Madhyamik জীবনের প্রবহমানতা Jiboner Probohomanota Life Science Notes Class 10 CHAPTER 2
Here you will learn the basics of জীবনের প্রবহমানতা Jiboner Probohomanota in a simple language it is for Bengali medium students who are studying under West Bengal Board of Secondary Education and preparing for their Madhyamik exam (Class 10 WBBSE) Here you will find all necessary and important WBBSE Madhyamik Suggestions, notes, solved sample question paper in Bangla along with video lectures from expert teachers
Life Science Jibon Bigyan Notes Madhyamik Class 10 WB Board, WBBSE Bangla Medium
ফর্মে নিজের ফোন নম্বর ভরুন, এবং সহজে সাহায্য পান
কোষ বিভাজন ও কোষ চক্র
জীব দেহ কোষ দ্বারা গঠিত এবং জীব দেহের সমস্ত কাজ ইহার দ্বারাই পরিচালিত হয়। অন্যদিকে কোষের একটি অন্যতম উপাদান হলো জিন যা মূলত হল ডিএনএর একটি অংশ বিশেষ। ইউক্যারিওটিক কোষের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই নিউক্লিয়াসের মধ্যে ক্রোমোজোম থাকে এবং তাহার মধ্যে DNA উপস্থিত থাকে।
ক্রোমোজোম, জিন এবং DNA এর মধ্যবর্তী সম্পর্ক বিশেষ
নিউক্লিয়াসের ক্রোমাটিন জালিকা নামক এক সূক্ষ্ম জালকাকার গঠন উপস্থিত থাকে। এই ক্রোমাটিন জালিকা সৃষ্টিকারী প্রতিটি ক্রোমাটিন তন্তু বাস্তবে এক প্রকার নিউক্লিও প্রোটিন তৈরি। মূলত ইহা থেকেই ক্রোমোজোম গঠিত হয়ে থাকে।
ক্রোমোজোমঃ
যে দন্ডাকার অংশবিশেষ ইউক্যারিওটিক কোষের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ ক্রোমাটিন জালিকার ক্রোমাটিন তন্তু থেকে উৎপন্ন হয় এবং যা মূলত নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত, যা কোন জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য সমূহকে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে, বহন করে থাকে এবং ওই প্রজাতির প্রজাতির বিবর্তন, প্রকরণ এবং পরিব্যক্তিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে তাদের আমরা ক্রোমোজোম বলে থাকি।
ক্রোমোজোমের উৎপত্তিঃ
ডিঅক্সিরাইবোজ নিউক্লিক অ্যাসিড হলো এক ধরনের ম্যাক্রো মলিকিউল যা মূলত কোষের নিউক্লিয়াস এর মধ্যে আংশিক উন্মুক্ত অবস্থায় অবস্থান করে।
ডিএনএ দৃঢ়ভাবে কোন প্রোটিনকে পেঁচিয়ে কুণ্ডলীর আকারে অবস্থান করে।
নিউক্লিক অ্যাসিড এবং প্রোটিন দ্বারা গঠিত এই নিউক্লিয় প্রোটিনের গঠনটি হল ক্রোমাটিন তন্তু অন্যদিকে কুণ্ডলীকৃত ক্রোমাটিন তন্তুর এই গঠনটিকে আমরা ক্রোমোজোম বলে থাকি। ক্রোমোজোম এবং ক্রোমাটিন তন্তু বাস্তবে ডিএনএ অনুর কুণ্ডলীকরনের দুটি আলাদা আলাদা অবস্থা।
ক্রোমোজোম নামটি প্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী ওয়ালডেয়ার।
জিনঃ ডিএনএ মধ্যস্থ যেসকল কার্যকারী অংশবিশেষ কোন নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষে প্রয়োজনীয় সংকেত বহন করে থাকে এবং যা বংশগত বৈশিষ্ট্যের বাহক এবং ধারক হিসেবে কাজ করে থাকে তাকে আমরা জিন বলে থাকি।
বিভিন্ন জিন বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্রের প্রকাশে সাহায্য করে থাকে।
অপরদিকে ইউক্যারিওটিক কোষের ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের ঠিক উপরের অংশে ইহা রৈখিক ভাবে সাজানো থাকে। জিন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন বিজ্ঞানী জোহানসেন।
ক্রোমোজোম, জিন এবং ডি এন এর আন্তঃসম্পর্কঃ প্রোটিন এবং ডিএনএর সমন্বয়ের দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে ক্রোমোজোম এবং এই ক্রোমোজোম এর অন্তর্গত ডিএনএর কার্যকারী অংশবিশেষ গুলি হল জিন। সুতরাং বলা যায় ক্রোমোজোমই হলো ডিএনএ এবং জিনের বাহক এবং ধারক।
ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ সমূহঃ
সকল প্রকার স্তন্যপায়ী প্রাণী ঘাসফড়িং পাখি ইত্যাদি প্রাণী কোষে মূলত দুই ধরনের ক্রোমোজোম লক্ষ্য করা যায়। যথা-
অটোজোম ও সেক্স ক্রোমোজোম।
অটোজোমঃ কোন জীবের যৌন যৌন বৈশিষ্ট্য ছাড়া দেহের বাকি দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন যে সকল ক্রোমোজোম বহন করে থাকে তাদের আমরা অটোজোম বলে থাকি।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মানুষের গায়ের রং উচ্চতা চুলের রং মুখমন্ডল ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলি মূলত অটোজোম এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
মানুষের দেহকোষে মোট অটোজোম এর সংখ্যা হল 22 জোড়া অর্থাৎ 44টি।
সেক্স ক্রোমোজোমঃ এই জাতীয় কোন ক্রোমোজোম কোন জীবের যৌন বৈশিষ্ট্য গুলির নিয়ন্ত্রণকারী জিনকে বাহির করে কোন জীবের লিঙ্গ নির্ধারণের সাহায্য প্রদান করে থাকে।
এই সেক্স ক্রোমোজোম কে আমরা হেটারো ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম বলে থাকি।
মানুষের ক্ষেত্রে সেক্স ক্রোমোজোম গুলি হল যথাক্রমে X ক্রোমোজোম এবং Y ক্রোমোজোম। সকল মহিলা এবং পুরুষদের এক জোড়া করে সেক্স ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে।
পুরুষের ক্ষেত্রে একটি করে X এবং Y (XY) ক্রোমোজোম লক্ষ্য করা যায়। অপরদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে দুটি করে (XX) ক্রোমোজোম লক্ষ্য করা যায়।
বিজ্ঞানী স্টিভেন্স এবং উইলসন সেক্স ক্রোমোজোম আবিষ্কার করেছিলেন এবং বিজ্ঞানী কোরেন্স সর্বপ্রথম X ক্রোমোজোম পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
ক্রোমোজোমের সংখ্যাঃ ক্রোমোজোমের সংখ্যা সকল প্রজাতির জীবের জন্য স্থির নয়।
ইহা বিভিন্ন প্রজাতির জীবের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে 2 অথবা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা এক হতেই পারে।
জীবদেহে দুই ধরনের কোষ লক্ষ্য করা যায়। যথা- হ্যাপ্লয়েড এবং ডিপ্লয়েড কোষ।
এই কারণে ক্রোমোজোমের সংখ্যা দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা- হ্যাপ্লয়েড কোষের সংখ্যা এবং ডিপ্লয়েড কোষ এর সংখ্যা।
- হ্যাপ্লয়েড কোষঃ একটি ক্রোমোজোম সেট যাতে এক বা একাধিক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে তাকে আমরা হ্যাপ্লয়েড সেট বলে থাকি।
হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম যুক্ত কোষকে আমরা হ্যাপ্লয়েড কোষ বলে অভিহিত করে থাকে। ইহার একটি উদাহরণ হল জনন কোষ।
মানবদেহে জনন কোষে 23 টি ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে। যার মধ্যে 22 টি হল অটোজোম এবং অবশিষ্ট একটি হল সেক্স ক্রোমোজোম।
পুরুষের জনন কোষে অর্থাৎ শুক্রাণুতে প্রধানত যে কোন ধরনের সেক্স ক্রোমোজোম থেকে থাকে কিন্তু মহিলাদের ডিম্বানুতে একটি করে এক্স ক্রোমোজোমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
- ডিপ্লয়েড কোষঃ দুটি হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোমকে একত্রে আমরা ডিপ্লয়েড সেট ক্রোমোজোম বলে থাকি। ডিপ্লয়েড সেটে ক্রোমোজোম জোড়ায় জোড়ায় উপস্থিত করে।
এই ডিপ্লয়েড সেট ক্রোমোজোমযুক্ত কোষকে আমরা ডিপ্লয়েড কোষ বলে থাকি। ইহার একটি মুখ্য
উদাহরণ হলো দেহ কোষ।
মানবদেহের ক্রোমোজোম সংখ্যা হল মোট 46 টি। যার মধ্যে 22 জোড়া হলো অটোজোম এবং অবশিষ্ট দুটি সেক্স ক্রোমোজোম।
আমরা জানি পুরুষের ক্ষেত্রে দু’রকমের সেক্স ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে।
এই কারণে পুরুষের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোমের সংখ্যা হল 44A + XY (যেখানে A হলো অটোজোম)।
মহিলাদের ক্ষেত্রে দুটি এক্স ক্রোমোজোম উপস্থিত। এই কারণে মহিলাদের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা হল 44 A + XX।
ক্রোমোজোমের গঠনপ্রকৃতিঃ ক্রোমোজোমের আকৃতি কোষ বিভাজনের বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তিত হতে থাকে । কোষ বিভাজনের সময় কেবলমাত্র মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের গঠন সম্পূর্ণ সুস্পষ্ট হয়ে থাকে। এই কারণে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে কেবলমাত্র মেটাফেজ দশাতেই ক্রোমোজোম গুলি কে সবচেয়ে সুস্পষ্টভাবে পরীক্ষা করা যায়। একটি আদর্শ ক্রোমোজোমে নিম্নলিখিত অংশগুলি লক্ষ্য করা যায়।
ক্রোমাটিডঃ ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বরাবর যে সমপ্রকৃতির সম দৈর্ঘ্যের দুটি সূত্রাকার অংশবিশেষ লক্ষ্য করা যায় তাদের আমরা ক্রোমাটিড বলে থাকি।
একটি ক্রোমোজোমে উপস্থিত দুটি ক্রোমাটিড কে একত্রে সিস্টার ক্রোমাটিড বলা হয়ে থাকে।
কোষ বিভাজনের ইন্টারফেজ দশায় ক্রোমোজোমের মধ্যে দুটি সুক্ষ্ম তত্তুর মতো অংশ লক্ষ্য করা যায় দেখা যায়। এগুলিকে বলা হয়ে থাকে ক্রোমোনিমাটা।
ক্রোমোজোমের মধ্যে ক্রোমোনিমা তন্তু দ্বয় যদি পাশাপাশি অবস্থিত থেকে কুণ্ডলীকৃত হয়, তাদের সহজেই আলাদা করা যায়। এই ধরনের কুন্ডলী কে বলা হয়ে থাকে প্যারানেমিক কুণ্ডলী। আবার প্লেকটোনেমিক কুণ্ডলীতে দুটি তন্তু এমনভাবে পেঁচানো অবস্থায় থাকে, যে তাদের সহজে আলাদা করা যায় না। ক্রোমোনিমা তন্তু দ্বয়ই মূলত ঘনীভূত এবং কুণ্ডলীকৃত হয়ে ক্রোমাটিড গঠন করে থাকে।
সেন্ট্রোমিয়ার : দুটি সিস্টার ক্রোমাটিড ক্রোমোজোমের যে অরঞ্জিত খাঁজযুক্ত অংশে সংযুক্ত থাকে, তাকেই আমরা সেন্ট্রোমিয়ার, মুখ্য খাঁজ বা প্রাথমিক খাঁজ বলে থাকি।
ক্রোমোজোম বাহু হল সেই ক্রোমোজোমীয় অংশ যা সেন্ট্রোমিয়ারের উভয় পাশে বিস্তৃত অবস্থায় থাকে। আর কাইনেটোকোর হল সেই প্রোটিন নির্মিত, চাকতির মতো ত্রিস্তরীয় গঠন যা সেন্ট্রোমিয়ারকে ঘিরে অবস্থান করে।
সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ সমূহঃ
১) মেটাসেন্ট্রিক : সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মাঝখানে অবস্থান করে।
২) সাব-মেটাসেন্ট্রিক : সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মাঝখানের কিছুটা ওপরে বা নীচে অবস্থান করে।
৩) অ্যাক্রোসেন্ট্রিক : সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের কোনো একটি প্রান্তের কাছাকাছি অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়।
৪) টেলোসেন্ট্রিক : সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের কোনো একটি প্রান্তে অবস্থান করে থাকে।
সেন্ট্রোমিয়ারের মুখ্য কাজ সমূহঃ
১) সেন্ট্রোমিয়ারের কাইনেটোকোর বেমতন্তু সাথে সংযুক্ত হয়ে ক্রোমোজোমের অ্যানোফেজ চলনে সাহায্য প্রদান করে।
২) সেন্ট্রোমিয়ার দুটি সিস্টার ক্রোমাটিডকে পরস্পরের সাথে যুক্ত রাখে।
গৌণ খাঁজঃ ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ার ছাড়া অপর কোনো খাঁজ বা সংকোচন লক্ষ্য করা গেলে সেগুলি কি আমরা, গৌণ খাঁজ বলে থাকি।
স্যাটেলাইট: যে ক্ষুদ্র এবং স্ফীত অংশকে ক্রোমোজোমের গৌণ খাঁজের পরবর্তী বা দুটি গৌণ খাঁজের মধ্যবর্তী অংশের লক্ষ্য করা যায় তাদের আমরা স্যাটেলাইট বলে থাকি। স্যাটেলাইটযুক্ত ক্রোমোজোমকে আমরা SAT ক্রোমোজোম নামে অভিহিত করে থাকি। স্যাটেলাইটটি কোন ক্রোমোজোমের প্রান্তে অবস্থান করলে, সেটিকে প্রান্তীয় স্যাটেলাইট বলা হয়ে থাকে এবং ইহা দুটি গৌণ খাঁজের মধ্যবর্তী অঞ্চলে উপস্থিত থাকলে, সেটিকে অন্তর্বর্তী স্যাটেলাইট বলা হয়।
টেলোমিয়ার: টেলোমিয়ার হল কোন ক্রোমোজোমের বিশেষ মেরুযুক্ত উভয় প্রান্তীয় অঞ্চল।
টেলোমিয়ারের মুখ্যকাজ সমূহ :
১) ইহা দুটি ক্রোমোজোমকে প্রান্ত বরাবর পরস্পরের সাথে জুড়ে যেতে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।
২) ইহা দেহকোশের বার্ধক্য এবং মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং DNA প্রতিলিপিকরণ সমাপ্ত হতে সাহায্য প্রদান করে।
ক্রোমোজোমের রাসায়নিক উপাদান সমূহঃ কোন ক্রোমোজোমকে রাসায়নিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করলে যে সকল উপাদান লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হলঃ
DNA: ক্রোমোজোমে অবস্থিত নিউক্লিক অ্যাসিডের প্রায় 90–99% হল DNA। ইহা মূলত ডান দিক বরাবরকুণ্ডলীকৃত এক জোড়া পলিনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলের দ্বারা গঠিত হয়েছে। আবার প্রত্যেকটি শৃঙ্খল বহু ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিওটাইড দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে। দুটি শৃঙ্খলের বেসগুলি হল পরস্পরের অ্যান্টিপ্যারালাল এবংপরিপূরক। শৃঙ্খল জোড়া ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিওটাইডের মধ্যে অবস্থিত নাইট্রোজেন বেসের মধ্যে গঠিত হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে(A = T ও G = C) পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় অবস্থান করে।
RNA : ক্রোমোজোমে অবস্থিত নিউক্লিক অ্যাসিডের প্রায় 1-10% হল RNA। এই শৃঙ্খলবিশিষ্ট নিউক্লিক অ্যাসিডটি পলিরাইবোনিউক্লিওটাইডের দ্বারা গঠিত হয়েছে।
নিউক্লিওটাইড : নিউক্লিওটাইড ফসফরিক অ্যাসিড, পেন্টোজ শর্করা, নাইট্রোজেন বেস দ্বারা গঠিত হয়। DNA এবং RNAতে পিউরিন বেস হিসেবে অ্যাডিনিন ও গুয়ানিন উপস্থিত থাকে।ইউরাসিল এবং সাইটোসিন হল RNA এর পিরিমিডিন বেস। DNA-এর পিরিমিডিন বেস হল সাইটোসিন এবং পাইন।
প্রোটিন: ক্রোমোজোমে সাধারণত দুই রকমের প্রোটিন লক্ষ্য করা যায়। যথা- ক্ষারীয় প্রকৃতির হিস্টোন প্রোটিন এবং আম্লিক প্রকৃতির নন-হিস্টোন প্রোটিন । ক্রোমোজোমে পাঁচ প্রকার হিস্টোন প্রোটিন, যথা H1, H2A, H2B, H3,H4 থাকে এবং নন-হিস্টোন প্রোটিন হিসেবে স্প্যাফোল্ড প্রোটিন ও HMG প্রোটিন থাকে।
ধাতব আয়ন: ক্রোমোজোমকে গঠনগতভাবে সঠিক রাখতে এতে কিছু পরিমাণ ধাতব ও আয়নের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তারমধ্যে মূলত Ca2+, Mg2+এবং Fe3+এর উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
কোষ বিভাজন :
যে পদ্ধতির মাধ্যমেপদ্ধতি তে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে অপত্য কোষের সৃষ্টি করে থাকে, তাকেই আমরা কোষ বিভাজন বলে থাকি। নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস বলা হয়। এবং সাইটোপ্লাজমের জিনকে সাইটোকাইনেসিস বলা হয়ে থাকে।
কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন কোষীয় অঙ্গানু সমূহ এবং অন্যান্য গঠনগত অংশসমূহঃ
নিউক্লিয়াস : ইহাই মূলত ক্রোমোজোমকে ধারণ করে থাকে। কোশ বিভাজনের আগে নিউক্লিয়াসের মধ্যে DNA প্রতিলিপিকরণ পদ্ধতিতে সংশ্লেষিত হয়ে থাকে, ফলত প্রতিটি ক্রোমোজোমে DNA-এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায় এবং কোশের বিভাজন ঘটে থাকে।
সেন্ট্রোজোম ও মাইক্রোটিউবিউল: প্রাণীকোশে সেন্ট্রোজোমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় এবং সেন্ট্রোজোমকে ঘিরে অ্যাস্ট্রাল রশ্মি উপস্থিত থাকে যা মূলত মাইক্রোটিউবিউল দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে সেন্ট্রোজোম অনুপস্থিত থাকে এবং সাইটোপ্লাজমে অণুনালিকা ছড়ানো অবস্থায় অবস্থান করে থাকে। কোষ বিভাজনের ক্যারিওকাইনেসিসের সময়কালে প্রাণীকোশের অ্যাস্ট্রাল রশ্মি থেকে তৈরি হওয়া মাইক্রোটিউবিউল এবং উদ্ভিদ কোশের সাইটোপ্লাজমীয় মাইক্রোটিউবিউল নির্দিষ্ট রীতিতে সজ্জিত হয়ে বেম বা স্পিন্ডিল গঠন করে থাকে। মূলত এই কারণের জন্যই প্রাণীকোশের স্পিন্ডিলকে সেন্ট্রিওলার অথবা অ্যাস্ট্রাল স্পিন্ডিল এবং সাইটোপ্লাজমিক বা অ্যানাস্ট্রাল স্পিন্ডিল হল উদ্ভিদকোশের স্পিন্ডিল। নিরবিচ্ছিন্ন তন্তু হল স্পিন্ডিল গঠনকারী সেই সকল মাইক্রোটিউবিউল যারা একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। আর বিচ্ছিন্ন তন্তু হল সেই সকল তন্তু যারা কোন এক প্রান্ত থেকে উৎপত্তি লাভ করে কিছু দিন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে। আবার ক্রোমোজোমীয় তন্তু হল সেই সকল তন্তু যারা ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলে আবদ্ধ অবস্থায় থাকে। স্পিন্ডিলের দুটি প্রান্তকে মেরু বলা হয়ে থাকে এবং ইহার মধ্যবর্তী স্ফীত অঞ্চলকে নিরক্ষীয় অঞ্চল বলা হয়ে থাকে।
রাইবোজোম : ইহা কোশ বিভাজনের আগে বিভিন্ন হিস্টোন এবং নন-হিস্টেম প্রোটিন, প্রোটোপ্লাজমীয় প্রোটিন, এবং বিভিন্ন উৎসেচকধর্মী প্রোটিন সংশ্লেষ করে থাকে। যার ফলে কোশের আয়তন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এই ক্রোমোজোম থেকেই ক্রোমাটিড এর উৎপত্তি ঘটে। যার ফলে কোষ বিভাজিত হয়ে থাকে।
মাইটোকনড্রিয়া : কোষ বিভাজনের সময় ও তার আগে দেহ কোষের বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয়ে থাকে তার যোগান দেওয়াই হল মাইট্রোকন্ডিয়ার মুখ্য কাজ।
কোষ বিভাজনের তাৎপর্য সমূহঃ
কোষ বিভাজনের গুরুত্ব সমূহ হলো নিম্নরুপঃ
বৃদ্ধি ঘটানোঃ কোষ বিভাজনের ফলে একটি কোষ থেকে আপাত্য কোষের উৎপত্তি হয়। যার ফলে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। কার্যত ইহার ফলেই জীবদেহের সামগ্রিক বৃদ্ধিসাধন ঘটে।
ক্ষতস্থান পূরণঃ জীবদেহের কোন স্থানে কোন কারনে ক্ষত সৃষ্টি হলে, সেই ক্ষত স্থানের মৃত কোষগুলি কোষ বিভাজনের মাধ্যমে নতুন সজীব অপত্য কোষের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হলে ওই ক্ষতস্থানের ক্ষত নিরাময় হয়।
জননঃ উদ্ভিদের কোন বিশেষ অঙ্গ থেকে নতুন অপত্য উদ্ভিদের সৃষ্টিতে, রেনু উৎপাদন এবং অঙ্কুরোদগমের দ্বারা নতুন জীবের সৃষ্টিতে কোষ বিভাজন বিপুলভাবে সাহায্য করে।
পরিস্ফুটন : বিভিন্ন উদ্ভিদের বীজমধ্যস্থ ভ্রূণ থেকে চারাগাছের উৎপত্তির সময় পাতা, মূল, কাণ্ড,সৃষ্টি বা প্রাণীর জাইগোট থেকে ব্লাস্টুলা, মরুলা, গ্যাস্টুলা ইত্যাদি পর্যায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যুক্ত শিশু প্রাণীর সৃষ্টি বা পরিস্ফুটনে কোশ বিভাজন সাহায্য প্রদান করে থাকে।
কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ সমূহঃ
বিভিন্ন ধরনের প্রাণী দেহে মূলত তিন ধরনের কোষ বিভাজন পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। যথা- অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস এবং মিয়োসিস।
অ্যামাইটোসিস : যে জাতীয় কোষ বিভাজনে মাতৃকোষের সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়াস স্পিন্ডিল গঠন ণা করে এবং কোষপর্দার অবলুপ্তি না ঘটিয়েই সরাসরি দুটি অপত্য কোষের উৎপত্তি ঘটিয়ে থাকে, তাকেই আমরা অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে থাকি।
কোষ বিভাজনের স্থানঃ ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল এবং প্রোটোজোয়া প্রভৃতি জীবদেহে এই জাতীয় কোষ বিভাজন লক্ষ্য করা যায়।
ব্যাখ্যা এবং বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
- এই জাতীয় কোষ বিভাজনে নিউক্লীয় পর্দার অবলুপ্তি ছাড়াই ‘ নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে থাকে।
- বেম বা স্পিন্ডিল এইপ্রকার কোশ বিভাজনে গঠিত হয় না।
- খাঁজ সৃষ্টির দ্বারা নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম সরাসরি বিভাজিত হয়ে অপত্য কষের সৃষ্টি করে থাকে। মূলত এই কারণের জন্য কোশ বিভাজন পদ্ধতিকে প্রত্যক্ষ কোশ বিভাজন বলা হয়ে থাকে।
গুরুত্বসমূহঃ
- এই পদ্ধতির কোষ বিভাজনের ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমীয় অংশের আদানপ্রদান ঘটে থাকে না, তাই এই ক্ষেত্রে উৎপন্ন অপত্য কোস বা জীবে নতুন বৈশিষ্ট্যের আগমন সম্ভব না।
- এই জাতীয় কোষ বিভাজনের পদ্ধতি অত্যন্ত সরল প্রকৃতির এবং ইহা অপেক্ষাকৃত কম সময় সাপেক্ষ।
- এই জাতীয় কোষ বিভাজনের মাধ্যমে মূলত নিম্নশ্রেণির জীব বংশবিস্তার করে থাকে।
- মাইটোসিসঃ
এই প্রকার পরোক্ষ কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়াস একবার মাত্র বিভাজিত হয়ে মাতৃকোশের সমসংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট সমআকৃতির এবং সমগুণসম্পন্ন দুটি অপত্য কোশের সৃষ্টি করে। - কোশ বিভাজনের স্থান : দেহ মাতৃকোশে বা উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ভাজক কলার কোশে, জনন গ্রন্থিতে মাতৃকোশ থেকে জননকোশ উৎপাদনের সংখ্যাবৃদ্ধি দশায় মাইটোসিস কোশ বিভাজন ঘটে।
- বৈশিষ্ট্যসমূহ :
- ইহা একপ্রকার পরোক্ষ কোশ বিভাজন পদ্ধতি।
- এই পদ্ধতিতে মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম একবার মাত্র বিভাজিত হয়ে থাকে।
- এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় দুটি অপত্য কোশের সৃষ্টি হয়।
- উৎপন্ন অপত্য ‘কোশগুলির ক্রোমোজোমের প্রকৃতি এবং সংখ্যা মাতৃকোশের অনুরূপ হয়ে থাকে।
- DNA-এর পরিমাণ মাতৃকোশ এবং অপত্য কোশে সমান থাকে এবং অপত্য কোশগুলি মাতৃকোশের অনুরূপ বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং আকৃতিযুক্ত হয়ে থাকে।
২৪. খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চার বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তর- ১) খাদ্যাভ্যাস ব্যাক্তিগত রুচির পরিচায়ক।
২) খাদ্যাভ্যাস ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণে সক্ষম।
২৫. স্বাধীনতার পরবর্তীকালীন দুটি নাটকের নাম লেখ ।
উত্তর- বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ ও উৎপল দত্তের ‘টিনের তলোয়ার’।
২৬. সাত্যাজিত রায়ের দুটি চলচ্চিত্রের নাম লেখ।
উত্তর- ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘ হীরক রাজার দেশে ‘।
২৭. ইতিহাসে পোশাকের গুরুত্ব কি?
উত্তর – পোশাক মানুষের রুচির পরিচায়ক। আত্মসচেতনতার নিদর্শন স্বারুপ পোশাক ব্যবহার হয়।
২৮. ফটোগ্রাফিকাল ইতিহাসের বিষয় কি ?
উত্তর- ফটোগ্রাফিতে বাস্তব দিক তুলে ধরা হয়, কাল্পনিক দিকের প্রভাব নেই বললেই চলে । ফটোগ্রাফিকাল ইতিহাসে বাস্তব ঘটনাই প্রকাশ পায় ।
২৯. ইতিহাসে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য বিষয়ে দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তর- স্থাপত্য ও ভাস্কর্য বিষয়ক ইতিহাসে এক বিশাল গোষ্ঠীর মানসিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক দিক সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।
মিয়োসিস :
মিয়োসিস হল সেই পরোক্ষ কোশ বিভাজন পদ্ধতি যাতে জনন মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম দুবার বিভাজিত হলেও, ক্রোমোজোম মাত্র একবার বিভাজিত হয়, যার ফলে মাতৃকোশের অর্ধেক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট চারটি অপত্য কোশের সৃষ্টি হয়।
- কোশ বিভাজনের স্থান :
উদ্ভিদের রেণুমাতৃকোশে, এবং প্রাণীদের জনন মাতৃকোশে ও নিম্নশ্রেণির জীবের জাইগোটে মিয়োসিস বিভাজন ঘটে থাকে।
- কোশ বিভাজনের স্থান :
- বৈশিষ্ট্যসমূহ :
- ইহা হল একপ্রকার পরোক্ষ কোশ বিভাজন পদ্ধতি।
- এই কোষ বিভাজন পদ্ধতিতে মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম দুবার করে বিভাজিত হয়ে থাকে।
- এই জাতিয় কোষ বিভাজনে মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ ক্রোমোজোম একবার মাত্র বিভাজিত হয়ে থাকে।
- এই জাতিয় কোষ বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্ট অপত্য কোশের সংখ্যা হল চারটি।
- উৎপন্ন অপত্য কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে থাকে।
- এই জাতিয় কোষ বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্ট অপত্য কোশের ক্রোমোজোমগুলির প্রকৃতি সাধারণভাবে মাতৃকোশের ক্রোমোজোমের থেকে আলাদা হয়ে থাকে।
- সৃষ্ট অপত্য কোশের DNA-এর পরিমাণ মাতৃকোশের DNA-এর পরিমাণের অর্ধেক হয়ে থাকে।
কোশচক্র :
কোন একটি কোশ বিভাজনের পর কোশের বৃদ্ধি এবং পরবর্তী বিভাজনের শেষ পর্যন্ত সংঘটিত ধারাবাহিক ঘটনাসমূহের পর্যায়ক্রমিক আবর্তনকে আমরা কোশচক্র বলে থাকি। কোশচক্রের বিভাজন দশা বাস্তবে হল কোশের জনন দশা কারন বিভাজন পর্যায়তেই অপত্য কোশ সৃষ্টি লক্ষ্য করা যায়।
কোশচক্রের পর্যায় :
1953 সালে বিজ্ঞানী পেল্ক এবং হাওয়ার্ড কোশচক্রকে মুলত চারটি ক্রমিক পর্যায়ে বিভক্ত করেছিলেন। যথাঃ- গ্যাপ 1 দশা বা G₁, সংশ্লেষ দশা বা S দশা, গ্যাপ 2 দশা বা G2দশা এবং M বা বিভাজন দশা বা মাইটোটিক দশা। ইন্টারফেজ হল G₁, S এবং G2দশার একত্রিত নাম।
সুতরাং, আমরা বলতে পারি, একটি কোশ বিভাজনের শেষ এবং অপর কোশ বিভাজনের শুরুর মধ্যবর্তী, যে দীর্ঘস্থায়ী দশায় কোন কোশের বৃদ্ধি সম্পন্ন হয়ে থাকে এবং ওই নির্দিষ্ট কোশটিকে কোশ বিভাজনের উপযোগী হিসাবে গড়ে তোলে তাহাই হল ইন্টারফেজ দশা। কোশচক্রের স্থিতিকাল কোন নির্দিষ্ট প্রজাতির, খাদ্য, অক্সিজেন, উষ্ণতা, প্রভৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।
কোশচক্রের বিভিন্ন দশার বৈশিষ্ট্যসমূহ :
G₁ দশা :
- এই দশায় বিভিন্ন কোশ অঙ্গাণু, যেমনঃ লাইসোজোম, মাইটোকনড্রিয়া, রাইবোজোম, ক্লোরোপ্লাস্ট, গলগি বস্তু ভ্যাকুওল প্রভৃতি গঠিত হয়ে থাকে।
- এই দশাতেই বিভিন্ন প্রকার RNA যেমনঃ mRNA, rRNA ও tRNA প্রচুর পরিমাণে সংশ্লেষিত হয়ে থাকে।
- কোশচক্রের এই দশাতে DNA সংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক এবং প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়ে থাকে।
S-দশা:
- এই দশায় প্রতিলিপিকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে DNA এর সংশ্লেষ ঘটে থাকে। ফলত নিউক্লিয়াসে DNA-এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
- এই দশায় অল্প পরিমাণ RNA এবং হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়ে থাকে।
- প্রত্যেক ক্রোমোজোমে দুটি করে ক্রোমাটিড উপস্থিত থাকে।
(iv) সেন্ট্রোমিয়ারের উভয় পাশে কইিনেটোকোর লক্ষ্য করা যায়।
G2দশাঃ
- এই দশাতে ক্লোরোপ্লাস্ট, মাইটোকনড্রিয়া, সেস্ট্রোজোম, প্রভৃতি কোশ অঙ্গাণু বিভাজিত হয়ে থাকে।
- mRNA ও tRNA এবং প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়ে থাকে।
- নিউক্লিয়াসের এবং কোশের আকার বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
- এই দশায় ক্ষতিগ্রস্ত DNA অণুর মেরামত ঘটে থাকে।
M দশা :
- ইহা হল কোশের বিভাজন দশা।
- ইহা সম্পন্ন হয়ে থাকে ২টি পর্যায়ে, যথা—ক্যারিওকাইনেসিস পর্যায়, এবং সাইটোকাইনেসিস পর্যায়।
- ক্যারিওকাইনেসিস পর্যায়টি প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ দশার দ্বারা সম্পন্ন হয়ে থাকে, এবং এতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়ে থাকে।
- সাইটোপ্লাজমের বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য কোশের সৃষ্টি ঘটে।
কোশচক্রের গুরুত্বসমূহ :
১) কোশচক্রের বিভিন্ন পর্যায়গুলি বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক পদার্থের মাধ্যমে সক্রিয় হয় আথবা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন মূলত কোশচক্রের চেক পয়েন্টগুলিতে নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে ঘটে থাকে। ইহা থেকে পরবর্তীকালে টিউমারের সৃষ্টি ঘটে। এই টিউমার হল একপ্রকার অবিভেদিত কোশপুঞ্জ দ্বারা নির্মিত স্ফীত দেহাংশবিশেষ। কোন কোন টিউমার আবার ম্যালিগন্যান্ট প্রকৃতির হয় যা খুবই ক্ষতিকর, এবং ইহা হল ক্যানসার সৃষ্টির অন্যতম কারন।
২) কোশচক্রের মাধ্যমেই নতুন কোশ সৃষ্টির দ্বারা জীবদেহের বৃদ্ধিসাধন ও ক্ষয় পূরণ ঘটে থাকে।
প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে :
প্রথমে সেন্ট্রোজোমের সেন্ট্রিওল দুটি হইতে দুটি অপত্য সেন্ট্রিওলের সৃষ্টি ঘটে। সদ্য উৎপত্তি ঘটা দুটি অপত্য সেন্ট্রিওল সেন্ট্রোজোম গঠন করে থাকে এবং তারা ক্রমশ কোশের বিপরীত মেরুর দিকে গমন করতে শুরু করে দেয়। এই দুটি সেন্ট্রোজোমের অ্যাস্ট্রাল রশ্মি হইতে দ্বিমেরু যুক্ত বেম গঠিত হতে শুরু করে দেয়। এই কারনেই প্রাণীকোশের বেম হল অ্যাস্ট্রাল বেম। অ্যাস্ট্রাল রশ্মি, সেন্ট্রিওল, ও বেম একত্রে মাইটোটিক অ্যাপারেটাস গঠন করে থাকে।
উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে :
আমরা জানি সেন্ট্রোজোম উদ্ভিদকোশে অনুপস্থিত। উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে সাইটোপ্লাজমীয় মাইক্রোটিউবিউল গুলি নির্দিষ্ট রীতিতে সজ্জিত হবার মাধ্যমে বেম বা স্পিন্ডিল গঠন করে। যেহেতু উদ্ভিদের এই বেমগুলি অ্যাস্ট্রাল থেকে উৎপত্তি লাভ করেনি তাই উদ্ভিদকোশের বেমকে অ্যানাস্ট্রাল বেম বলা হয়ে থাকে।
মেটাফেজঃ
- স্পিন্ডিল বা বেম গঠন সম্পূর্ণ হয় এই দশায়।
- ক্রোমোজোম মধ্যস্থ সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলটি ক্রোমোজোমাল তন্তুর সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে পরে এবং ক্রোমোজোমগুলি বেমের বিষুব অঞ্চলের দিকে সঞ্চালিত হতে থাকে এবং একটি তলে সুসজ্জিত হবার মাধ্যমে মেটাফেজ প্লেটের সৃষ্টি করে।
- মেটাফেজ প্লেটের ভিতরের দিকে ছোটো ক্রোমোজোমগুলি এবং পরিধি বরাবর বড়ো ক্রোমোজোমগুলি সজ্জিত অবস্থায় থাকে।
- ক্রোমোজোমগুলি ঘনীভূত এবং কুণ্ডলীকৃত হওয়ার ফলে সর্বাপেক্ষা স্থূল এবং দন্ডাকার হয়ে পরে। ফলত ক্রোমোজোম গুলিকে সর্বাপেক্ষা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।
- প্রতিটি ক্রোমোজোমের সিস্টার ক্রোমাটিড দুটি সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।
অ্যানাফেজ :
- এই দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বরাবর বিভাজিত হয়ে থাকে।
- প্রতিটি সিস্টার ক্রোমাটিড নিজস্ব সেন্ট্রোমিয়ার অর্জন করে এবং অপত্য ক্রোমোজোম হিসেবে আচরণ করে থাকে।
- ক্রোমোজোমাল তন্তুর দৈর্ঘ্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে।
- সিস্টার ক্রোমাটিডগুলির মধ্যে বিকর্ষণ এবং ক্রোমোজোমাল তন্তুর দৈর্ঘ্য হ্রাসের কারনে সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে এবং প্রত্যেকটি ক্রোমোজোমের একটি করে সিস্টার ক্রোমাটিড বেমের বিপরীত মেরুর দিকে চালিত হয়ে থাকে। অপত্য ক্রোমোজোমগুলির এইরূপ চলনকে অ্যানাফেজীয় চলন বলা হয়ে থাকে।
- এই জাতিয় চলনের সময়কালে বেমের বিপরীত মেরুর দিকে ধাবিত সমসংখ্যক অপত্য ক্রোমোজোমের মাঝে মূলত বেমের নিরক্ষীয় অঞ্চলে আমরা ইন্টারজোনাল তন্তুর আবির্ভাব লক্ষ্য করা যায়।
- এই জাতিয় চলনের সময়কালে ক্রোমোজোমগুলি বিভিন্ন ইংরেজি অক্ষরের মত আকৃতি ধারণ করে থাকে।, যেমন—মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম ে ‘V’, সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম ‘L’, অ্যাক্রোসেন্ট্রিক আবির্ভাব লক্ষ্য করা যায়।
টেলোফেজঃ
- আপত্য কোষগুলির ক্রোমোজোম গুলি যখন বেমের দুই মেরুতে পৌঁছায় তারপর এই দশার কাজ শুরু হয়।
- প্রাণীদের ক্ষেত্রে বেম তন্তু সম্পূর্ণ বিনাস ঘটে। কিন্তু উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কোষের নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর কিছু সংখ্যক ইন্টারজোনাল তন্তুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
- অপত্য ক্রোমোজোম গুলিকে ঘিরে নিউক্লিয় পর্দার আবির্ভাব ঘটে থাকে এবং নিউক্লিওলাসের পুনর্গঠিত সংগঠিত হয়, ফলে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের উৎপত্তি ঘটে।
- নিউক্লিয়াসের মধ্যে জল সংযোজিত হয়ে থাকে, ফলে ক্রোমোজোমগুলির কুণ্ডলকৃত গঠন খুলে যায় এবং ক্রোমোজোম গুলি পুনরায় অস্পষ্ট এবং সূত্রাকার হয়ে থাকে।
- প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে কোশের মাঝখান বরাবর খাঁজটি ক্রমশ গভীর হতে শুরু করে।
- ইহাই হল ক্যারিওকাইনেসিসের শেষ পর্যায়।
- সাইটোকাইনেসিসঃ
উদ্ভিদের সাইটোকাইনেসিসঃ
উদ্ভিদ কোষে সাইটোকাইনেসিসের পর্যায়গুলি হল নিম্নরূপঃ
- ফ্রাগমোপ্লাস্টের সৃষ্টি: ক্যারিওকাইনেসিসের টেলোফেজ দশায় বেমের নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর ইন্টারজোনাল তত্ত্বগুলির মাঝে মাঝে গলগি বস্তু থেকে সৃষ্টি হওয়া ম্যাগনেশিয়াম পেকটেট এবং ক্যালশিয়াম পেকটেট যুক্ত ছোট ছোটো ভেসিকল বা ফ্রাগমোজোম জমা হতে লক্ষ্য করা যায়। এই ফ্রাগমোজোম এবং ইন্টারজোনালকে একত্রে ফ্রাগমোপ্লাস্ট গঠন করে থাকে।
- সেলপ্লেটের সৃষ্টি: ফ্রাগমোপ্লাস্টের প্রাস্ত বরাবর নতুন ফ্রাগমোজোম সঞ্চিত হবার ফলে ফ্রাগমোপ্লাস্ট ক্রমশ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এই সময় ফ্রাগমোজোমের মধ্যবর্তী ম্যাগনেশিয়াম পেকটেট এবং ক্যালশিয়াম মিলিতভাবে যে পাতলা পর্দা গঠন করে থাকে, তাকেই আমরা সেলপ্লেট বলে থাকি।
- প্লাজমোডেসমাটার সৃষ্টি: সেলপ্লেটের ভিতর কিছু দূর অন্তর অন্তর ER-এর সিস্টারনি প্রবেশর কারনে ছোট ছোট ছিদ্রের সৃষ্টি হয়ে থাকে, যা পরবর্তীতে প্লাজমোডেসমাটা গঠন করে থাকে।
- মধ্যপর্দার সৃষ্টি: সেলপ্লেটের ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে তা মাতৃকোশের কোশপ্রাচীরকে স্পর্শ করে থাকে এবং তা ভৌত এবং রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে মধ্যপর্দার গঠন করে থাকে। ঠিক এই সময়কালে ফ্রাগমোজোমগুলির পর্দা অপত্য কোশের কোশপর্দার গঠন করে থাকে।
প্রাথমিক প্রাচীর গঠন ও অপত্য কোশের সৃষ্টি : মধ্যপর্দা ও কোশপর্দার মধ্যবর্তী সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ প্রভৃতি সঞ্ছিত হবার পর প্রাথমিক কোশপ্রাচীর গঠিত হলে, মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোশের সৃষ্টি করে থাকে।
প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস :
প্রাণীকোশের সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতির ধাপগুলি হল নিম্নরূপ।
কনট্রাক্টাইল রিং গঠন ও কোশপর্দায় খাঁজের উৎপত্তি: বিজ্ঞানী ডগলাস মার্সল্যান্ড-এর মতামত অনুসারে, প্রাণী কোষের অ্যানাফেজ দশার সমাপ্তির দিকে, বেমের নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর কোশপর্দার ঠিক নীচে কর্টেক্স বা সাইটোপ্লাজম অংশে অসংখ্য অ্যাকটিন তন্তু সমান্তরালভাবে সজ্জিত অবস্থায় থাকে এবং অ্যাকটিন তন্তুর মাঝে মাঝে ছোট ছোট মায়োসিন তন্তু সংযুক্ত হলে কনট্রাক্টাইল রিং-এর উৎপত্তি ঘটে। যখন, এই রিংটি সংকুচিত হতে আরম্ভ করে তখন কোষ পর্দাটি কার্যত ভাঁজ হয়ে ভেতরের দিকে ঢুকে আসে এবং ক্লিভেজ ফারোর উৎপত্তি ঘটায়।
ক্লিভেজ ফারো দ্বয়ের পরস্পরের দিকে অগ্রসর হওয়াঃ
টেলোফেজ দশায় কনট্রাক্টাইল রিং ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে ক্রমশ ক্ষুদ্র হতে শুরু করলে ক্লিভেজ ফারো গভীর থেকে গভীরতর হতে আরম্ভ করে। এবং তা কোশের ভিতরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে
ক্লিভেজ : এই ভাবে কোন এক সময়ে কোশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে দুটি ক্লিভেজ ফারো পরস্পর সাথে মিলিত হয়ে পরলে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজমটি বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোশের সৃষ্টি করে থাকে।
উদ্ভিদ কোষ এবং প্রাণী কোষের ক্ষেত্রে মাইটোসিস এর তুলনামূলক আলোচনাঃ
পর্যায় সমূহ | বিষয়বস্তু | উদ্ভিদ কোষ | প্রাণী কোষ |
ক্যারিওকাইনোসিস | বেম তন্তু গঠন | এতে অ্যানাস্ট্রাল বেম লক্ষ্য করা যায়। | এতে অ্যাস্ট্রাল বেম লক্ষ্য করা যায়। |
বেমের পরিণতি | ইহার কিছু অংশ সেল প্লেট গঠন করতে কাজে লাগে। | এদের ক্ষেত্রে সাইটোকাইনেসিস এর সময় বেমের অবলুপ্তি ঘটে থাকে | |
প্রকার | অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিস | অ্যাস্ট্রাল মাইটোসিস | |
মেটাফেজ প্লেট | ক্রোমোজোম গুলি নির্দিষ্ট রীতি অনুসারে মেটাফেজ প্লেট গঠন করে থাকে না। | মেটাফেজ প্লেটের কেন্দে আকারে ছোট ক্রোমোজোম এবং পরিধিতে বড় ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে। | |
সাইটোকাইনেসিস | সূচনাকাল | ইহা টেলোফেজ দশার শেষের দিকে শুরু হয়ে থাকে। | |
পদ্ধতি | ইহা মুলত কোশপাত গঠনের দ্বারা ঘটে থাকে। | ||
পদ্ধতির ক্রম | কোশপাত কোশের মাঝখান বরাবর গঠিত হবার পর মাতৃকোশের কোশপ্রাচীরের দিকে প্রসারিত হয়ে থাকে। | ||
কনট্রাক্টাইল রিং | সৃষ্টি হয় না। | সৃষ্টি হয়। | |
অংশগ্রহণকারী কোশীয় গঠন | অণুনালিকা এবং ফ্রাগমোপ্লাস্ট। | মায়োসিন এবং অ্যাকটিন। |
মাইটোসিস কোশ বিভাজনের গুরুত্বসমূহঃ
জীবের বৃদ্ধি এবংপরিস্ফুটনে : মাইটোসিস পদ্ধতির মাধ্যমে বহুকোশী জীবদেহে দেহ কোশের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। ইহার মাধ্যমে জীবের সামগ্রিক বৃদ্ধি সাধিত হয়ে থাকে। অন্যদিকে এককোশী জাইগোটরা মাইটোসিস পদ্ধত ব্যবহার করে বিভাজিত অসংখ্য অপত্য কোশের সৃষ্টি করে থাকে। যা বিভেদীকরণের দ্বারা ভ্রূণের গঠনে এবং পরিস্ফুটনে প্রমুখ সাহায্য করে থাকে।
প্রজনন : বিভিন্ন গাছের অঙ্গজ বংশবিস্তারে মাইটোসিস কোশ বিভাজন প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য প্রদান করে থাকে। যেমন—আলু, আদা, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি।
পুনরুৎপাদন: উদ্ভিদ এবং কিছু সংখ্যক প্রাণীর কোনো অঙ্গের বিনষ্ট ঘটলে, মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে সেই অঙ্গের পুনরায় উৎপত্তি ঘটে থাকে।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় তারা মাছের বাহু, টিকটিকির লেজ।
কোশ প্রতিস্থাপন এবং ক্ষয়পুরণ সাধন: এই পদ্ধতিতে জীব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মৃত কোশগুলি নতুন, সজীব কোশের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে থাকে। যার ফলে দেহের ক্ষয়পুরণ হয়।
এ ছাড়াও কিছু সংখ্যক নিম্ন শ্রেণির জীবে অযৌন জনন মাইটোসিস বিভাজন পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে।
মিয়োসিসঃ
ইহাও হল এক ধরনের পরোক্ষ কোশ বিভাজন। এই কোষ বিভাজন পদ্ধতিতে মাইটোসিস এর তুলনায় অপেক্ষাকৃত কঠিন প্রকৃতির।
মিয়োসিস সম্পর্কীত কয়েকটি পরিভাষাসমূহ :
- সমসংস্থ ক্রোমোজোম : হোমোলোগাস ক্রোমোজোম বা সমসংস্থ ক্রোমোজোম হল সেই সকল ক্রোমোজোম যাদের আকার ও আকৃতিগত দিক থেকে সাদৃশ্য আছে এবং যারা একই রকম জিনগত বিন্যাসযুক্ত। এরূপ ক্রোমোজোম দ্বয়কে একে অপরের সমসংস্থ ক্রোমোজোম বলা হয়ে থাকে। ডিপ্লয়েড সেট ক্রোমোজোমে, এই জাতিয় ক্রোমোজোম লক্ষ্য করা যায়।
- নন-সিস্টার ক্রোমাটিড : দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমের ক্ষেত্রে যে-কোনো একটির ক্রোমাটিড হল অপর ক্রোমোজোমটির দুটি ক্রোমাটিডের সাপেক্ষে নন-সিস্টার ক্রোমাটিড।
- সাইন্যাপটোনেমাল কমপ্লেক্স : ইহা হল একটি কেন্দ্রীয় এলিমেন্ট এবং দুটি পার্শ্বীয় এলিমেন্টের দ্বারা গঠিত এক নিউক্লিও প্রোটিন বস্তু যা দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমকে জোড় বাঁধতে সাহায্য প্রদান করে থাকে।
- সাইন্যাপসিস : সাইন্যাপটোনেমাল কমপ্লেক্সের মাধ্যমে দুটি সমসংস্থ কোমোজোমের জোড় বাঁধার পদ্ধতিটিকে আমরা সাইন্যাপসিস বলে থাকি এবং জোটবদ্ধ সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়াকে বাইভ্যালান্ট বলা হয়ে থাকে।
ক্রসিং ওভার : বাইভ্যালান্ট সৃষ্টিকারী দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমের মধ্যে যে-কোনো দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে যে খণ্ড বিনিময় ঘটে থাকে, তাকেই আমরা ক্রসিং ওভার বলে থাকি।
মিয়োসিস কোষ বিভাজন এর মুখ্য দুটি পর্যায়ঃ
এই জাতীয় কোন বিভাজন মূলত দুটি পর্যায়ে হয়ে থাকে। যথা- মিয়োসিস I এবং মিয়োসিস II.
মিয়োসিস I :
কোষ বিভাজনের এই পর্যায়ে প্রত্যেক বাইভ্যালেন্ট গঠনকারী সমসংস্থ ক্রোমোজোম দ্বয়, পরস্পরের থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে মেরুর দিকে গমন করে থাকে। কিন্তু মাইটোসিস কোশ বিভাজনে আমরা দেখেছি অ্যানাফেজীয় চলনে প্রতিটি ক্রোমোজোমের সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি বেমের বিপরীত মেরুর দিকে গমন করে থাকে, মূলত এই কারণের জন্যই অপত্য কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোশের সমান হয়ে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে ডিসজংশনের ফলে সাইটোকাইনেসিস বা ইন্টারকাইনেসিস-এর পর উৎপন্ন দুটি অপত্য কোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে থাকে।
মিয়োসিস II
কোষ বিভাজনের এই পর্যায়ে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজীয় চলনের ন্যায় দুটি অপত্য কোশের প্রত্যেক ক্রোমোজোমের সিস্টার ক্রোমাটিড দ্বয় পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে বেমের বিপরীত মেরুর দিকে গমন করে থাকে। ইহার ফলে ক্যারিওকাইনেসিস—II-এর পর সৃষ্টি হওয়া চারটি অপত্য কোশের প্রত্যেকটির ক্রোমোজোম সংখ্যা এবং DNA-এর পরিমাণ মাতৃকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা এবং DNA-এর পরিমাণের অর্ধেক হয়ে থাকে।
মিয়োসিসের তাৎপর্যসমূহ :
- জননকোশ উৎপাদন : ডিপ্লয়েড জনন মাতৃকোশ (2n) মিয়োসিস পদ্ধতির মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে হ্যাপ্লয়েড জননকোশের (n) সৃষ্টি দিয়ে থাকে।
- প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্দিষ্ট রাখা: কোন প্রকার যৌন জননের সময় নিষেকের মাধ্যমে দুটি হ্যাপ্লয়েড জনন কোশের মিলনের ফলে ডিপ্লয়েড জাইগোট গঠিত হয়ে থাকে। অপত্য জীবের সৃষ্টি এই জাইগোট থেকেই। মূলত এই কারণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট প্রজাতির সমস্ত জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা সর্বদা স্থির বা একই থাকে।
- প্রকরণের সৃষ্টি: সমসংস্থ ক্রোমোজোম গুলির মধ্যে জিনের পুনঃসংযুক্তির এবং ক্রসিং ওভারের ফলে নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য কোশের সৃষ্টি ঘটে । ওইপ্রকার কোশের মিলনে যেসব জীবের উৎপত্তি ঘটে, তাদের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্যের সংযোজন ঘটে থাকে, যা ভেদ বা প্রকরণ সৃষ্টিতে প্রভূত সাহায্য প্রদান করে থাকে।
- জনুক্রম বজায় রাখাঃ ডিপ্লয়েড এবং হ্যাপ্লয়েড দশা পর্যায়ক্রমিক পুনরাবৃত্তি কে হামরা জনুক্রম বলে থাকি। মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ডিপ্লয়েড কোষ থেকে হ্যাপ্লয়েড দশার উৎপত্তি হয়। আবার জনন কোষের ক্ষেত্রে ডিপ্লয়েড দশার পুনরাবির্ভাব ঘটে থাকে।
মাইটোসিস এবং মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনাঃ
বিষয়সমূহ | মিয়োসিস | মাইটোসিস |
ঘটনাস্থল | জনন মাতৃকোষ | দেহের বিভিন্ন মৃত কোষ |
কোষ বিভাজন | এটি একটি হ্রাস বিভাজন পদ্ধতি। | এটি একটি সম বিভাজন পদ্ধতি। |
কোষের সংখ্যা | উৎপন্ন আপত্য কোষের সংখ্যা চারটি | উৎপন্ন আপত্য কোষের সংখ্যা দুটি |
বিভাজনের সংখ্যা | নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম দুইবার এবং ক্রোমোজোম একবার। | নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম উভয়ই একবার করে। |
কাজসমূহ | কোন নির্দিষ্ট প্রজাতির ক্ষেত্রে ক্রোমোজোম সংখ্যা স্থির রাখা। | দেহের কোন ক্ষতস্থান নিরাময় এবং দেশের সামগ্রিক বৃদ্ধি। |
জনন
জনন:জীব যে প্রক্রিয়ায় নিজের দেহ দ্বারা একই রকম বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীব উৎপত্তি করে এবং সেই অপত্য জীবের মধ্যে তার অস্তিত্ব বজায় রাখে তাকে জনন বলা হয়।
জননের গুরুত্ব:
- অস্তিত্ব এবং বংশবৃদ্ধি রক্ষা করা-জননের দ্বারা অপত্য জীব থেকে জনিতৃ জীব সৃষ্টি করে প্রজাতির অস্তিত্ব এবং বংশবৃদ্ধি রক্ষা করা।
- বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা করা- জননের দাঁড়া বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষিত হয় কারণ মৃত্যুর ফলে জীবের যে সংখ্যা কমে সেটা জনন এর মাধ্যমে বাড়ে।
- প্রকরণ সৃষ্টি করা- নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য জীবের সৃষ্টি হয় যৌন জনন এর মাধ্যমে যা অভিব্যক্তিতে এবং প্রকরণ সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
- বংশপরম্পরায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখা- জনিতৃ জীবের বৈশিষ্ট্য অপত্য জীব বহন করে ফলে বংশের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
জননের পদ্ধতি
- অযৌন জনন- যে জনন পদ্ধতিতে একটা জনিতৃ জীব দেহ,দেহকোষ
বিভাজন এবং রেনু উৎপাদন এর মাধ্যমে অপত্য জীব সৃষ্টি করে থাকে তাকে অযৌন জনন বলা হয়।
উদাহরণ- গোলাপ অথবা জবা গাছের শাখা হলো উদ্ভিদের দেহের অংশ, সেই দেহাংশ থেকে মূল সৃষ্টি হলে এবং মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে শাখাটি থেকে নতুন পাতা এবং শাখার সৃষ্টি হলে, একটি নতুন চারা গাছ জন্মগ্রহণ করে।
গুরুত্ব-
1.জনিতৃ জীবের প্রয়োজন একটি মাত্র হওয়ায় জননের নিশ্চয়তা বেশি।
- অসংখ্য অপত্য জীব সৃষ্টি হয় হয় কম সময়ের মধ্যে।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনিতৃ জীবের মতো অপত্য জীব হয়।
4.অপত্য সৃষ্টির সময় কেবলমাত্র মিয়োস্পোর থেকে উৎপন্ন জীবরাই প্রকরণ সৃষ্টি করতে পারে।
- যৌন জনন-জননের যে প্রক্রিয়ায় স্ত্রী গ্যামেট এবং পুং গ্যামেটের মিলনের ফলে অপত্য জীবের সৃষ্টি হয় তাকে যৌন জনন বলা হয়।
উদাহরণ- কাঁঠাল অথবা আমের ক্ষেত্রে ফুলের ডিম্বাশয় অবস্থিত ডিম্বকের মধ্যে স্ত্রী গ্যামেট, ফুলের পরাগরেণু তে অবস্থিত পুং গ্যামেটের সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট উৎপন্ন করে।নিষেক হওয়ার পর ডিম্বকটি বীজে এবং বীজ অঙ্কুরিত হয়ে নতুন আম অথবা কাঁঠালের চারা গাছ তৈরি করে।
গুরুত্ব
1.এই ক্ষেত্রে দুটি জনিতৃ জীব এর প্রয়োজন হয়।
2.জটিল প্রক্রিয়া এবং অধিক সময় সাপেক্ষে কম অপত্য জীবের সৃষ্টি হয়।
- অপত্য জীবের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য সঞ্চারিত হবার ফলে জনিতৃ জীবের বৈশিষ্ট্য এবং অপত্য জীবের বৈশিষ্ট্য পৃথক হয়।
4.প্রকরণ সৃষ্টি এই জননের মাধ্যমে হয় বলে এই যৌন জনন জীবের অভিব্যক্তিতে সাহায্য করে।
অযৌন জনন | যৌন জনন |
একটি মাত্র জনিতৃ জীবের প্রয়োজন হয় | যৌন জননের ক্ষেত্রে দুটি জনিতৃ জীবের প্রয়োজন হয় |
অযৌন জনন হল মাইটোসিস নির্ভর জনন পদ্ধতি | যৌন জনন হল মিয়োসিস নির্ভর জনন পদ্ধতি |
এই ক্ষেত্রে গ্যামেট উৎপাদনের প্রয়োজন নেই | এক্ষেত্রে গ্যামেট উৎপাদনের প্রয়োজন আছে |
প্রকরণ সৃষ্টিতে সাহায্য করে না | এই জননে প্রকরণ সৃষ্টি হয় |
জনিতৃ জীব এবং অপত্য জীব একই রকমের হয় | জনিতৃ জীব এবং অপত্য জীব পৃথক হয় |
এই জননে অভিযোজন ক্ষমতা অপত্য জীবের কম হয় | এই ধরনের জনন এর অভিযোজন ক্ষমতা অপত্য জীবের বেশি |
অযৌন জনন-
অযৌন জনন পদ্ধতি
দুটি অপত্য জীবের সৃষ্টি যখন একটি জনিতৃ জীবের বিভাজনের মাধ্যমে হয় তাকে দ্বি বিভাজন বলা হয়।বহুবার বিভাজিত জনিতৃ জীবের প্রতিটি নিউক্লিয়াস এবং জনিতৃ সাইটোপ্লাজম এর কিছু অংশ নিয়ে বহু সংখ্যক অপত্য সৃষ্টি কে বহু বিভাজন বলে।
1.অ্যামিবার দ্বিবিভাজন-অ্যামিবার ক্ষণপদ গুলি প্রথমে বিলুপ্ত হয়ে গোলাকার এবং পরে ডাম্বেল এর মত আকার ধারণ করে। সর্বশেষে জনিতৃ নিউক্লিয়াস সংকুচিত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে অ্যামিবার দেহের মধ্যস্থল সংকুচিত হয় এবং তারা পরস্পরের থেকে পৃথক হয়ে দুটি অপত্য অ্যামিবার সৃষ্টি হয়।
2. প্লাসমোডিয়াম এর বহু বিভাজন-RBC এর মধ্যে প্লাজমোডিয়াম এর ক্রিপ্টোমেরোজয়েট দশা প্রবেশ করার পর প্রথমে, অ্যামিবয়েড চলনে সক্ষম ট্রফোজয়েট দশা ও পরবর্তীকালে গোলাকার সাইজন্ট এ পরিণত হয়। 6-8 বার এই সাইজেন্টের নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে অনেকগুলো অপত্য নিউক্লিয়াস গঠন করে। |
নতুন অপত্য জীবের সৃষ্টি যখন জনিতৃ জীব দেহের থেকে হয় তাকে কোরকোদগম বলে। 1.ইস্ট এর কোরকোদগম-ইস্ট এর এককোষী দেহ অনুকূল পরিবেশে স্ফীত হয়ে একটি উপবৃত্তি তৈরি করে। কোষ অঙ্গাণু সহ কিছুটা সাইটোপ্লাজম ও মাতৃ কোষের নিউক্লিয়াস এর একটি খণ্ড উপবৃদ্ধির মধ্যে প্রবেশ করে।এরপর কোরকটি বর্ধিত হয় মাতৃকোষের মত সমান আকৃতি গঠন করে। 2. হাইড্রার কোরকোদগম- একটি উপবৃত্তি হাইড্রার দেহে কোন একটি স্থানে দেখা যায়, যেটিকে কোরক বা মুকুল বলা হয়। কোরকটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে অনুরূপ আকৃতিবিশিষ্ট জনিতৃ দেহের আকার ধারণ করে।
|
প্রত্যেক খন্ড থেকে অপত্য সৃষ্টির ঘটনাকে খন্ডীভবন বলা হয়।
|
জীবদেহের কোন খন্ডিত অংশ থেকে যদি পরিস্ফুটনের অথবা কোষ বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে পুনরুৎপাদন বলে।
|
রেণুস্থলী অথবা দেহাংশের মধ্যে এককোষী ফ্লাজেলা বিহীন বা ফ্লাজেলাযুক্ত রেনুর উৎপত্তিকে রেনু উৎপাদন বলে।
|
অঙ্গজ বংশবিস্তার-কোষ বিভাজন এবং বৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে যখন নতুন অপত্য উদ্ভিদের সৃষ্টি হয় সেই পদ্ধতিকে অঙ্গজ বংশবিস্তার বলা হয়। এই বংশবিস্তার কৃত্রিমভাবে হতে পারে এবং প্রাকৃতিক ভাবে হতে পারে।
- প্রাকৃতিক অঙ্গজ বিস্তার-জনিতৃ উদ্ভিদ দেহ থেকে প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভিদ অঙ্গ পৃথক হওয়ার পর সেই বিচ্ছিন্ন অঙ্গ বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং কোষ বিভাজনের মাধ্যমে যখন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে সেই পদ্ধতিকে প্রাকৃতিক অঙ্গজ ও বিস্তার বলা হয়।
কান্ডের দ্বারা-কচুরিপানার ছোট আকৃতির কান্ড জলতলের সঙ্গে মূলত আনুভূমিক ভাবে বাড়ে এবং ইহার পর্বমধ্য গুলি সাধারণত খুব স্থূল এবং ছোট প্রকৃতির হয়। কচুরিপানার কান্ড অফসেট হওয়ার পিছনে ইহাই হলো মুখ্য কারণ।এই জাতীয় উদ্ভিদের ক্ষুদ্র পর্বমধ্য গুলির ভাঙ্গনের ফলে কাণ্ডের কিছুটা অংশ মূল গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং ইহা থেকে নতুন অপত্য কচুরিপানার উৎপত্তি ঘটে।
মূল এর দ্বারা-শাকালু, রাঙালু এবং মিষ্টি আলু প্রভৃতি উদ্ভিদের অস্থানিক মূল রসালো এবং স্ফীত হয় খাদ্য সঞ্চয় এর জন্য, এগুলি হল কন্দাল মূল।নতুন চারা গাছের জন্ম হয় এই কন্দাল মূলের অস্থানিক মুকুল থেকে।
পাতার দ্বারা-পত্রজ মুকুল পাথরকুচি গাছের পাতার কিনারা তে সুপ্ত অবস্থায় থাকে।বায়ুমণ্ডল থেকে মুকুলগুলি জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে বৃদ্ধি পায় এবং একটি করে নতুন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে।
- কৃত্রিম অঙ্গজ বিস্তার-উদ্ভিদের কোন অঙ্গ কে মানুষ যখন নিজের প্রয়োজনে বিচ্ছিন্ন করে এবং বিশেষ পদ্ধতিতে ওই বিচ্ছিন্ন উদ্ভিদের দেহে অংশ থেকে নতুন অপত্য উদ্ভিদের জন্মগ্রহণ হয় তাকে কৃত্রিম অঙ্গজ বিস্তার বলে।
গ্রাফটিং বা জোড় কলম- দুটি একই জাতি ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের একটি শাখা বা মুকুলকে যখন অপর একটি মূল সহ উদ্ভিদের কান্ডের সঙ্গে যোগ করে যৌগিক প্রকৃতির অপত্য উদ্ভিদ তৈরি করা হয় সেই পদ্ধতিকে গ্রাফটিং বলে।
গ্রাফটিং এর জন্য যে উন্নত প্রকৃতির শাখা বা মুকুল টিকে নির্বাচন করা হয় তাকে সিওন বলা হয় এবং মূল সহ যে উদ্ভিদটির সাথে এই সিওনকে জোড়া হয় তাকে স্টক বলা হয়।
কাটিং বা শাখা কলম- উদ্ভিদের দেহ থেকে তার কান্ড, মূল অথবা পাতা কেটে মাটিতে প্রতিস্থাপন করা হলে সেই কাটা অংশ থেকে যখন মূল সৃষ্টি হয়ে একটি অপত্য উদ্ভিদ জন্মগ্রহণ করে সেই পদ্ধতিকে বলে কাটিং।
স্টেম কাটিং-IBA অথবা NAA নামক কৃত্রিম অক্সিনের মধ্যে যখন গোলাপ জবা প্রভৃতির কাণ্ডের একটি শাখা কেটে কয়েক দিন ডুবিয়ে রাখার পর নরম মাটিতে পুঁতে দিলে তা থেকে নতুন চারা গাছ সৃষ্টি হয়।
রুট কাটিং-তেতুল, পাতি লেবু এবং কমলালেবুর ইত্যাদির শাখামূল কেটে সেই শাখামূল যদি নরম মাটিতে বসিয়ে দেওয়া হয় তা থেকে মুকুল এবং মূল সৃষ্টি হয়। মুকুল মাটির উপর ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে নতুন চারা গাছের জন্ম হয়।
3. মাইক্রোপ্রোপাগেশন- কার্বনের উৎস, বিভিন্ন মাইক্রো এবং ম্যাক্রো এলিমেন্ট, হরমোন, কিছু জৈব উপাদান ও ভিটামিন প্রভৃতির মিশ্রণে প্রস্তুত বিশেষ কর্ষণের মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে যখন উদ্ভিদের কলা,কোষ ইত্যাদি বিভাজন, বৃদ্ধি বা উদ্ভিদ তৈরীর পদ্ধতি কে কলাকর্ষণ বলে। Micro কথাটির অর্থ হল ক্ষুদ্র। এই পদ্ধতিতে উদ্ভিদের কলার ছোট টুকরো অথবা ক্ষুদ্র কোষ থেকে কৃত্তিম ভাবে দ্রুত বংশ বিস্তার ঘটানোর প্রক্রিয়াকে মাইক্রোপ্রোপাগেশন বলে।
গুরুত্ব-
- পছন্দমত এবং বিভিন্ন রকমের অসংখ্য অপত্য উদ্ভিদ স্বল্প সময়ে তৈরি করা যায়।
- এই পদ্ধতিতে বীজ এর কোন রকম দরকার হয় না অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টিতে।
3.বছরের যেকোনো সময় চারা গাছ সৃষ্টি করা যায়।
- এই ধরনের সৃষ্ট উদ্ভিদের মধ্যে কোনরকম ভাইরাস থাকে না।
- অপত্য উদ্ভিদ গুলির মধ্যে জনিতৃ জীবের বৈশিষ্ট্য গুলি বজায় থাকে।
জনুক্রম– রেণুধর দশা হল জীবনচক্রে রেনু উৎপাদনকারী ডিপ্লয়েড দশা এবং লিঙ্গধর দশা হল হ্যাপ্লয়েড রেণু থেকে গ্যামেট উৎপাদন পর্যায়।
হ্যাপ্লয়েড লিঙ্গধর দশা এবং ডিপ্লয়েড রেনুধর দশা এই দুই দশার কোন জীবের জীবন চক্রের পর্যায়ক্রমিক আবর্তনকে জনুক্রম বলা হয়ে থাকে
ফার্নের জনুক্রম- স্বাবলম্বী এবং ডিপ্লয়েড রেনুধর প্রকৃতির হয় ফার্নের মূল উদ্ভিদদেহ।রেনু মাতৃকোষ, রেনুধর উদ্ভিদের রেণুস্থলী তে উৎপন্ন হয়। মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে রেনু মাতৃকোষে রেনু উৎপাদন করে। বিদীর্ণ রেণুস্থলী থেকে রেনু নির্গত হয় এবং তা অনুকূল পরিবেশে অঙ্কুরিত হয়ে প্রোথ্যালাস নামক এক ধরনের লিঙ্গধর উদ্ভিদ গঠন করে। স্ত্রীধানি এবং পুংধানী প্রোথ্যালামাস মধ্যে গঠিত হয়। স্ত্রীধানির মধ্যে ডিম্বাণু উৎপন্ন হয় এবং পুংধানীর মধ্যে শুক্রাণু উৎপন্ন হয়। এই ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন এর ফলে ডিপ্লয়েড জাইগোট উৎপন্ন হয় যা পরবর্তীকালে ভেঙে গিয়ে এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় রেনুধর উদ্ভিদ গঠন করে।
সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন জনন
যেকোনো সপুষ্পক উদ্ভিদ সাধারণত যৌন জনন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে থাকে। জবা ফুল হলো একটি আদর্শ ফুল একটি আদর্শ ফুলের ব্যবচ্ছেদ করার পর যে পাঁচটি অংশ দেখা যায় সেগুলি হল
1.বৃতি- একটি আদর্শ ফুলের সব থেকে বাইরে যে সবুজ বর্ণের স্তবকটি থাকে তাকে বৃতি বলা হয়। বৃত্যাংশ হলো বৃতির এক একটি অংশ।বৃত্যাংশ গুলি একে অপরের থেকে আলাদা থাকে মুক্ত বৃতির ক্ষেত্রে এবং একে অপরের সাথে যুক্ত অবস্থায় থাকে যুক্ত বৃতির ক্ষেত্রে।
2.দলমন্ডল-দলমন্ডল হলো বিভিন্ন রঙের গন্ধ যুক্ত অথবা গন্ধহীন দ্বিতীয় স্তবক যা বৃতির ভেতরের দিকে থাকে। পাপড়ি হলো দল মন্ডল এর একটি অংশ।পাপড়িগুলি পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে যুক্ত দলের ক্ষেত্রে এবং মুক্ত থাকে দলের ক্ষেত্রে।
3.পুং-স্তবক-ফুলের তৃতীয় স্তবকটিকে পুংস্তবক বলা হয় যেটি দলমন্ডলের ভিতরে থাকে। পুংকেশর হল পুংস্তবকের একটি পুংপ্রজননিক অংশ।এর দুটি অংশে থাকে যার মধ্যে একটি হলো পরাগধানী যেটি পুংদন্ডের উপর থলির মতো একটি অংশ এবং অপরটি হল সূত্রাকার পুংদন্ড।দুটো কড়াকড়ির মধ্যে যে সংযোজক কলা থাকে তাকে যোজক বলা হয়।
4.স্ত্রী-স্তবক-ফুলের সব থেকে ভেতরের স্তবকটি হল স্ত্রীস্তবক যেটি গর্ভপত্র দ্বারা গঠিত।এই গর্ভপত্র তিনটি অংশ দ্বারা গঠিত-
- সবচেয়ে নিচের দিকে স্ফীত অংশ যা ডিম্বাশয় বা গর্ভাশয় নামে পরিচিত।
- গর্ভদন্ড হল ডিম্বাশয় এর উপরের অবস্থিত একটি দন্ডাকার অংশ।
c.এই গর্ভদণ্ডের মাথায় অবস্থিত সামান্য স্ফীত গোলাকার আকৃতির অংশটি হলো গর্ভমুণ্ড।
5.পুষ্পাক্ষ- যে ক্ষুদ্র দন্ডাকার অংশের উপর ফুলের স্তবক গুলো সাজানো থাকে তাকে পুষ্পাক্ষ বলে।
ফুলের বিভিন্ন অংশের কাজ-
- বৃতির রং সবুজ বর্ণের হওয়ায় এটি যেমন সালোক সংশ্লেষে সাহায্য করে তেমনি বৃতি ফুলের অন্যান্য অংশগুলিকে বহির্জগত থেকে রক্ষা করে।
2.এটি যেমন কীটপতঙ্গ কে গন্ধের দ্বারা আকৃষ্ট করে তেমনি এটি ফুলের স্ত্রী স্তবক এবং পুংস্তবক কে রক্ষা করে।
3.পরাগরেণু তৈরি হয় পুংকেশরের পরাগধানীতে এবং সেই পরাগরেণু থেকে শুক্রাণু উৎপন্ন হয়।
- পরাগরেণুর গ্রাহক রূপে কাজ করে গর্ভপত্রের গর্ভমুণ্ড অংশ। ডিম্বাশয় উৎপন্ন হয় ডিম্বক যে থেকে ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়।
পরাগযোগের প্রকারভেদ-
1.স্বপরাগযোগ- পরাগরেণুর যখন একই গাছের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে বা সেই ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হয় তখন এই ধরনের পরাগ যোগ কে স্বপরাগযোগ বলে এটি দুই ভাবে ঘটতে পারে।
- অটোগ্যামি-পরাগ সংযোগ যখন উভয় লিঙ্গ ফুলের পরাগধানীর পরাগরেণু থেকে ওই ফুলের গর্ভমুণ্ডে হয় তখন তাকে অটোগামি বলা হয়। যেমন দোপাটি
- গেইটোনোগ্যামি-পরাগ সংযোগ যখন একই উদ্ভিদের দুইটি একলিঙ্গ ফুল অথবা উভয়লিঙ্গ ফুলের স্ত্রী এবং পুরুষের মধ্যে ঘটে তখন তাকে গেইটোনোগ্যামি বলে। যেমন কুমড়ো,লাউ
- ইতর পরাগযোগ-একই প্রজাতির অন্য গাছের ফুলের গর্ভমুণ্ডে যখন কোন ফুলের পরাগরেণু নানারকম বাহক এর দ্বারা বাহিত হয়ে পরাগ যোগ ঘটে তাকে ইতর পরাগযোগ বলে।উদাহরণ চাপা, রক্তদ্রোণ, সরিষা
প্রকার | বৈশিষ্ট্য | সুবিধা | অসুবিধা |
স্বপরাগযোগ | 1. বাহক এর কোন প্রয়োজন হয় না। 2. ফুলগুলি মকরন্দ এবং গন্ধহীন হয় এবং কম সংখ্যক পরাগরেণু সৃষ্টি হয়। 3.এই ক্ষেত্রে পরাগ যোগ হয় দুটি ফুলের মধ্যে অথবা একই গাছের উভলিঙ্গ ফুল এর মধ্যে। 4.গর্ভমুণ্ড এবং ফুলের পরাগধানী একই সময়ে পরিণত হয়। | 1. বাহক নির্ভরশীল নয়। 2. জনিতৃ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে বজায় থাকে। 3. পরাগরেণুর অপচয় অনেক কম হয় এই পরাগ সংযোগ প্রক্রিয়ায়। 4. এই প্রকার পরাগ যোগ খুব সহজেই ঘটে এবং এতে সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। | 1. স্বপরাগযোগ এর ক্ষেত্রে উদ্ভিদের মধ্যে নতুন কোন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয় না। 2.অপত্য উদ্ভিদের অভিযোজন ক্ষমতা অনেক কম কারণ বীজ নিম্নমানের হয়। |
ইতর পরাগযোগ | 1.এই পরাগ সংযোগ এর জন্য বাহকের প্রয়োজন হয়। 2. উজ্জল বর্ণ, মকরন্দ এবং গন্ধ যুক্ত হয়ে থাকে এই ইতর পরাগযোগ এ হওয়া ফুলগুলি। এবং এখানে বেশি মাত্রায় পরাগরেণু উৎপন্ন হয়। 3.পরাগ যোগ একই প্রজাতির দুটি গাছের ফুলের মধ্যে হয়। 4.গর্ভমুণ্ড এবং ফুলের পরাগধানী সাধারণত আলাদা আলাদা সময় পরিণত হয় | 1.এই পরাগ যোগে নতুন প্রজাতি সৃষ্টিতে সাহায্য করে কারণ এর অপত্য উদ্ভিদ নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়। 2.উন্নতমানের বীজ হওয়ার কারণে অপত্য উদ্ভিদের অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি। 3. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অপত্য উদ্ভিদের বেশি। | 1.বাহক নির্ভরশীল। 2.জনিতৃ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলো অপত্যর মধ্যে বজায় থাকে না। 3. পরাগরেণুর অপচয় অনেক বেশি হয় এই পরাগ সংযোগ প্রক্রিয়া।
4.এই প্রকার পরাগ যোগ খুব সহজেই ঘটেনা এবং এতে সফলতার সম্ভাবনা অনেক কম। |
পরাগযোগের বাহক
পরাগ বাহক | গাছের নাম | ফুলের প্রকার | ফুলের বৈশিষ্ট্য |
বায়ু | ভুট্টা এবং ধান | বায়ুপরাগী | 1. সাদা রঙের অথবা বর্ণহীন অনুজ্জ্বল এবং ক্ষুদ্রাকার। 2. পরাগরেণু প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। 3. হালকা ও ক্ষুদ্র প্রকৃতির হয় রেনু গুলি। 4. শাখান্বিত হয় গর্ভমুণ্ডটি এবং লম্বা হয় গর্ভদন্ডটি। |
জল | পাতা ঝাঁঝি | জলপরাগী | 1. অনুজ্জ্বল,হালকা এবং ক্ষুদ্র। 2. মোমের আস্তরন থাকে ফুলের স্তবক গুলিতে তার কারনে এরা জলে ভাসে সহজেই। 3. মকরন্দ ও গন্ধহীন হয় ফুলগুলি। 4.আঠালো এবং রোমশ প্রকৃতির হয় গর্ভমুণ্ড। |
পতঙ্গ | আম | পতঙ্গপরাগী | 1. ফুলগুলি উজ্জ্বল বর্ণযুক্ত এবং বড় হয়। 2. মিষ্টি গন্ধ যুক্ত হয়। 3. আঠালো এবং অমসৃণ প্রকৃতির হয় পরাগরেণু। 4.গর্ভমুণ্ড আঠালো এবং অমসৃণ হয়। |
পাখি | শিমুল | পক্ষীপরাগী | 1.এই ক্ষেত্রে ফুলগুলি যেমন উজ্জ্বল বর্ণের হয় ঠিক তেমনি আকারে বেশ বড় হয়। 2. মকরন্দ যুক্ত হয় ফুলগুলি। 3. পাখিদের সুস্বাদু খাদ্যরূপে পরাগরেণু ব্যবহৃত হয়। |
নিষেক এবং নতুন উদ্ভিদ গঠন-
ফুলের পুং-প্রজননিক অংশ হলো পুংকেশর এবং পরাগধানীর পরাগরেণু থেকে শুক্রাণু উৎপন্ন হয়।
ফুলের স্ত্রী-প্রজননিক অংশ হলো গর্ভকেশর এবং ডিম্বাণু উৎপন্ন হয় ডিম্বাশয়ের ডিম্বকের মধ্যে।
1.পরাগযোগ-পুংকেশর থেকে পরাগরেণু ফুলের গর্ভমুণ্ডে পৌঁছায় ইতর অথবা স্বপরাগযোগের মাধ্যমে।
2.পরাগরেণুর অঙ্কুরোদগম এবং পুং-গ্যামেট সৃষ্টি-পরাগনালি তৈরি হয় পরাগরেণু অঙ্কুরিত হয়ে, সেই সময় এই পরাগরেণুর নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিস কোষ বিভাজন পদ্ধতিতে ভেঙে গিয়ে একটি নালিকা নিউক্লিয়াস এবং দুটি শুক্রাণু উৎপন্ন করে।
3.ভ্রূণস্থলী- চারটি স্ত্রীরেনু গঠন হয় ডিম্বকের ডিম্বকরন্ধ্র মাতৃকোষে, যার মধ্যে তিনটি বিনষ্ট হয়ে যায় এবং একটি সক্রিয় থাকে।মাইটোসিস বিভাজন প্রক্রিয়ায় হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াস তিনবার বিভাজিত হয়ে আটটি নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে, এদের মধ্যে ডিম্বকরন্ধ্রের দিকে তিনটি নিউক্লিয়াস থেকে দুটি সহকারি কোষ এবং একটি ডিম্বাণু উৎপন্ন হয় এবং অপর দুটি নিউক্লিয়াস এক হয়ে নির্ণীত নিউক্লিয়াস গঠন করে।
4.দ্বিনিষেক-পরাগনালি গর্ভদন্ডের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুটি শুক্রাণুকে ভ্রূণস্থলী পর্যন্ত বাহিত করে আনে। তারপর ডিম্বানুর সাথে শুক্রাণু মিলিত হয়ে ডিপ্লয়েড জাইগোট গঠন করে এবং অপরটি ট্রিপ্লয়েড শস্য নিউক্লিয়াস গঠন করে নির্ণীত নিউক্লিয়াসের সাথে যুক্ত হয়ে।গুপ্তবীজী উদ্ভিদের নিষেক হলো একটি দ্বিনিষেক প্রক্রিয়া।
5.ভ্রূণ গঠন- অনেকগুলো কোষ জাইগোট মাইটোসিস পদ্ধতিতে বারবার বিভাজন হওয়ার ফলে তৈরি হয়,যে গুলো পরবর্তীকালে ভ্রূণ গঠন করে। একই সময় নিউক্লিয়াসটি ভেঙে গিয়ে শস্য গঠন করে।
- ফল এবং বীজ গঠন-জাইগোট থেকে ভ্রূণ নিষেকের জন্যই সৃষ্টি হয় এর ফলে ডিম্বক টি বীজে এবং ডিম্বাশয় বৃদ্ধি হয়ে ফল তৈরি করে।
- নতুন চারা গাছের সৃষ্টি- ভ্রূণ থাকে নিজের মধ্যে যা ভবিষ্যতে অনুকূল পরিবেশে ক্রমশ বড় হয়ে একটি নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করে।
বৃদ্ধি ও বিকাশ
- বৃদ্ধি- কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত সাপেক্ষে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কোষীয় উপাদানের সংশ্লেষ দ্বারা কলা, কোষ, দেহের আয়তন, আকার এবং শুষ্ক ওজনের স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয় ভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়াকে বৃদ্ধি বলে।
- বিকাশ- কোষের বিভেদীকরণ ও সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে, জটিল প্রক্রিয়া জাইগোট থেকে জীবের সৃষ্টি, বৃদ্ধি এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তার জীবন চক্রের সংঘটিত সমস্ত রকমের পরিবর্তনকে একত্রে বিকাশ বলা হয়।
- বৃদ্ধি ও বিকাশের সম্পর্ক- কোষীয় পদার্থ সংশ্লেষিত হওয়ার ফলে কোষের বৃদ্ধি ঘটে আর এই কোষ বিভাজিত হয়ে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায়। এইভাবে প্রতিটি জীবদেহে বৃদ্ধির সময় দেহের আয়তন এবং আকার অপরিবর্তনীয় ভাবে বেড়ে যায়। ভ্রূণ যখন এককোষী জীব থেকে গঠিত হয় তখন কোষ বিভাজনের ফলে কোষ গুলি নানা ধরনের কোষে রূপান্তরিত হয়ে জীব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলি গঠন করে এবং তার বিকাশ ঘটায়। সুতরাং বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবের বিকাশ ঘটে।
- বৃদ্ধির পর্যায়-তিনটি সুস্পষ্ট দশায় বহুকোষী জীবের বৃদ্ধি কে বিভক্ত করা যেতে পারে
1.কোষ বিভাজন-মাইটোসিস পদ্ধতিতে জীব দেহের কোষ গুলি বিভাজিত হয়ে তার সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে এবং নতুন কোষ যুক্ত হয়ে আকার ও আয়তন বাড়ে।
2.কোষের আকার বৃদ্ধি- প্রোটোপ্লাজমীয় বস্তুর সংশ্লেষ এর দ্বারা অপরিবর্তনীয় ভাবে কোষের আকার বেড়ে যায় এবং তার সাথে জীব দেহের আকার ও বাড়ে।
3.কোষীয় বিভাজন- কোষের বিশেষ প্রাপ্তি ঘটে এই পর্যায়ে, অঙ্গসংস্থানিক এবং জৈবিক পরিবর্তনের দ্বারা।
মানব বিকাশের বিভিন্ন দশা-বৃদ্ধি ও বিকাশ, মানুষের মায়ের গর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় শুরু হলেও পরবর্তীকালে সেই বিকাশকে পাঁচটি দশাতে ভাগে ভাগ করা হয়
বিকাশের পর্যায় | বিশেষ বৈশিষ্ট্য |
সদ্যোজাত 0-1 বছর | 1.তীব্র আলোকে অনুসরণ করা। 2. মানুষের মুখমণ্ডল এর দিকে আকর্ষিত হওয়া। 3. রুটিং রিফ্লেক্স ব্যবহার করে পুষ্টি সংগ্রহ করা। 4.নানা রকমের সংবেদন এর সৃষ্টি। 5. বৃদ্ধি দ্রুত গতিতে হওয়া। |
শৈশব 2-12 বছর | 1.টডলার দশায় কোন বস্তুকে নামের দ্বারা চিনতে পারা,খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে আনন্দ পাওয়া এবং পরিবেশকে বুঝতে শেখা। 2. এই অবস্থায় দক্ষতা গড়ে ওঠে, কথা বলা ও মনোভাব প্রকাশ এর মধ্যে দিয়ে 3. নানা রকমের শব্দ ইনফ্যান্ট দশায় উচ্চারণ করতে শেখা 4. এই বয়সের বৃদ্ধি কে নিয়ন্ত্রণ করে থাইমোসিন নামক এক প্রকার হরমোন এবং এই সময় জনন গ্রন্থি গুলির পরিণত হয় না। |
বয়ঃসন্ধি 13-21 বছর | 1.সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হার হয় এই সময়। 2. সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোন গুলির। 3. পরিণত হয় যৌন অঙ্গ গুলি এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। 4.মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রোজেস্টেরোন এবং ইস্ট্রোজেন ও পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশ পায়। |
পরিণত দশা 22-55 বছর | 1.পরিপূর্ণভাবে জনন গ্রন্থিগুলো সক্রিয় হয়। 2..প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই সন্তান উৎপাদন করে তাকে প্রতিপালন করে সংসার ধর্ম পালন করে। 3..শ্লথ গতিতে বৃদ্ধি হলেও তা বন্ধ হয়ে যায় 24-25 বছরের মধ্যে। |
বার্ধক্য 55 বছর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত | 1.মেনোপজ ঘটে মহিলাদের ক্ষেত্রে। 2. পুরুষদের ক্ষেত্রে 55 বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে 45 বছরের পর শুক্রাণু ডিম্বাণু উৎপাদন কমে যায়। 3. ঘ্রাণশক্তি শ্রবণশক্তি দৃষ্টিশক্তি এগুলো হাস পায়। 4. স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের আয়তন কমে যায়। 5. ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং কুঁচকে যায়। |
Related posts:
- Chapter 2 Continuity of Life (জীবনের প্রবাহমানতা) Life Science জীবন বিজ্ঞান WBBSE Madhyamik Class 10
- Chapter 3 Heredity And Some Common Genetic Diseases (বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ) Life Science জীবন বিজ্ঞান WBBSE Madhyamik Class 10
- Madhaymik Life Science Jibon Bigyan Notes WB Board Chapter 5
- Madhyamik Notes Class 10 Life Science Jibon Bigyan Chapter 4 Obhibyakti o Obhijojon