আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে
- প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
- দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
- তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
- চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি
বহির্জাত প্রক্রিয়া
Exogenous শব্দের অর্থ হল বহিভার্গ থেকে উৎপন্ন বা বহির্জাত । বাহ্যিক শক্তিসমূহ যেমন সূর্যতাপ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, নদী, হিমবাহ, ভৌমজল, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে দীর্ঘকাল ধরে ক্রিয়াশীল থেকে ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কাজের মাধ্যমে নানা ধরণের ভূমিরূপ সৃষ্টি করেছে । ভূমিরূপের এই বিবর্তনকারী প্রাকৃতিক শক্তিগুলোকে বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে ।
ভূবিজ্ঞানী চেম্বারলিন ও স্যালিসবেরি এই প্রক্রিয়াকে পর্যায়ন প্রক্রিয়া নামে অভিহিত করেছেন । ভূমিভাগের উচ্চতার পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন উচ্চতা বিশিষ্ট ভূমিরূপের মধ্যে ক্রমশ একটি সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করে । এই প্রক্রিয়াকে পর্যায়ন প্রক্রিয়া বলে।
পর্যায়ন প্রক্রিয়ায় আবহবিকারের দ্বারা শিলা চূর্ণ বিচূর্ণ হয় । ক্ষয়ীভবনের দ্বারা এই শিলাচূর্ণ নদী, হিমবাহ, বায়ুর দ্বারা অপসারণ, বহন এবং ভাঙন হয় । এই ক্ষয়জাত পদার্থ যখন নীচু অংশে বসে গিয়ে ভূমিভাগের উচ্চতা বৃদ্ধি করে, তখন সেটা আরোহণ । আর যখন শিলাস্তরকে ক্ষয় করে ভূমিভাগের উচ্চতা কমায় তখন সেটা অবরোহণ ।
জলচক্রের অংশ হিসাবে নদী, নদ-অববাহিকা, জল-বিভাজিকা, নদীর বিভিন্ন গতি
জলচক্র
পৃথিবীর বারিমন্ডল ও শিলামন্ডলের মধ্যে জলের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থার চক্রাকার আবর্তনকে বলে জলচক্র । এই চক্রের উপাদানগুলি হল বৃষ্টিপাত, নদী, জলীয়বাষ্পের স্থানান্তর।
নদী : তুষারগলা জল বা বৃষ্টির জলে পুষ্ট হয়ে বা প্রস্রবণ থেকে যে স্বাভাবিক জলধারা
উৎপন্ন হয়ে ভূমির ঢাল অনুসরণ করে প্রবাহিত হয় এবং সাগর, হ্রদ বা অন্য জলধারার সঙ্গে মিলিত হয় তাকে নদী বলে ।
সৌরকিরণের ফলে নদীর জল বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয় এবং বৃষ্টির আকারে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় । পতিত জলের কিছু অংশ মাটিতে প্রবেশ করে এবং কিছু অংশ সাগরে মেশে । এভাবেই নদী, জলচক্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।
নদী অববাহিকা : যে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রধান নদী, শাখানদী, উপনদী, প্রশাখা নদী প্রবাহিত হয়, সেই অঞ্চলকে নদী অববাহিকা বলে ।
নদী অববাহিকা অঞ্চলের জলচক্র বারিমন্ডল, শিলামন্ডল এবং বায়ুমন্ডলের সাথে যুক্ত । সূর্যের তাপে নদী অববাহিকার জল উত্তপ্ত হয়ে জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় এবং অববাহিকা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং জলচক্রের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে জলের ভারসাম্য বজায় রাখে ।
জলবিভাজিকা : যে উচ্চভূমি দ্বারা পাশাপাশি অবস্থিত দুই বা ততোধিক নদী অববাহিকা পৃথক হয় তাকে বলে জলবিভাজিকা । যেমন-হিমালয় ।
জলবিভাজিকা অঞ্চল থেকে জলের বাষ্পীভবন, ঘনীভবন এবং বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে জলচক্র সম্পূর্ণ হয়।
নদীর বিভিন্ন গতি : নদীর গতিপথ বা প্রবাহকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় ।
- উর্ধ্বগতি বা পার্বত্য প্রবাহ : পর্বতে নদীর উৎপত্তিস্থান থেকে সমভূমিতে পৌঁছানোর পূর্ব অংশ হলো উর্ধ্বগতি বা পার্বত্য প্রবাহ ।
যেমন : গঙ্গানদীর পার্বত্য প্রবাহ হলো গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উত্তরাখন্ডের হরিদ্বার পর্যন্ত ।
- মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ : পার্বত্য অঞ্চল যেখানে শেষ হচ্ছে সেখান থেকে সমভূমি অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নদীর গতি হল মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ ।
যেমন : উত্তরাখন্ডের হরিদ্বার থেকে ঝাড়খন্ডের রাজমহল পর্যন্ত গঙ্গার মধ্যগতি বিস্তৃত ।
- নিম্নগতি বা বদ্বীপ প্রবাহ : নিম্ন গতিতে নদীর ঢালের সাথে সাথে গতিও কম হয় ।
যেমন : ঝাড়খন্ডের রাজমহল থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহানা পর্যন্ত গঙ্গার নিম্নগতি বিস্তৃত ।
নদীর কাজ
নদী তার উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কাজ করে । নদীর কাজ নির্ভর করে-
- নদীর জলের আয়তন ও পরিমাণের ওপর
- জলপ্রবাহের গতির ওপর
- নদীর গতিপথের ঢালের ওপর
- নদী বাহিত বস্তুভারের ওপর
নদী তিন ধরনের কাজ করে – ক্ষয়, বহন ও অবক্ষেপণ ।
নদীর ক্ষয়কার্য
পার্বত্য প্রবাহে ভূমির ঢাল বেশি এবং ভূমিরূপ বন্ধুর হওয়ায় জলস্রোতের বেগ বেড়ে যায় ফলত নদী তার পার্বত্য প্রবাহে প্রস্তরখন্ড চূর্ণ-বিচূর্ণ এবং খন্ড করে ক্ষয় করতে করতে নিজের চলার পথ দীর্ঘায়িত করে, একে নদীর ক্ষয় কাজ বলে ।
নদী সাধারণত নিম্ন ক্ষয় ও পার্শ্ব ক্ষয় দ্বারা নিজের কাজ সম্পন্ন করে ।
- দ্রবণ জনিত ক্ষয় : চুনাপাথর জাতীয় শিলা যদি কোনো নদী বহন করে নিয়ে যায় তবে তা সহজেই দ্রাবিত হয় ।
- ঘর্ষনজনিত ক্ষয় : নদীবাহিত বড় বড় পাথরের টুকরো পরস্পরের ঘর্ষণে ভেঙে গিয়ে ছোটো কণা হয়ে পলিতে পরিণত হয় ।
- অবঘর্ষ : পার্বত্য প্রবাহে নদীবাহিত প্রস্তরখন্ডগুলি নদীগর্ভের সঙ্গে ঘর্ষণ পায় ফলে নদীখাতে নিম্নক্ষয় ও পার্শ্বক্ষয় উভয়ই হয় ।
- জলপ্রবাহের দ্বারা ক্ষয় : নদীর জলস্রোতের দ্বারা নদীর পাশে অসংলগ্ন ও দুর্বল অংশগুলি ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয় ।
নদীর বহনকার্য
নদীর ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ জলস্রোতের দ্বারা একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হয়, একেই নদীর বহন কাজ বলে । নদীর বহনক্ষমতা তিনটি কারণের উপর নির্ভর করে – কণিকার আকৃতি, ঘূর্ণন গতি এবং স্রোতের গতিবেগের উপর ।
এই প্রক্রিয়া চার রকম ভাবে হয় । যথা –
- ভাসমান প্রক্রিয়া : চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাওয়া শিলা ও পাথরের ছোটো কণা নদীর স্রোতের সাথে ভেসে ভেসে এগিয়ে যায়। একসময় নদীস্রোত কমে গেলে ভাসমান কণাগুলি সঞ্চয় হতে থাকে।
- লম্ফদান প্রক্রিয়া : মাঝারি মাপের শিলাগুলি নদীতে ভাসতে পারে না, ফলত সেগুলি নদীর স্রোতের সাথে একস্থান থেকে অন্য স্থানে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যায় ।
- গড়ানো প্রক্রিয়া : বড় বড় নুড়ি পাথর, স্রোতের আকর্ষণে নদীখাতে গড়াতে গড়াতে এগিয়ে যায় ।
- দ্রবণ প্রক্রিয়া : জলে দ্রবীভূত বিভিন্ন খনিজ পদার্থকে নদী বহন করে নিয়ে যায় ।
অবক্ষেপণ
গতিপথের ঢাল হ্রাস, নদীর গতিবেগ হ্রাস, বস্তুভারের পরিমাণ বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে নদীর বহন ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস হ্রাস পেতে থাকে, ফলে নদীর বস্তুভার নদীর তলদেশে বা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হতে থাকে, এই পদ্ধতিকেই নদীর অবক্ষেপণ বলে ।
নদীর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
- V আকৃতির উপত্যকা : আর্দ্র ও আর্দ্র-প্রায় অঞ্চলে নদীর ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদীগুলি নিম্নক্ষয় ও পার্শ্বক্ষয় বেশি করে, ফলে নদী উপত্যকা একদিকে গভীর হয় এবং V আকৃতির উপত্যকা গঠন করে ।
- আবদ্ধ শৈলশিরা : পার্বত্য প্রবাহে নদীর চলার পথে যদি কোনো কঠিন শিলা অবস্থান করে তবে নদীর সেই শিলাগুলিকে অবলম্বন করে ছোট ছোট বাঁক নিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলত দুটি বাঁকের সমস্ত স্পারগুলিকে একসঙ্গে দেখা যায় না, একেই আবদ্ধ শৈলশিরা বলে । এর অপর নাম শৃঙ্খলিত শৈলশিরা।
- গিরিখাত : আর্দ্র পার্বত্য অঞ্চলে ‘V’ আকৃতির নদী উপত্যকা খুবই গভীর ও সংকীর্ণ হলে তাকে গিরিখাত বলে । পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত হল নেপালের কালী গন্ডকী গিরিখাত ।
- ক্যানিয়ন : শুষ্ক ও মরু অঞ্চলে ইংরেজী ‘I’ আকৃতির যে খাড়া উপত্যকার সৃষ্টি হয় তাকে ক্যানিয়ন বলে । ক্যানিয়ন অনেকটা পার্বত্য অঞ্চলে গিরিখাতের মতই। যেমন: ক্যালিফোর্নিয়ার কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর দীর্ঘতম ক্যানিয়ন ।
- খরস্রোত : নদীর পার্বত্য প্রবাহে যখন প্রচন্ড ঢাল সম্পন্ন জলপ্রপাতে বিপুল পরিমাণ জলরাশি প্রবাহিত হয় তাকে খরস্রোত বলে । যেমন: আফ্রিকার জাইরে নদীতে পরপর 32টি খরস্রোতের সৃষ্টি হয়েছে ।
- জলপ্রপাত : উচ্চগতিতে কঠিন শিলা ও কোমল শিলা পাশাপাশি অবস্থান করলে নদীরস্রোতের আঘাতে কঠিন শিলা অপেক্ষা কোমল শিলা বেশি ক্ষয় হয় ফলত তলদেশের ঢালের বিচ্যুত হয় এবং বিচ্যুতিতলের ওপর থেকে জলরাশি নীচে পতিত হলে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয় । যেমন : ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ভারাহী নদীর ওপর কুঞ্চিকল জলপ্রপাত হল ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত ।
- প্রপাত কূপ : নদীর প্রবাহপথে অবস্থিত নুড়ি বা শিলা, পাক খেতে খেতে শিলাখন্ডের আঘাতে নদীবক্ষে প্রায় গোলাকার গর্তের সৃষ্টি হয় । এদের প্রপাত কূপ বলে।
- মন্থকূপ : প্রবল বেগে প্রবাহিত নদীর তলদেশ বা পার্শ্বদেশে জলাবর্তের সৃষ্টি হলে সেখানে নুড়ি বা শিলার ঘর্ষনের ফলে, যে গর্তের সৃষ্টি হয় তাকে মন্থকূপ বা পটহোল বলে। যেমন: ঝাড়খন্ডের খরকাই
নদীর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ
- পলল ব্যজনী : পর্বতের পাদদেশে নুড়ি, বালি, পলি, কাঁকর প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে শঙ্কু আকৃতির ভূমিরূপ সৃষ্টি করে, তাকে পলল শঙ্কু বলে । পলল শঙ্কুর উপর দিয়ে নদী যখন বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়, তাকে পলল ব্যজনী বলে । যে নদীতে জলপ্রবাহ বেশি কিন্তু পলির পরিমাণ কম সেখানে পলল ব্যজনী গড়ে ওঠে । যেমন: হিমালয়, আন্দিজ, রকি পর্বতের পাদদেশে পলল ব্যজনীর সৃষ্টি হয়েছে ।
- নদী বাঁক বা মিয়েন্ডার : মধ্য ও নিম্নপ্রবাহে নদীর গতিবেগ কম থাকে, তাই নদীপথে যদি সামান্য বাধার সৃষ্টি হয় তবে নদী তার গতিপথের পরিবর্তন ঘটায় এবং একেঁবেঁকে প্রবাহিত হয়, একে নদী বাঁক বলে । তুরস্কের আঁকাবাঁকা নদী মিয়েন্ডারেস নামানুসারে এই ভূমিরূপের নাম হয় মিয়েন্ডার । পলল অবক্ষেপণের ফলে নদীর গতি ধীর হয় এবং বেঁকে যায় এর ফলে খাড়া পাড়ের সৃষ্টি হয় । খাড়া পাড়ের বিপরীত দিকে নদী স্রোতের বেগ কম থাকায় ঢালু পাড়ের সৃষ্টি হয় । যেমন – গঙ্গা নদীতে নদী বাঁকের সৃষ্টি হয়েছে।
- অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ : নিম্নপ্রবাহে নদী যখন আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয় তখন নদী বাঁকের বাইরের পাড়টি বেশি ক্ষয় হয় এবং ভেতরের পাড়ে পলি জমা হয় । এই ভাবে নদীর বাঁক আরো বাড়তে থাকে এবং এক সময় বাঁকটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ঘোড়ার ক্ষুরের মত একটি অংশ নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং মূল নদীটি সোজাপথে প্রবাহিত হতে থাকে । এই ঘোড়ার ক্ষুরের মত বিচ্ছিন্ন হ্রদকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে । যেমন: গঙ্গা নদীর নিম্নপ্রবাহে দেখা যায় ।
- প্লাবনভূমি : নদীর জল যখন হঠাৎ করে বৃদ্ধি হয় তখন অতিরিক্ত জল নদীখাত ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী উপকূল অঞ্চলকে প্লাবিত করে এবং পলি, বালি, কাদা, জমা হয়ে ওই অঞ্চলে সমভূমির সৃষ্টি করে, এই সমভূমি হল প্লাবনভূমি । যেমন: গঙ্গা, সিন্ধু নদীতে দেখা যায় ।
- স্বাভাবিক বাঁধ : নদীতে প্লাবনের ফলে নদীখাতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পলি জমতে জমতে নদী ও প্লাবনভূমির মাঝে বেশি উচ্চতাসম্পন্ন ভূমির সৃষ্টি হয়, একে স্বাভাবিক বাঁধ বলে । যেমন: মিশরের নীলনদ ।
- খাঁড়ি : মোহনার কাছে নদীস্রোত বেশি হলে পলি, বালি, কাদা সঞ্চিত হতে পারে না, ফলে নদীর মোহনা যথেষ্ট খোলা ও চওড়া হয়, একে খাঁড়ি বলে ।
যেমন : রাশিয়ার ওব নদীর মোহনায় অবস্থিত খাঁড়ি হল পৃথিবীর দীর্ঘতম খাঁড়ি ।
- বদ্বীপ : মোহনার কাছে নদীর গতিবেগ অনেকটা কমে যায় । তাই এখানে নদীর বয়ে আনা প্রায় সমস্ত পদার্থ সঞ্চিত হয় । এইভাবে সঞ্চয়ের ফলে নদীবক্ষে মাত্রাহীন বাংলা ‘ব’ অক্ষরের মতো দ্বীপের সৃষ্টি হয়, একে বদ্বীপ বলে । যেমন: গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের সম্মিলিত বদ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ ।
বদ্বীপ তিনপ্রকার, যথা –
- ধনুকাকৃতি বদ্বীপ : এ জাতীয় বদ্বীপের আকৃতি ধনুকাকার, যা দেখতে বাঁকানো ফলার মতো । প্রধান নদী বা অনেক শাখাপ্রশাখাবিশিষ্ট নদী দ্বারা গঠিত হয় বলে, এ বদ্বীপের বাইরের অংশ উত্তল দেখায় । এই বদ্বীপ জিহ্বাগ্র বদ্বীপ বা ব্যজনী বদ্বীপ নামেও পরিচিত । সিন্ধু, গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা, নীল, হোয়াংহো, পো, রাইন প্রভৃতি নদীর বদ্বীপ এই ধরণের বদ্বীপের শ্রেণিভুক্ত ।
- তীক্ষাগ্র ব-দ্বীপ বা কাসপেট ব-দ্বীপ : প্রধান নদী করাতের দাঁতের তীক্ষ্ণ সম্মুখভাগের মত সমুদ্রে প্রবেশ করে, একে তীক্ষাগ্র ব-দ্বীপ বা কাসপেট ব-দ্বীপ বলে । যেমন: ইটালির টাইবার নদীর বদ্বীপ ।
- পাখির পা -এর মত বদ্বীপ : সমুদ্র তরঙ্গের তুলনায় নদীশক্তির পরিমাণ বেশি হলে পাখির পা-এর মত বদ্বীপ সৃষ্টি হয় । যেমন: মিসিসিপি মিসৌরি।
নদীর মোহনায় বদ্বীপ সৃষ্টির অনুকুল ভৌগোলিক অবস্থাসমূহ
- নদীস্রোতের বেগ : নদীর স্রোতের বেগ কম থাকলে বদ্বীপ সৃষ্টি হবে ।
- অগভীর সমুদ্র : মোহনার কাছে সমুদ্রের গভীরতা কম হলে বদ্বীপ সৃষ্টি হয় ।
- জোয়ারভাটা : সমুদ্রে জোয়ারভাটার প্রকোপ কম থাকলে, বদ্বীপের সৃষ্টি হয় ।
- সমুদ্র জলের লবণতার আধিক্য : সমুদ্রের জলের লবণাক্তের আধিক্য থাকলেও বদ্বীপ সৃষ্টি হয় ।
- পলল রাশির পরিমাণের আধিক্য : পলল রাশির পরিমাণ বেশি হলে বদ্বীপ গঠন হবে।
এছাড়াও নদীর স্রোত বিপরীত দিকে বাহিত হলে, উন্মুক্ত সমুদ্র অপেক্ষা আবদ্ধ সমুদ্রে, ঋতু অনুসারে নদীর জলপ্রবাহের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটলে ।
গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার বদ্বীপের সক্রিয় অংশের (সুন্দরবন) ওপর পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ হলো সুন্দরবন । ভারতে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য প্রায় 41% জুড়ে রয়েছে । কিন্তু সমগ্র সুন্দরবন আজ বিপন্নের পথে ।
- বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রের জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিকে বিপন্ন করছে ।
- সুনামী, আয়লার মত বিপর্যয় সুন্দরবনের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করছে ।
- আবহাওয়া মন্ডলের সর্বনাশা শক্তিগুলির বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনের জঙ্গল এবং পশুপাখি বিপন্ন হচ্ছে ।
- বনভূমি ধ্বংসের ফলে বনজ সম্পদ ও নদী দূষণের ফলে মৎস সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে ।
- দ্বীপের মাঝে বাদাবন ধ্বংস হওয়ায় ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে ।
লোহাচড়া দ্বীপ : এই দ্বীপটি সুন্দরবনের কাছে অবস্থিত । এখানে প্রায় ছয় হাজার লোক বাস করে । 1980 এবং 2006 খ্রিস্টাব্দে এই দ্বিপটি নিমজ্জিত হয় এবং 2009-এ আবার জেগে ওঠে । এখানে বদ্বীপ ক্ষয়, সাইক্লোন আরো নানা কারণে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হচ্ছে।
নিউমুর দ্বীপ : এটি সুন্দরবন অঞ্চলের বিপন্ন বদ্বীপ । ১৯৭৪ খিষ্টাব্দে আমারএইকার উপগ্রহ মারফত আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলের তলায় তলিয়ে গেছে ।
ঘোড়ামারা দ্বীপ : এটি ভারতের অন্তভূক্ত একটি দ্বীপ। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে প্রতি বছর সমুদ্র জলতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং একই সাথে বদ্বীপ ক্ষয়ের জন্য শীঘ্রই জলের তলায় চলে যাবে ।
হিমবাহের বিভিন্ন কার্য দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরুপ (Works of Glacier and Resultant Land forms)
হিমবাহ : পার্বত্য অঞ্চলের তুষার ক্ষেত্রে জমে থাকা বরফ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে ধীর গতিতে উপত্যকা বরাবর নেমে আসে, তুষারের এরূপ প্রবাহকে হিমবাহ বলে ।
হিমবাহের প্রকারভেদ
- মহাদেশীয় হিমবাহ : পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ হল অ্যান্টার্কটিকার ল্যাম্বার্ট
- পর্বত পাদদেশীয় : পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহ হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মালাসপিনা
- পার্বত্য হিমবাহ : পৃথিবীর বৃহত্তম পার্বত্য হিমবাহ হল আলাস্কার হুবার্ট
হিমরেখা : যে সীমারেখার উপরে অত্যধিক শীতলতার জন্য সারা বছর তুষার জমে থাকে এবং নীচের অঃশের উত্তাপে তুষার গলে জলের সৃষ্টি করে, তাকে হিমরেখা বলে ।
হিমশৈল : সমুদ্রের জলে ভাসমান বৃহদায়তন বরফের স্তূপকে হিমশৈল বলে । বিশ্বের বৃহত্তম হিমশৈল (168মি) দেখা গেছে আটলান্টিক মহাসাগরে ।
ক্রেভাস ও বার্গশ্রুন্ড : হিমবাহ যখন উত্তল ঢালযুক্ত পর্বতগাত্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন হিমবাহের পৃষ্ঠদেশে পাশাপাশি একাধিক ছোটো ফাটলের সৃষ্টি হয়, এই ফাটলগুলিকে একত্রে ক্রেভাস বলে । পর্বতের ঢাল বেয়ে হিমবাহ প্রবাহের সময় হিমবাহ ও পর্বতগাত্রের মধ্যে যে সৃষ্ট ফাটলকে বার্গশ্রুন্ড বলা হয় ।
পর্বতারোহনে সমস্যা : পার্বত্য অঞ্চলে ক্রেভাস ও বার্গশ্রুন্ড থাকায় পর্বতারোহীদের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয় । রাত্রে তুষারপাতের ফলে ক্রেভাস ও বার্গশ্রুন্ডের ফাটলের মুখগুলি বন্ধ হয়ে যায় এবং পর্বতরোহিরা গর্তগুলি চিহ্নিত করতে না পারায় গর্তে নিমজ্জিত হয়ে প্রাণ হারায়।
হিমবাহের ক্ষয়কাজ
হিমবাহের ক্ষয়পদ্ধতি দুপ্রকার, যথা – অবঘর্ষ প্রক্রিয়া ও উৎপাটন প্রক্রিয়া । দুটি পদ্ধতিতেই হিমবাহ ক্ষয় হয় ।
- অবঘর্ষ : যে পদ্ধতিতে হিমবাহের প্রবাহে তলদেশ, পার্শ্বদেশ প্রবল ঘর্ষণের দ্বারা ক্ষয় হয়, তাকে অবঘর্ষ বলে ।
- উৎপাটন পক্রিয়া : শিলাস্তরের ফাটলে বরফ গলন ও সঞ্চয়ের ফলে ফাটল আরো বৃদ্ধি পায় এবং হিমবাহের দ্বারা পরিবাহিত হয়, একেই উৎপাটন প্রক্রিয়া বলে ।
হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
- সার্ক বা করি : হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে যে অবতল আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি হয়, তাকে ফারসি ভাষায় সার্ক এবং ইংরেজি ভাষায় করি বলে । এগুলো দেখতে অনেকটা আরামকেদারার মত হয়
- অ্যারেট : যখন দুটি হিমবাহ পাশাপাশি প্রবাহিত হয় এবং হিমবাহ দুটির মধ্যে যে সংকীর্ণ ছুরির ফলার মতো তীক্ষ্ণ উচ্চভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে অ্যারেট বলে ।
- পিরামিড চূড়া : যখন একটি পর্বতের বিভিন্ন দিকে কয়েকটি হিমবাহ বা সার্কের সৃষ্টি হয় এবং পর্বতশীর্ষটি পিরামিডের মতো খাড়া ও তীক্ষ্ণ অংশে পরিণত হয়, তখন তাকে পিরামিড চূড়া বলে ।
- কর্তিত শৈলশিরা : পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ তার প্রবাহপথে অবরোধকারী পর্বতের অবক্ষিপ্তাংশগুলির অগ্রভাগ কেটে অগ্রসর হয়, একে কর্তিত শৈলশিরা বলে ।
- U আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী : হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে অত্যন্ত প্রশস্ত মোটামুটি মসৃণ খাড়া ঢালের পার্শ্বদেশবিশিষ্ট হিমবাহ U আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি করে, তাকে হিমদ্রোণী বলে ।
- ঝুলন্ত উপত্যকা : প্রধান হিমবাহের উপত্যকা খুব বড় ও গভীর হয় । তাই ছোট হিমবাহের উপত্যকা প্রধান হিমবাহের উপত্যকার উপর ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, তখন একে ঝুলন্ত উপত্যকা বলা হয় । যেমন: বদ্রীনাথের ঋষিগঙ্গা।
- রসে মতানে : হিমবাহ প্রবাহপথে কোনো উঁচু ঢিবি বা টিলা থাকলে টিলার প্রতিবাত অংশ অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় মসৃণ হয় এবং অনুবাত ঢাল উৎপাটন প্রক্রিয়ার ফলে অসমতল, এবড়োখেবড়ো ও ফাটল যুক্ত হয় । এরূপ ভূমিরূপ হল রসে মতানে । যেমন: কাশ্মীর ঝিলাম নদীর উপত্যকা লিডার উপত্যকাতে দেখা যায় ।
- ক্র্যাগ ও টেল : হিমবাহের গতিপথে কঠিন শিলাস্তরের পিছনে নরম শিলাস্তর থাকলে, অনেক সময় কঠিন শিলাস্তরটি ক্ষয়ের প্রভাব থেকে রক্ষা করে । এর ফলে কঠিন শিলাস্তুপটি উঁচু ঢিবির মত আর পেছনের নরম শিলা সরু লেজের মত বিরাজ করে, একে ক্র্যাগ ও টেল বলে ।
- ফিয়র্ড : ফিয়র্ড হল হিমবাহ কতৃত উপত্যকা যা সমুদ্রের জলদ্বারা প্লাবিত হয় এবং পরে বরফমুক্ত হলে এটি সমুদ্রের জলে ডুবে যায় । জলমগ্ন এরকম উপত্যকাকে ফিয়র্ড বলে । যেমন: পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড হল নরওয়ের সোজনে ফিয়র্ড।
হিমবাহের সঞ্চয়কাজ
দুটি পদ্ধতিতে হিমবাহ সঞ্চয়কাজ সম্পন্ন করে । যথা –
- অবঘর্ষ পক্রিয়ায় সঞ্চয় কাজ : হিমবাহের প্রবাহে, হিমবাহের তলদেশ, পার্শ্বদেশ চাপ জনিত প্রবল ঘর্ষণের দ্বারা যে ক্ষয় হয়, তাকে অবঘর্ষ বলে।
- উৎপাটন পক্রিয়ায় সঞ্চয় কাজ : শিলাস্তরের ফাটলে, বরফ গলন ও সঞ্চয়ের ফলে ফাটল আরো বৃদ্ধি পায় এবং হিমবাহের দ্বারা পরিবাহিত হয় ।
হিমবাহের সঞ্চয়ের ফলে গঠিত ভূমিরূপ
গ্রাবরেখা : গ্রাবরেখা হল হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট প্রধান ভূমিরূপ । নুড়ি, পাথর, শিলাখন্ড হিমবাহ দ্বারা বাহিত হয়ে যে ভূমিরূপের সৃষ্টি করে, তাকে গ্রাবরেখা বলে। গ্রাবরেখাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা – প্রান্ত গ্রাবরেখা, পার্শ্ব গ্রাবরেখা, মধ্য গ্রাবরেখা, হিমাবদ্ধ রেখা, হিমাতল রেখা, ভূমি গ্রাবরেখা ।
- পার্শ্ব গ্রাবরেখা : আবহবিকারজাত পদার্থ, তুষারজাত পদার্থ প্রভৃতি হিমবাহের দু-পাশে সঞ্চিত হয়ে এই গ্রাবরেখার সৃষ্টি হয় ।
- প্রান্ত গ্রাবরেখা : হিমবাহের সামনের সঞ্চিত গ্রাবরেখা হল প্রান্ত গ্রাবরেখা ।
- মধ্য গ্রাবরেখা : দুটি পার্শ্ব গ্রাবরেখা এক হয়ে এই মধ্য গ্রাবরেখার সৃষ্টি হয় ।
হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যে সৃষ্ট ভূমিরূপ
হিমরেখার নীচের হিমবাহ গলে গিয়ে ছোটো অসংখ্য অস্থায়ী জলধারার সৃষ্টি করে । এই জলধারা সঞ্চিত পদার্থকে বহুদূর বহন করে দূরবর্তী স্থানে সঞ্চিত করে, একে হিমবাহ ও জলধারার সম্মিলিত সঞ্চয় বলে ।
- বহিঃধৌত সমভূমি : হিমবাহ বাহিত নুড়ি, কাদা, পাথর একত্রে সঞ্চিত হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে যে সমভূমির সৃষ্টি করে, তাকে বহিঃধৌত সমভূমি বলে ।
- ড্রামলিন : হিমবাহ বাহিত নুড়ি, পাথর প্রভৃতি হিমবাহ পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে উল্টানো চামচ বা নৌকার আকারের ভূমিরূপ সৃষ্টি করে, একে ড্রামলিন বলে । অনেকগুলি ড্রামলিন একত্রিতভাবে অবস্থান করলে সেই অঞ্চলটিকে ডিম ভর্তি ঝুড়ির মতো দেখতে লাগে।
- কেম : নিশ্চল হিমবাহে, নদী দ্বারা হিমবাহ উপত্যকার পাদদেশে সঞ্চিত পিন্ডাকৃতি ঢিবিকে কেম বলে । কেমগুলি যখন পরস্পর যুক্ত হয়ে মঞ্চের আকারে হিমবাহের দুপাশে অবস্থান করে, তখন তাকে কেমমঞ্চ বলা হয়।
- কেটল : নিশ্চল হিমরাশি গলে যেখানে গর্তের সৃষ্টি হয়, তাকে কেটল বলে ।
এসকার : হিমবাহের তলদেশের অংশ গলে গিয়ে যখন সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়, তখন সেই সুড়ঙ্গের মধ্যে নুড়ি, বালি, কাদা, শিলাখন্ড প্রভৃতি জমে যে শৈলশিরা গঠিত হয়, তা হল এসকার ।
মরু অঞ্চল ও উপকূল অঞ্চলে বায়ুর কার্যের প্রাধান্যের কারণ
- বায়ুর প্রবাহপথে প্রতিবন্ধকতার অভাব : মরু অঞ্চলে গাছপালা না থাকায় বায়ুর প্রবাহপথে কোনো বাধা পায় না । তাই এখানে বায়ু প্রবলবেগে বাহিত হয় ।
- উন্মুক্ত উপকূল : উপকূল উন্মুক্ত হয় তাই বায়ু প্রবলবেগে প্রবাহিত হয় ।
- উদ্ভিদের অভাব : এই অঞ্চলে গাছপালা না জন্মানোর কারণে বায়ু ক্ষয়কাজ করতে পারে না ।
- দিন ও রাত্রির উষ্ণতার প্রসর : এখানে উষ্ণতা বেশি থাকায় এখানকার ভূপৃষ্ঠ বালুকাময় ।
- ঘর্ষণ প্রক্রিয়া: বায়ুপ্রবাহের সময় বালুকারাশি ভূপৃষ্ঠে ঘর্ষণ করে ভূমিরূপ গঠন করে ।
বায়ুর ক্ষয়কাজ
বায়ু তিনভাবে কাজ করে । যথা –
- উৎসঞ্জন বা অবনমন পক্রিয়ায় কাজ : প্রবল বেগে বায়ুপ্রবাহের সময় মরু অঞ্চলে বালি উড়ে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি করে, এটাই উৎসঞ্জন বা অবনমন প্রক্রিয়া ।
- অবঘর্ষ উৎসঞ্জন বা অবনমন পক্রিয়ায় কাজ : বায়ুর সঙ্গে বাহিত কণার ঘর্ষণে মরু অঞ্চলের শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, এটাই অবঘর্ষ প্রক্রিয়া ।
- ঘর্ষণ উৎসঞ্জন বা অবনমন পক্রিয়ায় কাজ : বায়ুর সঙ্গে আসা নুড়ি, পাথর পারস্পারিক ঘর্ষণের দ্বারা ক্ষয় হয়, এটা হল ঘর্ষণ প্রক্রিয়া ।
বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
- ধান্দ বা অপসারণ গর্ত : বায়ুর কোনো স্থান থেকে প্রচুর বালুকণা অন্যত্র চলে গেলে অবনত স্থান সৃষ্টি হয় । কালক্রমে এটি গভীর হতে হতে গর্তের রূপ নিলে তাকে অপসারণজনিত গর্ত বা ধান্দ বলে ।
- গৌর : মরু অঞ্চলের নিম্নাংশে অধিক পরিমাণ ক্ষয়ের ফলে মরু অঞ্চলের, মাঝে মাঝে ব্যাঙের ছাতার মত ওপরের অংশ প্রশস্ত ও সরু যে পাথরের অবশিষ্টাংশ দেখা যায় তাকে গৌর বলে । যেমন: সাহারা মরুভুমি।
- জুগ্যান : কঠিন ও কোমল শিলা সমান্তরালভাবে অবস্থান করলে, বায়ু কঠিন শিলার ফাটল বরাবর নরম শিলায় পৌঁছায় এবং নরম শিলা বেশি ক্ষয় হয় এর ফলে কঠিন শিলায় চ্যাপটা ও মাথা বিশিষ্ট ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, একে জুগ্যান বলে । যেমন: কালাহারি মরুভূমি।
- ইয়ার্দাং : কঠিন ও কোমলশিলা পাশাপাশি উলম্বভাবে অবস্থান করলে বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে কঠিন শিলা অপেক্ষা কোমল শিলা বেশি ক্ষয় হয় তাই কঠিন শিলায় প্রাচীর এবং কোমল শিলায় খাতের সৃষ্টি হয়, এরূপ ভূমিরূপকে ইয়ার্দাং বলে । যেমন: চিলির আটকামাতে এই ধরণের ভূমিরূপ দেখা যায় ।
- ইনসেলবার্জ : শুষ্ক মরু অঞ্চলে বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে কঠিন শিলা গঠিত মসৃণ গাত্র ও অবতল ঢালবিশিষ্ট অনুচ্চ ভূমি অবস্থান করে, একে ইনসেলবার্জ বলে । যেমন: কালাহারি মরুভূমিতে ইনসেলবার্জ দেখা যায় ।
বায়ুর সঞ্চয় কাজ
বায়ু তিনটি প্রক্রিয়ায় কাজ করে । যথা –
- অধঃপাতন প্রক্রিয়ায় সঞ্চয় কাজ : প্রবাহিত বায়ুর গতিবেগ হঠাৎ কারণে হ্রাস পেলে বালি অবক্ষেপিত হয়, এটাই হল অধঃপাতন প্রকিয়া ।
- উপলেপন প্রক্রিয়ায় সঞ্চয় কাজ : লম্ফদান ও গড়ানো প্রক্রিয়ায় বালিরাশি কোনো বাঁধার সম্মুখীন না হয়ে জমা হয়, এটাই হল উপলেপন প্রক্রিয়া ।
- অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সঞ্চয় কাজ : বায়ুপ্রবাহের সময় ভূপৃষ্ঠে যখন বালুকণা আটকে গিয়ে সঞ্চিত হয়ে যায়, তখন সেই প্রক্রিয়া হল অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ।
বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
- বালিয়ারি : সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট প্রধান ভূমিরূপ হল বালিয়ারি । বায়ু যখন তার প্রবাহ পথে কোন উঁচু-নিচু ভূ-প্রকৃতির দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং সেখানেই বালি জমা হতে থাকে, তখন যে স্তুপের সৃষ্টি হয় তাকেই বালিয়াড়ি বলে । বালিয়ারিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় ।
- বার্খান : বায়ুর গতিপথে অবস্থিত অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালিয়ারি হল বার্খান । সাধারণত এই বার্খানের দুপাশে দুটি সিংহের মত শিরা দেখা যায়। এর প্রতিবাদ ঢাল মৃদু এবং অনুবাদ ঢাল খাড়া প্রকৃতির হয় ।
- সিফ্ বালিয়ারি : বার্খান থেকে সিফ্ বালিয়ারির সৃষ্টি হয় । এই বালিয়ারির শীর্ষ করাতের মত হয় । সিফ্ বালিয়াড়ি বায়ুর গতিপথে সমান্তরাল অনুযায়ী সৃষ্টি হয়ে থাকে।
- লোয়েস সমভূমি : বায়ুবাহিত বালির কণা, মৃত্তিকার কণা জমে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, সেটা হল লোয়েস সমভূমি।
বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
- ওয়াদি : মরু অঞ্চলের শুষ্ক খাতকে ওয়াদি বলে । মরু অঞ্চলে বন্যার জল বালুকারাশির মধ্যে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকলেও তার প্রবাহ পথের শুষ্ক খাতটি পড়ে থাকে এবং এই খাতটিকে ওয়াদি বলে ।
- পেডিমেন্ট : বায়ুর ক্ষয়কাজ ও জলধারার সমন্বয়ে জলধারা বাহিত নুড়ি, কাঁকর। বালি প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে যে সমতলভূমি গঠন করে তাকে পেডিমেন্ট বলে । যেমন- আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির উত্তর – পশ্চিম প্রান্ত ।
- বাজাদা : পর্বতের পলল শাখাগুলো বিস্তার লাভ করে পরস্পর সংযুক্ত হয়ে প্লায়া হ্রদ ও উচ্চভূমির মাঝে গঠিত ভূমি হল বাজাদা ।
- প্লায়া : মরু অঞ্চলের মধ্য দিয়ে একাধিক জলধারা ভূমিতে এসে সঞ্চিত হয় এবং সেখানে হ্রদের সৃষ্টি করে, সেটা হল প্লায়া । ভারতের রাজস্থানের ধান্দ, উত্তর আফ্রিকায় শট নামে পরিচিত ।
মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণের কারণ
প্রাকৃতিক কারণ :
- আবহাওয়ার পরিবর্তন : গ্রিনহাউস এফেক্ট, বালি, ধূলিঝড়, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মরু অঞ্চল সম্প্রসারণ হচ্ছে।
- বায়ুর কার্য : বালির অবক্ষেপণের ফলে মরুভূমির প্রসার ঘটে ।
- খরাপ্রবণতা : খরার ফলে মাটি শুষ্ক হয়ে ফেটে যায় এবং মরু অঞ্চলে পরিণত হয় ।
মনুষ্যসৃষ্ট কারণ :
- বনভূমি ধ্বংস : অতিরিক্ত পশুচারণ, নগরায়ণ, শিল্পায়নের জন্য বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে ফলে সেই অঞ্চল বৃষ্টি শূন্য হয়ে মরু অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে ।
- অতিরিক্ত পশুচারণ : অত্যাধিক পশুচারণের জন্য ওই অঞ্চল উদ্ভিদ শূন্য হয়ে গিয়ে মরু অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে ।
- লবণাক্তকরণ : মাটির মধ্যে লবণ অক্সাইড, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতির জন্য মাটি শুষ্ক হয়ে গিয়ে মরু অঞ্চলে পরিণত হয় ।
- অবৈজ্ঞানিক উপায়ে জলসেচ : অবৈজ্ঞানিক উপায়ে জলসেচের ফলে মাটি অনুর্বর হয় এবং তা মরু অঞ্চলে পরিণত হয় ।
মরু অঞ্চলের প্রতিরোধের উপায়
- উডলট বৃক্ষরোপণ
- ভূপৃষ্ঠস্থ জলের বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যা ও ব্যবহার
- তৃণভূমির উন্নতি ঘটানো
- 11 টি দেশের ওপর দিয়ে 15 কিমি চওড়া এবং 8000 কিমি লম্বা গাছ লাগানো হচ্ছে
- shelter belt এবং wind break নির্মাণ করে জলবায়ুর উন্নতি ঘটানো হচ্ছে
- বালিয়াড়ির পৃষ্ঠদেশে ছোটো ছোটো এলাকায় জঙ্গল সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং অল্প সময়ে সবুজায়ন করা হচ্ছে ।
- সাহারায় বৃহত্তম পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হয়েছে । এখান থেকে জল নিয়ে কৃষিক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে ।
- মিশরের তোশকা প্রকল্পের মাধ্যমে জমিকে মরুভূমি থেকে উদ্ধার করে কৃষিক্ষেত্রে পরিণত করা হচ্ছে ।
- মরুভূমি অঞ্চলের মৃত্তিকার উর্বতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে ।
- থর মরুভূমিতে বাবলা জাতীয় গাছ লাগিয়ে বালিয়াড়ির চলনকে আয়ত্তে আনা হচ্ছে।
SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
1 MARKS QUESTIONS of বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
কেটল হ্রদের মধ্যে মধ্যে যে পলিস্তর সঞ্চিত হয় তাকে কি বলে ?
Ans. ভার্ব
মরুভূমি অঞ্চলে সৃষ্ট লবণাক্ত হ্রদকে কি বলা হয় ?
Ans. প্লায়া
প্লাবনভূমি, ব – দ্বীপ কোন প্রক্রিয়া দ্বারা সৃষ্টি হয় ?
Ans. আরোহন প্রক্রিয়ার দ্বারা
নদীবাহিত শিলাখণ্ড দ্বারা নদী খাতের যে ক্ষয় হয় তাকে কি বলে ?
Ans. অবঘর্ষ ক্ষয়
বায়ুর সাহায্যে শুষ্ক বালিকণা অনেকদূর বাহিত হয়ে সঞ্চিত হলে তাকে কি বলে ?
Ans. লোয়েস
হিমবাহের সম্মুখ অংশের প্রাচীরের মত যে শিলাস্তূপ সঞ্চিত হয় তাকে কি বলে ?
Ans. প্রান্ত গ্রাবরেখা
কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমিরূপের উচ্চতা হ্রাস হয়ে থাকে ?
Ans. অবরোহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
যখন কোন ছোট নদী, মূল নদী বা প্রধান নদীর সঙ্গে মিলিত হয় তখন তাকে কি বলে ?
Ans. উপনদী
যেসব নদী গুলো প্রধান নদী থেকে বেরিয়ে এসে অন্য নদী বা সাগরে গিয়ে পড়ে তাদের কি বলে ?
Ans. শাখা নদী
সমপ্রায় ভূমিতে কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত অবশিষ্ট পাহাড় গুলি কি নামে পরিচিত ?
Ans. মোনাডনক
কোন নদীর জল দ্বিগুণ হলে তার বহন ক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়ে, কিন্তু ওই নদীর গতি বেগ দ্বিগুণ হলে বহন ক্ষমতা 64 বা 26গুন বেড়ে যায় | একে কি বলে ?
Ans. নদীর ষষ্ঠ ঘাতের সূত্র
বন্যার ফলে নদীর উভয় তীরে বালি, পলি, কাদা, সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম নুড়ি জমা হয়েছে নতুন ভূমির সৃষ্টি করে তাকে কি বলে ?
Ans. প্লাবনভূমি
সমুদ্রের জলে বিশালাকৃতির ভাসমান বরফের চাঁই কে কি বলে ?
Ans. হিমশৈল
যদি নদীর মোহনা খুব প্রশস্ত হয় তাকে কি বলে ?
Ans. খাড়ি
বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা মালভূমি, পর্বত, পাহাড় প্রভৃতি ক্ষয় হয়ে সমভূমি তে পরিণত হয় | এই প্রকার ভূমিকে কি বলে ?
Ans. সমপ্রায় ভূমি
উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথে শিলা চূর্ণ, পাথর, বালি, নুরি প্রভৃতি স্তূপাকারে জমা হয় নিচের দিকে এগিয়ে আসে | এই শিলাস্তূপকে কি বলে ?
Ans. গ্রাবরেখা বা মোরেন
পর্বতের পাদদেশে বালি, নুড়ি, প্রস্তর খন্ড প্রভৃতি সঞ্চিত হয় এবং ওল্টানো চামচের মতো আকৃতি বিশিষ্ট যে টিলা সৃষ্টি করে তাকে কি বলে ?
Ans. ড্রামলিন
হিমবাহ বাহিত বালি, নুড়ি, কাদা প্রভৃতি জমা হয় যে ত্রিকোণাকার দ্বীপের অনুরূপ ভূমি গঠন করে | তাকে কি বলে ?
Ans. কেম
থিবীর কোথায় লোয়েস সমভূমি লক্ষ্য করা যায় ?
Ans. হোয়াংহো নদীর অববাহিকা
Multiple Choice Questions – 1 marks of বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
1.প্রায় কত শতাংশ অঞ্চলে ভূমিরূপ পরিবর্তনে নদী ভূমিকা নেয় ?
A.৫০ ভাগ
B.৩০ ভাগ
C.১০ ভাগ
D.৭০ ভাগ
ANS : D.৭০ ভাগ
2.নদীর প্রবাহ পরিমাপ করা হয় কোন এককে ?
A. কিউসেক
B. মিলিবার
C.কিলােমিটার-এ
D.নটু
ANS : A. কিউসেক
3. উচ্চগতিতে নদী উপত্যকার আকৃতি হয় ইংরেজি কোন্ অক্ষর মতাে ?
A.Z
B.W
C.U
D.V-এর মতাে
ANS : D. V-এর মতাে
4.নদী যে দীর্ঘ সংকীর্ণ খাতের মধ্য দিয়ে বয়ে চলে, তাকে বলে ?
A.দোয়াব
B.জলবিভাজিকা
C.নদীখাত
D.অববাহিকা
ANS : C.নদীখাত
6. ভারতের একটি নিত্যবহ নদী হল ?
A.গঙ্গা
B.অজয়
C.তাপ্তি
D.দামােদর
ANS : A.গঙ্গা
7.সঞ্য়কার্য সর্বাধিক পরিমাণে হয় নদীর কোন্ গতিতে ?
A.মধ্যগতিতে
B.নিম্নগতিতে
C.উচ্চ ও মধ্যগতিতে
D.উচ্চগতিতে
ANS : B. নিম্নগতিতে
8.দুটি নদীর মধ্যবর্তী ভূমিকে বলে ?
A.দোয়াব
B.জলবিভাজিকা
C.বদ্বীপ
D.অববাহিকা
ANS A.দোয়াব
9.যে উচ্চভূমি দুটি নদীর অববাহিকাকে পৃথক করে, তার বলে ?
A.উপত্যকা
B.ঘে বদ্বীপ
C.অ জলবিভাজিন্স
D.দোয়াব
ANS : C.অ জলবিভাজিন্স
10.নদী তার শাখা ও উপনদী-সহ যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবহমান হয় তাকে বলে নদীর ?
A.বদ্বীপ
B.নদী প্রবাহপথ
C.অববাহিকা
D,দোয়াব
ANS : C.অববাহিকা
11.মূল নদী থেকে যে অংশ নির্গত হয়, তাকে বলে ?
A.যুগ্ম নদী
B.শাখানদী
C.প্রধান নদী
D.উপনদী
ANS : B.শাখানদী
12.পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নদী যখন প্রধান নদীতে এসে মেশে তাকে বলে ?
A.অন্তর্বাহিনী নদী
B.উপনদী
C.শাখানদী
D.যুগ্মনদী
ANS : B. উপনদী
13.আদর্শ নদীর কয়টি গতি থাকে ?
A. ৪টি
B.৫টি
C. ৩ টি
D.২টি
ANS : C. ৩ টি
14.নিম্নলিখিত কোন্ নদীটি সবচেয়ে বেশি জলবহন করে ?
A. রাইন
B.কলােরাডাে
C.নীলনদ
D.আমাজন
ANS : C.নীলনদ
15.এদের মধ্যে কোনটি আদর্শ নদী?
A. নর্মদা
B. গঙ্গা
C. কাবেরী
D.তাপতি
ANS : B. গঙ্গা
16. কোনটি প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন নদী ?
A.ব্রম্মপুত্র
B.বিতস্তা
C.দামােদর নদী
D. সিন্ধু
ANS : B.বিতস্তা
17.নদীর বহনকার্যের উল্লেখযােগ্য প্রক্রিয়া কোনটি ?
A.ঘর্ষণ
B.লম্ফোদান
C. উৎপাটন
D.অবঘর্ষ
ANS : B.লম্ফোদান
18. নদীর ক্ষয়কার্যের উল্লেখযােগ্য প্রক্রিয়া কোনটি ?
A. লম্ফোদান
B.উৎপাটন।
C.আকর্ষণ
D.অবঘর্ষ
ANS : D.অবঘর্ষ
19. নদীর গতিবেগ দ্বিগুণ হলে তার বহন ক্ষমতা কতগুন বাড়ে ?
A.৪
B.১৬
C. ৮
D.৬৪
ANS : D.৬৪
20.যে স্থানে নদী পরস্পর মিলিত হয় তা হল ?
A.নদীমােহানা
B.নদীদোয়াব।
C.নদীসংগম
D.নদীদ্বীপ
ANS : C.নদীসংগম
Short Questions – 2-3 marks of বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
বহির্জাত প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ |
Ans. বহির্জাত প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য গুলি হল –
i) এই প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের উপর কাজ করে |
ii) এই প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের উপর অনুভূমিকভাবে
কাজ করে |
iii) এই প্রক্রিয়ার প্রধান উৎস হল নদী, হিমবাহ, উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি |
iv) এই প্রক্রিয়ায় ভূমিরূপের থানে সঞ্চয় এবং উঁচু স্থানে ক্ষয়কার্য হয় |
পর্যায়ন কাকে বলে ?
Ans. বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি যথা- হিমবাহ, বায়ু ,নদী, সমুদ্র তরঙ্গ প্রভৃতির শক্তির দ্বারা ক্ষয়, পরিবহন, সঞ্চয় কার্যের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের যে সামঞ্জস্য বজায় রাখে তাকে পর্যায়ন বলা হয় |
আবহবিকার বলতে কী বোঝায় ?
Ans. আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যথা- আদ্রতা, বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা প্রভৃতির দ্বারা ভূপৃষ্ঠের উপর অবস্থিত শিলার ক্ষয়কে বলা হয় আবহবিকার | শীলাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে বলে একে বিচূর্ণীভবন ও বলা হয় |
ক্ষয়ীভবন কাকে বলে ?
Ans. বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা উৎপত্তিস্থল থেকে অন্যত্র ক্ষয়িত পদার্থ পরিবাহিত হয় ফলে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা কমে এবং ক্ষয়ের শেষ সিমায় এসে উপনীত হয় | তাকে ক্ষয়ীভবন বলে |
নগ্নীভবন কাকে বলে ?
Ans. বহির্জাত প্রক্রিয়া পুঞ্জিত ক্ষয়, আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবন পদ্ধতির যৌথ প্রক্রিয়ায় শিলাস্তর চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ভূমির উচ্চতা ক্রমশ হ্রাস পায়|
তাকে নগ্নীভবন বলে |
নগ্নীভবন = পুঞ্জিত ক্ষয় + আবহবিকার + ক্ষয়ীভবন
নদী অববাহিকা ও নদী উপত্যকা কাকে বলে ?
Ans. প্রধান নদী তার উপর নদীর শাখা নদী নিয়ে যে অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে চলে তাকে
নদী অববাহিকা বলা হয় |
উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর গতিপথের দুই পাশের সংকীর্ণ ও দীর্ঘ নিম্নভূমির মাঝ বরাবর যে জলাধার প্রবাহিত হয় তাকে নদী উপত্যকা বলা হয় |
ধারণ অববাহিকা কাকে বলে ?
Ans. যখন কোন প্রধান নদী তার উপনদী সহ মালভূমি ও পর্বতের যেসকল অঞ্চল থেকে জল নিয়ে এসে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ অসংখ্য উপনদী সহ প্রধান নদীর অববাহিকা কে ধারণ অববাহিকা বলা হয় |
জলবিভাজিকা বলতে কী বোঝো ?
Ans. পাশাপাশি অবস্থিত দুই বা ততোধিক নদী অববাহিকা কে যে উচ্চভূমি ( পর্বত, পাহাড়) পরস্পর থেকে পৃথক করে
তাকে জলবিভাজিকা বলে।
যেমন – পৃথিবীর বৃহত্তম জলবিভাজিকা হল মধ্য এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চল।
নদীর ষষ্ঠ ঘাতের সূত্র টি লেখ |
Ans. নদীর গতি বেগ যদি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায় তবে তার বহন ক্ষমতা 64 বা 26গুন বৃদ্ধি পাবে।
নদীর বহন ক্ষমতা ও গতিবেগ এর মধ্যে আনুপাতিক সম্পর্ককে নদীর ষষ্ঠ ঘাতের সূত্র বলা হয়।
আদর্শ নদী বলতে কী বোঝায় ?
Ans. যে নদীর গতিপথে উচ্চগতি, মধ্যগতি, নিম্নগতি সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা যায় তাকে আদর্শ নদী বলে। যেমন – গঙ্গা, সিন্ধু, নীল, প্রভৃতি নদী।
খরস্রোত কি ?
Ans. নদীর গতিপথে কোথাও কঠিন শিলা ও কোমল শিলা উলম্বভাবে অবস্থান করলে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে কোমল শিলা ক্ষয় হয়ে সিঁড়ির ধাপের মতো নেমে আসে ।
ঐ সিঁড়ির ধাপ গুলি তে ছোট ছোট জলপ্রপাত সৃষ্টি হয় এইগুলিকে খরস্রোত বলা হয় ।
ক্ষুদ্র স্বল্পদৈর্ঘ্যের জলপ্রপাতকে রেপিড বলা হয় ।
ঝুলন্ত উপত্যকা কাকে বলে ?
Ans. যেমন প্রধান নদীর সঙ্গে ছোট ছোট উপনদী এসে মিলিত হয় ঠিক তেমনই প্রধান হিমবাহের সঙ্গে ছোট ছোট হিমবাহ এসে মিলিত হয় ।
প্রধান হিমবাহ বৃহৎ হওয়া এর উপত্যকায় ক্ষুদ্রাকার হিমবাহের উপত্যকার তুলনায় বেশি গভীর হয় পরে । যখন ঐ উপত্যকার সরে যায় তখন ক্ষুদ্রাকার উপত্যাকা দেখে মনে হয় প্রধান হিমবাহের উপর ঝুলছে। এইরূপ উপত্যকাকে ঝুলন্ত উপত্যকা বলা হয় ।
হিমদ্রোণী কাকে বলে ?
Ans. পার্বত্য অঞ্চলে উৎপাটন ও অবঘর্ষন এর প্রভাবে হিমবাহ উপত্যকার পার্শ্বদেশ মসৃণ ও খাড়া ঢাল যুক্ত হয় এবং তলদেশ প্রশস্ত হয় ।
এইরূপ উপত্যকাকে হিমদ্রোণী বলে ।
রসে মতানে কি ?
Ans. হিমবাহ তার গতিপথের ক্ষয়কার্যের ফলে কঠিন শিলার বাধাকে অতিক্রম করলে হিমবাহের প্রবাহের দিক মসৃণ হয় এবং বিপরীত দিক অমসৃণ হয়।
এইরূপ ভূমিরূপ রসেমতানে নামে পরিচিত।
নদীর ক্ষয়সীমা বলতে কী বোঝো ?
Ans. সমুদ্রতল হিসাবে সমুদ্র জলের উচ্চসীমাকে ধরা হয়।
সমুদ্রে পতিত নদী সর্বদাই এই সমুদ্র তলের সঙ্গে সমতা বজায় রেখে ক্ষয়কার্য করে থাকে।
হরতাল নদীতে উচ্চতার নিচে আর ক্ষয়কার্য করে না তাকে নদীর ক্ষয়সীমা বলা হয়।
হিমানী সম্প্রপাত কি ?
Ans. কখনো কখনো ভূমির ঢাল এর কারণে গতিশীল হিমবাহ থেকে বিশাল আকার বরফের স্তুপ ভেঙে গিয়ে খুব দ্রুত নিচে নেমে আসে |
এটি হিমানী সম্প্রপাত বলে পরিচিত।
গ্রাবরেখা কাকে বলে ?
Ans. উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে হিমবাহ কাকর, বালি, নুরী, কাদা, পলি প্রভৃতিসহ স্তূপাকারে নিচের দিকে এগিয়ে আসে।
এই শিলা স্তুপ গ্রাবরেখা এর নামে পরিচিত।
কেটল ও কেটল হ্রদ কাকে বলে ?
Ans. অনেক সময় বহিঃবিধৌত সমভূমিতে বরফের টুকরো থেকে যায় |
পরবর্তী কালে বরফের টুকরো গুলি গলে গেলে অঞ্চলটি গর্ত রূপে অবস্থান করে |
এই জাতীয় গর্ত গুলি কেটল নামে পরিচিত |
আবার কেটেল গুলো যখন জলপূর্ণ হয় হ্রদ সৃষ্টি করে তখন তাকে কেটলহ্রদ বলা হয় |
এরিটি কাকে বলে ?
Ans. হিমবাহের ঘর্ষণের ফলে সৃষ্টি দুটি সার্কের মাঝখানে যে খাড়ায় শৈলশিরা অবস্থান করে তাকে এরিট বলে ।
20. মরুদ্দ্যান বা Oasis কাকে বলে ?
Ans. দীর্ঘদিন ধরে মরু অঞ্চলে অপসারণ ক্ষয় কার্যের ফলে অবনমিত স্থানে সৃষ্টি হলে সেই অবনমিত স্থানে জল জমে যে হ্রদ সৃষ্টি হয় তাকে মরুদ্দ্যান বলে ।
পার্বত্য অঞ্চলে বা উচ্চগতিতে নদীর ক্ষয়কার্যের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় কেন ?
Ans. যখন নদী উৎস অঞ্চল থেকে সমভূমিতে নেমে আসে তখন সেই গতিপথকে পার্বত্য প্রবাহ বা উচ্চগতি বলে। এই প্রবাহপথে জলের পরিমাণ ও ভূমির ঢাল অধিক হওয়ায় নদী প্রবল বেগে নীচের দিকে নেমে আসে। প্রবল জলস্রোতের প্রভাবে ভূমির ঢাল অনযায়ী নদী নীচের দিকে নেমে আসায় ক্ষয়কার্যের পরিমাণ অধিকহয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠিত হয়।
যথা – গিরিখাত ও ক্যানিয়ন, “ V ” আকৃতির উপত্যকা ইত্যাদি।
কেন জলপ্রপাত ক্রমশ উৎসের দিকে সরে যায় ?
Ans. জলপ্রপাত ক্রমশ উৎসের দিকে সরে যায়, কারণ-
a) জলপ্রপাত সাধারণত নদীর উচ্চগতিতে লক্ষ করা যায়।
b) নদীর গতিপথে কঠিন শিলা অবস্থান করলে তার নিম্নে থাকা কোমল শিলা অপেক্ষাকৃত কম ক্ষয় পেয়ে উঁচু হয়ে অবস্থান করে বলে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
c) কঠিন শিলা যদি কোমল শিলার উপর সমান্তরালভাবে অবস্থান করে সেক্ষেত্রে জলপ্রপাত খাড়াভাবে গড়ে উঠে।
বদ্বীপ অঞ্চলে অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ লক্ষ্য করা যায় কেন ?
Ans. অশ্বক্ষুরাকৃতির হ্রদ ব-দ্বীপ অঞ্চলে দেখা যায়। কারণ –
a) নিম্নপ্রবাহে নদী সর্পিল গতিতে এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়ার সময় বাইরের দিকের বাঁকে আঘাত পেয়ে এসে ভেঙে যেতে থাকে।
b) বালি, পলি, ক্ষয়প্রাপ্ত নুড়ি প্রভৃতি নদীর তীরে জমা হতে থাকে।
এভাবে নদীবাঁক ক্রমশ বাড়তে থাকলে বাঁকের মাঝের অংশ সরু হয়ে যায়।
c) অবশেষে এটি প্রধান নদী থেকে পৃথক হয়ে অশ্বের ক্ষুরের ন্যায় হয়ে থাকে।
কেন হিমবাহ পৃথিবীর সুপেয় জলের বৃহত্তম ভান্ডার ?
Ans. পুরো পৃথিবীতে সঞ্চিত জলের মধ্যে 97 শতাংশ জল লবণাক্ত জল। বাকি তিন শতাংশ সুপ্রিয় জল।
যদি মোট সুপেয় জলকে 100 শতাংশ ধরা হয় তবে তার 70 শতাংশ হিমবাহ হিসেবে সঞ্চিত আছে আর বাকি 30 শতাংশ ভূ-অভ্যন্তরের সঞ্চিত আছে। তাই হিমবাহ হল পৃথিবীর বৃহত্তম সুপেয় জলের ভাণ্ডার।
নিম্ন অক্ষাংশে মরুভূমি সৃষ্টির কারণ কি ?
Ans. নিম্ন অক্ষাংশে মরুভূমি সৃষ্টির কারণ হলাে- a) দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু মহাদেশগুলির পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় জলীয় বাষ্পহীন হয়ে পড়ে ফলে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না।
b ) এই অঞ্চলে উচ্চচাপ বিরাজ করায় ঊর্ধ্বাকাশের বায়ু নীচের দিকে অধােগমনের ফলে ক্রমশ উত্তপ্ত হয় বলে জলীয় বাষ্প।
গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও বৃষ্টিপাত হয় না, তাই নিম্ন অক্ষাংশে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
মরু অঞ্চল প্রসারের কারণগুলি উল্লেখ করো
Ans. মরু অঞ্চল প্রসারণের কারণ হলাে –a) মরু অঞ্চল প্রসারণের প্রধান কারণ হলাে উষ্ণায়ন।
b) নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বনভূমি কাটা হচ্ছে, ফলে মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ ঘটছে।
c) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণের ফলে ক্রমাগত মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে।
d) যান্ত্রিক আবহবিকারের আধিক্য থাকায় শিলাচূর্ণ ও বালিরাশি বায়ুর দ্বারা বাহিত হয়ে সংলগ্ন এলাকাকে ঢেকে দেয় এবং পরবর্তীতে মরুভূমিতে পরিণত হয়।
মরু অঞ্চল প্রসারণ প্রতিরোধের উপায় কি লেখ?
Ans. মরু অঞ্চলের প্রসারণ কমিয়ে আনার জন্য যে সব পন্থা গ্রহণ করা উচিত সেগুলি হলাে –
a) অতিরিক্ত পশুচারণ বন্ধ করতে হবে, তবেই মরু সম্প্রসারণ রােধ করা যাবে।
b) মরুভূমির প্রান্তভাগে বাঁধ নির্মাণ করে ভূপৃষ্ঠে বায়ুপ্রবাহকে আটকানাে দরকার যাতে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বালুকণা।
প্রবাহিত হয়ে মরুভূমির প্রসারণ না ঘটায়।
c) মরুভূমির প্রসার রােধ করার জন্য চারিদিকে গাছ লাগিয়ে সেগুলিকে শক্ত করে বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করলে অনেকাংশে মরুভূমির প্রসারণ রােধ হবে।
অবরোহন ও আরোহন এর মধ্যে পার্থক্য লেখ |
Ans.
বিষয় | অবরোহন | আরোহন |
প্রক্রিয়া | ক্ষয়ীভবন, অপসারণ ও পুঞ্জিত ক্ষয় ধারা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় | | হিমাবাহ ও বায়ুপ্রবাহ নদী প্রভৃতি তারা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় | |
উচ্চতা | এর ফলে ভূমি ভাগের উচ্চতা কমে যায় | | এর ফলে ভূমি ভাগের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় | |
কার্য | প্রক্রিয়ায় শিলা স্তর ক্ষয় হয়ে নগ্ন হয়ে পড়ে | | এই প্রক্রিয়ায় কইতো পদার্থ গুলি অন্যত্র স ঞ্চিত হয় | |
ক্যানিয়ন ও গিরিখাত এর মধ্যে পার্থক্য লেখ |
Ans.
বিষয় | ক্যানিয়ন | গিরিখাত |
জলবায়ু অঞ্চল | শুষ্ক জলবায়ু যুক্ত অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়। | আদ্র জলবায়ু অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়। |
উৎপত্তি | নদীর প্রধানত তীব্র নিম্ন ক্ষয় এর মাধ্যমে ক্যানিয়ন গঠন করে থাকে। | নদীর নিম্নক্ষয় এর পাশাপাশি পার্শ্বক্ষয় করে গিরিখাত গঠন করে। |
আকৃতি | ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের ন্যায়। | ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের ন্যায়। |
বদ্বীপ ও পললব্যজনী এর মধ্যে পার্থক্য লেখ।
Ans.
বিষয় | বদ্বীপ | পললব্যজনী |
ঢাল | এক্ষেত্রে ভূমি সমতল ও উর্বর আকৃতির হয়ে থাকে। | ভূমি ঢালু ও অনুর্বর আকৃতির হয়। |
আকৃতি | একটি মাত্রাহীন ‘ব’ অক্ষরের মতো দেখতে হয়। | এটি হাত পাখার মতো দেখতে হয়। |
অবস্থান | নদীর নিম্নগতির শেষে দেখা যায়। | নদীর মধ্যগতি শুরুতে দেখা যায়। |
হিমবাহ উপত্যকা ও নদী উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য লেখ |
Ans.
বিষয় | হিমবাহ উপত্যকা | নদী উপত্যকা |
দৈর্ঘ্য ও ঢাল | সাধারণত এর দৈর্ঘ্য ও ঢাল কম হয়ে থাকে | এক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ও ঢাল বেশি হয় |
প্রকৃতি | সোজা ও মসৃণ প্রকৃতির | আঁকাবাঁকা ও অমসৃণ প্রকৃতির |
আকৃতি | ‘U’ আকৃতির হয় | ‘I’ বা ‘V’ আকৃতির হয় |
গ্রাবরেখা ও হিমরেখার মধ্যে পার্থক্য লেখ
Ans.
বিষয় | গ্রাবরেখা | হিমরেখা |
জলধারা সৃষ্টি | এই ভূমিরূপ কে কোন জলের ধারা সৃষ্টি হয় না | এই রেখার নিচে হিমবাহ থেকে জল ধারা সৃষ্টি হয় | |
প্রকৃতি | এটি হিমবাহের সঞ্চয় এর ফলে গঠিত ভূমিরূপ | | এটি হিমাবাহ এর নিম্ন প্রান্তের সীমারেখা | |
অবস্থান | এটি উপত্যাকার দুপাশে, মাঝে অবস্থান করে | এটি উপত্যাকার নিম্নসীমায়ে অবস্থান করে |
বাজাদার ও পেডিমেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য লেখ?
Ans.
বিষয় | বাজাদার | পেডিমেন্ট |
ভূমি গঠন প্রক্রিয়া | প্রধানত জলধারার সঞ্চয় কার্যের দ্বারা গঠিত। | জলধারার মিলিত কার্যের ফলে গঠিত। |
ভূমির প্রকৃতি | ভূমির ঢাল সামান্য উত্তল প্রকৃতির হয়। | ভূমির ঢাল সামান্য অবতল প্রকৃতির হয়। |
উদাহরণ | সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে দেখা যায়। | উত্তর পশ্চিম আফ্রিকার আটাকামা পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়। |
জিউগেন ও ইয়ারদাং এর মধ্যে পার্থক্য লেখ |
Ans.
বিষয় | জিউগেন | ইয়ারদাং |
উচ্চতা | এর উচ্চতা বেশি হয়। 2-40 মিটার পর্যন্ত। | এর উচ্চতা কম হয়। গড়ে 7 মিটার |
অবস্থান | এরা পরস্পর ব্যাঙের ছাতার ন্যায় অবস্থান করে। | এরা প্রায় সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। |
আকৃতি | নতুন অংশ সরু উপরের অংশ চ্যাপ্টা হয়। | নিচের অংশ মোটা উপরের অংশ ছুঁচালো হয়। |
Long Questions – 5 Marks of বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
পার্বত্য অঞ্চলে বা উচ্চগতিতে নদীর ক্ষয়কার্যের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় কেন ?
Ans. যখন নদী উৎস অঞ্চল থেকে সমভূমিতে নেমে আসে তখন সেই গতিপথকে পার্বত্য প্রবাহ বা উচ্চগতি বলে। এই প্রবাহপথে জলের পরিমাণ ও ভূমির ঢাল অধিক হওয়ায় নদী প্রবল বেগে নীচের দিকে নেমে আসে। প্রবল জলস্রোতের প্রভাবে ভূমির ঢাল অনযায়ী নদী নীচের দিকে নেমে আসায় ক্ষয়কার্যের পরিমাণ অধিকহয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠিত হয়।
যথা – গিরিখাত ও ক্যানিয়ন, “ V ” আকৃতির উপত্যকা ইত্যাদি।
কেন জলপ্রপাত ক্রমশ উৎসের দিকে সরে যায় ?
Ans. জলপ্রপাত ক্রমশ উৎসের দিকে সরে যায়, কারণ-
a) জলপ্রপাত সাধারণত নদীর উচ্চগতিতে লক্ষ করা যায়।
b) নদীর গতিপথে কঠিন শিলা অবস্থান করলে তার নিম্নে থাকা কোমল শিলা অপেক্ষাকৃত কম ক্ষয় পেয়ে উঁচু হয়ে অবস্থান করে বলে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
c) কঠিন শিলা যদি কোমল শিলার উপর সমান্তরালভাবে অবস্থান করে সেক্ষেত্রে জলপ্রপাত খাড়াভাবে গড়ে উঠে।
বদ্বীপ অঞ্চলে অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ লক্ষ্য করা যায় কেন ?
Ans. অশ্বক্ষুরাকৃতির হ্রদ ব-দ্বীপ অঞ্চলে দেখা যায়। কারণ –
a) নিম্নপ্রবাহে নদী সর্পিল গতিতে এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়ার সময় বাইরের দিকের বাঁকে আঘাত পেয়ে এসে ভেঙে যেতে থাকে।
b) বালি, পলি, ক্ষয়প্রাপ্ত নুড়ি প্রভৃতি নদীর তীরে জমা হতে থাকে।
এভাবে নদীবাঁক ক্রমশ বাড়তে থাকলে বাঁকের মাঝের অংশ সরু হয়ে যায়।
c) অবশেষে এটি প্রধান নদী থেকে পৃথক হয়ে অশ্বের ক্ষুরের ন্যায় হয়ে থাকে।
কেন হিমবাহ পৃথিবীর সুপেয় জলের বৃহত্তম ভান্ডার ?
Ans. পুরো পৃথিবীতে সঞ্চিত জলের মধ্যে 97 শতাংশ জল লবণাক্ত জল। বাকি তিন শতাংশ সুপ্রিয় জল।
যদি মোট সুপেয় জলকে 100 শতাংশ ধরা হয় তবে তার 70 শতাংশ হিমবাহ হিসেবে সঞ্চিত আছে আর বাকি 30 শতাংশ ভূ-অভ্যন্তরের সঞ্চিত আছে। তাই হিমবাহ হল পৃথিবীর বৃহত্তম সুপেয় জলের ভাণ্ডার।
নিম্ন অক্ষাংশে মরুভূমি সৃষ্টির কারণ কি ?
Ans. নিম্ন অক্ষাংশে মরুভূমি সৃষ্টির কারণ হলাে- a) দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু মহাদেশগুলির পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় জলীয় বাষ্পহীন হয়ে পড়ে ফলে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না।
b ) এই অঞ্চলে উচ্চচাপ বিরাজ করায় ঊর্ধ্বাকাশের বায়ু নীচের দিকে অধােগমনের ফলে ক্রমশ উত্তপ্ত হয় বলে জলীয় বাষ্প।
গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও বৃষ্টিপাত হয় না, তাই নিম্ন অক্ষাংশে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
মরু অঞ্চল প্রসারের কারণগুলি উল্লেখ করো
Ans. মরু অঞ্চল প্রসারণের কারণ হলাে –a) মরু অঞ্চল প্রসারণের প্রধান কারণ হলাে উষ্ণায়ন।
b) নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বনভূমি কাটা হচ্ছে, ফলে মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ ঘটছে।
c) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণের ফলে ক্রমাগত মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে।
d) যান্ত্রিক আবহবিকারের আধিক্য থাকায় শিলাচূর্ণ ও বালিরাশি বায়ুর দ্বারা বাহিত হয়ে সংলগ্ন এলাকাকে ঢেকে দেয় এবং পরবর্তীতে মরুভূমিতে পরিণত হয়।
মরু অঞ্চল প্রসারণ প্রতিরোধের উপায় কি লেখ?
Ans. মরু অঞ্চলের প্রসারণ কমিয়ে আনার জন্য যে সব পন্থা গ্রহণ করা উচিত সেগুলি হলাে –
a) অতিরিক্ত পশুচারণ বন্ধ করতে হবে, তবেই মরু সম্প্রসারণ রােধ করা যাবে।
b) মরুভূমির প্রান্তভাগে বাঁধ নির্মাণ করে ভূপৃষ্ঠে বায়ুপ্রবাহকে আটকানাে দরকার যাতে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বালুকণা।
প্রবাহিত হয়ে মরুভূমির প্রসারণ না ঘটায়।
c) মরুভূমির প্রসার রােধ করার জন্য চারিদিকে গাছ লাগিয়ে সেগুলিকে শক্ত করে বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করলে অনেকাংশে মরুভূমির প্রসারণ রােধ হবে।
অবরোহন ও আরোহন এর মধ্যে পার্থক্য লেখ |
Ans.
বিষয় | অবরোহন | আরোহন |
প্রক্রিয়া | ক্ষয়ীভবন, অপসারণ ও পুঞ্জিত ক্ষয় ধারা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় | | হিমাবাহ ও বায়ুপ্রবাহ নদী প্রভৃতি তারা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় | |
উচ্চতা | এর ফলে ভূমি ভাগের উচ্চতা কমে যায় | | এর ফলে ভূমি ভাগের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় | |
কার্য | প্রক্রিয়ায় শিলা স্তর ক্ষয় হয়ে নগ্ন হয়ে পড়ে | | এই প্রক্রিয়ায় কইতো পদার্থ গুলি অন্যত্র স ঞ্চিত হয় | |
ক্যানিয়ন ও গিরিখাত এর মধ্যে পার্থক্য লেখ |
Ans.
বিষয় | ক্যানিয়ন | গিরিখাত |
জলবায়ু অঞ্চল | শুষ্ক জলবায়ু যুক্ত অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়। | আদ্র জলবায়ু অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়। |
উৎপত্তি | নদীর প্রধানত তীব্র নিম্ন ক্ষয় এর মাধ্যমে ক্যানিয়ন গঠন করে থাকে। | নদীর নিম্নক্ষয় এর পাশাপাশি পার্শ্বক্ষয় করে গিরিখাত গঠন করে। |
আকৃতি | ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের ন্যায়। | ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের ন্যায়। |
বদ্বীপ ও পললব্যজনী এর মধ্যে পার্থক্য লেখ।
Ans.
বিষয় | বদ্বীপ | পললব্যজনী |
ঢাল | এক্ষেত্রে ভূমি সমতল ও উর্বর আকৃতির হয়ে থাকে। | ভূমি ঢালু ও অনুর্বর আকৃতির হয়। |
আকৃতি | একটি মাত্রাহীন ‘ব’ অক্ষরের মতো দেখতে হয়। | এটি হাত পাখার মতো দেখতে হয়। |
অবস্থান | নদীর নিম্নগতির শেষে দেখা যায়। | নদীর মধ্যগতি শুরুতে দেখা যায়। |
হিমবাহ উপত্যকা ও নদী উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য লেখ |
Ans.
বিষয় | হিমবাহ উপত্যকা | নদী উপত্যকা |
দৈর্ঘ্য ও ঢাল | সাধারণত এর দৈর্ঘ্য ও ঢাল কম হয়ে থাকে | এক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ও ঢাল বেশি হয় |
প্রকৃতি | সোজা ও মসৃণ প্রকৃতির | আঁকাবাঁকা ও অমসৃণ প্রকৃতির |
আকৃতি | ‘U’ আকৃতির হয় | ‘I’ বা ‘V’ আকৃতির হয় |
গ্রাবরেখা ও হিমরেখার মধ্যে পার্থক্য লেখ
Ans.
বিষয় | গ্রাবরেখা | হিমরেখা |
জলধারা সৃষ্টি | এই ভূমিরূপ কে কোন জলের ধারা সৃষ্টি হয় না | এই রেখার নিচে হিমবাহ থেকে জল ধারা সৃষ্টি হয় | |
প্রকৃতি | এটি হিমবাহের সঞ্চয় এর ফলে গঠিত ভূমিরূপ | | এটি হিমাবাহ এর নিম্ন প্রান্তের সীমারেখা | |
অবস্থান | এটি উপত্যাকার দুপাশে, মাঝে অবস্থান করে | এটি উপত্যাকার নিম্নসীমায়ে অবস্থান করে |
বাজাদার ও পেডিমেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য লেখ?
Ans.
বিষয় | বাজাদার | পেডিমেন্ট |
ভূমি গঠন প্রক্রিয়া | প্রধানত জলধারার সঞ্চয় কার্যের দ্বারা গঠিত। | জলধারার মিলিত কার্যের ফলে গঠিত। |
ভূমির প্রকৃতি | ভূমির ঢাল সামান্য উত্তল প্রকৃতির হয়। | ভূমির ঢাল সামান্য অবতল প্রকৃতির হয়। |
উদাহরণ | সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে দেখা যায়। | উত্তর পশ্চিম আফ্রিকার আটাকামা পার্বত্য অঞ্চলে দেখা যায়। |
জিউগেন ও ইয়ারদাং এর মধ্যে পার্থক্য লেখ |
Ans.
বিষয় | জিউগেন | ইয়ারদাং |
উচ্চতা | এর উচ্চতা বেশি হয়। 2-40 মিটার পর্যন্ত। | এর উচ্চতা কম হয়। গড়ে 7 মিটার |
অবস্থান | এরা পরস্পর ব্যাঙের ছাতার ন্যায় অবস্থান করে। | এরা প্রায় সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। |
আকৃতি | নতুন অংশ সরু উপরের অংশ চ্যাপ্টা হয়। | নিচের অংশ মোটা উপরের অংশ ছুঁচালো হয়। |