fbpx

Chapter 3 বারিমণ্ডল Barimondol Geography Bhugol Subject Wbbse Madhyamik Class 10

আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে

  • প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics  গুলো সহজভাবে.  এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
  • দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
  • তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er  প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
  • চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়

আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি

সমুদ্রস্রোত (Ocean Currents)

 

সমুদ্রস্রোত : পৃথিবীর আবর্তন, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রজলের লবণতা, উষ্ণতা, ঘনত্বের তারতম‍্য, সমুদ্রতলের গভীরতা প্রভৃতি কারণে সমুদ্রের জলরাশি একস্থান থেকে অন‍্যস্থানে অগ্রসর হয়, একে সমুদ্রস্রোত  বলে‌ ।

বৈশিষ্ট্য : 

  • সমুদ্রস্রোত একমুখী কিন্তু মনে রাখতে হবে ভারত মহাসাগরের মৌসুমী স্রোত বিপরীতমুখী।
  • অগভীর সমুদ্রে সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ বেশি।
  • এর গতিবেগ ঘন্টায় 3-9 কিমি।
  • ফেরেলের সূত্রানুযায়ী, উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়।

সমুদ্রতরঙ্গ (Sea waves)

 

সমুদ্রতরঙ্গ : সমুদ্রের উপরিভাগের জলরাশি প্রবল বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিকম্পের কারণে, একই স্থানে অবস্থান করে দুই-এক মিটার ওঠানামা করে, একে সমুদ্রতরঙ্গ বলে ।

সমুদ্রস্রোতের সঙ্গে সমুদ্রতরঙ্গের পার্থক‍্য (Comparison between Ocean Currents and sea waves)

বিষয়সমুদ্রস্রোতসমুদ্রতরঙ্গ
প্রকৃতিসমুদ্রের জলরাশি নির্দিষ্ট দিকে প্রভাবিত হয় ।উলম্বভাবে ওঠানামা করে একইস্থানে ।
স্থান পরিবর্তনএকটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে নির্দিষ্ট পথে স্থানান্তরিত হয় ।একই স্থানে আবদ্ধ থাকে ।
উপকূলের সঙ্গে সম্পর্কউপকূলের কোনো পরিবর্তন হয় না ।ক্ষয়কাজ ও সঞ্চয়কাজের মাধ‍্যমে পরিবর্তন হয় ।
উৎপত্তির কারণমৌসুমি বায়ুপ্রবাহ, জলের উষ্ণতা, লবণতা, তটরেখার অবস্থান ইত‍্যাদি।বায়ুপ্রবাহের গতিপথ, সুনামি ।
জলবায়ুর উপর প্রভাবউষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোত জলবায়ুকে প্রভাবিত করে ।জলবায়ুর উপর কোনো প্রভাব ফেলে না ।

সমুদ্রস্রোতের প্রকারভেদ 

 

  1. উষ্ণ স্রোত : সমুদ্রজলের উপর দিয়ে ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ ও হালকা জলরাশি শীতল অঞ্চলে প্রবাহিত হয়, একে বলে উষ্ণ স্রোত । যেমন: নিরক্ষীয় স্রোত ।
  2. শীতল স্রোত : সমুদ্রজলের নীচের অংশ দিয়ে মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জলরাশি উষ্ণমন্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়, একে শীতল স্রোত বলে । যেমন: ল্যাব্রাডার স্রোত ।

সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ

 

  • পৃথিবীর আবর্তন : পৃথিবীর আবর্তনের কারণে কোরিওলিস বলের প্রভাবে সমুদ্রস্রোত  উত্তর গোলার্ধের ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধের বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় । নিরক্ষীয়  অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন বেগ বেশি । তাই সমুদ্রস্রোতগুলি নিরক্ষরেখার উভয়পাশ দিয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সৃষ্টি হয় ।
  • বায়ুপ্রবাহ : নিয়ত বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রসৃষ্টির প্রধান কারণ । নিয়ত বায়ুপ্রবাহ ঘর্ষণ বলের মাধ‍্যমে জলরাশিকে তার গতিপথের দিকে তাড়িত করে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি করে ।
  • সমুদ্রজলের লবণতা ও ঘনত্বের পার্থক্য : সমুদ্রজলের লবণতার তারতম্যের কারণে ঘনত্বের তারতম্য ঘটে এবং এর ফলে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়। অধিক লবনাক্তযুক্ত ভারী জল অন্তঃস্রোতরূপে কম লবনাক্ত হালকা জলের দিকে প্রবাহিত হয় এবং কম লবনাক্ত হালকা জল বহিঃস্রোতরূপে অধিক লবণাক্তযুক্ত ভারী জলের দিকে প্রবাহিত হয়, এইভাবেই সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি করে।
  • বরফের গলন : সমুদ্র মধ্যস্থিত কোনো বরফ গলে গেলে মিষ্টি জলের যোগান বাড়ে, ফলে জলস্ফীতি ঘটে এবং জলের লবণতাও হ্রাস পায়। ফলত এই অঞ্চলের জলরাশি নিম্ন-জলতলবিশিষ্ট অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি করে।
  • সমুদ্রজলের উষ্ণতার তারতম্য : সমুদ্রজলের উষ্ণতার প্রধান কারণ হলো সূর্যরশ্মির পতন কোণের পার্থক্য। নিরক্ষীয় অঞ্চলের সূর্যের লম্বরশ্মি পতিত হওয়ায় এখানের  জল অনেক বেশি উত্তপ্ত ও হালকা হয়, ফলে এই উষ্ণ ও হালকা সমুদ্রজল শীতল মেরুর দিকে যায় এবং মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জল উষ্ণ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। এই ভাবেই সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়।
  • ঋতু পরিবর্তন : ঋতু অনুযায়ী বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তন হয় এবং দিক পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রস্রোতেরও গতিপথ পরিবর্তিত হয়।

পৃথিবীব্যাপী সমুদ্র স্রোতের প্রভাব 

 

মগ্নচড়া সৃষ্টি ও তার বাণিজ‍্যিক গুরত্ব : শীতল সমুদ্রস্রোতের সঙ্গে হিমশৈল ভেসে আসে এবং তা উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায় । এর ফলে হিমশৈলের সাথে আসা নুড়ি, বালি, কাঁকড় সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত হয় এবং মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে ।

  • এই মগ্নচড়া গুলিতে প্রচুর পরিমাণে প্ল্যাঙ্কটন জন্মায় যেগুলি মাছের প্রিয় খাদ‍্য ।
  • উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাতে মাছেরা আকর্ষিত হয় ।
  • মগ্নচড়া অঞ্চলে বাণিজ‍্যিক মৎসক্ষেত্র গড়ে ওঠে এবং এখান থেকে বাণিজ‍্যিক ভিত্তিতে মৎস শিকার হয় ।

উপকূলের জলবায়ু : সমুদ্রস্রোত উপকূলীয় জলবায়ুকে প্রভাবিত করে । উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে উপকূলীয় জলবায়ু কিছুটা উষ্ণ হয় আবার শীতল স্রোতের প্রভাবে উপকূলীয় জলবায়ু শীতল হয় । যেমন- ইউরোপের উত্তর পশ্চিমের জলবায়ুকে, উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক সমুদ্রস্রোত সারাবছর মৃদুভাবাপন্ন রাখে ।

জলবায়ুর  পরিবর্তন : 2-7 বছর অন্তর অন্তর দক্ষিণ আমেরিকার ডিসেম্বরে পেরু ও চিলির উপকূলে দক্ষিণমুখী অস্থির উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়, তাকে এল-নিনো বলে । এল-নিনো বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে অনেকাংশ দায়ী ।

যেমন : এল-নিনোর প্রভাবে পেরু, চিলি প্রভৃতি অঞ্চলে ঝড় বজ্র সহ বৃষ্টিপাত হয় । কয়েক বছর অন্তর শীতকালে শীতল উত্তরাভিমুখী পেরু স্রোত সৃষ্টি হয়ে বিশ্ব জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায়, একে লা-নিনো বলে । এর প্রভাবে পেরু -চিলি ইকুয়ডরের মরু অঞ্চলে অনাবৃষ্টি, খরা ও শীতে শৈত প্রবাহের সৃষ্টি হয় ।

জোয়ার ভাঁটা (Tides)

জোয়ার ভাঁটা : প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর সাগর-মহাসাগরের জল এক জায়গায় স্ফীত বা ফুলে ওঠে একে জোয়ার বলে। আর অন‍্য জায়াগায় জল অবনমিত হয় একে ভাঁটা বলে।

জোয়ারভাঁটা সৃষ্টির কারণ

 

  • পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাব : নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রানুযায়ী এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে আকর্ষণ করে। অর্থাৎ, এই নিয়মানুযায়ী, পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য পরস্পরকে আকর্ষণ করে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব 15 কোটি কিমি এবং চাঁদের দূরত্ব 3 লক্ষ 84 হাজার 400 কিমি । তাই পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি । চাঁদের আকর্ষণেই সমুদ্রের জলস্ফীতি হয়ে জোয়ারের সৃষ্টি হয় । জোয়ারের সমকোণস্থ অঞ্চলের জলতল নেমে গিয়ে ভাঁটার সৃষ্টি হয় ।
  • পৃথিবীর আবর্তন জনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব :  পৃথিবীর আবর্তনের জন‍্য কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয় । চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীর যেখানে জোয়ার সৃষ্টি হয়, তার বিপরীত দিকেও কেন্দ্রাতিগ বলের জন‍্য জোয়ার সৃষ্টি হয় । জোয়ারের স্থানে বিপুল জলরাশির জন‍্য জলতল নেমে গিয়ে ভাঁটার সৃষ্টি হয় ।

মুখ‍্য জোয়ার : পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের কাছে থাকে সেখানে মাধ‍্যাকর্ষণ বলের প্রভাব বেশি দেখা যায় । ফলে ওই স্থানে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয় । ওই প্রবল জোয়ারটাই হল মুখ‍্য জোয়ার । চন্দ্রের আকর্ষণে সৃষ্টি হয় বলে একে চান্দ্র জোয়ারও বলে ।

গৌণ জোয়ার : চাঁদের আকর্ষণ বল পৃথিবীর যে অংশে বেশি কাজ করে তার বিপরীত দিকে কেন্দ্রাতিগ বলের জন‍্য যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে গৌণ জোয়ার বলে ।

জোয়ারভাঁটার সময়ের ব‍্যবধান

 

পৃথিবীর একবার পূর্ণ আবর্তন করতে সময় লাগে 23 ঘন্টা  56 মিনিট 4 সেকেন্ড । চাঁদ তার কক্ষপথে 13°10′ কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করে এগিয়ে যায় । ফলে পৃথিবীকে পরের দিন চাঁদের সম্মুখীন হতে 13°10’×4 মিনিট = 52 মিনিট 40 সেকেন্ড  সময় অতিরিক্ত লাগে। সুতরাং পৃথিবীর কোনো স্থানে মুখ‍্য জোয়ার ঘটার 24 ঘন্টা 48 মিনিট 44 সেকেন্ড পরে আবার সেই স্থানে মুখ‍্য জোয়ার হবে ।

সুতরাং, মুখ‍্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের সময়ের ব‍্যবধান 24 ঘন্টা 48 মিনিট 44 সেকেন্ড ÷ 2 = 12 ঘন্টা 24 মিনিট  22 সেকেন্ড এবং একটি জোয়ার ও একটি ভাঁটার মধ‍্যে সময়ের ব‍্যবধান 6 ঘন্টা 12 মিনিট 11 সেকেন্ড । এই কারণে পৃথিবীর কোনো স্থানে একই সময়ে জোয়ার ভাঁটা হয় না ।

ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল

ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল : পৃথিবী ও চাঁদ একই সরলরেখায় অবস্থান করলে প্রবল জোয়ার ভাঁটার সৃষ্টি হয়, একে ভরা বা তেজ কোটাল বলে ।

অমাবস্যা তিথি

অমাবস্যা তিথি : অমাবস‍্যা তিথিতে, পৃথিবী সূর্যের মাঝে চাঁদ অবস্থান করলে সমুদ্রের জলরাশির অত‍্যাধিক স্ফীতি ঘটে এবং অমাবস‍্যাতে ভরা কোটালের সৃষ্টি হয় ।

পূর্ণিমা  তিথি

পূর্ণিমা  তিথি : পূর্ণিমা  তিথিতে চাঁদ ও  সূর্যের মাঝে পৃথিবী অবস্থান করলে  সমুদ্রের জলরাশি স্ফীত হয়ে চান্দ্র জোয়ারের সৃষ্টি করে । অন‍্যদিকে সূর্যের আকর্ষণে সূর্য জোয়ারের সৃষ্টি হয় । চাঁদ ও সূর্যের মিলিত শক্তির প্রভাবে পূর্ণিমাতে ভরা জোয়ারের সৃষ্টি হয় ।

মরা কোটাল বা মরা জোয়ার

মরা কোটাল বা মরা জোয়ার : কৃষ্ণ ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পরস্পর এক সরলরেখায় না থেকে সমকোণে অবস্থান করে। এর জন‍্য চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল পরস্পরের বিপরীতে কাজ করে বলে সমুদ্রের জলরাশি সেভাবে ফুলে ওঠে না । একে মরা কোটাল বা মরা জোয়ার বলে ।

সিজিগি, অ্যাপোজি, পেরিজি (SyZyGy, Apogee, Perigee)

 

চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীর সরলরৈখিক অবস্থানকে সিজিগি বলে । চাঁদের  থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র যখন দূরে অবস্থান করে তাকে অ্যাপোজি বা অপসূর বলে । চাঁদের থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র  যখন কাছে অবস্থান করে, তাকে অনুসূর বা পেরিজি বলে । একটি চান্দ্রমাসের 14 দিন ছাড়া ছাড়া পেরিজি ও অ্যাপোজি হয় ।

বানডাকা বলতে কি বোঝায় ?

বানডাকা : বর্ষাকালে ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল স্ফীত হয়ে নদী ও মোহনার মধ্য দিয়ে প্রবলবেগে নদীতে প্রবেশ করে এবং নদীতে প্রবল জলস্রোতের সৃষ্টি করে, একেই বলে বান ডাকা । যেমন- হুগলি, সুন্দরবন অঞ্চলের নদ-নদী, ইংল্যান্ডের টেমস নদী, ব্রাজিলের আমাজন নদী প্রভৃতি নদীতে বান দেখা যায় ।

জোয়ার ভাটার ফলাফল (Effect of Tides)

জোয়ার ভাটার ফলাফল : 

জোয়ার ভাটার  সুবিধা 

  • জোয়ারের সময় নদীর জলের পরিমাণ ও উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে  নৌকা জাহাজ চলাচলের সুবিধা হয় ।
  • ভাটার টানে নদীর আবর্জনা ও পলি সমুদ্রে গিয়ে নদীর গভীরতা বজায় রাখে ।
  • জোয়ারের সময় সমুদ্রের মাছ নদীতে চলে আসায় জেলেদের  জীবিকা অর্জনের সুবিধা হয় ।
  • জোয়ার ভাটার গতিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ।

জোয়ার ভাটার অসুবিধা

  • জোয়ারের সময় সামদ্রিক নোনা জল নদীতে প্রবেশ করায় নদীর জল লবণাক্ত হয়ে  ওঠ, এর ফলে আমাদের জল পান করতে অসুবিধা হয় । প্রবল জোয়ারের জন্য ঘরবাড়ি, চাষাবাদের জমি ও উদ্ভিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।

SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of বারিমণ্ডল Barimondol

1 MARKS QUESTIONS of বারিমণ্ডল Barimondol

১. কোন দিকে প্রবাহিত হয় উত্তর ভারত মহাসাগরীয় স্রোত?

উত্তর:-  উত্তর-পূর্ব দিকে।

২. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলিত প্রবাহের গুরুত্ব কি?

উত্তর:-  মৎস্য চারণ ভূমি গড়ে ওঠা।

৩. কোন মহাসাগরে দেখা যায় হিমপ্রাচীর?

উত্তর:-   আটলান্টিক মহাসাগরে।

৪. কোথায় সৃষ্টি হয় শীতল স্রোত?

উত্তর:-  মেরু অঞ্চলে।

৫. আটলান্টিক মহাসাগরের একটি উষ্ণ ও একটি শীতল স্রোতের নাম লেখ।

উত্তর:-  উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত এবং শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত।

৬. কুরোশিও স্রোত কোথায় দেখা যায়?

উত্তর-  জাপানের পূর্ব উপকূলে।

৭. উষ্ণ স্রোত কোথায় সৃষ্টি হয়?

উত্তর:-  নিম্ন ও মধ্য অক্ষাংশে।

৮. স্রোতহীন ভাসমান উদ্ভিদ যুক্ত সাগরকে কি বলে?

উত্তর:-   শৈবাল সাগর।

৯. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের সংযোগের ফলে কি সৃষ্টি হয়?

উত্তর:-   ঝড় ও কুয়াশা।

১০. সমুদ্রের উপরের অংশে যেসব মাছ ঘুরে বেড়ায় তাদের কি বলা হয়?

উত্তর:-  পিলেজিক মৎস।

১১. কোথায় জন্মায় প্ল্যাংকটন নামে অতিক্ষুদ্র সামুদ্রিক উদ্ভিদ?

উত্তর:-  উষ্ণ ও শীতল সমুদ্র স্রোতের সংযোগস্থলে।

১২. দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম লেখ।

উত্তর:-  ব্রাজিল স্রোত।

১৩. আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম লেখ।

উত্তর:-  বেঙ্গুয়েলা স্রোত।

১৪. সমুদ্র স্রোতের দিক বিক্ষেপ এর কারণ কি?

উত্তর:-  পৃথিবীর আবর্তন গতি।

১৫. কোন মহাসাগরে সমুদ্র স্রোতের পরিবর্তন দেখা যায় ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে?

উত্তর:-  ভারত মহাসাগরে।

১৬. কোন মহাসাগরে অবস্থিত গ্র্যান্ড ব্যাংক?

উত্তর:-  আটলান্টিক মহাসাগরে।

১৭. কোন কোন দুটি স্রোতের মিলনস্থলে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয়েছে?

উত্তর:-  আটলান্টিক মহাসাগরের উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনস্থলে।

১৮. শীতকালে জাপান উপকূল উষ্ণ থাকে কোন স্রোতের প্রভাবে?

উত্তর:-  উষ্ণ কুরোশিও স্রোত এর প্রভাবে।

১৯. দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম লেখ।

উত্তর:-  হামবোল্ড স্রোত।

২০. দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম লেখ।

উত্তর:-  নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত।

২১. প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম লেখ।

উত্তর:-  ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত।

২২. ভারত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম লেখ।

উত্তর:-  সোমালি স্রোত।

২৩. কোন তিথিতে মরা জোয়ার হয়?

উত্তর:-  শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে।

২৪. পৃথিবীর কোন কোন সাগরে জোয়ার ভাটার প্রভাব নেই?

উত্তর:-   কাস্পিয়ান সাগর, কৃষ্ণসাগর।

২৫. জোয়ারের তীব্রতা রাস বৃদ্ধি ঘটে কেন?

উত্তর:-  পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব এর কারণে।

২৬. কোন জোয়ারের সঙ্গে সম্পর্কিত বানডাকা?

উত্তর:-  ভরা জোয়ার-এর সঙ্গে।

২৭. জোয়ার কত প্রকার ও কি কি?

উত্তর:-  জোয়ার দুই প্রকার মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার।

২৮. চন্দ্রের আকর্ষণের ফলে যে জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে কি বলে?

উত্তর:-  চান্দ্র জোয়ার।

২৯. যে জোয়ার সূর্যের আকর্ষণের ফলে সৃষ্টি হয় তাকে কি বলে?

উত্তর:-  সৌর জোয়ার।

৩০. একটি জোয়ার ভাটার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত?

উত্তর:-  6 ঘন্টা 13 মিনিট।

৩১. চাঁদ ও সূর্যের জোয়ার উৎপন্ন করার ক্ষমতার প্রকৃত অনুপাত কি?

উত্তর:-  11 : 5

সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বাঁক নেয় ___________ সূত্র অনুসারে 

উওর:-  ফেরেলের।

মহাসাগরে বয়ে যায় বেঙ্গুয়েলা স্রোত ।

উওর:-  আটলান্টিক।

…..ও …..স্রোতের প্রভাবে নিউ ফাউন্ডল্যান্ড অঞ্চলে কুয়াশা হয়  ।

উওর:-  শীতল ল্যাব্রাডর, উষ্ণ উপসাগরীয়।

উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের ……সৃষ্টি হয়। 

উওর:-    মগ্নচড়া।

পৃথিবীর সবথেকে বড় মগ্নচড়া ………..

উওর:- ডগার্স ব্যাংক।

নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে মগ্নচড়া হল  ……..

উওর:-   গ্র্যান্ড ব্যাংক।

……..মহাসাগরে হিমশৈল দেখা যায়  ।

উওর:-   আটলান্টিক।

………সৃষ্টি হয় উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে ।

উওর:-  হিমপ্রাচীর।

……ভিত্তিতে সমুদ্রস্রোতের নামকরণ করা হয় ।

উওর:-  বায়ুপ্রবাহ।

আটলান্টিক মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোত হল…………………

উওর:-  ব্রাজিল স্রোত।

……..জাহাজ হিমশৈলের ধাক্কা লেগে ডুবে গিয়েছিল   

উওর:-  টাইটানিক।

হিমশৈলের  …….ভাগ সমুদ্র জলের উপরে থাকে।

উওর:-  1/9

……….উপকূলে এল নিনো দেখা যায়  ।

উওর:-  পেরু।

শৈবাল সাগর  ……সমুদ্র দেখা যায়।

উওর:-  আটলান্টিক।

…………সাগরের উপকূল রেখা নেই।

উওর:-   শৈবাল।

…….ঋতুতে বানডাকা সংঘটিত হয় ।

উওর:-  বর্ষা।

তেজ কটাল হয় …………তিথিতে।

উওর:-অমাবস্যা ও পূর্ণিমা।

অ্যাপোজি অবস্থানে জোয়ারের তীব্রতা ……..

উওর:-  কমে।

পেরিগী অবস্থানে জোয়ারের তীব্রতা  …….

উওর:-   বাড়ে।

গভীর সমুদ্রে জোয়ারের জল এর উচ্চতা হয় ……..পর্যন্ত।

উওর:-   1 থেকে 2 মিটার।

মহাকর্ষ শক্তি বিপরীত শক্তিকে বলে। …. ..

উওর:-   কেন্দ্রবহির্মুখী।

………………তিথিতে জোয়ার ভাটা অতি প্রবল হয়।

উওর:-   আমাবস্যা।

পৃথিবীর উপর সূর্য অপেক্ষা চন্দ্রের আকর্ষণ বল হয় ………….

উওর:-  বেশি।

Multiple Choice Questions – 1 Marks of বারিমণ্ডল Barimondol

(1) আটলান্টিক মহাসাগরের শীতল স্রোতের নাম হল-

  1. বেরিং স্রোত
  2. সোমালি স্রোত
  3. ল্যাব্রাডর স্রোত
  4. নিরক্ষীয় স্রোত

উওর:- ল্যাব্রাডর স্রোত

(2) প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম হল-

  1. কুরোশিয়ো স্রোত
  2. ল্যাব্রাডর স্রোত
  3. সোমালি স্রোত
  4. পেরু স্রোত

উওর:- কুরোশিয়ো স্রোত

(3) আটলান্টিক মহাসাগরে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র স্রোত হল-

  1. কুরোশিও স্রোত
  2. দক্ষিণ আটলান্টিক স্রোত
  3. উত্তর আটলান্টিক স্রোত
  4. ফকল্যান্ড স্রোত

উওর:- উত্তর আটলান্টিক স্রোত

(4) হিমপ্রাচীর প্রধানত কোন মহাসাগরে দেখতে পাওয়া যায়-

  1. ভারত মহাসাগরে
  2. আটলান্টিক মহাসাগরে
  3. প্রশান্ত মহাসাগরে
  4. বঙ্গোপসাগরে

উওর:- আটলান্টিক মহাসাগরে

(5) নিচের কোনটি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম-

  1. বেরিং স্রোত
  2. সোমালি স্রোত
  3. ব্রাজিল স্রোত
  4. পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত

উওর:-  বেরিং স্রোত

(6) ভূপৃষ্ঠের কত শতাংশ অংশ বারিমন্ডলের অন্তর্গত-

  1. 71.4%
  2. 72.6%
  3. 60.2%
  4. 80.1%

উওর:- 71.4%

(7) সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ-

  1. জলীয় বাষ্প
  2. নিয়ত বায়ুপ্রবাহ
  3. কালবৈশাখী
  4. পশ্চিমা বায়ু প্রবাহ

উওর:- নিয়ত বায়ুপ্রবাহ

(8) কোন স্রোতের প্রভাবে উষ্ণ হয় জাপান উপকূল-

  1. আরব সাগরের স্রোত
  2. উষ্ণ কুরোশিও স্রোত
  3. নিরক্ষীয় স্রোত
  4. নিরক্ষীয় স্রোত

উওর:- উষ্ণ কুরোশিও স্রোত

(9) উপসাগরীয় স্রোতের গতিবেগ ঘন্টায়-

  1.   10 কিমি
  2.   8 কিমি
  3.   16 কিমি
  4.   12 কিমি

উওর:- 8 কিমি

(10)  উপসাগরীয় স্রোতের বর্ণ হল-

  1. গাঢ় নীল
  2. নীল
  3. গাঢ় সবুজ
  4. হালকা সবুজ

উওর:- গাঢ় নীল

(11) পেরু স্রোত দেখা যায়-

  1. প্রশান্ত মহাসাগর
  2. আটলান্টিক মহাসাগর
  3. ভারত মহাসাগর
  4. বঙ্গোপসাগর

উওর:- প্রশান্ত মহাসাগর

(12) সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে বাঁক নেয়-

  1. পশ্চিম দিকে
  2. দক্ষিণ দিকে
  3. পূর্বদিকে
  4. উত্তর দিকে

উওর:- পূর্বদিকে

(13) শীতল স্রোতের উৎপত্তিস্থল হল-

  1. উষ্ণমন্ডল
  2. নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল
  3. নিরক্ষীয় অঞ্চল
  4. মেরু অঞ্চল

উওর:- মেরু অঞ্চল

(14) ভারত মহাসাগরের সমুদ্র স্রোত নিয়ন্ত্রিত হয়-

  1. মেরু বায়ু দ্বারা
  2. পশ্চিমা বায়ু দ্বারা
  3. আয়ন বায়ু দ্বারা
  4. মৌসুমী বায়ু দ্বারা

উওর:- মৌসুমী বায়ু দ্বারা

(15) মোজাম্বিক স্রোত ও মাদাগাস্কার স্রোতের মিলিত শাখা হলো-

  1. পেরু স্রোত
  2. কামচাটকা স্রোত
  3. কুরোশিও স্রোত
  4. আগুলহাস স্রোত

উওর:- আগুলহাস স্রোত

(16) সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ-

  1. পরিক্রমণ গতি
  2. মাধ্যাকর্ষণ শক্তি
  3. আবর্তন গতি
  4. কোনোটিই নয়

উওর:- আবর্তন গতি

(17) নিচের কোনটি পৃথিবীর বৃহত্তম গভীরতম মহাসাগর-

  1. আটলান্টিক মহাসাগর
  2. ভারত মহাসাগর
  3. প্রশান্ত মহাসাগর
  4. সুমেরু মহাসাগর

উওর:- প্রশান্ত মহাসাগর

(18) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত প্রবাহিত হয়-

  1. সুমেরু মহাসাগর
  2. প্রশান্ত মহাসাগর
  3. আটলান্টিক মহাসাগর
  4. ভারত মহাসাগর

উওর:- প্রশান্ত মহাসাগর

(19) ষাঁড়াষাঁড়ি বান দেখতে পাওয়া যায়-

  1. হুগলি নদীতে
  2. যমুনা নদীতে
  3. দামোদর নদ
  4. ভাগীরথী নদ

উওর:-  হুগলি নদীতে

(20) উত্তর ভারত মহাসাগরের সমুদ্র স্রোত নিয়ন্ত্রিত হয় কোন বায়ু দ্বারা?

  1. স্থানীয় বায়ু
  2. আয়ন বায়ু
  3. মৌসুমী বায়ু
  4. পশ্চিমা বায়ু

উওর:- মৌসুমী বায়ু

(21) কোন স্রোতের কারণে আটলান্টিক মহাসাগরে শৈবাল সাগর এর সৃষ্টি হয়েছে-

  1. পেরু স্রোত
  2. বেঙ্গুয়েলা স্রোত
  3. ল্যাব্রাডর স্রোত
  4. ক্যানারি স্রোত

উওর:- ক্যানারি স্রোত

(22) উষ্ণ স্রোত সাধারণত সৃষ্টি হয়-

  1. মেরু অঞ্চলে
  2. উপক্রান্তীয় অঞ্চল
  3. ক্রান্তীয় অঞ্চলে
  4. নিরক্ষীয় অঞ্চলে

উওর:- ক্রান্তীয় অঞ্চলে

(23) ভারত মহাসাগরের সমুদ্র স্রোত নিয়ন্ত্রিত হয়-

  1. মৌসুমী বায়ু দ্বারা
  2. আয়ন বায়ু দ্বারা
  3. পশ্চিমা বায়ু দ্বারা
  4. লা নিনা বায়ু দ্বারা

উওর:- মৌসুমী বায়ু দ্বারা

(24) হামবোল্ড প্রবাহিত হয়-

  1. প্রশান্ত মহাসাগরে
  2. ভারত মহাসাগরে
  3. সুমেরু মহাসাগর
  4. আটলান্টিক মহাসাগরে

উওর:- প্রশান্ত মহাসাগরে

(25) দুটি মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হয়-

  1. 12ঘন্টা
  2. 24 ঘন্টা 50 মিনিট
  3. 24 ঘন্টা 52 মিনিট
  4. 10 ঘন্টা 1 মিনিট

উওর:- 24 ঘন্টা 52 মিনিট

(26) একটি গৌণ জোয়ার ও একটি মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হয়-

  1. 12 ঘন্টা 25 মিনিট
  2. 12 ঘন্টা
  3. 10ঘন্টা
  4. 24 ঘন্টা 10 মিনিট

উওর:- 12ঘন্টা 25মিনিট

(27) জোয়ার ভাটার মধ্যে সময়ের পার্থক্য হল-

  1. 12 ঘন্টা
  2. 10 ঘন্টা
  3. 6 ঘন্টা
  4. 24 ঘন্টা

উওর:- 6 ঘন্টা

(28) জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির মূল কারণ হলো-

  1.  সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণ
  2. পৃথিবীর পরিক্রমণ
  3. সূর্যের আকর্ষণ
  4. চন্দ্রের আকর্ষণ

উওর:- সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণ

(29) পৃথিবীর একই স্থানে এক দিনে কতবার জোয়ার হয়-

  1. দুবার
  2. একবার বার
  3. সাতবার
  4. পাঁচ বার

উওর:- দুবার

(30) জোয়ার ভাটা হয় এমন একটি নদীর নাম হল-

  1. গঙ্গা নদী
  2. হুগলি নদী
  3. ভাগীরথী নদী
  4. তিস্তা নদী

উওর:- হুগলি নদী

(31) মরা জোয়ার হয় কোন তিথিতে-

  1. অষ্টমী তিথিতে
  2. নবমী তিথিতে
  3. পঞ্চমী তিথিতে
  4. দ্বাদশীতে

উওর:- অষ্টমী তিথিতে

(32) কোন জোয়ারের সঙ্গে বানডাকা সংঘটিত হয়-

  1. প্রত্যক্ষ জোয়ারের সঙ্গে
  2. চন্দ্র জোয়ারের সঙ্গে
  3. ভরা জোয়ার এর সঙ্গে
  4. সৌর জোয়ারের সঙ্গে

উওর:- ভরা জোয়ার এর সঙ্গে

(33) জোয়ার সৃষ্টির ক্ষেত্রে সূর্যের আকর্ষণের থেকে চন্দ্রের আকর্ষণ থাকে-

  1. দ্বিগুণ বেশি
  2. তিনগুণ বেশি
  3. চার গুণ বেশি
  4. সাত গুণ বেশি

উওর:- দ্বিগুণ বেশি

(34) চন্দ্রের আকর্ষণের ফলে সৃষ্টি হওয়া জোয়ার কে বলা হয়-

  1. প্রত্যক্ষ জোয়ার
  2. পরোক্ষ জোয়ার
  3. গৌণ ভাটা
  4. গৌণ জোয়ার

উওর:- প্রত্যক্ষ জোয়ার

(35) বানডাকা সংঘটিত হয়-

  1. গ্রীষ্ম ঋতুতে
  2. হেমন্ত ঋতুতে
  3. শীত ঋতুতে
  4. বর্ষা ঋতুতে

উওর:- বর্ষা ঋতুতে

(36) মুখ্য জোয়ারের প্রতিপাদ স্থানে হয়-

  1.  ভাটা
  2. মুখ্য জোয়ার
  3. গৌণ জোয়ার
  4. ভরা জোয়ার

উওর:- মুখ্য জোয়ার

(37) নদীতে বান ডাকা হয় কোন সময়ে-

  1.  ভরা জোয়ার
  2. মরা জোয়ার
  3. মুখ্য জোয়ার
  4. গৌণ জোয়ার

উওর:- ভরা জোয়ার

(38) অমাবস্যা তিথিতে চাঁদের অবস্থান থাকে-

  1. পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে
  2. পৃথিবী ও সূর্যের সমকোণে
  3. পৃথিবী ও সূর্যের স্থূলকোণ
  4. এর একটি সরলরেখার একদিকে পৃথিবী এবং অন্য দিকে সূর্যের ঠিক মাঝখানে

উওর:- (D) এর একটি সরলরেখার একদিকে পৃথিবী এবং অন্যদিকে সূর্যের ঠিক মাঝখানে

(39) পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব যখন সবথেকে কম তখন যে জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয়-

  1. অ্যাপোজি জোয়ার
  2. মরা কটাল
  3. পেরিজি জোয়ার
  4. ভরা কটাল

উওর:- পেরিজি জোয়ার

(40) প্রতিযোগ অবস্থানের সময় থাকে-

  1. অষ্টমী তিথি
  2. অমাবস্যা
  3. সপ্তমী তিথি
  4. পূর্ণিমা

উওর:- পূর্ণিমা

(41) চন্দ্রের একবার পৃথিবী পরিক্রমণ করতে সময় লাগে-

  1.  27 ½ দিন
  2. 28 ½ দিন
  3. 29 ½ দিন
  4. 30 ½ দিন

উওর:- 27 ½ দিন

Short Questions – 2-3 Marks of বারিমণ্ডল Barimondol

১. সমুদ্রস্রোতের যে কোনো দুটি গুরুত্ব লেখ।

উত্তর : সমুদ্রস্রোতের নানাবিধ গুরুত্বের মধ্যে দুইটি প্রধান গুরুত্ব হল –

  1. শুধু প্রাচীনকালের পালতোলা জাহাজই নয় বর্তমান যুগের বৃহৎ জাহাজও সমুদ্রস্রোতের অনুকূলে চলাচলের সুবিধা পায়।
  2. সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলোর আবহাওয়া ও জলবায়ু সমুদ্রস্রোতের দ্বারা খুব বেশি পরিমাণে প্রভাবিত হয়। শীতল সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে উষ্ণ অঞ্চলের দেশগুলো কিছুটা শীতল হয় তেমনি আবার উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয়ে মেরুপ্রদেশের অঞ্চলগুলিকে উষ্ণ রাখে।

২. জায়র বা গায়র (Gyre) কি ?

উত্তর : কোরিয়োলিস বলের (coriolis force) প্রভাবে সমুদ্রস্রোত বেঁকে গিয়ে বা মিলিত হয়ে একপ্রকার জলাবর্ত বা চক্রের সৃষ্টি করে। একপ্রকার জলাবর্ত কে জায়র (Gyre) বলে।

  • সমুদ্রের মধ্যভাগে এই প্রকার জলাবর্তের সৃষ্টি হয়।
  • জায়র দুই প্রকার – উপক্রান্তীয় জায়র ও উপমেরুদেশীয় জায়র।
  • জায়রের স্রোতের গতি উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে চলতে থাকে।

৩. ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম বলো।

উত্তর : ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট দুটি উষ্ণ স্রোত হল – 1. সোমালি স্রোত এবং 2. আগুহলাস স্রোত

  1. সোমালি স্রোত – দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের একটি শাখা আফ্রিকার সোমালিয়ার পাশ দিয়ে উত্তরপূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।
  2. আগুহলাস স্রোত – মাদাগাস্কার দ্বীপের দক্ষিণাংশে মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিক স্রোত পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে সেই মিলিত প্রবাহ দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে কুমেরু স্রোতের সাথে মিলিত হয়।
  • ভারত মহাসাগরে দুটি শীতল স্রোত হল – 1. দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় স্রোত (কুমেরু স্রোত) ও 2. পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত
  1. দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় স্রোত – কুমেরু স্রোতের একটি শাখা আফ্রিকার দক্ষিনদিক দিয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করেছে যা পরে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ দিয়ে পূর্বে বেঁকে আবার প্রশান্ত মহাসাগরে মিশেছে।
  2. পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত – শীতল কুমেরু মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম থেকে পূর্বে অগ্রসর হয়ে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর দিকে অগ্রসর হয়।

৪. শীতল স্রোত কাকে বলে ? 

উত্তর : উষ্ণ মন্ডলের সমুদ্রজলের অভাব পূরণের জন্য মেরু প্রদেশের শীতল ও ভারী জল সমুদ্রপৃষ্ঠের অপেক্ষাকৃত নিচের অংশ দিয়ে অন্তঃপ্রবাহ বা অন্তঃস্রোত রূপে উষ্ণ মন্ডলের দিকে বয়ে গেলে তাকে শীতল স্রোত বলে। যেমন – কুমেরু স্রোত, বেরিং স্রোত, ক্যানারি স্রোত প্রভৃতি।

  • মেরু অঞ্চলে মেরু বায়ুর প্রভাবে শীতল স্রোতের সৃষ্টি হয়।
  • শীতল স্রোতের সাথে কখনো কখনো হিমশৈল ভেসে বেড়ায়।
  • শীতল স্রোত প্রবাহিত অঞ্চলের উষ্ণতা হ্রাস পায়।

৫. প্ল্যাংকটন কাকে বলে ?

উত্তর : জলে ভাসমান অণুবীক্ষণিক অতিসূক্ষ্ণ জীবসমূহ কে প্ল্যাংকটন বলা হয়।

সমুদ্রের অগভীর স্থানে মগ্নচড়া এলাকায় এই প্ল্যাংকটন পাওয়া যায়। এই সকল অঞ্চলে সমুদ্রের গভীরতা ২০০ মিটারের কম। ফলে অগভীর সমুদ্রের তলদেশে সূর্যালোক পৌঁছতে পারে এবং তাপমাত্রা বজায় থাকে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্ল্যাংকটন জন্মায়। উপকূল ও স্থলভাগের বয়ে আনা পদার্থ এই অঞ্চলে এসে সঞ্চিত হয় যা প্ল্যাংকটন এর অনুখাদ্য।

প্ল্যাংকটন দুই প্রকারের – 1. ফাইটো প্ল্যাংকটন (উদ্ভিদ জাতীয়) ও 2. জু প্ল্যাংকটন (প্রাণী জাতীয়)।

প্ল্যাংকটন সামুদ্রিক মাছের প্রধান খাদ্য। তাই মগ্নচড়া অঞ্চলে সামুদ্রিক মাছের আধিক্য দেখা যায়।

৬. বারিমণ্ডল কাকে বলে ?

উত্তর : ‘বারি’ অর্থাৎ জল, ভূপৃষ্ঠের জলভাগের ভৌগোলিক নাম হলো বারিমণ্ডল। বারিমণ্ডল হল সকল জলরাশির উৎস ও ভান্ডার।

উৎপত্তি – সৃষ্টির শুরুতে পৃথিবী বাষ্পীয় পিন্ড ছিল। শীতল হবার সাথে সাথে এর আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। কোনো অংশ বসে গিয়ে বিরাট খাতের সৃষ্টি করে আর কোনো অংশ স্থলভাগে পরিণত হয়। ক্রমে পৃথিবীর বাইরের ভাগ শীতল হলে জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটাতে থাকে। বহু বছরের অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে নিচু খাত গুলি পূরণ হয়ে হ্রদ, সাগর, মহাসাগরের সৃষ্টি হয়। এগুলিই একত্রে পৃথিবীর সুবিশাল জলরাশি গঠন করেছে। ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৭১% এই জলরাশির দ্বারা আবৃত।

বিভাজন – বারিমণ্ডলের জলরাশির বিস্তার সর্বত্র সমান নয়। মোট জলরাশির ৯৭ ভাগ আছে সাগর ও মহাসাগরে যা লবনাক্ত। অবশিষ্ট ৩ ভাগ মিষ্টি জল যার আবার ২ ভাগ হিমবাহরূপে এবং ১ ভাগ পাওয়া যায় নদী, জলাশয়, হ্রদ ও ভূগর্ভের জল হিসাবে।

৭. নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত কি ?

উত্তর : আটলান্টিক মহাসাগরে উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত ক্ষীণ একটি উষ্ণ স্রোত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। একেই নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বলে। পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হওয়ার জন্য এটি বিপরীত স্রোত নামেও পরিচিত।

৮. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনে আবহাওয়ার ওপর কিরকম প্রভাব পড়ে ?

উত্তর : উষ্ণ স্রোতের উষ্ণতা বেশি হওয়ায় জল বেশি পরিমাণে বাস্পীভুত হয় এবং সেই অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এরফলে উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চল থেকে শীতল বায়ু দ্রুত নিম্নচাপ যুক্ত অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে। ফলস্বরূপ ঘূর্ণিঝড় বৃষ্টিপাত এর জন্য দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া তৈরি হয়। অন্যদিকে, শীতল ও উষ্ণ স্রোতের মিলনে উষ্ণতার হের ফের ঘটে, ফলে উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়।

যেমন – উষ্ণ কুরোশিয়ো ও শীতল ওয়াসিয়ো স্রোতের মিলনে জাপানের উপকূলে দুর্যোগ আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হলে তুষারপাতও ঘটে।

৯. সমুদ্র তরঙ্গ কাকে বলে ? 

উত্তর : বায়ুশক্তির সাহায্যে সমুদ্রের জলরাশির উল্লম্বভাবে ওঠানামা কে সমুদ্রতরঙ্গ বলে। সমুদ্রপৃষ্টের সাথে বায়ুপ্রবাহের ঘর্ষণ সমুদ্রতরঙ্গ সৃষ্টির কারণ। জলপৃষ্টের ওপর বায়ুর ঘর্ষণে সৃষ্ট বৃত্তাকার কক্ষপথে জল তরঙ্গের আকারে উপর নিচ করতে থাকে। তরঙ্গ উপকূলের দিকে এলে গভীরতা কমতে থাকায় তরঙ্গের উচ্চতা ও মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সমুদ্র তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য গুলো হল –

  • তরঙ্গের প্রকৃতি বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতিবেগের ওপর নির্ভরশীল।
  • তরঙ্গ উপকূলের সমকোণ বরাবর ছুটে আসে ও আছড়ে পড়ে।
  • বায়ুপ্রবাহ ছাড়াও ভূমিকম্প বা অগ্নুৎপাত সমুদ্র তরঙ্গের কারণ হতে পারে।
  • সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্পের ফলে তরঙ্গের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে যা সুনামির সৃষ্টি করে।
  • বায়ুশক্তির দ্বারা তরঙ্গ সাধারনত ১ থেকে ৮ মিটার উঠতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই উচ্চতা আরো বেশি হয়।

১০. প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম লেখ।

উত্তর : প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি দুটি উষ্ণ স্রোত হল – 1. ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত ও 2. জাপান স্রোত

ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত – উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতের দক্ষিণ শাখা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল বরাবর দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত রূপে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।

জাপান স্রোত – উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এশিয়ার পূর্ব উপকূলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে উত্তরমুখী হয়ে জাপানের পূর্ব উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয়।

  • প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি শীতল স্রোত হল – 1. বেরিং স্রোত ও 2. পেরু স্রোত

বেরিং স্রোত – শীতল সুমেরু স্রোতের একটি শাখা বেরিং স্রোত নামে বেরিং প্রণালীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উষ্ণ জাপান স্রোতের উত্তর শাখার সাথে মিলিত হয়।

পেরু স্রোত – শীতল কুমেরু স্রোতের একটি শাখা দক্ষিণ মহাসাগর থেকে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে প্রতিহত হয়ে পেরু ও চিলি উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয়।

১১. ফেরেলের সূত্র কি ?

উত্তর : বিজ্ঞানী ফেরেল উনিশ শতকে বায়ু ও সমুদ্রস্রোতের গতিপথ পরিবর্তন এর একটি সূত্র আবিষ্কার করেন। সূত্রটি হল – “পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে উত্তর গোলার্ধের কোনো গতিশীল বস্তু তার প্রকৃত গতিপথের ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়।” উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে যাওয়ার সময় কোরিয়োলিস বলের তারতম্যের জন্য এই বিক্ষেপ ঘটে। পৃথিবীর আবর্তন বেগের জন্যই সমুদ্রস্রোত, বায়ুপ্রবাহ কোনো নির্দিষ্ট সোজাপথে প্রবাহিত হতে পারে না। এই সূত্রের উদাহরণ হিসেবে বলা যায় – দক্ষিণ পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় রেখা অতিক্রমের পর উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে বাঁক নিয়ে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু হিসাবে ভারতে বৃষ্টিপাত ঘটায়।

১২. নরওয়ের উপকূল শীতকালেও বরফমুক্ত থাকে কেন ?

উত্তর : উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও নরওয়ের উপকূল বরাবর সারাবছর উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোত প্রবাহিত হয়। ফলে সেখানকার বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হওয়ায় নিকটস্থ সমুদ্রে শীতকালেও বরফ জমে না।

১৩. বহিঃস্রোত কাকে বলে বা উষ্ণ স্রোতকে বহিঃস্রোত বলার কারণ কি ?

উত্তর : যে জলস্রোত সমুদ্রপৃষ্ঠের অপেক্ষাকৃত উপরের অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয় তাকে বহিঃস্রোত বলে।

উষ্ণ মন্ডল থেকে আগত উষ্ণ সমুদ্রস্রোত হালকা হওয়ায় সমুদ্রের জলের প্রায় উপরিভাগ দিয়ে শীতল মেরু প্রদেশের দিকে বয়ে যায়। তাই উষ্ণ স্রোতের ওপর নাম বহিঃস্রোত।

১৪. কোরিওলিস বল কাকে বলে ?

উত্তর : কোরিওলিস বল সম্পর্কে প্রথম ধারণা দেন জি. ডি. কোরিয়োলিস ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর মতে পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে সৃষ্ট যে বল পৃথিবীর প্রাকৃতিক কার্যকলাপের ওপর প্রভাব ফেলে তাকেই কোরিওলিস বল বলে।

কোরিওলিস বলের প্রভাবেই সমুদ্রস্রোত বা বায়ুপ্রবাহের গতিপথ সোজা না হয়ে গোলার্ধের পরিবর্তনে বাঁক নিয়ে প্রবাহিত হয়। কোরিওলিস বলের কয়েকটি বিশেষত্ব হল –

  • এই বল প্রবাহের দিকের সঙ্গে সমকোনে কাজ করে। ফলে প্রবাহের দিক পরিবর্তন হলেও গতির পরিবর্তন হয়না।
  • এই বল কেবল প্রবাহমান বস্তুর ওপরেই প্রযুক্ত হয়। প্রবাহের বেগ বাড়লে দিক বিক্ষেপনও বাড়ে।
  • এই বলের মান নিরক্ষরেখায় শুন্য এবং দুই মেরুতে সবচেয়ে বেশি হয়।

১৫. সমুদ্র স্রোত কাকে বলে ?

উত্তর : পৃথিবীর আবর্তন, নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রজলের লবনতা, ঘনত্ব ও উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য সমুদ্রের উপরিভাগের জলরাশি নিয়মিতভাবে একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়। সমুদ্রাপকূলের সমান্তরালে সমুদ্রজলের এই আনুভূমিক প্রবাহকে সমুদ্রস্রোত বলে। যেমন – উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, লাব্রাডর স্রোত, মৌসুমী স্রোত প্রভৃতি। সমুদ্রস্রোতের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল –

  • প্রবাহের দিক অনুসারে স্রোতের নামকরণ করা হয়।
  • সমুদ্রস্রোত দুই প্রকারের হয় – উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত।
  • সমুদ্রস্রোত বিভিন্ন গোলার্ধের পরিবর্তনে ফেরেলের সূত্রানুযায়ী বামদিকে অথবা ডানদিকে বেঁকে যায়।
  • সমুদ্রস্রোতের গতি ঘন্টায় গড়ে ৩-৯ কিমি হয়।

১৬. উপসাগরীয় স্রোত কাকে বলে ?

উত্তর : আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত পশ্চিমদিকে মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমী বায়ুর প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দিকে প্রবাহিত হয়। সেখানে নিরক্ষীয় স্রোতের দক্ষিণ শাখার সাথে মিলিত হয়। এর দক্ষিণ-পশ্চিম অংশই উপসাগরীয় স্রোত নামে পরিচিত। এই স্রোত গাঢ় নীল বর্ণের।

১৭. ভারত মহাসাগরের উত্তরভাগের স্রোতগুলি কোন বাতাস দ্বারা প্রভাবিত হয় ?

উত্তর : ভারত মহাসাগরের উত্তরের স্রোত গুলো ঋতু অনুযায়ী গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়।

১৮. উষ্ণ স্রোত কাকে বলে ?

উত্তর : উষ্ণ মন্ডলের হালকা জলরাশি যখন পৃষ্টপ্রবাহরূপে জলের উপরিভাগ দিয়ে শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে বয়ে যায় তাকে উষ্ণ স্রোত বলে। যেমন – নিরক্ষীয় স্রোত, উপসাগরীয় স্রোত প্রভৃতি উষ্ণ স্রোতের উদাহরণ।

  • আয়নবায়ু ও পশ্চিমি বায়ুর প্রভাবে উষ্ণ স্রোত সৃষ্টি হয়ে থাকে।
  • এই স্রোত যে অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয় সেখানকার উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
  • এই উষ্ণ স্রোত বাষ্পীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে।

১৯. অন্তঃস্রোত কাকে বলে বা শীতল স্রোতকে অন্তঃস্রোত বলার কারণ কি ?

উত্তর : যে স্রোত সমুদ্রের জলের নিচের অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে অন্তঃস্রোত বলে।

শীতল মেরু প্রদেশের জলরাশি ঠান্ডা ও ভারী হওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের অপেক্ষাকৃত নিচ দিয়ে উষ্ণ মন্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়। একারণে শীতল স্রোতের ওপর নাম অন্তঃস্রোত।

২০. আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট দুটি উষ্ণ ও দুটি শীতল স্রোতের নাম লেখ।

উত্তর : আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া দুটি উষ্ণ স্রোত হল – 1. ব্রাজিল স্রোত ও 2. নিরক্ষীয় স্রোত

ব্রাজিল স্রোত – দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণে প্রবাহিত হয়।

নিরক্ষীয় স্রোত – নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণে নিরক্ষরেখার সমান্তরালে উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নামে প্রবাহিত হয়।

  • আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট দুটি শীতল স্রোত হল – 1. ক্যানারি স্রোত ও 2. ল্যাব্রাডর স্রোত

ক্যানারি স্রোত – উপসাগরীয় স্রোতের দক্ষিণ শাখা ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের কাছ দিয়ে দক্ষিনে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সাথে মিলিত হয়।

ল্যাব্রাডর স্রোত – সুমেরু মহাসাগরের শীতল স্রোত গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল দিয়ে দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে গ্রিনল্যান্ড স্রোতের সাথে মিলিত হয়। ল্যাব্রাডর উপদ্বীপের কাছে এই স্রোত ল্যাব্রাডর স্রোত নামে পরিচিত।

  ২১. বেলোর্মী কি ?

উত্তর : জোয়ারের ঢেউয়ের পূর্ব থেকে পশ্চিমে গমনকে বেলোৰ্মী বলে। সমুদ্রের তলায় জলের গভীরতা, বায়ুপ্রবাহের মাত্রা, স্রোতের সম্মুখে স্থলের অবস্থান, জলের সাথে সংঘর্ষ প্রভৃতি কারণে বেলোর্মীর সৃষ্টি হয়। এর ফলে জোয়ারের জল ঢেউ তুলে এগিয়ে চলে।

২২. চান্দ্রমাস কাকে বলে ? 

উত্তর : চাঁদ পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে যে ২৭ ১/২ দিন সময় নেয়, সেই সময়কে এক চন্দ্রামাস বলে।

২৩. অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথি কি ?

উত্তর :  ১. অমাবস্যা – অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবীর একই দিকে সূর্য ও চন্দ্র অবস্থান করে অর্থাৎ পৃথিবী ও সূর্যের কেন্দ্রের মধ্যবর্তী স্থানে চন্দ্রের কেন্দ্র অবস্থান করে। এর ওপর নাম সংযোগ অবস্থান।

২. পূর্ণিমা – পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্রের মাঝে অবস্থান করে অর্থাৎ একই সরলরেখায় কল্পনা করলে চাঁদের কেন্দ্র সূর্য ও পৃথিবীর কেন্দ্রের পরে অবস্থান করে।

১. জোয়ারের সীমা কাকে বলে ?

উত্তর : জোয়ারের সময় জলরাশির সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাওয়া এবং ভাঁটার সময় জলরাশির হ্রাস পাওয়ার সর্বনিম্ন সীমার পার্থক্যকে জোয়ারের সীমা বলে।

৩. সিজিগি কি ?

উত্তর : চন্দ্রের কেন্দ্র, পৃথিবী ও সূর্যের কেন্দ্রের সাথে একই সরলরেখায় অবস্থান করলে জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী সেটাকে সিজিগি বলা হয়। প্রতিমাসে দুই বার এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

১. অমাবস্যার দিন চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী স্থানে একই সরলরেখায় অবস্থান করে যাকে সংযোগ অবস্থানও বলা হয়।

২. পূর্ণিমার দিন পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মাঝে একই রেখায় থাকলে যা প্রতিযোগ অবস্থান নামে পরিচিত।

৪. গৌণ জোয়ার কি ?

উত্তর : চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীর যে প্রান্তে মুখ্য জোয়ার হয়, তার বিপরীত প্রান্তে চাঁদের আকর্ষণ বল কম কম হওয়ায় মুখ্যত পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে যে জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে গৌণ জোয়ার বলে।

৫. ষাঁড়াষাঁড়ি বান কাকে বলে?

উত্তর : বর্ষাকালে ভরাকোটালে সমুদ্রের জল মোহনা দিয়ে প্রবেশ করে উজানের দিকে এগিয়ে যায়। ফলে প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। যা বানডাকা নামে পরিচিত। প্রধানত ভাগীরথী-হুগলি ও সুন্দরবনের নদীগুলোতে বর্ষাকালের বান ডাকার সময় জোয়ারের জল ৫-৯ মিটার পর্যন্ত বাড়ে এবং জোয়ারের জল ভীষণ শব্দে উজানের দিকে বয়ে যায় যেন মনে হয় দুই ষাঁড় গর্জন করছে। তাই একে ষাঁড়াষাঁড়ি বান বলে।

৬. পেরিজি বলতে কি বোঝায় ?

উত্তর : পৃথিবীকে প্রদক্ষিনের সময় চাঁদ ও পৃথিবীর নিকটতম অবস্থানকে পেরিজি বলে। এই দূরত্ব ৩,৫৬,০০০ কিমি.

৭. জোয়ারের জলের উচ্চতা বলতে কি বোঝায় ?

উত্তর : জোয়ারের জলের উচ্চতা ১ ১/২ মিটারের বেশি হয় না। সময় বিশেষে উপকূল অঞ্চলে জোয়ারের উচ্চতা ৩-১২ মিটার হয়ে থাকে।

৮. নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র সম্পর্কে লেখ।

উত্তর : মহাবিশ্বের যেকোনো দুই বস্তু তাদের কেন্দ্রের সংযোজক সরলরেখা বরাবর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণের মান বস্তুদ্বয়ের ভরের গুনফলের সমানুপাতিক এবং দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।

৯. অষ্টমীর জোয়ারকে মরা কোটাল বলার কারণ কি ?

উত্তর : অষ্টমী তিথিতে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী পরস্পরের সমকোনে অবস্থান করে। ফলে দুটি বিপরীত আকর্ষণ বলের সৃষ্টি হয়। চাঁদের চেয়ে সূর্যের আকর্ষণ বেশি হওয়ায় চাঁদের প্রভাবে মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের তীব্রতা কম হয়। এইজন্য একে মরা কোটাল বলে।

১০. প্রতিযোগ অবস্থান কি ?

উত্তর : পূর্ণিমার দিনে সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের কেন্দ্র যখন এক সরলরেখায় অবস্থান করে, তখন তাকে প্রতিযোগ অবস্থান বলে।

১১. প্রতিদিন জোয়ার ভাঁটা সমান হয় না কেন ?

উত্তর : প্রতিদিন জোয়ার ভাঁটার তারতম্য দেখা যায় কারণ চাঁদ ও সূর্যের অবস্থান সর্বদা এক থাকে না অর্থাৎ পরিবর্তনশীল। আবার পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল ও কেন্দ্রাতিগ বলের পার্থক্য থাকে।

১২. এপোজি বলতে কি বোঝায় ?

উত্তর : পৃথিবীকে প্রদক্ষিনের সময় চাঁদ ও পৃথিবীর সর্বাধিক দুরত্বকে এপোজি বলে। এই দূরত্ব ৪,০৭,০০০ কিমি.

১৩. মুখ্য জোয়ার কি ?

উত্তর : চাঁদের পরিক্রমন ও পৃথিবীর আবর্তনের ফলে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের সম্মুখীন হয় সেখানে চাঁদের আকর্ষণ বেশি হওয়ায় সেখানের জলরাশি বেশি বৃদ্ধি পায়। একেই মুখ্য জোয়ার বলে।

১৪. সৌর জোয়ার কি ?

উত্তর : সূর্যের আকর্ষণের জোয়ারের সৃষ্টি হলে তাকে সৌর জোয়ার বলে।

১৫. সংযোগ অবস্থান কি ?

উত্তর : অমাবস্যার দিনে সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবীর কেন্দ্র যখন একই সরলরেখায় অবস্থান করে, তাকে সংযোগ অবস্থান বলে।

১৬. জোয়ার ভাঁটার প্রধান কারণগুলো কি কি ?

উত্তর : জোয়ার ভাঁটা সৃষ্টির প্রধান কারণগুলো হল – 1. পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ বল, 2. চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল।

১৭. চান্দ্র জোয়ার কি ?

উত্তর : অবর্তন গতির ফলে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের সামনে আসে সেই অংশে চাঁদের আকর্ষণে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে চান্দ্র জোয়ার বলে।

১৮. জোয়ার ভাঁটা কাকে বলে ?

উত্তর : চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণে সমুদ্রের জল নিয়মিত এক জায়গায় ফুলে ওঠে, আবার অন্য জায়গায় নেমে যায়। জলরাশির এভাবে ফুলে ওঠাকে জোয়ার এবং নেমে যাওয়াকে ভাঁটা বলে। প্রতিদিন দুইবার করে ক্রমান্বয়ে জোয়ার ও ভাঁটা হয়।

১৯. উচ্চ জোয়ার ও নিম্ন জোয়ার কি ?

উত্তর : সমুদ্রের উপকূলে জোয়ারের সময় জলরাশি সর্বোচ্চ যে উচ্চতায় পৌঁছায় তাকে উচ্চ জোয়ার বলে। আবার, জোয়ারের সময়ই জল সর্বনিম্ন যে উচ্চতায় সমুদ্রতলে অবনমিত হয় তাকে নিম্ন জোয়ার বলে।

২০. বানডাকা দেখা যায় এমন নদীর নাম বলো।

উত্তর : ভারতের ভাগীরথী-হুগলি নদী, ইংল্যান্ডের টেমস, ব্রাজিলের আমাজন প্রভৃতি নদীতে বানডাকা দেখা যায়।

১. ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও ল্যাব্রাডর উপকূল একই অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম উপকূলে বরফ জমে না কেন ?

উত্তর : ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও ল্যাব্রাডর উপকূল একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে তাদের স্থানীয় আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম উপকূলভাগ দিয়ে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের একটি শাখা উত্তর আটলান্টিক স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় সেই অঞ্চলের সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডল অধিক উষ্ণ হয়। ফলে নিকটস্থ উপকূলে বরফ জমতে পারে না।

২. মগ্নচড়াগুলোতে মৎস আহরণক্ষেত্র গড়ে ওঠার কারণগুলো কি কি ?

উত্তর : মগ্নচড়াগুলো মৎস চাষের অনুকূল কারণ –

১. মগ্নচড়া অঞ্চলগুলো অগভীর (গভীরতা ২০০ মিটারের কম) হওয়ায় সূর্যালোক সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে।

২. নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে অবস্থানের জন্য এখানে মাছের বসবাসের উপযুক্ত তাপমাত্রা পাওয়া যায়।

৩. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের সংযোগস্থলে প্ল্যাংকটন নামক এক ধরণের অতিসূক্ষ অণুবীক্ষণিক জীব প্রচুর পরিমাণে জন্মায় যা মাছের প্রধান খাদ্য।

৪. জলের স্রোতের ও তরঙ্গের আবর্তনের ফলে সমুদ্র তলদেশের প্ল্যাংকটন উপরে উঠে আসে।

৫. উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে হিমশৈল গলে গিয়ে প্রচুর জৈব খাদ্য পাওয়া যায় যাতে প্ল্যাংকটনের খাদ্যের অভাব হয় না।

৩. একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও কানাডা ও স্কটল্যান্ডের উপকূলীয় অঞ্চলে তাপমাত্রার পার্থক্য দেখা যায় কেন ?

উত্তর : কানাডা ও স্কটল্যান্ড একই অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও শীতল সমুদ্র স্রোতের প্রভাবে উপকূলের উষ্ণতা কমে শীতল আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। যেমন শীতল সুমেরু স্রোতের একটি শাখা ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে শীতকালে কানাডার তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে -২১.৬℃ চলে যায় । তেমনি আবার উষ্ণ স্রোতের ফলে উপকূল অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। যেমন উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ওপরে ৩.৯℃ থাকে।

৪. নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে ঘন কুয়াশা ও ঝড়-ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় কেন ?

উত্তর : ১. উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু উষ্ণ ও জলীয় বাষ্প পূর্ণ আদ্র থাকে এবং শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের ওপর কার বায়ু শীতল ও শুষ্ক হয়। নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে এই দুরকমের সমুদ্র স্রোত মিলিত হলে উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলীয় বাষ্প পূর্ণ উষ্ণ বায়ু হটাৎ ল্যাব্রাডর স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে জমে যায় এবং এর ফলে নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়।

২. দুই বিপরীতধর্মী বায়ু প্রবাহ পরস্পরের এলে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়। নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে উপসাগরীয় স্রোতের উষ্ণ বায়ু ও ল্যাব্রাডর স্রোতের শীতল বায়ু পরস্পরের মুখোমুখি হওয়ার ফলে এখানে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণাবর্ত বা ঝড়-ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয়।

৫. নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল মৎস্য ক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত কেন ?

উত্তর : কানাডার পূর্ব উপকূলে নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের কাছে আটলান্টিক মহাসাগরে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনস্থলে গ্র্যান্ড ব্যাংক নামক মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই মগ্নচড়ায় একটি বিখ্যাত মৎসক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে।

সুমেরু মহাসাগরের হিমশৈল গুলো শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের সাথে ভেসে আসে এবং উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে গলে যায়। হিমশৈলের মধ্যে থাকা নুড়ি, পাথর প্রভৃতি সমুদ্রে দীর্ঘদিন ধরে জড়ো হয়ে মগ্ন চড়ার সৃষ্টি করে। দুই স্রোতের মিলনে এখানে প্রচুর প্ল্যাংকটন জন্মায়, ফলে মাছের খাদ্যের সমস্যা হয় না। এছাড়া অনুকূল তাপমাত্রা পাওয়ায় মাছের বসবাস ও প্রজননের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই সকল কারণে এই অঞ্চল একটি মৎসক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

৬.আটলান্টিক মহাসাগরে বেশি জাহাজ চলাচল করে কেন ?

উত্তর : আটলান্টিক মহাসাগরের দুই প্রান্তে ইউরোপ ও আমেরিকা-কানাডা। দেশগুলো ব্যাবসা বাণিজ্যে সমৃদ্ধ হওয়ায় আটলান্টিকের উত্তরাংশ দিয়ে অনেক বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করে। এছাড়া উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও উত্তর আটলান্টিক স্রোত সর্বদা আবহাওয়া গরম রাখে তাই অধিক ঠাণ্ডাতেও বরফ জমতে পারে না। ফলে জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ সর্বদা বজায় থাকে।

৭. হিমমণ্ডলে অবস্থিত রাশিয়ার মূৰ্মনস্ক বন্দর সারাবছর বরফমুক্ত থাকে কিভাবে ?

উত্তর : রাশিয়ার মূৰ্মনস্ক বন্দর তুন্দ্রা অঞ্চলের উপকূলে অবস্থিত হলেও উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে সারা বছরই বরফমুক্ত থাকে। জাহাজ চলাচলের কোনো অসুবিধা হয় না, ফলে বন্দরের কাজকর্ম অব্যাহত থাকে।

৮. জাপানের উপকূলে টাইফুন ঝড় হয় কেন ?

উত্তর : দুই বিপরীতধর্মী বায়ু প্রবাহ (উষ্ণ ও শীতল) পরস্পরের সংস্পর্শে এলে বায়ুপ্রবাহে আলোড়ন দেখা যায় ও ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। জাপানের উপকূলের উত্তর পূর্বে উষ্ণ কুরসিও স্রোত প্রবাহের ফলে তার উপর বয়ে আসা বায়ু উষ্ণ হয় অন্যদিকে শীতল ওয়াসিও স্রোতের উপর দিয়ে বয়ে আসা বায়ু শীতল শুষ্ক হয়। এই দুই বায়ু উপকূলের কাছে এসে মিলিত হয়। ফলে উষ্ণতার তারতম্য ঘটে। উষ্ণতার তারতম্যে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় এবং উচ্চ্চাপ অঞ্চলের বায়ু নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে। এইজন্য জাপান উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রাদুর্ভাব ঘটে। স্থানীয় ভাষায় এই ঘূর্ণিঝড় কে টাইফুন বলে।

৯. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনে মগ্ন চড়ার সৃষ্টি হয় কেন ?

উত্তর : মেরু প্রদেশ থেকে শীতল স্রোতের সাথে ভেসে আসা হিমশৈল উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায়। হিমশৈলের ভিতরে থাকা নুড়ি, পাথর, কাদা, বালি প্রভৃতি তখন সমুদ্রে সঞ্চিত হতে থাকে। দীর্ঘদিনের সঞ্চিত হবার ফলে একসময় তা উঁচু হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে। যেমন – নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক, গ্রেট ব্রিটেনের কাছে ডোগার্স ব্যাঙ্ক প্রভৃতি।

১০. সমুদ্রস্রোত ও সমুদ্র তরঙ্গের পার্থক্য লেখ।

সমুদ্রস্রোতসমুদ্র তরঙ্গ
সমুদ্রের জলরাশির উপকূলের সমান্তরালে অনুভূমিকভাবে স্থানান্তরকে সমুদ্রস্রোত বলেসমুদ্রের জলরাশির বায়ুর প্রভাবে উল্লম্বভাবে ওঠানামাকে সমুদ্র তরঙ্গ বলে
সমুদ্রস্রোত পৃথিবীর আবর্তন, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্র জলের লবনাক্ততা, ঘনত্ব ও উষ্ণতার ওপর নির্ভরশীলসমুদ্র তরঙ্গ বায়ুর গতিবেগ ও সমুদ্রের গভীরতার ওপর নির্ভরশীল
জলবায়ু ও আবহাওয়ার ওপর প্রভাব ফেলেআবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর কোনো প্রভাব দেখা যায় না
দুই প্রকারের – উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোতদুই প্রকার – গঠনকারী ও বিনাশকারী
উপকূলের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়উপকূলের সাথে উল্লম্বভাবে আন্দোলিত হয়
ভুমিরূপ বা ভূমির গঠনকার্যে কোনো ভূমিকা নেইভুমিরূপ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা দেখা যায়

১১. শীতল স্রোত ও উষ্ণ স্রোতের পার্থক্য লেখ।

শীতল স্রোতউষ্ণ স্রোত
শীতল স্রোত মেরু অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করেউষ্ণ স্রোত নিরক্ষীয় অঞ্চলে উৎপত্তি হয়
শীতল স্রোত উষ্ণ মন্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়উষ্ণ স্রোত শীতল অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়
শীতল স্রোত ভারী হওয়ায় সমুদ্রের কিছু নীচ দিয়ে অন্তঃস্রোত রূপে প্রবাহিত হয়উষ্ণ স্রোত হালকা হওয়ায় সমুদ্রের উপরিভাগ দিয়ে বহিঃস্রোত রূপে প্রবাহিত হয়
শীতল স্রোতের প্রভাবে উপকূলের আবহাওয়া ঠান্ডা থাকেউষ্ণ স্রোতের ফলে আবহাওয়া গরম হয়ে ওঠে।
শীতল স্রোত ঘন সবুজ বর্ণেরউষ্ণ স্রোত গাঢ় নীল বর্ণের

১২. প্রতিদিন দুই বার জোয়ার ও দুই বার ভাঁটা হয় কেন ?

উত্তর : যেহেতু চাঁদ পৃথিবীর নিকটে অবস্থিত তাই মূলত চাঁদের আকর্ষণই জোয়ার ভাঁটা সৃষ্টির মূল কারণ। পৃথিবীর প্রতিটি স্থান ২৪ ঘন্টা ও ৫২ মিনিটে একবার করে চাঁদের সম্মুখীন হয়। যে স্থান চাঁদের সামনে আসে সেখানে চাঁদের আকর্ষণ বেশি হওয়ায় মুখ্য জোয়ারের সৃষ্টি হয়। বিপরীত দিকে আকর্ষণের প্রভাব কম বলে বিপরীতে অবস্থিত জলরাশি বিকর্ষণ শক্তির প্রভাবে গৌণ জোয়ার সৃষ্টি করে। মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার অঞ্চলে জল সরবরাহ করতে গিয়ে দুই অঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থানের জলতল নেমে যায়, ফলে ওই স্থানে ভাঁটার সৃষ্টি হয়।

পৃথিবীর আবর্তনের ফলে যে স্থানে যখন মুখ্য জোয়ার হয় তার ঠিক ১২ ঘন্টা ২৬ মিনিট পরে তার ঠিক প্রতিপাদ স্থান চাঁদের সামনে এসে পৌঁছায়। সেখানে তখন মুখ্য জোয়ার হয় আর বিপরীতে হয় গৌণ জোয়ার। এভাবে ২৪ ঘন্টায় একই স্থানে দু বার জোয়ার ও দু বার ভাঁটা হয়।

১৩. জোয়ার ভাটার টান কি ?

উত্তর : পৃথিবী আবর্তন করে পশ্চিম থেকে পূর্বে, তাই জোয়ারের স্রোত পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং ভাঁটার স্রোত পশ্চিম থেকে পূর্বে হয়। একেই জোয়ার ভাঁটার টান বলে। সমুদ্রের বিশালতার জন্য এই টান বিশেষভাবে বোঝা না গেলেও নদীর ক্ষেত্রে যেই দিক সমুদ্রের সাথে যুক্ত থাকে, সেইদিকে ভাঁটার টান দেখা যায়। জোয়ারের টান হয় ঠিক তার বিপরীতে। আবার উন্মুক্ত সমুদ্রের চেয়ে নদীর মোহনায় জোয়ারভাটার প্রভাব বেশি। প্রবল জোয়ারের (কোটাল) সময় সমুদ্রের জল উঁচু হয়ে দ্রুত গতিতে নদীতে প্রবেশ করে তেমনি আবার ভাঁটার সময় জল দ্রুত সমুদ্রের দিকে নেমে যায়।

১৪. অষ্টমীর জোয়ারকে মরা কোটাল বলে কেন ?

উত্তর : অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য, পৃথিবীর দুই দিকে প্রায় সমকোণে অবস্থান করে। পৃথিবীর যে স্থান চাঁদের কাছে থাকে, সেই স্থান চাঁদ আকর্ষণ করে, কিন্তু সূর্যের কাছে পৃথিবীর যে স্থান থাকে সূর্য সেই স্থানটিকে আকর্ষণ করে। এই অবস্থায় চাঁদের প্রভাবে যেখানে জোয়ার হয়, তার সমকোনি স্থানে সূর্যের প্রভাবে জোয়ার হয়। কিন্তু চাঁদের আকর্ষণ শক্তি সূর্যের দ্বিগুন হলেও চাঁদের নিকটবর্তী স্থানে যে প্রত্যক্ষ জোয়ার হয় তার জল বেশি স্ফীত হতে পারে না। তাই এই জোয়ার কে মরা কোটাল বলে।

আবার চাঁদের আকর্ষণে যেখানে প্রত্যক্ষ জোয়ার হয় তার বিপরীত স্থানে পরোক্ষ জোয়ার হয়। কিন্তু সেই স্থানও সূর্যের সাথে সমকোণ উৎপন্ন করার ফলে আকর্ষণ বল পরস্পরের বিরোধিতা করে। জল বেশি স্ফীত হতে পারে না, একেও মরা কোটাল বলে।

১৫. অনভূ জোয়ার ও অপভূ জোয়ার কি ?

উত্তর : চাঁদ ও পৃথিবীর দূরত্বের কমবেশীর জন্য জোয়ারের ওপর ও প্রভাব পড়ে। জোয়ারের হ্রাস বা বৃদ্ধি দেখা যায়।

অনভূ জোয়ার – চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম হয় (৩ লক্ষ ৫৬ হাজার কিমি), তখন চাঁদের এই অবস্থানকে অনভূ বা পেরিজি অবস্থান বলে। এই অবস্থানে অত্যন্ত প্রবল জোয়ার দেখা যায়। এই জোয়ারকে পেরিজিয়ান জোয়ার বা অনভূ জোয়ার বলে। ১৫ দিন অন্তর এই জোয়ার ঘটে। এতে সাধারণ জোয়ারের তুলনায় ২০ ভাগ বেশি জল বৃদ্ধি পায়।

অপভূ জোয়ার – চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব সবচেয়ে বেশি (৪ লক্ষ ৭ হাজার কিমি) হলে সেই অবস্থানকে অপভূ বা এপোজি অবস্থান বলে। এই অবস্থানে অপেক্ষাকৃত কম তীব্র জোয়ারের সৃষ্টি হয়। একে এপোজিয়ান বা অপভূ জোয়ার বলে।

১৬. পৃথিবীর কোনো অংশে প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাঁটা হয় না কেন ?

অথবা, কোনো স্থানে দুটি মুখ্য জোয়ারের মাঝে সময়ের ব্যবধান প্রায় ২৪ ঘন্টা ৫২ মিনিট হয় কেন ?

অথবা, দুটি মুখ্য জোয়ারের মাঝের সময়ের ব্যবধান ২৪ ঘন্টার বেশি হয় কেন ?

উত্তর : ২৪ ঘন্টায় পৃথিবী নিজের মেরুরেখার চারিদিকে একবার আবর্তনের সময় পৃথিবীর প্রতিটি স্থান একবার চাঁদের সামনে আসে। এর ফলে ২৪ ঘন্টায় (প্রকৃতপক্ষে ২৪ ঘন্টা ৫২ মিনিট) পৃথিবীর প্রতিটি স্থানে দুবার জোয়ার ও দুবার ভাঁটা হয়। কিন্তু পৃথিবীর কোনো অংশেই প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাঁটা হয়না। কারণ, পৃথিবী যেমন নিজের মেরুরেখার চারিদিকে ৩৬০° আবর্তন করতে সময় নেয় ২৪ ঘন্টা, চাঁদও তেমনি ২৭ দিনে পৃথিবীর চারিদিকে একবার ঘুরে আসে।

সুতরাং ২৪ ঘন্টায় চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথের ৩৬০°÷২৭=১৩° পথ অতিক্রম করে বা বলা যায় ২৪ ঘন্টায় পৃথিবীর একবার আবর্তনে চাঁদ ১৩° পথ এগিয়ে যায়। এই ১৩°পথ অতিক্রম করতে পৃথিবীর সময় লাগে প্রায় ৫২ মিনিট [১° পথ অতিক্রম করতে ৪ মিনিট সময় লাগলে, ১৩° পথ অতিক্রমে সময় লাগে ১৩ × ৪ মিনিট = ৫২ মিনিট]; যে দ্রাঘিমারেখা চাঁদের সামনে আছে, ২৪ ঘন্টায় ৩৬০° পথ অতিক্রম করে সেই দ্রাঘিমা তার আগের অবস্থানে ফিরে আসার মধ্যে চাঁদ ১৩° পথ এগিয়ে যায়। তাই ওই দ্রাঘিমারেখাকে পুনরায় চাঁদের সামনে আসার জন্য আরও ১৩° বেশি আবর্তন করতে হয় তাই ৫২ মিনিট সময় বেশি প্রয়োজন হয়। তাই একটি মুখ্য বা গৌণ জোয়ারের পরবর্তী মুখ্য বা গৌণ জোয়ারের সময়ের ব্যবধান ৫২ মিনিট বেশি হয়। ফলে একই সময়ে জোয়ার ভাঁটা সম্ভব হয় না।

১৭. গৌণ জোয়ার মুখ্য জোয়ারের বিপরীত দিকে কেন হয় ?

উত্তর : পৃথিবীর ওপর সূর্যের থেকে চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি বলে মুখ্যত চাঁদের আকর্ষণই পৃথিবীতে জোয়ার হয়। পৃথিবীর যে দিকে চাঁদ অবস্থান করে তার ঠিক বিপরীত দিকে চাঁদের আকর্ষণ কম হয়। কিন্তু এই স্থানে বিকর্ষণ বা পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব বেশি হয় বলে জলরাশি ছিটকে বেরিয়ে যেতে চায়। তাই চাঁদের আকর্ষণে সৃষ্ট মুখ্য জোয়ারের প্রতিপাদ স্থানে একপ্রকার জোয়ারের সৃষ্টি হয় যা চান্দ্র জোয়ারের থেকে দুর্বল। তাই এই জোয়ারকে গৌণ জোয়ার বলে।

১৮. প্রতিদিন জোয়ার ভাঁটা সমান প্রবল হয়না কেন ?

উত্তর : পরিক্রমন এর সময় চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব সর্বদা সমান থাকে না বা সর্বদা একই সরলরেখায় অবস্থানও করে না। ফলে দূরত্বের পার্থক্যের জন্য মহাকর্ষ বল ও কেন্দ্রাতিগ বলেরও পার্থক্য ঘটে। এজন্য জোয়ার ভাঁটার প্রাবল্যেও পার্থক্য দেখা যায়।

১৯. পূর্ণিমা এবং অমাবস্যায় জোয়ারের তীব্রতা বেশি হয় কেন ?

অথবা, পূর্ণিমার জোয়ারের তুলনায় অমাবস্যার জোয়ার বেশি শক্তিশালী কেন হয় ?

উত্তর : পূর্ণিমা বা অমাবস্যায় জোয়ারের পরিমান বেশি হয়। কারণ এই দুই তিথিতে চাঁদ ও সূর্য, পৃথিবীর সাথে একই সরলরেখায় অবস্থান করে। ফলে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ একই সাথে পৃথিবীর ওপর প্রযুক্ত হয়।

পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর দুই দিকে অবস্থান করে। ফলে চাঁদের আকর্ষণে যে দিকে মুখ্য জোয়ার হয়, বিপরীত দিকে সূর্যের আকর্ষণে গৌণ জোয়ার হয়। এই দুই জোয়ার হলেও দুই বিপরীতমুখী চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণের ফলে জোয়ারের তীব্রতা বেশি দেখা যায় না।

কিন্তু অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর একই দিকে অবস্থান করায় দুইয়ের মিলিত শক্তি পৃথিবীর একই স্থানে কার্যকর হয়। ফলে পৃথিবীর একই স্থানে মুখ্য সৌর জোয়ার ও মুখ্য চান্দ্র জোয়ার হয়। বিপরীত অবস্থানে গৌণ চান্দ্র ও সৌর জোয়ার হয়। এইজন্য অমাবস্যা তিথিতে জোয়ারের প্রাবল্য পূর্ণিমার থেকে বেশি হয়।

Long Questions – 5 Marks of বারিমণ্ডল Barimondol

১. পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখ।

  • সারা পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে, জীবজগতের ওপর ও মানবজীবনের ওপর সমুদ্রস্রোতের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব দেখা যায়। প্রভাবগুলি হল –
  1. উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের প্রভাব – উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে কোনো স্থান বা অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের বা হিমমন্ডলের সমুদ্রের জল শীতকালে জমে বরফে পরিণত হয়। কিন্তু ওই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হলে শীতকালেও বরফমুক্ত থাকে। বন্দরগুলি সারা বছর ব্যাবহারযোগ্য থাকে। যেমন – উষ্ণ আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে শীতকালে ব্রিটেন, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্কের উপকূলবর্তী অঞ্চলের উষ্ণতা অন্য অঞ্চলের উষ্ণতা থেকে বেশি হয়। জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির হয়।
  2. শীতল সমুদ্রস্রোতের প্রভাব – শীতল সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে কোনো অঞ্চলের শীতলতা বৃদ্ধি পায়। উচ্চ অক্ষাংশ থেকে প্রবাহিত শীতল স্রোত উষ্ণ মন্ডলে শৈত্য ও ভাসমান হিমশৈল বয়ে নিয়ে আসে। আবার মধ্য অক্ষাংশের স্থানগুলিতেও বরফ জমে। যেমন – শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে কানাডার পূর্ব উপকূল সারা বছর বরফাবৃত থাকে আবার নিউইয়র্কেও প্রচন্ড শীত পড়ে।
  3. পরিবহন ব্যাবস্থার ওপর প্রভাব – সমুদ্রস্রোতের অনুকূলে নৌকা, জাহাজ চলাচলের সুবিধা হয়। তবে শীতল সমুদ্রস্রোত অপেক্ষা উষ্ণ সমুদ্রস্রোতে চলাচলে সুবিধা বেশি হয়। শীতল স্রোতের গতিপথে হিমশৈলর অবস্থানের জন্য জাহাজ চলাচল করতে অসুবিধা হয়।
  4. আবহাওয়ার ওপর প্রভাব – সমুদ্রস্রোত যেসব অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তার আশেপাশের উপকূলীয় অঞ্চল তাপমাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে। উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের ওপর দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হলে প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে। ফলে উপকূলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। অপরদিকে শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শুষ্ক বলে বৃষ্টিপাত না ঘটিয়ে তুষারপাত ঘটায়।
  5. অগভীর মগ্ন চড়া সৃষ্টি – উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে শীতল স্রোতের সাথে আগত হিমশৈল গলে যায়। হিমশৈলের মধ্যে বিভিন্ন নুড়ি, কাঁকর, বালি সমুদ্রে সঞ্চিত হয়ে ও উঁচু হয়ে অগভীর মগ্ন চড়ার সৃষ্টি করে। উত্তর আমেরিকার নিউফাউন্ডল্যান্ডের অদূরে অবস্থিত গ্র্যান্ড ব্যাংক এরূপ একটি মগ্ন চড়া।

অগভীর মগ্ন চড়া গুলিতে প্রচুর প্ল্যাংকটন জন্মায় ও বংশবৃদ্ধি করে। এগুলি মাছের প্রিয় খাদ্য। তাছাড়া মগ্ন চড়া এলাকায় সমুদ্রের গভীরতা হ্রাস পায় ফলে সূর্যালোক তলদেশে পৌঁছে মাছের বংশবৃদ্ধির ও বাসস্থানের তাপমাত্রা বজায় রাখে । ফলে বাণিজ্যিক মৎসক্ষেত্র গড়ে ওঠে। তাই এই মগ্ন চড়াগুলি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মৎস আহরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। যেমন – নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে উত্তর পশ্চিম আটলান্টিক মৎসক্ষেত্র।

২. সমুদ্রস্রোতের প্রকৃতি লেখ।

  • সমুদ্রস্রোতের প্রকৃতি গুলো হল –
  1. কম গতি – বায়ুপ্রবাহের মতো সমুদ্রস্রোত দ্রুত প্রবাহিত হয় না। স্রোতের গতি অগভীর সমুদ্রে বেশি কিন্তু গভীর সমুদ্রে কম থাকে। গড় গতি ঘন্টায় মাত্র ৫-১০ কিমি।
  2. গতি পরিবর্তন – পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য সমুদ্রস্রোত বায়ুপ্রবাহের মতোই ফেরেলের সূত্রানুযায়ী উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়।
  3. পাশাপাশি প্রবাহমান স্রোত – উষ্ণ ও শীতল স্রোত যখন পাশাপাশি বয়ে যায় তখন তা মিলিত হয়ে আলোড়নের সৃষ্টি করে। যার ফলে সেখানে ঘন কুয়াশা ও ঝড়-ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয়।
  4. নিয়ত বায়ুপ্রবাহ – সমুদ্রস্রোত প্রধানত নিয়ত বায়ুপ্রবাহের দ্বারা সৃষ্ট হয় বলে উষ্ণ মণ্ডলে স্রোত আয়নবায়ুর প্রভাবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়।
  5. অন্তঃস্রোত ও বহিঃস্রোত – উষ্ণ স্রোত নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে বহিঃস্রোতরূপে এবং শীতল স্রোত মেরু অঞ্চল থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে অন্তঃস্রোত রূপে প্রবাহিত হয়।
  6. বায়ুপ্রবাহের বিপরীত – সমুদ্রস্রোত সর্বদা বায়ুপ্রবাহের বিপরীত হয়। যেমন বায়ুপ্রবাহ দক্ষিনদিক থেকে হলে সেটা দক্ষিনা বায়ু কিন্তু সমুদ্রস্রোত দক্ষিনদিকে প্রবাহিত হলে সেটা দক্ষিনা স্রোত। এজন্য সমুদ্রস্রোত বায়ুপ্রবাহের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়।

৩. সমুদ্রস্রোত কাকে বলে ? সমুদ্রস্রোতের শ্রেণীবিভাগ কর।

  • পৃথিবীর আবর্তন গতি, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রের লবনাক্ততা, উষ্ণতা, ঘনত্ব এর পার্থক্যের জন্য জলরাশি প্রতিনিয়ত নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহ সমুদ্রস্রোত নামে পরিচিত।

বিভিন্নরকম সমুদ্রস্রোত হয়ে থাকে। যেমন –

  1. গভীরতার ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ :
  1. সমুদ্রের পৃষ্ট স্রোত – সমুদ্রের ওপর দিয়ে বায়ু প্রবাহের ফলে সেই বায়ুর টানে সমুদ্রের জলও বায়ুপ্রবাহের দিকে প্রবাহিত হয়।
  2. গভীর সমুদ্রের স্রোত – ৩০০ থেকে ১০০০ মিটারের গভীরতায় জলের উষ্ণতা ও ঘনত্বের পরিবর্তন ঘটলে স্রোতের সৃষ্টি হয়। যেমন – বেশি ঘনত্বের জল কম ঘনত্বের দিকে বয়ে যায়।
  1. উষ্ণতার ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ :
  1. উষ্ণ স্রোত – উষ্ণ নিরক্ষীয় অঞ্চলের জল সমুদ্র পৃষ্টের ওপর দিয়ে শীতল মেরু অঞ্চলে বয়ে যায়।
  2. শীতল স্রোত – উষ্ণ মন্ডলের জলের অভাব পূরণের জন্য মেরু প্রদেশের ভারী ঠান্ডা জল সমুদ্রের নিচ দিয়ে উষ্ণ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
  1. স্থায়িত্বের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ :
  1. ঋতুভিত্তিক স্রোত – যে স্রোত একটি নির্দিষ্ট ঋতুতেই দেখা যায়। যেমন – ভারত মহাসাগরের মৌসুমি স্রোত।
  2. স্থায়ী স্রোত – যে স্রোত ঋতুভেদেও সারা বছর নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়। যেমন – আটলান্টিক মহাসাগরের নিরক্ষীয় স্রোত।

৪. মানবজীবনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখ।

উত্তর :মানবজীবনে সমুদ্রস্রোতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যেমন –

  1. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের প্রভাব – উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে কোনো স্থান বা অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের বা হিমমন্ডলের সমুদ্রের জল শীতকালে জমে বরফে পরিণত হয়। কিন্তু ওই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হলে শীতকালেও বরফমুক্ত থাকে। বন্দরগুলি সারা বছর ব্যাবহারযোগ্য থাকে। যেমন – উষ্ণ আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে শীতকালে ব্রিটেন, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্কের উপকূলবর্তী অঞ্চলের উষ্ণতা অন্য অঞ্চলের উষ্ণতা থেকে বেশি হয়। জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির হয়। আবার শীতল সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে কোনো অঞ্চলের শীতলতা বৃদ্ধি পায়। উচ্চ অক্ষাংশ থেকে প্রবাহিত শীতল স্রোত উষ্ণ মন্ডলে শৈত্য ও ভাসমান হিমশৈল বয়ে নিয়ে আসে। আবার মধ্য অক্ষাংশের স্থানগুলিতেও বরফ জমে। যেমন – শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে কানাডার পূর্ব উপকূল সারা বছর বরফাবৃত থাকে আবার নিউইয়র্কেও প্রচন্ড শীত পড়ে।
  2. মৎস ব্যাবসায় প্রভাব – উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে শীতল স্রোতের সাথে আগত হিমশৈল গলে যায়। হিমশৈলের মধ্যে বিভিন্ন নুড়ি, কাঁকর, বালি সমুদ্রে সঞ্চিত হয়ে ও উঁচু হয়ে অগভীর মগ্ন চড়ার সৃষ্টি করে। উত্তর আমেরিকার নিউফাউন্ডল্যান্ডের অদূরে অবস্থিত গ্র্যান্ড ব্যাংক এরূপ একটি মগ্ন চড়া।অগভীর মগ্ন চড়া গুলিতে প্রচুর প্ল্যাংকটন জন্মায় ও বংশবৃদ্ধি করে। এগুলি মাছের প্রিয় খাদ্য। তাছাড়া মগ্ন চড়া এলাকায় সমুদ্রের গভীরতা হ্রাস পায় ফলে সূর্যালোক তলদেশে পৌঁছে মাছের বংশবৃদ্ধির ও বাসস্থানের তাপমাত্রা বজায় রাখে। ফলে বাণিজ্যিক মৎসক্ষেত্র গড়ে ওঠে। তাই এই মগ্ন চড়াগুলি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মৎস আহরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। যেমন – নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে উত্তর পশ্চিম আটলান্টিক মৎসক্ষেত্র।
  3. জাহাজ চলাচলে প্রভাব – নিম্ন অক্ষাংশ থেকে প্রবাহিত উষ্ণ স্রোত হিমমণ্ডল ও নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের অন্তর্ভুক্ত উপকূলবর্তী সমুদ্র দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় উপকূলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে সেখানকার বরফ গলিয়ে দেয়, এতে নৌকা ও জাহাজ চলাচলের সুবিধা হয়। উষ্ণ স্রোতের অনুকূলে বড় জাহাজ চলাচলের সুবিধা বেশি পায়। অপরদিকে শীতল স্রোতের গতিপথে তীব্র শৈত্য, হিমশৈলের জন্য জাহাজ চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। অনেকসময় হিমশৈলের সাথে ধাক্কা লেগে জাহাজডুবি হয়। আটলান্টিক মহাসাগরের উষ্ণ স্রোতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জাহাজ চলাচল করে। এই মহাসাগরের দুই উপকূলবর্তী অঞ্চল তাই ব্যাবসা বাণিজ্য সমৃদ্ধ।

৫. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণগুলো লেখ।

উত্তর : সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণগুলো হল –

  1. বায়ুপ্রবাহ – বিজ্ঞানীদের মতে বায়ু প্রবাহই সমুদ্রস্রোতের প্রধান কারণ। নিয়ত বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রস্রোতের গতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, প্রবল বায়ুপ্রবাহ নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্রস্রোতকেও নিজের প্রবাহ পথের দিকে টেনে নিয়ে যায়। যেমন – যেসকল স্থানে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় সেখানে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে সমুদ্রস্রোত বয়ে যায়।
  2. পৃথিবীর আবর্তন – পৃথিবীর আবর্তনের জন্য ফেরেলের সূত্রানুসারে বায়ুপ্রবাহের মত সমুদ্রস্রোতের গতি বিক্ষেপ ঘটে। পৃথিবীর আবর্তনের জন্য সমুদ্রস্রোতের গতি উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে প্রবাহিত হয়। যেমন – আটলান্টিক মহাসাগরে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত আবর্তনের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়।
  3. উষ্ণতার তারতম্য – সূর্যরশ্মির পতন কোণের পার্থক্যের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের তাপমাত্রার তারতম্য হয়। এজন্য পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সমুদ্রের জলের উষ্ণতার যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। উষ্ণতার সমতা বজায় রাখার জন্য উষ্ণ অঞ্চলের জলরাশি শীতল অঞ্চলের দিকে এবং শীতল অঞ্চলের জলরাশি উষ্ণ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলের সমুদ্রজল উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে বহিস্রোত রূপে শীতল মেরু প্রদেশের দিকে প্রবাহিত হয় এবং মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জল ওই স্থান পূরণের জন্য সমুদ্রের গভীরতম অংশ দিয়ে অন্তঃস্রোত হিসাবে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
  4. লবনত্ব ও ঘনত্বের তারতম্য – সমুদ্রজলের লবনত্ব বৃদ্ধি পেলে ঘনত্ব বাড়ে। অধিক লবনাক্ত জল কম লবনাক্ত জলের থেকে ঘন। সমুদ্রের জলের উপরিভাগে লবণের পার্থক্য দেখা যায়। লবণের সমতা আনার জন্য সমুদ্রের কম লবনাক্ত হালকা জল ওপরের অংশ দিয়ে বেশি লবনাক্ত ঘন জলের দিকে বহিঃ প্রবাহরূপে প্রবাহিত হয়। আবার সমুদ্রের বেশি লবনাক্ত জল অন্তঃ প্রবাহরূপে  কম লবনাক্ত অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। এভাবে সমুদ্রজল লবণের পার্থক্য সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি করে।
  5. উপকূলে প্রতিহত হওয়া – বিভিন্ন মহাদেশ এর স্থলভাগের আকৃতি বিভিন্ন ধরণের। ফলে বিভিন্ন মহাদেশের উপকূলভাগ বা দ্বীপপুঞ্জে প্রতিহত হয়েও সমুদ্রস্রোতের গতি ও দিক নির্ধারিত হয়। যেমন – আটলান্টিকের দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ব্রাজিল উপকূলে প্রতিহত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়।
  6. বরফ গলন – মেরু প্রদেশের বরফ গোলে গেলে সমুদ্রে জলরাশির পরিমান বৃদ্ধি পায়। সমুদ্রজলের উষ্ণতা ও লবনত্ব হ্রাস পায়। ফলে স্রোতের সৃষ্টি হয়।
  7. ঋতু পরিবর্তন – বিভিন্ন ঋতুভেদে বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহের ফলে সমুদ্রস্রোতের প্রবাহেও পরিবর্তন ঘটে। যেমন – ভারত মহাসাগর গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী স্রোত প্রবাহিত হয়। শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী স্রোত প্রবাহিত হয়।

৬. সমুদ্রস্রোতের গতিবিক্ষেপ বলতে কি বোঝায় ?

উত্তর : সমুদ্রস্রোতের গতি পরিবর্তন সম্পর্কে কয়েকটি নিয়ম প্রযোজ্য –

  1. বায়ুপ্রবাহের দিকেই সাধারণত সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। উষ্ণ মন্ডলে আয়ন বায়ুর দিক অনুসারে এবং নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে পশ্চিমা বায়ুর দিক অনুসারে সমুদ্রস্রোতের প্রবাহ ঘটে।
  2. বায়ুপ্রবাহের মত সমুদ্রস্রোতের ক্ষেত্রেও ফেরেলের সূত্র প্রযোজ্য হয়। সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়।
  3. উষ্ণতার তারতম্যের জন্য উষ্ণ স্রোত উষ্ণ মন্ডল থেকে মেরু মন্ডলের দিকে যায়। অপরদিকে শীতল স্রোত মেরু থেকে উষ্ণ নিরক্ষীয় অঞ্চলে আসে।
  4. সমুদ্রস্রোত উপকূলে ধাক্কা খেয়ে গতি পরিবর্তন করে বা বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়।
  5. শীত বা গ্রীষ্মকালীন প্রবাহের কিছু পরিবর্তন ঘটে।

৭. মানবজীবনে জোয়ার ভাঁটার প্রভাব কিরূপ ?

  • জোয়ার ভাঁটার ফলে মানবজীবনে যেমন অনেক উপকার হয়, তেমনি অনেক ক্ষতিও হয়ে থাকে।

সুফল –

  1. অগভীর নদীতে জোয়ারের সময় বড় বড় সামুদ্রিক জাহাজ সহজেই নদীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। আবার ভাঁটার টানে ছোট ছোট জাহাজ নদী থেকে সহজেই সমুদ্রে নেমে আসতে পারে।
  2. জোয়ার ভাঁটার প্রভাবে নদীর জল পরিষ্কার থাকে। ভাঁটার টানে বিভিন্ন নদী আবর্জনা সমুদ্রে গিয়ে পড়ে।
  3. জোয়ার ভাঁটার টানে নদীর মোহনাতে পলি সঞ্চিত হতে পারে না, নদীর গভীরতা বজায় থাকে ও নৌবহনযোগ্য হয়।
  4. জোয়ারে নদীর জল বৃদ্ধি পায়, ফলে নৌ চলাচলের সুবিধা হয়।
  5. শীতপ্রধান অঞ্চলে নদীর জল জোয়ার ভাঁটার প্রভাবে লবনাক্ত হলে নদীর জল অতিরিক্ত ঠাণ্ডাতেও সহজে বরফে পরিণত হয় না। ফলে বন্দরগুলি বরফমুক্ত থাকে।
  6. যেসব উপকূল বা নদী মোহনায় জোয়ার অত্যন্ত প্রবল হয়, সেই সব অঞ্চলে জোয়ারের তীব্র স্রোত থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
  7. জোয়ারের সময় অনেক সামুদ্রিক মাছ নদীতে প্রবেশ করে, ফলে মৎস আহরণের সুবিধা হয়।
  8. জোয়ার ভাঁটাকে কাজে লাগিয়ে নৌ চলাচল করে, ফলে ব্যাবসা বাণিজ্যের পরিচালনা সঠিকভাবে ঘটে।

কুফল –

  1. নদীর স্রোত কম থাকলে জোয়ার ভাঁটার প্রভাবে নদীগর্ভে পলি সঞ্চিত হয়। ফলে নদীর গভীরতা হ্রাস পায়।
  2. জোয়ারের প্রভাবে নদীর জল লবনাক্ত হয়ে পড়ে। সেই জল চাষযুক্ত জমিতে প্রবেশ করলে জমির লবনত্ব বাড়ে, জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
  3. প্রবল জোয়ারে যে বানের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে উপকূলের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে এবং নৌকা, জাহাজডুবির সম্ভাবনা থাকে।

৮. জোয়ার ভাঁটা সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা কর।

  • প্রধানত দুটি কারণে জোয়ার-ভাঁটার সৃষ্টি হয়। এগুলি হল –
  1. চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ বল এবং
  2. পৃথিবীর আবর্তনে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ বল।

চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ বল – মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। কিন্তু পৃথিবীর ওপর সূর্য অপেক্ষা চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি হয়। কারণ চাঁদ সূর্য অপেক্ষা পৃথিবীর অনেক নিকটে অবস্থিত। তাই সমুদ্রের জল চাঁদের আকর্ষনেই ফুলে ওঠে ও জোয়ার হয়। সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার তত প্রবল হয় না। চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থিত হলে চাঁদ ও সূর্য উভয়ের আকর্ষণে জোয়ার অত্যন্ত প্রবল হয়।

পৃথিবীর আবর্তনে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ বল – পৃথিবী নিজের মেরুরেখার চারিদিকে আবর্তন করে বলে কেন্দ্রাতিগ বল বা বিকর্ষণ শক্তির সৃষ্টি হয়। এই কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে পৃথিবীর প্রতিটি অনু মহাকর্ষ শক্তির বিপরীতে ছিটকে যেতে চায়। তাই পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে যেখানে মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তার বিপরীত দিকে সমুদ্রের জল বিক্ষিপ্ত হয়েও জোয়ারের সৃষ্টি হয়।

অন্যান্য কারণ – জোয়ার ভাঁটা সৃষ্টিতে তটভূমির নিকটে সমুদ্রতলে ঢাল ও জলস্তরের ওঠানামার স্বাভাবিক সময়কাল এগুলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

error: Content is protected !!
Scroll to Top

আজকেই কেনো পরীক্ষার শর্ট নোটস

এখন সহজে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও – আজকেই ডাউনলোড করো পিডিএফ বা বই অর্ডার করো আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকে