২৮
- ২৭
- ২১
Ans-2 . 28
- কীসের ভিত্তিতে ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠন করা হয়েছিল?
- সীমানা
- শিক্ষা
- ভাষা
- জাতি
Ans- 3. ভাষা
7.১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠনের সময় ভারতবর্ষের রাজ্যপাল শাসিত রাজ্য (অঙ্গরাজ্য) কত গুলো ছিল?
- ১৪
- ১২
- ১৬
- ১১
Ans – 1. ১৪
8.কর্নাটক রাজ্যের আগের নাম কি ছিল ?
- ম্যাঙ্গালোরে
- কুর্গ
- ইউনাইটেড প্রভিন্স
- মাইসোর
Ans – 4. মাইসোর
9.বর্তমানে ভারতের মোট রাজ্য সংখ্যা কতগুলি ?
- ২১
- ২৪
- ২৯
- ৩২
Ans – 3. ২৯
10.মধ্যপ্রদেশ রাজ্য ভাগ হওয়ার পরে নতুন রাজ্যটি নাম কি?
- ছত্তিশগড়
- উত্তরাখণ্ড
- বিহার
- নয়ডা
Ans – 1. ছত্তিশগড়
1.হিমালয়-হল একটি
- নবীন ভঙ্গিল পর্বত
- প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত
- সঞ্চয়জাত পর্ব
- স্তূপ পর্বত
Ans- 1
2.ট্রান্স হিমালয় নিম্নলিখিত কোন পর্বতশ্রেণী কে বলা হয় ?
- জার পর্বতশ্রেণি
- পীরপানজাল পর্বতশ্রেণি
- কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি
- লাডাক পর্বতশ্রেণি
Ans- 3
- হিমালয় পর্বতের বিস্তার পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় কত কিলোমিটার ?
- ২৪০০ কিমি
- ২৫০০ কিমি
- ২৬০০ কিমি।
- ২৭০০ কিমি
Ans- 1
4.এদের মধ্যে কোনটি হিমালয় পর্বতের ২য় উচ্চতম শৃঙ্গ?
- মাউন্ট এভারেস্ট
- কাঞ্চনজঙ্ঘা
- K2 বা গডউইন অস্টিন
- নাঙ্গা পর্বত
Ans- 2
- সিয়াচেন হিমবাহ কোথায় অবস্থিত?
- জম্মু ও কাশ্মীরে
- পাকিস্তানে
- হিমাচল প্রদেশে
- তিব্বতে
Ans- 1
6.কোন দেশে মাউন্ট এভারেস্ট অবস্থিত ?
- ভারত
- ভূটান
- নেপাল
- চিন
Ans- 3
7.হিমালয় পূর্বদিকে কতদূর বিস্তৃত ?
- নাঙ্গা পর্বত
- খাসি পাহাড়
- নামচাবারােয়া
- শিবালিক
Ans- 3
- কোন পর্বতে সিয়াচেন হিমবাহ অবস্থিত ?
- লাদাখ
- কারাকোরাম
- হিমালয়
- পীরপানজাল
Ans- 2
9 .কোন রাজ্যকে পঞ্চ নদের দেশ বলা হয়?
- অপ্রদেশ
- পাঞ্জাব
- জম্মু ও কাশ্মীর
- উত্তরাখণ্ড
Ans- 2
10.কোন মালভূমি গারাে, খাসি, জয়ন্তিয়া, মিকির প্রভৃতি পাহাড় দিয়ে ঘেরা?
- তিব্বত
- লাডাক
- মেঘালয়
- ছােটোনাগপুর
Ans- 3
1.ভারতে গঙ্গা নদীর মােট দৈর্ঘ্য কত ?
- ২০৭৫
- ২৫২৫
- ২০৭১
- ২৫০০
Ans- 3
- তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদ কে কী নামে ডাকা হয় ?
- ডিহং
- সাংপাে
- লােহিত
- দিবং
Ans – 2
3.ভারতের দীর্ঘতম উপনদী কোনটি ?
- শতদ্রু
- যমুনা
- শােন
- হুগলী
Ans- 2
- গঙ্গার উচ্চগতি উৎপত্তিস্থল থেকে কতদূর?
- হরিদ্বার
- দেবপ্রয়াগ
- বিহার
- মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান
Ans – 1
- এর মধ্যে কোনটি গঙ্গার বামতীরের উপনদী?
- যমুনা
- চম্বল
- সোন
- গোমতী
Ans – 4
7.হাওড়া ও কলকাতা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় গঙ্গা কে নামে ডাকা হয় ?
- গঙ্গা
- হুগলী
- ভাগীরথী
- সুবর্ণরেখা
Ans- 2
8.ভারতে সবথেকে বেশি পরিমান জল বহনকারী নদীটির নাম কি ?
- ব্রৰ্ম্মপুত্র
- গঙ্গা
- সিন্ধু
- যমুনা
Ans -1
9.কোন্ নদী থর মরুভূমির মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে ?
- নর্মদা
- লুনি
- তানিত
- মহানদী
Ans – 2
10.অলকানন্দা নদী কোথায় গঙ্গায় এসে মিলিত হয়েছে?
- দেবপ্রয়াগ
- গােমুখগুহা
- এলাহাবাদ
- বিহার
Ans – 1
1.কোন ঋতুতে কালে উত্তর ভারতের তাপমাত্রা সবথেকে বেশী হয়?
- গ্রীষ্ম
- শরৎ
- বর্ষা
- শীত
ANS- 1
- ভারতের দুটি চরমভাবাপন্ন জলবায়ু যুক্ত শহর কোনগুলি?
- কলকাতা ও কটক
- গর্দিল্লী ও অমৃতসর
- চেন্নাই ও মুম্বাই
- ব্যাঙ্গালুরু ও হায়দ্রাবাদ
ANS-2
3.ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য কি?
1.ঋতু পরিবর্তন
2.অত্যধিক উয়তা
3.অত্যধিক বৃষ্টিপাত
4.ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রভাব
ANS- 1
4.কোন বায়ুপ্রবাহ ভারতের জলবায়ু কে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে?
- মৌসুমি বায়ু
- পশ্চিমা বায়ু
- মেরুবায়ু আয়ন বায়ু
ANS- 1
5.ভারতের বৃষ্টিপাত অধিকাংশই কিভাবে হয়?
1.পরিচলন পদ্ধতিতে
2.ঘূর্ণবাত পদ্ধতিতে
3.শৈলােৎক্ষেপ পদ্ধতিতে
4.সংঘর্ষ পদ্ধতিতে
ANS- 3
6.কোন পর্বতের প্ৰভাবে ভারতের জলবায়ুর প্রভাবিত হয়?
- পশ্চিমঘাট
- হিমালয়
- পূর্বঘাট
- আরাবল্লী
ANS- 2
- ভারতে মৌসুমি বায়ু কোন্ মাসে উপস্থিত হয়?
- মে
- জুলাই
- জুন
- আগস্ট
ANS- 3
- ভারতের একটি স্থানীয় বায়ুর নাম করো?
- লু
- মৌসুমি বায়ু
- আশ্বিনের ঝড়
- পশ্চিমি ঝঞ্জা
ANS- 1
- পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মের প্রথম ভাগে বিকেলের দিকে যে ঝড় বৃষ্টি হয় তাকে কি বলে?
- আশ্বিনের ঝড়
- আবৃষ্টি
- কালবৈশাখী
- বরদৈছিলা
ANS- 3
10.শীতল ও শুঙ্ক প্রকৃতির মৌসুমী বায়ু কোনটি?
- দক্ষিণ-পশ্চিম
- উত্তর-পূর্ব
- উত্তর-পশ্চিম
- দক্ষিণ-পূর্ব
ANS- 2
11. তুলাে চাষ ভালাে হয় কোন মাটিতে?
1.কৃষ্ণ
2.পলি
3.লােহিত মৃত্তিকা
4.ল্যাটেরাইট
ANS- 1
2.কোন্ ধরনের মাটি ভারতের সমভূমি অঞ্চলে aaমূলত দেখা যায়?
- কৃয় মৃত্তিকা
- মরু মৃত্তিকা
- লােহিত মৃত্তিকা
- পাললিক মৃত্তিকা
ANS- 4
- নবীন পলি দিয়ে নদীর প্লাবনভূমিতে কোন্ মাটি তৈরী হয়??
- খাদার
- ভুর
- ভাঙ্গার
- উষর
ANS- 1
- উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির নিচের এলাকায় বালিমিশ্রিত কোন্ মাটি দেখা যায়?
- এঁটেল।
- ভুর
- ভাঙ্গার
- কালার
ANS- 2
5.দাক্ষিণাত্যের লাভাগঠিত মালভূমি অঞ্চলে কি ধরণের মৃত্তিকা দেখা যায়?
- লােহিত মৃত্তিকা
- উষর মৃত্তিকা
- কৃষ্ণ মৃত্তিকা
- ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
ANS- 3
6.ভারতের মরুভূমি গবেষণা কেন্দ্র কোথায় রয়েছে?
- দিল্লিতে
- আমেদাবাদে
- জয়পুরে
- যােধপুরে
ANS- 4
- কি সৃষ্টি হয় গ্রানাইট ও নিস্ শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ?
- ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
- কৃয় মৃত্তিকা
- লােহিত মৃত্তিকা
- রেগুর মৃত্তিকা
ANS- 3
8.কোন মৃত্তিকার জলধারণের ক্ষমতা কম বালির ভাগ বেশি থাকার ফলে?
- পাললিক
- লােহিত
- কৃষয়
- এঁটেল
ANS- 2
9.পরিপূর্ণভাবে বিশ্লিষ্ট জীবদেহবিশেষ যা সেমৃত্তিকায় মেশানো থাকে তা কী নামে পরিচিত?
- হিউমাস
- কালার
- পিট
- উষর
ANS- 1
10.মরু মৃত্তিকা কী প্রকৃতির হয়?
- লবণাক্ত
- অম্লধর্মী
- ক্ষারধর্মী
- কোনােটাই নয়
ANS- 3
১. যে অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ২০০ সেমি-এর বেশি, সেই অঞ্চলে কী জাতীয় বৃক্ষ দেখা যায়?
ক) ক্রান্তীয় চিরহরিৎ
খ) আর্দ্র পর্ণমােচী
গ) সরলবর্গীয় উদ্ভিদ
(ঘ) ম্যানগ্রোভ
Ans ক
২. চিরহরিৎ অরণ্যের একটি উদ্ভিদের নাম চিহ্নিত করো-
(ক) রডােডেনড্রন গ। রােজউড।
(খ) ওয়ালনাট
(গ) রোজউড
(ঘ) গরান
Ans গ
৩.কোন্ অঞ্চলে গড়ে ৩৫-৪৫ মিঃ উঁচু বৃক্ষ পাওয়া যায় ?
ক) চিরহরিৎ
খ) পর্ণমােচী
গ) ম্যানগ্রোভ
(ঘ) আল্পীয়
Ans. ক
৪. কোথায় চিরহরিৎ বৃক্ষ পাওয়া যায়?
ক) পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢালে ।
খ) গুজরাট
গ) পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে
ঘ) তামিলনাড়ু
Ans. গ
৫. রবার গাছের চাষ ভারতের কোন্ রাজ্যে সর্বাধিক হয় ?
(ক)কেরল
(খ)মহারাষ্ট্র
(গ) পশ্চিমবঙ্গ
(ঘ) উত্তরাখণ্ড
Ans. ক
৬. কোন্ অরণ্যের পরিমাণ ভারতে সবচেয়ে বেশি?
ক) আর্দ্র পর্ণমােচী
খ) শুষ্ক পর্ণমােচী
গ) চিরহরিৎ
ঘ) ম্যানগ্রোভ
Ans. ক
৭. সাধারণত ঘাস, গুল্ম এবং ছােটো ছােটো পাতাঝরা গাছকে এক কথায় কি বলে
ক)মরু উদ্ভিদ
খ) শুঙ্ক পর্ণমােচী।
গ) মিশ্র অরণ্য
ঘ) কোনােটাই নয়
Ans. খ
৮. কোন্ ধরণের উদ্ভিদ হিমালয়ের পাদদেশের তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়?
(ক) পর্ণমােচী
(খ) সরলবর্গীয়
(গ) ম্যানগ্রোভ
(ঘ) চিরহরিৎ
Ans. ক
৯. হিমালয়ের ৪০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় কোন ধরণের অরণ্য পাওয়া যায় ?
ক) সরলবর্গীয়
খ) আল্পীয়
গ) পাইন।
ঘ) চিরহরিৎ
Ans. ঘ
১০. কাঁটাযুক্ত উদ্ভিদ যেটি মরু অঞ্চলে পাওয়া যায় তাকে কি বলে ?
ক) হ্যালােফাইট
খ) মেসোফাইট
গ) জেরােফাইট
ঘ) হেলিওফাইট
Ans. গ
Short Questions – 2-3 marks of ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ-BHARAT ER PRAKTITIK PARIBESH
- দুন কী ?
উত্তর- দুন কথার অর্থ হলাে ‘পার্বত্য অঞ্জলের উপত্যকা’। সংকীর্ণ পর্বতের মাঝে অবস্থিত নিম্নস্থানকে দুন বলা হয়। যেমন দেরাদুন।
- ভাঙ্গার ও খাদার কী ?
উত্তর- প্রাচীন পলিমৃত্তিকা দিয়ে গঠিত উচ্চভূমিকে বলা হয় ভার। এই মৃত্তিকা কৃষিকার্যের জন্য ততটা সহায়ক নয়। খাদার বলা হয় নবীন পলিগঠিত নিম্নভূমিকে। এইপ্রকার মুক্তিকা খুবই উর্বর। উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবে এইপ্রকার মৃত্তিকা দেখা যায়।
- কাকে বাগর ও রােহি অঞ্চল বলে ?
উত্তর- রাজস্থানের মরু অঞ্চলের পূর্বদিকে ‘আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশে অল্প বালুকাময় যে স্থান আছে | তাকে বাগর বলে। | এই অঞ্চলের পশ্চিমে আরাবল্লি পর্বত থেকে উদ্ভূত ছােটো ছােটো নদীর সঞ্চয়ের কার্যের ফলে সৃষ্ট প্লাবনভূমিকে রােহি বলা হয় ।
- ডুয়ার্স ও তরাই কাকে বলে ?
উত্তর- তিস্তা নদীর পূর্বতীর থেকে শুরু করে তরাইয়ের অবশিষ্ট অংশকে বলা হয় ডুয়ার্স। পশ্চিমবঙ্গের হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলের স্যাতস্যাতে ও অরণ্যময় সমভূমিকে তরাই বলে।
- কাকে ডেকান ট্রাপ বলে ?
উত্তর- ভূঅভ্যন্তরের উত্তপ্ত ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের উপরে ধীরে ধীরে সঞ্চিত হয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ধাপে ধাপে সিড়ির মতাে নেমে গেছে। একে ডেকান ট্রাপ বলে। ডেকান শব্দের অর্থ দাক্ষিণাত্য এবং ট্রাপ শব্দের অর্থ সিঁড়ি।
- ময়দান ও মালনাদ কাকে বলে?
উত্তর- ময়দান’ শব্দের অর্থ হলাে অনুচ্চ ভূমিভাগ। অর্থাৎ কর্নাটক মালভূমির পুর্বে মৃদু | ঢেউ খেলানাে সময়ভূমিকে বলা হয় ময়দান। “মালদ’ শব্দের অর্থ হলাে উঁচু-নীচু ভূমি। অর্থাৎ কর্নাটক মালভূমির পশ্চিমাংশে | যে উঁচু-নীচু ঢেউ খেলানাে ভূমিভাগ রয়েছে, তাকে বলা হয় মালনাদ।
- কয়াল কাকে বলে ?
উত্তর- কেরলের মালাবার উপকূলে ভূআলােড়নের প্রভাবে ভূউত্থান ও নিমজ্জনের ফলে অসংখ্য জলাভূমি বা উপহ্রদের সৃষ্টি হয়েছে, এগুলিকে কেরলের স্থানীয় ভাষায় বলা হয় কয়াল। যেমন—ভেম্বনাদ (বৃহত্তম), অষ্টমুদি ইত্যাদি।
- বরেন্দ্রভূমি কাকে বলে ?
উত্তর- বরেন্দ্র ভূমি তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলের গঙ্গা নদীর বাম তীরের সমভূমিকে বলা হয় । অনেকে মনে করেন, সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন কোনাে অগভীর হ্রদে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল থেকে বয়ে আনা পলি সঞ্জয়ের ফলে এই অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।
- কাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলে ?
নদীতে বাঁধ নির্মাণ করেযে পরিকল্পনার সাহায্যে নদীর জলকে সমাজকল্যাণের বিভিন্ন উদ্দেশ্যে জলসেচ, যথা-বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মৎস্য চাষ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পানীয় জলের জোগান প্রভৃতির উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়, তাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলে।
- কেন ভারতকে মৌসুমি বায়ুর দেশ বলা হয় ?
ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় অঞ্চলের অন্তর্গত এক সুবিশাল বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ হলো ভারত। সামগ্রিকভাবে মৌসুমি বায়ু দ্বারা ভারতবর্ষের জলবায়ু প্রভাবিত। যথা-উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দ্বারা ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তাই ভারতকে মৌসুমি বায়ুর দেশ বলা হয়।
- কোন কোন অঞ্চলে ভারতের বছরে দু’বার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ?
ভারতের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত করমণ্ডল উপকূলে শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর এবং গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
- কাকে পশ্চিমি ঝঞা বলে ?
শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পশ্চিম দিক থেকে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কাশ্মীর, পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশে প্রবেশ করে বেশ কয়েকদিন প্রচুর ঝড়ঝঞা ও তুষারপাত ঘটায়, একেই পশ্চিমিঝঞ্চা বলে।
- কাকে কচ্ছের রণ অঞল বলে?
“রণ’ শব্দের অর্থ জলময় দেশ। কচ্ছের রণ বলা হয় গুজরাটের কচ্ছ উপদ্বীপের উত্তর ও পূর্বের অগভীর লবণাক্ত জলাভূমিকে। কচ্ছের রণের দক্ষিণ অংশকে বলা হয় ক্ষুদ্র রণ এবং উত্তর অংশকে বলায় বৃহ রণ ।
- কাকে মরুথলী বলে ?
ভারতের আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিম দিকে অবস্থিত রাজস্থানের থর মরুভূমি অঞ্চলে প্রায় সমতল বালুকাময় অখুলকে মরুথলী যা মৃতের দেশ বলা হয়। ‘মরুস্থলি’ শব্দের অর্থ মৃতের দেশ।
- কাকে মৌসুমি বিস্ফোরণ বলে ?
মে-জুন মাসে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আরব সাগর থেকে বয়ে আনা এই জলীয় বাষ্পের ফলে ঘন মেঘ বা ঝড় মুষলধারে হঠাৎ প্রচণ্ড আকারে বৃষ্টিপাত ঘটায়, একে মৌসুমি বিস্ফোরণ বলে।
- কাকে আশ্বিনের ঝড় বলে ?
মকরক্রান্তীয় অঞ্চলে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুও দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সংঘর্ষে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। যেহেতু আশ্বিন মাসে এই ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় তাই একে আশ্বিনের ঝড় বলে।
- কাকে অন্তর্বাহিনী নদী বলে ?
কোনাে নদী দেশের অভ্যন্তরের কোনাে কোনাে উচ্চভূমি, পাহাড় বা পর্বত থেকে উৎপত্তি লাভ করে যখন সেই দেশের কোনাে হ্রদ বা জলাশয়ে এসে মিলিত হয়, তখন তাকে অন্তর্বাহিনী নদী বলে। যেমন—লুনি, রূপনগত্ন নদী।
- কাকে সামাজিক বনসৃজন বলে?
আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির উদ্দেশ্যে গ্রামীণ পরিবেশের সুস্থতা, জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষা, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে নদীর তীরবর্তী এলাকায়, রেললাইনের ফাঁকা জমিতে, রাস্তার দু’ধারে, পতিত জমিতে বৃক্ষরােপণের উদ্যোগকে বলা হয় সামাজিক বনসৃজন।
- কাকে কৃষি বনসৃজন বলে ?
কৃষক তার নিজের জমিতে ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি কাঠ, ফলমূল, জৈব সার, ওষুধ প্রভৃতি পাওয়ার জন্য কৃষিজমির চারিদিকে অব্যবহূত বা পতিত জমিতে গাছ লাগিয়ে যে বনভূমি গড়ে তােলে তাকে, কৃষি বনসৃজন বলে।
- বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বলতে কী বােঝো?
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ হল বাড়ির ছাদে পড়া বৃষ্টির জলকে জলাধারে সঞ্চিত করে, পুকুর ও নালা খুঁজে বৃষ্টির জল ধরে রেখে, খােলা জায়গায় গর্ত করে বৃষ্টির জল ধরে রেখে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে ব্যবহার করা।
Long Questions – 5 Marks of ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ-BHARAT ER PRAKTITIK PARIBESH
- সংক্ষেপে ভারতের জনজীবনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো। বহুমুখী নদী পরিকল্পনা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করাে।
খাদ্যাভ্যাসে প্রভাব : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। ফলে এখানে ধান উৎপাদন বেশি হয় এবং এখানকার বাসিন্দাদের প্রধান খাদ্য ভাত। অন্যদিকে, উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত কম হয় বলে। সেখানে গমের ফলন বেশি এবং বাসিন্দাদের প্রধান খাদ্য রুটি।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাব : ভারতের জনজীবন মৌসুমি বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। এর প্রভাবগুলি হলাে—কৃষিতে প্রভাব তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্য অনুযায়ী ভারতে নানা প্রকার কৃষিপদ্ধতি চালু রয়েছে। এগুলি হলাে আকৃষি, শুষ্ক কৃষি, সেচন কৃষি।
বনভূমিতে প্রভাব : বৃষ্টিপাতের তারতম্য অনুযায়ী স্বাভাবিক উদ্ভিদ স্থানভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। ফলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব পড়েছে পশুপালন ও কাঠশিল্পেও।
শিল্পে প্রভাব : মৌসুমি বায়ু ও বৃষ্টিপাতের তারতম্যের জন্য সারাদেশে একই কুষিজাত শিল্পের প্রসার ঘটেনি। পূর্ব ভারতে বৃষ্টিপাত অধিক বলে পাটশিল্প, পশ্চিম ভারতে মাঝারি বৃষ্টিপাতের কারণে কপার্স শিল্প এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে চা শিল্পের প্রসার ঘটেছে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের জন্য।
বহুমুখী নদী পরিকল্পনা :
সংজ্ঞা : কোনাে নদীতে বাঁধ দিয়ে একইসঙ্গে একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করলে তাকে বহুমুখী নদীউপত্যকা পরিকল্পনা বলা হয়।
উদ্দেশ্য :
i) বিদ্যৎ উৎপাদন : জলাধারে প্রবহমাণ জলে টারবাইনের চাকা ঘুরিয়ে সহজেই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
ii) বন্যা নিয়ন্ত্রণ ; নদীবাঁধ বন্যা নিয়ন্ত্রণে খুবই সহায়তা করে।
iii) নদীর নাব্যতা বজায় রাখা : বাঁধ তৈরি হওয়ায় সারাবছর ধরে নদীতে জল সরবরাহ বজায় রাখা থাকে।
iv) ডলসেচ : জল ধরে রেখে শুখা মরসুমে জলসেচ করে চাষাবাদ করা যায়।
- পূর্ব হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
এই পর্বতশ্রেণি পশ্চিমে সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণি থেকে অরুণাচল প্রদেশের মবারােয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। ভূপ্রকৃতির তারতম্য অনুযায়ী একে চারটি ভাগে ভাগ করা মায়। যথা—
অরুণাচল হিমালয় : অসমের অধিকাংশ অঞল ও সমগ্র অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে এই হিমালয় অবস্থিত। এখানে বেশ কয়েকটি গিরিপথ অবস্থিত। যেমন—জেলেপল, বুমলা, লংলা প্রভৃতি। কাংটো (৭০৬০ মি.) অরুণাচলের উচ্চতম শৃঙ্গ।
দাজিলিং ও সিকিম হিমালয় : নেপালের পূর্বে সিঙ্গালিলা থেকে পশ্চিমে। ডাকিয়াল পর্যন্ত বিস্তৃত। ভারত ও নেপাল সীমান্তে রয়েছে সিঙ্গালিলা শৈলশিরা। এখানে অনেকগুলাে পর্বতশৃঙ্গ লক্ষ করা যায়। যথা—সান্দাকফু (৩৬৩০ মি.), কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮৫৯৮ মি.) ইত্যাদি।
ভূটান হিমালয় : বিহির্দেশে অবস্থিত হওয়ায় আলােচ্য বিষয় নয়।]
- গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান কী? জল সংরক্ষণের গুরুত্ব ও পদ্ধতি সংক্ষেপে লেখাে।
পুণ্যতােয়া গঙ্গা নদী বর্তমানে ব্যাপক দূষণের শিকার। গাঙ্গেয় অববাহিকায় সমীক্ষা করে গঙ্গাদূষণ রােধের জন্য ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান” গঠিত হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য – সরকারের অধীনে ১৯৮৫ সালে ‘সেন্ট্রাল গা অথরিটি’ নামে একটি পর্যবেক্ষণকারী – সংস্থার তত্ত্বাবধানে ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’ নামের কার্যকরী পরিকল্পনাটি গৃহীত হয়। – এই পরিকল্পনায় প্রথম পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের ২৭টি প্রথম শ্রেণির শহরকে গঙ্গাদূষণের জন্য দায়ী করা হয়েছে। কলকাতা, পটিনা, বারাণসী, কানপুর ও এলাহাবাদের মতাে শহরগুলি গঙ্গাদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। উল্লিখিত শহরগুলিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী নিকাশি ব্যবস্থা চালু ও জনসচেতনতা বাড়ানাে সম্ভব হলে গঙ্গাদূষণ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বড়াে বড়াে শহরের গৃহস্থালির নােংরা-আবর্জনা, কারখানার বর্জ্য – পদার্থ ইত্যাদি গঙ্গাজলকে ক্রমাগত দূষিত করছে। এছাড়া গঙ্গাজলের অপব্যবহারও ব্যাপকহারে চলছে। সবমিলিয়ে গঙ্গানদী বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে দূষিত নদী।
জল সংরক্ষণের গুরুত্ব ও পদ্ধতি:
গুরুত্ব : 0 পানীয় জলের চাহিদা বজায় রাখা। ও কৃষিজমিতে জলের চাহিদা পূরণ করা। © শিয় ও বিভিন্ন বাণিজ্য ক্ষেত্রে জলের জোগান বজায় রাখা।
পদ্ধতি : জলসম্পদের সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। নীচে জল সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি আলােচিত হলাে :
জলের অপচয় না করা : রােজকার জীবনে নানা কাজে প্রয়ােজন অনুযায়ী জলের ব্যবহার করা উচিত। অযথা জলের অপচয় না করলে যেকোনাে স্থানে অল সংরক্ষণ করা যায়।
জলসেচের সুষ্ঠু ব্যবহার : জল সংরক্ষণে বিন্দু বিন্দু পদ্ধতি ও স্প্রিংকেল পদ্ধতিতে জলসেচ করলে ৩০ শতাংশ জল বাঁচানাে সম্ভব।
বৃষ্টির জল ধরে রাখা : পাহাড় বা সমতলে চাহিদা অনুযায়ী জলাধার বা | ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণ করে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও প্রয়ােজনে ব্যবহার করা যায়।
ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণ : বিশেষ প্রয়ােজন ছাড়া অধিক পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল পাম্প, কুপ বা নলকূপের সাহায্যে তুলে আনা উচিত নয়। এভাবে ভূগর্ভস্থ জলের অপব্যবহার কমানাে বা সেই ব্যবহার হ্রাস করেও জ্বল সংরক্ষণ করা যায়।
- হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির প্রস্থ বরাবর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
Ans. উচ্চতা অনুসারে হিমালয় পর্বতকে উত্তর থেকে দক্ষিণে অর্থাৎ প্রথ বরাবর চারটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা –
হিমাদ্রি বা হিমগিরি বা উচ্চ হিমালয় : আজ থেকে বহু কোটি বছর পূর্বে টেথিস | সাগরে সঞ্চিত পলি ভাজ খেয়ে উপরে উঠে বর্তমানে হিমাদ্রি হিমালয় রূপে অবস্থান করছে। এর দৈর্ঘ্য 2400 কিমি, প্রস্থ গড়ে প্রায় 25 কিমি এবং উচ্চতা গড়ে প্রায় 6100 মিটার এখানকার উল্লেখযােগ্য পর্বতশৃঙ্গগুলি হলাে মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্খ ইত্যাদি। এখানকার উল্লেখযােগ্য গিরিপথগুলি হলাে নাথুলা, জোজিলা, বুঞ্জিলা ইত্যাদি।
টেথিস বা ট্রান্স হিমালয়: আজ থেকে প্রায় 7-12 কোটি বছর পূর্বে প্রবল ভূআলােড়নের ফলে উপদ্বীপীয় ও ইউরােপীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হওয়ার মহিখাতে সঞ্চিত হওয়া পলি ভঁজ খেয়ে এই হিমালয়ের উৎপত্তি হয়েছে। ভারতে এর দৈর্ঘ্য 1000 কিমি, প্রস্থ 40225 কিমি এবং উচ্চতা 3000 মিটার। জাস্কর পর্বতশ্রেণি এই অংশ দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হলাে লিওপারগেল (7420 মি.)।
শিবালিক হিমালয় : ভূআন্দোলন ও টেথিস সাগরের পলি ভঁজ খেয়ে হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণে শিবালিক হিমালয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রস্থ 10-15 কিমি এবং এর গড় উচ্চতা 600-1200 মিটার। শিবালিক ও হিমাচল হিমালয়ের মাঝে অবস্থিত উপত্যকাগুলিকে স্থানীয় ভাষায় দুন বলা হয়। যেমন—দেরাদুন, পাটলি দুন ইত্যাদি।
হিমাচল হিমালয় বা মধ্য হিমালয় : লাচ্ছাকের দক্ষিণে অবস্থিত উত্তরে হিমাদ্রি ও দক্ষিণে শিবালিক পর্বতের মধ্যবর্তী অংশগুলােকে বলা হয় হিমাচল হিমালয়। এর প্রস্থ গড়ে 60-80 কিমি, উচ্চতা গড়ে 3500-4500 মি.। এর প্রধান পর্বতগুলি হলাে | পিরপাঞ্জাল, ধওলাধর, নাগটিক্কা এবং কয়েকটি প্রধান উপত্যকা হলাে কুলু, কাংড়া, কাশ্মীর প্রভৃতি।
- দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
Ans. হিমালয় পর্বতমালাকে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা-
পূর্ব হিমালয় : এই পর্বতশ্রেণি পশ্চিমে সিলিলা থেকে অরুণাচল প্রদেশের নামচাবারােয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। ভূপ্রকৃতির তারতম্য অনুযায়ী একে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- অরুণাচল হিমালয় : অসমের অধিকাংশ অঞ্চল ও সমগ্র অরুণাচল প্রদেশ নয়ে এই হিমালয় অবস্থিত। এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হলাে নামচাবারওয়া (7756মি.)। এখানে বেশ কয়েকটি গিরিপথ লক্ষ করা যায়। যথা—জেলেপলা, বুমলা, প্রভৃতি।
- দার্জিলিং ও সিকিম হিমালয় : নেপালের পূর্বে সিঙ্গালিলা থেকে পশ্চিমে কাল পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং কালিমপং জেলা ও সিকিম রাজ্য এই লয়ের অন্তর্গত। এখানকার উল্লেখযােগ্য শৃঙ্গগুলি হলাে কাঞ্চনজঙ্ (8598 মি.), সান্দাকফু (3630 মি.) ইত্যাদি।
- ভুটান হিমালয় : বহির্দেশে অবস্থান করায় আলােচ্য বিষয় নয়।
মধ্য হিমালয় : মধ্য হিমালয় সমগ্র নেপাল দেশটির অন্তর্ভুক্ত। মাউন্ট এভারেস্ট (8848 মি.), মাকালু, ধবলগিরি, অন্নপূর্ণা প্রভৃতি শৃঙ্গ এখানে অবস্থিত। সুতরাং এই হিমালয় ভারতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
পশ্চিম হিমালয় : জম্মু ও কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বত থেকে নেপাল সীমান্তের কালী নদী পর্যন্ত এই পর্বত বিস্তৃত। পশ্চিম ||সিন্দু নং হিমালয়কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- কুমায়ুন হিমাল্যা : উত্তরাখণ্ড রাজ্যের প্রায় 46 হাজার বর্গ কিমি এলাকা। জুড়ে এই হিমালয়ের বিস্তার। এখানকার উল্লেখযােগ্য পর্বতশৃঙ্গা হলাে নন্দাদেবী (7817 মি.), কামেট (7756 মি.) ইত্যাদি।
- কাশ্মীর হিমালয় : জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে এই হিমালয় বিস্তৃত। পিরপাশ্যাল ও কারাকোরাম পর্বতের মাঝে কাশ্মীর উপত্যকা অবস্থিত।
- পাঞ্জাব ও হিমাচল হিমালয় : পাব ও হিমাচল প্রদেশের প্রায় 56 হাজার বর্গ কিমি স্থান জুড়ে এই হিমালয়ের বিস্তার।
- ভারতের মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ করে তাদের বৈশিষ্ট্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য ও জলবায়ুর তারতম্যের বিচারে ভারতের মৃত্তিকাকে প্রধানত ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
পার্বত্য মৃত্তিকা : এই মৃত্তিকা পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলে উদ্ভিদের ডালপালা পচে গিয়ে হিউমাস সমৃদ্ধ হয়ে সৃষ্টি হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য :
- i) এই মৃত্তিকা অনুর্বর প্রকৃতির হওয়ায় কৃষিকাজ তেমন হয় না।
- ii) এই মৃত্তিকায় বালি ও কর্দমের পরিমাণ বেশি।
iii) এই মৃত্তিকার রং ধূসর, ছাই, কালাে ধরনের।
পাললিক মৃত্তিকা: পশ্চিম ও পূর্বঘাট, দাক্ষিণাত্য, পর্বতের নদী বা ক্ষয়িত বালি, পলি, কাদা সঞ্চিত হয়ে এবং উপকূলের সমুদ্রতরঙ্গের দ্বারা সঞ্চিত বালি, পলি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে পাললিক মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য :
- i) মৃত্তিকা সুগভীর হয়।
- ii) এই মৃত্তিকা সূক্ষ্ম পলি ও খনিজ কণার সমন্বয়ে গঠিত।
iii) মৃত্তিকার স্তরগুলি খুব সুস্পষ্ট।
- iv) এই মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা বেশি |
লােহিত মৃত্তিকা: এই মৃত্তিকা অধিক উয়তা ও আদ্রর্তাজনিত কারণে আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা থেকে গভীর আবহবিকারের মাধ্যমে উস্থপত্তি হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য :
- i) এই মৃত্তিকা ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড, কোয়ার্টজ জাতীয় খনিজ সমৃদ্ধ।
- ii) এই মৃত্তিকার রং লাল বাদামি বা হালকা বাদামি হয়।
iii) এই মৃত্তিকা আম্লিক প্রকৃতির।
ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা : এই মৃত্তিকা প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে সিলিকা ও সেসকুই অক্সাইড অপসারিত হয়ে লােহা, অ্যালুমিনিয়াম ও হাইড্রোক্সাইড পড়ে থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য :
- i) এর pH মান 5.5 -এর কম।
- ii) এই মৃত্তিকায় লােহা, বক্সাইড, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি খনিজ থাকে।
iii) এই মৃত্তিকা ‘আম্লিক প্রকৃতির।
- iv) এই মৃত্তিকার রং লাল বাদামি বা হালকা বাদামি।
মরু মন্তিকা : ভারতের শুষ্ক ও মরু অঞ্চলের বালুকাময় মৃত্তিকা মরু মৃত্তিকা নামে পরিচিত। ভারতের মােট ক্ষেত্রফলের 4% ‘অঞ্চল জুড়ে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য :
- i) pH -এর মান 7.6 – 9.2।
- ii) এই মৃত্তিকার রং ধূসর বাদামি, হালকা হলুদ প্রকৃতির হয়।
iii) এই মৃত্তিকা অনুর্বর প্রকৃতির
- iv) এই মৃত্তিকা বালুকণাযুক্ত হওয়ায় এর ধারণ ক্ষমতা কম।
কৃষ্ণ মৃত্তিকা : এই মৃত্তিকা স্বল্প বৃষ্টিপাতের প্রভাবে, উচ্চ উন্নতায় অগ্ন্যুৎপাতের ফলে। ব্যাসল্ট জাতীয় আগ্নেয় শিলা দ্বারা গঠিত হয়েছে।
বৈশিষ্ট :
- i) এই মৃঞ্জিকা সুক্ষ্ম কণাযুক্ত।
- ii) এই মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা বেশি।
iii) এই মৃত্তিকা খুবই উর্বর।
- iv) এই মৃত্রিকার রং কালাে।
- ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ করে তাদের বৈশিষ্ট্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
ANS- ভারতের বিভিন্ন অংশের জলবায়ু ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকার তারতম্যের ভিত্তিতে স্বাভাবিক উদ্ভিদকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ : পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য। ভারতের সমুদ্র উপকূলভাগে লবণাক্ত মৃত্তিকায় এই জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়। এ জাতীয় উদ্ভিদ দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য :
- i) এই জাতীয় উদ্ভিদ চির হরিং প্রকৃতির
- ii) এই জাতীয় উদ্ভিদের শাখামূল মাটির উপরে বেরিয়ে আসে।
iii) সুন্দরি গরান, গেওয়া, হেতাল, হােগলা, গােলপাতা ইত্যাদি।
ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ : এই অরণ্য ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপু, পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালা, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠেছে।
বৈশিষ্ট্য :
- i) শাল, সেগুন, পলাশ, অর্জুন, চন্দন, বাঁশ প্রভৃতি উদ্ভিদ জন্মায়।
- ii) গাছগুলির উচ্চতা খুব বেশি, কাণ্ডগুলি শক্ত প্রকৃতির।
iii) এই অরণ্যের বৃক্ষগুলির পাতা একসঙ্গে না ঝরায় চিরসবুজ প্রকৃতির হয়।
ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ : এই অরণ্যের প্রচণ্ড উয়তা যুক্ত যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত 25 সেমির কম, উয়তা 35-45° সেলসিয়াস. যুক্ত অঞলে সৃষ্টি হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য :
- i) এই জাতীয় উক্তিমীয় উদ্ভিদের মূল মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে |
- ii) ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদগুলি কঁটাযুক্ত ঝােপঝাড় ও গুল্ম জাতীয় হয়
iii) ফণীমনসা, ক্যাকটাস, বাবলা, কাটাজাতীয় উদ্ভিদ প্রভৃতি জন্মায়।
পার্বত্য উদ্ভিদ : সাধারণত ভারতের উত্তরে অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালায় উচ্চতা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্যে বৈচিত্র্যপূর্ণ উদ্ভিদ জন্মায়।।
বৈশিষ্ট্য :
- i) এই জাতীয় উদ্ভিদের কাঠ খুব শক্ত ও ভারী
- ii) সরলবর্গীয় উদ্ভিদের কাঠ নরম প্রকৃতির এবং পাতাগুলি সূচালাে প্রকৃতির হয়।
iii) পাইন, ফার, পুস, ম্যাপল, বার্চ, শাল, সেগুন, মেহগনি ইত্যাদি।
ক্রান্তীয় পর্ণমােচী উদ্ভিদ : এই অরণ্যের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 100-200 সেমি এবং 20-30 সে. যুক্ত অলে সৃষ্টি হয়েছে। অসমের সমভূমি, ছােটোনাগপুর মালভূমি, পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি ওড়িশা, অন্ধপ্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি অঞ্চলে | ক্রান্তীয় আর্দ্র ও শুষ্ক পর্ণমােচী অরণ্য লক্ষ করা যায়।
বৈশিষ্ট্য :
- i) শিমুল, বট, নিম, পলাশ, কুল ইত্যাদি।
- ii) আর্দ্র পর্ণমােচী বৃক্ষগুলি শাখাপ্রশাখাযুক্ত, উচ্চতা মাঝারি ধরনের, উদ্ভিদের ঘনত্বও কম |
iii) শীতকালে অধিকাংশ উদ্ভিদের পাতা ঝরে যায় |
- ভারতের পূর্ব উপকূল ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির মধ্যে তুলনা করো |
বিষয় | পূর্ব উপকূল | পশ্চিম উপকূল |
ভূমিরূপ | এই উপকূলের সর্বত্রই বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়েছে, উপহ্রদ এর সংখ্যা কম | | এই উপকূলে বালিয়াড়ি সংখ্যা কম, উপহ্রদ লক্ষ করা যায় |
ঢাল | এই উপকূল মৃদু ঢাল যুক্ত | এই উপকূল বেশ খাড়া |
বিস্তার | উপকূল সুপ্রশস্ত, গড়ে 80 – 120 km চওড়া | | উপকূল সংকীর্ণ, গড়ে 10 – 65 km চওড়া |
বদ্বীপ | এই উপকূলে বেশ কয়েকটি বদ্বীপ লক্ষ্য করা যায় | এই উপকূলে বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি |
ভগ্নতা | এই উপকূলে প্রবণতা কম, কৃত্রিম পোতাশ্রয় যুক্ত | এই উপকূল খুব ভগ্ন, স্বাভাবিক পোতাশ্রয় যুক্ত |
উৎপত্তি | ভূ আলোড়ন জনিতউত্থান এবং সমুদ্র তরঙ্গের সঞ্চয় এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে | ভূ আলোড়ন এর প্রভাবে আরব সাগরের তীর ভূমি বসে গিয়ে এবং সমুদ্র তরঙ্গের সঞ্চয় এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে |
- দক্ষিণ ভারতের নদী ও উত্তর ভারতের নদীর মধ্যে তুলনা কর |
বিষয় | দক্ষিণ ভারতের নদী | উত্তর ভারতের নদী |
দৈর্ঘ্য | এই নদী গুলির দৈর্ঘ্য কম | এই নদী গুলির দৈর্ঘ্য বেশি |
আদর্শ নদী | তিনটি গতিপথ অস্পষ্ট হওয়ায় নদীগুলি আদর্শ নয় | তিনটি গতিপথ তথা উচ্চ-মধ্য নিম্ন স্পষ্ট হওয়ায় এইগুলি আদর্শ নদী |
জলপ্রপাত | অধিকাংশ বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় অনিত্যবহ | অধিকাংশ নদী বরফ গলা জলে পুষ্ট হওয়ায় নদীগুলি নিত্যবহ |
বয়স | দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি অপেক্ষাকৃত প্রাচীন | উত্তর ভারতের নদী গুলি অপেক্ষাকৃত নবীন |
প্রকৃতি | ভূমির প্রাথমিকঢাল অনুসারে প্রবাহিত হচ্ছে তাই এরা অনুগামী নদী | | হিমালয়ের উত্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূর্বের প্রবাহপথ বজায় রেখে প্রবাহিত হয় | তাই এরা পূর্ববর্তী নদী | |
জলবিদ্যুৎ উৎপাদন | খরস্রোতা হওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সহজ হয় | | কেবলমাত্র পার্বত্য অঞ্চলের জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় | |
বদ্বীপ | সব নদীর মোহনায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি | | নদীর মোহনায় বদ্বীপ গড়ে উঠেছে | |