আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে
- প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics গুলো সহজভাবে. এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
- দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
- তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
- চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি
সারসংক্ষেপ
অজিত দত্তের রোমান্টিক মন তাঁর ‘নোঙর’ কবিতার মাধ্যমে সাত সমুদ্রে পাড়ি দিতে চেয়েছেন। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না কারণ কবির বাস্তব জীবনের ক্ষেত্রে তটের কিনারে নোঙর পড়ে গেছে অর্থাৎ জীবনের দায়দায়িত্ব ও মায়ার বন্ধনে কবির মন বাঁধা পড়ে আছে। আবার সুদূরের হাতছানি কবিকে ক্রমশ চঞ্চল করে তোলে। নোঙরের বন্ধন অর্থাৎ দায়দায়িত্ব ও মায়ার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য তিনি সারারাত দাঁড় টানেন এবং জীবনকে স্বপ্নের জগতে নিয়ে যাবার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যান। বিভিন্ন কল্পনা-ইচ্ছে প্রভৃতি জোয়ারের ঢেউয়ের মত কবির মনের দুয়ারে মাথা ঠুকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। জোয়ারের পরেই আসে ভাটার শোষণ অর্থাৎ ধীরে ধীরে কবি নিশ্চেষ্ট, নিরুৎসাহ এবং ব্যর্থ হয়ে পড়েন। জগৎসংসার জোয়ারভাঁটায় বাঁধা তাই কবির বাণিজ্যতরী অর্থাৎ জীবিকাময় জীবন বাঁধা পড়ে আছে। কবির জীবন যেহেতু সংসারজীবনে বন্ধন তাই কবি চাইলেও সেই সংসারের বন্ধন ছিন্ন করতে পারেন না এবং বন্ধনমুক্ত জীবনের স্বপ্ন দেখলেও তা সম্ভবপর হয়না। শেষমেশ চারিদিকের নির্জনতায় কবির বুক কেঁপে ওঠে রাগে-অভিমানে এবং ব্যর্থতায়। এমনকি সময়ের স্রোতও কবিকে বিদ্রুপ করে। আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে কবির হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে সুদূরের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য।
জীবনের সমস্ত সম্পদ নিয়ে কবি সাতসাগরে পাড়ি দিতে চান । কিন্তু প্রতি পদে পদে বাঁধা আসা সত্ত্বেও কবির স্বপ্ন দেখা থামেনি। ‘নোঙর’ কবিতার মধ্য দিয়ে জীবনের গন্ডিবদ্ধ জীবন থেকে মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং সেই আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ না হওয়ার বেদনা প্রকাশিত হয়েছে।
নামকরণের তাৎপর্য
সাহিত্যের নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোনো সাহিত্যের শিরোনামেই তার মূল আভাস খুঁজে পাওয়া যায়। আর সেই শিরোনাম কখনো চরিত্রকেন্দ্রিক কখনো ঘটনাকেন্দ্রিক আবার কখনো বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে। ঠিক তেমনই কবিতার নামের মধ্যেই কবিতার মূলভাব বা ব্যঞ্জনার আভাস থাকে।
‘নোঙর’ শব্দটি ফারসি ‘লঙ্গর’ শব্দ থেকে এসেছে। ‘নোঙর’ প্রকৃত অর্থ হলো নৌকাকে জলের মধ্যে বেঁধে রাখার ভারী বস্তুবিশেষ। আলোচ্য কবিতায় ‘নোঙর’-এর মাধ্যমে মানবজীবনের বন্ধনের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ সম্পর্ক, কর্মজীবন, দায়িত্ব, কর্তব্যবোধের যে বাঁধন তার কথা বলা হয়েছে।
যাঁরা সাধারণত ভাবুক, রোমান্টিক, সৃষ্টিশীল তাঁরা বাস্তব সংসারের বাঁধন ছিঁড়ে অজানার উদ্দেশ্যে সাতসমুদ্রপারে পাড়ি দিতে চান। কিন্তু কর্মময়-দায়িত্ব- কর্তব্যবোধের নোঙরে তা বাঁধা পড়ে যায়। কবির সৃষ্টিশীল মনও কল্পনার জগৎ ও কঠিন বাস্তবের জগতের সঙ্গে সংঘাত করে। আসলে কবি মেনে নিতে পারেননা দৈনন্দিন জীবনের সীমাবদ্ধতা। কিন্তু আবার এই সীমাবদ্ধতা অর্থাৎ নোঙরের বাঁধনও তিনি ছিন্ন করতে পারেননা। তাই কবির জীবন চিরকাল নোঙরে বাঁধা পড়ে থাকে।
আলোচ্য কবিতায় ‘নোঙর’ বন্ধনের প্রতিশব্দ হয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ, সবদিক থেকে বিচার করে বলা যায় যে, কবিতাটির ‘নোঙর’ নামকরণ যথোপযুক্ত ও সার্থক হয়েছে।
SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of পরিমাপ PORIMAAP
1 MARKS QUESTIONS of নোঙর- (Nongor)
1) ‘নোঙর’ কবিতাটি যে মূলগ্রন্থের অন্তর্গত তার নাম লেখো।
উত্তর: ‘নোঙর’ কবিতাটি কবি অজিত দত্তের যে মূলগ্রন্থের অন্তর্গত তার নাম “সাদা মেঘ কালো পাহাড়”(১৯৭০)।
2) অজিত দত্ত কোন সময়ের কবি?
উত্তর: অজিত দত্ত বিংশ শতাব্দীর ত্রিশ-চল্লিশ দশকের কবি।
3) কবি অজিত দত্তের দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো?
উত্তর:- কবি অজিত দত্ত রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হল- কুসুমের মাস (১৯৩০), ও পাতালকন্যা (১৯৩৮)।
4) অজিত দত্ত কোন বিখ্যাত পত্রিকাগোষ্ঠীর কবি ছিলেন?
উত্তর:- অজিত দত্ত ‘কল্লোল’ পত্রিকাগোষ্ঠীর কবি ছিলেন।
5) অজিত দত্তের সমকালীন দুজন বিখ্যাত কবির নাম লেখো?
উত্তর:- কবি অজিত দত্তের সমসাময়িক দুজন বিখ্যাত হলেন বুদ্ধদেব বসু এবং প্রেমেন্দ্র মিত্র।
6) “পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে”- কবি কীসের মাধ্যমে পাড়ি দিতে চান?
উত্তর:- কবি নৌকার মাধ্যমে দূর সিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চান।
7) দূর সিন্ধুপারে’ পাড়ি দিতে চেয়েও কবি ব্যর্থ হন কেন?
উত্তর:- দূর সিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চেয়েও কবি ব্যর্থ হন কারণ তাঁর নৌকার নোঙর তটের কিনারে পড়ে গেছে।
8) “সারারাত মিছে দাঁড় টানি”-সারারাত দাঁড় টানা কেমন করে মিছে হয়ে যায়?
উত্তর:- কবির নৌকা তটের কিনারে নোঙরে বাঁধা পড়েছে,দাঁড় টেনে তাকে এগোনো যায় না।
9) “জোয়ারের ভেউগুলি ফুলে ফুলে ওঠে”- জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে উঠে কী করে?
উত্তর:- জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে ওঠে আর কবির নৌকায় মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে ছুটে যায়।
10) “ তারপর ভাটার শোষণ” কখন ভাটার শোষণ শুরু হয়?
উত্তর:-জোয়ারের সময় শেষ হলে তারপর ভাটার শোষণ শুরু হয়।
11) “ তারপর ভাটার শোষণ”-ভাটার শোষণ কী করে?
উত্তর:- “ভাটার শোষণ” স্রোতের প্রবল প্রাণ আহরণ করে অর্থাৎ জলপ্রবাহের তীব্রগতিকে স্তিমিত করে।
12) “আমার বাণিজ্য তরী বাঁধা পড়ে আছে।”-কবির বাণিজ্য তরি কোথায় কীভাবে বাঁধা পড়ে আছে?
উত্তর:- জোয়ারভাটায় বাঁধা তটের কাছে কবির বাণিজ্যতির নোঙর বাঁধা পড়ে আছে।
13) ‘নোঙর’ কবিতায় দাঁড় টানা ও মাস্তুলে পাল বাঁধা সত্ত্বেও কী হলো না এবং কেন হলো না?
উত্তর:- উত্তর দাঁড় টানা ও মাস্তুলে পাল বাঁধা সত্ত্বেও নৌকা এগোয় না,নোঙরের কাছিতে বাঁধা পড়ে আছে।
multiple choice questions – 1 marks of নোঙর- (Nongor)
2) ‘নোঙর’ কবিতাটি অজিত দত্তের যে কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত,সেটি হল—
A) কুসুমের মাস B) ছায়ার আলপনা C) শাদা মেঘ কালো পাহাড় D) নষ্ট চাঁদ
উত্তরঃ) নষ্ট চাঁদ
3) সাহিত্যাজীবনে আজিত দত্ত যে ছদ্মনামটি ব্যবহার করতেন,সেটি হল—
A.যাযাবর B.শ্রিপান্থ C.অ.দ. D.রৈবতক
উত্তরঃ) রৈবতক
4) “পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে / নোঙর গিয়েছে পড়ে—”
A) সমুদ্রজলে B) ঘাটের কিনারে C) নদীর তটে D) তটের কিনারে
উত্তরঃ) তটের কিনারে
5) ‘দূর নিন্ধুপারে’ কবি কী করতে চান?
A) পাড়ি দিতে B) যাত্রা করতে C) রওনা দিতে D) নৌকা ভাসাতে
উত্তরঃ) পাড়ি দিতে
6) “পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে…”–দূর সিন্ধুপারে পাড়ি দিয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি হল—
প্রবল বর্ষা নেমেছে
ভাটার কারণে যাত্রা রাখতে হয়েছে বন্ধ রাখতে হয়েছে
নৌকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে
তটের কিনারার নোঙর পড়ে গেছে
উত্তরঃ) তটের কিনারার নোঙর পড়ে গেছে।
7) গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে কী পড়ে গেছে?
A) দাঁড় B) নোঙর C) পাল D) মাস্তুল
উত্তরঃ) নোঙর
8) নোঙর’ কবিতায় কবি দূর সিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চান, কারন—
সেখানেই তাঁর বাড়ি
তিনি সেখানে ব্যাবসাবাণিজ্য করতে উৎসাহী
সেখানকার মানুষই তাঁর বাণিজাতরিতে বোঝাই করা জিনিসের মূল্য বোঝে
সেখানে ব্যাবসা করার লাভ প্রচুর
উত্তরঃ) তিনি সেখানে ব্যাবসাবাণিজ্য করতে উৎসাহী
9) ‘নোঙর’ কবিতায় সারারাত কবি কী করেন?
A.স্বপ্ন দেখেন B.মিছে দাঁড় টানেন C.জেগে থাকেন D.নিদ্রামগ্ন থাকেন
উত্তরঃ) মিছে দাঁড় টানেন
10) “সারারাত মিছে দাঁড় টানি”—– এই মিছে দাঁড় টানার অর্থ কী?
কবি কখনোই নোঙরের বন্ধন ছিন্ন করতে পারবেন না
কবি দাঁড় টানার উপযুক্ত কৌশল জানেন না
দিকের নিশানা না করে দাঁড় টানার কোনো অর্থ নেই
নৌকায় দাঁড় টেনে টেনে সপ্তসিন্ধু পাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়
উত্তরঃ) কবি কখনোই নোঙরের বন্ধন ছিন্ন করতে পারবেন না
11) “ফুলে ফুলে ওঠে”—-কী ফুলে ফুলে ওঠে?
A.জোয়ারের জল B. নৌকার পাল C.জোয়ারের ঢেউগুলি D.হৃদয়ের উচ্ছ্বাস
উত্তরঃ) জোয়ারের ঢেউগুলি
12) “এ-তরীতে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে তারা ছোটে।”—কারা ছোটে?
A. জোয়ারের জ লB.নৌকার পাল C.জোয়ারের ঢেউগুলি D.হৃদয়ের উচ্ছ্বাস
উত্তরঃ) জোয়ারের ঢেউগুলি
13) মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে তারা ছোটে।”—’তারা’ কোথায় মাথা ঠোকে?
A.নৌকার গলুইয়ে B.উড়ন্ত পালে C.মাস্তুলে D.কবির নৌকায়
উত্তরঃ) কবির নৌকায়
14) “তারপর ভাটার শোষণ” ভাটার শোষণ কী করে?
A.তরিকে দুলিয়ে দেয় B.তরিকে দূরে নিয়ে যায়
C.স্রোতের প্রবল প্রাণ আহরণ করে D.এ তরিতে মাথা ঠোকে
উত্তরঃ) স্রোতের প্রবল প্রাণ আহরণ করে
15) স্রোতের প্রবল প্রাণ করে আহরণ।”-কে আহরণ করে?
A.জোয়ারের ঢেউগুলি B. ভাটার শোষণ C.তটের বালি D.সমুদ্রের হাওয়া
উত্তরঃ) ভাটার শোষণ
16) “স্রোতের প্রবল প্রাণ করে আহরণ।”—” আহরণ” শাব্দের অর্থ হল—
A.সংগ্রহ B.আহবান C. উপরে ওঠা D. উত্তরণ
উত্তরঃ) সংগ্রহ
17) “আমার বাণিজ্য-পরী বাঁধা পড়ে আছে।”—-কোথায় বাঁধা পড়ে আছে?
A.তটের কাছে B.সমুদ্রের কাছে C.নোঙরের কাছে D.নদীর কাছে
উত্তরঃ) তটের কাছে
18) “জোয়ার-ভাটায় বাঁধা —কী?
A.এ নৌকা B.এ নদী C.এ কাছি D.এ তট
উত্তরঃ) এ তট
19)”এ -তটের কাছে’ কী ‘বাঁধা পড়ে আছে”?
A.মুহূর্তগুলি B.বানিজ্যাতরি C.স্বপ্নগুলি D.ঢেউগুলি
উত্তরঃ) বানিজ্যাতরি
20) “… যতই মাস্তুলে বাঁধি পাল …”—– কবি মাস্তুলে পাল বাঁধেন যাতে—
দাঁড় টানার সুবিধা হয়।
ভাটার সময়েও নৌকো ভেসে চলে যেতে পারে
হাওয়ার গতিতে নৌকোর চলা সহজ হয়
বাণিজ্যতরি মাস্তুলে পাল বেঁধেই জলে নামে
উত্তরঃ) হাওয়ার গতিতে নৌকোর চলা সহজ হয়
21) “… বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল।”- নৌকা কাঁসে বাঁধা?
A.নদীতটে B.কাছিতে C.নোঙরের কাছিতে D.নোঙরে
উত্তরঃ) নোঙরের কাছিতে
22)” নোঙরের কাছি বাঁধা তবু ও নৌকা চিরকাল ।”— চিরকাল নোঙরের কাছি বাঁধা থাকার অর্থ—
কবির ইচ্ছে থাকলেও নোঙরের কখন ছিন্ন করার উপায় নেই
কবির একার পক্ষে এই বন্ধন ছিন্ন করা অসম্ভব
নোঙরের কাছির বন্ধন ছিন্ন করা জোয়ার কিংবা ভাটা—কোনো সময়েই সম্ভব নয়
প্রকৃতির কাছে মানুষ নিতান্ত অসহায়
উত্তরঃ) কবির ইচ্ছে থাকলেও নোঙরের কখন ছিন্ন করার উপায় নেই
23) “.. সাগরগর্জনে ওঠে কেঁপে” — কী কেঁপে ওঠে?
A.নিস্তব্ধ রাতগুলি B.নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি C.নৌকার পালগুলি D.হৃদয়ের স্বপ্নগুলি
উত্তরঃ) নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি
24) ‘নিষদ্ধ মুহুর্তগুলি’ কাঁসের জন্য কেঁপে ওঠে?
A.নদীর ঢেউয়ে B.প্রবল বাতাসে C.জোয়ারের ধাক্কায় D.সাগরগর্জনে
উত্তরঃ) সাগরগর্জনে
25) “স্রোতের বিদ্রূপ শুনি প্রতিবার—”
A.নদীর ঢেউয়ে B.নোঙরের কাছিতে C.দাঁড়ের নিক্ষেপে D.জোয়ারের আগমনে
উত্তরঃ) দাঁড়ের নিক্ষেপে
26) “স্রোতের বিদ্রূপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।”–কবিকে স্রোতের বিদ্রুপ শুনতে হয়, কেননা—
তিনি দাঁড় দিতে জলরাশিতে আঘাত করেছেন
নোঙর পড়ে থাকায় তিনি স্রোতের বিরুদ্ধে এগোতে পারেননি
কবি স্রোতে গা ভাসাতে পারেননি।
কবির দাঁড় টানা মিথ্যে হয়ে গেছে
উত্তরঃ) নোঙর পড়ে থাকায় তিনি স্রোতের বিরুদ্ধে এগোতে পারেননি
27) “তারার দিকে চেয়ে” কবি কীসের নিশানা করেন?
A.গন্তব্যের B.দিকের C.জীবনের D.ভবিষ্যতের
উত্তরঃ) দিকের
28) কিসের দিকে চেয়ে কবি দিকের নিশানা করেন?
A.তারার B.চাঁদের C.তটের D.জোয়ারের
উত্তরঃ) তারার
29) “বিরামহীন এই দাঁড় টানা।”–এই দাঁড় টানা বিরামহীন,কেননা–
দাঁড় টানা কখনোই সফল হয় না
কবির এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেটা কখনোই ফুরিয়ে যায় না
কবি ভাগোর কাছে পরাজিত হয়েছেন
কবি জানেন, এভাবে একদিন নোঙরের বন্ধন কখন ছিন্ন করা যাবে
উত্তরঃ) কবির এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেটা কখনোই ফুরিয়ে যায় না
30) “তারী ভরা পন্য নিয়ে” কবি কোথায় পাড়ি দিতে ছেয়েছিলেন?
A. নতুন দেশে B.সপ্তসিন্ধুপারে C.অজানা সমুদ্রে D.দূরের বন্দরে
উত্তরঃ) সপ্তসিন্ধুপারে
31) তরিতে কী নিয়ে কবি পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন?
A.পন্য B.যাত্রী C.পুস্তক D.নোঙর
উত্তরঃ) পন্য
32) “তরী রা পণ্য নিয়ে পাড়ি দিতে”- এই “তরী ডরা পণ্য’ প্রকৃতপক্ষে—
A.কবির ঘরের জিনিসপত্র B.দুর্মূল্য রত্ন-অলংকার
C.ব্যাবসার সামগ্রী D.বাস্তব জীবনের বাইরের স্বপ্ন
উত্তরঃ) বাস্তব জীবনের বাইরের স্বপ্ন
short questions – 2-3 marks of নোঙর- (Nongor)
1) “নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে। ” এখানে কবির আক্ষেপ কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর:- অজিত দত্তের লেখা ‘‘নোঙর’’ কবিতায় কবি একজন সুদূরের পিয়াসি। তাঁর মধ্যে একটি চঞ্চল মন রয়েছে যা অজানা-অচেনার উদ্দেশ্যে দূর সাতসমুদ্রে পাড়ি দিতে চায়। কিন্তু বাস্তব জীবনের নানান কর্মের মাঝে তার কবিমন বাঁধা পড়ে আছে। ব্যক্তিজীবনের দায়দায়িত্বে তিনি বাধা পড়ে আছেন। সংসারের বিভিন্ন দায়িত্ব কর্তব্যে তাঁর দৈনন্দিন জীবন বাঁধা পড়ে আছে। কবির রোমান্টিক মন সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে ছুটে চলে যেতে চায় স্বপ্ন ও কল্পনার মায়াবী জগতে। কিন্তু মন চাইলেও বাস্তব জীবনকে উপেক্ষা করে সেখানে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়।
2) “সারারাত মিছে দাঁড় টানি / মিছে দাঁড় টানি।”—দাঁড় টানাকে কবি মিছে বলেছেন কেন?
উত্তর:- অজিত দত্তের লেখা ‘‘নোঙর’’ কবিতায় সুদূরে অবস্থিত সুন্দর স্বপ্নময় রূপকথার দেশের কল্পনা, কবির মনকে প্রতি মুহূর্তে চঞ্চল করে তোলে, কিন্তু বাস্তবে সেখানে পৌঁছোনো কবির পক্ষে কখনোই সম্ভব হয় না। তবুও কবির সুদূরের পিয়াসি মন অনেক আশা নিয়ে সারারাত ধরে কল্পনার জাল বুনে চলে। কিন্তু সচেতন কবি জানেন, ‘নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে’ অর্থাৎ জীবনের নৌকা সংসারের দায়দায়িত্বে বাঁধা পড়ে রয়েছে । সে নৌকা আর চলবে না। তাই সেই নৌকার দাঁড় টানার কোনো মানে হয় না।
3) “এ-তরীতে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে তারা ছোটে।” পঙক্তিটির অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:- পঙক্তিটি অজিত দত্তের লেখা ‘‘নোঙর’’ কবিতার অংশ। কবি দূর সিন্ধুপারে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে চেয়েছেন বন্ধনমুক্ত জীবন খুঁজে পাওয়ার আশায় । কিন্তু তাঁর জীবনতরি সংসারের দায়দায়িত্বের কর্মময় বাস্তবতার নোঙরে বাধা পড়েগিয়েছে। জোয়ারের ঢেউ যখন কবির নৌকায় ঘা দিয়ে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে চলে তখন কবিও সেই সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যেতে চেয়েছেন । কিন্তু তা সম্ভব নোই কারণ সংসারের বিভিন্ন দায়িত্ব কর্তব্যে তিনি আবদ্ধ। কবির এই স্থিতিশীল জীবনে গতিশীল ঢেউগুলি নানান স্বপ্ন-ইচ্ছে-কল্পনার প্রতীক। এ বন্ধন থেকে কবির জীবন-নৌকাকে মুক্ত করতে চেয়ে তারা ব্যর্থ হয়ে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে ছুটে চলে যায়।
4) “তারপর ভাঁটার শোষণ / স্রোতের প্রবল প্রাণ করে আহরণ।”—” স্রোতের প্রবল প্রাণ করে আহরণ”-স্রোতের প্রবল প্রাণ আহরণ করা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তর:- উদ্ধৃতাংশটি অজিত দত্তের লেখা ‘‘নোঙর’’ কবিতার অংশ। আমরা জানি জোয়ারের সময়ে নদীর জল ফুলে ওঠে আর ভাটার সময় সেই জল নেমে যায়। ভাটার টান জোয়ারের স্রোতের প্রবল শক্তিকেও দুর্বল করে দেয়। কবি অজানার উদ্দেশ্যে দূর সাত সমুদ্রে পাড়ি দিতে চান। কবির জীবনতরি সংসারের ঘাটে বাঁধা । কবির বুকে সকল বন্ধনমুক্ত এক উচ্ছশৃঙ্খল জীবনের আশা জাগে। সেই আশা জোয়ারের ঢেউয়ের মতো ফুলে ফুলে ওঠে। কিন্তু পরমুহূর্তেই তা বাস্তবের আঘাতে, ভাটার শোষণের মতোই কবির সকল আশা-উৎসাহকে ক্ষীণ করে দেয়।
5) “আমার বাণিজ্য-ভরী বাঁধা পড়ে আছে।” -বাণিজ্যতরির প্রসঙ্গ কেন এসেছে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর:- অজিত দত্তের লেখা ‘‘নোঙর’’ কবিতায় ব্যাবসা-বাণিজ্যের সাথে লাভ ক্ষতির বিষয়টি বিশেষভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আমাদের জীবন জীবিকার জালে আটকে পড়েছে । প্রাচীন ও মধ্যযুগে সৌদাগররা বাণিজ্যের কারণে তরি নিয়ে দূর দেশে পাড়ি দিতেন । এছাড়া এই বাণিজ্যে পণ্যের আমদানি-রপ্তানির সাথে সংস্কৃতিরও আদানপ্রদান চলত। কবি কোনো সাধারণ সদাগর নন, তাই তাঁর তরিতে রয়েছে সাহিত্যেরসম্ভার। কবির সেই স্বপ্ন-কল্পনা-সাহিত্যে ভরা তরি নিয়ে পাড়ি দিতে চান সুদূর সাতসমুদ্র তীরের পারে, দূরদূরান্তে ছড়িয়ে দিতে চান তাঁর সৃষ্টি সত্তাকে। তাই এখানে বাণিজ্যতরির প্রসঙ্গ এসেছে।
6) “নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল।”- নৌকা কেন চিরকাল নোঙরের কাছিতে বাঁধা?
উত্তর:-অজিত দত্তের লেখা ‘‘নোঙর’’ কবিতায় বর্ণিত, মানুষ সাধারণত সামাজিক ও সাংসারিক জীব। দৈনন্দিন জীবনের সমাজ সংসারের বিভিন্ন কর্তব্য ও দায়িত্বের বন্ধনের মাঝেমানুষ সর্বদা জড়িত। আমাদের দৈনন্দিন জীবন ব্যস্ত, কর্মময়। বাস্তবের এই সকল সংঘাতের কারণে জীবনের অনেক স্বপ্ন-কল্পনাই অসম্পূৰ্ণ থেকে যায়। কবির জীবনও বাস্তব সংসারের এই বন্ধনে চিরকালের মত বন্দি। কিন্তু এইপ্রকার সৃষ্টিশীল মানুষের একটা কল্পনাপ্রবণ চঞ্চল মন থাকে যে মন বারবার বাস্তবের সকল বন্ধন ছিন্ন করে দূর অজানা-অচেনার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে চায়। এই সকল কারণেই কবির জীবনতরি সংসারের তটের কিনারে বাস্তবের দায়িত্ব কর্তব্যের নোঙরে চিরকাল বাঁধা পড়ে থাকে ।
7) “স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।”- ‘স্রোতের বিদ্রূপ’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর:-অজিত দত্তের লেখা ‘‘নোঙর’’ কবিতায়, কবি নৌকা নিয়ে দূর সমুদ্রপারে পাড়ি দিতে চেয়েছেন কিন্তু তাঁর সেই নৌকো তটের কিনারে নোঙরে বাঁধা পড়ে গেছে। কবির মন সকল বাধা অগ্রাহ্য করে দাঁড় নিক্ষেপ করে চলেছে । প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে যে শব্দ উঠে আসে তাতে যেন স্রোতের করা বিদ্রুপের প্রকাশ পায় । স্রোত গতিশীল হলেও, কবির জীবনতরি আটকা পড়ে রয়েছে। কবি চাইলেও সাংসারিক বন্ধন ছিন্ন করে সুদূরের আহবানে নৌকা ভাসাতে পারছেন না। তাই স্রোত কবির স্থিতিশীলতাকে ব্যঙ্গবিদ্রুপের দ্বারা আঘাত চলেছে।
long questions – 5 marks of নোঙর- (Nongor)
1)’নোঙর’ কবিতাটির মর্মার্থ নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:- কবি অজিত দত্ত তাঁর কবিজীবনের অতৃপ্তির কথা ‘নোঙর’ কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। কবির সৃষ্টিশীল মন পাড়ি দিতে চেয়েছেন সুদূর অজানা-অচেনা জগতে । কিন্তু তটভূমিতে তাঁর নৌকার নোঙর তাঁর অজান্তেই পড়ে গেছে। কবির জীবনের নানান স্বপ্ন ইচ্ছে-কল্পনার প্রতীকস্বরূপ জোয়ারের ঢেউগুলি তাঁর নৌকায় আঘাত করে সমুদ্রের দিকে ছুটে চলে যায়। কিন্তু ভাটার টানে খানিক বাদেই সেই প্রবল স্রোত দুর্বল হয়ে যায়। বাস্তবরূপী তটের কাছে এই জীবনটাও যেন জোয়ারভাটায় বাধা। কখনও আশার জোয়ার আবার কখনও নিরাশার ভাটা। কবি তা জেনেও বৃথা সারারাত অনবরত দাঁড় টেনে চলেন।
কিন্তু কবির চঞ্চল মন এক জায়গায় বাঁধা চায় না অথচ কিন্তু কবি সাংসারিক মানুষ। জীবন-জীবিকার গন্ডির মধ্যে তাঁকে আবদ্ধ থাকতে হয়। নানা রকম সম্পর্কের মায়া , কাজের বন্ধন, দায়িত্ব-কর্তব্যের বেড়াজালের মধ্যে কবির জীবননৌকাকে নোঙরের কাছিতে বেঁধে রেখেছে। তবু সুদূরের হাতছানি তাঁকে উতলা করে তোলে, কিন্তু বৃথা চেষ্টা, বিফলতা তাঁকে হতাশ করে। এভাবেই একজন সৃষ্টিশীল মানুষ বাস্তব ও কল্পনার সংঘাতে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হন।
2) ‘নোঙর’ কবিতায় কবিজীবনের অপূর্ণতার বেদনা কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে, বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:- কবি অজিত দত্ত ছিলেন বাস্তব জীবনের সীমানা পার করে সুদূর পিয়াসি স্বল্প-কল্পনাময় এক রোমান্টিক মনের মানুষ, অচেনা-অজানা সুদূর জগৎ যেন তাঁকে হাতছানি দেয়, তাকে ব্যাকুল করে তোলে। কিন্তু তাঁর জীবননৌকা তটের কিনারে নোঙরে বাঁধা পড়েছে। সংসারের বিভিন্ন দায়িত্ব কর্তব্যে তাঁর দৈনন্দিন জীবন আবদ্ধ হয়েগিয়েছে। তাই কবির আক্ষেপ-
“পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে
নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।
সারারাত মিছে দাঁড় টানি,
মিছে দাঁড় টানি,”
কবির স্বপ্ন-ইচ্ছে-কল্পনার প্রতীক হয়ে জোয়ারের ঢেউগুলি যেন নৌকায় মাথা ঠুকে দূর সমুদ্রে চলে যায়। প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে কবি শোনেন ‘স্রোতের বিদ্রুপ’। বাস্তবের তটে জীবিকার তাগিদ, সম্পর্কের মোহমায়া আর হাজার প্রয়োজনীয় কাজের বন্ধনে যেহেতু কবির এই জীবনতরি বাঁধা তাই মন চাইলেও কবি এই সাংসারিক বন্ধন ছিন্ন করে সুদূরের আহবানে নৌকা ভাসাতে পারেন না।
তাই কবি বলেন –
“যতই না দাঁড় টানি, যতই মাস্তুলে বাঁধি পাল,
নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল”
কবিমনের চাওয়ার সাথে পাওয়া প্রাপ্তির এই পার্থক্য এবং জীবনের অপূর্ণতার বেদনা আলোচ্য কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে ।
3) ‘নোঙর’ একটি প্রতীকী কবিতা – আলোচনা করো।
উত্তর:- ইংরেজিতে প্রতীককে ‘Symbol’ বলে। যখন চিহ্নের দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ হয় তখন তাকে প্রতীক বলে। কবি অজিত দত্ত নানা প্রতীকের মাধ্যমে ‘নোঙর’ কবিতায় নিজের হৃদয়ের অনুভূতির বর্ণনা করেছেন । বন্ধনের প্রতীক হিসেবে তিনি ‘নোঙর’কে আর পরিচিত বাস্তবজগতকে নদীর তটের প্রতীকরূপে কবিতায় ব্যবহার করেছেন। বাস্তবজগতের বাইরের জগৎকে তিনি ‘দূর সিন্ধুপার’ বা ‘সপ্তসিন্ধুপার’ বলে বর্ণনা করেছেন। আর সেই সুদূর কাল্পনিক জগতে পাড়ি দিতে চেয়েও কবির জীবননৌকা নোঙরে বাঁধা পড়েছে। জোয়ারের ঢেউগুলিই কবির জীবনের সকল স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকস্বরূপ। আর সেই ঢেউগুলি কবির মনের দুয়ারে মাথা ঠুকে ব্যর্থ হয়ে পুনরায় সমুদ্রের দিকে ছুঁটে চলে যায়।
কবিও সেই দূর সমুদ্রে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন । কিন্তু তাকে বেঁধে রেখেছে যেন বাস্তবজীবনের নানা সম্পর্কের সূত্র। আশা নিরাশার প্রতীকস্বরূপ জোয়ারভাটা হল জীবনের উত্থানপতন । নোঙর যেমন স্থিতিশীল এক বন্ধন, তেমনি স্রোত হল গতিশীলতার প্রতীক।
‘বাণিজ্য’, ‘পণ্য’ এগুলি হল লাভক্ষতিময় জীবন-জীবিকা ও সৃষ্টিসম্পদের প্রতীক। এভাবেই এক একটি প্রতীকের ইটের দ্বারা গঠিত হয়েছে আলোচ্য কাব্যপ্রাসাদের ব্যাঞ্জনা । তাই সবদিক বিচার করে বলা যায় ‘নোঙর’ একটি আদর্শ প্রতীকী কবিতা ।
4)”নোঙর গিয়েছে, পড়ে তটের কিনারে।”—নোঙর এখানে কীসের প্রতীক? কবি নৌকা নিয়ে কোথায় যেতে চান? কবির আকাঙ্ক্ষা ও আক্ষেপ কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর:- উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত হয়েছে কবি অজিত দত্ত রচিত ‘নোঙর’ কবিতা থেকে। এখানে নোঙর হল জীবনের বিভিন্ন বন্ধন বা স্থিতিশীলতার প্রতীক।
- কবি নৌকা নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে সুদূর সাতসমুদ্র পার যেতে চান । কবি বাস্তবের বন্ধনকে ছিন্ন করে অনেক দূরে এক অচেনা-অজানা কল্পনালোকে পাড়ি দিতে চান । প্রাচীন ও মধ্যযুগের সওদাগরদের মতো কবিও তাঁর সাহিত্যসম্ভারে পরিপূর্ণ নৌকা ভাসিয়ে দিতে চান। রোজকার একঘেয়ে কর্মময়, সংসার জীবনের দায়-দায়িত্ত্বের বন্ধনময় জীবন থেকে ছুটি নিয়ে তিনি দূর অজানা-অচেনা দেশে পাড়ি দিতে চায়।
- কবির প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও সাতসমুদ্র পারে পাড়ি দিতে পারেননা কারণ কবির ভাবুক মন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় । মন চাইলেও উদার উন্মুক্ত প্রকৃতির ডাকে কবি সাড়া দিতে পারেন না। একঘেয়ে কর্মময়, সাংসারিক জীবন কবিকে বেঁধে রাখে। স্রোতের গতিও কবির বন্ধনকে প্রবল বিদ্রূপ করে, কিন্তু কবি অসহায় নিরুপায়। এই দাঁড় টানা বৃথা জেনেও তিনি একনাগারে দাঁড় টেনে চলেন। আর তাই কবির তীব্র আক্ষেপ—
“ তরী ভরা পণ্য নিয়ে পাড়ি দিতে সপ্তসিন্ধুপারে,
নোঙর কখন জানি পড়ে গেছে তটের কিনারে।
সারারাত তবু দাঁড় টানি
তবু দাঁড় টানি”।
এভাবেই আকাঙ্ক্ষার অসম্পূর্ন্নতা ও আক্ষেপের বেদনা ‘নোঙর’ কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে।
5) “নোঙরর কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল।”- কোন নৌকা? ‘তবু’ শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী? নৌকা চিরকাল বাঁধা কেন?
উত্তর:- অজিত দত্তের লেখা ‘‘নোঙর’’ কবিতায় বর্ণিত যে নৌকায় কবি সাতসাগরের পাড়ে পাড়ি দিতে চান এখানে সেই নৌকার কথা বলা হয়েছে। এই নৌকাকে তিনি পণ্যভরা “বানিজ্য-তরী” বলে উল্লেখ কারেছেন.।
- ‘তবু’ শব্দের অর্থ “তা সত্ত্বেও’। কবি তাঁর জীবননৌকাকে কল্পনার জগতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সারারাত দাঁড় টানেন । কিন্তু দাঁড় টানা এবং পাল বাঁধা সত্ত্বেও নৌকা তবু নিশ্চল। কারণ নৌকা তটের কিনারে নোঙরের কাছিতে বাঁধা পড়েছে। অনেক চেষ্টা, অনেক আয়োজন, অনেক আশা-উদ্দীপনা থাকা সত্ত্বেও নৌকাকে তাঁর লক্ষ্যের দিকে চালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে । এই কারণে “তবু’ পদটি ব্যবহৃত হয়েছে।
- সাধারণত মাঝি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘাটে নৌকা বেঁধে রাখেন কিন্তু কবির জীবননৌকা চিরকালের জন্য সংসারের মায়ায় বাঁধা পড়ে গিয়েছে। ইচ্ছে করলেই তিনি নোঙরের বন্ধন ছিন্ন করে দিতে পারেন না । তাঁর কল্পনার স্বপ্নলোকে ভেসে পড়তে পারেন না। তাঁর সামাজিক-পারিবারিক সত্তার মধ্যে আবদ্ধ রয়েছে। সেখানে কবির ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছাকে দমিত করে রাখতে হয়। বাস্তব জগতের অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজ, সংসারজীবনে নানা সম্পর্কের প্রতি দায়বদ্ধতা ইত্যাদির নিবিড় বন্ধনে কবির জীবননৌকা চিরকাল বাঁধা পরে আছে ।
6)”সারারাত তবু দাঁড় টানি ” – কবি সারারাত দাঁড় টানেন কেন? ‘তবু’ কথাটি বলার কারণ কী? এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে কবির কোন্ মানসিকতা ফুটে উঠেছে?
উত্তর:- উদ্ধৃতাংশটি কবি অজিত দত্ত তাঁর ‘নোঙর’ কবিতায় উল্লেখ করেছেন। কবি নৌকাভরা পণ্য নিয়ে সাতসাগর পারে পাড়ি দেওয়ার জন্য সারারাত দাঁড় টানেন।
- “তবু” শব্দের অর্থ “তা সত্ত্বেও”। কবির আকাঙ্ক্ষা ছিল পণ্যভরা নৌকা নিয়ে সাতসাগর পারে যাওয়ার । কিন্তু তাঁর নৌকা কখন যে তটের কিনারে নোঙর পড়ে গেছে তিনি তা বুঝতেও পারেননি। তিনি অনুভব করেছিলেন যে, নৌকা আর কখনো তট ছেড়ে যাবে না। তবুও কবির মন এই সত্য মানতে না পেরে সারারাত দাঁড় টানেন । এই কারণেই উদ্ধৃতাংশে কবি ‘তবু’ কথাটি বলেছেন ।
- এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে কবির ইচ্ছাশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি জানেন, সমাজ সংসারের দায়িত্ব ও কর্তব্যে তিনি আবদ্ধ । তবুও তিনি সুদূরপিয়াসি হওয়ায় মুক্তজীবনের আহ্বানে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে চান । তাঁর সচেতন মন জানে এই দাঁড় টানা বৃথা, কিন্তু তাঁর অবচেতন মন তা মেনে না নিয়ে, ক্রমশ আশা-স্বপ্নের জাল বুনে চলে। কবি জানেন, তাঁর এই আশা কোনোদিন পূরণ হবে না, তবু স্বপ্নময় জীবনের অনুসন্ধানে তিনি ক্লান্ত হন না । দূর সাগরে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন নিয়েই তিনি বেঁচে থাকেন।
7) ‘স্রোতের বিদ্রুপ’ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।”- ‘স্রোতের বিদ্রুপ’কবিকে কীভাবে ব্যথিত করেছে আলোচনা করো।
উত্তর:- উদ্ধৃতাংশটি কবি অজিত দত্তের ‘নোঙর’ কবিতার অংশ।
কবি তাঁর নৌকা নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে সুদূর সাতসমুদ্রপারে পাড়ি দিতে চান। তাই তাঁর সুদূরপিয়াসি মন চঞ্চল । কিন্তু তাঁর অজান্তেই তটের কিনারে নোঙর পড়ে গিয়েছে । তিনি বাস্তব জগতের মায়ায় আবদ্ধ থাকায় তাঁর জীবননৌকা এগোয় না । এ-নৌকা নোঙরের কাছিতে চিরকাল বাঁধা পড়ে গেছে । তাসত্ত্বেও কবির রোমান্টিক মন সীমা ছাড়িয়ে অসীমের লক্ষ্যে পাড়ি দিতে চায় । আর তাই পাড়ি দেওয়ার জন্য তিনি মাস্তুলে পাল বাঁধেন এবং সারারাত একভাবে দাঁড় টেনে চলেন। এই দাঁড় টানা বৃথা জানা সত্ত্বেও তিনি নিজের হৃদয়কে শান্ত করতে পারেন না। সমুদ্রের গর্জনে তাঁর জীবনের নিস্তদ্ধ মুহূর্তগুলি বারেবারে কেঁপে ওঠে। কবির রোমান্টিক মন চঞ্চল হয়ে ওঠায় তিনি বারেবারে দাঁড় নিক্ষেপ করে যান । কিন্তু প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে কবি শোনেন স্রোতের ঠাট্টা-উপহাস।
কবির জীবননৌকা স্থিতিশীল হলেও স্রোত কিন্তু গতিশীল। তাই স্রোতের এই গতি যেন স্থিতিকে বিদ্রুপ করে। আসলে কবি সংসারের তটভূমিতে আবদ্ধ থাকায় কখনোই সেই বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারবেন না । তাই অবিরাম জলস্রোত কবিকে প্রতিনিয়ত বিদ্রূপ করে চলেছে। এভাবেই নিরুপায়, অসহায় কবিকে স্রোতের বিদ্রুপ ব্যথিত করেছে।