Chapter 06- দুর্যোগ ও বিপর্যয় Durjog O Biporjoi Geography Bhugol Subject WBBSE Class 9

আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে

  • প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics  গুলো সহজভাবে.  এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
  • দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
  • তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er  প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
  • চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়

আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি

দুর্যোগ : 

সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘ (UNO)-র মতে, প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট ক্রিয়াকলাপের ফলে সৃষ্ট যে সকল ঘটনাবলি মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং পরিবেশগত অবক্ষয় ঘটায় তাকে দুর্যোগ বলে ।

দুর্যোগের সাধারণ বৈশিষ্ট্য :

  1. দুর্যোগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে ।
  2. দুর্যোগে মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
  3. দুর্যোগ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি করে ।
  4. দুর্যোগের পরিমাণ বাড়লে বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে ।

দুর্যোগের শ্রেণিবিভাগ : দুর্যোগকে তিন প্রকারে ভাগ করা হয়েছে, যথা –

  1. প্রাকৃতিক দুর্যোগ : যে দুর্যোগ প্রাকৃতিক কারণ অর্থাৎ বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির দ্বারা সৃষ্টি হয়, তাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে । এই ধরনের দুর্যোগ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ।
  2. আধা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ : যে দুর্যোগ প্রাকৃতিক এবং মানুষের ক্রিয়াকলাপগুলির সংমিশ্রণের ফলে ঘটে, তাকে আধা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে । যেমন – মাটির ক্ষয়, ভূমিধস প্রভৃতি ।
  3. মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ : যে দুর্যোগ মানুষের নির্বিচার কর্ম দ্বারা সৃষ্ট হয়, তাকে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ বলে । যেমন – মৃত্তিকা ক্ষয়, বন্যা প্রভৃতি ।

বিপর্যয় : 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, একটি বিপর্যয় হল এমন একটি পরিস্থিতি বা ঘটনা যা আর্থিক ক্ষতি, মানুষের জীবনহানি এবং স্বাস্থ্য পরিসেবার এমন অবনতি ঘটায় যেখানে বাইরের স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন হয় ।

অর্থাৎ, যে ঘটনা জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে অস্বাভাবিক করে তোলে তাকে বিপর্যয় বলে । যেমন – ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সুনামি প্রভৃতির ফলে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় ।

বিপর্যয়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য : 

  1. বিপর্যয় জীবন এবং সম্পত্তি ধ্বংস করে ।
  2. বিপর্যয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে তছনছ করে দেয় ।
  3. বিপর্যয় স্বাস্থ্য পরিসেবার এমন অবনতি ঘটায় যে বাইরের স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন হয় ।
  4. বিপর্যয় অত্যাবশ্যক জনপরিসেবাকে বিপর্যস্ত করে তোলে ৷
  5. বিপর্যয়ের পর মানুষ সম্পূর্ণভাবে অসহায় হয়ে পড়ে ।

বিপর্যয়ের শ্রেণিবিভাগ : দুর্যোগের চূড়ান্ত ফলাফল হলো বিপর্যয় । প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণে বিপর্যয় ঘটে,

  1. প্রাকৃতিক বিপর্যয় : বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, সুনামি, ভূমিধস, হিমবাহ, তুষারঝড়, আগ্নেয়গিরি, দাবানল প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণে বিপর্যয় ঘটে ।
  2. মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় : মানবসৃষ্ট বিপর্যয়গুলি ধোঁয়াশা, তেজস্ক্রিয় এবং রাসায়নিক গ্যাস নির্গমন, পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ, যুদ্ধ প্রভৃতি কারণগুলি মনুষ্যকতৃক সৃষ্টি হয় ।

বিভিন্ন দুর্যোগ ও বিপর্যয় 

বন্যা : 

যখন নদীতে অতিরিক্ত জল প্রবেশ করে এবং সেই জল নদীর তীর পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে জলমগ্ন করে তোলে, তখন তাকে বন্যা বলে । কেন্দ্রীয় জল কমিশনের মতে, ভারতের প্রায় ১২%জমি, বা ৮০ লক্ষ হেক্টর জমি প্রতি বছর বন্যার জলে প্লাবিত হয় ।

  • বন্যাপ্রবণ অঞ্চল :
    • ভারতের নিম্ন গাঙ্গেয় অববাহিকা
    • উচ্চ ও মধ্য গাঙ্গেয় অববাহিকা
    • ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা
    • বাংলাদেশের পদ্মা ও যমুনা অববাহিকা
    • চীনের ইয়াং সিকিয়াং ও হুয়াং হো অববাহিকা
  • বন্যার কারণ :
    • স্বল্প সময়ের মধ্যে একটানা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত
    • জলাধার থেকে অতিরিক্ত জল নদীতে ছেড়ে দেওয়া
    • দীর্ঘস্থায়ী অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত
    • সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূল অঞ্চলে জলোচ্চ্বাস
  • বন্যার প্রভাব : 
    • অনেক মানুষ এবং জীবজন্তু মারা যায় ।
    • ধন-সম্পত্তির মারাত্মক ক্ষয় ক্ষতি ।
    • রাস্তাঘাট, যাতায়াত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপর্যয় ।
    • কলেরা, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগের ফলে মহামারী সৃষ্টি ।
    • জল ও মৃত্তিকা ক্ষয় হয় ।
  • বন্যা বিপর্যয় প্রশমনের পন্থা :
    • নদীর তীরে কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ
    • নদীর তীরে ব্যাপকভাবে ববসৃজন
    • বৈজ্ঞানিকভাবে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে অতিরিক্ত বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য
    • কৃষি ও পশুপালনের বৈজ্ঞানিক প্রথা গ্রহণ করতে হবে

খরা : 

দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কারণে বা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হলে যে অস্বাভাবিক শুষ্ক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাকে খরা বলে । ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) অনুসারে কোনো অঞ্চলে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় 75% কম বৃষ্টিপাত হলে সেখানে খরার সৃষ্টি হয় ।

খরাপ্রবণ অঞ্চল : ভারতের রাজস্থান ও গুজরাট রাজ্যের মরুপ্রায় অঞ্চল, দাক্ষিণাত্যের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল, ওড়িশার কালাহান্ডি, পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, আফ্রিকার ইথিওপিয়া উচ্চভূমি প্রভৃতি পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য খরাপ্রবণ স্থান । ভারতের প্রায় ৩৩% অঞ্চল খরাপ্রবণ ।

খরার কারণ :

  1. স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হলে ।
  2. মৌসুমী বায়ুর অনির্দেশ্যতা, বর্ষাকালে অকালে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়া ।
  3. নির্বিচারে বন ধ্বংস হলে ।
  4. দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নগরায়ণ দ্রুত হলে ।

খরার প্রভাব :

  1. খরার ফলে পানীয় জলের তীব্র অভাব দেখা দেয় ।
  2. খাদ্য সংকটের ফলে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ে ।
  3. কৃষি উৎপাদন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় ।
  4. জল ও খাদ্য সংকটের ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হয় ।

খরা বিপর্যয় প্রশমনের পন্থা :

  1. সবচেয়ে বেশি খরাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে ।
  2. খরা সহনকারী বৃক্ষরোপণের মাত্রা বাড়াতে হবে ।
  3. জল সংরক্ষণ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে ।
  4. মরুভূমির বিস্তার রোধ করতে হবে ।

ঘূর্ণিঝড় :

ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে যখন প্রবল বায়ুপ্রবাহ গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের আকর্ষণে ঘূর্ণির মতো ধেয়ে আসে তাকে ঘূর্ণিঝড় বলে ।

ঘূর্ণিঝড় প্রভাবিত অঞ্চল : ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ সমুদ্রে সৃষ্ট হওয়া ঘূর্ণিঝড় ভারতের বঙ্গোপসাগরের উপকূল, বাংলাদেশের উপকূল, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির উপকূল, অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূল, জাপান ও তাইওয়ানের উপকূল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলকে প্রভাবিত করে ।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণ : ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ সমুদ্রে যখন কোনো অঞ্চল হঠাৎ উত্তপ্ত হয় তখন সেখানে শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় । তখন বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্রের আকর্ষণে ঘূর্ণির মতো প্রচন্ড গতিবেগে ধেয়ে আসে এবং ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করে ।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব :

  1. ঘূর্ণিঝড়ের ফলে অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া তৈরি হয় ।
  2. বাড়িঘর, গাছপালা এবং অন্যান্য কাঠামো ধ্বংস হয়ে যায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিঘ্নিত হয় ।
  3. অনেক মানুষ, প্রাণী নিহত হয় এবং প্রচুর অর্থ ধ্বংস হয় ।
  4. উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস এবং বন্যার সৃষ্টি হয় ।

ঘূর্ণিঝড় প্রশমনের পন্থা : 

  1. উপগ্রহ নজরদারির দ্বারা ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতি ও প্রবাহের দিকের ওপর নজর রাখতে হবে ।
  2. ঘূর্ণিঝড়ের আগাম পূর্বাভাস জারি করতে হবে ।
  3. উপকূলের অধিবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে ।
  4. ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করে এর বিদ্ধংসী প্রভাবকে কমাতে হবে ।

ভূমিকম্প : 

ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্টি হওয়া কোনো কম্পন যখন হঠাৎ ভূপৃষ্ঠকে কিছুক্ষনের জন্য প্রবলভাবে কাঁপিয়ে তোলে তাকে ভূমিকম্প বলে ।

ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চল : ভারতের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল, উত্তরাখণ্ড এবং গুজরাটের পশ্চিম অংশ; প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের দেশগুলি, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলের দেশসমূহের প্রভৃতি অঞ্চল ।

ভূমিকম্পের কারণ :

  1. অভিসারী পাত সীমান্তে দুটি মুখোমুখি পাতের সংঘর্ষ এবং প্রতিসারী পাত সীমান্তে চাপ হ্রাসের কারণে
  2. আগ্নেয়গিরির প্রবল অগ্ন্যুৎপাতের কারণে
  3. মহীভাবক এবং গিরিজনি আন্দোলন এবং
  4. পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধস এবং হিমবাহ সম্প্রপাত হলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় ।

ভূমিকম্পের প্রভাব : 

  1. ভূমিকম্পের ফলে বহু মানুষ, জীবজন্তু ও প্রাণীর প্রাণহানি ঘটে ।
  2. সম্পত্তির ক্ষতি হয় ।
  3. বাড়িঘর, পরিবহন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ লাইন, সেতু, পাইপলাইন প্রভৃতি ধ্বংস হয় ।
  4. পাহাড়ি স্থানে, ভূমিধস এবং হিমানী সম্প্রপাত ঘটে ।

ভূমিকম্প প্রশমন কৌশল : 

  1. ঘরবাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে হালকা ও স্থিতিস্থাপক উপাদান ব্যবহার করতে হবে ।
  2. ভূমিকম্পের সময় খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসতে হবে ।
  3. ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সামাজিক পরিকাঠামো নির্মাণ করতে হবে ।
  4. জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে ।

সুনামি :

সমুদ্রবক্ষে তীব্র ভূমিকম্পের ফলে যে প্রবল সামুদ্রিক জলোচ্চ্বাসের সৃষ্টি হয় এবং তা প্রচন্ড গতিবেগে উপকূলে আছড়ে পড়ে প্লাবনের সৃষ্টি করে তাকে সুনামি বলে ।

সুনামি প্রভাবিত অঞ্চল : ভারতের পূর্ব উপকূল, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি, জাপান, উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল ।

সুনামির কারণ :

  1. সমুদ্রবক্ষে অভিসারী পাতসীমান্তে মহাসাগরীয় পাত যখন মহাদেশীয় পাতের নীচে প্রবেশ করে
  2. ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রস্থলের কাছে সমুদ্রতটের স্থানচ্যুতি ঘটে; ফলে প্রবল ভূমিকম্পের সৃষ্টি হলে তার বৃত্তাকার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে ও উচ্চতায় বিস্তার লাভ করে সেই সময়, সমুদ্রের ঢেউগুলি 30-40 মিটার উঁচু হয়ে ওঠে এবং 500-600 কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে ধাবিত হয়, যার ফলে একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ।

সুনামির প্রভাব : 

  1. উপকূলীয় অঞ্চলে অসংখ্য মানুষ, প্রাণী, জলজ প্রজাতি এবং অন্যান্য প্রাণী মারা যায় ।
  2. সম্পত্তির অনেক ক্ষতি হয় ।
  3. রাস্তাঘাট, বাসস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
  4. সামুদ্রিক জলের সংস্পর্শে এলে কৃষিজমি লবণাক্ত এবং ক্ষারীয় হয়ে যায় ।

সুনামি প্রশমন কৌশল : সুনামির গভীর সামুদ্রিক মূল্যায়ন ও তথ্য [DART] এবং আধুনিক উপগ্রহ নজরদারি ব্যবস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পূর্বাভাস ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সুনামির ক্ষতি সীমিত করা যেতে পারে ।

ভূমিধস :

পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষয়প্রাপ্ত এবং বিচূর্ণীভূত শিলাসমূহ যখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে বিশাল অঞ্চল জুড়ে পর্বতের ঢাল বরাবর দ্রুতবেগে নীচের দিকে নেমে আসে তখন তাকে ধ্বস বলে ।

ভূমিধস-প্রবণ অঞ্চল : পৃথিবীর নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল, পূর্ব আফ্রিকার বিশাল গ্রস্থ-উপত্যকা অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির পার্বত্য অঞ্চল ।

ধসের কারণ : 

  1. ভূমিকম্পের ফলে
  2. প্রবল বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের ঢালের মাটি আলগা হয়ে গেলে
  3. পাহাড়ের ঢালের স্থায়িত্ব না থাকলে
  4. পাহাড়ের ঢাল বরাবর অনুন্নত কৃষি এবং চারণভূমির ফলে ভূমিধস ঘটে

ধসের প্রভাব : 

  1. ভূমিধসের ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ, পশুপাখি এবং সম্পত্তিহানি ঘটে ।
  2. পরিবহন ও যোগাযোগ পরিকাঠামো সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয় ।
  3. নদীপ্রবাহ বন্ধ হয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয় ।

ভূমিধসপ্রশমন কৌশল : 

  1. পার্বত্য অঞ্চলে বনসৃজন বাড়াতে হবে
  2. ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনার মাধ্যমে বাড়ি, রাস্তা, সেতু ইত্যাদি তৈরি করে
  3. উন্নতমানের নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূমিধস নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।

হিমানী সম্প্রপাত : 

Avalanches একটি ফরাসি শব্দ যার অর্থ ‘পড়ে যাওয়া’ । উচ্চ-পার্বত্য অঞ্চলে তুষারের স্তুপ যখন প্রচন্ড গতিতে পর্বতের ঢাল বরাবর নীচের দিকে নেমে আসে, তাকে হিমানী সম্প্রপাত বলে ।

হিমানী সম্প্রপাত প্রভাবিত অঞ্চল : ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের রাজ্যগুলি,  রকি এবং আন্দিজপার্বত্য অঞ্চল, পূর্ব আফ্রিকার বিশাল গ্রস্থ উপত্যকা অঞ্চল ।

হিমানী সম্প্রপাতের কারণ : 

  1. উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে আকস্মিক ভূমিকম্প
  2. বেশি মাত্রায় বরফের গলন
  3. অত্যধিক তুষারপাতের কারণে পাহাড়ের ঢালের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় এবং হিমানী সম্প্রপাত
    ঘটে ।

হিমানী সম্প্রপাতের প্রভাব : 

  1. হিমানী সম্প্রপাতের ফলে অগণিত মানুষ তাদের জীবন ও সম্পত্তি হারায় ।
  2. পরিবহন ও যোগাযোগ পরিকাঠামো সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয় ।
  3. নদী প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে প্রবল বন্যার সৃষ্টি হয় ।

হিমানী সম্প্রপাত প্রশমনের কৌশল :

  1. অনেকবেশি মাত্রায় বনসৃজন করতে হবে
  2. ভূমিব্যবহারের সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে
  3. জলনিকাশী ব্যবস্থার উন্নতকরণের মাধ্যমে হিমানী সম্প্রপাত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।

তুষারঝড় (ব্লিজার্ড) :

তীব্র তুষারঝড় হলো ব্লিজার্ড । আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা দপ্তর’ (NWS, US) অনুসারে, যখন বায়ুপ্রবাহ তুষারকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে প্রচন্ড ঝড়ের সৃষ্টি করে তাকে ব্লিজার্ড বলে ।

ব্লিজার্ড প্রবণ অঞ্চল : অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া এবং তাসমানিয়াউচ্চভূমি, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, নিউ ইংল্যান্ড, অ্যান্টার্কটিকা প্রভৃতি অঞ্চলে ব্লিজার্ড হয় ।

ব্লিজার্ড-এর  কারণ :

  1. ৭ ডিগ্ৰীর নীচে উষ্ণতা নেমে গেলে তীব্র শীতের সৃষ্টি হলে ব্লিজার্ড দেখা যায় ।
  2. প্রতি ঘন্টায় 56 কিমি/ঘন্টা বেগে বায়ু প্রবাহিত হলে এবং
  3. বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ তুষারঝড়ের প্রাথমিক কারণ ।

ব্লিজার্ড-এর প্রভাব : 

তুষারঝড়ের ফলে, রাস্তাগুলি তুষারে ঢেকে যায় ফলে আকাশ এবং জমি একত্রিত হয় এবং দৃশ্যমানতা কমে যায় (400 মিটারের কম), যা সড়ক  দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় ।

তুষারঝড় প্রশমনের কৌশল :

  1. তুষারপাত এবং তীব্র বায়ুপ্রবাহের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা ।
  2. সতর্কতার উপর জোর দেওয়া ।
  3. সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা ।

অগ্ন্যুৎপাত : 

ভূপৃষ্ঠের দুর্বল স্থানে প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং তার মধ্যে দিয়ে ভূগর্ভের উত্তপ্ত গলিত পদার্থ বাষ্প ও ছাই সহ ভূপৃষ্ঠে নির্গত হয়, তাকে অগ্ন্যুৎপাত বলে ।

অগ্ন্যুৎপাত প্রবণ অঞ্চল : প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, মধ্য-আটলান্টিক বলয়, পূর্ব আফ্রিকার গ্রস্থ উপত্যকা এবং হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনালোয়া হল বিশ্বের প্রধান অগ্ন্যুৎপাত প্রবণ অঞ্চল ।

অগ্ন্যুৎপাত সৃষ্টির কারণ : 

  1. অভিসারী পাতসীমান্তে দুটি পরস্পরমুখী পাতের সংঘর্ষের ফলে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে ।
  2. প্রতিসারী পাতসীমান্তে চাপ কমে ম্যাগমা তরলে পরিণত হয় এবং ভূপৃষ্ঠে উঠে তা অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি করে ।

অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাব : 

  1. অসংখ্য মানুষ, প্রাণী নিহত হয় এবং প্রচুর সম্পদ ধ্বংস হয় ।
  2. ভূমিকম্প, দাবানল, সুনামির সৃষ্টি হয় ।
  3. পরিবেশ দূষণ ঘটে ।

অগ্ন্যুৎপাত প্রশমন কৌশল : 

  1. উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে অগ্ন্যুৎপাতের প্রকোপ মোকাবিলার করার জন্য ।
  2. এর পূর্বাভাস, আগাম সতর্কতা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থার গ্রহণ করতে হবে ।

দাবানল : 

শুকনো গাছ বা ডালের ঘর্ষণে সৃষ্ট আগুন বনভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং যখন পুরো বন এবং এর পরিবেশকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে তখন তাকে দাবানল বলে ।

দাবানল প্রভাবিত অঞ্চল : অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতি দেশের বনভূমি অঞ্চলে দাবানল হয় ।

দাবানল সৃষ্টির কারণ : 

  1. শুষ্ক ডালপালা ও পাতা
  2. প্রবল বায়ুপ্রবাহ দাবানল সৃষ্টির কারণ ।

দাবানলের প্রভাব :

  1. বনের গাছপালা, পশুপাখি এবং বস্তুতন্ত্র সবই পুড়ে নষ্ট হয়ে যায় ।
  2. আশেপাশের সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেদের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ হয়ে পড়ে ।
  3. পরিবেশ দূষণ হয়
  4. মানুষের মৃত্যুও ঘটে

দাবানল প্রশমন কৌশল : 

  1. পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম এবং যানবাহন ব্যবস্থা সচল রাখতে হবে
  2. জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দাবানলের ক্ষতি কম করা সম্ভব

পশ্চিমবঙ্গের দুর্যোগ এবং বিপর্যয়ের প্রকৃতি 

বন্যা হলো পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে সুপরিচিত এবং ব্যাপক বিপর্যয় । বিভিন্ন পর্যায়ে, ঘূর্ণিঝড় রাজ্যের ক্ষতি করে । তা ছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় যেমন খরা, ভূমিকম্প, ভূমিধস ইত্যাদি পশ্চিমবঙ্গকে অবিরত আঘাত করে চলেছে ।

পশ্চিমবঙ্গের জীবনে বর্ষাকালের বন্যা স্বাভাবিক দুর্যোগে পরিণত হয়েছে । জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলির জলাধার থেকে জল ছাড়ার কারণে, পশ্চিমবঙ্গের 20টি জেলার মধ্যে ১৭টি জেলা বন্যাপ্রবণ হয়ে উঠেছে । আবার গ্রীষ্মের সময়, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলাগুলির পাশাপাশি বীরভূম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অঞ্চলগুলিতে তীব্র খরা দেখা দেয় ।

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দুটি সময়কালে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে, প্রাথমিকভাবে এপ্রিল-মে মাসে মৌসুমী বায়ুর আগমনের সময় এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে মৌসুমী বায়ুর ফিরে যাওয়ার সময় । পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি প্রভৃতি জেলা এবং নদীয়া, বর্ধমান, বাঁকুড়ার জেলাগুলির কিছু অংশবিশেষ ঘূর্ণিঝড়ের দ্বারা ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে ।

ভূমিধস হলো দার্জিলিং জেলার পার্বত্য অঞ্চলের একটি পরিচিত বিপর্যয় । পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চলেই ভূমিকম্পের প্রবণতা রয়েছে, যদিও ভূমিকম্প প্রায়ই প্রতিবেশী দেশগুলি যেমন উত্তর নেপাল, ভুটান প্রভৃতি দেশকে প্রভাবিত করে ।

পশ্চিমবঙ্গে দুর্যোগ এবং বিপর্যয়ের প্রভাব :

১৯৭৮ সালের বন্যা পশ্চিমবঙ্গকে প্রবলভাবে বিপর্যস্ত করে । ২০০০ সালে অধিক বৃষ্টিপাত ও জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে যে বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল তাতে দক্ষিণের জেলার প্রায় ১২৬২ জনের মৃত্যু হয় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘতিগ্রস্থ হয় ।

ভারী বর্ষণ এবং ডিভিসি প্রকল্পের জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে ২০১২ সালে হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ১৭ জন লোক মারা গিয়েছিল এবং লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল ।

১৯৪৩ সালে তীব্র খরার ফলে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে খারাপ মন্বন্তর হয় যা পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে পরিচিত । পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭৩-৭৬ সালের খরার সময়ও মন্বন্তর দেখা যায় ।

পশ্চিমবঙ্গ ঘূর্ণিঝড়প্রবণ রাজ্য । ১৮৯১ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের 24 পরগণা (উত্তর ও দক্ষিণ) জেলায় ৩৫ বার এবং মেদিনীপুর (পূর্ব ও পশ্চিম) জেলায় ৩৪ বার মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল । ২১ মে, ২০০৯-এ ঘূর্ণিঝড় আয়লার ফলে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, দক্ষিণ 24 পরগণা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ১৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং লক্ষের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছিল ।

পশ্চিমবঙ্গে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম, উত্তরাঞ্চলীয় পার্বত্য অঞ্চলে প্রায়ই ভূমিকম্প হয় । ১৯৬৪ সালের ১৫ এপ্রিল সাগর দ্বীপে একটি ভূমিকম্প কলকাতা সহ হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলাগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল ।

বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা : 

বিপর্যয়ের প্রকোপ কমানোর প্রক্রিয়াসমূহকে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বলে । বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত,

  1. প্রাক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা পর্যায়
  2. বিপর্যয়কালীন ব্যবস্থাপনা পর্যায়
  3. বিপর্যয় পরবর্তী ব্যবস্থাপনা পর্যায়

প্রাক-বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা পর্যায় : 

  1. বিপর্যয় প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে এবং সেখানে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের মূল্যায়ন করতে হবে
  2. বিপর্যয়ের প্রকৃতি সম্পর্কে অনুমান ও ব্যবস্থা গ্রহণের কৌশল নির্ধারণ করার জন্য ওই এলাকার মানচিত্র তৈরী করতে হবে ।
  3. বিপর্যয়প্রবণ এলাকার প্রকৃত অবস্থার উপর ভিত্তি করে বিপর্যয় মোকাবিলার উপযুক্ত পরিকাঠামো গঠন করতে হবে । যেমন-  ত্রাণ শিবির, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন প্রভৃতি ।
  4. স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিপর্যয় সম্পর্কিত শিক্ষাদান ও সচেতন করতে হবে ।
  5. দুর্যোগ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে উপ-প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করুন ।
  6.  বিপর্যয় সতর্কতার জন্য আধুনিক এবং উন্নত আগাম সতর্কীকরণ পদ্ধতির (EWS) প্রণয়ন ।

বিপর্যয়কালীন ব্যবস্থাপনা পর্যায় : 

  1. বিপর্যয়ের থেকে সংগৃহীত তথ্য সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে বিপর্যয়ের প্রকৃতির যথাযথ মূল্যায়ন করা ।
  2. তৎকালীন বিপর্যয় সামাল দেওয়ার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা ।
  3. পুলিশ, সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং সরকারী ও বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে বিপর্যয় সম্পর্কে অবহিত করে তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা ।
  4. জাতীয় থেকে রাজ্য পর্যন্ত সকল স্তরে উপযুক্ত বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ করা ইত্যাদি।

বিপর্যয় পরবর্তী ব্যবস্থাপনা পর্যায় : 

  1. বিপর্যয়-আক্রান্ত এলাকায় তৎকালীন ব্যবস্থায় ত্রাণ সরবরাহ ।
  2. সেই এলাকার মানুষদের উদ্ধারকার্যের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ ।
  3. চিকিৎসা ও অন্যান্য জরুরি পরিসেবা প্রদানের জন্য ব্লক ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা ।
  4. মোবাইল, ওয়্যারলেস, রেডিও, দূরদর্শন, সংবাদপত্র, ইত্যাদি যোগাযোগের মাধ্যমে সতর্কতা এবং অসহায়তা দূরীকরণের জন্য প্রচার ।
  5. ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিকাঠামো মেরামত করার জন্য সরকারী পদক্ষেপ গ্রহণ ।

বিপর্যয় ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা : 

  • প্রশিক্ষণের কাজে নিয়োগ : শিক্ষার্থীদের যথাযথ বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং দূরবর্তী স্থানে মানুষদের বিপর্যয় প্রশিক্ষণে তাদের মোতায়েন করার মাধ্যমে ভাল ফলাফল পাওয়া যায় ।
  • জনসচেতনতা বৃদ্ধি : বিপর্যয়ের প্রকৃতি, বিপর্যয় মোকাবিলা এবং বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রশিক্ষিত ছাত্রদের দ্বারা জনসাধারণের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালনের  প্রয়োজনীয়তা আছে ।
  • উদ্ধার সহায়তা : উদ্ধারকর্মী ও স্বেচ্ছাকর্মী সংস্থাগুলিকে বিপর্যস্ত এলাকা চেনাতে এবং সেই এলাকার উদ্ধারকার্যে পরিকল্পনা গ্রহণে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।
  • বিপর্যয় ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় সহযোগিতা : দুর্যোগ-পরবর্তী পরিকাঠামো পুনরুদ্ধারে বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উদ্ধার, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ।

পশ্চিমবঙ্গের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনায় গৃহীত কৌশল :

‘জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কতৃপক্ষ’ (NDMA) থেকে অনুমোদনের পর, বিপর্যয়ের ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন, আগাম সতর্কতা ও প্রচার, বিদ্যালয় নিরাপত্তা প্রকল্প, সম্প্রদায়-ভিত্তিক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি-আইন শাসনতন্ত্র, চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয় ‘রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা পরিকল্পনা’-ই অন্তর্ভুক্ত করা হয় (SDMP) ।

রাজ্যে আরো একটি পৃথক দপ্তর ‘পশ্চিমবঙ্গ বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর’ (WBDMD) গড়ে তোলা হয়েছে, এবং বিপর্যয় মোকাবিলায় নানান কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে –

  1. বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা, দমকল ও আপদকালীন পরিসেবা এবং অসামরিক নিরাপত্তা – এই তিনটি দপ্তরকে সংযুক্ত করা হয়েছে ।
  2. বিপর্যয়ের আগাম সতর্কবার্তার জন্য জেলার গ্রামস্তর পর্যন্ত মোবাইলের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত বার্তা পরিসেবা (SMS) গড়ে তোলা হয়েছে ।
  3. বর্তমান রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছেন যারা তৃতীয়বার ত্রাণের বস্ত্রের গুণমান বিচার করেন যার ফলে ত্রাণ বস্ত্রের গুণমান বৃদ্ধি পেয়েছে ।
  4. অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল গঠন করা হয়েছে যারা বিপর্যয় মোকাবিলায় আপদকালীন পরিস্থিতিতে ডাকলেই আসবে ।
  5. প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে আয়লা ঘূর্ণিঝড় অধ্যুষিত জেলাগুলিতে ৫০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়স্থল নির্মাণ করা হয়েছে । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরও ২৫টি বহুমুখী আশ্রয়স্থল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন ।
  6. ২০১১-১২ সালে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের জন্য বিপর্যয় মোকাবিলায় বিভিন্ন খাতে ৫৪,১৫,১.৯৮ লক্ষ টাকার বাজেট বরাদ্দ করেছেন ।

SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of দুর্যোগ ও বিপর্যয় DURJOG O BIPORJOI

1 MARKS QUESTIONS of দুর্যোগ ও বিপর্যয় DURJOG O BIPORJOI

1. কীরকম জলবায়ুতে তুষারঝড় হয়?
Ans. অতিশীতল জলবায়ুতে।

2. পিলিন কোন ধরনের বিপর্যয়?
Ans. ঘূর্ণিঝড়।

3. পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় কোন ধরনের বিপর্যয় অধিক লক্ষ করা যায়?
Ans. খরা।

4. ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে ______ চাপ থাকে। (শূন্যস্থান পূরন করো)
Ans. নিম্ন

5. দক্ষিণবঙ্গের ______ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বেশি লক্ষ করা যায়। (শূন্যস্থান পূরন করো)
Ans. উপকূলবর্তী অঞ্চলে

6. অধিক গভীরতায় সংঘটিত ভূমিকম্পকে কী বলে?
Ans. পাতালিক ভূমিকম্প।

7. পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় কোন ধরনের বিপর্যয় অধিক লক্ষ করা যায়?
Ans. খরা।

8. ভারতে খরা নিয়ন্ত্রণে প্রধানত কোন্ মন্ত্রক কার্যকরী ভূমিকা নেয়?
Ans. কৃষি মন্ত্রক।

9. বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানোর ব্যবস্থাপনা বলা হয়?
Ans. বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা।

10. জাতীয় জলসম্পদ মন্ত্রক প্রধানত কোন ধরনের বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা নেয়?
Ans. বন্যা।

multiple choice questions – 1 marks of দুর্যোগ ও বিপর্যয় DURJOG O BIPORJOI

1. একটি মনুষ্যসৃষ্ট চরম বিপর্যয়ের উদাহরণ –
A. ভূমিকম্প B. অগ্ন্যুৎপাত C. পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ D. খরা
Ans. C

2. বিপর্যয় লঘুকরণ দিবস হিসেবে পালন করা হয়—
A. 10 অক্টোবর B. 10 নভেম্বর C. 5 সেপ্টেম্বর D. 5 জানুয়ারি
Ans. A

3. ভূমিকম্পের দেশ বলা হয়—
A. জাপানকে B. ইরাককে C. মায়ানমারকে D. ভারতকে
Ans. A

4. সমুদ্র উপকূলে যে বিপর্যয় দেখা যায় তা হল—
A. খরা B. দাবানল C. ধস D. সুনামি
Ans. D

5. ধস কোথায় বেশি লক্ষণীয়—
A. পার্বত্য অঞ্চলে B. মরুভূমি অঞ্চলে C. অরণ্য অঞ্চলে D. সমভূমি অঞ্চলে
Ans. A

6. ভূমিধসের জন্য দায়ী নয় –
A. বৃক্ষচ্ছেদন B. বহুমুখী নদী পরিকল্পনা C. নগরায়ণ D. সুনামি
Ans. D

7. একটি জলবায়ুগত দুর্যোগের উদাহরণ হল—
A. অগ্ন্যুৎপাত B. বন্যা C. দাবানল D. সুনামি
Ans. B

8. একটি আধাপ্রাকৃতিক দুর্যোগ হল—
A. অগ্ন্যুৎপাত B. সুনামি C. তুষারঝড় D. ধস
Ans. D

9. একটি আধাপ্রাকৃতিক দুর্যোগ হল—
A. অগ্ন্যুৎপাত B. সুনামি C. তুষারঝড় D. ধস
Ans. D

10. তুষারঝড় বেশি দেখা যায়—
A. নিরক্ষীয় অঞ্চলে B. মরু অঞ্চলে C. মধ্যঅক্ষাংশীয় অঞ্চলে D. মেরু অঞ্চলে
Ans. D

short questions – 2-3 marks of দুর্যোগ ও বিপর্যয় DURJOG O BIPORJOI

  1. তুষার ঝড় বলতে কী বােঝো? ব্লিজার্ড তুষার ঝড় সৃষ্টির কারণ লেখাে। 

উত্তর : তুষার ঝড় (BIizard) : সূক্ষ্ম তুর কেলাস (ছােটো বরফ কণা) বহনকারী অতি শীতল এবং প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত বায়ুপ্রবাহকে তুষারঝড় বা ব্লিজার্ড বলে। সাধারণত মেরু অঞ্চলে ও উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে তুষার ঝড় ঘটে থাকে। এই ব্লিজার্ডে বাতাসের বেগ থাকে 150 – 200 কিমি/ঘণ্টা।

তুষার ঝড় সৃষ্টির কারণ : উভয় গােলার্ধের মধ্য অক্ষাংশীয় অঞ্চলে (40° উ:/দ: – 60° উ:/দ:) শীতকালে উপকূলভাগ বা মহাদেশের মধ্যবর্তী জলভাগ উত্তর গােলার্ধে মহাদেশের উত্তরভাগ এবং দক্ষিণ গােলার্ধে মহাদেশের দক্ষিণ ভাগের তুলনায় বেশি উষ্ণ থাকে। ফলে এখানে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ফলে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের প্রবল ঠান্ডা বায়ু এই নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসে। এই প্রবল বেগসম্পন্ন ঠান্ডা বায়ুর সঙ্গে তুষার কণা যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয় তুষার ঝড় বা ব্লিজার্ড।

  1. বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বলতে কী বােঝো?

উত্তর- বিপর্যয়ের সকল স্তরে গৃহীত নীতিসমূহ, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপের সমষ্টিগত রূপকে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বলে।

  1. মহা অগ্ন্যুৎপাত কাকে বলে ?

উত্তর : যে সমস্ত আগ্নেয়গিরি থেকে 1015 কেজি-এর বেশি ম্যাগমা উদ্গীরণ হয় তাদের Super volcano বা মহা অগ্ন্যুৎপাত বলে। এই Super volcano-গুলি সাধারণত তপ্তবিন্দু (Hot Spot) পাত অঞ্চলে  (Subduction Zone)-এ সংঘটিত হয়।

  1. পশ্চিমবঙ্গের বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলির কয়েকটি উল্লেখ করাে।

উত্তর : কোচবিহারে, দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙা; সালদার, ইংলিশবাজার, কালিয়াচক; নদিয়ার

করিমপুর, নাকাশিপাড়া, কালিগঞ্জ; ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, কেশপুর; উত্তর চব্বিশ পরগনার হাবরা, বাদুড়িয়া, বনগাঁ প্রভৃতি।

  1. মেঘ ভাঙা বৃষ্টি (Cloud burst) বলতে কী বােঝাে?

উত্তর : দ্রুত ঘনীভবনের কারণে হঠাৎ ভারী বর্ষণ হলে, তাকে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি (Cloud burst) বলে।

এর ফলে পার্বত্য অঞ্চলে যে বিশাল মাত্রায় দ্রুতগতি সম্পন্ন জলপ্রবাহ ঘটে, তাকে হড়পা বান বলে, এর ফলে ধস নামে এবং ব্যাপক হারে জীবন ও সম্পত্তিহানি হয়।

উদাহরণ : 2013 সালের জুন মাসে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানে উত্তরাখণ্ডের অলকানন্দা অববাহিকা ও হরিদ্বারে ভয়াবহ ধসসহ বন্যা বিকট মাত্রায় বিপর্যয় ডেকে এনেছিল।

  1. NIDM কী ?

উত্তর : NIDM-এর পুরাে কথা National Institute of Disaster Management। এই জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানটি 1995 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা শিক্ষার প্রসার ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি ভারতকে বিপর্যমুক্ত দেশে পরিণত করতে সদা সচেষ্ট।

  1. QRT কী?

উত্তর : QRT-এর পুরাে কথা হল Quick Response Team পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিপর্যয় মােকাবিলার জন্য প্রতিটি জেলার QRT নামে বিশেষ দল তৈরি করেছে। এই দলে রয়েছে রাজ্যস্তরের 4 পলটন ব্যাটেলিয়ান, ও কোম্পানি এবং 25 জন প্রশিক্ষিত কর্মী।

  1. হড়পা বান (Flash Flood) কী?

উত্তর : হঠাৎ ভারী বর্ষণের ফলে পার্বত্য অঞ্চলে  যে বিশাল মাত্রার দ্রুতগতি সম্পন্ন জলপ্রবাহ ঘটে, তাকে হড়পা বান বলে। এর ফলে পার্বত্য ঢালে জলপ্রবাহের সঙ্গে সব কিছু ধসে নীচের দিকে নামতে থাকে এবং ব্যাপক হারে জীবন ও সম্পত্তিহানি হয়। 2010 সালে জম্মু-কাশ্মীরের লে উপত্যকায় হড়পা বানে 250 জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

  1. ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে? ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কারণ লেখো।

উত্তর : কোনাে অল্প পরিসর জায়গায় উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে হঠাৎ করে বায়ুর চাপ কমে গেলে শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় বাইরের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে এই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে বায়ু প্ৰবলগতিতে ছুটে আসে এবং ঝড়ের সৃষ্টি করে। এই ঝড়ে বায়ু উত্তর গােলার্ধে বামদিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে ডানদিকে ঘুরতে থাকে বলে একে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কারণ– 

  • ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি
  • সমুদ্র জলতলের উষ্ণতা বৃদ্ধি
  • গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি
  • আকাশে গাঢ় কিউমুলােনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি
  • বাতাসের দ্রুত উধ্বমুখী প্রবাহ
  • জলীয়বাষ্পের ঘনীভবনের সময় লীনতাপের কারণে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি
  • চাপের সমতা রক্ষার জন্য চারদিকের উচ্চচাপের বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে কুণ্ডলী আকারে তীব্র বেগে ছুটে যাওয়া
  • গ্লোবাল ওয়ার্মিং
  1. সুনামি কী ? সুনামি সৃষ্টির কারণগুলি লেখো। 

উত্তর : সুনামি (Tsunarni) একটি জাপানি শব্দ। ‘Tsu’-এর অর্থ ‘বন্দর’ ও ‘nami ’-এর অর্থ ‘ঢেউ’। অর্থাৎ, সুনামি শব্দের অর্থ ‘বন্দর সংলগ্ন ঢেউ’। সাধারণত প্রবল ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্র উপকূল বা বন্দর সংলগ্ন অঞ্চলে যে প্রবল জলােচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়, তাকে সুনামি বলে।

সুনামি সৃষ্টির প্রধান কারণ –

সমুদ্র ভূমিকম্প : সমুদ্রগর্ভে পাত সঞ্চালনের ফলে সৃষ্ট ভূমিকম্পের কারণে ভয়াবহ সুনামির সৃষ্টি হয়। যেমন 2004 সালের ভারত মহাসাগরের সুনামি, 2011 সালের জাপানের সুনামি।

অগ্ন্যুৎপাত : সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত ঘটলে যে কম্পন সৃষ্টি হয় তার ফলেও সুনামি সৃষ্টি হয়। যেমন- 1928 সালে ক্রাকাতােয়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে সৃষ্ট সুনামি।

ধস : সমুদ্র তীরবর্তী পার্বত্য এলাকায় বা বৃহদায়তন শিলায় ধসের ফলে সুনামির সৃষ্টি হয়। যেমন 1980 সালে ফ্রান্স উপকূলে সৃষ্ট সুনামি।

হিমানী সম্প্রপাত : হিমানী সম্প্রপাতে বিশাল বরফের স্তুপ সমুদ্রজলে আছড়ে পড়লে সুনামি সৃষ্টি হয়।

উত্তপাত : সমুদ্রে বড়াে উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সুনামি সৃষ্টি হয়।

ঘূর্ণিঝড় : প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ফলেও অনেক সময় সুনামির সৃষ্টি হয়।

  1. হিমানী সম্প্রপাতের কারণগুলি লেখাে।

উত্তর : বিপুলায়তন হিমরাশি পর্বতের খাড়া ঢাল বরাবর মাধ্যাকর্ষণের টানে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে নেমে আসার ঘটনাকে হিমানী সম্প্রপাত বলে।

হিমানী সম্প্রপাতের কারণ –

অতিরিক্ত ভুষারপাত : উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে অতিরিক্ত তুষারপাতের ফলে তুষারের চাপে বিশালাকার বরফের চাই ধসে পড়ে হিমানী সম্প্রপাত ঘটায়।

দিনের উষ্ণতা : দিনের বেলা তাপমাত্রা বাড়লে বরফগলা শুরু হয় ও তুষারের স্তর দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে হিমানী সম্প্রপাত ঘটে। উত্তর গােলার্ধে পর্বতের দক্ষিণ ঢালে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে পর্বতের উত্তর ঢালে এই কারণে হিমানী সম্প্রপাত বেশি হয়।

প্রবল বায়ুপ্রবাহ : তুষার ক্ষেত্রের ওপর দিয়ে প্রবলবেগে প্রবাহিত বায়ু প্রবাহের প্রভাবে উপরের আলগা তুষারস্তর মূল তুষারস্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তুষার রাশির স্রোত সৃষ্টি করে হিমানী সম্প্রপাত ঘটে।

ভূমিকম্প : তুষারাবৃত পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রভাবে হিমানী সম্প্রপাত ঘটে থাকে।

মানুষের কার্যাবলি : তুষারাবৃত পার্বত্য ভূমিতে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর নির্মাণের জন্য ডিনামাইট বিস্ফোরণ, প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষচ্ছেদন, তুষারক্ষেত্রের ওপর বিনােদনমূলক খেলাধূলার ব্যবস্থা করা প্রভৃতি হিমানী সম্প্রপাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।

  1. বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বলতে কী বােঝো?

উত্তর : বিপর্যয়ের সকল স্তরে গৃহীত নীতিসমূহ, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপের সমষ্টিগত রূপকে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বলে।

বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য : বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হল বিপর্যয় মােকাবিলা করতে সক্ষম একটি জনগােষ্ঠী গড়ে তােলা, ও দুর্যোগ চিহ্নিতকরণ ও বিশ্লেষণ করা, ও যে-কোনাে বিপর্যয়ের সময়ে দ্রুত কাজ শুরু করা, এ প্রতিবিধানমূলক নানান ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ও সুসংহত উদ্যোগ ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে

বিপর্যয়ের ঝুঁকি ও মানুষের দুর্গতি কমানাে, বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত পূরণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য গড়ে তােলা।

বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার স্তর : মূলত তিনটি স্তরে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজকর্মকে ভাগ করা হয়। যথা বিপর্যয়ের পূর্ববর্তী কার্যকলাপ এর মধ্যে বিপর্যয়ের ঝুকি মূল্যায়ন, বিপর্যয় সংক্রান্ত গবেষণা, শিক্ষা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিপর্যয় মােকাবিলার সঠিক প্রশিক্ষণ প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত।

বিপর্যয় চলাকালীন কার্যকলাপ ত্রাণ, উদ্ধারকার্য, আশ্রয়দান প্রভৃতি এই স্তরের কার্যকলাপ। 

বিপর্যয় পরবর্তী কার্যকলাপ : এই পর্যায়ের মূল কাজ হল পুনর্বাসন। এই তিন পর্যায়কে একত্রে PMR পর্যায় বলে। অর্থাৎ,

  • Preparedness বা P (প্রস্তুতিকরণ), 
  • Mitigation বা M (প্রশমন) এবং 
  • Recovery বা R (পুনরুদ্ধার) 

প্রতি বছর 13 অক্টোবর দিনটিকে বিপর্যয় লঘুকরণ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

  1. বিপর্যয় পূর্ববর্তী পর্যায় বলতে কী বােঝাে?

উত্তর : পূর্বজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে বিপর্যয় লঘুকরণের জন্য বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিপর্যয়ের পূর্বে বিভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করা হয়। একে বিপর্যয় পূর্ববর্তী পর্যায় বলে। একে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। 

এই পর্যায়ে যে কাজগুলি করা হয় সেগুলি হল – 

  • যে-কোনা বিপর্যয়ের ঝুঁকির মূল্যায়ন করা হয়,
  • বিপর্যয় সম্পর্কে গবেষণা করা হয়,
  • বিপর্যয় মােকাবিলার আনুষঙ্গিক পরিকল্পনা করা হয়,
  • বিপর্যয়প্রবণ এলাকার সম্পদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়,
  • বিপর্যয়প্রবণ এলাকায় পর্যাপ্ত সহযােগিতা দেওয়া হয়, 
  • বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়,
  • বিপর্যয় সংক্রান্ত সতর্কীকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ ও তার উন্নতি করা হয়,
  • বিপর্যয় সংক্রান্ত শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়,
  • বিপর্যয়ের সময়, তার আগে ও পরের সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়,
  • জরুরি অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য সঠিক পরিকল্পনা করা হয়,
  • বিপর্যয়ের পূর্বে বিপর্যয়প্রবণ এলাকাবাসীদের মহড়া প্রদান করা হয় যাতে বিপর্যয়ের সময় তারা সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে,
  • বিপর্যয় মােকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামাে যেমন- দমকল, আবহাওয়া দপ্তর, সেনাবাহিনী, এনজিও ইত্যাদি গড়ে তােলা হয়।

প্রশমন : এই পর্যায়ে যে কাজগুলি করা হয় সেগুলি হল – 

বিপর্যয়প্রবণ এলাকার মানচিত্র প্রস্তুতি,

সঠিক ভূমি ব্যবহার নীতি প্রণয়ন, 

স্থানীয়, আলিক, রাজ্য, কেন্দ্রীয় ও বিশ্ব পর্যায়ে বিপর্যয় মােকাবিলার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ। 

নিবারণ : মানুষ ও সম্পদ রক্ষার জন্য গৃহীত ব্যবস্থাই হল নিবারণ। ভবিষ্যতে বিপর্যয়

যাতে মারাত্মক আকার ধারণ না করে তার জন্য জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে বিপর্যয় নিবারণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।

  1. বন্যা নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গে গৃহীত তিনটি কৌশল লেখাে।

উত্তর : জল ধরাে, জল ভরাে : পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘােষিত প্রকল্পের মাধ্যমে নদী, খাল, বিল, জলাধার প্রভৃতি খনন করে তার গভীরতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর ফলে যেমন বৃষ্টির জল ধরার সুবিধা হবে তেমনি বন্যার প্রকোপ হ্রাস পাবে।

বন্যা প্রাচীর নির্মাণ : সুন্দরবন অঞলে নদী বাঁধগুলি কাদা-মাটির পরিবর্তে ইট, পাথর, কংক্রিট, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। ফলে প্রবল জোয়ারের জল এই বন্যা প্রাচীর ভাঙতে না পারায় বন্যার প্রকোপ কমেছে।

সি-ডাইক (Sea dyke) তৈরি : সামুদ্রিক জলােচ্ছাস প্রতিরােধের জন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলে স্থানে স্থানে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এগুলিকে সি-ডাইক বলা হয়।

long questions – 5 marks of দুর্যোগ ও বিপর্যয় DURJOG O BIPORJOI

  1. দুর্যোগ (Hazard) কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলিলেখাে। 

উত্তর : প্রাচীন ফরাসি শব্দ ‘Hasard’ থেকে ‘Hazard শব্দটি এসেছে, যার অর্থ দুর্যোগ। আবার, অনেকে মনে করেন আরবি শব্দ ‘az-zahr’ থেকে ‘Hazard’ শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ ‘Chance’ (অপ্রত্যাশিত বা দৈব ঘটনা) বা Luck’ (অদৃষ্ট) অর্থাৎ, দুর্যোগ হল অদৃষ্ট বা কোনাে দৈব ঘটনা।

প্রাকৃতিক ও মানবিক কারণে সংঘটিত যে-সকল ঘটনা দ্বারা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়, জীবন, স্বাস্থ্য ও সম্পত্তিহানি হয় এবং পরিবেশের গুণগত মানের অবনমন ঘটে, তাকে দুর্যোগ বলে।

উদাহরণ : ভূমিকম্প, বন্যা, ভূমিধস প্রভৃতি।

দুর্যোগের বৈশিষ্ট্য :

উপাদান : দুর্যোগ প্রাকৃতিক ও মানবিক উপাদানের সংযুক্ত ক্রিয়া।

ব্যাপ্তি : দুর্যোগ সাধারণত ক্ষুদ্র স্কেলে সংঘটিত হয়। অর্থাৎ, এর ব্যাপকতা কম।

প্রভাব : মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে একেবারে রুদ্ধ না করলেও সাময়িকভাবে ব্যাহত করে।

ক্ষয়ক্ষতি এবং পরিবেশের গুণগত মান হ্রাস : ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব ব্যাপক মাত্রায় না হলেও সম্পদের অল্পবিস্তর ক্ষতি হয় এবং পরবেশে গুণগত মানের অবনমন ঘটে।

বিপর্যয়ের কারণ : দুর্যোগের পথ ধরেই বিপর্যয় আসে, তাই দুর্যোগ হল বিপর্যয়ের কারণ দুর্যোগ বিপর্যয়ে পরিণত হতে পারে। 

  1. বিপর্যয় (Disaster) কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য লেখো। * *

উত্তর : Disaster শব্দটির উৎপত্তি ফরাসি শব্দ Desasire থেকে বোনে, Des’ কথার অর্থ Bad’ বা ‘Evil (খারাপ বা মন্দ) এবং asierথার অর্থ Star (তারা)। সুতরাং, Desasire’-এর অর্থ অশুভ তারা (Evil Star)। প্রাচীনকালে মানুষ বিশ্বাস করত যে, অশুভ তারার প্রকোপেই প্রকৃতিতে বিপর্যয় হয়। 

প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদি এমন কোনাে বিপজ্জনক ঘটনা যা মানুষের দুর্গতির কারণ হয় এবং বইরের সাহায্য ছাড়া যার মােকাবিলা করা সম্ভব হয় না, তাকেই বিপর্যয় বলা হয়।

Webster অভিধান অনুসারে বিপর্যয় হল – “A grave occurrence having ruinous result” 

উদাহরণ : দুর্যোগের চরম পরিণতি হল বিপর্যয়। ভূমিকম্প, বন্যা প্রভৃতি দুর্যোগের কারণে যখন ব্যাপক হারে ক্ষয়ক্ষতি ও জীবনহানি ঘটে তখন তা বিপর্যয়ের রূপ নেয়। যেমন – 2004 সালে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সুনামি দ্বারা ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশের বিপর্যয়।

বিপর্যয়ের বৈশিষ্ট্য :

উপাদান : বিপর্যয় প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণের ফল।

ব্যাপ্তি : বিপর্যয় হতে পারে হঠাৎ, অপ্রত্যাশিত ও ব্যাপকতর। বিপর্যয় বৃহৎ স্কেলে, অর্থাৎ, ব্যাপক হারে সংঘটিত হয়।

প্রভাব : মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়।

ক্ষয়ক্ষতি : প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।

বিপন্নতা : বিপর্যয় অধ্যুষিত এলাকায় মানুষ নিজেকে বিপন্ন বােধ করে।

জীবনযাত্রার অবনতি : এই অবস্থায় সমাজের প্রয়ােজনে লাগে আশ্রয়, স্যানিটেশন, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও সামাজিক পরিচর্যা। ফলে বাইরের সাহায্যের প্রয়ােজন হয়।

পরিকাঠামাের অবনতি : বিপর্যয়ের ফলে অত্যাবশ্যক পরিকাঠামাে, যেমন স্বাস্থ্য, পরিবহণ, যােগাযােগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

  1. খরা কী ? খরা সৃষ্টির কারণগুলি লেখাে। **

উত্তর : ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের সংজ্ঞানুযায়ী কোনাে অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম (75%-এর কম) বৃষ্টি হলে বা বহুদিন ধরে বৃষ্টি না হলে অস্বাভাবিক শুষ্ক অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে খরা বলে। 

যেমন- ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বে 300 km বিস্তৃত অঞল খরাপ্রবণ।

খরা সৃষ্টির কারণ : খরা সৃষ্টির পিছনে একাধিক প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণ রয়েছে।

প্রাকৃতিক কারণ :

  • বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা : সঠিক সময়ে বর্ষা না এলে, বর্ষাকালে অনেকদিন ধরে বৃষ্টি না হলে, সঠিক সময়ের আগে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
  • অতিরিক্ত বাষ্পীভবন : বৃষ্টিপাতের চেয়ে বাষ্পীভবনের পরিমাণ বেশি হলে খরা সৃষ্টি হয়।
  • বিশ্ব উষ্ণায়ন : বিশ্ব উন্নয়নের প্রভাবে আবহাওয়া ক্রমশ উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে উঠছে। খরা সৃষ্টির প্রবণতা বাড়ছে।
  • এল-নিনোর প্রস্তাব : এল-নিনো সমুদ্রস্রোত, আঞ্চলিক স্তরের আবহাওয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যেসব বছরগুলিতে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব প্রান্তে এল-নিনাের আবির্ভাব হয় সে বছর ভারতে মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পায় ও খরার সম্ভাবনা বাড়ে। এল-নিনাের প্রভাবে 2009 সালে ভারতের 25টি জেলায় খরার সৃষ্টি হয়।

মনুষ্যসৃষ্ট কারণ :

  • অৱণ্য ধ্বংস : অরণ্য ধ্বংসের ফলে বাতাসে জলীয়বাষ্পের জোগান কমে যায় এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
  • শিল্পায়ন নগরায়ণ : নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বাতাসের তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এই ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। 
  • ভূ-গর্ভস্থ জলের ব্যবহার : ভূগর্ভস্থ জল অত্যধিক পরিমাণে ব্যবহার করার ফলে মাটির স্তরগুলি শুকোতে শুরু করেছে যা ভবিষ্যতে খরার ন্যায় পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। অতিরিক্ত ভৌমজল ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর নীচে নেমে যায় এবং মাটির আর্দ্রতা কমে যায় ফলস্বরূপ খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
  • বায়ুদূষণ : বায়ুদূষণের ফলে বাতাসে অ্যারােসলের(ধূলিকণা, লবণকণা ইত্যাদি) পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে জলীয়বাষ্পের শােষণ বেড়ে যায়। ফলে, অধঃক্ষেপণের পরিমাণ হ্রাস পায় এবং খরার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

দুর্যোগপূর্ণ পৃথিবী আমেরিকার ‘Dust Bowl খরা 1930 খ্রিস্টাব্দে ঘটেছিল, যেটি ইতিহাসে সবথেকে বড়াে বিপর্যয়। উত্তর আমেরিকার গ্রেট প্লেন সমভূমি অঞলের মাটি ধুলােতে পরিণত হয়েছিল।

error: Content is protected !!
Scroll to Top
×

এই ওয়েবসাইটের সব কনটেন্ট এক্সেস করুন শুধু একটা মেম্বারশীপের সাথে।  আজকেই ক্লিক করুন নিচে রেজিস্টার করার জন্যে।  অসুবিধে হলে হোয়াটস্যাপ করুন আমাদের  +919804282819