বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – Bikolpo Chinta o Udyog : Boishistyo o Porjalochona Class 10 WBBSE Madhyamik Notes

আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে

  • প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics  গুলো সহজভাবে.  এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
  • দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
  • তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er  প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
  • চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়

আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি

বাংলায় ছাপাখানা বিস্তারের ইতিহাস :

 

চীনে প্রথম মুদ্রণ শিল্পের বিকাশ ঘটে আনুমানিক ৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে। এই প্রযুক্তি আরব থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ (১৪০০-১৪৬৮ খ্রী:) যখন মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার করেন তখন ছাপাখানার বিকাশ শুরু হয়। এজন্য জোহানেস গুটেনবার্গ কে ‘ছাপাখানার জনক’ বলা হয়।

  1. পর্তুগিজ মিশনারীরা প্রথম মুদ্রণ যন্ত্রে বাংলা বই ছাপায় এবং প্রথমে রোমান হরফে বাংলা বই ছাপিয়ে নিজেদের দেশ থেকে আনায়।
  2. ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে জেমস অগাস্টাস হিকি কলকাতাতে একটি ছাপাখানা তৈরি করেন।
  3. ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে চার্লস উইলকিন্স যাকে ‘বাংলার মুদ্রণ শিল্পের জনক’ বলা হয় তিনি হুগলির চুঁচুড়ায় একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেই ছাপাখানায় সবচেয়ে প্রথম বাংলা অক্ষরের নকশা তৈরি করেন।
  4. পঞ্চানন কর্মকার এর কিছু বছর পরে মার্জিত বাংলা ভাষার অক্ষরের নকশা তৈরি করেন এবং ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালো হেড লেখা ‘এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ এই বইয়ের মধ্য দিয়ে এই বইয়ের (১৭৭৮-৭৯ খ্রী:) মাধ্যমে বই ছাপার কাজ বাংলা ভাষায় বই ছাপার কাজ শুরু হয়।
  5. পরে আরো ভালো বাংলা অক্ষরের টাইপ ‘লাইনোটাইপ’ নামে সুরেশচন্দ্র মজুমদার আবিষ্কার করেন।
  6. প্রথম পূর্ববঙ্গের ছাপাখানা আবিষ্কার হয় ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে রংপুরে এবং এই ছাপাখানা থেকেই অন্যতম একটি পত্রিকা ‘রংপুর বার্তাবহ’ প্রথম প্রকাশ করা হয়। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা প্রেস তৈরি হয়।

ছাপাবই কিভাবে তৈরি হয়েছিল 

 

শিক্ষার বিস্তার :  এই শিক্ষা ব্যবস্থা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে শুধুমাত্র উচ্চ শ্রেণীর মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল কারণ হাতে লেখা বইয়ের দাম অনেক বেশি ছিল।

ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাড়াতাড়ি ছাপা বই বাজারে আসতে থাকে এবং বইয়ের দাম অনেক কম হওয়ার ফলে সেগুলি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসা অনেক সহজ হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষায় অনেক বই ছাপা হওয়ার ফলে নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ পাওয়ায় দেশে ধীরে ধীরে শিক্ষার প্রভাব বিস্তার লাভ করে।

শ্রীরামপুর ছাপাখানা

 

  1. ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, শ্রীরামপুর মিশন প্রেস নামে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
  2. এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং বিশ্বের অন্যতম একটি ছাপাখানা হিসেবে এই শ্রীরামপুরের ছাপাখানাটি শীঘ্রই জনপ্রিয়তা লাভ করে।
  3. এই ছাপাখানা থেকে বিভিন্ন ভাষায় যেমন বাংলা, হিন্দি, অসমীয়া, উড়িয়া, মারাঠি , সংস্কৃত ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ প্রকাশ হতে শুরু করে।
  4. এছাড়াও এখান থেকে রামায়ণ ও ভারতীয় সাহিত্যের কিছু অনুবাদ, গবেষণামূলক প্রবন্ধ ছাপানো হয় ।
  5.  রামরাম বসুর লিখিত ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ (১৮০১ খ্রীঃ) ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত হয়।
  6. এই ছাপাখানা থেকেই মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার ও বিভিন্ন স্কুল পাঠ্য বই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ছাত্রদের শিক্ষাদানের জন্য এখান থেকে ছাপা হয়।
  7. এরপর ধীরে ধীরে আরও বিভিন্ন প্রেস  আবিষ্কৃত হয়, যেমন –
  • গিলক্রিস্ট ‘হিন্দুস্থানী প্রেস’ (১৮০২ খ্রীঃ)
  • বাবুরাম ‘সংস্কৃত প্রেস’ (১৮০৭ খ্রীঃ)
  • ম্যাথু ল্যাম্পসডেন ‘পার্সিয়ান প্রেস’ (১৮০৫ খ্রীঃ)

১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ এবং বাংলা অক্ষরে অনেক সংস্কৃত গ্রন্থ গৌড়ীয় সমাজ প্রকাশিত করে মোট ৪০ টি ভাষায় দুই লক্ষের বেশি বই ছাপা হয় ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। এই সময় থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা যেমন কলকাতা থেকে প্রকাশিত –

  • গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য-র সম্পাদনায় ‘বেঙ্গল গেজেট’
  • ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত ‘সংবাদ প্রভাকর’ (১৮৩১ খ্রীঃ)
  • মার্শম্যান সম্পাদিত মাসিক ‘দিগদর্শন’ (১৮১৮ খ্রীঃ)
  • রামমোহন রায় সম্পাদিত ‘সম্বাদ কৌমুদী’ (১৮২১ খ্রীঃ), সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ’(১৮১৮ খ্রীঃ)
  • ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সমাচার চন্দ্রিকা ‘ (১৮২২ খ্রীঃ)
  • দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত ‘তত্ত্ববোধিনী’ (১৮৪৩ খ্রীঃ) প্রকাশ হতে শুরু করে শ্রীরামপুর ছাপাখানায়।

শ্রীরামপুর ছাপাখানার বৈশিষ্ট্য: 

 

  • বাংলায় গন শিক্ষার ব্যাপক উন্নতি ঘটে শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, জোসুয়া মার্শম্যান, এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড-র প্রচেষ্টায় এবং গণশিক্ষার প্রসারে শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত বইপত্র গুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে।
  • এই তিনজন ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে পরিচিত হতে থাকে এবং এই তিনজনের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের হাতে স্বল্পমূল্যে অনেক স্কুল পাঠ্য বই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।
  • স্বল্পমূল্যে ছাত্রছাত্রীদের কাছে স্কুল পাঠ্য বই পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’ (১৮১৭ খ্রীঃ) গঠিত হয় এবং ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটির দ্বারা (১৮১৮ খ্রীঃ) কিছু স্কুল গড়ে ওঠা সম্ভব হয়।
  • এই সোসাইটির মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের জন্য সাধারণ মানুষের হাতে শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে বই ছাপিয়ে দেওয়া হয়।
  • উইলিয়াম, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হিন্দুস্থানী প্রেস, পার্শিয়ান প্রেস ও সংস্কৃত প্রেস থেকে বই ছাপিয়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
  • এরপর আরও কয়েকটি সোসাইটি যেমন ক্যালকাটা ক্রিশ্চান ট্র্যাক্ট এন্ড বুক সোসাইটি’ (১৮২৩ খ্রীঃ), ‘ক্যালকাটা ক্রিশ্চান স্কুল বুক সোসাইটি’ (১৮৩৯ খ্রীঃ) এবং ‘ভার্নাকুলার লিটারেচার সোসাইটি’ (১৮৫০ খ্রীঃ) গড়ে ওঠে।
  • ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে ‘স্থানীয় স্কুল সম্বন্ধে আভাস’ নামে একটি নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন গ্রামাঞ্চলের নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের জন্য।
  • ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশনারীরা বাংলাদেশ 103 টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত করেন।
  • এছাড়াও মিশনারিদের উদ্যোগে শ্রীরামপুরে উচ্চশিক্ষার জন্য এশিয়ার প্রথম ডিগ্রি কলেজ (১৮১৮ খ্রীঃ) প্রতিষ্ঠিত হয়।

শিশু শিক্ষার অগ্রগতি :

 

  • শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও ছাপাখানা গুলি অনেক সহায়তা করে এবং এই উদ্দেশ্যে ‘শিশু শিক্ষা’ (১৮৪৯ খ্রীঃ) গ্রন্থটি মদনমোহন তর্কালঙ্কার রচনা করেন।
  • ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল’ এই বিখ্যাত কবিতাটি ‘শিশু শিক্ষার’ জন্য আজও খুবই জনপ্রিয় এবং এর কিছুদিন পর বিদ্যাসাগরের রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ (১৮৫৫ খ্রীঃ) প্রকাশ করা হলে এটিও খুব জনপ্রিয়তা পায়।
  • পূর্ববঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য রামসুন্দর বসাকের লেখা ‘বাল্যশিক্ষা’ (১৮৭৭ খ্রীঃ) খুবই একটি অপরিহার্য বই হিসেবে প্রকাশ পায়। এই সময় শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে যে বইগুলি সেগুলি হল- আনন্দ কিশোর সেন রচিত ‘অর্থের সার্থকতা’ (১৮৬৮ খ্রীঃ), কেদার কেদারেশ্বর চক্রবর্তীর লেখা ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, প্রাণ লাল চক্রবর্তীর লেখা ‘অংকবোধ’ (১৮৬৬খ্রীঃ), গোবিন্দ প্রসাদ দাসের লেখা ‘ব্যাকরণ সার’ (১৮৫৯ খ্রী:) , দীননাথ সেনের লেখা ‘বাংলাদেশ ও আসাম এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ’, ‘ঢাকা জেলার ভূগোলএবং সংক্ষেপে ঐতিহাসিক বিবরণ’ ইত্যাদি।

ছাপাখানার ব্যবসায়িক পরিকাঠামো গঠন

ছাপাখানার ব্যবসায়িক পরিকাঠামো গঠন : ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধীরে ধীরে ব্যবসার বাজারে মুদ্রণ শিল্পের ব্যাপক বিস্তার গড়ে ওঠে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মিলিটারি বিল সামরিক বাহিনীর বিধি-বিধান ভাতার ফ্রম প্রভৃতি কলকাতায় জেমস অগাস্টাস হিকি- র ছাপাখানা ব্যবসার ভিত্তিতে ছাপার কাজ শুরু হয়।

১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘বেঙ্গল গেজেট’ বা ‘হিকিস গেজেট’ তার ছাপাখানা থেকে ছাপার কাজ শুরু করে।

কলকাতার সবচেয়ে বড় ছাপাখানা উইলকিন্স ‘অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস’ (১৭৮১ খ্রীঃ) নামে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই ছাপাখানায় সরকারি ভিত্তিতে বিভিন্ন বইপত্র এবং ছাপার কাজ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ছাপা হতে শুরু করে।

এখানে উইলিয়াম জোন্স অনূদিত কালিদাসের ‘ঋতুসংহার’, এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকা ‘এশিয়াটিক রিসার্চেস’ ছাপা হয়।

কলকাতার বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে ১৭৮০-১৭৯০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১৯টি সাপ্তাহিক এবং ৬টি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করা হয় এবং বেশকিছু বাঙালি ব্যবসায়ী এই ছাপাখানার মালিক হয়ে ওঠেন।

প্রথম বাঙালি প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা হলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য এবং ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ নামে প্রথম সচিত্র বাংলা বই তিনি প্রকাশিত করেন।

ছাপাখানার ব্যবসায় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, অশ্বিনীকুমার দত্ত, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রাধাকান্ত দেব, কেশব চন্দ্র সেন, কৃষ্ণদাস পাল, নবগোপাল মিত্র, কালীপ্রসন্ন সিংহ প্রমূখ ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। মোট ৬৫০ টি বই ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কলকাতায় মুদ্রিত হয়।

সরকারি কাগজপত্রের পাশাপাশি পঞ্জিকা, আইনের বই, চিকিৎসাবিজ্ঞান, ভ্রমণ কাহিনী, ধর্মীয় বই, ভারতে ইউরোপের ঘটনাবলী নিয়ে লেখা বই, কবিতা, নাটক, অভিধান, ব্যাকরণ গানের বই প্রভৃতি ছাপাখানায় প্রথমদিকে প্রকাশিত হতে থাকে।

শিক্ষার্থীর পরিমাণ ব্যাপক পরিমাণে বাড়তে থাকে স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও স্ত্রী শিক্ষার প্রসারিত হওয়ার পর থেকে এবং বহু মুদ্রণ ব্যবসায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় বইপত্র ছাপাতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

মোট ১৫২টি সংস্করণে বিদ্যাসাগরের লেখা ‘বর্ণপরিচয়’ প্রকাশ পায় এবং পাঠকদের কাছে ৩৫ লক্ষেরও বেশি ছাপা বই পৌঁছে যায়। স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম চার বছরের মধ্যে মোট ৫০ হাজার পাঠ্যপুস্তক শুধু বাংলাতেই ছাপানো হয়।

ছাপাখানার মালিকরা তাদের ব্যবসা বাড়ানোর সাথে সাথে স্কুল-কলেজে নীতি শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের বই যেমন- হিতোপদেশ, বত্রিশ সিংহাসন, বোধোদয়, বেতাল পঞ্চবিংশতি, তোতা ইতিহাস, নীতিকথা প্রভৃতি বই পাঠ্যের  মধ্যে অবশ্যপাঠ্য করে তোলে।

এছাড়াও পাঠ্যবই সাহিত্য, গণিত, ভূগোল, ইতিহাস, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, কারিগরিবিদ্যা প্রভৃতি বইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়াও সহায়িকা বই ছাপা শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে মুদ্রণ একটি প্রাতিষ্ঠানিক পেশাদারী ব্যবসা হিসেবে মুদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠা পায়।

এছাড়াও অন্যান্য পেশা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় কাগজ বিক্রি, বই বাঁধাই, বই বিক্রি, বই ছাপানো প্রভৃতি পেশারও বিকাশ ঘটতে শুরু করে এবং কলকাতায় ছাপাখানার সংখ্যাও বেড়ে যায় ধীরে ধীরে ছাপার কাজের চাহিদা বাড়তে থাকে । ১৭টি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতায় ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ছাপাখানার সংখ্যা হয় ৫০টি। সারা ভারতে ১৮৮৫-৮৬ খ্রিস্টাব্দে মোট ১০৯৪টি ছাপাখানা গড়ে ওঠে এবং এরমধ্যে ২২৯টি ছাপাখানা বাংলাদেশে ছিল।

ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্সের সঙ্গে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্সের সঙ্গে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী:  উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১৮৬৩-১৯১৫ খ্রীঃ) বাংলা ছাপাখানার অগ্রপথিক ছিলেন । তিনি স্কুল শিক্ষা শেষ করে ময়মনসিংহ জেলার মসুয়াগ্রাম থেকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে আসেন এবং তখন থেকেই তিনি বিভিন্ন শিশু পত্রিকাগুলিতে যেমন ‘মুকুল’, ‘সাথী’, ‘সখা’, ‘বালক’ প্রভৃতিতে লিখতে শুরু করে।

  1. তিনি বেশ কিছু ছবি আঁকেন। তার প্রথম বই যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘সিটি বুক সোসাইটি’ থেকে প্রকাশিত হয়  ‘ছেলেদের রামায়ণ’ । সেই বইয়ের মুদ্রণে তিনি খুশি না হওয়ায় বিদেশ থেকে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র এনে কলকাতার শিবনারায়ণ দাস লেনে’ ইউ এন রায় এন্ড কোং’ নামে একটি ছাপাখানা তৈরি করেন।
  2. ‘ইউ এন রায় এন্ড সন্স’ নামকরণ হয় ওই ছাপাখানা টির ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এবং একটি স্টুডিও তৈরি করেন ঐ ছাপাখানার সঙ্গে।
  3. উপেন্দ্রকিশোর বিভিন্ন ধরনের বই,  ছবির বই ছাপাখানা থেকে প্রকাশ করতে শুরু করেন এবং ‘প্রসেস প্রিন্টিং’ শিল্পের বিকাশ ভারতের ছাপাখানা থেকেই শুরু হয়।
  4. তিনি তার পুত্র সুকুমার রায়কে ১৯১১খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে পাঠান আধুনিক ফটোগ্রাফি এবং মুদ্রণ শিল্প সম্পর্কে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য।
  5. ছবি ছাপার ক্ষেত্রে তিনি অনেক উন্নত মানের কৌশল উদ্ভাবন করেন এবং ভারতের প্রথম ‘হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং’ নিয়ে উপেন্দ্রকিশোর প্রথম গবেষণা শুরু করেন।
  6. সেই সময় সাদাকালোর যুগে এশিয়ায় প্রথম তিনি’ সন্দেশ পত্রিকা’ (১৯১৩ খ্রীঃ ) প্রকাশ করেন যাতে তিনি রঙিন ছবি ছাপতে শুরু করেন।
  7. পরবর্তীকালে এই পত্রিকার সম্পাদনা করেন তার পুত্র সুকুমার রায় পৌত্র সত্যজিৎ রায় এবং প্রপৌত্র সন্দীপ রায়।
  8. তাঁর এই প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকটি বই প্রকাশিত হতে থাকে। যেমন-
  • পশুপাখি ও ভ্রমণকাহিনী নিয়ে ‘সেকালের কথা’
  • বাংলার লোক কথা নিয়ে ‘টুনটুনির বই’
  • বিভিন্ন বিদেশি মহাকাব্য ও উপন্যাস এর বঙ্গানুবাদ ‘ছেলেদের মহাভারত ’
  • ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ প্রভৃতি

বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাস:

 

আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে উনিশ শতকে। শিক্ষার্থীরা পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান সম্পর্কে অনেক কিছু জ্ঞান আহরণ করতে শুরু করে এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে ।

কয়েকজন ইংরেজ কর্মচারী বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার সাথে সাথে কয়েকটি বিজ্ঞান বিষয়ক স্থান প্রতিষ্ঠিত হয় । যেমন –

  • স্যার উইলিয়াম জোন্স কর্তৃক  ‘এশিয়াটিক সোসাইটি ‘ (১৭৮৪খ্রীঃ )
  • কর্নেল রবার্ট কিড কর্তৃক  শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন (১৭৮৭ খ্রীঃ)

শ্রীরামপুর কলেজে রসায়ন বিষয়ে অভিজ্ঞ জন ম্যাকে (১৮২১ খ্রীঃ) শিক্ষাদান শুরু করেন। কোনরকম বিদেশী যন্ত্রপাতি ছাড়াই একটি বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরি করেন শ্রীরামপুরের ছাপাখানার কর্মী গোলকচন্দ্র, যার জন্য তাকে প্রথম ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার বলে আখ্যা দেওয়া হয়। কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে ভারতের প্রথম টেলিগ্রাফ বার্তা পাঠান কলকাতা টাকশালের কর্মী শিবচন্দ্র নন্দী।

বাংলার বিজ্ঞান চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তারকনাথ পালিত, রাজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, শিশির কুমার মিত্র, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ ,জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মহেন্দ্রলাল সরকার, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাথ সাহা, দেবেন্দ্রমোহন বসু প্রমুখ।
এ সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য। যথা –

  • জাতীয় শিক্ষা পরিষদ
  • বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট
  • ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স
  • কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ, বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রভৃতি

বিজ্ঞানের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটে বাংলায় । শিক্ষাকেন্দ্রগুলি হল –

  • কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৯০৬ খ্রীঃ)
  • কলকাতা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৮৫৬খ্রীঃ)
  • অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডুকেশন (১৯০৪ খ্রীঃ)
  • জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট

বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্সের ভূমিকা: 

 

মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯ ০৪খ্রীঃ) বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা কারিগরি শিক্ষার অগ্রগতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মানুষের অন্ধবিশ্বাস দূর করে যুক্তিবাদের সমর্থক হতে বলেছিলেন চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার।

চিকিৎসা জীবনের প্রথম দিকে তিনি অ্যালোপ্যাথি বিষয়ে চর্চা করলেও পরবর্তীকালে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

  • কলকাতার বউবাজার স্ট্রিটে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স‘ বা ‘আই এ সি এস’ বা ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’ ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাঁফো-র সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • আই এ সি এস প্রতিষ্ঠা, নিয়মিত পদার্থ এবং রসায়ন বিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা,  বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতা আয়োজন ইত্যাদি উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মহেন্দ্রলাল সরকার জনসাধারণের দানের অর্থের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটিকে চালু রাখেন।
  • এই প্রতিষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন প্রধানত স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমূখ।
  • এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম অধিকর্তা হন প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায়
  •  পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, নীলরতন সরকার অধিকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হন।
  • বিভিন্ন দেশ বিদেশের বিজ্ঞান পত্রিকা এবং আই.এ. সি.এস-এর নিজস্ব পত্রিকা ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিকস’-এ বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজ ছাপা হত।
  • এই প্রতিষ্ঠান গবেষণার কাজ করে যারা উল্লেখযোগ্য হয়েছেন তারা হলেন চুনিলাল বসু, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন, সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর, মেঘনাথ সাহা, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় , জগদীশচন্দ্র বসু, কে এন কৃষ্ণান
  • ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ্যায় ‘রমন ক্রিয়া’ আবিষ্কার করে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন।
  • এই আই এ.সি.এসে.তে একটি সক্রিয় গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন মেঘনাথ সাহা এবং এই প্রতিষ্ঠানে আলোকবিজ্ঞান,  চুম্বকত্ব,  রমন ক্রিয়া, এক্স রশ্মি প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গবেষণা করা শুরু হয়। পরে বউবাজার থেকে যাদবপুরে আই.এ.সি.এস স্থানান্তর করা হয়।

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের ইতিহাস :

 

  • ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ২৭ মার্চ ‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’ বা ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি’ স্থাপন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।
  • স্বদেশী আন্দোলনের সময় স্বদেশে বিজ্ঞান চর্চার প্রসারের জন্য স্যার তারকনাথ পালিত (১৮৩১-১৯১৪ খ্রীঃ) এবং রাসবিহারী ঘোষ আন্দোলনে যোগ দেন।
  • এই দুজন শিক্ষা দরদি যৌথভাবে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠায় ৩৭.৫ লক্ষ টাকা এবং কলেজের জন্য জমি দান করে সহায়তা করেন।
  • বর্তমান যুগে তাদের প্রথম প্রতিষ্ঠিত বালিগঞ্জের ক্যাম্পাসটি তারকনাথ পালিত শিক্ষাপ্রাঙ্গন এবং রাজাবাজারের ক্যাম্পাসটি রাসবিহারী শিক্ষাপ্রাঙ্গন নামে মানুষের কাছে পরিচিত হয়।
  • উন্নত মানের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন, শিশির কুমার মিত্র, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রমূখ শিক্ষাদান করতে শুরু করেন ।
  • এইসময় শিক্ষাদানের সাথে সাথে দেশকে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস’ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ভারতের প্রথম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং এর আবিষ্কার করেন শিশির কুমার মিত্র এবং তার উদ্যোগে রেডিও ফিজিক্স এর গবেষণা শুরু হয় এবং এই কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিজ্ঞানের মৌলিক কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়তার হাত এগিয়ে দেয়।
  • এই বিজ্ঞান কলেজ থেকে পড়াশোনা করে যারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেন তারা হলেন জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ বোস প্রমূখ এবং সত্যেন্দ্রনাথ বোস জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনে নিজেকে যুক্ত করে দেশ গঠনের কাজে এক অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে।

বসু বিজ্ঞান মন্দির :

 

আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার প্রসারে উনিশ শতকে ভারতে যারা অবদান রেখেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন স্যার জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭ খ্রীঃ)।

  • ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা থেকে বিরতি দিয়ে কলকাতায় ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’বা ‘বোস ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা মৌলিক গবেষণার জন্য।
  • এই প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গবেষণার ব্যবস্থা করেন, যেমন- রসায়নবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, পরিবেশ বিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, বায়োফিজিক্স, পদার্থ বিজ্ঞান এবং গবেষণা সকলের কাছে যাতে প্রকাশ পায় তার জন্য পত্রিকায় প্রকাশের জন্য ব্যবস্থা করেন।
  • মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় জগদীশচন্দ্রের গুরুত্ব অপরিসীম ছিল এবং তিনি তার বাংলা ভাষায় লেখা ‘অব্যক্ত’ নামক গ্রন্থে বিজ্ঞান বিষয়ক নানা মতামত তুলে ধরেছেন।
  • তার অবদান বর্তমানে রেডিও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি তিনি ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রটি বসু বিজ্ঞান মন্দিরে আবিষ্কার করেন। তার এই যন্ত্রের সাহায্যে প্রাণীর মতো উদ্ভিদেরও প্রাণ এবং অনুভূতি শক্তি আছে তা তিনি প্রমাণ করেন।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস :

১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ‘কলকাতা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ লর্ড কার্জনের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ শুরু হলে স্বদেশী আন্দোলন অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠে।

  • কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ত্যাগ করার জন্য ছাত্রীদের কাছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যঙ্গ করে ‘গোলদিঘির গোলামখানা’ বলে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।
  • এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র ব্রিটিশদের অফিস আদালতের কাজ করার জন্য কেরানি তৈরি করা হতো বলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে তারা ব্যঙ্গ করে গোলদিঘির গোলামখানা বলেছে।
  • কিছু শিখ দেশীয় শিক্ষা প্রিয় মানুষরা বিদেশি শিক্ষানীতির স্বদেশী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিশেষ আগ্রহী হন এবং সর্বপ্রথম জাতীয় শিক্ষা কথাটি ব্যবহার করেন প্রসন্নকুমার ঠাকুর।
  •  জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন স্বদেশী আন্দোলনের সময় কালে সক্রিয় হয়ে ওঠার সাথে সাথে সর্বপ্রথম জাতীয় বিদ্যালয় (৮ নভেম্বর,) রংপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতা এবং সদস্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে প্রায় 1500 প্রতিনিধি  নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ নভেম্বর ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠনের আর্জি রাখা হয় পার্ক স্ট্রীটে।
  • ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ 92 জন সদস্য নিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ বা ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশন’ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশ সেবার মনোভাব জাগিয়ে তোলা, নৈতিক শিক্ষা দান, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা দান করা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং জাতীয় আদর্শ অনুসারে সাহিত্য এইসব উদ্দেশ্যের জন্য জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রধান সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকরা হলেন হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ব্রজেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অরবিন্দ ঘোষ প্রমূখ।
  • সুবোধ চন্দ্র মল্লিক ১ লক্ষ টাকা , ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ৫ লক্ষ টাকা ,সূর্য কান্ত আচার্য্য চৌধুরী ২.৫ লক্ষ টাকা জাতীয় শিক্ষা অগ্রগতির উদ্দেশ্যে দান করেছিলেন।
  • ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ পরিষদের অধীনে তৈরি হয়।
  • এই কলেজে বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন।
  • এছাড়াও বিনয়কুমার সরকার, ধর্মানন্দ কোশাম্বী, সখারাম গণেশ দেউসকর, রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় এখানে শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত হন।
  • বাংলা বিভিন্ন স্থানে এই পরিষদের সহায়তায় অনেকগুলি জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে ওঠে জাতীয় বিদ্যালয়ের আবির্ভাব ঘটে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরা হয় কয়েকজন ধনবান ব্যক্তি আর্থিক সহায়তার দ্বারা। রাসবিহারী ঘোষ এই বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন।

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট :

 

  • বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারে স্বদেশী আন্দোলনের সময় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট নামে একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তারকনাথ বালিতের প্রচেষ্টায় তৈরি হয় ।
  • ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ, বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট-র সঙ্গে যুক্ত হয়।
  • এখানে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান যেমন পদার্থবিদ্যা রসায়ন বিদ্যা, রসায়ন প্রযুক্তি, শিল্প প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা হয়।
  • এখান থেকে কারিগরি বিদ্যা শিখে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে বাংলার অনেক শিক্ষিত যুবক এবং ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান যাদবপুরে স্থানান্তরণের ফলে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি’ বা (C.E.T) এর নতুন নাম হয়।
  • ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এই কলেজটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে এবং এখান থেকে বাঙালি যুবকরা কারিগরি বিদ্যার বিভিন্ন শাখা শিখে নিয়ে নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলতে সক্ষম হয়। এদের উদ্যোগেই বহু সংখ্যায় নতুন নতুন কারিগরি প্রতিষ্ঠান বাংলায় গড়ে উঠতে শুরু করে।

ঔপনিবেশিক শিক্ষার ধারণা :

 

সে সময় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার লক্ষ্য একটাই ছিল শিক্ষিত দেশীয় প্রজাতির সৃষ্টি করা যারা অনুগত থাকবে এবং যাদের উপরে নির্ভর করে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। ব্রিটিশদের প্রবর্তিত এই শিক্ষা ব্যবস্থা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়নি এবং তা নানাভাবে সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

  • এই ধরনের শিক্ষা পদ্ধতির দ্বারা ভারতীয় আধ্যাত্বিকতার কোন রকম সম্পর্ক ছিল না।
  • প্রধানত ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজ করার জন্য উপযুক্ত কর্মচারী তৈরি করাটাই প্রধান লক্ষ্য ছিল কিন্তু ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে কখনোই একটি সুন্দর মন গড়ে তোলার প্রতি তাদের আকর্ষণ ছিল না। রবীন্দ্রনাথ এই ধরনের শিক্ষাপদ্ধতিকে ব্যাখ্যা করেছেন ‘প্রেমিকের প্রীতি নয়, কৃপণের আসক্তি’।
  • ইংরেজরা নিজেদের দরকারে শিক্ষার ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষাকেই বেছে নেওয়ার ফলে, শাসকের ভাষায় সবরকম বিষয় চর্চা হওয়ায় দেশীয় ভাষার ব্যবহার বহুলাংশে কমে যাচ্ছিল।
  • শিক্ষা প্রধানত সর্বজনের জন্য গ্রহণযোগ্য না হয়ে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য চর্চার বিষয় না হয়ে জীবন-জীবিকা উপকরণ হিসেবে মানুষের কাছে তুলে ধরা হচ্ছিল।
  • প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে প্রয়োজনে প্রাধান্য সেই সময় শিক্ষাব্যবস্থায় দেওয়া হয়নি।
  • এই সময় খ্রিস্ট ধর্মের প্রসার প্রচারে বেশি নজর দিতো খ্রিস্টান মিশনারীরা এবং শিক্ষার প্রসারে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি।
  • জাতীয় শিক্ষার বিকাশে ভারতের শিক্ষাবিদরা প্রধানত সেই পরিস্থিতিতে ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির পরিচয় জানার সুযোগ না থাকা, ভাষা শিক্ষার দুর্বলতা, বিজ্ঞান চর্চার অসম্পূর্ণ থাকার কারণে উদ্যোগী হয়েছিল।
  • ১৯০৫-১৯১১ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ স্বদেশী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথে অগ্রসর হয় এবং উপনিবেশিক শিক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়।
  • পরে উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে অন্য ধরনের এক শিক্ষানীতি রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকলের সামনে প্রকাশ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনের ভাবনা

 

শিক্ষা হলো বাইরের প্রকৃতি ও অন্ত প্রকৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতামত। তাঁর মতে মন ও আত্মার সমন্বয় সাধনের মধ্যে নিজেকে কোন কিছু নিজের উপযোগী করে তোলা হলো শিক্ষা।

ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতি থেকে সম্পূর্ণ একটি পৃথক শিক্ষা নীতি আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন রকমের প্রবন্ধ রচনা করেন । যেমন- ‘শিক্ষার হেরফের’, ‘তোতাকাহিনী’, ‘স্বদেশী সমাজ’ প্রভৃতি প্রবন্ধে ঔপনিবেশিক শিক্ষা নীতি সম্বন্ধে সমালোচিত মতামত প্রকাশ করেন।  তাঁর এই পৃথক শিক্ষানীতি তৈরীর জন্য প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে বোলপুর শহরের নিকটবর্তী ভুবনডাঙ্গা।

  • ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ধর্ম চর্চা করার উদ্দেশ্যে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ  ঠাকুর এবং ‘শান্তিনিকেতন’ নামকরণ করা হয় ওই আশ্রমটির।
  • ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে পাঠভবন নামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন রবীন্দ্রনাথ এবং ওই আশ্রমে তিনি বসবাস করতে থাকেন জীবনের বিভিন্ন সময়ে।
  • ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে কলাভবন তৈরি হয় এবং তিনি অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর বাড়ি নির্মাণ করেন প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজের এবং অন্যান্য আশ্রমের মানুষের বসবাসের জন্য।
  • শান্তিনিকেতনের যে প্রধান বাংলার সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে তা হলো এখানকার দোল উৎসবে পৌষ মেলা।

বিশ্বভারতীর বিভিন্ন পরিকল্পনা

 

“মানুষের অভ্যন্তরের মানুষটিকে পরিচর্যা করে খাঁটি মানুষ বানানোর প্রচেষ্টা হলো শিক্ষা”- এটি বলেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর চিন্তা শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অনেকাংশে এগিয়ে ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় হল তাঁর চিন্তার একটি প্রধান দিক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেখেন, পুরানো ইউরোপের শিক্ষাব্যবস্থাকে আড়ালে রেখে নতুন শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে তাঁর সদ্য প্রতিষ্ঠিত মহীশূর (১৯১৬ খ্রীঃ), বারানসি (১৯১৬ খ্রীঃ), পাটনা (১৯১৭ খ্রীঃ), ওসমানিয়া ১৯১৮ খ্রীঃ) বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। এই সময়ে ইউরোপীয় শিক্ষার বদলে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেন ।

  • বিশ্ববিদ্যালয় কর্তব্য যেগুলি সেগুলি হল সত্যানুসন্ধানের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা, মুক্তচিন্তার চর্চা প্রভৃতি।
  • ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবেন যেখানে শিক্ষাদান শুধুমাত্র আদর্শ পদ্ধতিতে হবে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেন ‘বিশ্বভারতী’
  • ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে কলাবিদ্যার সাথে সাথে সব রকম বিষয় যেমন অর্থশাস্ত্র, স্বাস্থ্যবিদ্যা, কৃষি তথ্য, পল্লীউন্নয়ন এছাড়া বিজ্ঞানের শিক্ষাদান সেখানে হয়।

ভারতীয় ডাকটিকিট সংগ্রহ

  • দেশ-বিদেশের অনেক পণ্ডিত এবং শিক্ষার্থীরা বিশ্বভারতী শিক্ষাদান পদ্ধতিতে অনেক বেশি সন্তুষ্ট হয়ে তারা এখানে এসে শিক্ষাদান গ্রহণ করতে থাকেন এবং অনেক পণ্ডিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাতে যোগদান করেন।
  • বিশ্বভারতী গ্রন্থাগার, বিভিন্ন মূল্যবান গ্রন্থ এবং পত্র-পত্রিকার সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এবং গবেষণা সহ বিভিন্ন রকম শিক্ষাদানের ব্যবস্থা যেমন পল্লী- শিক্ষা, কৃষি- অর্থনৈতিক শিক্ষা, সাহিত্য প্রভৃতি এখানে করা হয়।
  • শান্তিনিকেতন এবং শ্রীনিকেতন নামে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ক্যাম্পাস কলকাতা থেকে কিছু দূরে অবস্থিত রয়েছে বর্তমানে ।
  • এখানকার উপাচার্য নিযুক্ত হন পরিদর্শকের অনুমোদন সাপেক্ষে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং প্রথম উপাচার্য হন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯৫১-১৯৫৩ খ্রীঃ)।
  • এই বিশ্ববিদ্যালয়টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ।
  • ইন্দিরা গান্ধী, সুচিত্রা মিত্র, মহাশ্বেতা দেবী, অমর্ত্য সেন, এবং সত্যজিৎ রায় ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ছাত্র ।

প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ও তাঁর প্রকাশ :

 

রবীন্দ্রনাথের মতে শিক্ষা , মানুষ এবং প্রকৃতির থেকে আলাদা কোনো বিষয় নয় এবং তার ভাবনায় প্রকৃতি ও মানুষের সাথে শিক্ষার সমন্বয় ঘটানো দরকার । প্রকৃতিভাবনা ছিল তার শিক্ষা ভাবনার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ।

তিনি মনে করতেন জীবনের অস্তিত্ব একে অপরের সাথে পরিপূর্ণ ভাবে জড়িত । তার মতে পৃথিবীর সকল জীব বৃক্ষদের অবলম্বনের মাধ্যমেই বেঁচে থাকে কিন্তু নির্মমভাবে বন ধ্বংস হচ্ছে ।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি বৃক্ষরোপণ উৎসবকে আরো বেশি আগ্রহী করে তোলেন শান্তিনিকেতনে পঞ্চপট্টি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে এবং একটি আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে। তাই শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণ উৎসব হিসেবে প্রতি বৎসর ২২ শ্রাবণ দিনটিকে পালন করা হয়।

  • কৃষিকাজের উন্নতির বিষয়ে মানুষের কল্যাণের জন্য রবীন্দ্রনাথ পল্লীগ্রামের মানুষের বিষয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করতেন এবং ‘হিতৈষী তহবিল‘ গড়ে তোলা হয় জমিদারদের থেকে সম পরিমাণ অর্থের ভর্তুকি নিয়ে।
  • নির্মাণ এসব কিছু অর্থের মাধ্যমে করা হতো। সেই সময় ‘মহর্ষি দাতব্য চিকিৎসালয়’ শিলাইদহে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
  • শিলাইদহে আদর্শ কৃষি ক্ষেত্র তৈরীর মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনে আমূল পরিবর্তন আসে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন- ট্রাক্টর, পাম্পসেট, জৈবসার ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে।
  • যখন সে সময় প্রতিটি ধনী পরিবারের একমাত্র লক্ষ্য ছিল সন্তানদের ব্যারিস্টার বানানো ঠিক সেইসময় রবীন্দ্রনাথ কৃষিবিদ্যা শেখাতে ১৯০৬-০৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নিজে পুত্র রথীন্দ্রনাথ, বন্ধু পুত্র সন্তোষচন্দ্র মজুমদার এবং জামাতা নগেন্দ্র গাঙ্গুলীকে বিদেশে পাঠান কৃষিবিদ্যা চর্চার জন্য।
  • উন্নতির প্রধান লক্ষ্য ছিল জনসাধারণের চাষের কাজে, বৈজ্ঞানিক প্রথম ব্যবহার করে উন্নত বীজ, সার, সেচ ইত্যাদির মাধ্যমে উন্নতি ঘটানো।
  • তিনি একটি আধুনিক কৃষিখামার গড়ে তোলেন শিলাইদহের কুঠিবাড়ির ৮০ বিঘা জমিতে।
  • এছাড়াও তিনি কুটির শিল্পের বিকাশে যেমন উদ্যোগ নেন তেমনি ৬ মাইল রাস্তা কুষ্টিয়া থেকে শিলাইদহ পর্যন্ত নির্মাণ করেন।
  • এমনকি তিনি কৃষিব্যাংক স্থাপন করেন স্বল্পসুদে ঋণ দানের জন্য এবং বিভিন্ন ধরনের প্রজাদের মীমাংসার জন্য সালিশি সভা প্রস্তুত করেন।
  • কৃষকরা যাতে সঠিক মূল্যে ধান ও পাট কিনে বাজারে বিক্রি করতে পারে সেইজন্য তিনি ‘টেগোর অ্যান্ড কোং’ (১৮৯৫ খ্রীঃ) প্রতিষ্ঠা করেন।

মানুষের সাম্প্রদায়িকতা দূর করাই ছিল রবীন্দ্রনাথের শিক্ষানীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং তিনি হিন্দু মুসলমানের বিভেদ দূর করে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন জমিদারি পরিচালনা করতে এসে।

তিনি চিন্তাভাবনা করতেন চাষিদের অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তি দান করা, সন্তানদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ।

SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

1 MARKS QUESTIONS of বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

১. শ্রীরামপুর মিশন কবে স্থাপিত হয়? 

উত্তর-1800 খ্রিস্টাব্দে।

২. ’A Grammar of the Bengali Language’ বইটির রচয়িতা কে? 

উত্তর-ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড।

৩. ভারতের কোথায় প্রথম ছাপাখানা শুরু হয়? 

উত্তর-গোয়ায়।

৪. ’সংবাদ প্রভাকর’ এর সম্পাদক কে ছিলেন? 

উত্তর- ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত।

৫. ’প্রতাপাদিত্য চরিত’ এর রচয়িতা কে? 

উত্তর-রামরাম বসু।

৬. কাকে বাংলা ছাপাখানার অগ্ৰপথিক বলা হয়? 

উত্তর- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে।

৭. ছাপাখানার জনক কে? 

উত্তর-জোহান গুটেনবার্গ।

৮. ’গোলদিঘির গোলামখানা’ নামে কোন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিত?

উত্তর- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।

৯. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদ পত্রের নাম কি?

উত্তর-‘সমাচার দর্পণ’।

১০. এশিয়াটিক সোসাইটি কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর- স্যার উইলিয়াম জোনস। 1784 খ্রিস্টাব্দে।

১১. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানাটির কী নাম ছিল? 

উত্তর- ইউ রায় অ্যান্ড সন্স।

১২. কে ভারতে ‘হাফটোন’ প্রিন্টিং প্রবর্তন করেন? 

উত্তর- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।

Multiple Choice Questions – 1 Marks of বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

১. বাংলার গুটেনবার্গ কাকে বলা হয়? 

  1. সুরেশচন্দ্র মজুমদারকে
  2. চার্লস উইলকিন্সকে
  3. পঞ্চানন কর্মকারকে
  4. উইলিয়াম কেরিকে

উত্তর- চার্লস উইলকিন্সকে

২. জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রথম সভাপতির নাম কি ছিল? 

  1. সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
  2. রাসবিহারী ঘোষ
  3. সতীশচন্দ্র বসু
  4. সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়

উত্তর- রাসবিহারী ঘোষ

৩. জাতীয় বিজ্ঞান চর্চার জনক কে ছিলেন? 

  1. আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়
  2. সত্যেন্দ্রনাথ বসু
  3. আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু
  4. ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার

উত্তর- ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার

৪. আধুনিক রাশিবিজ্ঞানের জনক নামে কে পরিচিত? 

  1. সত্যেন্দ্রনাথ বসু
  2. আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
  3. প্রশান্তচন্দ্র মহালনবীশ
  4. প্রফুল্লচন্দ্র রায়

উত্তর- প্রশান্তচন্দ্র মহালনবীশ

৫. আধুনিক বাংলা বই ব্যবসার পথপ্রদর্শক কে ছিলেন? 

  1. ডিরোজিও
  2. বিদ্যাসাগর
  3. রামমোহন রায়
  4. মধুসূদন

উত্তর- বিদ্যাসাগর

৬. ‘বন্দেমাতরম’ সংগীতটি জাতীয় সংগীত হিসেবে কবে মর্যাদা লাভ করেছিল? 

A.1955

b.1946

c.1949

d.1947

উত্তর- 1947

৭. কোন পত্রিকায় ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়? 

  1. ‘দেশ’ পত্রিকায়
  2. ’বঙ্গদর্শন’পত্রিকায়
  3. ‘প্রবাসী’ পত্রিকায়
  4. ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায়

উত্তর- ’বঙ্গদর্শন’পত্রিকায়

৮. পাশ্চাত্য শিক্ষার ম্যাগনা কার্টা কি ছিল-

  1. হান্টার কমিশন
  2. উডের ডেসপ্যাচ
  3. মেকলের প্রতিবেদন
  4. মুদালিয়র কমিশন

উত্তর- উডের ডেসপ্যাচ

৯. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়? 

  1. 1911খ্রিস্টাব্দে
  2. 1923খ্রিস্টাব্দে
  3. 1906খ্রিস্টাব্দে
  4. 1908খ্রিস্টাব্দে

উত্তর- 1906 খ্রিস্টাব্দে

১০. কে ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? 

  1. কৃষ্ণকান্ত রায়
  2. সুবোধ মল্লিক
  3. তারকনাথ পালিত
  4. অরবিন্দ ঘোষ

উত্তর- তারকনাথ পালিত

১১. ’ইউ অ্যান্ড সন্স’ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়? 

  1. 1890খ্রিস্টাব্দে
  2. 1895খ্রিস্টাব্দে
  3. 1800খ্রিস্টাব্দে
  4. 1885খ্রিস্টাব্দে

উত্তর- 1885খ্রিস্টাব্দে

১২. ’হাফটোন প্রিন্টিং’ পদ্ধতি ভারতে কে প্রবর্তন করেছিলেন? 

  1. সুকুমার সেন
  2. পঞ্চানন কর্মকার
  3. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
  4. চার্লস উইলকিন্স

উত্তর- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

১৩. কবে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপিত হয়েছিল? 

  1. 1822 খ্রিস্টাব্দে
  2. 1905 খ্রিস্টাব্দে
  3. 1800 খ্রিস্টাব্দে
  4. 1799 খ্রিস্টাব্দে

উত্তর- 1800 খ্রিস্টাব্দে

১৪. প্রথম বাঙালি মুদ্রণ ব্যবসায়ী কে ছিলেন? 

  1. রাজা রামমোহন রায়
  2. পঞ্চানন কর্মকার
  3. উপেন্দ্রকিশোর রায়
  4. গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য

উত্তর- গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য

১৫. বিশ্বভারতী কবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়? 

  1. 1952 খ্রিস্টাব্দে
  2. 1951 খ্রিস্টাব্দে
  3. 1905 খ্রিস্টাব্দে
  4. 1953 খ্রিস্টাব্দে

উত্তর- 1951 খ্রিস্টাব্দে

১৬. কে শ্রীরামপুর মিশনে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন? 

  1. পঞ্চানন কর্মকার
  2. কৃষ্ণদাস মিস্ত্রি
  3. উইলিয়াম কেরি
  4. উইলিয়াম উডবার্ন

উত্তর- উইলিয়াম কেরি

১৭. কে সর্বপ্রথম বাংলা অক্ষরে টাইপ শুরু করেন? 

  1. পঞ্চানন কর্মকার
  2. চার্লস উইলকিন্স
  3. উইলিয়াম কেরি
  4. সুরেশচন্দ্র মজুমদার

উত্তর- চার্লস উইলকিন্স

১৮. বারদৌলি সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন? 

  1. গান্ধিজি
  2. স্বামী বিদ্যানন্দ
  3. বল্লভভাই প্যাটেল
  4. স্বামী সহজানন্দ

উত্তর- বল্লভভাই প্যাটেল

১৯. ‘A Grammar of the Bengali Language’ -এর বাংলা অক্ষর গুলির ছাঁচ কে তৈরি করেছিলেন? 

  1. চার্লস উইলকিন্স
  2. উইলিয়াম কেরি
  3. জেমস অগাস্টাস হিকি
  4. পঞ্চানন কর্মকার

উত্তর- পঞ্চানন কর্মকার

২০. বাংলার প্রথম মুদ্রণশিল্পী কে ছিলেন? 

  1. উইলিয়াম কেরি
  2. হিকি
  3. পঞ্চানন কর্মকার
  4. জন ম্যাকে

উত্তর-  হিকি

২১. বাংলা ভাষায় ছাঁপা প্রথম বই কোনটি? 

  1. মঙ্গল সমাচার
  2. অন্নদামঙ্গল
  3. বর্ণপরিচয়
  4. এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ

উত্তর- এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ

২২ . ’প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ কবে প্রকাশিত হয়েছিল? 

  1. 1820 সালে
  2. 1801 সালে
  3. 1822 সালে
  4. 1825 সালে

উত্তর- 1801 সালে

২৩. কবে ‘হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণ’ ছাঁপা হয়েছিল? 

  1. 1760 খ্রিস্টাব্দে
  2. 1788 খ্রিস্টাব্দে
  3. 1770 খ্রিস্টাব্দে
  4. 1778 খ্রিস্টাব্দে

উত্তর. 1778 খ্রিস্টাব্দে

Short Questions – 2-3 Marks of বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

ভারতে কারা কোথায় কবে সর্বপ্রথম আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন? 

উত্তর- 1556 খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগিজরা গোয়ায় ভারতের সর্বপ্রথম আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।

২. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠন করার উদ্দেশ্য কী ছিল? 

উত্তর- ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিকল্প স্বদেশী শিক্ষার প্রসার ঘটানোই ছিল জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠন করার উদ্দেশ্য।

৩. ’ শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে কারা পরিচিত ছিল?

উত্তর- শ্রীরামপুর মিশনের জোশুয়া মার্শম্যান, উইলিয়াম কেরি এবং উইলিয়াম  ওয়ার্ড এই তিনজন ’শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে পরিচিত ছিল।

৪. ’বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠার পিছনে মূল কারণ কী ছিল?

উত্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচীন ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয় করার জন্য বিশ্বভারতী তৈরি করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দ্বারা বিশ্বভারতী গড়ে উঠুক। তাঁর ভাবনার পরিণতিই হল বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা।

৫. কে কবে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠন করেন?

উত্তর- সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর 1906 খ্রিস্টাব্দের 12 ই মার্চ 92 জন সদস্য নিয়ে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠন করেন।

৬. চার্লস উইলকিন্স কে ছিলেন? 

উত্তর- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে রাইটার হিসেবে চার্লস উইলকিন্স যোগদান করেছিলেন। তিনি মুভেবল টাইপ বা বিচল হরফের আবিষ্কর্তা ছিলেন। তিনি ‘বাংলা মুদ্রণ শিল্পের জনক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

৭. কে কবে ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন? 

উত্তর- 1901 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন।

৮. কে কবে ‘বসুবিঞ্জান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন? 

উত্তর-1917 খ্রিস্টাব্দের 30 শে নভেম্বর আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ‘বসুবিঞ্জান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন।

৯. বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব সায়েন্স’ এর গুরুত্ব লেখ? 

উত্তর-বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব সায়েন্স’ এর  গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, শারীরবিদ্যা, ভূবিদ্যা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণায় সাহায্য করা ও ছাত্রদের বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করা।

১০. কে কবে কোথায় ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন? 

উত্তর- আইনজীবী ও শিক্ষানুরাগী তারকানাথ পালিত 1901 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন।

১১. ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রটি কে আবিষ্কার করেন? এই যন্ত্রের কাজ কি ছিল? 

উত্তর- আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রটি অতি অল্প বৃদ্ধিকে একশো গুণ বড় করে দেখাতে পারত।

১২. শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব কী ছিল? 

উত্তর- সার্বিক উন্নয়ন ও গ্রামীণ সমাজকে স্বনির্ভর করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই কাজে তাঁকে সহায়তা করেছিলেন কালীমোহন ঘোষ।

১৩. বাংলার প্রথম সংবাদপত্র কোনটি এবং এটি কে প্রকাশ করেন?

উত্তর- বাংলার প্রথম সংবাদপত্র ছিল বেঙ্গল গেজেট এবং জেমস অগাস্টাস হিকি এটি প্রকাশ করেন।

১৪. হিকির ছাপাখানা কেন বিখ্যাত ছিলো? 

উত্তর- জেমস অগাস্টাস হিকি 1977 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। সংবাদপত্র ছাপা ও প্রকাশনা করা হত এই ছাপাখানায়। এছাড়াও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামরিক বিলও এই ছাপাখানায় ছাপা হতো।

১৫. পঞ্চানন কর্মকার বাংলা ছাপাখানা বিকাশে কি গুরুত্ব পালন করেছিলেন? 

উত্তর-পঞ্চানন কর্মকার ধাতুর উপর নকশা কাটার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ছেনি দিয়ে কাটা বাংলা হরফ তৈরি করেন। ‘হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণ’ এই হরফে মুদ্রিত হয়।

১৬. কে কবে ‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন? 

উত্তর-স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় 1914 খ্রিস্টাব্দে ‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৭. ‘বসুবিঞ্জান মন্দির’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল? 

উত্তর- বসুবিঞ্জান মন্দির’ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও জ্ঞানের প্রসার।বিজ্ঞানের সুফল সম্পর্কে সবাইকে অবগত করা ও সকলের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রগতি ছড়িয়ে দেওয়া।

Long Questions – 5 Marks of বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

১. টীকা লেখ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ সম্পর্কে। 

উত্তর- সূচনা- 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলে বাংলা জুড়ে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে  ছাত্র সমাজ বিদেশী শিক্ষাগ্রহণে বিরত থাকে। তখন স্বদেশী শিক্ষা প্রসারের জন্য ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠিত হয়।

উদ্দেশ্য- বিদেশী শিক্ষানীতির ত্রুটি এবং সীমাবদ্ধতা দূর করে দেশীয় সাহিত্য, বিজ্ঞান, কারিগরিবিদ্যা সম্পর্কে ভারতীয়দের অবগত করা এবং নৈতিক শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যেই ছিল এই পরিষদের মূল উদ্দেশ্য।

মনীষীদের অংশগ্রহণ- জাতীয় শিক্ষা পরিষদে শিক্ষা পরিচালনা করার কাজে অনেক মনীষীরা অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাসবিহারী ঘোষ, হীরেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ।

গুরুত্ব- ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ এবং ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ’ জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল। বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও কারিগরী শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থাও করে এই পরিষদ। এই পরিষদের উদ্যোগে 1908 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে 25 টি মাধ্যমিক ও 300 টিরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

মূল্যায়ন- সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে এই শিক্ষা পরিষদ গঠন করা ছিল স্বদেশী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা। এই পরিষদ ভারতে বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যা শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. টীকা লেখ- ‘বসুবিঞ্জান মন্দির’। 

উত্তর- সূচনা- পরাধীন ভারতে বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা বিকাশের উদ্দেশ্যে ‘বসুবিঞ্জান মন্দির’ প্রতিষ্ঠিত হয়। বসুবিঞ্জান মন্দির বা ‘বোস ইনস্টিটিউট’ ছিল সমসাময়িক সময়ের বিশ্বের একটি প্রথম সারির বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র।

প্রেক্ষাপট- আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ঐকান্তিক চেষ্টায় বসুবিঞ্জান মন্দিরের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বিজ্ঞান বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান লাভ করেছিলেন। এর ফলস্বরূপ তিনি বসুবিঞ্জান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

বসুবিঞ্জান মন্দিরের প্রতিষ্ঠা- 1917 খ্রিস্টাব্দের 30 শে নভেম্বর কলকাতায় বসুবিঞ্জান মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।এই বসুবিঞ্জান মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবসে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু এই প্রতিষ্ঠানটিকে ‘দ্য ভয়েস অব লাইফ’ শিরোনামে জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।

উদ্দেশ্য- আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর মতে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে ছিল বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি ও জ্ঞানের প্রসার ঘটানো। তিনি চাইতেন এই প্রতিষ্ঠান গঠনের সুফল যেন সব মানুষ পায়।

৩. টীকা লেখ- B.T.I.

উত্তর- সূচনা- বঙ্গভঙ্গের সময় কারিগরী শিক্ষার প্রতি বাঙালীদের আগ্ৰহ বৃদ্ধি করতে ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

প্রতিষ্ঠা- 1906 খ্রিস্টাব্দের 25 শে জুলাই তারকনাথ পালিতের চেষ্টায় এই ইনস্টিটিউটটি গঠিত হয়। তিনি নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে প্রায় 4 লক্ষ টাকা এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য উৎসর্গ করেন।

উদ্দেশ্য- এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রাচ্য রীতি ও আদর্শের উপর ভিত্তি করে শিক্ষা দান করা হত। এখানে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, ভূবিদ্যা, শিল্প, যন্ত্র বিজ্ঞান এর সাথে সাথে কলা বিভাগেও শিক্ষা দান করা হত।। শিখক্ষার্থীদের স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী করে তোলাই ছিল এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য।

দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারের উদ্দেশ্যে কারগরি শিক্ষা দান দিয়ে শুরু হলেও ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ এবং বেঙ্গল টেকনিক্যাল কলেজ একত্রিত হয়ে যায়। 1928 খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানের নতুন নামকরণ হয় ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’।

1925 সালের মধ্যে এখান থেকে গড়ে প্রায় একশো জন করে সুযোগ্য ইঞ্জিনিয়ার তৈরি হয়েছিল যারা দেশের কারিগরি শিক্ষা বিকাশে নিয়োজিত হয়েছিল।

৪. কীভাবে ICAS প্রতিষ্ঠা হয় তা ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গবেষণার সাথে 1876 সালে ‘Indian Association for the Cultivation of Science’ প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি লন্ডনে ‘রয়্যাল ইনস্টিটিউট’ এবং ‘ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স’ এর অনুকরণে একটি বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তৈরীর সিদ্ধান্ত নেন এবং অবশেষে বাসার ইউডিনে লাফরের সহোযোগিতায় কলকাতার বৌবাজারে 1876 খ্রিস্টাব্দে ‘Indian Association for the Cultivation of Science’ তৈরি করেন।

বিজ্ঞানের  প্রসার সাধন ও বিজ্ঞান গবেষণার বিস্তার ঘটানো ছিল এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য।। বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণামূলক কাজ গুলো প্রকাশের জন্য এই প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স’ নামে একটি প্রত্রিকা প্রকাশ করা হয়।

৫. বাংলায় মুদ্রণ শিল্প বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের অবদান লেখা। 

উত্তর- প্রথম বাঙালি মুদ্রাকর ও প্রথম বাঙালি বই বিক্রেতা ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য। তিনি 1818 খ্রিস্টাব্দে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বাঙ্গাল গেজেট প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি প্রথম থেকেই শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের প্রেসে কম্পোজিটর হিসেবে তার দক্ষতার পরিচয় দেন। পরে যদিও তিনি মিশন ত্যাগ করে কলকাতায় চলে আসেন। একজন কম্পোজিটর হিসেবে বাংলার মুদ্রণ শিল্পে তার অবদান অনেক। ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ ছিল তার প্রকাশিত প্রথম বাংলা ছবিওয়ালা বই। মুদ্রণ প্রকাশনায়ও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।

৬. ছাপাবই এর সাথে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক আলোচনা কর।

উত্তর- যেকোনো দেশে শিক্ষার অগ্ৰগতির জন্য পাঠ্যপুস্তকের প্রয়োজন হয়। আর এই পাঠ্যপুস্তক জোগান দেওয়ার জন্য দরকার হয় ছাপাখানার। উনিশ শতকে প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানা গুলি শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছাপাবই যেমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্ৰহ জোগায় তার সাথে সাথে তাদের শিক্ষা গ্রহণের উপাদানও হয় এই ছাপাবই।

তাই বলা যেতে পারে শিক্ষার বিস্তার ও ছাপাবই একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও অল্প সময়ে ও অল্প খরচে ছাপাবই জোগান দেওয়া সম্ভব।

যেকোনো লেখা পরিষ্কার ভাবে শিক্ষার্থীদের বোঝানো যায় ছাপাবই এর মাধ্যমে।ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের আগ্ৰহ বৃদ্ধি পায়।উনিশ শতকে ছাপাবই ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করে যা সমস্ত দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায়।

৭. শ্রীরামপুর ছাপাখানা বাংলার মুদ্রণ শিল্পে কী ভূমিকা পালন করেছিল? 

উত্তর- জেসুইট মিশনারি কেরি, মার্শম্যান ও ওয়ার্ড ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন যা তখন এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাপাখানা হিসেবে পরিচিত ছিল। এই ছাপাখানার সাহায্যে বাংলার মুদ্রণশিল্পে এক নতুন যুগের সূচনা হয়।

  • এই ছাপাখানা থেকে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য অনেক কলেজ ও বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক ছাপা হতে শুরু করে
  • শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় রামায়ণ, মহাভারত, বাইবেল অনুমদিত হয়ে ছাপা শুরু হয়।
  • এই ছাপাখানা থেকে রামরাম বসুর ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ এবং মার্শম্যান সম্পাদিত ‘দিগদর্শন’ প্রত্রিকাটি প্রকাশিত হয়।
  • শ্রীরামপুর ছাপাখানা শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের সুযোগ করে দেয় কারণ এখান থেকে প্রচুর পাঠ্যপুস্তক ছাপা হতে শুরু করে। এর ফলে শিক্ষার বিস্তার ঘটে।

৮.  বিশ্বভারতী সম্পর্কে টীকা লেখ। 

উত্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ভুবনডাঙ্গায় বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর আগে এই স্থানেই শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনের পাঠভবনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যাবস্থার জন্য একটি ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শিক্ষা পদ্ধতির প্রাথমিক প্রয়োগ হয় ব্রহ্ম বিদ্যালয়। প্রথমে আশ্রমিক গুরুকুল পদ্ধতিতে শিক্ষা দান করা হত। ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকত না।

শ্রীনিকেতন ও শান্তিনিকেতন নিয়ে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। পাঠভবন, বিদ্যাভবন, শিক্ষাভবন, কলাভবন, সংগীত ভবন নিয়ে বিশ্বভারতী গঠিত হয়েছিল। শ্রীনিকেতনে কৃষি, পল্লি সংগঠন ভবন ও শিল্প ভবনের দ্বারা গ্রামের উন্নয়ন ঘটানো হত।

রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, জাপান, ইউরোপ, আমেরিকা থেকে পন্ডিতদের নিয়ে এসে বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতির মিলন ঘটাতে চেয়েছিলেন।

৯. বাংলায় মুদ্রণের ব্যবসায়িক উদ্যোগ সম্পর্কে লেখ। 

উত্তর- ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলার শিক্ষা প্রসারের কারণে মুদ্রণশিল্পের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়।

ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ:-

  1. শ্রীরামপুর মিশন প্রেস- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে এই ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল তৎকালীন এশিয়ার বৃহত্তম ছাপাখানা।
  2. গুপ্ত প্রেস- ১৮৬১ সালে দুর্গাচরণ গুপ্ত এই ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
  3. অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস- ১৭৮১ সালে উইলকিন্স কলকাতায় এই ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এটি কলকাতার ব্যস্ততম ছাপাখানা ছিল।
  4. ইস্টার্ন হোপ প্রেস– ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ঈশ্বরীপ্রসাদ বসু এটি স্থাপন করেন।
  5. বি. পি.এমস প্রেস – বরদা প্রসাদ মজুমদার এই ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
  6. গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ছিলেন প্রথম বাঙালি প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা। এছাড়াও বেণীমাধব দে, মথুরানাথ তর্করত্ন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ছিলেন।

১০. বিজ্ঞান চর্চায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের অবদান লেখ। 

উত্তর- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় স্বদেশী বিজ্ঞানচর্চার বিস্তারের জন্য কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ স্থাপিত হয়েছিল। তারকানাথ পালিত ও রাসবিহারী ঘোষের উদ্যোগে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে মার্চ এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। উনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা বিকাশের সাথে সাথে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বিকাশ করা ছিল এই কলেজের উদ্দেশ্য। আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় বিজ্ঞান কলেজের গুরুত্ব-

  • খ্যাতনামা শিক্ষক- এই কলেজে সেই সময় বহু খ্যাতনামা শিক্ষক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা দান করেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, শিশির কুমার মিত্র প্রমুখ।
  • খ্যাতনামা শিক্ষার্থী- কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের কিছু শিক্ষার্থী যেমন – সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ বিজ্ঞান সাধনা করে খ্যাতি অর্জন করেন।

এছাড়াও এই কলেজ ভারতের বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটায় ও দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১১. বাংলা ছাপাখানা বিকাশে U. Ray & Sons এর অবদান লেখ।

উত্তর- বিশ শতকের প্রথম দশকে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী শিশু সাহিত্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও তিনি বই প্রকাশনা সংস্থার প্রধান ছিলেন। তিনি মুদ্রাকর হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তিনি 1895 খ্রিস্টাব্দে U. Ray & Sons নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রসেসবিদ্যা- তিনি ছিলেন হাফটোন ব্লক ব্যবহারের পথিকৃৎ। ‘ ছেলেদের রামায়ণ’ এই বইটি তিনি কাঠের ব্লক তৈরি করে প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি রঙিন ব্লকও তৈরি করেছিলেন। এর ফলে মুদ্রণ জগতে প্রচুর পরিবর্তন আসে।

কারিগরি প্রতিভা-তার উদ্ভাবনী দক্ষতা ও কারিগরি বিদ্যা দেশের সাথে সাথে বিদেশেও খ্যাতি লাভ করে। এক্ষেত্রে তিনি যে সকল পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন সেগুলো হল- 60 স্প্রিন টিন্ট প্রসেস পদ, ডায়োটাইপ স্প্রিন হ্যাডজস্টার যন্ত্রপাতি ইত্যাদি।

পুনর্গঠন- তার পুত্র সুকুমার রায় লন্ডনে গিয়ে ফটোগ্রাফি ও প্রিন্টিং টেকনোলজিতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। তারপর দেশে ফিরে পারিবারিক ছাপাখানার আমূল পরিবর্তন করেন। এরপর গড়ফা রোডে U. Ray & Sons পুনর্গঠন করেন।

প্রকাশনা- বাংলা ছাপাখানা শিল্প ও শিক্ষার ক্ষেত্রে এই ছাপাখানার গুরুত্ব অপরিসীম। এখান থেকেই প্রকাশিত হয় ‘ছেলেদের মহাভারত’, ‘টুনটুনির বই’ ইত্যাদি নানা মূল্যবান গ্ৰন্থ।

কেবলমাত্র ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এই ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেননি। তিনি এর সাথে সাথে সাহিত্য সাধনাও চালিয়ে যান।

১২. বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিস্তার সম্পর্কে লেখ। 

উত্তর- উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলার বিভিন্ন দিকে শিক্ষা প্রসারের প্রভাব দেখা যায়। এই সময় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা প্রসারেও বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। দেশীয় ও পাশ্চাত্য শিক্ষার ব্যাপক অনুপ্রবেশে বাংলায় যে নবজাগরণ দেখা দিয়েছিল তার ফলে বাংলায় কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষা বিকশিত হয়ে ওঠে।

মনীষীদের ভূমিকা- রাধাগোবিন্দ কর, মহেন্দ্রলাল সরকার, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জগদীশচন্দ্র বসু প্রমুখ মনীষীরা বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান- বাংলার কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যেমন-

  1. IACS- মহেন্দ্রলাল সরকার 1876 খ্রিস্টাব্দে ‘Indian Association for Cultivation of Science’ গড়ে তোলেন।
  2. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে- তারকনাথ পালিত ও রাসবিহারী ঘোষ 1914 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
  3. বসুবিঞ্জান মন্দির- আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু 1917 খ্রিস্টাব্দের 30 শে নভেম্বর কলকাতায় বসুবিঞ্জান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।এই বসুবিঞ্জান মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবসে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু এই প্রতিষ্ঠানটিকে ‘দ্য ভয়েস অব লাইফ’ শিরোনামে জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।
  4. B. I. T- 1906 খ্রিস্টাব্দের 25 শে জুলাই তারকানাথ পালিতের চেষ্টায় এই  ইনস্টিটিউটটি গঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রাচ্য রীতি ও আদর্শের উপর ভিত্তি করে শিক্ষা দান করা হত।

এখানে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, ভূবিদ্যা, শিল্প, যন্ত্র বিজ্ঞান এর সাথে সাথে কলা বিভাগেও শিক্ষা দান করা হত।

এইভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বিজ্ঞান ও কারিগরী শিক্ষার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ভাবনা সম্পর্কে টীকা লেখ। 

উত্তর-

সূচনা- ব্রিটিশ শাসনকালে ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় তাঁর স্বতন্ত্র চিন্তাধারা ও মৌলিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন-

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা- তিনি সমাজের সব সমস্যার মূল কারণ হিসেবে অশিক্ষা ও কুশিক্ষাকে দায়ী করেছেন। তিনি ভাবতেন ঔপনিবেশিক কাঠামোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি জ্ঞান ভিক্ষার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম- তিনি দেখেছেন শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ছাত্রদের শুধুমাত্র চাকরির জন্য উপযুক্ত করে তোলা হয়।  এই চিন্তাধারাকে তিনি সমর্থন করেননি।

পরিবেশ কেন্দ্রিক শিক্ষা- তাঁর মতে প্রকৃতির সংস্পর্শে শিশুদের দেহ মন সুগঠিত হয়। তাই তিনি পরিবেশ কেন্দ্রিক শিক্ষায় উদ্যোগী হয়েছিলেন। মাতৃভাষার গুরুত্ব- তিনি মাতৃভাষা কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কারণ তিনি ভেবেছিলেন এর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তব ধর্মী হয়ে উঠবে। যা শিক্ষার্থীদের আত্মমর্যাদাকে দৃঢ় করবে।

শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে শিক্ষার্থীদের চিন্তাধারাকে কখোনোই দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা উচিত নয়। তিনি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভা বাস্তবায়নে বিষয়টি তাঁর শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন।

কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা- তিনি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের উপোযোগী করে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বভারতী গঠনের মাধ্যমে বিশ্বজাতির মহামিলনের চেষ্টা করেছিলেন।

error: Content is protected !!
Scroll to Top
×

এই ওয়েবসাইটের সব কনটেন্ট এক্সেস করুন শুধু একটা মেম্বারশীপের সাথে।  আজকেই ক্লিক করুন নিচে রেজিস্টার করার জন্যে।  অসুবিধে হলে হোয়াটস্যাপ করুন আমাদের  +919804282819