আবহমান- (Abohomaan) Bangla Literature Subject WBBSE Class 9

আপনি এখানে শিখবেন এই অধ্যায়ে এবং বিষয়ের ফাউন্ডেশন অংশটা, এই বিষয়টিকে সহজ-সরলভাবে পড়িয়েছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ভিডিও লেকচার এর মাধ্যমে এবং এই পুরো অধ্যায়কে চার ভাগে খন্ডিত করে আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে

  • প্রথম খন্ডে আপনি শিখবেন ফাউন্ডেশন অংশটা যেখানে অধ্যায়ের ব্যাপারে আপনাকে বোঝানো হয়েছে তার মানে definitions,basics  গুলো সহজভাবে.  এবং এটাকে আপনি বুঝতে পারবেন যেটা আপনাকে পরীক্ষার জন্য ক্রীপের করতে সাহায্য করবে
  • দ্বিতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন MCQ মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন যেটা সাধারণত এক Marks’er আসে পরীক্ষায়
  • তৃতীয় মডিউলে আপনি শিখবেন শর্ট অ্যানসার এবং কোয়েশ্চেন, যেটা আপনার পরীক্ষার সাজেশন মধ্যে পড়ে এবং এটা 3-4 marks’er  প্রশ্ন আসে আপনার পরীক্ষা
  • চতুর্থ মডিউল আপনি শিখবেন লং আনসার এবং questions যেটা সাধারণত 5-6 marks er হয়

আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন যাতে কি আপনাকে আমরা সাহায্য করতে পারি

সারসংক্ষেপ

মানুষের শিকড় সন্ধানের যাত্রা প্রতিনিয়ত চলতেই থাকে। প্রবল আবেগ নিয়ে একসময় বাঙালী গ্রামজীবনে তাদের বসতি নির্মাণ করেছিল । কিন্তু আধুনিক নাগরিক জীবনের দখলের কারণে এমন গ্রামীণ সভ্যতাও প্রতিনিয়ত বিলুপ্ত হয়েছে বা হচ্ছে । বেশীরভাগ মানুষই এখন শহরে বসবাস করছে জীবিকার সন্ধানে । তবুও  গ্রামীণ শান্ত নির্ভেজাল সমাজ ও প্রকৃতির টানে মানুষ বারবার ফিরে আসে । শহরের দমবন্ধকর পরিবেশ, পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে মানুষ  তাদের শিকড়ের কাছে  ফিরে আসে । 

এখানে গল্প শেষের পর নটে গাছটা মুরোয় না একই ভাবে দাড়িয়ে থাকে। কারণ প্রকৃতি এখানে একইভাবে নিজেকে মেলে ধরে, জীবন একই গতিকে সরল ছন্দে বয়ে চলে। শান্ত পরিবেশ ও ভরপুর প্রাণের প্রাচুর্যের কারনে মানুষের এখানে ফিরে আসার প্রবল টান এখনো আছে। লাউমাচার পশে ছোট একটা ফুল সন্ধ্যার বাতাসে দুলতে থাকে। 

সারাদিন এখানে আছে ঘাসের গন্ধ, রাতে খোলা আকাশে ঝকঝকে তারার স্বপ্ন। যেখানে, দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম করতে করতে মানুষ অস্থির হয়, সেখানে গ্রামে বাগানে এখনো কুন্দফুলের হাসি দেখা যায়। সন্ধ্যায় নদীর হাওয়া যেমন ছুটে আসে, তেমনি আলো-ছায়ার নৃত্যও চলে। আর এখানেই মানুষের টিকে থাকার চাবিকাঠিটিও অবস্থিত। সেখানেই লাউমাচের পাশেই গোধূলির হাওয়ায় ছোট্ট একটি ফুল সর্বদা দুলতে থাকে ।

নামকরণের তাৎপর্য

যেকোনো সাহিত্যকর্মে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের মাধ্যমে লেখকপাঠকের কাছে পৌঁছে দেন তার সৃষ্টি ,তার শিল্প । সাহিত্যিকদের লক্ষ্য একটি ধারণা বিকাশ করা। পাঠকদের আকৃষ্ট করার প্রয়াসে, লেখক তার সৃজনশীল সৃষ্টির নামটি যত্ন সহকারে বিবেচনা করেছেন। রচনার বিষয়বস্তু, বায়ুমণ্ডল এবং ব্যঞ্জনা প্রায়শই কবিতার নামকরণের কারণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

‘আবহমান’ নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সংশ্লিষ্ট কবিতার শিরোনাম। ‘আবহমান’ এর আক্ষরিক অর্থ ক্রমাগত। সহজভাবে বলা যায়, একটি প্রবণতা যা সারা সময় একই রকমভাবে চলতে থাকে। ‘আবহমান’ কবিতায় কবি দক্ষতার সঙ্গে গ্রামবাংলার জনজীবনের কালজয়ী চিত্র তুলে ধরেছেন, যা দুঃখ-কষ্টে পরিপূর্ণ কিন্তু নির্মল ও প্রকৃতির শোভা দ্বারা লালিত। সুজলা-সুফলা বাংলাকে ভালোবেসে মানুষ আদিকাল থেকেই এখানে বসবাস করে আসছে। সরল ও মনোরম গ্রামীণ জীবন পাওয়া যাবে লাউমাচার পাশে ‘আবহমান’ কবিতায়।

কারণ সেখানে নাগরিকরা দৈনন্দিন  জীবনের পরিশ্রমের পর ক্লান্ত দেহ প্রশান্তির নিঃশ্বাস পায়। কবি কবিতায় এই লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেন। মানুষ প্রকৃতির কাছাকাছি যায় এবং দাঁড়িয়ে থাকে কারণ তারা মাটি গন্ধ এবং বাতাস উপভোগ করে। ঘাসের গন্ধ পাওয়া এবং তারার কল্পনায় সারা রাত কাটানো মানুষকে প্রকৃতির সাথে সংযোগ করতে সহায়তা করে।

অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষ উজ্জ্বল চোখে ও উন্নত জীবনের আকাঙ্খা নিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম থেকেছে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাদের জীবনধারা বজায় রেখেছে। আধুনিক জগতের লোকেরা এই প্রকৃতির দ্বারা পুষ্ট জীবনে সুখের সন্ধানে এবং জীবন নতুন করে শুরু করার আশা নিয়ে অগ্রসর হয়। এই কবিতাটি বাঙালি গ্রামজীবন, প্রকৃতি এবং তাদের জীবিকা নির্বাহকারী মানুষের প্রকৃতি উভয়ই চিত্রিত করেছে। অতএব, ইটা বলা যেতে পারে যে কবিতাটির শিরোনাম, ‘আবহমান’ উভয়ই উপযুক্ত এবং অত্যন্ত ব্যঞ্জনাপূর্ণ।

SOLVED QUESTIONS & ANSWERS of আবহমান- (Abohomaan)

1 MARKS QUESTIONS of আবহমান- (Abohomaan)

  1. ‘আবহমান’ কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?

উত্তর- ‘আবহমান’ কবিতাটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। এটি ওই কাব্যগ্রন্থের তিরিশতম কবিতা। 

  1. ‘আবহমান’ কবিতায় কবি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন?

উত্তর- ‘আবহমান’ কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী গ্রামবাংলার গরিবের উঠোনে এর লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন।  

  1. কোন্ ফুল দুলছে?

উত্তর- পল্লিবাংলায় উঠোনের লাউমাচায় ছোট্ট লাউফুল দোলে ।

  1. কোথায় ছোট্ট ফুল দুলছে?

উত্তর- ‘আবহমান’ কবিতায় গ্রামবাংলায় গরিবের উঠোনের লাউমাচায় ছোট্ট লাউফুল দোলার কথা বলা হয়েছে।

  1. লাউফুল কখন দোলে?

উত্তর- সন্ধ্যার মৃদুমন্দ বাতাসে দোলে লাউফুল।

  1. ‘আবহমান’ কবিতায় অনেক বছর আগে কার আসার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর- অনেক বছর আগে বাংলায় আশ্রয়ের খোঁজে মানুষের আসার কথা বলা হয়েছে, যারা এদেশেরই বাসিন্দা হয়ে গেছে। 

  1. ‘আবহমান’ কবিতায় বাংলার ভূখণ্ডে এসে মানুষ কী করেছিল বলা হয়েছে?

উত্তর- আবহমান কবিতায় লোকেরা বাংলায় এসে বসতি স্থাপন করেছিল কারণ তারা দেশের প্রতি প্রবল অনুরাগ অনুভব করেছিল।

  1. ‘আবহমান’ কবিতায় মানুষ হারিয়ে গিয়েও আবার কেন ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর- মানুষ হারিয়ে গিয়েও বাংলার বুকে ফিরে আসে কারণ গ্রাম বাংলার মাটি, জল, বাতাস ভালোবাসে।

  1. কবির মতে কোন্ গাছ বুড়িয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত মুড়য় না?

উত্তর- কবির মতে নটে গাছ বুড়িয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত মুড়য় না।

  1. ‘আবহমান’ কবিতায় মানুষের কোথায় হারিয়ে গিয়েও আবার কোথায় ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর- গ্রামবাংলার তরুণ-তরুণীরা শহুরে জীবনে দিশেহারা হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

  1. ‘আবহমান’ কবিতায় কাকে একগুঁয়ে বলা হয়েছে?

উত্তর- একজন মানুষ যদি কৃষিকাজের পক্ষে আধুনিক সভ্যতা ত্যাগ করে তবে তাকে অনড় বলে গণ্য করা হয়।

multiple choice questions – 1 marks of আবহমান- (Abohomaan)

1. “যা গিয়ে ওই — তোর দাঁড়া”—
a) প্রাঙ্গণে b) অঙ্গনে c) উঠানে d) বারান্দায়
উত্তর:- উঠানে
2. ‘আবহমান’ কবিতায় কবি কার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন?
a) পুঁইমাচার b) লাউমাচার c) কুমড়োমাচার d) চালকুমড়োমাচার
উত্তর:- লাউমাচার
3. ছোট্ট ফুল কোন্ সময়ের বাতাসে দোলে?
a) সকালের b) বিকালের c) সন্ধ্যার d) গোধূলির
উত্তর:- সন্ধ্যার
4. “কে এইখানে ___এসেছিলবছর আগে”-
a) কয়েক b) দু-এক c) শতেক d) অনেক
উত্তর:- অনেক
5. কোন্ গাছটি ‘বুড়িয়ে ওঠে কিন্তু মুড়য় না’?
a) নটে b) শটি c) পাট d) বট
উত্তর:- নটে
6. “ফুরয় না সেই _____দুরন্ত পিপাসা”—
a) একরোখাটার b) একগুঁয়েটার c) একবগ্গার d) একচোখোটার
উত্তর:- একগুঁয়েটার
7. “কে এইখানে ঘর বেঁধেছে…”— এই ঘর বাঁধা হয়েছে —
a) গভীর অনুরাগে b) ঝগড়া করে c) তীব্র অসন্তোষে d) গোপন ভালোবাসায়
উত্তর:- গভীর অনুরাগে
8. “কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে…” —তারা ফিরে আসে —
a) মানুষকে ভালোবেসে b) মাটিকে আর হাওয়াকে ভালোবেসে
c) নদী আর আকাশকে ভালোবেসে d) তারা আর চাঁদ ভালোবেসে
উত্তর:- মাটিকে আর হাওয়াকে ভালোবেসে
9. একগুঁয়েটার যে জিনিস না ফেরানোর কথা বলা হয়েছে, তা হল —
a) দুরন্ত দুষ্টুমি b) দুরন্ত পিপাসা c) দুরন্ত ছটফটানি d) অনন্ত ছেলেমানুষি
উত্তর:- দুরন্ত পিপাসা
10. “সারাটা রাত… স্বপ্ন এঁকে রাখে”— স্বপ্ন এঁকে রাখার কথা বলা হয়েছে
a) মেঘে মেঘে b) তারায় তারায় c) আলোছায়ায় d) ফুলে ফুলে
উত্তর:- তারায় তারায়
11. ‘আবহমান’ কবিতায় যা না হারানোর কথা বলা হয়েছে, তা হল —
a) চাঁদের হাসি b) রোদের হাসি c) কুন্দফুলের হাসি d) আলোর হাসি
উত্তর:- কুন্দফুলের হাসি

short questions – 2-3 marks of আবহমান- (Abohomaan)

  1. “কে এইখানে ঘর বেঁধেছে”—‘ঘর বেঁধেছে’ কথাটির তাৎপর্য কী?

উত্তর- উদ্বৃতিটি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য তিনটি উপাদান হলো খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান। মানুষ বসবাসের জন্য  ঘর বানায়। ‘ঘর বাঁধা’ শব্দটির একটি বিস্তৃত সংজ্ঞা রয়েছে। এটি কেবল ইট, কাঠ এবং পাথর দিয়ে একটি ঘর তৈরি করার চেয়ে আরও বেশি কিছু । নিজের করে গ্রহণ করার প্রচেষ্টা এবং স্নেহপূর্ণ সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এই বাড়ির ভিত। বাংলা অভিবাসীরাও এদেশকে ভালোবেসে এখানে ঘর বেঁধেছে এবং তা উপভোগ করছে।

  1. “ফুরয় না তার যাওয়া এবং ফুরয় না তার আসা”- একথা বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর- নগর সভ্যতার প্রথম উদ্ভব হওয়ার পর থেকেই মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে আসছে। সুখের সন্ধানে মানুষের এই প্রবাহ অবিরাম চলছে। কিন্তু এর মধ্যেই শহরমুখী মানুষের প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়াটিও স্পষ্ট । যারা দৈনন্দিন পরিশ্রমে  ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তারা বিশ্রাম নিতে চায় এবং যান্ত্রিক সভ্যতা সমাজ থেকে মুক্তি চায় । তারাই ক্লান্ত হয়ে গ্রামসমাজে ফিরতে চায়। মানুষ মুক্তি খোঁজে গ্রামবাংলার প্রকৃতির সহজ সরল জীবনধারার সংস্পর্শে এসে । এভাবেই মানুষের আসা-যাওয়া চলতে থাকে । 

  1. “নটে গাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না”— পঙক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর- ‘আবহমান’ কবিতায় নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী দেখিয়েছেন যে, গ্রামবাংলার মানুষ 

একসময় প্রবল আবেগ নিয়ে গ্রামজীবনে তাদের বসতি নির্মাণ করেছিল । পরবর্তীতে নাগরিক সভ্যতার সৃষ্টি হলে তা গ্রাম সভ্যতার সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। কিন্তু প্রকৃতি সেখানে একইভাবে সব কিছু নিজের হাতে সাজিয়ে রাখে, তাই জীবন এখানে একটি স্বস্তিদায়ক গতিতে চলতে থাকে এবং শহরের জরাজীর্ণ বাসিন্দারা প্রশান্তির সন্ধানে বংলার মাটির কাছে ফিরে আসে। নটে গাছ বুড়িয়ে উঠলেও তা কিন্তু ‘মুরায়ো না’ বা তার গ্রহণযোগ্যতা অব্যাহত থাকে।

  1. “কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে” পঙক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায় গ্রামীণ সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য যে সমস্ত মানুষ এত শ্রম দিয়েছিল, তারাই স্বাচ্ছন্দ্য ও সাফল্যের লোভের ফলে গ্রাম পরিত্যাগ করে শহরে চলে গিয়েছিল। যদিও শহরের জীবন মানুষের জীবনে মহিমা এবং সমৃদ্ধি এনেছিল, কিন্তু মানুষকে শান্তি, নির্জনতা দিতে পারেনি। ফলস্বরূপ, প্রশান্তির সন্ধানে, গ্রামের হারানো বাসিন্দারা পুনরায় আবার গ্রামেই ফিরে আসে।

  1. “সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে”—কে কেন ঘাসের গন্ধ মাখে?

উত্তর- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায় যারা নগরজীবনে পরিশ্রান্ত এবং ক্লান্ত, তাদের গ্রামে ফিরে আসার আর্তি লুকিয়ে থাকে সেই শহর থেকে পাওয়া সমৃদ্ধি এবং স্বচ্ছলতার আড়ালে । কবি, মনের মধ্যে এই ফিরে আসার আকুলতাকেই ‘একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা’ বলেছেন। এই তৃষ্ণার মধ্য দিয়ে সারাদিন গ্রাম ও প্রাকৃতিক জগতের সান্নিধ্যে কাটানোর ইচ্ছা পোষণ করে। প্রকৃতির প্রতি মানুষের এই আকর্ষণকে বোঝাতে গিয়ে কবি বলেছে – ‘আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে’ ।

  1. “হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি”- পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কোন্ জীবনসত্যকে তুলে ধরেছেন?

উত্তর- কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর ‘আবহমান’ কবিতায় গ্রামবাংলার সরল, নির্লিপ্ত জীবনধারা তুলে ধরেছেন। গ্রামটিতে সবাই সবসময় এমনভাবে বসবাস করে যা আদতে প্রকৃতিকে মূল্য দেয়। সেখানে দুঃখ-যন্ত্রনা থাকা সত্ত্বেও, প্রকৃতির সৌন্দর্য কোনওভাবেই প্রভাবিত হয়না । কবি বলেছেন ‘হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি’ অর্থাৎ গ্রামবাংলার জীবনের এই সহজ প্রবাহ এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য অবিনশ্বর। 

  1. “এখনও সেই ফুল দুলছে”— পঙক্তিটিতে ব্যবহৃত ‘এখনও’ শব্দটির তাৎপর্য কী?

উত্তর- কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায় গ্রামবাংলার প্রকৃতি ও জীবনের চিরন্তন বর্ণনা রয়েছে। মানুষ প্রগাঢ় ভালবাসা নিয়ে বসতি স্থাপন করেছিল । মাটি আর হাওয়াকে কেন্দ্র করে যে গ্রামসভ্যতা গড়ে উঠেছিল, তা সময়ের সাথে ম্লান হয়ে গেলেও, থেকে যায় প্রকৃতির সৌন্দর্যের মহিমা । গ্রামীণ জীবন এবং গ্রাম্য প্রকৃতির স্থায়ী সৌন্দর্যকে নির্দেশ করতে কবি বলেছেন,  ‘এখনও সেই ফুল দুলছে’ ।

long questions – 5 marks of আবহমান- (Abohomaan)

  1. ‘ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা’— এখানে ‘একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? পিপাসা ফুরোয় না বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায়, যে ব্যক্তি সৌন্দর্যের জন্য আকাঙ্ক্ষিত তাকে ‘একগুঁয়ে’ বলে উল্লেখ করেছেন । পল্লী ও গ্রামজীবনে ফিরে আসার ‘একগুঁয়ে’ মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে কবি ‘দুরন্ত তৃষ্ণা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

গ্রামীণ জীবনের প্রতি গভীর অনুরাগ থেকে মানুষ তাদের বসতি গড়ে তুলেছিল । তারা বাড়িঘর তৈরি করেছিল বাংলার মাটি ও হাওয়াকে ভালোবেসে । যত্নলালিত জীবনের প্রতীক হিসেবে উঠানের লালমাচার ছোট্ট ফুলটি ছিল । 

নগর সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে মানুষ আরাম ও সুখের সন্ধানে শহরে চলে যায়। সেখানে শহুরে জীবনে অর্থ উপার্জন করলেও আত্মিক সুখ পাওয়া দুষ্কর, ধীরে ধীরে ক্লান্তি তাকে ঘিরে ধরে। শহরের যান্ত্রিক সভ্যতার দমবন্ধকর পরিবেশে মানুষ প্রতিনিয়ত হাপিয়ে উঠছে। আর এখান থেকেই গ্রামে ফিরে আসার আর্তি তীব্র হয়। প্রকৃতির স্বাচ্ছন্দ্য এবং গ্রাম জীবনের সরলতা তাকে সর্বদা গ্রামের পরিবেশে টানে। গ্রামের মাটি এবং হাওয়াকে ভালোবেসে মানুষের এই ফিরে আসা প্রতিনিয়ত চলতে থাকে। এই যে বারে বারে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা তা মানুষের মধ্যেই চিরকালীন যা কখনো শেষ হয়ে যায় না।

  1. “ফুরয় না, তার কিছুই ফুরয় না”— এখানে কী না ফুরোনোর কথা বলা হয়েছে? কেন কিছুই ফুরোয় না?

উত্তর – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত ‘আবহমান’ কবিতাটি প্রকৃতির সাথে পুনঃসংযোগের মানুষের অপূরণীয় আকাঙ্ক্ষার কথা বলা হয়েছে ।

বহু বছর আগে যখন মানুষ গভীর ভালবাসার সাথে প্রথম গ্রামবাংলায় এসে বসতি তৈরি করতে শুরু করে । তারা বাংলার বাতাস ও মাটির সাথে একত্ববোধ অনুভব করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ শহরে বাস করার সুযোগ ও সুবিধা বেছে নিচ্ছে । মানুষ আধুনিক সংস্কৃতির আনন্দ ও সুবিধার প্রতি আকৃষ্ট হলেও শহরের জীবনে প্রশান্তি খুঁজে পায়নি। 

যান্ত্রিক সমাজের অবিরাম ধাক্কায় তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাদের আশ্রয়স্থল বাংলাতে । বাংলার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং তার জীবনচক্র, বাড়ির উঠোনের লাউমাচা, সন্ধ্যার শীতল বাতাসে দোলানো ছোট্ট ফুল এইসবে সর্বদাই মানুষের মন শান্তি খুঁজে পায় । যখনই মানুষ এই প্রকৃতিপ্রেমী জীবনে সুযোগ পায় তখনই তার ফিরে আসার পটভূমি হিসাবে বাংলার মাটিই একমাত্র আশ্র়স্থল হিসেবে কাজ  করে। 

কবি বিশ্বাস করেন যে পুরানো অস্তিত্বের এই চেনা ছন্দের প্রত্যাবর্তনের আলোকে কিছুই শেষ হয় না। প্রকৃতির সংস্পর্শে ফিরে আসার জন্য মানুষের প্রয়োজনের মতো কিছুই শেষ হয় না, এমনকি বাগানের অঙ্কুরিত ফুলের হাসি, সকালের আলো, ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হওয়া ছায়া, বা নদীর সন্ধ্যার বাতাস কিছুই পরিবর্তিত হয়না।

4.”নেভে না তার যন্ত্রণা যে, দুঃখ হয় না বাসি”—এখানে । যার যন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে তার যন্ত্রণা কেন নেভে না? ‘দুঃখ হয় না বাসি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘ আবহমান’ কবিতায় গ্রামবাংলার সুবিধাবঞ্চিত বাসিন্দাদের কষ্টের কথা বর্ণিত হয়েছে। এটি কখনও শেষ হয় না কারণ দরিদ্র মানুষ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাদের দারিদ্রতার দুঃখ এবং কষ্ট সহ্য করে।

গ্রামের দরিদ্র বাসিন্দারা তাদের দুঃখ মেটানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। অভাব-দুঃখের নিত্য সঙ্গী হয়ে তারা বেঁচে থাকে । মোটা চাল, গায়ে পড়ার একটুকরো কাপড় পেতেও তাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয় । গ্রামবাংলার মানুষের জীবনের এই চিত্রণ খুব বেশি বদলায়নি এখনও । দারিদ্র্যের পাশাপাশি, দারিদ্রতার বিরুদ্ধে সামাজিক শোষণ ও নিপীড়ন  ও নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে এখনো । ফলস্বরূপ, তাদের ব্যথা অনুমানযোগ্য হয় না । তাদের বাগানে কুন্দফুলের হাসির মতোই এই দুর্ভোগ আর দুঃখের নিত্যদিনের অস্তিত্ব বাস্তব। তাদের জীবন একেবারে নতুন বা সাম্প্রতিক দুর্ভাগ্যের অক্ষয় সরবরাহে পূর্ণ। একটি দুঃখজনক রাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারা আরেকটি দুঃখজনক দিন দেখে। অতএব, এই দুঃখজনক জীবনের রাস্তার কোন শেষ নেই ।

  1. ‘আবহমান’ কবিতাটি প্রত্যেক মানুষের আত্মঅনুসন্ধানের কাহিনি।—আলোচনা করো।

উত্তর- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতাটি প্রতিটি মানুষের নিজের শিকড়ে ফিরে যাওয়ার গল্প বলে। বহু বছর আগে মানুষ গভীর ভালবাসার সাথে প্রথম গ্রামবাংলায় বসতি তৈরি করতে শুরু করে । এই আবেগ ছিল দেশের বাতাস ও মাটির জন্য। নগর সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে মানুষ শহরের দিকে এগিয়েছে । শহরে বাস করার সময়, মানুষ স্বাচ্ছন্দ্য পেয়েছে কিন্তু মানসিক শান্তি পায়নি। যন্ত্র সমাজের শ্বাসরুদ্ধকর অস্তিত্ব থেকে তার ক্লান্তি ও অবসাদ গ্রাস করেছে। গ্রামীণ জীবনে তার প্রত্যাবর্তনের দৃষ্টিভঙ্গি সেই সময়েই তৈরি হয়েছিল। কবি কীটস নাইটিঙ্গেলের গান শুনে দেশে ফিরে আসার পর দেশপ্রেমের আবেদন কবি অরুণ মিত্রকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছিল। উপরন্তু, ‘আবহমান’ কবিতায় উঠোনে যে ছোট ছোট ফুলগুলি দোল খাচ্ছে, তা মানুষকে স্বাগত জানানোর জন্য। ব্যক্তিদের আরও সহজভাবে এবং প্রকৃতির কাছাকাছি বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা আসা এবং যাওয়ার এই অভিজ্ঞতাগুলিতে স্পষ্ট। কবিতাটি তাদের নিয়ে যারা ঘাসের গন্ধে তাদের দিন কাটায় এবং তাদের রাতগুলি আকাশের স্বপ্ন দেখে। প্রতিটি মানুষ সত্যিই ক্লান্তি থেকে পুনরুদ্ধার করতে এবং তারা নিজেদের খুঁজে পাওয়ার জন্য এই প্রচেষ্টা করে।

  1. ‘আবহমান’ কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বারংবার যে কয়েকটি পঙক্তির ব্যবহার করেছেন তার প্রাসঙ্গিকতা আলোচনা করো।

উত্তর- ‘আবহমান’ কবিতায় নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছ-টি পঙ্ক্তিকে একাধিকবার ব্যবহার করেছেন।

পঙক্তিগুচ্ছ-১ : “যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,/লাউমাচাটার পাশে।/ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল/সন্ধ্যার বাতাসে।”

—মানুষের তার শিখরের কাছে ফিরে যাওয়ার প্রতিনিয়ত আকুলতার প্রকাশই হলো ‘আবহমান’ কবিতাটি। ফেলে আসা গ্রামজীবন হলো এই উৎস। 

এক সময়, তার পূর্বপুরুষরা বনভূমিতে বসবাস বন্ধ করে এবং এই গ্রামের সংস্কৃতিকে পত্তন করেছিল । এই গ্রামই পারে শহুরে যান্ত্রিক সভ্যতার ক্লান্তি এবং অবসন্নতা দূর করতে। 

লাউমাচা সংলগ্ন, একটি ছোট ফুল বাতাসে দোল খায় যা বেঁচে থাকার ইন্ধন যোগায়। এই পঙক্তিগুচ্ছ মোট চারবার ব্যবহার করা হয়েছে কবিতাটিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য।

পঙক্তিগুচ্ছ-২ : “ফুরয় না তার কিছুই ফুরয় না,/নটে গাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না!”

—মানুষের নিজের শিকড়ের কাছে ফিরে যাবার ইচ্ছে প্রতিনিয়ত যা কখনো শেষ হয় না। আর তাই সে মনের মধ্যে ঘাসের ঘ্রাণ মেখে, সারা রাত স্বপ্ন দেখে ‘তারায়-তারায়’। কুন্দফুলের হাসি কখনো বাগান থেকে হারিয়ে যায় না । 

গ্রামজীবনে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যেমন অফুরন্ত তেমনই গ্রামজীবনের প্রকৃতির সজীবতা কখন শেষ হয় না। 

সূর্য উঠলে এবং ছায়া বাড়ার সাথে সাথে নদী থেকে সান্ধ্য হাওয়া বয়ে যায় । যা থেকে ক্লান্ত মানুষেরা বেঁচে থাকার আশ্বাস পায়। গ্রামপ্রকৃতি এবং প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার মানুষের এই চিরকালীন আকাঙ্ক্ষাকে বোঝানোর জন্যই এই পঙক্তিগুচ্ছ তিনবার পুনরাবৃত্তি করেছেন।

error: Content is protected !!
Scroll to Top
×

এই ওয়েবসাইটের সব কনটেন্ট এক্সেস করুন শুধু একটা মেম্বারশীপের সাথে।  আজকেই ক্লিক করুন নিচে রেজিস্টার করার জন্যে।  অসুবিধে হলে হোয়াটস্যাপ করুন আমাদের  +919804282819