আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে
- প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
- দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
- তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
- চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি
পৃথিবীর আকার
পৃথিবীর আকৃতির ধারনাসমূহ
১. পৃথিবীর সমতল বা চ্যাপ্টা আকৃতি
লোকেরা বিশ্বাস করত যে পৃথিবী সমতল এবং এর একটি প্রান্ত রয়েছে । সুতরাং, সীমার বাইরে নাবিকরা সমুদ্রে ভ্রমণ করতে ভয় পেয়েছিলেন কারণ তারা পৃথিবী থেকে মহাকাশে পড়ে যাওয়ার ভয় পেতেন ।
২. পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি
350 খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রীক পণ্ডিত এবং বিজ্ঞানী অ্যারিস্টটল চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের উপর পৃথিবীর গোলাকার ছায়া পর্যবেক্ষণ করেন । এই পর্যবেক্ষন থেকে পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির ধারণা প্রকাশ করা হয় ।
৩. চীনাদের ধারনা
প্রাচীনকালে, চীনের লোকেরা বিশ্বাস করত যে, চীন ভূখণ্ডই হলো সমগ্র পৃথিবী ।
গ্রিকদের মতে, পৃথিবী একটি অস্থির সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত একটি বিশাল দ্বীপের মতো । আবার সিরিয়া উপকূলের ফিনিশীয় নাবিকদের মতে, পৃথিবীর আকার সমতল হওয়া অসম্ভব ।
কারণ দেশের সীমান্তের পাহাড়, সমুদ্র থেকে উঠে আসা পাহাড়ের চূড়া প্রভৃতি দৃশ্যমান ছিল । এ থেকে তাদের ধারণা জন্মায় যে, পৃথিবী মোটামুটি একটি অর্ধ-আপেল বা জলের অববাহিকায় রাখা একটি কমলালেবুর মতো ।
ভৌগোলিক আবিষ্কারের যুগে পঞ্চদশ শতাব্দীতে, ভূ-পর্যটনকারী নাবিকদের পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় যে, পৃথিবীর আকার মোটামুটি গোলাকার । পরবর্তীকালে, উল্লেখযোগ্য প্রাচীন পণ্ডিতরা প্রস্তাব করেছিলেন যে, পৃথিবীর আকৃতি গোল বা গোলকের মতোই গোল ।
পৃথিবীর সঠিক আকারের প্রমাণগুলি কি কি ?
অভিজ্ঞতালব্ধ প্রমাণ
১. পন্ডিতদের মতামত : আজ থেকে প্রায় 2600 বছর আগে, গ্রীক দার্শনিক পিথাগোরাস গাণিতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যে, পৃথিবীর আকার একটি গোলকের মতো গোলাকার । বরাহমিহির, আর্যভট্ট, কোপারনিকাসের মতো বিখ্যাত পণ্ডিতগণ-এর সাথে একমত হয়েছিলেন ।
বিজ্ঞানী অ্যারিস্টটল চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের উপর পড়া পৃথিবীর ছায়ার প্রান্তভাগ দেখতে পেয়েছিলেন এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে পৃথিবীর আকৃতি আসলে প্রকৃত গোলকের মতো ।
২. নাবিকদের পৃথিবী পরিভ্রমন
১৫১৯ সালে পোর্তুগিজ নাবিক ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান এবং ১৫৭৭ সালে ইংরেজ নাবিক ফ্রান্সিস ড্রেক দিক পরিবর্তন না করে, ক্রমাগত জাহাজ চালিয়ে তাঁরা যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন সেখানেই পুনরায় ফিরে আসেন । পৃথিবি গোলাকার বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল ।
৩. সর্বত্র একই সময়ে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় হয় না
পৃথিবী গোলাকার হওয়ায় সূর্যাস্ত প্রথমে পূর্বের দেশগুলিতে এবং পরে পশ্চিমের দেশগুলিতে ঘটে ।
৪. দিগন্তরেখার বিস্তৃতি
একটি বড় খোলা বিস্তৃতির দিকে তাকালে মনে হয় যেন আকাশ ও পৃথিবী একটি বৃত্তাকার রেখায় মিশে গেছে । বৃত্তাকার রেখাটি হলো দিগন্তরেখা । ভূপৃষ্ঠের স্তর যত উঁচু হবে দিগন্তরেখা ততই বাড়বে । পৃথিবী গোলাকার হওয়ার কারণেই দিগন্তের পরিধি বাড়তে থাকে ।
৫. গোলাকার সমদ্রপৃষ্ঠে জাহাজের অবস্থান
যখন একটি জাহাজ দূরবর্তী সমুদ্র থেকে তীরে আসে, তখন এর মাস্তুল এবং নিম্ন অংশটি প্রথম দৃশ্যমান হয় । পৃথিবী গোলাকার তাই সমুদ্রপৃষ্ঠও গোলাকার । ফলে জাহাজের উপরের অর্ধেক অংশ আগে দেখা যায় । যখন একটি জাহাজ সমুদ্র সৈকত থেকে দূরে সমুদ্রের দিকে চলে যায়, তখন জাহাজের নীচের অর্ধেকটি এবং ধীরে ধীরে সব শেষে মাস্তুলঅদৃশ্য হয়ে যায় ।
৬. ধ্রুবতারা ও হ্যাডলির অক্ট্যান্ট নক্ষত্রের অবস্থান
উত্তর গোলার্ধে, ধ্রুবতারা সুমেরুর ঠিক উপরে রয়েছে । পৃথিবী যদি সমতল হতো, তাহলে তার পৃষ্ঠের যেকোনো স্থান থেকে ধ্রুবতারাকে একই উন্নতি কোণে দেখা যেত । কিন্তু পৃথিবী গোলাকার, তাই ধ্রুবতারাকে বিষুবরেখায় 0° কোণে এবং উত্তর মেরুতে 90° কোণে দেখা যায় ।
অর্থাৎ, নিরক্ষরেখা থেকে ধ্রুবতারার ক্রম-উন্নতি সুমেরুর দিকে বিস্তৃত হয়, দক্ষিণ গোলার্ধে হ্যাডলির অক্ট্যান্ট নক্ষত্রের ক্ষেত্রেও অনুরূপ উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয় ।
৭. দূরবীক্ষণ যন্ত্রের পর্যবেক্ষণ
সৌরজগতের সমস্ত গ্রহের আকৃতি গোলাকার অর্থাৎ পৃথিবীও সৌরজগতের একটি গ্রহ হওয়ায় পৃথিবীর আকৃতিও গোলাকার ।
পৃথিবীর আকৃতির প্রত্যক্ষ প্রমাণ
১. বেডফোর্ড লেভেল পরীক্ষা : ১৮৭0 সালে, বিজ্ঞানী অ্যালফ্রেড রাসেল ওয়ালেস, একই সরল রেখায় এক কিলোমিটার দূরত্ব জুড়ে একটি ভেলার সহায়তায় ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড খালে, একই উচ্চতার তিনটি খুঁটি ভাসিয়েছিলেন । পরে দূরবীক্ষণ – এর সাহায্যে দেখা যায় মাঝের খুঁটির মাথা অন্য দুই খুঁটির মাথার চেয়ে সামান্য উঁচু । পৃথিবী গোলাকৃতির হওয়ায় মাঝের খুঁটির মাথা অনেক উঁচু দেখা যায় । পৃথিবী সমতল হলে তিনটি স্তম্ভের মাথা একই তলে থাকতো ।
২. নভশ্চরদের প্রত্যক্ষ দর্শন : মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পর্যবেক্ষণ হলো সুনির্দিষ্ট এবং সাম্প্রতিকতম প্রমাণ । ১৯৬১ সালে ইউরি গ্যাগারিনের থেকে শুরু করে, প্রথম চন্দ্র বিজয়ী নীল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন, 1984 সালে ভারতীয় মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা এবং অতি সম্প্রতি 2012 সালে ভারতীয় ঐতিহ্যের বাহক আমেরিকান বিজ্ঞানী সুনিতা উইলিয়াম প্রমুখ মহাকাশচারীগন পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির সাক্ষী । পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির ধারণা তাদের তোলা ছবি থেকে স্পষ্ট হয়েছে এবং এটি প্রতিষ্ঠিতও হয়েছে ।
পৃথিবীর আকার অভিগত গোলকের মতো
মহাকাশ থেকে পৃথিবীর ফটোগ্রাফের বিশ্লেষণ এবং অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার হলেও এটি একটি পূর্ণ গোলক নয় । পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু সামান্য সংকুচিত এবং কেন্দ্রের নিরক্ষীয় অঞ্চল কিছুটা প্রসারিত এবং পৃথিবীর এই আকারের সাথে অভিগত গোলকের মিল রয়েছে অর্থাৎ পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলকের মতো ।
অভিগত গোলকের মতো পৃথিবীর আকার হওয়ার প্রমাণ
- একটি বৃত্তের ব্যাসের দৈর্ঘ্য তার সমস্ত বিন্দুর দৈর্ঘ্যের সমান হয়, কিন্তু নিরক্ষীয় ব্যাসের দৈর্ঘ্য ১২,৭৫৭ কিমি এবং মেরু ব্যাসের দৈর্ঘ্য ১২,৭১৪ কিমি অর্থাৎ নিরক্ষীয় ব্যাস পৃথিবীর মেরু ব্যাসের চেয়ে 43 কিমি বড় । এটি প্রমাণ করে যে, পৃথিবীর আকার পুরোপুরি গোলাকার নয়, উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুদেশ সামান্য সংকুচিত এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলটি কিছুটা স্ফীত ।
- পৃথিবীর আকার অভিগত গোলকের মতো বলেই মেরু অঞ্চলটি নিরক্ষীয় অঞ্চলের চেয়ে পৃথিবীর কেন্দ্রের কাছাকাছি । ফলে, মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ আকর্ষণ বেশি হয় তাই নিরক্ষীয় অঞ্চলের তুলনায় মেরু অঞ্চলে বস্তুর ওজন বেশি ।
- ১৬৭১ সালে, ফরাসি বিজ্ঞানী জন রিচার দক্ষিণ আমেরিকার কেইন দ্বীপ (0 ° অক্ষাংশ) পরিদর্শন করেন এবং উল্লেখ করেন যে, প্যারিসে তার 1.5 মিটার দোলকযুক্ত ঘড়ি (49 ° উ অক্ষাংশ) প্রদত্ত সময়ের চেয়ে 2 মিনিট 30 সেকেন্ড ধীর ছিল । ঘড়ির দোলকটিকে তারপর 1/4 ইঞ্চি ছোট করেছিলেন সঠিক সময়ের জন্য । স্যার আইজ্যাক নিউটন ষোল বছর পর মহাকর্ষ সূত্র থেকে এই ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা আবিষ্কার করেন । এই সূত্রটিতে বলেন যে, একটি বস্তু পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে যত দূরে থাকে, পৃথিবীর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ তার উপর কম প্রভাব ফেলে । কেইন দ্বীপে (নিরক্ষরেখার কাছে) পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব কম হয়, তাই ঘড়ির কাঁটা ধীর গতিতে চলে । এটি প্রমাণ করে যে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলটি কিছুটা বেশি ফোলা
- কোনো একটি নির্দিষ্ট নক্ষত্রকে লক্ষ্য করে নিরক্ষরেখার উত্তর বা দক্ষিণে ১১১ কিমি এগোলে নক্ষত্রটিকে ১ ডিগ্রি সরতে দেখা যায় । কিন্তু এর বিপরীত অবস্থায় অর্থাৎ মেরুবিন্দু থেকে ১১১ কিমি এগোলে তাকে ১ ডিগ্রির কম সরতে দেখা যায় । এর কারণ হলো পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের আকার নিরক্ষীয় অঞ্চলগুলির তুলনায় কম গোলাকার ।
- 1837-38 সালে, ফ্রান্সের ‘রয়্যাল একাডেমি অফ সায়েন্সস’ পৃথিবীর প্রকৃত আকৃতি নির্ধারণ করতে বিষুবরেখা থেকে মেরু অঞ্চল পর্যন্ত তিনটি স্থান নির্বাচন করেছিলেন : কুইটো (0°), প্যারিস (৪৯ ° উত্তর অক্ষাংশ) এবং ল্যাপল্যান্ড (৬৬° উত্তর অক্ষাংশ) ।পৃথিবীর পরিধি জুড়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাপের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হয়, এই তিনটি স্থানের । তিনটি স্থানের মধ্যে কুইটোর চাপের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, যেখানে ল্যাপল্যান্ডের চাপ অনেক বেশি । এটি প্রমাণ করে যে, নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর আকারের সর্বোচ্চ বক্রতা রয়েছে, যা বোঝায় যে এই অঞ্চলটি তুলনামূলকভাবে স্ফীত হয়েছে এবং পৃথিবীর আকার ধীরে ধীরে মেরুগুলির দিকে সমতল হয়েছে ।
পৃথিবীর আকার ‘পৃথিবীর মতো’ বা ‘জিয়ড’ তার প্রমাণ
জিয়ড শব্দের অর্থ ‘পৃথিবীর মতো’ । প্রাচীনকালে পৃথিবীর আকার কমলালেবু বা আপেলের আকারের মতো বলে মনে করা হত । পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলক হিসাবে প্রমাণিত হওয়ার পরে, পৃথিবীর আকার অন্য কোনও বস্তুর সাথে তুলনা করা হয় না ।
মহাকাশ থেকে অর্জিত পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষণা এবং ফটোগুলিকে সাবধানতার সাথে বিচার করা হয়েছে এবং পরীক্ষা করা হয়েছে যাতে বোঝা যায় যে, পৃথিবী অভিগত গোলকের আকৃতি হলেও মহাদেশ এবং মহাসাগরের তলদেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে কিছু ভিন্নতা রয়েছে । পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্যের অংশ ৮ মিটার বেশি স্ফীত এবং উত্তর গোলার্ধের মধ্যের অংশ ৮ মিটার বসা । আবার উত্তর মেরুদেশ ২০ কিমি বেশি স্ফীত ও দক্ষিণ মেরুদেশ ২০ কিমি বেশি চাপা ।
সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর আকৃতির তুলনা
সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর আকৃতির তুলনা
মহাকাশ সম্বন্ধীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং মহাকাশ থেকে তোলা সৌরজগতের গ্রহগুলি বিচার ও অধ্যায়ন করার পরে, জানা যায় যে পৃথিবীর আকৃতির মতোই সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহগুলির আকৃতিও অভিগত গোলকের মতো । যদিও সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের রূপ পৃথিবীর মতোই, তবুও প্রতিটি গ্রহের আকার, আয়তন, পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল এবং বলয়ের সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির ।
পৃথিবীর সাপেক্ষে সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহগুলির এই সম্পর্কিত তুলনামূলক আলোচনা নীচের সারনীতে দেওয়া হল—
বুধ হল সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহ এবং বৃহস্পতি হল বৃহত্তম । এটি লক্ষণীয় যে পৃথিবী এবং শুক্র গ্রহের আকার প্রায় সমান এবং শনি ও বৃহস্পতি গ্রহের কিছু মিল রয়েছে । বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন সবই পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড় । তাই এই গ্রহগুলোকে রাক্ষুসে গ্রহ বলা হয় ।
বৃহস্পতি পৃথিবীর আকারের প্রায় 1321 গুণ বড়ো । উপগ্রহের সংখ্যার দিক থেকে বৃহস্পতি অবশ্য পৃথিবীর থেকে বেশ এগিয়ে ।
সৌরজগতে পৃথিবীর স্বকীয় অবস্থান হওয়ার কারণ ?
আমাদের পৃথিবী সৌরজগতের কয়েকটি গ্রহের মধ্যে একটি । দূরত্ব অনুযায়ী পৃথিবী হলো সূর্যের তৃতীয় গ্রহ । সূর্য থেকে গড় দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার । পৃথিবী সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ । বুধ পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ । পৃথিবীরপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফলও বুধ, শুক্র এবং মঙ্গল গ্রহের চেয়ে অনেক বেশি ।
জলভাগ পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় ৭১ শতাংশ জুড়ে রয়েছে, যেখানে স্থলভাগ ২৯ শতাংশ জুড়ে রয়েছে । অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের অধিকাংশ এলাকায় জল রয়েছে, সেই জন্যই পৃথিবীকে নীলগ্রহ বলা হয় ।
সৌরজগতে কেবলমাত্র পৃথিবীর একটি মাত্র উপগ্রহ-চাঁদ রয়েছে । বর্তমান তথ্য অনুসারে, পৃথিবীই সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যেখানে উদ্ভিদ এবং প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে । ফলস্বরূপ, সৌরজগতে পৃথিবীর একটি স্বতন্ত্র অবস্থান রয়েছে ।
সৌরজগতে পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে মানুষ বাস করে- কেন ?
সৌরজগতের গ্রহগুলির জন্য সূর্যই একমাত্র তাপ এবং শক্তির উৎস, তাই পৃথিবীই সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যেখানে মানুষ বাস করে । কারণ সূর্যের নিকটবর্তী গ্রহগুলি যেমন বুধ, শুক্র প্রভৃতি সূর্যের প্রচণ্ড তাপে পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ায়, সেখানে প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব ।
অন্যদিকে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন এবং অন্যান্য গ্রহগুলি সূর্য থেকে এত দূরে রয়েছে যে তাপের অভাবে গ্রহগুলি শীতল এবং বায়ুমণ্ডল তরল অবস্থায় থাকে । ফলস্বরূপ, এই দূরবর্তী গ্রহগুলির পরিবেশগুলি প্রাণ সৃষ্টির জন্য অনুপযুক্ত এবং স্বাভাবিকভাবে এখানে প্রাণের সৃষ্টি হয়নি ।
মঙ্গল গ্রহ পৃথিবী থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত । যদিও মঙ্গল গ্রহের গড় উষ্ণতা পৃথিবীর সাথে তুলনীয়, তবে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি শীতল । মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন এবং আর্গন দ্বারা গঠিত এবং তাই অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে মঙ্গলে প্রাথমিকভাবে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি । 2012 সালে মঙ্গল গ্রহে ডিসকভারি মহাকাশযান দ্বারা সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায় যে, মঙ্গলে জল থাকলেও প্রাণের কোনো অস্তিত্ব নেই ।
পৃথিবী সূর্য থেকে এমন দূরত্বে সৌরজগতে অবস্থিত যেখানে সূর্যের তাপ মাঝারি । ফলত, পৃথিবী অতিরিক্ত ঠান্ডা বা উত্তপ্ত হয়নি । শুরুতে, এই তাপীয় পরিবেশে পৃথিবীতে এককোষী জীব জন্মগ্রহণ করে । পরবর্তীকালে বিবর্তনের মাধ্যমে এই এককোষী প্রজাতি থেকে মানুষের সৃষ্টি হয় ।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল প্রাথমিকভাবে নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন দ্বারা গঠিত, যার ফলে এই গ্রহে মানুষের জন্ম ও বৃদ্ধি ঘটেছে এবং বিশ্বের জলাধারগুলি পৃথিবীতে জীবনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছে । ফলস্বরূপ, পৃথিবীই সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রানের স্পন্দন রয়েছে এবং এটিই একমাত্র গ্রহ যা মানুষের বাসস্থান হিসাবে গড়ে উঠেছে ।
পৃথিবীর পরিধি ও ক্ষেত্রফল নির্ণয়
গ্রীক পণ্ডিত এরাটোস্থেনিস প্রায় 2,000 বছর আগে, মিশরীয় শহর সিয়েন এবং আলেকজান্দ্রিয়া শহরের মধ্যে সূর্যরশ্মির পতন কোণের পার্থক্য লক্ষ্য করে সর্বপ্রথম পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করেন ।
তাঁর গণনা অনুসারে, পৃথিবীর পরিধি ২,৫০,০০০ স্টেডিয়া বা ৪৬,২৫০ কিমি । বর্তমানে আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলকের মতো বলে বিভিন্ন দিক থেকে পৃথিবীর পরিধির পরিমাপও ভিন্ন রকমের । যেমন –
পৃথিবীর নিরক্ষীয় পরিধি হল – ৪০,০৯১ কিমি
পৃথিবীর মেরু পরিধি – ৪০,০০৯ কিমি
পৃথিবীর গড় পরিধি প্রায় – ৪০,০৫০ কিমি
গণনার সহজতার জন্য, পৃথিবীর গড় পরিধি ৪০,০০০ কিমি বলে ধরে নেওয়া হয় । পৃথিবীর পরিধি পরিমাপের পর এর ব্যাস এবং ব্যাসার্ধ পরিমাপ করা সহজ –
পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাসার্ধ – ৬৩৭৮.১ কিমি
পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস – ১২,৭৫৭ কিমি
পৃথিবীর মেরু ব্যাস – ১২,৭১৪ কিমি
পৃথিবীপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল : পৃথিবীপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফলের পরিমাপ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ থেকে সহজেই করা সম্ভব –
গোলকের উপরিতলের ক্ষেত্রফল = ৪ × × R2 (যেখানে, = ২২/৭ এবং R = ব্যাসার্ধ)
সুতরাং পৃথিবীপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল = ৪ × ৩.১৪৩ × ৬৩৭৮.১২
= ৫১ কোটি ১৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার
পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্নয়ের সর্বাধুনিক পদ্ধতি
GPS (Global Positioning System) বা পার্থিব অবস্থান পদ্ধতি : এটি একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা একটি স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের সাথে সংযুক্ত করে পৃথিবীর পৃষ্ঠ বা তার কাছাকাছি যেকোনো একটি স্থানের অবস্থান নির্নয় করার পদ্ধতি । 1973 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম জিপিএস পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল ।
G.P.S এর ব্যবহার :
জিপিএস-এর দ্বারা কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় করা যায় । এছারাও অন্যন্য কাজে এর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । যেমন-
সাধারণ কাজ : একটি GPS ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার করে, বিভিন্ন স্থানের অবস্থান নির্ধারণ করা যায়, শহরাঞ্চলের কোন ঠিকানা অজানা থাকলে আধুনিক মোটরগাড়ি, মোবাইল ফোন, উচ্চ-মানের বাস প্রভৃতির যন্ত্রে সেই স্থানের অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ জানালে , তখন GPS তার পথ নির্দেশ দেয় ৷
সামরিক কার্যে : সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে, GPS এর সাহায্যে বিভিন্ন স্থানের অবস্থান নির্নয় করে কম্পিউটারের সাথে সংযোগ করে কোন অবস্থানের পথ নির্দেশ পাওয়া যায় । এটি শত্রুপক্ষের অবস্থান নির্ধারণ করতে এবং যুদ্ধবিমানগুলি G.P.S এর সাহায্যে অবস্থান নির্ণয় করে তার লক্ষ্যবস্তুকে স্থির করে ।
সামুদ্রিক অভিযানে : G.P.S সহজেই সমুদ্রে একটি জাহাজের সঠিক অবস্থান এবং দূরত্ব শনাক্ত করতে পারে । G.P.S ব্যবহার করে, নাবিকরা এখন সমুদ্রে তাদের অবস্থানের পাশাপাশি অজানা এলাকার অবস্থান নির্ণয় করতে পারে ।
গবেষণার কাজে : GPS-এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট স্থানে (উচ্চ স্থান বা হ্রদ) একটি কম্পিউটারের সাথে সংযোগ করে কোন স্থানের ক্ষেত্রফল মাপা যায় । এছাড়াও সংকীর্ণ ক্ষয়প্রাপ্ত নদী উপত্যকার দুটি স্থানের দৈর্ঘ্য , বিস্তার ও মধ্যবর্তী স্থানের আয়তন মাপতে এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ।
আশা করি সহজেই তোমরা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছ। এই বিষয়ের ভিডিও লেকচার এবং নোটস পেতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট কিংবা স্ক্রীনে দোয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করুন ।
SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of গ্রহরূপে পৃথিবী GROHORUPE PRITHIBI
1 MARKS QUESTIONS of গ্রহরূপে পৃথিবী GROHORUPE PRITHIBI
1. পৃথিবীর অভিকর্ষজ বলের মান কোন অঞ্চলে সবচেয়ে কম?
Ans. নিরক্ষীয় অঞ্জলে।
2. GPS ব্যবহারের ক্ষেত্রে ন্যূনতম কয়টি উপগ্রহের প্রয়োজন?
Ans. 3টি।
3. 2006 সালে কোন গ্রহকে বামন গ্রহ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে?
Ans. প্লুটোকে।
4. পৃথিবীর সবচেয়ে নীচু স্থানের নাম কী?
Ans. মারিয়ানা খাত।
5. সূর্যের নিকটতম গ্রহ কোনটি?
Ans. বুধ।
6. সৌরজগতে আয়তনে বৃহত্তম গ্রহ কোনটি?
Ans. বৃহস্পতি।
7. উপগ্রহ নেই এমন দুটি গ্রহের নাম লেখো।
Ans. বুধ ও শুক্র।
8. GPS ব্যবহারের ক্ষেত্রে ন্যূনতম কয়টি উপগ্রহের প্রয়োজন?
Ans. 3টি।
9. সৌরজগতের কোন্ গ্রহকে ‘লাল গ্রহ’ বলা হয়?
Ans. মঙ্গলকে।
10. IAU-এর পুরোকথা কী?
Ans. International Astronomical Union ।
Multiple Choice Questions – 1 Marks of গ্রহরূপে পৃথিবী GROHORUPE PRITHIBI
1. পৃথিবী গোল তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ হল—
A. জাহাজের উঁচু মাস্তুলে দাঁড়িয়ে দেখা B. জাহাজে পৃথিবী ভ্রমণ C. মহাকাশ থেকে তোলা আলোকচিত্র D. মাউন্ট এভারেস্ট থেকে পৃথিবীকে দেখা
Ans. C
2. পৃথিবীকেন্দ্রিক মতবাদের পক্ষে ছিলেন—
A. কোপারনিকাস B. অ্যারিস্টটল C. ব্রুনো D. ব্রাহে
Ans. B
3. পৃথিবীর প্রকৃত আকৃতি –
A. বৃত্তাকার B. উপবৃত্তাকার C. অভিগত গোলকের ন্যায় D. আয়তাকার
Ans. C
4. প্যারিস শহরের অক্ষাংশ –
A. 26°32′ উত্তর B. 47° উত্তর C. 49° উত্তর D. 75° 03′ উত্তর
Ans. C
5. পৃথিবীর গভীরতম অঞ্চল –
A. মারিয়ানা খাত B. সুন্দা খাত C. সেন্ট লুইস খাত D. কুমেরু অঞ্চল
Ans. A
6. পৃথিবীকে বলা হয়—
A. লাল গ্রহ B. বামন গ্রহ C. নীল গ্রহ D. কোনোটিই নয়
Ans. C
7. বর্তমানে সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা –
A. 3টি B. 5টি C. 7টি D. 8টি
Ans. D
8. দুরবীন যন্ত্র আবিষ্কার করেন—
A. কেপলার B. গ্যালিলিয়ো গ্যালিলি C. নিউটন D. এডমান্ড হ্যালি
Ans. B
9. প্রাচীনযুগে মানুষের ধারণা ছিল পৃথিবী –
A. গোলাকার B. অভিগত গোলাকার C. সমতল D. চৌকো
Ans. C
10. বর্তমানে বামন গ্রহের সংখ্যা—
A. 5টি B. 6টি C. 4টি D. 3টি
Ans. A