fbpx

ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ Bharater Orthonoitik Poribesh Geography Bhugol Subject WBBSE Madhyamik Class 10

আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে

  • প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics  গুলো সহজভাবে.  এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
  • দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
  • তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er  প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
  • চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়

আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি

ভারতের কৃষি 

ভারত একটি কৃষি প্রধান দেশ । এ দেশের শতকরা প্রায় 64 জন মানুষ কৃষি কার্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে এবং ভারতের কৃষিযোগ্য 18.10 কোটি হেক্টর জমির মধ্যে 17.15 কোটি হেক্টর জমি কৃষিকাজ সম্ভব হয়েছে I

ভারতীয় কৃষির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য 

  1. ভারতের কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক ।
  2. ভারতীয় কৃষিতে জলের বেশিরভাগটাই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর দ্বারা বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে।
  3. ভারতের জনসংখ্যা অনুযায়ী জমির পরিমাণ অত্যন্ত কম।
  4. ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রে জমি কর্ষণের জন্য গরু, বলদ প্রভৃতি শক্তিকে কাজে লাগানো হয়।
  5. বৃষ্টির অসম বন্টন, মাটির জলধারণ ক্ষমতার পার্থক্য প্রভৃতি কারনে জলসেচ অত্যাবশ্যক।
  6. দানাশস্যের ফলন বাড়াতে হবে।
  7. এই দেশে স্বল্প পরিমাণ জমি থেকে সর্বাধিক উৎপাদনের কারণে কৃষকরা অপরিমিত এবং অনিয়ন্ত্রিত হারে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করে।

ভারতীয়  কৃষিজ ফসলের শ্রেণীবিভাগ

  1. ব্যবহার অনুযায়ী :
    1. খাদ্য ফসল- ধান, গম, যব
    2. তন্তু ফসল- পাট, তুলা
    3. বাগিচা ফসল- চা, কফি
  2. ঋতু অনুযায়ী : 
    1. খারিফ শস্য- গ্রীষ্মের শেষে বপন এবং শীতকালে উত্তোলন
    2. রবি শস্য- শীতের শুরুতে বপন এবং শীতের শেষে উত্তোলন
    3. জায়িদ শস্য- প্রাক বর্ষায় চাষ হয়

প্রধান প্রধান কৃষিজ ফসলের উৎপাদন ও বন্টন 

ধান 

ধান হল ভারতের প্রধান খাদ্যশস্য ধান উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে, চীনের পরে। ভারতে মোট 104.32 কোটি টন ধান উৎপাদিত হয় ।

ধান চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ 

  • বৃষ্টিপাত – 100-200 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন ।
  • তাপমাত্রা – বীজতলা তৈরির ক্ষেত্রে 10°-21° C এবং কাটার সময় 35°-37° C তাপমাত্রা উপযুক্ত ।
  • মৃত্তিকা – নদী অববাহিকা অঞ্চলে দোআঁশ মাটি এবং উর্বর পলিমাটিতে এবং সমতল ভূমি বিশেষ উপযুক্ত।
  • শ্রমিক – ধান চাষের জন্য, জমি প্রস্তুত, বীজ বপন, তথ্য সংগ্রহ, চারা রোপন  এবং আগাছা পরিষ্কার করতে প্রচুর দক্ষ এবং শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
  • জলসেচ ও উচ্চফলনশীল বীজ – উচ্চ ফলনশীল ধান চাষের জন্য প্রচুর পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয় তাই জলসেচের ব্যবস্থা করতে হয়।
  • এছাড়াও মূলধন চাহিদা, কীটনাশক, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, আধুনিক কৃষি এবং যন্ত্রপাতি দরকার হয়।

ধানের বন্টন

  • পশ্চিমবঙ্গ – ভারতের ধান উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থান অধিকার করে। এই রাজ্যের বর্ধমান, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর,  উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা, হুগলি জেলায় ধান উৎপাদিত হয়।
  • উত্তর প্রদেশ – ধান উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে । ফরিদাবাদ, লক্ষ্মীপুর, গোরখপুর প্রভৃতি জেলাগুলিতে ধান চাষ করা হয়।
  • পাঞ্জাব – ধান উৎপাদনে ভারতের তৃতীয় স্থান অধিকারী রাজ্য। জলন্ধর, পাটিয়ালা, অমৃতসর প্রভৃতি জেলাগুলিতে ধান উৎপাদিত হয়।
  • ওড়িশা – এই রাজ্যের সম্বলপুর, কটক, বালেশ্বর ও পুরি প্রভৃতি স্থানে ধান উৎপাদিত হয়।
  • বিহার – এই রাজ্যের পূর্ণিয়া, দ্বারভাঙ্গা এবং গয়া প্রভৃতি স্থানে ধান উৎপন্ন হয়।
  • এছাড়া তামিলনাড়ু, ছত্রিশগড় এবং অসমের কিছু স্থানে ধান উৎপন্ন হয়।

রাজ্য ভিত্তিক ধান উৎপাদন(2015-16)

রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ উত্তরপ্রদেশ পাঞ্জাব
উৎপাদন (কোটি টন)15 .7512.5111.82
মোট উৎপাদনের শতকরা পরিমাণ15.10%11.99%11.33%

বাণিজ্য – পূর্ব মায়ানমার, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশগুলোর থেকে চাল, ভারতবর্ষে আমদানি করলেও সামান্য পরিমাণ চাল রাশিয়া, বাংলাদেশ, ইতালি দেশগুলিকে ভারত রপ্তানি করে।

গম 

উৎপাদনের দিক থেকে এবং খাদ্য শস্য হিসাবে ভারতে ধানের পরেই গমের স্থান । এই গম রবিশস্য রূপে শীতকালে চাষ করা হয় যা ভারতে মোট কৃষি জমির শতকরা 14 ভাগ জমিতে চাষ করা হয়। ভারতে লাল গমের চাষ বেশি হয় । গম উৎপাদনে ভারতবর্ষ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এবং ভারতবর্ষের মোট 93.50 কোটি টন গম উৎপাদিত।

গম চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ

  • বৃষ্টিপাত – 50-100 সেমি বৃষ্টিপাত আদর্শ এবং শীতকালীন গম চাষের জন্য জলসেচের গুরুত্ব খুব বেশি।
  • উষ্ণতা – গমের চারা বৃদ্ধির সময় 15°-16° C এবং পাকার সময় 18°-25° C ।
  • অনুকূল অবস্থা – গম চাষের প্রথম অবস্থায় আর্দ্র এবং শীতল আবহাওয়া, শীষ বেরোনোর সময় শুষ্ক এবং উষ্ণ আবহাওয়ায় আর পাকার সময় রোদ ঝলমলে শুষ্ক আবহাওয়ার প্রয়োজন।
  • মৃত্তিকা – মৃদু অম্লধর্মী বেলে দোআঁশ, এটেল দোআঁশ এবং উর্বর মাটি ও কৃষ্ণ মৃত্তিকা।
  • শ্রমিক – আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি নির্ভর হলেও সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন ।
  • জলসেচ – কেবলমাত্র উন্নত সেচ সেবিত অঞ্চলে ভারতবর্ষে গম চাষ হয়ে থাকে।
  • এছাড়াও নানা রকম উন্নত বীজ, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি গম চাষের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।

গমের বন্টন

  • উত্তরপ্রদেশ – উত্তরপ্রদেশ গম উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করেছে । এই রাজ্যের মুজফফরনগর, মোরাদাবাদ, গোরক্ষপুর এবং মিরাট প্রভৃতি স্থানে প্রচুর গম উৎপন্ন হয়।
  • মধ্যপ্রদেশ – ভারতের দ্বিতীয় স্থান অধিকারী রাজ্যটির মধ্যে জব্বলপুর, ভোপাল, ইন্দোর, গোয়ালিয়র এবং ছত্রপুর প্রভৃতি স্থানে গম চাষ করা হয়।
  • পাঞ্জাব – তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে । এই রাজ্যের লুধিয়ানা, জলন্ধর, পাটিয়ালা, ভাটিণ্ডা এবং অমৃতসর প্রভৃতি স্থানে প্রচুর গম উৎপন্ন হয়।
  • হরিয়ানা – গম উৎপাদনে চতুর্থ স্থান অধিকারী রাজ্যটির মধ্যে আম্বালা, হিশার, কুরুক্ষেত্র এবং গুরগাঁও প্রভৃতি স্থানে গম চাষ করা।
  • রাজস্থান – পঞ্চম স্থান অধিকারী এই রাজ্যের শ্রীগঙ্গানগর, জয়পুর, ভরতপুর, চিতোরগড় এবং কোটা প্রভৃতি স্থানে গম উৎপন্ন হয় এছাড়াও বিহার গুজরাট পশ্চিমবঙ্গ এবং মহারাষ্ট্র গম উৎপাদন হয়।

ভারতের প্রধান তিনটি গম উৎপাদক রাজ্য

ভারতের রাজ্য ভিত্তিক গম উৎপাদন (2015-16)

রাজ্যউত্তর প্রদেশ (প্রথম)মধ্যপ্রদেশ (দ্বিতীয়)পাঞ্জাব (তৃতীয়)
উৎপাদন কোটি টন26.8717.6916.08
মোট উৎপাদনের শতকরা পরিমাণ28.74%18.92%17.20%

বাণিজ্য- ভারত সামান্য পরিমাণে গম বাংলাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে রপ্তানি করে থাকে।

মিলেট

উষ্ণ ও শুষ্ক এলাকায় যে সমস্ত ঘাসজাতীয় নিকৃষ্ট শ্রেণীর ক্ষুদ্রাকার দানাশস্য উৎপন্ন হয় তাদের একত্রে মিলেট বলে। ভারতের মোট কৃষি জমির 29% মিলেট উৎপাদন হয়। জোয়ার, বাজরা ও রাগী হল প্রধান মিলেট।

মিলেট চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ

জোয়ার উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ

  • জলবায়ু– বর্ষাকালের 27°-32° C এবং শীতকালে 16° C-এর বেশি গড় মাসিক উষ্ণতা এবং 30 ০-65 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।
  • মাটি- উর্বর পলিমাটি এবং রেগুর মাটি আদর্শ।
  • ভূমি- উত্তম জলনিকাশের ব্যবস্থা যুক্ত সমতল ও মৃদু ঢালু জমি চাষের জন্য আদর্শ এবং উচ্চতার প্রয়োজন  1200 মিটার।

বাজরা উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ

  • জলবায়ু- বাজরা চাষে 25°-30° C উষ্ণতা এবং 40-50 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত আদর্শ।
  • মাটি- হালকা বেলে মাটি ও গভীর কালো ও লাল উচ্চভূমি পাথরে মাটি আদর্শ।
  • জমি- জল নিকাশের সুবিধাযুক্ত সমতল অল্প ঢালু জমিচাষের জন্য আদর্শ।
  • জলসেচ- বাজরা ক্ষেতের জলসেচ করার প্রয়োজন হয়।

রাগি উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ

  • উষ্ণতা- 20-30° C
  • বৃষ্টিপাত- রাগি শুষ্ক অঞ্চলের ফসল হওয়াই 50-100 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন।
  • মৃত্তিকা- লাল বা হালকা কালো বেলে দোআঁশ এবং পলি দোআঁশ মাটি আদর্শ।
  • জমি- জল নিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত সমতল বা অল্প ঢালু জমি আদর্শ।

জোয়ার, বাজরা ও রাগি উৎপাদক অঞ্চল 

ফসলরাজ্যস্থানউৎপাদক অঞ্চল 
জোয়ারমহারাষ্ট্রপ্রথমবুলদানা, ওসমানাবাদ, আকুলা অমরাবতী প্রভৃতি।
কর্ণাটকদ্বিতীয়চিত্রদুর্গ, মহীশূর, বিজাপুর প্রভৃতি।
মধ্যপ্রদেশতৃতীয়রাজগড়, শিবপুরি, সাজাপুর প্রভৃতি।
বাজরারাজস্থানপ্রথমযোধপুর , বিকানের জয়সালমীর, কোটা প্রভৃতি।
উত্তরপ্রদেশদ্বিতীয়আগ্রা, আলীগড়, মথুরা।
গুজরাটতৃতীয়ভাবনগর, সুরেন্দ্রনগর জামনগর, জুনাগর প্রভৃতি।
রাগিকর্ণাটকপ্রথমকুলার,হাসান, তুমকুর বেঙ্গালুরু, মাইসোর প্রভৃতি।
তামিলনাড়ুদ্বিতীয়কোয়েম্বাটোর, সালেম উত্তর-দক্ষিণ আর্কোট, মাদুরাই, ধর্মপুরী প্রভৃতি
অন্ধ্রপ্রদেশতৃতীয়বিশাখাপত্তনম, অনন্তপুর, চিত্তর প্রভৃতি

মিলেট উৎপাদনে বর্তমানে পৃথিবীতে প্রথম স্থান অধিকার করে ভারতবর্ষ । এই দেশে 100.30  লক্ষ টন মিলেট  উৎপন্ন হয় যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় 40% ।

বাণিজ্য- উৎপাদিত মিলেটের অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু কিছু পরিমাণমিলেট অন্ত রাজ্য বাণিজ্য হয় এবং কিছু পরিমাণ মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপের দেশসমূহ পূর্ব আফ্রিকা রপ্তানি হয়।

ফসলজমির পরিমাণউৎপাদনহেক্টর প্রতি উৎপাদন
জোয়ার150.5  লক্ষ হেক্টর60.3 লক্ষ টন954 কেজি
বাজরা86 লক্ষ হেক্টর100 লক্ষ টন1156 কেজি
রাগি14.22 লক্ষ হেক্টর28.31 লক্ষ টন1990 কেজি

ইক্ষু 

ইক্ষু হলো একটি শর্করা জাতীয় অর্থকরী ফসল যা উৎপাদনে ভারতবর্ষ পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে । এই দেশে ইক্ষু উৎপাদনের পরিমাণ হল 34.9 কোটি মেট্রিক টন (2012 খ্রিস্টাব্দের তথ্যানুযায়ী) ।

ইক্ষু চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ

  • উষ্ণতা- সাধারণভাবে 20°-27° C উষ্ণতার প্রয়োজন ।
  • বৃষ্টিপাত- ইক্ষু চাষের জন্য ভারতের বার্ষিক গড় 150 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল জলসেচের মাধ্যমে ইক্ষু চাষ করা হয়।
  • কুয়াশা- ইক্ষুর পক্ষে তুহিন ও কুয়াশা ক্ষতিকর।
  • মৃত্তিকা- উপকূলবর্তী সমভূমি লবণমিশ্রিত ভারী দোঁয়াশ মাটি এবং নদী অববাহিকার জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত কাদামিশ্রিত দোআঁশ মাটি এবং কৃষ্ণ মৃত্তিকা ।
  • ভূমির অবস্থা- উত্তম জলনিকাশিযুক্ত ঈষৎ ঢালু জমির প্রয়োজন ।
  • শ্রমিক- গাছ লাগানো, পরিচর্যা করা, জমি পরিষ্কার করা এবং গাছ কাটা প্রভৃতি কাজের জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয় এছাড়াও জমিতে নিয়মিত জল সেচের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত মূলধন থাকলে উৎপাদন বাড়ে ।

ইক্ষু উৎপাদন- 10° থেকে প্রায় 28° উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে ভারতের ইক্ষু উৎপাদক অঞ্চল অবস্থিত এবং 2015 অনুযায়ী ভারতে 352.16 কোটি টন ইক্ষু চাষ হয়েছে।

রাজ্যউৎপাদন 

(কোটি টন)

উৎপাদক অঞ্চল সমূহ (2015-16)
উত্তরপ্রদেশ145.39আলীগড়, বারানসি মোরাদাবাদ, শাজাহানপুর প্রভৃতি
মহারাষ্ট্র72.26সাতারা, কোলাপুর, নাসিক, পুনে, আহমেদনগর  প্রভৃতি
কর্ণাটক38.48শিমোগা, কলার, বেলারি, বেলগাঁও প্রভৃতি

বাণিজ্য- অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত ব্রাজিল, কিউবা প্রভৃতি দেশ থেকে কিছু পরিমাণ চিনি আমদানি করে।

কার্পাস 

গুরুত্বপূর্ণ তন্তুজাতীয় বাণিজ্যিক ও অর্থকারী ফসল হল কার্পাস। কার্পাস উৎপাদনে ভারতবর্ষ বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে উৎপাদনে।

কার্পাস উৎপাদনে অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ  

  • উষ্ণতা-  কার্পাস চাষের জন্য 20-35 ° সেন্টিগ্রেড উষ্ণতা প্রয়োজন হয়।
  • বৃষ্টিপাত- 50 থেকে 100 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত ।
  • সামুদ্রিক বায়ু– সামুদ্রিক বায়ু তুলা চাষের পক্ষে উপযোগী ।
  • মৃত্তিকা- চুন ও লবণ মিশ্রিত উর্বর কৃষ্ণ মৃত্তিকা এবং উর্বর দোআঁশ মৃত্তিকা উপযোগী ।
  • ভূমির প্রকৃতি- উর্বর জলনিকাশি সুবিধাযুক্ত সমতল জমি বা সামান্য ঢালু জমির প্রয়োজন হয় ।
  • শ্রমিক- গাছের পরিচর্যা করা, গাছ লাগানো প্রভৃতি কাজের  জন্য প্রচুর দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
  • সার– তুলা চাষের ফলে জমির উর্বরতা খুব তাড়াতাড়ি হ্রাস পায়, সেক্ষেত্রে জমিতে পরিমিত রাসায়নিক ও জৈব সার দিতে হয়।
  • কীটনাশক- বলউইভিল নামে এক ধরনের পোকা তুলা চাষের পক্ষে ক্ষতিকর এজন্য তুলা চাষে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।
  • মূলধন– আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার জলসেচ ব্যবস্থা ও কীটনাশক ঔষধ, শ্রমিকের মজুরি এবং উন্নত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক মূলধনের প্রয়োজন হয়।

কার্পাস উৎপাদন এবং বাণিজ্য 

ভারতের তুলা চাষ প্রধানত দাক্ষিণাত্য মালভূমির কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল দেখা যায়। ভারতের কৃষি মন্ত্রণালয় সমীক্ষা অনুযায়ী 2015-16 সালে ভারতের 3.5 কোটি টন তুলা চাষ হয়েছে। পরিমাণের দিক থেকে তুলা উৎপাদনে ভারত স্বাবলম্বী হলেও ভারতের দীর্ঘ আঁশযুক্ত উৎকৃষ্ট শ্রেণীর তুলো উৎপাদন কম হওয়ায় ভারতকে  মিশর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুদান প্রভৃতি দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। অন্যদিকে ভারত, শ্রীলংকা, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং জাপান প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করে।

রাজ্যউৎপাদন 

(কোটি টন)

উৎপাদক অঞ্চল সমূহ(2015- 16)
গুজরাট 9.7সুরেন্দ্রনগর, আমেদাবাদ, বরোদা, সুরাট, ব্রোচ প্রভৃতি
মহারাষ্ট্র6.5জলগাঁও, আকুলা, নাগপুর, ধুলা, অমরাবতী প্রভৃতি
অন্ধ্রপ্রদেশ3.86বিশাখাপত্তনম, কুর্ণুল, অনন্তপুর, গুন্টুর প্রভৃতি

চা 

চা মৃদু উত্তেজক হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে আসছে। সস্তা মূল্যের এই চিরহরিৎ গুল্ম জাতীয় বৃক্ষ প্রধানত মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে জন্মায়।

চা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ

  • উষ্ণতা- বার্ষিক গড়ে 21°-29° C উষ্ণতা প্রয়োজন।
  • বৃষ্টিপাত- সার্বিক বার্ষিক গড় 200 থেকে 250 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।
  • মৃত্তিকা- জৈবপদার্থসমৃদ্ধ, অম্লধর্মী, উর্বর লৌহ মিশ্রিত দোঁয়াশ মৃত্তিকায় চা চাষ ভালো হয়।
  • সার প্রয়োগ- যে মাটিতে চা চাষ করা হয় সেই মাটির উর্বরতা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় বলে নাইট্রোজেন জাতীয় সার মাটিতে প্রয়োগ করতে হয়।
  • ভূপ্রকৃতি- পাহাড়ের ঢালে 1000-2000 মিটার উচ্চতায় চা চাষ করা হয়।
  • ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ- বাগিচার মধ্যে এই ধরনের বৃক্ষ লাগানো অতি আবশ্যক কারণ চায়ের চারাগাছ প্রখর সূর্যকিরণ সহ্য করতে পারে না ।
  • শ্রমিক- চা গাছ থেকে বছরের বিভিন্ন সময়ে হাত দিয়ে নৈপুণ্য সঙ্গে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি তুলতে হয়, সেক্ষত্রে প্রচুর সুলভ ও দক্ষ মহিলার প্রয়োজন হয়।
  • মূলধন- চায়ের গুণগত মান বজায় রাখা, পর্যবেক্ষণ, শ্রমিকের মজুরি, চা গাছের পরিচর্যা, বিপণন ব্যবস্থা প্রভৃতির জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন।
  • পরিবহন- দেশীয় এবং বহির্দেশীয় বাণিজ্যের প্রয়োজনে পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব অসীম।

চা উৎপাদন : বর্তমানে চা উৎপাদনে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। হেক্টর প্রতি 1705 কেজি চা উৎপাদন হয়।

  1. অসম– চা উৎপাদনে ভারতের প্রথম স্থান অধিকার করে, ভারতের মোট উৎপাদনের 51.2% বা 5.1 লক্ষ টন এই রাজ্যের লখিমপুর, কামরুপ, ডিব্রুগড়, কাছাড়, নওগাঁও, তেজপুর প্রভৃতি স্থানে উৎপন্ন হয়।
  2. পশ্চিমবঙ্গ– দ্বিতীয় স্থানাধিকারী পশ্চিমবঙ্গ চা উৎপাদনে গুরুত্ব পূর্ণ রাজ্য । এই রাজ্যের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার দিনাজপুর প্রভৃতি স্থানে চা উৎপাদিত হয়।
  3. তামিলনাড়ু- চা উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অধিকারী রাজ্যটি মোট উৎপাদনের প্রায় 16.3% উৎপাদিত হয়, কন্যাকুমারী, মাদুরাই নীলগিরি, টিরুনেলভেলি, কোয়েম্বাটোর প্রভৃতি। এছাড়াও কর্ণাটক, উত্তরাঞ্চল, হিমাচল প্রদেশ প্রতিটি রাজ্যের বিভিন্ন অংশে চা চাষ করা হয় ।
  4. বাণিজ্য – ভারত চতুর্থ স্থান অধিকার করে চা রপ্তানিতে। সেই উৎপাদিত চায়ের 45% চা কলকাতা বন্দর দিয়ে রাশিয়া, ব্রিটেন, সুদান, আফগানিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ রপ্তানি করা হয়।

কফি

কফি একটি অন্যতম পানীয় ও বাগিচা ফসল, ভারতবর্ষে 1833 খ্রিস্টাব্দে কর্ণাটক রাজ্যে প্রথম কফি চাষ শুরু হয়।

কফি চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ 

  • উষ্ণতা- সাধারণত 20°-30° C উষ্ণতার প্রয়োজন ।
  • বৃষ্টিপাত- 100 থেকে 250 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।
  • মৃত্তিকা- লাল দোআঁশ মাটি এবং লাভা সৃষ্ট উর্বর মাটি কফি চাষের জন্য ভালো।
  • জমির প্রকৃতি- পর্বতের পাদদেশে ঢালু উচ্চভূমি।
  • ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ- প্রখর সূর্যের রশ্মি থেকে ছোট অবস্থায় বাঁচানোর জন্য কলা, ভুট্টা প্রভৃতি ছায়া প্রদানকারী গাছ লাগানো হয়।
  • শ্রমিক- গাছ লাগানো, পরিচর্যা ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রচুর দক্ষ এবং সুলভ শ্রমিক প্রয়োজন হয়
  • এছাড়াও উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা এবং প্রচুর মূলধন প্রয়োজন।

কফি উৎপাদনে – বর্তমানে কফি উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে ভারতবর্ষ সপ্তম স্থান অধিকার করে। পৃথিবীর মোট উৎপাদনের মাত্র 3.6 শতাংশ ভারতে উৎপাদিত হয় এবং প্রায় 4 লক্ষ হেক্টর জমিতে কফি চাষ হয়।

কফি উৎপাদক অঞ্চল :

রাজ্যউৎপাদন (হাজার টন)উৎপাদন হারজমি

(লক্ষ হেক্টর)

স্থানউৎপাদক জেলা (2012)
কর্ণাটক22.1070%2প্রথমহাসান, কদাগু, চিকমাগালুর মহীশূর প্রভৃতি।
কেরালা6.8122%1দ্বিতীয়পালঘাট, কুইলন, ওয়ানার, মাল্লাপুরাম প্রভৃতি।
তামিলনাড়ু1.846%0.5তৃতীয়কোয়েম্বাটোর, নীলগিরি, সালেম, মাদুরাই, টিরুনেলভেলি প্রভৃতি।
অন্ধ্রপ্রদেশ0.602%0.25চতুর্থবিশাখাপত্তনম জেলার আরাকু উপত্যকা

বাণিজ্য- অভ্যন্তরীণ চাহিদা (40%) থাকায় ভারতের অধিকাংশ কফি দাক্ষিণাত্যের ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, কোচিন, কালিকট বন্দর দিয়ে প্রধানত রাশিয়া, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক, অস্ট্রেলিয়া, নাগাল্যান্ড প্রভৃতি দেশে প্রেরিত হয়। 2011 খ্রিস্টাব্দে 1.57 লক্ষ টন কফি রপ্তানি করে ভারত 2032 কোটি টাকা উপার্জন করে।

ভারতীয় কৃষির সমস্যা 

হেক্টর প্রতি শস্যের উৎপাদন- ভারতের কৃষিক্ষেত্রে একটি সমস্যা হল হেক্টর প্রতি শস্যের কম উৎপাদন। এই অবস্থার জন্য পর্যাপ্ত জলের অভাব, জমির উর্বরতা শক্তির অভাব, সার ও উৎকৃষ্ট বীজের অভাব, নিকৃষ্ট মানের কৃষি জমি বন্টনের অবস্থা এবং কৃষকদের শিক্ষার অভাব ও দারিদ্রতা প্রধানত দায়ী।

মাথাপিছু কৃষিজমির অপ্রতুলতা- ভারতে জনবসতি, পরিবারপিছু কৃষিজমির পরিমাণ অত্যন্ত কম যথাক্রমে 0.42 এবং 2.06 হেক্টর।

ভূমিক্ষয়- বনভূমি ধ্বংসের ফলে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ভূমিক্ষয়ের ফলে ভারতে প্রায় 1.2 হেক্টর জমি কৃষি অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ- মৌসুমী বায়ুর অনিশ্চয়তার কারণে কখনো অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, খরা প্রভৃতি বিপর্যয় কৃষি কাজের যথেষ্ট ক্ষতি করে ।

শিক্ষার প্রসার- ভারতীয় কৃষকদের শিক্ষার অভাবে বর্তমানে বিজ্ঞান ভিত্তিক কৃষিকার্য সম্বন্ধে অর্থাৎ যথাযথ পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার, কীটনাশক প্রভৃতি বিষয়ে তাদের ধারণা প্রায় নেই বললেই চলে।

ভারতীয় কৃষি সমস্যার সমাধান

হেক্টর প্রতি শস্যের উৎপাদন- বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও সরকারের বিভিন্ন কর্মপন্থা গ্রহণের ফলে ভারতের হেক্টর প্রতি ফলন এর উৎপাদন কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে

মাথাপিছু কৃষি জমির অপ্রতুলতা- সমবায় পদ্ধতিতে চাষ করলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমির  একত্রীকরণ এবং উৎকৃষ্ট মানের বীজ ও সার সংগ্রহের সুবিধা হবে।

ভূমিক্ষয়- ভূমিক্ষয় রোধে সরকারি উদ্যোগ বৃক্ষরোপন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ বাড়াতে হবে এবং অত্যধিক পশুচারণ নিষিদ্ধকরণ করতে হবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ- বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা দূর করতে উন্নত জলসেচ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

শিক্ষার প্রসার- কৃষির উন্নতির জন্য বর্তমানে ভারতের প্রতিটি রাজ্যের একটি করে এবং মহারাষ্ট্রের ও উত্তরপ্রদেশের একাধিক কৃষি মহাবিদ্যালয় ও 93টি কৃষি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে এছাড়াও 73টি কৃষি গবেষণাগার আছে যাতে কৃষির উন্নতির জন্য সর্বদা কাজ চলেছে।

ভারতের কৃষি উন্নত অঞ্চল পাঞ্জাব, হরিয়ানা কৃষি উন্নতির কারণ 

Indian Council Of Agricultural Research শস্যের প্রকৃতি, কৃষি পদ্ধতি এবং বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে ভারতের কৃষি অঞ্চলকে চিহ্নিত করে।

এই অঞ্চলের কৃষি উন্নতির কারণ গুলি হল-

  • বিস্তীর্ণ সমভূমি ও উর্বর মৃত্তিকা- সিন্ধু নদের পাঁচটি উপনদী অর্থাৎ শতদ্রু, ইরাবতী, বিতস্তা, বিপাশা, চন্দ্রভাগা নদী বিস্তীর্ণ সমভূমি এবং উর্বর পলি মৃত্তিকায় প্রচুর পরিমাণে শস্যের চাষ হয়।
  • ভাকরা-নাঙ্গাল প্রকল্প- ভাকরা নাঙ্গাল প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে 14.6 লক্ষ হেক্টর কৃষি জমিতে জলসেচ সম্ভব হয়েছে।
  • উচ্চফলনশীল বীজ- পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ব্যবহৃত উচ্চফলনশীল গম বীজ হল কল্যান সোনা, সোনারা 64 ইত্যাদি।
  • আধুনিক কৃষি পদ্ধতি- সবুজ বিপ্লবের পর থেকেই পাঞ্জাব, হরিয়ানা আধুনিক কৃষি পদ্ধতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, মহিষ ও লাঙ্গলের পরিবর্তে উন্নতমানের ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করার ফলে সময় সাশ্রয় হচ্ছে।
  • রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার- কৃষিজমিতে উন্নত মানের রাসায়নিক সার যেমন নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম এবং ফসফেটের ব্যবহার জমির উর্বরতা অব্যাহত রেখেছে এছাড়াও কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে পোকার আক্রমণ প্রতিহত করেছে এবং গুণগত মান বৃদ্ধি করেছে।

শ্রমিক- দুটি রাজ্যের জনসংখ্যা মধ্যম প্রকৃতির হওয়ায় দক্ষ ও সুলভ শ্রমিক যোগান আছে। মানুষের খাদ্য হিসাবে গমের ব্যবহার বেশি তাই অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা রয়েছে এছাড়াও কঠোর পরিশ্রম মনোভাব, মূলধনের প্রাচুর্য, আর্থিক সহায়তা এবং উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে ।

ভারতের শিল্প 

ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়া-কলাপ শুরু হয় কৃষিকাজকে কেন্দ্র করে এবং অগ্রগতি ঘটেছে শিল্পের মধ্য দিয়ে।

শিল্প স্থাপনের কারণ সমূহ

  1. প্রাকৃতিক কারণ 
    1. কাঁচামালের গুরুত্ব- শিল্পের ক্ষেত্রে কাঁচামাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই জন্য কাঁচামালের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শিল্পের স্থান নির্বাচন করা হয়। যে অঞ্চলে কাঁচামাল পাওয়া যায়, সেই অঞ্চলের কাছাকাছি শিল্প স্থাপন করতে হবে।
    2. জল- শিল্পকেন্দ্রিক কাঁচামাল পরিষ্কার করতে, শ্রমিকদের নিত্য প্রয়োজনে, বয়ন শিল্পে বস্ত্র ব্লিচিং ও ডাই প্রভৃতি কাজে প্রচুর বিশুদ্ধ জলের প্রয়োজন হয়। শিল্পকেন্দ্রে বিপুল পরিমাণ জলের চাহিদা থাকায় নদী, হ্রদ এবং বড় জলাধারের  কাছাকাছি তা গড়ে ওঠে। যেমন- জামশেদপুর (খরকাই-সুবর্ণরেখার সংযোগস্থলে), দুর্গাপুর (দামোদর নদ), রূঢ় শিল্পাঞ্চল (রাইন নদী)।
    3. বিদ্যুৎ- নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎশক্তির যোগান শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইগুলির সহজলভ্যতা শিল্পকেন্দ্রের অবস্থানকে প্রভাবিত করে। যেমন- কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকে কেন্দ্র করে দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে ।
  2. অর্থনৈতিক কারণ
    1. পরিবহন- প্রয়োজনীয় কাঁচামাল শিল্পকেন্দ্রে আনার জন্য, শক্তি সম্পদের জোগান, উৎপাদিত শিল্পজাত দ্রব্যকে বন্দরে বা বাজারে প্রেরণের জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজন ।
    2. শ্রমিক- শিল্প স্থাপন ও বিকাশে অন্যান্য উৎপাদনের সঙ্গে দক্ষ শ্রমিকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
    3. বাজার- উন্নত দেশগুলোর জনবহুল অঞ্চলে অতি উন্নত বাজার ব্যবস্থার জন্য অধিক শিল্পের সমাবেশ ঘটেছে।
    4. মূলধন- যে কোন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে জমি ক্রয়, শ্রমিকদের মজুরি, কারখানা তৈরি, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল সংগ্রহ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন।
    5. এছাড়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যা জলবায়ু, সরকারি নীতি প্রভৃতি বিষয় শিল্প স্থাপনকে প্রভাবিত করে।

প্রকৃতি অনুসারে কাঁচামালের শ্রেণীবিভাগ

  1. বিশুদ্ধ কাঁচামাল- বিশুদ্ধ কাঁচামালকে শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করলেও ওজনের তারতম্য ঘটে না । যেমন- তুলো, রেশম প্রভৃতি।
  2. অবিশুদ্ধ কাঁচামাল- অবিশুদ্ধ কাঁচামালকে শিল্পজাত দ্রব্য পরিণত করলে তার ওজন হ্রাস পায়। যেমন- লোহা আকরিক, বক্সাইট, কয়লা, তামা প্রভৃতি।

কাঁচামালভিত্তিক শিল্পের শ্রেণীবিভাগ

উৎস ও প্রকৃতি অনুসারে শিল্পকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-

  1. কৃষিজ শিল্প- চা শিল্প, কার্পাস বস্ত্রবয়ন শিল্প ইত্যাদি।
  2. বনজ শিল্প– দেশলাই, কাগজ, মধু, মোম, প্লাইউড, আসবাবপত্র নির্মাণ শিল্প।
  3. প্রাণিজ শিল্প- ডেয়ারি শিল্প, রেশম, লাক্ষা শিল্প, পশম বয়ন শিল্প।
  4. খনিজ শিল্প- লৌহ ইস্পাত, তামা, অ্যালুমিনিয়াম শিল্প প্রভৃতি।

লৌহ ইস্পাত শিল্প  

বেশিরভাগ লৌহ  ইস্পাত কারখানা পূর্ব-মধ্য ভারতের কেন্দ্রে রয়েছে । 1884 খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের কুলটিতে আধুনিক পদ্ধতিতে প্রথম লোহা উৎপাদন শুরু হয়। স্বাধীনতার পূর্বের তিনটি লৌহ ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র হল –

  1. বানপুর – কুলটি (পশ্চিমবঙ্গ)
  2. জামশেদপুর (ঝাড়খন্ড)
  3. ভদ্রাবতী (কর্ণাটক)

স্বাধীনতার পরবর্তী বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কয়েকটি বৃহৎ ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে –

  1. রাউলকেল্লা (উড়িষ্যা)
  2. ভিলাই (ছত্রিশগড়)
  3. দুর্গাপুর (পশ্চিমবঙ্গ)
  4. বিশাখাপত্তনম (অন্ধ্রপ্রদেশ)
  5. বোকারো (ঝাড়খণ্ড)

এছাড়াও সংকর ইস্পাত কেন্দ্রগুলি হল-

  1. মিনি স্টিল প্লান্ট
  2. স্পঞ্জ লোহা কারখানা
  3. ফাউন্ড্রি

বৃহৎ লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্র

  • TISCO (টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি)- ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদীর মিলনস্থলে স্যার জামশেদজি টাটার প্রচেষ্টায় TISCO গড়ে উঠেছে ।

গড়ে ওঠার কারণ- ওড়িশার লৌহ আকরিক, চুনাপাথর, ডলোমাইট, ম্যাঙ্গানিজ,  রানীগঞ্জ ও ঝরিয়ার কয়লা, সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদীর জল, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ এবং সড়কপথ ও জাতীয় সড়কপথ কলকাতা, হলদিয়া প্রভৃতি বন্দরের সুবিধা।

  • দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট– বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে এই কারখানাটি গড়ে উঠেছে।

গড়ে ওঠার কারণ- উড়িষ্যার আকরিক লোহা, রানীগঞ্জ ও ঝড়িয়ার কয়লা, দামোদর নদ ও দুর্গাপুর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল এবং পূর্ব রেলপথ, সড়কপথ, কলকাতা, হলদিয়া বন্দরের সুবিধা থাকায় এখানে লোহা ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছে।

  • রাউরকেল্লা স্টিল প্ল্যান্ট– উড়িষ্যার সুন্দরগড় জেলায় ব্রাহ্মণী নদীর তীরে রাউরকেল্লা লৌহ ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে।

গড়ে ওঠার কারণ- ময়ূরভঞ্জ, বোনাই থেকে লোহার আকরিক, ঝরিয়া, রানীগঞ্জের কয়লা, বীরমিত্রপুর থেকে চুনাপাথর, ব্রাহ্মণী ও কোয়েল নদীর জল, হিরাকুদ প্রকল্পের জলবিদ্যুৎ, রাউরকেল্লার তাপবিদ্যুৎ এবং পরিবহন ব্যবস্থার সুবিধা থাকায় এখানে শিল্প কেন্দ্র গড়ে উঠে ।

  • বোকারো স্টিল প্ল্যান্ট– 1964 সালে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার বোকারোতে, বোকারো স্টিল প্লান্ট স্থাপিত হয়।

গড়ে ওঠার কারণ- ঝরিয়া-বোকার অঞ্চলের কয়লা, উড়িষ্যার আকরিক লোহা, বীরমিত্রপুরের চুনাপাথর ও ম্যাঙ্গানিজ এবং দামোদর নদের পর্যাপ্ত জল থাকায় এখানে লৌহ ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছে

পূর্ব ও মধ্যভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণ 

লৌহ-ইস্পাত শিল্প কাঁচামাল উৎপাদক অঞ্চলে গড়ে ওঠে। এই শিল্প প্রধানত অবিশুদ্ধ কাঁচামালভিত্তিক শিল্প ।

  1. কাঁচামাল প্রাপ্তিস্থান- ঝাড়খন্ডের সিংভূম, উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ, ছত্রিশগড়ের কিছু অঞ্চল থেকে উচ্চ মানের লৌহ আকরিক পাওয়া যায় । দামোদর অববাহিকা অর্থাৎ রানীগঞ্জ, ঝরিয়া, বোকারো, গিরিডি এবং মহানদী-শোন- ব্রাহ্মণী অঞ্চল থেকে পর্যাপ্ত উৎকৃষ্ট শ্রেণীর বিটুমিনাস কয়লা পাওয়া যায় । এছাড়াও ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ থেকে চুনাপাথর, ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায় ।
  2. জল- দামোদর, সুবর্ণরেখা, ব্রাহ্মণী, বরাকর মহানদী এবং তেনুঘাট ও মঞ্জিরা জলাধার থেকে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছ জল পাওয়া যায়।
  3. বিদ্যুৎ- দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনায়, মহানদী পরিকল্পনায় হীরাকুদ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ শক্তির জোগান রয়েছে ।
  4. পরিবহন- পূর্ব, পূর্ব-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব-মধ্য রেলপথের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও রাজ্য সড়কপথ, বন্দরের অবস্থান নিকটে হওয়ায় অতি সহজে কাঁচামাল আমদানি এবং ইস্পাত পরিবহনের সুবিধা রয়েছে ।
  5. শ্রমিক শিল্পকার্য পরিচালনায় প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয় ।
  6. বাজার– দূর্গাপুর, হলদিয়া, আসানসোল প্রভৃতি শিল্পাঞ্চলে ইস্পাতের চাহিদা থাকায়  ও বিদেশের রপ্তানির সুবিধা থাকায় ইস্পাত শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে ।
  7. মূলধন ভারত সরকার, জামসেদজী টাটা কোম্পানি, বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংক ইস্পাত শিল্পে মূলধন বিনিয়োগ করেছে ।

কার্পাস বয়ন শিল্প

কলকাতার ঘুসুড়িতে ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্র প্রথম গড়ে ওঠে । এটি বর্তমানে ভারতের একক বৃহত্তম ও বৃহত্তম কৃষিভিত্তিক শিল্প । কার্পাস বস্ত্র উৎপাদনে ভারতবর্ষ বিশ্বের প্রথম এবং রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ।

কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে ওঠার কারণ  

  1. কাঁচামাল- দাক্ষিণাত্য মালভূমির বিভিন্ন কৃষ্ণ মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কার্পাস উৎপন্ন হওয়ায় মধ্য ও পশ্চিম ভারতে নানা জায়গায় এই শিল্প গড়ে উঠেছে।
  2. জলবায়ু- পশ্চিম ভারতের মুম্বাই, আহমেদাবাদ অঞ্চলে উপকূলীয় আর্দ্র আবহাওয়ার সুবিধা পাওয়া যায় ।
  3. পরিবহনের সুবিধা- যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের সুবিধা থাকায় কাঁচামাল কেন্দ্র থেকে উৎপাদন কেন্দ্রে এবং সেখান থেকে বাজারে পরিবহনের সুবিধা রয়েছে ।
  4. মূলধন- সমগ্র ভারতে আর্থিক এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতির সুযোগ সুবিধা থাকায় মূলধন এর অভাব নেই।
  5. বিদ্যুতের যোগান- ‘টাটা জলবিদ্যুৎ ব্যবস্থা’ মুম্বাই-এর কেন্দ্রগুলিতে বিদ্যুৎ শক্তির জোগান দেয় ।
  6. বাজার- ভারতীয় বস্ত্র বয়নের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজার আছে । এমনকি সৌদি আরবেও ভারতীয় সুতি বস্ত্রের প্রচুর চাহিদা আছে ।

কার্পাস বয়ন শিল্পের বন্টন

ভৌগলিক অবস্থান অনুসারে এই শিল্পকে 5টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়।

  1. পশ্চিমাঞ্চল- বস্ত্রবয়ন শিল্পকেন্দ্রগুলি হল মুম্বাই, নাগপুর, পুনে, নাসিক, আমেদাবাদ, গুজরাট, সুরাট, ভারুচ প্রভৃতি । ভারতের আমেদাবাদে 72 টি কাপড় কল রয়েছে তাই আমেদাবাদকে ভারতের ম্যানচেস্টার বলা হয়।
  2. মধ্যাঞ্চল- বস্ত্রবয়ন শিল্পকেন্দ্রগুলি হল ভোপাল, ইন্দোর, গোয়ালিয়র, উজ্জয়িনী, বিলাসপুর ।
  3. দক্ষিণাঞ্চল- বস্ত্রবয়ন শিল্পকেন্দ্রগুলি হল তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর, চেন্নাই । অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদ, সেকেন্দ্রাবাদ । কর্ণাটক, কেরল, গোয়া এবং পন্ডিচেরির বিভিন্ন অঞ্চল ।
  4. উত্তরাঞ্চল- বস্ত্রবয়ন শিল্পকেন্দ্রগুলি হল উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান, পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার প্রভৃতি রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে ।
  5. পূর্বাঞ্চল- পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, বিহার, উড়িষ্যা প্রভৃতি রাজ্যে ভারতের পূর্বাঞ্চলের কার্পাসবয়ন শিল্পকেন্দ্রগুলো গড়ে উঠেছে।

ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প 

ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, দস্তা প্রভৃতি ধাতব পদার্থ এবং রাবার, প্লাস্টিক, কাঠ প্রভৃতি অধাতব পদার্থকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত করে যে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে শিল্পে নানারকম ভারী এবং হালকা যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করা হয় তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে।

ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের শ্রেণীবিভাগ – দ্রব্যের ওজন ও আয়তন অনুসারে এই শিল্প দুই প্রকার-

  1. ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প
  2. হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প

ভারতের কয়েকটি প্রধান ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প কেন্দ্র:

শিল্প শিল্পকেন্দ্র
রেলইঞ্জিনজামশেদপুর, চিত্তরঞ্জন, বারানসি
রেলওয়ে বগিব্যাঙ্গালোর, দমদম
কৃষি যন্ত্রপাতিপিঞ্জর-ট্রাক্টর, আজমির-পাম্প মেশিন, হায়দ্রাবাদ- পাওয়ার টিলার
রেলওয়াগনদমদম, ভরতপুর
জাহাজ নির্মাণবিশাখাপত্তনম, মুম্বাই, গার্ডেনরিচ
ভারী  যন্ত্রপাতিরাচি- ইস্পাত শিল্পের যন্ত্রপাতি, ত্রিবেণী- বিদ্যুৎ পরিবাহী, বিশাখাপত্তনম-খনিজ তেল ও বিভিন্ন শিল্পে যন্ত্রপাতি
ভারী বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিচেন্নাই, ভোপাল, কলকাতা-মুম্বাই- তিরুচিরাপল্লী
বিমান নির্মাণবেঙ্গালুরু – যাত্রী ও পণ্যবাহী বিমান, কানপুর, কোরাপুট, নাসিক
খনি যন্ত্রপাতিদুর্গাপুর

ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে ওঠার কারণ 

  • অবস্থান- এই শিল্পকেন্দ্রগুলি লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে কারণ এই শিল্পের ক্ষেত্রে লৌহ ইস্পাত, কয়লা, তামা অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ভারী বস্তুর প্রয়োজন হয় ।
  • কাঁচামালের সহজলভ্যতা- কাঁচামাল হিসেবে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, রবার ইত্যাদি সহজপ্রাপ্যতা আছে ।
  • বিদ্যুৎ শক্তির সহজপ্রাপ্যতা– ভারতের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, আণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ প্রাপ্তির সহজলভ্যতা আছে ।
  • উন্নত কারিগরি বিদ্যা- বিংশ শতাব্দীর পর থেকেই প্রযুক্তি ও কারিগরিবিদ্যায় যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছে ভারত ।
  • দক্ষ শ্রমিক- ভারতে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের জন্য উচ্চ মেধাসম্পন্ন শ্রমিকের সহজলভ্যতা আছে ।
  • উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা- ভারতের সড়কপথ, রেলপথ, জনপথের মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি করার সুবিধা আছে।
  • উপযুক্ত বাজারের চাহিদা- ভারতে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বৃহৎ বাজার এবং পরিকাঠামোর দ্রুত উন্নতি হচ্ছে ।

পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প 

পেট্রোরসায়ন শিল্প মূলত বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক শিল্প পরিকাঠামোর উপর নির্ভর করে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিভিন্ন উপজাত দ্রব্যকে কাঁচামাল রূপে ব্যবহার করে বা অনুসারী শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য উৎপন্ন করে ।

পেট্রোরসায়ন শিল্পের শিল্পজাত দ্রব্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে অসংখ্য শিল্প গড়ে ওঠে তাই একে আধুনিক শিল্প দানব বলা হয় ।  এই শিল্পের বৈচিত্র্য, পরিমাণ, ব্যবহারিক গুরুত্ব অধিক ও অতি দ্রুত গতিতে বিকাশ ঘটেছে তাই এই শিল্পকে আমরা সূর্যোদয়ের শিল্প ও বলে থাকি।

1996 খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রের ট্রম্বেতে ভারতের সর্বপ্রথম আধুনিক বৃহৎ আয়তন পেট্রোরাসায়নিক কারখানাটি স্থাপিত হয় । এরপর খানে, ভদোদরা, তুতিকোরিন, চেন্নাই, জামনগর এবং হলদিয়াতে এই পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে ওঠে ।

পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প গড়ে ওঠার কারণ

  1. কাঁচামালের প্রাচুর্য : খনিজ তেল এই শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তা পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র, গুজরাট, আমেদাবাদ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ও দক্ষিণ ভারতের উপকূল প্রভৃতি স্থানে থেকে খনিজ তেল ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা হয় ।
  2. খনিজ তেল শোধনাগার এর অবস্থান : 17 টি খনিজতেল শোধনাগার থেকে উপজাত দ্রব্য তথা কাঁচামালের সহজলভ্যতা রয়েছে ।
  3. বন্দরের অবস্থান : মুম্বাই, হলদিয়া, চেন্নাই প্রভৃতি প্রথম শ্রেণীর বন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি আমদানি রপ্তানি সুবিধা রয়েছে।
  4. বিদ্যুৎ শক্তি : পশ্চিমঘাটের জলবিদ্যুৎ এবং কোলাঘাটের তাপবিদ্যুৎ থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ শক্তির যোগান রয়েছে ।
  5. জল সম্পদের প্রাচুর্য : তাপ্তি, নর্মদা, ব্রহ্মপুত্র ও বিভিন্ন জলাধার থেকে প্রচুর জল পাওয়া যায় ।
  6. উন্নত পরিবহন : ভারতে রেলপথ ও রাজ্য সড়ক দ্বারা বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যুক্ত ।
  7. মূলধনের প্রাচুর্য : দেশীয় শিল্পপতি, বড় বড় কোম্পানি, বহুজাতিক সংস্থা এই শিল্পে যথেষ্ট মূলধন বিনিয়োগ করেছে ।
  8. চাহিদা ও বাজার : দেশজুড়ে এবং প্রতিবেশী দেশ গুলিতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের বৃহৎ বাজার রয়েছে । এছাড়াও দক্ষ কারিগর,  উন্নত প্রযুক্তি বিদ্যা এই শিল্পে উন্নতি ঘটিয়েছে।

পেট্রোরসায়ন শিল্পের বন্টন 

১২ টি বৃহৎ কোম্পানি ভারতবর্ষের চারটি অঞ্চলে পেট্রো রাসায়নিক শিল্প গড়ে তুলেছে ।

  • পশ্চিমাঞ্চল
    • ট্রম্বে- ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড
    • থানে- ন্যাশনাল অর্গানিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড
    • ভদোদরা- ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল কর্পোরেশন লিমিটেড
    • হাজিরা- রিলায়েন্স পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেড, এটি বর্তমানে বৃহত্তম পেট্রোরসায়ন শিল্প
  • দক্ষিণাঞ্চল- তুতিকোরিন, চেন্নাই, তামিলনাড়ু ।
  • পূর্বাঞ্চল- হলদিয়া, বারাউনি ।
  • উত্তর-পূর্বাঞ্চল- বঙ্গাইগাঁও।

অটোমোবাইল নির্মাণ শিল্প 

এই শিল্পটি লৌহ-ইস্পাত ইঞ্জিনিয়ারিং ও রাসায়নিক শিল্পের উপর নির্ভরশীল । যন্ত্রাংশ এবং টায়ার, টিউব, প্লাস্টিক তার নানা উপকরণ সংযোজনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের স্থলযান নির্মাণকে অটোমোবাইল শিল্প বলে ।

 

স্বাধীনতার পূর্বে কিছু কোম্পানির আমদানিকৃত যন্ত্রাংশ জুড়ে ভারতবর্ষে কারখানা গড়ে ওঠে এবং পরবর্তী সময়ে 1947 খ্রিস্টাব্দে প্রিমিয়ার অটোমোবাইল লিমিটেড কুরলাতে তৈরী হয় এবং 1948  খ্রিস্টাব্দে উত্তর পাড়ায়  হিন্দুস্তান মোটরস লিমিটেড কোম্পানির কারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই  এই শিল্পের প্রকৃত উন্নতির সূচনা হয় ।

1983 খ্রিস্টাব্দে হরিয়ানার মারুতি উদ্যোগ লিমিটেড কারখানা স্থাপন হলে এই শিল্পের ক্ষেত্রে এক বড়ো পরিবর্তন আসে । বর্তমান এটি ভারতের উদীয়মান শিল্প ।

যানবাহন উৎপাদনে পৃথিবীতে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে ভারত । ট্রাক্টর তৈরিতে প্রথম, দ্বিচক্রযান তৈরিতে দ্বিতীয় এবং বাণিজ্য যানবাহন তৈরিতে পঞ্চম স্থান অধিকার করে ।

অটোমোবাইল নির্মাণ শিল্পের বন্টন – বেঙ্গালুরু ,গুরগাঁও, চেন্নাই, ফরিদাবাদ, মুম্বাই, পুনে, কানপুরকে কেন্দ্র করে এই মোটরগাড়ি নির্মাণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে ।

  1. যাত্রীবাহী যান-
    1. মারুতি উদ্যোগ লিমিটেড: গুরগাঁও
    2. প্রিমিয়ার অটোমোবাইলস লিমিটেড: মুম্বাই
    3. মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা কোম্পানি: নাসিক
    4. টাটা মোটরস লিমিটেড: জামশেদপুর
  2. পণ্যবাহী যান- 
    1. টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড লোকোমোটিভ কোম্পানি: ট্রাক, ম্যাটাডোর
    2. অশোক লেল্যান্ড কোম্পানি: ট্রাক, বাজাজ টেম্পো লিমিটেড- ম্যাটাডোর, টেম্পো প্রভৃতি ।
  3. দ্বিচক্র ও ত্রিচক্রযান-
    1. বাজাজ অটো লিমিটেড: পুনে
    2. এনফিল্ড ইন্ডিয়া লিমিটেড: চেন্নাই
    3. হোন্ডা মোটর  লিমিটেড: উত্তরপ্রদেশের বৃহত্তর নয়ডা
  4. প্রতিরক্ষা যান- মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রক ও জার্মানির M.A.N.-এর সহযোগিতায় ভারী ও অধিক শক্তিশালী ট্রাক তৈরির কারখানা স্থাপিত হয় ।

অটোমোবাইল নির্মাণ শিল্প গড়ে ওঠার কারণ

  1. ইস্পাতের সহজলভ্যতা : এই শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হলো উচ্চমানের ইস্পাত যা ভারতের চারটি বৃহদায়তন কারখানা থেকে সহজলভ্য হয় ।
  2. কাঁচামালের প্রাচুর্য : ভারত পেট্রোরসায়ন শিল্পে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করায় এই শিল্প থেকে প্লাস্টিক, পিভিসি, টিউব, টায়ার সহজলভ্য হয়েছে ।
  3. মূলধন : দেশীয় শিল্পপতি গোষ্ঠী এবং হোন্ডা, ফোর্ড প্রভৃতি কোম্পানিগুলো বিপুল মূলধন বিনিয়োগ করে ।
  4. সমৃদ্ধ বাজার : মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সাথে গাড়ির বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে ।
  5. পরিকাঠামোর উন্নতি : সোনালী চতুর্ভুজ, ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রভৃতি নির্মাণ ও উন্নতি হওয়ায় মানুষ বেশি যানবাহন ব্যবহার করছে । উন্নত পরিবহন কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত দ্রব্যের রপ্তানি সহজ হয়েছে ।
  6. এছাড়া  কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা, দক্ষ ও সুলভ শ্রমিক, বিদ্যুৎ-এর সহজলভ্যতা, দক্ষিণ-পশ্চিমের রাজ্যগুলিতে পরিকল্পিত অটোমোবাইল নির্মাণ, এই শিল্পের দ্রুত গতিতে উন্নয়ন ঘটিয়েছে ।

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প

তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের প্রয়োজনভিত্তিক নানান তথ্য বিভিন্ন উপায়ে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া যায় । এই তথ্যপ্রযুক্তি পরিসেবা সংক্রান্ত কাজকর্মকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলে।

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প গড়ে ওঠার কারণ

  1. মানব সম্পদ- মানুষের জ্ঞান হলোতথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মূল সম্পদ ।
  2. প্রশিক্ষণ কেন্দ্র- সারা ভারত জুড়ে অসংখ্য তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের উচ্চমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভারতে মোট 16 টি IIT প্রতিষ্ঠান রয়েছে । সেগুলি নিউ দিল্লি, কানপুর, বারানসি, পাটনা, খড়গপুর, চেন্নাই, মুম্বাই প্রভৃতি স্থানে অবস্থিত এবং ব্যাঙ্গালুরুতে Indian Institute Of Science আছে এছাড়া কোলকাতা এবং পুনেতে Indian Institute of Science Education and Research প্রভৃতি ।
  3. উন্নত পরিকাঠামো- এই শিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রতিটি রাজ্য সরকার পরিকাঠামোর সুযোগ করে দিচ্ছে ।
  4. বিপুল চাহিদা ও বাজার- ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলিতে বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে।
  5. মূলধনের প্রাচুর্য- উদারীকরণ ও বিশ্বায়নের মধ্যে দিয়ে ভারতের এই উদীয়মান শিল্পটিতে বহুজাতিক সংস্থা গুলি বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে শিল্পটির বিকাশ ঘটিয়েছে ।

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বন্টন

  • বেঙ্গালুরু- ভারতের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র হল ব্যাঙ্গালোর । IT শিল্পের উন্নতির কারণে বেঙ্গালুরুকে Silicon Valley Of India বলে । T.C.S, Wipro, Infosys, Tech Mahindra প্রভৃতি ভারতের I.T. শিল্পের মোট রপ্তানি বাণিজ্যের 35% দখল করে ।
  • চেন্নাই- ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের দ্বিতীয় বৃহত্তম কেন্দ্র হল চেন্নাই । এখানে বিশ্বমানের I.T. পরিকাঠামো রয়েছে। Cognizant, TCS, Wipro এর মত শীর্ষ স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা এখানে রয়েছে।
  • হায়দ্রাবাদ- ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম IT হাব হল হায়দ্রাবাদ ।  এখানে মাইক্রোসফট কোম্পানির বৃহত্তম সফটওয়্যার ডেভলপার সেন্টার রয়েছে।
  • কলকাতা- সল্টলেক, রাজারহাট, নিউটাউন প্রভৃতি স্থানে I.T. শিল্পের কেন্দ্রীভবন্ রয়েছে । এখানে রয়েছে T.C.S, Wipro, ITC Infotech, Tech Mahindra ।

ভারতের জনসংখ্যা 

লোকগণনা বা Census এর অর্থ হলো মূল্য নির্ধারণ করা বা কর নির্ধারণ করা । জাতিসংঘের ভাষায় লোকগণনা হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট অঞ্চলে জনসংখ্যার তাত্ত্বিক, আর্থিক এবং সামাজিক তথ্য সংগ্রহ, সংকলন, মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ এবং প্রকাশনার একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া।

প্রতি 10 বছর অন্তর জনগণনা করা হয়। 2011 খ্রিস্টাব্দে জনগণনা ভারতের 15 তম জনগণনা এবং স্বাধীন ভারতের সপ্তম জনগণনা । জনগণনা অনুযায়ী 2011 সালে ভারতের জনসংখ্যা ছিল 121.02 কোটি।

ভারতের জনসংখ্যা সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য

মোট জনসংখ্যা121,01,93,422 জনমহিলা সাক্ষরতার হার65.46%
মোট পুরুষ62,37,24,248 জনকর্মে নিযুক্ত জনসংখ্যা73.85 কোটি
মোটা মহিলা58,64,69,174 জনপ্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল67.74%
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার 17.64%কন্যা সন্তান মৃত্যুর হার

(পাঁচ বছরের নিচে)

64.10%
বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার1.76%পুত্র সন্তান মৃত্যুর হার

(পাঁচ বছরের নিচে)

58.80%
প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা1,04,60,91,423 জনপ্রাথমিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত জনসংখ্যার পরিমাণ31.7%
অপ্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যা16,44,78,150 জনগৌণ ক্ষেত্রে নিযুক্ত জনসংখ্যার পরিমাণ20%
নির্ভরশীল জনসংখ্যা48.04 কোটিপ্রগৌণ ক্ষেত্রে নিযুক্ত জনসংখ্যার পরিমাণ25.4%
সাক্ষরতার হার74.04%অন্যান্য ক্ষেত্রে22.9%
পুরুষ সাক্ষরতার হার 82.14%

জনসংখ্যা বৃদ্ধি 

ভারতবর্ষ একটি জনবহুল দেশ । 1901 সালে ভারতের জনসংখ্যা ছিল 23.84 কোটি যা 2011 খ্রিস্টাব্দে বেড়ে দাঁড়ায় 121.02 কোটি ।

1901-2011 পর্যন্ত ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির 110 বছরকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়:

  1. প্রথম পর্যায় বা নিশ্চল অবস্থা- 1901-21 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিশ্চল ছিল । উচ্চ জন্মহার এবং উচ্চ মৃত্যুহারের কারণে মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় মাত্র 1.29 কোটি ।
  2. দ্বিতীয় পর্যায় বা ধীর বৃদ্ধি অবস্থা- 1921- 51 এই 30 বছরে জনসংখ্যা ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং জনসংখ্যা দাঁড়ায় 27.90 কোটি থেকে 36.11 কোটি ।
  3. তৃতীয় পর্যায় বা জনবিস্ফোরণ- 1951-1981 এই 30 বছরে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় 36.11 কোটি থেকে 68.33 কোটি অর্থাৎ 32.22 কোটি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় ।
  4. চতুর্থ পর্যায় বা ক্রমহ্রাসমান বৃদ্ধি- 1981 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী গতি নিম্নমুখী হতে থাকে । এই বৃদ্ধির হার ছিল 24.66% , যা 2011 সালে কমে দাঁড়ায় 17.64% । এই 30 বছরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে 52.69কোটি ।

ধারণ যোগ্য উন্নয়ন বা স্থিতিশীল উন্নয়ন

পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পদের ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে । ধারণযোগ্য উন্নয়ন বলতে বোঝায়, যখন মানুষ নিজে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বার্থে পরিবেশ অক্ষুন্ন করে এক সামঞ্জস্যপূর্ণ এক দীর্ঘমেয়াদী মানব উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলে । অর্থাৎ যে উন্নয়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য অক্ষুন্ন রেখে, দেশ ও দেশের সার্বিক মঙ্গল করা যায় তাকেই স্থিতিশীল উন্নয়ন বা ধারণযোগ্য উন্নয়ন বলে ।

স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য 1992 খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনিরো শহরে বসুন্ধরা সম্মেলনে 21 দফা কর্মসূচি গৃহীত হয় । এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি কর্মসূচি হলো –

  1. বায়ুমণ্ডলের সুরক্ষা
  2. জনবসতির উন্নয়নে বন্দোবস্ত
  3. দারিদ্র দূরীকরণ
  4. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ
  5. জনসংখ্যা সম্পর্কিত উন্নয়ন ইত্যাদি

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জনবন্টনের তারতম্যের কারণ 

ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে জনসংখ্যা বন্টন সমান নয় । প্রাকৃতিক ও আর্থ সামাজিক তারতম্যের কারণে ভারতের জনবন্টন অসম।

  1. প্রাকৃতিক কারণ- জনসংখ্যার বণ্টনের ক্ষেত্রে ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, নদ-নদী, মৃত্তিকা এবং ভৌগলিক অবস্থান প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে ।
    1. ভূপ্রকৃতি- পার্বত্য অঞ্চল ও মালভূমি অঞ্চলের তুলনায় সমভূমিতে কৃষিকার্য, শিল্পকার্য, পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় লোকবসতির পরিমাণ বেশি হয় ।
    2. জলবায়ু- উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, আর্দ্রতা প্রভৃতি বিষয়গুলো মানুষের খাদ্য, বাসস্থান, পোশাক, জীবিকা প্রভৃতিকে প্রভাবিত করে । সেইদিক থেকে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে উষ্ণ আর্দ্র মৌসুমী জলবায়ুতে কৃষি ব্যবস্থার অধিক উন্নতি ঘটায় এই সব অঞ্চলের জনবসতি দেখা যায়, আবার অন্যদিকে উষ্ণ ও শুষ্ক মরু অঞ্চল এবং হিমালয়ের হিমশীতল জলবায়ুর কারণে এই অঞ্চলগুলি জনবিরল ।
    3. মৃত্তিকা- দোআঁশ, পলি, রেগুর মাটি কৃষি কাজের অত্যন্ত উপযোগী তাই নদী অববাহিকা উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে জনবসতি অধিক, অন্যদিকে অনুর্বর মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে জনবসতি কম ।
    4. নদ-নদী- ভারতের গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু, মহানদী, কৃষ্ণা, গোদাবরী প্রভৃতির নদী অববাহিকায় কৃষি ক্ষেত্রে জলসেচ ও পানীয় জল, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, মৎস্য সংগ্রহ প্রভৃতির সুযোগ সুবিধার কারণে জনবসতি অনেক বেশি ।
    5. ভৌগলিক অবস্থান- সমুদ্র উপকূলের সমভাবাপন্ন জলবায়ু থাকায় জনবসতি বেশি কিন্তু স্থলভাগের অভ্যন্তরে ভাগে চরমভাবাপন্ন জলবায়ুতে জনবসতি ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে ।
    6. বনভূমি- কোনো কোনো অঞ্চলের মূল্যবান ভেষজ ও মোম মধু প্রভৃতি এবং মূল্যবান বৃক্ষ বিক্ষিপ্ত জনবসতি স্থাপনে সাহায্য করে ।
    7. খনিজ দ্রব্য– খনিজ সম্পদ উত্তোলন কেন্দ্রগুলিতে অধিক জনঘনত্ব দেখা যায়। যেমন- ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল ।
  1. অর্থনৈতিক কারণ 
    1. কৃষি- কৃষির মাধ্যমে ভারতের কর্মসংস্থান অনেক বেড়েছে তাই কৃষিকাজের পক্ষে অনুকূল অঞ্চলে জনঘনত্ব বেশি । যেমন- গঙ্গা, সিন্ধু নদীর অববাহিকা অঞ্চলের জনঘনত্ব অনেক বেশি ।
    2. শিল্প- শিল্পাঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় জনঘনত্ব বেশি হয় । যেমন- হুগলি শিল্পাঞ্চল, দুর্গাপুর, আসানসোল, আমেদাবাদ প্রভৃতি ।
    3. পরিবহন ব্যবস্থা- উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা জীবনযাত্রায় অনুকূল প্রভাব বিস্তার করে ।
  1. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণ 
  2. ধর্ম- ধর্মীয় আচার আচরণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধর্মীয় তীর্থস্থানগুলোতে নিবিড় জনবসতি গড়ে উঠেছে। যেমন- তিরুপতি, আজমির, বারানসি ।
  3. শিক্ষা ও সংস্কৃতি– শিক্ষাদীক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা যেখানে বেশি সেখানেই জনঘনত্ব বৃদ্ধি পায় । যেমন- কলকাতা, মুম্বাই, শান্তিনিকেতন।

জনঘনত্বের ধারণা 

প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বসবাসকারী মোট জনসংখ্যাই হল জনঘনত্ব । ভারতের জনঘনত্ব 2011 সালে ছিল 121.02 কোটি/3166414 বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ ভারতের প্রতি বর্গ কিমিতে 382 জন মানুষ বসবাস করে ।

  1. অত্যাধিক জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল (প্রতি বর্গকিমিতে 800 জনের বেশি) : উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, পন্ডিচেরি, দমন ও দিউ, লাক্ষাদ্বীপ এই অঞ্চলের অন্তর্গত ।
  2. অধিক জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল (প্রতি বর্গকিমিতে 401-800 জন) : পাঞ্জাব, ঝাড়খন্ড, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু এবং দাদরা ও নগর হাভেলি ।
  3. মধ্যম জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চল (প্রতি বর্গকিমিতে 201-400 জন) : ওড়িশা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম এই অঞ্চলের অন্তর্গত ।
  4. বিরল জনঘনত্ব যুক্ত অঞ্চল (প্রতি বর্গকিমিতে 101-200 জন) : ছত্রিশগড়, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, নবগঠিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ এবং জম্মু কাশ্মীর, হিমাচলপ্রদেশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত ।
  5. অতি বিরল জনঘনত্ব যুক্ত অঞ্চল (প্রতি বর্গকিমিতে 100 জনের কম) : সিকিম, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এই অঞ্চলের অন্তর্গত ।

নগরায়ণ    

নগরায়ণের মাধ্যমে গ্রামের ক্রমশ শহরে পরিণত হওয়া । অর্থাৎ যখন কোনো গ্রামীণ বসতিতে ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং আধুনিক জীবন যাত্রার সব রকম উপাদানের সুবিধা থাকে তখন গ্রামীণ বসতি তার প্রকৃত চরিত্র হারিয়ে ফেলে এবং শহুরে বসতিতে পরিণত হয়, তাকেই নগরায়ণ বলে ।

জীবনধারণের উপযোগী অনুকুল পরিবেশে জনসমাবেশের ফলে 

শহরনগর গড়ে ওঠার কারণ  

  1. সমভূমির অবস্থান- ভারতের অধিকাংশ শহর সমভূমিতে গড়ে উঠেছে কারণ কৃষি-শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসাশাস্ত্র প্রভৃতির বেশিরভাগ সুযোগ সুবিধা এখানে রয়েছে । অনুকূল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু মানুষের বসবাস ও কর্মের উপযুক্ত হওয়ায় ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের এবং নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিতে অধিকাংশ শহর গড়ে উঠেছে ।
  2. উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা- উন্নত পরিবহনযুক্ত অঞ্চলের শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটে । যেমন- মুম্বাই, বিশাখাপত্তনম প্রভৃতি মহানগর গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রেল জংশন ও বন্দরকে কেন্দ্র করে ।
  3. জলের প্রাপ্যতা- শহর গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ স্বাদু জলের প্রাচুর্য ।
  4. শিল্প- কোন অঞ্চলে বৃহদায়তন শিল্প বা অসংখ্য ছোট ছোট বা অনুসারী শিল্পকে কেন্দ্র করে জনসমাগম বৃদ্ধি পায় । যেমন – দুর্গাপুর, জামশেদপুর ।
  5. ব্যবসাবাণিজ্য কেন্দ্র- যেসব অঞ্চলে ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটে সেই অঞ্চলে কর্মসংস্থানের কারণে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে ।
  6. পর্যটন কেন্দ্র- প্রাকৃতিক দৃশ্য, মনোরম, স্বাস্থ্যকর জলবায়ু প্রভৃতি উপভোগ করার জন্য বহু পর্যটকের সমাগম ঘটে । যেমন- দার্জিলিং, আগ্রা, উদয়পুর ।

ভারতের নগরায়ণের  সমস্যা

ভারতের নগরায়ণ বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কম এবং ধীরগতি সম্পন্ন হলেও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে একাধিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

  1. অপরিকল্পিত নগরায়ণ- গ্রাম থেকে মানুষেরা ক্রমশ শহরমুখী হওয়ায়, শহরতলীর ক্ষেত্রমান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলত অপরিকল্পিত নগরায়ণের সূচনা ঘটছে । ফলে রাস্তাঘাট, নিকাশিব্যবস্থা প্রভৃতির বিপর্যস্ত অবস্থা।
  2. মানুষের শহরমুখী প্রবণতা- শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, বিনোদন, কর্মসংস্থান প্রভৃতিতে সুযোগ পাবার আশায় বিপুল সংখ্যক মানুষের শহরে বাস করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেক্ষেত্রে ক্রমশ বাসস্থানের সমস্যা তৈরী হচ্ছে ।
  3. পরিকাঠামোর অভাব- গ্রাম থেকে মানুষ রোজগারের খোঁজে শহরে এসে বসবাস করার ফলে তাদের নিম্নবিত্ত অঞ্চলে বা বস্তিতে বাসস্থান গড়ে তুলতে হয় ।
  4. নগরায়ণের  ফলে ভারতের বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
  5. অনিয়ন্ত্রিত ও অনিয়মিতভাবে শহরের বৃদ্ধি ঘটায় শহরগুলির পরিবেশ দূষিত হচ্ছে ।
  6. শহরের আয়তন বৃদ্ধির ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষাজনিত নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ।
  7. জনসংখ্যা, বিনোদন, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে এমনকি ভারতে নগরায়ণের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে দূষিত জল নিষ্কাশন-এর ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে ।

ভারতের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

পরিবহন ও যোগাযোগ : স্থানান্তরযোগ্য বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী এবং যাত্রীকে যখন একস্থান থেকে অন্যস্থানে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে পরিবহন বলে । পরিবহনের সাথে যুক্ত পথ, যানবাহন ও সংশ্লিষ্ট নিয়ম-কানুনকে একত্রে পরিবহন ব্যবস্থা বলা হয় এবং তথ্য আদানপ্রদানকে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে ।

পরিবহনের গুরুত্ব : দেশের আর্থসামাজিক সাংস্কৃতিক জীবনের পরিবহনের গুরুত্ব অপরিসীম । পরিবহনের গুরুত্বকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় । যথা-

  1. অর্থনৈতিক গুরুত্ব
    1. শিল্প সম্প্রসারণ- কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত পণ্য বাজারে পাঠানোর জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় ।
    2. কৃষির উন্নতি- কৃষিব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরনের জন্য প্রয়োজন হয় উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার ।
    3. বাণিজ্যিক প্রসার- দেশের পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হলে সেই দেশ তত অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উন্নতি করবে ।
    4. কর্মসংস্থান সৃষ্টি- মানুষের কর্মসংস্থান পরিবহনের উপর নির্ভরশীল।
  1. রাজনৈতিক গুরুত্ব  
    1. দেশের প্রতিরক্ষা- সীমান্তে সেনা, অস্ত্রশস্ত্র, খাদ্য সরবরাহ এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পরিবহনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য ।
    2. জাতীয় ঐক্য ও সংহতির স্থাপন- দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষা ও ধর্ম অবলম্বনে মানুষকে এক সূত্রে গ্রথিত করে উন্নত পরিবহন ।
    3. ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য- বন্যা, ভূমিকম্প কবলিত প্রভৃতি অঞ্চলে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী ও পীড়িতদের উদ্ধারের ক্ষেত্রে উন্নত পরিবহন অত্যন্ত প্রয়োজন ।
  1. সামাজিক গুরুত্ব : দেশ ও বিদেশে যাতায়াতের ফলে শিক্ষা-সংস্কৃতি-প্রযুক্তিবিদ্যা প্রভৃতির আদানপ্রদান ঘটে । শহর এবং নগর গড়ে ওঠার পেছনে পরিবহন ব্যবস্থার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।

পরিবহনের বিভিন্ন মাধ্যম : ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে পৃথিবীর যাবতীয় পরিবহন মাধ্যমকে পাঁচটি  শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয় স্থলপথ, জলপথ, পাইপ লাইন, রজ্জুপথ ও আকাশ পথ ।

রেলপথ : স্থলপথের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবহন হলো রেল পরিবহন । অধিক পণ্য পরিবহন এবং মাঝারি দূরত্বের জন্য রেল পরিবহন অত্যন্ত উপযোগী । রেলপথের দৈর্ঘ্যের বিচারে ভারত এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে ।

ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের রেলপথের গুরুত্ব

  • রেলগাড়ি দ্রুতগামী এবং পরিবহন ব্যয়ও কম। দূরবর্তী স্থানে যাওয়ার জন্য, ভারি পণ্যদ্রব্য প্রেরণের জন্য রেলপথ হল শ্রেষ্ঠ পরিবহন ।
  • ভিন্ন রাজ্য থেকে কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় সার, বীজ, কীটনাশক, ওষুধ আনার জন্য রেলপথে অত্যন্ত কম ব্যয়ে আনা যায় ।
  • ভারতের শিল্পাঞ্চলগুলিতে শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি এবং উৎপাদিত শিল্পদ্রব্য রেলপথের মাধ্যমে বাজারে পাঠানো হয় ।
  • ভারতে বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য যেমন কয়লা, আকরিক লোহা রেলপথে সরবরাহ করা হয়।
  • দেশের অভ্যন্তরে দ্রুত সেনা ও যুদ্ধের সরঞ্জাম পাঠানোর ক্ষেত্রে রেল পরিবহনের উপর নির্ভর করা হয় ।

সড়কপথ : পরিবহন মাধ্যমের মধ্যে সড়কপথ সবথেকে প্রাচীন মাধ্যম ।

পৃথিবীর সড়কপথগুলি তিনটি ভাগে বিভক্ত-

  1. প্রধান রাজপথ
  2. শাখা রাজপথ
  3. গ্রাম্য পথ

1999 খ্রিস্টাব্দের 2 জানুয়ারী, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করতে ভারত সরকার NHAI (National Highways Authority of India)-র তত্ত্বাবধানে 64,639 কোটি টাকা ব্যয়ে 14279 কিলোমিটার জাতীয় সড়কপথকে চার লেন বা ছয় লেনবিশিষ্ট পথে উন্নত করতে তিনটি National Highway Development Project গ্রহণ করেছে । যথা –

  1. সোনালী চতুর্ভুজ : দেশের বৃহত্তম চারটি মেট্রোপলিটন শহর দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতাকে প্রায় 5846 কিমি দীর্ঘ ছয় চ্যানেলবিশিষ্ট জাতীয় সড়ক দ্বারা যুক্ত করা হয়েছে । এটি চতুর্ভুজ আকৃতি বিশিষ্ট । চেন্নাই-কলকাতা বাহু সর্বাধিক দৈর্ঘ্যযুক্ত এবং মুম্বাই চেন্নাই বাহু সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্যযুক্ত ।
  2. উত্তর দক্ষিণ ও পূর্ব পশ্চিম করিডর : উত্তরের শ্রীনগর থেকে দিল্লি-আগ্রা-নাগপুর-হায়দ্রাবাদ-বেঙ্গালুর-মাদুরাই হয়ে সর্ব দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত 4000 কিমি এবং পূর্বে শিলচর থেকে গুয়াহাটি -শিলিগুড়ি -মুজাফফরনগর- গোরক্ষপুর-কানপুর-উদয়পুর পালানপুর হয়ে পশ্চিমে পোরবন্দর পর্যন্ত 3300 কিমি এবং সর্বমোট 7300 কিমি দীর্ঘ জাতীয় সড়ক পথকে ছয় চ্যানেলবিশিষ্ট করা হয় ।

জাতীয় সড়কপথ: কেন্দ্রীয় সরকার পরিবহন মন্ত্রীর তথ্য অনুসারে ভারতের জাতীয় সড়কপথের দৈর্ঘ্য 92,851.05 কিলোমিটার । ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় সড়ক হলো NH-7 ।  ভারতের ক্ষুদ্রতম জাতীয় সড়ক হলো NH-47A । লে- লাসা সড়কপথ ভারতের উচ্চতম এবং শের-শাহ সুরিমার্গ হল প্রাচীনতম সড়কপথ ।
রাজ্য সড়ক পথ : যে সড়কপথগুলি রাজ্য সরকার দ্বারা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় তাকে রাজ্য সড়ক পথ বলে ।

ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সড়কপথের গুরুত্ব

  1. অতি দ্রুত গতিতে স্বল্প দূরত্বে এবং সহজভাবে পরিবহন করা যায় সড়কপথের মাধ্যমে।
  2. দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এর গুরুত্ব বেশি ।
  3. সড়কপথে অন্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম। এটির নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ রেলপথের তুলনায় কম।
  4. দুর্গম অঞ্চল অর্থাৎ পার্বত্য অঞ্চলে সড়কপথের মাধ্যমে পরিবহন করা সম্ভব।

আকাশপথ : আকাশপথের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট বিমানবন্দর থেকে এরোপ্লেন, সুপারসনিক জেট, হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দীর্ঘ দূরত্বে নির্দিষ্ট পথে অতি দ্রুত যাত্রী ও পণ্য স্থানান্তর এবং সামরিক প্রয়োজন পূরণ করা হয় ।

ভারতের বিমানবন্দর গুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে –

  • জাতীয় বিমানবন্দর
  • আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

ভারতের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

  1. কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  2. গুয়াহাটির গোপীনাথ বরদলুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  3. অমৃতসরের রাজা সানসী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  4. দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  5. আমেদাবাদের সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  6. জয়পুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  7. নাগপুরের ডঃ আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  8. মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  9. হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  10. বেঙ্গালুরু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  11. চেন্নাইয়ের আন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  12. কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  13. তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  14. কোঝিকোড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  15. শ্রীনগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
  16. পানাজির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

ভারতের উল্লেখযোগ্য জাতীয় বিমানবন্দর

অন্ধ্রপ্রদেশ :  তিরুপতি বিমানবন্দর, বিজয়ওয়াড়া বিমানবন্দর

অসম : ডিব্রুগড় বিমানবন্দর, তেজপুর বিমানবন্দর

বিহার : মুঙ্গের বিমানবন্দর

ছত্রিশগড় : স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দর

দিউ : দিউ বিমানবন্দর

গুজরাট : ভদোদরা বিমানবন্দর, সুরাট বিমানবন্দর

হরিয়ানা : হিসার বিমানবন্দর

হিমাচল প্রদেশ : সিমলা বিমানবন্দর

জম্মু ও কাশ্মীর : জম্মু বিমানবন্দর

ঝাড়খন্ড : সোনারী বিমানবন্দর

মধ্যপ্রদেশ : দেবী অহল্যাবাই হোলকার বিমানবন্দর

ত্রিপুরা : আগরতলা বিমানবন্দর

জলপথ : স্টিমার, জাহাজ, লঞ্চ বিভিন্ন জলযানের সাহায্যে নদী, খাল, হ্রদ, সাগর, মহাসাগরের মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

জলপথকে তার অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  • অভ্যন্তরীণ জলপথ
  • সামুদ্রিক জলপথ

ভারতের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর : ভারতে বন্দরের সংখ্যা ২০০ টি। প্রধান বন্দর সংখ্যা হলো ১৩ টি।

পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলি হলো-

  • মহারাষ্ট্র : জওহরলাল নেহেরু বন্দর, মুম্বাই বন্দর
  • গুজরাট : কান্ডালা বন্দর
  • কেরল : কোচিন বন্দর

পূর্ব উপকূলের বন্দরগুলি হলো

  • পশ্চিমবঙ্গ : কলকাতা-হলদিয়া বন্দর
  • ওড়িশা : পারাদ্বীপ বন্দর
  • তামিলনাড়ু : চেন্নাই বন্দর
  • অন্ধ্রপ্রদেশ : বিশাখাপত্তনম

অন্যান্য পরিবহনের ব্যবস্থা

রজ্জুপথ : দুর্গম অঞ্চল অথবা পার্বত্য অঞ্চলে পরিবহনের ক্ষেত্রে রজ্জুপথ অত্যন্ত উপযোগী কারণ এই পথে পাহাড়ের চড়াই-উৎরাই পথ অতিক্রম করতে হয় না এবং শ্রম, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয় । ভারতবর্ষের কালিংপং, চেরাপুঞ্জি, দার্জিলিং বিভিন্ন স্থানে রজ্জুপথ আছে । ভারতে ১১০টি রজ্জুপথ আছে।

পাইপলাইন : বর্তমান যুগে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেলের খনি থেকে তেল ও স্বাভাবিক গ্যাস তেলশোধনাগারগুলিতে পাঠানোর জন্য এবং সেখান থেকে শোধন করে বন্দর বা শিল্পকেন্দ্রগুলিতে পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। 1906 খ্রিস্টাব্দে, ডিগবয় থেকে তিনসুকিয়া পর্যন্ত ভারতের প্রথম খনিজ তেল পরিবহনের জন্য পাইপলাইন স্থাপিত হয় যা 28 কিমি দীর্ঘ ।

পাতাল রেল : ভারতের ভূগর্ভে পরিবহনের ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে প্রথম এবং পৃথিবীর 75তম পাতাল রেল হলো কলকাতা মেট্রোরেল । এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার একটা সিংহভাগকে যানজটমুক্ত পরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিদিন গন্তব্যস্থলে নির্বিঘ্নে পৌঁছানো যায়, পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, আবহাওয়ার প্রভাব থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত অবস্থায় ভ্রমণ সম্ভব হবে এবং দৈনন্দিন দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে ।

আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা

যোগাযোগের মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে আঙ্গিক, বাচনিক ও লিখিত ভাষার দ্বারা ঘটনা দৃষ্টিভঙ্গি ও আবেগের আদান-প্রদান ঘটানো হয় এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বোধগম্য বার্তা, তথ্য, মতামত, নির্দেশ, উপদেশ ও পরামর্শ প্রেরণ ও গ্রহণ করা হয় । এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা মূলক কাজ ।

সেলফোন : এটি  সর্বপ্রথম চালু হয় 1985 খ্রিস্টাব্দে । এটি একটি চলমান টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা যা তারবিহীন উপগ্রহ নেটওয়ার্কচালিত উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন ।

ইন্টারনেট : এর অর্থ হলো অন্তর্জাল, এটি কম্পিউটারগুলোকে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে একসূত্রে সংযুক্ত করার ব্যবস্থা । সমগ্র বিশ্বজুড়ে পরস্পর-সংযুক্ত যাবতীয় কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমন্বয়ন ।

ই-মেইল : প্রথম এ-মেইল চালু হয় 1971 খ্রিস্টাব্দে। এর অর্থ হলো বৈদ্যুতিক বার্তা । এটি একটি উচ্চ পর্যায়ের সফটওয়্যার প্যাকেজ যা ব্যবহারকারীকে তথ্য, ছবি, চিত্র,পাঠ্যলিপি ইত্যাদি ব্যক্তিকে পাঠাতে সাহায্য করে।

ওয়েবসাইট : কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার তৈরি ওয়েবপেজগুলির সংগ্রহ বা সমাবেশ হলো ওয়েবসাইট । আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যান্য মাধ্যম গুলি হল  সাইবার স্পেস, ডিজিটাল যোগাযোগ, GPS, GIS ।

আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে

প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি

Here you will learn the basics of CHAPTER 5 – ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ BHARATER ORTHONOITIK PORIBESH in a simple language it is for Bengali medium students who are studying under West Bengal Board of Secondary Education and preparing for their exam (Class 9 WBBSE) Here you will find all necessary and important WBBSE Madhyamik Suggestions, notes, solved sample question paper in Bangla along with video lectures from expert teachers

SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of BHARATER ORTHONOITIK PORIBESH

1 MARKS QUESTIONS of BHARATER ORTHONOITIK PORIBESH

  • কোথায় ভারতীয় টি’ বাের্ডের সদর দপ্তর অবস্থিত?

উত্তর : কলকাতায়।

  • কোথায় ভারতীয় কফি বাের্ডের সদর দপ্তর অবস্থিত? 

উত্তর : বেঙ্গালুরুতে।

  • ভারত পৃথিবীতে চা রপ্তানিতে কততম স্থান অধিকার করেছে ? 

উত্তর : চতুর্থ স্থান।

  • কত রকমের চা চাষ পৃথিবীতে হয়ে থাকে? 

উত্তর : চার রকমের। (কালো চা–ভারত, সবুজ চা-চিন ও জাপান, ইস্টক চা – রাশিয়া এবং ওলং চা— তাইওয়ান)।

  • কত রকমের কফি পৃথিবীতে উৎপন্ন হয়?

উত্তর : চার রকমের। (আরবীয় কফি—ব্রাজিল ও ভারত, রােস্টা কফি–পশ্চিম আফ্রিকা, লাইবেরিয়া কফি, জামাইকা কফি)।

  • কাকে বিশুদ্ধ কাচামাল বলে? 

উত্তর : যেসকল কাচামাল শিল্পজাত করার পর উৎপন্ন দ্রব্যের ওজন এক থাকে তাকে বশুদ্ধ কাচামাল বলে।

  • কাকে অবিশুদ্ধ কাচামাল বলে? 

উত্তর : যেসকল কঁচামাল শিল্পজাত করার পর উৎপন্ন দ্রব্যের ওজন কমে যায় তাকে বিশ্ব কাচামাল বলে।

  • ভারতের কোথায় প্রথম ইস্পাত কারখানা স্থাপিত হয় ? 

উত্তর : 1830 সালে তামিলনাড়ুর পাের্টোনােভােতে।

  • ভারত লৌহ-ইস্পাত উৎপাদনে পৃথিবীতে কততম স্থান অধিকার করে। 

উত্তর : পঞম (চিন প্রথম)।

  • ভারত বক্স উৎপাদনে ও রপ্তানিতে পৃথিবীতে কততম স্থান অধিকার করে?  

উত্তর : উৎপাদনে—প্রথম এবং রপ্তানিতে দ্বিতীয়।

  • হাওড়ার ঘুসুড়িতে (ফোর্ট গ্লাস্টার) কত সালে ভারতের প্রথম কার্পাস শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠে?  

উত্তর : 1818 সালে।

  • কাকে ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার বলে? 

উত্তর : আমেদাবাদকে। (উত্তর ভারতের কানপুরকে, দক্ষিণ ভারতের কোয়েম্বাটোরকে)।

  • কাকে ভারতের বয়নশিল্পের রাজধানী বলে?

উত্তর : মুম্বইকে।

  • কোনটি ভারতের বৃহত্তম ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের নাম ? 

উত্তর : বিশাখাপত্তনম (হিন্দুস্তান শিপইয়ার্ড লিমিটেড)।

  • ভারতে পৃথিবীর মােট জনসংখ্যার কত শতাংশ বসবাস করে? 

উত্তর : 17:5% (চিন 19:4%)।

  • 5 হাজারের বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট অঞ্চলকে কী নামে পরিচিত?

উত্তর : শহর

  • কোনাে শহরের জনসংখ্যা ১ লক্ষের বেশি হলে, তা কী নামে পরিচিত? 

উত্তর : নগর।

  • কোনাে শহরের জনসংখ্যা 10 লক্ষের বেশি হলে, তা কী নামে পরিচিত? 

উত্তর : মহানগর।

  • কোন মহানগরের জনসংখ্যা 1 কোটির বেশি হলে তা কী নামে পরিচিত? 

উত্তর : মেগাসিটি।

Multiple Choice Questions of BHARATER ORTHONOITIK PORIBESH – 1 marks

  1. একটি খারিফ শস্যের উদাহরণ হল –
  • গম 
  • যব 
  • ধান 
  • তৈল বীজ

উত্তর : c) ধান।

  1. একটি রবি শস্যের উদাহরণ হল –
  • পাট 
  • ইক্ষু 
  • তুলো 
  • গম

উত্তর : d) গম।

  1. একটি জায়িদ শস্য হল –
  • আউশ ধান
  • আমন ধান
  • রবার
  • যব

উত্তর : a) আউশ ধান।

  1. একটি বাগিচা ফসল হল –
  • কার্পাস
  • চা
  • ভূট্টা
  • ডাল

উত্তর : b) চা।

  1. ভারতের একটি অর্থকরী ফসল হল –
  • ধান
  • গম
  • পাট
  • জোয়ার

উত্তর : c) পাট।

  1. রবি শস্য চাষ হয় –
  • গ্রীষ্মকালে
  • বর্ষাকালে
  • শরৎকালে
  • শীতকালে

উত্তর : d) শীতকালে।

  1. “ তৃষ্ণার্ত ফসল “ হল – 
  • পাট
  • ইক্ষু
  • ধান
  • গম

উত্তর : c) ধান।

8.ভারতে সর্বাধিক জলসেচ এর প্রয়োজন হয় যে ফসল উৎপাদনে – 

  • পাট 
  • তুলো 
  • গম
  • ধান

উত্তর : c) গম।

  1. ভারতের হেক্টর প্রতি গম উৎপাদনে যে রাজ্য প্রথম –
  • পাঞ্জাব
  • উত্তর প্রদেশ
  • বিহার
  • রাজস্থান

উত্তর : a) পাঞ্জাব।

10.সোনালিকা হল একধরনের উচ্চফলনশীল –

  • ধান বীজ
  • গম বীজ
  • পাট বীজ
  • কার্পাস বীজ

উত্তর : b) গম বীজ।

  • এদের মধ্যে কোনটি দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তম বস্ত্রবয়ন কেন্দ্র?

ক) মাদুরাই

(খ) চেন্নাই

গ)কোয়েম্বাটোর

ঘ) ভিলাই

Ans. গ

  • কোথায় TISCO অবস্থিত?

ক) জামসেদপুরে 

খ) ভদ্রাবতীতে

গ) ভিলাই-এ

ঘ) হলদিয়াতে

Ans. ক

  •  কোন লৌহ-ইস্পাত কারখানা কয়লাখনির নিকটবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে? 

ক)দুর্গাপুর

খ) রাউরকেল্লা

গ)ভিলাই

ঘ) বিশাখাপত্তনম

Ans. ক

  • এদের মধ্যে ভারতের সবথেকে বেশি উৎপাদন ক্ষমতাবিশিষ্ট লৌহ-ইস্পাত কারখানাটি কি?

ক) জামসেদপুর

খ)ভিলাই

গ) বিশাখাপত্তনম

ঘ) হলদিয়া

Ans. খ 

  • এদের মধ্যে কোনটি চেন্নাই-এ অবস্থিত বৃহদায়তন ট্রাক নির্মাণ কারখানা ?

ক) মারুতি

খ) ফোর্ড

গ) অশােক লেল্যান্ড লিমিটেড

ঘ) টাটা মােটরস্ 

Ans. গ

  •  কোথায় ভারতে রেল বগি তৈরি করা হয়?

ক) বারাণসীতে

খ) ব্যাঙ্গালুরুতে

গ) পেরাম্বুরে

(ঘ) ভোপাল

Ans. গ

  •  ভারতের কোথায় ডিজেল ইঞ্জিন নির্মাণের কারখানা অবস্থিত?

ক) কানপুরে

খ) এলাহাবাদে

গ) বারাণসীতে

(ঘ) হায়দ্রাবাদে

Ans.  (ঘ) বারাণসীতে

৯. এশিয়ার মধ্যে ভারত কার্পাস বস্ত্র উৎপাদনে কততম স্থান অধিকার করে?

(ক) প্রথম স্থান

(খ) দ্বিতীয় স্থান

(গ) তৃতীয় স্থান

(ঘ) চতুর্থ স্থান অধিকার করে।

Ans.  (গ) তৃতীয় স্থান

১০. কোন জায়গাকে ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান কেন্দ্র বলা হয় ?

(ক জামসেদপুর

(খ) মুম্বাই

গ) আমেদাবাদ

ঘ) হুগলী

Ans. গ) আমেদাবাদ

1.বর্তমানে ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার

(a) দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী

(b) ধীরে ধীরে উধ্বমুখী

(c) নিম্নমুখী

(d) স্থিতিশীল

উত্তরঃ (c) নিম্নমুখী

  1. জনঘনত্বের বিচারে রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম

(a) উত্তরপ্রদেশ

(b) বিহার

(c) কেরল

(d) পশ্চিমবঙ্গ

উত্তরঃ (b) বিহার

  1. ভারতের জনঘনত্ব কম

(a) সিকিমে

(b) গােয়াতে

(c) রাজস্থানে

(d) অরুণাচল প্রদেশে

উত্তরঃ (d) অরুণাচল প্রদেশে

  1. ভারতে জনগণনা হয় প্রতি

(a) 5 বছর অন্তর

(b) 10 বছর অন্তর

(c) 15 বছর অন্তর

(d) 20 বছর অন্তর

উত্তরঃ (b) 10 বছর অন্তর

  1. ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়

(a) লাক্ষাদ্বীপে

(b) চণ্ডীগড়ে

(c) দিল্লি-তে

(d)পণ্ডিচেরী-তে

উত্তরঃ (c) দিল্লি-তে

6.2011 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুসারে ভারতের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে

(a) 340 জন

(b) 362 জন

(c) 324 জন

(d) 382 জন

উত্তরঃ (d) 382 জন

  1. বর্তমান ভারতে প্রতি হাজার পুরুষে নারীর সংখ্যা

(a) 940 জন

(b) 950 জন

(c) 933 জন

(d) 1,040 জন

উত্তরঃ (a) 940 জন

  1. প্রতি হাজার পুরুষে মহিলার সংখ্যা সর্বাধিক যে রাজ্যে

(a) পশ্চিমবঙ্গে

(b) বিহারে

(c) কেরলে

(d) অসমে

উত্তরঃ (c) কেরলে

  1. ভারতের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য হল

(a) বিহার

(b) পশ্চিমবঙ্গ

(c) উত্তরপ্রদেশ

(d) কেরল

উত্তরঃ (c) উত্তরপ্রদেশ

  1. ভারতের সর্বাধিক সাক্ষর রাজ্য হল

(a) বিহার

(b) কেরল

(c) কর্ণাটক

(d) মহারাষ্ট্র

উত্তরঃ (b) কেরল

১.কোনটি স্থলপথ পরিবহনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম?

ক) রেলপথ

খ) মেট্রো

গ) সড়কপথ

ঘ) ট্রাম

Ans. ক

২.কোথায় ভারতীয় রেলের সদর দপ্তর অবস্থিত?

ক) দিল্লী

খ) কলকাতা

গ) মুম্বাই

ঘ) ব্যাঙ্গালোের

Ans. ক

৩.মােট রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ভারতে কত?

ক) ১.২০ লক্ষ কিমি

খ) ১.১৫ লক্ষ কিমি

গ) ১.১০ লক্ষ কিমি

ঘ) ১.০৫ লক্ষ কিমি

Ans. খ

৪.ভারতের অর্থনীতির ধমনীস্বরূপ হচ্ছে জাতীয় _________  ।

ক) রেল

খ) সড়ক

গ) জলপথ

(ঘ) আকাশপথ

Ans. ক

৫.ভারতীয় রেলপথের স্থান দৈর্ঘের ভিত্তিতে পৃথিবীতে কত ?

ক) প্রথম

খ)তৃতীয়

গ)দ্বিতীয়

ঘ)চতুর্থ

Ans. ঘ

৬.কোথায় ভারতের পূর্ব রেলপথের সদর দপ্তর অবস্থিত?

ক) কলকাতা

খ) ভুবনেশ্বর

গ) গুয়াহাটি

ঘ) আসানসােল

Ans. ক

৭. কটি মেট্রো শহরকে সােনালী চতুর্ভুজের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে?

ক) ৪

খ) ৫

গ) ৬

ঘ) ৭

Ans. ক

৮.এদের মধ্যে কাদের কাছে রাজ্য সড়ক পথের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকে?

ক)Central Govt.

খ)State Govt.

গ) Local Govt.

ঘ)Municipalities

Ans. খ

৯.পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যসড়ক পথের মোট সংখ্যা কত? 

ক) ১৫

খ) ১৭

গ) ১৯

ঘ) ২১

Ans. গ

১০. কোনটি ভারতের সবথেকে বড় বন্দর ?

ক) মুম্বাই বন্দর

খ) হলদিয়া বন্দর

গ) চেন্নাই বন্দর

ঘ) কান্ডালা বন্দর

Ans. ক

Short Questions of BHARATER ORTHONOITIK PORIBESH – 2-3 marks

  • জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি কাকে বলে ? 

ANS- যে কৃষিব্যবস্থায় কৃষক তার নিজ পরিবারের খাদ্যের প্রয়ােজন মেটানাের উদ্দেশ্যে খাদ্যশস্যের চাষ করে, তাকে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই চাষের প্রাধান্য বেশি।

  • নিবিড় বা প্রগাঢ় কৃষি কাকে বলে ?

ANS- যে কৃষিব্যবস্থায় প্রচুর শ্রম ও পুঁজি বিনিয়ােগ করে একই জমিতে বছরে বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়, তাকে নিবিড় বা প্রগাঢ় কৃষি বলে। অধিক জনসংখ্যা হওয়ায় এই কৃষিব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

  • বাগিচা কৃষি কাকে বলে ? 

ANS- বৈদেশিক মুলধন ও সংগঠনের সহায়তায় প্রধানত দেশীয় শ্রমশক্তির সাহায্যে যে কৃষিব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তাকে বাগিচা কৃষি বলে। উৎপাদিত ফসলগুলি হলাে চা, কফি, রবার, নারকেল, কলা, তামাক, মশলা ইত্যাদি।

  • খারিফ, রবি ও জায়িদ শস্য কাকে বলে ? 

ANS- যেসব ফসল জুন-জুলাই মাসে রােপণ করা হয় এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফসল তােলা হয়, তাকে খারিফ শস্য বলে। যেসব ফসল অক্টোবর-নভেম্বর মাসে রােপণ করা হয় এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফসল তােলা হয়, তাকে রবি শস্য বলে। যেসব ফসল গ্রীষ্মকালে চাষ করে বর্ষার শুরুতে ফসল কাটা হয়, তাদের জায়িদ শস্য বলে।

  • সবুজ বিপ্লব কাকে বলে ? 

ANS- 1960 সালে ভারতে উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহার, ভৌগােলিক পরিবেশ অনুযায়ী কৃষি পদ্ধতি অবলম্বন, রাসায়নিক সার ব্যবহার, ‘অঞ্চল্পমেয়াদি ফসল, কৃষিঋণের সহজলভ্যতা, সেচের সুবিধা ইত্যাদি দ্বারা কৃষিক্ষেত্রে যে ব্যাপক অগ্রগতি হয়, তাকেই সামগ্রিকভাবে সবুজ বিপ্লব বলে। 

  • অর্থকরী ফসল কাকে বলে ? 

ANS- যেসব ফসল বাজারে বিক্রি করে বা বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়, তাদের অর্থকরী ফসল বলে। যেমন – চা, পাট, তামাক ইত্যাদি।

  • তদ্ভুজাতীয় ফসল কী?

ANS- যেসব চুল আঁশ বা তন্তু সংগ্রহের জন্য বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়, তাদের জাতীয় ফসল বলে। যেমন—পাট, তুলা ইত্যাদি।

  • হর্টিকালচার শস্য কাকে বলে ? 

ANS- যে বড়ো বড়াে শহর, নগর ও মহানগরের দৈনন্দিন শাকসবজি, ফলমূলের চাহিদা মেটানাের জন্য শহরতলি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে যে চাষাবাদ করা হয়, তাকে হর্টিকালচার বলে।

  • সােনালি পানীয় কাকে বলে ? 

ANS- ক্রান্তীয় ও উপক্ৰান্তীয় পার্বত্য অঞ্চলে চা উৎপাদন করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবে তা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়, তাই একে সােনালি পানীয় বলে।

  • বিশুদ্ধ ও অবিশুদ্ধ কাচামাল কাকে বলে ? 

ANS- যে সমস্ত কাচামালের ওজন ও উৎপন্ন শিল্পজাত দ্রব্যের ওন সমান থাকে, তাদের বিশুদ্ধাচামাল বলে। যেমন—তুলাে, পাট, পশম ইত্যাদি। যে-সমস্ত কঁাচামালের ওজন ও উৎপন্ন শিল্পজাত দ্রব্যের ওজন সমান থাকে না, হ্রাস পায়, তাদের অবিশুদ্ধ কাচামাল বলে। যেমন-লােহা, তামা, আখ, চা ইত্যাদি।

  • পণ্যসূচক কী? 

ANS- কোনাে শিল্প ব্যবহৃত কাঁচামালেয় শুভন ও উৎপাদিত শোয়া ওজনের | অনুপাতকে বলা হয় পণাসূচক। পণ্যসূচকের মান 1-এর কম হলে বিশুদ্ধ আর 1-এর বেশি হালে অবিশুদ্ধ হয়।

  • ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প কী ? 

ANS- যেসকল শিল্পে লৌহ-ইস্পাতকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, কলকবজা, যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়, তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে।

  • অনুসারী শিল্প কাকে বলে ? 

ANS- কোনাে বহদায়তন শিল্পের উপর ভিত্তি করে যখন পাশাপাশি অসংখ্য ছােটো শিল্প গড়ে ওঠে, তাকে অনুসারী শিল্প বলে। যেমন—পেট্রোরসায়ন শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যের উপর ভিত্তি করে হলদিয়াতে অনেক অনুসারী শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।

  • উদীয়মান শিল্প কাকে বলে ? 

ANS- বর্তমানে পেট্রোরসায়ন শিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদা হু হু করে বেড়েই চলেছে। এই শিল্পের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। তাই এই শিল্পকে উদীয়মান শিল্প বলে। খনিজ তেল শােধনাগারের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অসংখ্য শিল্পের বিকাশ একসাথে হয় বলে এদের আধুনিক শিল্পের দানব বলে।

  • আমেদাবাদকে ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার কেন বলা হয় ? 

ANS- ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কাশায়ার শহরের ম্যাখ্রেস্টারে আমদানিকৃত তুলার উপর ভিতি করে অসংখ্য বস্ত্রশিল্প গড়ে উঠেছে। ঠিক তেমনি ভারতের গুজরাট রাজ্যের ‘আমেদাবাদ শহারে স্থানীয় তলার উপর ভিত্তি করে অসংখ্য বস্ত্রশিল্প গড়ে উঠেছে। তাই আমেদাবাদকে বলা হয় ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার।

  • দুর্গাপুরকে ভারতের রুঢ় বলা হয় কেন?

ANS- জার্মানির রাইন নদীর উপনদী বুঢ় উপত্যকায় উন্নতমানের কয়লার উপর ভিত্তি করে লৌহ-ইস্পাত শিল্প, ইভিনিয়ারিং শিল্প গড়ে উঠেছে। ঠিক তেমনি ভারতের দামােদর নদের তীরে রানিগঞ্জ ও ঝরিয়া কয়লাখনির উপর ভিত্তি করে অসংখ্য লৌহ-ইস্পাত শিক্ষা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে উঠেছে। তাই রুঢ় শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করে দুর্গাপুরকে বলা হয় ভারতের রূঢ়।

  • Footloose Industry বা শিকড় আলগা শিল্প কী ?

ANS- কার্পাসবয়ন শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলে। এই শিল্পের মুখ্য কাঁচামাল হলাে বিশুদ্ধ প্রকৃতির। এর পণ্যসূচকের মান 1। এই শিল্প উৎপাদক অঞ্চল ও বাজারের মধ্যবর্তী। সুবিধামতাে যেকোনাে জায়গায় গড়ে উঠতে পারে। তাই এই শিল্পকে বলা হয় শিকড় আলগা শিল্প।

  • SAIL কী?

ANS- 1973 সালে ভারত সরকার লৌহ-ইস্পাত শিল্পের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে Steel Autliority of India Limited নামক সংস্থা স্থাপন করে। এই সংস্থার সদর দপ্তর কলকাতা (পূর্ব ভারতের), দিল্লি (সমগ্র ভারতের)

  • আউট সাের্সিং কাকে বলে ? 

ANS- এ সস্তা, সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের সাহায্যে বহুজাতিক সংস্থাগুলির ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় আউট সাের্সিং।

  • বেঙ্গালুরুকে ভারতের সিলিকন ভ্যালি কেন বলা হয় ?

ANS- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান্টা ক্লারা ভ্যালি অঞ্চলে সিলিকন | ভিত্তিক ইলেকট্রনিকের সর্বাধিক বিকাশ ঘটেছে। ঠিক তেমনি ভারতের কর্নাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে সিজি বতে সিলিকনভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সর্বাধিক সমাবেশ দেখা যায়, তাই লালুরুকে ভারতের সিলিকন ভ্যালি বলা হয়।

Long Questions of BHARATER ORTHONOITIK PORIBESH – 5 marks

  • সংক্ষেপে ভারতীয় কৃষির সমস্যা ও সমাধান লেখাে। 

সমস্যা :

i) উন্নত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির অভাব।

ii) কৃষি প্রশিক্ষণ ও গবেষণার অভাব।

iii) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর অধিক নির্ভরশীলতা।

  1. iv) উন্নতমানের বীজ ও রাসায়নিক সারের অভাব।
  2. v) জলসেচের সুবন্দোবস্তের ‘অভাব।

সমাধান :

i) বেশি করে কৃষি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

ii) কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।

iii) সরকারি উদ্যোগে কৃষিজ দ্রব্য বাজারজাত ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

iv) উন্নতমানের সার ও বীজের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

  • কেন ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এত উন্নত হলাে ?

ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প উন্নত, কারণ—

i) ভারতে এই শিল্পের অতিদ্রুত উন্নতি  হওয়ায় দেশ ও বিদেশে চাহিদা অত্যন্ত বেড়েছে।

ii) কম্পিউটারে দক্ষ মেধাসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা বেশি।

iii) এই শিল্পে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযােগ থাকায় সরকার সংস্থাগুলিকে বিশেষ ছাড় দিয়েছে।

iv) সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

v)  এই শিল্পে প্রয়ােজনীয় শ্রমিকের জোগানের জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

  • সড়কপথের ও রেলপথ গুরুত্ব ও সুবিধা কী ?

সড়কপথের গুরুত্ব ও সুবিধা :

i) খুব দ্রুত ও সুলভ পরিবহণ ব্যবস্থা।

ii) স্বল্প দূরত্বে খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছানাে সম্ভব।

iii) বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে যাতায়াতের সুবিধা।

iv) নিরাপদ ভ্রমণ, আর্থিক সমৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে এই পথের গুরুত্ব অপরিসীম।

রেলপথের গুরুত্ব ও সুবিধা :

i) একসঙ্গে বহু পণ্য পরিবহণ করা সম্ভব। খুব |

ii) পুত ও সহজেই পরিবহণ করা যায়।

iii) ভ্রমণ অনেক বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য।

iv) পণ্য মত ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আছে।

  • জনঘনত্বে বৈশিষ্ট্যগুলি কী ? 

জনঘনত্ব হলাে কোনাে দেশের মােট জনসংখ্যাকে সেই দেশের মোট জমির পরিমাণ দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় । 

এর বৈশিষ্ট্যগুলি হলো – 

i) এর থেকে কোনো অঞ্চলের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান সহজে বােঝা যায়।

ii) এটি কোনাে অঞ্চলের জনসংখ্যার আধিক্য বা স্বল্পাহাকে সূচিত করে।

iii) জনঘনত্ব সর্বদা পূর্ণমানে প্রকাশ করা হয়।

  • ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যাগুলি কী ? 

ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যাগুলি হলাে—

i) শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির উপর প্রতিকুল প্রভাব পড়ে।

ii) বেকারত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পায়।

iii) জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে খাদ্যের সমস্যা দেখা দেয়।

iv)  জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জমির উপর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে।

v) জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মাথাপিছু উৎপাদন কম হয়।

vi) অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশ পিছিয়ে পড়ে।

vii) জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জমির উপর ক্রমাগত চাপ বাড়ে।

  • গুরুত্ব লেখাে – বহুমুখী নদী পরিকল্পনা । 

নদীকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য যে পরিকল্পনা করা হয়। তাকে বহুমুখী বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলে।

এই পরিকল্পনার গুরুত্ব হলাে-

i) খারিফ শস্য ও রবি শস্যের মধ্যে পার্থক্য লেখাে।

ii) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন

iii) পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তােলা ইত্যাদি।

iv) জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতি, ও মাছ চাষ, ও জলপথে পরিবহণ

v) ভূমিক্ষয় রােধ

vi) পানীয় জল সরবরাহ

vii)  বন্যা নিয়ন্ত্রণ |

  • রবি শস্য ও খারিফ শস্যের মধ্যে পার্থক্য লেখ |
বিষয় রবি শস্য খারিফ 
উৎপাদন হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেশি হেক্টরপ্রতি উৎপাদন কম
সময়কাল অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চাষ হয় জুন-জুলাই মাসে চাষ হয়
জলসেচ  জল সেচের ওপর নির্ভর মৌসুমী বায়ুর উপর নির্ভর
উৎপাদিত ফসল গম,  বোরো ধান, সরিষা  ইত্যাদি আমন ধান,  পাট, কার্পাস,  ইত্যাদি 
  • যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য লেখ |
বিষয় যোগাযোগ পরিবহন
সময় দ্রুত যোগাযোগ করা সম্ভব সময় অনেক লাগে
সংস্থা এক  স্থান থেকে অন্য স্থানে তথ্য আদান-প্রদান কে বলা হয় যোগাযোগ |যাত্রী  ও পণ্যদ্রব্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরকে পরিবহন বলে |
মাধ্যম চিঠিপত্র,  টেলিফোন,  কম্পিউটার,  টিভি,  ইত্যাদিবাস,  ট্রেন,  জাহাজ  ইত্যাদি 
  • অশুদ্ধ কাঁচামাল ও বিশুদ্ধ কাঁচামাল এর মধ্যে পার্থক্য লেখ |
বিষয় অশুদ্ধ কাঁচামাল বিশুদ্ধ
শিল্পের অবস্থান অশুদ্ধ কাঁচামাল শিল্প কাঁচামাল এর কাছে গড়ে উঠতে পারে বিশুদ্ধ কাঁচামাল শিল্প  যেকোনো জায়গায়  গড়ে উঠতে পারে
ওজন কাঁচামালের ওজন শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যের  ওজন অপেক্ষা  কম হয় কাঁচামালের ওজন শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যের  ওজন  এর সমান হয়
পণ্য সূচক এরপর সূচক এর মান 1 এর বেশি হয় এর পণ্য সূচক এর মান 1 এর কম হয়
  • ভারতের কয়েকটি মোটর গাড়ি নির্মাণ সংস্থার নাম লেখ | 
সংস্থা কেন্দ্র যানবাহন
টাটা মোটরস লিমিটেডজামশেদপুর ট্রাক,  টেম্পো, বাস,  মালগাড়ি |
মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা কোম্পানি লি. মুম্বাই ট্রাক, জীব,  মটর গাড়ি| 
অশোক লেল্যান্ড লিমিটেড চেন্নাইলেল্যান্ড কার্মট, জাম্বাে, হিপাে।
মারুতি উদ্যোগ লিমিটেড গুরগাঁও ( বৃহত্তম)অল্টো, ওয়াগন, ভার্সা, জিপসি।
প্রিমিয়ার অটোমোবাইলস লিমিটেড মুম্বাইদেগােন্তে ফার্গো, প্রিমিয়ার রােডমাস্টার ট্রাক
স্বরাজ মাজাদা লিমিটেড সুজাপুর (  উ. প্র.)ছােটো ট্রাক
  ভলভো ইন্ডিয়া লিমিটেড বেঙ্গালুরুভারী ট্রাক
  এনফিল্ড ইন্ডিয়া লিমিটেড চেন্নাইবুলেট, ক্ৰশেডার মােটর সাইকেল।
হিরো মোটকরপ লিমিটেড ধারেহেরামােটর সাইকেল, স্কুটার, মােপেড।
হোন্ডা ( ইন্ডিয়া)  লি.  মেনেসরমােটর সাইকেল।
ইয়ামাহা  এস্কর্ট  সুরজপুরমােটর সাইকেল।

 

error: Content is protected !!
Scroll to Top

আজকেই কেনো পরীক্ষার শর্ট নোটস

এখন সহজে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও – আজকেই ডাউনলোড করো পিডিএফ বা বই অর্ডার করো আমাজন বা ফ্লিপকার্ট থেকে