আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে
- প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
- দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
- তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
- চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি
বাংলায় উনিশ শতকে সময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যে সমাজের ভূমিকা:-
বাঙালি সংবাদ পত্রের সাথে প্রথম পরিচিত হয় 1818 সালে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের মাধ্যমে ।
সেই সময়ের সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ছিল ‘ সমচার দর্পন ‘ এবং মাসিক পত্রিকা ছিল ‘ দিগদর্শন ‘ উভয়ই শ্রীরামপুর ত্রয়ীর মাধ্যমে প্রকাশিত হয় । পরবর্তীতে প্রকাশিত হয় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ‘ সংবাদ প্রভাকর ‘ ।
এছাড়াও ‘ তত্ত্ববোধিনী ‘ , ‘বামাবোধিনী ‘ , ‘ ভারতী’ , ‘ প্রবাসী ‘, প্রভৃতি সাময়িক জীবনযাপন সম্মন্ধিত পত্রিকা এবং ‘ বঙ্গদর্শন ‘ , ‘ গ্রাম বাত্তা প্রকাশিকা ‘ , ‘ হিন্দু প্যাট্রিয়ট ‘ , ‘ বেঙ্গলি ‘ প্রভৃতি ভাবনামূলক পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে ।
সাময়িক পত্রিকা হিসেবে ‘বামাবোধিনী’ : –
‘বামাবোধিনী‘ পত্রিকা ছিল তৎকালীন সমাজের সামাজিক প্রতিফলনের এক উল্লেখযোগ্য অংশ।
1863 সালে উমেশচন্দ্র দত্ত কয়েকজন তরুণ ব্রহ্মকে নিয়ে ‘বামাবোধিনী সভা ‘ গঠন করেন যার মূল লক্ষ্য ছিল সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করা, নারীদের শিক্ষার প্রসার ঘটানো, যোগ্য মর্যাদা স্থাপন করা ।
এই সময়েই উমেশচন্দ্র দত্ত ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা প্রকাশনা করেন ।
এই পত্রিকায় স্ত্রীশিক্ষাকে সমর্থন করে এবং বাল্যবিবাহ বহুবিবাহ এর বিরোধিতা
করে নারী কল্যাণের বহু দিক তুলে ধরা হয় । বিভিন্ন মহিলা লেখিকা যেমন –
স্বর্ণপ্রভা বসু, লাবন্যপ্রভা বসু এই পত্রিকায় ছদ্মনামে লিখতেন । পরে অবশ্য তারা আত্মপ্রকাশ করেন।
সূচনাকাল থেকে শুরু করে দীর্ঘ ষাট বছর ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা দেশীয় নারীদের সকল পরিস্থিতি প্রতিস্থাপিত করেছিল যার ফলস্বরূপ এটি একটি ঐতিহাসিক উপাদানে রূপান্তরিত হয়েছে ।
সংবাদপত্র হিসেবে ‘ হিন্দু প্যাট্রিয়ট ‘ : –
1853 খ্রিস্টাব্দের 6 জানুয়ারি গিরিশচন্দ্র ঘোষ – এর সম্পাদনায় তৎকালীন সমাজের এক উল্লেখযোগ্য সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ হিন্দু প্যাট্রিয়ট ‘ প্রকাশিত হয় । পরে 1892 সালে এটি দৈনিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হতে শুরু করে ।
পরবর্তী সময়ে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় পত্রিকাটি আরো জনপ্রিয় হতে শুরু করে এবং তিনি পত্রিকার বিষয়বস্তু অনেক বেশি সামাজিক করে তোলেন ।
তিনি বাংলার সামাজিক শোষণ, নীলকর সাহেবদের অত্যাচার, বহুবিবাহ, মদ আমদানি প্রভৃতির বিরুদ্ধে তীব্র হুংকার তোলেন এছাড়াও সাম্রাজ্যবাদী শাসক লর্ড ডালহৌসির নগ্ন সাম্রাজ্য বিস্তারের নীতির সম্পর্কেও আলোচনা করেন ।
হরিশচন্দ্র তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে ঈশ্বরচন্দ্র প্রবর্তিত বিধবাবিবাহ সম্পর্কে নানান মতামত ব্যক্ত করেন । নারীশিক্ষার প্রসারের কথা তুলে ধরেন এবং পতিতা সমস্যার কথাও বলেন ।
এছাড়াও ‘ হিন্দু প্যাট্রিয়ট ‘ পত্রিকায় সমকালীন সাঁওতাল বিদ্রোহ, নীলকর সাহেবদের সীমাহীন শোষণের বহু বিষয় সম্পর্কে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ।
সারা বাংলায় সংবাদদাতা নিয়োগের মাধ্যমে নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে বিবরণ সংগ্রহ করেন যা ‘ নীল জেলা ‘ নামক নতুন বিভাগে প্রকাশিত হতে শুরু করে । 1860 সালে নীল কমিশন গঠন ‘ হিন্দু প্যাট্রিয়ট ‘ পত্রিকা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
হরিশচন্দ্র মহাশয়ের পর কৃষ্ণদাস পাল 1862 সালে এই পত্রিকার সম্পাদনা শুরু করেন । এরপর 1892 খ্রিস্টাব্দে এটি দৈনিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হতে শুরু করে ।
সংবাদপত্র হিসেবে ‘গ্রামবার্ত্তা পত্রিকা’ : –
‘গ্রামবার্ত্তা পত্রিকা’ উনিশ শতকের গ্রামীণ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল । 1863 সালে হরিনাথ মজুমদার এটি সম্পাদিত করেন। গ্রামবার্ত্তা প্রথমে মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হলেও
পরবর্তী সময়ে যথাক্রমে পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয় ।
ব্রিটিশ সরকারের শাসন, মহাজনদের অত্যাচার এর বিরুদ্ধে এই পত্রিকা তীব্র আওয়াজ তোলে এমনকি হরিনাথ মজুমদা নীলকুঠিতে কাজ করার সময় নীলকর সাহেবদের যে অত্যাচার দেখেছিলেন তাও প্রকাশ করেছিলেন।
পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েও যে কোনো সুরাহা হতো না বরং অভিযোগকারী নির্যাতিত হতেন।
এইরকম সামাজিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে কাঙাল হরিনাথ বাংলার মানুষকে সচেতন করতে ‘গ্রামবাত্তা পত্রিকা’ প্রকাশিত করেন ।
জমিদার, জোতদার দের কথা পত্রিকায় লেখার ফলে তাদের রোষের শিকারও হতে হয় তাকে । লালন ফকির তাকে জমিদার দের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিলেন ।
শোষণ ও অত্যাচারের পাশাপাশি এই পত্রিকায় সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ও লালন ফকিরের গান এবং নারীশিক্ষার বিষয়ও প্রকাশিত হয়। শেষের দিকে অর্থের অভাবে পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায় ।
‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ :-
উনিশ শতকে সমাজসেবক কালী প্রসন্ন সিংহ কর্তৃক প্রকাশিত ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ ছিল তৎকালীন সমাজের একটু বিদ্রূপাত্মক সামাজিক নকশা । মাত্র 30 বছর বয়সে 1861 খ্রিস্টাব্দে হুতোম প্যাঁচা ছদ্মনামে তিনি গ্রন্থটি প্রকাশ করেন ।
গ্রন্থটির প্রথমাংশে কলকাতার চড়কপার্বন , বারোয়ারি পূজা, ছেলেধরা, ক্রিশ্চানি হুজুগ, সাতপেয়ে গরু ইত্যাদি । সমাজের বিভিন্ন অংশে চলা ভন্ডামীর তিনি
তীব্র নিন্দা করেছিলেন । পাশ্চাত্য ভাবে শিক্ষিত হওয়া কলকাতার ধনী নব্য – বাবুসমাজের প্রতি তিনি তীব্র নিন্দা করতেন। সমাজের ব্যক্তিবর্গকে তিনি তিন ভাগে বিভক্ত করেছিলেন । যারা হলেন – ইংরেজি জানা পাশ্চাত্য অনুকরণকরী, ইংরেজি জানা অথচ সাহেবি অনুকরণকরী নয়, নব্য সমাজ এবং ইংরেজি না গোরা হিন্দুসমাজ ।
সমাজের সকল প্রকিতির মানুষের কথা লেখক রচনাটিতে ব্যক্ত করেছেন। তৎকালীন সমাজের এই গ্রন্থটি ছিল ব্যঙ্গাত্মক সাহিত্যের নিদারুণ উদাহরণ ।
নীলদর্পণ নাটক :-
দীনবন্ধু মিত্র ১৮৬০সালে ‘নীলদর্পণ’ রচনা করেন। ঢাকা থেকে নাটকটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি হয়, নীলকর সাহেবদের অত্যাচার জনমানসে শিহরণ সৃষ্টি করে।
উনিশ শতকে ইংরেজ সহ বিভিন্ন ইউরোপীয় ব্যবসায়ী বাংলার চাষিদের নীলচাষে বাধ্য করে। খাদ্যশস্য উৎপাদন বন্ধ হলে চাষিরা আর্থিকভাবে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফলে ১৮৫৮ সালে অত্যাচারিত নীলচাষিরা নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে ‘নীলবিদ্রোহ’ ঘোষণা করে ।
এই নাটক বাঙালির মনে দেশাত্বাবোধ ও জাতীয়তাবাদী মনোভাবের সৃষ্টি করে ।
ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় নাটকটি অনুবাদিত হলে বাংলার নীল চাষিদের দুর্দশার কথা সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পরে ।
১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল থিয়েটার বা জাতীয় নাট্যশালার প্রথম নাটক ছিল ‘নীলদর্পণ’। উনিশ শতকে সামাজিক পরিস্থিতিতে সংবাদ পত্রের ভুমিকা ছিল অনস্বীকার্য । তবে তার প্রভাব শহরতলীতেই বেশি ছিল।
বাংলায় উনিশ শতকে শিক্ষা সংস্কার :-
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে ভারতে শিক্ষাব্যবস্থা ছিল খুবই সঙ্কীর্ণ । হিন্দুদের টোল ও পাঠশালা এবং মুসলিমদের জন্য মাদ্রাসাগুলি ছিল শিক্ষাদানের প্রধান কেন্দ্র। তবে জ্ঞানবিজ্ঞান বিষয়ে কোন চর্চা প্রতিষ্ঠানে হত না বরং ধর্মীয় কাহিনি, আরবি, ফারসি, সংস্কৃত প্রভৃতি দেশীয় শিক্ষা দেওয়া হত।
তাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মনে করত যে—
- ভারতীয়দের শিক্ষার অগ্রগতির জন্য ব্রিটিশদের অর্থসম্পদ ব্যয়ের কোনো প্রয়োজন নেই,
- ভারতীয়দের ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করলে তারা সরকারের বিরধিতা করতে পারে ,
- ভারতীয়রা আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা পেলে ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে স্বাধীনতাবোধ জেগে উঠবে।
এই মানসিকতার ফলে ইংরেজ কোম্পানি সংস্কৃত এবং আরবি-ফারসি শিক্ষাকেই গুরুত্ব দিয়েরাজ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যেমন –
- ওয়ারেন হেস্টিংসের উদ্যোগে কলকাতা মাদ্রাসা (১৭৮১ খ্রি.),
- উইলিয়াম জোনস এর উদ্যোগে এশিয়াটিক সোসাইটি (১৭৮৪ খ্রি.),
- লর্ড ওয়েলেসলি উদ্যোগে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ (১৮০০ খ্রি.) প্রভৃতি প্রাচ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় ।
পাশ্চাত্যবাদী বনাম প্রাচ্যবাদী বিতর্ক :-
ঔপনিবেশিক শাসন কালীন সময়ে 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন অনুযায়ী কোম্পানি ভারতীয় শিক্ষাখাতে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যায় করার এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এই টাকা কোন খাতে ব্যয় হবে তাই নিয়ে প্রাচ্য পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের শুরু হয়।
ইংরেজি ভাষা কে হাতিয়ার বানাতে চেয়েছিলেন মেকলে, রাজা রামমোহন রায়, আলেকজান্ডার ডাফ প্রমুখ । তাদের মতে শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত ছিল ইংরেজি, বিষয় হওয়া উচিত পাশ্চাত্যের জ্ঞান – বিজ্ঞান ।এভাবে এদেশে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য কোন ধরনের শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত সেবিষয়ে একটি দ্বন্দ্ব শুরু হয় যা পাশ্চাত্যবাদী বনাম প্রাচ্যবাদী বিতর্ক’ নামে পরিচিত।
টমাস ব্যাবিংটন মেকলের ভুমিকা :-
লর্ড বেন্টিঙ্কের আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ‘জনশিক্ষা কমিটি’র সভাপতি নিযুক্ত হওয়ার পর ভারতে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে প্রাচ্যবাদী বা ওরিয়েন্টালিস্ট (এইচ. টি. প্রিন্সেপ, কোলব্রুক, ) এবং পাশ্চাত্যবাদী বা অ্যাংলিসিস্ট (টমাস ব্যাবিংটন মেকলে, আলেকজান্ডার ডাফ, সন্ডার্স, কল্ভিন প্রমুখ) নামে দুটি দল তৈরি হয় ।
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে পাশ্চাত্যশিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে লর্ড বেন্টিঙ্কের কাছে একটি প্রস্তাব দেন যা ‘মেকলে মিনিটস’ নামে পরিচিত। প্রস্তাবে মেকলে বলেন যে –
- প্রাচ্যের শিক্ষা বৈজ্ঞানিক চেতনাহীন এবং পাশ্চাত্যের তুলনায় সম্পূর্ণ নিকৃষ্ট
- এই দেশের পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হওয়া দরকার কারণ রাজ্যের সভ্যতা দুর্নীতিগ্রস্ত ও অপবিত্র।
- তার ধারণা ছিল ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটলে এদেশে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত দের মধ্যে চুইয়ে পড়া নীতি অনুসারে দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে মেকলে প্রস্তাবের সুপারিশ মেনে লর্ড বেন্টিঙ্ক এদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারকে সরকারের শিক্ষানীতি হিসেবে ঘোষণা করেন।
পরবর্তী বিষয় ইংরেজি শিক্ষার প্রসার :-
উনিশ শতকে শুরুতেই ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে ব্রিটিশ বাণিজ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত প্রভৃতির যথেষ্ট প্রসার ঘটলে এসব প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষা জানা কর্মচারীর প্রয়োজন দেখা দেয়।
এর ফলে চাকরি পাবার আশায় মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীদের ইংরেজি শেখার প্রতি আগ্রহ দেখা গেলে কিছু খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারক সংস্থার উদ্যোগে বিভিন্ন শহরে বেশ কয়েকটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
ব্যাপটিস্ট মিশনের উইলিয়াম কেরি, মার্শম্যান, ওয়ার্ড প্রমুখের উদ্যোগে ১২৬টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর কলেজ,
- ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন’
- জেসুইট মিশনারি কলকাতায় ‘সেন্ট জেভিয়ার্স’(১৮৩৫) এবং ‘লরেটো স্কুল’ (১৮৪২) প্রতিষ্ঠা করেন।
অন্যদিকে বাংলায় ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের জন্য রামমোহন রায়, রাধাকান্ত দেব, ডেভিড হেয়ার, দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রমুখ অগ্রণী হয়. তাদের উদ্যোগে বিভিন্ন স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় যেমন –
রামমোহন রায়ের নেতৃত্বে –
- ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ
- ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজ
- ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে অ্যাংলো হিন্দু স্কুল
ডেভিড হেয়ারের নেতৃত্বে পটলডাঙ্গা একাডেমি (১৮১৮) যার বর্তমান নাম হেয়ার স্কুল
ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য বিভিন্ন স্থানে ক্যালকাটা বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় আবার ইংরেজি ভাষায় পুস্তক রচনা জন্য ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি গড়ে ওঠে।
১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে বোর্ড অফ কন্ট্রোল এর সভাপতি স্যার চার্লস উড শিক্ষা বিষয়ক একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন যা উডের ডেসপ্যাচ বা উডের নির্দেশনামা নামে পরিচিত এটিকে মহাসনদ বলা হয়ে থাকে। এই নির্দেশ নামা উদ্দেশ্য ছিল-
- কলকাতা, মুম্বাই, মাদ্রাজ – এ একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
- স্ত্রী শিক্ষার প্রসার
- উচ্চশিক্ষায় ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব
- একটি আলাদাভাবে শিক্ষা দপ্তর গঠন
- শিক্ষক শিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা
নারী শিক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্রের ভূমিকা :-
নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন খ্রিস্টান মিশনারীরা।
- ১৮১১খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরের খ্রিস্টান মিশনারি উইলিয়াম কেরি ও মার্শম্যানের উদ্যোগে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়.
- ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন মিশনারি সোসাইটি রবার্ট মেয়ে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন
- ব্যাপ্টিস্ট মিশন কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি (১৮১৯)
- ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিস্থিত হয় ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল (১৮২৮)
এছাড়া কলকাতা বুক সোসাইটি (১৮১৭) , লেডিজ সোসাইটি ফর নেটিভ ফিমেল এডুকেশন (১৮২৪) প্রকৃতি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়.
উনিশ শতকের সামাজিক সংস্কারক হিসেবে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় । নারীমুক্তির উদ্দেশ্যে এবং সামাজিক অসহায়তার বিরুদ্ধে তিনি মুখর প্রতিবাদী ছিলেন। বাস্তববাদী সংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন অন্যতম দৃষ্টান্ত।
- ভারতের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় ‘ হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়’ (১৮৪৯) প্রতিষ্ঠা করেন ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ড্রিংক ওয়াটার বিটন। যেটি বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত।
- গ্রামাঞ্চলে নারীদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জেলায় স্ত্রী শিক্ষা বিধায়নি সম্মিলনী প্রতিষ্ঠা করেন.
- ১৮৫৮খ্রিস্টাব্দে মে মাসের মধ্যে তিনি ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
- ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায়২৮৮ টি
- ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন যা বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত।
- বীরসিংহ গ্রামে ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
বাংলায় নারী শিক্ষার প্রসার ঘটলে বেশ কয়েকজন কৃতি নারির উদ্ভব হয় যেমন – কাদম্বিনী গাঙ্গুলি, প্রথম মহিলা স্নাতক ও চিকিৎসক ।
পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাজা রামমোহণ রায় ও রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা :-
রাজা রাম মোহন রায় :- ঊনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে যেসকল বাঙালি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রাজা রামমোহন রায় ও রাজা রাধাকান্ড দেব । রাজা রামমোহন রায় মনে করতেন যে, পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে ভারতীয়দের সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার দূর হবে না।
পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের জন্য তিনি ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘অ্যাংলো হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের মাধ্যমে কোম্পানি ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
রামমোহন আধুনিক বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের জন্য ব্যয়ের দাবি জানান এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের কাজে তিনি ডেভিড হেয়ার, আলেকজান্ডার ডাফ প্রমুখকে নানাভাবে সহায়তা করেন।
তিনি বিভিন্ন ইংরেজি সাহিত্য ও পাশ্চাত্য বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ বাংলা ভাষায় অনুবাদের জন্য হিন্দু কলেজের ছাত্রদের উৎসাহিত করেন। ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে একটি বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন শিক্ষার্থীদের মন থেকে সামাজিক কুসংস্কার মূর্তিপূজা সংস্কার দূর করার জন্য।
রাজা রাধাকান্ত দেব :- হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাধাকান্ত দেব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি এই কলেজে পরিচালক মন্ডলীর মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি এবং স্কুল বুক সোসাইটি সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক নামে ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন. পাশ্চাত্য বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করার জন্য তিনি হিন্দু কলেজের ছাত্রদের উৎসাহিত করতেন।
ডেভিড হেয়ার :-
ঊনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে ইউরোপের যেসকল ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন ডেভিড হেয়ার অগ্রগণ্য। ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভারতে এসে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভারতীয়দের কল্যাণের উদ্দেশ্যে এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে যিনি প্রয়াসী হয়েছিলেন তিনি হলেন ডেভিড হেয়ার । মানবজাতির কল্যাণে এই দেশে কাজ করার জন্যে তিনি আর নিজের দেশে ফেরেন নি ।
এই অর্থ তিনি এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের কাজে ব্যয় করার আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর প্রবল উদ্যোগে-
- ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ১৮১৭ সালে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনার উদ্দেশ্যে তিনি স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
- ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘পটলডাঙ্গা একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমান নাম‘হেয়ার স্কুল’ ।
কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদেও হেয়ারের সমর্থন ছিল। কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশীয় চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষাদানের জন্য সরকার অর্থব্যয় বন্ধ করে দেয়। ফলে পাশ্চাত্যের আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা এদেশে দ্রুত প্রসার লাভ করে। এই কলেজ বাংলা তথা ভারতের চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতির ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইতিহাস :-
লর্ড বেন্টিঙ্ক ভারতে চিকিৎসাবিদ্যা পঠনপাঠন উন্নত করতে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে একটি কমিটি নিয়োগ করেন। এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় ইউরোপীয় চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে কলকাতায় ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ‘মেডিকেল কলেজ, নামে একটি আধুনিক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় যা সাধারণভাবে ‘কলকাতা মেডিকেল কলেজ’ নামে রিচিত।প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হন মন্টফোর্ড ব্রামলি।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশীয় চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষাদানের জন্য সরকার অর্থব্যয় বন্ধ করে দেয়। ফলে পাশ্চাত্যের আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা এদেশে দ্রুত প্রসার লাভ করে।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ হল এশিয়ার দ্বিতীয় কলেজ যেখানে ইউরোপীয় চিকিৎসাবিদ্যা শেখানো হত। এই কলেজ বাংলা তথা ভারতের চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতির ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করে।
এখান থেকে পাস করা উমেশচন্দ্র শেঠ, রাজকৃষ দে, দ্বারকানাথ গুপ্ত প্রমুখ ডাক্তার ঢাকা, চট্টগ্রাম, মুরশিদাবাদ, পাটনা প্রভৃতি স্থানে হাসপাতালের কাজে নিযুক্ত হন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস :- লর্ড ক্যানিং এর শাসনকালে স্যার চার্লস উড-এর নির্দেশে ১৮৫৭ সালে ‘ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ অনুসারে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য৷ এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাশ্চাত্য ধাঁচের বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেলে তৈরি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য ছিলেন লর্ড ক্যানিং এবং প্রথম উপাচার্য ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার জেমস্ উইলিয়াম কোলভিল ।
১৯০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে এটি দেশের বৃহত্তম গবেষণা শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হয়। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় উপাচার্য থাকার সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাতি দিকে দিকে ছড়িয়ে পরে । বাংলা তথা ভারতে আধুনিক শিক্ষার প্রসারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা বিশেষে গুরুত্বপূর্ণ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে যদুনাথ বোস ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম স্নাতক হন। ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক চন্দ্রমুখী বসু ও কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় এখানকার ছাত্রী ছিলেন।
উনিশ শতকের বাংলায় সমাজসংস্কার :-
পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের আগে উনিশ শতকের দিকে বাংলার সমাজজীবন ছিল খুবই সঙ্কীর্ণ ।নানা ধরনের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, গোঁড়ামি, ইত্যাদির পাশাপাশি সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, দেবদাসীপ্রথা, জাতিভেদপ্রথা, অস্পৃশ্যতা প্রভৃতি সমাজের ভীতকে জুড়ে বসেছিল ।এই সময় শিক্ষিত নব্য গোষ্ঠীর উদ্যোগে বাংলার সামাজিক কুপ্রথাগুলির বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়।
সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে ব্রাহ্মসমাজ :-
সমাজ সংস্কারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল ব্রাহ্মসমাজ। এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ।
১৮২৮ সালে রাজা রাম মোহন রায় ব্রাহ্মসভা গঠন করেন । ১৮৩০ সালে এর নতুন নাম হয় ‘ব্রাহ্মসমাজ’। রামমোহনের নেতৃত্বে ব্রাহ্মসমাজ একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠা,পৌত্তলিকতার অবসান, সর্বধর্ম সমন্বয়সাধন, মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে এক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলে এজন্য তাঁকে ঐতিহাসিক স্পিয়ার ‘আধুনিক ভারতের স্রষ্টা’ বলা হয় ।
সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম জোরালো প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি লোকশিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে তুলে সতীদাহ প্রথার অবসান ঘটাতে চাইছিলেন। রাজা রামমোহন রায় এর উদ্যোগে লর্ড উইলিয়াম বেন্তিঙ্ক ১৮২৯ সালে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সতীদাহ নিষিদ্ধ করেন ।
রামমোহন রায়ের পরবর্তী সময়ে ব্রামহসমাজের হাল ধরেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । তাঁর প্রচেষ্টায় ১৮৩৯ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী’ সভা গড়ে ওঠে. ১৮৪৩ সালে এই সভা থেকেই প্রকাশিত হয় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা যার প্রথম সম্পাদক ছিলেন অক্ষয় কুমার দত্ত ।
এই পত্রিকাটির উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, বহু বহুবিবাহ, জাতিভেদ প্রথা প্রকৃতির দূরীকরণ এবং বিধবা বিবাহ, নারী শিক্ষা, অসবর্ণ বিবাহ প্রভৃতি প্রয়োগ ঘটানো।
সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস :-
উনবিংশ শতকে শুরুতে একটি মধ্যযুগীয় নিষ্ঠুর বর্বরতা প্রচলিত ছিল যেটি সতীদাহ প্রথা নামে পরিচিত। সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে একটি বাংলা পত্রিকা প্রকাশ করেন যার উদ্দেশ্য ছিল লক্ষ্য শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষকে সচেতন করে তোলা।
তিনি সংবাদ কৌমুদী পত্রিকায় নিয়মিত প্রবন্ধ প্রকাশ করেন এবং হিন্দু শাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন যে সতীদাহ প্রথা হিন্দুধর্ম ও শাস্ত্রবিরোধী।
শেষ পর্যন্ত উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক কর্তৃক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে 17 নম্বর রেগুলেশন আইন পাশ করলে এই আইনের দ্বারা সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয়।
ভারতের ইতিহাসে নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর অবদান :-
হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর উদ্যোগে পাশ্চাত্য ভাবধারা, যুক্তিবাদ ও সততার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে তিনি এবং তরুণ ছাত্রদল নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী রূপে আত্মপ্রকাশ করেন ।
- হিন্দুসমাজ , খ্রিষ্টধর্ম ও পাশ্চাত্য প্রভাব থেকে সনাতন হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করা এবং হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামি, কুপ্রথার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করাই ছিলো নব্যবঙ্গ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ।
- হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামি, কুপ্রথার বিরোধিতা করাই ছিলো নব্যবঙ্গীও গোষ্ঠীর মূল কাজ ।
- 1828 সালে ‘ অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন ‘ নামে এক বিতর্ক সভা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ডিরোজিওর ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ছাত্ররা সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করতে উদ্যোগী হয় ।
- তারা বহুবিবাহ, নারীশিক্ষা , সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়ে পার্থেনন ও ক্যালাইডোস্কপ নামক পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন ।
- ডিরোজিওর অনুগামীদের মধ্যে প্রধান ছিলেন কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায়, রাধানাথ শিকদার, রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ।
পরবর্তী সময়ে নব্যবঙ্গীয় গোষ্ঠীর সমালোচনা হয়েছিলো । ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী নব্যবঙ্গীয়দের নকল গোষ্ঠী বলেছিলেন । ডিরোজিওর মৃত্যুর পরবর্তীকালে তার অনুগামীদের উদ্যোগে প্রভৃতি পত্রিকা প্রকাশিত হয় –
- জ্ঞানান্বেষণ’,
- এনকোয়েরার’,
- বেঙ্গল স্পেক্টেটর’,
- হিন্দু পাইওনিয়ার‘
বিধবাবিবাহ আন্দোলনের ইতিহাস :-
হিন্দুসমাজে বাল্যবিবাহের মতো কুপ্রথা প্রচলিত থাকায় অসংখ্য নারীকে অল্প বয়সেই বিধবা হতে হত। সমাজে বিধবা নারীরা সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে বাস করতে বাধ্য হত।
উনিশ শতকের মধ্যভাগে ভারতের বিভিন্ন সমাজসংস্কারক সমাজে বিধবাবিবাহ প্রচলনের উদ্দেশ্যে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ‘তত্ত্ববোধিনী’, ‘সংবাদ প্রভাকর’ সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিধবাবিবাহের সপক্ষে প্রচার চালানো হয়।
বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিধবাবিবাহের সমর্থনে জনমত গঠন করতে থাকেন।
- সমকালীন সমাজে বিধবা নারীদের দ্বিতীয়বার বিবাহের কোনো অনুমতি ছিল না । বিধবাবিবাহের সমর্থনে তিনি শক্তিশালী জনমত গঠন করেছিলেন।
- লর্ড ডালহৌসি 15 নং রেগুলেশন আইনের দ্বারা বিধবাবিবাহ আইন পাশ করেন । এরপর 1856 সালে 26 শে জুলাই বড়লাট লর্ড ক্যানিং আইনি স্বীকৃতি দেন।
- 1856 সালের 7 ডিসেম্বর প্রথম বিধবা বিবাহ প্রচলিত হয় । তিনি ‘বিধবা-বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এবিষয়ে তিনি ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য়ও প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
উনিশ শতকের বাংলায় ধর্মসংস্কার :-
আঠারো শতকের শেষদিকেও বাংলার ধর্মীয় জীবনে নানা কুসংস্কারের অস্তিত্ব ছিল। যেমন— গঙ্গায় সন্তান বিসর্জন, সতীদাহ প্রথা, অস্পৃশ্যতা প্রভৃতি। এই অবস্থায় উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ব্রাহ্ম আন্দোলন, শ্রীরামকৃষ্ণের ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ এর আদর্শ এবং স্বামী বিবেকানন্দের ‘নব্য বেদান্ত’-এর আদর্শ বাংলার ধর্মীয় সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
কেশবচন্দ্র সেন :-
1858 খ্রিস্টাব্দে কেশব চন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজ এর যোগদান করেন। তিনি ব্রহ্মানন্দ উপাধি পান এবং ব্রাহ্মসমাজের আজাদ আচার্য হিসেবে নিয়োজিত হন। কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে জাতিভেদ প্রথা, পর্দা প্রথা, অস্পৃশ্যতা প্রকৃতির বিরুদ্ধে, এবং বিধবা বিবাহ,স্ত্রী শিক্ষা, অসবর্ণ বিবাহ প্রকৃতির প্রসারে ব্যাপক প্রচার চালান। মানবতাবাদ একেশ্বরবাদ সর্বধর্ম সমন্বয় প্রকৃতির আদর্শ পুলিশ প্রচারে ব্রাহ্মসমাজ সক্রিয় উদ্যোগ নেয়। শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী তিনি নৈশ বিদ্যালয় এবং মহিলাদের জন্য ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
রামকৃষ্ম ও বিবেকানন্দের ভূমিকা :-
রামকৃষ্মের ‘সর্বধর্মসমন্বয়’-এর আদর্শ ঊনিশ শতকে খ্রিস্টান মিশনারি, ব্রাহ্মসমাজ ও নব্যবঙ্গের সদস্যরা হিন্দুধর্মের কুসংস্কারগুলিকে ক্রমাগত আক্রমণ করতে থাকলে ভারতের সনাতনধর্মের অগ্রগতি প্রায় দিশাহারা হয়ে পড়ে। এই সময়ে যুগপুরুষরূপে জন্মগ্রহণ করেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস ।তিনি সহজসরল ভাষা ও উপমার সাহায্যে ধর্মীয় মতাদর্শ প্রচার করেন তা শিক্ষিত-অশিক্ষিত বাঙালি সমাজকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, সকল ধর্মই সত্য । তাঁরই কথায়, “সব ধর্মের লোকেরা একই ঈশ্বরকে ডাকছে।
রামকৃষ্মের প্রচারের ফলে বাংলায় জাতিভেদের কঠোরতা শিথিল হয় এবং ধর্মীয় সমন্বয়ের আদর্শ শক্তিশালী হয়। যত মত তত পথ এই আদর্শের দ্বারা তিনি সব ধরনের সাধনার মধ্য দিয়েই ঈশ্বর লাভ সম্ভব। তিনি বলেন ঈশ্বরকে পাওয়ার জন্য কোন মূর্তি পূজা, শাস্ত্র চর্চা, যাগ-যজ্ঞ, আচার-অনুষ্ঠান এগুলোর প্রয়োজন হয় না তার জন্য প্রয়োজন কেবল আন্তরিক ভক্তির।
নব্য বেদান্তবাদ
নব্য বেদান্তবাদ :- বিবেকানন্দের ধর্ম চিন্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল নব্য বেদান্তবাদ। তিনি মনে করতেন জীবজগতে সবস্থানেই ব্রহ্মের উপস্থিতি, তাই মানব সেবার মধ্য দিয়েই ব্রহ্ম সেবা সম্ভব। এই কারণেই তিনি বলছিলেন জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।
প্রাচীন অদ্বৈতবাদে বলা আছে যে ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা অর্থাৎ ব্রহ্ম ছাড়া জগতে আর কিছুই নেই । সাধারণ মানুষের সেবা করাই হল ব্রহ্মের সেবা। বিবেকানন্দের মতে শ্রেণীবিভক্ত বিশ্বসমাজে প্রতিটি শ্রেণীর উপযুক্ত সাধন পথ আছে এবং তার মাধ্যমেই নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে জীবনকে অতিবাহিত করতে হবে । তার এই ব্যাখ্যা নব্য বেদান্তবাদ নামে পরিচিততবে আধুনিক সময়ে কার্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ধর্মীয় সমন্বয়ের লালন ফকিরের ভূমিকা :-
উনিশ শতকে ধর্মীয় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে যেসকল ব্যক্তিরা উদ্যোগ নিয়েছিলেন লালন ফকির ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম । প্রায় দু’হাজার গান রচনার মধ্য দিয়ে লালন ধর্ম সমন্বয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন যা মানবজীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং হৃদয়স্পর্শী ।
বর্তমান বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার হরিশচন্দ্র পুরে লালনের জন্ম হয়েছিলো সাল 1774 । তাঁর পিতা ছিলেন মধবরাও ও মাতা ছিলেন পদ্মাবতী দেবী ।- শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন সঙ্গীতপ্রিয় । অনেক অল্প বয়সেই লালন সিরাজ সাইয়ের কাছে বাউল গানের দীক্ষা নেন এবং বাউল আখড়া তৈরি করে শিষ্য সহ বসবাস করতে শুরু করেন ।
লালন ফকিরের মতে মানুষের কোনো জাতি, ধর্ম, লিঙ্গভেদ নেই, তাঁর বিশ্বাস ছিল সকল মানুষের মধ্যে বাস করে এক মনের মানুষ । তিনি জাতিভেদ মানতেন না তাই তাঁর গানগুলোতে মানবতাবাদী ভাব স্পষ্ট ।
সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে লালন বলে জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে। গানের ভাষায় লালন ফকির মানুষের মনে সর্বধর্ম সমন্বয় কে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে ১১৬ বছর বয়সে লালনের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর হিন্দু বা মুসলিম কোনো ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করা হয়নি ।
বাংলার নবজাগরন :-
উনিশ শতকে বাংলার ধর্ম, সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে এবং সাংস্কৃতিক ভাবজগতে বৌদ্ধিক আন্দোলন শুরু হয় যাকে ঐতিহাসিকরা ইতালির নবজাগরণের সাথে তুলনা করে ‘ Bengal Renaissance ‘ বা বঙ্গীয় নবজাগরণ বলেছেন ।
নবজাগরণ : সমকালীন বাংলা ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক । এই সময় বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা, দর্শন, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ প্রভৃতি বিষয়ে অগ্রগতি ঘটে, একেই নবজাগরণ বলা হয় ।
নবজাগরণে হিন্দুত্ববাদীদের আধিক্য থাকায় তাকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে গণ্য করা যায় না । নবজাগরণ ছিল কলকাতা নির্ভর ফলে বাংলার সর্বত্র অঞ্চলে এর প্রভাব দেখা যায়নি । নবজাগরণে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ সামাজিক সংস্কার কে গুরুত্ব দিলেও দেশ স্বাধীনের প্রতি তাদের কোনো ঝোঁক ছিল ।
হিন্দু সমাজের পৃষঠপোষকতায় মুসলিমরা ছিল অবহেলিত তাই নবজাগরণের সাথে তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি। নবজাগরণবাদ সামাজিক ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন আনতে পারে নি । তাদের মূল দিক শিক্ষা হওয়ার ফলে সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস, জাতিভেদ প্রথা প্রভৃতি একইরকম ছিল, কোনো পরিবর্তন আসে নি ।
উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের দুটি প্রধান ধারা ছিল প্রাচ্য-পুনরুজ্জীবনবাদী ধারা এবং পাশ্চাত্য যুক্তিবাদী ধারা। এ দুটি ধারার পাশাপাশি একটি সমন্বয়বাদী ধারাও এসময় লক্ষ করা যায়।
- প্রথমত, প্রাচ্য পুনরুজ্জীবনবাদী ধারার জাগরণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সনাতনপন্থী প্রগতিশীল মানসিকতার ব্যক্তিরা। এঁদের মধ্যে বিখ্যাত হলেন রাধাকান্ত দেব, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁদের লক্ষ্য ছিল প্রাচ্যের সুপ্রাচীন গৌরবময় ঐতিহ্যের যথার্থ পুনরুজ্জীবন ঘটানো।
- দ্বিতীয়ত, পাশ্চাত্য যুক্তিবাদী ধারার মুখপাত্র ছিল নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী। তাদের লক্ষ্য ছিল—প্রাচ্যের পশ্চাৎপদ সভ্যতা-সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণ বর্জন করে পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করা।
- তৃতীয়ত, উক্ত দুটি ধারার মধ্যবর্তী স্তরের সমন্বয়বাদী ধারার নেতৃত্বে ছিলেন রামমোহন রায় বিদ্যাসাগর প্রমুখ।
SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
1 MARKS QUESTIONS of সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
১. ‘ গোরা ‘ উপন্যাসের রচয়িতা কে ?
উত্তর – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
২. ‘ গ্রামবাত্তা প্রকাশিকা ‘ পত্রিকা কর সম্পাদনা করেন ?
উত্তর – হরিনাথ মজুমদার ( কাঙাল হরিনাথ ) ।
৩. কাদের ‘ শ্রীরামপুর ত্রয়ী ‘ বলা হয় ?
উত্তর – উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং মার্শম্যানকে একসাথে ‘ শ্রীরামপুর ত্রয়ী ‘ বলা হয়।
৪. কে ‘ সতীদাহ ‘ নিবারণ আইন পাশ করেন ?
উত্তর – লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক ।
৫. কত সালে ‘ সতীদাহ ‘ নিবারণ আইন পাশ হয় ?
উত্তর – 1829 সালে ।
৬ ‘ সাধারণ ব্রাম্হসমাজ ‘ কবে প্রতিষ্ঠত হয় ?
উত্তর – 1878 খ্রিস্টাব্দে ।
৭. বাংলায় নবজাগরণের শতক কোন শতককে বলা হয় ?
উত্তর – উনিশ শতককে বাংলায় নবজাগরণের শতক বলা হয় ।
৮. কে ‘ বামাবোধিনী পত্রিকা ‘ সম্পাদনা করেন ?
উত্তর – উমেশ চন্দ্র দত্ত ।
৯. কত সালে সাধারণ জনশিক্ষা কমিটি গঠন হয় ?
উত্তর – 1823 খ্রিস্টাব্দে ।
১০. কে ‘ ব্রহ্মানন্দ ‘ নামে পরিচিত ছিলেন ?
উত্তর – কেশব চন্দ্র সেন ।
১১. নববিধান কার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তর – কেশব চন্দ্র সেন।
১২. সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শের প্রচারক কে ?
উত্তর – শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব ।
১৩. রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উত্তর – স্বামী বিবেকানন্দ ।
১৪. প্রথম বাংলা মাসিক সাময়িক পত্রের নাম কি ?
উত্তর- দিগদর্শন ।
১৫. উনিশ শতকের প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকার নাম কি ?
উত্তর -সমাচার দর্পণ ।
১৬. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম দৈনিক সংবাদ পত্র কোনটি ?
উত্তর -সংবাদ প্রভাকর ।
১৭. ‘ সম্বাদ কৌমুদী ‘ কার দ্বারা সম্পাদিত হয় ?
উত্তর- রাজা রামমোহন রায় ।
১৮. কবে কার দ্বারা কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তর – লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস 1871 সালে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৯. কে, কত খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর -উইলিয়াম জোনস 1784 খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন ।
২০. কে, কত খ্রিস্টাব্দে বারাণসী সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর – 1791 খ্রিস্টাব্দে জোনাথন ডানকান বারাণসী সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ।
২১. কবে কার দ্বারা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা হয় ?
উত্তর – 1800 খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ।
২২. কত খ্রিস্টাব্দে জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন নামক জনশিক্ষা কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তর – 1823 খ্রিস্টাব্দে ।
২৩. কবে কার মাধ্যমে শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠত হয় ?
উত্তর -1800 খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরি শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন ।
২৪. কত খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় ?
উত্তর- 1817 খ্রিস্টাব্দে ।
২৫. কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন ?
উত্তর – লর্ড ক্যানিং ।
২৬. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য পদ কার ছিল ?
উত্তর- স্যার জেমস উইলিয়াম কোলভিল ।
২৭. প্রথম কোন ভারতীয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বা উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন ?
উত্তর – স্যার গুরুদাস বন্দোপাধ্যায় ।
২৮. কত সালে ‘ বামাবোধিনী ‘ পত্রিকার প্রচার রদ হয় ?
উত্তর- 1923 সালে ।
২৯. কোন পত্রিকায় নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিবরণ পাওয়া যায় ?
উত্তর -‘ হিন্দু প্যাট্রিয়ট ‘ ।
৩০. প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা সমর্থনকারী দুজন মানুষের নাম লেখো ।
উত্তর – যথাক্রমে এইচ. টি. প্রিন্স ও আলেকজান্ডার ডাফ ।
৩১. বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি কে ছিলেন ?
উত্তর – চার্লস উড ।
৩২. কাদম্বিনী গাঙ্গুলি কে ছিলেন ?
উত্তর – ভারতের প্রথম নারী চিকিৎসক ।
৩৩. ‘ ভারতপথিক ‘ কার উপাধি ?
উত্তর- রাজা রামমোহন রায় ।
৩৪. লন্ডন মিশনারি সোসাইটির দুজন উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিত্বের নাম লেখো ।
উত্তর – ফরসিথ ও মে সাহেব ।
Multiple Choice Questions – 1 marks of সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
১. ” নীলদর্পণ ” নাটকটির ইংরেজি অনুবাদকার ছিলেন __
- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
- রামমোহন রায়
- রেভারেন্ড জেমস্ লঙ
- রাধাকান্ত দেব
উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্ত
২. ‘ সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শের প্রচারক ছিলেন __
- স্বামী বিবেকানন্দ
- শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
- বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী
- বিদ্যাসাগর
উত্তর – শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
৩. দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ” ব্রহ্মানন্দ” উপাধি দিয়েছিলেন __
- শিবনাথ শাস্ত্রী
- স্বামী বিবেকানন্দ
- কেশব চন্দ্র সেন
- বিদ্যাসাগর
উত্তর – কেশব চন্দ্র সেন
৪. ” স্কুল বুক সোসাইটির ” প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ___
- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
- ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন
- শিবনাথ শাস্ত্রী
- ডেভিড হেয়ার
উত্তর – ডেভিড হেয়ার
৫. ‘ সতীদাহ ‘ প্রথা অকার্যকর করা হয় ___
A.1800 খ্রিস্টাব্দে
B.1861 খ্রিস্টাব্দে
C.1829খ্রিস্টাব্দে
D.1819খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – 1829খ্রিস্টাব্দে
৬. ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে নিন্মোক্ত যাঁর ভূমিকা নেই তিনি হলেন ___
- ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন
- ডেভিড হেয়ার
- রাম মোহন রায়
- কালি প্রসন্ন সিংহ
উত্তর – কালি প্রসন্ন সিংহ
৭. ‘ মেকলে মিনিট ‘ পেশ হয়েছিল ____
A.1830খ্রিস্টাব্দে
B.1817খ্রিস্টাব্দে
C.1821খ্রিস্টাব্দে
D.1835খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – 1835 খ্রিস্টাব্দে
৮. নববৈষ্ণব ধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন ___
- কেশব চন্দ্র সেন
- বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী
- কালী প্রসন্ন সিংহ
- শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস
উত্তর – বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী
৯. ‘ জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন ‘ গঠন করা হয়েছিল ___
A.1822 খ্রিস্টাব্দে
B.1900 খ্রিস্টাব্দে
C.1823 খ্রিস্টাব্দে
D.1821 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – 1823 খ্রিস্টাব্দে
১০.ভারতবর্ষের প্রথম নারী চিকিৎসক ছিলেন __
A.সরলা দেবী চৌধুরানী
B.চন্দ্রমুখী বসু
C.কাদম্বিনী গাঙ্গুলি
D.সরোজিনী নাইডু
উত্তর – কাদম্বিনী গাঙ্গুলি
১১. কত সালে ‘বিধবা বিবাহ আইন’ পাশ হয় ___
A. 1859 খ্রিস্টাব্দে
B. 1857 খ্রিস্টাব্দে
C. 1899 খ্রিস্টাব্দে
D. 1856 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – 1856 খ্রিস্টাব্দে
১২. ‘হুতোম প্যাঁচার নক্সা’ গ্রন্থটির রচয়িতা ছিলেন ___
A.স্বামী বিবেকানন্দ
B.কালীপ্রসন্ন সিংহ
C. শিবনাথ শাস্ত্রী
D. দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তর – কালীপ্রসন্ন সিংহ
১৩. প্রথম মহিলা যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেন ___
- সরোজিনী নাইডু
- মাতঙ্গিনী হাজরা
- কাদম্বিনী গাঙ্গুলি
- চন্দ্রমুখী বসু
উত্তর – কাদম্বিনী গাঙ্গুলি
১৪. ‘নব্যবেদান্তবাদ’ এর প্রচারক ছিলেন __
A.শিবনাথ শাস্ত্রী
B. শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরোমহংসদেব
C.স্বামী বিবেকানন্দ
D.বিদ্যাসাগর
উত্তর – স্বামী বিবেকানন্দ
১৫. পূর্বে হিন্দুমেলার নাম ছিলো __
A.পৌষ মেলা
B.চৈত্র মেলা
C.বৈশাখী মেলা
D.আনন্দ মেলা
উত্তর – চৈত্র মেলা
১৬. ‘হুতোম পেঁচার নক্সা’ বইটি ছিল ___
- তৎকালীন কলকাতার সমাজ দর্পণ
- চিত্রপুস্তক
- গল্পের বই
- নাটক সংকলন
উত্তর – তৎকালীন কলকাতার সমাজ দর্পণ
১৭. টমাস ব্যাবিংটন মেকলে সভাপতি ছিলেন___
- কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশন
- কমিটি অব সোশ্যাল ফেয়ার
- ন্যাশনাল কমিটি ফর ইউনিয়ন
- সোশ্যাল কমিটি
উত্তর – কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশন
১৮. ‘একাডেমিক এসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা করা হয় ___
A.1829 খ্রিস্টাব্দে
B.1844 খ্রিস্টাব্দে
C.1827 খ্রিস্টাব্দে
D.1902 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর – 1827 খ্রিস্টাব্দে
১৯. ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকাটি ছিল একটি—-
- সন্মাসিক পত্রিকা
- দৈনিক পত্রিকা
- সাপ্তাহিক পত্রিকা
- মাসিক পত্রিকা
উত্তর – মাসিক পত্রিকা
২০. শিক্ষার ক্ষেত্রে ‘ চুঁইয়ে পরা নীতি ‘ টি গ্রহণ করেছিলেন ___
- উইলিয়াম কেরি
- লর্ড ওয়েলেসলি
- টমাস ব্যবিংটন মেকলে
- লর্ড কর্নওয়ালিস
উত্তর – টমাস ব্যবিংটন মেকলে
২১.’ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ‘ অভিধানটি দেওয়া হয় ___
- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে
- সংস্কৃত কলেজকে
- ফোর্ট উইলিয়াম কলেজকে
- বিদ্যাসাগর কলেজকে
উত্তর – ফোর্ট উইলিয়াম কলেজকে
২২. ‘ যত মত তত পথ ‘ উক্তিটি করেন ____
- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
- স্বামী বিবেকানন্দ
- শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
- কেশব চন্দ্র সেন
উত্তর – শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
Short Questions – 2-3 marks of সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
১. 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে কি ভূমিকা পালন করে ?
উত্তর – 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন অনুযায়ী কোম্পানি ভারতীয় শিক্ষাখাতে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যায় করার এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যা ভারতীয় শিক্ষার অগ্রগতি ঘটিয়েছিল ।
২. রাধাকান্ত দেব কেন বিখ্যাত ?
উত্তর – রাধাকান্ত দেব 1822 খ্রিস্টাব্দে নারীশিক্ষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য ‘ স্ত্রী শিক্ষা বিধায়ক ‘ নামে পুস্তিকা প্রকাশিত করেন । এছাড়াও তিনি হিন্দু কলেজ , স্কুল বুক সোসাইটি এবং ক্যালকাটা বুক সোসাইটির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন ।
৩. লালন ফকির স্মরণীয় কেনো ?
উত্তর – উনিশ শতকের বাংলার এক বাউল সাধক ছিলেন লালন ফকির । এছাড়াও তিনি হিন্দু ও মুসলিম ধর্ম শাস্ত্রের বিশ্লেষক ছিলেন ।
৪. ঈশ্বরচন্দ্র কিভাবে নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছিলেন ?
উত্তর – নারী শিক্ষার বিষয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন এক উল্লেখযোগ্য নাম । তিনি নারীদের উদ্দেশ্যে 35 টি বিদ্যালয় স্থাপিত করেন এছাড়াও স্ত্রী শিক্ষা সম্মেলনী , হিন্দু ফিমেল স্কুল, মেট্রোপলিটন স্কুল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠার কাজে যুক্ত ছিলেন ।
৫. নব্যবেদান্তবাদ কাকে বলা হয় ?
উত্তর – মানবসেবাই ব্রহ্মের সেবা — স্বামী বিবেকানন্দ এই মতবাদেই বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর এই মতবাদকে নব্যবেদান্তবাদ বলা হয় ।
এই মতে সমাজের সকল মানুষকে সেবা এবং আত্মার মুক্তির জন্য সমাধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ।
৬. কি উদ্দেশ্যে ব্রাম্হসমাজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো?
উত্তর – তৎকালীন সমাজের কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ , পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ গড়ে তুলতে এবং নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ব্রাম্হসমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
৭. সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে নব্যবঙ্গ আন্দোলন কি ভূমিকা পালন করেছিল ?
উত্তর – সমকালীন সমাজে জাতিভেদ প্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা ও পৌত্তলিকতা ছিল সমাজের চরম অসুখ । সেইসব বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং নারী স্বাধীনতা, পত্রিকা স্বাধীনতার সপক্ষে নব্যবঙ্গ অন্দোলন গড়ে উঠেছিলো ।
৮. ভারতীয় আধুনিক শিক্ষার প্রসারে চার্লস উড প্রবর্তিত দুটি সুপারিশ কি ছিল ?
উত্তর – 1854 সালে চার্লস উড প্রবর্তিত সুপারিশে, শিক্ষা বিস্তারে আলাদা আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠা, ইংরেজি ও দেশীয় ভাষায় শিক্ষার প্রসার এবং কলকাতা,মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ে তিনটি আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেছিলেন । তাঁর এই নির্দেশনামা উড ‘স ডেসপ্যাচ নামে পরিচিত ।
৯. ‘ মেকলে মিনিট ‘ কাকে বলা হয় ?
উত্তর -ঔপনিবেশিক শাসন কালীন সময়ে 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন অনুযায়ী কোম্পানি ভারতীয় শিক্ষাখাতে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যায় করার এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এই টাকা কোন খাতে ব্যয় হবে তাই নিয়ে প্রাচ্য পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের শুরু হয় ।
1835 সালের 2রা ফেব্রুয়ারি ‘ General committee of Public Instruction ‘ এর সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে “মেকলে মিনিট ” নামক এক রিপোর্টে পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থনে সরকারি অর্থ ব্যয়ের নির্দেশ দেন । এটি মেকলে মিনিট নামে পরিচিত ।
১০. কবে কোন আইনের দ্বারা ‘ বিধবাবিবাহ ‘ প্রচলিত হয় ?
উত্তর – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে লর্ড ক্যানিং 1856 সালে 15 নং রেগুলেশন অ্যাক্ট এর দ্বারা বিধবা বিবাহ আইনের প্রচলন করেন ।
১১. নব্যবঙ্গীয় কাদের বলে ?
অথবা,
শিক্ষা ক্ষেত্রে নব্যবঙ্গীয়দের ভূমিকা কি ছিল ?
উত্তর – উনিশ শতকের প্রথমার্ধে সামাজিক ও পাশ্চাত্য শিক্ষা সংক্রান্ত অন্দোলনের জন্য ডিরোজিও ও হিন্দু কলেজের ছাত্রমন্ডল তথা তার অনুগামীরা যে দল গড়ে তোলেন তাদের নব্যবঙ্গীয় বলা হয়।
এই আন্দোলনের সাথে রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী, রাধানাথ শিকদার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বরা যুক্ত ছিলেন ।
১২. ‘ বামাবোধিনী পত্রিকা ‘ কত খ্রিস্টাব্দে কে সম্পাদনা করেন ?
উত্তর -‘ বামাবোধিনী পত্রিকা ‘ 1863 খ্রিস্টাব্দে উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পাদনা করেন ।
১৩. ‘ বামাবোধিনী পত্রিকা ‘ কি উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয় ?
উত্তর – তৎকালীন সমাজের দুর্বল দিকগুলোকে পিছনে ফেলে সমাজ কুসংস্কার মুক্ত করতে এবং নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ‘ বামাবোধিনী পত্রিকা ‘ প্রকাশিত হয় ।
১৪. ‘ গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা ‘ পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য কি ছিল ?
অথবা
‘ গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা ‘ পত্রিকা কে কেনো ব্যাতিক্রমী পত্রিকা বলা হয়েছে ?
উত্তর – হরিনাথ মজুমদার দ্বারা প্রকাশিত ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা ‘ পত্রিকায় সাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান – বিজ্ঞান সংবাদ প্রকাশের সাথে সাথে নারী শিক্ষার বিস্তার , কৃষক দের করুন অবস্থার কথাও বলা হতো তাই এটি অবশ্যই একটি ব্যাতিক্রমী পত্রিকা ।
১৫. স্যার উইলিয়াম জোনস কেনো এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর – 1784 সালে স্যার উইলিয়াম জোনস প্রাচ্য সাহিত্য, ইতিহাস গবেষণার উদ্দেশ্যে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৬. প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব কাকে বলে?
উত্তর – ঔপনিবেশিক শাসন কালীন সময়ে 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন অনুযায়ী কোম্পানি ভারতীয় শিক্ষাখাতে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যায় করার এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
কিন্তু এই টাকা কোন খাতে ব্যয় হবে তাই নিয়ে প্রাচ্য পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের শুরু হয় । তা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত ।
১৭. বাংলার নারী শিক্ষার বিষয়ে কোন কোন বিদেশিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ?
উত্তর – মেরি উইলসন, মিসেস কুক, মেরি কার পেন্টার ।
১৮. কবে তিন আইন পাশ হয় ? এর বিষয়বস্তু কি ছিল ?
উত্তর – 1872 খ্রিস্টাব্দে তিন আইন পাশ হয় । কেশব চন্দ্র সেন এর নেতৃত্বে ঘোষিত এই আইনে বাল্য বিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয় এবং বিধবা বিবাহ, অসবর্ণ বিবাহ আইনসিদ্ধ হয় ।
১৯. ‘হুতোমপেঁচার নক্সা ‘ গ্রন্থটির বিষয়বস্তু কি ?
উত্তর –
১) গ্রন্থটিতে সমকালীন কলকাতার একটি সামাজিক চিত্র বর্ণনা করা হয়েছে।
২) এটিকে একটি ব্যঙ্গাত্মক রচনা বলা হয় কারণ কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার কথ্য ভাষার ব্যাবহার দেখা যায় ।
২০. ডেভিড হেয়ার কেনো ‘ স্কুল সোসাইটি ‘ প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর – কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যালয় গঠন ও শিক্ষার অগ্রগতির উদ্দেশ্যে ডেভিড হেয়ার স্কুল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন ।
২১. কবে কি উদ্দেশ্যে লর্ড ওয়েলেসলি ‘ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ‘ প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর – ইংল্যান্ড থেকে আসা ব্রিটিশ কর্মচারীদের ভারতীয় জীবনযাত্রা, ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার সম্পর্কে অবগত করার উদ্দেশ্যে লর্ড ওয়েলেসলি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ।
Long Questions – 5 marks of সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
১. প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব সম্পর্কে যা জানো লেখো ।
অথবা
ঔপনিবেশিক শাসনকালে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্ব বলতে কি বোঝায় ?
উত্তর – ঊনবিংশ শতকের প্রথম থেকেই বহু বৈদেশিক ও ভারতীয় শিক্ষিত ব্যাক্তিদের প্রয়াসে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবল পরিবর্তন আসে । এই শিক্ষা বিস্তারে কোম্পানি প্রথমে প্রাচ্য শিক্ষা সমর্থন করলেও পরে সরকারিভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তার নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয় যা প্রাচ্য – পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত ।
∆ প্রাচ্য – পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব :
- i) 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন – ঔপনিবেশিক শাসন কালীন সময়ে 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন অনুযায়ী কোম্পানি ভারতীয় শিক্ষাখাতে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যায় করার এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এই টাকা কোন খাতে ব্যয় হবে তাই নিয়ে প্রাচ্য পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের শুরু হয়।
- ii) প্রাচ্য শিক্ষার সমর্থন – কোম্পানির শিক্ষানীতি ভারতীয় ভাষায় হওয়া উচিত ‘ এই নীতির পক্ষ নিয়ে উইলসন, কোলব্রুক , স্যার প্রিন্সেপ প্রমুখদের সাথে পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকদের বিবাদ শুরু হয়।
iii) পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থন – ইংরেজি ভাষা কে হাতিয়ার বানাতে চেয়েছিলেন মেকলে, রাজা রামমোহন রায়, আলেকজান্ডার ডাফ প্রমুখ । তাদের মতে শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত ছিল ইংরেজি, বিষয় হওয়া উচিত পাশ্চাত্যের জ্ঞান – বিজ্ঞান ।
- iv) প্রাচ্য – পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের সমাপ্তি – দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা প্রাচ্য – পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব 1835 সালের 2রা ফেব্রুয়ারি ‘ General committee of Public Instruction ‘ এর সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে “মেকলে মিনিট ” নামক এক রিপোর্টে পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থনে সরকারি অর্থ ব্যয়ের নির্দেশ দেন । এভাবে প্রাচ্য – পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের অবসান হয় ।
২. উনিশ শতকে বাংলার নীল দর্পণ নাটকটি সমকালীন সমাজজীবনে কি প্রভাব বিস্তার করেছিল আলোচনা করো ।
উত্তর – নীলচাষ ছিল উনিশ শতকের একটি কালো অধ্যায় । 1860 সালে দীনবন্ধু মিত্র তাঁর ‘ নীলদর্পণ ‘ নাটকে সেই সময়ের নীলকর সাহেব এবং নীল চাষীদের সমাজ জীবনের কথা তুলে ধরেছেন।
- নীল চাষীদের দুর্দশা – নীলকর সাহেবরা নীল চাষীদের দিয়ে ধান, গমের পরিবর্তে নীল চাষ করতে বাধ্য করতো এবং চাষের পরিবর্তে সঠিক মজুরিও দিত না বরং অত্যাচার চালাতো । নীলকর সাহেবদের এই নির্মম অত্যাচারের দৃশ্য নাটকটিতে ব্যক্ত হয়েছে ।
- জনমত গঠন – ‘ নীলদর্পণ ‘ নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার পর ভারতীয়দের মধ্যে চেতনা বৃদ্ধি পায়, বিশাল জনমত গড়ে ওঠে এবং জাতীয়তাবাদের প্রতি সোচ্চার হয় ।
- বিদ্রোহের ঘোষণা – ‘ নীলদর্পণ ‘ নাটকটি ভারতীয়দের মধ্যে যে মনোবল তৈরি করেছিল তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে 1858 সালের নীল বিদ্রোহের মাধ্যমে ।
৩. উনিশ শতকে ব্যঙ্গাত্মক চিত্র হিসেবে ‘ হুতোম পেঁচার নক্সা ‘ কতখানি প্রভাব ফেলেছিল ?
উত্তর – 1861 সালে কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত হুতোম পেঁচার নক্সা গ্রন্থটিতে তৎকালীন সমাজের এক ব্যঙ্গাত্মক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে ।
∆ সমকালীন সামাজিক চিত্র – তৎকালীন সমাজের সামাজিক কুপ্রথা, অবক্ষয় , উৎসব অনুষ্ঠান , কলকাতা বাবু সমাজের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হয়েছে ।
∆ বাংলার সংস্কৃতি – এই গ্রন্থে বাংলার বিভিন্ন আঞ্চলিক অনুষ্ঠান যেমন – গাজন, রথযাত্রা, বারোয়ারী দুর্গা পূজা, চড়ক প্রভৃতির উল্লেখ আছে ।
∆ ব্যাঙ্গচিত্রের বিদ্রুপ – হুতোম পেঁচার নক্সায় সমকালীন বাঙালিদের ভাষা, চালচলন এর পাশ্চাত্য ভাবভঙ্গির ব্যাপক বিদ্রুপ করেছেন ।
এই গ্রন্থে মাতাল, বাইজিনাচ, মদ্যপান সহ জমিদারদের নানান কীর্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
বলা বাহুল্য এই গ্রন্থে লেখক সমাজের সকল চরিত্রকে নিন্দনীয় করেননি বরং হাস্যরসের মাধ্যমে সমাজের মূল দিক তুলে ধরেছেন ।
৪.নারী কল্যাণ মূলক পত্রিকা হিসেবে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ কি ভূমিকা পালন করে ?
উত্তর -সমকালীন সমাজে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা গুলির মধ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ নারী বিষয়ক পত্রিকা ।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীজাতির মর্যাদা বৃদ্ধি ও নারীমুক্তি অন্দোলন গড়ে তুলতে এই পত্রিকা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল । 1863 খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে বাংলা ভাষায় এই পত্রিকা প্রকাশিত হয় ।
উনিশ শতকে বাংলার অবহেলিত, নিপীড়িত , বঞ্চিত পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের অবস্থান পোক্ত করাই ছিল এই পত্রিকার মূল উদ্দেশ্যে ।
এই পত্রিকা থেকে তৎকালীন সমাজের নারীদের সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় সেগুলো হলো __
>নারীদের সম্মান – সেই সময় বাংলার নারীদের সম্মান বলে কিছুই ছিল না । অন্দরমহল ছিল তাদের জীবনের এক এবং অদ্বিতীয় ।
> কুসংস্কার ও কুপ্রথা – উনিশ শতকে সমাজে বাল্যবিবাহ,পর্দাপ্রথা, বহুবিবাহ প্রভৃতির মত নিম্নমানের কুপ্রথা ছিল যা নারীদের জীবনযাপনকে বিষময় করে তুলেছিল ।
>অধিকারহীন সম্পত্তি – নারীদের সেইসময় পিতার সম্পত্তিতে কোনো অধিকার ছিল না । কেবল পিতৃদত্ত এবং ভাতৃদত্ত যৌতুক ছিল তাদের সম্বল ।
৫. উনিশ শতকে ধর্মীয় সমন্বয়ে লালন ফকিরের ভূমিকা আলোচনা করো
উত্তর – উনিশ শতকে ধর্মীয় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে যেসকল ব্যক্তিরা উদ্যোগ নিয়েছিলেন লালন ফকির ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম । প্রায় দু’হাজার গান রচনার মধ্য দিয়ে লালন ধর্ম সমন্বয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন যা মানবজীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং হৃদয়স্পর্শী ।
- জন্মকাল – বর্তমান বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার হরিশচন্দ্র পুরে লালনের জন্ম হয়েছিলো সাল 1774 । তাঁর পিতা ছিলেন মধবরাও ও মাতা ছিলেন পদ্মাবতী দেবী ।
- শৈশবকাল – শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন সঙ্গীতপ্রিয় । অনেক অল্প বয়সেই লালন সিরাজ সাইয়ের কাছে বাউল গানের দীক্ষা নেন এবং বাউল আখড়া তৈরি করে শিষ্য সহ বসবাস করতে শুরু করেন
- ধর্মসমন্বয়বাদী আদর্শ – লালন ফকিরের মতে মানুষের কোনো জাতি, ধর্ম, লিঙ্গভেদ নেই, তাঁর বিশ্বাস ছিল সকল মানুষের মধ্যে বাস করে এক মনের মানুষ । তিনি জাতিভেদ মানতেন না তাই তাঁর গানগুলোতে মানবতাবাদী ভাব স্পষ্ট ।
সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে লালন বলে জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে।
গানের ভাষায় লালন ফকির মানুষের মনে সর্বধর্ম সমন্বয় কে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
৬. সমকালীন সমাজজীবনে ‘গ্রামবার্ত্তা’ প্রকাশিকা পত্রিকাটি কি প্রভাব ফেলেছিল ?
উত্তর- উনিশ শতকে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে হরিনাথ মজুমদার দ্বারা প্রকাশিত গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা পত্রিকাটি বাঙালি জীবনে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল ।
- গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ – হারিনাথ মজুমজার তাঁর এই পত্রিকায় গ্রাম্য জীবনের বিশেষ দিক তুলে ধরেছিলেন । পাশাপাশি সামাজিক রাজনৈতিক দিক ও প্রকাশিত হয়েছিল ।
- সমাজে নারীদের অবস্থান- সমকালীন সমাজে নারীদের দুরাবস্থার কথা জানা যায় গ্রাম বাত্তা পত্রিকাটির মাধ্যমে ।
- জমিদারদের অত্যাচার – সেই সময় সমাজে জমিদার শ্রেণির প্রভাব ছিল অনেক বেশি । জমিদার, জোতদার ও মহাজনরা প্রজাদের থেকে চরাহারে রাজস্ব আদায় করত এবং অকারনে জমি থেকে উচ্ছেদ করতো ।
- নীলকর সাহেবদের শোষণ- এই পত্রিকায় নীলকর সাহেবদের চরম শোষণের উল্লেখ আছে ।তারা বিনা পারিশ্রমিকে চাষিদের দিয়ে নীল চাষ করাতো ।
- শিক্ষার প্রসার – এই পত্রিকার মাধ্যমে সমকালীন সমাজের পিছিয়ে পরা নারীজাতিকে আধুনিক শিক্ষা প্রসারের জন্য সচেষ্ট করা হয় ।
৭। উনিশ শতকের বিজ্ঞান চর্চায় ‘ মধুসূদন গুপ্ত’ স্মরণীয় কেন ?
উত্তর – ডা: মধুসূদন গুপ্ত ছিলেন উনিশ শতকের বিজ্ঞান চর্চার এক উল্লেখযোগ্য নাম । 1836 সালে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রথম শবব্যবচ্ছেদের মতন অতি আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়েছিলেন ।
1800 খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি গ্রামে মধুসূদন গুপ্ত জন্ম গ্রহণ করেন । 1826 সালে সংস্কৃত কলেজে বৈদিক বৈদিক বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন ।
- শবব্যবচ্ছেদের ধারণা – 1835 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্বেও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ছিল শবব্যবচ্ছেদের ঘোর বিরোধী । তা সত্বেও 1836 খ্রিস্টাব্দে মধুসূদন গুপ্ত মহাশয় ধর্মীয় বেড়াজাল টপকে শবব্যবচ্ছেদের ঘটনাটি সম্পূর্ণ করেন । তাঁর এই উদ্যোগে সহযোগিতা করেছিলেন রাজকৃষ্ণ দে, উমাচরণ শেঠ, দ্বারকানাথ গুপ্ত প্রমুখ ।
- গ্রন্থ রচনা – রবার্ট ওপারের লেখা Anatomist Vade Mecum গ্রন্থটির বাংলা রূপ দিয়েছিলেন মধুসূদন গুপ্ত, নাম – ‘ লন্ডন ফার্মাকোপিয়া ‘ । পরে এটিকে তিনি সংস্কৃত ভাষায় ও অনুবাদ করেন ।
- ধর্মীয় বেড়াজাল – তাঁর হাত ধরেই সমকালীন সমাজ ধর্মীয় বেড়াজাল থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত হতে পেরেছিল । শবব্যবচ্ছেদের ঘটনাটিকে কুসংস্কারের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিলেন তিনি এবং যার ফলে তাঁকে জাতিচুত্য হতে হলেও তিনি তাঁর পরোয়া করেননি ।
৮। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ভারতে পাশ্চাত্য ও আধুনিক চিকিৎসা চর্চার ক্ষেত্রে কি ভূমিকা পালন করেছিল ?
উত্তর – 1835 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মাধ্যমে ভারতবর্ষে চিকিৎসা চর্চার নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছিলো । এর উদ্যোগকারী ছিলেন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং ।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিলো কলেজ থেকে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন্ট হিসেবে যোগ্য ছাত্রদের সামরিক ও অসামরিক কেন্দ্রে নিয়োগ করা ।
মাউন্ট ফোর্ড জোসেফ ব্রামলিকে প্রথম পর্যায়ে সুপারিনটেনডেন্ট এর পদে নিয়োগ করা হয় ।দ্বারকানাথ সহ বহু অভিজাত ব্যক্তিবর্গ প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সাহায্য করেছিলেন ।
- পাঠ্য বিষয় – কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রসায়ন বিদ্যা, ঔষধের গুণাগুণ ও প্রয়োগ সংক্রান্ত বিষয় , অঙ্গ ব্যবচ্ছেদ প্রভৃতি বিষয়ে পাঠ দান করা হতো । কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন – ড: মধুসূদন গুপ্ত, ড: এইট গুডউইড প্রমুখ ।
- শবব্যবচ্ছেদ – ডাক্তার মধুসূদন গুপ্তের উদ্যোগে 1836 সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রথম শবব্যবচ্ছেদ হয় । তাঁর হাত ধরেই সমকালীন সমাজ ধর্মীয় বেড়াজাল থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত হতে পেরেছিল ।
- খ্যাতনামা ডাক্তার – কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে খ্যাতনামা ডাক্তার তৈরিতে বিশাল ভূমিকা পালন করেছিল । রাজকৃষ্ণ দে, উমাচরণ শেঠ, দ্বারকানাথ গুপ্ত প্রমুখ ছিলেন সেই সময়কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য নাম যাঁরা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ব্যাচে ডাক্তারি পাশ করেছিলেন ।
৯। ধর্ম সংস্কারক হিসেবে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী নামটি স্মরণীয় কেনো ?
উত্তর – ধর্মসংস্কারক হিসেবে উনিশ শতকে বাংলায় যে মানুষটির অবদান অনস্বীকার্য তিনি ছিলেন বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী । তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে তাঁর শিক্ষাজীবন কাটিয়েছিলেন । পরে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে বহু সামাজিক কাজও করেন ।
ব্রাহ্ম সমাজে যোগদান এবং বিতাড়ন – 1863 সালে তিনি ব্রাহ্ম সমাজে যোগদান করেন এবং বিতর্কের মাধ্যমে দীর্ঘ 25 বছর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি ব্রাম্বধর্ম প্রচার করেন । পরবর্তীতে 1878 সালে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠার পর তিনি আচার্যের পদ থেকে বিতাড়িত হন ।
বৈষ্ণব ধর্মপ্রচার – ব্রাহ্ম সমাজ ত্যাগ করার পর তিনি বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং বাংলায় নব্য বৈষ্ণব আন্দোলনের সূচনা করেন ।
সমাজ সংস্কার – বিজয়কৃষ্ণ বাংলায় স্ত্রীশিক্ষা প্রসার ও নারী জাতির উন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছিলেন। 1899 সালে তিনি পরলোক গমন করেন ।
১০। সতীদাহ প্রথা সম্পর্কে লেখো ।
উত্তর – প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে হিন্দু সমাজে প্রচলিত সতীদাহ প্রথা ছিল এক কলঙ্কময় অধ্যায়। ঊনবিংশ শতকের শুরুতে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটার সাথে সাথে সমাজ কিছুটা কুসংস্কার বিরোধী হয়ে ওঠে এবং আন্দোলন শুরু হয় । যার মধ্যে সতীদাহ বিরোধী আন্দোলন ছিল গুরুত্বপূর্ণ ।
- কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব ও সার্বিক আন্দোলন – সতীদাহ প্রথা ছিল প্রাচীন হিন্দু সমাজের পবিত্র ও মহান কাজ কিন্তু বাস্তবে তা ছিলো প্রচন্ড নিষ্ঠুর ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন । ঊনবিংশ শতকের শুরুতে কলকাতা সহ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে সার্বিকভাবে অন্দোলন শুরু হয় ।
- কোম্পানির উদ্যোগ – পণ্ডিত ঘনশ্যাম কমিটি 1805 সালে নিজামত আদালতে এই প্রথার বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করে । 1813 সালে এই মতের ভিত্তিতে গর্ভবতী নারী এবং কিশোরীদের সতী হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা পেশ হয় ।
- রামমোহন রায়ের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ – রামমোহন রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘ আত্মীয় সভা ‘ সতীদাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন এবং তাঁর লেখা বইয়ে তিনি সতীদাহ যে শাস্ত্র সম্মত নয় তার ব্যাখ্যা দেন । তিনি ই প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর কাছে আবেদন পেশ করেন ।
- উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর নিষেধাজ্ঞা -1829 সালে 4 ডিসেম্বর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথাকে 17 নং রেগুলেশন জারির মাধ্যমে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন ।
১১। বাংলা নবজাগরণের ইতিহাসে রাজা রামমোহন রায়ের নাম চিরস্মরণীয় কেন ?
উত্তর – ঊনবিংশ শতকের নবজাগরণের ইতিহাসে রামমোহন রায়ের ভূমিকা ছিল অতুলনীয় । সামাজিক কুসংস্কার দুর করার সাথে সাথে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছিলেন তিনি । তাঁর এই সংস্কার মূলক কাজে অভিভূত হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে ‘ ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ ‘ আখ্যা দিয়েছিলেন ।
> শিক্ষার সংস্কার – ভারতকে কুসংস্কারমুক্ত করেন শিক্ষার প্রতি মনস্ক করাই ছিল রাম মোহন রায়ের মূল উদ্দেশ্য । তিনি মনে করতেন পাশ্চাত্য শিক্ষা ভারতীয়দের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব দুর করতে সক্ষম তাই তিনি 1830 সালে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন এবং 1817 সালে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্টায় উদ্যোগী হন ।
> একেশ্বরবাদী মনোভাব – রামমোহন রায় ধর্ম কে গুরুত্ব না দিয়ে একেশ্বরবাদকে বিস্তার করতে চেয়েছিলেন।তিনি হিন্দু ধর্মের মূর্তি পূজার বিরোধিতা করেছিলেন । এই উদ্যোগেই তিনি 1816 সালে ‘ আত্মীয় সভা ‘ ও 1828 সালে ব্রাহ্মসভা গড়ে তোলেন, পরবর্তীতে এটি ব্রহ্ম সমাজ নামে পরিচিত হয় ।
> সামাজিক সংস্কার – সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করা এবং নারীদের অবস্থার উন্নতি ঘটানোই ছিল রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্য ।
- 1829 সালে 4 ডিসেম্বর রাম মোহন রায়ের উদ্যোগে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথাকে 17 নং রেগুলেশন জারির মাধ্যমে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন ।
- স্বামীর সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন তিনি ।
- হিন্দু পুরুষদের বহুবিবাহ এবং কৌলীন্য প্রথার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন ।
> সাংস্কৃতিক সংস্কার – ইংল্যান্ডের গৌরবময় বিপ্লব এবং আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সংবাদে উৎসাহিত হয়ে তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে মতপ্রশন করেন । তাঁর সম্পাদিত ‘ সংবাদ কৌমুদি ‘ বাংলা সাহিত্যে এক মূল্যবান সম্পদ ।
১২। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে নব্যবঙ্গীও গোষ্ঠীর ভূমিকা আলোচনা করো ।
উত্তর – হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর উদ্যোগে পাশ্চাত্য ভাবধারা, যুক্তিবাদ ও সততার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে তিনি এবং তরুণ ছাত্রদল নব্যবঙ্গীও গোষ্ঠী রূপে আত্মপ্রকাশ করেন ।
উদ্দেশ্য – হিন্দুসমাজ , খ্রিষ্টধর্ম ও পাশ্চাত্য প্রভাব থেকে সনাতন হিন্দু ধর্মকে রক্ষাকরা এবং হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামি, কুপ্রথার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করাই ছিলো নব্যবঙ্গ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ।
ক্রিয়াকলাপ – হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামি, কুপ্রথার বিরোধিতা করাই ছিলো নব্যবঙ্গীও গোষ্ঠীর মূল কাজ । 1828 সালে ‘ অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন ‘ নামে এক বিতর্ক সভা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ডিরোজিওর ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ছাত্ররা সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করতে উদ্যোগী হয় তারা বহুবিবাহ, নারীশিক্ষা , সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়ে পার্থেনন ও ক্যালাইডোস্কপ নামক পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন ।
আন্দোলনের নেতৃত্ব – ডিরোজিওর অনুগামীদের মধ্যে প্রধান ছিলেন কৃষ্ণমোহন বন্দোপাধ্যায়, রাধানাথ শিকদার, রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী প্রমুখ । পরবর্তী সময়ে নব্যবঙ্গীয় গোষ্ঠীর সমালোচনা হয়েছিলো । ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী নব্যবঙ্গীয়দের নকল গোষ্ঠী বলেছিলেন ।
১৩.বাংলা সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা আলোচনা করো ।
অথবা,
সমাজসংস্কার-এর ক্ষেত্রে ব্রাহ্মসমাজ কি কি উদ্যোগ নিয়েছিল ?
উত্তর – তৎকালীন সমাজকে ধর্মীয় কুসংস্কার মুক্ত করতে 1828 খ্রিষ্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় ‘ ব্রহ্ম সভা ‘ প্রতিষ্ঠা করেন । 1830 খ্রিস্টাব্দে এটি ব্রহ্ম সমাজে রূপান্তরিত হয় । ভারতে পূর্ণভাবে হিন্দু ধর্ম প্রতিষ্ঠাই ছিল এর মূল লক্ষ ।
রাজা রামমোহন রায়ের উদ্যোগ
বাংলার সমাজ সংস্কারের ইতিহাসে রাজা রামমোহন রায় ছিলেন এক উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তি। পাশ্চাত্য ভাবাদর্শে বিশ্বাসী রাজা রামমোহন রায় সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে যুক্তিনির্ভর সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন তাই তিনি ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ।
- সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধকরণ – রাজা রামমোহন রায় এর উদ্যোগে লর্ড উইলিয়াম বেন্তিঙ্ক ১৮২৯ সালে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সতীদাহ নিষিদ্ধ করেন ।
- নারীদের সম্মান বৃদ্ধি –রাজা রামমোহন রায় নারীদের শিক্ষা, সন্মান বৃদ্ধিতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন ।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগ
রামমোহন রায়ের পরবর্তী সময়ে ব্রামহসমাজের হাল ধরেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । তাঁর প্রচেষ্টায় ১৮৩৯ সালে ‘ তত্ববধিনি’ সভা গড়ে ওঠে ১৮৪৩ সালে এই সভার মুখপাত্র হিসেবে ‘ তত্ববোধিনী পত্রিকা প্রকাশিত হয় ।
কেশবচন্দ্র সেনের উদ্যোগ
১৮৫৭ সালে কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করেন এবং নিজের উদ্যোগে ব্রাহ্ম আন্দলনের প্রধান নেতায় পরিনত হন । তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম আন্দলনের প্রথম অব্রামহ আচার্য ।
- নববিধান ব্রাহ্মসমাজ গঠন – কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ১৮৮০ সালে ভারতীও ব্রাহ্মসমাজ নববিধান ব্রাহ্মসমাজ এ রুপান্তরিত হয় ।
- তিন আইন পাশ – কেশবচন্দ্র সেন বাল্যবিবাহ’, বহুবাবাহ নিষিদ্ধ ও বিধবা বিবাহ, অসবর্ণ বিবাহ আইন সিদ্ধ এই তিন আইন পাশ করেন ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ।
এছারাও তিনি নিপীড়িত মানুষদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ‘ সংগত সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন । নারী কল্যানের উদ্দেশ্যে তিনি ব্রামহিকা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৪. পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে সমাজ সংস্কারক হিসেবে রাধাকান্ত দেবের অবদান আলোচনা করো ।
উত্তর – ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিলেন রাধাকান্ত দেব । তিনি প্রাচ্চ্যবাদী শিক্ষায় পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে চেয়েছিলেন ।
তাঁর ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দু কলেজের ছাত্ররা ইংরেজি লিটারেচার এবং বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ গুলি বঙ্গানুবাদ করেন ।
- হিন্দু কলেজের কৃতিত্ব – 1818 খ্রিস্টাব্দ থেকে দীর্ঘ 32 বছর রাধাকান্ত দেব হিন্দু কলেজের সভাপতিত্ব করেন । এই হিন্দু কলেজ ছিল সমকালীন সময়ে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের কেন্দ্রবিন্দু ।
- বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা দান – চিকিৎসা বিজ্ঞানের শবব্যবচ্ছেদ কে তিনি সমর্থন করতেন এবং ভারতীয় ছাত্রদল বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারে তার উদ্দেশ্যে তিনি তহবিল ও গঠন করেছিলেন ।
- নারীদের শিক্ষালাভ – নারীশিক্ষার প্রসারে রাধাকান্ত দেব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। নারীদের পরীক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে নিজগৃহে ‘ ফিমেল জুভেইলাইন সোসাইটির ‘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এছাড়াও তিনি ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠায় অংশ নিয়েছিলেন।
১৫. নব্য বেদান্তবাদ গঠনে স্বামী বিবেকানন্দের অবদান কি ?
অথবা
স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের দিক গুলি আলোচনা করো ।
উত্তর – স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের প্রধান শিষ্য । হিন্দু ধর্মকে বিশ্বের কাছে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার লক্ষ্যে তিনি নব আদর্শের কথা বলেন যা নব্যবেদন্তবাদ নামে পরিচিতি ।
তবে তিনি মানব জাতির কেবল একটি ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে একথা বলেন নি বরং ধর্ম দ্বারা সকল প্রতিকূলতাকে জয় করার কথা বলেন ।
- ধর্মীয় ভাবনা – তাঁর মতে ধর্ম তাই যা মানবজাতির কল্যাণে সাধিত হয় এবং কঠিন পরিস্থিতিতে মানসিক বল প্রদান করে । মনোবল বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এবং মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্যেই ধর্মের আশ্রয় নিতে হবে, তা-ই হবে ধর্মের মূল লক্ষ্য ।
- ধর্মচিন্তার বিষয়বস্তু – স্বামীজির মতে ধর্মীয় চিন্তার বিষয়বস্তু হওয়া উচিত বেদ ও বেদের আদর্শ । বেদান্তকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন তিনি।
- নব্য বেদান্তবাদ – বিবেকানন্দের ধর্ম চিন্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল নব্য বেদান্তবাদ তিনি মনে করতেন জীবজগতে সবস্থানেই ব্রহ্মের উপস্থিতি, তাই মানব সেবার মধ্য দিয়েই ব্রহ্ম সেবা সম্ভব। এই কারণেই তিনি বলছিলেন জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। প্রাচীন অদ্বৈতবাদে বলা আছে যে ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা অর্থাৎ ব্রহ্ম ছাড়া জগতে আর কিছুই নেই ।
নব্যবেদান্তবাদের ধারণা – বিবেকানন্দের মতে শ্রেণীবিভক্ত বিশ্বসমাজে প্রতিটি শ্রেণীর উপযুক্ত সাধন পথ আছে এবং তার মাধ্যমেই নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে জীবনকে অতিবাহিত করতে হবে ।তবে আধুনিক সময়ে কার্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় ।
১৬. পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে বেথুন সাহেবের ভূমিকা কি ছিল ?
উত্তর – উনিশ শতকে নারীদের শিক্ষা ও পাশ্চাত্য ভাবধারার বহনকারী হিসেবে একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন ( বেথুন ) সাহেব ।
1848 খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনের সময়ে লর্ড ডালহৌসি আইন মন্ত্রী হিসেবে তিনি ভারতে আসেন । ভারতবর্ষের নিম্নমানের শিক্ষাব্যবস্থা এবং গ্রামীণ আদবকায়দা দেখে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে প্রয়াসী হয়েছিলেন ।
- বেথুন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা – 1849 সালের 7মে বেথুন সাহেব একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । এই স্কুলের প্রথম সম্পাদক ছিলেন বিদ্যাসাগর মহাশয় । এছাড়াও উদ্যোগী ব্যক্তিবর্গ হলেন মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রামগোপাল ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ।
- বেথুন কলেজের প্রতিস্থাপন – সমসাময়িককালে সামাজিক বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার জন্য বেথুন সাহেব মহিলা কলেজ স্থাপন করেন যা বেথুন কলেজ নামে পরিচিত । কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ছিলেন প্রথম মহিলা স্নাতক এবং চিকিৎসক ।
- আধুনিক শিক্ষা বিস্তার – নিজ ভাষায় শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বেথুন সাহেব ছিলেন বিশেষভাবে আগ্রহী এছাড়াও বাংলার নারীদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারে তিনি উদ্যোগী ছিলেন । কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরী, ফিমেল জুভেইলাইন সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ।
১৭. ডেভিড হেয়ার স্মরণীয় কেনো ?
অথবা,
পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ডেভিড হেয়ারের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর – ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভারতে এসে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভারতীয়দের কল্যাণের উদ্দেশ্যে এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে যিনি প্রয়াসী হয়েছিলেন তিনি হলেন ডেভিড হেয়ার । মানবজাতির কল্যাণে এই দেশে কাজ করার জন্যে তিনি আর নিজের দেশে ফেরেননি ।
শিক্ষা ক্ষেত্রে ডেভিড হেয়ারের ভূমিকা
- ক্যালকাটা বুক সোসাইটি প্রতিস্থাপন – তৎকালীন বাংলার দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার এবং বিভিন্ন ভাষায় বই ছাপানো প্রভৃতি কাজের উদ্দেশ্যে 1817 সালে ডেভিড হেয়ার ক্যালকাটা বুক সোসাইটি প্রতিস্থাপন করেন।
- হিন্দু কলেজ স্থাপন – উচ্চশিক্ষা বিস্তারের জন্য 1817 সালে ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে কলকাতায় হিন্দু কলেজ স্থাপিত হয় । রাজা রামমোহন রায় এবং রাধাকান্ত দেব কেও তিনি সাহায্য করেন । হিন্দু কলেজটি বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিতি ।
- ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা – 1818 সালের 1লা অক্টোবর গঠিত হয় ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি যার মূল লক্ষ্য ছিল কলকাতা এবং কলকাতা সংলগ্ন স্কুলগুলিতে উন্নত মানের শিক্ষাদান এবং নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা ।
- হেয়ার স্কুল – ডেভিড হেয়ার 1818 সালে কলকাতায় একটি প্রতিষ্ঠান গড়েন যার তৎকালীন নাম ছিল পটলডাঙ্গা অ্যাকাডেমি । সেইসময় সেখানে ইংরেজি ভাষায় পাঠদান করা হতো ।
১৮. নারীমুক্তি আন্দোলনে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সাফল্য কি ছিল ?
অথবা,
সমাজ সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের কৃতিত্বের পরিচয় দাও ।
উত্তর – উনিশ শতকের সামাজিক সংস্কারক হিসেবে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় । নারীমুক্তির উদ্দেশ্যে এবং সামাজিক অসহায়তার বিরুদ্ধে তিনি মুখর প্রতিবাদী ছিলেন। বাস্তববাদী সংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন অন্যতম দৃষ্টান্ত।
- সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগর
- বিধবাবিবাহ
- জনমত গঠন – সমকালীন সমাজে বিধবা নারীদের দ্বিতীয়বার বিবাহের কোনো অনুমতি ছিল না । বিধবাবিবাহের সমর্থনে তিনি শক্তিশালী জনমত গঠন করেছিলেন
- আইন পাশ – লর্ড ডালহৌসি 15 নং রেগুলেশন আইনের দ্বারা বিধবাবিবাহ আইন পাশ করেন । এরপর 1856 সালে 26 শে জুলাই বড়লাট লর্ড ক্যানিং আইনি স্বীকৃতি দেন।
- রীতি প্রণয়ন – 1856 সালের 7 ডিসেম্বর প্রথম বিধবা বিবাহ প্রচলিত হয় ।
বাল্যবিবাহ বিরোধ
সেই সময়ে তাঁর অপর একটি সামাজিক সংস্কার ছিল বাল্যবিবাহের বিরোধিতা । এর বিরুদ্ধে তিনি জনমত গঠন করেন এবং 1860 সময়ে সালে সরকার মেয়েদের সর্বনিম্ন বিবাহের বয়স করা হয় 10 বছর ।
বহুবিবাহ বিরোধ
উনিশ শতক ছিল নারীদের চরম দুর্দশার সময় । এই সময় সামাজের আর এক ব্যাধি ছিল বহুবিবাহ প্রথা। ঈশ্বচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই প্রথার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিলেন ।
- নারী স্বাধীনতা – শুধু বিধবা বিবাহ নয় বিদ্যাসাগর ছিলেন নারী স্বাধীনতার অন্যতম নক্ষত্র । সমকালীন সমাজের কুসংস্কার , অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করেছিলেন। নারীমুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি নারীদের সমান স্বাধীনতার কথা বলেছেন।
- সংস্কারপন্থী মনোভাব – সংস্কারপন্থী ও যুক্তিবাদী মনোভাবাপন্ন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় রক্ষনশীল সমাজের বিরুদ্ধে এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত ছিলেন।
১৯. ঊনবিংশ শতকের নবজাগরণ বলতে কি বোঝায় ?
অথবা,
উনিশ শতকের নবজাগরণ বাংলায় কি প্রভাব ফেলেছিল ?
উত্তর – উনিশ শতকে বাংলার ধর্ম, সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে এবং সাংস্কৃতিক ভাবজগতে বৌদ্ধিক আন্দোলন শুরু হয় যাকে ঐতিহাসিকরা ইতালির নবজাগরণের সাথে তুলনা করে ‘ Bengal Renaissance ‘ বা বঙ্গীয় নবজাগরণ বলেছেন ।
নবজাগরণ – সমকালীন বাংলা ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক । এই সময় বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা, দর্শন, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ প্রভৃতি বিষয়ে অগ্রগতি ঘটে, একেই নবজাগরণ বলা হয় ।
নবজাগরণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
ধর্মনিরপেক্ষতার উদাসীনতা – নবজাগরণে হিন্দুত্ববাদীদের আধিক্য থাকায় তাকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে গণ্য করা যায় না ।
কলকাতা নির্ভর কাজ – নবজাগরণ ছিল কলকাতা নির্ভর ফলে বাংলার সর্বত্র অঞ্চলে এর প্রভাব দেখা যায়নি ।
সরকারপ্রীতি মনোভাব – নবজাগরণে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ সামাজিক সংস্কার কে গুরুত্ব দিলেও দেশ স্বাধীনের প্রতি তাদের কোনো ঝোঁক ছিল না।
অবহেলিত মুসলিম সম্প্রদায় – হিন্দু সমাজের পৃষঠপোষকতায় মুসলিমরা ছিল অবহেলিত তাই নবজাগরণের সাথে তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি ।
অপরিবর্তিত সমাজব্যবস্থা – নবজাগরণবাদ সামাজিক ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন আনতে পারে নি । তাদের মূল দিক শিক্ষা হওয়ার ফলে সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস, জাতিভেদ প্রথা প্রভৃতি একইরকম ছিল, কোনো পরিবর্তন আসে নি ।