সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা -Songoboddhotar Gorar Kotha History WBBSE Madhyamik Class 10
Here you will learn the basics of সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা Chapter 4 History Itihas WBBSE Madhyamik in a simple language it is for Bengali medium students who are studying under West Bengal Board of Secondary Education and preparing for their Madhyamik exam (Class 10 WBBSE) Here you will find all necessary and important WBBSE Madhyamik Suggestions class 10, notes, solved sample question paper in Bangla along with video lectures from expert teachers
এখন সহজে পাস্ করুন পরীক্ষা skillyogi'র নোটস, সাজেশন, সল্ভড পেপার এবং ভিডিও লেকচারের মাধ্যমে।
সূচনা :
ভারতে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক স্তরে বিভিন্ন বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ বা মহা বিদ্রোহ অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিল, যার ফলস্বরূপ বিভিন্ন জাতীয়বাদী সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে।
১৮৫৭- র বিদ্রোহ:
পলাশির যুদ্ধে (১৭৫৭খ্রি.) জয়ী হয়ে ব্রিটিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি সমগ্র ভারতীয় মহাদেশে অর্থনৈতিক শোষণ এবং স্বৈরাচারী শাসন শুরু করে। এর ফলে ভারতীয় শিল্প – বাণিজ্য এবং কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পরে ।
ব্রিটিশরা ভারতীয়দের নিজেদের সেনাবাহিনীতে নিলেও তাঁদের নানা ভাবে অপমান ও তাদের সাথে ভেদাভেদ এমন কি ঘৃণা ও করতেন। ফলে এই দুর্ব্যবহার ধীরে ধীরে ক্ষোভে পরিণত হয়ে যা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহ আকারে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে পরে।
- ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে এই সময় এনফিল্ড রাইফেলের টোটার ব্যবহার শুরু হলো, যাকে এই বিদ্রোহের প্রধান কারণ হিসাবে ধরা হয়।
এই রাইফল ব্যবহারের সময় এর টোটার খোলসটি দাঁত দিয়ে কেটে ভরতে হতো, গুজব রটে যে এই খোলসটি গরু এবং শূকরের চর্বি দিয়ে তৈরি। এই খবর আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়লো, হিন্দু – মুসলিম সিপাহিরা এই রাইফেল ব্যাবহার করতে চাইলো না।
- বড়োলাট লর্ড ক্যানিং – এর আমলে, ১৮৫৭খ্রিস্টাব্দে ২৬ ফেব্রুয়ারি, মুর্শিদাবাদের বহরমপুর সেনানবাসের ১১নং নেটিভ ইনফ্যান্ট্রির সিপাহিরা প্রথম বিক্ষোভ শুরু করে।
- বারাকপুরের সেনানিবাসের সিপাহি মঙ্গল পান্ডে ২৯ মার্চ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং প্রথম শহীদ হয়।
- এই ঘটনার পর ধীরে ধীরে মিরাট, দিল্লি, ফিরোজপুর, মুজাফনগর, পাঞ্জাব ও উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, লখনৌ-এ বিদ্রোহ শুরু হয়।
১৮৫৭-র বিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি:
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সৈনিক বা সিপাহীরা প্রথম এই বিদ্রোহ শুরু করেছিল বলে অনেকেই সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন।
- হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দাদাভাই নওরোজি, অক্ষয় কুমার দত্ত প্রমুখ এই বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন।
- ইংরেজ ঐতিহাসিক জনকে, বল, প্রমুখ এই বিদ্রোহের গণতন্ত্রের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ কানপুরে নানা সাহেব ও তাতিয়া টোপি, ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ প্রমুখের বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
- তাই এই বিদ্রোহকে অনেকে গণবিদ্রোহ অভিহিত করেছেন।
- ঐতিহাসিক ডাফ , রবার্টসন, সমাজতন্ত্র কাল মার্কস প্রমুখ এই বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলেছেন।
- কারণ এই বিদ্রোহের অসামরিক লোকজন ও জমিদার শ্রেণী সক্রিয় হয়ে ওঠে.
- আবার অনেকেই এই বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন।
- রমেশচন্দ্র মজুমদার এর মতে ‘ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে তথাকথিত প্রথম জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রথম নয় , জাতীয় নয় এবং স্বাধীনতাসংগ্রাম ও নয় ‘
- ড. সুরেন্দ্রনাথ সেন এর মতে এই সময় ভারতে জাতীয়তাবোধ প্রসার হয়নি, তাই এই বিদ্রোহ কে গুরুত্ব দিতে চাননি।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহ প্রথম বহিঃপ্রকাশ ছিলো ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। বিদ্রোহের ফলে ভারতের শাসন ভার কোম্পানির হাত থাকে চলে যায়।
১৮৫৭-র বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মনোভাব:
ব্রিটিশ কোম্পানি নিজেদের সুবিধার্থে ভারতবর্ষের শিক্ষার প্রচলন করেন যার ফলস্বরূপ বাংলায় শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণি তৈরি হয়।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে যখন ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে সমর্থন করলেও, শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ গুরুত্ব দেয়নি। তাদের মনে হয়েছিল এদেশে জাতীয় রাষ্ট্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে ভারতীয়রা পারবে না।
বরং তাদের মনে হতো যে ব্রিটিশরাই পারে ভারতবর্ষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ও তাদের দ্বারাই উন্নতি হবে ভারতীয়দের। এই বিদ্রোহ দমনে শিক্ষিত সমাজ স্বস্তিবোধ করেছিল।
এইভাবে জনসমর্থনের অভাবে এই বিদ্রোহ খুব বড় আকার ধারণ করতে পারেনি আর তাই এই বিদ্রোহ ব্রিটিশদের পক্ষে দমন করা সহজ হয়.
মহারানীর ঘোষণাপত্র (১৮৫৮খ্রি.):
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহ ব্যার্থ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু এর প্রভাব ছিলো অনেকটা। কঠোর দমন নীতি এবং বিদ্রোহী নেতাদের উপর নির্মম অত্যাচারে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে বিদ্রোহ থেমে যায়।
এই অবস্থা দেখে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতে ইস্টাইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে ইতি দিয়ে ‘ভারত শাসন আইন ‘ (১৮৫৮খ্রি.) আনা হয়। এই আইনে মহারানী ভিক্টোরিয়া নিজের হাতে ভারতের শাসন ভার তুলে নেন, রানির প্রতিনিধি হয়ে গভর্নর জেনারেল ভারত শাসন করবেন। ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হলেন লর্ড ক্যানিং।
মহারানি ভিক্টোরিয়া ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় শাসন ব্যাবস্থায় নুতন নিয়ম চালু করেন। মহারানীর এই নীতি ও আদর্শ মহারানীর ঘোষণাপত্র নামে পরিচিত।
- ভারতীয়দের সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না।
- স্বত্ববিলপ নীতি প্রত্যাহার করা হয়।
- দেশীয় রাজারা দত্তক নিতে পারবেন।
- জানানো হয় ভারতের ব্রিটিশ সরকার সাম্রাজ্য বিস্তারে আগ্রহী নয়।
- জাতি-ধর্ম-বর্ণ দেখে না, যোগ্যতা হিসাবে সকল ভারতীয়কে চাকরিতে নিয়োগ করবে সরকার
- দেশীয় রাজ্যের সঙ্গে যা চুক্তি হয়েছে তা সরকার মেনে চলবে। এই নিয়ম গুলো শুধু মাত্র নিয়ম ই ছিলো যা কোনো দিন কার্যকর হয়নি। তাই ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তেই থাকে।
সভাসমিতির যুগ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ:
অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকারের শাসনের অতিষ্ট হয়ে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের মনোভাব জাগরণ হয়। ভারতীয়রা বুঝতে পারে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর হয়ে লড়াই করার জন্য রাজনৈতিক দল ও আন্দোলন করা দরকার। এর পর বিভিন্ন সভা-সমিতি গড়ে উঠলো।
বৈশিষ্ট্য: ভারতে বিভিন্ন সভা-সমিতি গঠিত হয়, তাদের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিলো সেই গুলি হল –
- এই সভা সমিতির মূল উদেশ্য ছিলো ভারতীয়দের স্বার্থ রক্ষা করা, ব্রিটিশ সরকারের কাছে দাবিদাওয়া পেশ করা।
- সমাজের উচ্চ- বিত্ত ও শিক্ষিতরাই এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন।
- এই রাজনৈতিক দলগুলি সাধারণ ও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
- এদের রাজনৈতিক কার্যকলাপ এর গতি ছিল অত্যন্ত মন্থর।
উনিশ শতকে বাংলায় প্রথম রাজনৈতিক দলের সূচনা হয়, তারপর সমগ্র ভারতবর্ষে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তৈরি হয়। ভারত সভা ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়, তার পর এই রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপ বৃদ্ধিপায়।
বিভিন্ন সভা সমিতি:
১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা ‘ নামে প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন স্থাপিত হয়। এর পর জমিদার সভা, হিন্দুমেলা, ভারতসভা ইত্যাদি রাজনৈতিক সংগঠনের পর জাতীয় কংগ্রেস ১৮৮৫ খ্রি. স্থাপিত হয়।
বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা :
- রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর তার অনুগামীদের উদ্যোগে ১৮৩৬ খ্রি. কলকাতায় ‘বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা’ নাম রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়।
- গৌরীশঙ্কর ভট্টাচাৰ্য এর সভাপতি ছিলেন।
- পন্ডিত দুর্গাপ্রসাদ তর্কপঞ্চানন এর সম্পাদক ছিলেন।
- এছাড়াও, কালীনাথ রায়চৌধুরী, দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রমুখ এই দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
এই সভা দেশের মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার না করতে পাড়ার জন্য বিলোপ হয়েযায়।
জমিদার সভা :
- দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রচেষ্টা ‘ জমিদার সভা ‘ নামে রাজনৈতিক দল গড়ে তোলেন ১৮৩৮খ্রি.।
- রাজা রাধাকান্ত দেবে ছিলেন এর সভাপতি।
- প্রসন্ন কুমার ঠাকুর, রামকমল সেন, ভবানীচরণ মিত্র মতো ধনী ব্যাবসায়ী ও জমিদার এই দলের সাথে যুক্ত ছিলেন।
- বেসরকারি ব্যবসা-বাণিজ্য করে এমন ব্রিটিশরাও এই সভাতে যোগদান করতে পারতেন।
জমিদার সভার প্রধান কাজ ছিল
- বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জমিদারের স্বার্থ রক্ষা করা।
- ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রকে জমিদারদের স্বপক্ষে আনা।
- ভারতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা।
- এই সভার আবেদনে সরকার ১০ বিঘা পর্যন্ত খাজনা ছাড় দেন
- এই সভা ছিল ভারতের স্বাধীনতার অগ্রদূত
হিন্দুমেলা (১৮৬৭-১৮৯০খ্রি.):
- নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুমেলা নামে একে রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
- জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন হিন্দুমেলা-র প্রথম সম্পাদক
- নবগোপাল মিত্র ছিলেন সহ-সম্পাদক।
- রাজা কমলকৃষ্ণ বাহাদুর, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রমানাথ ঠাকুর, পিয়ারী চরণ সরকার, রাজনারায়ণ বসু, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কৃষ্টদাস পাল এর মতো অনেক জ্ঞানী গুণী লোকের নাম শোনা যায়।
- হিন্দুমেলা- র উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষিত যুবকদের হিন্দু ধর্মের গৌরব, ঐতিহ্য, দেশীয় ভাষা চৰ্চা করা, জাতীয় প্রতীকগুলিকে সন্মান দেওয়া ইত্যাদি।
তবে হিন্দুমেলা ও ধীরে ধীরে বিলোপ হয়, কারণ
- রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া সাধারণ মানুষের কাছে দেশাত্মবোধ গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল।
- নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বাঙালিরা সমর্থন করেনি।
ভারতসভা (১৮৭৬-১৮৯০ খ্রি.):
- ১৮৭৬ খ্রি. ‘ভারতসভা’ বা ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন‘ গঠন হয় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী এছাড়া অনেকের প্রচেষ্টায়।
- কলকাতার আলবার্ট হলে প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ভারতসভার।
- সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর ‘ এ নেশন ইন মেকিং’ গ্রন্থ থেকে ভারত সভা সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।
ভারতসভা মূলত ভারতীয়দের সার্বিক কল্যাণ ও স্বার্থরক্ষার জন্য তৈরি করা হয়। ভারতসভা শিক্ষিত সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যেমন –
- জনমত তৈরি করা
- ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করা।
- হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখা।
- প্রতিষ্ঠান সর্বস্তরের ভারতীয়দের গন- আন্দোলনে সামিল করা।
From Left: Lala Har Dayal, Dadabhai Naoroji, Shyamji Krishnavarma
এই উদ্দেশ্য সফল করতে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় লখনৌ,মিরাট, লাহোর,সিন্ধু প্রভৃতি অঞ্চল ভারতসভার শাখা গড়ে ওঠে।
ভারত সভা ভারতীয়দের স্বার্থে অনেক কাজ করেন। সরকার ভারতছাড়ো আন্দোলনের চাপে ভারতীয়দের স্বার্থে নতুন আইন প্রণয়ন করেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল,
- সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার সর্বোচ্চ বয়স বৃদ্ধি,
- ইলবার্ট বিল সমর্থন ,
- অস্ত্র আইন,
- দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন,
- প্রজাস্বত্ব আইন,
- মদ্যপান শাসন-পরিষদ গঠন,
- স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন, ইত্যাদি।
১৮৮৩ খ্রি. “সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন” কোলকাতাতে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯০৫ খ্রি. স্বদেশী আন্দোলনের সময় জাতীয় ভান্ডার তৈরি করে এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবোধের বিকাশ : বৈশিষ্ট ও মূল্যায়ন
ব্রিটিশ কোম্পানি তাদের স্বার্থে ভারত তথা বাংলাদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল। যার ফলে ভারতের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে, এরাই পরবর্তীকালে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদের চেতনার প্রসার ঘটায়।
Madam Bhikaji Cama
লেখায় ও আঁকায় জাতীয়তাবোধের প্রভাব বিস্তার করতে সাহায্য করেছে অনেকে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন – মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
- আনন্দমঠ
বাংলা ভাষায় সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একে অবিস্মরনীয় নাম। তিনি বহু দেশাত্মবোধক উপন্যাস রচনা করেছেন, তারমধ্যে ‘আনন্দমঠ’ হল উল্লেখযোগ্য। The Abbey of Bliss নামে এই উপন্যাসটি ইংরাজি অনুবাদ করা হয়।
- আনন্দমঠ উপন্যাসটি বাংলার ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এবং সন্ন্যাসী বিদ্রোহের বর্ণনা দেয়।
- সাথে পরাধীন ভারতের অবস্থা বর্ণনা করে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সবাই একসাথে হয় লড়াইয়ের অহবান জানান।
- দেশাত্মবোধ জাগরণের জন্য এই বই অনেক ভাষাতে অনুবাদ করা হয়।
- ইংরেজ সরকার আনন্দমঠ বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও ১৯৪৭খ্রি. স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সরকার এই নিষেধ তুলে নেন এবং বন্দেমাতরম গানটিকে ভারতের জাতীয় সংগীত হিসাবে ঘোষণা করেন।
- সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৫ খ্রি. “বন্দেমাতরম ” গানটি লেখেন।
- ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয় কংগ্রেস অধিবেশনে এই গানটি পরিবেশন করেন।
- ভিকাজি কামা ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা তৈরি করেন ও তাতে বন্দেমাতরম কথাটি লেখেন।
- ঋষি অরবিন্দ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ‘বন্দেমাতরম’ গানটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।
- সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৫ খ্রি. “বন্দেমাতরম ” গানটি লেখেন।
- ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয় কংগ্রেস অধিবেশনে এই গানটি পরিবেশন করেন।
- ভিকাজি কামা ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা তৈরি করেন ও তাতে বন্দেমাতরম কথাটি লেখেন।
- ঋষি অরবিন্দ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ‘বন্দেমাতরম’ গানটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।
The flag unfurled at Stuttgart
বর্তমান ভারত
ভারতের জাতীয়তাবোধের বিকাশে স্বামী বিবেকানন্দ -এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ‘উদ্বোধন’ পত্রিকায় তার লেখা, ‘ভাববার কথা’, ‘বর্তমান ভারত’, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’, প্রকাশিত হতে থাকে, এরমধ্যে বর্তমান ভারত উল্লেখযোগ্য।
- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান ভারত গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।
- বর্তমান ভারত গ্রন্থে স্বামীজি ভারতের সুন্দর ইতিহাস থাকে অত্যাচারিত ব্রিটিশ শাসনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
- জাতিভেদ প্রথা কিভাবে তৈরি হয়েছিল আর আমরা কিভাবে এটাকে বংশানুক্রমে তৈরী করা হয়েছে তার নিন্দা করেন।
- স্বামীজি দরিদ্র ও অবহেলিত ভারতবাসীদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন
- আমরা ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে কিভাবে নিজেদের উত্থান করতে পারি তার পথ বলেছেন।
- তিনি দেশবাসীকে স্বদেশী প্রেমের আদর্শে চলতে বলেছেন। স্বামীজীর রচনা বিপ্লবীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলো, তার দেখানো পথে অনেকেই অনুসরণ করতো।
ঐতিহাসিক আর. জি. প্রধান- এর মতে স্বামী বিবেকানন্দ হলেন ” ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক “।
গোরা: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে জাতীয়তাবাদ ও স্বদেশপ্রেমের ধারণা মানুষের মধ্যে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান অনস্বীকার্য। তার লেখা বাংলা লেখা বহু দেশাত্মবোধক উপন্যাসের মধ্যে গোরা হল অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।
- এই উপন্যাসে একদিকে জীবনের বাস্তবতা সাথে দেশের জন্য যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করেন।
- উপন্যাসের মাধ্যমে মানুষকে সমস্ত রকমের ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস ও সামাজিক গোঁড়ামির থেকে মুক্ত হওয়ার কথা বলেছেন।
- উপন্যাসের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ নেই এবং সমস্ত ধরনের অত্যাচার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন। সাথে তিনি এও বলেছেন যে ধর্মীয় পরিচয় কোন মানুষের একমাত্র পরিচয় নেয়।
- এই রচনা দেশবাসীকে একে সঙ্গে স্বদেশপ্রেমে আহ্বান করছেন যেতে কোনো বহিরাগত শক্তি ভাঙতে না পারে।
ভারতমাতা ( চিত্র )
শিল্পকলা জাতীয়তাবোধ উত্তলনে ভূমিকা ছিলো। ঠাকুর পরিবারের সদস্য খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী ও সাহিত্যিক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তার আঁকা চিত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘নির্বাসিত যক্ষ’, ‘ভারতমাতা’ , ‘শাহজাহানের মৃত্যু’ ইত্যাদি।
এরমধ্যে ভারতমাতা চিত্র টি উল্লেখযোগ্য ছবি যা ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের প্রসার ঘটায়।
- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশী আন্দোলনের সময় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ভারতমাতা চিত্র টি অঙ্কন করেন।
- এই চিত্রটি তখনকার সময় নবজাগ্রত ভারতীয়দের মনে জাতীয়তাবাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছিল এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলন ছিল ভারত মাতা।
- চিত্রকার এটি হিন্দু দেবী লক্ষীর অনুকরণে চতুর্ভুজা ভারতমাতা চিত্র অঙ্কন করেন। ভারত মাতার হাতে কোন অস্ত্র নেই রয়েছে বেদ, ধানের শীষ, জপের মালা ও শীতবস্ত্র ভারতীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত।
- ভগিনী নিবেদিতা ভারতমাতা চিত্রটির প্রশংসা করেন।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র ঔপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা
জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সদস্য গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার খ্যাতনামা চিত্র ও কার্টুন শিল্পী।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ অরিয়েন্টাল আর্ট’ স্থাপন করেন। তিনি তার চিত্র কলার মাধ্যমে সেই সময়কার সরকারের কাজের সমালোচনা করতেন।
‘অদ্ভুত লোক’ ‘(১৯১৫ খ্রি.), ‘বিরূপ বস্ত্র’ (১৯১৭ খ্রি.), ‘নয়া হুল্লোড়’ (১৯২১ খ্রি.) ইত্যাদি হলো তার উল্লেখযোগ্য কাজ।
- তারার ব্যঙ্গচিত্রের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল অভিজাত শ্রেণী ও ধনী শ্রেণীর ক্রিয়া-কলাপ
- গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ব্যঙ্গ চিত্রের মাধ্যমে তৎকালীন শিক্ষিত বাঙালি সমাজের এক চরিত্র বর্ণনা করতেন যেখানে তারা নিজেদের বাঙালিয়ানাকে বিসর্জন দিয়ে ইউরোপীয়দের সান্নিধ্য পেয়ে একশ্রেণীর বঙ্গীয় সমাজ তৈরি করেছে। এই ধরনের বিষয়বস্তু তার কার্টুনের মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরেছেন।
- ‘খল ব্রাহ্মণ’ চিত্রে তিনি এক ব্রাহ্মণের খল রূপ সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন। যেখানে তিনি ধর্ম ছাড়া মাছ মাংস মদ ও মহিলাতে আসক্ত।
- একটি চিত্রে এক বাঙালি নারী বাংলা শাড়ি এবং ইউরোপের জুতো পড়ে ইউরোপের পুরুষের সাথে নিত্য করছেন
- ১৯১১ খ্রি. মোহন বাগান ক্লাব আইএফএ শিল্ড জয়লাভকে তিনি তার ব্যঙ্গ চিত্রের মাধ্যমে পাঠক শ্রেণীর কাছে প্রকাশ করেছেন।
- এইভাবে ঔপনিবেশিক শাসনের সমালোচনার সাথে স্বদেশ প্রেমের ভাব তার কার্টুনের মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরেছেন।