বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ ( উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিংশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা - Bikolpo Chinta Ebong Udyog: Unish Shotoker Modhyobhag ebong Kuri Shotoker Prothom Bhag History WBBSE Madhyamik Class 10

Here you will learn the basics of বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ ( উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিংশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – Bikolpo Chinta Ebong Udyog: Unish Shotoker Modhyobhag ebong Kuri Shotoker Prothom Bhag History WBBSE Madhyamik Class 10 Chapter 5 History Itihas WBBSE Madhyamik in a simple language it is for Bengali medium students who are studying under West Bengal Board of Secondary Education and preparing for their Madhyamik exam (Class 10 WBBSE) Here you will find all necessary and important WBBSE Madhyamik Suggestions class 10, notes, solved sample question paper in Bangla along with video lectures from expert teachers

এখন সহজে পাস্ করুন পরীক্ষা skillyogi'র নোটস, সাজেশন, সল্ভড পেপার এবং ভিডিও লেকচারের মাধ্যমে।

ভূমিকা: 

ভারতে যখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন কার্য চলে তখন আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি ঘটে। আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটায় ঔপনিবেশিকদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চিন্তাভাবনার উন্নতি ঘটে। এই শতকে ধীরে ধীরে অনেকগুলি ছাপাখানা আবিষ্কার হলে মানুষের কাছে বইপত্র পৌঁছে যায় এবং এই সময় মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। বলা যায় এই শতকে নতুনভাবে এক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

Baptist Mission Press, Calcutta, India

বাংলায় ছাপাখানা বিস্তারের ইতিহাস:

চীনে প্রথম মুদ্রণ শিল্পের বিকাশ ঘটে আনুমানিক ৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে। এই প্রযুক্তি আরব থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ(১৪০০-১৪৬৮ খ্রী:)যখন মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার করেন তখন ছাপাখানার বিকাশ শুরু হয়। এজন্য জোহানেস গুটেনবার্গ কে ‘ছাপাখানার জনক’ বলা হয়। 

  • পর্তুগিজ মিশনারীরা প্রথম মুদ্রণ যন্ত্র বাংলা বই ছাপায় এবং প্রথমে রোমান হরফে বাংলা বই ছাপিয়ে নিজেদের দেশ থেকে আনায়।
  • ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে জেমস অগাস্টাস হিকি  কলকাতাতে একটি ছাপাখানা তৈরি করেন।
  • ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে চার্লস উইলকিন্স যাকে ‘বাংলার মুদ্রণ শিল্পের জনক’ বলা হয় তিনি হুগলির চুঁচুড়ায় একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে এবং সেই ছাপাখানায় সবচেয়ে প্রথম বাংলা অক্ষরের নকশা তৈরি করেন। 
  • পঞ্চানন কর্মকার এর কিছু বছর পরে মার্জিত বাংলা ভাষার অক্ষরের নকশা তৈরি করেন এবং ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালো হেড লেখা ‘এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ এই বইয়ের মধ্য দিয়ে এই বইয়ের(১৭৭৮-৭৯ খ্রী:)  মাধ্যমে বই ছাপার কাজ বাংলা ভাষায় বই ছাপার কাজ শুরু হয়। 
  • পরে আরো ভালো বাংলা অক্ষরের টাইপ ‘লাইনোটাইপ’ নামে সুরেশচন্দ্র মজুমদার আবিষ্কার করেন।

প্রথম পূর্ববঙ্গের ছাপাখানা আবিষ্কার হয় ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে রংপুরে এবং এই ছাপাখানা থেকেই অন্যতম একটি পত্রিকা ‘রংপুর বার্তাবহ’ প্রথম প্রকাশ করা হয়। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা প্রেস তৈরি হয়।

Baptist Mission Press, Calcutta, India

ছাপাবই ও শিক্ষা বিস্তার >

এই শিক্ষা ব্যবস্থা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে শুধুমাত্র উচ্চ শ্রেণীর মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল কারণ হাতে লেখা বইয়ের দাম অনেক বেশি ছিল। 

ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাড়াতাড়ি ছাপা বই বাজারে আসতে থাকে এবং বইয়ের দাম অনেক কম হওয়ার ফলে সেগুলি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসা অনেক সহজ হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষায় অনেক বই ছাপা হওয়ার ফলে নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ পাওয়ায় দেশে ধীরে ধীরে শিক্ষার প্রভাব বিস্তার লাভ করে।

  • শ্রীরামপুর ছাপাখানা: 
  • ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি শ্রীরামপুর মিশন প্রেস নামে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। 
  • এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং বিশ্বের অন্যতম একটি ছাপাখানা হিসেবে এই শ্রীরামপুরের ছাপাখানাটি শীঘ্রই জনপ্রিয়তা লাভ করে.
  •  এই ছাপাখানা থেকে বিভিন্ন ভাষায় যেমন বাংলা, হিন্দি, অসমীয়া, উড়িয়া, মারাঠি ,সংস্কৃত ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ প্রকাশ হতে শুরু করে। 
  • এছাড়াও এখান থেকে রামায়ণ ও ভারতীয় সাহিত্যের কিছু অনুবাদ, গবেষণামূলক প্রবন্ধ ছাপা হতে শুরু করে
  •   রামরাম বসুর লিখিত  ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’(১৮০১ খ্রীঃ) ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত হয়। 
  • এই ছাপাখানা থেকেই মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার ও বিভিন্ন স্কুল পাঠ্য বই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ছাত্রদের শিক্ষাদানের জন্য এখান থেকে ছাপা হয়। 
  • এরপর ধীরে ধীরে আরও বিভিন্ন প্রেস যেমন 
  • গিলক্রিস্ট ‘হিন্দুস্থানী প্রেস’(১৮০২ খ্রীঃ), 
  • বাবুরাম ‘সংস্কৃত প্রেস’(১৮০৭ খ্রীঃ), 
  • ম্যাথু ল্যাম্পসডেন ‘পার্সিয়ান প্রেস’(১৮০৫ খ্রীঃ)  আবিষ্কৃত হয়। 
  • ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ এবং বাংলা অক্ষরে অনেক সংস্কৃত গ্রন্থ গৌড়ীয় সমাজ প্রকাশিত করে
  • মোট ৪০ টি ভাষায় দুই লক্ষের বেশি বই ছাপা হয় ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। 
  • এই সময় থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা যেমন কলকাতা থেকে প্রকাশিত 
  • গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য এর সম্পাদনায় ‘বেঙ্গল গেজেট’, 
  • ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত ‘সংবাদ প্রভাকর’(১৮৩১ খ্রীঃ), 
  • মার্শম্যান সম্পাদিত মাসিক ‘দিগদর্শন’(১৮১৮ খ্রীঃ), 
  • রামমোহন রায় সম্পাদিত ‘সম্বাদ কৌমুদী’(১৮২১ খ্রীঃ), সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ’(১৮১৮ খ্রীঃ), 
  • ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সমাচার চন্দ্রিকা’(১৮২২ খ্রীঃ), 
  • দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত ‘তত্ত্ববোধিনী’(১৮৪৩ খ্রীঃ) প্রকাশ হতে শুরু করে শ্রীরামপুর ছাপাখানায়।

Baptist Mission Press, Calcutta, India

শ্রীরামপুর ছাপাখানা এর বৈশিষ্ট্য: 

  1. বাংলায় গন শিক্ষার ব্যাপক উন্নতি উন্নতি ঘটে শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, জোসুয়া মার্শম্যান, এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড এর প্রচেষ্টায় এবং গণশিক্ষার প্রসারে শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত বইপত্র গুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে।
  2. এই তিনজন ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে পরিচিত হতে থাকে এবং এই তিনজনের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের হাতে স্বল্পমূল্যে অনেক স্কুল পাঠ্য বই পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়। 
  3. স্বল্পমূল্যে ছাত্রছাত্রীদের কাছে স্কুল পাঠ্য বই পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’(১৮১৭ খ্রীঃ) গঠিত হয় এবং ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি(১৮১৮ খ্রীঃ) কিছু স্কুল গড়ে ওঠা সম্ভব হয়।
  4. এই সোসাইটি মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের জন্য সাধারণ মানুষের হাতে শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে বই ছাপিয়ে দেওয়া হয় 
  5. উইলিয়াম ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হিন্দুস্থানী প্রেস পার্শিয়ান প্রেস ও সংস্কৃত প্রেস থেকে বই ছাপিয়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
  6. এরপর আরও কয়েকটি সোসাইটি যেমন ক্যালকাটা ক্রিশ্চান ট্র্যাক্ট এন্ড বুক সোসাইটি'(১৮২৩ খ্রীঃ), ‘ক্যালকাটা ক্রিশ্চান স্কুল বুক সোসাইটি'(১৮৩৯ খ্রীঃ) এবং ‘ভার্নাকুলার লিটারেচার সোসাইটি’(১৮৫০ খ্রীঃ) গড়ে ওঠে 
  7. ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে ‘স্থানীয় স্কুল সম্বন্ধে আভাস’ নামে একটি নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন গ্রামাঞ্চলের নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের জন্য 
  8. ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশনারীরা বাংলাদেশ 103 টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত করেন
  9. এছাড়াও মিশনারিদের উদ্দেশ্যে উদ্যোগে শ্রীরামপুরে উচ্চশিক্ষার জন্য এশিয়ার প্রথম ডিগ্রি কলেজ (১৮১৮ খ্রীঃ) প্রতিষ্ঠিত হয়।

শিশু শিক্ষার অগ্রগতি :

  •  শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ও ছাপাখানা গুলি অনেক সহায়তা করে এবং এই উদ্দেশ্যে ‘শিশু শিক্ষা’ (১৮৪৯ খ্রীঃ) গ্রন্থটি মদনমোহন তর্কালঙ্কার রচনা করেন। 
  • পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল এই বিখ্যাত কবিতাটি ‘শিশু শিক্ষার’ জন্য আজও খুবই জনপ্রিয় এবং এর 
  • কিছুদিন পর বিদ্যাসাগরের রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ (১৮৫৫ খ্রীঃ)  প্রকাশ করা হলে এটিও খুব জনপ্রিয়তা পায়। 
  • পূর্ববঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য রামসুন্দর বসাক এর লেখা ‘বাল্যশিক্ষা’ (১৮৭৭ খ্রীঃ) খুবই একটি অপরিহার্য বই হিসেবে প্রকাশ পায়। 

এই সময় শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে যে বইগুলি সেগুলি হল- 

  • আনন্দ কিশোর সেন রচিত ‘অর্থের সার্থকতা’ (১৮৬৮ খ্রীঃ), 
  • কেদার কেদারেশ্বর চক্রবর্তীর লেখা ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, 
  • প্রাণ লাল চক্রবর্তী এর লেখা ‘অংকবোধ’ (১৮৬৬খ্রীঃ), 
  • গোবিন্দ প্রসাদ দাসের লেখা ‘ব্যাকরণ সার’ (১৮৫৯ খ্রী:) , 
  • দীননাথ সেনের লেখা ‘বাংলাদেশ ও আসাম এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ’, ‘ঢাকা জেলার ভূগোলএবং সংক্ষেপে ঐতিহাসিক বিবরণ’ ইত্যাদি।

শিশু শিক্ষার অগ্রগতি :

  •  শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ও ছাপাখানা গুলি অনেক সহায়তা করে এবং এই উদ্দেশ্যে ‘শিশু শিক্ষা’ (১৮৪৯ খ্রীঃ) গ্রন্থটি মদনমোহন তর্কালঙ্কার রচনা করেন। 
  • পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল এই বিখ্যাত কবিতাটি ‘শিশু শিক্ষার’ জন্য আজও খুবই জনপ্রিয় এবং এর 
  • কিছুদিন পর বিদ্যাসাগরের রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ (১৮৫৫ খ্রীঃ)  প্রকাশ করা হলে এটিও খুব জনপ্রিয়তা পায়। 
  • পূর্ববঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য রামসুন্দর বসাক এর লেখা ‘বাল্যশিক্ষা’ (১৮৭৭ খ্রীঃ) খুবই একটি অপরিহার্য বই হিসেবে প্রকাশ পায়। 

এই সময় শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে যে বইগুলি সেগুলি হল- 

  • আনন্দ কিশোর সেন রচিত ‘অর্থের সার্থকতা’ (১৮৬৮ খ্রীঃ), 
  • কেদার কেদারেশ্বর চক্রবর্তীর লেখা ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, 
  • প্রাণ লাল চক্রবর্তী এর লেখা ‘অংকবোধ’ (১৮৬৬খ্রীঃ), 
  • গোবিন্দ প্রসাদ দাসের লেখা ‘ব্যাকরণ সার’ (১৮৫৯ খ্রী:) , 
  • দীননাথ সেনের লেখা ‘বাংলাদেশ ও আসাম এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ’, ‘ঢাকা জেলার ভূগোলএবং সংক্ষেপে ঐতিহাসিক বিবরণ’ ইত্যাদি।

Baptist Mission Press, Calcutta, India

ছাপাখানার ব্যবসায়িক পরিকাঠামো গঠন

ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধীরে ধীরে ব্যবসার বাজারে মুদ্রণ শিল্পের ব্যাপক বিস্তার গড়ে ওঠে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মিলিটারি বিল সামরিক বাহিনীর বিধি-বিধান ভাতার ফ্রম প্রভৃতি কলকাতায় জেমস অগাস্টাস হিকি- র ছাপাখানা ব্যবসার ভিত্তিতে ছাপার কাজ শুরু হয়। 

১৭৮০  খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘বেঙ্গল গেজেট’ বা ‘হিকিস গেজেট’ তার ছাপাখানা থেকে ছাপার কাজ শুরু করে। 

  • কলকাতার সবচেয়ে বড় ছাপাখানা উইলকিন্স ‘অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস’ (১৭৮১ খ্রীঃ) নামে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই ছাপাখানায় সরকারি ভিত্তিতে বিভিন্ন বইপত্র এবং ছাপার কাজ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ছাপা হতে শুরু করে। 
  • এখানে উইলিয়াম জোন্স অনূদিত কালিদাসের ‘ঋতুসংহার’, এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকা ‘এশিয়াটিক রিসার্চেস’ ছাপা হয়। 
  • কলকাতার বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে ১৭৮০-১৭৯০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১৯টি সাপ্তাহিক এবং ৬টি মাসিক প্রক্রিয়া পত্রিকা প্রকাশ করা হয় এবং বেশকিছু বাঙালি ব্যবসায়ী এই ছাপাখানার মালিক হয়ে ওঠেন।
  • প্রথম বাঙালি প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা হলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য এবং ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ নামে প্রথম সচিত্র বাংলা বই তিনি প্রকাশিত করেন। 
  • ছাপাখানার ব্যবসায় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, অশ্বিনীকুমার দত্ত, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রাধাকান্ত দেব, কেশব চন্দ্র সেন, কৃষ্ণদাস পাল, নবগোপাল মিত্র, কালীপ্রসন্ন সিংহ প্রমূখ ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন 
  •  মোট ৬৫০ টি বই ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কলকাতায় মুদ্রিত হয়।
  • সরকারি কাগজপত্রের পাশাপাশি পঞ্জিকা, আইনের বই, চিকিৎসাবিজ্ঞান, ভ্রমণ কাহিনী, ধর্মীয় বই, ভারতে ইউরোপের ঘটনাবলী নিয়ে লেখা বই, কবিতা, নাটক, অভিধান, ব্যাকরণ গানের বই প্রভৃতি ছাপাখানায় প্রথমদিকে প্রকাশিত হতে থাকে 
  • শিক্ষার্থীর পরিমাণ ব্যাপক পরিমাণে বাড়তে থাকে স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও স্ত্রী শিক্ষার প্রসারিত হওয়ার পর থেকে এবং বহু মুদ্রণ ব্যবসায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় বইপত্র ছাপাতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। 
  • মোট ১৫২টি সংস্করণে বিদ্যাসাগরের লেখা ‘বর্ণপরিচয়’ প্রকাশ পায় এবং পাঠকদের কাছে ৩৫ লক্ষেরও বেশি ছাপা বই পৌঁছে যায়। 
  • স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম চার বছরের মধ্যে মোট ৫০ হাজার পাঠ্যপুস্তক শুধু বাংলাতেই ছাপানো হয়।
  • ছাপাখানার মালিকরা তাদের ব্যবসা বাড়ানোর সাথে সাথে স্কুল-কলেজে নীতি শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের বই যেমন- হিতোপদেশ, বত্রিশ সিংহাসন, বোধোদয়, বেতাল পঞ্চবিংশতি, তোতা ইতিহাস, নীতিকথা প্রভৃতি বই কাঠের মধ্যে অবশ্যপাঠ্য করে তোলে। 
  • এছাড়াও পাঠ্যবই সাহিত্য, গণিত, ভূগোল ,ইতিহাস, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ,চিকিৎসাশাস্ত্র, কারিগরিবিদ্যা প্রভৃতি বইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। 
  • এছাড়াও সহায়িকা বই ছাপা শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে মুদ্রণ একটি প্রাতিষ্ঠানিক পেশাদারী ব্যবসা হিসেবে মুদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠা পায়। 
  • এছাড়াও অন্যান্য পেশা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় কাগজ বিক্রি বই বাঁধাই বই বিক্রি বই ছাপানো প্রভৃতি পেশার ও বিকাশ ঘটতে শুরু করে এবং কলকাতায় ছাপাখানার সংখ্যাও বেড়ে যায় ধীরে ধীরে ছাপার কাজের চাহিদা বাড়তে থাকলে। 
  • ১৭টি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতায় ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে 
  • ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ছাপাখানার সংখ্যা হয় ৫০টি। 
  • সারা ভারতে ১৮৮৫-৮৬ খ্রিস্টাব্দে মোট ১০৯৪টি ছাপাখানা গড়ে ওঠে এবং এরমধ্যে ২২৯টি ছাপাখানা বাংলাদেশে ছিল।

ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্সের সঙ্গে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সম্পর্ক >

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী(১৮৬৩-১৯১৫ খ্রীঃ) বাংলা ছাপাখানার অগ্রপথিক ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর। তিনি স্কুল শিক্ষা শেষ করে ময়মনসিংহ জেলার মসুয়াগ্রাম থেকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে আসেন এবং তখন থেকেই তিনি বিভিন্ন শিশু পত্রিকাগুলিতে যেমন ‘মুকুল’,’ সাথী’, ‘সখা’,’ বালক’ প্রভৃতি তে লিখতে শুরু করে।

  1. তিনি বেশ কিছু ছবি আঁকেন তার প্রথম বই যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘সিটি বুক সোসাইটি’ থেকে প্রকাশিত ছেলেদের রামায়ণ এর জন্য। সেই বইয়ের মুদ্রণে তিনি খুশি না হওয়ায় বিদেশ থেকে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র এনে কলকাতার শিবনারায়ণ দাস লেনে’ ইউ এন রায় এন্ড কোং’ নামে একটি ছাপাখানা তৈরি করেন।
  2. ‘ইউ এন রায় এন্ড সন্স’ নামকরণ হয় ওই ছাপাখানা টির ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এবং একটি স্টুডিও তৈরি করেন ঐ ছাপাখানার সঙ্গে। 
  3. উপেন্দ্রকিশোর বিভিন্ন ধরনের বই ছবির বই ছাপাখানা থেকে প্রকাশ করতে শুরু করেন এবং ‘প্রসেস প্রিন্টিং’ শিল্পের বিকাশ ভারতের ছাপাখানা থেকেই শুরু হয়। 
  4. তিনি তার পুত্র সুকুমার রায় কে ১৯১১খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে পাঠান আধুনিক ফটোগ্রাফি এবং মুদ্রণ শিল্প সম্পর্কে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য।
  5. ছবি ছাপার ক্ষেত্রে তিনি অনেক উন্নত মানের কৌশল উদ্ভাবন করেন এবং ভারতের প্রথম ‘হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং’ নিয়ে উপেন্দ্রকিশোর প্রথম গবেষণা শুরু করেন। 
  6. সেই সময় সাদাকালোর যুগে এশিয়ায় প্রথম তিনি’ সন্দেশ পত্রিকা’ (১৯১৩ খ্রীঃ ) প্রকাশ করেন যাতে তিনি রঙিন ছবি ছাপতে শুরু করেন। 
  7. পরবর্তীকালে এই পত্রিকার সম্পাদনা করেন তার পুত্র সুকুমার রায় পৌত্র সত্যজিৎ রায় এবং প্রপৌত্র সন্দীপ রায়। 
  8. তার এই প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকটি বই যেমন 
  • পশুপাখি ও ভ্রমণকাহিনী নিয়ে ‘সেকালের কথা’
  • বাংলার লোক কথা নিয়ে ‘টুনটুনির বই’, 
  • বিভিন্ন বিদেশি মহাকাব্য ও উপন্যাস এর বঙ্গানুবাদ 
  • ,‘ছেলেদের মহাভারত’,‘ 
  • গুপি গাইন বাঘা বাইন’ প্রভৃতি প্রকাশিত হতে থাকে।

 বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিস্তারের ইতিহাস

আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে উনিশ শতকে।  শিক্ষার্থীরা পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান সম্পর্কে অনেক কিছু জ্ঞান আহরণ করতে শুরু করে এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে । 

কয়েকজন ইংরেজ কর্মচারী বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার সাথে সাথে কয়েকটি বিজ্ঞান বিষয়ক স্থান যেমন- 

  • স্যার উইলিয়াম জোন্স কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘এশিয়াটিক সোসাইটি ‘(১৭৮৪খ্রীঃ ) , 
  • কর্নেল রবার্ট কিড কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন (১৭৮৭ খ্রীঃ) বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

শ্রীরামপুর কলেজে রসায়ন বিষয়ে অভিজ্ঞ জন ম্যাকে (১৮২১ খ্রীঃ) শিক্ষাদান শুরু করেন।  কোন রকম বিদেশী যন্ত্রপাতি ছাড়াই একটি বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরি করেন শ্রীরামপুরের ছাপাখানার কর্মী গোলকচন্দ্র যার জন্য তাকে প্রথম ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার বলে আখ্যা দেওয়া হয়। 

কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে ভারতের প্রথম টেলিগ্রাফ বার্তা পাঠান কলকাতা টাকশালের কর্মী শিবচন্দ্র নন্দী।

বাংলার বিজ্ঞান চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তারকনাথ পালিত, রাজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, শিশির কুমার মিত্র, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ ,জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মহেন্দ্রলাল সরকার, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাথ সাহা, দেবেন্দ্রমোহন বসু প্রমুখ।

 এ সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য।’ 

  • জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’, ‘
  • বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’,’ 
  • ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স’,’ 
  • কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’,’ বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রভৃতি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য। 

Mahendralal Sarkar.jpg

বিজ্ঞানের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটে বাংলায়। 

  • কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৯০৬ খ্রীঃ), 
  • কলকাতা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৮৫৬খ্রীঃ), 
  • অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্টিফিক  অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডুকেশন'(১৯০৪ খ্রীঃ) , 
  • জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এর ভূমিকা অপরিহার্য।

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স:

মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯ ০৪খ্রীঃ) বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা কারিগরি শিক্ষার অগ্রগতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মানুষের মানুষের অন্ধবিশ্বাস দূর করে যুক্তিবাদের সমর্থক হতে বলেছিলেন চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার।

চিকিৎসা জীবনের প্রথম দিকে তিনি অ্যালোপ্যাথি বিষয়ে এলাপাতি বিষয়ে চর্চা করলেও পরবর্তীকালে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

  • কলকাতার বউবাজার স্ট্রিটে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স‘ বা ‘আই এ সি এস’ বা  ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’ ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাঁফো-র সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়।‘
  • আই এ সি এস’ প্রতিষ্ঠা নিয়মিত পদার্থ এবং রসায়ন বিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতা আয়োজন ইত্যাদি উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মহেন্দ্রলাল সরকার জনসাধারণের দানের অর্থের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটিকে চালু রাখেন। 
  • এই প্রতিষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন প্রধানত স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমূখ। 
  • এই প্রতিষ্ঠানের  প্রথম অধিকর্তা  হন প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায় 
  •  পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ নীলরতন সরকার অধিকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হন।
  • বিভিন্ন দেশ বিদেশের বিজ্ঞান পত্রিকা এবং আই এ সি এস এর নিজস্ব পত্রিকা ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিকস’ ফিজিকস বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজ ছাপা হত। 
  • এই প্রতিষ্ঠান গবেষণার কাজ করে যারা উল্লেখযোগ্য হয়েছেন তারা হলেন চুনিলাল বসু, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন,সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর, মেঘনাথ সাহা, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ,জগদীশচন্দ্র বসু ,কে এন কৃষ্ণান  
  • ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ্যায় ‘রমন ক্রিয়া’ আবিষ্কার করে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন। 
  • এই আই এ সি এসে তে একটি সক্রিয় গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন মেঘনাথ সাহা এবং এই প্রতিষ্ঠানে আলোকবিজ্ঞান, চুম্বকত্ব, রমন ক্রিয়া, এক্স রশ্মি প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গবেষণা করা শুরু হয়। পরে বউবাজার থেকে যাদবপুরে আই এ সি এস স্থানান্তর করা হয়।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের ইতিহাস >

  • ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ২৭ মার্চ ‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’ বা ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি’ স্থাপন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ  মুখোপাধ্যায়
  •  স্বদেশী আন্দোলনের সময় স্বদেশে  বিজ্ঞান চর্চার প্রসারের জন্য স্যার তারকনাথ পালিত(১৮৩১-১৯১৪ খ্রীঃ) এবং রাসবিহারী ঘোষ  আন্দোলনে যোগ দেন। 
  • এই দুজন শিক্ষা দরদি যৌথভাবে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠায় ৩৭.৫ লক্ষ টাকা এবং কলেজের জন্য জমি দান করে সহায়তা করেন। 
  • বর্তমান যুগে তাদের প্রথম প্রতিষ্ঠিত বালিগঞ্জের ক্যাম্পাস টি তারকনাথ পালিত শিক্ষাপ্রাঙ্গন এবং রাজাবাজারের ক্যাম্পাস টি রাসবিহারী শিক্ষাপ্রাঙ্গন  নামে মানুষের কাছে পরিচিত হয়।
  • উন্নত মানের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন, শিশির কুমার মিত্র, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রমূখ শিক্ষাদান করতে শুরু করেন 
  • এইসময় শিক্ষাদানের সাথে সাথে দেশকে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস’ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ভারতের প্রথম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং এর আবিষ্কার করেন শিশির কুমার মিত্র এবং তার উদ্যোগে রেডিও ফিজিক্স এর গবেষণা শুরু হয় এবং এই কলেজের শিক্ষার্থীরা ও বিজ্ঞানের মৌলিক কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়তার হাত এগিয়ে দেয়। 

এই বিজ্ঞান কলেজ থেকে পড়াশোনা করে যারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেন তারা হলেন জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ বোস প্রমূখ এবং সত্যেন্দ্রনাথ বোস জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনে নিজেকে যুক্ত করে দেশ গঠনের কাজে এক অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে।

বসু বিজ্ঞান মন্দির >

আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার প্রসারে উনিশ শতকে ভারতে যারা অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন স্যার জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭ খ্রীঃ)। 

  • ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে  প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা থেকে বিরতি দিয়ে কলকাতায় ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’বা ‘বোস ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা মৌলিক গবেষণার জন্য। 
  • এই প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার গবেষণার ব্যবস্থা করেন যেমন রসায়নবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, পরিবেশ বিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, বায়োফিজিক্স, পদার্থ বিজ্ঞান এবং গবেষণা সকলের কাছে যাতে প্রকাশ পায় তার জন্য পত্রিকায় প্রকাশের জন্য ব্যবস্থা করেন।
  • মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় জগদীশচন্দ্রের  গুরুত্ব যেমন অপরিসীম ছিল এবং তিনি তার বাংলা ভাষায় লেখা ‘অব্যক্ত’  নামক গ্রন্থে বিজ্ঞান বিষয়ক নানা মতামত তুলে ধরেছেন।
  • তার অবদান বর্তমানে রেডিও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি তিনি ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র টি বসু বিজ্ঞান মন্দিরে আবিষ্কার করেন। 

তার এই যন্ত্রের সাহায্যে প্রাণীর মতো উদ্ভিদেরও প্রাণ এবং অনুভূতি শক্তি আছে তা তিনি প্রমাণ করেন

                                                 

C.U. alumni : Seated (L to R): Meghnad SahaJagadish Chandra BoseJnan Chandra Ghosh. Standing (L to R): Snehamoy Dutt, Satyendranath BoseDebendra Mohan Bose, NR Sen, Jnanendra Nath Mukherjee, N C Nag

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠা >

  1. ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ‘কলকাতা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ লর্ড কার্জনের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ শুরু হলে স্বদেশী আন্দোলন অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠে। 
  2. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কে ত্যাগ করার জন্য ছাত্রীদের কাছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কে ব্যঙ্গ করে ‘গোলদিঘির গোলামখানা’ বলে বলে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন 
  3. এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র ব্রিটিশদের অফিস আদালতের কাজ করার জন্য কেরানি তৈরি করা হতো বলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে তারা ব্যঙ্গ করে গোলদিঘির গোলামখানা বলেছে।
  4. কিছু শিখ দেশীয় শিক্ষা প্রিয় মানুষরা বিদেশি শিক্ষানীতির স্বদেশী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিশেষ আগ্রহী হন এবং সর্বপ্রথম জাতীয় শিক্ষা কথাটি ব্যবহার করেন প্রসন্নকুমার ঠাকুর
  5.  জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন স্বদেশী আন্দোলনের সময় কালে সক্রিয় হয়ে ওঠার সাথে সাথে সর্বপ্রথম জাতীয় বিদ্যালয় (৮ নভেম্বর,) রংপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়। 
  6. ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতা এবং সদস্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে প্রায় 15 প্রতিদিন নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ নভেম্বর ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠনের আর্জি রাখা হয় পার্ক  স্ট্রীটে। 
  7. ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ 92 জন সদস্য নিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ বা ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশন’ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। 
  8. শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশ সেবার মনোভাব জাগিয়ে তোলা, নৈতিক শিক্ষা দান, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা দান করা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং জাতীয় আদর্শ অনুসারে সাহিত্য এইসব উদ্দেশ্যের জন্য জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
  9. জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রধান সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকরা হলেন হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ব্রজেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী,রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অরবিন্দ ঘোষ প্রমূখ।
  10. সুবোধ চন্দ্র মল্লিক ১ লক্ষ টাকা , ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ৫ লক্ষ টাকা ,সূর্য কান্ত আচার্য্য চৌধুরী ২.৫ লক্ষ টাকা জাতীয় শিক্ষা অগ্রগতির উদ্দেশ্যে দান করেছিলেন 
  11. ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ পরিষদের অধীনে তৈরি হয়। 
  12. এই কলেজে বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন 
  13. এছাড়াও বিনয়কুমার সরকার, ধর্মানন্দ কোশাম্বী, সখারাম গণেশ দেউসকর, রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় এখানে শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত হন। 
  14. বাংলা বিভিন্ন স্থানে এই পরিষদের সহায়তায় অনেকগুলি জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে ওঠে জাতীয় বিদ্যালয় এর আবির্ভাব ঘটে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরা হয় কয়েকজন ধনবান ব্যক্তি আর্থিক সহায়তার দ্বারা। রাসবিহারী ঘোষ এই বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন।

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট

  1. বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারে স্বদেশী আন্দোলনের সময় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট নামে একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তারকনাথ বালিতে প্রচেষ্টায় তৈরি হয় ।
  2. ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ,  বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এর সঙ্গে যুক্ত হয় 
  3. এখানে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান যেমন পদার্থবিদ্যা রসায়ন বিদ্যা,রসায়ন প্রযুক্তি, শিল্প প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। 
  4. এখান থেকে কারিগরি বিদ্যা শিখে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে বাংলার অনেক শিক্ষিত যুবক এবং ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান যাদবপুরে স্থানান্তরণ এর ফলে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি’ বা (C.E.T) এর নতুন নাম হয়।
  5. ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এই কলেজটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে এবং এখান থেকে বাঙালি যুবকরা কারিগরি বিদ্যার বিভিন্ন শাখা শিখে নিয়ে নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলতে সক্ষম হয়। এদের উদ্যোগেই বহু সংখ্যায় নতুন নতুন কারিগরি প্রতিষ্ঠান বাংলায় গড়ে উঠতে শুরু করে। 

India 1971 Visva Bharati University Shantiniketan Rabindranath Tagore Stamp Stampbazar

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সাপেক্ষে মতামত

সে সময় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার লক্ষ্য একটাই ছিল শিক্ষিত দেশীয় প্রজাতির সৃষ্টি করা যারা অনুগত থাকবে এবং যাদের উপরে নির্ভর করে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। ব্রিটিশদের প্রবর্তিত এই শিক্ষা ব্যবস্থা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়নি এবং তা নানাভাবে সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। 

  1. এই ধরনের শিক্ষা পদ্ধতির দ্বারা ভারতীয় আধ্যাত্বিকতার কোন রকম সম্পর্ক ছিল না। 
  2. প্রধানের ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজ করার জন্য উপযুক্ত কর্মচারী তৈরি করাটাই প্রধান লক্ষ্য ছিল কিন্তু ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে কখনোই একটি সুন্দর মন গড়ে তোলার প্রতি তাদের আকর্ষণ ছিল না। রবীন্দ্রনাথ এই ধরনের শিক্ষাপদ্ধতিকে ব্যাখ্যা করেছেন ‘প্রেমিকের প্রীতি নয়, কৃপণের আসক্তি’। 
  3. ইংরেজরা নিজেদের দরকারে শিক্ষার ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা কেই বেছে নেয়ার ফলে এবারের শাসকের ভাষায় সবরকম বিষয় চর্চা হওয়ার ফলে দেশীয় ভাষার ব্যবহার বহুলাংশে কমে যাচ্ছিল। 
  4. শিক্ষা প্রধানত সর্বজনের জন্য গ্রহণযোগ্য না হয়ে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য চর্চার বিষয় না হয়ে জীবন-জীবিকা উপকরণ হিসেবে মানুষের কাছে তুলে ধরা হচ্ছিল। 
  5. প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে প্রয়োজনে প্রাধান্য সেই সময় শিক্ষাব্যবস্থায় দেওয়া হয়নি। 
  6. এই সময় খ্রিস্ট ধর্মের প্রসার প্রচারে বেশি নজর দিতো খ্রিস্টান মিশনারীরা এবং শিক্ষার প্রসারে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি।
  7. জাতীয় শিক্ষার বিকাশে ভারতের শিক্ষাবিদরা প্রধানত সেই পরিস্থিতিতে ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির পরিচয় জানার সুযোগ না থাকা, ভাষা শিক্ষার দুর্বলতা, বিজ্ঞান চর্চার অসম্পূর্ণ থাকার কারণে উদ্যোগী হয়েছিল। 
  8. ১৯০৫-১৯১১ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ স্বদেশী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথে অগ্রসর হয় এবং উপনিবেশিক শিক্ষা শিক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। 
  9. পরে উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে অন্য ধরনের এক শিক্ষানীতি রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকলের সামনে প্রকাশ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনের ভাবনা >

শিক্ষা হলো বাইরের প্রকৃতি ও অন্ত প্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতামত তার মতে মন ও আত্মার সমন্বয় সাধনের মধ্যে নিজেকে কোন কিছু নিজের উপযোগী করে তোলা হলো শিক্ষা।

ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতি থেকে সম্পূর্ণ একটি পৃথক শিক্ষা নীতি আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে তিনি তার বিভিন্ন রকমের প্রবন্ধ যেমন-

  • ‘শিক্ষার হেরফের’, ‘তোতাকাহিনী’, 
  • ‘স্বদেশী সমাজ’ প্রকৃতি প্রবন্ধে ঔপনিবেশিক শিক্ষা নীতি সম্বন্ধে সমালোচিত মতামত প্রকাশ করেন 

 তার এই পৃথক শিক্ষানীতি তৈরীর জন্য প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে বোলপুর শহরের নিকটবর্তী ভুবনডাঙ্গা।

  1. ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ধর্ম চর্চা করার উদ্দেশ্যে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের পিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ‘শান্তিনিকেতন’ নামকরণ করা হয় ওই আশ্রমটির। 
  2. ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে পাঠভবন নামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন রবীন্দ্রনাথ এবং ওই আশ্রমের তিনি বসবাস করতে থাকেন জীবনের বিভিন্ন সময়ে। 
  3. ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে কলাভবন তৈরি হয় এবং তিনি অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর বাড়ি নির্মাণ করেন প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজের এবং অন্যান্য আশ্রমের মানুষের বসবাসের জন্য। 
  4. শান্তিনিকেতনের যে প্রধান বাংলার সংস্কৃতি  তুলে ধরা হয়েছে তা হলো এখানকার দোল উৎসবে পৌষ মেলা

বিশ্বভারতীর বিভিন্ন পরিকল্পনা>

“মানুষের অভ্যন্তরের মানুষটিকে পরিচর্যা করে খাঁটি মানুষ বানানোর প্রচেষ্টা হলো শিক্ষা”-এটি বলেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার চিন্তা শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অনেকাংশে এগিয়ে ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় হল তার চিন্তার একটি প্রধান দিক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেখেন, পুরানো ইউরোপের শিক্ষাব্যবস্থাকে আড়ালে রেখে নতুন শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে তার সদ্য প্রতিষ্ঠিত মহীশূর(১৯১৬ খ্রীঃ), বারানসি (১৯১৬ খ্রীঃ), পাটনা (১৯১৭ খ্রীঃ), ওসমানিয়া ১৯১৮ খ্রীঃ) বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। এই সময়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন ইউরোপীয় শিক্ষার বদলে  উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে।

  • বিশ্ববিদ্যালয় কর্তব্য যেগুলি সেগুলি হল সত্যানুসন্ধানের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা, মুক্তচিন্তার চর্চা প্রভৃতি। 
  • ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবেন যেখানে শিক্ষাদান শুধুমাত্র আদর্শ পদ্ধতিতে হবে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেন ‘বিশ্বভারতী’। 
  • ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে কলাবিদ্যা সাথে সাথে সব রকম বিষয় অর্থশাস্ত্র, স্বাস্থ্যবিদ্যা, কৃষি তথ্য, পল্লীউন্নয়ন এছাড়া বিজ্ঞানের সেখানে শিক্ষাদান শুরু হয়।
  • দেশ-বিদেশের অনেক পণ্ডিত এবং শিক্ষার্থীরা বিশ্বভারতী শিক্ষাদান পদ্ধতি কে অনেক বেশি সন্তুষ্ট হয়ে তারা এখানে এসে শিক্ষাদান গ্রহণ করতে থাকেন এবং অনেক পণ্ডিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাতে যোগদান করেন।
  • বিশ্বভারতী গ্রন্থাগার বিভিন্ন মূল্যবান গ্রন্থ এবং পত্র-পত্রিকা সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এবং গবেষণা সহ বিভিন্ন রকম শিক্ষাদানের ব্যবস্থা যেমন পল্লী- শিক্ষা, কৃষি- অর্থনৈতিক শিক্ষা, সাহিত্য প্রভৃতি এখানে করা হয়।            
  • শান্তিনিকেতন এবং শ্রীনিকেতন নামে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ক্যাম্পাস কলকাতা থেকে কিছু দূরে অবস্থিত রয়েছে বর্তমানে 
  • এখানকার উপাচার্য নিযুক্ত হন পরিদর্শকের অনুমোদন সাপেক্ষে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং প্রথম উপাচার্য হন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯৫১-১৯৫৩ খ্রীঃ)। 
  • এই বিশ্ববিদ্যালয়টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে 
  • ইন্দিরা গান্ধী, সুচিত্রা মিত্র, মহাশ্বেতা দেবী, অমর্ত্য সেন, এবং সত্যজিৎ রায় ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ছাত্র।

প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ও তার প্রকাশ >

রবীন্দ্রনাথের মতে শিক্ষা , মানুষ এবং প্রকৃতির থেকে আলাদা কোনো বিষয় নয় এবং তার ভাবনায় প্রকৃতি ও মানুষের সাথে শিক্ষার সমন্বয় ঘটানো দরকার। প্রকৃতিভাবনা ছিল তার শিক্ষা ভাবনার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

তিনি মনে করতেন জীবনের অস্তিত্ব একে অপরের সাথে পরিপূর্ণ ভাবে জড়িত। তার মতে পৃথিবীর সকল জীব বৃক্ষদের অবলম্বন এর মাধ্যমেই বেঁচে থাকে কিন্তু নির্মমভাবে বন ধ্বংস হচ্ছে । 

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি বৃক্ষরোপণ উৎসব কে আরো বেশি আগ্রহী করে তোলেন শান্তিনিকেতনে পঞ্চপট্টি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে এবং একটি আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে। তাই শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণ উৎসব হিসেবে প্রতি বৎসর ২২ শ্রাবণ দিনটিকে পালন করা হয়।

    • কৃষিকাজের উন্নতির বিষয়ে মানুষের কল্যাণের জন্য রবীন্দ্রনাথ পল্লীগ্রামের মানুষের বিষয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করতেন এবং ‘হিতৈষী তহবিল‘ গড়ে তোলা হয় জমিদারদের থেকে সম পরিমাণ অর্থের ভর্তুকি নিয়ে।
    • নির্মাণ এসব কিছু অর্থের মাধ্যমে করা হতো। সেই সময় ‘মহর্ষি দাতব্য চিকিৎসালয়’ শিলাইদহে প্রতিষ্ঠা করা হয়। 
    • শিলাইদহে আদর্শ কৃষি ক্ষেত্র তৈরীর মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনে আমূল পরিবর্তন আসে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন- ট্রাক্টর, পাম্পসেট, জৈবসার ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে। 
    • যখন সে সময়ে প্রতিটি ধনী পরিবারের একমাত্র লক্ষ্য ছিল সন্তানদের ব্যারিস্টার বানান ঠিক সেইসময় রবীন্দ্রনাথ কৃষিবিদ্যা শেখাতে ১৯০৬-০৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নিজে পুত্র রথীন্দ্রনাথ, বন্ধু পুত্র সন্তোষচন্দ্র মজুমদার এবং জামাতা নগেন্দ্র গাঙ্গুলীকে বিদেশে পাঠান কৃষিবিদ্যা চর্চার জন্য। 
    • উন্নতির প্রধান লক্ষ্য ছিল জনসাধারণের চাষের কাজে বৈজ্ঞানিক বৈজ্ঞানিক প্রথম ব্যবহার করে উন্নত বীজ সার সেচ ইত্যাদির মাধ্যমে উন্নতি ঘটানো। 
    • তিনি একটি আধুনিক কৃষিখামার গড়ে তোলেন শিলাইদহের কুঠিবাড়ির ৮০ বিঘা জমিতে। 
    • এছাড়াও তিনি কুটির শিল্পের বিকাশে যেমন উদ্যোগ নেন তেমনি ৬ মাইল রাস্তা কুষ্টিয়া থেকে শিলাইদহ পর্যন্ত নির্মাণ করেন। 
    • এমনকি তিনি কৃষিব্যাংক স্থাপন করেন স্বল্পসুদে ঋণ দানের জন্য এবং বিভিন্ন ধরনের প্রজাদের মীমাংসার জন্য সালিশি সভা প্রস্তুত করেন। 
    • কৃষকরা যাতে সঠিক মূল্যে ধান ও পাট কিনে বাজারে বিক্রি করতে পারে সেইজন্য তিনি ‘টেগোর অ্যান্ড কোং’ (১৮৯৫ খ্রীঃ) প্রতিষ্ঠা করেন।

মানুষের সাম্প্রদায়িকতা দূর করাই ছিল রবীন্দ্রনাথের শিক্ষানীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং তিনি হিন্দু মুসলমানের বিভেদ দূর করে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন জমিদারি পরিচালনা করতে এসে। তিনি চিন্তাভাবনা করতেন চাষিদের অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তি দান করা,সন্তানদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।

error: Content is protected !!
Scroll to Top
×

এই ওয়েবসাইটের সব কনটেন্ট এক্সেস করুন শুধু একটা মেম্বারশীপের সাথে।  আজকেই ক্লিক করুন নিচে রেজিস্টার করার জন্যে।  অসুবিধে হলে হোয়াটস্যাপ করুন আমাদের  +919804282819